সম্পাদকের কথা
এক দুঃসহ দহনবেলা।
এরকম দহনবেলা, স্মরণকালের মধ্যে আর দেখে নি কেউ। অদ্ভুত এই সময় কেড়ে নিয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় সুখ আর স্বপ্ন। একদিকে তুচ্ছ অণুজীব, অন্যদিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। আপাত-অসম এই লড়াই, ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের তকমা পেয়ে গেছে। কবে ও কোথায় শেষ হবে এই যুদ্ধ, কেউ জানে না। মনুষ্যকুলের এরকম অসহায় আত্মসমর্পণও এর আগে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না।
সীমিত সাধ্যের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের আমাদের এই দেশ নিজের লড়াই বজায় রেখেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামিল হয়েছে এই যুদ্ধে। মুজনাই কুর্নিশ জানায় সেইসব প্রকৃত নায়কদের, যাঁরা প্রথম সারিতে থেকে এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুজনাই ও মুজনাই সাহিত্য সংস্থার সকল লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী তাঁদের পাশে সবসময় রয়েছেন। মুজনাইয়ের এই সংখ্যা তাই উৎসর্গ করা হচ্ছে সেই মহাপ্রাণ মানুষদের।
দেশের ও দশের এই চরম বিপদের দিনে মুজনাই সকলকে সচেতন করতে চায় এই বলে যে, নির্দেশিত আচরণবিধি, সতর্কতা ও সাবধানতা মেনে চলুন সকলে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজের সুরক্ষা। নিজে সুরক্ষিত থাকলেই প্রতিবেশী ও পরিচিতি প্রিয়জনেরা কুশলে থাকবেন। এই সময় কোনো তর্কবিতর্কের নয়। বরং অনুপস্থিতির মধ্যে প্রবলভাবে উপস্থিত থেকে বিজয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার দিন...
মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
মুজনাই সাহিত্য সংস্থার একটি প্রয়াস
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১, প ব
ইমেল ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা
যাজ্ঞসেনী, লক্ষ্মী নন্দী, কুমকুম ঘোষ, রুদ্র সান্যাল, বটু কৃষ্ণ হালদার, রীনা মজুমদার, তৃপ্তি মিত্র, মৌসুমী চৌধুরী, উদয় সাহা, তাপসী লাহা, বিজয় বর্মন, রুনা, সব্যসাচী নজরুল, ছবি ধর, রবীন পার্থ মণ্ডল, প্রতিভা পাল সেন, লুবনা আখতার বানু, মাথুর দাস, মজনু মিয়া, সঞ্চিতা দাস, সুস্মিতা পাল কুন্ডু
স্মরণ
করোনা ভাইরাসে বিভিন্ন দেশের মৃত বিশ্ববাসী
জানা অজানা কথা
দহনবেলার গল্পস্বল্প
কুমকুম ঘোষ
( ক্রমশঃ শামুকের খোলের মধ্যে গুটিয়ে যেতে লাগলো শহর থেকে শহরতলী।)
গল্প -১...২০২০
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী র প্রথম সপ্তাহে কোকিলটা আসে এ অঞ্চলে। কলকাতার উপকন্ঠে এই টাউনশিপে কুড়ি ফুটের চওড়া রাস্তার এদিক ওদিক বাড়ী। প্রতি বাড়ির মাঝে অন্তত ছয়ফুটের দূরত্ব।রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া জ্যাকারান্ডা অর্জুন গাছের সারি,যদিও ইদানিং ফ্ল্যাট-প্রেম সংক্রামিত হওয়ায় বাড়ী বিক্রি ও বৃক্ষনিধন ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে। তবুও নয় নয় করে এখনও কিছু বাড়ি ও গাছপালা বেঁচে আছে এদিকে। তাই কোকিলটার আগমন ফিবছর টা নোটিশ করছি। কদিন সামনের বকুল গাছটায় ডাকছিল এখন ডাকটা একটু দূর থেকে শুনছি।
গল্প ২.... ২০২০
ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি একটা নতুন শব্দ টিভি চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করতে শুরু করলো। লকডাউন। চীনে নাকি এক ভয়ানক ভাইরাস আক্রমণ ঘটেছে সেখানকার " উহান" শহরে।সেটা আটকাতে নাকি পুরো শহরটা অন্তরীণ করে দিয়েছে সরকার। কেচ্ছাকাহিনী ও রঙ্গতামাশায় ভরপুর বাঙালীর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এ ঘুরতে লাগলো এই বাণী --"আরে চীনা মাল ( ভাইরাস).. দুদিনেই উবে( নষ্ট হয়ে/ মরে) যাবে"
গল্প ৩...২০২০
ফেব্রুয়ারীর শেষ দিকে মনের রঙদার দরজা দিয়ে বসন্ত পুরো পুরি জাগ্রত এবং দোরগোড়ায় উপস্থিত হয়ে গেল।সেল্ফিপ্রেমী নেটিজেনসকল প্রি- বসন্তোৎসবের প্রস্তুতিও শুরু করে দিল কিন্তু আকাশে বিপদের মেঘময় ছায়া প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরের পর্দায় তীরের ফলার মতো দাগ রেখে যেতে লাগলো। দাগটার নাম-- করোনা ভাইরাস বা Covid-19। তখনও WHO একে প্যানডেমিক বা অতিমারি আখ্যা দেয়নি। তবু বসন্তোৎসব বন্ধ হলো শান্তিনিকেতনে, বাঙালীর বুকে শেল হেনে এবং হঠাৎ এক অজানা আশংকায় সংগোপনে কেঁপে উঠলো জনমানস। মার্চের ১১ তে WHO র ডিরেক্টর এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দীর্ঘ চিঠিটি পড়ে শোনালেন,যেটি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে লেখা। ঘোষণা করলেন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে এবং এটি "অতিমারি" ; প্যানডেমিক। আরো এক নতুন শব্দের সাথে পরিচয় হলো বিশ্ববাসীর।
সত্যি গল্পের স্বল্প ইতিহাস :....
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে একটা পাথুরে মূর্তি আছে।এক ডাক্তারবাবু লম্বা কোট পরে ও হাতে একটা মোটা বই নিয়ে তাকিয়ে আছেন এক সন্তান কোলে জননীর দিকে এবং ডাক্তারকে ঘিরে রেখেছে আরও কয়েকটি শিশু। ইনি ডাক্তার ইগনাজ সেমেলওয়াইস। ১৮১৮ সালে হাঙ্গেরিতে জন্ম। ডাক্তারি পাশ করে ভিয়েনার এক প্রসূতিসদনে যোগ দেন। তিনি লক্ষ্য করেন হাসপাতালে সন্তান জন্মের পর অধিকাংশ মায়েদের মৃত্যু হচ্ছে এক অজানা জ্বরে। অথচ বাড়ীতে দাই এর হাতে যাদের শিশু জন্মাচ্ছে সেক্ষেত্রে প্রসূতি মৃত্যুর হার কম। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে বেশীরভাগ ডাক্তার অপারেশনের আগে এবং পরে সঠিকভাবে হাত ধুয়ে ফেলেন না এবং সংক্রমণ সেখান থেকেই হচ্ছে। ১৮৪৭ সালে তিনি যখন ভিয়েনার সেই প্রসূতি সদনের প্রধান হলেন তখন তিনি ডাক্তারদের মধ্যে নিয়মিত ভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম তৈরী করলেন ; সবাইকে ক্লোরিন দিয়ে হাত ধুতে বাধ্য করলেন এবং ফল ও পেলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেসময় তাঁর মতবাদকে বিশেষ আমল দিলনা সেসময়ের উচ্চবিত্ত ইউরোপ ও বিজ্ঞানীমহল। অবজ্ঞা ও প্রত্যাখ্যানের শিকার ডাক্তার ইগনাজ সেমেলওয়াইস শেষটায় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সেখানেই হাতের গ্যাংগ্রিনে তিনি মারা যান মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। ক্লোরিন দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে পারলে জীবাণু সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কমে যায় ,-- এই তত্ব প্রয়োগ করে যিনি নিজের হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমিয়ে ফেলেছিলেন তিনি নিজে মারা গেলেন সেই নিজের হাতের জীবাণু সংক্রমণেই ।(অনুমান-- অ্যাসাইলামের গার্ডদের প্রহারে হাতে ক্ষত হয়েছিল)। ভাগ্যের এ এক নিদারুণ পরিহাস। মৃত্যুর দুদশক পর থেকেই লুই পাস্তুর, জোসেফ লিস্টার সহ ইউরোপের বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা ডাক্তার ইগনেজ সেমেলওয়াইস এর হাত ধোয়ার তত্বকে মান্যতা দিলেন। আর আজ সারা বিশ্বজুড়ে যে মারণ- ভাইরাস ক্রমশঃ বিশ্ববাসীকে আতঙ্ক ও উদ্বেগের কাল- সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছে তার থেকে মুক্তির একটা অন্যতম উপায় এই অনবরত হাত ধুয়ে ফেলা ( সাবানজল অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে) র তত্বতেই তাবৎ বিজ্ঞানীমহল ও চিকিৎসকরা ভরসা করতে বলেছেন।
(২০শে মার্চ ২০২০ গুগল "doodle" এর মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছে এই পথিকৃৎ চিকিৎসক ডাক্তার ইগনাজ সেমেলওয়াইস কে)
অভিমত
জনগণ সচেতন না হলে ইতালি আমেরিকার থেকেও খারাপ অবস্থা হবে ভারতের
বটু কৃষ্ণ হালদার
এক অচেনা আশঙ্কা,অশনি সংকেত ঢেউয়ের ধাক্কায় কম্পমান বিশ্বের হৃদপিণ্ড। সেই ঢেউ এর নাম এই মুহূর্তে কারো অজানা নয়। লক্ষ্য একটাই সমাধানের উপায় বের করে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত দেশ প্রায় লকডাউন। চেনা পরিবেশ অচেনা হয়ে উঠছে। মানুষ আজ গৃহ বন্দী চিড়িয়াখানার জীব জন্তুর মত। এমনটা বোধ হয় আমরা কেউ আশা করিনি। হ্যাঁ এমনটাই হলো এক অজানা ভাইরাসের ভয়। কথায় আছে বাপেরো বাপ থাকে। কারণ যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে আসছে। আমরা সবাই ভেবে বসে আছি এই আধুনিক সভ্যতার উর্ধ্বে আর কিছু নেই। আধুনিক আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার নেশায় মানুষ ভুলে যাচ্ছে প্রকৃতির শক্তিকে।চিরন্তন ও বাস্তব মৃত্যু ভাইকে আমরা সবাই ভুলতে বসেছিলাম। তবে এ কথা বলা যায় উচ্চাকাঙ্ক্ষাই এই সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে পড়েছে। মৃত্যুভয় আজ সেই মানবসভ্যতাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে মানবসভ্যতা,লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের বাঁচার ধরনটাই পাল্টে যাচ্ছে সামাজিক ছবিটা হয়ে যাচ্ছে উলটপালট এ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনা নয়।উদ্ভ্রান্ত ও দিশাহীন মানব ভল্লুকের মতো আচারণ করতে শুরু করেছে।এর মাঝে সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে, আগামীকালের সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য হবে তো আমাদের? সমস্যা তো আসবেই,কিন্তু তাকে এড়িয়ে না গিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করাটা বীরের কাজ। বেশ কিছু দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে গেলেও,নতুন সূর্যোদয় দেখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে আমাদের ভারত বর্ষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনতার কারফিউ ঘোষণা করতেই শুরু হয় খিল্লিবাজ দের দাঁত খিঁচানো হাসি। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে জনতার কারফিউ কি সেই ভাষা বোঝার মত বিবেক বোধ হয় বহু উলঙ্গ রাজনীতি বিদ ও জনগণের নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল পরিবহন ব্যবস্থা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মনে হয় এরপর পরিস্থিতি আমরা কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছি। এই মারণ রোগের ঔষধ পেতে সময় লাগতে পারে ১২থেকে ১৬ মাস।বিকল্প ব্যবস্থা একমাত্র সচেতনতা। সেই সচেতনতা হল জনতার কারফিউ। খিল্লিবাজ ও বিবেকহীন নির্বোধ দের দাঁত খেচানো হায়নার হাসি কে উপেক্ষা করে, আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। শুধুমাত্র শিক্ষিত বা গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকার পদে বহাল থাকলে যে সচেতন হবে তা কিন্তু নয়। কারণ কলকাতার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষিত আমলার পরিবারের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের ফল হাতেনাতে ভোগ করছে বাংলার জনগণ। জনকোলাহল ও ব্যস্ত নগরী কলকাতা কার্যত শুনশান। অসচেতনতার ফলে ইতালি আমেরিকার মত দেশ যেখানে বিপর্যস্ত সেখানে ভারত বর্ষ কিন্তু মৃত্যুর মিছিলে পা মেলাবে সে বিষয়টা কিন্তু পরিষ্কার।(WHO) চিফ সাইন্টিস্ট ২০১৫_১৬ সাল থেকে উন্নত দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছিল,যে কোনো সময় আঘাত হানতে পারে কোন ভয়ঙ্কর মহামারী পাল্টে দিতে পারে গোটা পৃথিবীর চালচিত্র। না এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেও কোন দেশ তেমনভাবে আমল দেননি। তার ফল ভুগছে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলি।
ফেব্রয়ারি মাসের ২৭ তারিখ - রোমে তখনও পাস্তা পিৎজার ক্যাফে গুলো ভর্তি। ফন্তানা দি ট্রেভিতে তখনও থিকথিকে ভিড়। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে রোগ হচ্ছে কিছু মানুষের, টিভিতে দেখাচ্ছে নতুন কেস ধরা পড়েছে ইত্যাদি।কিন্তু তখনও সাধারণ মানুষ অফিস যাচ্ছে, কাজে যাচ্ছে - আজ ভারতের মতই। তখনও মানুষ বাইরে বেরোচ্ছে, পানশালা যাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে - আজ ভারতের মতই।
চাকরিতে ছুটি না পাওয়া মানুষ ভাবছে, না গেলে যদি চাকরি চলে যায়? - আজ ভারতের মতই।
ভাবছে, বাড়ির আসে পাশেই থাকবো, কি আর হবে - আজ ভারতের মতই। ইতালিতে তখন দ্বিতীয় স্টেজ, তৃতীয় সপ্তাহ - আজ ভারতের মতই। এই অব্দি সব মিল। এরপরের ব্যাপারটা ভবিষ্যত।
নিচে ছবিতে দেখুন, ইতালির ভবিষ্যত লেখা হয়ে গেছে। এক লাফে, তৃতীয় সপ্তাহে ১০০০ রের বেশি থেকে চতুর্থ সপ্তাহে এক লাফে প্রায় ৭০০০ হাজারের কাছাকাছি। তৃতীয় সপ্তাহে ছিলো প্রায় ২৫০, ভারতের আপাতত তৃতীয় সপ্তাহে২৭৬ - ইরান তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে ২৪৫ থেকে এক লাফে বেড়ে ৪৭৪৭। পরিসংখ্যান টা ঠিক এমনই।
মিল আরেকটা হচ্ছে, ইতালি বা ইরানে তৃতীয় সপ্তাহেও সবাই এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। অনেকেই ভেবেছেন যার হচ্ছে হোক, আমার হবেনা। ভারতেও আমরা অনেকটাই ক্যাজুয়ালি নিচ্ছি এভাবেই। সবই করে যাচ্ছি, বাইরেও যাচ্ছি অফিসেও যাচ্ছি কিন্তু বুকে ভয় নিয়ে!
আমরা ভাবতেও পারছি না, জাস্ট পরের সপ্তাহ আমাদের জন্য কি বিভীষিকা নিয়ে আসছে। আজকের ২৭৬ নাম্বারটা পরের সপ্তাহে ১০,০০০ হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। ভারতের মতো জনবহুল ও ভিড় দেশে এটা খুব স্বাভাবিক, যদি আমরা সতর্ক না হই।
ভাবুন, আজ আপনি যে কারণে অফিস বাধ্য হয়ে যাবেন, সেই জব সিকিউরিটির কি হবে যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হন, বা তার থেকেও ভয়ঙ্কর - মারা যান। কে করবে এই চাকরি তখন? কার জন্য করবে?
যে বস আজ কাজে যেতে বলছে, সেই বস সেদিন আসবে না আপনার প্রিয়জনের বা আপনার জানাজা ধরতে। আগে প্রাণে বাঁচুন ভাই, তারপর চাকরির কথা ভাববেন।
সমস্যা হচ্ছে, এই লেখাটা যখন আপনি পড়বেন, তখনও করোনা আপনার ধারে কাছে পৌঁছায়নি। বা পৌঁছেছে, আপনি জানেন না - সিম্পটম বেড়িয়ে আসতে সময় তো লাগে। কিন্তু যখন জানবেন, দেখবেন চারপাশে কেউ বাকি নেই, সেদিন যতই মাথা দেওয়ালে ঠুঁকে বেড়ান, এই তৃতীয় সপ্তাহ আর ফেরত পাবেন না। তখন আপনি ঢুকে পড়েছেন আপনার চারপাশে হাজার হাজার করোনা পজিটিভ রুগী নিয়ে।
- সেটার মানেই আপনি মরবেন এমন না। কিন্তু সরকারের সেইসময় আর কিছু করার থাকবেনা। তার কাছে আপনাদের রাখার জায়গা নেই, পরিকাঠামো নেই। এত সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা করার উপায় নেই - সরকার তখন কি করবে? সরকার তখন সেটাই করবে যেটা আজ বাধ্য হয়ে ইতালি করছে.. পাঁচজন রুগী এলে এবং দুটো বেড থাকলে, ওই পাঁচজনের মধ্যে সবথেকে বেটার অবস্থার দুজনকে বেছে নিচ্ছে, বাকিদের মরার জন্য ছেড়ে দিচ্ছে! সরকার তখন এটাই করবে বাধ্য হয়ে!
ইতালির মত উন্নত দেশ এর মোকাবিলা করতে ব্যার্থ সবরকম সুযোগ সুবিধে আমাদের থেকে অনেক ভালো থাকা সত্বেও। ভাবতে পারেন, ভারতের মতো জনবহুল দেশে এই বার্স্ট হলে কি অবস্থা হবে!
ইতালি তবুও জানতে পারেনি কি আসতে চলেছে তাদের দিকে, তারা ক্যাজুয়ালী নিয়েছে, কারণ তাদের সামনে অন্য একটা ইতালির উদাহরণ ছিলো না। পঞ্চম সপ্তাহে তারা হঠাৎ ২৫০০০এর কাছাকাছি! আমাদের সামনে ইতালি সহ বিভিন্ন দেশের উদাহরন স্পষ্ট, এরপরেও আমরা যদি সতর্ক না হই, যদি সংযত না হই এবং নিজেদের বাড়ির মধ্যে আটকে না রাখি, সেল্ফ আইসলেশনে না থাকি তাহলে পরে কেঁদে কিচ্ছু হবেনা। বরং বলা ভালো, আপনার জন্য কাঁদার লোকও পাবেন না।
তাই এই অসহনীয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে আমাদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গৃহবন্দী হওয়া ছাড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জাত,ধর্ম রাজনীতির ঊর্ধ্বে আমাদের মানবতার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে সময়। এ লড়াই ভারতবর্ষের মানচিত্র কে বাঁচানোর। কারণ ভারতবর্ষের মানচিত্র আজ বড্ড অসহায়। কিন্তু এত কিছু জানার পরেও সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি উঠে আসছে যা আমাদের সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক ও দুঃখজনক। লকডাউন হওয়ার পরেও মানুষকে বাইরে বেরোতে আড্ডা মারতে,চায়ের দোকানে চায়ের দোকানে জমায়েত হতে দেখা যাচ্ছে। আমরা যেকোনো কাজে শুধুমাত্র সরকারকে দোষ দিই অথচ নিজেদের ন্যূনতম দায়দায়িত্ব টুকুও এড়িয়ে যাই। শুধু সরকার নয়, সচেতন হতে হবে দেশের জনসাধারণকে। বর্তমানে এই অসহনীয় অবস্থার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন জাগে পৃথিবী আবার কবে শান্ত হবে? তবে আজ নয়তো কাল পৃথিবী শান্ত হবে, নতুন সূর্য উঠবে কিন্তু সেই সূর্যদয় দেখার জন্য কতজন বেঁচে থাকবে সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন।
আমার কথা
তৃপ্তি মিত্র
পৃথিবীর আজ গভীর ব্যাধি ৷ না না এটা এখন আর আমার একার কথ নয় ৷ এ কথা সমস্ত বিশ্ববাসীর ৷ সর্বক্ষণ আতঙ্কের একচিলতে মেঘে আছন্ন হয়ে থাকি ৷ না পারছি ঘুমতে না পারছি খেতে ৷ অাবার ঘুম ভেঙ্গে সেই চিলতে মেঘের অতলে তলিয়ে যাই ৷
পৃথিবী তো আমাদের না চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছে ৷ আবার কেড়ে নিতে ও কার্পন্য করে নি ৷ সে নিক , আমরা আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নিজেদের ক্ষমতার আস্ফালনে মেতে উঠব ৷ বন , জঙ্গল কেটে বানিয়ে ফেলবো ঝাঁ চকচকে শহর ৷ সাগরের অতলে তো আমাদের অবাধ বিচরণ ৷ আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে পাড়ি দেবো ৷
জীব শ্রেষ্ঠ মানুষ আজ কতোটা অসহায় বিপন্ন তা হাতেনাতে টের পাচ্ছে বিশ্ববাসী ৷ একটি ছোট্ট ভাইরাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েদিল মানুষ কতো অসহায় ৷ সারা বিশ্ব যেন নীলডাউন হয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে একটি ভাইরাসের কাছে ৷ তবে যে ব্যাধি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তার থেকে সে কি ভাবে মুক্ত হবে তা তার এখন ও অজানা ৷ বা আদৌ মুক্ত হতে পারবে কি ? ঠিক ঠিক আগের মতো ?
আমরা মানুষেরা ভীষনই আশাবাদী ৷ আমিও সেই আশায় বুধ বাঁধলাম ৷ নিশ্চই এর একটা বিহীত হবে ৷ সব আগের মতো ঠিকঠাক হয়ে যাবে ৷ নিশ্চই ঝড় থেমে যাবে ৷ পৃথিবী আবার শান্ত হবে ৷ দুশ্চিন্তার কালো রাত কেটে গিয়ে নতুন ঝাঁ চকচকে একটি দিন আসবে ৷ কারন প্রতিটি দুঃখ রাতের ওপারেই অপেক্ষা করে সুন্দর একটি সকাল ৷ সেই সুন্দর সকালের প্রার্থনা করি ৷ আর মনে মনে বলি তাই যেন হয় ,তাই যেন হয় ৷
এ প্রার্থনা —
" মানুষের কাছে মানুষের প্রার্থনা , তাই যেন হয় ৷ প্রকৃতির কাছে মানুষের প্রর্থনা , তাই যেন হয় ৷ মানুষের কাছে প্রকৃতির প্রর্থনা , তাই যেন হয় ...... "
অন্য ভাবনা
সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে
লক্ষ্মী নন্দী
মানবিক চেতনায় প্রগতিশীল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। প্রতিভায়, মেধায় ও মননে যিনি বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি মাত্র ৬/৭ বছর। তাঁর রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী। পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন , শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তার কবিতার মূল প্রেরণা এবং বিষয়। তেতাল্লিশের মম্বন্তর , ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী কলম বয়সিক সীমাবদ্ধতাকেও অতিক্রম করেছিল অনেক পরিণত ভাবনায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বানও সুকান্তের কবিতায় পেয়েছি । আমাকে তাঁর কবিতা বরাবর উদ্দীপ্ত করে। ঠিক তেমনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এক সৈনিকের জবানিতে তিনি লিখেছিলেন "প্রিয়তমাসু " যে কবিতটা আমার মনকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয় এবং যন্ত্রণা দেয় এক নারীর হাহাকার। যেই যন্ত্রণার মোকাবেলার পরিপ্রেক্ষিতেই আমার লেখা এই সংলাপধর্মী কবিতা প্রিয়তমসু। যদি কখনও কোনও আবৃত্তিকার এই সৈনিকের নববিবাহিতা স্ত্রীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে কবিতাটা আবৃত্তি করেন, তবেই স্বার্থকতা পাবে আমার এই লেখা।
প্রিয়তমসু ঃ
------------------------------ -------
আজ --------
সীমান্তের প্রহরী তুমি
জানতে তুমি সৈনিক
তবু কেন!?
দক্ষযজ্ঞ আয়োজনে
ছুঁয়েছিলে আমার হৃদয়
প্রথম আবেগেই
করেছিলে সম্মোহিত।
লিখছো,
তুমি আসবে ফিরে ঘরে
তিউনিসিয়ার জয়
ইতালীর বন্ধুত্ব ও
ফ্রান্সের মুক্তির মন্ত্র
নিয়ে বার্মার প্রেরণায়
আমার কাছে।
আজ আমি নিষ্ঠুর ঘাতে
আহুতির পটভমিতে
আবার ব্যাকুল ভীষণ
তাই এই শ্রুতিলিপি।
প্রিয়তম ----
সদ্য স্বপ্নের বীজ বপন
করেছি যেদিন -
সেই রাতটা ছিল
জ্যোৎস্নার দখলে
সরারাত দেখেছি
পূর্ণচাঁদের ক্ষয়।
ঠিক যখন ভোর ভোর
তুমি, তখন গভীর
অটল - স্তব্ধ।
আমি ভুলিনি
তোমার মিরতার
একটা লম্বা শ্বাস
আমার বুকে এসে
ঝড়ের বেগে দমকা
ধাক্কা দিয়েছিল।
তুমি দেশমাতৃকার
সত্যের সৈনিক,
পথচলা দূর্বার,
অভিধানে মৃত্যুভয় শূন্য,
তাই বিবাহের নিয়ম
পদদলিত করে --
সৈনিকের পোশাকে
রওনা দিলে ---
রক্তের বাসর ঘরে
নির্লিপ্ত দ্বিধাহীন -
মহামন্ত্রে মহীয়ান।
আমার পথ তো তুমি
না, বলতে পারিনি,
শুধু অভিমানিত হয়েছি,
মৌন তাকিয়ে দেখেছি,
উঠে দাঁড়িয়েছি,
লুকিয়ে রেখেছি,
বিভ্রান্ত আর ধৈর্যচ্যূতি।
আলেয়ার বৃত্তে ,
বিস্ময়ের নিশ্বাসে
বিবর্ণ হয়েছে আমার
স্বপ্নের বীজ।
ধাতব শব্দে
বেজে উঠেছে
প্রণয়াসক্ত হৃদয়
শূণ্যতা শুষে নিয়েছে
গায়ে হলুদের গন্ধ
চুয়ে পড়েছে
বিরহের ক্ষত।
অক্লান্ত সাহস, ধৈর্য্য,
সহ্য, শক্তিতে
পরিক্ষামগ্ন
সব্যসাচী তুমি,
যেন বহ্নিমান সূর্য
সহচর যে ছুঁটছ
আর ছুটছ
যুদ্ধের ময়দানে,
পার্থ গৌরবে।
এক প্রান্ত থেকে
আর এক প্রান্তে
শত্রুর মুখোমুখি।
আর আমি ধূলি
দাপটে
বিচ্ছিন্ন শর্বরী
যে কল্পবৃক্ষের
ছায়ায়
দিনের পর দিন
অস্তিত্ব,
অস্তিত্ব হীনতায়
যন্ত্রণাদগ্ধ
হয়েছি।
ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়
বু- ভুক্ষায়
দুর্ভিক্ষের আগুনে
বিপন্ন হয়েছে প্রাণ।
কতবার মৃত্যু তাড়িত
হয়েছি। আঁচর
কাটেনি তোমায়।
তবুও চোখ বুজে
তোমাকেই খুঁজেছি
সুদীর্ঘ মৌনতার
ম্যারাথনে
বিস্ময় দৃষ্টিতে
দেখেছি , আশ্চর্য
মুর্তি সব। যেন
পশু আর মানুষের
আদিম বন্যতায়
ভয়ঙ্কর সংমিশ্রণের
মাঝে তুমি
দাঁড়িয়ে একা।
বিষন্ন মনে
অশান্ত দৃষ্টিতে
এঁকেছি
তোমার ছবি।
ভেবেছি
জাত দেবতাকে
পরাজিত
করে, ধস্ত
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে
দুরন্ত বাতাস হয়ে
ছিনিয়ে আনি
তোমাকে।
তুমি তখনও
অবিনাশী জীবনের
গানে ব্যস্ত।
আমি অপরিচিতা।
দহনের তেজে
পড়াবুকে
রাতে স্বপ্ন দেখেছি।
ভোরের স্বপ্নে
দেখিনি কখনও।
কত চিঠি লিখে
ছিঁড়েছি -
প্রেম, অপ্রেম,
বিশ্বাস, চ্যুতি,
ভাল, মন্দের
অন্তর দহনে
অবরুদ্ধ হয়ে,
অগ্নি সাক্ষী -ধারায়
ঝড়েছি।
তোমাকে প্রশ্ন
করেছি বহুবার -
আর্তিতে,
অনুরোধে,
স্পর্ধায়। সান্ত্বনা
পাইনি, বেঁচে থাকার
রসায়নে -
প্রকৃতির দেহে
দেহ রেখে
হয়েছি অহল্যা।
আজ তুমি
সীমান্তের প্রহরী
লিখেছো যুদ্ধ
চাওনা আর
যেতে চায়না মন
ইন্দোনেশিয়ায়।
পারনি এড়াতে
জীবনকে।
যেমন, আমিও
পারিনি
এড়াতে মৃত্যুকে।
অসহ্য যন্ত্রণায়
শবের মিছিল
পেড়িয়ে
মৃত্যুর সঙ্গে
বেঁধেছি
গাট ছড়া -
নতুন শরীরে।
অসীমে,
আকাশে, আলোতে,
ছায়া পথে ,
নীহারিকা সরণীতে,
নক্ষত্রের খামারে
তৃষ্ণা মেটাই।
তুমি আসবে ফিরে
তোমার আগমনী
কথা পৌঁছে যাবে
স্বদেশের দ্বারে।
অত্যাচারের
হাত থেকে
তুমি মুক্তিদাতা।
ইতিহাসে পাবে
অমরত্ব।
তুমি ভেঙ্গেছ
অন্ধকার
আলোর রশ্মি
ছড়িয়ে পড়বে
ঘাসে ঘাসে
শাখায় শাখায়।
তোমার পদার্পণে
বেঁজে উঠবে
পঞ্চধ্বনি শঙ্খ।
নেচে উঠবে
আমার অশরী
হৃদয়,
দূরে শূণ্যে নীরবে।
অামি তোমার
মন্ত্রপূত সঙ্গী
আমার অাত্মা
জেগে অাছে
ঐ -ঐতিহাসিক
সন্ধিক্ষণ
প্রতিক্ষায়।
দহন দিনের ছবি
অন্য চৈত্র
উদয় সাহা
এক.
চামড়ার নীচে একটা ঝড় থাকে। দূর গোলার্ধের অদৃশ্য ঘটনার মত ঝাপসা আড়াল৷ পূর্বাভাস পাওয়া বড্ড দুষ্কর। আবহাওয়ার আপডেট নিতান্তই আপেক্ষিক। সব চোখের শুধু চামড়ায় আটকে যাবার ঝোঁক৷ সব চোখেই একটা যাই যাই ভাব। রাতগুলো তাই যাত্রীহীন৷
দুই.
প্রিয় কবির ভালো কবিতা পড়ার পরও আমি ছটফট করতে থাকি৷ সহজভাবে বাঁচার ইচ্ছে হয়৷ সহজভাবে ভালবাসতে ইচ্ছে হয়৷ হারানো সাদা রুমালটা খুঁজে পেতে জাপটে ধরি পোষা কুকুরকে। আমি নালিঘাসের প্রশ্রয় পেরিয়ে নেমে পড়ি বোধের পুকুরে।
তিন.
হাততালির হাতগুলো আপাতত বন্ধ। হাতগুলো বিস্তৃত আকাশের দিকে৷ একটা খাবারের তোবড়ানো গাড়ি টহল দিচ্ছে গোটা শহর। গাড়ি ভর্তি অশ্রাব্য খিদে। গাড়ির চারপাশে স্তূপাকার মেঘ অথবা থইথই কাদা।হবারই কথা৷ গাড়িটা বেশ জানে যে সে নিজেই একটা জ্যোর্তিবলয় আর মেঘগুলো যত গুড়ো গুড়ো হবে ততই বিজ্ঞাপনের সম্ভাবনা।
আসলে যখন লেখা হয় না, মাথায় বাড়ি মারতে ইচ্ছে হয়৷ গন্ধহীন কাগজফুলে খালি খালি ধুলো জমে।
গল্প
নবজাতক
মৌসুমী চৌধুরী
তখন গভীর রাত। বাতাসে ভাসছিল পোড়া মাংস আর প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ। চারদিকে জ্বলছিল টায়ার। পুড়ছিল দিল্লির কারওয়াল নগরের বড় বস্তিটার ঘিঞ্জি ঘরগুলো। চার- দিকে তখন শুধুই হাহাকার আর আর্তনাদ!
দাউ দাউ জ্বলছিল আয়েষাদের বাড়িটিও। কিন্তু তখন সে সব দাঁড়িয়ে দেখার ফুরসত নেই তার। পিছনে উন্মত্ত জনতার উল্লসিত চিৎকার! তাই ধ্বংসপুরীর ভেতর দিয়ে প্রাণ হাতে করে উদভ্রান্তের মতো ছুটছিল আয়েষা। সন্তান সম্ভবা আয়েষা খাতুন। ন'মাস চলছে তার।
পেটে উন্মত্ত দুষ্কৃতিদের লাথি খেয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে প্রাণপণে ছুটছিল আয়েষা। ছুটছিল নতুন এক প্রাণকে বাঁচাতে। ঠিক একটু আগে তার চোখের সামনে পশুগুলোর চপারের কোপে স্বামী ইউসুফের দেহটি নিথর হয়ে গেছে। পেটের সন্তানকে বাঁচাতে তাই মরিয়া হয়ে ছুটছিল আয়েষা। কিন্তু নাহ্! ... পশুগুলো প্রায় ধরে ফেলতে যাচ্ছে তাকে! জ্ঞান হারাবার আগে সে দেখেছিল এক সৌম্যদর্শন পুরুষের বলিষ্ঠ হাত তাকে সামলে নিচ্ছে!
পরের দিন আয়েষার যখন জ্ঞান ফিরে- ছিল তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। ভীষন দুর্বল লাগছিল তার। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছিল। নিজেকে সে আবিষ্কার করেছিল মিউনিসিপালিটির হাসপাতালে। স্মিতমুখী নার্সদিদি এসে কোলে তুলে দিলেন তার নবজাত ছেলেকে। আয়েষা শুনল তিনি সময় মতো হাসপাতালে এনেছিলেন বলেই বাঁচান গেছে তাকে আর তার ছেলেকে। কে তিনি? তাঁকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল আয়েষার।
তিনি এলেন সন্ধেবেলায় । আয়েষার সন্তানের জীবনদাতা। তাঁকে দেখে বুক ভরে উঠল আয়েষার --- গেরুয়া-বসন-পরিহিত সৌম্যদর্শন এক সন্ন্যাসী। এ দহন দিন দুঃসহ সময়ে তিনি যেন নিয়ে এলেন ঝুরুঝুরু বটের ছায়া।
কবিতা
ইন্দ্র
যাজ্ঞসেনী
ভালোবাসা দিস ইন্দ্র, হারিয়ে যাস না
আজন্মের বুভুক্ষু আঁচলে ঢেকে রাখি
সমস্ত খণ্ডগ্রাস অমাবস্যা, জোছনার জন্য
পাশা খেলি দিনরাত পাপের সঙ্গে
চুড়ির মতো খিলখিল হেসে বলি
ওষ্ঠে রেখেছিলি নিষিদ্ধ চুম্বকচিহ্ন
অবেলা প্রহরে চিলেকোঠা ঘরে
উন্মুক্ত পদ্মকুৃৃঁড়ি ছুঁয়ে আর কতবার
কত কতবার ফেরার প্রতিজ্ঞা করে
না ফেরার পথে রেখে যাবি চকিত চুম্বন
নিষিদ্ধ স্পর্শ মন্দিরের আনাচকানাচ
একটু ভালোবাসা দিস ইন্দ্র, অভিমানের
আনত নয়নে, প্রথম নিষিদ্ধ শিহরণে
অনেক তো হলো
রুদ্র সান্যাল
অনেক তো হলো কথা বলা।
অনেক তো হলো কথা দেওয়া।
অনেক তো হলো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা!
আর কত? অনেক তো হলো...
বসন্ত ঝঞ্ঝায়, ভেসে যাওয়া রক্তের স্রোতে,
খেলা করে নরকের পোকা!
কিছু ভাঙা স্বপ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আজ,
পড়ে থাকে এদিক ওদিক!
এ কোন মৃত্যু উপত্যকা...!
অনেক তো হলো...আর কত..?
অন্তরীপ জীবন
রীনা মজুমদার
পৃথিবীর মানচিত্র গভীর দহন
দগ্ধ অন্তর্দাহ
অদৃশ্য শুধু অনুভবে -
আ্যসিডে মুখ পুড়িয়ে
ধর্ষনের শিকার হিমঘরে
ঝলসে ওঠে একমুঠো ভাত
বেকারের হাহাকার
কলরব শূন্য নির্দোষ সেচ্ছাবন্দী
মৃত্যু নিবন্ধ অক্সিজেন দামী
সব দহনের রং কী এক ?
জীবনের অন্তরীপ দহন
লবনাক্ত ধারায়.…
মন ছায়াচ্ছন্ন অতল বিশ্বাসে
দুর্বহ দুঃসহ ভারী সময়
হবে লঘুভার... ।
দাহরাগ
তাপসী লাহা
নোনারোদে ভিরমিখাওয়া পিঁপড়ে ডিমের হাতজ্বালা
অঘ্রাণের শীত চলে গেছে বলে
গেছে, কাল আসবো'খন; কুটুমবাড়িত যাবা
হবেক ইখন
তুই কোথায় টিটিকাকা! মহালজুড়ে এত রোদ্দুরের
রায় জড়ানো গান, স্নায়ু অবশ করা পাউডার মাখা
বিকেল ঠাকুমা নিয়ে গেলো, মৃত্যুটা
আকস্মিক ছিল সামাল
দিতে সাঁতরে গেছি রাঁধুনি ফোড়নের
উচ্চমার্গে
গহীন বিকেলের কড়াইয়ে
ছ্যাঁক তেলে ফুঁটে ওঠা
উদ্বায়ী জ্বালায়
সন্ন্যাস ধারণ
করে পাতাদের অন্তর্দাহ
সত্যি সত্যি সত্যি - এই নে তিনকন্যার দাহরাগ।
অঙ্গার
বিজয় বর্মন
জ্বলতে জ্বলতে জ্বালানির কাঠ ,
কুমোরের পোড়া মাটি ।
পুড়িয়া সোনা , খাঁদমিশালি ,
চক্ চক্ রঙে হয় , খাঁটি ।
মানিক না কি পুড়লেই ভালো ,
সাত রাজার ধন ।
তুষানলে জ্বলছে সোহাগ ,
দিবানিশি সারাক্ষণ ।
চাপা পড়ছি নিত্য দিনে ,
ফসিল্ হওয়ার পথে ।
দহনে দেহের রূপান্তরে ,
কয়লার রূপ সময় গতে ।
মনের ভিতর দহণ জ্বালা ,
অশ্রু শিক্ত তট ।
শুভ্র সামিয়ানা নীলাচলে ,
ভাসিয়ে দিলাম, প্রশান্তি ঘট ।
মৃত্যু - বিষ
রুনা
ঠোঁট দিয়ে আলিঙ্গন করি
ভালোবাসার আরক
আমার ক্লিভেজ ছুঁয়ে যায়
প্রতারণার দহন হেমলক
যা বিন্দু বিন্দু ফোঁটায়
আমার স্তনবৃন্ত নাভি স্পর্শ করে
মন ও মনন থেকে
সব সীমারেখা মুছে দেয়
মৃত্যুর নীল বিষে আচ্ছন্ন হয়ে
মিশে যায় শেষ রক্তবিন্দুতে ।
একটা যুদ্ধ....
সব্যসাচী নজরুল
পদ্মার ধূ ধূ বালুচরে ঘর্মাক্ত দিনের শেষে কীর্তিনাশায় গা ভিজাই,
ক্লান্ত দেহখান কখন জানি ঝিমিয়ে পরে বটের ছায়ায়।
সুদূর বিস্তৃত ভূমি মাঝে নিরবতা ভেঙে জেগে ওঠা তোমার একাকী জীবনের বিরহগাথা, কষ্টরা, অমানিশায়-
ব্যথার গীত রাগে-অনুরাগে করুণ সুরে বেজে যায়।
শুনলেও যা শিহরণ জাগাতে পারে না পাথর-চাপা এ কঠিন প্রাণে!
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে কোমল পরশে জড়িয়ে রাখা,
আমায় ঘিরে থাকা তোমার অস্তিত্ব টের পেয়েও আমি নিরুপায়?
ব্যথা, কিযে ব্যথা, নিদারুণ কষ্টে চোখে জল ঝরে যায়।
অনুভূতি-স্পর্শগুলো পাঁজর ভেঙে কলিজা ছিঁড়ে গলিত বিগলিত হয়ে গড়িয়ে পড়লেও, আহারে-
ওরে হায়, হায় হায় আমি নিরুপায়!
ক্রমাগত ধাবমান একটা যুদ্ধ,
এ জীবনময় চলমান একটা যুদ্ধ।
অস্ত্রহীন কম্পিত হৃদে ধীর পায়ে হেঁটে যাই,
তবুও লড়ে যেতে চাই।
একটা বিজয় চাই, একটা মুক্তি চাই
প্রিয় চিরচেনা জগতে আমৃত্যু তোমায় নিয়েই বাঁচতে চাই।
চারিদিকে ভয়-আতঙ্ক, মৃত্যু উপত্যকা খুলেছে দ্বার,
দলছুট এক নেকড়ে আধিপত্য বিস্তার করছে বারংবার।
পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ভীষণ ক্ষুধার্ত
শৃগালের দলে
তোমাকে আমাকে খেতে চায়
পলায়ন করে ঝাপ দেবো অথৈজলে
না, না, আমিতো এমন মানুষ নই?
পশ্চাৎপদে রবো, অগ্রগামী এ আমিতো এমন নই!
দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত -
ওষ্ঠাগত শেষ দমটুকু পর্যন্ত প্রাণপণে লড়ে যেতে চাই,
স্বভূমে নিরোগ নিরাপদ আশ্রয়ে তোমায় নিয়ে বাঁচতে চাই।
বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই......
(উৎসর্গ: বিশ্বময় ' করোনাভাইরাস ' প্রতিরোধে যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে)
বৈশ্বিক মহামারী
ছবি ধর
ঝেড়ে ফেলি পৃথিবীর দেয়ালে লেগে থাকা ঝুল কালি ,
মাটির মেঝে থেকে সমস্ত দাগ দূষণ মুছে বিছিয়ে দেই
সবুজ গালিচা l
পরিযায়ী পাখীর জন্য ছিটিয়ে রাখি শস্য দানা
ফুরোবে না ধন
বাঁচবে কিছু প্রাণ
ফিরবে আশ্বাস ;
সবুজ ফিরিয়ে দেই পশুদের বাঁচুক বন l
কয়েকশো বছরের প্রকৃতির বিরাগভাজন প্রকট হয়েছে আজ বুঝি !
সুনামি, আইলা ঝড় , ভূমিকম্পন , বন্যা , দাবানল কাটিয়ে উঠলেও --
মৃত্যু ভয় এভাবে তাড়িয়ে বেড়ায়নি কখনো মানুষের মনে l
পরমাণু শক্তির বলও হার মেনেছে
এক সুক্ষ অণু করোনার কাছে
মাথা নত করেছে সমগ্র বিশ্ব l
বৈশ্বিক মহামারীতে জর্জরিত আজ শ্রেষ্ঠ জীব l
মানুষ ছুঁয়ে দিলে অসুখ ছড়ায়নি আগে l
হাত মেলাতে ভয় , আপনজন পাশে থাকা বারণ
মৃত্যু শয্যাতেও
একি কম যন্ত্রনা ? কম কষ্টের ?
আত্মীয় স্বজনহীন শেষযাত্রায় যায় নি আগে
কোনো শবদেহ !
কালের অভিশাপের অন্ধকার দূর করি অন্তরীণ আলোয় l
অঙ্গীকার করি আলোয় ফেরার ;
দুর্গমতা পেরিয়ে যেতে গতি করি নিশ্চিত l
উদযাপন কি শুধুই ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানো ?
প্রেম কি কেবল সহজ উন্মোচন ?
ডিজিটাল সভ্যতা কি শুধুই সংযমহীন সমাগম ?
সমাপ্তি
রথীন পার্থ মণ্ডল
একটি পাখির ডাক ও ভোর
কোলাহলে দিনের পতন শুরু
দূরে শ্মশানে শব, নীরবতা
আগুনের চিৎকার ওড়ে
বিষণ্ণ তুলো আর মহাকালের আস্তানা
তোমার চোখের পাতায় ঘুম
কুহকের রোদ, জুঁই ফুল
তবু পাখির ডাক --- নদীর স্রোত
ক্ষয়ে যাওয়া প্রত্ন পাথর
মৃত জীবজগৎ আমাদের
জীবনেরও...
অবিরত পাখি ডাকে।
দুঃসহ সময়
প্রতিভা পাল সেন
পৃথিবী আজ অশান্ত, অতৃপ্ত!
জীর্ণতার নতুন-নতুন সাজে-
অবসন্ন, ভীষণ ক্লান্ত!
-দুঃসহ সময়ের এ-যেন-এক উত্তপ্ত-বালুচর!
জরাগ্রস্ত-পৃথিবীর এক দাহ্য-অভিশপ্ত রূপ!
অবক্ষয়ের সর্বগ্রাসী দাবানলের
বাঁধভাঙা ধৈর্য্যে-
যেন জ্বলন্ত-আগ্নেয়গিরির নিঃসারিত বুদবুদ!
মুঠোভরা কত-সময়
রাত্রিকালীন আবহে অতিবাহিত!
ব্যস্ততা তখন ধ্বংসের হিজিবিজি-খেলায় মত্ত!
সব আলো নিভে যাওয়ার আগে,
প্রকাণ্ড তার শিখায়-
ঝলসে-ওঠা সমাজের মুখে,
এ-সময় যেন মৃত্যুকামী-ক্ষত!!
শান্তি চাই
লুবনা আখতার বানু
অনেক হয়েছে আর নয়,
এবার একটু শান্তি চাই।
বিসর্জন গেছে অনেক তাজা
প্রাণ-
বহু পরিবার শান্তি হারিয়েছেন
চিরতরে।
পিতৃহীন আজ অনেক শিশু-
বহুসংখ্যক পিতামাতা
হারিয়েছেন শেষ সম্বল।
স্বামী হারিয়েছেন বহু নারী-
তাই বলছি অনেক হয়েছে
আর নয়,
এবার একটু শান্তি চাই।
বন্ধ হোক এই তাজা প্রাণ
বিসর্জনের খেলা।
যন্ত্রনায় একদিন আমিও
বলেছিলাম বদলা চাই!
তবে অনেক হয়েছে আর নয়,
এবার একটু শান্তি চাই।
যুদ্ধ মানেই আবারো শত শত
তাজা প্রাণ,
যুদ্ধ মানেই পিতৃহীন শিশুর
ক্রন্দন-
যুদ্ধ মানেই আবারো অশান্তি!
যুদ্ধ মানেই শেষ সম্বলহীন বহু
পিতামাতা,
যুদ্ধ মানেই আরো অনেক
স্বামীহীন নারী-
অনেক হয়েছে আর নয়,
এবার একটু শান্তি চাই।
দহন দিন দুঃসহ সময়
মাথুর দাস
হৈ হুল্লোড় মস্তি জোয়ার
ভালোবাসার স্বস্তি খোয়ার
শেষ হল যেই শখের ভ্যালেন্টাইন,
চোখে দৃশ্য নয় করোনা
অণুজীব তো সে এক কণা
দেখ তারই ত্রাসে মানুষ ঘরেন্টাইন ।
বসন্তেরই ভজন পূজন
বাসন্তিকা শিবের গাজন
এক লহমায় উঠলো এখন শিরে,
বৈকালি সুর হাওয়ায় বিলীন
কই তালি দেয় চৈতালি দিন
শিরীষ ডালে তিরিশ তালের মঞ্জীরে ?
দহন দিনের গহন মনে
চিন্তা শুধুই আঘাত হানে
আর কত প্রাণ বেহাল বেঘোর মৃত্যুমিছিল !
দুঃসহ এই সময় কালে
আতঙ্ক যে গরল ঢালে
নাই রাশ কি ভাইরাসের এই পথে পিছিল ?
এই ফাগুনে ভালো থেকো
মজনু মিয়া
জীবন যুদ্ধে নেমেই থাকি
দিনে কিংবা রাতে,
ভালো মত সময় টুকু
দেই না তোমার সাথে।
ভালোবাসার একটা দিনেও
যাই না তোমার কাছে,
মহাজনের তাগিদ লাইগা
আছে আমার পাছে।
মন খারাপের নাই কো কিছু
আমি তোমার আছি,
ভালোবাসব জনম জনম
যদি আমি বাঁচি।
ভালো থেকো এই ফাগুনে
আবার দেখা হবে,
তুমি শুধু আমার থেকো
আছো যেমন রবে।
মধু-মাধব
সঞ্চিতা
দাস
চৈত্র শেষের হাতটি ধরে আসবে দহন জ্বালা-
কালবোশেখী
উড়িয়ে পাখা পরিয়ে দেবে মালা।
চৈত্র আর কালবোশেখীর মিলন দিয়ে শুরু,
স্বপ্ন
ভাঙা বুকের মাঝে জাগবে সুপ্ত তরু।
রঙিন ফুলে আভাস ছিল
ছিল রঙিন বেলা-
শেষের সেদিন হল যে শেষ
ফুরিয়ে
গেল খেলা।
চৈত্র এবার নেবে বিদায় একটি বছর শেষ,
থাকবে শুধুই শেষ বিদায়ের অনন্ত আবেশ।
আলো-ছায়ার বাতাস লাগে, বাতাস মৃদু-মন্দ,
মধু-মাধব মিলবে এবার, আসবে নতুন ছন্দ।
থেমে যাওয়ার আগে
'এই দেশ ,এই সময় '
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
কাছেপিঠে ...দূরে কোথাও
সমস্ত দেশ জুড়েও
বাতাসে খবর ভাসছে অবিরত ( সংক্রামক ব্যাধির মতো )
কেননা social distance বজায় রাখতে
ঘরবন্দী মানুষ বিধিনিষেধে
মুখে কথা ,লিখে কথা সবটাই মুঠোফোনের জিবির দৌলতে
নেটের দুনিয়ায় এভাবেই টিকে যায়
কিছু জনসংযোগ
এভাবে ছড়ায় গুজব ;
কিছু গুজব আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়
কিছু আতঙ্ক আবার ধৈর্য বাড়ায়
কখনো কি ভেবেছিলে ...আদৌ এভাবে বাঁচা সম্ভব !
তবু আছি ,ভালো আছি ,নিরাপদে আছি ,বেঁচে আছি ;
কি যেন মনখারাপিয়া সুর বাজে
'আমি নেই ....ভাবতেও ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায় '
এই পৃথিবী আজ তাকিয়ে আছে ,জীবন ও মৃত্যুর মাঝে যুযুধুমান সময় ;
ভালোরাখাটাও বড়ো দরকার
অনেকেই নেমে গেছে তাই কাছে
কেউ ক্যামেরার নিচে
কেউ বা আড়ালে কিছু করার নিজস্ব তাগিদে
কেউ ঘরবন্দী স্বেচ্ছায়
একদিনের খাবার দু'দিন খায় ...এটাও সামাজিক দায়
তবুও তো সবাই বোঝে না !
বুঝবে সেদিন ....পথ খোলা নেই ,সজল চোখে আলিঙ্গন করে নেবে হিমশীতল মৃত্যু
অথবা প্রিয়জন হারা একরাশ কান্না ...
ভাবি কত কি যে একাকী
কত কথার আঁকিবুঁকি
যে এখনো ফেরে নি ঘরে
কিংবা একা আছে দূরে কোথাও Lock down এর নিস্তব্ধ দুপুরে
তাদের কথাই ঘিরে ধরে কাজে কিংবা অবসরে
বসন্তের দিন এভাবেই কেটে যাবে জানি
ভালো থেকো সবাই
হাতে হাত ,কিংবা ঠোঁটে ঠোঁট
ভালোলাগা গুলো মনে মনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
অবসাদ সরিয়ে ভালো থাকার চেষ্টায়
অবিরত জীবনের জয়গান গাই আমি .....
ছবি
ঈপ্সিতা হালদার, কলকাতা
পর্ণা পাল, মালবাজার