মুজনাই
অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৯
সম্পাদকের কথা
কালের নিয়মে আর একটি নতুন বছর শুরু হল। নতুন আশা, নতুন উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হল নতুনের পথ চলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুনও পুরোনো হবে, আবার আসবে নতুনতর কালচক্র। এই প্রবাহমানতায় বয়ে চলবে নতুন সব স্বপ্ন। কখনও বাস্তব হবে সেসব, কখনও আবার অঙ্কুরেই থেমে তারা। আসলে জীবন এরকমই। দেবে। কিন্তু নেবেও। এই দেওয়া নেওয়ার মাঝের হিসেবে এতটাই সূক্ষ যে খালি চোখে ধরা পড়ে না। তাই জীবনের প্রতি ভালবাসা যেমন, ক্ষোভও ঠিক তেমন। আর এই সব কিছু নিয়েই নতুন পুরোনো হয়েও নতুন আবার। নতুন বছরের শুভেচ্ছা তাই। সমৃদ্ধ হোক সকলের জীবন।
মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৯
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)
প্রচ্ছদ ছবি- রিসা দাস
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৯
এই সংখ্যায় আছেন
প্রশান্ত চক্রবর্তী, সপ্তাশ্ব ভৌমিক, প্রতিভা পাল
রূপক রায়, দেবদত্তা লাহিড়ী, রীতা মোদক,
সারণ ভাদুড়ী, অলকানন্দা দে, ছবি ধর,
পার্থ বন্দোপাধ্যায়, বিনয় বর্মন, মজনু মিয়া,
স্বপন কুমার দত্ত, সোমনাথ বণিক
ক্রোড়পত্র- অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী, দেবাশিস ভট্টাচার্য,
চন্দ্রানী চৌধুরী, রীনা মজুমদার, আকাশলীনা ঢোল,
অদ্রিজা বোস, বটু কৃষ্ণ হালদার
মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যায় ১৪২৯
কবিতা
শরণার্থী
প্রশান্ত চক্রবর্তী
শুধুমাত্র মানুষ না । পাখিরাও শরণার্থী হয় ।
খুনখারাপির শিল্পকর্ম পড়ে থাকে দিনের আলোয় । গোল চাঁদ ক্ষয় হয়ে যায় ছিন্নমূলের বেদনা নিয়ে ।
নদীর আর্তনাদে হাওয়া আসে।
ডানার আতঙ্ক পার হয়ে যায় কাঁটা তার, পার হয়ে যায় চককেন্দুয়ার বিল ।
সেখানে পাখি ও মানুষ দাম্পত্যের কথা বলে ।
মধ্যরাতে জীবনের সব জটিলতা মুখোমুখি এসে বসে । আদিম অবলম্বন ঠোঁটের উপর ।
শহর জ্বেলেছে লক্ষ ওয়াটের আলো, পাখিরা তাই ছিন্নমূল ।
দাঙ্গার আগুনে আমার পূর্বপুরুষ ।
আলোর দাগ
সপ্তাশ্ব ভৌমিক
একটা শব্দ নিঃশব্দে কবিতা হয়ে ওঠে
একটা উচ্চারণ গোপনে গান হয়ে ওঠে
একটা রেখা একাকিত্বে ছবি হয়ে ওঠে
একটা চোখ দুঃখের দর্পণ হয়ে ওঠে
একটা স্মৃতি স্বপ্নের সারথি হয়ে ওঠে
একটা জীবন বিশ্বের মানচিত্র হয়ে ওঠে
পথের ধুলোর ভিড়ে অজস্র আলোর দাগ
তোমাকে সবার থেকে পৃথক করেছে।
পরিযায়ী শীত
প্রতিভা পাল
পৌষালী শীতের রুক্ষতায়
কুয়াশার শব্দহীন নীরবতা !
বিবর্ণ রাতের ক্যানভাসে কান পেতে শুনি
শুনশান সময়ের সিম্ফনি ;
ধোঁয়া-ধোঁয়া কত আবছায়ার হাতছানি পেরিয়ে
প্রতিবিম্বিত মনের কোণে শিশিরের আর্দ্রতা !
অযথাই ভুলে যাই ভুলে ভরা জীর্ণ জীবন,
জীবাশ্ম-স্মৃতির জলছাপ ;
সোঁদা গন্ধ মেখে গ্রীষ্মর উষ্ণতা সাজাই
সদ্যোজাত শীতে ;
দিন রাতের মতো আবহমান যত আনন্দ-বিষাদ,
আগামীর নতুনে সেসব সূর্যস্নাত হলে
মুহূর্তরা উদ্ধৃতি লেখে এক অনুপম আবেশে ;
পরিযায়ী শীত শেষে কল্পনার স্বরলিপিও
বসন্ত ছোঁয় ছায়াপথ-ঘেঁষে, অনায়াসে...
ফিরে এসো
রূপক রায়
আমরা মুখোমুখি দাঁড়াতে ভুলে গেছি
আমাদের শিরদাঁড়া হয়ে গেছে চুরি
পাতা ঝরার কোনো এক মরশুমে
ভোতা হয়ে গেছে সব কলমের মুখ
কালি যেন চুপ করে জমে গেছে
কখন জানি সর্বস্ব লুঠ হয়ে গেছে ।
বেঁচে থাকা অভ্যাসে আজ শুধু
মানুষ মিছিল কতশত রাজপথে
আইনের মারপ্যাঁচে কখন জানি
সময় গুলো নষ্ট হয়ে গেছে
চুপিসারে সব জানাজানি হয়ে গেছে
লুঠেপুুটে চেটেপুটে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে ।
খাদ্য চাই শিক্ষা চাই কর্ম চাই আন্দোলন চাই
বাঁচার মতো বাঁচতে চাই....
সবাই কখন জানি সব কিছু ভুলে গেছে
নদী জীবন
দেবদত্তা লাহিড়ী
এক নদী জীবনে কি হয় ?
জল থই থই অনুভূতি, নদীমাটি অভিজ্ঞতা,
খরস্রোতে সব ভাসিয়ে নেওয়া যৌবন ভোর
কুয়াশা ঘেরা রহস্য।
চোখ তখন বন্ধই থাকে।
ভাবনারা সব গুড়িয়ে দিতে উদ্ধত হয়।
ধীরে ক্রমে ধীরে পা বাড়িয়ে-
ভোর দুপুর হয়,চোখ খোলে।
অনেক উপত্যকা পেরোনো জীবন তখন
আরো নদী মাটি জমায়
বয়ে চলা প্রাণচঞ্চল তার একমাত্র লক্ষ্য।
উর্বরতা তার ধর্ম।
এক বিকেলে নদী প্রসার হয়,
তখন সে শান্ত গভীর
জোছনার আলোর মত শীতল।
তখন নদী আর একা রয়না ।
বরং তখন নদী এমন একা হয়,
যাতে বহুমাত্রিক জীবন অন্তঃসলিলা হয়ে তিথিপূর্ণ কল্পে লীন হতে
নদী তখন একা বয়।
মুক্তি
রীতা মোদক
বুকের ভেতরের মৌনতা ভেঙ্গে দিয়ে,
আমি মুক্ত বাতাসের চলাচল দেখি।
গুপ্ত গহবরের দেয়াল ভেঙে ---
একটা মস্ত সমুদ্র আঁকি ।
নতুন ভাবে সারণ ভাদুড়ী
এটাই সময় নতুন করে লেখার,
এটাই সময় নতুন ভাবে গড়ার...
হ্যাঁ ,এটাই সময় নতুন কাব্যে জীবন পদ্য রচনার।
দূরের দিগন্তে সেই সূর্যোদয়
যা দিয়েছিল বাঁচার আশা,
আজ তা ই হল জীবনের পাওনা।
ওই গাছের ফুল গুলো,
যা অনেকটা তুলোর মতন,
তাও অপেক্ষা করছে আরও নতুনভাবে ফোটার।
তাই এখন পুরোনো কে, তুমি ভুলতেই পারো।
আবার লেগে যেতে পারো,
নতুনভাবে নিজেকে খোঁজায়।
যেখানে হাজার ইচ্ছে, হাজার স্বপ্ন বসে আছে
তোমায় নতুন রূপে দেখতে।।
ভাবনা
নদীচরের সংসার
অলকানন্দা দে
কবিতার মতো কথা ছড়িয়ে বয়ে যাওয়া নদীটাকে আত্মীয় মানে তাঁরা যাঁরা নদীর সাথে নিবিড় হয়ে থাকেন অষ্টপ্রহর! বুঝদার এই বিপুল জলরাশির সাথেই গড়ে ওঠে তাঁদের বেঁচে থাকার যাবতীয় শর্ত। নদীচরের জীবন-কথাগুলি সমর সমান। নির্মম কঠিন হলেও বংশপরম্পরায় তাঁরা এভাবেই কাটান নদীকে পড়শি করে। নদীর দর্প নদীর প্রশান্তি নদীর ভালোবাসা এবং তার খামখেয়ালীপনা নিয়েই তাঁরা সামলে চলেন জীবনটা চরের বুকে সম্বৎসর। এখানে গড়ে ওঠা প্রকৃতি, মানুষের সংসার ও অসামান্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য যার মায়া ছাপিয়ে যায় হৃদয়কূলকে, শরিক হতে ডাকে নির্ভেজাল আমন্ত্রণ পাঠিয়ে! দেখে মনে হয় এত অপূর্বের মাঝে বসবাস আশীর্বাদ নয় তো কি! ছায়ামাখা চরের প্রশান্তির মেহমান হতে সমস্ত মন চাইবে একযোগে। কিন্তু শুধুই কি ভালোলাগার ক্ষীরের আস্বাদ! এর অন্দরে লুকিয়ে থাকা অনিশ্চয়তা মূলছেঁড়া করে কত সংসার কত সমাজকে! নদীর শুক্লমহিমা ও তার দিয়ে যাওয়া আশ্বাসে ভরসা রেখে যাঁরা ঘর বেঁধেছেন শস্য ফলিয়েছেন লালন করেছেন গবাদি, তাঁরাই একদিন নদীর বেপরোয়া ব্যবহারে দিশেহারা হয়ে প্রাণের তাড়নায় উঠে যান অন্য মাটিতে। পাড় ভেঙে ভেঙে এগিয়ে আসে নদী আত্মসাৎ করতে এতদিনের গড়ে তোলা ভিটেমাটি। হাহাকারের স্রোতে ভেসে যায় সবকিছু! নদীর উগ্র নীতির শিকার হতে হয় মানুষকে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই।
একটু একটু করে তাঁরা দেখেন এগিয়ে আসে নদী সাজানো সংসারটাকে মিলিয়ে দিতে অবৈধ স্রোতের গহীনে। রাতভর জেগে থাকেন তাঁরা এই বুঝি তলিয়ে যায় ছাদটুকু সরিয়ে নেবার আগেই। এরকম কত সংসার বিলীন হয় ক্ষমাহীন স্রোতের ধ্রুব অতলে। নদী তবু নির্বিকার, মৌন! এই পরাজয়ের দৃশ্য কি চোখে সয়! একজীবনে একটি বসতভিটের আয়োজন করতেই মানুষের কত কঠিনের সন্মুখীন হতে হয় আর এই চরবাসী নদীর মেজাজকে মর্যাদা দিয়ে লড়াই চালিয়ে যান জীবনময়। এক জীবনে পাঁচ ছ বার স্থান পরিবর্তন নিতান্ত সাধারণ কথা। তবু তাঁরা নদী ছেড়ে এই চর ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। এক অমায়িক মায়া তাঁদের বেঁধে রাখে এই চরের মাটিতে। একেই হয়তো আত্মীয়তা বলে! ভেঙে পড়া আর উঠে দাঁড়ানোই যার রসায়ন!
বেঁচে থাকার পাঠ নিতে হয় এই সংগ্রামীদের পাঠশালায়! প্রসারিত মনে আবার তাঁরা কিভাবে সবুজ উৎপাদন করেন এই অবিশ্বাসের জমিতে সেই শিক্ষাকে জীবনে প্রত্যয়ের মন্ত্র মেনে নিতে হয় এককথায়! নদীর রাক্ষুসে খিদে ও দখলদারি মনোভাব এই বিশ্বাস ভাঙতে পারে না যেতে যেতে! নদীভাঙনের মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি যদি নির্মূল করা যেত, যদি ভেবে দেখা হোত এই দুর্ভোগ জয়ের উপায় তাহলে এই মানুষগুলো উপচে পড়া প্রশান্তিতে বসবাস করতেন রূপকথার হৃদয় জুড়ে! নদীচর আসলে রূপকথার মতই! শুধু একটু সুরক্ষার সুখরেখা আশ্বস্ত করতে পারে তাঁদের ঝাপসা আগামীর উৎকন্ঠা থেকে। সঞ্চিত সম্বলের সীমানাজুড়ে থাকবে নিশ্চয়তা, জীবনের কাছে এটুকু নিরাপত্তা কে না চায়!
ক্রোড়পত্র
করুণাধারায় এস
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী
একটি বছর যখন দুঃখ- আনন্দ, হাসি -কান্না , ভালো -মন্দের ঘটনাপ্রবাহের একবোঝাই রং নিয়ে ক্লান্ত মনে, শ্লথ পায়ে তার বারোটি মাসের দীর্ঘ পথচলার অন্তিম লগ্নে পৌঁছোয়, চলে যাবার আগে বড়দিন তার ভালোলাগার ঝাঁপিতে যোগ করে আনন্দমুখর, পবিত্র, উজ্জ্বল একটি দিন। আবার বড়দিনের দিন থেকেই আর মাত্র কিছুটা দূরের, যাকে আর অল্প হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে নেওয়া যাবে, নতুন বছরে পা দেওয়ার আকাঙ্খিত সেই প্রথম দিনটির বিশেষ ভাবে দিনগোনা শুরু হয়।
বছরের প্রতিটি উৎসব তার নিজস্বতা নিয়ে, সেই সময়ের মরশুমের মাদকতা নিয়ে, তাকে ঘিরে মানুষের স্পর্শকাতরতা ও আন্তরিকতাকে সঙ্গে করে সাধারণতায় বা স্বাড়ম্বরে একে একে হাজির হয় সময়ের দরবারে।
বড়দিনে সারা পৃথিবী জুড়ে বহু গীর্জা, বহু রাজপথ সেজে ওঠে আলোর সাজে। সেই আলোর মালার প্রতীক্ষার ফুলে সুবাসিত হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আন্তরিক সুঘ্রাণ।সেই শান্ত সমাহিত আলোর পথযাত্রীর পুণ্যতিথিতে তাঁর ক্ষমাসুন্দর চোখের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে উপাসনাগৃহ গুলিতে মিলিত হয় প্রার্থনায় নিমগ্ন অগণিত চোখের তারা। সেই শ্রদ্ধার নিমগ্নতার শুভকামনা ছুঁয়ে থাকে আসন্ন বছরটির শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, অহিংসা, বন্ধুত্ব, সাম্য এমন অনেক শুভবোধের স্বপ্নকে। সমস্ত অহংকার, ঈর্ষা ও কলুষতার কালিমা পেরিয়ে জাতি ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে আলোকজ্জ্বল এই দিনটি আসে মহানুভবতা ও আশার বাণীর এক শপথদিন হয়ে। মোমের নরম মায়াবী আলোয়, নীরবতার বাতাবরণে সেই যুগপুরুষের কাছে মাথা নত হয় বারবার। কুয়াশা ঘেরা ভোররাতে ছোটদের বালিশের পাশে রাখা মোজাগুলি উপচে পড়ে স্যান্টাক্লজ নামে সেই বিশ্বাস, সেই হাসি খেলার জাদুকর, সেই ভালোবাসার ফেরিওয়ালার দেওয়া উপহারের নাম হয়ে। এভাবেই বড়দিন আসে বছরশেষের এক মিলনদিন হয়ে.. নতুন করে মনের আলো জ্বেলে আগত নতুন বছরের পথচলার এক অনুপ্রেরণার দিন হয়ে।
যা কিছু নতুন, তাই সুন্দর.. তাই প্রাণময়..তাতেই আশা, স্বপ্নপূরণের আবেগ। পুরোনোর সবটুকু ভালোলাগাকে অমলিন রেখে তাই নতুন বছর আসে সময়ের কাছে অনেক দাবি, অনেক আবদার, অনেক পরিকল্পনা, চাওয়া -পাওয়া, ইচ্ছেপূরণের প্রার্থনার নতুন দিন হয়ে। অদৃষ্টের অমোঘ বিধানে লেখা থাকে সারা বছরের সুখ- দুঃখের গল্প। তবুও নববর্ষের দিনটি অগণিত মন সদর্থক ভাবনায় ও মঙ্গলকামনায় ব্রতী হয় নিজ নিজ বিশ্বাসের কাছে, পরম করুণাময়ের কাছে। বড়দিনের উৎসবের আমেজ নিয়েই নতুন বছর তার নতুন দিনটিতে মহা সমারোহে সেজে ওঠে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন হারিয়েছে অনেক ঐতিহ্য, আবেগ ও মূল্যবোধকে। চাওয়া পাওয়ায় বিপুল এক বদলের হাওয়া কমবেশি সর্বত্র। বড়দিনের কেকই হোক বা নববর্ষের আউটিং সবেতেই এক কৃত্রিমতার মোড়ক ,আকারণ এক অনুকরণপ্রিয়তা।প্রাণহীন জৌলুসকে উদযাপনের উন্মাদনায় জোর করে জাহির করবার উন্মত্ত প্রবণতায় এই বিশেষ দিনগুলি নিজেদের মাধুর্যকে হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ। তবুও আশার প্রহর গোনা। বড়দিনের আপামর গীর্জার ঘন্টাধ্বনি ও পৃথিবী জুড়ে সমস্ত মন্দির, মসজিদ, গুরুদোয়ারার প্রার্থনার সুর একই মানবতায়, ক্ষমায়, অহিংসায়, মৈত্রীর সুরে ধ্বনিত হোক।সেই সুরে সুরেলা হোক নতুন বছরের প্রতিটি ক্ষণ।সমস্ত বয়সের সমস্ত মেয়েরা পৃথিবীর যে কোনো কোণেই নিরাপদ থাকুক আর মহামারির অভিশাপ মুক্ত এক সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর ছবি আঁকুক নতুন বছর।সত্যের আলোয় নির্ভয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন পথচলা জারি থাকুক।বিশ্বপিতার আশীর্বাদধন্য হোক নতুন বছর। বিশ্বাস ও উষ্ণ আন্তরিকতা হোক সম্পর্কের অঙ্গীকার। আলাদা আলাদা ইংরেজি ক্যালেন্ডারে বছরশেষের আর বছরশুরুর তারিখে সময়ের স্বল্প ব্যবধানের এ দুটি উৎসব তাদের পালনের গভীরতায়,সহজতায় ও সার্থকতায় খুঁজে পাক বিশেষ এই দুটি দিনের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্যকে।
সান্তাক্লজ
দেবাশিস ভট্টাচার্য
কোন সূদুরে তাঁর যে বাড়ি
কোন সে দেশে থাকে
লক্ষ্মী সোনা খোকা খুকু
নামেই চেনে তাঁকে
রাতদুপুরে চুপটি করে
শিশুর ঘরে ঢুকে
দেয় উপহার ভালোবাসার
রা কাটে না মুখে
ডিসেম্বরের পঁচিশ তারিখ
যীশু জন্মের রাত
আগের রাতে সান্তা এসে
মাথায় রাখে হাত
ঘুমিয়ে থাকা শিশুর মোজায়
কিংবা জুতোয় পুরে
রেখে আসে তাঁর উপহার
শিশুর নামটি জুড়ে
ঘুম ভাঙলেই সান্তাক্লজের
ভালোবাসার দান
হাতে পেলেই শিশুরা হয়
খুশীতে আনচান।
নববর্ষের আলো
চন্দ্রানী চৌধুরী
নববর্ষের আলোয় আজ আতর ঢালে মন
অজুত গোলাপ পাপড়িসহ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন
রামধনু রং আকাশ থেকে নেবো সোনা রঙ
উজার করে ছড়িয়ে দেবো আমাদের ভুবন ।
তানপুরাতে তুলে নিয়ে সুরের ঝংকার
গানে গানে ভরিয়ে দেবো জগৎ পারাবার
দুষ্টু মিষ্টি খুশি ভরা আনন্দ বোল তুলে
জমিয়ে দেবো আসর আজকে সবাই মিলে
কথায় কথায় জেনে নেবো সবার মনের কথা
আপন করে শুনব সবার ভালোবাসার গাঁথা
করজোরে এ প্রার্থনা করছি মনেপ্রানে
দীর্ঘজীবী হোক সকলে সবার আশীস দানে ।।
রঙিন কুঁড়ি
রীনা মজুমদার
দিন বড় হচ্ছে, রাত তখন ছোট হয়
পাতা ঝরে পড়ছে, স্বাভাবিক ভাবেই
পুড়ছে পাতা দাবানলে
হাওয়ায় ধেয়ে আসছে
মিথ্যা, গ্লানি, লোভ
পুড়তে দাও পুড়তে দাও, আগুনেই
রুক্ষ মাটির বুকে বিন্দু বিন্দু শিশির!
জীবন ভাঙছে, মনের শার্সি গুলো
খুলছে না কেন তবে স্বাভাবিক ভাবেই?
পেছন ফিরে দেখি, শাখায় শাখায়
ভরছে সবুজ পাতা, পাখির কলতান
আমি তোমাকেই খুঁজি, আড়ালখানা ভেদ করি
রাঙা আলোয় দেখব প্রথম সূর্যোদয়
পাতা ঝরা শেষে, ভরছে রঙিন কুঁড়ি
নতুন সুরে নতুন ভোরে জয়ের মালা গাঁথি..
ঈশ্বরের উপহার
আকাশলীনা ঢোল
ওদের দিন কাটে স্টেশনের চত্বরে,
কখনও প্ল্যাটফর্মে, কখনও ওভারব্রিজে,
আবার কখনও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের
জানলার ধারে ধারে।
এদের কারো হাতে বাটি তো
কারো হাতে লাঠি,
কেউ আবার ঢাল-তলোয়ার বিহীন
নিধিরাম সর্দার।
ওরা রোজগার করে, হ্যাঁ ভালই রোজগার
ওদের, খুচরো পয়সার মালিক তারা।
তবে, ঐ কটা পয়সায় তো খাবারও জোটে
না তেমন, বস্ত্রের অবস্থাও তথৈবচ।
তবু তাদের দিন কেটে যায়, আসে বড়দিন-
হ্যাঁ, তাদেরও আসে বড়দিন।
যেদিন একটু বেশি ভিক্ষা পায়,
কিংবা কোনও দয়ালু ব্যক্তির
দয়ায় গায়ে ওঠে একটা মলিন অথচ
অক্ষত শাড়ি-জামা, কিংবা
যেদিন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার
আকস্মিক আগমনে জুটে যায় দুটো
শীত-বস্ত্র, সেই দিনগুলো ওদের বড় দিন।
'বড়দিন ' তাদের কাছে কোনও উৎসব নয়,
এরকম একটা বড় দিন পেলে হাসির রেখা
ফুটে ওঠে ওদের মুখে।
এই দিনগুলোই হয়ে ওঠে
তাদের কাছে, ঈশ্বরের উপহার।
শিল্পী- অদ্রিজা বোস
বড়দিন হল খ্রিস্ট প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব
বটু কৃষ্ণ হালদার
"নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান" এই মহান উক্তির মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ দেশ প্রেমীদের আত্ম ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভারত বর্ষ বিশ্বের দরবারে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।এই দেশের আগাগোড়া রক্তের বেড়া জাল দিয়ে ঘেরা।তবে আমরা এই চরম সত্য অনেকে মেনে নিতে পারি না।দেশ নায়কদের অপমান করা ব্যাক্তি রা ও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।এর কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উৎসব পালিত হয়।সেই সংস্কৃতির টানে বিদেশি পর্যটক রা আগত হন।ধর্মের টানে ভারতে এসে অনেকে স্থায়ী বসতি গেড়েছে।একদিকে যেমন ধর্ম পালন,সংস্কৃতি সমন্ধে জ্ঞান লাভ করা হয় তেমনি ব্যাবসা তে ও সমৃদ্ধি লাভ হয়।
ভারতে যেমন দুর্গাপূজা,কালীপূজা, গণেশ পূজা, ছোট পূজা, ঈদ মহরম আনন্দের সাথেই পালিত হয় ঠিক তেমনি পালন করা হয় আত্ম ত্যাগের দেবতা ঈশ্বরের পুত্র পবিত্র যীশুর জন্মদিন যা সমগ্র বিশ্বের কাছে দিন বড় দিন হিসাবে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই উৎসব আমাদের ভারতবর্ষে পালিত হয়ে আসছে। প্রভু যীশু আমাদের পাপের কারণে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন।তাই এই উৎসব খিস্তি প্রেমীদের জন্য ত্যাগের উৎসব হিসাবেই পরিচিত।বড়দিন কি জন্য পালন করা হয় তা আমাদের একটু জেনে নেওয়া দরকার। প্রকৃতি চলে তার আপন খেয়ালে। তাকে উপেক্ষা করার মতো সাহস মানবসমাজের নেই। মানব সভ্যতা তারা যখন প্রকৃতি প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছে তখনই সেই সমস্যা সমাধানের উপায় নিজেই খুঁজে বার করেছেন। পাপে পরিপূর্ণ ও জর্জরিত মানবসভ্যতাকে তিনি যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি তাকে ধ্বংস করেছেন। সেই ইতিহাস আমরা বহুবার পড়েছি। ঠিক তেমনি সত্য ও ন্যায় কখনো প্রধানত হয়নি মিথ্যার কাছে। সূর্যকে যেমন আড়াল করা যায় না তেমনি সত্য ও ন্যায় ধর্মের কখনোই মিথ্যার বেড়াজাল দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। এই পৃথিবীতে যখনই অধর্ম পাপ অরাজকতা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে ঠিক সেই সময়ে কোন না কোন ধর্মের প্রতীক ঈশ্বরের দূত এসে সেই পাপ থেকে অ_ধার্মিকদের মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রভু যীশু হলেন তার জ্বলন্ত নিদর্শন।
খ্রিস্টীয় বাণী অনুযায়ী আমরা জানতে পারি ঈশ্বর যেমন ঝড় জল আলো বাতাস সৃষ্টি করেছিলেন ঠিক তেমনি তার আশ্চর্যতম সৃষ্টি হল আদম আর হবা।তাদের কে মানুষরূপে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তাদের সৃষ্টি করার পর তিনি বলেছিলেন তোমরাই পৃথিবীর সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য ভোগ করো কিন্তু একটি গাছের ফল খেওনা।সেই গাছের নাম হল সদ সদ জ্ঞান দায়ক বৃক্ষের ফল। কিন্তু তারা শয়তান সাপের প্রলোভনে পা দিয়ে, সেই গাছের ফল হবা নিজে খেলেন তার স্বামীকে ও খাওয়ালেন। এই কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বর খুব রেগে গেলেন কারন তারা ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করেছিলেন। ঈশ্বর রেগে গিয়ে তাদের অভিশাপ দেয় যে দশ মাস দশ দিন প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করে এ পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি করবে। সেই বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে। একের পর এক বংশ বিস্তার লাভ করতে করতে মানব সৃষ্টি হতে থাকে। মানুষ সৃষ্টি হতে থাকলো এর ফলে পৃথিবীতে পাপের ভাগ বাড়তে লাগল।মানুষ ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করতে শুরু করলো। ঈশ্বর পরিস্থিতি বুঝে তিনি অনেক জ্ঞানী গুণীদের প্রবক্তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তারা পাপীদের উদ্দেশ্যে বারবার বলেছিল তোমরা পাপ করোনা মন ফেরাও। কিন্তু তারা কোন কথায় কর্ণপাত করলো না।পাপ, অরাজকতা য় যখন পৃথিবীতে পরিপূর্ণ হতে লাগল তখন মানুষ ক্রন্দন করতে লাগলো আমাদেরকে বাঁচাও ঈশ্বর আমাদেরকে বাঁচাও। তখন যোহন লিখিত সুসমাচারের ৩ অধায়ে লিখিত আছে:_ঈশ্বর পৃথিবীতে এমন প্রেম করলেন,যে তার এক জাত ও সন্তানকে দান করলেন,যে কেউ তাকে বিশ্বাস করে,কেউ যাতে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করে। এরপর ইসতির মনস্থির করলেন তার সন্তানকে পৃথিবীতে পাঠাবেন।কিন্তু তার সন্তানকে যে পাঠাবেন তার জন্য তিনি কোনো পবিত্র গর্ভ পেলেন না। অবশেষে খোঁজ পেলেন মরিয়মের। কিন্তু মরিয়ম ছিলেন অবিবাহিত। যোষেফের বাগদত্তা।তিনি মরিয়মের কাছে স্বর্গের দুতের দ্বারা খবর পাঠালেন।ঈশ্বরের দুতের সেই কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। তখনই ঈশ্বরের বাণী মরিয়মের কানে ধ্বনিত হলো তুমি ভয় পেয়ো না। এই প্রথম পৃথিবীতে কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া মরিয়মের গর্ভে প্রভু যীশুর স্থান হল। এরপর যখন তারা বেথলেহেমে নাম লেখাতে গেলেন। তখন মরিয়ামের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। বেথলেহেমে এত বেশি লোকের সমাগম হয়েছিল সেখানে তারা কোন জায়গা খুঁজে পেল না।অবশেষে এক আস্তাবলে যীশুর জন্ম হলো। যীশুর যখন জন্ম হলো তখন মেষপালক রাখাল রা মাঠে ছিলেন। তখন ঈশ্বরের দূত তাদের খবর দিলেন, যে তোমাদের মহা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি,দাউদ নগরে এক রাজার জন্ম হয়েছে। তখন রাখালরা দৌড়ে গিয়ে দাউদ নগরে সেই রাজা কে দেখতে গেলেন। ঠিক সেই সময় একটা তারা উদিত হয়েছিল। তিনজন জ্ঞানী সেই তারা কে দেখে, গণনা করে বলেছিলেন এক রাজার জন্ম হয়েছে। সেই তারা কে অনুসরণ করে করে পণ্ডিতরা হেরোদ রাজার প্রাসাদে খবর নিতে গেলেন, পণ্ডিতরা বললেন আপনার প্রাসাদে রাজা জন্ম নিয়েছে আমরা তাকে প্রণাম জানাতে এলাম।পণ্ডিতদের সেই কথা শুনে হেরোদ রাজা অবাক হয়ে গেলেন।বললেন রাজার দেশে রাজা জন্ম।এই ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাদেরকে বললেন আপনারা খোঁজ নিন যদি সেই রাজার দেখা পান আমাকে খবর দেবেন। তখন পণ্ডিতরা পুনরায় সেই তারার অনুসরণ করে আস্তাবলে পৌঁছালেন।তাকে প্রণাম করলেন আর সোনা,কুন্দ্রু,গন্ধ রস সহ দামি জিনিস উপহার দেন। আর রাজা হেরোদ দূত পাঠিয়ে দাউদ নগরের সমস্ত শিশুদের মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে যেতেই প্রভু যীশুর মাতা ও পিতা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর পর প্রায় ৩০ বছর তিনি তার পিতা-মাতার সঙ্গে ছিলেন।পিতা মাতার সঙ্গে থাকাকালীন প্রভু যীশু তার অলৌকিক আশ্চর্য কাজ আরম্ভ।অন্ধকে চোখ দিলেন,দুর্বলকে হাঁটার শক্তি দিলেন,কবর দিয়ে তুলে মৃত পচা গলা দেহতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন,ভূত ছাড়ালেন। তার অলৌকিক কার্যাবলীর খবর চারিদিকে রটে যায়,সবাই যীশু যীশু বলে গৌরবান্বিত করতে লাগলো।তার এই উত্থান ভালোভাবে মেনে নেননি তৎকালীন সমাজের বিদ্বজনরা।যারা তৎকালীন সময়ে ধর্মের নামে ব্যাবসা শুরু করেছিল তারা ভয় পেয়ে গেল যীশ কার্যকলাপ দেখেস। অবশেষে সমাজের নিয়ম অবমাননার দায়ে তার বিচার চাইলেন পিলাতের কাছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল বিচারের জন্য।কিন্তু পিলাত তার কোন অন্যায় ধরতে পারলেন না।। কিন্তু সমাজের নিয়ম বাহকরা চিৎকার করে বলল যীশুর বিচার চাই তাকে ক্রুশে দাও,ক্রুশে দাও। পিলাত চিৎকার শুনে জনগণের পক্ষে গেলেন। তবুও তিনি বলেছিলেন এই উপবাসের মাসে আমরা একজনের শাস্তি মুকুব করতে পারি। কিন্তু দুষ্কৃতী বারাব্বাস কে মুক্তি দিলেও যীশুকে মুক্তি দেয়নি।তাকে ক্রুশে দেবার অনুমতি দিলেন। এরপর তারা যীশুকে নিয়ে গেলেন ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য।মাথায় কাঁটার মুকুট পরানো হোল। ঊনচল্লিশ বার চাবুক মারা হলো। সারারাত নির্যাতন করা হলো।সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেলো।এর পর তাকে দিয়ে মাইল এর পর মাইল ক্রুশ বহন আনা হোল।নিজের বয়ে আনা ক্রুশে তাকে হত্যা করানো হল।।ক্রুশে থাকা কালীন তিনি অপরাধীদের সম্পর্কে বলেছেন:_হে পিতা ঈশ্বর ওদেরকে ক্ষমা করো ওরা নিজেরাই জানেনা ওরা কি করছে।তিনি ক্ষমার বাণী শুনিয়েছেন।ত্যাগের বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধীর অপরাধ ক্ষমার কথা বলেছেন"।অথচ বর্তমান সময়ে ধর্ম কে হাতিয়ার করে চলছে নিধন যোগ্য।
ধর্ম হলো আত্মার আকুতি।ধর্ম কথার প্রকৃত অর্থ হলো নিজের ধর্ম কে অক্ষরে অক্ষরে পালন ও রক্ষা করা আর অন্য ধর্মর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কিন্তু বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি ধর্মের নামে একশ্রেণীর ধর্মান্ধরা রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে।এটা সত্যি কি কোন ধর্মের বাণী হতে পারে?কার ধর্ম বড় তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছেসিরিয়া,আফগানিস্তান,পাকিস্তান,চিন,ফ্রান্স,সহ বাংলাদেশ তার জীবন্ত নিদর্শন। আমরা কম-বেশি অনেকেই ধর্মের বাণী শুনি বলি ধর্ম স্থানে যাই, কিন্তু প্রকৃত মানুষ কয়জন হয়ে উঠেছি?মানুষের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বারবার মানবসভ্যতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে,আর তার জন্য দায়ী কারা সেই প্রশ্ন সবার সামনে রেখে যাই।
গল্প
দোমহনীর ভুত
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পুজোর আগে ঘর ঝাড়াঝাড়ির সময় হস্তরেখাবিদ কিরো'র পুরোনো "হস্তরেখা দর্পন" বইটা হাতে এসেছিল। সময় পেলে মাঝে মধ্যে সেটা ঘাটাঘাটি করতাম। মনে মনে শখের গোয়েন্দা (জ্যোতিষী) হওয়ার ইচ্ছে ছিল। একদিন আমাকে সেই বই পড়তে দেখে গল্প দাদু তার দুই হাত বাড়িয়ে দিলেন। গল্প দাদু আর কেউ নন শীতল শর্মা, তিনি আমাদেরই প্রতিবেশী। খুব কাজের চাপ থাকলেও তার পাশে বসলেই গল্প জুড়ে দিতেন ।
হাত যখন বাড়িয়ে দিলেনই তখন তো দেখতেই হয়। খুব সুন্দর তার হাতের রঙ, সব রেখা গুলো ও খুব সুন্দর। গল্পদাদু কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে কাজ করেন। যতটুকু বিদ্যে তা দেখে যাকে যা বললাম তার প্রায় সবটাই মিলে গেল। সে খবর কখন যেন ভাইরাল হয়ে গেছে। সেটা বুঝলাম গল্পদাদুর আর এক বন্ধুর আবদারে। আমি যত না বলি, গল্পদাদুও ততই নাছড়বান্দা, " হাতে আর কি কি আছে বলো"।
"...আপনার রাগটা একটু বেশি, রাগ সংবরণ না করতে পারলে, যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। এটা ছাড়া সব কিছুই আপনার হাতে ভালো। আমি বললাম। "
পরের শনিবার বাড়ি ফিরবার পথে গল্পদাদুর সাথে দেখা। তার হাতে প্লাসার, বুকে সাদা ডায়নাপ্লাস্টের ব্যান্ডেজ নিয়ে বাড়ির সামনে পায়চারি করছে।আমাকে দেখে যেন ঈশ্বর দর্শনের মতো এগিয়ে এসে বসবার ঘরে নিয়ে গেলেন।
চা পর্বে একথায় সেকথায় বললাম, " শুনেছি দোমহনী রেলস্টেশনে সন্ধ্যা হলেই ভুতের উপদ্রব ছিল। ভুত পেত্নীর ভয়ে কেউ সেখানে যেতে চাইত না। আপনি কখনো ভুত দেখেছেন?"
"....হ্যাঁ একবার সত্যি সত্যিই ভুতের কবলে পড়েছিলাম।" গল্পদাদু বললেন, "তিস্তা নদীর বাঁধে থাকতেন আমাদের পারিবারিক বন্ধু স্বপন সোম। একদিন বিকেলে স্বপন দা ফোন করলেন, "মা পিঠে বানিয়েছে, সন্ধ্যায় চলে এস।"
গল্পদাদু ইয়া মোটা গোঁফ আর বড় বড় চোখ করে বলে চললেন, "আমি স্বপন দা'র বাড়িতে পিঠে খাচ্ছি আর ৬৮ সালের বন্যার গল্প শুনছি। বন্যায় চারিদিকে যখন জলে জলাকার তখন পানীয় জলের সংকট হয়েছিল। বন্যায় বহু গবাদি পশুর সাথে অনেক মানুষও মারা গিয়েছিল। একই বাড়িতে ছয় জন মারা গিয়েছিল। তাদের বডি তোলার সময় দেহ থেকে হাত, পা খুলে খুলে আসছিল, নিয়ম মেনে শ্রাদ্ধ শান্তি কারও হয় নি, হয় নি পারলৌকিক ক্রিয়া কর্ম। সে সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন স্বপন দা।
ফেরার সময় স্বপন দা'র মা বাড়ির জন্য পিঠে দিয়ে দিলেন। দোমহনী রেলস্টেশনের কাছে আসতেই আমার হাত পা একেবারে ঠান্ডা হয়ে এল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মিটিমিটি জোনাকি জ্বলছে। অন্ধকারের মধ্যেই এক সুবিশাল ছায়ামূর্তি। যত কাছে যাই ছায়ামূর্তি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। তার পর একটা সময়ের পরে আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি বাড়ির বিছানায়। আমার তখন ধুম জ্বর, মা মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। সকালে তন্য তন্য করে খুঁজেও বাড়ির লোকজন টিফিন বক্স,আমার পায়ের জুতো জোড়া পিঠে কোনকিছুরই হদিশ করতে পারেন নি।"
মাঝে মাঝেই গল্পদাদু 'র ফোন আসে। আমি ও অবসর পেলেই চলে যাই গল্পদাদুর অফিসে। কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসে সবাই কাজে ব্যাস্ত। আমি গিয়েছি তেলের বিলের চেক আনতে। গল্পদাদু দুহাত বাড়িয়ে দিলেন। বললেন "সেবার তো জীবনের মতো বেঁচে গেলাম। আগে তোমার কাছে আমার হাতটা দেখালে, কুনুই, বুকের পাঁজর ভাঙত না। অত বড় দূর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারতাম।"
.....কি যে করেন, চারিদিকে সিসি ক্যামেরা চলছে আর আামি হাত দেখব?
গল্প দাদু নাছোড়বান্দা। সাথে তার প্রায় সব অফিসের স্টাফ। সেকেন্ড রাউন্ড চা এর কাপ নামিয়ে দিয়ে চাপরাশি বলে গেল,' যাবার সময় চিফ ইন্জিনিয়ার সাহেবের হাতটা একটু দেখে দিয়েন।'
অনুগল্প
নকল
বিনয় বর্মন
পরীক্ষার হলে নজরদারি করছিল সুদীপ l ক্লাস টুয়েলভ এর অর্পণ কে দেখে টুকলি করতে l বেপরোয়া ভাবে টুকলি দেখে লিখছে l হাতেনাতে ধরে ফেলে সুদীপ l লজ্জিত হওয়ার বদলে উদ্ধত স্বরে বলে ওঠে অর্পণ : " সবাই করছে স্যার , শুধু আমাকে ধরছেন কেন ?" হাতটা তুলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় সুদীপ l
খাতা ও টুকলি কেড়ে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের অফিসে যায় l পিছু পিছু অর্পণও l সব শুনে হেড স্যার ভর্ৎসনা করে বলেন , " ছি: ছি: অর্পণ এটা তোমার কাছে আশা করিনি l তোমাকে ভালো ছেলে বলেই জানতাম। " অর্পণ তখনো ফুঁসছে l
- "স্যার নকল শুধু আমিই করি না l দুদিন আগে আমাদের রতন স্যারের যে চাকরি গেল চুরি করে নেওয়া চাকরির দায়ে ! তার বেলা !
মোবাইলের সব দেখেছি স্যার ! "
ছড়া
শীত বসেছে ঝেঁকে
মজনু মিয়া
থরথরিয়ে কাঁপছে শরীর
রেললাইনের ধারে,
একটি শিশু দাঁড়িয়ে আছে
খোঁজছে চোখে কারে?
এই পৃথিবী তার কাছে যে
কঠিন কষ্ট খুবই,
দুই চোখে ঘোলাটে কেবল
করুণ বিদ্রুপ ছবি!
অন্ন অভাব বস্ত্র অভাব
বাসস্থানের জন্য,
সাড়ে তিন হাত জমির অভাব
জন্মদাতা জঘন্য!
নয়তো এমন কঠিন শীতে
মা বাপ হারা বাসে,
একা একা পথহারা হায়-
দুই চোখ জলে ভাসে!
রম্য রচনা
শনিবারের বারবেলায়
স্বপন কুমার দত্ত
শারদোৎসব উপলক্ষে মালদায় নিজের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসেছি। ভাইফোঁটার পর দিন আমার পরিচিত ত্রিভঙ্গ মণ্ডল এসে হাজির।
" দাদা একটা ঘোরতর বিপদে পড়ে আপনার
কাছে এসেছি।আপনি না বলবেননা"-- বলেই
আমার কাছে হামলে পড়লো।
আমি বলি,"আরে আগে শুনি,বিষয়টা কী?"
ত্রিভঙ্গের বক্তব্য, ও পঞ্চায়েত ভোট দাঁড়াবে।তাই ওর পরিচিতি প্রয়োজন। বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে ওর দেশের বাড়ির কাছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা করবে আর তাতে আমাকে রবীন্দ্র সংগীতের বিচারক হতে হবে।
আমি শুনেই বলি, আমি গানের ' গ ' বুঝিনা, আমার দ্বারা হবেনা। ওর কথা যে জীবনে ফুটবলে একবারও লাথি না মেরে যদি কোচ হতে পারে, ক্রিকেট না খেলেও দলের কর্মকর্তা হতে পারে,তাহলে এটা কোন ছাড়।
ওকে পাশ কাটানোর কোন উপায় না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, " তোমাদের অনুষ্ঠানটা কোথায় হচ্ছে আর কবে হবে। "
ও জানালো, " কিলাবের নাম " খুঁটাদহ সাংস্কৃতিক সংঘ" আর অনুষ্ঠানটা হবে আগামী শনিবার।" না যাওয়ার মোক্ষম অস্ত্র হাতে পেয়ে বললাম," শনিবারের বারবেলায় আমি কোথাও যাইনা। তুমি অন্য কাউকে দেখো ।" কিন্তু রণে ভঙ্গ দেবার পাত্র ত্রিভঙ্গ নয়।
" দাদা আজকাল ওসবে কেউ বিশ্বাস করেনা,আপনি তৈরী থাকবেন। আমি এসে নিয়ে
যাবো।"
দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হলনা। কী যেন বিদঘুঁটে জায়গায় অনুষ্ঠান -- কাটাদহ না খুঁটা দহ। ও: কী ঝামেলায় পারলাম। পরদিন হবু পঞ্চায়েত প্রধান মূর্তিমান ত্রিভঙ্গ দুপুরবেলায় এসে হাজির। অগত্যা নিজেকে ভাগ্যের হাতে সপে দিতে হবে, বুঝলাম । যাত্রার শুরুতেই মহাবিভ্রাট ! আমাকে নিয়ে যাওয়ার বাহন বিকল। যেতে হবে লাইন ট্যাক্সিতেই। ভি, আই, পি বলে বোধহয় ট্যাক্সির সামনের সীটে ড্রাইভারসহ আমরা চারজন । পিছনের সিটে আটজন, মানে সামনে চারজন আর পিছনে পা ভাঁজ করে আরও চারজন। এরপরেও আছে, গাড়ির পিছনে বনেটের উপর দড়ি ধরে আরও চারজন। এইবার গাড়ি স্টার্ট করবার পালা। কয়েকবার গোত্তা মারার পর গাড়ি গো গো করে উঠলো। ড্রাইভারের দুচার ঘা লাথি আমার সহযাত্রীর পায়ে পড়তেই ও উঠলো কঁকিয়ে, " দেখতা নেহি, মেরা প্যার টুট জায়েগা।"
ড্রাইভারও অম্লানবদনে উত্তর দেয়, " কুছ নেহি হোগা, একবার সাইজ করনে দিজিয়ে, বাদমে সব ঠিক হো জায়েগা।"
এবার চলতে লাগলো গাড়ি। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় হাতির উপর দুলতে দুলতে বিকেলে পৌঁছালো। জামাকাপড়ের দফারফা। শরীরের সব পার্টস নড়েচড়ে গেছে। এর পরও আছে। মোষের গাড়ি চড়ে এবার যেতে হবে পাঁচ মাইল। কী যন্ত্রণা! পৌঁছে দেখি, মাঠের মাঝে সামিয়ানা টাঙানো। সন্ধ্যে পার হয়ে রাত হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ নেই, জ্বলছে হ্যাজাক বাতি।
তবে রয়েছে ব্যাটারি চালিত মাইকের ব্যবস্থা।
নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরেই শুরু হল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। একটা টেবিল চেয়ারের হয়েছে ব্যবস্থা মঞ্চে বিচারকের জন্য। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আমার সেই ত্রিভঙ্গ। ফুলের তোড়া দিয়ে আমাকে বরণ করে শুরু হল অনুষ্ঠান। যোগাড় হল এমন একটা কলিংবেল, যেটা বাজতে শুরু করলে আর থামেনা আবার থামলে আর বাজেনা। অগত্যা টেবিল চাপড়েই
চালালাম কলিংবেলের কাজ।
একের পর এক প্রতিযোগী গেয়ে যাচ্ছে গান , সাদা কাগজে হচ্ছে মার্কিং। মাইক মাঝে মাঝে হচ্ছে অমাইক।হারমোনিয়ামের বয়সের বোধহয় নেই গাছপাথর। মাইকে ওর বেলি টানার আওয়াজ হাপরের মতো করছে ফসফস। ঠিক যেন হাঁপানী রোগী ।
এবার প্রতিযোগিতার ফলাফল জানানোর দায়িত্ব পড়লো আমার উপর। প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী /কারিনীর নাম ঘোষণা হতেই উপস্থিত জনতা " রে রে"করে আমাকেই মারে কী সেই মারে অবস্থা। পুরষ্কার প্রাপকেরা নাকী প্রধান, সভাপতি আর ক্যাশিয়ারের ছেলেমেয়ে। অথচ আমি কাউকেই চিনিনা। পাশে তাকিয়ে দেখি আমার সঞ্চালক পালিয়েছে। এখন কী উপায়? আমিতো গানের সময় হাত তালির সংখ্যাধিক্য শুনে বিচার করেছি। জনতার হাতে পড়লে আমার অবস্থা যে কী হবে, সেটা ভেবেই আতকে উঠছি। আমার তখন বাপের নাম দূরে থাক, নিজের নামই মনে পড়ছেনা। সঙ্গত কারণেই মনে পড়লো স্থানমাহাত্ম্যের কথা। যদি খুঁটায় বেঁধে আয়োজন করে গরু মহিষের সাথে ঘাস খাওয়ানোর বা ওই খুঁটা আমার অগ্রদেশ বা পশ্চাৎদেশে প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয় তাহলে? ত্রিভঙ্গ অবস্থা বুঝে রণে ভঙ্গ দিয়ে কোথাও হয়তো বাজাচ্ছে মৃদঙ্গ। হারামজাদা, বেললিক,বজ্জাত কোথাকার! দাদাকে বিপদে ফেলে এমনভাবে পিঠটান। ওকে জনসমক্ষে ফোকাস করতে গিয়ে
নিজেই এখন ফ্যাকাশে।
অবশেষে অঞ্চলপ্রধান এসে দিলেন এক রফাসূত্র। যা হবার তা হয়ে গেছে। " এবার আপনি একটা গান শুনিয়ে দিন। সবাইকে আমি শান্ত করার চেষ্টা করছি।" এবার পড়লাম আর এক মহাফাঁপরে। এ কোন গেড়োরে বাবা! গান জানিনা বললে তো আড়্ঙ ধোলাই। আর চেষ্টা করলেতো ঘটবে মহাঅনর্থ। একেবারে ফাটা বাঁশে আটকানোর অবস্থা!
অবশেষে বের করলাম নিজের বাঁচবার শেষ উপায়। " এতক্ষণতো রবীন্দ্র সংগীত অনেক শুনলেন, আমি বরং একটা খেয়াল গাইছি" -- আমি কাতরকণ্ঠে অনুরোধ করলাম ।
জনতা তাতেই রাজী। রবীন্দ্রসংগীতে হাত না বাড়িয়ে নিরাপদে খেয়ালের খামখেয়ালিপনায় থাকা অনেক ভালো। একদিকে কার্তিকের হিমেল হাওয়া আর অন্যদিকে ঠ্যাঙানীর ভয়ে প্রাণপণে শুরু করলাম' আ আ" করে চিৎকার করতে। জনতার চেঁচামেচি শুরু হলে বাড়ালাম আমার ভলিউম। খেয়াল চট করে শেষ হয়না। ইতিমধ্যে হ্যাজাকগুলো শুরু করেছে নিভতে। রবীন্দ্র অনুরাগীর দল বেশ কেটে পড়েছে।
এটাই সুযোগ পালানোর। সামনেটা হয়ে গেছে একেবারে ফাঁকা। সাধের কোলাপুরী চটির মায়া ত্যাগ করে ষ্টেজ থেকে অন্ধকারেই মারলাম প্রায় মরণঝাঁপ। পড়তো পর একটা নেড়ি কুকুরের উপর। বিরাশি কেজি ওজনের ভারে কুকুর তখন আমারই মতো কেউ কেউ করে গাইছে এক বিচিত্র খেয়াল। তারপর সামনের দিক ধরেই দে- ছুট!
হঠাৎ দেখি অন্ধকারে হ্যারিকেন হাতে আসছে আমার ত্রিভঙ্গ! লজ্জিতভাবে বলে, "দাদা মনে কিছু করবেননা। গ্রামের পাবলিক এরকম একটু হয়েই থাকে। তা দাদা, এতো রাতেতো আর কিছু পাওয়া যাবে না। অগত্যা হন্টনই ভরসা। এরাতটা আমার বাড়ি নালাগোলাতেই কাটিয়ে দেন। কাল সকালে দেখা যাবে।" আমি মনের রাগ মনে চেপে শুধু বলি, " এখন নালা নর্দমা যেখানে তুমি নিয়ে যাবে, সেখানেইতো যেতে হবে । পড়েছি যবনের
হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে।"
এরপর, কান মলছি তিনবার, নাকে খত দিয়েছি গুণে গুণে ছ ' বার। " শনিবারের বারবেলায়, আর যাবনা কোন জায়গায়।'
ছবি
শিল্পী- সোমনাথ বণিক
মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৯