সম্পাদকের কথা
আবার বসন্ত। আবার বছর শেষের আহ্বান। শীতের রুক্ষতা আর জীর্ণতা দূরে সরিয়ে নব কিশলয়। নতুন করে সেজে ওঠা প্রকৃতির। তবু কিছু না-পাওয়া আর অপূর্ণতায় ছন্দ নষ্ট হয় আজও। প্রশ্ন জাগে নারীর অসম্মান নিয়ে। বিস্মিত হতে হয় অতি সক্রিয়তা আর নিষ্ক্রিয়তার যূথবদ্ধতায়। বসন্ত এসব যেন দেখেও দেখে না। আসলে আমাদের জীবনে বসন্ত বোধহয় আসে না। তাই ভগবানের আসন থেকে সহসা নেমে আসেন কেউ। মিশে যান দু`কান কাটাদের ভিড়ে। কেউ আবার ডিগবাজির চূড়ান্ত দেখিয়ে এই দল থেকে লাফিয়ে আর এক ডালে দিব্যি দোল খান। তাই বসন্তে প্রকৃতি সেজে উঠলেও মানবজীবন রয়ে যায় সেই একই জায়গায়। নিরাসক্ত এক বিষণ্ণতায়।
মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪৩০
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪৩০
এই পর্বে আছেন যাঁরা
বেলা দে, চিত্র পাল, গৌতমেন্দু নন্দী, মাথুর দাস,
ইন্দ্রাণী বন্দোপাধ্যায়, পার্থ বন্দোপাধ্যায়, লীনা রায়,
দেবযানী সেনগুপ্ত, শ্রাবণী সেন, রবিনা সরকার,
নবী হোসেন নবীন, রীনা মজুমদার, দেবর্ষি সরকার,
সারণ ভাদুড়ী, মৃণালিনী, অলকানন্দা দে,
মনোমিতা চক্রবর্তী, মজনু মিয়া, প্রতিভা পাল,
এস (সঞ্জয়) সাহা, রথীন পার্থ মণ্ডল, মৃড়নাথ চক্রবর্তী,
চৈতালি সরকার, সৈকত দাম
মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪৩০ (পদ্য/কবিতা/ছড়া পর্ব)
কর্পূর উড়ে যায়
দেবর্ষি সরকার
ক্ষণিকত্ত্ব প্রত্যেক অংশেই কর্পূরের সমান!
দীর্ঘদিন শান্তির পর বসন্তে ফোটা ফুল, প্রেমিকের বুকপকেটের আলতোচাপে কর্পূর উড়ে যায়!
ধর্মমঙ্গলের লাউসেনের সঙ্গে চন্ডীমঙ্গলের লহনার অবৈধ প্রেমের একাকিত্বে ভরা কবিতার প্রত্যেক স্তবকে কর্পূর উড়ে যায়!
প্রত্যেক ভোরে মর্নিংওয়াকরত মানবীটির পায়ে যদি মাছের কাঁটে লেগেযায় তাহলে চাপাকলের প্রত্যেক জলকনায় তোমার মনের কর্পূর উড়ে যায়!
বসন্তে কর্পূর উড়ে যায়!
কর্পূর উড়ে কোথায় যায়?
সে যেখানে যায় সেটা সম্পূর্ণ মায়ার জগৎ, মরমিয়াদের নিত্য যাতায়াতের কেন্দ্রস্থল।
৯
সারণ ভাদুড়ী
"তোমায় যে পাবে সে ভাগ্যবান" - নিঃসন্দেহে!
তবে আমার প্রেম কি মূর্ছা যাবে ?
মনে নেই ?
ফাল্গুনের নতুন ওঠা রোদ্দুরে আলপথ ধরে একসঙ্গে চলা ,
পুরানো বসন্তকে খোঁজা ....
মনে নেই ?
যবে সেই অচিনপুরের দেবীকে সাক্ষী করে তোমায় ভালোবেসেছিলাম
আর বলেছিলাম
" তুমি হবে আমার প্রথম কাব্যমালা "
বই বের হয়েছে , কিন্তু তাতে তোমার স্পর্শ নেই !
আমার প্রেম মূর্ছা যায় নি
পরে গেছে চাপা তোমার অভিমানের সামনে ;
আর আমার কলম তো কবেই থমকে গেছে
যবে হারিয়েছি তোমায় ...
বসন্তে পলাশ আগুন
মৃণালিনী
পলাশের আগুনে বসন্তের হাওয়ায়
জ্বলে ওঠে চিতার দাউদাউ আগুন
সূর্যাস্তের কুসুমিত সূর্য হাসে
ঝরো হাওয়ায় টুপটাপ ঝরে পলাশ।
প্রেমিক জুটির নিজস্ব আগুনে আলোড়িত
হিংস্র আদিম ভালোবাসার প্রচ্ছদে ঢাকা আকাশ।
হোলিউৎসবের রঙে প্রকৃত স্বরূপ ঢেকে
বসন্তদিনের অসমাপ্ত প্রেম
হৃদয় নিংড়ানো আগুন ঝর্ণায় স্নান সেরে
গর্জে ওঠে প্রতিবাদে।
রোমান্টিক ঋতুর রোমাঞ্চকর কাহিনিতে
নির্দিষ্ট আসন জুড়ে ভন্ডের তান্ডব ধর্মের অজুহাতে
পলাশ আগুনের ছোঁয়ায় হারিয়ে যায় 'প্রকৃত সারস'
মিথ্যের ভূমিতে সংস্কৃতির শিকড় শক্ত হয় মিথ্যে ভাষনে।
রোমান্টিক বসন্ত গল্প- গাঁথায়
চোখের পাতায় ঝরে আতঙ্কিত আগুন
চিরহরিৎ পত্রহীন থোকা থোকা পলাশ আগুন
শব্দ ভাষণে, আগুন চোখের রাঙানিতে কাঁদে বসন্ত
বুভুক্ষু গরীবের আর্তনাদে।
সংসারের লাঙল চষে বেড়ায় দুর্বল কাঁধে
জ্ঞানীও মূক নিরুপায়
অমানুষিক যন্ত্রণার বোঝা অশরীরী মাথায়।
স্বপ্নীল রোমাঞ্চ
বেলা দে
ফাগুন মানেই আগুনঝরা
পাতার নি:শব্দ টুপটাপ,
খাঁ খাঁ দুপুর, নির্জনতা,
ফাগুন মানে রক্তভেজা বসুধা।
এক পৃথিবী গোলাপ শিমুল পলাশ--
রঙের ভিতর হাটাহাটি,
সোহাগি বয়সের পাওনা,
স্বপ্নীল রোমাঞ্চে আনাগোনা।
তুলে রাখা বিষাদ অন্ধকার,
একুশের ভেজা মাঠে মুক্তির ঝড়,
শরীরে শরীরে বসন্ত আবীর।
এই ফাল্গুন দিন
শ্রাবণী সেন
শিমূলের ফুলে ছেয়ে ছিল রাস্তাটা
দুই একখানি কোকিলের ডাক মাখা
দুপুরটা ছিল নির্জন মোটামুটি
দুইখানি হাত হাতে হাতে ধরাধরি
ঝরাফুল দলে চারটি পায়ের হাঁটা।
ভরা ফাল্গুনে বড় মনোরম রোদ
উজ্জ্বল হয়ে হেসেছিল গাঁদাফুল
পাপড়ির রঙে বাসন্তী হাতছানি
দখিনা বাতাসে উদ্বেল পিটুনিয়াও
রঙে রঙে হয় ফাগুনিয়া ঋণ শোধ।
দুইটি হৃদয় ফাগুন স্বপ্ন দেখে
দুইটি মানুষ দোল তিথি সন্ধানী
চারটি চোখের মায়ায় পৃথিবী স্থির
চারটি হাতের ছোঁয়ায় অনুরণন
দুইটি মানুষ হৃদয়ে কাব্য লেখে।
বসন্ত ও জীবন
রবিনা সরকার
...আর তারপর
সবুজে ঘেরা রাস্তটা হলদে, জীর্ণ কঠিন
বাস্তবতায় পরিণত হয়ে যায়।
আবার কিছুটা সময়ের অপেক্ষা,
কিছুটা ধৈর্য, কিছুটা সহ্যের পরীক্ষা অতিক্রম
করে
ফিরে আসে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ।
বসন্ত এসে পাতা ঝরার দিনগুলোকে
ধীরে ধীরে খুব সযত্নে বদলে দেয়।
পিছু ফিরে চাইলে দেখা যায়
একদিন যে পথ প্রাণহীন ছিলো,
সেই পথই কালের নিয়মে বসন্তের ছোঁয়ায়
আবার হেসে উঠেছে।
আবার শিমুল, পলাশের বন ধরে
আজ যে পথ হেঁটে চলা
একদিন সেই পথ জুড়ে রুক্ষ্মতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো।
ঋতু আমাদেরই জীবন,
জীবনের সমীকরণও এইভাবেই প্রতিবার বদলে যায়,
বদলে যায় সম্পর্ক।
সবই ক্ষণস্থায়ী, শুধু অপেক্ষা,
ধৈর্য্য ও সহ্যই থেকে যায়।
রয়ে যায় জীবনে চলার পথে আমাদের সাথে।
বসন্ত বিষাদ
নবী হোসেন নবীন
ফাগুন তো আগুন জ্বালবেই বনে
তুমি কেনো পুড়ে পুড়ে কিছু কথা লুকাও মনে?
দখিনা বাতাস তো চুমু খাবেই পাপড়ির গালে
তুমি কেনো হা-হুতাশ করছ বিরহ ব্যথার ঝালে?
বসন্ত দূত তো মন মাতাবেই কুহু কুহু তানে
তুমি কেনো ভাসছ বসন্তের বানে?
পল্লব তো গজাবেই পত্রহীন শাখে
শূন্য কেনো সরসী তোমার যৌবন ভরা কাঁখে?
দিন শেষে ফুল তো ঝরে যাবেই ভূমে
তুমি কেনো কাঁদছ ঝরা ফুল চুমে?
এই বসন্তে
গৌতমেন্দু নন্দী
রং-এ রং-এ আজ নব নব সাজে
নব নব রং-বসনে
মলিনতা সব ঝেড়ে ফেলে ঋতু--
বসন্ত আজ নব আসনে--।
দিকে দিকে তার বিকশিত রূপে
প্রকৃতি খুশীতে মত্ত
কোকিলের কুহু কুহু কুহু সুরে
ভরে মন-প্রাণ,চিত্ত।
ডালে ডালে ঘ্রানে আমের বোলে
উদাস যে হয় মন
ফিরে ফিরে আসে স্মৃতি-পথ ধ'রে
শৈশবের দিন-ক্ষন।
ফাগের রং এ রাঙ্গিয়ে মন
খুঁজে পাই "দোল" এ ছন্দ
খুলে দেই তখন মনের দুয়ার
রাখি নাকো আর বন্ধ।
রংটুকু
লীনা রায়
সাধাসিধে রাধারানী
সঙ্গী সখীর দল,
চিকণ কালা পথের ধরে
রং রাঙানোর ছল।
গভীর প্রেমে আবীর শ্যামে
সোনার বরণ ঢাকে,
অভিমানী রাধারানী
কপট রাগে কাঁপে।
পিচকারি তাক রাখাল রাজার
মান ভাঙাতে জল,
আবেগে কয় রাই কিশোরী
এই রংটুকু যে সম্বল–
তোমার প্রেমের গভীর রঙে
মন যমুনার জল,
হোলির ফাগে অবশেষে
দেহেও নীলের ঢল।
কোকিল
মাথুর দাস
'গুড়ুম' করে মারলো কাক এমনও কিল !
এ বসন্তে কুহু রবে গান ভুলেছে কোকিল ।
পাড়তে গিয়ে ডিম
খেয়েছে হিমশিম,
এখন ব্যথার চোটে মোটেই খুশি না দিল্ ॥
রাঙিয়ে দিয়ে যাও
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
অফুরন্ত আলোয় সাজানো
এক ক্যাথিড্রাল শহরে
হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম
ইগলুর দেশ থেকে এসেছিলেন
এক সাদা দাড়ি সন্ত
তাঁর বাঁ হাতে ক্রিসেনথিমাম
ডান হাতে সুগন্ধি ব্রাউনি
ঝুরঝুরে হিমের কস্তূরী তন্দ্রায়
আমি জমে যাচ্ছিলাম
চারদিকে কালো আঙুরের মতো
থোকা থোকা বেলুন
দোতলা তিনতলা কেক
পায়ে পায়ে জড়িয়ে
পরবাসের মায়া
দু হাতে কালো মেঘ সরিয়ে
খেলছিলাম টুং টাং ক্যান্ডিক্রাশ।
শ্লেজগাড়িতে পার হয়ে যাচ্ছিল
অপেক্ষা, প্রতিশ্রুতি, মঙ্গলঘট,গাছকৌটো...
আবহমান বিদ্রোহ, জরায়ু, কণ্যাভ্রুণ
আর রক্তপাতকে সঞ্চয় করে
লাল উল্কি আঁকা শীতকে নস্যাৎ করে
হঠাৎ বাগান ভরে উঠল রুদ্র পলাশ
আর শিমুলের রক্তিমে
অশোকের ডালে কুহু রব
ও হলুদ আবিরের চূর্ণে লেখা হল
মানবিকতার সুর ও স্বরলিপি
প্রেমের জাদুকাঠির ছোঁয়ায়
চরাচর ভেসে যেতে লাগলো বসন্তের রঙে
ভেসে যেতে লাগলো বসন্তের রঙে.....
কেউ বলে ফাল্গুন
অলকানন্দা দেঅমোঘ বাসনার রঙে বাঙ্ময় পলাশ।
বসন্তকে খরিদ করে নেয় আগুন দামে। পুরুলিয়ার পথে পথে আছড়ে পড়ে ফাল্গুন। অরক্ষিত বনসমাজ বাস্তবে রাঙে বুকভরা পলাশের ভালোবাসায়।
নতুন ঋতুর ঘোষণায় বসন্তবউরির মাতৃভাষা মুখরিত হয় ডালে ডালে। তাকে একজন্ম ভালোবাসা দিলেও বুঝি কম মনে হয়।
প্রকৃতির মুক্ত বাজার থেকে একেবারে মাগনা এক ফুসফুস নম্র বাতাস এখন ভর্তি করে নেওয়া জীবনের জন্যে ইষ্ট।
মধুঋতুই কানে কানে বলে দেয় সে কথা। সজনের সাদা ফুলে আরোগ্যের আলোড়ন। আমি তুমি সকলেই
পুরোনো শোক, পুরোনো তাপ, কলরোলা দুঃখ আর যন্ত্রের মতো কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রহরগুলোকে বাতিল করে দিতে চাই মুগ্ধবোধে।
এ মুহূর্ত নশ্বর। দরকার, খুব দরকার ফাল্গুনী স্পর্শের।
পেরিয়ে যত বাধার উপল নিম মহুয়া শিশুর খোলা বাজারে বাসনাকে সুবর্ণ করে তোলাতেই বাঁচার ব্যালেন্স।
এই প্ররোচনা বসন্তেরই। তার সাজানো বৈঠকখানায় পৌঁছতে পারলে মনে হবে এক জীবন যথেষ্ট নয় এই সুখভোগে।
কিন্তু ক’দিন? তেতে ওঠা এ প্রশ্নের জবাব কে দেয়।
বেশ বুঝতে পারি ক্ষান্ত হবে না মানুষ ভূলোক নিধনের নষ্টযজ্ঞ হতে। বিপন্ন ফাল্গুন অরণ্য খুঁজে না পেয়ে শ্রীহীন হবে।
আর মাত্র কটা দিন হয়তো এই ঠিকানায়। প্রবেশ নিষেধের বোর্ড ঠেলে ঢুকবে না কোন সোহাগী ঋতু কংক্রিটের নিশুত জঙ্গলে।
তবু কোনো কবির অন্তহীন খেদ্, আগলায় মানুষেরই সবুজ আবেগ! বলে যায় অহর্নিশ
“ভুলগুলো সব ফুল হয়ে যাক!
বসন্তমনোমিতা চক্রবর্তী
বসন্ত কি আসে বলো
সব ফাগুনে ?
আসলে,বসন্ত আসে ভরা শাওনে,উদাস চৈত্রে
কিংবা আশ্বিনে আনমনে।
কথা ছিল খেলবো হোলি
এই ফাগুনে,
পূর্ণিমার আলো মেখে
হারাবো দুজনে।
কথা দিয়েও চলে গেলে
বহু বহু দূরে
তবুও তুমি থেকে যাবে
আজীবন আমার হৃদয় জুড়ে।
জানি আজ তোমার আকাশে
উড়ছে আবীর ফুটছে পলাশ,
আমি ছাড়া তোমার
প্রতিটি বসন্তই কি রঙ্গীন আজ।
সত্যিই বসন্ত ,তুমি নাই বা এলে
আমার ঘরের অন্ধকারে,
আমি যে একলা ভালই আছি
আমার বন্ধ ঘরে ।
কোকিল কেন্ ডাকেমজনু মিয়া
এমনিতেই আজ মনের অসুখ
বসছি নদীর ঘাটে
রাখাল ছেলের মাথা নষ্ট
বাঁশি বাজায় মাঠে।
ফুলের রঙে মন উতলা
দুঃখ বলি কাকে
মরার কোকিল শিমূল ডালে
বইসা কেবল ডাকে!
মন হয়েছে ছটফটে খুব
উদাস উদাস লাগে
ভালোবাসি বলি তাকে
গভীর অনুরাগে।
বসন্ত-দোয়াতে পালক
রীনা মজুমদার
বসন্ত- দোয়াতে পালক গুঁজে
রাই কিশোরী লিখছে কাব্যকথা
বনানী হীন অরণ্যে খেলবে কোথায় রাধা?
বুকের ভেতর জমে থাকা অব্যক্ত সব ব্যথা
কলের কালো ধোঁয়ায় ঢেকে আছে নীলাকাশ
বাজবে বাঁশি, চড়বে পশু পাখি। কোথায় সবুজ ঘাস?
বসন্তের নরম মাটিতে রক্ত ফাগুন
দাগ রেখে যায় কঠোর নীরবতা!
ঋতুর নিয়মে মিঠে রোদে বসন্ত আসে
বেঁচে থাকার দুটো হাত জড়াজড়ি হিমেল বাতাসে
প্রেমের রং লাগুক আকাশে, বাতাসে, অরণ্যে
পাহাড়ে, সাগরের জলে, মনুষ্যত্ব বোধের অন্ধকারে
কেন মেলাতে পারে না রাই কিশোরী
জীবনের নির্মল সব চাওয়া পাওয়া ?
রাই কিশোরী লিখছে বসন্তের কাব্যকথা...
বসন্ত মন
প্রতিভা পাল
শীতের উঠোন জুড়ে ঝরাপাতার আবৃত্তি,
শৈত্য তপস্যার উপসংহারে
বসন্ত বীণায় সুর তোলে নতুনের আবাহন,
সদ্যোজাত সবুজে স্নিগ্ধতার সিম্ফনি !
দখিনা বাতাস কানেকানে বলে যায়-
রাজকীয় প্রাচুর্যে বসন্ত সমাগত !
সম্মোহিত প্রকৃতি আলোর সৌরভে প্রাঞ্জল
কোকিলের কুহুতান মন ভাসিয়ে ভেসে যায়
কোনও দূর-নীলিমায় !
উজ্জ্বল জ্যোৎস্না-মায়ায় সারারাত
অভিসারে জাগে রাত,
রঙিন পাপড়ির নেশায়
পাখনা মেলে প্রজাপতি ঝাঁকে ঝাঁকে,
ভালবাসায় !
নির্নিমেষ চেয়ে থাকি বসন্তর আনাচকানাচে
কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে জাগিয়ে রাখি জীবনের প্রত্যয়...
খোলা চিঠি
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
তোমাকে নিয়ে এক আকাশ লিখব বলে প্রহর কেটেছে
এ যেন নিজেকে জ্বালিয়ে সূর্য কে প্রদীপ দেখাবার এক ব্যার্থ প্রয়াস
স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল জুড়ে এক মহাশূন্যতা গ্রাস করে
গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র অনন্ত আকাশ সবই কেমন তুচ্ছ মনে হয়
সূর্য কে কবিতা পাঠানোর ইচ্ছাটাও বহুকাল ধরে পুষে রেখেছি
পুষে রেখেছি অন্তরের অন্তস্থলে, মনের গোপন কুঠরীতে
শাল, সেগুন, দেবদারু বনে, একান্ত নির্জনতায় তোমাকেই ভাবি
অন্তরে প্রকট হও, পুজিত হও, মায়ালোকের ছায়াদেবতা হয়ে
বৈশাখে তুমি প্রকট হও অসীমে অসীমে বিশ্ব চরাচরে
তোমার কবিতা কাহিনি হয়, তোমার কবিতা গান হয়ে যায়
তোমার বাণী সুর হয়ে ঝরে পড়ে সাত রঙা রামধনু হয়ে
তোমার যাদু লেখনীতে প্রাণ পায় বিশ্বভূবন।
দেওয়ালের ছবিটা
চিত্রা পাল
দেওয়ালে অনেকদিন ধরে ঝুলে রয়েছে ছবিটা, বিবর্ণ মৃতপ্রায়।
এখন ঘসটানো দাগে তার থাকার পরিচয়। ছবিটার ওপরে
শুধুই দৃষ্টির আসা যাওয়া। আর কখনো
অকূল জল পেরিয়ে ছুঁয়ে দেখা ঘাটের কিনারা।
কখনোও চলার পথে পাথর ফলকের নিশানা।
তবু ধুলো সরিয়ে মাঝে মাঝে যে উঁকি দেয়
হয়তো সেইসব অতীতই সাক্ষী হয়ে যায়,
গুটোনো লাটাই এর মতো নিজ মহিমায়। ।
উপহাস
সঞ্জয় (এস.সাহা)
নিদারুণ উপহাস
বিবস্ত্র শরীর
সন্দেশখালি বন্দুকের নলের মত মসৃণ.....
হাস্যময় কল্পতরু
ঝলসানো রোদে
বাতাসে ভাসে পোড়া রুটির গন্ধ !
যৌবনের-উত্তাপ
উষ্ণ-শরীর
গায়ে মাখা আদরের গন্ধ
রক্ত-মাংসের প্রেম!
যদিও মন আজ ধারালো ছুরি
নেই নেই আমার
রথীন পার্থ মণ্ডল
আমার কোনো নদী নেই
যার মোহনায় দাঁড়িয়ে থাকি তোমার জন্য
আমার কোনো বৃষ্টি নেই
যাতে ভিজতে পারি তোমার জন্য
তোমাকে দেবার মতো
আমার কোনো আমি নেই
যার জন্য...
রক্ত-মাংসের ভালোবাসা
মৃড়নাথ চক্রবর্তী
যেই ধূসর ছাদের নীচে আমি বাস করি
সেই ছাদে তোমারও কি মাথা ঠেকে না?
যেই যৌনতার পাত্রে আমি মদ ঢেলে খাই
তাতে কি তোমারও ঘাম থাকে না মিশে?
থাকে না সেখানে কোথাও তোমার আঙুলের ছাপ?
লিপস্টিকের অথবা রক্তের দাগ?
যেই লোকাল বাসের ছিবড়ে ওঠা সীটে
আমি মেরুদন্ড ঠেকিয়ে রাখি
সেই সীটে কোনোদিন তোমার নিতম্ব ঠেকেনি?
যেই জুতো পায়ে দিয়ে আমি
নির্দোষ কোনো পথকুকুরকে সবেগে লাথি কষাই,
কোনোদিন কি সেই জুতোয় পা গলেনি তোমারও?
যেই খাতায় আমি পাতার পর পাতা বমি করে মরি
কোনোদিন কি সেই খাতা তোমার বদহজম ধরেনি?
এই যে তেলচিটে তুলোর কম্বল মুড়ে আমি ফুটপাথে শুই
কোনোদিনও কি এই কম্বল শরীর ঢাকেনি তোমার?
কখনও কি কোনো শীতে দেশী মদের নেশা
তোমার দু'চোখ লাল করেনি আমার মতো?
কখনও, কোনোদিন কি আমার মতো তুমি
আমায় জিজ্ঞেস করোনি শরীর কেমন আছে?
কোনোদিনও কি আমার দিকে চেয়ে
তুমিও বলোনি ওই চোখ জোড়া কত সুন্দর?
কখনও কি তুমি দাওনি ফাঁকি আমায় আমার মতো করে?
এই যে জলে-কাদায় ফ্যাকাসে হওয়া দেহ
রোজ বেচে খাই একটু একটু করে,
কোনোদিনও তুমি তোমার মাপনি দেহের দাম?
যেই কষাইয়ের দেশে বাস করি আমি
সেই দেশ কি তোমারও নয়?
যেমন করে ভালোবাসি আমি
তুমিও কি বাসনা তেমন করে ভালো?
খেলাঘর
দেবযানী সেনগুপ্ত
একটা সকাল ফ্রেমে বন্দী তুমি আর আমি,
কুয়াশা চাদর জড়িয়ে পাহাড়-
দূর দিগন্তে জাগে।
গাছের ছায়ায় নিরালা বাড়ি
শিশির ভেজা মাঠ,
পথের ধারে আবছা আলোয়
রেললাইনের বাঁক।
ভোরের প্রথম চায়ের চুমুক
অনেক কথার খেলা-
' খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি'-
অনেকদিনের এসব স্মৃতি
যায় না এখন ধরা ,
মনের মাঝে এখন বাজে-
'খেলা ভাঙার খেলা'।।
ইচ্ছে
চৈতালী সরকার
মনে আমার ইচ্ছে জাগে একদিন আমি রাত্রি দেখবো,
সারা রাত্রি ঘুরে দেখব আমি কেমন করে ভোরের পাখি ডাকে।
কেমন করে পূবের আকাশ আলোক সজ্জা আঁকে,
রাতের পরে দিনটি যেন সবার ভালো কাটে।
আমার মনে ইচ্ছে জাগে আমি ঝর্নার কাছে যাব,
ঝর্নার ওই শীতল জলে নিজেকে আমি নতুন করে পাবো ,
ঝর্নাকে আমি বলব, "তুমি নেবে আমায়"?
তোমার সঙ্গে পৌচ্ছে দেবে সেই নদীটির বুকে
যেখানে সে সমুদ্রে গিয়ে মিশে।
নদী আমায় পৌচ্ছে দেবে সমুদ্রের পারে।
আমি চাই আমি সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে যাব।
ঢেঁউ আমাকে পৌচ্ছ দেবে মাটির বুকে।
সেখানে আমি শুধুই শান্তি খুঁজে পাব।
একদিন আমি আগুনের কাছাকাছি যাব।
সেখানেই আমি বিলীন হব।
পঞ্চভূতে মিশে একাকার হবে সুন্দর এই দেহখানি,সুন্দর এই পৃথিবীতে।
জল, আগুন , বায়ু, মাটি আকাশে মিশে যাব আমি।
থেকে গ্যাছো
সৈকত দাম
ওই যে এসেছো, থেকে গ্যাছো....
আগুনখেকো বুকের থেকে ,
তীব্র ধোঁয়া গুলো শুষে নিয়ে ,
নিষ্কাশন জানালার এপাড়ে থেকে গ্যাছো....
ঘর বাড়ি পুড়ে যায় ,
মনের ধর্ষন হয় ,
তবু কি অকল্পনীয় ভাবে থেকে গ্যাছো .....
কি যেন ভেবে থেকে গ্যাছো !
বিধাতার এজলাসে ফয়সলা হবে বোলে ?
বাড়ির ঝুল গাছে পাখিরা আসবে বোলে ?
নাকি আমেরিকা শুনবে ,
নিপীড়িত মানুষের চিৎকার বোলে থেকে গ্যাছো ?
নিপীড়িত .....
হ্যাঁ তুমি নিপীড়িত ....
আই ফোনে ছবি নেই , নিপীড়িত তাই .....
নাকি ঘর নেই, বাড়ি নেই ,
শরমের শাড়ি নেই , নিপীড়িত তাই ..... !
যা হোক করে থেকে গ্যাছো .....
চোখের কালো সামলে নিয়ে থেকে গ্যাছো .....
থেকে যাবার দোহাই দিয়ে থেকে গ্যাছো ......
বিছানা বালিশ,রাতের নালিশ,
কিছুই দেয়নি তাড়া ....
পুরোনো গাছের কাছে, জামরুলের ছায়ায় ,
কিসের আগুন বুকে নিয়ে ,
আজও তুমি নিপীড়িত মনে করে ,
অকারণ শুধু থেকে গ্যাছো ........
মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪৩০ (পদ্য/কবিতা/ছড়া পর্ব)