Tuesday, January 8, 2019



সম্পাদকের কথা


সময়ের জমা খরচের খাতায় নতুন একটা বছর এলো আবার। মাঝরাতের অন্ধকারে বিলীন হল পুরোনো কেউ। 
বছর শেষে শোকের যে আবহ তৈরী হয়েছিল তার থেকে মুক্তি নেই নতুন বছরেও। একের পর এক চলে গেলেন বাংলা সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতি জগতের দিকপালেরা। বিজ্ঞান বলে ঠিকই যে শূন্যস্থান বলে কিছু হয় না, কিন্তু আদৌ কি তা? না...কিছু শূন্য কোনোদিন পূর্ণ হয় না। তবু মেনে নিতে হয় আমাদের সবকিছুই। 
নতুন বছরে মুজনাই একইভাবে বয়ে চলবে এই প্রত্যাশা নিয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে এই সংখ্যাটি। ইতিমধ্যে মুজনাইয়ের মুদ্রিত বার্ষিক সংখ্যা গুণীজনদের প্রশংসা পেয়েছে। কাজ চলছে বার্ষিক বিশেষ সংখ্যার। 
নতুন বছরে মুজনাইয়ের একটাই লক্ষ্য, নবীনদের পরিচিত করানো পাঠকসমাজের কাছে।মুজনাইয়ের এই প্রয়াসে সকলের সহযোগিতা মুজনাইয়ের প্রেরণা।     

এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা


শৌভিক রায়, সমীরণ চক্রবর্তী, জয় চক্রবর্তী, সুতপা মিশ্র, আবদুস সালাম,

Bedashruti Mukherjee, রীনা মজুমদার, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, সুদীপ বাগ,

সুদীপা দেব, বটুকৃষ্ণ হালদার, যাজ্ঞসেনী, সৌরভ ঘোষ, রুনা দত্ত, বীথি সরকার, প্রসেনজিত


রায়, ফিরোজ হক্, সুনন্দ মন্ডল, শৌভিক কার্য্যী, অনুপ সরকার, শ্যামল কুমার রায়, নিপা 

বিশ্বাস, রাজা বিশ্বাস, মজনু মিয়া, চিরঞ্জিত সাহা, সব্যসাচী নজরুল, রোমানুর রোমান,

সঞ্চিতা দাস, বিপ্লব গোস্বামী, শুভম রায়
প্রচ্ছদ ছবি - শৌভিক রায় 



প্রকাশক- রীনা সাহা 
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার 


মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫


স্মরণ 

স্মরণে তোমরা 
শৌভিক রায় 

ছায়া পথে হেঁটে যাও
ঢেউ শেষে 
বুকে নিয়ে গান 
বহুদূর অভিমান

তুমি পদাতিক ভাবো 
আসলে আমি বিষন্ন অমলকান্তি 



মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫




রম্য রচনা 


"দোল বিভ্রাট"
সমীরণ চক্রবর্তী 



        কানু পই পই করে বলে দিয়েছিল, চার মাথার মোড় থেকে ফ্লাইওভারের দিকে বিশ পা হাঁটলেই একটা কদম গাছ পাবি, নিচটা পাথর দিয়ে বাঁধানো, ওখানেই অপেক্ষা করিস।

        রাত বারোটার পর থেকে বাকি রাতটা রাধে  হোয়াটস্অ্যাপে চ্যাটিয়েছে কানুর সাথে। পাশের ঘরে বাবা মা শুয়ে, ফোনটা থেকে থেকেই কাঁচ ভাঙার মত বিটকেল স্বরে ঝন ঝন করে জানান দেয়, খবর এসেছে কানুর। নতুন প্রেমে পড়লে যা হয়, ওদিক থেকে একটি করে কথা আসে তো এদিক থেকে দ্বিগুন আগ্রহে দুটি করে কথা ছুটে যায় ফোরজি স্পীডে। ও ঘরে স্যুইচ টেপার শব্দ, বাবা বাথরুম থেকে ফেরার পথে বলে গেল, রাধে শুয়ে পড়। ওমনি নোটিফিকেশান সাউণ্ড মিউট, ভাইব্রেসান মোডে-
                আলো জ্বলে, নড়ে চড়ে... কথা কয় না
                (ওদিকে) রাধার মনে তখন উথাল পাতাল প্রেম যমুনা...
                নড়ে চড়ে... কথা কয় না...
        
        কাল সারা রাত জেগে হ্যাংওভার কাটেনি রাধের, সক্কাল সক্কাল মানে এই দশটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেই একটু এদিক ওদিক ঢুঁ মেরে অবশেষে অভিসারে। 

        জায়গাটাতো ঠিকই আছে তবে কানু নেই কেন? ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রাধে ফোন করতে যাবে, একি! চার্জ শেষ, দেহ রেখেছে গত রাতের অত্যাচারে। এক নিমেষেই সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল কানুর উপর, কিছুটা রাগ আর অল্প একটু মায়া মিশিয়ে নিয়ে, হতাশ রাধে ফিসফিসিয়ে সেই গানটাই ধরলো-
            "মা, তুই জলে না যাইও
            ও হে কলঙ্কিনী রাধা
            কদম গাছে উঠিয়া আছে কানু হারামজাদা
            মা তুই জলে না যাইও !"
কানুকে দেখতে না পেয়ে রাধের বিরহ তখন ক্লাইম্যাক্সে। রাস্তায় অলস ভাবে দাঁঁড়িয়ে থাকা লালু, কা্লু,  ভুলু এমনি হাফ ডজন লেড়ি কুকুর দেখে তার মনে হলো, আরে! এই তো সেই বেন্দাবন, সবুজ মাঠে ধেনু চরে বেড়াচ্ছে, তবে আমার বংশীধারীটি কই? নিশ্চয়ই সখীদের সথে মেতেছে ইয়েতে...। এমন সময় ঢোলা বারমুডা আর স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরা জমাদার জঞ্জালের গাড়ি নিয়ে হুইসেলে ফুঁ দিল, ফুঁ...ফুঁ...। অমনি রাধের কানে সে বাঁশি পশিল কানুর বাঁশি হয়ে-
            ওইতো আমার কানুর বাঁশি
            রাধে রাধে ডাকে
            কদম তলে একলা রাধে
            কানু হারায় চোখে...

        আবেগে কত কিছুই হ্য় ,তেমনি হয়েছে রাধেরও, অতি পীরিতির ঠেলায় তার বাহ্যিক জ্ঞান লোপ পেয়েছে। আসলে কদম গাছ না খুঁজে পেয়ে, বসে পড়েছে ছাতিম গাছের তলায়, আর সেখানেই থেকে থেকে বেন্দাবন দেখছে।
        এদিকে কানু এসে গেছে কদম তলায় নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই, চারখানা অপেক্ষার চারমিনার ফুঁকে, শূন্য বুকে, কানুর মেজাজ বেদম চটে, আধুনিক কানু, কীর্তন ছেড়ে বিড়বিড়িয়ে গাইছে-
            নারী চরিত্র বেজায় জটিল
            কিছুই বুঝতে পারবে না...
            ওরা কোন 'ল' মানে না
            তাই ওদের নাম ললনা।

        কদম তলা থেকে ছাতিম তলা বেশি দূর নয়, মেরে কেটে বিশ হাত, তবুও কেউ কাউকে দেখছে না, দেখলেও চিনতে পারছে না।অমন কষ্টি পাথরে খোদাই করা বছর একুশের তেল চুকচুকে কানু মেখেছে রূপোলী রঙ, টপ টু বটম, ফুল-পলিশড্।আর ওদিকে অষ্টাদশী রাধেকে বাঁদরামীর বাঁদুরে রঙে চেনাই যাচ্ছে না কোনো ভাবেই। কানুর হঠাৎ চোখ পড়লো ছাতিম তলায়, তবে ওই কি আমার রাধে?  ছিঃ ছিঃ, একি দেখি, এমন চাঁপা ফুলের মত ইস্কিন কিনা ঢাকা পড়েছে বাঁদুরে রঙে-
            এত সহজে কি রাধে
            কানুর চোখকে দেবে ফাঁকি 
            যতই তুমি মাখো না রঙ
            আমি তোমায় ঠিক চিনেছি...
কদম তলা ছেড়ে কানু এগিয়ে যায় রাধের দিকে, রাধে বুঝতে পারে কেস জণ্ডিস, রাধে মিনতি করে-
(কীর্তণের সুরে...)

            ক্ষমা করো কানু        ও পাড়ার ভানু
                       পুরনো প্রেমিকও বটে,   
            সারা অঙ্গ জুড়ে          মাখালো বাঁদুরে
                        না যাইও তুমি চটে।

কানু গদগদ হয়ে বলে আমারওতো সেম টু সেম কেস-
           

           ক্ষান্ত হইয়ো রাধে            এ দশা কি সাধে
                       আমারো আছে কিছু নালিশ,
            ঘোষ পাড়ার মনি            রূপোলী রঙ আনি
                      করে দিয়ে গেল ফুল পালিশ
            আহা পয়সা নেয়নি, কি আনন্দ, নিত্যানন্দ, আহা পয়সা নেয়নি...।

দোল বিভ্রাট পালা এখানেই ইতি
যত ভক্তগণে করি মিনতি    
সমস্বরে বলুন সবাই-
        ভ্যালারে ফোন, ভ্যালারে দোল
        পড়ো নাকো প্রেমের ফাঁদে...
        টাচস্ক্রীণে আঙুল রেখে
        প্রেমানন্দে সবাই বলুন জয় রাধে রাধে...,রাধে রাধে...।





কুমির তোমার জলে নেমেছি
জয় চক্রবর্তী


সতেরো জনের ক্লাস। সুরজিৎ বাবু বেশ আনন্দে আসেন, সঠিক সময়ে স্কুল শুরু করেন। এইতো ক'মাস আগেও বেহাল ছিল ক্লাসঘর, তার ওপর একটিও স্টুডেন্ট নেই। আজ ভাবতে বেশ গর্ববোধ হয়। ছোট ছোট মুখগুলো যেন তার কাছে এক একটা পুরস্কার। ভালো-মন্দের জীবনে এই ধরণের একটা পরিচলনা নেহাত কম লোকেই উপভোগ করতে পারে, সাথে কচিকাঁচাদের ভালোবাসা- এই প্রাপ্তির তুলনা হয় না।
দীপ, শ্রীজিতা, তানিশা, মেঘনা, বিউটি, জ্যোতি, দেবপ্রিয়া ওরা সবাই প্রি-প্রাইমারীতে পড়ে। দীপ ওদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। ও রোজ স্কুলে আসে কাঁদতে কাঁদতে। তারপর একটু আদর ব্যাস, একবারে লেজ কাটা হনুমান।

জ্যোতির হাতের লেখা এখনো স্পষ্ট হয় নি, কিন্তু ক খ সব পারে। পাকা বুড়ির মতো তার গল্পের আসর বসে, মন দিয়ে শুনতে হয়। বিউটি যতটা চুপচাপ শান্ত শিষ্ট ঠিক ততটাই দুষ্টু মেঘনা। কিন্তু সকলের মন জয় করার এক ঝুড়ি উপায় আছে তার। তানিশার থেকে চোখ ফেরানো চলবে না, অন্যপানে চাইলেই তার চিৎকার ওওও... স্যার এইদিকে এসো। শ্রীজিতা মন দিয়ে পড়াশোনা করে, সাথে রোজ শিখে আসে নতুন নতুন খেলা। টিফিনের সময় ওরা সবাই মিলে হাত ধরে গোল করে দাঁড়িয়ে নানা রকমের খেলা খেলে।

সদ্য জয়েনিং। সুরজিৎ বাবুর গত দশ বছরের একঘেয়ে জীবনযাত্রার মাঝে আনন্দের রেশ এনেছে চাকরিটা। তবুও কি ছাই শান্তি জোটে! শাঁখের করাত জীবন, এদিক ওদিক হয়েছ কি সবটাই জলে। যে স্বপ্নগুলো পুরো হতে পারে নি তারা মাঝে মধ্যেই হানা দেয়। অমনি যেন সাজানো সংখ্যা গুলো আবার হিজিবিজি হয়ে হিসেবে ভুল করিয়ে দেয়। সব কিছু ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে যেতে পারলেই বুঝি শান্তি।বড্ডো রাগ হয়, মানিয়ে নেবার এই গুনটা না থাকলেই কি নয়!
নভেম্বর সকাল। মাকড়শার দেয়াল চড়ার গল্প শোনালেন সুরজিৎ বাবু বাচ্চাদের। কিন্তু নিজেই যেন উৎসাহ পাচ্ছেন না। সমস্যার থাবা ক্রমে এতই শক্তিশালী হয়েছে। গল্পের শেষে বিরতি দিলেন ক্লাসে। বাচ্চারা একসাথে খেলার আয়োজন শুরু করলো। হটাৎ সুরজিৎ বাবুর কানে আসে দেবশিশুদের মুখে, 'কুমির তোমার জলে নেমেছি'। এক মুহূর্তে হারানো শৈশবটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

শ্রীজিতা কুমির সেজেছে, আর বাকিরা তার সামনে এসে ছোঁয়ার আগেই পালিয়ে যাচ্ছে। খেলার নাম কুমিরডাঙা। সুরজিৎ বাবুর মনের ক্লান্তিটা যেন কিছুটা কমে গেছে। ইচ্ছে করছে শৈশবটাকে আবার ধরতে। ভাবতে ভাবতেই দেবপ্রিয়া তাকে টেনে নিয়ে যায় খেলার মাঝে। এবারে দীপ কুমির। স্যারকেও বলতে হবে 'কুমির তোমার জলে নেমেছি'। হিসেবি মস্তিষ্কটার অজান্তেই হাসছেন সুরজিৎ বাবু।দৌঁড়েচ্ছেন। বয়স ভুলে খেলায় মেতেছেন। দীপের খুব কাছে চলে গেলেও দীপ তাকে ছুঁতেই পারছে না। হাসিমুখে খেলা শেষ হলো, মধ্যাহ্ন ভোজনের পর সকলের ছুটি।

সুরজিৎ বাবুর মুখে তখনও হাসি লেগে আছে। সম্বিত ফিরলো। মনে ভাবলেন জীবনে উত্থান পতনের চিন্তা নেই শৈশবের আর তাই মন খুলে বাঁচতে জানে শৈশব। নিজের মধ্যে থাকা এই শৈশবকে হনন করা অবশ্যই পাপ। জীবনটাও তো কুমিরডাঙা খেলাই। সমস্যার কুমির তাতে থাকবেই, ভয় কি! তবে আজ নতুন করে খেলা শুরু হোক, নতুন উৎসাহে। জলে আমি নামবই, কুমির আমার টিকিটিও ছুঁতে পারবে না।




মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫





স্মৃতিচারণ 


 আমার কথা ...
 সুতপা মিশ্র

ছোট্ট মফস্বল শহর ময়নাগুড়ির মেয়ে আমি। 
আমার ছোটবেলা কেটেছে এক বিরাট উঠোন নানা ধরনের ফল, নানা রঙের ফুল গাছ সহ এক যৌথ পরিবারের বাড়িতে। ঋতু বৈচিত্র্যে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত খুব ভালো উপভোগ করতে পারতাম।
গরমের ছুটিতে আম খাওয়া সে কাঁচা মিঠা আম মাখা হোক, বা পাকা আমই হোক ভীষণ পছন্দ ছিলো আমার। ছুটির দুপুরে গল্পের বই পড়া, বন্ধুদের সাথে বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়া আজ ভীষণ ভাবে মনে পরে। বর্ষায় মায়ের হাতে খিচুড়ি ডিম ভাজা, শীতকালে কমলা লেবু দুপুরে বসে খাওয়া অনেক আনন্দের ছিলো।
এই প্রসঙ্গে শীতকালে উত্তর বঙ্গের কথা বলি, উত্তর বঙ্গ মানেই চা বাগান পাহাড় জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। শীত এলেই আমরা চলে যেতাম ছোট পাহাড়ি নদীর ধারে পিকনিক করতে, সেটা কখনো পাড়ার বাসিন্দাদের সাথে কখনো বাবার অফিসের কলিগদের সাথে আবার কখনো বা স্কুলের বন্ধুদের সাথে। ওখানেই রান্না হতো, গল্প আড্ডা খেলা সব হতো। খাওয়া শেষে কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে লরি করে বাড়ি ফিরতাম। 
  সেই সময় জানুয়ারি থেকেই আমাদের সেশন শুরু হতো, ডিসেম্বর মাসে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট বেরোতো বড়দিনের আগে। তারপর ছুটি এক সপ্তাহের। ঐ সময়ে আমাদের এই শহরে আসতো সার্কাস, যাত্রা, নাটক, এগুলো আমরা ভীষণ উপভোগ করতাম। যাত্রা দেখতে ভালোবাসতাম, সার্কাসের নেশাও ছিলো। মাঠে তাঁবু পরলেই আমরা পরিকল্পনা করতাম কবে যাবো।
এভাবেই স্কুলের জীবন শেষে কলেজ জীবনে প্রবেশ, এই জীবন ছিলো একেবারে আলাদা, পড়াশোনা যতোটা না হতো আড্ডা গল্প বেশি হতো।
এরপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ। এখন আমার অবসর জীবন কাটে বারান্দায় বসে বই পড়ে, ছোট ছেলেমেয়েদের পিঠে ব্যাগভর্তি বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া আর ফেসবুকের দৌলতে পুরোনো বন্ধু বান্ধবীদে খোঁজ নিয়ে তাঁদের সাথে গল্প করে।
এভাবেই কাটছে আমার অবসর জীবন।




মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫





কবিতা প্রথম পর্যায়  



নতুন বছর আবদুস সালাম মৃতময় বিশ্বাসের আঙিনায় রতিগলা ভোরের চোখ উন্মাদ নার তরঙ্গে মিশে যাচ্ছে কফিন বন্দী লাশ আত্মনির্ভর ঘাসে শিহরিত তামাটে জীবন কুয়াশার ভিতর নুইয়ে পড়ে ভাঙনের নিজস্ব নীরবতা শ‍্যাওলা মাখা ভবিষ্যত চেয়ে আছে ওপারে কি পাবো না পাবো ভাবতে ভাবতে নীরবতা সিদ্দ হয় কুয়াশার ফুল ঝরে যায় খুলে পড়ে ব‍্যস্ত উপমার অভিনব উল্লাস ভিন্ন উচ্চারণে প্রথিত হয় মুর্ছনার প্রাচীর বেজে ওঠে অত‍্যাচারের বাজনা, কাঁপে প্রতিবেশীর রঙমহল অবধারিত সত্য হার মানে ব‍্যতিক্রমী অভ‍্যাসে খেলা করে অলৌকিক চাঁদ নতুন বছর আসে শপথের বন‍্যায় ভাসে মানবিক শপথের মঞ্চে গলা ফাটায় ইবলীসের দল নিপীড়িত মানুষ দেখে ভিন্ন ভিন্ন হাহাকার রঙের তীব্র নীল স্রোত ।



Life 
Bedashruti Mukherjee


We never know why somebody mixes into heart through the gateway of eyes, 
Sky is so far... but poor bird tries to reduce distance and flies.
   Have to lighten the candle of heart-
Search goes on... until find Mohammad in Macca desert.
Life turns so many pages and torns much more-
Whenever it happens, lost adore...
Almighty refuses to give second chance,
Tides,time and life are equal,all are once.
Withered leaf looks at tree with great thirst-
A sudden wake up- linked with blast...
But it's ok...life still fresh,needs of bread; 
Goes on and on... whether heart got dead......



শুভ বছর
    রীনা মজুমদার 

  জীবন সময় যদি হয় বাহান্নটি তাস 
  নতুন বছর তবে কমে যাওয়া জীবনের শ্বাস l 
   ঠিক যেমন,  আড়ালে যে চাঁদ !
        মেঘের চারপাশের আলো
          জানান দেয় তার অস্তিত্ব l  
   পাতার আড়ালে উঁকি দেয় যে ফুল !
           জানান দেয় তার অস্তিত্ব l 
   বনের বাঘ চলতে ফিরতে লতাপাতার
           গায়ে ফেরোমন ছড়িয়ে 
          জানান দেয় তার অস্তিত্ব l  

          ক্ষণিকের এই পাওয়াতেই
           ধরা পড়ে তার সৌন্দর্য ..
 হে ছয়ঋতু , তোমাদের ওই ক্ষণিকের
           আলোছায়ার অনুভবটুকু
         চিরদিন অবগুন্ঠনে রেখেছো 
                      বলেই কি ? 
            বয়ে চলা ,কমে যাওয়া
          বছরকে নতুন করে পাওয়া ! 
        বছরের প্রথম রবির আলোর
              সেই শুভ অনন্তরূপ !!



নতুনের বার্তা
             শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী

জীবন মানেই এক্কা-দোক্কা খেলা
একপায়ে লেংচে চলার কায়দা-কৌশল !
গ্রীষ্মের শাসনকে তোয়াক্কা না কোরে
এক আকাশ অনুভূতি পুঞ্জীভূত হয়ে,
মাটিতে আঁচড়ে পড়ার আকস্মিকতাই বৃষ্টি ।
পাতাঝরা শীতে অসহিষ্ণু রোদ
চুইয়ে পড়ে দক্ষিণের বারান্দায় অপর্যাপ্ত,
চুলচেরা বিচারে রোদ মাপে জমিন-আশমান !
ঘাসফুলের শরীর আঁকে শিশিরবিন্দু
বসন্তের আগমনে কোকিলের সুরেলা ছন্দ,
সময়ের ঝাঁপি বন্দি খামে মুহূর্ত গোনে
পুরোনো বছর বিদায়ের ঘণ্টা বাজায়
ফেলে আসা পাওয়া-না পাওয়ার হিসেবের ইতি,
নতুনের বার্তায় শুরু হয় আগামীর আমন্ত্রন ।



 বার্তা
সুদীপ বাগ

নতুনত্বের আগমনে শিহরিত সময়,
দুঃস্বপ্নগুলো মুছে যাবে নব ভরসায়।
হৃদয় উঠবে নেচে কন্ঠ সুনাদে,
ইচ্ছেগুলো মেলবে ডানা নতুন সুপ্রভাতে।বেহিসেবি ব্যর্থতাগুলো হবে গঞ্জিত, অবক্ষয়,
সাফল্যের আশ্রাগুলো খুলবে দুয়ার নিশ্চয়।
যন্ত্রণাসব পথভুলে মিশবে গরল অর্ণবে,
সরলতাও উল্লসিত মিষ্টি প্রাতের শৈশবে।
মিথ্যা যতো মিথ্যা কথা বিলীন হবে মৃত্তিকায়,
সত্য অতুল সত্যবচন অমর হবে মনের আলয় 
নববর্ষ নবসাজে আনবে কি এই বার্তা ?
তিমির পেরিয়ে ফুটবে কি ফুল সমাপ্তিতে ক্ষণদা ?



১জানুয়ারী , ২০১৯ সাল

সুদীপা দেব

১লা জানুয়ারী , ২০১৯ সাল
ঝলমলে আলো, আতসবাজিতে সেজেছে বাইরের রাত
ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ আর
মদ ,মাংস ,পেস্ট্রিতে celebration new year .
জমিয়ে খাওয়া , জমিয়ে আড্ডা
কিছুটা যেন মুখোশের বার্তা।

১লা জানুয়ারী, ২০১৯ সাল
আজও আমার কুড়ি বাইশের ছেলেরা–
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ,মেশিনগান হাতে
প্রচন্ড শীতে সিয়াচেন সীমান্তে কড়া পাহাড়ায় ।

১লা জানুয়ারী, ২০১৯ সাল
আজও আমার কন্যাভ্রুণ হত্যা হয় ,
নতুন লিপ্সটিক পারফিউমে 
গোটা রাত দরকষে খদ্দের সাজায় ।

১লা জানুয়ারী, ২০১৯ সাল
নেতারা সব বড়ো বড়ো 
প্রকল্পের বুলি কপচায়–
আমার কৃষকেরা আজও 
ঋণের দায় আত্মাহুতি দেয়।

১লা জানুয়ারী, ২০__সাল
অপেক্ষায় থাকবো আর কত কাল !
আমার দেশ আমার সংসার হবে পূর্ন ,
আসবে শান্তি, বিবেকের কাছে হবে গর্ব।


                                         
মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫



নিবন্ধ 


হারানো শৈশব
বটু কৃষ্ণ হালদার 

"জীবন পথের গোলক ধাঁধায় বিচিত্র বৈভব, আজকে কেমন হারিয়ে গেছে আমাদের শৈশব"
সত্যি উড়ন্ত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে হারিয়ে গেছে আমাদের শৈশব. সময় চলছে দ্রুত গতিতে,  উন্নত থেকে উন্নত তর হওয়ার প্রতিযোগিতার লড়াই প্রতিনিয়ত মানব জীবন কে গ্রাস করেছে. সময় কিনে নেবার প্রস্তুতি ঘরে ঘরে. এক নতুন যুদ্ধের দামামা বাজছে প্রান্তের প্রতিটি কোনায়. স্তরে স্তরে সাজানো প্রতিটি সকাল থেকে রাত. মাশ রুমের মত গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলো নিজেদের সেই মহড়ায় সাজিয়ে গুছিয়ে শান দিয়ে নিচ্ছে রুটিন মাফিক. কে কাকে পিছনে ফেলে উপরের সিড়ি
বেয়ে চাঁদে ওঠার পরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই? ফলে পিঠে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে স্কুল বাসের জন্যে সেই কাক ভোরে শিশু দের স্কুল এর জন্যে তৈরি করা হয়. ভোরের সূর্য কিংবা দিনন্ত শেষের সোনালী লাল রঙের সূর্যাস্ত তাদের কাছে ঝলসানো রুটির মত মনে হয়. কবির কবিতা আজ গদ্য তে রূপান্তরিত হয়েছে নান্দনিক জীবনে. ক্লাস রুমের জানাল দিয়ে চুরি করা সময়ের ফাঁকে ফাঁকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওই নীলভ দিগন্ত এর দিকে নয় তো দূরের প্রান্তে কোনো বড় গাছের দিকে যার ডালে বসে পাখিরা আপন মনে হচ্ছে মতই খেলা করে ঘুরে বেড়ায়. তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে ইস আমি ও যদি ওই পাখিদের মত সারা দিন বাঁধন হারl র মতো ঘুরে বেড়াতে পারতাম কি মজা না হত. বাড়ি ফেরার পথে বড় রাস্তার ধারে মাঠে খেলা করা শিশু গুলোর মত আমি ও যদি খেলতে পারতাম, স্বপ্নটা কেমন ফিকে হয়ে রয়ে গেছে নিয়মের গণ্ডি শিখরে আবদ্ধ শিশু দের হৃদয়ে. খেলার মাঠ আজ সিন্ডিকেট ব্যবসা জেরে কংক্রিটের জঙ্গলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে. ঠিক তেমনই স্বেচ্ছা মৃত্যু হচ্ছে ছোটদের বাস্তব রঙিন শৈশব গুলি.
যদি খেলাধুলা, হাসি মজায়, ছুটির দিন গুলি কাটত রেডিওতে গল্প দাদুর আসর শুনতে শুনতে _তবে কেমন হতো বলত,যদি গ্রীষ্মের দুপুরে মা, ঠাকুমা, ঠাকুরর্দার পাশে শুয়ে শুয়ে রূপ কথার গল্প শুনতে শুনতে চোখ বুজে আসতো,....না সেই সব দিন আর হয় তো নেই. 
না আছে মুখের গল্প, না আছে গল্প দাদুর আসর নিয়ে মাতা মাতি. এইসব ছেড়ে আজ শিশুরl মোবাইল, ল্যাপটপ.,কম্পিউটার নিয়ে গেম খেলতে খেলতে চোখের চশমা আজ তাদের নিত্য সঙ্গী, এইগুলো আজ তাদের জীবনের নিদারুণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রূপে পরিগণিত হয়েছে. এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় আর হয় তো নেই. 
জীবনের রঙিন স্মৃতি গুলি হারাতে হারাতে যেমন হারিয়েছে শৈশব ঠিক তেমনই হারিয়েছে সেই হারানো ধুলো মাখা দিন দুপুর, বুকের মাঝে আজও রঙিন শৈশব ডাকে আয়,  আয়,. হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার অনেক খেলা ধুলা. ই চিং, বিচিং, হা - ডু - ডু, মার্বেল, লাটিম, কুতকুত, চাম গুলতি, নারকেল পাতার গাড়ি, চোর - পুলিশ, কানা মাছি- ভো ভো যাকে পাবি তাকে ছো, দাড়ি লাফ, টায়ার দৌড়, বিংয়ারিং গাড়ি এই সব খেলা গুলি র মধ্যে দিয়ে শৈশব আঁচড় দিয়ে যায়. দোকান পাঠ, চড়ুই ভাতি, বাঁদর ঝোলা, মাটির পুতুল তৈরি করে  বর কণে, লুকোচুরি, ঘুড়ি, স্কুল ফাঁকি দিয়ে জল কাদা য় ফুটবল খেলতে গিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে কান মো লা খাওয়া,ডাঙ গুলি, দল বেঁধে কাদা জলে মাছ ধরতে যাওয়া ও তখন খেলার মধ্যে কত আনন্দ ছিল, ছিল প্রাণের পরশ অনাবিল সুখের অনুভূতি. পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে জীবন কে অন্য ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতো.

বর্তমান সময়ে বাস্তব আজ কঠিন প্রশ্নের মুখে সম্মুখীন, কিন্তু উত্তর আজ বোবা হয়ে ঘুরে বেড়ায় সভ্য  সমাজের আনছে কানাচে।  কবির ভাষায় "ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে" অতি সত্য আজ যারা শিশু তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ, তারা আগামীর পথপ্রদর্শক, পিতা।  কিন্তু এই আগামীর বার্তা বাহ দের জীবন আজ গণ্ডি শিখরে বাঁধা। অন্ত দেশীয় রাজ নৈতিক ও ধর্মিয় দলাদলিতে সিরিয়া, মিশর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মায়ানমার, বাংলাদেশ তথা ভারতে আগামীর বার্তা বাহক শিশুরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে ভুগতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।  মৃত শিশুদের রক্তে হোলি খেলা চলেছে সর্বত্র।  কবে বন্ধ হবে এই নোংরা খেলা? কবে মানব প্রেমের বার্তা বয়ে যাবে এই কলুষিত সমাজ চিত্রে? পেটের ক্ষুধা যে শোনে না ধর্মের বাণী তা আজ বড়ো সত্য, জীবন বাঁচাতে শিশু রা আজ শিশু শ্রমিক এ পরিণত হয়েছে এটা মিথ্যা নয়।  শৈশব কেড়ে নিয়েছে বাবু বাড়ি,গ্যারেজ, চায়ের দোকা ন, হোটেল, কারখানা,ইট ভাটা।   এত  সস্তায় এই শিশু দের শ্রম ছাড়া আর কি মিলতে পারে? আমরা সবাই জানি শিশু দের কাজ করানো সংবিধান নিষিদ্ধ, তবুও এদের মত সস্তার শ্রমিক আর কারা আছে? সারা দিন পরিশ্রম করার পর বেতন তো দূরের কথা দু - মুঠো অন্ন ও ঠিক মতো দেয়া হয় না এদেরকে। 
যারা সমাজে মুখোশ পরে আছে, বড় বড় ভাষণ দেয় তারাই এই সস্তায় শিশু দের পরিশ্রম কেনা বেচারা হাট বাজারে শিশুদের ভাগ্য নির্ধারণ করে. ভাবতে খুব অবাক লাগে তাই না খারাপ সময়ের মুল্য চুকাতে হয় এই ভাবে।  "এ বিশ্ব কে শিশু র বাস যোগ্য করে যাবার অঙ্গীকার আজ মিথ্যায় পরিণত হয়েছে"...সভ্য সমাজে শৈশব চুরি করে সস্তায় শ্রম কেনার অঙ্গীকার  বদ্ধ চুক্তিপত্রে সবাই সই করে বসে আছি।  যেমন দেশের রক্ষা কর্তা রা ভাবেন না তেমনই সমাজ ব্যবস্থা ও যে খুব ভাবে তা গ্রহণ যোগ্য নয়।  মাঝে মাঝে শিশু চুরির খবর প্রায় প্রকাশ্যে আসে তা নিতান্তই কম নয়।  তাদের চুরি করে বেঁচে দেয়া হয় এবং শিশু কন্যা দের সমাজের বুকে অসপৃশ্যা ও অশুচির জীবন যাপন করতে হচ্ছে লাল আলোর কুঠুরিতে।  এ যেন ভাগ্যের এক নিষ্ঠুর পরিহাস বিধাতার।  এ যে আমাদের সমাজের এক লজ্জা, অভিশাপ. কঠোর আইন ব্যবস্থার রূপকার আজও হয় নি।  তেমনই আইন রয়ে গেছে সংবিধানের পাতায় আবদ্ধ।  রাষ্ট্র সংঘ শিশু শ্রম বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করলে ও তা বাস্তবায়ন হয় নি আজও। ইতিমধ্যে আরও এক মহা ব্যাধি সমগ্র দেশ কে গ্রাস করেছে তা হলো যৌন নিগ্রহ।  শিশুরা আজ প্রতি পদে পদে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। 
মহা অষ্টমী তে আমরা কুমারী পুজো করি।  কুমারী তো দূরের কথা তিন - চার মাসের শিশু থেকে শুরু করে ষাট ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা ও আজ ধর্ষিত হচ্ছেন।  কোথায় মানবিকতা? পাল্টেছে মানচিত্র, শহর গ্রামের রূপ রেখা, রাস্তা ঘাট, নিয়ম কানুন, কিন্তু পাল্টায় নি বিবেক-এর বৈচিত্র্য,  যেটা সব থেকে বেশি জরুরী এক বাস যোগ্য সমাজের বিশিষ্ট গঠন করতে সাহায্য করে।  যৌন নির্যাতনের পরে শিশু রা হারিয়ে ফেলে ভার সাম্য, সমাজে তারা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা থেকে শত যোজন দূরে চলে যায়।  এইভাবে চলতে থাকলে সুস্থ  সমাজের পরিকল্পনা  মহামারীতে পরিনত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
যদি প্রশ্ন করা হয় আমার সমস্ত প্রিয় জিনিস নিয়ে ফিরিয়ে দাও আমার শৈশব, সে কি আর সম্ভব? যা গেছে তা অতীত। তাই যে সমস্ত শিশু রা ধর্ষিত হোন তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না, এই সমাজে  ব্যর্থ হিসাবে পরিচিত হয়।  আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নেয় শামুকের মত।  অনেকে ভয় ভীতির কারণে লাগাতার ধর্ষিত হতে থাকেন।  সেই ভয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ভরসা দেবার লোক নেই বললে চলে।  হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে শেষ হতে থাকে একটি জীবন।  যতো বড় হতে থাকে জীবনের সেই বিভিষীকা তাকে জীবন ভোর তাড়া করে বেড়ায়।  আইন ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তা কৃতকার্যর অভাব. এই বিষয়ে এইবার ভাবার সময় এসেছে সবার শিশু কন্যা দের নিরাপত্তা দেবার পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পাল্টানো খুব দরকার। 
সম্প্রীতির মেলবন্ধন আজ বড়ই আলগা হয়ে গেছে।  চরম আধুনিকতা সুসজ্জিত সভ্যতার বিকাশ ধারা হারিয়ে যাচ্ছে ধর্ম, জাত, পাত ভেদl ভেদ বিদ্বেষ মূলক নোংরা রাজনীতিতে।  প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরে ধর্ম ধর্মের দাঙ্গায়। ইতিহাসের পাতায় আটকে থাকা বাবরি মসজিদ বিতর্কের আজও হয় নি সুস্থ সমাধানের সুত্র।  বহু রক্ত ক্ষয় ধর্মীয় যুদ্ধে হারিয়েছি অনেক প্রিয় জন , স্বজন, বন্ধু  বান্ধব সম্পত্তি, ঘর বাড়ি,. টনক নড়ে নি কারো. .অযোধ্যায় মন্দির না মসজিদ হবে এই বিতর্ক এড়িয়ে সেখানে খেলার মাঠ গড়ার বার্তা দিয়েছেন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।  এ থেকে বোঝা যায়, সত্যি শিশু দের হারিয়ে যাওয়া শৈশব ফিরিয়ে দেবার লক্ষে রাম ও রহিম একসাথে অবিচল।  আসুন মানব প্রেমে আবদ্ধ হয় সবাই, এক নতুন ভারত গড়ার  শপথ গ্রহণ করি। 


মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫





কবিতা দ্বিতীয় পর্যায় 




 ছুঁয়ে আছে অভিমান
            যাজ্ঞসেনী

ছুঁয়ে আছে অভিমান বর্ণমালা জুড়ে
কথা ছিল লেখা হবে এপিটাফ 
পাথরে শিলালিপি
কফিনবন্দী সুরে।

ছুঁয়ে আছে অভিমান সাদাকালো আখরে
কথা ছিল লেখা হবে প্রভাত সংগীত
সমবেত কলতানে
স্বরলিপি মুখরে।

ছুঁয়ে আছে অভিমান সমস্ত  ঘরে
কথা ছিল তুলসীতলা, সান্ধ্যপ্রদীপ,  মা
কোলাজ চিত্র
রঙহীন করে।





উপাখ্যান
সৌরভ ঘোষ


রোদছায়া জলবায়ু,


মশারির ভেতর বাংলা সভ্যতা

বিদেশী তৃষ্ণা গোত্রহীন...


চানুক মৃত্যু উঠোন ঝাঁট দেয়

স্তুপাকার চ্যুতপাতা...


মানমন্দির বড় হিসেবি

আর্তির ডমরু বাজায়...



মৌসুমি জলবায়ু,

মশারির ভেতর সাম্য -মৈত্রী -তিতিক্ষা

ডুবোজাহাজে শীষ সুহৃদ চীন...



জাতীয় সংগীত ভাগ্যগুণে বিকলাঙ্গ 

দায়ভার কাঁধে জাতিস্মর স্নায়ু...


অক্ষয় বট নিভন্ত হবনে

আতুঁড় মুহুর্তে তন্ময়...


কবিতা-- সাগরের সঙ্গম
সৌরভ ঘোষ

জানিনা,
সাগরের আপন রঙ আছে কি না
সাগর কাঁদে কি না...!
তবে,আনীল বুকে সওদাগরী উচ্ছ্বাস দেখেছি 
সুসমাচারী মেঘের সাথে আসঙ্গ দেখেছি,
নকল অভিমান দেখেছি।
সাগরও ব্যাভিচারী হয়...

যখন বর্ণিক মেঘ মাধ্বী পাঠায় 
প্রহরের তাল টুপটাপ থেকে ঝমঝম,
তখন ভোরের শালুকের মত 
একটা একটা করে পাপড়ি খুলে যায়,
সোমত্ত সাগর বেআব্রু।
ঐহিক সঙ্গম...

মগ্নচূড়ায় বসে দেখেছি-
বালিকাচের উপর থেকে উলসানো সিন্ধুর ভ্রূমধ্য বরাবর
আনুষঙ্গিক অনন্ত রেখা , চকচকে।
আনন্দাশ্রু হতে পারে...
পাওয়া বা না পাওয়া ...
 রুনা দত্ত

ছুঁয়ে দিলেই বুঝি পাওয়া যায় ! 
এই যে এতোদিন ছুঁয়ে আছো 
তবুও কি পেয়েছো খুঁজে...
একমুঠো প্রেম বা ভালোবাসা। 

আসলে দেহজ ঘ্রাণ ছুঁতে গিয়ে 
ছুঁয়ে যাও চিবুক ঠোঁট বা বিভাজিকা  
মনের ভিতরেও যে এক মন আছে
তার খোঁজ কেই বা রাখে ....

তাই আসলে সব  পাওয়াতেই 
যেন বড়ো বেশী জড়িয়ে থাকে
না পাওয়ার অব্যক্ত শূন্যতা
যা আঁকড়ে ধরে আমরা কাটিয়ে দি
একটি বা দুটি বা সম্পূর্ণ  জীবন...

 আদতে আমরা বাইরে থেকে শুধু 
  রক্ত মাংসের শরীরে মিশে যেতে পারি
  অথচ কাঙ্খিত মানুষ বা তার মন 
  সবটাই কেমন যেন অধরা বা 
  ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় ...  

  



এক পৃথিবী 
বীথি সরকার 

হলফ নামায়; আস্তিনের নিশ্চুপতা তুলে রাখা,
ব্যাবিলনের কাছে ডুকরে ডুকরে কাঁদে মিশর,
নীল নদে নৌকার ভরাডুবি!

সেদিন জেরুজালেমে যে ক্ষীণ আলো দেখা দিয়েছিলো
অনবরত ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমে!
গর্ব করে বুক চিরে 
মাশ-আ-আল্লাহ,মাশ-আ-আল্লাহ করে,
প্রশংসার স্তবক চলে!
এদিকে চক্রের ধারেই বলা চলে এক প্রকার চাকা আবিষ্কার!

মুখ্য-গৌণ সব প্রয়োজনই একই ভাবে সর্বভুক।

আস্ত রক্তমৃত্তিকার মানুষগুলোর মনে অসংখ্য কালশিটের কালো কালো ছোপ!
অস্তিত্বের সংকট দাবী করে,
ভীষণভাবে ক্ষানিকক্ষন ভাবায়!

তবুও লুকিয়ে কেক খাওয়া,
সিমাইএর মনমাতানো গন্ধ,
পূজোর; পায়েশ-খিচুড়ির স্বাদ-

অহেতুক নিষেধগুলোতে কেমন যেন নিষ্পাপ মনুষ্যত্ব এর মোহর লাগায়!

আর মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় নীল গ্রহের বহু কোণ।



 চলছবি 
প্রসেনজিত রায় 

জজসাহেব: ফুটেজ টা আর একবার দেখানো হোক। 

অতঃপর পর্দায় ভেসে উঠল...
ঝোপের আড়ালে একটা গিরগিটি লোলুপ চাহুনিতে 
প্রথমে লাল রঙ, পরে নীল রঙ ধারণ করল, 
বর্ষার রাস্তায় একদল পিঁপড়ে নতুন বাসার সন্ধানে, 
ঘাসের ওপর বসা একটা উলঙ্গ শিশু 
ফড়িং ধরে ধরে কচি ঘাসের ডগা খাওয়াচ্ছে
আদর মাখা হাতে, 
হুট করে একটা মোটর সাইকেল এল 
লাল-নীল চেক শার্ট, চোখে কালো চশমা পরা ভদ্রলোক, 
হাতে সময় নেই, 
কয়েকটা পিঁপড়ে পিষে গেল, দলছুট ছত্রভঙ্গ, 
হাতের ফড়িংটা লাফ দিল,
ডালে বসা পায়রাটা উড়ে গেল, 
শিশুটার চোখে মুখে কাদা ছিটকে গেল 
সে একাকী বসে কান্না জুড়ে দিল। 

লোকটা কি অপরাধী? 
জজসাহেব: না, উনি ব্যবসায়ী লোক।





           জোর
             ফিরোজ হক্ 

তুমি খেঁচর হয়ে ডানা মেলতে চেয়েছিলে
আমি তোমায় প্রজাপতি বানাতে চেয়েছিলাম
রঙ-বেরঙের ডানা মেলে উন্মুক্ত গগন স্পর্শ করবে
রঙিন স্বপ্ন বুনবে,ভবিষ্যতের পাহাড় নির্মাণ করবে
তুমি প্রজাপতি হবে।

কিন্তু তুমি নিশাচর হতে চেয়েছিলে
রাত্তির জেগে আত্মহনন হতে চেয়েছিলে
আত্মহননের সঙ্গী আমি! 
আমি আত্মহনন হতে চাই,করতে চাইনা
চীরসবুজ স্বপ্নের সঙ্গী আমি
তুমি আলো-জল-বাতাস।

কিন্তু তুমি... 
খেচর হতে গিয়ে আত্মসাৎ করলে নিজেকে।




শালুকের নীরব শ্বাস
                    সুনন্দ মন্ডল

আগন্তুক পথ চেয়ে তোমার আশায়,
বাইরের কপাট বেয়ে নির্ভেজাল গন্ধ!
পুকুরে শালুক তখনও মাথা তুলে
নীরব শ্বাস নিচ্ছে গান্ধারীর দেশে।

অন্ধ রাজকন্যা চিনে নিতে পারে
সকল ব্যথা কিংবা উপশম।
বাঁধনহারা দুঃখ বুকের খাঁজে মেপে
নিত্যদিনের অসহ্য শালুকের গায়ে মোছে।

আমি তোমার বিরহে স্বরলিপি বাঁধি
সুখ নেই চওড়া কপালে।



দিনলিপি 
শৌভিক কার্য্যী

নিঝুম রাতে
কুয়াশার চাদরে ঘুমন্ত বস্তি । 
কাজের শেষে ভাতে নুন পেয়ে
বিছানায় খুজেছে টানটান দীর্ঘ স্বস্তি । 
ঠিক বারোটায় বাবুদের উল্লাসে
ঘুম ভাঙ্গে বিকট আওয়াজে ।
ছোট্ট ছেলেটি প্রশ্ন ছুঁড়তেই ধেয়ে আসে 
"নে শুয়ে পর যেতে হবে ভোরে কাজে" । 
সকালের কথা ভেবে ছেলেটির
ঘুম নামে চোখে উৎসুক জুরে । 
দুহাতে নোংরা খুঁড়ে না জানি 
সে কাল কি পাবে রাস্তায় কুঁড়ে ।
                 


শেষ মুক্তির অপেক্ষা
অনুপ সরকার 


মায়া মোহ কাম সবাই যখন বিলুপ্তির পথে , 
তখন শুধুই ক্লান্তির ছাপ চোখে মুখে ।
সব কিছুই তো গেছে , এখন চায় শুধু একটু শান্তি ।
সফলতার শেষ স্ট্যান্ডের আগেই গতি থমকে দাঁড়িয়েছে ।
তবুও , 
দেশভাগের দেশত্যাগের যন্ত্রণা মাঝে মাঝেই টুঁটি চেপে ধরে ।
এখনো সেসব কথা , দৃশ্য জ্বলজ্বল করে ওঠে ।
ইচ্ছা , চাওয়া পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে - বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাওয়ার অপেক্ষা ।

চশমার ফ্রেমে মাতৃভূমি ছেড়ে আসার যন্ত্রণা গুলো এখনো লিপিবদ্ধ ।
একাত্তরের বেদনা-বিধুর দিনগুলি হৃদয়ের কোনায় কোনায় এখনো স্পষ্ট ।
কাজল কালো চুল গুলোয় পাক ধরেছে।
একাকীত্বের যন্ত্রণার কথা , ভাজ পরা কপালেও রয়েছে ।
শ্রাবণের মেঘের মতো শরীরের ভাজে ভাজে চিন্তার রূপরেখা সিঁড়ি বেয়ে , কল্পনার স্বর্গে রাত্রিযাপন করছে ।






 ঘুণ
শ্যামল কুমার রায়

  নিস্তব্ধ পৃথিবী! 
নিকষ কালো অন্ধকার , 
একফালি বাঁকা চাঁদ - 
ওরই মাঝে পথ দেখায় ।
শব্দের মিছিল সব থেমে গেছে , 
পেটের দায়ে ভোর থেকে ছোটাছুটি করা - 
মানুষ সব শয্যা নিয়েছে। 
সারাদিনের ক্লান্তিতে সব নিঃশেষ, 
পান্তায় পেট ভরিয়ে চলে গেছে ঘুমের দেশ ।
মশা , মাছির উৎপাত -
ঘটায় না ওদের ঘুমে ব্যাঘাত ।
রাজৈশ্বর্যের জন্যে ওরা নয় বিচলিত - 
দু’বেলা দুমুঠো গরম ভাতে ওরা খুব সন্তুষ্ট ।
মধ্যরাতে পালঙ্কে , কনকনে শীতে তুমি একা - 
অমলিন মানসপটে আজও তোমার ছবি আঁকা ।
বাহিরে ঝিঝির ডাক,ভেতরে ঘুণপোকার কটকট,
শূন্যতা নেমে আসে চোখে ।
বাহিরে নিশ্চয়যান , 
সব শুনশান, 
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল , 
ঘুম ঘুম চোখ, 
কর্তব্যরত চিকিৎসক , 
দরজায় ঠকঠক, 
খোলে না ফটক ।
অসহায় চোখ একা জেগে রয় -
ঘুমহীন চোখে তারার পানে চায় ।
ছোট্ট শিশু তখন ঘুমের মধ্যে পরীর দেশে।
নিশি ভোরে বাঁকা চাঁদ ফিকে হয়ে আসে,
 পূব আকাশে রবি মামা মুচকি হাসে ।
দুশ্চিন্তা শেষ,  দূর হতে কানে আসে শব্দের রেশ।



মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫




অঙ্কন 


নিপা বিশ্বাস






রাজা বিশ্বাস





মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫




কবিতা অন্তিম পর্যায় 


জনজীবন দূর্বিসহ্      
  মজনু মিয়া

শীতের মাস পৌষ
জীবন তূষ তূষ
বামণে লাঙ্গল গরু বেচে দিয়ে
তুলাপট্রি কিনে আনে
তবু যদি আরাম পায় মনে!

কাঁপছে ঠকঠক
কাকের ভকভক
বস্ত্রহীন দরিদ্র শিশুটি কাঁদছে শীতে
যেনো তার সাথে কাঁপছে মাটি
কোথাও নেই মানুষ খাঁটি।

দু দণ্ড দাও চোখ
দেখুক তা লোক
বাক্স ভরে রাখছ জমিয়ে টাকা
আজ মরলে কাল দু দিন
পাপের বোঁজা করো বিলীন।




ফানুস
চিরঞ্জিত সাহা 

ফসফরাসে চাঁদ খুঁজেছি,আঁধার যখন ঠিকানা তোর ;
হৃদযন্ত্র গিলোটিনে আজস্নায়ুতন্ত্রে কার্ফূ-ভোর ,
সাল মুছেছে ক্যালেন্ডার আর স্মৃতি চিনেছে নতুন ঋণ,
কুয়াশা-কুহু,নতুন বছর,আরেকটা ঘোর তুইবিহীন


জেতার নেশায় গ্রিক সারথিওলন্দাজি অভিযান,
জাতিস্মর   হতেও রাজি,শুনতে তোর ফেরার গান
নস্ট্রাদামুস হতেম যদি দেওয়াল লিখন ব্যর্থতার ,
শেষ পেরেকও তোর আঁচড়ে,কফিন যখন সখ্যতার


ঝোড়ো হাওয়ার সুনামি দিন,স্বপ্ন যখন বালির বাঁধ ,
তোর নেশাতে ভেসে ও ডুবি, হয়তো চোরাবালির খাদ
শেষ প্রদীপে সলতে আঁকে,বেহুলা ভেলা,গাঙুর জল,
সুপ্রভাতে নববর্ষ,ভাসে বুদবুদ,আশার দল



" ছেলে বেলা "

সব্যসাচী নজরুল



ছেলে বেলা

শুধু খেলা

করি যদি ভাই;

লেখাপড়া
হলে বড়া
বাঁচার উপায় নাই।

ছেলে বেলা

করি খেলা

মক্তব-স্কুলে না যাই;

গ্রাম্য মেলা
মজা মেলা 
দলবেঁধে ছুটি সবাই।

ছেলে বেলা

কাটে বেলা

হাসি খুশির ভেলায়;

আহা সুখ
কি যে সুখ
রঙের রঙীন ঠেলায়।

ছূড়ি ছোড়া

শোন তোরা

ডেকে চাঁদ বুড়ি কয়;

পড়া পড়
জলদি কর
আর সময় নষ্ট নয়। 




কৃষ্ণকলি ফুল

রোমানুর রোমান


কুচবরণ ঐ কৃষ্ণকলি

ফুল বলি না পাপড়ি বলি?

ভেবেই পাই না আহা!

তার তুলনা  ভিন্ন রকম
হাসিখুশি ছিন্ন রকম
অবাক করে তাহা!

যতোই দেখি ততোই ভাবি,

এমন করে মন খোয়াবি

বুঝতে হলো সারা,

কৃষ্ণকলি ঐ রমনি,
বুঝলে সোনার থৈরোমনি
বুঝতে পারো কারা?




নতুন বছর

সঞ্চিতা দাস


মেতেছে সবাই আজ
ছুটি ছুটি ভাব,
বছরটা পালটাবে
তাই হাঁকডাক।
কেউ যাবে পিকনিকে
কারো নাচগান,
কত রকম অনুষ্ঠানে
মাতোয়ারা প্রাণ।
ছুটোছুটি বড়দিনে
চারিদিকে ভীড়-
মানুষের ঢল নামে
এদিক-সেদিক।
কলকাতা নগরীটা
আলো ঝলমল,
দেশ ও বিদেশ থেকে
আসে দলে দল।
ক্রীসমাস, বড়দিন
নতুন বছর-
সব নিয়ে মেতে আছে
গ্রাম ও শহর।। 
দেয়ালেতে ক্যালেণ্ডার
এখনও ঝোলে,
নতুনটা স্থান পাবে
পুরাণটা খোলে।




রাজনীতি 
বিপ্লব গোস্বামী

রাজনীতি এক বিষম ব‍্যাধি
লক্ষণ বুঝা শক্ত ;
নেতা হলে সবার দেহে
জন্মে লোভের রক্ত !
নির্বাচন এলে শুরু হয়
জনতা তোষণ ;
নির্বাচিত হলে করতে হয়
দরিদ্র শোষণ !
জনসভায় জননেতা দেয়
কথার ফুলঝুরি ;
নেতা হলে সেসব কিছু
সস্তায় যায় ভুলি !
ভোট মাগতে সবার পরিচয়
আমি সমাজসেবী ;
জিতলে পরে পদন্নতি হয়
দেব অথবা দেবী !
মোদের দেশের লোভী পাপী 
দেব দেবীগণে ;
ঘাট পেড়লেই ভক্তের কাছে
বলি চাহে পূজা সনে!



প্রভাত

শুভম রায়
(সপ্তম শ্রেণি) 

আজ প্রভাতে -
সূর্য উঠে সবার জীবনে ।
যে যার কাজে লেগে পড়ে -
সুখ দুঃখ নিয়ে ।
পাড়ার ঐ ছোট্ট বিমল ,
চা দেয় সবার কাছে ।
ভালোবাসে না কেউ তাকে!
বিমলের কপাল পোড়া -
কারণ, সে যে গরীব বাছা।


মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৫