কবি নিত্য মালাকার মহাশয়ের প্রয়াণে আমরা গভীর শোকাহত। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
সম্পাদকের কথা
শ্রাবণ মানে সৃষ্টির সময়। চারদিকে ঘনঘোর বর্ষার জল, মেঘের ডাক, অন্ধকার আকাশ....সব মিলে নিদারুণ এক চিত্রকল্প।
কিন্তু এই শ্রাবণ সত্যি কি কোনো বার্তা আনছে ? একদিকে উদ্বাস্তু হওয়ার ভয়, অন্যদিকে মেরুকরণের এক অদ্ভুত অশুভ প্রচেষ্টা শ্রাবণের কালো মেঘকেও হার মানাচ্ছে। যে শ্রাবণ সৃষ্টি করে সেই শ্রাবণে এই যে ধ্বংসের, পতনের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমরা তার কি কোনো দরকার ছিল?
শ্রাবণ মানেই সৃষ্টির পাশাপাশি বেদনার সময়। জীবনের সেরা সত্যকে মেনে নিয়েও বলতে পারি কিছু বেদনা যে ক্ষত তৈরী করে তা কখনোই পূর্ণ হয় না।
তবু আমরা চলি, চলতে হয় বলে.....
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
এই সংখ্যায় যাঁরা আছেন-
বেলা দে, লক্ষ্মী দে, রীনা মজুমদার, ফিরোজ আখতার, গায়েত্রী দেবনাথ, মনোজকুমার রায়, শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, নবনীতা সান্যাল মুখার্জী, সুব্রত নন্দী, সঞ্চিতা দাস, নিশীথবরণ চৌধুরী, সন্দীপ্তা মজুমদার, দীপ্তিমান মোদক, জয়তোষ ঘোষ, দীপশিখা চক্রবর্তী, সপ্তক, কাকলি ভদ্র, সুপর্ণা চৌধুরী, সোমা বোস, পিয়াংকী মুখার্জী, অনিমেষ সরকার, কুমকুম ঘোষ, রাণা চ্যাটার্জী, আবদুস সালাম, সমীরণ চক্রবর্তী, মৃণালিনী, উদয় সাহা, মহুয়া মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত সেন, সিয়ামুল হায়াত সৈকত, শুভদীপ পাপলু, প্রতিভা দে, রাহুল ঘোষ, শুভাশিস দাশ, রুনা দত্ত, বাপ্পা রায়, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, সম্পা পাল, সমরেশ পর্বত, আশীষ দেব শর্মা, তুহিন মন্ডল, সঞ্চয়িতা দে, মৌসুমী চৌধুরী, জয় চক্রবর্তী, সুপ্রীতি বর্মন, সাথী দত্ত
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, বিন্যাস ও অলংকরণ - শৌভিক রায়
যোগাযোগ - হসপিটাল রোড, কোচবিহার
ই মেল্ - mujnaisahityopotrika@gmail.com
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
স্মরণে রবীদ্রনাথ
অনঙ্গ সীমা
বেলা দে
জল ভেজা শ্রাবণ আমার
দুখ জাগানিয়া বিষাদ
মর্মস্থল খুঁচিয়ে তোলে
দুই মৃত্যুশোক
এক তুমি কবি রবি প্রাণের ঠাকুর
আমার পিতৃদেব আরেক
মৃত্যু জীবনের অঙ্গ জানি
শূণ্যতার এক নাম
ফিরে আসা স্মৃতির আলেখ্য
তবু শ্রাবণ তৃষ্ণার ধারাপাত
মন্থন করে
আবেগ মিশ্রিত বিগত শোক
বাইশের অন্তিম দিনে
ছলকে নেমেছিল আলোহীন গাঢ় অন্ধকার
যে কালোছায়ায় ডানাখুলে
উড়ে গেছে প্রাণপাখি
বহুদূর অনঙ্গসীমায়।
এক স্মরনীয় শ্রাবণ
প্রাককথন
রবীন্দ্রনাথ অাদিগন্ত বিস্তৃত এক নাম। যে নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ধ্বনি - প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে যুগ যুগান্তরে। এই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরোধান দিবস ২২ শে শ্রাবণ। সেই শ্রাবণকে স্মরণে রেখে অামার এই অালেখ্য ----
২২ শে শ্রাবণ
লক্ষ্মী নন্দী
দেহ ছেড়ে তুমি গেছ চলে অমৃতলোকে -
হে শ্রদ্ধেয় বন্ধু - তবু তুমি যেন অাছো
এই ভূ -লোকে। ছেড়ে গেছো যদি,
চলে গেছো ফেলে বন্দী করেছি
হৃদয়ের কারাগারে -- তোমার মূর্তি,
স্তব ও বন্দনা। জানি তুমি অাছো সুন্দর
ভুবনে - গেছো শুধু নিয়মের টানে
জল স্হল সৃষ্টির সকল সম্ভাবনায়।।
হয়তো তুমি ক্লান্ত হয়ে মুদিত
অণুপরমাণু নয়নে দিয়েছিলে বিশ্রাব
হয়তো তুমি জান, অাবার জান না---
তোমার চেতনাহীন দেহ তরে প্রকৃতি পুরুষ
কেঁদেছিল অবিরাম। অামিও জানিনা,
হয়ত সেদিন পল্লীবধূ রূপে ঘোমটা টেনে
যাচ্ছিলাম তোমার স্বপ্নদ্বীপে। হয়তো সেদিন
রাখাল বালক বাঁশি বাজিয়ে ছিল
বিষাদ করুণ সুরে। হয়তো সেদিন -
কোকিলেরা সব স্তব্ধ ঝিল নীরব ভোরে।
হয়তো ডাকছিল কাক গাছের ডালে -
তোমার অন্ত কালের অাভাস পেয়ে
অাবার ছোট্টো দোয়েল - ঘুম ভাঙাতে -
তোমায় ঘিরে দেখাচ্ছিল বেলে।
হয়তো সেদিন - অাকাশ মাঝে ঠাঁই
নিয়েছিল এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ,
হয়তো - সেদিন বিনিদ্র ছিল সমস্ত
জোড়াসাঁকো। হয়তো সেদিন শব্দকোষের
হয়েছিল নির্জলা একাদশী - হয়তো সেদিন
শোকসাগরে ভেসেছিল সকল বিশ্বের
বিশ্ববাসী। হয়তো - সেদিনও ছোট্টো বালিকা -
তোমার তরে গেঁথেছে টগর মালিকা
পরাতে গেছে সে যখন সম্মুখে -
তুমি শুয়ে অাছো পরম সুখে
কপালে চন্দন চিহ্ন, এও কি রঙ্গমঞ্চ?
বালিকা মনের চিন্তাতে জাগে - তুমি কি
সেজেছো মৃত সৈনিক সাজে?
ওঠো ওঠো দেখো অামি এনেছি জয় মাল্য।
সম্মুখে ছিল যত দর্শক বৃন্দ -
বালিকাকে বুঝাইল সকল বৃত্তান্ত,
সবকিছু বুঝি দেখি, বালিকা করি শ্রবণ,
অাজও সৈনিক তরে মালা গাঁথে সে
পঁচিশে বৈশাখ অার বাইশে শ্রাবণ।
বাইশে শ্রাবণ বিদায়ের সুর
হৃদয় বিয়োগ ব্যথায় বাজে,
পঁচিশে বৈশাখ বার বার অাসুক,
নব নব সুর নব নব সাজে।
তোমার বিদায়ের শূন্যতাকে -
মিরাকল ঘটিয়ে ছিলে।
নিয়ে গেছো শুধু জীর্ণ দেহ,
তখনও বুঝেছে কি এতটুকু কেহ,
দিয়ে গেছো সব উজার করে ঢেলে।
দিয়ে গেছো কত জ্ঞানভাণ্ডার
দিয়ে গেছো কত গ্রন্থ গ্রন্থাগার
দিয়ে গেছো কত শিক্ষার অালো
জানি এর থেকে অার নয় কিছু ভালো
শিখিয়েছো মিলনের অালো -
ঘরে ঘরে জ্বালো হিংসাতে দূরে ফেলে
এখনো অামরা অাবেগে ভরে উঠি
তোমার মুখখানি পেলে।
অাবার তোমার গানের দোলায়
দুলি যখন পরম অানন্দে -
কে বলেছে? তুমি নেই মনের অলিন্দে।
তুমি অাছো ছিলে থাকবে মোদের -
জীবনের প্রতিক্ষণে ---
তোমাকে চিরোদিন রাখবো মোরা
মনের সিংহাসনে।
তুমি নাটক - তুমি নাট্যকার
কখনও মিলেমিশে একাকার
কখনও বিস্ময়ের ভাব ভাষাশহীন
চোখে মুখে। অাবার কখনো
কথা কাহিনীতে মাতিয়ে তোলো
পরম স্বর্গ সুখে।
শ্রেষ্ঠ তুমি সম্পদ তুমি বিশ্ববন্দিত
অক্ষয় তুমি, অমর তুমি, চিরকালের
শাশ্বত। তুমি অামাদের বিশাল মহীরুহ
বিরাট ছত্রছায়া। অামরা সকলে
তোমার অাদলে হতে চাই --
মধুর মিলনে শান্তি স্বস্তির সুস্থ সুন্দর কায়া।।।
'রবি আজ তোমার কলম থামাও'
রীনা মজুমদার
ও মাঝি, তোমার নাও এবার ভেড়া.ও
সে যে আমার পরম আপন যাত্রী
রবি আজ তোমার কলম থামাও
পারের ঘাটে একলা জেগে রই...
তোমার কবিতা ধানের শীষে, শিউলি তলায়
তোমারই পরশে হাজার ফুলের মালায়
দেবীর পুষ্পাঞ্জলি l
তোমার গানে জুঁই, বেল, গোলাপ
বকুল, চাঁপা আমার খোঁপায়
ইন্দ্রীয়ঘন নিবিড় বাণীর সুরে
অন্ধকারেও ভাসিয়ে দেয়...
"সজনি সজনি রাধিকা লো"
তুমি যে প্রাণের রবি কবি
তাই তো ভবিষ্যৎ দেখতে পাও !
বাইশ বছর বয়সে লিখেছিলে
সাগরেরর উত্তালে হৃদয় আকুল করা
সেই হারাবার গান...
"আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাস টুকুর মতো
সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে-
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত
সে চলে গেল, বলে গেল না-
সে কোথায় গেল ফিরে এল না...."
তোমার কলম গানে, গল্পে, কাব্য উপন্যাসে
নৃত্যের তালে তালে,
আকাশে বাতাসে সোনালী রোদ্দুরে
শব্দে, গন্ধে সবুজ হিল্লোলে..
সবেতেই তোমার সৃষ্টিছাড়া মন
কী করে দেখতাম '২২-শে শ্রাবণ' !
তাই তোমার যখন তেইশ! আমার পঁচিশেই
" আছে জন্ম আছে মৃত্যু" সে মরণ মেনে নেই l
তুমি আমার সকল মান, সকল অভিমান
তোমার খেলার সাথী, তোমার নতুন বৌঠান ll
আজ নদীর বাতাসে ভাসে সে গান...
"তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে
এসো গন্ধে বরণে এসো গানে ..."
বাইশে শ্রাবণ আসে, বাইশে শ্রাবণ যায়
ফিরোজ আখতার
.
বাইশে শ্রাবণ আসে, বাইশে শ্রাবণ যায়
ঘটা করে আমরা স্মরণ করি তোমায়
প্রয়াণ দিবস; তাই মাথা নত করি শ্রদ্ধায়
রক্তক্ষরণ তোমার বুকে; আমাদের দীনতায়
বাইশে শ্রাবণ আসে, বাইশে শ্রাবণ যায়
রক্তাল্পতা প্রকট আজ আমার মায়ের ভাষায়
গ্রাস করেছে বিদেশী ভাষা, ঔপনিবেশিকতায়
বাইশে শ্রাবণ আসে, বাইশে শ্রাবণ যায়
চিরন্তন রাবীন্দ্রিক পালিত হয় উৎসবের ঘনঘটায়
তবু, বাইশে শ্রাবণ আসে, বাইশে শ্রাবণ যায় ।
পূর্ণতার প্রতীক
গায়েত্রী দেবনাথ
হৃৎস্পন্দদন আনন্দে নিঃশ্বাস টানে
বাতাসে আবহমানের সুর- ঝংকার ছিলপূর্ণতার প্রতীক
হে-কবি!!
মৃত্যু পরাজিত
ঈশ্বরের খুব কাছে তুমি
স্বপ্ন বাঁচে শব্দে
স্বপ্ন বাঁচে সুরে
সত্ত্বা শত ঘূর্ণিপাকে
সহস্র হৃদয়ে
উথাল সমুদ্রে
একরাশ আশার স্রোতে
প্রেমের গান আজ
অসহায় অনন্ত মিছিল
পূজার সুরে
নেকড়ের ছিন্নভিন্ন উল্লাস
তবু ও নিদ্রাহীন চোখে
স্বপ্ন, আলোকের ঝর্ণাধারায়।
নেকড়ের ছিন্নভিন্ন উল্লাস
তবু ও নিদ্রাহীন চোখে
স্বপ্ন, আলোকের ঝর্ণাধারায়।
নতুন গান
মনোজকুমার রায়
আজ বাইশে শ্রাবণ, মেঘের ব্যালকনিতে
এয়ার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তাঁকিয়ে আছেন
শান্তিনিকেতনের দিকে। ঝাঁকড়ানো আম গাছের তলায়
অসংখ্য সাদা থান পড়া জন পরিজন
সূর্যের কান্না উঁকি মারে পাতার ফাঁকে
অনাথ মেঘটির মুখে জাতিয় সংগীতের জপ
পাশে বসে কাদম্বরী বয়সের রাশি গুণে চন্দ্রগুপ্তের সাথে
তারারা আবৃত্তির সুরে গেয়ে যায় রবিঠাকুরের গান
" হে নতুন দেখা দে"
আজও ভোরে রবি গেয়ে যায় নিত্য নতুন গান।
নাবাল জমির ওপরে, ও কে
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস
মৃতের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ।
গোরুর গাড়ির চাকায় কুমোরপাড়া থেকে অর্থকষ্টেরা
আমার বাংলা নামক খাতায় নাম লিখিয়ে পঞ্চায়েত অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আষাঢ়ে গল্পের মহানায়ক হয়ে যাচ্ছে।
এইমাত্র ছুটে চলে গেল কাহিনী থেকে বর্ণমালা।
তার পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে বইছে আগুনের পরশমণি।
ওইখানেই গোরা,
দলিতের হাতে আজও কুঁয়ো থেকে জল তুলে দিলে,ওয়েবসাইটে মৃদুস্বর মৌমাছি হুল দিবস পালন করে।
পাঁচমুড়ো পাহাড় থেকে
শ্যামলী নদী এঁকে বেঁকে চলে যাচ্ছে অমল বাইশে শ্রাবনের দিকে।
একটা জবজবে ভিজে পৃথিবীকে এইমাত্র কোন এক সৎ চাষি যেন রুইয়ে দিয়ে গেল নাবাল জমির ওপরে।
গোরুর গাড়ির চাকায় কুমোরপাড়া থেকে অর্থকষ্টেরা
আমার বাংলা নামক খাতায় নাম লিখিয়ে পঞ্চায়েত অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আষাঢ়ে গল্পের মহানায়ক হয়ে যাচ্ছে।
এইমাত্র ছুটে চলে গেল কাহিনী থেকে বর্ণমালা।
তার পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে বইছে আগুনের পরশমণি।
ওইখানেই গোরা,
দলিতের হাতে আজও কুঁয়ো থেকে জল তুলে দিলে,ওয়েবসাইটে মৃদুস্বর মৌমাছি হুল দিবস পালন করে।
পাঁচমুড়ো পাহাড় থেকে
শ্যামলী নদী এঁকে বেঁকে চলে যাচ্ছে অমল বাইশে শ্রাবনের দিকে।
একটা জবজবে ভিজে পৃথিবীকে এইমাত্র কোন এক সৎ চাষি যেন রুইয়ে দিয়ে গেল নাবাল জমির ওপরে।
বাইশে শ্রাবণ
নবনীতা সান্যাল মুখার্জি
শ্রাবণ মেঘে স্বচ্ছ তোমার ছবি ,
অন্তরে সেই ' চির নূতনের ডাক' ;
যুগান্তরেও সৃষ্টির বন্ধনে ,
আকাঙ্ক্ষিত 'পঁচিশে বৈশাখ' ।
অস্তিত্বে শ্রাবণ তাকে বাঁধে...
অপূরণীয় বৈশাখী এক ঋণ ,
বাইশে শ্রাবণ লক্ষ কোটি মনে,
আজও ভীষণ বিষাদ ঘন দিন ।
কবির কলমে শব্দ অলংকার,
সোনার ফসলে পূর্ণ মাতৃগর্ভ,
প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধতার পরশ,
বঙ্গ হৃদয়ে ঐতিহ্যের গর্ব ।
বাইশে শ্রাবণ কবিতার স্মরণিকা,
বেদনা বিধুর রবীন্দ্র বন্দনা--
বাইশে শ্রাবণ অশ্রু সজল নদী,
ঐশ্বরিকী দেবতার অর্চনা ।
কলম সোনার স্পর্শে গাঁথা তরী,
যে তরী তে ছিল ফসলের তর্পণ !
হঠাৎ কবির সেই তরী তেই ঠাঁই ,
স্তব্ধ কলমে কাঁদছে বাইশে শ্রাবণ !!
কালো দিন
সুব্রত নন্দী
তুমি আছ অন্তরের প্রতিটি শিরা উপশিরায়,শয়নে স্বপনে মননে.....
প্রভাতের আলো হতে তিমির রজনী...
প্রতিটি ক্ষণে অনুভবে শুধুই তুমি।
পলে পলে বুঝি তোমার সমুদ্র উপস্থিতি!
---জন্মের হাতে ছিল মৃত্যুর পরোয়ানা!
বাইশে শ্রাবণ দিনটা বড্ড আঁধার!
স্থবির বিশ্বকবি,স্তব্ধ লেখনী,
অমানিশার গহীন আঁধার ঘরে বাইরে ।
এ ভুবনে চিরস্থায়ী কেউই নয়!
চিরস্থায়ী শুধু রেখে যাওয়া অমূল্য সৃষ্টির ভাণ্ডার।
বিশলতার ভাণ্ডারে এখনও নুড়ি কুড়িয়ে চলেছি....
তবুও তোমার সাহিত্যের সংসারেই শেষ নিঃশ্বাস রাখতে চাই!!
অসীম বলয়
সঞ্চিতা দাস
কবিগুরু থাকে সকলের পাশে
শ্রাবণ ধারার সাথে,
কত কথা হয় তাঁহার সঙ্গে
ঘনঘোর বর্ষাতে।
আনন্দে তিনি থেকে যান পাশে
দুঃখেও অবিরত-
কান্না হাসির দোলায় দুলিয়ে
ভোলান মনের ক্ষত।
অসীমের মাঝে যে সুর গেঁথেছে
শ্রাবণে যায় না ধুয়ে
মায়ার বাঁধন শক্ত করেছে
রয়ে গেছ মন ছুঁয়ে।
না-বলা বাণী নীরব হলেও
সাধারণ মেয়ে আসে-
চোখের আলোয় স্বপ্নের মাঝে
মাধবীলতাই ভাসে।
শিখা হারা ওই প্র্দীপখানি
ঘোরে ফেরে হাতে হাতে-
ঝড়ের রাতে ঝড় হয়ে ওঠে,
সুরের মূর্ছনাতে।
সেই দীপ জ্বালো
নিশীথবরণ চৌধুরী
তুমি চলে গেছো শ্রাওনো রোদনে
সে তো হয়ে গেছে বহুদিন,
তোমার তিরোধানে থেকেছে দেশ ও জাতি
নিশ্ছিদ্র আঁধারে।
বিন্দু বিন্দু বারিষ ধারায় ছিন্ন বীণা এনেছে বাইশে শ্রাবণ,
প্রকৃতির বিস্মৃত সুর আকাশে নৈঃশব্দ্য করেছে ভঙ্গ।
ক্রন্দিত শ্রাওণ খুঁজছে উত্তর--
কেন আজও মৌলবাদের ধর্মীয় বাতাবরণ,
অসহিষ্ণুতার বিষবাষ্প, জাতির বুকে করে করাঘাত।
আজ বড়ো সংকটে জাতির হৃদয়
একই সূত্রে বন্ধনহীন সহস্রটি মন
কেমন বিভেদের জালে নিষ্ঠুর নির্দয়?
যে জাতি ডুবে আছে অতল তিমিরে,
এবার উদ্ধার করে পারো যদি আলোকের পথে নিয়ে চলো।
প্রেমের যে দীপ আমরা পারিনি জ্বালাতে,
অন্তরীক্ষ হতে সকলের হৃদয়ে সেই দীপ জ্বালো।
ওগো দুখজাগানিয়া
সন্দীপ্তা মজুমদার
আজ বাইশে শ্রাবণ।তোমারই খেয়ালে উদাসী দিন যায়।
জানি না কোথায় যেন বাঁশি বাজে।অমর্ত্যলোক থেকে?
আমায় কোন সকালে ডাক দিয়ে যায় তোমার না বলা বাণী,
আমি বকুল যুথির মালা গাঁথি অশ্রুনদীর জোয়ার-ভাঁটায়।কবি তুমি কি বলতো!!!কেন...কেন বারণ মানো না?
উদাস বাউলের একতারা হাতে বারবার আঁকো স্বপ্নের আলপনা।
জানো তো ,স্বপ্ন বিলাস আমাকে মানায় না।
যে মাটি বন্ধ্যা,ফসল ফলানোর মন্ত্র তার হাতে তুলে দিলেই কি সে পারে পেলব নরম বুকে হাল চালাতে?
তুমি তো শিখিয়েছো আমায় পাহাড় খুঁড়ে ঝর্ণা এনে নদীর বুকে জুড়ে দিতে,দিয়েওছি বারবার।
তবুও তো আমার বাগানে আতপ্ত 'থর'.. নিদাঘের খরা..।সেই মরুর পথে যে হেঁটে যায় দৃপ্ত পায়ে,সে তুমিই কবি।
আসলে মনেরও তো একটা আয়না থাকে,
যেখানে তোমার শেখানো 'চার অক্ষর' নিজের নাম লেখে অনুক্ষণ,'ভা.লো.বা.সি'।সুগন্ধি নয় ,সৌরভই যার পাথেয়।
বাইশে শ্রাবণ
দীপ্তিমান মোদক
প্রতিবছর আসে।
শ্রাবণের ধারার সাথে অশ্রুধারা মেশে।
মৃত্যু সে তো শুধু শরীরে
শ্রদ্ধার সলতে ফুরোয় না
সৃষ্টির প্রদীপ আজও জ্বলে
কোনোদিনও ভুলব না,তুমি রয়েছ অন্তরে।
শ্রাবণের ধারার সাথে অশ্রুধারা মেশে।
মৃত্যু সে তো শুধু শরীরে
শ্রদ্ধার সলতে ফুরোয় না
সৃষ্টির প্রদীপ আজও জ্বলে
কোনোদিনও ভুলব না,তুমি রয়েছ অন্তরে।
চেয়ে দেখো তুমি
তোমার বিশ্বে আজও পাখি গান গায়
মাঠে কৃষক সোনালি ধান ফলায়
তোমার "তারাপদ "আজও প্রকৃতির অপেক্ষায়
আজও ভালোবাসার চিঠি নিয়ে "পোস্টমাস্টার" আসে
"সুভা"আজও নীরব থাকতে ভালোবাসে।
তোমার বিশ্বে আজও পাখি গান গায়
মাঠে কৃষক সোনালি ধান ফলায়
তোমার "তারাপদ "আজও প্রকৃতির অপেক্ষায়
আজও ভালোবাসার চিঠি নিয়ে "পোস্টমাস্টার" আসে
"সুভা"আজও নীরব থাকতে ভালোবাসে।
চেয়ে দেখো তুমি
সাহিত্য আজ আলোকিত তোমারই কারণে
শুধু আজ নয়
তোমার চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ক্ষণেক্ষণে।
সাহিত্য আজ আলোকিত তোমারই কারণে
শুধু আজ নয়
তোমার চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ক্ষণেক্ষণে।
হে কবি
জয়তোষ ঘোষ
মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছিলে তুমি,
তাই মৃত্যু পরাজয়ে , তুমি মৃত্যুঞ্জযী ।
বাংলা মাকে সাহিত্য তুলেছো তুমি,
তাই সোনার বাংলা হযে উঠেছে স্নেহমযী ।
তোমার লেখায বাংলার মাঠ-ঘাট-ভূমি
তোমার উপেন আজো কাঁদে
ফিরে পেতে দুই বিঘা জমি ।
তোমার আশা বিনোদিনীর আজো চোখের বালি,
মহেন্দ্র আর বিহারী অপেক্ষার ই মালি ।
তোমার মূক সুভাষিনী গোয়াল ঘরের বাঁয়
প্রিয় বন্ধু গাভীটির আজো কথা বলে যায়।
বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র তুমি
বিশ্ব সাহিত্য দরবারের সাজে ,
আমাদের সাহিত্যকে করেছো প্রস্ফুটিত
বিশ্বে সবার হৃদয় মাঝে ।
২২ শে শ্রাবণ নিয়ে আসে বিষাদের রেশ
আপন হারাবার দুঃখ নিয়ে।
তোমার সম্মুখে দারায়ে বলি বেশ ।
হে কবি ! হে বিস্ময় !
তুমি আমাদেরই লোক,
তুমি আমাদেরই লোক
তুমি আমাদেরই লোক ।
ছবি এঁকেছেন- দীপশিখা চক্রবর্তী
বাইশে শ্রাবনে কল্পকথা
সপ্তক
এলোমেলো বৃষ্টিবাতাস ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে অমিতেশকে, দরজার পর্দা উড়িয়ে দিয়ে শ্রাবণ বাতাস এলোপাতাড়ি ঢুকে পড়ছে ঘরের মধ্যে; ঢুকুক, বেশ লাগছে। সিগারেটে একটা টান দিয়ে ঝাঁপসা আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল ঠিক উনিশ বছর আগে এই বাইশে শ্রাবনের দিনে এমনই মুখ ভার করা আকাশ আর ঝোড়ো শ্রাবণ হাওয়ায় মাতাল হয়েছিল মন। না, বাইশে শ্রাবনের কথা সেভাবে হয়তো মানুষ মনে রাখে না যতটা মনে রাখে পঁচিশে বৈশাখকে। কিন্তু এই বাইশে শ্রাবনের কথা দাদুর মুখে এতবার শুনেছে অমিতেশ, অবচেতনেই মন সজাগ হয়ে ওঠে কবে বাইশে শ্রাবণ আসছে। দাদু তখন কলকাতায় কলেজে পড়তেন, সেটা ১৯৪১ সাল, কবিগুরু এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় আক্রান্ত, চিকিৎসার সুবিধার জন্য কবিকে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে আনা হল। বহু দর্শনপ্রার্থী ভীড় করেছিল কবিকে দেখতে; দাদুও গিয়েছিলেন, দেখবার অনুমতি মেলেনি। কিন্তু তীব্র যন্ত্রনা ও শরীরের অন্যান্য জটিলতায় কাতর কবি মাত্র সাতদিন থাকতে পেরেছিলেন জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। ৭ই অগাস্ট দুপুর বারোটার পর কবি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে যান অন্যলোকে। কেওড়াতলা মহা শ্মশানের পথে কবির অন্তিম যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। কবিকে শেষ দেখা দেখবার আশায় উৎসুক মানুষের ঢলে পা মিলিয়েছিলেন দাদুও। সমগ্র কলকাতা বাসী যেন ভেঙে পড়েছিল কবির শেষ যাত্রায়। প্রবল হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি অগ্রাহ্য করে কবিকে দেখবার সুযোগ হয়েছিল দাদুর; প্রিয় কবিকে অন্তিম শয়ানে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বহুবার এই গল্প বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন দাদু। কবির এই অন্তিম যাত্রার কথা অমিতেশ এতবার দাদুর মুখে শুনেছে যে মনে হত, দাদু নয়, কবির শেষ যাত্রার সাক্ষী ছিল সে নিজে।
ঠিক উনিশ বছর আগে এই দিনে আকাশ এমনই গম্ভীর ছিল, অমিতেশ বেরিয়েছিল পুরোনো বন্ধু দেবোপমের সঙ্গে দেখা করতে। পথে তেড়ে বৃষ্টি এলো, রক্ষা পেতে অন্য অনেকের মতোই একটি অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে ঢুকে পড়েছিল সে। সেখানে তখন বাইশে শ্রাবণ স্মরণে চলছে অনুষ্ঠান, মঞ্চে ঊর্মিলার কন্ঠ মাধুর্য ছড়িয়ে পড়ছে.."নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায় সমবৃত অম্বর হে গম্ভীর"; শুনতে শুনতে এক মিষ্টি আবেশ ছড়িয়ে পড়ছিল অমিতেশের শিরা উপশিরায়। ঊর্মিলা পরপর আরো দুটো গান গাইলো."গহন ঘন ছাইলো গগন ঘনাইয়া" আর "আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে"। অমিতেশের মনে হচ্ছিল শ্রাবণ আকাশ আরো ঝরে পড়ুক আর গান চলতে থাকুক এভাবেই। ঊর্মিলার গান শেষ হলে পরবর্তী শিল্পী মঞ্চে উঠলেন, কিন্তু অমিতেশের কানে ঊর্মিলার গানের রেশ লেগে রইলো। বৃষ্টি থামলে অমিতেশ বেরিয়ে পড়লো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে; কিন্তু যখন দেখলো ঊর্মিলাও একই পথে হাঁটছে, তখন দাঁড়ালো; আলাপ করে জানলো ঊর্মিলাদের বাড়ি দেবোপমের বাড়ির কাছেই, দেবোপম ঊর্মিলার খুড়তুতো দাদা। ঊর্মিলাই অমিতেশকে নিয়ে গেলো দেবোপমের বাড়িতে, তারপর থেকে অমিতেশ মাঝে মাঝেই যেতো দেবোপমের বাড়িতে ঊর্মিলার প্রতি এক দুর্বোধ্য টানে। এভাবেই কখন ঊর্মিলা জড়িয়ে গেল অমিতেশের জীবনে। এরকমই এক শ্রাবণমুখর দিনে ঊর্মিলা শুনিয়েছিল.."এমন দিনে তারে বলা যায়.."।
ঘোর কাটলো ঊর্মিলার রাগত স্বরে, – "দরজা খোলা রেখেছো যে? ঘরবাড়ি তো ভিজে একসা হয়ে গেলো! বাজারে যাবার কথা মনে হয় ভুলেই গেছো!"
–"কিচ্ছু ভুলিনি, এই যাবো এখন।"
–"শোনো, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরো, বুবুনের জন্য একটা জিন্স কিনতে হবে আর একটু পার্লারেও যাবো, অনেকদিন যাওয়া হয় না।"
এক বর্ষাকে সাক্ষী রেখে এক আবেগঘন মুহূর্তে ঊর্মিলা একদিন বলেছিল অমিতেশকে ছাড়া তাঁর এ জীবনে আর কিছু চাই না কোনদিন, সে কথা কি মনে পড়ে ঊর্মিলার?
ঊর্মিলার অনুযোগ ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে অমিতেশ শুধলো, –" একটা গান গাইবে ঊর্মিলা? সেই গানটা "আবার শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে..", গাইবে?"
–"তোমার এত রোমান্স কোথা থেকে আসে বলতো? ছেলে যে সতেরোয় পা দিলো সে খেয়াল আছে তোমার?"
–"আছে, কিন্তু আজ যে বাইশে শ্রাবণ! সে খেয়াল আছে তোমার?"
–"হোক বাইশে শ্রাবণ, এখন গান গাওয়ার সময় নয়।" দ্রুত পায়ে চলে গেল ঊর্মিলা।
হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অমিতেশ মনে মনে বললো, "কবি, তুমি সেখানেই যাও যেথায় প্রেম আছে বারো মাস, যেথায় তোমার ছোঁয়ায় জাগে প্রাণ।"
এসো নীপবনে...
রবীন্দ্রনাথ ও কদম্বপ্রেম...
কাকলি ভদ্র
বর্ষা মানে ঝাপুর ঝুপুর বৃষ্টি। বর্ষা মানেই বৃষ্টির রিমঝিম নিক্বন। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ হলুদবরণ কদম ফুলের সুবাস।আর এই কদম ফুলের সুবাস জানান দিয়ে যায় নবযৌবনা বর্ষার আগমনী বার্তা। কদম ফুলের সরস সোনালী রূপে সেজে ওঠে বাংলার বর্ষা ।যদিও শহুরে ডিজিটাল আঙিনায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই যেন অতীত।প্রাচীন সাহিত্যে বর্ষাঋতুকে বলা হয় বিরহের ঋতু।কারণ বর্ষা নামার সঙ্গে সঙ্গে পথঘাট ও মাঠপ্রান্তর বর্ষার জলে ডুবে যেত। যাতায়াত জন্য সেরকম কোনও যানবাহন তখন ছিল না। বাইরে থাকা স্বামীরা বর্ষা নামার আগেই বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু কেউ যদি বর্ষার আগে বাড়ি ফিরতে না পারতো তাহলে তাকে পুরো সাত মাসই কাটাতে হতো একাকী নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে।আর এই বর্ষার ফুল "কদম" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "কদম্ব"থেকে যার মানে হলো 'যা বিরহীকে দুঃখী করে'।তাই হয়তো বর্ষার সাথে কদমের ভালোবাসা খুবই নিবিড়। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
প্রকৃতির পূজারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা,লেখায় কদম ফুলকে নানা ভাবে পেয়েছি। কদম ফোটার মূহুর্তের বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন
‘গুরু গুরু ডাকে দেয়া,
ফুটিছে কদম কেয়া.... '
বর্ষার গানে ফুল বা গাছ আছে অথচ কদম নেই রবীন্দ্র সঙ্গীতে সচরাচর এটা হয় না। শান্তিনিকেতনে ১৯২৭ সালের ঋতুরঙ্গ উৎসব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা শ্রীমতি অমিতা সেন লিখেছেন,"মনে পড়ে ঋতুরঙ্গের মহড়া চলছে।রচনা করলেন ' শ্রাবণ, তুমি বাতাসে কার আভাস পেলে।'...পরদিন উদয়নে মেয়েদের শেখাচ্ছেন সেই গানের ভাবনৃত্য...'কদম ঝরে, হায় হায় হায়।...মুগ্ধ নয়নে আমরা দেখছি তাঁর হাতের ভঙ্গীতে ঝরে পড়ছে ফুল।"
বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায়,গানে কদমকে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। তাঁর হাত ধরেই কবিতার মাধ্যমে কদম যেন পূর্ণতা পেয়েছে।
“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল
করেছ দান।
আমি দিতে এসেছি
শ্রাবনের গান।..."
কবির বর্ণনায় এখানে বর্ষা তার প্রকৃতিরূপী প্রিয়াকে বরণ করছেন কদম ফুল দিয়ে।
বর্ষাকে নিয়ে তিনি লিখেছেন. ’কদম্বেরই কানন ঘেরি আবার মেঘের ছায়া খেলে’। কদম ফুলের হলুদ আর সাদা রঙের মনমাতানো মিশ্রণে আর আকুল করা ঘ্রাণে কবির সুদৃঢ় উচ্চারণ, ’কদম্ববন গভীর মগন আনন্দঘন গন্ধে'। কদম ফুলের প্রেমে বড়ই মজে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।তাই তো তিনি লিখেছেন,'ফুটুক সোনার কদম্ব ফুল নিবিড় হর্ষণে'...অথবা 'নবকদম্ব মদির গন্ধে আকুল করে'...
কদমের আরেক নাম ‘নীপ’। রবীন্দ্রনাথের নানা গানে আমরা নীপ শব্দটির প্রয়োগ দেখেছি—
‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে’।
'ব্যথিয়া উঠে নীপের বন পুলক ভরা ফুলে’।
'বিকচ নীপকুঞ্জের নিবিড় তিমির পুঞ্জে।'
'নীপবনে পুলক জাগায়।'...এমন বহু কবিতা,গানে,লেখায় তিনি কদম ফুলকে 'বর্ষার দূত' হিসেবে তুলে ধরেছেন।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি থেকে বাদ পড়ে নি জনজীবনের ঘরে বাইরের কোনো কিছুই.... সেই জন্যই তিনি হতে পেরেছেন মহান এবং অমর। তাঁর চিন্তার সৌন্দর্য ছিল এটাই যে তিনি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অভ্যন্তরে তাঁর চাওয়াগুলোকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন গভীর এক আবেদনের মাধ্যমে। আর সে কারণেই তিনি আজও রয়েছেন আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে।
আশ্রয়ে রবীন্দ্রনাথ
সুপর্ণা চৌধুরী
শ্রাবণ মাস। সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে। জানালার বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। জানালায় বসে সজল চোখে বাইরের দিকে উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ডালিয়া। গতকাল বিকেলে মিতাপিসির ফোনে মর্মান্তিক সংবাদটা পেয়েছে সে। হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন তপনকাকু। ডালিয়ার কানে যেন বাজছে তপনকাকুর গলা, " গানটা ছাড়িস না, মা? তোর সম্পদ ওই কন্ঠটাকে যত্নে রাখিস।"
এক পাড়ায় থাকার সুবাদে ডালিয়াদের পরিবার আর তপনকাকুদের
পরিবারের মধ্যে অত্যন্ত ঘণিষ্ঠতা ছিলো।তপন কাকু আর তার অবিবাহিতা বোন মিতা পিসি দু'জনেই সরকারী চাকুরে হলেও গান-বাজনা ওঁদের প্রাণ। বাড়ির নিচ-তলায় ওঁদের গানের স্কুল। সেখানেই গান শেখে ডালিয়া। প্রতি বছর তপন কাকু আর মিতা পিসির উদ্যোগে আর উৎসাহে তাদের গানের স্কুলে পালিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, বাইশে শ্রাবণ, স্বাধীণতা দিবস, সরস্বতীপুজো প্রভৃতি। এবছরও গত সপ্তাহ থেকে বাইশে শ্রাবণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডালিয়ারা।
হঠাৎ মিতা পিসির জন্য খুব কষ্ট হতে লাগলো ডালিয়ার। দু'ভাই বোনের সংসারে একদম একলা হয়ে গেলেন মিতাপিসী। অল্প বয়সে তপনকাকুর স্ত্রী বিয়োগের পর দাদা আর ভাইপো প্রীতমকে নিয়েই ছিলো তার পরিবার। প্রীতম চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যাবার পর দাদাই ছিলেন মিতাপিসীর অখন্ড সহচর। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়ে, গানকে আশ্রয় করেই জীবন কাটচ্ছিলেন দু'ভাই-বোন।
একবার খুব মিতা পিসিকে দেখতে ইচ্ছে হলো ডালিয়ার। শেষ খবরটা পেয়েও নিথর শুয়ে থাকা প্রাণবন্ত তপনকাকুকে দেখতে যেতে পারে নি সে। ওই বাড়িতে হয়তো কোনদিনই আর ঢুকতে পারবে না ডালিয়া। চোখের জল মুছে ডালিয়া ফোন করলো মিতাপিসীকে। ক্লান্ত কন্ঠে মিতা পিসি বললেন, "ডালিয়া, বল।"
কী বলবে ডালিয়া? খেই হারিয়ে কোনক্রমে ডালিয়া বলল, " ক্-কেমন আছো, পিসি? শরীর কেমন আছে তোমার?"
"আছি রে এক রকম। সব মিটিয়ে প্রীতম কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে। আজ রাতেই ওর ডারবানে যাবার ফ্লাইট", কথাগুলো বলে স্তব্ধ হয়ে রইলেন মিতা পিসি।
কথার খেই ধরে ডালিয়া, "কিভাবে কি যে সব হয়ে গেলো!" উত্তরে মিতা পিসি বলে চলে, " কিছুই বুঝতে পারলাম না রে। দুপুরে রেওয়াজে বসেছিল দাদা। তারপর বাইশে শ্রাবণ অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত 'মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান'--- গানটি গাইতে গাইতেই........"। ডালিয়া বুঝতে পারলো গলা ধরে গেছে পিসির, " দাদা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন রে....!" কথা খুঁজে না পেয়ে ডালিয়া বললো, " তুমি বড্ড একা হয়ে গেলে গো, পিসি?। অতবড় বাড়িটা একেবারে খা খা করবে..."
একটুকু নীরবতার পর ফোনের অপর প্রান্তে শোনা গেলো মিতা পিসির শান্ত, অথচ দৃঢ় কন্ঠস্বর, "একদম না রে। আমি তো একা নই। গানের সব ছাত্রীরা আছে, তুই আছিস। আর মাথার ওপর আরেকজন আছেন ছায়াচ্ছন্ন বিশাল বটগাছ হয়ে--- রবীন্দ্রনাথ, যাঁর সৃষ্টির অতল বুকে আমার দুঃখ-শোককে রেখেছি রে, ডালিয়া।" বলে চলেন মিতা পিসি, "আর দাদার কাজটা তো আমাকে
করে যেতেই হবে রে। ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে ধরে গান শিখিয়ে তোলার কাজ। আর বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানটা আমাদের করতেই হবে। দাদা তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তুই সেই গানটা প্র্যাকটিস করে আসিস কিন্তু 'জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে'...."। ফোনের এ প্রান্তে নির্বাক হয়ে বসে রইলো ডালিয়া।
বাইশে শ্রাবণ
সোমা বোস
- আমি পেছনে ফিরবো না রাহুল, তাহলে বডি-ব্যালেন্স নষ্ট হতে পারে।
- আচ্ছা পেছনে ফিরতে হবে না তোকে, শুধু তোর হাতটা একটু পেছনে বাড়িয়ে দে… তাহলেই হবে।
- কি মুশকিল! তাতে কী হবে?
- তোর হাত ধরে একটু এগিয়ে যেতাম, এই আর কি...।
- মানে? এই খাড়াই পথে তুই আমার হাত ধরে এগোবি! তাতে তো দুজনেরই বডি-ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে! কি যে সব বলিস না তুই! ফলো মী, জাস্ট আমার পেছনে পেছনে এগিয়ে আয় ভীতু কোথাকার!
- আমাকে তুই ভীতু বললি? ভীতু হলে কেউ ট্রেকিং করতে আসে!
- সে তো আমার পাল্লায় পড়ে এসেছিস। হি হি…।
- মিশকা, আমি ভীতু কিনা দেখাচ্ছি তোকে দাঁড়া!
- কী করবি তুই আমার? হ্যাঁ কী করবি? হি হি…।
- দাঁত বার করে অ্যাতো হাসিস না তো, যত্তোসব! আমি মরছি আমার জ্বালায়, আর উনি দাঁত বার করে খিকখিক করে হেসেই চলেছেন!
- এই, দাঁড়া দাঁড়া.. তোর আবার কিসের জ্বালা রে?
- ও তুই বুঝবি না।
- বোঝালেই বুঝবো।
- দেখছিস তোর চেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি, তারপরও যখন বুঝতে পারছিস না তাহলে আর বুঝে কাজ নেই!
- হিংসে করছিস আমায়? হাহাহা…।
- বয়ে গেছে তোকে হিংসে করতে!
- করছিস তো!
- তুই আমার হিংসার যোগ্যই না, বুঝলি?
- যা যা, ভীতুর ডিম! বেশী কথা বলিস না।
- মিশকা, আবার রাগিয়ে দিচ্ছিস কিন্তু!
- ওরে রাহুল, আমরা রাস্তা প্রায় মেরে এনেছি রে। সামনেই একটা সমতল রাস্তা মনে হচ্ছে আর ওখানে একটা গুমটি, মানে চায়ের গুমটি দেখা যাচ্ছে। চ’, ওখানে বসে একটু চা খেয়ে জিরিয়ে নিই বরং ।
- সেই ভালো ।
অবশেষে খাড়াই পথ বেয়ে তারা একটু সমতলে একটা রাস্তায় এসে পড়লো। রাস্তার ওপারে সামনের দিকে সত্যিই একটা গুমটি মতন দেখা যাচ্ছে। তাতে একটা বেঞ্চিতে দু’চারজন লোক উবু হয়ে বসে আছে। এক লেপচা মহিলা মাফলার-মোড়ানো মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের সাথে সমানে কী যেন বকবক করছে আর সামনের উনুনে একটা বড় কেটলিতে ধোঁয়া ওঠা চা ফুটিয়ে যাচ্ছে। পাশের উনুনটাতেও একটা বড় পাত্র বসানো, তার ঢাকনির পাশ দিয়ে বেরোনো ধোঁয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে ঢিমে আঁচে তাতেও কী যেন ফুটছে। তাদের দু’জনকে দেখে গুমটি থেকে একটা লেপচা ছেলে বেরিয়ে এসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞেস করলো তারা চা খাবে, নাকি মুর্গীর গরম গরম স্যুপ খাবে? এতোখানি ট্রেকিং করে এসে তাদের একটু হালকা ক্ষিদে পেয়ে গেছে। তাই আর দ্বিধা না করে গরম স্যুপের অর্ডার দিয়ে তারা বসলো। তবে মিশকা যতটা না হাঁপিয়েছে, রাহুল তার চেয়ে অনেক বেশী হাঁপাচ্ছে। এই ঠান্ডাতেও রীতিমতো ঘেমে ঝোল হয়ে গেছে সে। এইসব ট্রেকিংয়ে তার একেবারেই অভ্যেস নেই। নেহাতই মিশকার সাথে ঘোরার লোভে সে এই ট্রেকিংয়ে সামিল হয়ে পড়েছে। মিশকা বরাবরই ডাকাবুকো মেয়ে। প্রায় প্রতিবছরই সময় পেলে সে দলবল জুটিয়ে বেরিয়ে পড়ে ট্রেকিংয়ে।
রাহুল আর মিশকার বাবা একই কর্মজগতের লোক। তাই তাদের দুই পরিবার অতীতে একসাথে নানা জায়গায় ঘুরতেও গেছে। সেই সূত্রেই তাদের ছোট্টবেলার হামাগুড়ি বয়সের বন্ধুত্ব। আজকাল অবশ্য কর্মক্ষেত্রের কাজের চাপে তাদের বাবা-মায়েদের বেরোনো প্রায় হয়েই ওঠে না আর। এদিকে বরাবরই মিশকার এই ট্রেকিংয়ের শখ। পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়ের এই শখ পূরণে তার বাবা-মা কোনোদিন বাধা তো দেয়ইনি, বরং উৎসাহ দিয়ে এসেছে। ওদিকে রাহুল পড়াশোনায় নিজেকে এতোটাই ব্যস্ত রেখেছিল যে এসব বেড়ানোর নেশা তার মাথা থেকে প্রায় বেরিয়েই গিয়েছে। কিন্তু এবারে ডাক্তারী পড়ার ইন্টার্নশিপ কাটিয়ে বাড়ীতে ফেরার পরে একদিন তাদের দুই পরিবারের এক ঘরোয়া আড্ডায় তার হঠাৎ মনে হলো কিছুদিন কোথাও ঘুরে আসলে হয়। কথাটা তার মুখ থেকে বেরোতেই মিশকা লাফিয়ে উঠে বললো “যাবি? আমাদের দলের সাথে ট্রেকিংয়ে যাবি?”
- ট্রেকিং? তাও আবার এই ভারী বর্ষায়? না বাবা, আমার অতো সাহস নেই!
- আরে আমি আছি, আমার দলবল আছে। অতো চিন্তা কিসের?
- তুই যা ডানপিটে, তোকেই মানায় ওসবে। আমি নেই ওতে।
- আমি ডানপিটে? তবে তুই কী? ভীতুরাম একটা!
- আমি ভীতু? যা না, আমার মতো মরা কাট না দেখি কেমন পারিস!
- হুঃ, ও আর এমন কি! চারপাশে তো অনেক লোক থাকে। একা একটা ঘরে মরা কাটতিস যদি, তবে বুঝতাম! আসলে তুই ভীতুই...। হিহি...।
- ওহো, ট্রেকিংয়ে গেলেই সাহসী বুঝি? চল তবে তোর দলের সাথে ট্রেকিংয়েই যাবো চল।
- চল না, গিয়ে দেখবি কতো সাহস লাগে আর মনের কতো জোর লাগে।
সেই সেদিন তাদের এই ট্রেকিংয়ের প্ল্যান শুরু হল আর পরে তা বাস্তব রূপ নিলো। রাহুলের ধীরগতির জন্যে এই মূহুর্তে তারা দু’জনে একটু দলছুট হয়ে পড়েছে। গরম স্যুপ পেটে গিয়ে রাহুলের চোখমুখের অবস্থা এখন বেশ স্বাভাবিক। ফ্রেশ হয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে এবার গুমটির স্থানীয় লোকজনকে সে জিজ্ঞেস করলো যে এখানে আশেপাশে দেখার মতো কী কী আছে। তাতে তারা প্রথমে বললো সেরকম কিছু নেই। এই পাহাড়, চা-বাগান এসবই...। তবে একজন জানালো রবিঠাকুরের একটা জায়গা আছে, কলকাতার লোকেরা নাকি অনেকসময় এখানে সেটা দেখতে আসে। তা শুনে মিশকা লাফিয়ে উঠলো, এটা মংপু তো তাই না? তাহলে এখানেই তো সেই “ন হন্যতে” উপন্যাসের সৃষ্টিকর্ত্রী থাকতেন। জানি জানি…। কোথায়, কোনদিকে সেই বাড়ী?”
- কিসব বলছিস? উপন্যাসের নাম “ন হন্যতে”? স্যান্সক্রিট উপন্যাস? তুই পড়েছিস? তোর পায়ের ধূলো দে আমার মা!
- ধুত, স্যান্সক্রিট হবে কেন! নির্ভেজাল বাংলা উপন্যাস। তুই নাম শুনিসনি? অবশ্য শুনবিই বা কি করে! রাতদিন মরা ঘাঁটলে আর এসব কেউ শোনে! হিহি...।
- হ্যাঁ রে, মরা ঘাঁটি বলেই অনেকের জীবন বাঁচে। যা যা, তোদের মতো অতো ফালতু গল্পের বই পড়ার সময় কোথায় আমার!
- কী বললি! ফালতু গল্প? যা, তোকে আর কিছু বলে লাভ নেই।
- খুব লাভের হিসেব করিস দেখছি! তা কী এমন মহান বস্তু আছে সেই গল্পে?
- আছে অনেক কিছুই, কিন্তু তোকে বলে লাভ নেই। তুই বুঝবি না, ফালতু মনে হবে।
- আরে বলবি তো কী আছে!
- লাভ আছে, বুঝলি কিছু?
- লাভ আছে মানে? পড়লে লাভ আছে?
- হুঁ, সেই লাভও আছে, আবার অন্য লাভও আছে। বুঝলি কিছু?
- নাহ্, কিছু বুঝলাম না।
- এক বিদেশী ভদ্রলোকের সাথে আমাদের এক বাঙালী ললনার প্রেমের কাহিনী। বইটা খুব আলোড়ন ফেলেছিল আর খুব জনপ্রিয় এক উপন্যাস। ওটা রচনা করেছিলেন যে মৈত্রেয়ীদেবী, তিনি আবার রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত স্নেহধন্যা ছিলেন।
- ওহ্, তাতে কী? মানে এখানে রবিঠাকুরের এক জায়গার সাথে তার কী সম্পর্ক?
- আছে, খুব নিবিড় এক সম্পর্ক আছে। রবিঠাকুরের সেই জায়গা হল সেই মৈত্রেয়ীদেবীর বাড়ী। তিনি এখানে থাকতেন।
- ও, তাঁর বাড়ী ছিল এখানে? তাতেই এটা রবিঠাকুরের জায়গা হয়ে গেলো? বাহ্, বেশ মজার ব্যাপার তো!
- আরে, মৈত্রেয়ীদেবী ১৯৩৪ সালে ডঃ মনোমোহন সেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মনোমোহন সেন ছিলেন একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনি মংপুতে সিনকোনা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ছিলেন ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ভেষজ সিনকোনা চাষ নিয়ে গবেষণা করেন। তো সেই মৈত্রেয়ীদেবী রবীন্দ্রনাথঠাকুরের বিশেষ স্নেহধন্যা হওয়ায় তাঁরা মংপুতে থাকাকালীন রবিঠাকুর মৈত্রেয়ীদেবীর আমন্ত্রণে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালে চারবার এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। এটা কি কম বড় কথা? তো তাতে হল না এটা রবিঠাকুরের জায়গা! কিচ্ছু জানে না এই হবু ডাক্তারবাবু!
- কিন্তু তুই এতোসব জানলি কি করে! এঁদের সম্পর্কে রীতিমতো পড়াশোনা করেছিস মনে হচ্ছে!
- হ্যাঁ স্যার, অধমের এরকম শখও একটুআধটু আছে বৈকি!
- তোর পায়ের ধূলো একটু দে মা!
- চ’ চ’, বেশী কথা না বলে চ’ সেই বাড়ীটা দেখে আসি।
- চ’...। আচ্ছা, রবিঠাকুর এখানে ১৯৪০-এও এসেছিলেন বললি?
- হ্যাঁ, তাতে কী?
- না মানে, তখন তো ওঁনার প্রায় শেষ বয়স।
- হুঁ, তা ঠিক। ১৯৪১ সালের ০৭ই আগস্ট, বাংলা ২২শে শ্রাবণ তিনি মারা যান ৮০ বছর বয়সে। তাহলে হিসেব মত তিনি এখানে ৭৯ বছর বয়সে শেষবারের মতো এসেছিলেন।
- সেটাই ভাবছি, ওই বয়সে তিনি এই পাহাড়ে আসার সাহস পেলেন কি করে! আমি এই বয়সেই ট্রেকিংয়ে কিরকম হাঁপিয়ে যাচ্ছি আর…!
- কি মুশকিল, উনি তো আর ট্রেকিং করে এখানে আসেননি!
- তা বটে। বাই দ্য ওয়ে, আজই তো ০৭ই আগস্ট, আজ তো তোর জন্মদিনও। তাই না? আবার আজই বাইশে শ্রাবণ, মানে ওঁনার মৃত্যুদিন। বাহ্, এ তো দারুণ কোয়েনসিডেন্স!
- হুঁ, হুঁ বাবা! আমার জন্মের সালেও এরকমই হয়েছিল।
- মানে?
- মানে প্রত্যেক বছর ২২শে শ্রাবণ পড়ে ইংরিজীর ৮ই আগস্টে। আর রবিঠাকুরের মৃত্যুর দিন যে সালে ছিল, তখন তা পড়েছিল ৭ই আগস্টে। আবার আমার আবার জন্ম যে সালে হয়েছিল, তখনও ওই দিনটা পড়েছিল ৭ই আগস্টে।
- বলিস কি! সত্যিই?
- সত্যি না তো কি, মিথ্যে? ধুস। চল চল, আমরা এবারে বেরোই। খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে। এবারে বেরোনো যাক।
- হ্যাঁ, কিন্তু ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে গেলো যে! একটু কমুক নাহয়, তারপরেই...।
- শ্রাবণ মাসে ভারী বরষণ হবে, এ তো জানা কথা। তা বলে কি তার কমার অপেক্ষায় আমরা বসে থাকবো নাকি? তবে তুই বসে থাক, আমি চললাম।
- এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যায় না! নে, চল চল। পড়েছি পাগলীর হাতে, যেতে এখন হবেই সাথে! তাহলে এখন আমরা চলেছি রবিঠাকুরের স্নেহধন্যা সেই মৈত্রেয়ীদেবীর বাড়ীর দিকে, যিনি একটি মহৎ প্রেমের উপন্যাসের রচয়িতা!
- একদম একদম…। কিন্তু আমাকে পাগলী বলার মজা দেখাবো তোকে।
- সে নাহয় পরে দেখাস। এখন আপাতত আমাদের যাত্রা শুরু। তো আজ এই শুভ দিনে এবং এমন এক বর্ষণমুখর দিনে আমাদের প্রেমের উপন্যাসটিরও শুভ সূচনা হয়ে যাক, ক্ষতি কি!
স্মৃতির বাইশে শ্রাবণ
পিয়াংকী মুখার্জী
"আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে , জানিনে জানিনে , কিছুতে কেনো যে মন লাগে না, আজি..."
সেদিন ছিলো বাইশে শ্রাবণ , সমস্ত দিন জুড়ে আনাচ-কানাচ ফাঁক-ফোকর রাস্তা-অলিগলি-শহর সবদিক থেকে ভেসে আসছিলেন আমার আত্মার ঈশ্বর রবিঠাকুর ।
সারাদিনভর ব্যস্ততার ফাঁক সামান্য গলে গেলেই দেখেছি , তিনি বারবার আমায় ডেকেছেন রন্ধনশালার খোলা জানালা দিয়ে নয়তো বা আমার ঘরের দক্ষিনপূর্বে রাখা তাঁর ই এক সৌম্যকান্তি চেহারা ঘেরা পাথরের মূর্তিতে খোদাই করা চোখ দিয়ে ।
কিশোরীবেলার সেই দিনগুলোতে যৌবনের ভেলা ধার করেছিলাম তাঁরই প্রেম পর্যায়ের কিছু গান মুখস্থ করে ,
সহজপাঠের আঠা জীবনকে যখন বেঁধে ফেলেছে আষ্টেপৃষ্ঠে , হঠাৎই সেসময় চোখ চলে গেলো "নৌকাডুবি" আর "শেষের কবিতায়" । সঞ্চয়িতা আর গীতবিতান জায়গা করলো আমার পাঠ্যবইয়ের গোছানো তাকের নিজস্ব স্থানে । কিভাবে কখন আর কেনোই বা তাঁর প্রেমে পড়লাম সেই প্রশ্নের সদুত্তর আজ জীবনের এতগুলো বসন্ত কাটিয়ে আসবার পরেও খুঁজে পাইনি , , যতো ভেবেছি ততই তলিয়ে গেছি , এ যেন ঠিক একটা অন্ধকূপ যার ওপরে মিশমিশে কালো একটা আস্তরন অথচ সামান্য খুঁড়লেই আলোর উৎসবে রঙ্গিন হয়ে উঠবে মনের মহাদেশ .কয়েকবছর আগে তাঁর মৃত্যুদিনে এমনই কিছু স্মৃতি আলগোছে আমায় সারাটা দিন একটু একটু করে গোছাচ্ছে আর আমি দৌঁড়ে লাফিয়ে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি কাজ করলে কোনো প্রকার অঙ্গহানি হয়না , অক্ষত রেখে হাতপা , নিয়ে বসা যায় আমার প্রথম প্রেমকে ,ততটা ব্যস্ততা নিয়ে সন্তর্পনে আমার গৃহস্থালিকে চুপকথার গল্পে ঘুম পাড়িয়ে বেডরুমের দক্ষিণী জানালার বাঁধানো শানে বসেছি এককাপ কড়া লিকারের দুধ-চা আর গীতবিতান নিয়ে , , আচমকাই দেখি ...
আষাঢ়ের বুকের মেঘ ঋণ নিয়ে তখনই গর্ভবতী হচ্ছে শ্রাবণ , ,
এ প্রসব যন্ত্রণা দেখবার জন্য হয়তো বারবার বাজি রাখা যায় নশ্বর এ জীবন , ,
অপরূপা প্রকৃতির চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে খিলখিলিয়ে হাসছে বৃষ্টি ভেজা সবুজ পাতা , রঙ্গিন রামধনু পাটে পাটে গুছিয়ে শাড়ি পরাচ্ছে ফুলের দলকে , আমি অজান্তেই গেয়ে উঠলাম , " যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম , যদি জানতেম ..." !
মনে মনে ভাবছি বারান্দার গ্রিলের গা ঘেঁষে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটারা টিকে থাকার লড়াই করে যেভাবে ঠিক সেভাবেই সংসার নামের স্থিতিযুদ্ধে আমরা সব্বাই হেঁটে চলেছি একটা দড়ির ওপর পা ফেলে , , রাস্তার জমা জলে ইতিউতি আদর দেখাচ্ছে ব্যাং আর ছোটখাটো কিছু মাছ , জল ঝাপটিয়ে আধভেজা স্কুল ড্রেসে বাড়ি ফিরছে দামাল কৈশোর । মনে মনে তখনই বলে উঠলাম , " নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আজ নাহি রে ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে "
ছাদের কার্নিশে জমে থাকা বাৎসরিক ধুলো জলের দ্রবণে দ্রবীভূত হয়ে কাদা নামকরণে সিক্ত করছে মাটি , , নস্টালজিয়া চুমু দিচ্ছে আমার সর্বঅঙ্গ জুড়ে , ,মনের ভেতর উথালপাথাল গানে , "পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ও সেই ..."
আমি শিহরণে কাঁপছি ঠিক যেমন কাঁপে ম্যালেরিয়া জ্বরের রোগী ।
হঠাৎ ...
আওলাঝাওলা বাতাসিয়া গর্জনে দড়াম করে ধাক্কা খেলো আমার সেগুনকাঠের দরজা , , দৌড়ে এসে আমার কোলে আছড়ে পড়লো বছর দশেকের দুরন্ত ছেলেবেলা , তার কচি হাতে তখন একটা কাগজের নৌকো ...
"মা উঠোনের শিউলি গাছটার নিচে যেখানে ঠাম্মা বসে ঠাকুরের বাসন মাজে ওখানে দেখলাম অন্নেকটা জল জমেছে , চলো না মা , ভিজে ভিজে ওখানে নৌকো ভাসাই " আমি বারণ সূচক শব্দ উচ্চারণের আগেই সে বলে উঠলো , " মা , আজ না তোমার জন্মদিন আজ কিছুতেই আমার কথা ফেলতে পারবে না তুমি , , আমি না , ঠাম্মা বলেছে "
দেখি দরজার কোণায় দাঁড়িয়ে শ্বেতশুভ্র শাড়িতে প্রশ্রয়মানা দুটো চোখ আমার কাছে বায়না করছে আমার সন্তানের-ই মতো করে , , আমি মনের আনন্দে গেয়ে উঠলাম , " মন মোর মেঘের সঙ্গী , উড়ে চলে দিক দিগন্তের ও পানে নিঃসীম শূণ্যে ..."
মেঝের ওপর পা দাপড়ে কখন যে নাচতে শুরু করেছিলাম জানিনা , ঘোর লেগে গিয়েছিল আত্মায় , যখন সম্বিত ফিরলো দেখলাম দুজন অসম বয়সী শিশুর আমায় ঘিরে সে কি উল্লাস ! !
মনে মনে ভাবলাম সত্যিই বয়স বাড়লে হয়তো মানুষ বড্ড শিশুসুলভ আচরণ করে !
মনে মনে হেসে বললাম , "ঈশ্বর ,দিনান্তে এসে ভুলে যাওয়া জন্মের শুভদিনের সেরা উপহার হিসেবে তুমি এদের প্রাণ উজাড় করা হাসি দিয়ে ভরিয়ে দিলে আমায়, এমন স্নিগ্ধ হাসি দেখার জন্য হয়তো একাধিকবার জন্ম নেওয়াই যায় রবীন্দ্রনাথের বুক চিরে "॥
২২শে শ্রাবন
অনিমেষ সরকার
" তুমি এসে পড়েছো এই বর্ষা পেরিয়ে শ্রাবণের মাঝে , হারিয়ে যাবো ওই রোদ্দুর প্লাবনে ,
প্রেমিক হয়ে বৃষ্টি মেখে জল আকাশে "
হিহিহিহি "বাহ্ কবি কবি ভাব ছন্দের অভাব - বেশ লিখেছিস তো ,এই দুটো লাইন "
" thank you ম্যাডাম "
" তা কে সে "
" সে এক জলছবি , আমার কল্পনা "
" ও কল্পনা ! আমি ভাবলাম কারো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস "
" তুমি এসে পড়েছো এই বর্ষা পেরিয়ে শ্রাবণের মাঝে , হারিয়ে যাবো ওই রোদ্দুর প্লাবনে ,
প্রেমিক হয়ে বৃষ্টি মেখে জল আকাশে "
হিহিহিহি "বাহ্ কবি কবি ভাব ছন্দের অভাব - বেশ লিখেছিস তো ,এই দুটো লাইন "
" thank you ম্যাডাম "
" তা কে সে "
" সে এক জলছবি , আমার কল্পনা "
" ও কল্পনা ! আমি ভাবলাম কারো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস "
" হা প্রেমে পড়েছি তো "
"কার ! বল ?|
" বলবোনা ইচ্ছে নেই ,সময় হলে বলবো , তোকেই সবার আগে জানাবো "| .
"আচ্ছা আচ্ছা বলিস ক্ষণ"
আবির আর মেঘনা ছোটবেলার বন্ধু ,এই জুটি সবসময় এক সঙ্গে থাকে ,দুজন দুজন কে সব কথা শেয়ার না করে থাকতে পারেনা | আবিরের মনে বেশ আগে থেকেই মেঘনার প্রতি প্রেম জমা হয়েছে সেটা স্কুল জীবন থেকেই | তবু আবির আজ ও বলে উঠতে পারলোনা পাছে বন্ধুত্বটা নষ্ট না হয়ে যায় | প্রতিটি রাত জেগে |স্বপ্নের জাল বোনে , প্রেমের কবিতা লেখে | তার প্রিয় কবি" কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" সে সবসময় মেঘনার প্রতি আকুল, পোসেসিভ ,চিন্তিত তাকে নিয়ে |
মেঘনাও আজ বড়ো চিন্তিত কলেজ থেকে আসার পর থেকে | ও বুঝে উঠতে পারছেনা আবিরের কার প্রতি এত ভালোবাসা যা মেঘনার কাছে ও গোপন করে যাচ্ছে | আবিরকে মেঘনা নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তবে ওর মুখেও কথা আজ পর্যন্ত এলোনা |ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড সবাই জানে | একটা বেস্ট ফ্রেন্ড কোনোদিন ও প্রেমিক হতে পারেনা এই কথাটা সে ছোট থেকে শুনে এসেছে | কিন্তু ওর মনে আজ পর্যন্ত আদর্শ বন্ধু ,মানুষ আবির একমাত্র | ওরা দুজন এ বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী |
আবিরের সাথে বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফেরা , ক্যান্টিন এ আড্ডা , বাড়িতে ফী হপ্তায় আড্ডা , গান , ঘোড়া , শপিং , খাওয়াদাওয়া | সবকিছুই | তবু অভিমানী আকাশে নীল রং টা কালচে হয়ে ছেয়ে
রয়েছে |
"কার ! বল ?|
" বলবোনা ইচ্ছে নেই ,সময় হলে বলবো , তোকেই সবার আগে জানাবো "| .
"আচ্ছা আচ্ছা বলিস ক্ষণ"
আবির আর মেঘনা ছোটবেলার বন্ধু ,এই জুটি সবসময় এক সঙ্গে থাকে ,দুজন দুজন কে সব কথা শেয়ার না করে থাকতে পারেনা | আবিরের মনে বেশ আগে থেকেই মেঘনার প্রতি প্রেম জমা হয়েছে সেটা স্কুল জীবন থেকেই | তবু আবির আজ ও বলে উঠতে পারলোনা পাছে বন্ধুত্বটা নষ্ট না হয়ে যায় | প্রতিটি রাত জেগে |স্বপ্নের জাল বোনে , প্রেমের কবিতা লেখে | তার প্রিয় কবি" কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" সে সবসময় মেঘনার প্রতি আকুল, পোসেসিভ ,চিন্তিত তাকে নিয়ে |
মেঘনাও আজ বড়ো চিন্তিত কলেজ থেকে আসার পর থেকে | ও বুঝে উঠতে পারছেনা আবিরের কার প্রতি এত ভালোবাসা যা মেঘনার কাছে ও গোপন করে যাচ্ছে | আবিরকে মেঘনা নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তবে ওর মুখেও কথা আজ পর্যন্ত এলোনা |ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড সবাই জানে | একটা বেস্ট ফ্রেন্ড কোনোদিন ও প্রেমিক হতে পারেনা এই কথাটা সে ছোট থেকে শুনে এসেছে | কিন্তু ওর মনে আজ পর্যন্ত আদর্শ বন্ধু ,মানুষ আবির একমাত্র | ওরা দুজন এ বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী |
আবিরের সাথে বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফেরা , ক্যান্টিন এ আড্ডা , বাড়িতে ফী হপ্তায় আড্ডা , গান , ঘোড়া , শপিং , খাওয়াদাওয়া | সবকিছুই | তবু অভিমানী আকাশে নীল রং টা কালচে হয়ে ছেয়ে
রয়েছে |
২ ..
আগামী ২২শে শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস | এই দিন কলেজ এ বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে | সেই দিন একটি আবৃত্তি পাঠ করবে মেঘনা | আর গান গাইবে আবির |
মেঘনা "শেষের কবিতা" থেকে একটি কবিতা পাঠ করবে | "পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।”
আর আবিরের গান " আমি চিনি গো চিনি তোমারে ও গো বিদেশিনী , তুমি থাকো সিন্ধু পারে, ও গো বিদেশিনী , দেখেছি শারদ ও প্রাতে তোমায় .দেখেছি মাধবী রাতে তোমায় , দেখেছি হৃদ মাঝারে - ও গো বিদেশিনী "
আপাতত এই প্লানিং এ কাজ চলছিল আজ অবশ্য আবির নিজের মনের কথা বলার ভাবনা মাথায় এনেছে কারণ ইতিতমধ্যে তাদের নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি এর রেজাল্ট ও বেরিয়ে গিয়েছে | আবির ম.এ করতে বিশ্ব ভারতী যাচ্ছে আর মেঘনার মা মেঘনার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে | সেদিন ই রাতে তাকে দেখতে আসবে বেঙ্গালুরু এ চাকরি করা | সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে উজান | উজানের খুব পছন্দ হয়েছে মেঘনা কে ছবিতে দেখে | তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে চাইছে মেঘনা কে বিয়ে করে নিতে | কিন্তু মেঘনা আর ওর বাবার সম্মতি নেই | তবুও দেখতে যেহেতু আসবে সে দেখা দেবে |
আগামী ২২শে শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস | এই দিন কলেজ এ বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে | সেই দিন একটি আবৃত্তি পাঠ করবে মেঘনা | আর গান গাইবে আবির |
মেঘনা "শেষের কবিতা" থেকে একটি কবিতা পাঠ করবে | "পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।”
আর আবিরের গান " আমি চিনি গো চিনি তোমারে ও গো বিদেশিনী , তুমি থাকো সিন্ধু পারে, ও গো বিদেশিনী , দেখেছি শারদ ও প্রাতে তোমায় .দেখেছি মাধবী রাতে তোমায় , দেখেছি হৃদ মাঝারে - ও গো বিদেশিনী "
আপাতত এই প্লানিং এ কাজ চলছিল আজ অবশ্য আবির নিজের মনের কথা বলার ভাবনা মাথায় এনেছে কারণ ইতিতমধ্যে তাদের নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি এর রেজাল্ট ও বেরিয়ে গিয়েছে | আবির ম.এ করতে বিশ্ব ভারতী যাচ্ছে আর মেঘনার মা মেঘনার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে | সেদিন ই রাতে তাকে দেখতে আসবে বেঙ্গালুরু এ চাকরি করা | সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে উজান | উজানের খুব পছন্দ হয়েছে মেঘনা কে ছবিতে দেখে | তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে চাইছে মেঘনা কে বিয়ে করে নিতে | কিন্তু মেঘনা আর ওর বাবার সম্মতি নেই | তবুও দেখতে যেহেতু আসবে সে দেখা দেবে |
৩..
মেঘনার প্রচন্ড মন খারাপ আর সে কোনোমতেই চায়না আবির কে ছেড়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে |
আবিরের এই গান এ মন নেই কিন্তু কোথাও যেন সে অন্তত একবার শেষ দেখা দেখে নেবে মেঘনা কে সেই অনুষ্ঠানে | যদি মুখ ফুটে মনের কথা বেরিয়ে আসে আবিরের |
কিন্তু আজ তাদের শেষ দেখা এই ভেবেই দুজনে প্রস্তুতি নিয়েছে |
২২শে শ্রাবণ...
অনুষ্ঠানের সূচনা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে | গান দিয়ে শুরু হলো তারপর এবার মেঘনার পালা | তার আবৃত্তির প্রতিটি লাইন মন দিয়ে শুনছে আবির | একটা কষ্ট , বেদনা , কান্না চাপা গুমোট যেমন আবৃত্তি হয়ে মেঘনার কণ্ঠ দিয়ে বেরিয়ে আসছে | হল রুম নিস্তব্ধ | কারো মুখে আওয়াজ নেই | একরকম ভয়ঙ্কর পরিবেশ | মেঘনা চোখের জল সংযম করলো | নেমে এলো স্টেজ থেকে | পড়নে হলুদ শাড়ী কাজল কালো চোখ , চুল বাঁধা | একদম অনন্যা রূপ তার |
আবিরের গানের পালা এবার | তার " আমি চিনি গো চিনি তোমারে ও গো বিদেশিনী , তুমি থাকো সিন্ধু পারে, ও গো বিদেশিনী , দেখেছি শারদ ও প্রাতে তোমায় .দেখেছি মাধবী রাতে তোমায় , দেখেছি হৃদ মাঝারে - ও গো বিদেশিনী " গানে অনুষ্ঠানের হলরুম আবার স্বাভাবিক হলো | তবে নিজেকে সংযমী আর করতে না পেরে আবির আর একটি গান ধরলো | "তোমার খোলা হাওয়া" গানটি শেষে দর্শকদের করতালি তে ফেটে পড়লো হল ঘর | আবিরের চোখ বেয়ে জলের গতিধারা সবাই আবার স্তব্ধ | কান্না মিশ্রিত গলায় নত মস্তকে কবিগুরুর ছবিতে প্রণাম করে | " আজ এই মঞ্চ থেকে আমি একটা কথা একজনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই | আজ আমাদের শেষ দিন এই কলেজ এ \ তারপর সবাই আলাদা কিন্তু যার থেকে আমি আলাদা হয়েও বাঁচতে পারবোনা , যেখানেই থাকি আমার শরীর থাকবে , মন থাকবে না - জেক ছাড়া আমি আমার ভবিষ্যৎ কল্পনাও করতে পারিনা যে আমার কবিতার উৎস - তাকে আমি বড্ডো ভালোবাসি - i love you মেঘনা " " আমি অসম্পূর্ণ তোকে ছাড়া , আমার উপায় ছিলোনা এইভাবে তোকে না জানানো ছারা , আমি যে মোর যেতাম , শেষ হয়ে যেতাম \ আজকের পর তুই আমার হোস অথবা নাই হোস সমস্যা নেই , আমার ভালোবাসার কথা তোকে জানালাম - আমি তোকে ভালোবাসি মেঘনা , ভালোবাসি - খুব খুব খুব "
মেঘনার প্রচন্ড মন খারাপ আর সে কোনোমতেই চায়না আবির কে ছেড়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে |
আবিরের এই গান এ মন নেই কিন্তু কোথাও যেন সে অন্তত একবার শেষ দেখা দেখে নেবে মেঘনা কে সেই অনুষ্ঠানে | যদি মুখ ফুটে মনের কথা বেরিয়ে আসে আবিরের |
কিন্তু আজ তাদের শেষ দেখা এই ভেবেই দুজনে প্রস্তুতি নিয়েছে |
২২শে শ্রাবণ...
অনুষ্ঠানের সূচনা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে | গান দিয়ে শুরু হলো তারপর এবার মেঘনার পালা | তার আবৃত্তির প্রতিটি লাইন মন দিয়ে শুনছে আবির | একটা কষ্ট , বেদনা , কান্না চাপা গুমোট যেমন আবৃত্তি হয়ে মেঘনার কণ্ঠ দিয়ে বেরিয়ে আসছে | হল রুম নিস্তব্ধ | কারো মুখে আওয়াজ নেই | একরকম ভয়ঙ্কর পরিবেশ | মেঘনা চোখের জল সংযম করলো | নেমে এলো স্টেজ থেকে | পড়নে হলুদ শাড়ী কাজল কালো চোখ , চুল বাঁধা | একদম অনন্যা রূপ তার |
আবিরের গানের পালা এবার | তার " আমি চিনি গো চিনি তোমারে ও গো বিদেশিনী , তুমি থাকো সিন্ধু পারে, ও গো বিদেশিনী , দেখেছি শারদ ও প্রাতে তোমায় .দেখেছি মাধবী রাতে তোমায় , দেখেছি হৃদ মাঝারে - ও গো বিদেশিনী " গানে অনুষ্ঠানের হলরুম আবার স্বাভাবিক হলো | তবে নিজেকে সংযমী আর করতে না পেরে আবির আর একটি গান ধরলো | "তোমার খোলা হাওয়া" গানটি শেষে দর্শকদের করতালি তে ফেটে পড়লো হল ঘর | আবিরের চোখ বেয়ে জলের গতিধারা সবাই আবার স্তব্ধ | কান্না মিশ্রিত গলায় নত মস্তকে কবিগুরুর ছবিতে প্রণাম করে | " আজ এই মঞ্চ থেকে আমি একটা কথা একজনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই | আজ আমাদের শেষ দিন এই কলেজ এ \ তারপর সবাই আলাদা কিন্তু যার থেকে আমি আলাদা হয়েও বাঁচতে পারবোনা , যেখানেই থাকি আমার শরীর থাকবে , মন থাকবে না - জেক ছাড়া আমি আমার ভবিষ্যৎ কল্পনাও করতে পারিনা যে আমার কবিতার উৎস - তাকে আমি বড্ডো ভালোবাসি - i love you মেঘনা " " আমি অসম্পূর্ণ তোকে ছাড়া , আমার উপায় ছিলোনা এইভাবে তোকে না জানানো ছারা , আমি যে মোর যেতাম , শেষ হয়ে যেতাম \ আজকের পর তুই আমার হোস অথবা নাই হোস সমস্যা নেই , আমার ভালোবাসার কথা তোকে জানালাম - আমি তোকে ভালোবাসি মেঘনা , ভালোবাসি - খুব খুব খুব "
দর্শকদের চোখে খুশির উচ্ছাস অন্য কোনো ছাত্র হলে হয়তো বিষয়টা লজ্জা জনক হতো তবে আবিরের সাথে কল্যাগের সম্পর্কই আলাদা |
মেঘনার চোখে জল শুধু মুখে মৃদু হাসি |
দুটো চোখ একাকার হয়ে গিয়েছে | বাইরে হালকা বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আকাশ ঘাস গ্রাম মেঠো পথ দুটি অশ্রু ভেজা নয়ন |
চারিদিকে প্রকৃতির কোলে বেজে উঠেছে
মেঘনার চোখে জল শুধু মুখে মৃদু হাসি |
দুটো চোখ একাকার হয়ে গিয়েছে | বাইরে হালকা বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আকাশ ঘাস গ্রাম মেঠো পথ দুটি অশ্রু ভেজা নয়ন |
চারিদিকে প্রকৃতির কোলে বেজে উঠেছে
" প্রেমের জোয়ারে ভাসাবো দোহারে
বাঁধন খুলে দাও দাও দাও দাও
ভুলিব ভাবনা পিছনে যাবোনা
পাল তুলে দাও দাও দাও দাও "
বাঁধন খুলে দাও দাও দাও দাও
ভুলিব ভাবনা পিছনে যাবোনা
পাল তুলে দাও দাও দাও দাও "
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বিশেষ প্রবন্ধ
মাহেশের রথযাত্রা কিংবদন্তী - ঐতিহ্য -ইতিহাস
কুমকুম ঘোষ
.............................. .............
পুরী বা নীলাচলের রথযাত্রার ইতিহাসের সঠিক সন-তারিখ জানা না গেলেও "উৎকলখন্ড" ও "দেউল তোলা" নামক ওড়িশার প্রাচীন পুঁথিতে বলা আছে এই রথযাত্রার প্রচলন সত্যযুগে।যখন ওড়িশা বা উড়িষ্যা র নাম ছিল মালবদেশ।
মালবদেশের অবন্তী নগরের সূর্য্য বংশের পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন মহাপ্রভু জগন্নাথের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ও রথযাত্রা র সূচনা করেন। পন্ডিতদের মতে এই রথযাত্রা ভারতের আর্য ও অনার্য ভাবধারার সংমিশ্রণের এক অন্যতম উদাহরণ।
আদতে জগন্নাথ দেব "নীলমাধব" দেবতা নামে পূজিত হতেন উড়িষ্যা র শবর জাতির মধ্যে। গল্পটি এই রকম---
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে গেলেন। একদিন তিনি যখন গাছের ডালে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন জরা নামে এক ব্যাধ অজান্তেই তাঁর চরণযুগলকে নিশানা করে তীর ছোঁড়ে ও দ্বারকানাথ শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়। সমুদ্র তীরে দাহ করার সময় এক প্রবল জলোচ্ছ্বাসে অর্ধদগ্ধ দেহ ও চিতাকাঠ ভেসে যায়। জরা দৈববাণী অনুসরণ করে সমুদ্রের পশ্চিম উপকূল থেকে ছুটে যায় পূর্ব উপকূলে র উত্তল বা উৎকলভূমিতে।সেখানে কাটাসহ দেহাংশ সংগ্রহ করে জঙ্গলের মধ্যে "নীলমাধব" দেবতা রূপে পূজা করতে থাকে শবর(সরভ)নেতা বিশ্বাবসু। বা জরা নামক ব্যাধ।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন চরমুখে এখবর পান কিন্তু শত চেষ্টা করেও নীলমাধব মূর্তি উদ্ধার করতে পারেন না। ভগ্নমনোরথ রাজাও এরপর প্রভুর দৈববাণী শুনতে পান
ও নদীতে ভেসে আসা দারুব্রহ্ম(নিমকাঠ) সংগ্রহ করে জগন্নাথের মূর্তি (অসমাপ্ত) নির্মাণ করান স্বয়ং বিশ্বকর্মা কে দিয়ে।
.............................. ..........
হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের পাশে মাহেশের রথযাত্রার মধ্যেও জড়িয়ে আছে এমন কিছু কিংবদন্তী ও ইতিহাস।৬০০ বছরের ও বেশী পুরনো এই রথযাত্রা উৎসব।কথিত আছে যে চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক পুরী গিয়ে প্রভু জগন্নাথ মূর্তি দেখে এতই মোহাবিষ্ট হয়ে পরেছিলেন যে তাঁকে নিজের হাতে রান্না করে ভোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরীর পান্ডারা তাঁর সেই সাধ পূরণে বাধা দেন।
ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তখন অনশনে বসেন।সেইসময় স্বয়ং জগন্নাথ দেব তাঁকে আদেশ দেন "মাহেশ" গ্রামে আসার জন্য, বলেন সেখানে একদিন ভেসে আসবে এক দারুব্রহ্ম..সেই কাঠ দিয়ে নির্মিত হবে জগন্নাথ -বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। সেইমত সাধক ধ্রুবানন্দ মাহেশে ফিরে আসেন ও নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করেন। নির্মিত হয় মূর্তি, যা এখনো পূজিত হচ্ছে সেখানকার জগন্নাথ মন্দিরে। ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী বৃদ্ধ ও অশক্ত হয়ে পড়লে এই বিগ্রহ সেবার ভার নেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর স্নেহধন্য কমলাকার পিপলাই।ইনি মাহেশের রথযাত্রার সূচনা করেন আনুমানিক ১৩৯৬ সালে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।পরিবার সহ প্রভু জগন্নাথ সাত দিনের জন্য মাসির বাড়ি (গুন্ডিচা মন্দির) যান, একে বলে সোজারথ ।অষ্টম দিনে এক ই পথে প্রত্যাবর্তন করেন নিজ মন্দিরে, একে বলে উল্টোরথ। রথযাত্রা উপলক্ষে মাহেশে একমাস ধরে মেলা বসে।
.............................. ........
ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীন ও বাংলার প্রাচীনতম এই রথযাত্রায় ব্যবহৃত লোহার রথটি নির্মাণের ইতিহাস ও পরিকল্পনা কম চমকপ্রদ নয়। প্রথমে জনৈক মোদক মাহেশের প্রথম রথটি নির্মাণ করে দেন।সেটি ছিল কাঠের।কালের নিয়মে সেটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। তখন কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলের বসু পরিবারের বাবু কৃষ্ণরাম বসু একটি "পঞ্চচূড়" রথ তৈরী করে দেন।একই সাথে তিনি মাহেশ জগন্নাথ মন্দির থেকে বল্লভপুর "মাসির বাড়ি" পর্যন্ত রথ চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা নির্মাণ করে দেন। পরবর্তী কালে হুগলি কালেক্টরের দেওয়ানি পেয়ে প্রচুর ভূসম্পত্তি জগন্নাথ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও খরচের জন্য দান করেন। কিন্তু কৃষ্ণরামের এই পঞ্চচূড় কাঠের রথটি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়।তখন তার কনিষ্ঠ পুত্র গুরুপ্রসাদ একটি "নবচূড়" রথ নির্মাণ করে দেন। সে রথটিও পরিত্যক্ত হয় কারণ জনৈক পুণ্য লোভী ভক্ত এই রথের চাকার তলায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। বসু পরিবারের তরফে এরপরও নতুন রথ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কাঠের তৈরী সেই রথ কালের নিয়মে জীর্ণ হয়ে পড়ে কিংবা পুড়ে যায়। ১৮৮৪ সালে বল্লভপুরের গুন্ডিচা বাটিতে (মাসির বাড়ি) সেই কাঠের রথটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। এই ঘটনার পর বসু পরিবারের তরফে কৃষ্ণচন্দ্র বসু বর্তমান লোহার রথটি নির্মাণ করে দেন লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে।রথটির উচ্চতা ৫০ ফুট এবং এর ওজন ১২৫ টন।১২ টি লোহার চাকা সম্বলিত "নবরত্ন" শৈলী র এই রথের নকশা করেছিলেন সেযুগের অন্যতম স্থপতি নীলমণি মিত্র।রথটি নির্মাণ করেছিল বিখ্যাত "মার্টিন অ্যান্ড বার্ণ" কোম্পানি। .............................. .............
মাহেশের রথযাত্রার সাথে জগন্নাথের স্নানযাত্রার অঙ্গাঙ্গিভাবে যোগ আছে। রথযাত্রার ঠিক আগের পূর্ণিমা তিথিতে প্রভু জগন্নাথের স্নান পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।২৮ঘড়া গঙ্গার জলে দুধ মিশিয়ে জগন্নাথ -বলরাম ও সুভদ্রার স্নান পর্ব এক উল্লেখ করার মত উৎসব।এরপর মহাপ্রভুর জ্বর হয় বলে তাঁকে লেপ-কম্বলে আবৃত করে গোপন কুঠুরিতে রাখা হয় সাত দিন। ঘাটাল থেকে এক বৈদ্য এসে প্রভুকে পাঁচন খাওয়ান (পুরীতে আছেন রাজবৈদ্য)।এসময় তাঁর দর্শন হয়না। সাতদিন পর যথারীতি তিনি ভক্তদের দর্শন দেন। এ যেন ঈশ্বরের মানবায়ণ বা মানবরূপে জগতের নাথ তথা চলমান জগতের আশ্রয়দাতা মহাপ্রভু জগন্নাথকে একাত্ম করে পাওয়ার এক অনন্য প্রক্রিয়া।
ভক্তি , বাৎসল্য ও দেবতার মানবায়ণ---এই তিনসূত্রে গাঁথা আছে রথযাত্রা উৎসব। ভগবান ভক্তের প্রেমরজ্জুর টানে তাঁর ঐশ্বর্যের প্রাসাদ থেকে বেড়িয়ে আসেন মানুষের মাঝে।
.............................. .........
কঠোপনিষদের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে যে--এই দেহ ই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী।ঈশ্বর থাকেন অন্তরে, তাঁর কোন রূপ নেই ; তিনি সর্বত্র বিরাজমান--ঈশাবাস্যমিদং"......
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত চরণগুলিও সর্বত্র বিরাজমান অন্তর্যামী র কথাই বলে... ..
"রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধূমধাম
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব , রথ ভাবে আমি
মূর্তি ভাবে আমি দেব,হাসে অন্তর্যামী।।
শতাব্দী প্রাচীন মাহেশের জগন্নাথ মন্দির ও রথযাত্রার সাথে জড়িয়ে আছে আরো বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্য, যেগুলো সামাজিক ও ধর্মীয় বোধের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যেমন এই ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে র সাথে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের একটি ছবি ইতিহাসে পাওয়া যায়। সপ্তগ্রামের বোড়ো পরগণার জায়গিরদার নবাব খাঁনে আলি খান একবার গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সময় প্রবল ঝড়ের মুখে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তৎকালীন সেবায়েত তাঁকে সাদরে আপ্যায়ন করেন। সন্তুষ্ট নবাব খাঁনে আলি এরপর ১৬৫০সালে মন্দিরের উন্নয়নকল্পে তাঁর অঞ্চলের জগন্নাথপুর লিখিত দলিলে নিষ্কর দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দান করেন।(পুরীর মন্দিরে আজকের দিনেও ইসলাম ধর্মের মানুষের প্রবেশ নিষেধ)। আর একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ,মা সারদা দেবী, নাট্যকার গিরীশ চন্দ্র ঘোষ ও সাহিসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মাহেশের রথযাত্রা দেখতে এখানে এসেছিলেন।
১৮৮৬ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের "রাধারাণী" উপন্যাসের পটভূমি ছিল মাহেশের রথযাত্রা। রথের মেলার এক প্রাণময় বিবরণ সেখানে আছে।
.............................. ........
যুগ যুগ ধরে প্রভু জগন্নাথের রথের রশিতে টান দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভক্তের সাথে ভগবানের যোগাযোগের সেতু এই রথের রশি। সেখানে একাকার ধনী থেকে দরিদ্র সকলেই।রাজা সিংহাসন থেকে নেমে এসে প্রভুর চলার পথ ঝাঁট দিয়ে দেন নিজ হাতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের"রথের রশি" নাটকে দেখা যায় শূদ্ররা রশিতে হাত দিলে তবেই রথ চলতে শুরু করে।
আসলে এ সবই প্রতীক মাত্র। আসলে "রথযাত্রা" হলো সমাজের সামনের দিকে এগিয়ে চলা। সামাজিক ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা ও দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমাজের সকল অংশের মানুষের সমান অংশীদারিত্ব গ্রহণের এক অনাবিল ছবি।অচ্ছুৎ অন্ত্যজ বলে কাউকে দূরে সরিয়ে রাখলেই সমাজের গতি রুদ্ধ হয়, একথাই যেন মূর্ত হয়ে ওঠে রথযাত্রার মধ্যে দিয়ে।
যুগ যুগ ধরে চলমান জগতের প্রভু জগন্নাথ (জগৎ-মূল ধাতু গম্ : যা কিছু চলে) দেবের রথযাত্রা যেন এই তাৎপর্য ই বহন করে চলেছে।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
একটি সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
" জল "
রাণা চ্যাটার্জী
জলের নাম জীবন জানি,
না পেলে মৃত্যু ভয় ।
চোখের সামনে এই জলই,
হতে দেখি অপচয় ।
জল যে কতটা অত্যাবশ্যক আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সে সম্পর্কে নতুন করে বলার সত্যিই কিছু নেই।কিন্ত এই জল অপচয় হবার প্রচুর উদাহরণ চোখের সামনে দেখি ।
নিজের শহর তো বটেই অপরিচিত রাস্তাঘাটে ট্যাপ কল থেকে অনবরত জল পরে যাবার নিত্য ছবি অনেকেরই জানা ,কেউ যদি সামান্য চেষ্টায় বন্ধ করলো তো ভালো নইলে ঘণ্টার পর ঘন্টা অঝোর ধারায় ! জলের জন্য হাহাকার ,মারামারির ছবি দেখা অভ্যস্ত চোখ এই অপচয় দেখলে সত্যি কষ্ট পায় ।
পৌরসভার জল কখন আসবে এই অপেক্ষায় লাইন দিয়ে হাপিত্যেশের ছবিও বড়ো চেনা মফস্বল শহর ও শহরতলীর । বিগত বেশ কয়েকবছর বাঁকুড়া শহরে থাকার সুবাদে এই জল না পাওয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষার ছবি ভীষণ ভাবে মনে গেঁথে আছে । কোনো এক সকালে হটাত জল না আসা বা সন্ধ্যায় সরু লিকলিক করে লাল আয়রন জল আসা যে কি বিরূপ প্রভাব ফেলে নাগরিক জীবনে দূর থেকে ভাবা, অনুভব করা সম্ভব নয়।
সকালে ঘন্টার পর ঘন্টা জলের বালতি বা জার বসিয়ে পরিবার পিছু দু বালতি জল সুনিশ্চিত না করতে পারা সত্যিই বেদনাদায়ক ।আবার কোনো সন্ধ্যায় কি সকালে কোন কলে কম জল আসার ফলে দূরের রাস্তার কল থেকে সাইকেলের হ্যান্ডেলে বালতি ঝুলিয়ে নিয়ে আসার ছবি বড় তাজা আমার । আবার যে কাকুটি,সামান্য মাস পয়সার বিনিময়ে ,চরম খরার সময়ও আমার ভাড়া বাড়িতে ঠিক সকাল- সন্ধ্যা,এ কল,সে কল করে দু বালতি জল পৌঁছে দিতেন সত্যই ভাবলে তিনি তাঁর কাজের জন্য আমার নমস্য ।
গরমের তীব্র দাবদাহে যখন ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে , পুকুর নদী নালা, বাড়ির কূঁয়ার জল সব শুকিয়ে এক অস্থিরতা তৈরি করে সেই সময়ের ন্যূনতম জল টুকু পাওয়ার হতাশা যে, কত ভয়ংকর হয় তা কেবল বাঁকুড়া নয় পুরুলিয়া , বীরভূমের অনেক এলাকার মানুষের কাছে , প্রতিবছরের চেনা ছবি ।
আবার আমার আদিবাড়ি বর্ধমানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র । বাড়িতে সিলিন্ডার কলের টিপলেই হড়হড় জল , পৌরসভার কলের লাইনের জল সঙ্গে বোরিং জলের প্রাচুর্যতা মাঝে, যখন দেখি নিচের ভাড়াটিয়া, বালতির পর বালতি জল ভরছে আর নষ্ট করছে আবার অন্য ভাড়াটিয়া কে আটকাতে সকাল থেকে বালতির ভিড়ে কল আটকে ! কি অদ্ভুত এক বৈপরীত্য !
বীরভূমে পৌরসভায় কাজ করার সুবাদে রাস্তায় ট্যাপ কল থেকে জল পড়ে যাওয়া দেখলে পথিমধ্যে কল বন্ধ করে দিতাম । পরে একদিন লক্ষ্য করে দেখি কলগুলোর মাথা নেই ! সংশ্লিষ্ট স্টাফ ও নাগরিক গণের কাছে জানতে পারি ওসব নাকি ছিঁচকে চোরেদের উপদ্রব ! কিন্তু অবাক হই এটা ভেবে যে, একদিন জল কম পেলে তারা কিন্তু অফিসে দরখাস্ত দিতে চলে আসে, কিন্তু নিজেদের এলাকার কলগুলোকে নজরদারিতে রক্ষা করা , চুরি থেকে আটকানো ও জল অপচয় হতে দেখে তারাই বড় বেশি নির্বিকার।
পৌরসভার যে জলের ট্যাঙ্কগুলো দৈনন্দিন চাহিদা অনুযায়ি ভাড়া যায়, রোজ দেখতাম ,এখনো অভ্যস্ত চোখ, দেখে , নির্দিষ্ট কর্মী পুনরায় ভাড়া পাঠানোর পূর্বে ভেতরের সব জল ফেলতে সব কল খুলে দেন । অনেক বাড়িতেও চেনা ছবি এটা যে, নতুন জল ভরার আগে চৌবাচ্ছা , সারি সারি বালতি, জারের জল ফেলে দেবার রীতি, কারণ কালকের জল মানে নাকি "বাসি জল "! কিন্তু আমরা এটা সত্যি ভাবিনা , ভূগর্ভস্থ এই জল যা ব্যবহার করছি তা আদতে কত জন্মের বাসি !
ইদানিং অনেক পৌরসভা জল সরবরাহের সময় অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছেন । এটা দেখা গেছে, 24 x 7 অর্থাৎ কল খুললেই জল পাওয়া গেলে এই বালতি , চৌবাচ্চা , ড্রামে জল জমিয়ে রাখার প্রবণতা যেমন কমবে , তেমনি অপচয়ের মাত্রা যা আখেরে আমাদেরই কল্যাণ ।
চাকরি সূত্রে বেনারসে থাকতাম তখন , রুমমেট রাজস্থানের নিবাসী অজিত জৈনের মুখে ওদের ওখানকার জল না পাবার কষ্ট, গল্প শুনে অবাক হতাম ! বাড়ির পুরুষের মতো কাজে বেরুনোর মতো , মহিলারা বাড়ির সব কাজ সামলে দু কলসি জল সুনিশ্চিত করতে ঘণ্টার পর ঘন্টা পায়ে হেঁটে এই গরম উত্তপ্ত পরিবেশে পরিশ্রম ও সময় অতিবাহিত করে দুপুর গড়িয়ে বিকালে ফেরে!
জল অপচয়ে বাঙালিদের বদনাম আছে ! চেন্নাই এ হোটেল গুলোতে বাঙালি রোগীদের অনেক সময় বলেই দেয় কাচাকাচিতে জল বেশি না নষ্ট করতে ! আসলে ঠিক তা নয় , জলের অভাব কি জিনিস এই উপলব্ধি আসবে কি করে ,যদি চাইতেই জল পাই অনায়াসে আমরা ! একটা সামান্য রুমাল কাচতেও এক বালতি জল নষ্ট করার অভ্যাসে অভ্যস্ত দিন যাপনে আমরা অনেকেই ।
আর একটা অন্য বাস্তব ছবি বলি চলুন । আজকাল ট্রেনে , বাসে , বাইরে বোতলজাত জল বিক্রির রমরমা । সে জল কতটা বিশুদ্ধ পানীয় সে প্রশ্নে যাচ্ছি না , আমরা কিন্তু অনায়াসেই লিটার পিছু কুড়ি টাকা দিয়ে তৃষ্ণা মেটাই । কিন্তু বৃহৎ আকারে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে , জল ফিল্টার করে পৌরসভা যদি পাইপ লাইনে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল বিনামূল্যে সরবরাহ করে ও নির্দিষ্ট বেশ কিছু লিটারের পর জল ট্যাক্স বসায় আমরা গেলো গেলো রব তুলি ।
A.T.I অর্থাৎ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইন্সটিউটে হামেশাই আগে ট্রেনিং করতে যাবার সুবাদে কোনো এক ক্লাসে শ্রদ্ধেয় ফ্যাকাল্টি বলেছিলেন,
" এক লিটার বিশুদ্ধ পানীয় জল তৈরির খরচ এক টাকার বেশ কিছু কম । ওই জল বাড়িতে এক টাকা দরে পৌঁছে দিলেও নাগরিকগণ যদি খুশি মনে গ্রহণ করেন , জল বাহিত অনেক রোগ থেকে মুক্তি , এই বাজার চলতি অনামী কোম্পানির জল নির্ধিদ্বায় বেশি দামে কিনে ব্যবহার করার থেকে । "
যে , জল আমাদের জীবন , সেই জলকেই রক্ষা করার কোনো সামগ্রিক প্রচেস্টা আমরা নেই না । জল সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি পাক, মানব কুলের স্বার্থে , আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এই কামনা । সকলে সুস্থ থাকুন , ভালো থাকুন ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
শ্রাবণের কবিতা ও গল্প
আবদুস সালামের দুটি কবিতা
পরিবর্তন
অস্তিত্বের গলির ভিতর দালালের থাবা
ফাঁকা মোড়ে মোড়ে শূন্যব্লক
মুছে দিচ্ছি নদীর ফেলে আসা আবহমান সুর
আধভাঙা সংসারে বাজে বিষন্ন -হারমোনিয়াম
পাড়ার ঘাটে ঘাটে ভেসে বেড়ায় সংগ্রামের -নৌকা
পাগলের সাথে সারারাত এক বিছানায় সহবাস
শূন্যতার সীমানায় বন্দী হয় দূরূহ শাসন
তোলাবাজের দৌরাত্মে দেবতারা -অপদেবতার পায়ে পূজা দেয়
অতৃপ্তির মৈথুনে জন্ম নেয় মায়াময় অবসর
রণক্ষেত্র
আগুনে লেলিহান -শিখা
আগুনে লেলিহান -শিখা
অস্থির দুহাত খুঁজে মৃত্যুর অন্ধ
মৃত্যুর আকাশ জুড়ে গনগকার
প্রেতের মেলায় নাচে অত্যাচারী রাজার শেষ রাজত্ব
আলোর অন্তর ভাসে নিশ্চিন্ত বিশ্বাসে
শঙ্খের অমোঘধ্বনি বেজে ওঠে মহল্লায়
পাপের স্রোত বেয়ে গেয়ে ওঠে ভ্রান্তির গান
দুঃখের প্রতিটি রাতে তৈরী হয় মৃত্যুরমিনার
মরণের চুল্লিতে শাসন করে অচৈতনিক -বিশ্বাস
কালচ্যূত ভাবাবেগে ঢেকে যাচ্ছে মূল্যবোধের জলসাঘর
মিথ্যা নীল খাম
সমীরণ চক্রবর্তী
কথা ছিলো দু'জন মিলে
বাঁধবো সুখের ঘর।
ভালো বেসে সারা জীবন
থাকবো পরস্পর।।
গাছের ডালে তুলে দিয়ে
মই নিয়েছো কেড়ে।
দাবার ছকে চাল ঠেলেছো
এগিয়ে দিয়ে বোড়ে।।
গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেলো
অগাধ জলরাশি।
সকাল বেলার গাঁথা মালা
দিন গড়িয়ে বাসি।।
আজও খেলো নতুন খেলা
মিথ্যা নীল খামে।
এক সমুদ্র বিষ কিনেছো
অনেক সস্তা দামে।।
"ব্রেক"
মৃণালিনী
১.সরলরেখা বরাবর চোখের পাতা ঝরে পড়ে দিন শেষে মাসে।মধ্যাকর্ষণ মাটির বুকে বিছিয়ে দেবে ।হাওয়া+লবণ +জল ( আ+ক+ লবণ = সার)আগ্নেয়গিরির বাঁধে বাঁধ দেওয়া কয়লা। শান্ত ও নিজরূপে লজ্জিত- আভ্যন্তরিণ শক্তি গুমরে মরে মাটির স্কিন লেয়ারে লেয়ারে।
২.রাতের ভূমিকায় চাঁদের চুম্বন কয়লার বুকে
নতুন দ্বীপ ( র)
গ্যাস ( নিঃশ্বাসের অনুপযুক্ত )
ভারী শরীরে চিকন বার্তালাপ ( ভ্রষ্ট স্মার্ট স্মৃতি)
নতুন দ্বীপ ( র)
গ্যাস ( নিঃশ্বাসের অনুপযুক্ত )
ভারী শরীরে চিকন বার্তালাপ ( ভ্রষ্ট স্মার্ট স্মৃতি)
৩.হাতরে বেরিয়েছি গীতবিতান নতুন ছন্দে।মনোরোগ জমা রন্ধ্রে রন্ধ্রে-- নিরর্থক প্রয়াস > সবুজ ঘাসের উপহার খোরগোশ ও চঞ্চল কচি হরিণ। জিভেরস্বাদ পরিবর্তনহীনে আকাশের কাছে নতুন রেসিপির দাবী। কাদার জন্মজাত ইতিহাসের উপসংহার সবুজ ঘাস- গাছ রূপে ও রসে ভিন্ন। সেকাল পেরিয়েএকাল।
৪.রক্ত কনিকারা ওজনদার। জ্যোতিষ বিজ্ঞানীর বোতলে লাল নীল সবুজ পৃথিবী কালো রাতের গভীরতায় প্রশ্নের নাক উঁচু। রাখালকে দেখে হাসেজ্যামেতিক কোণ । কোথাও দিন হাসে, রাত কাঁদে। নিঃসঙ্গ সময়ের দাবি কাজ, কাম অবদমিত প্রসঙ্গহীন- আমরা বড্ড সামাজিক।
৫.রিং টোনের বিপরীতে আওয়াজ চালনায় মাপা গম্ভীর স্বর নিজের স্বার্থে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে জ্যাম। বগলে পূর্ণিমা চাঁদের আলো চাই, নিম্নদেশে অন্ধকার।বিস্মৃতি জন্মজন্মান্তরের আনন্দ। আশ্বাসের সুরে সময় অন্তহীন। মন ও মাথায় বিশ্বাসী মিথ। চাওয়া ও পাওয়া সময়ের পরিমাপক কাঁটায় স্থির।
৬.প্রেমিক কবিতার কোলাহলে ঘন ঘর দীর্ঘশ্বাস। দাবী নতুন কিছু নয়- বাতেলার মিষ্টি আঁশ। সমানুপাতিক আলোয় গুন + গুল = বেগুল ভীরে ভীরে নিঃশ্বাসের অভিমান। শারীরিক প্রেমিক+ প্রেমিকা= বেইমান। কারণ সব আর সবার কথার সারার্থ নিজ তৃপ্তি। কুয়োর ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্রেরগবেষণা চলছে... আবিষ্কার হলেই লেখা হবে ভবিষ্যৎ ( কাল) কিছুদিনের বিশ্রাম।
সৈকত
উদয় সাহা
শিলা,নুড়ি, কিছু কাঁকর
বালুকাময় আমি
শুয়ে থাকি তপ্ত সূর্য বুকে নিয়ে
আমি মৃত্যু খুঁজি না...
আমায় ঢেকে রাখে তোমার বিভাস আশাবরী
আমায় শিশিরে রাখে তোমার মেঘ মালহার
যে স্রোতে ভেসে যায় সাবিত্রী দয়মন্তী রোজ
সেই স্রোতে রচিত হয় আমার অবয়ব
প্রতিদিন ...
তুমি আসবে বলেই ------
মহুয়া মুখোপাধ্যায়
অনেকদিন পর আজ তুমুল জল
অনেকদিন পর আজ এলোমেলো হাওয়া
গাছেদেরও আজ ইচ্ছে, জলক্রীড়া ভরা
নালায় কাগজ ভেলা বাওয়া।
সেই যে কবে চিলেকোঠার ঘরে
এমনি জলে ভিজেছি অপেক্ষায়
সে বারেই তো একটা স্বর্ণচাঁপা
ঝরেছিলো দারুণ অবেলায়।
সেই যে তুমি আসতে গিয়ে শেষে
দমকা ঝড়ে কিম্বা স্রোতের টানে
পথ হারিয়ে কোথায় গেলে ভেসে
ব্যকুল চোখ আজও উঠোনপানে।
সেই থেকে আর এমন জলের দিন
আসেনি আর এমন অবেলায়
ক্লান্ত নয়ন হটাৎই বানভাসি
ঝাঁপসা ছবি কাঁচের জানলায়।
রাস্তা জুড়ে ধূসর জলের স্রোত
ধুয়ে যাচ্ছে সকল মলিনতা
জাগছে কোথাও আবার ঋতুমতী
উপোষী দেহে মিলন আকুলতা।
আকাশ জোড়া কালো মেঘের ভাঁজে
অহরহই তড়িৎ চপলতা
অনেকদিনের প্রতীক্ষার এই শ্রাবণ
ফিরিয়ে দিলো যতো জমানো কাতরতা।
অনশন
দেবব্রত সেন
দিন চলে যায়, আসে রাত্রি
রাত্রি চলে যায়, আসে দিন
রাত্রি চলে যায়, আসে দিন
আমি অনাহারে বসেছি পথে
দাবী গুলো করেছে পন
মুক্তির সংগ্রামে আজ
মঞ্চ গড়েছি শক্ত মন জোরে
চাইতে এ অধিকার ...
দাবী গুলো করেছে পন
মুক্তির সংগ্রামে আজ
মঞ্চ গড়েছি শক্ত মন জোরে
চাইতে এ অধিকার ...
সবুজ আছে পথ চেয়ে
চিরসাথী মোর
হয়তো মৃত্যুও দিতে পারি
জীবনের পালাগানে জোর
শপথের আঙিনায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
প্রতিক্ষীত সময়
অবসান কবে হয়?
চিরসাথী মোর
হয়তো মৃত্যুও দিতে পারি
জীবনের পালাগানে জোর
শপথের আঙিনায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
প্রতিক্ষীত সময়
অবসান কবে হয়?
অশনিসংকেত তবুও নেই ভয়
মাতৃত্বের বুকে মাথা পাতব
আমি অপরাধি নই।।
মাতৃত্বের বুকে মাথা পাতব
আমি অপরাধি নই।।
প্রণয়
সিয়ামুল হায়াত সৈকত
ভয়ঙ্কর চোখগুলো এক-একটা
হাতলের পৃষ্ঠায় নামগুলো বেমানান
দেয়াল দ্যাখি
চোখ ভাঙা মৃত শাবক
আমাদের খামলে নিকটবর্তী শহর
পাতাটিতে আঁকা দৈত্য তুমি
ভীষণ ভয় : ভালোবাসতে জানিনা
একটুও জানিনা তুমিবন্ধ ঘর
চিহ্নিত চিবুক আমাদের জানেনা।
সাইন্যাপস
শুভদীপ পাপলু
যে মেঘে সবুজ অরণ্য সাপ একাকিত্বে রোদ খায়,
সেখানে শক্তি পাই,মা তুলসীমঞ্চে সন্ধ্যাপ্রদীপ দেয়,
এ মেঘে সবুজ অরণ্য সাপ একাকিত্বে রোদ খায়।
হ্যাঁ,নদী,শুনতে পাচ্ছ?এ দেহ আদরের ফলাফল,
দাঙ্গায় গ্রামছাড়া।'ঐ রাঙামাটি'র পথ'বড়ই পেছল।
নখের সম্পত্তি আঁচড়ে'রা নতজানু এখনো,ভাষায়।
পৃথিবী অভ্যেসে ঘোরে,যেন ঋষি'র কামাতুর রূপ,
সেখানে দলিত সুড়ঙ্গ ঠেলে ঘোড়া ছোটে।রাত্রি চুপ।
কাজলে চোখ পেলে,কেউ কি আলতা দেবে পায়ে?
এ মেঘে সবুজ অরণ্য সাপ একাকিত্বে রোদ খায়।
কলম সৈনিক
প্রতিভা দে
কলম সৈনিক বটে
ঢাল তলোয়ার ছাড়া
তবুও কলম করতে পারে
হাজার লোকের জ্ঞান হারা।
মস্তিষ্কে চালায় আঘাত
অনেকের ই ঘটায় ঘুমের ব্যাঘাত।
নিঃশব্দ গুলি চালায় অন্তরে
অনেকটাই গোল পাকিয়ে দেয় মন্তরে।
যা গেল তা অভ্যন্তরে
কাজটা বড়ই গোপন স্তরের।
জেগে উঠে মানুষ স্থির জেনে
অন্তরে তা নেয় মেনে।
সেই অস্রের এমন আঘাত
রক্ত ঝরেনা
শক্ত হয় আরো অন্তরে
বরং মরতে পারে অন্যের কাছে
সত্যকে নিয়ে ঢাল
জ্বালিয়ে নিয়ে বুকে মশাল।
মৃত্যু বরন করে ।
বোকাবাক্স
রাহুল ঘোষ
একলা দুপুরে মন খারাপের সূচীপত্র হাতে নিয়ে ,
বসে থাকিচাদরে আঁকা গাছের তলে,
মূহুর্তে বোকাবাক্স চিৎকার করে ,
নানা সুরে, নানা ছন্দে-
মাঝে মাঝে বিগড়ে যায়-সিগনালের অভাবে,
কত ভাষা জানে সে একাকীত্বের ঘোরে,
ভাবলে বিস্ময়কর;ভুলে যাই সূচীপত্র রয়েছে হাতে।
নতুন উদ্দীপনা জাগে ওঠে বোকাবাক্স প্রতি ,
তার কথার মধুরতায় নেশাময় আমার উল্লাস,
তেপান্তরের মাঠ থেকে শোনা যায় আওয়াজ,
নানা ঘটনার সাক্ষী সে- প্রবাহিত তরঙ্গে,
আমার খবরও সে রাখে;তার লিখিত টিউনে,
আমার খবর এলে আওয়াজ করি আস্তে,
যাতে কেউ না জানে;সে রয়েছে আমার অন্তরে,
আমার জীবন যেন বোকা বাক্সে বন্দী,
অনেকটা গানের ছন্দে;বাস্তবায়িত জীবনমঞ্চে।
এবং ভালবাসা
শুভাশিস দাশ
শুভাশিস দাশ
এই বীজতলা ডুবিয়েছো তুমি
ভাসিয়ে নিয়েছো ঘর
কেন তবে তুমি দিয়েছিলে কথা
বলো না স্বার্থপর ?
অভিনয় ছিল ছিলো তো নাটক
মুখোশের সেই মুখ
সুখের পাখিরা ডানা ঝাপটায়
শূন্য মরু এ বুক !
ভালোবাসা বড় পবিত্র হয়
ফুলের মিষ্টি বাস
অতো সোজা নয় হৃদয়ের ভূমে
এই ভালবাসা চাষ !
ভাসিয়ে নিয়েছো ঘর
কেন তবে তুমি দিয়েছিলে কথা
বলো না স্বার্থপর ?
অভিনয় ছিল ছিলো তো নাটক
মুখোশের সেই মুখ
সুখের পাখিরা ডানা ঝাপটায়
শূন্য মরু এ বুক !
ভালোবাসা বড় পবিত্র হয়
ফুলের মিষ্টি বাস
অতো সোজা নয় হৃদয়ের ভূমে
এই ভালবাসা চাষ !
সম্ভোগ
রুনা দত্ত
অপ্রাপ্তবয়সে লেখা কবিতাগুলো আজও
ডানা ঝাপটায়
অপরিণত চুমুতে তোমাকে নিয়ে শুধুই ভ্রান্তিবিলাস
যদিও বিবশতায় আর আবেশে অন্যরকম
শব্দ লুকোনো
নিকোটিনের ধোঁয়ায় উড়ছে কাল্পনিক সব
চরিত্রের প্লট।
শরীরের তীব্রতা আজো জেগে ওঠে
রূপকল্প নির্মাণের অভিমুখে
নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তে জ্বলে ওঠা
স্ফুলিঙ্গ
কবিতা গুলোকে প্রেম ভেবে অনুবাদ
করে নিও,
গালিবের সাথে রুমিও প্রেম কবিতা
লিখেছেন সারাজীবন।
কোথায় নেই সম্ভোগ? কেবলই কি শূন্য
আশ্লেষ!
সুখের আবেশ মুছে জেগে ওঠে পৃথিবীর
নৈসর্গিক নিঃসঙ্গতা
বন্ধ চোখে দেখি তুমি আঁকছো নগ্নতার
ক্যানভাসে
অথচ সম্ভোগ শেষে তোমাকেও মনে হয়
নগ্ন এক ঈশ্বর...
ভাবনা
বাপ্পা রায়
মনের অগোচরে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় ভাবনা,
নোংরা ডাস্টবিন থেকে উড়ে এসে ঢোকে।
তিলে তিলে খুন করে স্বপ্ন গুলোকে;
রুদ্ধ করে দেয় এগোনোর সুচালো পথ।
মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দেয়--
নিজেই ভাবি খুন করি!
'খুন'! সে তো গিরগিটি;
কখনো লাল,সবুজ,নীল কিংবা গেরুয়া রঙে ভাসে,
বলি হতে হয় নিরীহ পশুদের।
আর ভাবনা; উড়ে এসে বসে!!
মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী
আকাশের আঙ্গিনায় মেঘেদের লুটোপুটি,
শ্রাবন্তিকায় বৃষ্টির নেই ছুটি ।
মেঘেরা গড়েছে আকাশেই আস্তানা,
ধরণীর বুকে বাদলের আলপনা ।
আমার শহরের রাজপথ থেকে গলিপথে বৃষ্টির মিছিল সৃষ্টিছাড়া,
দমকা হাওয়ায় উড়ছে আঁচল
ভিজিয়ে শরীর বাঁধনহারা ।
বৃষ্টিভেজা জল থৈ-থৈ শহর আমার ভিজছে নেশায় সারাবেলা,
উঠোন-জলে কাগজের নৌকা ভাসাই
ফিরে পাই হারানো ছেলেবেলা ।
মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি,বর্ষারানীর
বে-আক্কেলে খামখেয়ালীপনা,
অঝোরধারে ঝরেই চলেছে
যখন-খুশি অবাধ আনাগোনা ।
বৃষ্টি তুমি এসো
সম্পা পাল
আমি একত্রিশ নম্বর জাতীয় সরকে দাঁড়িয়ে ।
কখনো এপথে আসোনি ।
হয়তো ঠিকানা খুঁজে নিতে অসুবিধে হবে ।
বিমানবন্দর পার করে ত্রিশ মিনিটের দূরত্বে তেনজিং নোরগে বাসস্টপ।
এটা আমাদের পুরোনো বাসস্টপ ।
এখান থেকে একটা রাস্তা পূর্বে আসে ।
পূর্বের রাস্তাটা যে উত্তরে এসে থামে আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে ।
আমার মাথার ওপরেও একখণ্ড মেঘ জমে আছে ।
এ মেঘ স্থানীয় , পাহাড়ে ধাক্কা খেলেই বৃষ্টি হয়ে নামে ।
এখানেই আমার পাইন পাতার ঘর ।
বৃষ্টিতে এঘর ভিজে যায়,তবে শীতে কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে এঘরে রোদ আসে ।
বৃষ্টি তুমি এসো
আমার ঘরে তোমাকে স্বাগত ।
টার্গেট
সমরেশ পর্বত
আজ তোমার চোখে আগুন!
জীবন গড়ার লক্ষে-
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন।
ঠিক-ভুলের ধারাপাত ভেঙে,
অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রচেষ্টা।
ইচ্ছে শক্তির জাগ্রত মন
বঁাধ ভাঙে দীর্ঘ সৈকত।
উপচে পড়ে ঢেউ-
এগিয়ে চলো তুমি,
সময়ের স্রতে বঁাধবে জীবন
হারমানবে পরাজয়।
সমরেশ পর্বত
আজ তোমার চোখে আগুন!
জীবন গড়ার লক্ষে-
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন।
ঠিক-ভুলের ধারাপাত ভেঙে,
অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রচেষ্টা।
ইচ্ছে শক্তির জাগ্রত মন
বঁাধ ভাঙে দীর্ঘ সৈকত।
উপচে পড়ে ঢেউ-
এগিয়ে চলো তুমি,
সময়ের স্রতে বঁাধবে জীবন
হারমানবে পরাজয়।
ধর্ষকের বিচার
আশীষ দেব শর্মা
আকাশে বাতাসে নির্ভয়া,আশীফা,দিব্যার ত্রাস ,
মাতৃগর্ভস্থ কন্যা,আৎকে হাতরায় নির্মল বাতাস !
ধর্ষকের দ্বারা কলুসিত,পূজা পার্বণ নামাজ,
ক্রিয়া কলাপে বড়োই লজ্জিত,পুংসমাজ ।
ওরে নর পিশাচের দল,দুধের শিশুরা যে হীনবল ,
সাস্ত্রে বর্ণিত,রাবণের মৃত্যুতে পার পাইনি তপস্যার ফল।
রাজা ভরতের নামে নামাঙ্কিত,ভারতে নেই পুণ্যের লেশ ,
অবাধ যৌনতা ছেড়ে ধর্মান্তরিত,আজ পাশ্চাত্ত্য দেশ ।
মহাপুরুষ জন্মান,যে দেশের মহীয়সী নারী ,
মাতৃরূপের ধর্ষিত কন্যা,দেয় মৃত্যুলোকে পারি
ধর্ষকের বিচার নয় জাতী ধর্ম দেখে ,
পুনর্জন্মে ফিরতে নাহি পারে,ফেলো রশির ফাঁসে !
বর্ষা এলো
তুহিন মন্ডল
আকাশ ঘিরে মেঘ জমেছে
বর্ষা চলে এলো।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
গ্রীষ্ম বিদায় নিলো।।
সারাদিন মেঘ গর্জন
সূর্য গেছে পাটে।
খুশি মনে লাঙল নিয়ে
চাষির দিন কাটে ।।
চারিদিকে ধানের খেত আজ
শামলা ফুলের মেলায়।
স্কুলেতে মন বসে না
ইচ্ছে জাগে খেলায়।।
তুহিন মন্ডল
আকাশ ঘিরে মেঘ জমেছে
বর্ষা চলে এলো।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
গ্রীষ্ম বিদায় নিলো।।
সারাদিন মেঘ গর্জন
সূর্য গেছে পাটে।
খুশি মনে লাঙল নিয়ে
চাষির দিন কাটে ।।
চারিদিকে ধানের খেত আজ
শামলা ফুলের মেলায়।
স্কুলেতে মন বসে না
ইচ্ছে জাগে খেলায়।।
তোর স্বাধীনতা
সঞ্চয়িতা দে
স্বাধীনতা তো দিয়েছিলাম তোকে..
সহজ সরল ভাষা ছিল..
না ছিল উপমা না কঠিন কোনো রূপক মালা..
বুঝতে যে কষ্ট ..তোকে বোঝাতেও..
কঠিন শব্দবাহার কী মন থেকে আসে বল..?
বিফলে যে যাবে সব.. ।আর কত শক্ত হব..?
তোকে তো মনের ভাষা বলেছিলাম..।
তোর কাছে এলে ..,
মাথা ?.. সে কথা শোনে না..।
না আমার,..না বাইরের..।
শুধু ভেতরের কথা..
মনভোলানী,লোকভোলানী নই..।
তাই না ছিল প্রস্তুতি,না আছে।
না কোনো সাজানো উদ্দেশ্যে।
না খুব ভালো সাজার চাওনি ,না তোকে আটকে রাখার প্রেরণা ।
আগেপিছে কোথায় বা ভাবতাম বল।
তাই তো তোকে বলা সেই কথাটা,
চল পালিয়ে যাই।
তোর পরিনত মস্তিষ্কে কতটুকুই বা জায়গা ছিল তার।
আর মুখের বিকট হাসি,
ভুলিনি আমি।
আমার বেলায় বড্ড হেসেছিলি ,
সেই পালিয়েই তো গেলি।
স্বাধীনতা ছিল বলেই কী ?
জ্বর
মৌসুমী চৌধুরী
ঘড়ির কাঁটা দৌড়চ্ছে দ্রুতগামী লোক্যাল ট্রেনের মতো। বউদিমণির অফিসে বেরোনোর সময় হয়ে যাচ্ছে। আজ কাজের বাড়িতে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে
শোভাকে। এদিকে মেয়েটা ঘ্যান ঘ্যান করছে তখন থেকে, সঙ্গে যাবার বায়না জুড়েছে।গত ক'দিন থেকে ধূম জ্বর ওর। ঔষধ খাওয়াচ্ছে, কিন্তু বিশেষ উন্নতি হচ্ছে না। কি যে হয়েছে! চারদিকে যা ডেঙ্গু হচ্ছে! ভয়ে বুকটা কেঁপে করে ওঠে শোভার। কিন্তু আজ কোনমতেই ছুটি নেওয়া যাবে না, বৌদিমণির কড়া বার্তা। আজ নাকি বৌদিমণির অফিসে কি এক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে, বিদেশী ক্লায়েন্ট-
দের সাথে। গত দু'দিন কাজে যায় নি শোভা। কিন্তু আজ যে তাকে যেতেই হবে। মেয়ের কান্না উপেক্ষা করেই শোভা ছুটল ট্রেন ধরতে। পাশের ঘরের চাঁপার মাকে দায়িত্ব দিয়ে এল টুসকিকে একটু দেখার।ঘরে বাতে পঙ্গু বুড়ি শাশুড়ি। তিনি তো থাকাও যা, না থাকাও তা। অন্যদিন তো আট বছরের টুসকিই তার ঠাকমাকে দেখাশুনা করে....পা চালায় শোভা।সাতটা পঞ্চাশের শেয়ালদা লোকাল। 'নেত্রা' স্টেশন থেকে নামবে সে ঢাকুরিয়া স্টেশনে। স্টেশনের পাশেই অ্যাপার্টমেন্ট "উপহার"। সেখানে হাইকোর্টের উকিলবাবু অরূপ বোসের বাড়িতে আয়ার কাজ করে শোভা। তাঁদের চার বছরের মেয়ে তিতলীকে দেখাশুনা করে সে। দ্রুত ছুট লাগায় শোভা। আজ বৌদিমণির গাল শুনতে হবে। বড্ড দেরী হয়ে গেছে। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই বৌদির উচ্চকন্ঠ, "এতক্ষণে তোর আসার সময় হল রে, শোভা? মেয়েটার আবার জ্বর কাল রাত থেকে। গত দু'দিন ধরে জ্বরটা অল্প অল্প ছিলো, গতকাল রাত থেকেই বেড়েছে একটু। ওদিকে আমার আবার আজই জরুরি ক্লায়েন্ট মিটিং, ইতালি থেকে আসছে এক ক্লায়েন্ট-প্রতিনিধি দল। আজ অফিসে যেতেই হবে আমাকে।" মনটা খারাপ হয়ে যায় শোভার... তিতলীর জ্বর! "কই, কই দেখি, আমার সোনা মাকে ..." বলে তিতলীকে কোলে তুলে নেয় শোভা।তিতলীও গলা জড়িয়ে ধরে। গায়ে বেশ জ্বর মেয়েটার। তিতলীকে খাওয়ানোর ঔষধ শোভার হাতে তুলে দিয়ে আর রান্না কি কি করবে বলে দিয়ে দ্রুত অফিসে বেরিয়ে যান নীতা-বৌদি। খানিক বাদে ব্রেকফাস্ট খেয়ে তিতলীকে আদর করে, শোভাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দাদাবাবুও অফিসে বেরিয়ে যান। যাবার সময় বলে যান ফিরতে রাত হবে। জরুরি কেস হেয়ারিং আছে। আজই।ফাইন্যাল রায়... ওরা বেরিয়ে যেতেই তিতলীকে গা-মাথা ধুইয়ে জলখাবার আর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে রান্নাঘরের পাশের ঘরটাতে শুইয়ে দেয় শোভা। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে চটপট রান্না বসায়। তিতলীকে আজ হালকা করে মাছের ঝোল ভাত করে দেবে। ক'দিন থেকেই সবজি-খিঁচুড়ি খেতে চাইছিলো না মেয়েটা। ঝোলে মাছ ছাড়তে ছাড়তে হঠাৎ খেয়াল হলো, টুসকীটা কেমন আছে কে জানে? চাঁপার মাকে ফোন করেও জানতে পারবে না। তালেগোলে নিজের ফোনটা ফেলে এসেছে। এ বাড়িতে ফোন আছে, কিন্তু ফোন নাম্বার লেখা ছোট্ট সেই ডাইরিটা পুরোনো ব্যাগের ভেতর রয়ে গেছে। আজ একটা নতুন ব্যাগ নিয়ে এসেছে শোভা। মনটা বড্ড ভারী হয়ে গেলো...হঠাৎ চাপা গোঙানীর আওয়াজ। ...চিন্তাজাল ছিন্ন হল শোভার। দৌড়ে ঘরে গিয়ে সে দেখে, প্রচন্ড জ্বরে প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়েছে তিতলী। চোখ উল্টে যাচ্ছে। ভয়ংকর ঘাবড়ে গিয়ে শোভা চিৎকার করে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনদের ডেকে আনে। পাশের ফ্ল্যাটের দত্তবাবুদের সাহায্যে তড়িঘড়ি কাছেই এক বেসরকারী হসপিটালের ইমার্জেন্সীতে তিতলীকে ভর্তি করে শোভা। টেস্ট করার জন্য চটপট তিতলীর শরীর থেকে রক্ত নেন ডাক্তারবাবুরা। হতবুদ্ধি শোভা বার বার ফোন করতে থাকে নীতাবৌদিকে, কিন্তু লাইন পায় না। পাগলের মতো ফোন
করে দাদাবাবুর মোবাইলে আর অফিসে, সেখানেও লাইন পায় না শোভা। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। দত্তবাবু তিতলীর রক্তের টেস্ট রিপোর্ট হাতে পেয়ে বলেন,"ডেঙ্গু ধরা পড়েছে তিতলীর, প্লেটলেট ২০ হাজারের কম। শরীরে দেখা গেছে রক্ত ক্ষরণের চিহ্ন। এক্ষুণি রক্ত দিতে হবে।" এদিকে আরেক বিপদ, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত অকুলান। তিতলীর রক্তের গ্রুপ A+ । হঠাৎ শোভার খেয়াল হল তার নিজের রক্তও তো A+ গ্রুপের। তাদের বস্তিতে রক্তদান কর্মসূচি হয়েছিলো স্বাধীনতা দিবসের দিন, তখন রক্তের গ্রুপ টেষ্ট করা হয়েছিলো। সঙ্গে সঙ্গে দত্তবাবুকে সেকথা জানায় সে। আর তৎক্ষাৎ শোভার দারিদ্র্য পীড়িত A+ রক্ত গলগল করে প্রবেশ করে তিতলীর অভিজাত শরীরে। ডাক্তারবাবু জানান, "তিতলী ইজ আউট অফ রিস্ক"। ভগবানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে জল চলে আসে শোভার। সব কর্মকান্ড শেষ হলে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রথমে ফোন আসে তিতলীর মায়ের এবং তারপর বাবার। তাদের অসহায় গলায় শোভার প্রতি কৃতজ্ঞতার ছোঁয়া...
এখন রাত দশটা। ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরছে শোভা। বস্তিতে ঢোকার মুখে গলির বাঁকে আবছা অন্ধকারে ভীড় দেখে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো ওর... কার আবার কি হল? টুসকি টুসকি... টুসকি ঠিক আছে তো? দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় শোভা। তাদের উঠোনে জনা পঞ্চাশেক পাড়ার লোকের ভীড়...তাকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে চাঁপার মা...সব শেষ হয়ে গেল রে...... এ......এ....... উঠোনের মাঝখানে শোয়ানো টুসকির মৃতদেহের ওপর চিৎকার করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায় শোভা...
রেজাল্ট
জয় চক্রবর্তী
আজ চাকরির প্রথম দিন। সাইকেলে চেপে যেতে যেতে দীপন ভাবছে, আমিতো আর বেকার নই। এবারে বাণী পিসি মাকে নিশ্চই বলবে না, "কিরে এত পড়াশোনা শিখিয়ে কি হল ছেলের? সেইতো বাড়ি বাড়ি টিউশন পড়ায়। এভাবে কদ্দিন।" এখন মাও গর্ব করে বলবে "আমি একজন স্কুল মাস্টারের মা।"
বিন্তির মা যদি মায়না নিয়ে আবার খিটখিট করে, সাফ বলে দেবে আমায় ছেড়ে দিন, আমি এই টিউশন পড়াবো না।
বিন্তির মা যদি মায়না নিয়ে আবার খিটখিট করে, সাফ বলে দেবে আমায় ছেড়ে দিন, আমি এই টিউশন পড়াবো না।
ঘুম ভাঙে দীপনের। আচ্ছা আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ইস, কি সুন্দর এই স্বপ্ন। ঘড়িতে ৬টা ১০ । সবাই বলে ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়! আর ঘুমোনো সম্ভব কি? বিছানা ছেড়ে উঠে পরে দীপন। চটপট রেডি হয়ে সাইকেল ছারে।
বিন্তি একটাও পড়া করেনি। সকাল সকাল মেজাজ যায় বিগড়ে। এটা কি একটা দিনের শুরু হল!
বিন্তির মা আসেন চা নিয়ে, "দীপন শুনলাম আজ নাকি প্রাইমারীর রেজাল্ট"। দীপন যেন মনে একটা বড় আন্দোলন অনুভব করে, তুমি ঠিক জানো কাকিমা? কখন?
"তোমার কাকু বললেন, আজ ওয়েবসাইটে দেবে।"
বিন্তির মা আসেন চা নিয়ে, "দীপন শুনলাম আজ নাকি প্রাইমারীর রেজাল্ট"। দীপন যেন মনে একটা বড় আন্দোলন অনুভব করে, তুমি ঠিক জানো কাকিমা? কখন?
"তোমার কাকু বললেন, আজ ওয়েবসাইটে দেবে।"
দীপন টিউশন শেষ করে সোজা চলে যায় সাজুদাদার কাছে। সাজু দাদার মোবাইলে ইন্টারনেট আছে। আধ ঘন্টা অন্তর অন্তর চেক করে। দুপুর দুটোয় সাজু দাদা বললো "দীপন আয় আয়, রেজাল্ট দিয়েছে, রোল নম্বরটা বল।" মুখস্ত করা রোল নম্বটা বলল দীপন।
সাবমিট। পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরে গেল একবার মোবাইল স্ক্রিনে।
রেজাল্ট: নট কোয়ালিফায়েড।
রেজাল্ট: নট কোয়ালিফায়েড।
রথযাত্রা (ঠুঁটো জগন্নাথ)
সুপ্রীতি বর্মন।
বেনীমাধব খুব দুঃখী ঘরের ছেলে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।সংসারের দৈন্যদশা সবসময় বুকের দোষে ভুক্তভোগী বাপের মুখ ঝামটা।জোয়ান ছেলের চোখের তলায় গুমড়ে মরে স্বপ্ন দীর্ঘ প্রতীক্ষা সুদিনের কালি।তবু়ও তার মনের জোর ঠেলা গোঁজা সংসারে ফোটায় চন্দ্রমল্লিকা সবসময় মনে তার প্রেমিক স্বত্তা।নায়কের চিত্রপটে হিরোগিরি কিষেন কানাইয়া।
ওদিকে জুঁই স্বচ্ছল আটপৌরে কুমারী তার রূপ যৌবনে মরি মরি রাস্তার ছেলে ছোকরার দল।তবুও তার মন শুধায় তারে এমন কে আছে যে মরবে তার মনে না তার দেহে।আশেপাশে পেরিয়ে যাওয়া মেয়েরা তাদের প্রেমিকের বাইকের পেছনের সিটে কোমর জড়িয়ে দেয় দূর গন্তব্য যাত্রা।জুঁই মনে মনে দীর্ঘশ্বাসে লুকায় অন্তরের গুমোট যন্ত্রনা কিন্তু কে সেই মনের মানুষ হবে।
হঠাৎ একদিন এই দুই পৃথিবীর সম্মুখ দর্শনে বেনীমাধব পাগল হয়ে উঠে জুঁই এর রূপে।রাস্তা ঘাটে পাগলের মতন তার পিছু করে।চোখে অনেক প্রশ্ন কৌতূহলের মাকড়সার জাল তার ঘুম কাড়ে।ন্যাওটা ছেলের মতন গা ঘেঁষে তার যোগাযোগ পেতে চায়।কোন একটা সূত্র যাতে গাঁথা হবে হৃদয় সাঁকো।জুঁই এর স্বেচ্ছায় সমর্পন গড়ে উঠে সখ্যতা।দিবারাত্রির কাব্য ফোনেই রতির জীবন যাপনচিত্র।
জুঁই এর মা বলে আবার এসে গেলো সেই আষাঢ়ের রথ।রথের রশি ধরে টানাটানি করো।আর ঠুঁটো জগন্নাথ দিনরাত শুধু বসে থাকো চূড়ায় আর ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকো মানুষের দৈন্যদশায়।জুঁইয়ের চোখের কোনে জল আমার বেনীমাধবটা ও দুবেলা ভালোমন্দ জোটে না আর আমি বসে বসে আলালীর ঘরে দুলালী পাকা মাছের কাঁটা বেছে বেছে খাবো।হা ঈশ্বর এ তোমার কেমন বিচার।
জুঁই বলে আচ্ছা মা ঠুঁটো জগন্নাথ বললে কেন এটা কি কোন প্রবাদ।মা বলে আর মেয়ে তুই এটাও জানিস না।রাজনের একটা ভুলের অপরাধে এই মাশুল।মানে মা বলো বলো সেই গল্পটা।দূর ছাড় আমায় অনেক কাজ বাকি আছে রান্না করতে হবে।জুঁই বলে আজকে তোমাকে বলতেই হবে কি হয়েছিল।মা বলে বোকা মেয়ের কান্ডি দেখো ঠিক আছে বলছি মন দিয়ে শোন।
সে অনেককাল আগের কথা শ্রীকৃষ্ণের স্বেচ্ছায় দেহত্যাগের পর তার প্রানের পরশ নীলকান্তমনি হয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় যমুনার জলে।তারপর পুরীর রাজা স্বপ্ন পায় জগন্নাথের মন্দির নির্মানের আলংকারিক সৌন্দর্যে।তার জন্য রাজার অনেক কঠোর তপস্যায় মন থেকে ডাকে দারুব্রহ্ম কাঠ ভেসে আসে সমুদ্রের সৈকতে।রাজার আর আনন্দ ধরে না পরব্রহ্ম তাকে খুঁজে নিয়ে জগৎ শ্রেষ্ঠ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন।স্বয়ং বিশ্বকর্মা আসেন সেই মূর্তি নির্মানের কান্ডারী হতে।কিন্তু প্রথমেই সতর্কতা দেন রাজন আমার মূর্তি তৈরী করা কালীন কেউ যেন মন্দিরে প্রবেশ না করেন।কিন্তু রাজার বড্ড স্বভাবদোষ তর সয়না।প্রচন্ড অধৈর্য্য হয়ে পড়ে ভাবে দূর দিন মাস বছর সব গেল শিল্পী কি করছে কি এতদিন ধরে।তাছাড়া মূর্তি নির্মানের কোন ঠোকাঠুকির আওয়াজ নেই।দূর আর পারছিনা দরজাটা খুলেই দি।ব্যাস যেমন বলা তেমনি কাজ দরজাটা হাট করে সশব্দে খুলে দিল।আর ধড়মড়িয়ে উঠলো বিশ্বকর্মা।ব্যাস সমগ্র কাজ পঙ্গু।
জুঁই বললো মা তার মানে।মা বলল বিশ্বকর্মা স্তম্ভিত হাত থেকে হাতুড়ি পড়ে গেল।রাজার চক্ষু চড়কগাছ।দেখে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা কারোর হাত পা গড়া হয়নি।সেই থেকে ঠুঁটো জগন্নাথ।বিশ্বকর্মা বললো আর হবে না পারবো না করতে আপনি আমার আদেশ মানেন নি।রাজন বললো দয়া করে আপনি চলে যাবেন না।কিন্তু কি আর করার চোখের জল সার।
তাই বলে ধৈর্য্য ধরে সময়ের কাজ সময়ে না হলে অরণ্যে রোদন।
জুঁইয়ের মনে এই কথাটা ধাক্কা মারে জোরে।আমি এক কুমারী কেই বা দেখেছে আমার ভবিতব্য।তাই সময় থাকতে থাকতেই বেনীমাধব কে জানাতেই হবে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।দৌড়ে চলে যায় ঘরে।মা তার কিছুই বুঝতে পারে না।বলে কে জানে কি হল হঠাৎ করে ওর।পাগলী মেয়ে একটা।কখন যে মাথায় কি ভূত চাপে তা বোধ করি বিধাতার ও জানা নেই।
জুঁই ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢুকে ফোনের নম্বর মেলায়।হাঁপিয়ে উঠে আর স্যাঁতসেঁতে অন্তর্বাস বলে হ্যালো শুনছো আমি তোমার জুঁই।বেনীমাধব বরাবরই একটু ভীতু আর ঘরকুণো তার বুকের ভেতরটা ভয়ে মুচড়ে উঠে বলে কি হয়েছে জুঁই কিছু ঘটেছে।
জুঁই হাসতে হাসতে বলে দূর পাগল।জানোনা সামনেই আষাঢ়ের রথ।এবারে খুব ঘটা করে আমাদের গ্রামের যে প্রাচীন পরিত্যক্ত জীর্ণ মন্দির আছে ওখানে হবে।মেলা বসবে সরগমে প্রাঙ্গন জুড়ে।আমাকে নিয়ে যাবে ঘোরাতে বল না প্লীজ।আমার তো আর কেউই নেই কে যাবে তাহালে।বেনীমাধব বলে আমি আছি তো।বলেছি না সারাজীবন আগলে রাখবো তোমাকে আমার বুকে আর শক্ত করে তোমার হাতটা ধরে রাখবো।জুঁই খুব খুশী তার ভেজা আঁখির কুমারী প্রেম আজ সার্থকতা পেল তোমার স্বীকারোক্তির ছোঁয়ায়।
জুঁই বলল বেশ আমি তাহালে সেজেগুঁজে তোমার মনের মতন প্রেমিকা হয়ে অপেক্ষা করবো মন্দিরের দরদালানে।ঠিক আছে বলে বেনীমাধব ফোন ছেড়ে দেয়।কতকাল পরে একটু নিজের জন্য তার বাঁচার ইচ্ছা হল।সবসময় নেই নেই রুদ্ধশ্বাস কানাকড়ির দূর্মুল্যের সংসারে তিষ্ঠানো দায়।আজ একটু তার প্রানখোলা হাসি আর ঘোলাটে হবে না কেরোসিনে স্টোভের ধোঁয়ায় বা ভাতের হাঁড়ির ক্ষিধের আগুনে।
বেনীমাধব পরিপাটি সেজে সানগ্লাসে হিরোয়িক লুকে লোমশ বুকের ছাতিতে ডেনিমের আঁচে প্রেমিক ভ্রূন প্রস্ফুটিত হব হব করছে।তারপর এক দৌড়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে ভাঙা দরজা দিয়ে গলে যেতে গিয়ে বলে মা বেরোচ্ছি কাজ আছে একটু।পায়ের জুতার সোলটা বড্ড খরখরে পা কেটে গলে যাবার উপক্রম আসলে কম দাম তো।বলে না সস্তার শত অবস্থা।কিন্তু কি আর করার আমার গ্রাভিটি তো ঐ বুটে ঐটাতেই আমার পুরুষত্ব।খুলে ফেলতে পারিনা।এক বিশাল Complex.
আজানুকেশ ভিজিয়ে জুঁইয়ের জলকেলি পায়ের কলমে বৃত্তাকারে আলপনার আঙ্গিকে মনে মনে ছুঁই তোমার কায়া বেনীমাধব তুমি শুধু আমার।তারপর স্নানঘর থেকে বেরিয়ে এসে দর্পণে নিজেকে দেখে আর ভাবে যদি মায়ের মতন একটু তোমার গোলাপ ওষ্ঠের লালিমা দিয়ে সিঁদুরে রাঙাতে পারতাম আমার সিঁথি কিন্তু সে তো অসম্ভব কারন আমি তো দিনের শেষে এই ঘরের অক্ষতযোনি।
তারপর মিলনের পরাগমাধুরী মিশিয়ে জুঁই বসে বসে একটি মালা মন দিয়ে গাঁথতে বসে ফুল দিয়ে।সেটা তারপর যত্ন করে ব্যাগে রাখে।তারপর সেজে মাকে বলে আমি আজ রথের মেলায় যাচ্ছি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।তুমি কিছু চিন্তা করোনা।
জুঁই বেরোয় তারপর হেঁটে হেঁটে পৌঁছায় অবশেষে অনেকটা পথ অতিক্রম করে মন্দিরের জীর্ণ পরিত্যক্ত প্রাঙ্গনে।কত বিশাল ভিড় রীতিমতন চাপাচাপি।জুঁই ভাবে জগন্নাথ মানুষের কত কষ্ট আর নেকন তোমার ছোঁয়া পেতে রসা নিয়ে দড়াদড়ি সেই সকাল থেকে।তোমার কাছে মন্দিরের চূড়ায় বসে থাকা পুরোহিত ভাবে সে তোমার।আর নীচে যে দড়ি টানে সে ভাবে তুমি তার।কিন্তু দিনের শেষে যতই ধ্বস্তাধস্তি হোক জগন্নাথ তুমি হাসো আর ভাবো আমি জানি আমি কার।
এইসব সাতপ্যাঁচ নিয়ে ভাবছে জুঁই আর বলছে মনে মনে কে জানে বেনীমাধবটা এতো দেরী করছে কেন।চোখ বন্ধ করে ডাকছে জগন্নাথ আমাকে আর একাকীত্বের বৃশ্চিক দংশন দিওনা।ওকে তাড়াতাড়ি আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।ঐ আমার প্রানের সখা।আমার সবকিছু।
হঠাৎ চোখ খুলতেই দেখে চোখের সামনে ছুটতে ছুটতে আসছে বেনীমাধব খালি পায়ে ভাঙা সাইকেলে।হুড়মুড়িয়ে নেমে জুঁইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে যেন আজকে জুঁই মরতে মরতে বেঁচেছি।জুঁইয়ের বুকটা ধড়াস করে ওঠে বলে কেন কি হয়েছে বলো তোমার।বেনীমাধব বললো আর বলবে না জুতোটা প্রথম থেকেই পায়ে adjust হচ্ছেনা।খুব ধকল দিচ্ছে প্রচন্ড যন্ত্রনা তাই মনটা ঐটাতেই আটকে আছে আর মাথায় একটা চাপ যে তাড়াতাড়ি তোমার কাছে পৌঁছাতে হবে।ব্যাস জোরে সাইকেল চালাতে গিয়ে প্রায় একটা লড়ির তলায় চলে যাবার উপক্রম।মরে গেলেই ভালো হতো ঘরের একটা চাপ শেষ হতো।ঘাড় থেকে বোঝা নেমে যেতো।কত টাকাই বা রোজগার করি আমিও তো তোমার ভগবানের মতন ঠুঁটো জগন্নাথ।তাই জানি তুমি আমার।তুমি আমার পোষাক বা জুতোয় কোনরূপ মাথা ঘামাবে না।কারন তুমি এই রক্তমাংসের মানুষটাকে ভালোবাসো তাই না।তাই জুতো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি নগ্ন পায়েই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। বলো জুঁই ঠিক করিনি আমি।
জুঁই একেবারে পাথরসম তার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু বিসর্জন।কোন সাড়া দিচ্ছেনা।নিরুত্তর।বেনীমাধব তাকে জোরে জোরে টানাটানি করে তার পিঠ ও ব্লাউজের দিকে আঁকড়ে ধরে জুঁই সাড়া দাও কি হলো তোমার বলো বলো,,,,,, জুঁই তখন জাপটে ধরে বেনীমাধবের বুকে তার বুক দুটো শরীর মিলে মিশে একাকার বলে বলো আর কোনদিন আমাকে একলা ছেড়ে চলে যাবে না।আমি আবার একলা হয়ে যাবো।মরে যাবো।
তার হাত থেকে মনের অগোচরে জুঁইয়ের মালাটা পড়ে যায়।তারপর জোর বৃষ্টি নামে মুষলধারে।সব রথের রশি ধরে টানাহিঁজড়া থেমে যায়।ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় দল যে যেদিকে পারে পালায়।ভগবানের আসনে শুধু স্মিতহাস্যে জগন্নাথ।ঐদিকে জুঁই ও বেনীমাধব যেন রাধা কৃষ্ণের যুগলমূর্তি আর মাথার উপর ঝরছে পুষ্পবৃষ্টি কারন একটি মহীরুহের পাশেই ছিল এই কপোত কপোতী।
বেনীমাধব আর ঠুঁটো জগন্নাথ থাকতে চায়না অনেকবার নিজের মনে একটা মর মর চাপা ভয়ে সে পিছিয়ে গেছে জুঁইকে কাছে না টেনে তার প্রস্তাবকে নাকচ করে সরিয়ে রেখেছে নিজেকে।কিন্তু আজ আর নয়।সেই আকাঙ্খিত মধুমালতী এসেছে আমার পুরুষত্বের বাহুডোরে।বেনীমাধব জুঁইকে কোলে নিয়ে ঢুকে যায় পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা দেওয়ালের মধ্যিখানের ঘুপচি কুঠুরী গুলোতে।ঐদিকে প্রধান মন্দিরের অন্তঃপুরে পর্দার আড়ালে নৈবেদ্যের উপাচারে জগন্নাথের ভোগ চলছে।
পুরোহিতরা বৃষ্টির মধ্যেও চান জলের থালার সামনে কোষাকুষি নিয়ে সাগ্রহে প্রতীক্ষায় করপদ্মে তুলে দেবে বলে।
দ' য়ের মধ্যভাগে প্রবল বর্ষণে আদম কামড়ে কামড়ে ক্ষুধা চরিতার্থ করে।প্রকৃতি অস্থির উন্মাদনায় দুটি নিষ্পাপ ওষ্ঠে ঝড় লুকিয়ে আছড়ে পরে আত্মার মই বেয়ে সহাবস্থান।নাভিতে জলজ উল্কি ফোঁটা ফোঁটা তোমার ঘামের প্রচ্ছদের ক ফোঁটা।তারপর একেবেঁকে বাসি সর্বনাশ ময়াল সাপের প্যাচঁপেচে অন্ধত্বে শীতলতার ঘুম।
জুঁইয়ের কপালে বেনীমাধব তার স্বামীর সাক্ষর চুমু দিতেই জুঁই কেঁদে কেঁদে কম্পিত শরীরে তাকে জড়িয়ে ধরে আরো শক্ত করে।বেনীমাধব দেখে পাশে পড়ে আছে মালাটা।জুঁইয়ের কিছু বলার আগেই সে সবটুকু বুঝে যায় তারপরই সে আগুপিছু কোন চিন্তাকে মাথায় ঠাঁই না দিয়ে মালাটা জুঁইকে পরিয়ে দেয় আর তাকে আলিঙ্গন করে বলে জুঁই জানো তো আর একটা ছোট্ট জিনিস বাকি আছে করতে।জুঁই বলে সেটা আবার কি।কোন দুষ্টুমি নিশ্চয় আমি জানি তো।
বেনীমাধব বলে আরে না পাগলী তারপর সটান নিজের জামার পকেট থেকে সিঁদুর কৌটো বের করে এক চিলতে সিঁদুর নিয়ে পরাতে যায় জুঁইকে।কিন্তু জুঁই ভয় পেয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে এ কি করছো।যা করছো ভেবেচিন্তে করছো তো।এটা কিন্তু একবার দেয়।বেনীমাধব বলে আমি জানি তুমি শুধু আমার।কবে থেকে বৈরাগ নিয়েছি সংসারের কথা ভেবে কিন্তু আর পারছিনা।আমি মন থেকে তোমাকেই আমার বউ বলে ভাবি।জুঁই মাথা পেতে নেয় বেনীমাধবের সিঁদুর।আজ থেকে আমি শুধু তোমার।
তারপর দুজনে মেলায় বেরিয়ে এসে ঘোরাফেরা করে জুঁই আবার সেই ছোট্ট মেয়েটি হয়ে বেনীমাধবকে বায়না করে।দাও না এটা কিনে ওটা কিনে।তারপর জুঁইকে টেনে নিয়ে আসে আর দুহাত ভর্তি রেশমী কাঁচের চুরি পরিয়ে দেয়।জুঁই বলে তুমি কি করে জানলে আমি চুরি পরতে খুব ভালোবাসি।
তারপর দুজনে ছুটে এসে রথের রশি ধরে জোরে জোরে টানতে থাকে দুদিক থেকে।জুঁই মনে মনে বলে হে ঠাকুর যদি আমি কিছুটা পূণ্যি করে থাকি তাহালে সেটা বেনীমাধবকে দিয়ে দাও।ওর জীবনে রথের গতি আসুক আর স্বয়ং তুমি হও তার কান্ডারী।জুঁই হাসে আর ভাবে বেনীমাধবের আর আমার পাল্লায় পড়ে ঠুঁটো জগন্নাথ হওয়া হলোনা।
ভিনগ্রহী ও বটগাছ
সাথী দত্ত
একটানা বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণের জানালা দিয়ে ঢোকার জন্য বেশ ঠান্ডাই লাগছে এখন। এরোমেটিক নেফিস্যামিনের লিকুইড এসেন্সটা না ছড়ালেই নয়। এই ঘরে হিউমিডিটি আর নেফিস্যামিনের স্মেল টা স্ট্যাটিক রাখা খুব দরকার। নেফিস্যামিন অনুরূপেরই তৈরি এক ধরনের এরোমেটিক সেন্ট যা ন্যাফথেলিন, বেঞ্জামিন ও আরো কিছু অরগানিক যৌগ দিয়ে তৈরি এক ধরনের শক্ত ন্যাফথেলিনের মতোই সাদা রঙের পদার্থ, যার একটা মটর দানার মতো টুকরো ঘরের কোনায় রাখলেই সারা ঘরে একটা সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে পরে, যেটা অনুরূপের সব রকম এক্সপেরিমেন্টেই সাহায্যকারী। কিন্তু এখন হিউমিডিটি বেরে যাওয়ার জন্য স্মেল টা অনেক টা কমে গেছে, তাই কয়েক দিন আগেই তৈরি লিকুইড এসেন্স টার দরকার পড়ল অনুরূপের। বাইরে এখন নাইন্টি এইট পার্সেন্ট হিউমিডিটি, কিন্তু ঘরে তা সব সময়ই সিক্সটি, তার কারণ অবশ্য ওর তৈরি করা হিউমিকন্ট্রোল হাইগ্রোমিটার, যা হিউমিডিটির নিখুঁত রিডিং দেওয়ার সাথে সাথে তা কন্ট্রোলও করে। এই নতুন রিসার্চ টায় বিশেষ করে সবকিছু নিখুঁত চাই অনুরূপের। খ্রিস্টোফার সেরউডের লেখা ‘সিক্রেটস্ অব বোটানি’ বই টা টেবিলেই রাখা ছিল, সেটাই আবার খুলে বসল অনুরূপ, বুকমার্ক দেয়া চারশো ছয় নং পাতা, ফিকাস বেঙ্গহালেনসিস।
ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির বি.এস.সি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র অনুরূপ গাঙ্গুলী, পড়ছে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে, কিন্তু ওর মতো বয়সে এতো আশ্চর্য রকম বায়োলজি ও কেমিস্ট্রির জ্ঞান খুব কম ছাত্রেরই দেখা যায়, এমনকি বোটানিতেও ওর রয়েছে আশ্চর্য রকম জ্ঞান! দুদিন পর পরই এক একটা আশ্চর্য আবিষ্কার সে নিয়ে আসে কলেজের ল্যাবে, এবং তা দেখে স্টুডেন্টস দের তো বটেই এমনকি প্রফেসার দেরও চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়, এই তো দুদিন আগেই সে একটা বিকারে করে আশ্চর্য একরকম হলদে নীল রঙের জেলি নিয়ে এসেছে, সেই জেলি নাকি সব ধরনের প্লাস্টিক কে গলিয়ে এক ধরনের বায়ো ডিগ্রেডেবল্ পদার্থে পরিণত করবে, এমনকি এই জেলি টাও নাকি বায়ো ডিগ্রেডেবল্! পরীক্ষা করার জন্য প্রফেসারেরা এসে একটা বিস্কুটের প্যাকেট ওতে ফেললেন, আধ মিনিটের মধ্যেই বিস্ফারিত চোখে সবাই দেখল সেই প্যাকেট গলতে শুরু করেছে, আর তার সাথে সাথেই জেলির উপর জমা হচ্ছে লাল রঙের আরেক ধরনের পদার্থ, এটাও জেলি, এবং এ জেলি হজম করতে পারবে যেকোনো ব্যাকটেরিয়া! অনুরূপের বাবা বিখ্যাত উকিল অরুনাংশু গাঙ্গুলী। অঢেল টাকা থাকায় শহর কলকাতা থেকে একটু দুরে গাছ পালায় ঘেরা শান্ত রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া তে একটা আস্ত বাংলোই কিনে দিয়েছেন ছেলেকে। এই বাড়িতেই অরুনাংশু তৈরি করেছে ওর পার্সোনাল ল্যাব। বাড়িটা দোতলা, উপরতলায় অনুরূপের শোবার ঘর, একটা ব্যালকনি ও একটা বইয়ে ঠাসা লাইব্রেরি, নিচের তলায় বাদিকে কিচেন, ডাইনিং, আরো দুটো শোবার ঘর, বসার ঘর আর বারান্দা পেরিয়ে দক্ষিণে রয়েছে অনুরূপের ল্যাবরেটরি। এই বাড়িতে এখন থাকে অনুরূপ আর ওর ফাই ফরমাশ খাটার চাকর বিভু, যদিও অনুরূপ ওকে বিভু কাকা বলেই ডাকে।
ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো আবার, ঢং ঢং শব্দে ঘোর ভাঙলো অনুরূপের, চারটে বাজে, টানা চল্লিশ মিনিট ধরে সে পড়ে গেছে ফিকাস বেঙ্গহালেনসিসের উপর লেখা একটার পর একটা প্যারাগ্রাফ, এখানে জানিয়ে রাখি ফিকাস বেঙ্গহালেনসিস হচ্ছে বটগাছের সাইন্টিফিক নাম, আসলে এবার যেটা নিয়ে ও রিসার্চ করছে সেটা হচ্ছে একটা হাইব্রিড বান্যান ট্রি বা সংকর বটগাছ, যার বৃদ্ধি হরমোন সবথেকে বেশি সক্রিয় হবে, ফলে প্রতি ঘন্টায় বেড়ে উঠবে এই গাছ, সঙ্গে দেবে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন আর নতুন গাছের চারা। কেন সে এই অদ্ভুত গাছের উপর রিসার্চ করছে সেটা এইবেলা বলে ফেলা দরকার।
আজ থেকে ঠিক একমাস আগের ঘটনা, গরমের ছুটিতে অনুরূপ এবারো এসেছে গোপালপুর, একাই। পড়াশোনা এবং চার দেয়ালের বদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে কিছুদিন সমুদ্রের পাশে খোলা হাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়ার জন্য আর কি। পুরী দীঘা ওর পছন্দ না, সেখানে সবসময়ই জনসমুদ্রের কোলাহল আর ভিড়, তার চেয়ে গোপালপুর অনেকটা শান্ত আর নিরিবিলি। অনুরূপ যে হোটেলে টাতে উঠেছে সেটা সমুদ্রের কাছ ঘেঁষেই, ওর রুম চার তালায়, ব্যালকনি তে দাঁড়ালেই ভেসে আসে সমুদ্রের ঢেউয়ের গুরুগম্ভীর আওয়াজ। গরমের ছুটি চলবে টানা একমাস, কিন্তু অনুরূপ এখানে পাঁচ দিনের বেশি কিছুতেই থাকবে না, ওর বাড়ির ল্যাবে বিস্তর কাজ বাকি। প্রথম দিন কিছুই হয়নি, সন্ধ্যের পর ব্যালকনি তে বসে এক কাপ কফি আর চিকেন পকোড়ার সাথে বার বার বালিতে এসে আছড়ে পড়া ঢেউ ও তার সাথে থাকা ফসফরাসের আলো দেখতে সত্যিই খুব ভালো লাগছিল অনুরূপের, তার সাথে আকাশ ভর্তি তারা, যেন মায়াবী পৃথিবীর দর্শক হতে চলেছে সে আজ রাতে । ব্যাপারটা ঘটল তার ঠিক পরের দিন। বিকেলে রোদ কমে যাওয়ার পর থেকে সমুদ্রের পারে বালিতে এসে বসেছিল অনুরূপ, সন্ধ্যে হওয়ার ঠিক পর পরই যখন সে হোটেলে ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালো তখন দেখতে পেল অনেকটা দুরে থাকা প্রায় ধসে পড়া বাড়ি গুলোর মধ্যে থেকে একটা উজ্জ্বল নীল আলো বেরিয়ে আসছে। এই বাড়ি গুলো ও আগেই দেখেছে, না জানি কত শতাব্দী আগে তৈরি এই বাড়ি গুলো, সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে সেগুলো এখন একেবারেই ধ্বংসস্তূপ, চার পাশের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে নেড়া ইট দাঁত বের করে আছে, বাড়িগুলোর ছাদও আর আস্ত নেই, সেই বাড়ির ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসছে এই উজ্জ্বল নীল আলো। ব্যাপার কি? অনুরূপ এগিয়ে গেল বাড়ি গুলোর দিকে। সন্ধ্যা শেষ হয়ে এখন আকাশে তারা ফুটে উঠেছে, অনুরূপ সেই ভাঙা বাড়িগুলোর ভেতরে ঢুকেই বুঝতে পারলো যে আলোটা এখানে আরো অনেক বেশি উজ্জ্বল, এবং এতোটাই উজ্জ্বল যে হটাত্ দেখলে চোখ ঝলসে যাবে, সেই আলো ভেদ করে ভেতরে কি আছে সেটা খালি চোখে দেখা পৃথিবীর মানুষদের পক্ষে অসম্ভব! তার সাথে রয়েছে একটানা অস্বাভাবিক রকম চাপা গুনগুন আওয়াজ, যেন সেতার বেহালা তানপুরা এসরাজ সব একসঙ্গে বাজানো হচ্ছে, কিন্তু চাপা সুরে। হটাত্ মাথায় একটা ঝিমঝিম ভাব অনুভব করল অনুরূপ, তার মধ্যেই ওর মনে হলো ওর ব্রেইনের সাথে কেউ যোগস্থাপন করার চেষ্টা করছে, অথচ কেউ তো নেই আসে পাশে! তাহলে? অনুরূপ আবার সেই অনেকখানি জায়গা জুড়ে থাকা উজ্জ্বল নীল আলো ভেদ করে ভেতরে কি আছে সেটা দেখার চেষ্টা করল, আর তখনি পেছন থেকে সেই যান্ত্রিক অথচ খুব স্পষ্ট আওয়াজটা ভেসে এলো ওর কানে,--
“ওই আলো ভেদ করে তুমি কিচ্ছু দেখতে পারবে না, পৃথিবীর মানুষের ভিসিবল লাইটের ইন্টেনসিটি থেকে এই আলোর ইন্টেনসিটি অনেক অনেক বেশি, তোমাদের বলা আলট্রা ভায়োলেট রেএর ইন্টেনসিটির থেকেও বেশি, তবে এ রশ্মি শরীরের কোনো ক্ষতি করে না”।
পরিষ্কার বাংলা ও তার সাথে ইংরেজি! ঝিমঝিম ভাবটা কমে এসেছে এখন, কিন্তু শরীরটা যেন দুর্বল লাগছে খুব, আস্তে আস্তে পেছনে ফিরে তাকালো অনুরূপ, এবং সাথে সাথে ওর মনে হলো এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে পরবে সে, সে বিজ্ঞানের ছাত্র, এবং ওর জানা জ্ঞানের মধ্যে যদি সত্যি বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে এখন ওর সামনে যে নীল রঙের তিন ফুট সাইজের প্রাণীটি দু পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে সে কোনোমতেই পৃথিবীর কোনো জীব নয়! অনুরূপ মনে মনে ভাবলো, এলিয়েন!!!! অন্য পৃথিবীর মানুষ!!! সেই ছোট্ট নীল রঙের জীবটিও যেন অনুরূপের মনের কথা বুঝে গেছে তখন, তার তিনকোনা মুখটা অনেকটা মানুষের মতো হলেও তার রং উজ্জ্বল নীল, মুখের ভেতরের জিভ আর চোখের কোনের মাংস গোলাপি, দুকানের জায়গায় দুটো ছিদ্র আছে ঠিকই কিন্তু কানের বাহ্যিক অবয়বের লেশ মাত্রও নেই! চোখটাও অস্বাভাবিক রকম বড়ো, সাথে মাথাটাও, কিন্তু গায়ে কোনো পোষাক নেই, তার বদলে মনে হলো শরীরের চামড়াটাই পোষাকের মতো করে মডিফাই করা। সেই খুদে মানুষটা আবার বলে উঠলো,
“ঠিকই ভাবছো তুমি, তোমাদের এই, মানে যেটাকে তোমরা দুটো নাম দিয়েছ, গ্রহ এবং পৃথিবী, এই পৃথিবীর ক্রিয়েচার আমি নই, আমি এসেছি অনেক দূর থেকে, তোমাদের মাপা দুরত্বের হিসেবে অন্তত কয়েকশো আলোকবর্ষ দুরে থাকা তোমাদের এই পৃথিবীর মতোই একটা গ্রহ থেকে এসেছি আমি, তবে আমাদের এভোলিউশন তোমাদের থেকে কয়েক লক্ষ বছর এগিয়ে, তাই নামের কোনো প্রয়োজন আমাদের আর পরে না, অদূর ভবিষ্যতে যদি পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকে তবে তোমরা মানুষেরাও আমাদের মতোই শরীরের অধিকারী হবে”।
বিস্ফারিত চোখে দেখছিল অনুরূপ, ওর সামনে থাকা জীবটা এতো কথা বলছে, কিন্তু তার মুখ বিন্দু মাত্র নড়ছে না! ঠোট এবং জিভের কোনওরূপ ব্যবহার ছাড়াই এতো কথা বলছে এই তিন ফুট সাইজের খুদে মানুষটা! শুধু অনেকক্ষণ পর পর নিশ্বাস নেওয়ার ভঙ্গিতে সে তার মুখটা খুলছে এবং বন্ধ করছে। একটু খটকা লাগল অনুরূপের, খুদে মানুষটা এই মাত্র বলল “যদি পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকে”, তারমানে??
“তুমি কি অনুমান করছ পৃথিবীর আয়ু শেষ হয়ে এসেছে?” অনুরূপ বলল,
“না তা ঠিক নয়, তবে তোমরা মানুষেরা এই পৃথিবীর যা অবস্থা করেছ তাতে পৃথিবীটা থাকলেও তোমাদের অস্তিত্ব একেবারেই থাকবে না, এমনকি আর কয়েকশো বছরের মধ্যেই পৃথিবীর অত্যাধিক তাপ, ওজন স্তর ভেদ করে আসা রশ্মি ও বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়া অতিরিক্ত বিষাক্ত গ্যাসেই ধ্বংস হবে তোমরা মানুষেরা, আর তোমাদের সাথে সাথেই ধ্বংস হবে আরো অনেক জীবের। আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন হবে এবং পৃথিবীর মানুষ স্পেসিমেন চিরতরে হারিয়ে যাবে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড থেকে। আমার সেই জন্যেই এখানে আসা, তোমাদের এই পৃথিবীতে এখনও এমন কিছু দুর্মূল্য গাছ আছে যেগুলো আমাদের পৃথিবীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তার মধ্যে একটা তোমাদের এই ভারতবর্ষের বটগাছ, এগুলোরই কিছু স্পেসিমেন নিয়ে যাব আমি”।
অনুরূপের মাথা ঘুরে উঠলো, এ কি বলছে খুদে মানুষটা!! এতো উন্নতি করা পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব মানুষের অস্তিত্ব কিনা আর মাত্র কয়েকশো বছর!! একবার ওর মনে হলো মিথ্যে, তারপরই মনে হলো খুদে মানুষটা এটা তো একদমই ভুল বলেনি যে আজ মানুষের জন্যেই এই অবস্থা পৃথিবীর। হটাত্ একবার বিদ্যুত ঝলসে উঠলো, এখন আর তারা দেখা যাচ্ছে না আকাশে, কালো মেঘে ঢেকে গেছে সব, হয়তো বর্ষার প্রথম বৃষ্টি আজ ঝরে পড়বে গোপালপুরের বুকে। প্রাণী টার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসল অনুরূপ, ওর উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, তাই হাঁটু গেড়ে বসতে দুজনের উচ্চতাই সমান সমান হলো, অনুরূপ বলল,--
“এই ধ্বংসের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই?”
এইবার যেন মনে হলো খুদে মানুষটা কিছু একটা চিন্তা করতে শুরু করেছে, প্রায় দেড় মিনিট মতো এইভাবে থাকার পর আবার প্রাণী টার মুখ থেকে, না মুখ বলা ভুল হবে, প্রাণী টার ভেতর থেকে আওয়াজ বেরোলো,--
“তুমি তো বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করো,”—
কোনো আশ্চর্য শক্তিতে এটাও জেনে গেছে সে!
“তোমাকে আমি একটা জিনিস দিয়ে যাব, এক ধরনের উদ্ভিদ বৃদ্ধি হরমোন, এই হরমোন তোমাদের পৃথিবীতে তৈরি হয়না, তোমাদের পৃথিবীর অক্সিন জিবারেলিনের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী এই হরমোন, তোমাকে তৈরী করতে হবে একটা হাইব্রিড বটগাছ এবং তার শরীরের ভেতরেই প্রবেশ করাতে হবে এই হরমোন, তাহলে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হবে সেই গাছ, তবে এই পদ্ধতি একমাত্র সম্ভব বর্ষাকালে, সেই গাছ প্রতি ঘন্টায় বেরে উঠবে এবং মোট পাঁচটা পূর্ণ বয়স্ক বটগাছের সমান অক্সিজেন রিলিজ করবে। এছাড়াও তোমাদের আরো সতর্ক হতে হবে, অকারণে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে, কলকারখানা গাড়ি ইত্যাদির বিষাক্ত ধোয়া ক্যামিক্যাল পদ্ধতিতে শুদ্ধ ধোয়াতে পরিণত করে তবেই বায়ুমণ্ডলে ছাড়তে হবে, যেমন কার্বন মনোক্সাইড কে কার্বন ও অক্সিজেনে ভেঙে তারপর সেই অক্সিজেন বাতাসে ছাড়া। যেখানে সেখানে নোংরা ফেলা, নদী সাগরের জল পলোউটেড্ করা বন্ধ করে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও আরো অনেক কিছু, তোমরা এখন থেকে যদি এসব শুরু করো তাহলেই তোমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব, নাহলে কোনো ইতিহাসেও তোমাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না”।
সেই বার আর পাঁচ দিন গোপালপুরে থাকা হয়নি অনুরূপের, দুদিন থেকেই পরের দিন সে ফিরে এসেছিল কলকাতায়, সঙ্গে নিয়ে এসেছিল সেই খুদে মানুষটার দেওয়া একটা কাঁচের মতোই কিন্তু আরো অনেক বেশি স্বচ্ছ পদার্থের শিশি, সেই শিশিতেই রয়েছে লাল রঙের সেই হরমোন। তারপর থেকেই আজ পর্যন্ত নীরবে চলেছে ওর গবেষণা, একটা টবে ও চারাটা তৈরিও করে ফেলেছে, কাল এতে ইন্জেক্ট করবে খুদে মানুষটার দেওয়া হরমোন, তবে কাল যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে মাঠে মারা যাবে সব, কারণ বর্ষার বৃষ্টির জল চারাটায় পরতে থাকা অবস্থাতেই ইন্জেক্ট করতে হবে এই হরমোন, টিন, ছাদ বা অন্য কিছু থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির জল হলেও হবে না, এই জল সোজা আকাশ থেকে পড়তে হবে গাছটার গায়ে। সেরউডের বইটা বন্ধ করে উঠে পড়ল অনুরূপ, আজ আর ল্যাবে থেকে কাজ নেই, তাই দরজায় তালাচাবি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসল।
পরদিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠল, তখন আকাশে তেমন মেঘ নেই হালকা রোদ্দুর দেখা যাচ্ছে, মন টা খারাপ হয়ে গেল, আজ যে হরমোন ইন্জেক্ট করতেই হবে। রোজের মতোই নটার সময় ডাইনিং এ এসে ব্রেকফার্স্ট করতে বসল অনুরূপ, যখন লুচি গুলো প্রায় শেষের পথে তখনি বাইরে আকাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে, মাঝে মাঝে শোনা গেল মেঘের গুরু গম্ভীর আওয়াজ। ল্যাবের দরজা খুলল অনুরূপ, ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, ভেতরে এসেই যা দেখলো তাতে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে ওর নিজের কানেই আওয়াজ আসতে লাগল, কাল যে চারা টা রেখে গিয়েছিল অনুরূপ সেটা এখন আর চারা নেই! সেটা পরিণত হয়েছে একটা খুদে গাছে! সেটা লম্বায় প্রায় চার ফুট! আর তার গায়ের রং উজ্জ্বল নীল! ওর করা এক্সপেরিমেন্ট অনুযায়ী এই গাছ তো কোনোমতেই একরাতে এতোটা বেড়ে উঠতে পারে না, আর তার গায়ের রং? অনুরূপ তো এখনো হরমোন ব্যবহারই করেনি! বাইরে একটানা বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে কড়কড় শব্দে কাছে ও দূরের থেকে ভেসে আসছে বজ্রপাতের আওয়াজ। অনুরূপ গাছটাকে বাইরে ল্যাবের পাশে বাগানে নিয়ে আসল, হরমোন ইন্জেক্ট করার জন্য, দেখাই যাক না কি হয়।
তিন দিন পর বিছানা ছেড়ে ব্যালকনি তে এসে দাঁড়ালো অনুরূপ। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে বাগানে কাজ করার পর ঘরে এসে বিছানা ছেড়ে আর উঠতে পারেনি, একশো চার জ্বরে অচৈতন্য হয়ে শুয়ে থেকেছে টানা দুদিন। আজ মনে হচ্ছে শরীর টা ঠিক লাগছে একটু, মোবাইলটা বেজে উঠল,
“হ্যাপি বার্থডে মাই সন, এখন কেমন আছো? শরীর ঠিকঠাক তো?”
ফোনে উকিলবাবুর গলা, তাইতো, আজ তো তিরিশে জুন! মনেই ছিল না অনুরূপের! ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেই তিনি বললেন বিভু কে ফোন টা দিতে। “বিভুকাকা”- বলে ডাক দিয়েই অনুরূপের চোখ চলে গেল পাশের বাড়ির বাগানে, সেখানে খুব সুন্দর একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল, বর্ষার জলে গাছটা আরো বেশি সজীব হয়ে উঠেছিল, রোজ সকালে ব্যালকনিতে এসে গাছটা দেখতে সত্যি খুব ভালো লাগত অনুরূপের, আজ সেটা কেটে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু কেন? বিভু ওপরে আসতেই ফোন টা ওকে দিল অনুরূপ।
দুপুরে খাবার টেবিলে এসে অনুরূপ দেখলো পায়েস রান্না করেছে বিভু কাকা, সঙ্গে পোলাও, চিকেন, চাটনি, সুপ এসব তো আছেই, খেতে বসে ও বিভুকাকা কে জিজ্ঞেস করল,
“পাশের বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছটা কেটে ফেলা হচ্ছে কেন? তুমি জানো?”
“তা বাবু অতো তো জানিনে, শুনলুম ও বাড়ির কর্তা নাকি ছেলের জন্য খেলার ঘর তৈরি করবে”
“সেকি!! ওর ছেলের তো একটা পার্সোনাল রূম আছে!! তাছাড়াও সেতো এখনো অনেক ছোট!!”
“আমি আর কি বলব বাবু, ওদের বাড়ি ওদের জমি”
অনুরূপের এক মাস আগে শোনা সেই অন্য পৃথিবীর খুদে মানুষটার কথা গুলো মনে পড়ে গেল, সে বলেছিল মানুষের জন্যেই ধ্বংস হবে এই পৃথিবী। আর ওর গাছ টা??!! সেটাতো সকাল থেকে দেখাই হয় নি!!! তাড়াতাড়ি করে খেয়ে হাত ধুয়ে বাগানে আসল অনুরূপ, এবং গাছের টবের কাছে আসতেই ওর হৃদস্পন্দন আবার বেড়ে গেল, সেই টবের জায়গায় এখন আর টব নেই, আসে পাশে ছড়িয়ে আছে তার টুকরো গুলো, এবং সেই নীল গাছের শিকড় এখন টবের মাটি ভেদ করে স্থান নিয়ে নিয়েছে পৃথিবীর বুকে, মাত্র দুদিন সে বাইরে আসেনি, তার মধ্যেই গাছের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে প্রায় তিরিশ ফুট! এটা বটগাছই, শুধু গায়ের রং টা নীল, কিন্তু গাছের গোড়ার কাছে ওগুলো কি? আরো একটু কাছে এগিয়ে আসলো অনুরূপ, চারা! একটা নয়, দুটো নয়, মোট পাঁচটা চারা হয়ে আছে গাছটার চারিপাশে! অনুরূপ অনুভব করলো এখানে বাতাস খুব স্নিগ্ধ, যেন প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়া যাবে এখানে আসলেই। চোখ বন্ধ করল অনুরূপ, মনে মনে বলল এই গাছ ওর নিজেকে দেয়া জন্মদিনের বেস্ট উপহার।
মেঘ করেছিল, তাই একটু পর উপরে উঠে আসল অনুরূপ, লাইব্রেরির থেকে মুজনাই সাহিত্য পত্রিকাটা এনে ওর শোবার ঘরের বিছানায় এসে সাথী দত্তের লেখা গল্পটা খুলে বসল অনুরূপ, বাইরে তখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে, একটানা রিমঝিম রিমঝিম-।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা