সম্পাদকের কথা
প্রকৃতি এখন সালাঙ্কারা। রূপবাহারি। ঝকঝকে চারধারে কেবল দস্যু মেঘের আনাগোনা। সৃজনের শ্রেষ্ঠ সময় বুঝি বা এই বর্ষা। রোপন করা হবে বীজ। অন্ন দেবে সে আগামীতে। ধীরে ধীরে ভরে উঠবে শুকিয়ে যাওয়া উত্তর নদী -নালা। সবুজ ঘাসের তরঙ্গায়িত মাঠে ছোট ছোট জলের ধারা ছুটবে যেন কোনো ঝর্ণা। টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টি শব্দ, ভেজা গাছের ডাল থেকে টুপটাপ ঝরে পড়া জল আর ফাঁকা প্রান্তরে রৈ রৈ বৃষ্টি তান্ডব এক নিমেষেই ভাসিয়ে নেবে সব কষ্ট, সব দুঃখ।
বর্ষা আসলে জল মোছায়। বর্ষা আসলে জল নামায়।
বর্ষা জলে পূর্ণ হয় সব। বর্ষা তাই চিরদিনের স্তব।
এই সংখ্যায় আছেন যারা
শ্যামলী সেনগুপ্ত, দীপ, রূপক স্যান্যাল, আহসানুল করিম, বেলা দে, মীরা সরকার, কানাইলাল পাল, ঝর্ণা মুখার্জী, জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ, মন্দিরা ঘোষ, কণিকা দাস, শিপ্রা পাল, জয়শ্রী রায় মৈত্র, গায়েত্রী দেবনাথ, রাহুল, সমীরণ চক্রবর্তী, আনিসুর রহমান খান, নীলাদ্রি দত্ত, সপ্তক, মৌসুমী চৌধুরী, সুব্রত নন্দী, কাকলি ভদ্র, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, রীনা মজুমদার, উদয় সাহা, দীপশিখা চক্রবর্তী, শুভদীপ ঘোষ, পিয়াংকি মুখার্জী, মৌসুমী ভৌমিক, তাপস দাস, দেবযানী সিনহা, অনিমেষ সরকার, পাপিয়া চক্রবর্তী, গৌতমী ভট্টাচার্য, সোমা বোস, সুপর্ণা চৌধুরী, রিয়া, রাণা চ্যাটার্জী, তৃপ্তি মিত্র, মজনু মিয়া, অঞ্জলি দেনন্দী, বিশ্বজিৎ মাইতি, সোনালী সিং, কৌশিক কুমার রায়, সংস্কৃতি ব্যানার্জী, নিশীথ বরণ চৌধুরী, সঞ্চিতা দাস, দেবব্রত সেন, সৈকত বণিক, ইমানুর আলি, দেবজ্যোতি সিংহ রায়, সমরেশ পর্বত, তুহিন মন্ডল, মহাজিস মন্ডল
প্রকাশিকা - রীনা সাহা
সম্পাদনা, ছবি, অলংকরণ ও বিন্যাস - শৌভিক রায়
যোগাযোগ - হসপিটাল রোড , কোচবিহার , ৭৩৬১০১
ই-মেল্- mujnaisahityopotrika@gmail.com
ফেসবুক প্রোফাইল লিংক - www.facebook.com/profile.php?id=100012201822878
ফেসবুক গ্রূপ- * মুজনাই
* ছোটদের মুজনাই
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
আহ্বানে বর্ষা
শ্যামলী সেনগুপ্ত
ধারাপাত
ডাক এসেছে বহুযুগের ওপার থেকে।বজ্রের মতো কণ্ঠস্বর।সে ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য নেই।সাড়া দেবে না এমন সাধ ও কি ছিলো!মকমকি চমকিত বিদ্যুল্লতার আলো সুশোভিত সে রাত রহস্যময়।যেমন সব রহস্যের প্রতি থাকে অমোঘ টান ,এ-রাত ও তার থেকে কিছু কম আকর্ষণীয় নয়।শ্রীরাধিকার মতো নূপুর খুলে ফেলার কোনো কারণ ছিলো না।আসলে নূপুর নিক্কণিত পেডিকিওর -মার্জিত শ্রীচরণ নয় মোটেই।তবে বোরোলীন নিন্দিত জীর্ণদশা ও নয়।তাই জুতোজোড়া শ্রীহস্তে ধারণ করে গলিটুকু পেরিয়ে গেলো অনায়াসে।কেলো-ভুলো দু-চারটে ডেকে উঠেছিলো ঠিকই কিন্তু তারা নিঃসন্দেহী যে আগামীকাল থেকে ভোর পাঁচটায় এক পাউন্ড আটাব্রেড তাহলে বন্ধ।সুতরাং স্বভাবসুলভ আচরণ ভুক্-ভোউউ তেই থেমেগেলো।এরপর ইনোভা-র উইন্ডস্ক্রীনে বারিস কি বুন্দ আর ওয়াইপারের ক্ষিপ্রতা কেমন যেন দাদরা শুরু করে দেয়! দাদরা ল্যাম্পপোস্টের আলোয়,দাদরা গ্লো-শাইনবোর্ড এ ।
কিছুটা জল-কাদা মাড়িয়ে আসতে হয়েছে।গোড়ালির সামান্য কাদা জায়গা বদল করেছে।রোমাঞ্চিত অংহ্রিস্কন্ধ । খেয়াল হয় স্টিয়ারিং এ কেউ না থাকলেও গাড়ি চলছে।যেন ম্যাগনেট টেনেনিচ্ছে আপন খেয়ালে।না কি ঘনকালো মেঘ চিরে উচ্চকিত দামিনীর যাদুটোনা ! আবার হতেও পারে আঙুল ও সুতোর কারিকুরি।আসলে সুতোটি যে কোথায় কার সাথে বাঁধাথাকে ! সুতো ছেড়ে দিয়েছে জীবন, সযতনে গাঁথা মালিকা থেকে ফুলগুলি কেমন ছন্নছাড়া লক্ষ্মীছাড়া হয়ে ঘুরেবেড়াচ্ছে গ্যাসীয়বস্তুর পরমাণু-কণার মতো।জীবন এখন ঘুড়ির মতো উড়ছে ,যেমন বিকেলের শেষ রোদ জড়িয়ে উড়ে বেড়ায়।যদিও রোদ নয় এখন , রাত।
রাত বেশ গাঢ়।বজ্র নিনাদিত আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে সাতকাহন আর শ্রীরাধা সাজবদল করছে শ্যামাঙ্গের সাথে ।বাইরে-ভেতরে বৃষ্টি।বৃষ্টি তে ধুয়েযাচ্ছে শহর আর শহরজোড়া রাস্তাঘাট। ইনোভার ভেতর থেকে রবীন্দ্রগান ভেসে আসছে , নিবিড় শব্দটি ভাসতে ভাসতে আকুলিবিকুলি করছে--কোনো এক জায়গা থেকে সাময়িক মুক্তি ।
বাইরে তখন বজ্র-বিদ্যুৎ
শক্তি ও সৌন্দর্য-এর ধারাপাত
দুই দু'গুণে এক....
দীপ
এমন বরষা দিবসে
এমন বরষা দিবসে সহসা ফিরে আসে আমার গোপনে গচ্ছিত কথাবলী। প্রিয় নারীর মত তারা ডাকে গভীর থেকে গভীরে, আরও গহীন গভীরে। আমি সেই ডাক শুনি পল পল মুহূর্ত মুহূর্ত জুড়ে সকল দিবস রজনীতে।
গভীরে যেতে চাই বারবার। কিন্তু তার ঠিকানাটা যেন কোথায় লেখা ছিল? মলাট ছেঁড়া একটা খাতার সাদাপাতা। কে যে লিখেছিল, তোমাকে একটা কথা ----।
আমার সেই আবহমানের নারী। বাতাসে উড়ে গেছে তার শরীরের অমৃত গন্ধ। বৃষ্টির এক লক্ষ বারিধারা আশ্লেষে আলিঙ্গন করেছে তাকে।আমি অসহায় নিষ্ফল ক্রোধে তখন আকাশের চেয়ে দীর্ঘ হতে চেয়েছি। চরাচরের সমস্ত শব্দ একত্রিত করে বলেছি, বৃষ্টি একটি ফুৎকারের অগ্নিশিখায় স্তব্ধ করে দিতে পারি তোমার ঋতুধারা।
কিন্তু পারিনি। বারবার হেরে গেছি। নিদারুণ বরষাবেলায় তার ঔদ্ধত্যে আকন্ঠ পান করেছি দাবানলের শরীরী উত্তাপ। বারবার নিজেকে মগ্ন রেখেছি যোষিৎ সঙ্গে। প্রতিশোধের ব্যর্থ প্রচেষ্টা! অজস্র নারীর অপরুপ মুখশ্রীতে আমি দেখেছি ঈশ্বর। অনন্তকালের মত অমোঘ কন্ঠস্বরে নারী, নারীরা, নারীসকল এমনকি যাজ্ঞসেনী শুনিয়েছে তাচ্ছিল্যর ক্ষণস্থায়ী একটি শব্দ। বুভুক্ষর মত কান পেতেছি বারবার। একবার, শুধু একবার, নিশ্চিৎ মিথ্যাকথনেও শুধু একবার!
শোনা হয়নি চিরকালীন চারটি বর্ণ। নতজানু হয়ে ভিক্ষা চেয়েছি। জীবনের মত ভালবেসেছি।
*******************************************************************
পুরুষের চেয়েও নির্মম হয়ে ছিন্নভিন্ন করেছি তার সমস্ত শরীর। তবুও বারবার হেরে গেছি বর্ণমালার কাছে। একজীবনে বর্ণ গড়েছি ভেঙেছি খেলেছি তাচ্ছিল্যে। সময়ের মত নিষ্কম্প নিথর বর্ণমালা তবুও বলেনি সেই চারটি বর্ণ।
এমন বরষা দিনে সহসা ফিরে আসে আমার গোপনে গচ্ছিত কথাবলী। ফিরে আসে, পৌঁছয় না। বৃষ্টির জলবিন্দুতে সিক্ত কথাবলী। ফিরে আসে পৌঁছয় না। বাতাসের অসীম স্পর্ধায় আবছা কথাবলী। ফিরে আসে পৌঁছয় না। যাজ্ঞসেনীর জন্য ব্যর্থ কথাবলী। আজ তারা আর ফেরে না। ফেরেনা যাজ্ঞসেনী। তবু যেন কোথাও, তবু যেন বিষণ্ণ গোধূলিবেলায়, তবু যেন শুধু যাজ্ঞসেনীর জন্য---------।
আহ্সানুল করিম
বর্ষা
বর্ষায় বাতায়ন খুললে বর্ষণের ছন্দ কানে আসে। বহুতল এই ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদ,জানালার শেড, অনেকটা নিচে বাঁধানো উঠোন, পাশের পিচের রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়ালের ঘাড়- মাথা, সবাই তখন বাদ্য। ঠান্ডা হাওয়া এসে ঘরের ভেতরকার জমাট গরমকে জব্দ করে দেয়। বর্ষায় বাতায়ন খুললে স্মৃতিরা মস্তিষ্কের কোষকে নাড়াচাড়া করে নিয়ে যায় স্মৃতির প্রাঙ্গণে। ফেলে আসা গ্রাম জীবনটার সুখস্মৃতি, দুখ-স্মৃতি, মনকেমনের সালতামামি, মন উদাসের বর্ষাতি, মনের বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সংশয় হয় তখন। চাষীদের ধান রুপনি, পাট ধোওয়ার তাড়া, খড়ের গাদায় উদ্ভিন্ন ব্যাঙের ছাতা, কচু পাতার সানন্দ মাথা দোলানো, ব্যাঙের ডাক, হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার পাঠ।
অমলেশের তখন ক্লাস এইট। সেদিন অমলেশের মনে হয়েছিল আকাশে তেমন মেঘ নেই, বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা কম। হোক না শ্রাবণ। বৃষ্টি আসার আগেই সে পৌঁছে যাবে স্কুলের টানা বারান্দায়। বুক পকেটে তার অ্যাডমিট কার্ড, উইং সাঙ কলম। পরীক্ষা শুরু হতে হাতে আর দেড় ঘন্টা সময়। হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলে অমলেশ। সেদিন সে বড় রাস্তাটা ধরেছিল। সেই বড় কিন্তু কাঁচা রাস্তায় জায়গায় জায়গায় জমাট জল। কোথাও বা ঘাসের পাড়ায় পাড়া দিলেই পিচ্ পিচ্ করে ওঠে পাতলা কাদার হালকা প্রতিবাদ। খুব জোড়ে কি হাঁটতে পারে সে? পায়ে স্যান্ডাক, তাই জুতো খারাপের ভয় নেই, পিছলে পড়ার সম্ভাবনাও কম। অর্ধেক রাস্তা পার হতেই ডান দিকের সরু রাস্তাটা থেকে তার বড় রাস্তায় এসে উঠলো বুলবুলি। পড়নে নীল রঙের স্কার্ট আর সাদা টপ। দুদিকে বেণী, ডান কাঁধে ব্যাগ। পায়ে তার কালো চামড়ার জুতো। তার মতো বুলবুলিও কি অগ্রিম বেরিয়েছে আজ? বুলবুলির সাথে অমলেশের পরীক্ষা- প্রতিযোগিতা গেছে নিচু ক্লাসে, দু’বার। অমলেশই জিতেছে। তবে মেয়েদের সেকশানে বুলবুলিই বরাবারের সেরা। কিন্তু সম্প্রতি পাশের স্কুলের ফার্স্ট-গার্ল চন্দনা ভর্ত্তি হয়েছে মেয়েদের সেকশানে আর এসেই ঘোষণা করেছে, ক্লাসের প্রথম স্হানটি না হলে তাকে নাকি মানাবে না। এসব শোনা কথা। বুলবুলির সাথেও তার কথা নেই, চন্দনার সাথেও নেই। আসলে ঐ বি-সেকশানে কারও সাথেই এই ফার্স্টবয়ের কথা হয় না। এ গ্রামে তেমন চল নেই। ছেলেরা ছেলেদের সাথেই মিশবে, কথা বলবে, হৈ-হল্লা করবে, ফুটবল বা দাড়িয়া বাঁধা খেলবে, সেটাই দস্তুর। অমলেশের সামনে একমনে হেঁটে চলেছে বুলবুলি। স্কার্টের নিচে ধপধপে পা গুলোতে কাদা লাগে কিনা অমলেশের সেটাই দেখবার। নাহ্ তেমন হচ্ছে না। কাদা লাগলে আর তা শুকিয়ে সাদা হলে, ভালোই লাগতো দেখতে,অমলেশ ভাবে। কিন্তু বুলবুলি একমনে একইভাবে জল কাদা এড়িয়ে এড়িয়ে হাঁটছে। তাছাড়া তার বাড়ি থেকে স্কুল যাবার বাকি পথটুকুতে জল কাদা নেইও তেমন। বুলবুলির ছোট বেণীদুটো দুলছে, বুলবুলির সাদা জামার পিঠ জায়গায় জায়গায় ঘামের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এমন সময় এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি। শ্রাবণের আকাশ বড় বিশ্বাসঘাতক হয়। বুলবুলি পেছন ফিরে তাকায় একবার, বুলবুলি থামে একটু, বুলবুলি কাঁধের ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে ঝপ করে খুলে ফেলে। অমলেশের হাতে ঘড়ি নেই, পরীক্ষা ঠিক এগারোটায় শুরু। পকেটে উইং-সাঙ কলম, পকেটে তার কালির কলমে লেখা অ্যাডমিট কার্ড। এখনও পাঁচটা পেপার বাকি। ভিজলে চলে? হাতে ঘড়ি নেই, থামলে চলে? অমলেশ হাঁটতে থাকে। বৃষ্টি ঝড়তে থাকে। কানের পাতায়, মাথায়, কাঁধে তার ফোঁটাদের ঝম ঝমে আঘাত। বেড়ে চলছে। বুলবুলি থামে। পেছনে তাকায়: “ছাতা নেই? চলে আয়।” জীবনে প্রথম বাক্য বিনিময়। বাক্য দুটো রচনা করলো বুলবুলিই। তারপরে বুলবুলির লাল রঙের ছাতার নিচে বিনাবাক্য ব্যয়ে ঢুকে পড়ে অমলেশ। ছাতার নিচে আলাদা একটা পৃথিবী যে হতে পারে অমলেশ সেদিন সেটা প্রথম বুঝতে পারে। দুজনের উচ্চতার তফাতের জন্য একটু মাথা ঝোঁকাতে হয় অমলেশকে। জীবনে আর যে মাথা ঝোঁকাতে পারে নি সে, তাই সেইদিনের সেই মাথা ঝোঁকানোটা তার বড় মনে পড়ে এখনও। বর্ষায় বাতায়ন খুললেই। ছাতার রড বুলবুলির ফর্সা আর গোল গোল হাতে। ছাতার ভেতরে সুবাস। বুলবুলির ফর্সা ফর্সা গোলগাল গালে এক দু’ফোটা বেয়ারা জলের কণা। বুলবুলির চোখে কাজল। ঠোঁট তার এমনিই গোলাপি। তারা হেঁটেছিল। কিন্তু একদম কথা না বললে, কেমন ভারি হয়ে থাকে ছাতার ভেতরকার আবহাওয়া। তাই অমলেশ কথা বলে। কিন্তু কী বোকা, বোকা! “তোদের সেকশানে এবার কে ফার্স্ট হবে, চন্দনা?” অমলেশ কথাটা বলেই বুঝতে পারে, এ কেমন অপ্রাসঙ্গিক, এ কেমন স্থূল, এ কেমন একটা ফালতু কথা হলো! কিন্তু দুম্ করে কথাটা মনে ধরে যায় বুলবুলির। “ওহ্ তোরাও জানিস? তিনি তো আসতে আসতেই ডিক্লেয়ার করে দিয়েছেন ফার্স্ট পজিশনটা তার চাইই চাই। দেখা যাক।” অমলেশ বোঝে মেয়েদেরকে একটা বেশ তুলনামূলক জায়গায় ফেললে আর সামনের মেয়েটিকে সামান্য বা হাল্কা একটু সমর্থন জানালে,তারা খুব খুশি হয়। হাল্কা লাগে অমলেশের। আজ এতো বছর পরেও হাল্কা লাগতে থাকে তার। কিন্তু বৃষ্টি আজ হাওয়ার সাথে মিলে বেশ বেয়ারা ব্যবহার শুরু করেছে। ঘরে জল ঢুকছে অবিরাম। বাতায়ন বন্ধ করে অমলেশ।
চিন্তারা হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায় বন্ধ জানালার গায়ে। স্মৃতিপথের খেই হারিয়ে ফেলে অকৃতদার ইঞ্জিনীয়ার অমলেশ রয়। ক্লাস নাইন টেনে পড়তে পড়তে সাইকেল নিয়ে রোববারের বিকেলে বুলবুলিদের বাইরের উঠোনে পুকুর ধারে আমতলাটায় দাঁড়ানোর কথা তেমন মনে পড়ে না আজ। মাধ্যমিকের পরে নম্বর গোণার নামে, “এটা কী লিখেছিস, ওটা কী লিখেছিস”, মিলিয়ে নেবার নামে বুলবুলিদের বাইরের ঘরের বারান্দাটায় বসার কথাও হাল্কা মনে পড়ে তার। সে শিবপুর বি.ই কলেজে তখন ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র। এদিকে বুলবুলি বি.এস.সি বায়ো পাশ। গ্রামের মেয়ে, বাবা নেই, দাদাদের সংসারে, এর থেকে আর বেশি পড়বে কী? তাই, বি.ই কলেজে হস্টেলের ঠিকানায় ইনল্যান্ড লেটার কার্ড পৌঁছয়ঃ “দাদারা আমার বিয়ে ঠিক করতে চলেছে। ছেলে রেলে কাজ করে। সমর মাস্টার বাড়িতে এসে,আমাকে আলাদা করে ডেকে জিগেস করেছেন, এ বিয়েতে আমার মত আছে কিনা।আমি কী বলবো?” অমলেশই বা কী বলবে! পড়া শেষ হতে আরও এক বছর প্রায়। তারপরেও চাকরি কবে হবে ঠিক নেই। অমলেশ চুপ থেকেছিল…..। দুম্ কড়্ কড়্ ধুম্ করে কোথাও বাজ পড়লো। হাওয়ার দাপট বেড়ে গেছে বন্ধ জানালার ওপাশে। বাতায়ন খুলতে গিয়েও তাই থেমে যায় অমলেশ। সব বর্ষায় বাতায়ন খোলা যায় না সবসময়।
বেলা দে
সমর্পণ
সক্কাল সক্কাল আষুঢ়ে জলসত্র এসে
আলপনা একে দিল খোলা জানালায়
পিঞ্জরের পাখি হয়ে থিতু আমি
নিজের সংগে একলা একায়
কেউ জানিনা কার চোখ ধরেছিল প্রথম বৃষ্টিমুখ
শূন্য থেকে নামা জলতরঙ্গর ছান্দিক সুখ
অনেকদিন বসুধার ধুলিমাখা চাতক চোখ
ছাতিফাটা তৃষিত মেয়েটা
বড্ড অভিমানী স্বভাবলাজুক
আজ মান ভাঙার ছলে বাতাসি বিপ্লবে নেমেছে
সমর্পণের ঢল
এসময় ভৌমজলে উঠে আসে একদল
কচি শ্যামল
উকি মারে কাছেদূরে আশপাশ
মেপে নেয় কতটা সবুজে চড়েছে ইমারত
ভবিতব্য হাল হকিকৎ।
মীরা সরকার
তখনো বর্ষা
তখনো বর্ষা অনেক দূরেই ছিল
বসন্ত নেমেছে বুঝি পরাগে পল্লবে,
ফাগের রঙে রাঙিয়ে উদাস চোখে;
জানতে চেয়েছ তোমায় চেয়েছি কবে?
খাতার কোনায় আনমনা আঁকিবুকি
বলা যায় কী ভেবেই পাইনা কিছু,
এইখানে ছিল গত শতাব্দীর সৌধ;
খন্ডহরের প্রত্নস্মৃতির পিছু।
মেদুর আকাশ কাঁদে ঘোর বর্ষায়
ছোটে নদী ভরা উথাল পাথাল জলে,
ধুয়ে গেছে বুঝি দুজনের বর্তমান
করপুটে লুকোনো অতীত কী যে বলে।
কানাইলাল পাল
তুই আসবি বলে
কানাইলাল পাল
তুই আসবি বলে
তুই আসবি বলে
আমার শ্রাবণ থমকে আছে
ঈশানকোণে
মাঝ গগনে মেঘের কাছে।
তুই আসবি বলে
পানকৌড়ি দিচ্ছে না ডুব
আপন মনে
সলিল-স্নানে বিমর্ষ খুব
তুই আসবি বলে
শ্বেত বলাকা নীল আকাশে
আলোর বানে
কলতানে নেই প্রকাশে
তুই আসবি বলে
উঁকিঝুঁকি বনবীথি
সংগোপনে
ঊর্ধ্বপানে ঘনবীথি
তুই আসবি বলে
আমার আকাশ রুদ্ধ বাতাস
অলস ক্ষণে
নীল স্বপনে সতাপ নিশ্বাস
ঝর্ণা মুখার্জী
''অর্ণোদ''
ও মেঘ যাও কোথা ? ওই হোথা ; যেখানে বৈশাখ শূন্য করে গেছে ধরিত্রীর বসন্তরূপ; যেখানে তমালতালীবন নিশ্চুপ ।
নিদাঘ গরমে দোহিনীর দু চোখ শ্রাবণ শূন্য
যেখানে গরমের ক্ষত নিয়ে উষ্ণ প্রতীক্ষা আমার জন্য ।
নিদাঘ গরমে দোহিনীর দু চোখ শ্রাবণ শূন্য
যেখানে গরমের ক্ষত নিয়ে উষ্ণ প্রতীক্ষা আমার জন্য ।
আজ ভেসে যাব তার আকাশে ; টুপটাপ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ব তার বুকের মাঝে ।
আনব প্লাবন খরা তে ওই শুকিয়ে যাওয়া ওষ্ঠাধরে । তৃপ্ত হয়ে সাজবে ইলা, গাঢ় পান্না সবুজ সাজে ,তার মেদুর মন আঁকবে
আমায় সবুজ রঙের আঁকে ।
আনব প্লাবন খরা তে ওই শুকিয়ে যাওয়া ওষ্ঠাধরে । তৃপ্ত হয়ে সাজবে ইলা, গাঢ় পান্না সবুজ সাজে ,তার মেদুর মন আঁকবে
আমায় সবুজ রঙের আঁকে ।
বলবে আমায় -- 'অর্ণোদ, যাও না থেকে সারা জীবন আমার কাছে' বলব আমি ---
তোমার ডাকে দিলাম ধরা সোহাগ ভরা আদর বুকে ।
ধরার স্নিগ্ধ পাতা, সবুজ ঘাস , ভালবাসার সাক্ষী থাক ।
তোমার ডাকে দিলাম ধরা সোহাগ ভরা আদর বুকে ।
ধরার স্নিগ্ধ পাতা, সবুজ ঘাস , ভালবাসার সাক্ষী থাক ।
এখন তৃপ্ত শ্রাবণ ভরা দু চোখ তোমার
যখন শ্রাবণ শূন্য হবে আবার
আকাশ ভেঙে নামব আমি
তোমার ডাকে সাড়া দিতে ।
যখন শ্রাবণ শূন্য হবে আবার
আকাশ ভেঙে নামব আমি
তোমার ডাকে সাড়া দিতে ।
বর্ষার উৎসবে
বৈশাখী দুঃখে আমি নিশ্চুপ ঢুকে পড়ি গাছের ভেতর
আমি তখন দুঃখগাছ
আমার জাইলেমে তখন জমতে থাকে নোনা কান্নার মেঘ
আমি তখন দুঃখগাছ
আমার জাইলেমে তখন জমতে থাকে নোনা কান্নার মেঘ
ফ্লোয়েমের শুকনো তীরে বসে ধ্যানমগ্ন ভগীরথের মত হাজার হাতে প্রার্থনা করি
তন্তুতে তন্তুতে বাজে তানসেনের মেঘমল্লার
তন্তুতে তন্তুতে বাজে তানসেনের মেঘমল্লার
গাভিন হয় মেঘ
শঙ্খনাদে বেজে ওঠে মেঘের প্রস্বেদন গান
জেগে ওঠে জীবনের পাড়া
ধারাস্নানে নেয়ে নেয় মাটির হৃদয়
শঙ্খনাদে বেজে ওঠে মেঘের প্রস্বেদন গান
জেগে ওঠে জীবনের পাড়া
ধারাস্নানে নেয়ে নেয় মাটির হৃদয়
আমি গাছের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে
দিগন্তের দেয়ালে দেয়ালে আঁকি
কিশলয়ের সবুজ উচ্ছাস
দিগন্তের দেয়ালে দেয়ালে আঁকি
কিশলয়ের সবুজ উচ্ছাস
আর বর্ষার উৎসবে দুদিনের জন্যে
নদীও বেড়াতে আসে পাড়ায় পাড়ায় আমাদের কলার মান্দাসে ...
নদীও বেড়াতে আসে পাড়ায় পাড়ায় আমাদের কলার মান্দাসে ...
মন্দিরা ঘোষ
বৃষ্টি
বৃষ্টি যখন ধূলোর গন্ধ মাখে
চোখের তারায় দূরের বনপথ
অন্ধজনের খয়ের বনের গান
পোড়োবাড়ির বিষন্ন দিনরাত
বৃষ্টি ভাঙায় ভস্মাধারের ঘুম
মৃত্যুদলিল ভিজছে জঠরময়
শাখার ভিতর ঘুমোয় পুরাকাল
বৃষ্টি নামায় রাত্রিসাধের ভয়
বৃষ্টি যখন ধানশিষটির সুখ
জমির বুকে যৌন লাভাস্রোত
শুষছে হৃদয় গভীর মনোযোগ
বৃষ্টি মাটির সঙ্গমে রাতভোর
বৃষ্টি যখন নদীর চোখে জল
দুপার ভাসায় বাড়তি জনপদ
ক্ষিদেই ভেজা শীর্ণ হাজার মুখ
বৃষ্টি সাজায় অনাহারের চোখ
বৃষ্টি যখন বন্ধঘরের আকাশ
ছাপিয়ে যায় কথার কারুকাজ
জড়িয়ে থাকি হারানো সেই হাত
বৃষ্টি আমার আমার হয়েই থাক
বৃষ্টি যখন ধূলোর গন্ধ মাখে
চোখের তারায় দূরের বনপথ
অন্ধজনের খয়ের বনের গান
পোড়োবাড়ির বিষন্ন দিনরাত
বৃষ্টি ভাঙায় ভস্মাধারের ঘুম
মৃত্যুদলিল ভিজছে জঠরময়
শাখার ভিতর ঘুমোয় পুরাকাল
বৃষ্টি নামায় রাত্রিসাধের ভয়
বৃষ্টি যখন ধানশিষটির সুখ
জমির বুকে যৌন লাভাস্রোত
শুষছে হৃদয় গভীর মনোযোগ
বৃষ্টি মাটির সঙ্গমে রাতভোর
বৃষ্টি যখন নদীর চোখে জল
দুপার ভাসায় বাড়তি জনপদ
ক্ষিদেই ভেজা শীর্ণ হাজার মুখ
বৃষ্টি সাজায় অনাহারের চোখ
বৃষ্টি যখন বন্ধঘরের আকাশ
ছাপিয়ে যায় কথার কারুকাজ
জড়িয়ে থাকি হারানো সেই হাত
বৃষ্টি আমার আমার হয়েই থাক
কণিকা দাস
নীর নির্জনে
একটা কবিতা লিখব বলে
তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি
কৃষ্ণচূড়া, অমলতাসের রঙ ফিকে হয়
জারুলের ডালে লাগে পোয়াতির ছোঁয়া
কাঠালচাঁপার ডালে শূন্যতা....
চাতক-দৃষ্টি মেলে শুধু অপেক্ষা।
তারপর একদিন আমলকী বনে
দোলা দেয় বাতাস....
উতলা হয় কদমের ডালপালা
আমি দৃষ্টিতে বৃষ্টি আঁকি।
একপশলা ছুঁয়ে যায় খোলা জানলায়
উদাস মন তখন বাউল হয়
বাঁশীর সুর ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির ঠোঁটে
অনাবিল প্রশান্তিতে ধ্যানমগ্ন সকাল
রূপকথার মায়াজাল আঁকে...
দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমার দুয়ারে।
আবছায়ায় কাটে কিছুক্ষণ
শীতল স্পর্শে রোমাঞ্চিত তনুমন
এই সুন্দর পৃথিবীতে শুধু তুমি আর আমি
হারিয়ে যাই নির্মল স্নিগ্ধতায়...
তোমার আমার প্রথম প্রেম ফি-বছর।
উন্মিলিত ঠোঁটে ছুঁয়ে যায়
সিঞ্চিত জলকণা, প্রশান্তিতে খুলে যায়
মনের জানালা, ভুলে গিয়ে পার্থিব জগৎ
আলিঙ্গনে থাকি দুজনে.....
আমার এ তৃষিত বুকে তুমি নেমে আসো
ভরা যৌবন ছল ছল রূপে....
উদ্বেলিত আমি মগ্ন থাকি...রাতভর রিনিঝিনি ছন্দের দোলায়
ভাসিয়ে নিয়ে যাও স্বপ্ন রাজ্যে...
আমি কবিতা লিখতে বসি।
তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি
কৃষ্ণচূড়া, অমলতাসের রঙ ফিকে হয়
জারুলের ডালে লাগে পোয়াতির ছোঁয়া
কাঠালচাঁপার ডালে শূন্যতা....
চাতক-দৃষ্টি মেলে শুধু অপেক্ষা।
তারপর একদিন আমলকী বনে
দোলা দেয় বাতাস....
উতলা হয় কদমের ডালপালা
আমি দৃষ্টিতে বৃষ্টি আঁকি।
একপশলা ছুঁয়ে যায় খোলা জানলায়
উদাস মন তখন বাউল হয়
বাঁশীর সুর ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির ঠোঁটে
অনাবিল প্রশান্তিতে ধ্যানমগ্ন সকাল
রূপকথার মায়াজাল আঁকে...
দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমার দুয়ারে।
আবছায়ায় কাটে কিছুক্ষণ
শীতল স্পর্শে রোমাঞ্চিত তনুমন
এই সুন্দর পৃথিবীতে শুধু তুমি আর আমি
হারিয়ে যাই নির্মল স্নিগ্ধতায়...
তোমার আমার প্রথম প্রেম ফি-বছর।
উন্মিলিত ঠোঁটে ছুঁয়ে যায়
সিঞ্চিত জলকণা, প্রশান্তিতে খুলে যায়
মনের জানালা, ভুলে গিয়ে পার্থিব জগৎ
আলিঙ্গনে থাকি দুজনে.....
আমার এ তৃষিত বুকে তুমি নেমে আসো
ভরা যৌবন ছল ছল রূপে....
উদ্বেলিত আমি মগ্ন থাকি...রাতভর রিনিঝিনি ছন্দের দোলায়
ভাসিয়ে নিয়ে যাও স্বপ্ন রাজ্যে...
আমি কবিতা লিখতে বসি।
শিপ্রা পাল
বৃষ্টির গন্ধে উপবাসী প্রেম
নিভৃতবাসী শুধু তুলে রাখে ঝরা পাতা
উদাসী যাপন এক উপবাসী প্রেম
কখনো-কখনো এক পশলা বৃষ্টির ধারা
বইয়ের ভাঁজে গোলাপের পাপড়ি।
উদাসী যাপন এক উপবাসী প্রেম
কখনো-কখনো এক পশলা বৃষ্টির ধারা
বইয়ের ভাঁজে গোলাপের পাপড়ি।
শ্রাবণ বড় কাছের বড় অন্তরজগতে
অনুরণনে সিক্ততার আঙুলে লিখে রাখে
একটুকরো মেঘের ঔপন্যাসিক মনে
ঝড়ের কিছু গোপন কথা।
অনুরণনে সিক্ততার আঙুলে লিখে রাখে
একটুকরো মেঘের ঔপন্যাসিক মনে
ঝড়ের কিছু গোপন কথা।
তবুও নীরব তবুও গভীরভাবে জড়ানো
বালিশের কোণে একাকী কান্নার ছাপে
চুপিচুপি ডেকে নেয় ফেরারী ভালোবাসা
বলে যাবি— কাগজের নৌকো বানাতে!
বালিশের কোণে একাকী কান্নার ছাপে
চুপিচুপি ডেকে নেয় ফেরারী ভালোবাসা
বলে যাবি— কাগজের নৌকো বানাতে!
ফিরে ফিরে চায় অবেলার হাতে কবিতা
একবার যদি বৃষ্টির গন্ধে ভেজা যায়।।
একবার যদি বৃষ্টির গন্ধে ভেজা যায়।।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বর্ষা ছবি
জয়শ্রী রায় মৈত্র
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বর্ষার ভাবনায় অন্য কবিতা
রূপক সান্যাল
অসুখের পর প্রথম কবিতা
পথিকের হাঁটার ইচ্ছে নেই। সবটুকু পথ পকেটে ভাঁজ করে রেখে সে দেওয়ালে ঝুলিয়েছে স্থিরতার ছবি।
আমার ভালো লাগেনা এই শবসাধনা।
পূর্বপুরুষ’রা প্রায়ই কাঁদেন,আমাকে চিনতে পারেন না বলে।
এক টুকরো মাঠ কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। আর পৈতৃক সম্পত্তি বাঁটোয়ারার সময় আমার ভাগে যে আকাশটুকু পেয়েছিলাম,সে সবই বেচে দিয়েছি।
ঠিকানার সাথে শক্ত করে বাঁধা প্রতিটি মানুষ। অথচ ঘরে ফিরতে চেয়েছিল যারা,কেউ ঘরে ফেরেনি।
আজ একটা নিমন্ত্রণ আছে পাখির বাসায়,... সদ্যজাত ডিম আর উড়তে শেখা,দু’টোই লোভনীয়।
তুমি গিয়েছ সমুদ্রে বেড়াতে; কিন্তু সেখানে কেউ লবণ বিক্রি করে না
তোমার যে দিদিমনি জলে ডুবে মরেছিলো,সে জানতো,পুরুষরা আমিষাশী হয়
একদিন মুখে রক্ত তুলে মরবে এই পৃথিবী। ততদিনে হয়তো চিনে যাব,ওই পথিক আসলে আমিই সবটুকু পথ পকেটে ভাঁজ করে রেখে যে স্থিরতার মাদুর পেতে বসে আছে
গায়েত্রী দেবনাথ
উপমা
অন্ধকার আকাশ,শিঞ্জিত বাতাস
সমারোহে স্পষ্ট সবুজে
মেঘেদের লোপাপত্তি,নীর চূরি
চোখের উপমায়,‘রঙ্কিণী সান্তনায়
মুক্তো ঝরে যৌথ ধারায়
শৈশব স্মৃতি,যৌবন মেখে
শ্বেত উত্তরী কিশোর বেশে । ।
শব্দরূপ : রাহুল
অকথিত ম্যাগমা-রাত & সন্দেহ
১
খুন হয়ে গেছো
বেশ
ইদানীং ~
||
আমিও বিশেষ অনুঘটক
২
বৃষ্টি পড়ছে ~ অতএব _____
ভিজলেই জল-কুয়াশা
ঘরভর্তী ~ ||
নোঙর রূপকথা
৩
যতোক্ষন বসে আছি
ততোক্ষন-ই ~ দ্বিধামুক্ত সংযোগ
][
জলীয় রোমকূপ ||0℃ চলছে : উদ্বায়ী রোমশ||
ক্রমশঃ বুদবুদ উৎপন্ন করে ~ মেশিনারি পার্টস্
৪
একটু-একটু এগোনো
এগিয়ে যেতেই : কয়েক একর ~ 7 নো ট্রাম্প
হলহলে : গলছে _ গলুক ||আলাদীন||
মিথোজীবী আংটি ~ ঠাট্টা করছে
যেনো বিকৃত পিলসুজ : জল+মেশানো অভ্যাস : ৩য়
৫
আবিরগন্ধ ~ বলে নাও পথ হারানো অতিভুজ
অতিকায় খাদক্ : খাচ্ছে আমায় - খাদ্য আমার
নিশ্চয়তায় ~ হুইশেল গবেষণা।গবেষক
তোমার অন্তর্বাস : কয়েকটা সেকেন্ড হয়ে গেলো
বেলীফুল ~ সেটাও belly ঝোঁক : আনুমানিক
সমীরণ চক্রবর্ত্তী
সেই মেয়েটিকে
কোথাও একটা মন খারাপের মেঘ
দু'এক পশলা বৃষ্টিমাখা রাত,
কোথাও একটা খোলা জানালায়
জাগছে একটা কাঁকন পরা হাত।
কোথাও একটা সাদা বকের সারি
ঝাপটে ডানা আপন নীড়ে ফেরা,
সন্ধ্যে হলেই মন খারাপের ভীড়ে
স্মৃতির-ঘুনে পোকার নড়াচড়া।
কোথাও একটা চপলমতি নদী
কলকলিয়ে আপন কথাই বলে,
চলার পথে গাঁথছে শুধু মালা
সুখ দুঃখের নানান রঙের ফুলে।
কোথাও একটা অবুঝ ছেলেবেলা
সবুজ ফ্রক আর সাদা রিবন চুলে,
স্মৃতির পাতায় ঝুলের পরিপাটি
চেনা মুখটাই আজ গিয়েছি ভুলে।
সমীরণ চক্রবর্ত্তী
সেই মেয়েটিকে
কোথাও একটা মন খারাপের মেঘ
দু'এক পশলা বৃষ্টিমাখা রাত,
কোথাও একটা খোলা জানালায়
জাগছে একটা কাঁকন পরা হাত।
কোথাও একটা সাদা বকের সারি
ঝাপটে ডানা আপন নীড়ে ফেরা,
সন্ধ্যে হলেই মন খারাপের ভীড়ে
স্মৃতির-ঘুনে পোকার নড়াচড়া।
কোথাও একটা চপলমতি নদী
কলকলিয়ে আপন কথাই বলে,
চলার পথে গাঁথছে শুধু মালা
সুখ দুঃখের নানান রঙের ফুলে।
কোথাও একটা অবুঝ ছেলেবেলা
সবুজ ফ্রক আর সাদা রিবন চুলে,
স্মৃতির পাতায় ঝুলের পরিপাটি
চেনা মুখটাই আজ গিয়েছি ভুলে।
আনিসুর রহমান খান
সভ্যতা ছুঁয়েছে গ্রাম
এখন গ্রামগুলো ছুঁয়েছে শহর
সভ্যতা লেগেছে মানুষের খাদ্য ও পোশাকে
ছোট ছোট খুপরিগুলো পাল্টেছে ভীষণ
পাল্টেছে পথ - ঘাট ঘরদোর জানালা কপাট
যেখানেই যাই যে ঘরেই ঢুকি জৌলুস শহরের
বিদ্যুৎ ফ্রিজ টেলিভিশন কম্পিউটার আভিজাত্যের ছোঁয়া
মাঝে মাঝে মনে হয় শহরের চেয়ে আধুনিক হাওয়া লেগেছে গ্রামে।
চলাফেরা কথা ও কাজে শহরের ঘ্রাণ পাই
চায়ের দোকান ছেড়ে ক্যাফে, কফি হাউজ
দোকানের পসরা কোথাও শহর ছাড়িয়েছে
মনে হয় কোনো কালেই এখানে ছিলো না দারিদ্র্যের বসবাস
ছিলো না খড়কুটোর কোনো আবাস -নিবাস
ছিলো না মহিষ কিংবা গরুর কোনো গাড়ি
আজ ঘাস -বিচালি উধাও পাতা ঝরা নেই
সবুজ অরন্য নেই পাখি ডাকা ভোর
পিচঢালা পথে শহুরে দানব গাড়ি
সভ্যতা আজ চলছে ছুটে গ্রাম থেকে গহিন অরন্যে।
নীলাদ্রি দত্ত
বর্ণহীনমানব সভ্যতা
চোখের সামনে জ্যান্তলাশ;
তবুও উল্লাসে ভাসছে মানুষ!
বিবেক আজ-অমানবিক কারায়
বন্দি হয়ে আছে।
মানবতাকে আজীবন
কারাদণ্ড দিয়েছে এই মানুষ!
হায় মানুষ! কবে যে সহজমানুষ হবে।
সত্যকে উপড়ে ফেলে
মিথ্যার বেসাতি নিয়ে;
কঠিন শিলায় গড়ছে নিবাস।
যে নিবাস থেকে শান্তিদেবী নিরুদ্দেশ!
কোথায় বিবেক কোথায় মানবতা?
কোথায় শান্তিদেবী?
ফিরে এসো, খালাস পাও; মুক্ত হও।
সহজ মানুষেরা এসে হয়তো-
আবার সুদিন ফিরাবে
'বর্ণহীন মানবসভ্যতায়'।
সুখের নিবাসে শান্তিদেবীকে নিয়ে
সত্যকে আঁকড়ে ধরে
মনুষ্যত্ব নিয়ে মানুষের সমাজে
বসবাস করবে এই মানুষ!
কালের বিবর্তনে তা- অসম্ভব নয়।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বর্ষার গল্প, গল্পে বর্ষা : প্রথম পর্যায়
বৃষ্টির ফোঁটা ও গোপীনাথের বউ
সপ্তক
ফাইলপত্র নিয়ে যখন ডিরেক্টরেট অফিসের দিকে রওনা দিল তখন রৌদ্রের তেজ কমেনি, কিন্তু আকাশের কোনে কালো মেঘের আভাস। তেতে পুড়ে ওঠা শহরটা শীতলধারায় সিক্ত হবার আশায় চাতক পাখির মত অপেক্ষমাণ। কত দিন অঝোরে বর্ষা দেখেনি বিভাস!! তাদের চালসার বাড়িতে বৃষ্টি নামত মুষলধারে। বালতিতে, গামলায় জল ধরে রেখে সেই জলে পোনা মাছ ছেড়ে দিয়ে অথবা কাগজের নৌকো ভাসিয়ে মজা করত তারা। স্কুলে রেনি ডে হয়ে যেত প্রায়ই, তখন বৃষ্টিভেজা সবুজ চা বাগানের মাঝের রাস্তা ধরে হুল্লোড় করতে করতে সবাই বাড়ি ফিরতো। আদিবাসী একরাম বুড়ো চা বাগানের ধারের ডোবায় বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরত, চা বাগানের ভেতরে কাদা মাটির ভেতর থেকে কালো কাঁকড়া ধরত আদিবাসী মহিলারা। শুকনো ঝোরা পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্ষার ঘোলা জলে ভরে উঠত আর সেই জলে লাফালাফি করে খেলত বাচ্চারা।
অফিসে ঢোকার মুখে দেখল, হিরণ্ময়দা বেরিয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত সতর্কভাবেই যেন তার দিকে না তাকিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসল। চেয়ে রইলো বিভাস। গত তিন চারদিন থেকে হিরণ্ময়দা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। পরিচিত মহলে বলেছে, কিছু লোকের সংস্রব নাকি তাঁর পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠছে, তাই সেইসব লোকের সঙ্গে কোনো নৈকট্য রাখতে চায় না। কিন্তু হিরণ্ময়দার এহেন ভাবনার কোনো কারণ তার জানা নেই। হিরণ্ময়দা সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য কোনোদিন তার মুখ দিয়ে বেরোয়নি, এমনকি চিন্তাতেও আসেনি। তার থেকে অনেক সিনিয়র হিরণ্ময়দা অনেকের কাছে রাগী ও বদমেজাজী বলে পরিচিতি পেলেও বিভাসের কোনোদিন মানুষটাকে রাগী বলে মনে হয়নি। বরং অত্যন্ত ধীরে কথা বলেন, অসম্ভব সুন্দর শায়েরী বলেন, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সবসময়, প্রশংসা করলে শিশুর মত খুশী হন। বিভাসকে নিজে থেকেই প্রচুর শায়েরী পাঠিয়েছিলেন। মানুষটাকে কোনোদিনও খারাপ লাগেনি বিভাসের। তাই যখনই কেউ হিরণ্ময়দার রাগী স্বভাবের কথা বলত, বিভাসের খারাপ লাগতো, প্রতিবাদ করত। অথচ সেই হিরণ্ময়দাই কোন ভাবনা থেকে তাকে দূরে ঠেলে দিল? এটা সত্যিই তার কাছে অষ্টম আশ্চর্য হয়ে থাকবে। হিরণ্ময়দার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে, আজকাল নিজেকে বড় ক্লেদাক্ত মনে হয়।
চারতলায় উঠে পরিতোষদার টেবিলের সামনে এলো সে। গোপীনাথদার ফাইলটা পরিতোষদার টেবিলে এসে আটকে আছে। এই নিয়ে আজ সাতবার সে আসলো। প্রতিবারই নতুন করে কোনো না কোনো কাগজ চেয়ে পাঠাচ্ছে। পরিতোষদা কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন, তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, "এস ভায়া, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।" গোপীনাথদার ফাইলটা বের করে বললেন, "সবকিছু দেখলাম, বুঝলে, অনেক ফাঁক আছে।" বিভাস হতাশ না হয়ে পারলো না, "আবার ফাঁক!! আবারো কি নতুন করে কোনো কাগজ লাগবে?" পরিতোষদা টাকে হাত বোলালেন, কাগজপত্রে কয়েকবার চোখ বুলিয়ে বললেন, "হবে না, লাভ নেই, গোপীনাথের স্ত্রীর ভোটার কার্ড ও আধার কার্ডে তাঁর স্বামীর নাম দু জায়গায় দুরকম রয়েছে। লিগ্যাল হেয়ার প্রমান করতে অসুবিধে হবে।" বিভাসের খারাপ লাগলো, তাদের অফিসের গ্রুপ ডি স্টাফ গোপীনাথদা প্রায় ন'মাস হল মারা গিয়েছেন। তাঁর বিধবা স্ত্রীর পেনশন এখনো চালু হয়নি, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালানো কষ্টকর হয়ে উঠছে, প্রায়ই সেকশন অফিসার বিমলদার কাছে এসে দুঃখের কথা বলেন। কাগজপত্র অনেকদিন আগে পাঠিয়ে দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে বিমলদা বিভাসকে দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যাপারটা দেখবার। গত দু মাসে সে দৌড়োদৌড়ি করেছে। পরিতোষদা যখনই যে কাগজ চেয়েছেন, সেই কাগজ যোগাড় করেছে যথাসাধ্য। পরিতোষ দা চশমার কাঁচের ফাঁক দিয়ে তাকালেন, "হবে না, হবে না, আমি পাঠালেও ফাইল আবার ফেরত চলে আসবে।" বিভাস জানতে চাইল, "তাহলে উপায়?" পরিতোষ দা মুখে চিন্তার ভাব এনে বললেন, "কি যে বলি! উপায় তো কিছু দেখছি না।" , বিভাসের রাগ হয়ে গেল হঠাৎ, বলল, "পরিতোষ দা, শিবেনবাবুর ক্ষেত্রেও তো এই একই সমস্যা হয়েছিল, সেই ফাইল তো কোথাও আটকালো না, সেটা কি করে করলেন?" পরিতোষদা মাছি তাড়ানোর মত উড়িয়ে দিয়ে বললেন, "কোনটা?শিবেন বাবুর ফাইল? ওটা আমার টেবিল থেকে পাস হয়নি। আমার টেবিলে আসলে ঐ ফাইল বেরোতো না। এই পরিতোষ কোন কাজে ফাঁক রাখে না।" হতাশ হয়ে বিভাস উঠে দাঁড়ালো, "ঠিক আছে, আমি ভোটার ও আধার কার্ড সংশোধনের ব্যবস্থা করে আপনার কাছে আসব।" পরিতোষদা হাসলেন, "তাহলেই কি হবে ভাবছো? উনি আগে যেখানে করতেন, বারুইপুরের অফিস, সেখানকার রেকর্ডিং ঠিকঠাক নেই সার্ভিস বুকে। ওখানকার রেকর্ডিং না হলে তো হবে না!" "ঠিক আছে, কি করা যায় দেখছি" বলে বিভাস বেরিয়ে এলো। অফিসে ফিরে বিমলদাকে সবটা জানালো। বিমলদা বললেন, "জানো তো, এই পরিতোষ আমাদের একাউন্টেন্ট নীলেন্দুর খুব ঘনিষ্ঠ, আমি নীলেন্দুকে ফোন করে দিচ্ছি, ওকে সঙ্গে করে গেলে পরিতোষ কিছু উপায় বাতলে দিলেও দিতে পারে। না হলে এই কাগজের গেরোয় বেচারীর আর পেনশন পাওয়া হবে না।"
পরদিন নীলেন্দুকে সঙ্গে করে বিভাস আবার গেল। আকাশ তখন গর্জনমুখর, ঘন কালো মেঘ উড়ে যাচ্ছে আকাশে। বিভাসকে বারান্দায় দাঁড় করিয়ে নীলেন্দু কথা বলতে গেলো পরিতোষদার সঙ্গে। ফিরে এলো মিনিট পনেরো পরে, মুখে গর্বিত হাসি। জানালো,ফাইল পাস হয়ে যাবে তিন দিনের মধ্যে। স্পষ্টতই খুশী বিভাস প্রশ্ন করল, "কি করে হল?" "চল, কফি খেতে খেতে বলি" বিভাসকে নিয়ে একটা এসি রেস্টুরেন্টে ঢুকলো নীলেন্দু। কফির অর্ডার দিয়ে বললো, "এক লাখে রফা হলো বুঝলি, কাগজপত্রে যা গোলমাল সোজা পথে কোনোদিনও পাস হতো না।"
–"মানে?? কাগজের বিনিময়ে টাকা? তাছাড়া গোপীনাথদার বউ এত টাকা পাবে কোথায়?
–"এই নীলেন্দু কখনো কাঁচা কাজ করে না, বুঝলি বিভাস। ফাইলে গোপীনাথদার বউয়ের ফোন নাম্বার ছিল। পরিতোষদার সামনেই ফোনে কথা বলে নিয়েছি, পি এফ থেকে যে সাড়ে চার লাখ পেয়েছে সেখান থেকে মাত্র একলাখ খরচ করলেই সব সমস্যার অবসান। প্রথমে দোনামনা করলেও পরে বুঝিয়ে বলাতে রাজী হয়েছে। তাছাড়া পরিতোষদা দেড়লাখ চেয়েছিল। আমি একলাখে রাজী করিয়েছি। আমার সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে বলেই না এত কমে রাজী হয়েছে! অন্য কেউ হলে চোখ বন্ধ করে দু লাখ চাইত!!!" তৃপ্তির সঙ্গে কথাগুলো বলে মিনারেল ওয়াটারের বোতল খুলে ঢকঢক করে গলায় ঢালল নীলেন্দু। এয়ার কন্ডিশনড রেস্টুরেন্টের বদ্ধ ঘরে গা গুলিয়ে উঠলো বিভাসের। পাহাড়ী ঝোরা বেয়ে নেমে আসা বর্ষার একটু ঘোলা জলের জন্য তার মন আকুল হয়ে উঠল।
আলোর দিশারী
মৌসুমী চৌধুরী
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হিসেবে অমলবাবু কাজে যোগদান করেন "আষাঢ়স্য প্রথম দিবস"এ। এ তল্লাটে বর্ষাটা এবার একটু আগেই এসেছে। প্রথমদিনই কথাটা কানে গিয়েছিল অমলবাবুর। গত সপ্তাহের বর্ষায়ই নাকি গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গেছে স্হানীয় কুসুমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ইতিমধ্যে এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাসের ব্যবস্হা করেছে পাশের গ্রাম ভীমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তা কুসুমপুরের ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীরা নাকি কিছুতেই ভীমপুরে পড়তে যেতে রাজি নয়। সরেজমিনে পরিস্হিতি খতিয়ে দেখতে অমলবাবু আজ তাই সোজা হাজির হয়েছেন কুসুমপুরে। অমলবাবু নরম মনের মানুষ। প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করতেন, এখন শিক্ষাদপ্তরের পদস্হ অফিসার তিনি। তলিয়ে যাওয়া স্কুলটির ধ্বংসস্তূপের কাছে বসে থাকা কচিকাঁচাদের ভীমপুরে গিয়ে ক্লাস করবার পরামর্শ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পড়ুয়াদের কথা শুনে উল্টে চোখ জলে ভরে গেলো তাঁর।পড়ুয়ারা সংসদ সভাপতিকে কাছে পেয়ে আর্জি জানায়, "আমাদের স্কুলটা ফিরিয়ে দাও। আমরা অন্য স্কুলে পড়তে যাবো না কিছুতেই।" ফাঁপড়ে পড়ে গেলেন সংসদ সভাপতি। এমনিতেই জমির অভাবে ভাঙন-পীড়িতদের পুনর্বাসন হচ্ছে না। কেউ আবার অন্যের আম বাগানে মাথা গুঁজেছেন। এমতাবস্হায় স্কুলের জন্য জমি পাবেন কোথায়? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ভীড় কাটিয়ে পাশেই এক আম বাগানে একটা বড় আম গাছের তলায় এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরান অমলবাবু। চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাঁর কপালে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে এখনও। চারদিকে চেয়ে দেখেন, জমির অভাবে আমবাগানটিতে ইতিউতি তাঁবু খাটিয়ে সংসার পেতেছেন ভাঙনে ভিটে-খোয়ানো গ্রামবাসীরা।বাতাসে গরম ভাত ফোটার গন্ধ ভাসছে। ভাত উথলাচ্ছে ভিটেহারা পরিবারগুলোর হাঁড়িতে। হঠাৎ ভীড়ের ভেতর থেকে এগিয়ে আসেন ডুবে যাওয়া "কুসুমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়" এর এক শিক্ষক দীপক দাস। জোর হাত করে বলেন, "নমস্কার স্যার, একটু আসুন,এই যে এদিকটায়, আমাদের তাঁবুতে।"।দীপক বাবুর পিছু পিছু এগিয়ে যান সংসদ সভাপতি। গিয়ে দেখেন, গঙ্গার ভাঙ্গন তাঁর ভিটে কেড়ে নিয়েছে। পরিবার নিয়ে পলিথিনের ত্রিপলের তলায় দীপকবাবুর ঠাঁই এখন এই আমবাগানেই। একটু চুপ করে থেকে, উদাস দৃষ্টি দূরের দিকে নিক্ষেপ করে দীপকবাবু বলেন, "ছেলেমেয়েগুলো অন্য গ্রামে পড়তে যেতে না চাইলে গ্রাম তো অন্ধকারে ডুবে যাবে! বাচ্চাদের পড়ার ব্যবস্হা করে দেওয়ার জন্য আমার যে জমিটুকু এখনও আছে, তা নেহাতই তুচ্ছ। শিক্ষা দপ্তর জমিটা গ্রহণ করে স্কুল বানালে আমি শান্তি পাবো।" দীপকবাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখ আবার জলে ভরে যায় সংসদ সভাপতির। শিক্ষার আলো বোধহয় একেই বলে। সেই আলোয় যেন তুচ্ছ হয়ে যায় নিজের মৌল চাহিদাটুকুও। সেই আলোর স্রোতই যেন প্রতিরোধ করে গঙ্গার ভাঙন, সেই আলোই ভাঙতে দেয় না গৃহহীন-নিঃসম্বল শিক্ষকের মনোবল। আর এমন মানুষই তো আজও হয়ে ওঠেন আলোর পথের দিশারী, হতাশার অন্ধকার নেমে আসা এ পৃথিবীর বুকে। বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অমল চট্টরাজ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
কবিতার বর্ষায় : প্রথম পর্যায়
নিঃস্ব ধরণী
সুব্রত নন্দী
পুরাতনী ল্যাম্পপোস্ট।
প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন।
এখন আলোহীন!
আপাদ মস্তক জীর্ণতা।
প্রদীপের শিখা আঁধারে!
এখন বর্ণহীন!
কলুষিত ছায়াঘন অঞ্চল।
অমানিশায় মোড়া ধরণী।
এখন জোনাকি ভরসা!
নিঃসম্বল ভূমাতার ভাণ্ডার।
আজন্মকাল লুণ্ঠিত মাতৃক্রোড়।
এখন শুধু মরুভূমি!
প্রতিদান চায়নি কভু।
শুধু একটু সাহচর্য।
এখনও কালোচশমায় ঢাকা!
আজন্মকাল উদাসীন।
নিজের মনের স্বার্থসিদ্ধি।
এখনও কী ভাবছে?
উচ্চাশার পারদ আকাশচুম্বী।
বারুদে সাজায় নৈবেদ্য।
এখন বন্দুকই শেষ কথা!
বৃষ্টি পথ
কাকলি ভদ্র
দিগন্ত উপবৃত্তের নিয়ন সময়ে
জারুল জুঁই সহবাস
ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা অধরা সে পথে
ঘুণ ধরা ডাইমেনশন শ্বাস!
সে পথ আমার পথ!
আমি সেই পথে হাঁটি ।
যে পথ মিশেছে পুনর্ভবায়
আত্রেয়ীর টুপটাপ ঢেউ
যে পথের সুরে চর্যাপদ
মেঘ-কীর্তনে মাতে কেউ!
যে পথে পুড়ছে দহন বৃষ্টির
মিথ ও ম্যাজিকাল আগুন
যে পথ খুঁজছে এক জুপিটার
শ্রাবণ বিরহী ফাগুন!
সে পথ আমার পথ
আমি সেই পথে হাঁটি।
আষাঢে-ভাসারে
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী
নীল আকাশের সমুদ্দুরে ভাসিয়ে মেঘের ভেলা,
মেঘবালিকার দস্যিপনা উড়নচন্ডী খেলা ।
আকাশের ঐ পাঁজর জুড়ে মেঘ-রাজ্যের মেলা,
ইচ্ছেমতন ভেসে বেড়ায় সকাল-সন্ধ্যেবেলা ।
দস্যিমেয়ে ঝড় তুলেছে উড়িয়ে দিয়ে ধুলো,
টুপ-টাপ-টিপ ঝড়ছে দেখি বৃষ্টি-কণাগুলো ।
বৃষ্টি জলে ভেজার নেশায় যেই গিয়েছি ছাদে,
চমকে উঠি হঠাৎ ভীষণ একটা বজ্রনাদে ।
খেয়ালখুশির খোলামকুঁচি উড়িয়ে দিয়ে গায়ে,
বৃষ্টি আমায় ভিজিয়ে দিল আষাঢ়ে বর্ষায় ।
ভিজছে উঠোন,ভিজছে বাড়ি, পাখপাখালি সব,
গাছগাছালি ভিজছে সুখে,যেন মহোৎসব ।
ভিজে উঠোন,স্যাত-স্যাতে মন মিলেমিশে একাকার,
চোখের তারায় তৃষ্ণা আমার,বুকে অন্ধকার ।
আনন্দ ধারা
রীনা মজুমদার
বৃষ্টি ভেজা দিনগুলি সব
ফিরে ফিরে চায়--
বাদল মনে বেহিসেবী ভিড় জমায়
কাগজনৌকা পাল তুলে বায়
পুতুল ঘরে মনের আঙিনায় l
টিনের চালে বৃষ্টি শোনা
সবুজ মনে সবুজ পাতায় বৃষ্টি গোণা
কাঁচা উঠোনে জল মাপি
সবুজ মাঠ সাগরে নাইতে নামি...
শৈশব ভরা কচুরিপানা, কাদা জল
শঙ্খচিল, ভাইয়ের হাতে হাত
স্নেহমাখা মায়ের শাসন,
আনন্দ মূখর, উজ্জ্বল উচ্ছল l
আষাঢ় দিনের কালো মেঘ
আঁখি তারই উৎসস্থল
জোয়ারহীন শান্ত জীবন
নিঃশব্দে জাল বুনে যায়,
বইছে আপন কোন ঠিকানায় !
বাদল বাদল দিনগুলি সব
গেল কোথায় ?
উদয় সাহা
বৃষ্টিকথা
ক
একটা সমান্তরাল পথ...
গন্তব্য মোহনা
আমার সাথে তোমার হেঁটেচলা
মুখচোড়াদের আড়চোখে কাকস্নান
খ
একহাতে বর্ষাতি। আর এক হাতে মন।
তুমি এসেছিলে ঝোড়ো হাওয়ার অণুগল্প হ'য়ে
আমি ভারী বর্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম
গ
কিছু কথা শেষসারির সিটের গায়ে ভর
কিছু কথা স্নানঘরেতে গুনগুন
কথাগুলো আঁচর
কথাগুলো পুষ্পবৃষ্টির আলফাজ
ছুঁয়ে থাকা
দীপশিখা চক্রবর্তী
এভাবেই ছুঁয়ে থাকা সময়,
স্মৃতির শেকর বেয়ে উঠে আসে চুপচাপ- খোঁজে ঘুম-না আসা চোখের স্বপ্ন!
কলম নীরবে সাজায় দু-ফোঁটা বৃষ্টি-
আকাশের ফাটাফাটা নীল শরীরে,
জল ভেঙে জলটুকরো ছড়াই;
কখনো আনমনে আঁকা-
পাথরচাপা তরঙ্গ!
নিদ্রাহীন বুড়ো শহরের অলিতেগলিতে- ছড়িয়ে থাকে ভাঙা জীবনের প্রতিলিপি!
বুকের ভেতরের জ্বলে ওঠা আগুন-
পোড়ায় একটু একটু করে;
আর নয়!এবার ঝরবো-
ভারী বৃষ্টি হয়ে,তোমার বুকে!
কথারা রূপ নেয়,নতুন শব্দের-
উড়ানে মেতে ওঠে আমার পাখিমন।।
শুভদীপ ঘোষ
বর্ষার ধারা
ঝিরি ঝিরি বহিছে বাতাস,মাতিছে বাদল স্বপন খেলায়,
কি করে থাকি বসে গৃহে এই সাঁঝের বেলায়।।
উঠিছে হুঙ্কার ক্ষণে ক্ষণে,
যাচ্ছে উড়ি বারিদ সব কোন দেশের পানে?
ভিজিছে আজ বিহগ গুলি,উড়িছে তারা সানন্দে;
মাতিছে তাদেরও মন এই মধুর বর্ষার প্রারম্ভে।।
মহীরুহ সব আজ পাহিছে স্বস্তি,পুড়িছে তারা বহু বেলা,
আজ যেন বর্ষার ছুঁতে তারা করিছে খেলা।।
পিপাসিত চাতকটি নিয়েছে আজ শ্বাস,পাহিছে জল-
তারাও আজ জোট মিলায়ে পাড়িছে কোলাহল।।
সবুজ ঘাসে ছেলেরা করিছে খেলা,বারি কণা সব পাতিছে মেলা;
গৃহে শুধু বসে আছি আমি একেলা।।
চঞ্চলময় আমারও মন,মাতিছে সেও বর্ষার তালে-
ধরেছি তারে হাতের মুঠোয় মেখেছি কপোলে।।
আমিও যদি উড়িতে পারিতাম,ভাসিতাম আকাশে;
ঘুরিয়া বেড়াতাম দেশ বিদেশ,ঝরে পড়িতাম বর্ষার নিঃশ্বাসে।।
মুগ্ধ আমি রঙের খেলায়,সাদা কালোর অটল গড়নে;
ঝলকে ওঠে বিজলী জ্বেলে দেয় দীপ বকুল কাননে।।
দক্ষিণ হতে আসিছে আরো কাল মেঘ,গর্জে ওঠে ধরণী;
চলিছে তার নৃত্য লীলা,নামিল রজনী।।
জানিনা থামিবে কখন এই মধুর লীলা?
দেখিতে দেখিতে আমার পোহাল বেলা।।
বৃষ্টি
পিয়াংকী মুখার্জী
বৃষ্টি ...
তোমায় ছুঁয়ে আলপথ আজ
মিশেছে ফসলি মাঠে ,
আলগা বুকে ভিজছে শাড়ি
চাষীবউ ধান কাটে ।
বৃষ্টি ...
ভেজা চুল ভেঙ্গে টপটপ জল
পড়ছে মরুর দেশে ,
আলতো কপোল জরুল পিঠ
শুষে নেয় সন্ত্রাসে ।
বৃষ্টি ...
চিবুক আগলে কালো তিলটা
জ্বলজ্বল করে মুখে ,
উত্তাল শহর স্নাতাসিক্তা
আদর নাচে দুচোখে ।
বৃষ্টি ...
সানশেড টপকে আছাড় খেয়ে
পড়লে মাটির রাস্তায় ,
একটি ফোঁটা দিও এজন্মে
লুকোবো কবিতার খাতায় ।
বৃষ্টি ...
হঠাৎ মেঘের শরীরে কামড়
বাজের বুকে সম্ভ্রম ,
বরিষ-ধরা-মাঝে সুচিত্রা আর
তুমি আষাঢ় আমি শ্রাবণ ! !
গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা
মৌসুমী ভৌমিক
গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা
টাপুর টুপুর ছন্দে মনে হরষা
পেখম খুলে ময়ূর নাচে উল্লাসে
নব যৌবনা বর্ষা আনন্দে ভাসে।
শ্যামল প্রকৃতি সাজে নববধূসাজে
চঞ্চলা আকাশে ঘোর দুন্দুভি বাজে
মালতী বেলি চম্পা চামেলি খুশিতে হাসে
সুরভি কুসুমে কবি বাতায়ন উচ্ছ্বাসে।
দ্রিমিদ্রিমি মাদলে সর্বনাশী সংকেতে
প্রমাদ গোণে চাষীগণ ফসলের ক্ষেতে।
সংহারী মূর্তিতে বর্ষা গৌরবে অট্টহাসে
আলুলায়িত জটাজাল মেলে অনায়াসে ।
বর্ষাসিক্ত প্রকৃতির মুক্তধারায় স্নান
গুরু গুরু মেঘমল্লারে খুশির কলতান।
তাপস দাস
নদী আকাশের বর্ষা
নদী নামের মেয়ে
শহর শুধু ছুঁয়ে
বেড়িয়ে যায়,বন্যতায়
শরীর খুলে চায়,আকাশের শব্দকে,
ছবিকে বুকে বেঁধে নিতে।
শহর শুধু ছুঁয়ে
বেড়িয়ে যায়,বন্যতায়
শরীর খুলে চায়,আকাশের শব্দকে,
ছবিকে বুকে বেঁধে নিতে।
আকাশ মানে যার সকালের সাথে বিকেল আলাদা
যার রাত জ্বলে থাকা নক্ষত্র সমাবিষ্ট গৌরবে
পরিপূর্ণতা, জীবন উপুর করে দেওয়া।
যার রাত জ্বলে থাকা নক্ষত্র সমাবিষ্ট গৌরবে
পরিপূর্ণতা, জীবন উপুর করে দেওয়া।
বর্ষা যেখানে ইচ্ছের চাষে বুকে নেমে আসে নদীকে আকাশ দেয়, নদী তা ধরে নেয়
ভারী হয়ে ওঠে সুঠাম বুক, সবার সুখ ধুয়ে আসে
নদী আকাশের পরশে, গড়ে ওঠে
আর এক অন্য বসুন্ধরা।
ভারী হয়ে ওঠে সুঠাম বুক, সবার সুখ ধুয়ে আসে
নদী আকাশের পরশে, গড়ে ওঠে
আর এক অন্য বসুন্ধরা।
ভিজে মন
দেবযানী সিনহা
তোমার আসাযাওয়ার স্বাভাবিক ক্ষণ
অপেক্ষার জাল বুনছে আষাঢ়ীমন
ভৌমজলের নাব্যতা মাপি প্রখর রোদ্দুর যখন।
আম জাম অশ্বত্থ বট আছে দাঁড়িয়ে
শেকড় এনেছে খবর রাস্তা হারিয়ে
জল নেমে গেছে সহস্র যোজন দূরে।
মেঘভাঙা গর্জনে নীল সামিয়ানা উথাল পাতাল
তাণ্ডবনৃত্য অহরহ চলছে আজকাল
বৃষ্টিমিছিলে বাবুই চড়ুই হচ্ছে নাকাল।
খোলাজানালা হাত রাখি বাইরে চল
হাওয়া ছিটিয়ে দিল এক ঝাপটা জল
সিক্ত পল্লবিত মুছে যায় চোখের কাজল।।
আবিষ্কার
অনিমেষ সরকার
তোমায় ভেজাবো বলে কোনো একসময় কলম্বাস সেজে ছাদের উপর পাহাড় করেছি আবিষ্কার;
নিত্য নতুন সূত্রে ডেকেছি মেঘ প্রতিটি চেনা মোড়োকে,
অস্তগামী সূর্যের রানীচেরা ঠোঁট নিয়ে বাঁধিয়েছি গোলমাল;
তোমায় ভেজাবো বলে প্রতি রাতে প্রাক্কালে ভিজেছি নিজে,
নিয়েছি অনুভব মরণ কামড়ের!
তোমায় ভেজাবো বলে কোপারনিকাস চেয়েছি সাজতে,
তোমায় ভেজাবো বলে প্রতি সিগারেটে আঁধখাওয়া ছাই রেখেছি সযত্নে কৌটোয়;
যতবারই কার্ডবোর্ডের উপর অবয়ব চেয়েছি ঠিক সূক্ষভাবে বসাতে;
বৈভব নামক কীট গিলেছে আমাকে আলতো করে!
ভাঙা আয়নায় জুড়েছি টুকরো টুকরো কোলাজ-
কখনও গাল,কখনও চিবুক অথবা নারী স্পন্দনে উঠেছি স্নান সেরে;
তোমায় ভেজাবো বলে -
চৌরাস্তায় এখনো থাকি এক পশলা আবেশে,
তোমায় ভেজাবো বলে রাত নামে প্রতিটি হৃদয়ে সন্তর্পণে।।
অনিমেষ সরকার
তোমায় ভেজাবো বলে কোনো একসময় কলম্বাস সেজে ছাদের উপর পাহাড় করেছি আবিষ্কার;
নিত্য নতুন সূত্রে ডেকেছি মেঘ প্রতিটি চেনা মোড়োকে,
অস্তগামী সূর্যের রানীচেরা ঠোঁট নিয়ে বাঁধিয়েছি গোলমাল;
তোমায় ভেজাবো বলে প্রতি রাতে প্রাক্কালে ভিজেছি নিজে,
নিয়েছি অনুভব মরণ কামড়ের!
তোমায় ভেজাবো বলে কোপারনিকাস চেয়েছি সাজতে,
তোমায় ভেজাবো বলে প্রতি সিগারেটে আঁধখাওয়া ছাই রেখেছি সযত্নে কৌটোয়;
যতবারই কার্ডবোর্ডের উপর অবয়ব চেয়েছি ঠিক সূক্ষভাবে বসাতে;
বৈভব নামক কীট গিলেছে আমাকে আলতো করে!
ভাঙা আয়নায় জুড়েছি টুকরো টুকরো কোলাজ-
কখনও গাল,কখনও চিবুক অথবা নারী স্পন্দনে উঠেছি স্নান সেরে;
তোমায় ভেজাবো বলে -
চৌরাস্তায় এখনো থাকি এক পশলা আবেশে,
তোমায় ভেজাবো বলে রাত নামে প্রতিটি হৃদয়ে সন্তর্পণে।।
প্রলাপ
পাপিয়া চক্রবর্তী
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লে
মেঘেদের কী মৃত্যু হয়,
না নতুন জন্ম হয়
নাকি জন্ম মৃত্যু বলে
কোন শব্দ মেঘেদের
অভিধানে নেই-
এই রকম প্রশ্ন মাথায় এলে
তোমার মুখটা মনে পড়ে
সব উত্তরই যে রাখা আছে
তোমার চোখের এনসাইক্লোপীডিঅয়
তুমি যখন চশমা পড়ো
আমার ভীষণ কান্না পায়---
বৃষ্টি কাব্যের অ্যালবাম
গৌতমী ভট্টাচার্য
বৃষ্টি, আমি তোর সাথে ভিজতে চাই
আকাশটা বড়ো তোর কথা ভাবে
তাই মাটিতে ঘাসে গাছপালায় পাহাড়ে সমুদ্রে
সবখানেই তোর অবাধ গতি।
আকাশের উদারতা সার্থক করেছে তোকে ,
তোর সর্বস্ব পাওয়াকে।
তোর গান শুনে—
কখনও ঘুমিয়ে , কখনও জেগে
হাত বাড়াই,,স্পর্শ করি তোকে
মুখে মেখে নিই তোর মেঘের চন্দন।
আমার মাথার ছাদটা
তোর মতই উঁচু কিন্তু নিরেট কঠিন ।
তাই জমাট বাঁধা বরফের মতো
আমার কংক্রিটের জগৎ।
যদি জল হয়ে মিশে যেতে পারতাম
পাহাড়ে নদীতে সমুদ্রে
এক মুক্ত জীবন আমার
সে হত এক পরম পাওয়া।
কবিদের কাছে তুই কাব্য
তোর সেরা কবিতার অ্যালবামটা
রেখে দিস আমার জন্য।
সেখানে আমি খুঁজে পাব
আমার আমিকে
প্রকৃতি আর আমি—
দুই নারী মিশে যাব কাব্যে।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বর্ষার গল্প, গল্পে বর্ষা : দ্বিতীয় পর্যায়
শ্রাবণসন্ধ্যায়
সোমা বোস
-
আমাকে
আজ দশহাজার টাকা দিও তো মা।
-
দশহাজার? অ্যাতো টাকা কিসে লাগবে?
-
বন্ধুদের
সাথে ঘুরতে যাবো,
তারই গাড়ি
বুক করতে হবে।
-
বাড়িতে
একটা গাড়ি থাকতে আবার আলাদা করে গাড়ী বুকের কী দরকার? ওতে করেই কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে
আয়।
আর গাড়ী
বুক করতে দশহাজার?
বলিস কি! কোথাকার গাড়ী? কী গাড়ী?
-
টাকাটা
দেবে কিনা বলো।
দিলে দাও, না দিলে বাবা আছে।
-
না, আমি দেবো না। নিজে রোজগার করে যা খুশী
তাই কোরো,
কেউ বলতে
আসবে না।
আমার অনেক
কষ্টের টাকা,
এভাবে তোমাকে
আমি তা নষ্ট করতে দেবো না।
-
বেড়াতে যাওয়া মানে টাকা নষ্ট করা!
-
হ্যাঁ, আমার কাছে তাই। বাড়ীতে অলরেডি একটা গাড়ী
যখন আছে,
তখন আলাদা
করে একটা গাড়ী বুক করা মানে আমার কাছে টাকা নষ্ট করাই।
-
ওই গাড়ীতে তো তুমি কাজে যাও…, তোমার কাজে লাগে!
-
কেন? তুমি একদিন তাতে করে কোথাও যেতে চাইলে আমি
কি দেবো না?
-
কিন্তু কলেজে তো আমি বাসেই যাই, তখন গাড়ী কোথায়?
-
তা
সেটা বললেই হয়,
গাড়ী কাল
থেকে তোমার কাছেই থাকবে।
আমিই না
হয়…। আর স্টুডেন্ট লাইফে অতো
বিলাসিতাও ঠিক নয়।
-
আমার
সব বন্ধুদের বাইক আছে,
তারা সব
বাইক নিয়েই কলেজ যায়।
-
তা
বেশ তো,
তুমিও তাহলে
নাহয় ওই কোনো একজন বন্ধুর বাইকের পেছনে বসে চলে যেও। এরজন্যে এতো কথা কিসের? তাছাড়া স্টুডেন্ট লাইফে
একটু কষ্ট করলে আখেরে ভালোই হয়।
-
ঠিক
এইজন্যেই বাবা তোমাকে পছন্দ করে না,
এবারে বুঝতে
পারছি।
-
শুভ…….।
ছেলের
ওপরে চেঁচিয়ে উঠলেও পরমূহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো বসুধা। এ কার ছায়া সে দেখতে
পাচ্ছে শুভর মধ্যে!
ফ্যাশন
ডিজাইনিং এর ডিগ্রী কোর্সে সেকেন্ড ইয়ারে পড়া ছেলে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়ার জন্যে
দশহাজার টাকা চাইছে!
এরজন্যে
তার মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই,
লজ্জা নেই! খামোখা ওর ওপরে চেঁচিয়ে
কি হবে?
রক্ত তো
কথা বলবেই!
ওর আর কী
দোষ! লম্বা এক দীর্ঘনিশ্বাস
ফেলে বসুধা তার কাজে মন দিলো।
অনেক, অনেক লড়াই করে সে তার
পরিশ্রমের ফসল আজ ঘরে তুলতে পারছে।
তিল তিল
করে তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে কতটা সময় লেগেছে তার, শুভ তা জানেনা? দেখেনি নিজের চোখে? বসুধা ভেবেছিল তার এই
সংগ্রামে সে-ও সামিল হবে, তার সহযোদ্ধা হয়ে উঠবে। তার বড় ভরসার জায়গা ছিল
এটা, কিন্তু নাহ্… সে বড় ভুল আশা করে এসেছে। এ কা’কে নিয়ে সে আশা করছে? মনে মনে সে জানতো যে
রক্ত কথা বলে,
কিন্তু
শুভর শরীরে যেমন তার বাবার রক্ত বইছে, একইভাবে তো তার রক্তও বইছে! তাহলে সেই রক্ত কথা বলছে না কেন? কেন সেই রক্ত নীরব হয়ে
থাকে? ভেবে পায়না বসুধা।
অকস্মাৎ
চোখ মেলে সে দেখলো এক অদম্য রাগে শুভ ডাইনিং টেবিলের চেয়ারগুলোকে উল্টেপাল্টে দিয়ে
সজোরে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
ঘরের পর্দাগুলো
যেন হাওয়ায় উড়ে গেলো তার সাথে,
আর বাইরের
দরজাটা দড়াম করে পড়লো।
বসুধার
মনে হল যেন একটা বিশাল ভূমিকম্প ঘটে গেলো ঘরের মধ্যে। তার সন্তান এমনটি হয়ে
উঠুক তা তো সে চায়নি!
তাহলে কি
সন্তানপালনে তারই কোথাও ঘাটতি থেকে গেছে? তার গর্ভধারণের পর থেকে বরাবর তার মনে কন্যাসন্তানের
জন্যে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল।
মা ও মেয়ে
মিলে পরস্পরের
সুখদুঃখের সাথী হবে।
স্বামী
সুধাংশু তো সেরকম সাথী হল না!
সে কখনো
তার বন্ধু হয়ে ওঠেনি,
শুধুমাত্র
প্রভু এবং শাসক হয়েই ছিল।
মনে পড়ে
সুধাংশু কতোবার তাকে ব্যঙ্গ করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলতো “ওই তো সামান্য লোক খাওয়ানোর ব্যবসা!” অথচ বিয়ের আগে এই সুধাংশু
কি ভালো ভালো কথাই না শোনাতো…
“কাজের
ক্ষেত্রে ছোটোবড়ো বলে কিছু নেই,
সব কাজই
সমান মর্যাদার।
আমি তো
আমাদের পারিবারিক ব্যবসাটাকে ধরবার চেষ্টা করছিই, তুমিও বিয়ের পরে তাতে যোগ দিতে
পারো বা আলাদা করে কিছু করতেও পারো”। বিয়ের আগে বসুধার ইচ্ছে
ছিল সরকারী চাকরীতে ঢোকার।
কিন্তু
নানা চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তার ভাগ্যে কোনো চাকরী জুটলো না। এদিকে বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ীর
কাপড়ের ব্যবসাতেও তার মন লাগলো না,
অগত্যা
সে চিন্তা করলো স্বাধীন কিছু ব্যবসা করবে। কিন্তু এব্যাপারে অবাক করে দিয়ে
সুধাংশুর প্রবল আপত্তি দেখা দিলো
“স্বাধীন
ব্যবসা মেয়েমানুষের দ্বারা হয় না,
কারণ ব্যবসায়িক
বুদ্ধি তাদের থাকেনা।
দেখা যাবে
লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যাবে।
আর তাছাড়া
স্বাধীন ব্যবসা করার দরকারটাই বা কি?
যদি আমাদের
পারিবারিক ব্যবসায় কোনো কাজে আসতে,
তবু নাহয়
ভেবে দেখতাম।
তার চেয়ে
ঘরসংসারের কাজ নিয়ে থাকো”। সুধাংশুর এই কথাগুলো
বসুধার মরমে গিয়ে বিঁধলো,
কিছু একটা
করার এক অদম্য জেদ তাকে আরও পেয়ে বসলো। ব্যস্ত চাকুরে মায়েদের রান্নার
ঝক্কির হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্যে শুরু করলো হোম ডেলিভারির ব্যবসা। এই নিয়েই সুধাংশুর সঙ্গে
তার বিরোধ বাধলো।
সুধাংশুর
ছিল বেপরোয়া বেহিসাবি খরুচে স্বভাব,
এজন্যে
দ্যাওরের কাছে কথাও শুনতে হত তাকে।
দ্যাওর
ছোট ভাই হয়ে যে পরিশ্রম করতো,
দাদা তার
কানাকড়ি পরিশ্রম না করে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে রাখতো। নিজের নানা উদ্ভট শখ
মেটাতে সে দেদার খরচ করতো,
কিন্তু
স্ত্রীর ব্যবসায়ে লগ্নি করার ব্যাপারে সে নীরব। এমনকি স্ত্রীর হাতখরচের
জোগানও দিতো না।
অগত্যা
বসুধা একটু একটু করে লুকিয়ে তার কিছু গয়না বেচে নিজের ব্যবসায়ে লগ্নি করা শুরু করলো। সুধাংশুর আপত্তির মূল
কারণ হল তাদের মতো এক প্রতিষ্ঠিত বস্ত্রব্যবসায়ী পরিবারের বৌ কি করে হোম ডেলিভারির
মতো সামান্য কাজে নামতে পারে?
আফটার অল
তাদের পরিবারের একটা মানসম্মান বলে ব্যাপার তো আছে! তাই মাঝেমধ্যেই তার ওরকম নাক
সিঁটকানো উক্তি বেরোত।
অবশ্য বসুধা
নিজেও কখনো কল্পনাই করেনি যে তার ব্যবসা কালেকালে এতোটা বড় হয়ে দাঁড়াবে। তার আগেই তো তার ঘাড়ে
ছেলে আর সংসার ফেলে রেখে সুধাংশুকে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে আমেদাবাদে গিয়ে বসবাস শুরু
করতে বলা হয়েছিল।
অবাধ্য
বসুধাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রসঙ্গই ওঠেনি। দ্যাওর সীতাংশুও বৌদির
হোমডেলিভারির কাজ ভালো চোখে দেখেনি,
তাই শ্বশুরবাড়ির
এককোণে বসুধার ঠাঁই হয়েছিল।
তারপর একাহাতে
এই ব্যবসা সামলানো আরেকহাতে এই ছেলেকে বড় করে তোলা, কি ধকলই না গেছে!
হোটেলে
এসে দেখলো রোজকার মতো মালতী এসে গেছে আগেই। সব ঘর ঝাঁটপাট দিয়ে ফার্নিচার
সাফাইও হয়ে গেছে।
তারপর হোটেলের
রিসেপশন রুমের মধ্যিখানে থাকা লক্ষী ও গণেশের মূর্তিতে তার কিনে আনা মালা পরিয়ে চারপাশের
ইলেকট্রিক প্রদীপগুলোও ধরিয়ে দিলো রোজকার মতোই। বসুধা এবারে ধূপকাঠি
ধরিয়ে কয়েকবার সামনে,
এদিকেওদিকে
ঘুরিয়ে ধূপদানিতে গুঁজে দিয়ে আর পাশের রেকাবীতে জড়ো করে রাখা কুচো ফুল তাঁদের পায়ে
নিবেদন করে নিজের নির্দিষ্ট রুমে গিয়ে টেবিলে আসীন হল। কম্পিউটার অন করে তাতে
দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলো হিসেবনিকেশের পাতাগুলো। সামনে জড়ো থাকা কোন কোন
রেজিস্টারে কি কি লিপিবদ্ধ হয়েছে সেগুলোতেও একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া। মনে পড়ে প্রথম প্রথম
তার হোমডেলিভারির ব্যবসা শুরু করার পরেপরে আত্মীয়-বন্ধু অনেকের কাছে তাকে নানা
টিটকিরি শুনতে হয়েছে
“শেষে কিনা
বসাক পরিবারের বউকে এই রান্নাবান্নার সামান্য হোমডেলিভারীর ব্যবসায়ে নামতে হল!” সে
মনেমনে ভাবতো রান্নাবান্নার ব্যবসা করা কি খুব খারাপ একটা কাজ! নাকি নামী ব্যবসায়ী পরিবারের
বউ বলে তার পক্ষে সেটা খুব একটা অযোগ্য কাজ! যে কোনো কাজই যে কেউ করতে পারে। তাতে শ্রেণীকরণ করার
কি আছে!
তার রান্না
করতে বেশ ভালোই লাগতো,
তাই সে
ওই রান্নাকেই তার রোজগারের হাতিয়ার করে নিয়েছিল। সেই সামান্য হোম ডেলিভারির
ব্যবসা আজ কলেবরে বৃদ্ধি পেয়ে এক প্রতিষ্ঠিত হোটেল ব্যবসায় দাঁড়িয়েছে। আজ তার তৃপ্তিসুখের দিন, কিন্তু আজকের শুভর আচরণে
কোথাও কি সেই সুখের ঈশান কোণে একখন্ড কালো মেঘ? বহুবছর পূর্বের সেই কালো মেঘ
আজও তো একইভাবে বিদ্যমান।
তার সাথে
কি আজ আরেক মেঘের সংযোজন হল?
মেঘের পরে
মেঘ জমেছে!
এ কিসের
অশনিসংকেত!
আচমকা বিপবিপ
করে সামনের টেলিকমে আওয়াজ হতেই রিসিভার অন করে সে...
-
ম্যা’ম, আমাদের ব্যাঙ্কোয়েট হলে আজকের সন্ধ্যের সেই
এক বিজনেস পার্টির প্রোমোশন প্রোগ্রাম আছে না? সে ব্যাপারে ফোনকল
আছে আপনার, আপনাকে দেবো কলটা?
-
আমি
কেন? তোমরাই সব কিছু বলে দাও, যা জানতে চায়।
-
হ্যাঁ
ম্যা’ম, আমিই বলতে নিয়েছিলাম। কিন্তু ওপার থেকে আমাদের
হোটেলের মালিকের সাথেই কথা বলতে চাইছে যে!
-
বলে
দাও, আজ আমার খুব শরীর খারাপ। তাই কথা বলতে পারবো না।
-
ও’কে, ঠিক আছে ম্যা’ম।
লাঞ্চ
শেষ করার পরে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে সিসিটিভির ফুটেজগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখার সময়ে
তার রুমের সুইংডোর ঠেলে আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো শুভর বান্ধবী তিতলি “আন্টি, আন্টি, শুভর মারাত্মক একটা অ্যাক্সিডেন্ট
হয়েছে।
তুমি এক্ষুণি
চলো”।
-
মানে, কী হয়েছে? কী করে…?
-
আন্টি, বাইক উলটে গিয়ে...।
-
বাইক? বাইক পেলো কোথা থেকে?
-
আজই
একটু আগে তো ও বাইক কিনতে গিয়েছিল...। ক্যাশ পেমেন্ট করে ডেলিভারিও
নিয়ে নিল তখনই।
তুমি জানো
না? তারপরে ট্রায়াল ড্রাইভিং
করতে গিয়েই তো…!
-
(মাথাটা ঘুরে গেলো বসুধার। আজ এসব কী হচ্ছে তার
সাথে!)
না, মানে ক্যাশ কোথা থেকে...। আচ্ছা ঠিকাছে চলো দেখি। এখন কী অবস্থায় কোথায়
আছে, তুমি নিয়ে চলো আমাকে
সেখানে।
-
হ্যাঁ, আন্টি চলো।
টিপটিপ
করা অসহ্য এক মাথাব্যথা নিয়ে আর ভেতরে একরাশ উদ্বেগ ও চিন্তা নিয়ে এক নামী নার্সিংহোমের
সামনে বসুধার গাড়ী দাঁড়ালো।
গাড়ী থেকে
নামতে গিয়ে গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠলো
বসুধার।
তাও নিজেকে
সামলে নিয়ে তিতলির সাথে সাথে উঠে এলো পাঁচতলায় আইসিইউ কেবিনের সামনে। কেবিনের কাঁচের ঘেরাটোপের
বাইরে থেকে দেখা গেলো শুয়ে থাকা অচৈতন্য শুভকে। শরীরের নানা জায়গায় নানা
নল ঢোকানো।
না, না… এ যে চোখে দেখা যায় না! শুনলো
নাকি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে,
রক্ত জোগাড়
করার চেষ্টা হচ্ছে।
এখনও সেন্সলেস
হয়ে আছে।
৭২ ঘন্টা
না গেলে নাকি কিছু বলা সম্ভব হবে না!
সেই কালো
মেঘটা যেন ক্রমশ গোটা আকাশটাকে গ্রাস করে নিতে আসছে আর পুরনো ঘন কালো মেঘটার সাথে মিশে
যাচ্ছে।
আহ্, চারিপাশে মিশমিশে ঘনঘোর
অন্ধকার…
এতো অন্ধকারে
যে সে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছে না।
একটু আলো
জ্বালো কেউ।
কেউ কি
নেই এখানে?
কেউ কি
আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?
একটু আলোটা
জ্বেলে দাও না গো,
কিচ্ছু
যে দেখতে পাচ্ছি না আমি!
এতো অন্ধকারে
কি থাকা যায়? কই, কেউ এসো...। এক্ষুণি খুব ঝড় উঠবে
আর তারপরেই ভারী বর্ষা নামবে।
জানালা-দরজা গুলো এক্ষুণি দিয়ে
দিতে হবে যে!
নাহলে যে
সবকিছু ভিজে যাবে,
ভেসে যাবে। তাই তার আগে তোমরা একটু
আলোটা জ্বেলে দাও না...। আমি যে কিচ্ছুটি আর দেখতে
পাচ্ছি না!
-
ম্যা’ম, এখন কেমন আছেন? একটু কি ভালো লাগছে?
-
কে?
-
আমি
অন্বেষা,
আপনার হোটেলের
একজন রিসেপশনিস্ট।
আপনি কি
ভালো বোধ করছেন এখন?
-
আলো জ্বেলেছো?
-
ম্যা’ম, আপনি এখন নার্সিংহোমের
একটা কেবিনে।
তিতলি ম্যাডাম
বলে পাঠালেন যে একজন দেখা করতে এসেছেন আপনার সাথে। তাই আপনাকে জানাতে এলাম। আপনি বললে ওঁনাকে পাঠাতে
বলবো।
-
কে
এসেছে?
কে? আগে তিতলিকে নিয়ে এসো
আমার কাছে।
-
আন্টি, আমি এখানেই আছি। তুমি এখন কেমন বোধ করছ? সেন্স হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলে
তো! যদি বেটার ফিল করো তবেই
ওঁনাকে ভেতরে আসতে বলব,
নাহলে তুমি
এই বেডে এখন রেস্ট নাও।
ওঁনাকে
বারণ করে দিই আসতে।
-
ও
আচ্ছা,
কে এসেছে? পাঠিয়ে দাও তাকে।
-
পাঠাবো?
-
উফ, বললাম তো পাঠিয়ে দাও। আর ও হ্যাঁ, শুভ এখন কেমন আছে? জ্ঞান ফিরেছে?
-
আন্টি, যিনি ভেতরে আসছেন তাঁকেই
জিজ্ঞেস করে নাও।
-
কে? তিনি কে? ডক্টর?
-
না, আমি সুধাংশু।
-
কেএএএ?
-
আস্তে... আস্তে বসুধা, আস্তে। আমি আমি। তুমি ওরকম হুড়মুড়িয়ে
উঠতে গেলে কেন?
আমি এক্ষুণি
এভাবে না ধরলে পড়ে যেতে তো!
কি যে করো
না!
-
তুমি এখানে?
-
হ্যাঁ, আমি এখানে। আমেদাবাদ থেকে আজ সকালে
এসেছি,
শুভ জানতো। এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই
শুভ ফোনে জানাল তার ইমিডিয়েট কিছু ক্যাশ চাই। অনলাইনে তার অ্যাকাউন্টে
টাকা ট্রান্সফার করে সোজা তোমার হোটেলেই তো এসে উঠেছি আজ। তখন কি আর জানতাম যে
ওটা তোমার হোটেল?
-
মানে?
-
আমেদাবাদে
আমাদের এক্সটেন্ডেড বিজনেসটাকে দেখাশোনার দায়িত্ব সীতাংশু নিজে নিয়েছে আর কলকাতার ব্যবসাটাকে
আবার চাঙ্গা করে তোলার জন্যে আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। আমি আমেদাবাদের কিছু
আইটেমকে এখানে প্রোমোট করবো।
শুভ কিছু
জানায়নি তোমায়?
অবশ্য আমিই
জানাতে না করেছিলাম।
সন্ধ্যেয়
হোটেলের হলে সেই প্রোমো প্রোগ্রামে হোটেল মালকিনকে আমাদের সাথে চাইছিলাম। তাই সকালে হোটেলে চেক
ইন করেই রুম থেকে রিসেপশনে ফোন করেছিলাম। শুনলাম তিনি নাকি অসুস্থ, কথা বলতে পারবেন না। এরই মধ্যে দুপুরে শুভর
ফোন থেকে ওর বান্ধবী তিতলি আমাকে জানায় এই অ্যাক্সিডেন্টের কথা। তখনি ছুটে এসে এই নার্সিংহোমে
অ্যাডমিট করাই।
-
ও, শুভর কাছে এসেছো? ওর জ্ঞান ফিরেছে?
-
হ্যাঁ, ফিরেছে। ওই তিতলির কাছেই জানলাম
তোমার সেন্সলেস হওয়ার কথা,
তাই তোমার
কাছে এলাম।
-
কেন
এলে? ছেলের খবর জেনে তো চলেই
যেতে পারতে।
চলে যাও, নাহলে তোমার প্রোমো প্রোগ্রামের
কী হবে?
লস হয়ে
যাবে তো সেখানে!
-
আর
অভিমান করে থেকো না বসুধা।
তুমি তো
করে দেখিয়েছ যে আমি ভুল ছিলাম।
নিজের কি
চেহারা করেছো!
নিশ্চয়ই
আয়নার দিকে তাকাওনা,
নিজের যত্ন
নাও না!
শুভটা তো
তোমার কাছেই ছিল,
মায়ের একটু
খেয়াল রাখতে পারেনি?
-
তোমার
মায়ের দিকে খেয়াল কি তুমিই রাখতে?
রক্ত কথা
বলে...। তোমারই তো ছেলে। কেবল বেহিসেবী খরচ করতে
শিখেছে।
বাইক কেনার
টাকা তাহলে তুমিই জুগিয়েছ?
বাহ্ এই
না হলে বাপকা বেটা!
না না, ভুল বললাম... বেটাকা বাপ!
-
আর
বোলোনা এভাবে প্লিজ।
আরেকটু
হলেই তো ছেলেটাকে হারাতাম আমরা!
মৃত্যুর
মুখ থেকে ফিরে এলো যে!
-
তুমি
যাও, তোমার প্রোমো প্রোগ্রামে
যাও।
কক্ষনো
কাজের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ কোরো না। যাও…। এই মেয়েমানুষের জন্যে
তোমাদের ব্যবসার কোনো ক্ষতি কোরো না।
-
ওঠো, আমাতে ভর করে ওঠো। রীতিমতো কাঁপছ তো…!
চকিতে
সুধাংশুর বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে
কেঁদে ওঠে বসুধা...
তোমাতে
ভর করেই তো উঠতে চেয়েছিলাম সবসময়!
কিন্তু
কালো মেঘের আনাগোনায় কোথায় মিলিয়ে গিয়েছিল সেসব! আজ শুভ্রাংশুর অ্যাক্সিডেন্ট
সেই নিকষকালো অন্ধকারে আচমকা বজ্রপাতের সূচনা করলো, যা মূহুর্তে শ্রাবণের ভারী বর্ষণ
নামিয়ে আনলো,
আর যা কিছু
উত্তপ্ত ছিল সেসবকিছুকে নিমেষে ভিজিয়ে শীতল করে তুললো। গাঢ় ঘন কালোমেঘের এই
অকস্মাৎ বজ্রবিদ্যুতসহ বৃষ্টি বোধকরি আজ তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্তে সামিল! হোক চক্রান্ত, তারাও যে আজ ভাসতেই চায়! পরস্পরের হাত আঁকড়ে ধরে
ছেলে শুভ্রাংশুর বেডের দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে যায় অশ্রুসিক্ত এই দম্পতি।
বর্ষার সঙ্গে মোকাবিলা
সুপর্না চৌধুরী
দু'দিন ধরে অঝরে বৃষ্টি হচ্ছে। নিকাশী ব্যবস্হা বেহাল হয়ে পড়েছে। সোমনাথদের আবাসনের একটি রাস্তা জলমগ্ন। কয়েকটি বাড়িতেও জল ঢুকেছে। সকালে বৃষ্টিটা একটু থেমেছে, কিন্তু আকাশে এখনও জমাট-বাঁধা মেঘ।
ছুটির দিন, তাই বর্ষা-জলমগ্ন বাড়িগুলির বাসিন্দারা ধীরগতিতে জীবন
শুরু করছেন। কেউ কেউ জল ভেঙেই থলে হাতে ছুটেছেন বাজারের দিকে। বিভিন্ন ফ্ল্যাটের কাজের ঠিকে কাজের মেয়েরা ছাতা মাথায় আসছে একে একে।
হঠাৎ বেজে উঠলো সোমনাথের মোবাইল
ফোনটা। দীপায়ন কলিং... ঘুম জড়ানো গলায় সোমনাথ বললো, "বল, দীপু"। ওপাশ থেকে প্রশ্ন এলো, "কেমন আছো, সোমনাথদা এই বৃষ্টিতে?" বিরক্ত হল সোমনাথ, তবুও স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললো, "এই আছি একরকম।" দীপায়ন
সোমনাথের মনের ভাব হয়তো বুঝলো, তাই তাড়াতাড়ি বললো, " আজ বিকেল পাঁচটায় প্রীতিময়দার বাড়িতে একটা মিটিং আছে। বিষয় -- "আগে বর্ষা এখানে ধরা দিত সুন্দরভাবে, কিন্তু এখন এমন দুর্গতি কেন? এর প্রতিকারই বা কি?" তুমি এসো কিন্তু, সোমনাথদা, বলেই ফোন ছাড়লো দীপায়ন। সোমনাথ মনে মনে ভাবলো আবেগপ্রবণ প্রীতিময়দা কিভাবে এই বর্ষা-পরিস্হিতি মোকাবিলার পরামর্শ
দেবেন! যাইহোক দেখতে হবে।
দুপুরে আরও কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় জল আরও একটু বাড়লো। কিন্তু বিকেলে
বৃষ্টি থেমে গেলো। মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলো পড়ন্ত সূর্যের ম্লান আলো। চারদিকের জলের ওপর দিনের শেষ সূর্যের আলোটুকু তিরতির কাঁপছিলো। হাঁটু ছুঁই জল ভেঙে সোমনাথ প্রীতিময়দার বাড়িতে পৌঁছলো। প্রীতিময়দা তখন জালানার ধারে বসে গুনগুন করে গাইছেন, "মেঘ ভাঙা রোদ উঠেছে লাগছে
ভারী মিষ্টি....।" সোমনাথ একটু বিরক্তির সুরে বললো, "এই পরিস্হিতিতে আপনার
গান আসছে, দাদা?" প্রীতিময়দা হেসে বলেন, " পরিস্হিতি অনুযায়ী গান তো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসে রে, ভাই। পরিস্হিতি তো খারাপ করে তুলি আমরা নিজেরাই।" কিছুক্ষণের মধ্যেই দীপায়ন, রঞ্জনা, তপেশ, ডালিয়া এসে উপস্হিত হলো প্রীতিময়দার বাড়িতে। চা ও বৌদির হাতে তৈরি তেলেভাজা সহযোগে শুরু হল আলোচনা। গম্ভীর মুখে বলে চললেন প্রীতিময়দা, "শোন, আমাদের হাউজিং-- এর এদিকে আগে জল জমত না তো, মনে করে দ্যাখ। আগে বর্ষা এলে এদিকটায় কি যে ভালো লাগতো। বাচ্চাদের পার্কটা যেন সবুজ গালিচায় মুড়ে থাকতো। দেবদারু, বকুল, শিরিষ গাছগুলো যেন আরও সবুজ হয়ে উঠতো। অথচ দ্যাখ, এখন এত জল জমে। হাউজিং কর্তৃপক্ষকে বার বার বলেও কোন লাভ হচ্ছে না। চল, বেহাল এই নিকাশী ব্যবস্হা ঠিক করার দায়িত্ব আমারাই নিই। আমরা, মানে এই হাউজিং - এর জলবন্দী আবাসিকেরা। করছি করবো নয়। জাস্ট ডু ইট নাও।" বাকি সবাই সম্মতি জানিয়ে একযোগে হৈহৈ করে উঠলো, " ঠিকই বলেছেো, দাদা। আজই, এই মুহূর্তে, এক্ষুনি শুরু হোক অভিযান..." রঞ্জনা বললো, প্রথমেই কম করতে হবে পলিথিন ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। এই প্লাস্টিক ব্যাগ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলেন আবাসিকরা, তা জলে ভেসে হাই-ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেয়। আর তার ফলে জল জমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।" প্রীতিময়দা সায় দিলেন, "হ্যাঁ সেটা করলে অবশ্যই ভালো হবে।" তপেশ বললো, "আচ্ছা, আমরা যদি আবাসিকদের মধ্যে দুটো করে মোটা শক্ত কাপড়ের তৈরি বাজারের-থলে বিলি করি নিজেরা চাঁদা তুলে..." সোমনাথ বললো, "আমরা যদি মুষলধারে বৃষ্টির জল দিয়ে আবাসনের ছাদের ট্যাঙ্কগুলো ভরে নিই। তাহলে জলসংরক্ষণ করাও হবে"...
এভাবে ওদের উসকে দিয়ে জলবন্দী দশা থেকে মুক্তির নানা উপায়
খুঁজে পেয়ে বেশ প্রীত হলো প্রীতিময়। তাঁর মুখে ফুটে উঠলো মৃদু হাসি...
স্মৃতিবর্ষণ
রিয়া
"রুখ জিন্দেগী নে মোড় লিয়া কেয়সা....হামনে সোচা নেহি থা কভি এয়সা....."
শীততাপনিয়ন্ত্রিত গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে বাজছে গানখানা,সুরে সুর মিলিয়ে গুণগুণ করতে করতে ড্রাইভ করছে অর্চিসা।গানটা কেমন যেন, সব পেয়ে হারিয়ে ফেলার পর যে খাঁ খাঁ অনুভূতিটা হয় অনেকটা সেরকম; নির্বাক শূন্যতার অতলে চুবিয়ে মারে অনুভূতিগুলোকে।
--"উফফ আবার এই গানটা!! কতবার বলেছি এটা আমার সামনে চালাবি না.....ভালো লাগে না আমার।" পাশের সিটে বসে প্রায় খেঁকিয়ে উঠল রিমি।
---" আচ্ছা তোর সমস্যাটা কোথায় বলবি?দিনদিন যেন জেদ আর রাগ বেড়ে চলেছে তোর।কি সমস্যা আছে এই গানে শুনি একটু।" পালটা তেড়িয়া হয়ে জবাব দিল অর্চিসা।
--"কিছুনা,আসলে এত প্যানপেনে গান ভালো লাগে না।বড্ড মিথ্যে বলে শব্দগুলো।" জানলার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আনমনে জবাব দিল রিমি।
--"দেখ যত তুই সবকিছু থেকে পালাবার চেষ্টা করবি,তত কিন্তু জড়িয়ে যাবি চক্রাবর্তে।তার চেয়ে ছেড়ে রাখ,দেখবি একদিন কান্নাগুলো আর দলাপাকিয়ে জমা হচ্ছে না গলার কাছে,সাবলীলভাবে অভিনয় করায় দক্ষ হয়ে উঠেছিস।" রিমির কাঁধে বাঁ হাত দিয়ে আলতো চাপ দেয় অর্চিসা।
কোনো কথা না বলে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে রিমি,অকাল বৃষ্টিকণা ঝাপটা মেরে যাচ্ছে গাড়ির জানলায়,ঝাপসা হয়ে আসছে বর্তমান; অতীতকুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি মারছে বহুপুরাতন একখানি চেনামুখ,টোকা দিচ্ছে হৃদি অলিন্দে।গাড়ির ভেতর বাজতে শুরু করেছে আরবার,--"চাহত ইহি কি ম্যায় ইসকদর পেয়ার দুঁ.....কদমো মে তেরে ম্যায় দো জাঁহা ওয়ার দুঁ...."!! শীততাপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসেও এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ঘামতে শুরু করেছে রিমি; প্রবলভাবে।
* * * *
আজ কলেজের সমাবর্তন উৎসব,নতুন-পুরাতন ছাত্রছাত্রী ও কৃতিমাণদের ভীড়ে জমজমাট কলেজ চত্ত্বর।
আসমানি নীল শাড়িতে সেজে এককোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল রম্যানী সেন,ইতিহাস অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।মঞ্চে তখন তৃতীয় বর্ষের সমাজতত্ত্ব অনার্স বিভাগের ছাত্রী সুমেধাদি রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন,তন্ময় হয়ে শুনছেন অধ্যাপক, প্রিন্সিপাল, প্রাক্তন থেকে বর্তমান ছাত্রছাত্রী সকলেই।একটু পরেই স্টেজে কবিতা আবৃত্তি করার কথা রম্যানীর,তাই চুড়ান্ত নার্ভাস হয়ে রয়েছে সে।মাঝেমধ্যেই ঘেমে ওঠা হাতের তালু মুছে নিচ্ছে আঁচলে; কখনো বা আনমনেই চুল ঠিক করে নিচ্ছে বারবার।
---"এবার আপনাদের সামনে আসতে চলেছে আমাদের কলেজের অন্যতম কৃতি ছাত্র,তৃতীয় বর্ষের সাগ্নিক গুপ্ত।" ঘোষণা শুনে স্টেজের দিকে চোখ ফেরায় রিমি।ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই সাগ্নিক গুপ্তর নাম বারবার শুনে আসছে রম্যানী, যেমন পড়াশোনায় তেমনি নাকি গানে সমান কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে এই ছাত্র,কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে ছাত্রছাত্রী সকলেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।সামনাসামনি এই প্রথমবার তাকে দেখছে রম্যানী,নয়ত এই সেলেব ছেলের পাত্তা পাওয়াই ভার।
ধীরেসুস্থে কাঁধে গিটার নিয়ে স্টেজে উঠে আসে এক সুদর্শন তরুণ, রিমলেস চশমার ফাঁক দিয়ে একবার নজর বুলিয়ে নেয় গোটা অডিটোরিয়ামে।এককোণায় জড়োসড়ো ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা রিমিকে লক্ষ করে ছুঁড়ে দেয় গালে টোলফেলা স্বর্গীয় হাসি,তারপর চোখ বুজে হাত লাগায় গিটারের শরীরে।প্রেমিকার মত আশ্লেষে আদর করতে থাকে তাকে,ঝংকৃত হয় সুর.....আচমকা সে গেয়ে ওঠে দরদী কণ্ঠে,--" মেরে অশক কহ রহে মেরি কাহানী, ইনহে সমঝো না তুম সির্ফ পানি......।"
আচমকাই কেঁপে উঠেছিল এক অষ্টাদশী হৃদয়; সমবেত স্তুতি,অভিনন্দন, হাততালির ঝড় উঠেছিল প্রেক্ষাগৃহে, দূরে দাঁড়িয়ে সেদিন আপন হস্তে স্বীয় মৃত্যুপরোয়ানা লিখেছিল সে,চশমার কাঁচে থমকে গিয়েছিল স্বপ্নগুলো।সেদিনও অকাল বৃষ্টি নেমেছিল ভরা ফাল্গুনে,আজ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভীরু লাজুক মেয়েটি আবৃত্তি করেছিল জয় গোস্বামীর "যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল।" আকাশটা যেন মেঘের গুরুগুরু রবের সঙ্গে মিশে সূচনা করেছিল এক নতুন গল্পের; যার পরতে পরতে মিশেছিল ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ।
* * * *
--"কিরে আজকাল ভালোই চলছে বল!! বেশ তো কলেজের সব ললনার ক্রাশকে গেঁথে নিলি বঁড়শীতে।" রম্যানীর গায়ে ধাক্কা দিয়ে জানতে চায় অর্চিসা,রম্যানীর সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী।
--"ধুর কি যে বলিস,ও এখনো বলেনি আমায় ভালোবাসে।" লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল রম্যানী।
--"নেকুনন্দিনী আমার!! সাগ্নিকদা তো রম্যানি বলতে অজ্ঞান,আবার আদর করে নাম রেখেছে রিমঝিম। ছেলেরা কখন কোনো মেয়ের জন্য এত যত্নশীল ও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে জানিস?যখন তাকে ভালোবেসে ফেলে চুড়ান্তভাবে।তুই আজীবন গবেটই রয়ে গেলি একখানা রিমি।" হতাশ গলায় বলে অর্চিসা। বৃষ্টিতে ভেজা পদ্মপাতার মত স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে রম্যানী,চোখের কোলে টলটল করে পবিত্র ভালোবাসাদীঘি,বাইরে তখন একরাশ কৃষ্ণচূড়া পলাশের ডালের আগুন জানান দিচ্ছে,--"রাঙিয়ে দিয়ে যাও....। " একছুটে ইতিহাসের ক্লাস থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীর দিকে এগিয়ে চলে সে,হৃদগহীনে দুরুদুরু করে অনুভূতির ফানুস,উড়িয়ে নিয়ে চলে যেন অন্য পৃথিবীতে।
বন্ধ সমাজতত্ত্বের ঘরখানার ভেতর থেকে ভেসে আসে খিলখিল হাসি আর ফিসফিস কথাবার্তার শব্দ।সাগ্নিক এর গলার আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়ায় রম্যানী,দরজার ওপারে একান্ত আলাপরত সাগ্নিক-সুমেধা।রম্যানীকে দেখে আলগোছে একখানা কটাক্ষ হেনে সরে বসে সুমেধা,লাজুক হাসি ঠোঁটে জড়িয়ে তোতলায় সাগ্নিক,---"রিমঝিম আসলে এটাই বলতে চাইছিলাম তোকে অনেকদিন ধরে,বলে উঠতে পারিনি রে।" শুকনো চোখে স্থবির দৃষ্টিতে সাগ্নিকের দিকে তাকিয়ে রইল রিমি,তারাখসার মত টুপটাপ খসে পড়তে লাগল সম্পর্ককাঁচ।
* * * *
সেদিনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে সাত বছর,সময় এগিয়ে চলেছে সময়ের রাস্তায়।ঘটনার পর আচমকাই একদিন কলেজ ত্যাগ করে রম্যানী,ইতিহাসের ভীরু ছাত্রী হয়ে ওঠে বয়কাট চুলের অতি আধুনিকা রিমি সেন।মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে আজ সে একটি সংবাদমাধ্যমের সফল সাংবাদিক।একটু আগেই একটি দূর্ঘটনার খবর সংগ্রহ করে ফিরেছে সে,লরির ধাক্কায় মৃত্যু স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের।মৃতের নাম সাগ্নিক গুপ্ত-সুমেধা গুপ্ত-ঋষি গুপ্ত।
বাড়ি এসে স্নান সেরে আলমারির কাছে দাঁড়ায় রিমি,বহুবছর পর চোখের কোনে জমা হয় স্মৃতিবাষ্পরা।পুরাতন নীলশাড়ির ফাঁক থেকে বের করে আনে পুরানো একখানি ছবি,টেবিলে রেখে তার সামনে ছড়িয়ে দেয় কিছু সাদা গোলাপের পাপড়ি; স্মৃতিবর্ষণ হয় অন্তরে।দূরে কোথা থেকে ভেসে আসে গান,--"রো রো কে আঁসুও কে দাগ ধুল জায়েঙ্গে,উসমে বফা কে রঙ্গ আজ ঘুল জায়েঙ্গে।"
বর্ষা ছড়া
বর্ষা
রাণা চ্যাটার্জী
বৃষ্টি ,বাদল ,বর্ষা ,
তোর ওপর অনেক ভরসা,
গ্রীষ্ম এলে পরে,
কি যে মনে পড়ে ।
বুঝবি না কো তুই ,
দু হাত দিয়ে বৃষ্টি ফোঁটা ,
আঙুল স্পর্শে ছুঁই ।
বৃষ্টি নিয়ে মেঘ বালিকা ,
আছড়ে পরে যেই,
কৃষক সমাজ, মধ্যবিত্ত
আনন্দে হই চই ।
রুখা শুখা খেতের পরে ,
সবুজ ফসল সোনা ঝরে ।
আল ধরে যাই,আলতো পায়ে,
স্বপ্নে বিভোর হই ।
বর্ষা তুই স্বপ্ন দেখাস ,
বাঁচার রসদ তুই ই ,
যখন শুনি খরার দাপট,
মনমরা হয়ে রই।
আয়রে বর্ষা,মোদের ভরসা
সময় করে বঙ্গে ,
তোর ছোঁয়াতে,দোলা লাগুক,
খুশির মাতন অঙ্গে ।
অনুরাগের ছোঁয়া
তৃপ্তি মিত্র
দৈত্য মেঘে আকাশ পাগল
মেঘের ঘোড়া চেপে
হাওয়ার বেগে ঝাঁকড়া চুলো
আসলো তেড়ে ঝেঁঁপে ৷
এমন সময় কড় কড় কড়
বিজলি সাথে নিয়ে
ঝমঝমিয়ে এলো বৃষ্টি
বাঁধন হারা হয়ে ৷
আষাঢ় মেঘের বৃষ্টি জলে
ভিজিয়ে দিল সব
আকাশ ভাঙ্গা,বাঁধন হারা
সৃষ্টিছাড়া রব ৷
সোহাগ-আদর মুক্তকণায়
অঙ্গ ভেজালাম
অনুরাগের ছোঁয়ায় আমি
তোমায় খুঁজে পেলাম ৷৷
বৃষ্টি যখন নামে
মজনু মিয়া
নীল আকাশটা মেঘে মেঘে/
জলদি ছেয়ে গিয়ে,/
গুড়ু গুড়ু ডাকে আকাশ/
বিজলী চমকিয়ে;/
দমকা হওয়া এসে শেষে/
দিয়ে যায় নায়িয়ে।/
কলকলিয়ে জল চলে যায়/
দূরের খাল বিল নদী,/
ফুঁলে ফেঁপে উঠে তখন/
জলধর নিরবধি;/
তার বুকে সব নৌকা চলে/
দেখতে তুমি যদি।/
জলে হয় জল জলাকারময়/
কভু ডুবি ভাসি,/
আষাঢ় মাসের বৃষ্টি জলে/
কাঁদে দু'খে মাষি;/
ঘর বাড়ি সব ভাসিয়ে নেয়/
কাড়ে মুখের হাসি।/
বর্ষার হৃদয়
অঞ্জলি দেনন্দী
বর্ষার হৃদয়, প্রেমে ভর ভর!
ব্যকুল, পাগলপারা!
ঝর ঝর ঝর,
ঝরছে প্রেমঅশ্রুধারা......
অবিরাম, নেমে আসা,
বাধাহীন ভালোবাসা.....
মনের আকাশে জমে থাকা মেঘরাশি,
অন্তরের আকুল হাওয়ায়,
সবেগে ভাসে আর ভাসে.........
অবশেষে,
নিজেদেরে নিঃশেষ করে ভালোবাসি,
হয়ে, বাদলধারা।
মিলন হয়, চাওয়া-পাওয়ায়।
ধরা হাসে।
বৃষ্টিরে ভালোবেসে।
প্রেমের মেঘ হয়, ভালোবেসে,
সর্বহারা।
এরই তো নাম প্রেম। ভালোবাসা।
নিজেরে নিঃশেষ করে, জাগায় অন্যের নবাশা।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
কবিতার বর্ষায় : দ্বিতীয় পর্যায়
বৃষ্টি ভেজা রাত
আকাশের কালো মেঘ ছুটে যায়
কোন নামহীন ঠিকানায় ।
আমি আকাশের পানে চেয়ে থাকি ;
এক ফোঁটা বৃস্টির অপেক্ষায় ।
তোমার এলোমেলো কথাগুলো ;
আবার গুছিয়ে দিক একটি বার ।
রং পিপাসু একলা থাকার ,
আমার আগোছালো মন ঘর ।
আমি আজও চেয়ে থাকি .....
কবিতার বর্ষায় : দ্বিতীয় পর্যায়
বর্ষারকবিতা
বিশ্বজিৎমাইতি
বর্ষ সম্পর্কে আমার সর্বশেষ লেখাটি কবে লিখেছিলাম তা মনে নেই।এগারোশ ছিয়াত্তর-এর মন্বন্তরের সময় থেকেই আর একটিও বর্ষা বিষয়ে কোনো লেখাই লিখিনি।এতো যে বর্ষা, এত যে বন্যা, নদী বাঁধের উপর রাত্রির আঁধারে সুরবালাও সেকেন্ড মাস্টারের প্রেমের থরথর আবেগ, সবই বানানো।বাস্তবে প্রতি বর্ষায় ঝাঁক বেঁধে উঠে আসা কৈ মাছ গোটা দেশে ছেয়ে গেছে।বর্ষার কবিতায় এই কথাগুলো লিখতে গেলেই মনে হয়, চান করি, ভাত খাই, তামাক খাই, তারপর আয়েশ করে তাকিয়া হেলান দিয়ে লিখবো দুপুরে---কিন্ত সেই অবসরে কৃষ্ণ এসে লিখলেন “দেহিপদপল্লবমুদারম”।
সোনালী সিং
আষাঢ়ের মেঘ তুমি, ভালোবাসার আকাশ।
শ্রাবণের বৃষ্টি তুমি, প্রেমের পূর্বাভাস।।
শ্রাবণের বৃষ্টি তুমি, প্রেমের পূর্বাভাস।।
জলছবি আঁকে মেঘলা বিকেল, চাতক বাঁধে বুক।
বৃষ্টি পতন শব্দ - শোনার অপেক্ষাতেই সুখ।।
বৃষ্টি পতন শব্দ - শোনার অপেক্ষাতেই সুখ।।
ধুঁয়ে মুছে যাক জীর্ণ প্রেম - আপন খেয়ালে।
জেগে উঠুক নতুন প্রেমের কুঁড়ি - হৃদয়ের দেওয়ালে।।
জেগে উঠুক নতুন প্রেমের কুঁড়ি - হৃদয়ের দেওয়ালে।।
বৃষ্টির স্নিগ্ধতায়, নৌকা বাওয়ার আসকারা।
পারলে তুমি ছুঁয়ে দিও,বাকিসব দায়সারা।।
পারলে তুমি ছুঁয়ে দিও,বাকিসব দায়সারা।।
ভিজব আমি ভিজবে তুমি - জড়িয়ে ধরে হাত।
জানলার কাঁচ ঝাপসা- এক বৃষ্টি ভেজা রাত।।
জানলার কাঁচ ঝাপসা- এক বৃষ্টি ভেজা রাত।।
প্রতীক্ষা
কৌশিক কুমার রায়
কৌশিক কুমার রায়
আকাশের কালো মেঘ ছুটে যায়
কোন নামহীন ঠিকানায় ।
আমি আকাশের পানে চেয়ে থাকি ;
এক ফোঁটা বৃস্টির অপেক্ষায় ।
তোমার এলোমেলো কথাগুলো ;
আবার গুছিয়ে দিক একটি বার ।
রং পিপাসু একলা থাকার ,
আমার আগোছালো মন ঘর ।
আমি আজও চেয়ে থাকি .....
বাইশে শ্রাবণ
সংস্কৃতি ব্যানার্জী
সংস্কৃতি ব্যানার্জী
একটা মনখারাপের আস্ত কফি মগ
পাশে ফেলে রাখা অভিমানী বৃষ্টির বাড়ি
একে একে জুড়ে দিচ্ছে খোয়াই নদীর গান...
ইদানিং চিঠি লেখারও অভ্যাস নেই
ঠিকানা পাল্টেছে সেই পাড়াতুতো মেঘ
সোনাঝুরি ভেসে গেছে
গোলাপী ডাকবাক্স ধরে
পাশে ফেলে রাখা অভিমানী বৃষ্টির বাড়ি
একে একে জুড়ে দিচ্ছে খোয়াই নদীর গান...
ইদানিং চিঠি লেখারও অভ্যাস নেই
ঠিকানা পাল্টেছে সেই পাড়াতুতো মেঘ
সোনাঝুরি ভেসে গেছে
গোলাপী ডাকবাক্স ধরে
এসময়ে স্মৃতির সেলাই খুলে দিই
ধীরে ধীরে ফাঁক হতে চায়
ভিজে যাওয়া সম্পর্কেরা ।
ধীরে ধীরে ফাঁক হতে চায়
ভিজে যাওয়া সম্পর্কেরা ।
বর্ষার একদিন
নিশীথ বরণ চৌধুরী
অবগুণ্ঠণে সূর্য ভাতিছে অন্তরালে,
আঁধার ঘন কালো মেঘ ভাসে আকাশে,
নিদাঘের তপ্ত দহন পরে, ঢেলে দিতে ধরনী তলে পুঞ্জীভূত অভিমান,
অবিরাম ঝরে পড়ে শ্রাওন বরিষণ।
আকাশের কোলে ভিড় করা মেঘ বালিকার দল,
ঝরায় বিরহিনী প্রিয়ার অশ্রুজল।
বাঁধ ভাঙা বর্ষার জলোচ্ছ্বাস --
রুদ্ধদ্বার শহরবাসীর আতঙ্কিত শ্বাস প্রশ্বাস।
এমনও দিনে একাকী বসে ঘরের বারান্দায়
লিখি আমি বর্ষার অভিনব অধ্যায়।
রাস্তার অপারে রহিম চাচা ঠেলা ঠেলে,
দিন আনে দিন খায় নিদারুণ অভাব।
খাবারের দানা টুকু করে নিতে সঞ্চয়,
বিশ্রাম করার নেই তো সময়।
ঘরেতে অভাব খেতে অনেকজন
ভেঙ্গে পড়া টালির ছাদেও দিতে হবে আচ্ছাদন।
মুক্ত বিহঙ্গ উপবাসী সব,বন্ধ করেছে পাখা
বৃষ্টির দিনে অট্টালিকার কোঠরে ওদের থাকা।
বারান্দায় বসে আমি থাকি আনমনা ,
কেমন করে ঘরে ফিরবে আমার সুনয়না।
ছাদের উপর প্রতীক্ষায় নিঃসঙ্গ কভুতর
সঙ্গীনির খোঁজে ভিজে হচ্ছে কাতর।
বর্ষা
সঞ্চিতা
দাস
বাদলা ঝরা সকালবেলা
ভিজব জানি আমি,
সঙ্গে থেকে একটুখানি
সামলাবে
কি তুমি?
বর্ষারাণী
তোমার সাথে
একটু সঙ্গ দেবে,
রাগ না করে সামলে নিও
তুমিও আদর পাবে।
কাককে দেখো কেমন ভিজে
করছে ছুটোছুটি-
ওরাও জানে ভিজলে তবেই
খাবার পাবে দুটি।
মাসটা আষাঢ় জলে কাদায়
একটু মাতোয়ারা,
জল ছপ্ ছপ্ রাস্তাঘাটে
মাতিয়ে
রাখে পাড়া।
আর না ভেবে একটু উঠে
তৈরী হয়ে নাও-
ভেজার সুখে সুখী হওয়ার
আনন্দটাকে
পাও।
বাজার ব্যাগের থলিটা আজ
নিলাম নাহয় আমি
তোমার হাতে থাকুক শুধু
বর্ষা ছাতাখানি।
আমার বেশ লাগছে মজা
ভিজব মনের সুখে
তুমি আবার থেকো নাগো
অমন গোমরামুখে।
বর্ষা তোমার মুখটা দেখে
যদি থেমে যায়-
আনন্দটাই
মাটি হবে
এমন সকালটায়।
দ্বীপ মালার গল্প
দেবব্রত সেন
দেবব্রত সেন
তোকে ঘিরে লিখতে গেলাম
পান্ডুলিপি নিয়ে
সাতসমুদ্দুর তের নদীর পাড়
সেথায় দেখি তুমি আছো কি করব আর
পান্ডুলিপি নিয়ে
সাতসমুদ্দুর তের নদীর পাড়
সেথায় দেখি তুমি আছো কি করব আর
কলম ছুঁয়ে লিখতে যাই
দেখি তুমি বড় যে একাই
স্বপ্ন দেখি রঙিন রোজ......
ছবি আকি, রং তুলির নতুন সাজ
দেখি তুমি বড় যে একাই
স্বপ্ন দেখি রঙিন রোজ......
ছবি আকি, রং তুলির নতুন সাজ
উষ্ণতার ছোঁয়ায় বরফ গলে
অভিমানি নির্জনে দ্বীপ ....
ঝাউ গুলো সবাই দাড়িয়ে আছে
বৃষ্টিরা বর্ষায় করছে ছিপছিপ.....
অভিমানি নির্জনে দ্বীপ ....
ঝাউ গুলো সবাই দাড়িয়ে আছে
বৃষ্টিরা বর্ষায় করছে ছিপছিপ.....
এসো খেলি প্রেম, লিখব না আর কবিতা
তোমায় পেয়ে ইচ্ছেমত সাজব বৃষ্টি ভেজা
ভিজে যাব সুজন-সখী তবুও তুমি ধরবে নীলের ছাতা
ভেসে যাব মেঘে, জোয়ার ছলে কেউ করবে না খোঁজা
তোমায় পেয়ে ইচ্ছেমত সাজব বৃষ্টি ভেজা
ভিজে যাব সুজন-সখী তবুও তুমি ধরবে নীলের ছাতা
ভেসে যাব মেঘে, জোয়ার ছলে কেউ করবে না খোঁজা
বলতে গেলাম! হঠাৎ তুই বললি
দ্বীপ তুই কোথায়? এদিকটা একবার আয়
জোর চেঁচিয়ে........
হঠাৎ আমি চুপটি করে তোমার কানে
বললাম, এই যে মালা আমি আছি তোমার কাছে
ভয় পেলে তুমি..........
ধরলে আমার গা জরিয়ে বুকে
বৃষ্টি ভেজা নির্ভেজাল ভালোবাসার গন্ধে
জোড়া শালিক যুগলের মত..................
পৃথিবীর বৃহৎ সুখ. ।।
জোর চেঁচিয়ে........
হঠাৎ আমি চুপটি করে তোমার কানে
বললাম, এই যে মালা আমি আছি তোমার কাছে
ভয় পেলে তুমি..........
ধরলে আমার গা জরিয়ে বুকে
বৃষ্টি ভেজা নির্ভেজাল ভালোবাসার গন্ধে
জোড়া শালিক যুগলের মত..................
পৃথিবীর বৃহৎ সুখ. ।।
বর্ষা আসার আগে
সৈকত বণিক
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো সেদিন গাল বেয়ে বুকে এসে মিশছিল
হাওয়ায় ভাসা কণাগুলো কান হয়ে
সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল আস্কারায়
প্রিয় বন্ধু হওয়ার জেদ করছিল ধূমকেতু
তুই বোধহয় মেতেছিলি নিজের খেলাঘরে
কপালে আদরের টিপ আর চোখে বায়নামাখা কাজল দিয়ে
পলাশের পাপড়িতে আমার বন্ধকরাখা ইচ্ছেগুলো
তোকে কি আরো স্নিগ্ধ করেছিল?
এখনও বৃষ্টি পড়ছে।
আমার ছেলেমানুষি আর আকাশের নবজন্ম
তোর সারা শরীরে অভিমানের বুদবুদ এঁকে যায়নি?
আমি বোধহয় তখন নিয়তির আঁকা বৃত্তের স্পর্শক ধরে
কখনো ব্যস কখনো জ্যা হয়ে দূরবীনে চোখ রেখে চলেছি
হারিয়েছি অনেক কিছু
তাই তখনো শুকনো গিরিখাতকে মারিয়ানা ভেবে
গভীরে আরও গভীরে যাওয়ার বিশ্বাসঘাতকতা করে গেছি
আর শালুকের গর্ভদন্ডে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছি-
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আমারই রক্ত-মাংসে তৈরি।।।
মন খারাপের দিন
দূরের পড়ন্ত বিকেল --
তোমার নাভিতে রেখে আসি , আমার বিষাদ।
স্বপ্ন গুলো আজ জলভরা মেঘ !
ছুঁতে চায় পৌষলি আকাশ।
ঘরে ফেরা পাখির দলও জানে
তোমার চোখ তাদের বাঁসা ।
তারা উড়ে যেতে চায় , তোমার কাছে।
শুধু পথের মাঝে তারা আটকে পড়ে
তোমার খোলা ডাকবক্সে।।
ই মা নু র আ লী
মন খারাপের দিন; আহ্ কি নিষ্ঠুর সেসব দিন
কালবোশেখীর মতন দুমড়ে মুচড়ে ওঠে বুকখানি,
পড়ে থাকে ভাঙাচোরা কিছু নিঃশ্বাস!
হিংসেয় পুড়তে পুড়তে কালো ছাইয়ের
আস্তরণ পড়ে বুকে ভেতর।
চোখ দুটো জানে রাতের বেলা তাদের কি কষ্ট হয়-
পৃথিবীতে আর একটি প্রাণী নেই যে বুঝবে
বুকের ভেতরের রণক্ষেত্রের কথা,
দু পক্ষের মধ্যে নীরব কলহ বিবাদের কথা।
সারাক্ষণ এ কেমন গুমোট ভাব?
আমি আগে জানলে আগেই এর নিষ্পত্তি ঘটাতাম।
হেসে খেলে বেড়া- এটা সবাই পারে, আমিও তো পারি;
কিন্তু এ মন খারাপ যে সত্যিই খারাপ নয়-
আরো বেশি কিছু, আরো আরো আরো....
আহ্ যদি আগে জানতাম
আমি সফল হতাম নিশ্চয়;
আমার এ মন আর খারাপ হত না।।
এ বছর আষাঢ়ে
দেবজ্যোতি সিংহ রায়
পরিনতি পাচ্ছে তারা বার্ধক্যে এখন ;
বৈশাখের অগ্রভাগে সদ্যোজাত শিশুর ন্যায় -
ছোটো ছোটো আম কাঁঠাল লিচুর মুকুলেরা।
তবে তোমার মতোই ব্যতিক্রমী অনেকে পচনশীল,
ওদের আশা যাওয়াতে কারো কোনো ভাবনা নেই,
সহানুভূতি যেন অপ্রয়োজনীয় একমাত্র এখানেই !
অবশ্য আমার পাশে আজ তুমিও যদি থাকতে ওগো -
হয়তো খোলা মনে আমি আরোও বেশি স্বাদ পেতাম ;
নানান ফলের মেলায় ও ঝমঝম বৃস্টির ধারায়, এ বছর আষাঢ়ে -
হঠাৎ হয়ে গেছি যেন শোকে সর্বত্র উদাসীন।
"সংক্রামিত এ বাতাশ"-তোমার জ্বলন্ত চিতা আরো বলছে -
"সবুজ প্রকৃতি থেকে সুমিস্ট শস্যসহিত নিপা ভাইরাস ঝরছে"।
দেবজ্যোতি সিংহ রায়
পরিনতি পাচ্ছে তারা বার্ধক্যে এখন ;
বৈশাখের অগ্রভাগে সদ্যোজাত শিশুর ন্যায় -
ছোটো ছোটো আম কাঁঠাল লিচুর মুকুলেরা।
তবে তোমার মতোই ব্যতিক্রমী অনেকে পচনশীল,
ওদের আশা যাওয়াতে কারো কোনো ভাবনা নেই,
সহানুভূতি যেন অপ্রয়োজনীয় একমাত্র এখানেই !
অবশ্য আমার পাশে আজ তুমিও যদি থাকতে ওগো -
হয়তো খোলা মনে আমি আরোও বেশি স্বাদ পেতাম ;
নানান ফলের মেলায় ও ঝমঝম বৃস্টির ধারায়, এ বছর আষাঢ়ে -
হঠাৎ হয়ে গেছি যেন শোকে সর্বত্র উদাসীন।
"সংক্রামিত এ বাতাশ"-তোমার জ্বলন্ত চিতা আরো বলছে -
"সবুজ প্রকৃতি থেকে সুমিস্ট শস্যসহিত নিপা ভাইরাস ঝরছে"।
প্রকৃতির ছোঁয়া
সমরেশ পর্বত
সারাদিন মেঘলা আকাশ,
ঝড়ো হাওয়া বইছে বাতাস।
কতো পাখি ডাকছে বনে,
বসত বাড়ির চতুর কোনে।
শীতলতায় গা দিচ্ছে দোলা,
ইচ্ছে খুশি প্রাণ মেলা।
স্বপ্ন গুলো উজার করে,
পরশ মাখা প্রথম ঝড়ে।
মাছরাঙা ডাক ছাড়ছে জোরে,
খানা-ডোবা-পুকুর ধারে।
সোনা ব্যাঙ পাড়ছে রই,
মনের মানুষ তুমি কই।
এসো সবাই প্রানে মাতি,
রোদে-ঝড়ে ধরো ছাতি।
সোহাগ মাখা হৃদয় তোমার,
প্রেমের ছোঁয়ায় সুখ উজার।
প্রকৃতি প্রেম দিচ্ছে ডাক,
মেঘের গর্জন বাজায় ঢাক।
বর্ষা কখন বাসবে ভালো মন,
হিয়ার মাঝে তোমায় খুঁজি সারাক্ষন।
সমরেশ পর্বত
সারাদিন মেঘলা আকাশ,
ঝড়ো হাওয়া বইছে বাতাস।
কতো পাখি ডাকছে বনে,
বসত বাড়ির চতুর কোনে।
শীতলতায় গা দিচ্ছে দোলা,
ইচ্ছে খুশি প্রাণ মেলা।
স্বপ্ন গুলো উজার করে,
পরশ মাখা প্রথম ঝড়ে।
মাছরাঙা ডাক ছাড়ছে জোরে,
খানা-ডোবা-পুকুর ধারে।
সোনা ব্যাঙ পাড়ছে রই,
মনের মানুষ তুমি কই।
এসো সবাই প্রানে মাতি,
রোদে-ঝড়ে ধরো ছাতি।
সোহাগ মাখা হৃদয় তোমার,
প্রেমের ছোঁয়ায় সুখ উজার।
প্রকৃতি প্রেম দিচ্ছে ডাক,
মেঘের গর্জন বাজায় ঢাক।
বর্ষা কখন বাসবে ভালো মন,
হিয়ার মাঝে তোমায় খুঁজি সারাক্ষন।
ডাকবক্স
তুহিন মন্ডল
দূরের পড়ন্ত বিকেল --
তোমার নাভিতে রেখে আসি , আমার বিষাদ।
স্বপ্ন গুলো আজ জলভরা মেঘ !
ছুঁতে চায় পৌষলি আকাশ।
ঘরে ফেরা পাখির দলও জানে
তোমার চোখ তাদের বাঁসা ।
তারা উড়ে যেতে চায় , তোমার কাছে।
শুধু পথের মাঝে তারা আটকে পড়ে
তোমার খোলা ডাকবক্সে।।
বৃষ্টিকথা
মহাজিস মণ্ডল
ব্যথাতুর শুধুই ভেঙে যাই
হৃদয়ের নির্জন বারান্দা পেরিয়ে
আজকাল দেখি একটা দুটো পাতা ঝরে মাত্র
ভালবেসে একদিন একটা আকাশে
তুমি এঁকে দিয়ে ছিলে একটা চাঁদ
বিস্তৃত রাতের ওপারে অসংখ্য নক্ষত্রবলয়
জল রঙে আজ আর কোনও কথা লিখি না
অশ্রু মথিত হলেই আকাশে মেঘ করে আসে
আর তখন মনের আনাচে -কানাচে বৃষ্টি হয় তুমুল ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
No comments:
Post a Comment