সম্পাদকের কথা
আর একটি নতুন বছরের দাঁড়িয়ে আমরা। বছরের এই সময় মানেই গাজনের বাজনা আর চরকের রহস্যময় হাতছানি। ওদিকে শুরু হয়ে গেছে পবিত্র রমজান। অন্যদিকে এই সময়েই সবাইকে কাঁদিয়ে ঈশ্বরপুত্র জিশু কোনও এক শুক্রবারে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন।
সব দিক থেকেই তাই এই সময়ের, এই ঋতুর তাৎপর্য ভিন্ন। করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে সেই তাৎপর্য যে অন্য মাত্রা পাবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
তবে সামাজিক জীবনে বোধহয় আমরা কেউ সেভাবে ভাল নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ক্রমাগত বেড়ে চলা, ছাত্রদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে আসীন শিক্ষাকর্তার হেনস্থা হওয়া, খুনের বদলা নিতে গিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি সবকিছু দেখে মনে হয় অন্ধকার একটি বছর বিদায় নিতে চলল। কিন্তু একই সঙ্গে এই প্রশ্নও জেগে উঠছে মনে, নতুন বছর আদৌ কোনও আলো নিয়ে আসবে? নাকি এই বছরের মতো সে-ও গাঢ় অন্ধকারকে গাঢ়তর করবে!
মুজনাই অনলাইন চৈত্র সংখ্যা ১৪২৮
বর্ষশেষে
মুজনাই সাহিত্য সংস্থা
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)
প্রচ্ছদ- প্রীতম কর
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন চৈত্র সংখ্যা ১৪২৮
বর্ষশেষে
আছেন যাঁরা
শিবির, মাথুর দাস, চিত্রা পাল, পার্থ বন্দোপাধ্যায়, বুল্বুল দে, শ্রাবণী সেন, সম্পা পাল,
রীনা মজুমদার, প্রতিভা পাল, সৈকত দাম, অর্পিতা মুখার্জি চক্রবর্তী,
বটু কৃষ্ণ হালদার, কাকলি বিশ্বাস সরকার, বিজয় বর্মন, অলকানন্দা দে,
বনশ্রী মুখোপাধ্যায়, স্বপন কুমার চট্টাপাধ্যায়, সারণ ভাদুড়ী,
মজনু মিয়া, শৌভিক কার্য্যী, সংগীতা মিশ্র, স্বপন কুমার দত্ত, রীতা মোদক,
তপন বসাক, নিলুফা ইসলাম, অদ্রিজা বোস, অনুস্মিতা বিশ্বাস
বর্ষশেষে
বর্ষশেষে বিদায়...
চলে যায় মরি হায়...
শিবির
ঝরাপাতাগো ! চৈত্রবেলা শেষ হয়ে এলো , এবার তোমার যাবার পালা, নিদাঘের খরতাপ বয়ে আসে বুঝি ঐ দুরন্ত বৈশাখ ! পত্ ঝর্ শুরু তপ্ত ঘুর্ণি হাওয়া বনে বনে দাবানল উঠবে জ্বলে অনেক হাসি অশ্রুজলে তোমার বিদায়মন্ত্র এনেছে পড়ন্ত ফাগুন, এবার যে যেতে হবে...
এসেছে চিরনূতনের ডাক !
দক্ষিণ দুয়ার খুলে এসেছিলে রঙিনবার্তা নিয়ে
পত্রে পত্রে চঞ্চলিয়া উঠেছিল অশোক কানন
মধুমঞ্জরী পুঞ্জ পুঞ্জ আমের ডালে ডালে
রঙের বিন্যাস , আল্পনা আঁকে ফুলেরা সব
কী অপরূপ শোভা বনান্ত ছেয়ে অরণ্যহাসি
মিলনবাঁশির সুর পাতায় পাতায় বসন্ত্ রাগে
বিচলিত চিত্ চোর উচ্ছাস লতাবিতান ঘেরা
সরোবর পাড়ে দুষ্টু চাঁদের হাসি পাতার আড়াল সরিয়ে...
ঝরাপাতা তখন তোমার যৌবন উদ্বেল
সূর্য আলোয় ঝিকমিক, ঠমকে গমকে প্রেমের গজল
মন্দ বাতাস সঙ্গী মিলন আকাংখা শরীর জুড়ে
কতো খেলা কতো রঙ্গ সবাই জানে...
ঝরাপাতা , ওগো ঝরাপাতা ! আমিও তো তোমারই দলে, কত স্মৃতির শৈশব, বসন্তযৌবন পার হলো দুঃখ সুখের দোলায়, এ মাটি জল এ আকাশ বিশাল আলো হাওয়া প্রাণ ভ'রে শ্বাস প্রেম বিরহদিনের সুখের ব্যথা -- সব কিছু ফেলে চলে যেতে হবে অচীন দেশে, সময় বলছে সে কথা , শুকনো পাতার মর্মর শব্দ শুনতে পাই সৃষ্টির পথ দিয়ে যেতে যেতে...
দুঃখ কী তোর ঝরাপাতা ! নূতনের টানে টানে
আবার ফিরে আসবি রঙের খবর নিয়ে, মধুমাধবীতে উল্লাস পাতায় পাতায় মুগ্ধহাসি হেসে হেসে !
বর্ষশেষ
বর্ষ হয়ে আসে
শেষ
চিত্রা পাল
চলে যায় বসন্তের দিন, চৈত্র অবসান।উত্তপ্ত দিন
আর মনোরম রাত, বেল মল্লিকা চাঁপা ফুলের সুবাসে মত্ত বাতাস। বসন্তের সঙ্গে এদেরও
সঙ্গ পাওয়া যায়। কতকগুলো জিনিস কখনো পুরনো হয় না।কেবল অন্য পারিপার্শ্বিকের চাপে পুরনো হয়ে যায়। আমার সামনে
থেকে যখন সরে যায়, তখন তার ঝকঝকে উপস্থিতি হ্রাস হয়ে যায়, কিন্তু ফিরে যেই সামনে আসে, আবার পুরনো ভাব নতুন হয়ে
ওঠে।
বর্ষশেষের বেলায়ও তাই হয়।চৈত্র অবসানে মনে পড়ে
আমার ছোটবেলার কথা। আমাদের বাড়ির সামনে বহতা পুণ্যসলিলা গঙ্গা নদী। সেই নদী তীরে
দ্বাদশ শিব মন্দিরে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল ষষ্ঠি পুজোর দিন থেকেই সাধারণের শিব পুজো শুরু। সেদিন
থেকেই বেশ মেলা বসে যায়। সারাদিন শিব পুজো হয় আর মন্দিরের ঘন্টা বেজেই চলে অবিরত ঢংঢং।সন্ধ্যায় শিবের ঘরে প্রদীপ
জ্বেলে হয় পুজো সমাপন।
পরেরদিন ওখানে মন্দির
চত্বরে বসে চড়কের মেলা। চত্বরের মাঝখানে পোঁতা হয় চড়ক গাছ। বিকেলে সেই চড়ক গাছ
পুজো করার পরে চলে তাকে ঘোরানো আর তার সঙ্গে নানান খেলার কসরত্। কি করে যে ওরা
করতো বাবা কে জানে।বাণ ফুঁড়ে নিয়ে চড়কগাছটাকে চরকির মতো ঘোরানো হতো, আমরা ভয়ে চোখ
বন্ধ করে ফেলতাম। কোন কোন বার সব আয়োজন
করা হয়েছে, হঠাত্ কাল বোশেখির ঝড় এসে সব তচনচ করেছে এমনও হয়েছে। একএক বার যখন খুব
ভালো থাকে সব দিক, মেলা বেশ জমে ওঠে। একবার ওই মেলা থেকে শখ করে আমার মা আমাকে একজোড়া সুন্দর কাঁচের বালা কিনে
পরিয়ে দিয়েছিলো। হাত ঘোরালেই সে বালায়
নানা রকমের রঙ চলকে উঠতো। মাত্র দুদিন
পরেছিলাম। জানলা খুলতে গিয়ে ধাক্কা লেগে ডান হাতেরটা একেবারে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেলো। বাঁহাতেরটাও কদিন পরে গেলো। এখনও
ওই বালাদুটোর কথা মনে পড়ে।
চড়ক সংক্রান্তির পরের দিন ১লা বৈশাখ, নতুন
বছরের শুরু।নতুন বছরের কত সমাদর। তবু বছরের বিদায় বেলায় এখনো সেই স্মৃতি মনে ভেসে আসে। মনে
হয় এইতো সেদিন। আর তার সঙ্গে মনে হয় এই তো
আবার বর্ষ হয়ে আসে শেষ, আবার আসবে নতুন, এ চলা যে অশেষ।
বর্ষশেষের স্মৃতি
বর্ষশেষের দিন গুলো
বুলবুল দে
বছরের শেষ ঋতু বসন্তের দুটি মাস ফাল্গুন চৈত্র পরস্পর যেন একটু হলেও আলাদা রকম। ফাল্গুনের খা খা রোদ্দুরের ধূ ধূ দুপুরটাতে বুকের ভেতরটা কেমন যেন হু হু করা শূন্যতায় ভরে ওঠে। যখন কনকনে শীতের কাঁপুনী নেই, গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপের হাঁসফাঁস করা উৎপাত নেই, অবিরাম বর্ষার নিত্যদিনের সিক্ততা নেই। চারিদিকে কেমন যেন কি নেই -কেন নেই -কোথায় নেই, এই নেই নেই ভাব মনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।জীর্ণ, মৃত্যুপথযাত্রী পাতারা বৃক্ষলোক ত্যাগ করে মৃত্তিকা লোকে আছড়ে পড়তে থাকে আর বৃক্ষলোকের আনাচে কানাচে উঁকি ঝুঁকি মারে তাদের উত্তরসূরী নব প্রজন্ম। বিস্মিত বিস্ফারিত চোখে নিরীক্ষণ করতে থাকে নতুন পৃথিবীকে। কলকাকলীর সুরমুর্ছনায়, ফুলদলের বর্ণময়তায় শান্ত স্নিগ্ধ সমাহিত ফাল্গুন কে যেন ঝটকা মেরে ধ্যানভঙ্গ করে দামাল কিছুটা রুক্ষ কিছুটা সরস দুষ্টু মিষ্টি চৈত্র। দমকা হাওয়ায় অবশিষ্ট পুরাতনকেও জানায় পত্র পাঠ বিদায় সম্ভাষণ। মেঘের কলস থেকে অল্প অল্প করে ঢেলে দেয় তৃষ্ণার জল। ডালে ডালে সবুজ নব প্রজন্মের সংশয়িত চোখে দেখা দেয় সস্তির ছায়া । তারা নির্ভয়ে বাইরের জগতে বেরিয়ে এসে প্রবল উৎসাহে উল্লসিত হয়ে বেড়ে ওঠে। চৈত্রের হালকা ঝোড়ো হাওয়া মাঝে সাঝে কয়েক পশলা বৃষ্টি অন্তিম বছরের শেষ কটা দিন পৃথিবীকে যেন সবুজ সতেজ করে রাখতে চায়। এমন দিনেই উদ্দাম হাওয়ায় বাড়ির পিছনের উঠোনে বিশাল প্রাচীন সৌধের মত আম গাছটার তলে দৌড়ে যাওয়া, যেখানে ঝরে পড়া শুকনো পাতা,আমের মুকুল, আর ছোট্ট আমের কুঁড়ি গুলো কেমন যেন অসহায়ের মত পড়ে থাকে। আর ধেয়ে আসা হাওয়া,"এই তোরা সর সর সর " বলে তাদের দুরে সরিয়ে দেয়। তা দেখে বুকের ভেতরটাও যেন কেমন সির সির করে উঠে। মাঝে মধ্যেই বড় ডাসা কাঁচা আম পেলে খুশির সীমা থাকেনা। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে হাতের চেটোয় লবন নিয়ে উঠোনে পাঁজা করে রাখা ইটের ওপর বসে পা দোলাতে দোলাতে রসনা তৃপ্তির রসে ডুবে যাওয়া । চৈত্রের দুপুরে ঢাক বাজিয়ে চরক পূজার মাগন নিতে আসা, মা উঠোনে জল ঢেলে দিলে লাল কাপড়ে প্যাচানো সিঁদুর লেপা একটা কাঠ উঠোনে রেখে তাকে ঘিরে শিব পার্বতীর নাচ, আর আমাদেরই খুব ছোট বেলায় গভীর রাতে সবার ঘুম ভাঙিয়ে একদল লোক শিব পার্বতী ও নানারকম সং সেজে বাড়িতে ঢুকত। তারা নেচে নেচে নানারকম মজার গান করত দুটো গানের একটা করে লাইন মনে আছে--- "বৈরাগীর টিক্কি ফাঁটা মাথায় জিগার আঠা ! ", "জয় রে জগ্গন কাশীমের নন্দন গরু ভাইঙ্গা বেড়া নিল চুরে! " এই রকম একেক বছর একেকটা গান। কি মজা যে লাগত! প্রতিবছর চৈত্র মাসে এই রাতের অপেক্ষা থাকত। তার পর আরও বড় হওয়ার সাথে সাথে রাতের এই মজাটা বন্ধ হয়ে গেল। চৈত্র সংক্রান্তির সকালে নদীতে স্নান করে সেখানকার মেলায় দৈ চিড়া খাওয়া, সন্ধ্যায় পাড়ার মাঠে চড়ক ঘোরানো দেখতে গিয়ে বুকে পিঠে মুখে বড়শি ফোঁটানো লোক গুলোকে দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে দেওয়া। তার পর পাপড় ভাজা খেতে খেতে পরদিন নববর্ষের নতুন জামা আর হালখাতার সুখ স্বপ্নে ভাসতে ভাসতে বাড়ি ফেরা। আগেকার দিনে কত ছোট ছোট জিনিস থেকেই আনন্দ আর সুখ খুঁজে পাওয়া যেত! বর্ষশেষের দিন থেকেই নববর্ষের আনন্দোৎসব শুরু হয়ে যেত।
জলেশ্বরের স্মৃতি
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলেজ জীবনে চৈত্র সংক্রান্তিতে জলেশ্বরের মেলার অপেক্ষায় থাকতাম, সারা বছর ধরে। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি চৈত্র মাস এর পয়লা তারিখ থেকে তুলসীমঞ্চের তুলসীগাছের উপর , বাঁশের ভারা বেঁধে, মাটির ভাঁড় বা কলসি টাঙিয়ে, তাতে ছিদ্র করে এমন ভাবে জল রাখা হত যে, চৈত্রের কাঠফাটা রোদে, সারাদিন ধরে তুলসীগাছের মাথায় চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়ত। দিনের মধ্যে ১৫/২০ জন সন্ন্যাসী, ও সন্ন্যাসীনি বাড়ির উঠোনে আসতেন। গেরুয়া বসন ছিল তাঁদের। তাঁদের কেউ, " তারকেশ্বরের শিবো মহাদেব " কেউ কেউ, বাবা জলেশ্বরের শিবো মহাদেব " বলে ভিক্ষা প্রার্থনা করতেন। তাঁরা কেউ ই অর্থনৈতিক দিক থেকে কমজোর তা নয়। তাঁরা বাবা বুড়ো শিবের কাছে মানত করতেন যে ভিক্ষা করে (বাড়ি বাড়ি চাল, ডাল অর্থ সংগ্রহ করে) সেই অর্থে তারকেশ্বর বা জলেশ্বরে চৈত্র সংক্রান্তিতে শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালতে যাবেন।
উত্তর চব্বিশ পরগণা র গাইঘাটা ব্লকে প্রায় চার একর জমির উঁচু ঢিপি র উপর, বট, অশ্বত্থের গাছের সংলগ্ন সুবিশাল দুধপুকুরের ধারে বাবা জলেশ্বরের মন্দির। শুরুতে সেখানে পর্বত প্রমাণ উঁচু ঢিপি ছিল না। দুধপুকুর ও ছিল না। কথিত আছে একবার চৈত্র সংক্রান্তিতে সন্ন্যাসীরা যখন তারাপাঠ ভাঙছেন তখন সেই খানে একজন অশ্বারূঢ় ইংরেজ সাহেব এসে, সব শুনে অবিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, " তোমরা অস্ত্রের উপর ঝাঁপ দিতেছ সেগুলি ভোঁতা। তোমরা যদি আমার তরবারির উপরে ঝাঁপ দিতে পার, তাহা হইলে আমি তোমাদের শিব ঠাকুর আছেন বলিয়া বিশ্বাস করিব।"
বাবা বুড়ো শিবের উপর সব সন্ন্যাসীদের বিশ্বাস থাকলেও, কারো কারো কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। অবশেষে মূল সন্ন্যাসী লক্ষ্য করলেন, একটি বড় ডাঁস মাছি ইংরেজ সিপাহির তরবারির উপর অনেক সময় ধরে বসে আছে। বাবা বুড়ো শিবের নাম করে, মূল সন্ন্যাসী সেই তরবারির উপর ঝাঁপ দিলে, তরবারিটি ভেঙে গেল, কিন্তু মূল সন্ন্যাসীর কোন রক্তপাত বা কিছুই হলনা। তখন ইংরেজ সিপাহি ঘোড়া ছুটিয়ে পালাতে গেলে, কয়েক হাজার মানুষ এক মুঠো করে মাটি ছুঁড়ে মেরে দুধপুকুরের ও পর্বত প্রমাণ উঁচু ঢিপির সৃষ্টি করেন।
বাবা জলেশ্বর সারা বছর দুধপুকুরেই থাকেন। সন্ন্যাসীরা নীলপুজোর দিন তাঁকে খুঁজে নিয়ে এসে, তাঁকে রাজবেশ পরিয়ে, সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করান। বছরের এই শেষ দিনটি উপলক্ষে সাত দিন ধরে মেলা বসে। মেলায় খাবার, দাবার, খেলনা ছাড়াও সংসারের নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা বসে। সার্কাসের মাইকের গান, নাগরদোলার শব্দ, বাঁশের বাঁশী উথাল-পাতাল বাতাসে বট অশ্বত্থের পাতা উড়ে এসে পড়ে। গবাদি পশু আনন্দে লেজ তুলে খেলা করে। ছোট বড় বহু প্রজাতির পাখি ও আনন্দে গান গায়। দর্শনার্থীরা মন্দিরের সংলগ্ন গাছের গায়ে, লাল কার দিয়ে, মানষিক করে ইঁট বেঁধে যান। মনস্কামনা পূর্ণ হলে, মন্দিরে পুজো দিয়ে, বট অশ্বত্থ এর ডাল থেকে ইঁট খুলে ফেলেন। অনেকে দুধপুকুরে স্নান করে ভিজে শরীরে দন্ডি কেটে উঁচু নিচু, কাঁকর বিছানো পথে, মন্দিরে আসেন। পুজো দেন, ধামা ধামা লাল বাতাসার হরির লুঠ হয়।
শৈশব থেকে কলেজ জীবন অবধি নিয়ম করে সপরিবারে আমরা জলেশ্বরের মন্দিরে যেতাম। পুজো দিতাম এখন কর্মসূত্রে বিদেশ বিভুইয়ে থাকার ফলে আর জলেশ্বরের মেলায় যাওয়া না হলেও, মন টা সব সময় জলেশ্বরেই পড়ে থাকে।
বর্ষশেষের কবিতা প্রথম পর্যায়
এই চৈত্র দিন
শ্রাবণী সেন
চৈত্র মাস, ভরা চৈত্র এই ...
এখন কি বসন্ত আছে!
কচি কচি পাতাভরা
ফুলভারে আনত যৌবনবতী গাছ
স্পষ্টতর সাক্ষ্য তার কত, তবু সে আছে তো!
বসন্ত আছে তো!
মাটির আকন্ঠ পিপাসা,
এই ভরা চৈত্রে, সে ও তো কঠিন সত্য!
চৈত্র যায়, বর্ষ যায়!
নতজানু বিস্মৃত প্রেমিক,
শেষ কৈশোরের প্রেমিকার কাছে
অসমাপ্ত চুম্বন প্রার্থনায়!
জীবনের চৈত্র বেলায়!
নাকি কোনদিন ছিল না প্রেমিকা সে
প্রেমিকের চৈতালি পিপাসা শুধু!
শুষ্ক নদী বড় অসহায়!
বর্ষ শেষ... বর্ষ যায়.... নতুনের অপেক্ষায়!
ফার্স্ট ফ্ল্যাশ ,সেকেন্ড ফ্ল্যাশ
সম্পা পাল
সাড়া আছে
শব্দ আছে
শোক আছে
তারপরও বিজ্ঞাপন আসে গ্ৰীষ্মের উঠোনে
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো , একগুচ্ছ স্বপ্ন ওড়ে
টিভির পর্দায় একে একে টেলিকাস্ট হয় নতুন নতুন ধারাভাষ্য
আশ্চর্য মেয়েটি কাল রাতে মারা গেছে
শনাক্তকরণ এখনও হয়নি
উত্তরবঙ্গ জানেনা চা বাগানের হারিয়ে যাওয়া
সেই মেয়েগুলো আর কেন ফেরেনা...
শুধু ফার্স্ট ফ্ল্যাশ,সেকেন্ড ফ্ল্যাশ এখনও ফেরে...
যায় বচ্ছর
মাথুর দাস
আয় বচ্ছর যায় বচ্ছর গয় গচ্ছ দিন
যা-ই দিচ্ছ তা-ই নিচ্ছ নয় স্বচ্ছ সীন্
চোখ ন্যাবা চ্যাকাভ্যাবা পায় কেবা থই
লাগে যুদ্ধ বোকা বুদ্ধ হয়ে শুদ্ধ রই
যত গিলছি তত মিলছি ক্ষত ঠিলছি বেশ
পারি সইতে বোঝা বইতে হই চইতে শেষ
শেষ বর্ষ কই হর্ষ হই মর্ষ না-ছোড়
গাল গল্প নয় অল্প খাড়া বড়ি বা থোড়
বর্ষশেষের ক্যানভাসে...
প্রতিভা পাল
বৃষ্টিভেজা চৈতী হাওয়ায় বর্ষার সাজ আজ;
জলভরা মেঘ ঘন আরও রাত-ছোঁয়া ছাই রঙে!
বছর ভর হিসেব কষে সস্তা যত কান্নার দ্রবণ,
অধঃক্ষেপে গল্প লেখে স্মৃতির খেয়ালি-খাম
অনন্ত আশার আবছা আগামীর ক্যানভাসে!
নিঝুম দুপুর, আলতো রোদের খুনসুটি;
শূন্য জুড়ে শূন্যতা আঁকে ক্লান্ত কলমের নিব,
দিগন্তে হঠাৎ কালবৈশাখীর প্রবল ঝড়ে
খড়কুটো হয় চালচুলোহীন কত শৈশব
জীবনের পাড়ে….
লাল মাটির পাপ থেকে
সৈকত দাম
তোমার চোখে মুখে ভালোবাসার ছাপ ,
আমার বুকের শুষ্ক মরূতে লাল মাটির পাপ .....
তোমার শরীরের রোমকূপে আদরের মাদকতা ,
আমার দেওয়ালে জলন্ত রোমান্টিসিজম ,
পুড়তে থাকা কবিতা .....
এভাবেই তুলনামূলক জীবন চলে আজীবন ....
কারো কিছু যায় আসে না ,
তুমি পাহাড়ের বুকে মাথা রাখো যখন ....
ঠান্ডা ঘর তোমায় ভালোই রেখেছে জানি ,
তুমি ভালো আছো সে আমিও মানি .....
Dressing Table এ সমুদ্র আছড়ে পড়ে ,
আলো নিভে যায় হঠাৎ .....
হঠাৎ কেঁপে ওঠে Laptop screen ,
সুখ বাড়াচ্ছে হাত .....
ভালোবাসা অগ্নিমুল্য ,
তবু জ্বরের আভাস পাই ....
পরিবাহি তারের ভেতর সোহাগ খেলে যায়
এমনি হঠাৎ .....
এমনি হঠাৎ বন্ধ ঘরে পুড়ে ছাই .....
না না আমি চাইছি না কিছু ,
আমার কবিতারা চাইছে ....
ওরা নিস্তার চায় উত্তাপ থেকে ,
লাল মাটির পাপ থেকে .....
স্বপ্ন দেখি রীনা মজুমদার
বছর যায়, নতুন রূপে বছর আসে
বহুদিন দেখা হয় না বর্ষ হয় শুভ
চৈত্রের শেষ রাতে স্বপ্ন দেখি,
নেই কোন নাশকতা নেই ধর্মের
ভেদাভেদ নেই হিংসার বলি..
মনুষ্যত্বের বিকাশ, সচেতন মজবুত
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার হাতে হাত!
আমাদের দেবভূমিকে সব ভুলে
আমরাই কলুষিত করি,
বুকের ভেতর হয় রক্তক্ষরণ...
মা, জাগিয়ে দিও না আমায়
ভোরের আলোয় এক বুলি
শুভ নববর্ষ শুভ নববর্ষ!
পারি না কেন মা?
প্রতিটি ভোর প্রতিটি দিনকে
আপন করে মানবিক হতে!!
তবুও তো মা শুভ দীপ জ্বেলে
শঙ্খ ধ্বনিতে বর্ষকে বরণ করে
বলে, শুভ নববর্ষ...
পিছুটান
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী
চৈত্র দিনের দহনবেলায়
বার্তা এল যাত্রা শেষের
আনমনা মন উতল হলো
বইল সমীর বিধুর রেশের।
চৌচির মাঠ, তপ্ত চাতাল
টান ধরানো দিনের মেজাজ
এমনি দিনেই উন্মীলিত
মন-মধুপের বন্ধ দেরাজ।
মন কেমনের হলুদ বিষাদ
বন্দী যত স্মৃতির জালে
আশ্লেষে আর অনুরাগে
মধুমাসেই কথা বলে।
ফুলেল বেলার শেষ প্রহরে
গুলমোহর আর রুদ্রপলাশ
আসছে দিনের শপথ নিল,
'আবির হয়ে মনকে মাতাস।'
ধীর চলা ওই দখিন বাতাস
সজনে ফুলের সুবাস নিয়ে
ঝরা পাতার কানে কানে
বসন্তরাগ শোনায় গিয়ে।
জোনাকিরা স্বপ্ন নিয়ে
তারা হয়ে উঠলো জ্বলে
চৈতি রাতের দীপ্ত আকাশ
নতুন দিনের গল্প বলে।
যাবার বেলায় বর্ষ তুমি
জীর্ণতাকে সাঙ্গ করে
মন- মুকুলে প্রস্ফুটিত
বসন্ত- ফুল দাও গো ভরে।
রেশ থেকে যাক সুবাতাসের
বর্ষ জুড়ে সকল কাজে
মিলন বীণার মূর্ছনাতে
আনন্দ- গান উঠুক বেজে।
বর্ষশেষের গল্প
ফিরে দেখাকাকলি বিশ্বাস সরকার
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করছিল মোনালিসা...
সকালের সূর্যটা এইমাত্র রঙীন কিরণ ছড়িয়েছে। পাখিরা কাক ভোরেই বাসা ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েছে খাবারের সন্ধানে, পরিবেশ ব্যস্ততায় পরিপূর্ণ। মনে হয় সূর্যটা ওঠার সাথে সাথেই অস্তাচলে যায়। সারাটা দিন কিভাবে কেটে যায় তারই হিসাবের অঙ্কটা কষছিল মোনালিসা এই সাধ সকালে। ও ঘর থেকে আওয়াজ এল, 'আজ বুঝি সকালের চা বুঝি জুটবে না!` তারপরেই, 'মা খিদে পেয়েছে।`
মোনালিসা নড়ে বসল, কত বেলা হল হিসেবটা পরে কষতে হবে। সংসারে সমস্ত কাজকর্ম মেটাতে দুপুর গড়িয়েছে এবারে ঠান্ডা মাথায় জীবনের সঙ্গে সারাটা দিন মেলাতে গিয়ে দেখল প্রতিদিনের ব্যালেন্সটা যদি মিলিয়ে রাখা যেত, তাহলে চলার পথটা কত না মসৃণ হত। সামনেই ১লা বৈশাখ ব্যাবসায়ীরা ,নিজ প্রতিষ্ঠানের হিসেবটা মিলিয়ে রাখে, কথাটা ভাবতেই, এরই মধ্যে আকাশ টা গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ছাদ থেকে কাপড় গুলো তুলতে হবে, অঙ্কটা পরে কষবো।
সন্ধ্যা নেমে আসতেই সাঁঝের প্রদীপ জ্বেলে সন্ধ্যা-আরতি করে সন্ধ্যার জলযোগ সেরে বাচ্চাদের পড়ানো সম্পূর্ণ করতেই রাত অনেক হয়েছে। রাতের খাবার খেয়ে, গৃহকর্ম সেরে উঠতেই ক্লান্ত শরীরে নিন্দ্রার আগমন, চোখ তন্দ্রাছন্ন হয়ে ঘুমের জগতে ।
মোনালিসার জীবনের ব্যালেন্সটা অগোছালো অবস্থায় পড়ে থাকে। জীবনযাপনের টানে ফিরে দেখা সম্ভব হয় না। একই চিত্র বাস্তব চরিত্রে।
বর্ষশেষের প্রবন্ধ
বর্ষশেষে এক রক্তাক্ত ইতিহাসের মুখোমুখি রাশিয়া ও ইউক্রেনে
বটু কৃষ্ণ হালদার
অতি মারী করোনার করাল গ্রাসে একপ্রকার বিধ্বস্ত পৃথিবীর হৃদপিন্ড।সেই আগুনের ক্ষত এখন দগদগে।এখনও পৃথিবীর মানুষ আতঙ্কের প্রহর গুনছে।না জানি কখন হায়নার মত হানা দেবে করোনা।তবে যত সামান্য স্বস্থির হওয়ায় পাল লাগিয়ে বিধ্বস্ত জনজীবন এক গহীন আঁধার কাটিয়ে আলোর বিন্দু খুঁজে পেয়েছে,ঠিক সেই মুহূর্তে এই ঠান্ডা লড়াই এর যুগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিলো রাশিয়া।তবে রাশিয়া প্রসঙ্গে যাবার আগে এখানে আফগানিস্তানের কথা,না বললেই নয়।মাত্র কয়েক মাস আগেই করোনা আবহে, বিশ্বের ত্রাস সৃষ্টিকারী, রক্তপিপাসু তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী আফগানিস্তান দখল করেছে। আফগানিস্তান দখলের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের দ্বারা সাধারণ নিরীহ জনগণ হত্যার খেলা।একের পর এক প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প সহ ধর্মস্থান ও বিমানবন্দর ধ্বংস করা হয়েছিল। এই অতি মারি করোনার ফলে, কোথাও গণ চিতা গণকবর দেওয়া হয়েছে।ঠিক এই মুহূর্তে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার অতর্কিত হামলা সমগ্র বিশ্বের উপর এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া বিশ্বের এক অতি শক্তিশালী উন্নত ও ত্রাস সৃষ্টিকারী দেশ,একথা আমাদের সকলের জানা। এই দেশের কাছে ইউক্রেন নস্যি র মত।রাশিয়ার হামলার জেরে এক সুন্দর ফুলের মত দেশ বিধ্বস্ত নগ্ন রূপ ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই উভয় পক্ষের বহু সৈন্যবাহিনী সহ সাধারন জনগন নিহত হয়েছে। রক্তাক্ত হয়ে উঠছে ইউক্রেনের মাটি।সেই সঙ্গে সঙ্গে এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে সমগ্র বিশ্বে।কিন্তু প্রশ্ন হল রাশিয়া হঠাৎ করে ইউক্রেনকে কেন এমন ভাবে হামলা করল,তা একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার।১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকি তে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর থেকেই সমগ্র বিশ্বে শুরু হয়ে যায় আগ্রাসন নীতি। কে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী দেশ তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা,চর্চা।ফলে দুটি প্রধান শক্তি ভাগ হয়ে যায় একদিকে রাশিয়া অন্যদিকে আমেরিকা। সূত্রপাত তা শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। এর পরেই আমেরিকা বিভিন্ন কূটনৈতিক চাল দিয়ে রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করতে শুরু করে।১৯৯১ সালে প্রায় ১৫ টি নতুন দেশ সৃষ্টি হয়।সেই দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ নিরাপত্তার জন্য ন্যাটো গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়।১৯৪৯ সালে এই গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইউরোপের পুঁজিবাদী ও গণতান্ত্রিক দেশ নিয়ে।যার প্রধান কাজ ছিল সোভিয়েত আগ্রাসনকে রোধ করা।এর প্রধান হলো আমেরিকা।রাশিয়া তাতে বুঝতে পারে যে ,বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দৌড়ে তাঁকে পিছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা চলছে।তাতে ও রাশিয়ার মাথা ব্যাথা ছিল না। সেই মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল ইউক্রেন।রাশিয়ার দীর্ঘদিন যাবত ন্যাটোএবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ইউক্রেনের পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে আসছে। গত জানুয়ারি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর কাছে আবেদন জানান ইউক্রেনকে যেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তাতে রাশিয়ার আত্মমর্যাদা ঘা লাগে। রুশ নাগরিকদের কথায়,এমনটা তো হওয়ারই ছিল, ন্যাটো ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলবে এটা রাশিয়া কেন কোন দেশ মেনে নেবে না।ইউক্রেন যদি নেটে ঢুকে তাহলে ওরা রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ওয়ারহেডস বসিয়ে দেবে।
প্রধানত এই বিষয়টি রাশিয়াকে আরো বিক্ষুব্ধধ করে তোলে। যার ফলে রাশিয়া আচমকা প্রশিক্ষণ মহড়া র নামে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সৈন্য পাঠানোর শুরু করে এবং পরবর্তী সময়ে তা আরো বাড়ানো হয়। এরপর ডিসেম্বর নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীর উপর প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। তৎকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া দাবী করে যে পশ্চিমের তরফে আইনত এই গ্যারান্টি দেওয়া হোক যে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে কোন সামরিক ক্রিয়া-কলাপ করবে না। পাশাপাশি পুতিন দাবি করেন ইউক্রেন হলো পশ্চিমের পুতুল এবং কখনোই তার সঠিক রাষ্ট্র ছিল না। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা এটা প্রথমবার নয়। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেলেনস্কি রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু আগাগোড়া ইউক্রেনের নব্বই শতাংশ মানুষ হলেন রাশিয়াপন্থী। ওই বছরেই রাষ্ট্রপতি পুতিনের সমর্থিত বিদ্রোহীরা পূর্ব ইউক্রেনের বিশাল অংশ দখল করে নেয়।সেই সময় থেকেই রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।ক্রিমিয়া ও দখল করে নেয়।এভাবেই ঠান্ডা লড়াই চলতে চলতেই, বিশ্বযুদ্ধের আকার ধারণ করে। রাশিয়া ধীরে ধীরে পারমাণবিক বোমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে একসময় ইউক্রেনের কাছে পারমানবক বোমা ছিল
। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তৎপরতায় সেই বোমা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। আর তাতে আমেরিকা ও রাশিয়া সম্পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিল ইউক্রেনের কোন সমস্যা হলেই তারা সাহায্য করবে। অথচ বর্তমান সময়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া একটি দেশ ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে অন্য একটি দেশ তার হাত-পা গুটিয়ে নিয়েছে।
তবে এই ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যেও ভারতবর্ষের পতাকা ইতিমধ্যেই বহু প্রাণ বাঁচিয়েছে।
হয় দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, নইলে স্বাধীনতা যুদ্ধ কিভাবে হয়েছিল তা হৃদয় দিয়ে অনুভব চেষ্টা করুন তাহলে বুঝতে পারবেন একটি স্বাধীন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার মানচিত্রে পতাকা তুলতে গিয়ে কত রক্ত ঝরেছিল? তবে স্বাধীনতার ইতিহাস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলেই সবার আগে যে প্রশ্ন আসে তা হল, কিভাবে ব্রিটিশরা সাধারণভাবে ব্যবসা করতে এসে প্রায় ২০০ বছর ভারত কে শাসন ও শোষণ করে গেল ? এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা কি বলতে পারি না যে আমাদের দেশের একশ্রেণীর স্বার্থবাদী ও সুবিধাভোগীদের লোভ লালসার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দেশের বহু জনগন গুলি খেয়েছিলো ফাঁসিকাঠে ঝুলে ছিল নয়তো দেশত্যাগী হয়েছিল। শুধু তাই নয় বিপ্লবীদের অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছিল। বাদ যায়নি স্বাধীনতাপ্রেমী নারীরা।এমনকি নারীদের গোপন অঙ্গ অঙ্গে বাটি করে লঙ্কার গুঁড়ো প্রবেশ করানো হয়েছিল।"ঝান্ডা উঁচা রহে হামারা"এই স্বপ্নটুকু পূরণ করতেই দেশের বীর সন্তানরা নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছিল। মনে পড়ে মাতঙ্গিনী হাজরার কথা। যাকে ইতিহাসে গান্ধী বুড়ি নামে আমরা জানি। ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,কিন্তু তাঁর হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল দেশের পতাকা।অবশেষে রক্তের পিচ্ছিল পথে স্বাধীনতা আসার পর সবার প্রথমে দিল্লির লাল কেল্লার দেশের পতাকা তোলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন ভারতে দেশের পতাকা যখন পুড়ছিল তখন বহু দেশপ্রেমিকরা ভারত ছাড়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ইতিহাসের পাতায় স্থান দেওয়া হয়নি প্রকৃত দেশ প্রেমিক দের। বহু স্বাধীনতা প্রেমীদের কপালে জোটেনি ভাতা।অনাহারে লোকচক্ষুর আড়ালে, ভিক্ষা করতে করতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল।আর যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের নামে নাটক করেছিল,তাদের কপালে জুটেছিল রাজপ্রাসাদ।আর মুখে রাজভোগ। এ কথা আমরা সবাই জানি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে উত্তাল বিশ্ব রাজনীতি। একের পর এক রক্তগঙ্গা বয়ে চলেছে ইউক্রেনে। বলতে গেলে এই মুহূর্তে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ভারত তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো থেকে বহু ছাত্র-ছাত্রী ইউক্রেনে রয়েছে পড়াশোনা বা কর্মসূত্রে। সেই সমস্যাটা দিনে দিনে আরও গুরুতর হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এবং ইউক্রেন থেকে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাইছে এবং নিজের দেশে ফিরে যেতে।কারণ মৃত্যু শিয়রে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে এমন অবস্থা। ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষের দুজন ছাত্র মারা গেছেন। বিশ্বের অন্যান্য তাবড় তাবড় দেশগুলো তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের করুণ দৃশ্য দেখার পরেও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভারত বর্ষ চুপ করে বসে থাকেনি। বহুৎ ছাত্র-ছাত্রী ইতিমধ্যে ভারতবর্ষের ফিরে এসেছেন শুধুমাত্র ভারতবর্ষের তিরঙ্গা কে সঙ্গী করে। বিনা বাধায় তারা সুস্থভাবে ফিরে এসেছে ভারতস্বা।স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এসে ভারতবর্ষের তিরঙ্গা পতাকা প্রাণ ফিরিয়ে দিলো বহু ছাত্র-ছাত্রীদের। তবে বাকি ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরে আসা নিয়ে ইউ কেনো ভারতের পুরনো সমস্যাটা পুনরায় নাড়া চাড়া দিয়ে বসেছে। তবে ভারত বর্ষ নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার। ভারতবর্ষের পতাকার শুধুমাত্র ভারতীয়দের নিরাপত্তা মূল কারণ হয়ে ওঠেনি। এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পাকিস্তান এবং পোল্যান্ডের ছাত্র ছাত্রীরা ভারতবর্ষের পতাকা কে সঙ্গী করে নিজেদের দেশে ফিরে এসেছেন।ভারতবর্ষের তিরঙ্গা র কতটা ক্ষমতা রয়েছে তা এই মুহূর্তে তার সাক্ষী হয়ে রইল ভারত বর্ষ তথা বিশ্বের সমগ্র জনগণ। এর আগে এমন দুঃসাহস কখনো দেখা যায়নি, তবে পরিস্থিতি বদল হয়েছে। আর তাতে ভারত বিশ্বের দরবারে অন্যতম ক্ষমতাশীল দেশ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে,সে বিষয়টা নিশ্চিত হবে বোঝা যাচ্ছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়াতে গিয়েছিলেন এবং ফিরেও এসেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো পাকিস্তান সহ আরো কয়েকটি দেশ এই ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে কসুর করেন না। বারবার ভারতের থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়েও এই সমস্ত দেশ গুলো ভারত বিদ্বেষী মত পোষণ করে বিশ্বের দরবারে।শুধু তাই নয় ভারতবর্ষের পতাকা পুড়িয়ে ফেলার মত জঘন্যতম কাজ করে থাকেন। তবে এই ভারতবর্ষের বুকে থেকে ভারতবর্ষের পতাকা পুড়িয়ে ফেলার মতো জঘন্য কাজ করলে ও অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়।
এই ভারত বর্ষ আমার, প্রত্যেক জনগণের এই বিশ্বাসটা হওয়া উচিত নিজের মধ্যে।আজও শহীদ দের মৃত্যুতে দেশের পতাকা দিয়ে ঢাকা থাকে। সেই পতাকাকে মর্যাদা দিতে শিখুন।কারণ আমাদের দেশের পতাকা যতই উঁচুতে উঠবে ততই ভারতবর্ষের জনগণ হিসেবে আমরাও গর্বিত হব। সমগ্র বিশ্বের জনগণ যেখানে ভারতবর্ষের পতাকা কে সম্মান দেন, সেখানে সেই পতাকা আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হওয়া উচিত বলে মনে করি। তবে একটা বিষয় আমাদের বিশেষভাবে অনুধাবন করতে হবে যে শুরু থেকে ভারত বর্ষ ক্ষমতাশীল দেশ ছিল, সেই গরিমা ধ্বংস করেছে আমাদের দেশের কিছু স্বার্থবাদী দেশ নেতারা।
তবে,এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার আমজনতার মধ্যে যে দারুণ উন্মাদনা শুরু হয়েছে, তেমনটাও বলা যাবে না।কারণ,রাশিয়ার ডিএনএ-তে যেটা ঢুকে গিয়েছে, সেটা হল সরকারের কাজে সমালোচনা না করা।এরা খুব স্পষ্ট বাদী।ইতিহাস প্রমাণ দেয় তাদের পূর্ব পুরুষরা আগে অনেক যুদ্ধ করেছে।আরো একটা হলো বা তাতে ক্ষতি কি?জনগণের ভাবনাটা হচ্ছে,সরকারের সামনে এটাই ছিল পথ। কাজেই যা হচ্ছে ভাল হচ্ছে। তবে এ সময় যুদ্ধ টা অতন্ত্য সঙ্গা হীন,কারণ এই যুদ্ধ শুধু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলবে না সেইসঙ্গে সামাজিক ও ব্যাপকভাবে ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের মনে। বিগত দুই বছর যাবত লকডাউনে সমগ্র বিশ্বে কিছু একটা অঘটন ঘটছে সেটা তারা বুঝতে পেরেছিল। পরিস্থিতির কিছুটা বদল হলে ও তা ইউক্রেন রাশিয়ার ক্ষমতালোভী রক্তাক্ত যুদ্ধে র বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিশুদের জীবনে। আমরা ছোট ছোট শিশুদের শৈশব শিক্ষা দিয়ে থাকি এই সুন্দর পৃথিবী প্রতিটা জীবের জন্য উন্মুক্ত। স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সিরিয়া, মিশর,ইরাক,ইরান,ভারত,পাকিস্তান বাংলাদেশ, আফগানিস্তান,রাশিয়া-ইউক্রেন এ যে সমস্ত রক্ত ক্ষয় ঘটনাগুলো ঘটছে,তাতে কি শিশুরা প্রশ্ন তুলবে না, জঞ্জাল সরিয়ে যে পৃথিবীতে শিশুদের বাসযোগ্য করে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে সেই পৃথিবী কিভাবে শিশুদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে?
বর্ষশেষের কবিতা দ্বিতীয় পর্যায়
প্রত্যয়
বিজয় বর্মন
সেদিনও ভাবিনি,
আজও ভাবি না,মন বলে,সই যাবো যাবো,
দখিনা হাওয়ায়।
বেঁচে থাকবো আমৃত্যু,
এ জীবন জানে ভালোবাসা,
আগুন দিও, সঙ্গে আমার ফাগুন হাওয়া।
আগুন রঙ ম্লান হবে,
কৃষ্ণচূড়া দেখেছো, সাজানো ডালে ডালে,
বসন্ত জানে রঙ মিলান্তি মেলা।
প্রেমান্ধ কোকিলের কুহু,বাসনা অন্তহীন,
চঞ্চলতা দ্বিগুন হোক না,প্রত্যয় টুকু থাকুক,
বর্ষ শেষে ভালো থাকার গান।
জরুরী কথাটা
অলকানন্দা দে
যেমন বিদায়ী মানুষ যায়
চলে যায় চৈত্র অতীতের পথে।
দ্বিধাহীন প্রস্থান, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সময়ের কাছে।
দক্ষিণের ঘরের বাতাসে ডুব দিলে
পাঁজরের ফাঁকে বৈশাখী খুটখাট!
যে গেল তাকে বাঁধে কবি কবিতার বুকে!
বর্ষশেষের শুধু পাতাঝরাই প্রাপ্য!
পাশে তার শুধুই সদ্য-নির্জনতা!
স্মৃতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলে টের পাই
বারোমাসে কত পোড়ে কাঠখড়।
দুঃখ যায় খবরের কাগজে ছবি তুলতে,
বারুদের গন্ধে দম বন্ধ হয় মিনিটের,
সুখের কপালে কালো নজর টিকা।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে আত্মা।
বর্ষশেষে মন জুড়ে বাতিল হচ্ছে দিনের দল।
আহত নিজেকে পুনরুজ্জীবনের দিকে
ঠেলে দেব। বেঁধে নেব ছড়ানো অক্ষরদের!
হে বৈশাখ! তবু এরই মধ্যে তিয়াস জাগে!
একটিই তো শর্ত রেখেছি তোমার আগে
পয়া রোদ্দুরে আপ্লুত পাটাতন!
যা আসলে জন্ম দেবে চিরজীবী কবিতাদের!
ঝড়কে শাসন করে দিতে পারো
বর্ষশেষে ঠোঁটের কোণে হাসি?
হাহাকার যে ছাড়িয়ে গেছে পূর্বের সকল মাত্রা!
যাবে নাকি ?
বনশ্রী মুখোপাধ্যায় স্রোতের পরে স্রোত চলেছে,
ঢেউয়ের পরে ঢেউ ।
বিজন ঘরে একলা আমি ,
ডাকছে না তো কেউ।
গুর গুর গুর গর্জে ওঠে
জলধি পাগল পারা ।
ঝরা পাতায় জ্বালিয়ে আগুন
ফুঁ দেয় মা - হারা ।
দোকান সহ ডুবল যে ,
ওই স্রোতেরই বুকে ,
আমার আমি কবে থেকে
ফিরছে খুঁজে তাকে।
বালি ভরা সাদা ফেনা
দুটো খালি পা ,
দোকানে রাখার ঝিনুক খোঁজে
পেটটা আছে না !
ঝুর ঝুর ঝুর - ঝরছে পাতা
আমার ঘরের পাশে ।
উঠবে বুঝি ওই ঝড়টা ;
ভাদ্র বা যে কোন মাসে।
চৈত্র বেলায়স্বপন কুমার চট্টোপাধ্যায়
সকল পাতা ঝরিয়ে দিয়ে
চৈত্র শেষের গাছ
করুন চোখে তাকিয়ে দেখে
উলঙ্গ রাজার নাচ।
নাচ নয় সে প্রলয় নৃত্য
ধ্বংস লীলার শুরু
অশ্রুসজল মেঘের মাঝে
বিজলী হানায় বুক দুরুদুরু।
তারই মধ্যে আশার আলো
নতুন রবির আহবান
ভোরের কোকিল উঠলো জেগে
গাইতে নতুন দিনের গান
আবার নতুন আশা
সারণ ভাদুড়ী
আবার সেই এগারোটা মাস কেটে গেল তোমার অপেক্ষায়, তুমি কিন্তু আসোনি ..
গ্রীষ্ম- বর্ষা - শীত দেখতে দেখতে বসন্তও ইতি টেনে দিল,
আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আসবে
সে বিশ্বাস কি ভেঙে গেল ??
উত্তর নেই আমার কাছে ,আমার পাতা ফাঁকা ,
এতো কান্না , এতো যন্ত্রনা নিয়ে হারবো না আমি।
এইতো নতুন বছরের সূর্যোদয়,
আমার মনে হচ্ছে তুমি আসবে।
কাটালাম তো এত বছর ,যদি এবার তুমি আসো... নতুন বছরের সূর্যোদয় থেকে,
আবার শুরু হবে আমার সেই অপেক্ষার ঘড়ি।।
ভাসা মেঘমজনু মিয়া
কখনো সখনো হঠাৎই নীল আকাশ মেঘে ঢেকে যায়
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরে মায়াবী কান্নার মতো।
দমকা হাওয়া এসে তাড়িয়ে নিয়ে যায়, অন্য কোথাও
তখন কিছুটা ভার বোজা কমে হৃদয়ের।
তুমি আমার জীবনে তেমনি ভাসা মেঘ হয়ে এসেছিলে
কোনো এক দমকা হাওয়ায় দূরে গেছো।
হয়তো বা আবার কোনো দেশ থেকে আসবে
কোনো ভাসা মেঘ সুখ হয়ে জীবনে।
আমি চৈত্রের খড়তায় পুড়ে গেলেও
তুমি মেঘ হয়ে ভিজিয়ে দেবে আমাকে।
"নারী","দেবী" ও "মা"
শৌভিক কার্য্যী
হে নারী,
তুমি দেবী নও মায়ের জাত,
রক্ত মাংসে গড়া দেহ মন।
পাষাণ সমাজ শিখায় ঠেলে,
চরিত্র আঁকে ছাঁচে ঢেলে।
ওরা বুঝবে কি আর দুঃখ তোমার,
ফুলে ঢেকে যায় আসন।
ওরা শিল্পী বটে, গল্প রটে, গন্ডি কাঁটে,
সমাজটাকে রাখে নিজের হাতে।
আজও পণের দায়ে, বেতের ঘায়ে,
কতো নারীর প্রাণ সংশয়ে।
একি!
তোমার চোখেও জল কেনো মা?
আড়াল করে আর কেঁদো না।
চলার পথে আর একলা যে নও,
শত নারীর শক্তি জোগাও।।
দুই টি ফুল
সংগীতা মিশ্র
মান অভিমান ভুলে
পার্থিব জগতের
কোলাহলের কল্লোলে
দুটি ফুল রয়েছে ফুটে
সময় নামক
একটি স্তবকে
দিবস ও রজনী নামে
আলো আঁধারে
আচ্ছাদিত হয়ে
অসীম সৌন্দর্যের
ছন্দের ছান্দিক লয়ে
বর্ষশেষের রম্য রচনা
বর্ষশেষে
স্বপন কুমার দত্ত
সারাবছরে সুখদুঃখের নানাস্মতি বুকে নিয়ে চৈত্রের দামাল বাতাসে ঝরে পড়ে গাছের যত শুকনো পাতা। এর সাথে বয়ে চলা উদাসী ঝোড়ো হাওয়ায় বুকটা করে ওঠে হুহু। তখন বারংবার মনে হয়, ভরা শীতে উঁহু উঁহু করাও ছিল,এর চেয়ে ঢের বেশী ভালো। মাঝে ধুলোর ঘূর্ণিঝড়ে ধাঁধিয়ে যায় দুচোখ, অনেকটা ঠিক বাজারদরের গনগনে আঁচে ফাউতে চোখে সর্ষে ফুল দেখবার মতো। তবে এখন অবশ্য অবশ্য ধারনীয় মুখাবরনী থাকায় নাকেমুখে বিনিপয়সায় ধুলোর ভুঁড়িভোজ খাওয়া থেকে মিলেছে রেহাই ধন্যবাদ জানাই,সেই বিশেষ রোগটির বিশেষ ভাইরাসের কল্যাণেই ঘটেছে
সবকিছু।
যাকগে, এসময় নির্মেঘ সূর্যের প্রখর উত্তাপে পৃথিবী তপ্ত আগুনের গোলা। চাঁদিফাটা রোদ্দুরে পাঁপড়ভাজা না পাঁপড়পোড়া বুঝতে পারছিনা। তেষ্টায় প্রাণ আইঢাই,শুধু জল চাই। মহিলারা ঘরে থেকেও মুখে, গালে,গলায় মেখে রয়েছে সানস্কিন লোশন। কিন্তু এই কলুর বলদ পুরুষদের? রোদে পুড়ে প্রথমে বাদামি,তারপর তামাটে,সবশেষে ঘোর কৃষ্ণবর্ণের রূপ ধারণ করে গিরগিটির মতো রঙ বদলানো। আরে পেটের ভাতের তাগিদে বাজারহাট, কর্মক্ষেত্রে যাওয়া,ডাক্তার কবিরাজ, ওষুধপত্রের আমদানি কোনটাও কী আছে বাদ দেওয়ার উপায়?
এদিকে বর্ষশেষের বাজনা বাজতেই তার অনুষঙ্গ গাজনের বাজনা বাজতে থাকে সমান তালে। ঢাক, ঢোল, কাঁসর বাজিয়ে বহুরূপীর মতো নানা সাজে বেরোয় গাজনের ভক্তবৃন্দ। চড়ক কাঠ মাথায় নিয়ে লালচেলি পড়ে কালী,শিব ইত্যাদি সেজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চল, ডাল,টাকা পয়সা জোগাড় করা শুরু হয়ে যায়। এটাও অনেকটা প্রতীকী। সম্বৎসর আমরা যেমন মুখোশ পরে কখনো ভালো বাবা, ভালো কাকা, ভালো দাদার অভিনয় করে যাই, তেমনি বর্ষ শেষেও নানারকম সাজে চরিত্রাভিনয় করে
সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখি।
বছরের শেষপ্রান্তে পৌঁছেও আমরা অতীত চর্বণ করতে ভালোবাসি। তবে এবছরের স্মৃতিমালঞ্চের অধিকাংশই দুঃখের। আমরা বহু কৃতবিদ্য জ্ঞানীগুণী, গায়ক গায়িকা,সুরকার, অভিনেতা অভিনেত্রীদের অকালে হারিয়েছি। সেই সমস্ত শূণ্য জায়গা কদাপি পূরণ হবার নয়। বিদায় দিতে হয়েছে, তাঁদের চোখের জলে। এছাড়াও বহু সাধারণ মানুষ মারণ রোগে, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সেইসব হতভাগ্যদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানানোর নেই ভাষা।
তবে বাংলা ১৪২৮ সন আমজনতাকে বাজারে স্বস্তি দেওয়া দূরে থাক, সংসারে অশান্তি লাগাতে কাজ করেছে বারুদের স্তুপে অগ্নিসংযোগের মতো। যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম, তাতে বাজার করতে যাওয়া ছেলেকে বাপ বিশ্বেস করেনা, ছেলে নয় বাপকে। এ নিয়েই নিত্য বচসা। বাজার থেকে কে কত হাপিস করলো, এ নিয়েই চুলচেরা তর্ক। তবে সবচেয়ে কমিডি, --- গ্যাসেই শুরু আর গ্যাস দিয়েই শেষ।
এরপর বর্ষশেষের দিন হাজির হয়, চৈত্রসংক্রান্তি। পার্শ্ববর্তি প্রতিবেশী রাজ্যের কল্যাণে কিনা জানিনা,সেদিন কেউ কেউ পালন করেন, " ছাতু পরব"। দরজার পাশে ছাতু উড়িয়ে, ছাতু খেয়ে সেদিন নাকি কাটাতে হয়। জানিনা,এই পরবের গুঢ় তাৎপর্য। তবে মনে হয়, বছরের বিগত দিনগুলোকে দুরছাই করে উড়িয়ে দিয়ে নতুন বর্ষে পদার্পণের এটা বোধহয় ইঙ্গিত।
বছর শেষে আবার রয়েছে,আর একটা নতুন উৎপাত। এটা গোদের উপর বিষফোঁড়ার চেয়ে বিন্দুমাত্র কম নয়। শুরু হয়, দোকানে দোকানে সেল। আমার মতে লক্ষ্মণের শক্তি শেলের থেকেও এর বিষ তীব্রতর। সারাবছরের অবিক্রীত, রদ্দিমাল দোকানদাররা দামের লেবেল তুলে সেলের মোড়কে দেয় গছিয়ে। এর খরিদ্দার কিন্তু অধিকাংশই মহিলা। সবাই ছুটে চলেছে,--- " ঝাঁকের কই এর মতো"! যেন কিছুতেই সেলের মাল, হয়না পয়মাল। সাধে কী আর বলে, " দশ হাত কাপড়েও কাছা দিতে পারেনা।" গৃহে অবাঞ্ছিত অশান্তির ভয়ে গিন্নিকেও করা যায়না নিবৃত্ত। অথচ সেল যে শেল হয়ে গোবেচারা স্বামীকে বিঁধতে থাকে অহরহ,সেটা কে বুঝবে? সারাবছর প্রেজেন্টেশান, কর্তব্যরক্ষা ইত্যাদি যে কত সহজে হয়ে যায় সমাধান, তা এই অধমের গবেট মস্তিষ্কে নয় এতটুকু বোধগম্য। গিন্নির আবদার, চাই তার মালাইশাড়ি। দাম শুনেতো আমার নিজের মালাইচাকি খুলে যাওয়ার যোগাড়। কন্যার স্বর্নকাতান বায়না মানে কর্তাকে কাত করবার পাকাপাকি ব্যবস্থা। অথচ আমারতো একটাই জাতীয় পোষাক -- একখানি লুঙ্গি আর কাঁধকাটা গেঞ্জি। এরপর কাটছাঁট করলেতো একেবারে তৈলঙ্গ
স্বামী।
যাহোক বিকেলে চড়ক বা গাজনের মেলা। চড়ক একটা বড় বাঁশ বেঁধে দুজনের পিঠে বড়শি গেঁথে দেওয়া হয় দুদিকে ঝুলিয়ে। তারপর দড়ি ধরে শুরু হয় ঘোরানো, সঙ্গে " হর হর বোম বোম" আওয়াজ। এর সঙ্গে মেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সারাবছর আমজনতা যেভাবে ঝুলে রয়েছে আর একটু পরিষ্কার করে বলতে গেলে ফাটা বাঁশে ইঁদুরের মতো আটকে রয়েছে, চড়ক দোলাও এর প্রতীকী। সারাবছর ফ্যাক্খা টার পরও কী আর এর প্রয়োজন আছে?
বছর শেষে সেলের মৌতাতে বুঁদ হতে বন্ধুর শাড়ীর দোকানে বসে আছি। হটাৎ এক মহিলা একটা শাড়ির প্যাকেট বন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে বলে, " এটা শাড়ি না গামছা! রঙতো উঠেই গেল, তারপর একেবারে মশারী। আমার শাড়ি চাইনা, টাকা ফেরত দিন।" বন্ধুর সহাস্য উত্তর, " সস্তায় শাড়ি নেবেন সেলে, ভালো কাপড় কী মেলে,? টাকা ফেরততো হবেনা, কথায় আছে, -- এর নাম সেল, ভানুমতির খেল।" মহিলা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল। বন্ধুর যে দোকানদারি করেও রসবোধ শেষ হয়নি, তাতো বোঝাই গেল। এক কাচাতেই একেবারে মাছ ধরার জাল। তবুও জমে ক্ষীর হয়ে যায়
সেলের বাজার।
চৈত্র সেলের বাজার নিয়ে একটা রম্য আখ্যানে শেষ করবো, আজকের রম্যাখ্যান। অনেকদিন পর মামার বাড়ি গিয়েছি। জলখাবার পর্ব মিটলে মামী একটা ঢাউস কাপড়ের প্যাকেট আমার সামনে ধরে বললেন, " দেখতো ভাগ্নে, সেলে অনেকগুলো শাড়ি কিনেছি। সারাবছর তো লাগে। কেমন হয়েছে বল্?" আমি শাড়ীর আবার কি বুঝি। তবুও কথা রাখতে বললাম, " চমৎকার হয়েছে। কতটাকা সাশ্রয় হলো ।" মামীর জবাব," দেখ, তুই সুন্দর বুঝলি,কিন্তু তোর মামা বোঝেনা।" এবার মামীকে মামার কথা জিজ্ঞেস করায় বললো, " ঐতো পাশের ঘরে আছে। ঋতু পরিবর্তনে একটু ঠাণ্ডা লেগেছে। সর্দি কাশিতে ভুগছে। ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার অনেকগুলো টেস্ট করতে বলেছে। ওসব করে কী হবে বল্আ দা,তুলসিপাতা ছেঁচে খেতে বলেছি ।" পাশের ঘরে ঢুকে দেখি, মামা ডাঙায় তোলা কাতলা মাছের মতো কাশির দমকে খাচ্ছে খাবি। " হায়রে চৈত্র সেল!" আধুনিকা মামী সেলের বাজার করতে গিয়ে মামাকে চিকিৎসা বাদ দিয়ে শিলনোড়ায় ছেঁচ্ছে। মুখে শুধু বললাম, " মামী মামার হেঁশেল ঠেলে ঠেলে তোমার সব বুদ্ধিগুলো বৃথায় নষ্ট হয়ে গেল । অন্য জায়গায় লাগাতে পারলে নিদেনপক্ষে তুমি হয়তো এম.এল. এ হতে ।" মামীর সহাস্য জবাব, " যা: ভাগ্নে, তুই না .."
তবুও বছর শেষে নতুন বছরের আবাহনই তো পয়লা বৈশাখ। গাছে গাছে পুরোনো প্রকৃতি জানান দেয় নববর্ষের। হাজারো সমস্যায় দীর্ন দমবন্ধ করা আটবাই দশের কুঠুরির ঘুলঘুলি দিয়ে আমজনতাকে স্বস্তি দিতে নববর্ষ জোগায় একটু হলেও অক্সিজেন। বছর শেষের গাজনের বাজনায় শোনা যায় তারই প্রতিধ্বনি।
বর্ষশেষের নাট্য ভাবনা
আমি ধর্ষিতার মা নই
রীতা মোদক
১]
(বছর দশেক এর কন্যা শিশু । স্কুল থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছে গুনগুন গান করতে করতে । পথে হটাৎ একদল দস্যু শিশুটিকে আক্রমণ করল ।)
শিশু : তোমরা কারা ? আমার কাছে আসছ কেনো ? আমাকে ছেড়ে দাও ।
দস্যু : হা হা হা ছেড়ে দেবো বলে কী তোমায় ধরেছি খুকি ? খবরদার একদম চিত্কার করবি না ? চেচালে একবারে খেলাশ করে দেবো । হা হা হা ।
শিশু : মা ... বাবা ..... বাঁচাও ..মা ....
(দস্যুরা শিশুটিকে মুখে রুমাল বেঁধে নিয়ে চলে যায় )
২]
মা : কীগো শিউলীর বাবা , পাঁচটা বাইজা গেলো শিউলী অহন ও যে আইলো না । আমার যে চিন্তা হইতছে ..
বাবা : হাছাই তো , মাইয়াডা অহন ও যে আইলো না ... এজন্যই তোমাকে না করছিলাম । মাইয়ারে আর পড়াশুনা করাইতে লাগবো না । চার পাঁচ বছর পর বিয়া দিলে আপদ ফুরাইয়া যাইত । এখন বুঝ ঠ্যালা । আমি কিছু খুজতে পারুম না , তুমরা যা খুশি করো গা ।
মা : কী কইলা শিউলীর বাবা ? এই কথা কৈতে তোমার জিভে আটকাই ল না ? এখন তো শুধু আমার মাইয়া । আমি দেইখা রাখুম শ্যাষ বয়সে পোলা কেমন খাওযাযতোমারে । (শিউলী কাদতে কাদতে চলে যায় )
৩]
(মা পথে দুজনকে শিউলীর কথা জিগ্গেস করে উত্তর পায় না ।
তখন এক স্বনির্ভর দলের বাড়ি যায় । )
শিউলীর মা :দিদি বাড়ি আছেন ?
দিদি : আরে শিউলীর মা যে , তো সন্ধ্যা সময় কী মনে কইরা ?
মা : দিদি , আমার শিউলী অহনও ইস্কুল থাইক্কা বাড়ি ফিরে নাই । ডরে আমার শরীর কাঁপতাছে .. আমার লগে যাইব্যান শিউলীরে খুজতে ..
দিদি : জামু না ক্যান ? আপনের মাইয়া আর আমার মাইয়া তো সমান বয়সী । আগে চলেন সংঘ সমবায় এর কাছে খবরটা জানাই । এই সুমী সংঘের সেক্রেটরী কাকিমারে ফোনটা ধইরা দে তো ...
সুমী :(ফোন করে )হ্যালো কাকিমা আমি সুমী বলছি । আমার মা তোমার সঙ্গে একটু কথা বলবে ..
সুমীর মা : হ্যালো দিদি , খুব বিপদে পইড়া ফুন করলাম
সেক্রেটারি : কী হয়েছে বলুন ।
সুমীর মা : শেফালী দি রে চিনেন তো । স্বনির্ভর দলে নতুন নাম লেখাইছে ।
সেক্রেটারি: চিনলাম , তো কী হলো ? তিনি কী আর দল করবেন না ?
সুমীর না : সেইটা নাগো , উনার মাইয়াড়ে খুইজা পাইতাছে না । আইজ ইস্কুল থাইকা আর বাড়ি ফিরে নাই ।
সেক্রেটারি: শেফালী দিকে বসিয়ে রাখেন , আমরা দশ মিনিটের মধ্যে আপনার বাড়ি আসছি ।
সুমীর মা : ঠিক আছে রাখলাম । শিউলীর মা চিন্তা কইর না ওরা আসতাছে ।
(সেক্রেটারি পাঁচ সাত জন মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে আসেন । )
সেক্রেটারি: আমরা এসে গেছি । আপনার মেয়ে কোন পথ দিয়ে বাড়ি আসে বলেন তো , চলুন সবাই মিলে অ্যাটাক করতে হবে।
৪]
শিউলীর মা : (পথে যেতে যেতে ) .. শিউলী রে ... শিউলী...মা আমার ... তুই ফিইরা আয় ...
সেক্রেটরী : চুপ । একদম চুপ । ওরা শুনে ফেলবে যে ,
শিউলীর মা: ঠিক আছে আমি আর কথা কমু না ।
সেক্রেটরী:ওই যে জঙ্গলের মধ্যে একটা ঘর দেখা যাচেছ , তোমরা সবাই ধীরে ধীরে ওই ঘরের চারদিক ঘিরে দাড়িয়ে পর । আমি ইশারা দিলেই সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পড়তে হবে ।
সকলে : ঠিক আছে, ঠিক আছে।
৫]
(শিউলীএকটা চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে , দস্যুরা ফিস ফিস করে কথা বলছে ,মহিলারা চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ভেতরের কথাবার্তা শুনছে )
শিউলী : তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও...। আমি মার কাছে যাবো । আমাকে বাঁধন খুলে দাও ...
দস্যু : ঠিক আছে সোনামণি খুলে দিচ্ছি , সবাই মিলে আগে তোমাকে একটু পরখ করে নেই , তরা সবাই আয় , আমার সোনামণি কাঁদছে যে , একটু আদর করে দে ..
( সেক্রেটারি এমন সময় ইশারা দিকে সব মহিলা লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে । )
সেক্রেটারি : বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের তুলে এনে ফুর্তি করবি , দেখ কেমন লাগে ।
দস্যু : সরি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে (হাত জোর করে )আমাদের ক্ষমা করে দিন ।
সেক্রেটারি : ক্ষমা ? তোদের কোনো ক্ষমা নেই । আমরা ও তোদের আদর করবো , তবে হাত দিয়ে না , লাঠি দিয়ে (মার )
( একজন মহিলা বাঁধন খুলে শিউলীকে তার মায়ের হাতে তুলে দেয় , মা শিউলীকে জড়িয়ে ধরে । )
সেক্রেটারি : চলো আধমড়াগুলোকে পুলিশের হাতে তুলে দেই ।
৬]
(শিউলীর মা শিউলীকে নিয়ে বাড়ি যায় , কিন্তু তার স্বামী ঘরে ঢুকতে দেয় না )
শিউলীর স্বামী : খবরদার ! আর এক পা ও আগাইবি না । আমার ঘরে তোদের কুন জায়গা নাই । সারা রাইত বাইরে কাটাইয়া কলঙ্ক লাগাইয়া এইখানে কোনো জায়গা নাই ।
শিউলীর মা : তুমি কী মানুষ না , না পশু ? কত কষ্ট কইরা আমরা মাইয়াডারে উদ্ধার করলাম , আর একটু হইলেই তো মাইয়াডা শ্যাষ হইয়া যাইতো । ঘরে যাইতে দ্যও , মাইয়াডারে একটু রেস্ট নিতে লাগব।
শিউলীর বাবা : শরীরে কলঙ্কের দাগ লাগাইয়া রেস্ট ? বাইরো বাড়ির থাইকা, ধর্ষিতা আর ধর্ষিতার মায়ের কুন জায়গা নাই (চুলের মুঠি ধরে ঘর দুজনকেই বের করে দেয় )
শিউলীর মা : হ্যা আমি ধর্ষিতার মা । চল মা আমরা ফিইরা যাই । এই অপমানের জবাব তোকে দিতেই লাগব।
৭]
(দুজনে সেক্রেটারির বাড়ি যায় )
সেক্রেটারি : কী ব্যাপার তোমরা ফিরে এলে যে ---
শিউলীর মা : ম্যাডাম ,আমাদের তাড়াইয়া দিছে , আমরা আর ওই বাড়ি যামু না । আপনের বাড়িতে আমাদের আশ্রয় দিবেন ? আমরা যে নিরুপায় । ওর বাবা আমারে নতুন নাম দিছে --- ধর্ষিতার মা (কান্না )।
সেক্রেটারি : কান্না থামাও । এর প্রতিশোধ নিতেই হবে । ছয় মাস হলো আমার শাশুড়ি মারা গেছে । ঘরটা আপাতত ফাঁকাই পরে আছে । তোমরা এখানে থাকতে পার । কিন্ত একটা সত্ব আছে ।
শিউলীর মা : কী সত্ব ম্যাডাম ? আমরা যে এক্ক্যেবারে নিঃস ।
সেক্রেটারি :না না কোনো টাকা -পইসা লাগবে না , শিউলীকে ভালো করে পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে । ক্যারাটে শিখতে হবে । তোমাকে ও দাড়াতে হবে ।
শিউলীর মা : কিন্তু আমি তো লেখা পড়া জানিনা ...
সেক্রেটারি : আমাদের সংঘ সমবায় এ সেলাই এর ট্রেইনিং হবে , তুমি সেলাই কাজ শিখবে
শিউলীর মা : ঠিক আছে ম্যাডাম , আমি বুঝতে পারছি । আমি শিখব ।
৮]
(এভাবেই বেশ কয়েক বছর কেটে যায় । শিউলীর মা সেলাই কাজ শিখে SVSKP লোন নিয়ে স্কুল ইউনিফর্ম এর কাজ করছে , তার মেয়ে পড়াশুনা করছে )
৯]
15 বছর পর ...
শিউলি এখন মেখলিগঞ্জ ব্লকের বিডিও । তার বাবা বয়স্ক ভাতার জন্য বিডিওর কাছে অনুনয় করছে ।
শিউলীর বাবা : ম্যাডাম আমার কেউ নাই । আমাকে একটা ভাতার ব্যবস্থা কইরা দেন ।
শিউলী : কেনো আপনার তো একটা ছেলে আছে । ছেলে দেখে না ?
শিউলীর বাবা : ছেলে যে বাড়ির থেইকা বাইর কইরা দিছে। আপনি কী কইরা জানেন ?
শিউলী : আমার যে সবই মনে আছে । ওই যে বসে স্বনির্ভর দলকে সেলাই কাজ শেখাচ্ছেন , তিনিই ধর্ষিতার মা ।
শিউলীর বাবা : ধর্ষিতার মা ? ( মাথা চুলকাতে থাকে ) আমি যে কিছুই বুঝতে পারতাছি না ম্যাডাম ।তুমি কে মা ? আমার শিউলী ? আমাকে ক্ষমা করে দাও মা , মা আমি আমি খুব অন্যয় করছিলাম ।
শিউলী : হ্যা তুমি খুব অন্যায় করছিলে । মেয়েদের মানুষ বলেই মনে করোনি । যদি ক্ষমার কথা আসে উনিই বিচার করবেন ।
১০]
শিউলীর বাবা :(দৌড়ে গিয়ে তার স্ত্রীর পায়ে ধরে ) আমাকে ক্ষমা করে দ্যও । তোমাদের তাড়াইয়া দিযা আমি খুব অন্যায় করছিলাম । আমারে ক্ষমা কইরা দ্যও ।
শিউলীর মা :(দৌড়ে পিছিয়ে যায় ) ছাড়ো, ছাড়ো...আমার পা ছাড়ো। আমি যে ধর্ষিতার মা , তুমি আমাকে স্পর্শ করে অপবিত্র হয়ে যাবে যে ।
শিউলীর বাবা :(দু হাত জোর করে ) আমাকে ক্ষমা করে দ্যাও ।
শিউলীর মা : বেরিয়ে যাও । কোন ক্ষমা নেই । এখন আর আমি ধর্ষিতার মা নই , আমি বিডিও এস দাসের মা । যে ধর্ষন করে আর , যে ধর্ষককে সমর্থন করে -- তারা দুজনই সমান অপরাধী । তাদের কখনোই ক্ষমা করা যায় না । মনে আছে ? সেদিন বিনা দোষে আমাদের বের করে দিয়েছো । এখন আর আমি অবলা নই , আমাকে এক ঘা দিলে আমিও তিন ঘা মারতে পারি । (ধাক্কা দিয়ে ) বেরিয়ে যাও বলছি । আমি কখনোই ধর্ষিতার মা ছিলাম না , আমি শিউলীর মা। (শিউলী কে জড়িয়ে ধরে) শিউলীর মা হতে পেরে আজ আমি গর্বিত । আমি ধর্ষিতার মা নই।
বর্ষশেষের ছড়া
খোকার বর্তমান
তপন বসাক
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো,
বর্গী এলো দেশে।
মায়েদের মুখে যায় না শোনা,
আজকের পরিবেশে।
মোবাইলেতে কার্টুন দেখে,
ঘুমায় আজকের খোকা।
এগিয়ে চলছে সমাজ ব্যবস্থা,
অতীত হয়েছে বোকা।
গোল্লার ছুট, সোনার টিয়া,
নেইতো খোকার জানা।
হারিয়ে গেছে মায়ের মুখে,
আয় রে আয় চাঁদমামা।
পাড়া বলতে কি বা বোঝায়,
প্রতিবেশী বলে কাকে।
খোকার সেসব নেইকো জানা,
থাকে সবার ফাঁকে।
আঙ্গুলের ব্যায়াম হচ্ছে খোকার,
চোখ দুটো পরিশ্রান্ত।
নেই দৌড় ঝাঁপ, থাকে চুপচাপ,
তবুও বড়ই ক্লান্ত।।
রূপের জাদু
নিলুফা ইসলাম
তোমার রূপে পাগল আমি
বুকে লাগে টান
আড়াল হলে প্রাণে মরি
মারছো বুঝি বান।
লোকে বলে বেজায় কালো
আমার চাঁদ তারা
বাঁচতে চাইনা একটি দিনও
বন্ধু তোমায় ছাড়া।
কালো চোখে যায় হারিয়ে
রূপের নেইকো শেষ
তোমার রূপের জাদুর ছোঁয়ায়
ছাড়লাম নিজের দেশ।
কালো রূপে যেই মজেছে
সেই তো জানে সুখ
যেখানে যাই সেই খানেতে
দেখি বন্ধুর মুখ।
বর্ষশেষের ছবি
অদ্রিজা বোস
অনুস্মিতা বিশ্বাস
মুজনাই অনলাইন চৈত্র সংখ্যা ১৪২৮