মুজনাই সাপ্তাহিক
আমাদের বড়দিন
বিশেষ সংখ্যা
২৫ ডিসেম্বর, ২০২১
সম্পাদকের কথা
ওমিক্রনের আবহে সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে বড়দিন। উৎসবের সেই জৌলুষ হয়ত নেই, কিন্তু রয়েছে আবেগ। বিশ্বমানবের ত্রাতা জিশুর জন্মদিনে আজ একটি প্রার্থনা, দ্রুত স্বাভাবিক হোক বসুন্ধরা, ফিরে আসুক নিজস্বতা।
মুজনাই সাহিত্য সংস্থা
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
প্রচ্ছদ- শৌভিক কার্যী
মুজনাই অনলাইন অগ্রহায়ণ সংখ্যা
বড়দিন হল খ্রিস্ট প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব
বটু কৃষ্ণ হালদার
"নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান" এই মহান উক্তির মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ দেশ প্রেমীদের আত্ম ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভারত বর্ষ বিশ্বের দরবারে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।এই দেশের আগাগোড়া রক্তের বেড়া জাল দিয়ে ঘেরা।তবে আমরা এই চরম সত্য অনেকে মেনে নিতে পারি না।দেশ নায়কদের অপমান করা ব্যাক্তি রা ও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।এর কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উৎসব পালিত হয়।সেই সংস্কৃতির টানে বিদেশি পর্যটক রা আগত হন।ধর্মের টানে ভারতে এসে অনেকে স্থায়ী বসতি গেড়েছে।একদিকে যেমন ধর্ম পালন,সংস্কৃতি সমন্ধে জ্ঞান লাভ করা হয় তেমনি ব্যাবসা তে ও সমৃদ্ধি লাভ হয়।
ভারতে যেমন দুর্গাপূজা,কালীপূজা, গণেশ পূজা, ছোট পূজা, ঈদ মহরম আনন্দের সাথেই পালিত হয় ঠিক তেমনি পালন করা হয় আত্ম ত্যাগের দেবতা ঈশ্বরের পুত্র পবিত্র যীশুর জন্মদিন যা সমগ্র বিশ্বের কাছে দিন বড় দিন হিসাবে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই উৎসব আমাদের ভারতবর্ষে পালিত হয়ে আসছে। প্রভু যীশু আমাদের পাপের কারণে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন।তাই এই উৎসব খিস্তি প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব হিসাবেই পরিচিত।বড়দিন কি জন্য পালন করা হয় তা আমাদের একটু জেনে নেওয়া দরকার। প্রকৃতি চলে তার আপন খেয়ালে। তাকে উপেক্ষা করার মতো সাহস মানবসমাজের নেই। মানব সভ্যতা তারা যখন প্রকৃতি প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছে তখনই সেই সমস্যা সমাধানের উপায় নিজেই খুঁজে বার করেছেন। পাপে পরিপূর্ণ ও জর্জরিত মানবসভ্যতাকে তিনি যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি তাকে ধ্বংস করেছেন। সেই ইতিহাস আমরা বহুবার পড়েছি। ঠিক তেমনি সত্য ও ন্যায় কখনো প্রধানত হয়নি মিথ্যার কাছে। সূর্যকে যেমন আড়াল করা যায় না তেমনি সত্য ও ন্যায় ধর্মের কখনোই মিথ্যার বেড়াজাল দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। এই পৃথিবীতে যখনই অধর্ম পাপ অরাজকতা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে ঠিক সেই সময়ে কোন না কোন ধর্মের প্রতীক ঈশ্বরের দূত এসে সেই পাপ থেকে অ_ধার্মিকদের মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রভু যীশু হলেন তার জ্বলন্ত নিদর্শন।
খ্রিস্টীয় বাণী অনুযায়ী আমরা জানতে পারি ঈশ্বর যেমন ঝড় জল আলো বাতাস সৃষ্টি করেছিলেন ঠিক তেমনি তার আশ্চর্যতম সৃষ্টি হল আদম আর হবা।তাদের কে মানুষরূপে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তাদের সৃষ্টি করার পর তিনি বলেছিলেন তোমরাই পৃথিবীর সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য ভোগ করো কিন্তু একটি গাছের ফল খেওনা।সেই গাছের নাম হল সদ সদ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষের ফল। কিন্তু তারা শয়তান সাপের প্রলোভনে পা দিয়ে, সেই গাছের ফল হবা নিজে খেলেন তার স্বামীকে ও খাওয়ালেন। এই কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন কারন তারা ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করেছিলেন। ঈশ্বর রেগে গিয়ে তাদের অভিশাপ দেয় যে দশ মাস দশ দিন প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করে এ পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি করবে। সেই বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে। একের পর এক বংশ বিস্তার লাভ করতে করতে মানব সৃষ্টি হতে থাকে। মানুষ সৃষ্টি হতে থাকলো এর ফলে পৃথিবীতে পাপের ভাগ বাড়তে লাগল।মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করতে শুরু করলো। ঈশ্বর পরিস্থিতি বুঝে তিনি অনেক জ্ঞানী গুণীদের প্রবক্তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তারা পাপীদের উদ্দেশ্যে বারবার বলেছিল তোমরা পাপ করোনা মন ফেরাও। কিন্তু তারা কোন কথায় কর্ণপাত করলো না।পাপ, অরাজকতা য় যখন পৃথিবীতে পরিপূর্ণ হতে লাগল তখন মানুষ ক্রন্দন করতে লাগলো আমাদেরকে বাঁচাও ঈশ্বর আমাদেরকে বাঁচাও। তখন যোহন লিখিত সুসমাচারের ৩ অধায়ে লিখিত আছে:ঈশ্বর পৃথিবীতে এমন প্রেম করলেন,যে তার এক জাত ও সন্তানকে দান করলেন,যে কেউ তাকে বিশ্বাস করে, কেউ যাতে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করে। এরপর ইসতির মনস্থির করলেন তার সন্তানকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। কিন্তু তার সন্তানকে যে পাঠাবেন তার জন্য তিনি কোনো পবিত্র গর্ভ পেলেন না। অবশেষে খোঁজ পেলেন মরিয়মের। কিন্তু মরিয়ম ছিলেন অবিবাহিত। যোষেফের বাগদত্তা।তিনি মরিয়মের কাছে স্বর্গের দুতের দ্বারা খবর পাঠালেন।ঈশ্বরের দুতের সেই কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। তখনই ঈশ্বরের বাণী মরিয়মের কাহিনী ধ্বনিত হলো তুমি ভয় পেয়ো না। এই প্রথম পৃথিবীতে কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া মরিয়মের গর্ভে প্রভু যীশুর স্থান হল। এরপর যখন তারা বেথলেহেমে নাম লেখাতে গেলেন। তখন মরিয়ামের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। বেথলেহেমে এত বেশি লোকের সমাগম হয়েছিল সেখানে তারা কোন জায়গা খুঁজে পেল না।অবশেষে এক আস্তাবলে যীশুর জন্ম হলো। যীশুর যখন জন্ম হলো তখন মেষপালক রাখাল রা মাঠে ছিলেন। তখন ঈশ্বরের দূত তাদের খবর দিলেন, যে তোমাদের মহা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি,দাউদ নগরে এক রাজার জন্ম হয়েছে। তখন রাখালরা দৌড়ে গিয়ে দাউদ নগরে সেই রাজা কে দেখতে গেলেন। ঠিক সেই সময় একটা তারা উদিত হয়েছিল। তিনজন জ্ঞানী সেই তারা কে দেখে, গণনা করে বলেছিলেন এক রাজার জন্ম হয়েছে। সেই তারা কে অনুসরণ করে করে পণ্ডিতরা হেরোদ রাজার প্রাসাদে খবর নিতে গেলেন, পণ্ডিতরা বললেন আপনার প্রাসাদে রাজা জন্ম নিয়েছে আমরা তাকে প্রণাম জানাতে এলাম।পণ্ডিতদের সেই কথা শুনে হেরোদ রাজা অবাক হয়ে গেলেন।বললেন রাজার দেশে রাজা জন্ম।এই ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাদেরকে বললেন আপনারা খোঁজ নিন যদি সেই রাজার দেখা পান আমাকে খবর দেবেন। তখন পণ্ডিতরা পুনরায় সেই তারার অনুসরণ করে আস্তাবলে পৌঁছালেন।তাকে প্রণাম করলেন আর সোনা,কুন্দ্রু,গন্ধ রস সহ দামি জিনিস উপহার দেন। আর রাজা হেরোদ দূত পাঠিয়ে দাউদ নগরের সমস্ত শিশুদের মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে যেতেই প্রভু যীশুর মাতা ও পিতা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর পর প্রায় ৩০ বছর তিনি তার পিতা-মাতার সঙ্গে ছিলেন।পিতা মাতার সঙ্গে থাকাকালীন প্রভু যীশু তার অলৌকিক আশ্চর্য কাজ আরম্ভ।অন্ধকে চোখ দিলেন,দুর্বলকে হাঁটার শক্তি দিলেন,কবর দিয়ে তুলে মৃত পচা গলা দেহতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন,ভূত ছাড়ালেন। তার অলৌকিক কার্যাবলীর খবর চারিদিকে রটে যায়,সবাই যীশু যীশু বলে গৌরবান্বিত করতে লাগলো।তার এই উত্থান ভালোভাবে মেনে নেননি তৎকালীন সমাজের বিদ্বজনরা।যারা তৎকালীন সময়ে ধর্মের নামে ব্যাবসা শুরু করেছিল তারা ভয় পেয়ে গেল যীশ কার্যকলাপ দেখেস। অবশেষে সমাজের নিয়ম অবমাননার দায়ে তার বিচার চাইলেন পিলাতের কাছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল বিচারের জন্য।কিন্তু পিলাত তার কোন অন্যায় ধরতে পারলেন না।। কিন্তু সমাজের নিয়ম বাহকরা চিৎকার করে বলল যীশুর বিচার চাই তাকে ক্রুশে দাও,ক্রুশে দাও।পিলাত চিৎকার শুনে জনগণের পক্ষে গেলেন। তবুও তিনি বলেছিলেন এই উপবাসের মাসে আমরা একজনের শাস্তি মুকুব করতে পারি। কিন্তু দুষ্কৃতী বারাব্বাস কে মুক্তি দিলেও যীশুকে মুক্তি দেয়নি।তাকে ক্রুশে দেবার অনুমতি দিলেন। এরপর তারা যীশুকে নিয়ে গেলেন ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য।মাথায় কাঁটার মুকুট পরানো হোল।৩৯ বার চাবুক মারা হলো। সারারাত নির্যাতন করা হলো।সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেলো।এর পর তাকে দিয়ে মাইল এর পর মাইল ক্রুশ বহন আনা হোল।নিজের বয়ে আনা ক্রুশে তাকে হত্যা করানো হল।।ক্রুশে থাকা কালীন তিনি অপরাধীদের সম্পর্কে বলেছেন:হে পিতা ঈশ্বর ওদেরকে ক্ষমা করো ওরা নিজেরাই জানেনা ওরা কি করছে।তিনি ক্ষমার বাণী শুনিয়েছেন।ত্যাগের বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধীর অপরাধ ক্ষমার কথা বলেছেন"।
ধর্ম হলো আত্মার আকুতি।ধর্ম কথার প্রকৃত অর্থ হলো নিজের ধর্ম কে অক্ষরে অক্ষরে পালন ও রক্ষা করা আর অন্য ধর্মর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কিন্তু বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্মের নামে একশ্রেণীর ধর্মান্ধরা রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে।এটা সত্যি কি কোন ধর্মের বাণী হতে পারে?কার ধর্ম বড় তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমরা কম-বেশি অনেকেই ধর্মের বাণী শুনি বলি ধর্ম স্থানে যাই, কিন্তু প্রকৃত মানুষ কয়জন হয়ে উঠেছি?মানুষের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বারবার মানবসভ্যতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে,আর তার জন্য দায়ী কারা সেই প্রশ্ন সবার সামনে রেখে যাই।
আমাদের বড়দিন বড় একটি দিন
সৌরভ দত্ত
দিনের ঘোষিত পরিসমাপ্তি ঘটে সূর্যাস্তের সময়কে বিবেচনা করে। পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে থাকে সূর্যাস্তের সময়। অর্থাৎ দিন ছোট হতে হতে আবার একটু একটু করে বড় হওয়ার সূচনা ঘটে পঁচিশে ডিসেম্বর তারিখে। পঁচিশে ডিসেম্বর তাই বড়দিন। চুলচেরা বিশ্লেষণের দরকার নেই, সত্যি সত্যিই ঠিক পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে সূর্যাস্তের সময় পিছিয়ে যেতে থাকে কিনা তার বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনাচিন্তার দরকার নেই, কিন্তু 'বড়দিন'-এর নাম মাহাত্ম্য আলোচনা করতে বসলে সুনির্দিষ্ট এই বিষয়টিকে হেলাফেলা করার অবকাশ নেই। খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য দিনটির তাৎপর্য কী, তাঁরা ধর্মীয় অনুভূতিতে ঠিক কীভাবে উদযাপন করে থাকেন দিনটি, এসব ধর্মকেন্দ্রিক অনুভূতির অনেক উর্ধ্বে গিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ি বড়দিনের আবেগতাড়িত উদযাপনে, তা এককথায় অসাধারণত্বের দাবি রাখে। বড়দিনের কেক, বড়দিনের পিকনিক, বড়দিনের হুল্লোড়, বড়দিনের পার্কস্ট্রিট, বড়দিনের সান্তাক্লজ, বড়দিনের শীত, বড়দিনের টুপি, তালিকা অনন্ত। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের নিরিখে বড়দিনের একটি সুবিধা হচ্ছে, সময়টি শীতকাল। পৌষের কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে বসে থাকার দিন, কিংবা আপাদমস্তক কম্বল আবৃত হয়ে কাঠের আগুন জ্বালিয়ে গা-হাত-পা সেঁকার দিন। বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন যতই মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক না কেন, বিনা শীতের বড়দিন কিন্তু বিরল বললে অত্যুক্তি হয় না। বড়দিনের মরশুম মানেই শীতের রকমারি সবজি কেনার দিন। বাঙালিয়ানা সমৃদ্ধ সবজি বাজার জুড়ে পালং শাক, মটর শাক, নতুন আলু, পেঁয়াজকলি, মটরশুটি, সিম, গোল বেগুন। সারাবছর ধরে বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি যতই মিলুক না কেন, শীতের ফুলকপি আর বাঁধাকপির স্বাদই আলাদা। মিষ্টির দোকানে খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা আর জয়নগরের ক্ষীরের মোয়া। এসবের সাথে পাল্লা দিয়ে হৈ হৈ করে দোকানপাটে বিক্রয়যোগ্য রকমারি কেকের পসরা। আর এই 'কেক' আর 'বড়দিন' যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একে অন্যের সাথে। আক্ষরিক অর্থে বড়দিন পঁচিশে ডিসেম্বর হলেও বড়দিনকে মাথায় রেখে কেক কেনাবেচার রেওয়াজ শুরু হয়ে যায় বড়দিনের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই, যা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায় বড়দিনের শুভক্ষণে। আরেকটি বস্তু অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল বড়দিনের সাথে, এখনো যে নেই তা নয়, তবে তুলনামূলকভাবে কম। বস্তুটি হলো 'কার্ড' বা শুভেচ্ছা স্মারক। তথাকথিত e-দুনিয়ার বাড়বাড়ন্তে কাগুজে কার্ড একেবারে অবলুপ্ত না হলেও তার ব্যবহার অনেকাংশে নিম্নগামী, সন্দেহ নেই। এসবের সাথে পুরোদস্তুর পাল্লা দিয়ে রয়েছে পিকনিক। বড়দিনের বনভোজন শীতকালীন ঐতিহ্য। তবে এই ঐতিহ্য পালনের আতিশয্যে মানুষজন এতটাই মশগুল যে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় এড়াতে বনভোজন বড়দিনে না করে অন্য কোনো দিনে করতে পছন্দ করে থাকেন অনেকেই। শুধু কি সারাদিন ব্যাপী পিকনিক! উপভোগের মাত্রাটিকে এক অন্য স্তরে নিয়ে যেতে অদূরে বা দূরের কোনো রিসর্টে গিয়ে রাত্রিবাস তথা নৈশভোজের আয়োজন বড়দিনের অঙ্গ। সবকিছু মিলিয়ে চারদিকে শুধু খুশির বাতাবরণ। সব দিক থেকেই 'বড়দিন' আক্ষরিক অর্থেই বড় একটি দিন। সমস্ত ধর্মীয় সীমানার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে দিনটি উদযাপিত হয়, সেই সার্বিক ব্যাপকতার প্রেক্ষিতে দিনটি সত্যিই বড় একটি দিন।
আলোর পথযাত্রী
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী
শীতের আবেশ জড়ানো শিশিরসিক্ত এক পবিত্র রাতে গীর্জার ঘন্টাধ্বনি জানান দেয় এক মানবতার আবির্ভাবের শুভক্ষণটির। প্রতিটি গীর্জার বাইরে থেকে শুরু করে উপাসনাগৃহের প্রতিটি কোণ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে সেজে ওঠে আশ্চর্য সুন্দর সাজে। রঙিন কাগজে, বেলুনে, মোমের রকমারিতে, সুদৃশ্য ঘন্টাগুলির টুংটাং জলতরঙ্গে, ঝকঝকে তারার দ্যুতিতে, কেকের গন্ধে সবমিলিয়ে মুখরিত হয় গীর্জার নিস্তব্ধ প্রাঙ্গণ। বাহারি আলো,তারা ,ফুল, ফল ও চকলেট দিয়ে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি এক রঙিন উজ্জ্বলতা হয়ে শরিক হয় এই আনন্দ তিথির। যাকে ঘিরে এত আয়োজন, শান্ত, সমাহিত সেই দেবদূতের মূর্তির সামনে মাথা নত হয় বার বার। তাঁর ক্ষমাসুন্দর চোখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত অপরাধ, সমস্ত গ্লানি থেকে মুক্তির আশা জাগে। তাঁর প্রেমের বাণীর আলোয় ভরে নিতে মন চায় আগামীর পথচলাকে। নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি যে ক্ষমার বাণী, সৌহার্দ্যের বাণী ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন মানুষের মনে মনে, তা এ সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষের মনে শুভবোধ জাগ্রত করতে, নতুন পথের দিশা দেখাতে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর প্রতিটি জন্মদিনে তিনি যেন মানুষের পুরোনো ভুলগুলিকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সমস্ত বিভেদের, পাপের পরিত্রাতা হয়ে আসেন সম্প্রীতি ও মুক্তির বার্তা হয়ে। সে বার্তা মানুষকে যে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে, সে পথ অন্যায় স্বীকার, প্রায়শ্চিত্ত ও প্রার্থণায় এক আদর্শ পথ হয়ে ওঠে।
রাতের চোখে ঘুম নামে.. ঘুমের চোখে স্বপ্ন। স্বপ্নে আসে হরিণে টানা স্লেজ গাড়িতে লাল -সাদা পোশাকের হাসিমুখের ছবি। এই উড়ন্ত গাড়ি চড়ে গোটা পৃথিবী জুড়ে শিশুদের মনের কল্পনার দরজায় পাড়ি দিয়ে তাদের বড়দিনের ভোরটিকে সার্থক করে তোলেন এক ভালোবাসার ফেরিওয়ালা। ছোট ছোট মোজায় মোজায় উপচে পড়া খুশি ছবি আঁকে শিশুদের মনের খোঁজ নেওয়া প্রিয়জনদের মুখগুলির।
সময় বদলে দেয় অনেককিছুই। তবুও, এই ধর্মীয় উৎসবের মাহাত্ম্য অমলিন থেকে যায় মানুষের মনে মনে। বিশ্বব্যাপী পালিত এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিক যোগদানে এক নিটোল স্পর্শকাতরতা ও শ্রদ্ধা কাজ করে। এই অনুভূতি ও উপলব্ধি বড়দিনের দিনটিকে নিছক একটি বিশেষ জাতি ও ধর্মের উৎসব থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মানবতার এক মঙ্গলময় সার্বজনীন উৎসবের রূপ দিয়েছে বার বার। তাই বড়দিন আপামর বিশ্ববাসীর আনন্দের দিন হয়ে 'আমাদের বড়দিন' হয়ে গেছে সেই কোনকালে।
বর্তমান সমাজের বুকে অবক্ষয়ের যে গভীর ক্ষত বাসা বেঁধেছে, সমাজের সর্বস্তরে ঈর্ষার বাতাবরণ যে কালো ছায়া ফেলছে মানসিকতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে;এমন আরও অনেক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে আজকের দিনে বড় প্রয়োজন সেই ক্ষমাসুন্দর, বলিষ্ঠ যুগনায়কের।
অজস্র মানুষ আজকের এই অস্থির সময়ে আর্ত, দুর্গত, অসহায় মানুষদের ত্রাতা হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যথার্থ সান্তাক্লজ হয়ে এগিয়ে আসুক। সমস্তরকম ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিশোধস্পৃহাকে ছাপিয়ে বড়দিনের উপহার হয়ে সেজে উঠুক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মৈত্রেয়ী, বিশ্বাস ও ভালোবাসা। বড়দিনের আলোর পথ দেখানো তারার দল এক সুন্দর ঠিকানায় সম্মিলিত করুক বিশ্ববাসীকে।
বড়দিনের ভাবনা
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
" হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব,
ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভ জটিল বন্ধ... "
প্রভু যীশু এবং ক্ষমা শব্দটি সমার্থক। বেথলেহেমে এক দরিদ্র পরিবারের গোয়ালঘরে কুমারী মা মেরীর কোল আলো করে যে শিশুর জন্ম হয়েছিল, তিনিই সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে আজীবন জীবনের জয়গান গাইতে শিখিয়েছিলেন। আমরা ইতিহাসে জানতে পারি খ্রিস্টান ধর্ম একটি প্রাচীন ধর্ম। গনতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষ এবং গোটা বিশ্বের সব ধর্মাবলম্বী মানুষই প্রভু যীশুর জন্মদিন পালন করেন।সারা পৃথিবী জুড়ে সর্ব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ উল্লাসের সাথে পালন করে থাকেন।
প্রভু যীশু ছাড়াও মহামতি অশোক ও কলিঙ্গ যুদ্ধ বন্ধ করে, হিংসার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীকে শান্তির বাণী শুনিয়েছিলেন। এখনো ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতি, মহামতি অশোকের নির্দেশিত পথেই পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন ভারত কোন দেশকে আক্রমণ করবে না। কোনো দেশ ভারতবর্ষকে আক্রমণ করলে, ভারত সেই আক্রমণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করে।
অন্যদিকে বহুত্ববাদ ভারতীয় সংবিধান এর ভিত্তি। ভারতীয় গনতন্ত্রের মূল কাঠামোটি ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত। মহাত্মা গান্ধী এবং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম সমার্থক। মহাত্মা গান্ধী ও আজীবন শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণী প্রচার করেছেন। তিনি বলতেন, " কেউ তোমার একগালে চড় মারলে, অন্য গাল বাড়িয়ে দাও।"
আমরা এই সব প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী দের জন্মদিন পালন করি। প্রজন্মের কচিমুখে অহিংসার বাণী শোনাই। কিন্তু প্রতিদিনই খুন, জখম, রাহাজানি, হিংসায় দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। মানুষের সহনশীলতা দিনে দিনে কমে আসছে।
আমরা একটা ভাবনা এই বড়োদিনে ভাবতেই পারি। আমাদের জীবনে চলার পথে, কখনো কখনো, কারো কারো সাথে মনোমালিন্য হয়ে যায়। আমাদের স্বজন বন্ধুদের ক্রিয়াকলাপ এবং আচার ব্যবহারে, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কে দেওয়াল গড়ে ওঠে। আমরা সবাই যদি, এই বিশেষ দিনটিতে সেই সব আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের, সব দুর্ব্যবহার ভুলে তাদের ক্ষমা করে দিই, নিদেন পক্ষে বড়োদিনের সকালে, মোবাইল ফোনে খোঁজ নিয়ে, বলি, "আয় আমরা সব ভুলে পুরনো দিনের সম্পর্ককে বাঁচিয়ে তুলি, " তাহলে প্রভু যীশুকে সম্মান প্রদর্শন করা হবে। বড়োদিন পালন স্বার্থক হয়ে উঠবে।
‘এক হয় বিশ্ব’
অলকানন্দা দে
চৈত্রের বিলাসী হাওয়া, বৈশাখী খরবায়ু, রৌদ্রচড়া গ্রীষ্মের দাবদাহ, শ্রাবণে শান্তির শতধারা মাথায় নিয়ে দিব্যহাসি-মুখ পৃথিবীটার কোটি কোটি লোক বাঁচি আমরা তন্ময় হব বলে শীত-আসরে। শিশু বৃদ্ধ মেয়ে পুরুষ প্রকৃতির রঙে সেজে বিচ্ছেদ নেবে অনায়ত্ত অ-সুখ বিষাদ থেকে। ঠিক সুরে গায় উপোসী মানুষের মন! বড়দিনের দীর্ঘ ইতিহাস বলে এই ধন্য প্রহর মানুষের মাথায় হাত রেখেছে আদরে ডুবিয়ে! সূর্যে সূর্যে তারায় তারায় মোড়া শীত সভায় যোগ দিতে যে আবেগের খরস্রোতে ডিঙি বাওয়া চলে, তা করুণাময়ের করুণা ছাড়া আর কি! বিরাট বিশ্বের একটাই সুর! মৈত্রী মাঠে মিলিত হবে নিখিল, পরম পিতার আশীর্বাদ পেতে মরিয়া মানুষ ঘরবার করে শুধু। কখন আসবে সে মাহেন্দ্রক্ষণ যখন বিশ্বব্যাপী বেজে উঠবে একই প্রেমের সংগীত, ভালোবাসার স্তোত্র, মমতার শ্লোক! অনুভূতিরা এসে মিলিত হয় হৃদয়ের অন্তহীন নীলে! সম্মিলিত কল্লোলে আবাহন হয় বড়দিনের! প্রভু বলেন, ভেঙে বিভেদের চেতনা এসো সবাই প্রেম উৎসবে মাতি! পৃথিবীর মাটিতে বারবার নেমে আসে সেই আশ্চর্য অলৌকিক মুহূর্ত! চেতনার শৃঙ্খল কে যেন খুলে দেয় মায়ার খেলা দিয়ে!
শিশুদের বিশ্বাসে শুকতারা জ্বেলে দিতে শীত-বুড়ো আসে উপহারের পুঁটুলি নিয়ে আমোদের জাদু ছড়ি হাতে! সরল বন্ধু দুয়ার ঠেলে ঢুকবে মধ্য রাতের শাশ্বত আঁধারে। যা চাও তাই পাও হাতের মুঠোয়, ঘোষণা করেছে সে। এই অলীক সুবর্ণ ভাবনা শত শত বছর ধরে বয়ে যায় শিশুর ঘুম-নদী বেয়ে! বিশ্বাস তো একেই বলে বোধহয়! এভাবেই শীত-জয়ী বড়দিন ভরাট করে মানুষের মনের ক্ষোভ গহ্বর। স্নেহ ঝরা শিশির বৃষ্টিতে সুখী হতে চায় সকলে।
ভুলে গিয়ে সব ভুল বড়দিনে মানুষ বাঁধা পড়ুক একটি তোড়ায় সর্বতোভাবে। পরম পিতা সেই ঐকান্তিক সাধ ব্যক্ত করেন দুহাত মেলে!
আমাদের বড়দিন
চম্পা বিশ্বাস
সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ভারতবর্ষেও ২৫শে ডিসেম্বর যিশুখ্রীষ্টের জন্মদিন সাড়ম্বরে পালিত হয়। এটি মূলত খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষর অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে এটি সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে খুব আনন্দের অনুষ্ঠান।
আমার বেড়ে ওঠা জলপাইগুড়ি শহরে। ছোট্ট এই শহরে আমার প্রতিবেশী পরিবারটি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। সারা বছর এই পরিবারের সকলে অপেক্ষা করতো ২৫শে ডিসেম্বরের জন্য। ওদের সাথে আমার অপেক্ষাও কিছু কম ছিল না। ওদের বাড়ির মেয়েদের সাথে আমি একসাথে বড়ো হই আপনজনের মতো।
২৪শে ডিসেম্বর বিকেল থেকেই ওদের বাড়িতে শুরু হত উৎসব। আলোকসজ্জা ও গৃহসজ্জার কাজ চলতো সারারাত। বিকেল থেকে ওদের বাড়ির সাজসজ্জা দেখার আশায় বারকতক ঢুঁ মারতাম। রাতে বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতাম চার্চ থেকে আগত সকলের গান শোনার আশায়। সেই রাতে ঘুম চোখে গান শোনা ছিল পরম আনন্দের। সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে সোজা দৌড় দিতাম ওদের বাড়ির সাজসজ্জা দেখতে। কেক, কমলালেবু, নানারকম মিষ্টি ছিল আমাদের সকলের জন্য।
আমাদের বাড়ির সকল অনুষ্ঠানে যেমন ওদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল ঠিক তেমনই ওদের বাড়িতে উৎযাপিত বড়দিনের অনুষ্ঠানটিও ছিল আমার অনুষ্ঠান। আমাদের এই বড়দিন আজও পালিত হয় সমান আনন্দে মিষ্টি মুখ আর উপহার বিনিময়ের সঙ্গে।
বড়দিনের উপহার
বুলবুল দে
সুনন্দার মেজাজটা কয়দিন ধরেই ভীষণ খিঁচিয়ে আছে।পাঁচ দিন হয়ে গেল তার কাজের মাসি বরদার কোনও পাত্তাই নেই। রোজ ওর আশায় কাজ ফেলে রেখে তারপর শেষ বেলায় ঐ জমে ওঠা কাজের ভারে ওর একেবারে নাস্তানাবুদ অবস্থা।আজ তাই ও খুব ভোরে উঠে সব কাজ তাড়াতাড়িই সেরে ফেলছিল। একেই তো বরদামাসি
আসছেনা তার উপর আজকে আবার বড়দিন। একটু ভাল মন্দ রান্না করতে হবে তারপর মেয়েদের বায়না রাখতে সামনের ঘরের কোণায় খ্রিস্টমাস ট্রি
সান্টাক্লজ এই সব দিয়ে সাজাতে হবে।সকালে উঠেই প্রতিবারের মত আগে মোজার মধ্যে অনেক গুলো চকলেট আর কালকে কিনে লুকিয়ে রাখা কেক এর প্যাকেট টা মেয়েদের বিছানার বালিশের পাশে গুঁজে রেখে এসেছে।এরপর সে যখন রান্নাঘরে ঝটপট কাজ গুলো সেরে ফেলতে মশগুল ঠিক তখনই হঠাৎ কলিংবেলের তীক্ষ্ণ আওয়াজে তার পিলে একেবারে চমকে উঠল। উফ্
কে আবার এল! বরদা মাসি তো হবেনা উনি তো নটার আগে এ বাড়িতে পা রাখেন না। কিন্ত দরজা খুলতেই অবাক! বরদা অপরাধী অপরাধী মুখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ।" কি ব্যাপার কি বরদা সুন্দরী, হাওয়া হয়ে গেছিলে নাকি?এতদিনে মনে পড়ল আমার বাড়ির কথা! কতদিন না বলেছি
তোমাকে, না আসলে আগে থেকে জানাবে, কিছুতেই তোমার কানে যায়না না?" এক নিঃশ্বাসে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলে থামল সুনন্দা। বরদা তখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।"এই হয়েছে একজন, যেন রবি ঠাকুরের পুরাতন ভৃত্য! হাজার বকাবকি কর মুখে রা টি কারবে না। অথচ চলবে এক্কেবারে নিজের মর্জি মত। " মনে মনে ভাবল সুনন্দা। মুখে বলল, " নাও আদ্দেক কাজ তো করেই
ফেলেছি, বাকি কাজ টুকু করে আমাকে উদ্ধের কর
দিকিনি।" বরদা নিঃশব্দে তার কাজ গুলো সেরে কলতলার পিছনে ফাঁকা জায়গায় হাঁটু গেড়ে বুঁদ হয়ে বিড়ি টানতে বসল। এটা ওর নিত্যকর্ম। সুনন্দা
অনেক দিন ওকে বাড়ির মধ্যে বিড়ি খেতে বারণ করেছিল।কিন্ত কে কার কথা শোনে! তাই এখন আর কিছু বলে না,চুপ চাপ ওর অপকম্মটি সহ্য করে যায়। বিড়ি খেয়ে রান্নাঘরের দরজার সামনে
এসে বরদা বলল, "বৌদি তোমার ছোট মেয়ের আর একটা সোয়েটার দিও তো।আগের বারের টা ছোট হয়া গেসে।"
"আজকে হবেনা,আজকে হবেনা।" ঝাঁঝিয়ে উঠল সুনন্দা।
" তাইলে বৌদি তোমার ছোট মেয়ের একটা ফটোক দিও। "
" কি? ফটো দিয়ে কি করবে তুমি?" সুনন্দা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
" না মানে তোমার মেয়ের জামা কাপড় পইরেই তো নাতনী টা আমার বড় হইলো,তাই তোমার মেয়ের একটা ফটোক বাড়িতে বাঁধায়ে রাখব।স্মৃতি
থাকবে একটা।"
কথাটা সুনন্দার বুকে যেন একটা ধাক্কা দিল। সে তো সামান্য পুরোনো জামাকাপড়ই দিয়েছে,
তার জন্য এত কৃতজ্ঞতা? সে যেন মরমে মরে গেল।
ছি ছি , এই বড় দিনের দিন সে কেবল নিজের মেয়ের কথাই ভাবছে।
" কিন্তু তুমিতো আমার বাড়িতে আসলেই মেয়েকে দেখতে পাবে।" সুনন্দা তাকে বলল।
"না বৌদি তোমাকে একটা কথা বলা হয় নাই, হঠাৎ কইরে জামাই আসছে,বলতেসে মেয়েকে আর আমাকে নিয়া যাবে। আমাদের আর কাজ করতে দিবেনা। সেই জন্যই একটা ফটোক চাইলাম।"
হঠাৎ করে কাজ ছেড়ে দিচ্ছে শুনে রাগ হওয়ার বদলে কেমন যেন একটা বিচ্ছেদের ব্যাথা চিন চিন
করে উঠল সুনন্দার বুকে। তার পর ভাবল,যাক বরদা আর তার মেয়ের এবার কষ্টের অবসান হবে।
মনে মনে প্রার্থনা করল যিশু যেন ওদের সুখের মুখ
দেখান। সে তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিছানা থেকে কেকের প্যাকেটটা বের করল আর আলমারি থেকে
দুটো জামা, সোয়েটার ও কিছু টাকা বরদার হাতে দিয়ে বলল," মাসি এগুলো তুমি রাখ, কেক টা খেও
সবাই"। সুনন্দার বুকের অপরাধের বোঝাটা যেন কিছুটা হলেও লাঘব হল। বরদা সলজ্জ ভঙ্গিতে জিনিস গুলো নিয়ে বলল,"বৌদি ফটোক টা দিলা নাতো।"।
"ওহ্ ,ঠিক আছে ওটা তুমি কালকে নিয়ে যেও।"
"ঠিক আসে বৌদি,আর আমি একটা বৌ কে বইলে রাখসি পরের মাস থিকে তোমার বাড়িতে কাজ করবে।"
বরদা চলে যাওয়ার পর সুনন্দার মনটা একটু খারাপ হল ঠিকই কিন্ত ওর সহজ সরল কৃতজ্ঞতার
কথাটা মনে পড়তেই মনটা ভীষণ ভাললাগায় ভরে
গেল। আজ বড়দিনে এটা তার খুব বড় একটা উপহার হয়ে রইল।
মানবপুত্র
শ্রাবণী সেন
মেষপালকে খবর পেল
চলল হঠাৎ সেদিক পানে
আকাশ যেন খবর দিল
উজল তারার আলোক জানে
তিন জ্ঞানীজন যাত্রা করেন
কিসের এমন অমোঘ টান?
আস্তাবলে জন্ম নিলেন
'মানবপুত্র' মহান প্রাণ।
মাথার শোভা কাঁটার মুকুট
রাজাধিরাজ বাস কোথায়!
হৃদয় পরে বসত করেন
পলকপাতেই রাজ্যজয়।
ক্ষমার বাণী শোনান তিনি
করুণাময় মুক্তপ্রাণ
জগতজুড়ে শুনিয়েছিলেন
ভালোবাসার জয়ের গান।
বড়দিনের উষ্ণতা
স্বপন কুমার দত্ত
দিনরাত্রির পথ পরিক্রমায় ---
প্রতিবার আসে বড়দিন
বেথল্ হেমের অশ্বশালার ছোট্ট শিশু
নীলাকাশে উড়ায় শ্বেতপায়রার ঝাঁক।
শান্তির প্রদীপ বিশ্বের ঘরে ঘরে
জ্বালাতে গিয়ে হলেন ক্রুশবিদ্ধ।
ঘন অন্ধকার প্রসব করে
নখদন্তযুক্ত বীভৎস দানব।
ভালোবাসা মানবতা মুছে গেছে ----
লাশঘরের দুরন্ত ঠান্ডায়।
হরিজনবস্তি ভষ্মিভূত হয়,
ধর্ষিতা হয় তাদেরই রমণী।
খুনের তালিকায় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি
সভ্যতা বর্বরতারই নামান্তর।
মনুষ্যত্বের মন্বন্তরে
পৃথিবীও বুঝি লজ্জা পায়।
কিন্তু আর কতকাল
এই রক্তাক্ত যীশুকে দেখব আমরা?
শান্তির জ্যোৎস্নায় -----
পৃথিবীর অবগাহনের পর
প্রভাতে চাই
বড়দিনের নতুন সূর্যের উষ্ণতা।
বড় দিন
বিজয় বর্মন
জীবন প্রতিদিন,দেখে একটা বড়দিন,
জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠে নক্ষত্র,
কোন না কোন ঘরে তার আগমন।
জীবন যতটা উপভোগের,
ততটাই উপলব্ধির,
আত্মত্যাগের পরিভাষা, কার নেই জানা।
তারা'র মেলায় হারিয়ে যাই ঠিকই,
অন্ধকারে গুমড়ে কাঁদে,
কত না হাজার জোনাকি।
আমাদের বড়দিন
মাথুর দাস
আমাদের বড়দিন লেক চার্চ পার্কে,
পিকনিক ঘোরাফেরা গল্প ;
হইচই খুশিদিন ঘরে থাকে আর কে !
মিঠে রোদ দিনবেলা অল্প ।
চার্চের বেল বাজে ডিং ডং জিঙ্গল্ ,
খ্রীস্টের বন্দনা ক্যারলে ;
ইতিউতি হুল্লোড় দল বেঁধে, সিঙ্গল্ ,
দেখা যায় ঘর থেকে বেরোলে ।
আমাদের বড়দিন পিঠে-পুলি পৌষের,
মাঠ জুড়ে আয়োজন দিনভর ক্রিকেটের ;
কেক খাই, পেস্ট্রিও, টেস্টি ও মৌজের,
বড়দিন চলে যায়, দ্রুতগতি কী জেটের !
বড়দিন
অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত
বড়দিনটা হয়না কভু বড়ো,
যদি কলুষতা নাহি মারো,
বড়দিন তখনই বড়ো হয়,
যখন জ্ঞানের আলো বয়,
অপার শান্তি পাবে সকলে,
প্রেমের দ্বার যাবে খুলে,
প্রাণে পরম আনন্দ জাগবে,
অনিবার হাসছে যীশু দেখবে।
সান্তা উপহার নিয়ে আসবে,
খোকা খুকু আনন্দে ভাসবে