Saturday, January 22, 2022


 

মুনা 

বিশেষ সংখ্যা 

জানুয়ারি ২৩, ২০২২



মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)


প্রচ্ছদ - শৌভিক কার্যী 

প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা,  অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়  

মুজনাই অনলাইন বিশেষ  সংখ্যা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২



সম্পাদকের কথা 

তাঁকে নিয়ে বলা মানে শেষ না হওয়া কথা। তিনি ও তাঁরা ছিলেন বলেই আজকের এই স্বাধীনতা। হতভাগা আমরা। বুঝি নি সেসব। তাই মূল্য দিই না। দিল্লিতে বসতে চলা তাঁর মর্মর মূর্তিকে স্বাগত জানিয়েও বলব, তাঁর চিন্তা ও প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করাই তাঁর প্রতি যোগ্য সম্মান দেখানো। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি বছরে যদি আমরা, ভারতবাসী, এটুকু করতে পারি তবেই সার্থক হবে এই দিনটি। 



ট্যাবলো নং ৪---- নেতাজি গায়েব...
রীনা সাহা

অবশেষে তাঁবু তুলে নিল সবুজ বিপ্লব । বোল্ড বোলেরোর ক্রিকেটীয় টসে ধানের পাতানের মতো টুসকে ওঠা বেকুব জিন্দেগি কিংবা সেনাসমেত আস্ত একটা হেলিকপ্টারের খাল্লাস হওয়া , দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে দেয় আমাদের । মণিকর্ণিকার ছুতমার্গ এড়িয়ে চাকুমচুকুম এইচ ডি সিরিজ হবে । সাধু-সন্তের পাছার ঢিপিতে লেপ্টে থাকা চাড্ডির হিরোয়ানা উদযাপনে ক্যামেরা তাক করা । ইন্ডিয়া গেট শুটিং স্পট , সত্ব অ্যামাজন প্রাইম । আলো ফেলবে " অমর জ্যোতি " , দপ্ করে জ্বলে উঠেই নিভে যাবে । এসবই ক্যারিক্যাচার , ২৬ শে জানুয়ারীর মহড়ার অংশ।
ট্যাবলো নং ১ ----
*******************
বেনারসী মোড়া নবোঢ়া ধানের উড্ডীন শিষের দল , ট্র্যাক্টরে শোয়া , ল্যাপ্টালেপ্টি , রান-ওভার ভি- চিহ্নের মাতম ।
ট্যাবলো নং ২----
*******************
গোবর ল্যাপা পেট ফোলা ডুলির লিভার সিরোসিস‌। ফুটো ধানের ব্যাক পকেটে ক্রিপ্টো কারেন্সি । পাত পেতে বসা লঙ্গরখানায় ঝুরঝুরে রেজগি পয়সা , বাতিল নোট , লোমশ ওমের কালাধন ---- অনেক অনেক "...মোরগের কাহিনীর " ডাইনিং হল , খানাপিনার আসর।
ট্যাবলো নং ৩----
*******************
নমামি গঙ্গে তখন মাকাল ভৈরব । ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির below the belt , বুলেট প্রুফ চামড়ার , হকার পা । থাই দ্বয়ের ভি - পার্টে ইম্পোর্টেড টসটসে লাল চাড্ডি , চাড্ডির বুকপকেটে ছাগলের নাদি । সাত ঘাটের জল খাওয়া "ওই মহামানব আসে..." । দু' পায়ের চিচিং ফাঁক গ'লে কালাপিলা মোতিচুর ----নাঙ্গা সুপারম্যানের বাদশাহী ল্যাঙোটের প্রসাদ ---- দেউলিয়া করিডোরে ক্রিসমাস ক্যারোল ।
ট্যাবলো নং ৪----
*******************
ফুল পাঞ্জাব ট্রাক কাম বাঙ্কারের হুডে দাঁড়ানো নেতাজি , দিল্লির দিকে তাক করা স্ট্যাটিক হাত । পেছনে ট্রাকের বডিতে স্ট্যাচু , আজাদ হিন্দ ফৌজ। গুলি খতম বন্দুকের নল ফুড়ে জং ধরা মরচে উড়ছে , লাল হচ্ছে বাদশাহী পথ । পেছন পেছন কাছাখোলা বাঙালি । ছুটছে , ধুঁকছে "আমরা তোমাকে রক্ত দিচ্ছি , স্বাধীনতা দাও নেতাজি " ।
পথ দেখাচ্ছে বাংলা । বাঁক নিচ্ছে বাঙ্কার , গার্ড অব অনার নেবে। হুড থেকে লাফিয়ে নামলেন নেতাজি। আকাশ থেকে নেমে এলো জটায়ু বয়সী হাত । সামরিক কায়দায় টিপে ধরলেন মসনদের গলার নলি । ফিনকি রক্তে বেরিয়ে এল জিভ । শুরু হ'ল " মিঃ ইন্ডিয়া " -র মতো আজব সব কান্ডকারখানা । শূন্যে ঝুলছে মসনদ , নেতাজি গায়েব । ভার্চুয়াল কুচকাওয়াজে সামিল ১৩৩ কোটিরও বেশি হোমোস্যাপিয়েনস্ , ৩৩ কোটি দেবতা উলঙ্গ চোখে তাকিয়ে , ক্যানোপির দিকে , নেতাজি খুঁজছে ।
" উটের গ্রীবার মতো..." সন্ধ্যা উঠছে , সন্ধ্যা নামছে । টিমটিম " অমর জওয়ান জ্যোতি "। নিভলেই নতুন শো, লেজার খেলা । হঠাৎই মঞ্চে কোরাস মতন কিছু , বাঁক বদল। ক্যানোপির মাঝ বরাবর সাইক্লোরামা ঝিন্ চাক ---- "পুষ্পা ---দ্য রাইজের " আল্লু অর্জুন নাচ , কাটাপ্পার উদোম উল্লাস , রাজা মৌলি খেপে বোম ।
"কোথায় নেতাজির থ্রী ডাইমেনশনাল হলোগ্রাম ? প্রজাতন্ত্রের লিংক হ্যাক করে কি দেখাচ্ছে এসব ! " ---- চেঁচাচ্ছে ৩৩ কোটির বস্ । নিজেদেরই ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টে এক অঙ্গে তিনমুন্ডু , ব্রহ্মা - বিষ্ণু - মহেশ্বরের মাথা , খুব কষ্টে হেঁট করা । ভার্চুয়াল মহড়া দেখছে আবালের দল । বড় হয়ে মানবে তাঁদের ? অথচ পদ্মনাভ সেই সকাল থেকে চানটান সেরে , লাল চা আর মুড়ি হাতে হাফ শোয়া। স্মার্ট টিভিতে চোখ । বৌয়ের বায়নায় ফর্দি মিলিয়ে বাজারঘাট করে দুপুর দুপুর ব্রহ্মাও ফাঁকা হয়েছেন , ঢোকলা আর ভেজ বিরিয়ানি খেতে খেতে নেতাজিকে দেখবেন । ওদিকে মহেশ্বর অন্যদিন সন্ধ্যের পর ছিলিম সাজান । কিন্তু আজ বিকেল বিকেলই সোমনাথ মন্দিরের নতুন সার্কিট হাউসে বসে সাঙ্গোপাঙ্গো সহ মনিপুরী গাঁজায় টইটম্বুর । দরজার পাশ থেকে দুর্গা এসে বারকয়েক কপালের আগুন দেখিয়ে গেছে।
নেতাজি , নেতাজি কোথায় ! সিনেমার নাচাগানা চলছে , স্বর্গের মাথাদের সঙ্গে ইল্লি নাকি ! গাঁজার চোখে দেখা ভেবে বারকয়েক চোখ কচলে ফের তাকালেন মহেশ্বর। প্রাগৈতিহাসিক গাঁজারু , নাহ্ একেবারেই ভুল হচ্ছে না তাঁর ! কেউ না বুঝলেও নারদের 90 ডিগ্রী ইরেকটেড , radar এ ঠিক ধরা পড়েছে মহাদেবের মাথা গরমের তেজ । " মন্দ বুদ্ধি রাক্ষস "(তামিল উচ্চারণে " রাখ্ স ছ " ) বলে চেল্লাচ্ছে মহাদেব । এই বুঝি প্রলয় নাচন শুরু হয় ! স্বর্গের সঙ্গে সমস্ত লিঙ্ক ডিসকানেক্ট করে এতদিনের কাটা রেকর্ড "নারায়ণ নারায়ণ" ভুলে " লিঙ্ক হ্যাক , লিঙ্ক হ্যাক " ধ্বনি দিতে দিতে মর্ত্যে অবতরণ করে নেতাজিকে খুঁজতে বেরলো নারদ ।
" বাংলার সুভাষ , দিল্লির নেতাজি ---- দ্য ইনভিজিবল্ ম্যান , মিঃ ইন্ডিয়া , আপনি প্রকট হউন "। আপনাকে খুঁজে না পেলে মাগনা পয়সা ছিটিয়ে মসনদ কেনা পাবলিকদের কপালে বহুত দুঃখ আছে বলে দিচ্ছি । নারদের মতো কুল মাথার লোকও তাঁর খঞ্জনি দিয়ে নারায়ণ ভান্ডার , লক্ষ্মীর ভান্ডার চুন চুনকে ফাটানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ।
এত এত ভারতবাসীর রক্ত নিয়েও স্বাধীনতা দিতে পারেননি ব'লে হলোগ্রামে প্রকট হলেন মুখোশহীন নেতাজি । স্প্রিংয়ের দাদুর মতো তুলোর মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কোমরে বেল্ট বাঁধা নেতাজি মাদারির ইশারায় ডিগবাজি খাচ্ছেন । বহুযুগ থেকে ডিগবাজি খাওয়া জটায়ু নেতাজি শেষবারের মতো থামতে চাইলেন । মাদারি নির্বিকার । অনুমতির তোয়াক্কা না করে কোমরের বেল্টে বুড়ো আঙুল ঢোকালেন নেতাজি ,‌‌‌‌( সলমান খানের নাচ ভেবে মালে মত্ত ভার্চুয়াল দর্শক ধেই ধেই নেত্যর পোজে দাঁড়িয়ে পড়ল ) ।

‌‌ হঠাৎই ব্লাষ্ট । ইন্ডিয়া গেটের নীচে রক্তারক্তি মসনদ--- হেঁট মুন্ডু , ঊর্ধ পদ । একই সঙ্গে ক্যানোপির ছাদ ফুঁড়ে মিসাইলের মতো উড়ে যাচ্ছেন আত্মঘাতী নেতাজি । হাওয়ায় ফাটছে মধুর ভান্ড । এতকালের লুকিয়ে রাখা মধুর মোম ---- গলছে , পুড়ছে । রাজপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মিষ্টি মিষ্টি রাখের মন কি বাত্ ---- আমাদের হলোম্যান , নেতা জীর চিতাভস্ম


নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য আজও উদঘাটিত হলো না

গৌতম চক্রবর্তী

(দেখতে দেখতে স্বাধীনতার ৭৫ বছর। দেখতে দেখতে সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী। ২০২২ সালে একই বছর উদযাপিত হচ্ছে। কিন্তু কি নির্মম পরিহাস! যে মহানায়কের জন্মদিন আজও আমাদের উদবেলিত করে তোলে সেই মহানায়কের অন্তর্ধান রহস্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও রহস্যাবৃত। এর জন্য দায়ী কে? একটি গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণাত্মক রাজনৈতিক চর্চায় নেতাজী স্মরণ)

 

দি ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি'- অর্থাৎ মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধকে যুদ্ধ অপরাধ বলা হয়দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অক্ষশক্তির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সেনানায়কদের একতরফা নানা অত্যাচার এবং গহত্যার তত্ত্ব ফলাও করে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়েছিলকিন্তু যাদের পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে লক্ষাধিক নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু মৃত্যুযন্ত্রণার শিকার হয়েছিল তারা বেকসুর ছাড় পেয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে মূলত মিত্রশক্তির অনুগত দেশগুলির বিচারকদের নিয়ে জার্মানির নুরেমবার্গ এবং জাপানের টোকিওতে আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করার জন্য ১৯৪৬-৪৮ সাল পর্যন্ত চলা এই বিচার পর্ব ছিল কার্যত বিচারের নামে প্রহসন এর কারণই হচ্ছে বিজয়ী শক্তি বরাবর তাদের বিজয়গাথার ইতিহাস রচনা করে থাকেআর সেই কারণেই মিত্রশক্তির অনুগত দেশগুলির বিচারকেরা অক্ষশক্তি জার্মানি এবং জাপানের সহযোগিতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগকে যুদ্ধ অপরাধ বলে চিহ্নিত করার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছিলমানবতার ওপর মিত্রবাহিনীর ভয়ংকরতম আণবিক আঘাতের ক্ষমাহীন অপরাধের প্রতিবাদ কিন্তু করেছিলেন এক বঙ্গসন্তান টোকিওর মাটিতেই তিনি ওই সামরিক ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারক ছিলেন তাঁর নাম ডক্টর রাধাবিনোদ পালতিনি জাপানের সহযোগিতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকার এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে স্বাধীন ভারত গড়ার লড়াইকে সমর্থন, শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করেছিলেনমার্কিন এবং ব্রিটিশের নির্বিচারে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বোমাবর্ষণ এর জন্য তাদেরকেই তিনি যুদ্ধাপরাধী বলে উল্লেখ করেছিলেন তাঁর ভিন্ন মতের ডিসেন্টিং রিপোর্টেপাশাপাশি আন্তর্জাতিক নথিপত্র দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাইহোকুতে সুভাষচন্দ্র বসুর আদৌ কোন বিমান দুর্ঘটনা হয়নি এবং রেনকোজি মন্দিরের ছাইভষ্মের তত্ত্বকেও তিনি মান্যতা দেননি

 

দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন পরবর্তীকালে যখন দেশ জুড়ে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটনের দাবিতে প্রবল জনমত সংঘটিত হচ্ছিল এবং তদন্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাধাগোবিন্দ পালকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বেসরকারি কমিশন গঠনের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল তখন নেতাজির সঙ্গী শাহনওয়াজ খানকে নেহেরু মন্ত্রিসভায় নিয়ে এলেননেতাজির সেজ দাদা সুরেশচন্দ্র বসু, নেহেরু অনুগত অন্য দুই সদস্য এসএন মৈত্র এবং শাহনওয়াজ খানকে নিয়ে নেহেরু দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে দিলেনডক্টর রাধাবিনোদ পালকে ব্রাত্য করে দেওয়া হলসুরেশচন্দ্র বসু অপর দুই কমিটির সদস্যের বিমান দুর্ঘটনা এবং চিতাভষ্মের তত্ত্ব মানলেন নানেতাজি যুদ্ধাপরাধী কিনা সেটা জানতে চাইলেও সরকার মুখে কুলুপ আঁটেনেহেরু একটি পত্রে সুরেশবাবুকে জানান, সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর ব্যাপারে কোন প্রামাণ্য তথ্য সরকারের হাতে নেইবিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বকে নস্যাৎ করে সুরেশ চন্দ্র বসু তাঁর ভিন্নমতের রিপোর্ট নিজের খরচে ছাপিয়ে বই আকারে প্রকাশ করেছিলেনবিগত সত্তর বছর ধরে নেতাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি নষ্ট হয়েছে, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা হারিয়ে গেছে, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুড়ে গেছে এবং টেমস এবং গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছেআশির দশকে রেনকোজি মন্দিরও যখন বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল তখন আন্তর্জাতিক স্তরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মান্যতা পেতে লাগল এবং সন্দেহ তীব্র হতে লাগল। নেতাজির শততম জন্মদিনে একবারই মাত্র ভারত সরকার জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছিল নেতাজির প্রতি ভারত সরকার ধারাবাহিকভাবে এবং জাতীয় কংগ্রেস দলগতভাবে প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রেখেছিল আন্তর্জাতিকতাবাদের মোড়কেনেতাজিকে যুদ্ধাপরাধীর গোপন তকমায় জুড়ে দেওয়ার প্রয়াসের প্রচেষ্টা করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত এবং দলগত ক্ষেত্রে একচেটিয়া লাভবান হবার চেষ্টা করেছিল নেহেরু এন্ড কোম্পানি একথা আজ পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত সত্যতাই জাতি বঞ্চিত হয়েছে আপোষহীন বৈপ্লবিক এক নেতৃত্বের সঠিক মূল্যায়ন থেকে যাঁর দেশপ্রেমে কোন ভেজাল ছিল না

 

মিথ্যা এবং কুৎসার পল্লবগ্রাহীতা গ্রাস করেছে অর্ধ গবেষণামূলক নানান দেশি-বিদেশি প্রকাশনা, চলচ্চিত্র, এমনকি উইকিপিডিয়ার জগতেওপ্রকাশিত নেতাজি ফাইলেও এ সম্পর্কে সত্য আড়াল করা হয়েছেশাহনওয়াজ কমিটি এবং খোসলা কমিশনে নেতাজি ভারত সরকারের ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী কিনা এ নিয়ে বারংবার প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও প্রকৃত সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছেনেহেরু কৃপাধন্য একদা সুভাষ ব্রিগেডের শাহনওয়াজ খান জানিয়েছিলেন এই বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে কোন তথ্য নেইনেহেরু নির্দেশিত পথেই তিনি তাইহোকু চিতাভষ্ম গল্পে সরকারি সিলমোহর দিয়েছিলেনতাই নেতাজির সেজদা সুরেশচন্দ্র বসুর তাঁর নিজস্ব তদন্ত রিপোর্ট নিজের খরচে প্রকাশ করেছিলেন যেটা পরবর্তীকালে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে উঠেছিলজনমতের প্রবল চাপে এবং লোকসভার অধিকাংশ সদস্যের দাবিতে ইন্দিরা গান্ধী বিচারপতি খোসলাকে দিয়ে এক সদস্যের নতুন নেতাজি তদন্ত কমিশন করেছিলেন কিন্তু এক্ষেত্রেও শাহনওয়াজ খান এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবার নেতাজি প্রিয় দেশবাসীকে জানানো হয়েছিল নেতাজি বিমান দূর্ঘটনায় মৃত এবং রেনকোজি মন্দিরে যে ছাইভষ্ম সেটা নেতাজিরপ্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এর আমলে লোকসভায় তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ঘোষণা করেছিলেন শাহনওয়াজ এবং খোসলা রিপোর্টে অসংগতি আছেকিন্তু সামান্য কিছুদিন সরকার ক্ষমতায় থাকার ফলে সরকারের ভূমিকা সেদিন স্পষ্ট হয় নিআশির দশকের গোড়া থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোয়েবলসের নীতি অনুসরণ করে মিথ্যার ঢক্কা নিনাদ জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলতে থাকে১৯৮৯ সালে রেনকোজি মন্দির আগুনে সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়১৯৯৩ সালে পিভি নরসিমা সরকার সুভাষচন্দ্র বসুকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল আদালতের ধাক্কায় সেই ভাবনা পরিত্যক্ত হয়রেনকোজি মন্দির পরিদর্শনকালে নেহেরু এবং ইন্দিরা ভিজিটর খাতায় বাণী লিপিবদ্ধ করেছিলেন কিন্তু বিস্ময়করভাবে হলেও সুভাষচন্দ্রের আত্মার শান্তি কামনা করেন নিআসলে নেতাজীকে নিয়ে চক্রান্তের শিকার ছিল অনেক গভীরে

 

অনেক প্রতিকূলতা সহ্য করে মুখার্জি কমিশন তাইহোকু চিতাভষ্ম তত্ত্ব উড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেও ভারত সরকারের মৃত সুভাষচন্দ্রের ত্ত্ব উড়িয়ে দিতে পারেনিতবে তাইহোকুর রেকর্ড পরীক্ষা করে বিচারপতি মনোজ মুখোপাধ্যায় সাহসের সঙ্গে লিখেছিলেন তাইহোকুতে আদৌ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি এবং রেনকোজি মন্দিরের চিতাভষ্ম নেতাজির হবার প্রশ্নই ওঠে নাকিন্তু ২০০৫ সালে পেশ করা মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং লোকসভায় অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে খারিজ করে দেয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিল ঘোষণা করেন যে অতীতের শাহনওয়াজ কমিটি এবং খোসলা কমিশনের রিপোর্টে তাঁরা আস্থা এবং বিশ্বাস রাখেন ভারত সরকারের নীতির কারণেই মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় নি ভারতে আই.এন. সংক্রান্ত বহু ফাইল আলোর মুখ দেখেনি যতগুলি ফাইল প্রকাশিত হয়েছে তাতেও বিস্ফোরক বহু উপাদান আছে যা নেতাজির জীবন সম্পর্কে নতুন করে ইতিহাস লিখতে সাহায্য করবে সাধারণ দেশবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিলবিভিন্ন ভারতীয় দূতাবাসে যাতে প্রকাশ্যে নেতাজির ছবি টাঙানো বা তাঁর জন্মদিন উদযাপিত না করা হয় সে ব্যাপারে নেহেরু প্যাটেলরা সতর্ক ছিলেনএমনকি আজাদ হিন্দ ফৌজের কোন তরুণ যাতে ভারতের সেনাবাহিনীতে চাকরি না পায় সেই নির্দেশনামাও ছিলসেদিনকার ভারত সরকার কূটনৈতিক দ্বিচারিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে নেতাজির প্রকাশ্যে প্রকট হবার পথ রুদ্ধ করতে অনেকটাই সফল হয়েছিলনেহেরু এবং তার উত্তরসূরীরা সফলভাবেই বিমান দুর্ঘটনার মৃত্যুর গল্পটি জনমানসে গেঁথে দিতে অনেকটাই সফল তবে নেতাজির নিশ্চিত মৃত্যু প্রতিষ্ঠা কল্পে নিয়োজিত এদেশ এবং বিদেশের সব চিতাভষ্মপন্থীরাই কৌশলে কোন নেতাজি তদন্ত কমিশনে ধরা দিতে চায়নি। আসলে দ্রুত দেশভাগের নেপথ্যে নেতাজীকে নিয়ে নেহেরু এবং মাউন্টব্যাটেনের মধ্যে কোন গোপন বোঝাপড়া ছিল কিনা তা দেশবাসী জানতে পারেনি ক্ষমতা হস্তান্তরের সব নথিপত্রই ছাপার আগে ব্রিটেন সম্পাদনা করে বাজারে ছেড়েছিল

 

প্রকৃত ধর্ম সমন্বয়, জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয়ত্বের প্রতীক নেতাজি সুভাষচন্দ্র সেই অপরাধে তিনি নেহেরু-গান্ধী, মার্কস-মাও, প্যাটেল-শ্যামাপ্রসাদ পন্থী সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির দলিলে এবং চিন্তা-চেতনায় ব্রাত্যতাঁদের নেতা-নেত্রীরা ততটুকুই উচ্চারণ করেন নেতাজির নাম, যতোটুকু তাঁকে ভাঙিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মাইলেজ পাওয়া যায়তাই বিদ্বান এবং বিদ্বজ্জন, বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ স্বাভাবিকভাবেই দেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি ও আজাদ হিন্দ সেনাদের প্রতি অবিচার প্রসঙ্গে কখনোই লক্ষণরেখা অতিক্রম করে নাতাতে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্তরে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনাসেই কারণেই নেতাজীকে আইনসিদ্ধভাবে ভারতে প্রকট হতে বাধা দেওয়া হয়েছেতাঁকে আন্তর্জাতিক আইনের বেড়াজালে ভুলিয়ে রাখতে, ভুলিয়ে দিতে এমনকি মিথ্যা চিতাভষ্মের গল্পের আড়ালে চিরতরে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আড়াল করে দিতে কার্পণ্য করেনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে কোন পক্ষইঅথচ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য যতটুকু স্বাধীনতা সে তো নেতাজির বৈপ্লবিক সংগ্রামের জন্যইদ্রুত দেশভাগ এবং তৎকালীন ক্ষমতা পিপাসু জাতীয় নেতাদের মুখ এবং মুখোশের বীভৎসতা মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে গেছেদিন যত যাচ্ছে উঠে আসছে অনেক সত্য, অনেক কুকীর্তি এবং কেলেঙ্কারির তথ্যতবুও নিরুদ্দেশের পথিক দেশনায়কের বিলম্বিত গোপন ফাইল প্রকাশের অসম্পূর্ণতা জানান দেয় তাঁর অনিবার্য উপস্থিতি এবং প্রাসঙ্গিকতাবাংলাদেশের হৃদয় থেকে দুঃখের রাতে সুখের খোঁজে এবং পরাধীন জাতির চোখের জলের হিসাব বুঝে নিতে নেতাজি নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেনঅথচ আমাদের স্বার্থমগ্ন গোষ্ঠীবদ্ধ, বিদ্বজ্জন, সুশীল সমাজ তাঁর প্রতি অবিচার করেছে তাই আজকের এই রাজনীতিসর্বস্ব আদর্শহীনতার যুগে সর্বত্যাগী এই বিপ্লবী বীর সৈনিক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে প্রণাম জানাই


তথ্যসূত্র

১) ক্ষমা করো সুভাষ- ডক্টর জয়ন্ত চৌধুরী ২) নেতাজী এক নিষিদ্ধ সত্য-সায়ক সেন ৩) নেতাজী রহস্য সন্ধানে- নারায়ণ সান্যাল ৪) নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য- বরুণ সেনগুপ্ত ৫) His Majesty’s Opponents- Sugata Bose ৬) Gumnami Baba – A Case of History - Adhir Some




নেতাজি সুভাষ স্বমহিমায় ফিরবেন এই ভারতে
বটু কৃষ্ণ হালদার

ভারতবর্ষ মানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। তিনি কোন মানব ছিলেন না। সবার ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন মহামানব। তিনি ছিলেন কঠিনতম লড়াই, মহাসংগ্রামের জয়সূচক ধ্বজা। তিনি ছিলেন একক অস্তিত্ব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সহ বহু দেশে তার হুংকারে অবশেষে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে ছাড়তে বাধ্য হন। এই অকপট সত্য বয়ানটি ব্রিটিশদের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। দেশের জন্য নিঃস্বার্থ সেবা করতে গিয়ে অচিরেই দেশবাসীর চোখের আড়াল হয়ে যায়। মোদ্দা কথায় এই ভারতবর্ষের বহু নেতারা তার যোগ্য সঙ্গ দেয় নি। কারণ অতি অল্প সময়ে তিনি দেশবাসীর চোখের মনি হয়ে যায়। এই বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি অনেক স্বার্থবাদী নেতারা।ভারতের বাইরে তার ডাকে সাড়া দিয়ে বহু মানুষ দেশের সেবায় উৎসর্গ করেন। এমনকি আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য অর্থ-সম্পদ টাকা পয়সা,গয়না সমস্ত কিছু দান করেন। এতেই তিনি চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন।হঠাৎই ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ছন্দপতন ঘটে যায়।১৯৪৫ সালে জাপানের রেনকোজিতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়,এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাপান উতোর শুরু হয়ে যায়। তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা জহরলাল নেহেরু এই সংবাদকে স্বীকৃতি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এমনকি জাপানে গুপ্তচর পাঠিয়েছিলেন সেই চিতাভস্ম পরীক্ষা করার জন্য।কারণ তিনিও জানতেন নেতাজি যেমন ধরনের মানুষ ছিলেন, এত সহজে তিনি মারা যেতে পারেন না।নেহেরু ও বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা ভিতরে ভিতরে ব্রিটিশদের সাথে গোপনে চুক্তি সেরে ফেলে। যদি তিনি জীবিত থাকেন তাহলে তাকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।তার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল ২০০১ সাল।পরে সেই তারিখ পরিবর্তন করে ২০২১ সাল করা হয়। এর একমাত্র কারণ হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জনপ্রিয়তা।কারণ তিনি যদি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন তাহলে দেশের লাগাম উঠবে তার হাতে।এসবের পরেও আমরা নেতাজি নেতাজি করে চেঁচিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তার সাথে ঘটে যাওয়া অমানবিক কান্ডের জবাব আমরা কেউ জানতে চাই নি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ছিলেন ধ্রুব সত্য এক নিষ্কলঙ্ক ও চরিত্র। তিনি আমাদের মন্ত্র আদর্শ পথপ্রদর্শক ও আগামী দিনের মুক্তি সূর্য। ভবিষ্যতে আগামী ৩০০ বছর পরেও তিনি আমাদের আদর্শ হয়ে থাকবেন। কিন্তু এই ভারতবর্ষের কিছু মানুষের স্বার্থ পূরণের নেশায় এক আদর্শবাদী নেতা জীবন কাহিনী রয়ে গেল রহস্যের আড়ালে। এর পিছনে রয়েছে এক  গোপন ষড়যন্ত্রের খেলা। লেখক পৃথ্বীরাজ সেন এর "সুভাষ থেকে নেতাজি"নামক বইটির ৪৯৬ পাতায় তা তিনি খোলশা করার চেষ্টা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিচালিত আইএনএর বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ সঞ্চিত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন মাউন্টব্যাটেন কে স্বয়ং জহরলাল নেহেরু।এরপর থেকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন সেই অর্থ-সম্পত্তি বাটোয়ারার কথা চিন্তা করতে থাকে। আর আমাদের প্রিয় চাচা নেহেরু লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর সঙ্গে দেখা করে সরাসরি বলেন যে,স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস দেশ শাসন করবে এবং তিনি হবেন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী। এরপর আই এন এ ও ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ এর অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য তিনি যে কতখানি তৎপর হয়ে উঠেছিলেন তা তৎকালীন দুটি চিঠি ছিল তার জ্বলন্ত প্রমাণ।এরপরেও বোধহয় কারোর বুঝতে অসুবিধা হবে না যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো আদর্শবাদী নেতা কে রহস্যের অন্তরালে নিয়ে যাওয়ার প্রধান কান্ডারী কে ছিলেন?
তুমি ফিরে এসো হে প্রাণের সখা,তোমার আসন শূন্য।ফিরে এসো এই জরাজীর্ণ,দুর্নীতি ভরা এই ধরাধামে। এখানে দেশ সেবার নামে চলছে লুটপাটের খেলা। তাই আমরা যারা তোমায় বিশ্বাস করি, তোমার নামে সন্ধ্যা সকালে মালা জপ করি। আমাদের বিশ্বাস তুমি ফিরে আসবেই।কারণ তুমি অম র।তুমি ঢাল হয়ে ফিরে এসে এ দেশের লাগাম হাতে নেবে। মিথ্যুক, ছল, চাতুরি দের মুখোশ খুলে দেবে। গড়বে জাতপাতহীন সোনার ভারত বর্ষ।



নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু 
 অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত 


ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপে এসেছেন বহু দেশনেতা।এনাদের মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মঞ্চের এক অন্যতম বিরল ব্যাক্তিত্ব।এনার জন্ম হয় উচ্চবিত্ত পরিবারে,এরপর বিলেতে গিয়ে আই.এ.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।এনার সম্মুখে ছিল খ্যাতি ও স্বচ্ছল জীবনের হাতছানি।

তবুও এ সবকিছুকে ত্যাগ করে তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য অনিশ্চিত দুর্গম পথে পা বাড়িয়েছিলেন।স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য ডাক দিয়েছিলেন দেশবাসী দের।”আমাকে রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” এমন আত্মপ্রত্যয়ী উদাত্ত আহ্বান শুধুমাত্র নেতাজির পক্ষেই সম্ভব।

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ওড়িশার কটক শহরে।পিতা জানকীনাথ বসু ও মাতা প্রভাবতী দেবী।পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন কটকের একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী।

কটক শহরেই নেতাজির পাঠ্য জীবনের সূচনা হয়।শৈশবেই তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।কটকের রেভেনসো কলিজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে শুরু হয় তাঁর কলেজীয় শিক্ষা। উক্ত কলেজের অধ্যাপক ওটেন ছিলেন একজন ভারত বিদ্বেষী। অধ্যাপকের অশালীন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।একারণে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল।

এরপর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর চেষ্টায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে।পরবর্তীতে আই.সি.এস পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান।১৯১৯ সালে তিনি আই.সি.এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।এরপর দেশে ফিরে প্রত্যাখ্যান করতে থাকলেন একের পর এক বড়ো বড়ো সরকারি চাকরির প্রলোভন।এবং স্থির করলেন তাঁর একমাত্র কাজ দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই।

ভারত প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় নেতাজির রাজনৈতিক জীবন ও দেশসেবার মহান ব্রত।নেতাজির তারুণ্য,কর্মশক্তি, সংগঠনী ক্ষমতা,বক্তিতা দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা,অগাধ পাণ্ডিত্য,নেতৃত্ব দেওয়ার বিস্ময়কর দক্ষতা সকলকে অভিভূত করে।

এই সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন বাংলাদেশের এক অবিসংবাদী নেতা।এনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে শুরু হয় নেতাজির স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়।তিনি গড়ে তোলেন এক শক্তিশালী সেচ্ছাসেবক বাহিনী।কলকাতা করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন।

১৯২১ সালে সূচনা হয় গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। সুভাষচন্দ্র বসুর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বদানের বিস্ময়কর দক্ষতা দেখে ইংরেজ সরকার ভয় পেয়ে তাঁকে নিক্ষেপ করেন কারান্তরালে।একবার দুবার নয়,জীবনে বহুবার তিনি বরণ করে নেন কারাজীবনকে।

১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নিঃস্বার্থ ভাবে আর্তদের সেবা করেন।দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার সমর্থক।নেতাজি ছিলেন এই একই মত ও পথের পথিক।

চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য দল গঠনের নৈপথ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান সেনাপতি।অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য ১৯২৭ সালে ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন তিনি।তাই কিছু সময় ভিনেয়ায় স্বাস্থ্য নিবাসে কাটাতে হয়।এরপর দেশে ফিরে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।পরবর্তীতে গান্ধীজির সাথে মতবিরোধ হয় নেতাজির তাই তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে এক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্রের মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন ও মহাজাতি সদন প্রতিষ্ঠা এক অন্যতম স্মরণীয় কীর্তি।

তখন চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।সে সময় নেতাজি কারারুদ্ধ ছিলেন,উক্ত সময়ে তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হলেও তাঁর নিজের বাড়িতে তাঁকে অন্তরীণ রাখা হয়েছিল।১৯৪১ সালে ইংরেজ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে কাবুলির ছদ্মবেশ ধারণ করে নেতাজি ভারত ছাড়েন।

ইতালি ও জার্মান হয়ে গিয়ে পৌঁছান জাপানে। জাপান প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সক্রিয় সমর্থনে প্রবাসী ভারতীয় ও জাপানবন্দি ভারতীয় দের নিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গড়ে তুললেন আজাদ হিন্দ বাহিনী ও আজাদ হিন্দ সরকার।

ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় আজাদ হিন্দ বাহিনী।কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতা, ও পরাভূত জাপানের আত্মসমর্পণ এর ফলে সব কিছু ব্যার্থ হয়।আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

পরবর্তী ইতিহাস অত্যন্ত দুঃখের।জাপানের বুকে পড়লো পারমাণবিক বোমা।জাপান আত্মসমর্পণ করলো।পরাজয় এসে ছিনিয়ে নিল বীর নেতাজির স্বপ্ন।জাপানের বিমানে তিনি তাইহেকু রওনা হলেন।তার পর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি এই মহান নেতার।

সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজ কোথায়?আজ পর্যন্ত এর যথার্থ জবাব মেলেনি।সম্ভবত তাইহেকুর বিমান দুর্ঘটনার কারণে তাঁর জীবনাবসান ঘটেছিল।কিন্তু সমস্ত ভারতবাসীর হৃদয়ে নেতাজি আজও অমর।নেতাজির অভাব বেদনাতে কাতর ভারতবাসীর অন্তর সর্বক্ষণ বলে ওঠে –

” তোমার আসন শূন্য আজি
হে বীর পূর্ণ করো।”

 

আমাদের নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও স্বাধীন ভারতবর্ষ

চিত্রা পাল

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের স্বাধীনতার আরেক নাম। পরাধীন ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেও যাঁদের জীবন উৎ্‌সর্গে আমরা আজ স্বাধীন ভারতবর্ষের অধিবাসী তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রাতঃস্মরণীয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।পরাধীনতার নাগপাশ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে তিনি অকুতোভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁর সমস্ত জাগ্রত শক্তি দিয়ে। তিনিই প্রথম স্বাধীন ভারতবর্ষের পতাকা উত্তোলন করেন   ১৯৪৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পোর্টব্লেয়ারের জিমখানা ক্লাবে। সেখানে তিনি উত্তোলন করে ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা।তখন তিনি ছিলেন আইএন এর কম্যান্ডার ইন চিফ এবং ইন্ডিয়া গভর্নমেন্টের অনারারী প্রেসিডেন্ট, যাঁকে সমর্থন করেছিলো ১৮টি দেশ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আই এন এর হেড কোয়ার্টার ছিলো মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের কাছে মৈরাং, যেখানে তিনি ভারতের মাটিতে দ্বিতীয়বার ১৪ই এপ্রিল ১৯৪৪সালে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মণিপুরবাসীদের সহযোগিতায়। মৈরাং এর আই এন এ মিউজিয়ামে আজও সেসব স্মৃতি সযত্নে রক্ষিত। এই সেই স্থান যা হয়েছিলো প্রথম  ইংরেজ কবল মুক্ত স্বাধীন ভারতীয় অঞ্চল। তিনি প্রথম কাজে করে দেখিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতবর্ষ।  বহুকালের পরাধীনতার কালে তিনি প্রথম জ্বালিয়েছিলেন ভবিষ্যত স্বাধীনতার আশার আলো।


নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর অবদান

স্বপন কুমার দত্ত

                
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনে রত্নগর্ভা ভারতমাতার যে বীর সন্তানেরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে --- " জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য " মনে করে বীরদর্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সেরা আইকন --- এ ব্যাপারে কারোরই কোন আপত্তি থাকবার কথা নয়। আজন্ম নির্ভীক, সৎ,কর্তব্যনিষ্ঠ,শৃঙ্খলাপরায়ন, পরোপকারী ইত্যাদি কোন বিশেষণই সুভাষের জন্য যথেষ্ট নয়।
             
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর  অবদান প্রশংসাতীত ভাবে সত্য। বার্মার মান্দালয় জেল থেকে অসুস্থ সুভাষকে কলকাতার এলগিন রোডের বাড়িতে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছিল। প্রবল প্রতাপশালী ইংরাজ সরকারের সুচতুর গোয়েন্দাবাহিনীর সদস্যদের ঘেরাটোপের জাল কেটে তিনি যেভাবে অন্তর্ধ্বান করেন, তা আজও দেশবাসীকে বিস্মিত করে। তিনি এটা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন, গান্ধীজির নরমপন্থা অর্থাৎ অসহযোগ আন্দোলন করে ইংরাজ সরকারের গদি টলানো অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা অসম্ভবও বটে। তাই এদেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধশক্তির সাহায্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইংরেজদের ব্যতিব্যস্ত করে ফেলতে হবে।
           
১৯৪১ সালের ১৭ই জানুয়ারী গভীর রাতে পাঠানের ছদ্মবেশে সুভাষ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির বসুকে নিয়ে তদানীন্তন বিহারের গোমো স্টেশনে পৌঁছন। সেখান থেকে আব্বেহরের সাহায্য নিয়ে পৌঁছন পেশোয়ার। ১৯৪১ সালের ২৬শে জানুয়ারী রাশিয়া পৌঁছানোর জন্য নেতাজী তাঁর যাত্রা শুরু করেন। আগা খানের সমর্থকেরা তাঁকে আফগানিস্তানের সীমান্ত পার হতে সহায়তা করে। এভাবে সুভাষ কাবুল হয়ে পৌঁছন সোভিয়েত রাশিয়ায়। মস্কোয় জার্মান অ্যাম্বাসেডর এর সহায়তায় সেখান থেকে তিনি পৌঁছে জান রোম। তারপর সেখান থেকে তিনি জার্মানী ভ্রমণ করেন। জার্মানীতে পৌঁছে --- " স্পেশাল ব্যুরো ফর ইন্ডিয়া" র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, যারা আজাদ হিন্দ রেডিওর সম্প্রচারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিল। নেতাজী বার্লিনে " ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার" প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারতীয় যুদ্ধ বন্দীদের মধ্য হতে ৪৫০০ জন সৈনিকদের নিয়ে " ইন্ডিয়ান লিজিয়ন" গঠন করেন। ইতিমধ্যে আ্যডলফ হিটলারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। জার্মান তখন ইংরাজবিরোধী শক্তি হিসেবে সুপরিচিত। ইন্ডিয়ান লিজিয়নের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে হিটলার এবং সুভাষ বোসের মধ্যে নিম্নলিখিত মর্মে একটি চুক্তি হয়। " আমি ঈশ্বরের নামে পবিত্র শপথ গ্রহণ করছি যে জার্মান রাষ্ট্রের নেতা ও রাষ্ট্রের সকল নিয়মকানুন মানিয়া চলুন। বিনিময়ে জার্মান সেনা বাহিনীর সর্বময় কর্তা আ্যডলফ হিটলার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ বোসকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন ।
          
এরপর সুভাষ হামবুর্গে ইন্দো - জার্মান মৈত্রী সমিতি তৈরী করে ভবিষ্যত কর্মপন্থার খসড়া তৈরী করেন। ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে সিঙ্গাপুরে পৌঁছুলেন নেতাজী। পরিচিত হলেন, সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে। ব্যাঙ্ককে জনসভায় ভাষণ দিলেন নেতাজী, দিলেন সিঙ্গাপুর রেডিও থেকে প্রথম ভাষণ। এরপর গ্রহণ করলেন সেনাবাহিনীর অভিনন্দন। সর্বাধিনায়ক নেতাজী ঘোষনা করলেন , --- " চলো দিল্লি, চলো দিল্লি"। আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন নেতাজী। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আহ্বান জানালেন আপসহীন সংগ্রামের। গঠন করলেন, মহিলাদের নিয়ে রানী ঝাঁসি বাহিনী। এবার যুদ্ধ ঘোষনা। ইতিমধ্যে ইম্ফলে পৌঁছে গেছে আজাদ হিন্দ বাহিনী। তিরধনুক থেকে মেশিনগান কিছুই বাদ
নেই। শেষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আজাদী সৈনিক।রাতের অন্ধকারেও চলেছে আজাদী কনভয়।
          
প্রয়োজনের তুলনায় অর্থ ও সামরিক বল কম থাকায় তিনি বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেননি। ইম্ফলে পৌঁছে ওড়ালেন ভারতের জাতীয় পতাকা। প্রবল প্রতাপশালী ইংরাজ সরকারকে ভীত সন্ত্রস্ত করতে বাধ্য করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইংরেজরা এমনিতেই ছিল ব্যতিব্যস্ত। তার উপর নেতাজী সুভাষের এই হুঙ্কার ইংরেজদের ভীতির কারণ হওয়ায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন অনেকখানি পরিপুষ্টি লাভ করে।

             ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাই নেতাজীর অবদান অনস্বীকার্য। 

             

শাশ্বত সে
অলকানন্দা দে

ভূলোক তার নাম লেখে দ্যুতির অক্ষরে! মহাপৃথিবীর সুবিশাল বারান্দায় সুভাষ নামক রোদ্দুর তেজে আশ্চর্য সাহস খেলা করে আপনমনে আজও। সুভাষচন্দ্র একটি আশার নাম, বুকজোড়া আত্মবিশ্বাসের নাম! এই অমিতবিক্রম ভারতসন্তান উথালপাথাল অন্যায় অত্যাচারের বিরোধিতায় যেভাবে মুখর হয়েছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে বাস্তবিক সে নজির বিরল, অতুল্য। এ যেন তাঁরই কাজ তাঁর পক্ষেই করা সম্ভব ছিল। সাহস তাঁকে ঘিরে থাকতো প্রতি প্রহরে, আজন্ম সাথী তাঁর। শত্রুশক্তি এই সাহসকে সমীহ করতো বৈকি। রাত্রিদিন ভূলুণ্ঠিত দেশমাতার সম্মান তাঁকে স্থির থাকতে দেয়নি নিরিবিলে। ঘাতকের থাবার সম্মুখে মাথা নোয়ানো তাঁর কাছে মৃত্যুসম। প্রতিটি মানুষের মনে নাড়া দিতে চেয়েছিলেন এই বলে যে, ভীরুতা দুর্বলতা কলুষ আর লজ্জার রূপ। দেশকে বিদেশের কৃষ্ণ-চক্রান্ত থেকে মুক্ত করতে হলে দামাল হয়ে ওঠো উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে। প্রিয় যুবশক্তি বাতাস চিরে রৌদ্র ফুঁড়ে এগিয়ে যাও যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। বুদ্ধির দক্ষতা দেখিয়ে এক নতুন ভারতবর্ষের জন্ম দেওয়া তোমাদেরই কাজ। এই তাঁর আকাঙ্ক্ষা ছিল যুবা নাগরিকের প্রতি। বিচলিত ছিলেন খুব, দেশকে তো বাঁচাতে হবে অবিশ্রাম অন্যায়ের হাত থেকে।

অসহযোগিতা, নীতির গরমিল তাঁকে বাধ্য করল ব্যতিক্রমী পথ চিনে নিতে। সে পথ তো নরম ঘাসের হতে পারে না। মৃত্যুর কাঁটা পলে পলে নিঃস্ব করে সাহসের ভাণ্ডার। কিন্তু তিনি তো সুভাষচন্দ্র, তাই আকাশের উচ্চতা ভেদ করে তাঁর সাহস। এক অনির্বচনীয় মুহূর্ত গড়ে দেশত্যাগী হলেন তিনি। গর্ভধারিণীকে গর্ব দিলেন আরও একবার তাঁর মতো সন্তানের জননী হওয়ার! ফেরাটা সহজ নয়, ফেরাটা তাঁর ইচ্ছাধীনও নয়। তাই ফেরার পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকা তাঁর কাছে যুক্তিযোগ্য ছিল না। তাঁর পরিকল্পনা নাড়িয়েছিল পৃথিবীকে। ভাবনার এই আন্দোলন তাঁকে অপরাজেয় করেছে। কবিগুরু দেখেছিলেন তাঁর মধ্যে অজানাকে জয় করে নেওয়ার দৃঢ়তা নিজেকে বাজি রেখে। জীবনমৃত্যুর উন্মত্ত ঢেউ ভেঙে তাঁর পাড়ে ফেরা হল কি হল না এই প্রশ্ন মনকে নিয়ন্ত্রণহীন করে সবসময়। তাঁর শেষ পাড়ানির কড়িটুকু খোয়া গেল নাকি জাগতিক নিয়মে তাঁর জীবনে সন্ধ্যা পেরিয়ে নেমেছিল রাত সেই অ-পড়া ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরে অহংকার করি ভারতবাসী বলে, অহংকার করি বাঙালি বলে! আমাদের অবিনাশী বিশ্বাস এই অক্ষয় অব্যয় ব্যক্তিত্বের পথ চেয়ে থাকতে ভালোবাসে, যতই বয়স বাড়ুক না কেন পৃথিবী!


মনে পড়ে সেই দিনটা
                          বুলবুল দে
 
"ইস্ ঘড়িতে সাতটা বেজে গেছে! তাড়াতাড়ি কর সুমি।"
      সুমি স্কুলের পোশাক পরে তৈরি হয়েই ছিল, স্বস্তির আওয়াজ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। দুই বন্ধু এক দৌড়ে গলির মাথায় এসে দেখে চারদিকে ঘন কুয়াশা কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা।  কোনও রিকশা না পেয়ে দুই বন্ধু ঠিক করল তারা হেঁটেই রওনা দেবে। প্রায় দেড় মাইল পথ জোরে জোরে হেঁটে কখনও দৌড়ে অবশেষে তারা যখন হাঁফাতে হাঁফাতে স্কুলে এসে পৌঁছল তখন স্কুলের গেট বন্ধ হয়ে গেছে! 
  সেদিনটা ছিল তেইশে জানুয়ারি। নেতাজীর জন্ম দিনে সুমিদের শহরের সব স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা একসঙ্গে বিশাল মিছিল করে নেতাজীর জয় ধ্বনি দিতে দিতে পথ পরিক্রমা করত তার পর কোনও এক স্কুলে গিয়ে তা শেষ হত। আর সেই স্কুল থেকে সবাই কে মিষ্টির প্যাকেট বা কমলালেবু, কিছু না কিছু দেওয়া হত। সেটা এক একবার এক এক স্কুলে হত। সে এক ভারী মজার দিন ছিল!
       এদিকে স্কুলের গেট বন্ধ হয়ে গেছে দেখে দুই বন্ধু প্রথমে থমকে গেলেও দমে গেল না। তারা আবার দৌড় লাগাল। এবার তাদের লক্ষ্য স্থল হল স্টেডিয়াম। কারণ সব স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীরা প্রথমে স্টেডিয়ামে গিয়ে একত্রিত হয় তারপর সেখান থেকে সব স্কুল পর পর লাইন করে পরিক্রমায় বেরোয়। স্টেডিয়ামে পৌঁছে তারা দেখে লাইন গুলো ততক্ষণে বেরোনো শুরু করে দিয়েছে। দুই বন্ধু এক কোণে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কখন তাদের স্কুলের লাইন আসে। কিন্ত না, এক এক করে সব স্কুলের লাইন বেরিয়ে গেল তবু তাদেরটা এলনা। দুই বন্ধু মিলে আবার দৌড় দৌড়। তারা স্টেডিয়ামে 
পৌঁছনোর আগেই তো তাদের স্কুলের লাইনটা রাস্তায় বেরিয়ে গেছে! মিছিলের পাশ দিয়ে দৌড়ে এগোতে এগোতে অবশেষে সবুজ ড্রেসের তাদের স্কুলের লাইনটার দেখা পেল।
"উফ্ বাব্বাহ্, শেষমেশ পেলাম ! চল চল তারাতারি লাইনের ভেতর ঢুকে যাই, দিদিমনিরা দেখলে যা বকা খাব ! "
বলতে বলতে স্বস্তি, সুমির হাত ধরে লাইনের ভেতর ঢুকে গেল। তার পর দুই জনে বুক ফুলিয়ে সবার সাথে গলা মেলাল----
           " জয়তু নেতাজী, তেইশে জানুয়ারি জিন্দাবাদ, নেতাজী অমর রহে ,
জ -অ-অ-  য় হিন্দ ! "


নেতাজি 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

তোমাকে নিয়ে এক আকাশ লিখব বলে 
কাগজ কলম নিয়ে বসি, রাতের আঁধারে, 
বস্তাবন্দি দলিল দস্তাবেজ ফ্রেমে আঁটা ছবিতে 
কখনো এলগিন রোডের বাড়িটায়, 
একটু এগিয়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে এসে
নিজেই হারিয়ে যাই,  অজানা অচেনা পথে।

কখনো কখনো তোমার ব্যবহৃত পোশাকে, আসবাবে, কলমে,ঘরের আনাচে কানাচে,
অসীম আকাশে, পাহাড়ে, সাগরে, সবুজে 
তোমাকেই খুঁজি, খুঁজি  দিবা নিশি।

রাত দিন গালে হাত,  মিল খোঁজার ব্যার্থ প্রয়াসে 
প্রহর কাটে সাধুবেশী সন্ন্যাসীর সাথে, 
ফালাকাটার আশ্রমে, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে। 

এভাবেও তো বাঁচা যায়? 
হ্যাঁ, তুমিই শেখালে অসম্ভব কে সম্ভব করার এ দুরহ যাপনপাঠ।

আজও এলগিন রোডের রাস্তাটা ধরে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে পিছিয়ে আসি। 
তোমাকেই পুজো করি,অন্তর থেকে পুজিত হও
লক্ষ-কোটি জনতার, অন্তরে।
সে পুজোয়, থাকেনা কোনো নৈবেদ্য, উপাচার,
ফুল - মালা আড়ম্বরের ঘটা।



তুমি ফিরে এসো নেতাজী 

রীতা মোদক 

আরও একবার ফিরে  এসো বীর 
ফিরে এসো মহান সৈনিক 
ধুয়ে  যাক বদ রক্ত 
শুদ্ধ হোক মাতৃভূমি। 

ফিরে এসো নেতাজী সুভাষ 
এসো বিবেকানন্দ।
বিনয় বাদল দীনেসের মত,
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মতো,
নেমে এসো বীর  সৈনিক দল।

নেতাজী  তুমি ফিরে এস
ফিরে এসো রক্তে রাঙা মশাল হয়ে
ফিরে এসো বাংলা মায়ের তেজস্বী  সন্তান হয়ে
অথবা ভোরের সূর্যদোয় হয়ে।

তুমি ফিরে এসো দেশনায়ক 
রুক্ষ ভূমিতে মরুদ্যান হয়ে
ভেঙ্গে যাক সকল বাধার প্রাচীর 
সবুজ ফলুক সারা দেশে।

তুমি জেগে উঠো নেতাজী
ওই দেখ দিকে দিকে বেজে উঠেছে শঙ্খ ধ্বনি.. 
উলুধ্বনিতে মুখরিত   হচ্ছে চারদিক.
মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছে --
দেশমাতৃকার মন্ত্র ----
বন্দে মাতরম, বন্দে মাতরম।
জয় হিন্দ

জয় নেতাজী সুভাষ।






সৃজা রায় 





সুজল সূত্রধর 







অদ্রিজা বোস





তানভী দাম



দেবাঞ্জনা রুদ্র



নীলাদৃতা বর্মন



Thursday, January 6, 2022


 সম্পাদকের কথা 

ইংরেজি নতুন বছর শুরু হতে না হতেই তাল কাটল। আমাদের সমাজজীবন আবার দাঁড়িয়ে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে। আর এর জন্য দায়ী আমরাই। আমরা ছাড়তে পারিনি মেলা, খেলা, উৎসব, আনন্দ, লাফালাফি, হৈ হুল্লোড় কোনোটাই! প্রশাসনে বসে থাকা কর্তা ব্যক্তিরাও যেমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিন্দুমাত্র সচেতন ছিলেন না, তেমনি লাগাম ছাড়া হওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা জেনেও, আমরা লাগামহীন হয়েছি। তারই ফল এই পরিস্থিতি। বছরের শুরুতেই শিক্ষা স্বাস্থ্য অর্থনীতি সবকিছুই বিনাশের মুখে। দিশেহারা সময়ে দিশেহারা জনগণ ও দিশেহারা প্রশাসন। সব মিলে দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া সাধারণ মানুষ বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি। হতাশা সর্বত্র। বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে শিউরে উঠতে হচ্ছে। তাদেরকে আমরা যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি, তার জন্য আগামী আমাদের ক্ষমা করবে না। নিজেদের স্বার্থেই তাই সম্ভাব্য যত বিধিনিষেধ মেনে যা যা করণীয় সবটা করা উচিত। মনে রাখা দরকার একটু সাবধানতা শুধু নিজেকে নয়, পরিবার ও প্রতিবেশীকেও সুস্থ রাখবে! ভেঙে দেবে সংক্রমণের শৃঙ্খল। 


          মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)


প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা,  প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়  

মুজনাই অনলাইন পৌষ  সংখ্যা


এই সংখ্যায় লিখেছেন যাঁরা 

কুমকুম ঘোষ, বটু কৃষ্ণ হালদার, চিত্রা পাল, অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী, পার্থ বন্দোপাধ্যায়, জয়িতা সরকার, শ্রাবণী সেনগুপ্ত, স্বপন কুমার দত্ত, শ্রাবণী সেন, প্রনব কুমার কুন্ডু  (রুদ্র), রীনা মজুমদার, মহাজিস মণ্ডল, অলকানন্দা দে, রূপক রায়, বুলবুল দে, বিজয় বর্মন, সুদীপ দাস, রীতা মোদক, সৌমেন দেবনাথ, সারণ ভাদুড়ী, দেবর্ষি সরকার, অদ্রিজা বোস, তানভি দাম


ভাবনা ও প্রত্যাশা 

আগামী
কুমকুম ঘোষ


কালিকলম কবেই পুড়ে খাক্


তবু,  প্রগাঢ় ধানখেতে সূর্য রোজ  অস্তমিত।

 এমন অলৌকিক দৃশ্যে
রোমাঞ্চ খোঁজার প্রয়াস
 কখনো  হয় ব্যর্থ
কখনো বা আন্তরিক।

ভোরের আশ্বাস পিয়ানোর রিনরিন্; 
ভঙ্গুর মুহূর্তের প্রতি খাঁজে
সাত রঙের আহ্বান।


নতুন বর্ষে সমাজের বুকে বয়ে আসুন শুভ বার্তা

বটু কৃষ্ণ হালদার

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। মিডিয়ার দৌলতে একটু আধটু খবর কানে কানে ঘোরা ফেরা করছিল,যে একটা মারণ রোগ সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে চলেছে।ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে তখন গ্রাস করেছে। বার বার বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু ভারত তখন ও সেই সতর্ক বাণী দিয়ে শত যোজন দূরে। কিন্তু যখন যে অতি মারির ত্রাস গ্রাস করল কেউ বুঝতে পারিনি।বিশ্বের সমৃদ্ধিশালী দেশ গুলো দেশের ভবিষ্যত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিল।দিনে কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিল। কোথাও গণচিতা,কবর সাজানো হচ্ছিল।ভারত বর্ষ তার বাইরে ছিল না। এই অতিমারির গ্রাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল সচেতনতা।সামাজিক দূরত্ব বজায়,মাক্স পরা,আর ঘন ঘন হাত ধোওয়া। যে সংস্কৃতি আমরা ভুলতে বসেছিলাম সেই সংস্কৃতি গুলো বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মোক্ষম উপায় হলো লক ডাউন।সমগ্র বিশ্ব লক ডাউন হয়ে যায়। জনগণ গৃহবন্দি আর জঙ্গলের পশু,পাখি খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়িয়েছে।টিভির পর্দায় চোখ রাখতেই শিহরিত হয়ে উঠছিলাম  আমরা সবাই। চেনা পৃথিবী পরিবেশ রাস্তাঘাট সবকিছু অচেনা হয়ে উঠেছিল। মানুষ মানুষের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা তো দূরের কথা মুখ দেখাই ছিল বন্ধ।চারিদিকে কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল হাহাকার আর স্বজন হারানোর আর্তনাদ।চোখের সামনেই অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতে মারা গেছে প্রিয় জন। মৃত্যু যেন শিয়রে দাঁড়িয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা ছিল আরো দুর্বিষহ। লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহারা।একমুঠো ভাতের জন্য কঠিন লড়াই তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মানব সভ্যতার বিপরীতে বইছে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব সভ্যতার একশ্রেণীর জনজাতি দিনরাত এক করে প্রতিকূলতার উপায় বার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়। তাতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অপরদিকে সেই মানব সভ্যতার অন্য অপর এক শ্রেণীর নির্বুদ্ধিতা চেতনাহীন কর্মকাণ্ডের ফলে পুনরায় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে।
তবে একদিন ঝড় থেমে যাবে। কারণ গাঢ় অন্ধকারের পরে আসে সোনালী আলোর পরশ। সেই আলোর উষ্ণ ছোঁয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের ছন্দময় জীবনের অন্তঃসলিলে অদৃশ্য ঘাতকের ছোবলে তাথৈ তাথৈ নৃত্যের মহামৃত্যুর ঢেউ নিশ্চয়ই থামবে। থমথমে পৃথিবীর বুকে যে আতঙ্কের অশনিসংকেত বইছে তা বন্ধ হতে বাধ্য। অনিশ্চয়তার আবহে ঘুরপাক খাওয়া জাগতিক সময় নিজের কাছে বন্দী, সেই বন্ধন ছিন্ন করে আমরা আবার মাতাল হয়ে উঠব। যে একাকিত্বের যন্ত্রণায় হৃদয়ের বসন্ত দ্বারে ফুল ফোটে না, ঝরাপাতার সুর মুখরিত হয় না, কল্পনায় আসেনা সাতরঙা রামধনু, এই সবকিছুর তীব্র যন্ত্রণা কে উপেক্ষা করে ভারত বর্ষ হাওয়ার উৎসবমুখর হয়ে উঠবে। নববর্ষে এই ধোঁয়া ভরা পৃথিবীর বিশ্বময় বারুদের নাচন বন্ধ হবেই। ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে কালো মেঘেদের ভ্রুকুটি। সময় মত আসবে বাঁকা চাঁদ, আবার উঁকি দেবে ঈশান কোণ হতে। আমরা আবার প্রাণ খুলে হাসবো, নতুন করে বাঁচার আনন্দে পৃথিবী কে সুস্থ রাখবো এই অঙ্গীকারে নতুন করে ভাবতে শেখাব আগামী প্রজন্মকে।



নব বর্ষের আহ্বানে
চিত্রা পাল

নববর্ষের আহ্বান মানেই নতুন আনন্দে অবগাহন। প্রতিদিনের মতোই সেদিনটিও আসে আমদের কাছে।সেদিনও প্রভাতে সূর্যোদয় হয়, সন্ধ্যায় অস্ত যায়। কিন্তু ওই যে একটা চিহ্ন দেওয়া আছে, অবশ্য ওটা আমাদেরই দেওয়া, এই দিনটি  নতুন বছরের সূচনা, তাই আমরাও ভাবতে শুরু করি নতুন বর্ষে নতুন জীবনের কথা। যে কাল চলে যায়, তাই হয়ে যায় ইতিহাস। বহমান কাল কালের কপোল তলে কিছু  আচঁড় রেখে কোথায় হারিয়ে যায় তার দিশা পাওয়া ভার।সে আঁচড়ই ইতিহাসে কথা বলে।আমাদের সামনে এখন নতুন বছর। সেই নববর্ষ আমাদের আহ্বান জানায় নতুন জীবনে। রোগ ব্যাধি জর্জর পুরাতন বছরকে পেছনে ফেলে আমরা আবার এসেছি নববর্ষের কাছে। যে বছর চলে গেলো সে  আমাদের মানে সমগ্র মানবজাতিকেই দিয়ে গেলো না চাইতে, অজানিতে এক চরম জীবনভোর শিক্ষা,যে শিক্ষা  চালিত করবে পরবর্তী সুদূর ভবিষ্যত্‌ কালের সমাজ জীবনকে। কোভিদ পরোক্ষে আমাদের ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে  সকলকে করে তুলেছে স্বয়ম্ভর।যে কাজ আগে বহুবার বলেও রপ্ত করানো যায়নি, কোভিদের ধাক্কায় সে কাজ সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে সহজে। নিজের কাজ নিজে করে নেবার প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। জীবানু সংক্রমণ, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে হাতধোয়া,মাস্কপরা  এসব করতে করতেই কখন যেন গ্রীষ্ম বর্ষা শরত্‌ হেমন্ত সব ঋতু পেরিয়ে এসে গেলো শীতকাল সঙ্গে  ইংরেজি নতুন বছর।ইংরেজি নতুন বছর মানে কর্মজগতের  নতুন বছর। সেই নববর্ষের আহ্বানে যোগ দিয়ে বলি, নতুন বর্ষে নতুন জীবন আনুক সবার জন্য সুস্বাস্থ্য।  নতুন জীবন হোক সুখকর, আনন্দময়।                




নব আনন্দে জাগো
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

বর্ষশেষের কুয়াশা মাখা মনকেমনের ভোরে পালাবদলের দরজায় কড়াঘাত করে এক নতুন অতিথি। সবটুকু নতুনে আবিষ্ট হয়ে, নতুনত্বের ছাড়পত্র নিয়ে সে হাজির হয় জীবনের নিত্যনতুন গল্প শোনাতে। সুখ-দুঃখ, হাসি- কান্না, ভালো- মন্দ, চড়াই- উতরাই সবকিছুর এক নতুন অধ্যায় নিয়ে হাজির হয়ে আগামীর স্তরে স্তরে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষার প্রহর গোনে সে। প্রবেশের খোলা পথে এগিয়ে এসে  পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে দুচোখে নতুন আশা, নতুন স্বপ্নের কাজল এঁকে পথচলা শুরু হয় তার। আগমনের সূচনা পর্বেই দোসর বাংলা মাস তাকে উজার করে দেয় গোলাভর্তি নতুন ধান, সুঘ্রাণে ভরা নতুন গুড় আর উৎসবের নতুন আমেজ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসবের আনন্দ বিভিন্ন নাম নিয়ে মেতে ওঠে মকর সংক্রান্তির প্রাণময়তা হয়ে। বিগত দুটি বছরে মারণ ভাইরাসের প্রকোপে প্রিয়জন হারানোর ব্যথাকে বুকে নিয়েও নতুন ভাবে জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হতে এবং নিরাপদ,  রোগমুক্ত আগামীর অপেক্ষায় আশাবাদী হতে নতুন সাহস যোগায় তার সদর্থক, সুস্থ চেতনার, শুভ মনস্ক পথিকের দল। দেওয়ালের নতুন ক্যালেন্ডারে, স্কুল পড়ুয়ার নতুন শ্রেণীর  নতুন বইয়ের গন্ধে, বছরের প্রথম চড়ুইভাতির প্রাণখোলা আনন্দে, রঙিন সেলোফেন মোড়া বছরের প্রথম দিনের কেকের উচ্ছাসে, হাজারো উদযাপনের উন্মাদনায়,প্রতিশ্রুতির অঙ্গিকারে, সম্পর্কের বাঁধনে সর্বত্রই এই নতুনের জয়গান। হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যাওয়া অনেককিছুই একটু একটু করে ছন্দ ফিরে পেতে চেয়ে হাত বাড়ায় এই নতুনের দিকে। হারিয়ে যাওয়া রুজি রুটি উপায়ের পথ খুঁজে ফেরে নতুন প্রত্যাশার কাছে। বিশ্বব্যাপী দুরারোগ্য ব্যাধিগুলি নিরাময় খোঁজে, অত্যাচার মুক্তি খোঁজে, ত্রাস শান্তি খোঁজে, লাঞ্ছনা নিরাপত্তা খোঁজে, হাহাকার সাহারা খোঁজে, লজ্জা আব্রু খোঁজে, নিরন্ন অন্ন খোঁজে, নিরাশ্রয় নতুন আশায় ঠিকানা খুঁজে ফেরে এই নতুনের দিকে চেয়ে। চলার পথে কোন কোন ঘটনার সাক্ষী হতে হবে তাকে, এ বিধির বিধান যে এই নতুনেরও জানা নেই। বারো মাসের এই সময়কাল তাকে কী কী উপহার দেবে আর কীই বা ছিনিয়ে নেবে তার কাছ থেকে এ তার সম্পূর্ণ অজানা। তবুও কালের অমোঘ নিয়মে পথচলা জারি থাকবে তার নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। বিস্তর রূপান্তর ঘটবে অনেককিছুরই এই সময় প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে। জীবনে আসবে নতুনের আস্বাদ।অগনিত চোখ  ধন্য হবে নতুন কিছু দেখে, নতুন কিছু পড়বার মধ্যে দিয়ে আনন্দ নেবে অগনিত মন, নতুন কোনো পরিচয়, নতুন আত্মীয়তা, নতুন শপথ ; সবেতেই নতুন প্রাণপ্রাচুর্যে জেগে ওঠা, বারংবার।আবার,এ আস্বাদ যে সর্বক্ষেত্রে সুখকর হবে এমন নয়। অনেক সম্পর্ক যেমন পরিণতি পাবে,  তেমন অনেক বাঁধন তার চেনামুখকে হারাবে  অশ্রুসজল চোখে। এই পাওয়া- না পাওয়া ঘিরেও তৈরি হবে নতুন নতুন জীবনের মোড়ক। নতুন ভাবে ভাবা, নতুন করে চেনা,  নতুন করে উঠে দাঁড়ানো, নতুন করে রুখে দাঁড়াতে শেখা। নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে,নানা অভিজ্ঞতার শিক্ষা নিয়ে একজন মানুষ হয়তো সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হবে এক ভিন্ন নতুন মানুষে। তৈরি হবে এক নতুন জীবন এবং আরও নানান ঘটনাপ্রবাহে আরও আরও নতুন জীবন। এই নতুনের অবিরাম যাত্রাপথে পেছনে ফেরার অবকাশ কোথায়?  তবুও কোনো এক দুর্বল মুহূর্ত তার স্মৃতিপটে আঁকবে ধূসর কিছু ছবি। নিজের অজান্তেই সেই ছবি জুড়ে তার মন পিছিয়ে যাবে কোন এক মরমী আবেগের কাছে।মন বলে উঠবে 'ভুলতে পারিনি' ;কিন্তু নতুনের হাতছানিকে সে অগ্রাহ্য করবে কোন শক্তিতে?  নতুনের দূর্বার টানে নতুন স্রোতে ভেসে নতুন বর্ষে তাই জন্ম নেবে জীবনের মধ্যে থাকা নতুন জীবন। নতুনকে বরণ করে, জীবনকে বরণ করে, সঙ্গে পুরোনো ভালোলাগা,  ঐতিহ্য, আবেগ, মূল্যবোধ সর্বোপরি হৃদয়বোধ নিয়ে শুরু হোক নতুন বর্ষের নতুন যাপন। হাজারো নতুনের ভিড়ে যেন হারিয়ে না যায় ছোট ছোট পুরোনো ভালোলাগার মুহূর্ত,চেনা মুখের সারি, আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় মোড়া সম্পর্কগুলির ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া।নতুন বর্ষে নতুন জীবন ,সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়ে খুঁজে নিক আনন্দের চাবিকাঠিকে।শুভ হোক আগামীর প্রতিটি ক্ষণ। 



স্মৃতি
 
স্মৃতির ক্যানভাসে নিউ ইয়ার 
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়  

...আমি যা দেখছি তুমি কি তা দেখছ? 
...কি দেখছ ? 
...আমি দেখছি একটা গরম লোহা, ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে। হাজার চিন্তাতেও যখন বলতে পারতাম না,  তখন ঘর ময় একটা অট্টহাসি খেলে যেত। 
 
...সত্যিই কি বোকা তুই,  সেটা ফ্যান, ফ্যান..  আরে বোকা সিলিং ফ্যান।

টাইম মেশিনটা  রিভার্স ব্যাক করে বছর চল্লিশ পিছনে ফিরে গেলে সকাল সকাল ঝোলা খেজুরের গুড় দিয়ে বাসি রুটি বা কোন কোন সকালে মা কাকিমাদের চালকুমড়া আর কলাইডালের বড়ি দেওয়ার সকালে উঠতো নতুন ইংরেজি বছরের সকাল। রোদপীঠ করে কড়কড়া ভাতের মধ্যে ফুলকপি আর ট্যাংরা মাছের ঝোল মিশিয়ে মাখতে মাখতেই কাঁধে বাঁক নিয়ে আলাউদ্দিন চলে আসতো মাটির ভাঁড় ভর্তি খেজুরের রস নিয়ে।

একদিন স্কুল কামাই করলেই দিবা ভট্টাচার্য,  কণিকা ঘোষ (স্কুলের সংস্কৃত, ও ইংরেজি র শিক্ষিকা)  বাড়ি অবধি চলে আসতেন। অসুখ বিসুখের খবর পেলে আপেল, কলা হরলিক্স চলে আসত মাথার শিওরে।

মাষ্টারমশাই দিদিমণিদের জন্য গুনে গুনে রসগোল্লাও চলে আসত নিঃশব্দে। হাজার কাজের ভিড়েও জীবনে মূল্যবোধের খামতি ছিল না।

কলেজ জীবনে এসে কেমন যেন আমাদের  পাখা গজালো।  কাঠ বেকারত্ব সর্বত্র।  টিউশনির সামান্য উপার্জনে সাধ অনেক সাধ্য কম। তার মাঝেই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ, হারমনিয়াম কেনা এবং গানের মাষ্টার এর কাছে গান শেখার তোড়জোড়।  নিউ ইয়ার্স এ ক্লাব বা কলেজ এর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার স্বপ্নে শেষ হত বর্ষ শেষের রাত।

একটু সচ্ছলতা আসলে দক্ষিনেশ্বরের কালিমন্দিরের কল্পতরু উৎসবে যেতাম। সারাদিন মন্দিরে লাইন দিয়ে দক্ষিণাকালি করুণাময়ী র পুজো দিয়ে নিউ ইয়ার শুরু করতাম।

আন্তরিকতা এবং সামাজিকতার যে পাঠ নিয়ে বড়ো হয়েছিলাম সে সব দিন গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল। বন্ধু বান্ধব দের সাথে মতান্তর হলেও এখনকার মতো কথায় কথায় মনান্তর কখনো কল্পনাও করিনি। 

একটা আলুর চপ ভেঙে চার টুকরো করে খাওয়া স্কুলের বন্ধু বান্ধবীরা ছিল কল্পনা, পরিতোষ, গৌরী, সুভাষ, সান্ত্বনা, নাসিম বানুরা।  নতুন বছরের স্মৃতি কথা বেদনাতুর হয়ে ওঠে যখন ভাবি কল্পনা পরিতোষ স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় হত, ওরা এখন না ফেরার দেশে। 

কলেজ জীবনে সেই টিম পরিবর্তিত হ'ল ক্ষীরোদ, রীতা, স্নিগ্ধা, কৃষ্ণা,  অর্চনা দের সাথে।  দলবেঁধে নতুন বছরের শুরুতে দীঘায় যাওয়ার মতো স্মৃতি গুলো ১লা জানুয়ারিতে মনের স্মৃতিপটে আজও  ভেসে ওঠে। 

ভেসে ওঠে নতুন দিল্লির কস্তুরবা গান্ধী রোডের "ভারতীয় বিদ্যা ভবনের" সাংবাদিকতা বিভাগের সুরজীৎ, সুমিতা দি, প্রবীর, শুভঙ্কর,  কৃষ্ণা লাহিড়ী দিদিদের সাথে সুরজকুন্ডে নিউ ইয়ার্স কাটানোর ছবি গুলো। 

ক্যানভাসে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।  মন ভারাক্রান্ত হয় যখন ভাবি রবীন্দ্র প্রেমী কৃষ্ণা লাহিড়ী দি'র সাথে সাথে, চিত্তরঞ্জন পার্কের বাড়িটাও মরে গেছে।

পিছনে ফেলে আসা দুটো বছরে করোনা ভাইরাস লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে আমাদের মনের ভাবনার জগৎ টাকেও দুমড়ে মুচড়ে,  ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে।  আগামী নতুন ইংরেজি বছরের নতুন সূর্য যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া সুখস্মৃতি গুলো আবারও ফিরিয়ে নিয়ে আসে, মনে প্রাণে সেই প্রার্থনাই করি।



ভ্রমণ 

সঠিক-ভুলের বান্দিপুর 
জয়িতা সরকার 





শীত কিংবা বর্ষা, গ্রীষ্ম অথবা বসন্ত, হাঁড় কাঁপুনি থেকে পাতা ঝরা সবটাই কেমন উল্টে পাল্টে দেখতে চায় এই মন। বড্ড বেপরোয়া আর হাওয়া বদলের মত দিক বদলায় সে। বারমুখো চক্রব্যূহে ঢুকে পড়া মনের যে এই জীবদ্দশায় মুক্তি নেই তা বলাই বাহুল্য। পাহাড় থেকে জঙ্গল, নদী থেকে বালুকাবেলা সবটাই যেন দাগ কেটে যায় মনে। সেই মনের টানে সাড়া দিতেই বারবার বেড়িয়ে পড়া। 

আমার যদি একটা জঙ্গল থাকত, কী আর হতো? জংলী হয়ে ঘুরে বেড়াতাম। না না, জংলী কেন হতে যাব? বেশ শিকার করতাম, একটা বড় বন্দুক কাঁধে শুকনো পাতা উড়িয়ে দু'চারটে বাঘ ভাল্লুকের মালকিন তো হয়েই যেতাম। ঘোরাফেরায় মন ভরছে না, এবার রাজপুরুষ হওয়ারও ইচ্ছে হয়েছে মনে। আরে হবে নাইবা কেন?  যে জঙ্গল পথ ধরে আপনি গাড়ি নিয়ে ছুটছেন, সেই জঙ্গলটা ছিল শুধু রাজাদের আমোদের জায়গা। শুধুমাত্র শিকারের জন্য একটা জঙ্গল, যেখানে হাতি, লেঠেল বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজ-রাজারা। 




রাজা শিকার করবেন, আমোদে-আটখানা হয়ে মহীশূর থেকে রওনা হলেন। পথ বেশ অনেকটাই। জঙ্গল বেশ গভীর। এদিক ওদিক দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে হরিণের পাল। আহা কী কোমল দৃষ্টি। কচি ঘাস গুলো খোশ মেজাজে চিবিয়ে চলেছে। হুঁশ করে শব্দ, আরে ভয় পাস না, রাজা রাজত্ব ওসব অতীত। গুলি-বন্দুক সিন্দুকে, এখন গাড়ি আর ক্লিক-এর সময়। আমাদের দু'চারটে ছবি নেবে, এই যা। এইসব  মানুষদের শখ আবার অন্য। ওসব ছিল ওদের ঠাকুরদার আমলে। ঘাস চিবোতে চিবোতে হয়ত ওরা এই গল্পই করছিল। 

জীব বৈচিত্র্য-এর এক ভরকেন্দ্র এই অরণ্য। রাজাদের প্রমোদের জন্য তৈরি দক্ষিণের এই জঙ্গল এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। শুধুমাত্র পর্যটক নয়, অবাধে বন্যপ্রাণীর এক অভেদ্য বিচরণ ক্ষেত্র। বান্দিপুর টাইগার রিজার্ভ। রাজ-রাজাদের মত আমারও ইচ্ছে হয় ওই জঙ্গল পথে ঘুরে বেড়াতে। তবে ওই যে শিকারের কথা বলছিলাম সেসব কিছু নয়, শুধুই দু'চোখ ভরে দেখব বলেই বেড়িয়ে পড়লাম ভোরের আলো ফোটার আগেই। 

পূব আকাশে যখন লাল আভা তখন আমরা দাঁড়িয়ে নাইস রোডে। নামের যথার্থতা আছে অবশ্যই। নাইস রোড ছাড়িয়ে মাইসোর রোড, একে একে পেড়িয়ে যাব পরিচিত কিছু জায়গা। প্রথমেই রামনগর, যেখানে পৌঁছতেই শোলে সিনেমার কথা আপনার মনে পড়বে। ঘড়ির কাঁটায় আট'টা, এবার টি ব্রেক। একটু এগিয়ে গেলেই শ্রীরঙ্গপত্তনম, সেই টিপু সুলতান, শুনলেই একটা লড়াকু মনোভাব জেগে ওঠে। এরপরই সেই মহীশূর মানে বর্তমানের মাইসোর। তবে শহরে না ঢুকে ডানদিকে বাঁক নিয়ে উটি-মাইসোর রোড ধরে চলছি আমরা। 




পথ চেনাতে সাহায্য করছে গুগল। আমরাও চলছি, আবার আরেকটা ডানদিক। কিছুটা যেতেই ওয়েলকাম টু বান্দিপুর, আমি তো আত্মহারা, জঙ্গল এতো সুন্দর হয় নাকি? সবাই যেন নিয়ম মেনে রয়েছে এখানে, প্রতিটি গাছ যেন একে অপরকে শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছে। দু'পাশে ঘন জঙ্গল মাঝ দিয়ে ঝাঁ চকচকে রাস্তা। 

জঙ্গলের সঙ্গে আমার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে, পশু-পাখি গুলো হয়ত বুঝতে পারে আমি এসেছি। কোনদিন খালি হাত ফিরিনি। তবে দক্ষিণের পশু-পাখি গুলো আবার আমার কথা বুঝবে কিনা এই সন্দেহ নিয়ে এগোচ্ছি, চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির, তার মাঝেই ওগুলো কী? আরে জংলি শুয়োর, দাঁত বের করে ছুটছে, এতদূর এসে এসব দেখব নাকি ? চলতে চলতেই একটা জলাশয়, নিশ্চয়ই বাঘ জল খেতে আসে এখানে, একটু দাঁড়িয়ে গেলে হতো না? ওরে অতগুলো কী? জংলি কুকুর, আর সম্বর হরিণ, চটজলদি ক্যামেরা দে, কিন্তু কিছুই এলো না, দাঁড়ানোর কোন অনুমতি নেই। অগত্যা এগিয়ে চলা। 

কিছুটা যেতেই, এতো পুরো পরিবার, ছানা নিয়ে দাঁড়িয়ে হাতির পাল। আচ্ছা এগুলো কী ওয়াদিয়ার-দের হাতির বংশধর, মানে যার নামে কর্ণাটক সরকারের ঐরাবত বাস চলে? আমার প্রশ্নটা শেষ করতেই বুঝলাম এবার বকা খাওয়ার পালা। সেসব যাক, ছবি আমি তুলবই কিন্তু সফরসঙ্গী নারাজ। কারণ একটাই , হাতির পাল আমাদের থেকে পাঁচ হাত দূরেও নেই। তো চল এগিয়ে যাই, কিন্তু সাফারি পয়েন্ট কোথায়? জঙ্গল পথে নেটওয়ার্ক নেই, কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ চেক পোস্ট, কিছুই বুঝলাম না, পেড়িয়ে চললাম, খানিকটা যেতেই জিজ্ঞাসাবাদ, বললাম ডে-ট্রিপ, কিন্তু এরা মালয়ালি বলছে কেন? একশ মিটার যেতে না যেতেই সবটা পরিস্কার, ওয়েলকাম টু ওয়ানাড , মানে? এতো কেরালা, আমরা তো যাব তামিলনাড়ুর দিকে। পথ ভুল, উফফ গুগল যে মাঝে মাঝে এমন গোল করে। 




এবার ফিরতে হবে, সে আরেক বিপত্তি, চেকপোস্ট, এবার কানাড়া, আরটিপিসিআর দেখাতে হবে? চক্ষু গোল, এই তো আধ ঘন্টা আগে গেলাম এই রাস্তা দিয়েই, না কেরালা থেকে এলে এটা লাগবেই। উপায়? শেষে টোলের স্লিপ দেখিয়ে মুক্তি। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেই আরে পুরো পরিবার এখনও দাঁড়িয়ে। বেশ কিছু লোকজনও দাঁড়িয়ে, সাহস দেখিয়ে আমিও নেমে পড়লাম। দু'চারটে ক্লিক করতেই তাড়া খেলাম। না হাতির নয়, বাকিটা বুঝে নিতে হবে। 

ওই যে দেখ দেখ, দু'টো ময়ূর একসঙ্গে, বেশ সুন্দর ঘুরছে ওরা। জঙ্গলের এই খোলামেলা বেঁচে থাকাটা আমার বড্ড প্রিয়। নিজের মত করে বাঁচা হয়ত একেই বলে। এসব ভাবতে ভাবতেই অগুনতি হরিণ, এতো সুন্দর তাকিয়ে আছে, দেখেই যেন মায়া হয়। এবার জঙ্গল ছেড়ে বেরোনোর পালা। দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, এটা কেরালা সাইড, এটা কোর। ওদিকে উটি সাইড, ওখানে সাফারি হয়। 

বেলা তখন সাড়ে বার'টা, যাব কিনা ভাবতে ভাবতেই চল গিয়েই দেখা যাক প্রস্তাব। বেশ অনেকটা পথ। মাঝে একটু খাওয়াদাওয়া। এবার চলছি সবার পরিচিত বান্দিপুরের দিকে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই প্রথম বাঁক, পরপর কয়েকটা বাঁক নিতেই বেশ খানিকটা ওপরে উঠে এলাম। কিন্তু আমরা তো উটি যাব না, তবে ফেরা যাক। একটু আসতেই চোখের সামনে দু'টো বাইসন। এই জঙ্গলে সত্যি বৈচিত্র্য আছে। যেমন গাছ-পাহাড়ের বন্ধুত্ব, তেমনিই ওদের কোলে বেড়ে ওঠা পশু-পাখি। 

প্রকৃতির যে কত রং, তা হয়ত এই পাহাড় ঘেরা জঙ্গলে আছে। নেমে আসছি পাহাড় থেকে। আমাদের আবার আসবে বলার অপেক্ষায় ছিল ওরা, এক পাল হরিণ। ওদের টাটা বলে বেড়িয়ে এলাম উটি-মাইসোর রুটের বান্দিপুর থেকে। প্রায় সাত কিলোমিটার আগে রয়েছে সাফারি বুকিং সেন্টার। ইচ্ছে করলে বাস কিংবা জিপে চেপে আপনি ঘুরে আসতে পারেন জঙ্গলের অলিগলি। তবে এই যাত্রায় সবকিছুর দেখা পেলেও, বাঘ মেলেনি। তাই হয়ত সেই রাজকীয় জঙ্গল ভ্রমণটা এখনও বাকির তালিকায়। 




বাঘ দেখার জন্য আরও একবার আসতেই হবে, তবে ইচ্ছে থাকল ভুল পথ ধরে আরও একবার কেরালা দিকের বান্দিপুরে যাওয়ার। সত্যি অনেকটা গভীর, আর একটু যেন বেশি সুন্দর। মাঝের কাবিনি নদী আর ওপাশের নাগারহোল ন্যাশনাল পার্ক এপাশের বান্দিপুরকে আরও মোহময়ী করে তুলেছে। এক অদ্ভুত নির্জনতা আছে এই আদিম প্রকৃতিতে। 



গল্প 

নতুন ভোর 
শ্রাবনী সেনগুপ্ত

নতুন বছরের সূর্যোদয়।দূরে টিলার দিকেএকদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছেন নতুন বিডিও-মনের মধ্যে থেকে সরে যাচ্ছে কবেকার হতাশা। ফেলে আসা অতীতের স্মৃতিপথ দিয়ে তিনি হেঁটে চলেছেন।  
তিনি তখন শিশু।মা বাবার সংসারে  অভাবের সঙ্গে সুখের ওম্ টুকুও ছিল ।মা সোনামণি টুডু ছিল সুন্দরী-কালো চিকন গায়ের রঙ, শরীরের বাঁধন দেখবার মতোন।গাঁয়ের একমাত্র কুয়ো থেকে যখন জল নিতে যেত,আর সব বৌ ঝিদের মাঝে নজর কাড়ত সে।প্রতিবাদী, উচিৎ কথা বলতে দড় সোনামনি টুডু।সে চাইত তার মেয়ে লেখাপড়া শিখুক।গাঁয়ের একমাত্র পাঠশালায় সে তার মেয়েকে ভর্তি করেছিল।এইটিতেই চোখ টাঁটাল সবার-"বিটিছেল্যা  আবার লিখাপড়া শিখ্যে কি করবেক?"রব তুলল সবাই।তার উত্তরে সোনামনি বলে-"কেন-বিটি ছিল্যা কি মানুষ লয়?ও লিখাপড়া শিখ্যে অনেক বড়টা হবেক্।শহরের বিটিদের পারা চাকরিট করবেক।"গাঁওবুড়া সাফ্ জানিয়ে দিল-"অই সব শওড়েপানা আমাদের এখানে চলবেক লাই এই বইল্যে দিলাম।"শুনলোনা সোনামনি ।তার  বরও অনেক বারণ করল,এমনকি মারলও তাকে ।কিন্তু সে মেয়েকে পাঠশালায় পাঠাতে থাকল।তেল চুপচুপে চুলে দুই বেণী করে যখন     হারামণি ইস্কুলে যেত,মা সোনামণি চটের থলেতে বই নিয়ে তার পিছু ধরত।আহা সে এক চোখজুড়ানো দৃশ্য।এক আলোর বলয় যেন ঘিরে থাকত তাদেরকে।গ্রামের বাকি মেয়ে বউয়েরাও মনে মনে সামিল হতে চাইত তাতে,কিন্তু সাহসে কুলতো না।তাই তারা অভিশাপ দিত সোনামনিকে-"মর্ মর্ গতরখাকি।" তবে পাঠশালার মাস্টারমশাই সোনামণির সঙ্গে ছিলেন সবসময়। এইটি আরো চক্ষুশূল হয়ে উঠল সবার। বাড়িতেও শুরু হল অশান্তি।মাস্টারমশাইকে আর সোনামনিকে নিয়ে কানাকানি শুরু হল গাঁয়ে।অনেকদিন ধরে সোনামনিকে নিজের করে পাবার ইচ্ছে ছিল মোড়লের,এই সুযোগটাকে কাজে লাগাল সে।
সোনামনির বরকে হাত করে  সুযোগ বুঝে এক রাতে  সোনামণির  নারীত্ব লুট করতে চেষ্টা করল।সোনামণিও ছাড়লনা,সে তার কোমরে থাকা টাঙ্গি দিয়ে কোপাল তাকে।মরল মোড়ল।কেউ টের পাবার আগেই সোনামণি   মেয়ের হাত ধরে  ছুটে চলল মাস্টারমশাইয়ের কাছে।গিয়ে সটান তার পায়ে ধরল-"মাস্টর বাঁচা।"তার রক্তাক্ত চেহারা দেখে শিউরে উঠলেন মাস্টারমশাই।বললেন-"একি! কি করে তোর এই অবস্থা হল?" সোনামনি বলল-"ও মাস্টর আমার মেয়েটাকে তুই বাঁচা-আমি খুন করেছি রে,একটা বদ মানুষকে সইরে দিছিরে এই সোন্দর পিথিবী থেকে।গাঁয়ের কেউ এখনো টের পায় নাই। টের পেল্যে একে আর বাঁচতে দিবেক লাই।তোর দুটি পায়ে ধরি রে-একে তুই বাঁচা। মেয়েট যেন লিখাপড়াট শিখে মানুষ হতে পারে-তোর কাছে রেখ্যে গেলাম,আমি চললাম পুলিশ ফাঁড়ি।" এই বলে হারামণিকে সেইখানে রেখে সে ছুটল।না,সেদিন সে  পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত্য পৌঁছানোর আগেই গ্রামবাসীরা তার কাছে পৌঁছে গেল।পিটিয়ে মারল তাকে,আর তার মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে পুড়িয়ে দিল তার ঘর।
মাস্টারমশাই অনেক কষ্টে লুকিয়ে রাখলেন হারামণিকে । তাঁর এক বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দিলেন শহরে। সেখানেই সেই ভদ্রলোকের সাহায্যে এক আবাসিক বিদ্যালয়ে থেকে শুরু হল হারামণির আলোর পথে চলা। এইভাবে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ হারামনি বিডিও ম্যাডাম।তারই প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে মেয়েদের ইস্কুল । সে প্রতিজ্ঞা করেছে যাতে আর কোনো মেয়েকে পড়াশোনা করার জন্য তার মতোন কষ্ট না পেতে হয় তার জন্য সমস্ত রকমের প্রচেষ্টা জারি রাখবে।আজ নতুন বছরের রবির আলোকচ্ছটায় সে যেন দেখতে পাচ্ছে তার মা সোনামণির খুশিভরা মুখ-সেই নারী যে তার সমাজের সমস্ত রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও তার মেয়েকেএগিয়ে দিতে চেয়েছিল আলোর দিকে। মনে মনে বলল হারমনি- "মা গো তুই খুশি ত,তর বিটি আজ তার মতোন বিটিছিল্যদের লিখাপড়ার সব বাঁধা দূর করবেক এই কথাটা তোকে দিল বটেক।" হেসে উঠল চারদিক এসেছে নতুন ভোর।


রম্য রচনা 

থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর
স্বপন কুমার দত্ত 

আবার একটি বছর পেরিয়ে পা দিতে চলেছি, নতুন বছরে, কিন্তু তার হাল হকিকত বদলাচ্ছে কই? মানে সেই "থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর।" বছরের শেষ দিনে এবং নতুন বছরের প্রথম দিনে সাড়ম্বরে পালিত হবে "ফিষ্ট "। জবাই হবে, নিরীহ মুরগী, ছাগাদি সঙ্গে যুক্ত হবে আরও অনুষঙ্গ। কে বলবে, তখন দেশে রয়েছে দারিদ্র্য,বেকারত্ব আরও নানা সমস্যা।
          যাক সে প্রসঙ্গ। এখন আমজনতার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বাজারে যাওয়া। ক্রমাগত লম্ফমান বাজার দরের কারণে বাড়িতে গিয়ে হিসেব দেওয়া সত্যিই মুশকিল। স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করেনা, পুত্রকে পিতা বিশ্বাস করতে অপারগ। এতো এক ভীষণ যন্ত্রণা!
            অসংখ্য সমস্যার মুকুটের সঙ্গে এবার নতুনভাবে জুড়তে চলেছে, সমস্যার নতুন একটি পালক। ব্যাংক বিলগ্নিকরণ এবং তারপর গণেশ উল্টালে মিলবে অ্যাকাউন্ট প্রতি সর্বোচ্য পাঁচ লক্ষ টাকা। এর বেশি জমা থাকলেও " নো হোপ নো চান্স, রিটার্ন হোম এট ওয়ান্স"। কলে  আটকানো ইঁদুরের মতো এখন পাবলিকের অবস্থা। টাকা রাখা যাবেনা ব্যাংকেও, আবার চিটফান্ডে রাখলেও পুরোটাই চিট্ । তাহলে এখন ,-- " শ্যাম রাখি,না কূল রাখি অবস্থা।" তাহলে নতুন বর্ষে, কিভাবে রইবো হর্ষে?
              নতুন জীবনতো দূরস্থান, পুরোনো জেবনেই জেরবার। 'জেবন' একেবারে আইঢাই। গ্যাস দিয়ে শুরু আর গ্যাস দিয়েই শেষ। প্রথমে সাবসিডি ছাড়বার অনুরোধ, পরে একেবারে রোধ। এখনতো ছুঁচো গেলার অবস্থা। একবার অভ্যাস করিয়ে সাধের গিন্নিকে ঘুঁটে কয়লা  ঘাটতে বললে একেবারে ময়লা করে দেবে। কী দরকার, খুঁচিয়ে ঘা করে একজিমা বানানোর। চলুক, হনুমান কৃত স্বর্ণলঙ্কা দহন।
            হাতি সদর দরজা পার হয়ে গেলেও রয়ে গেছে পুচ্ছখানা। রোগযন্ত্রনার ভোগান্তির শেষ কই? কখনো উপসর্গ যুক্ত, কখনই উপসর্গহীন , নাকমুখ ঢেকে মাস্কের কারণে দমবন্ধ হওয়ার জ্বালা, না পড়লে কান ধরে উঠবস ---- " বল মা তাঁরা দাঁড়াই কোথা?" শেষে না হাঁপানী ধরে যায়! ভ্যাকসিন পর্ব মিটেও যেন মিটছে না। আবার নাকী লাগবে "বুষ্টার ডোজ "! ভীষ্মের শরসজ্জা করে দিয়ে তবে মিলবে ছাড়! হায়রে অদৃষ্ট !
             নববর্ষে নতুন জীবনতো সোনার পাথর বাটি। চপ,সিঙ্গারা,তেলেভাজা আর চা বেচে বেচেতো হাড়মাস কালি হয়ে গেল যুবক যুবতীদের। বেকার উচ্চ ডিগ্রিধারীরা এখন ডোমের পদেও চাকরি করতে রাজী। কিন্তু চাকরি পাওয়া আজকাল ঈশ্বরপ্রাপ্তির থেকেও দুর্লভ। নতুন বর্ষে কী মিলবে এর কোন সুলুক সন্ধান?
             পেট্রোল, ডিজেল এতো দুর্মূল্য হয়ে পড়েছে, এখন নতুন গাড়ি কেনা দূরস্থান, নিজের গাড়ি, বাইক বেচতে পারলে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে  এরপর আবার আসতে চলেছে,পালকি, গরুর গাড়ি বা ফিটন গাড়ির জমানা। সেদিন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড দিয়ে লণ্ঠন ঝোলানো গরুর গাড়ি নিয়ে বরযাত্রীসহ বরের বিয়ে করতে যাওয়া করে দিয়েছে এই ঘটনার সূত্রপাত। গাড়ি
বাইকের অবস্থান হবে জাদুঘরে।
             নতুন বর্ষে নতুন জীবন মিলুক আর না মিলুক, ফিরুক আবার পড়াশুনার পরিবেশ। পরীক্ষা ছাড়া পাশ, মানে গোপলাও পাশ,আর ন্যাপলাও পাশ, একেবারে নাপসন্দ। তা না হলে ভাঙা কোমর নিয়ে এই পড়ুয়ারা আর কতদূর এগোবে?
              আর একটি বিষয়ে আলোকপাত না করলে হবে সত্যের অপলাপ। নতুন বর্ষে দার পরিগ্রহ করে নতুন জীবনে প্রবেশ যেন সুখকর মধুময় হয় । বিবাহ অনুষ্ঠানে মুখাবরনী পড়ে, গুটিকতক নিমন্ত্রিত লোকজন নিয়ে, নিয়ম মাফিক আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন বর্ষ হোক,-- আলোকময়, বর্ণোজ্জ্বল এবং হীরকদ্যুতিময়।



কবিতা 

চিঠি
শ্রাবণী সেন

একটা নতুন ঝকঝকে 
রাইটিং প্যাডের 
হাল্কা আকাশি পাতা 
খুলে বসে আছি, জানো!
তোমায় চিঠি লিখব যে...
সম্বোধনে লিখব - আমার বসন্ত এসো
তুমি বলবে তোমার বর্ষা মাসে জন্ম,
 তুমি মেঘমল্লার! 
কিন্তু তুমি যে দখিনা বাতাসের মত উচ্ছল
বসন্তের রুদ্রপলাশের মত রক্তরঙিন 
পরজবসন্ত রাগ যেন তুমি,
 মর্মে আবীরগুলাল ছড়িয়েছ!
আরো লিখব
তুমি কবে আসবে বল তো!
অনেকদিন দেখিনি। 
শেষ বিকেলের নরম আলোয়
 সেই নদীর জল 
ছোঁয়া হলনা যে!
জীবন খুব স্বল্প পরিসর 
তাই জীবন তোমার মত বর্ণময়!
এটুকু লিখেই চিঠি শেষ করে 
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকব।
না পাঠানো চিঠি থেকে যাবে 
আকাশি রঙ কাগজে, 
নাকি  আকাশে!
আবারও নতুন করে চিঠি লিখব  
নতুন বছরে
কোনো নতুন দিনে।


এইসব ছিঁড়ে দিয়ে
প্রনব কুমার কুন্ডু (রুদ্র)


নতুন কদরে পুরাতন আঘাতের চিহ্ন লোল ফ্যালে
নামমাত্র ভিত্তিতে সুতলঘাটে সৈন্য পাহারা।
বন্ধধোঁয়ায় ভয়াবহ ধুমধামে নজরের পীড়া
নিখুঁত বুনিপ খেলা, মরশুম ঢাকে রোদস্নান।

উভচর ছাপ ডোরাকাটা দেহ
চোটমজুদ দরদর রাত, সব জানে শালা চাঁদ।
চামড়ার উর্দি রেখে যৌবনকলে ফুল দেব নারী।

ঘুম ছুটছে বিগত বছরের ম্যাও ম্যাও ভাতায়
বিশ্বাসের কাঁচাপাতায় অসীম ফল্গুধারা, পাগলপারা।
নলবাহিত ঘোড়া, তীক্ষ্ণ ঢাল বিছানো অঙ্ক
মাইনাস সম্পর্ক, ভাইরাস বাড়ির চর্বিভরা জানা।

অভ্যাসে তেতো আগলায় জিভে
ধু ধু বুদ্ধি, বেকার জীবনে শত বেগরবাই।
ব্যাঙভাষা সাপ বোঝে আর বোঝে শীতকালের গল্প
স্বপ্নজলা ছাদ, এই যে বিষাদ অক্ষম দুই হাত
এসো, এসো বিপ্লব, নতুন বর্ষে পট্টি ঢাক্কান খুলে




   রাঙা সূর্য
রীনা মজুমদার

বর্ষ আসে বর্ষ যায়
অমোঘ তার যাওয়া আসা
বছরের প্রথম রাঙা আলোয়
স্বপ্ন আঁকি, তোমার সাক্ষাতের পর
অন্তরের শব্দগুলো সাজাই কবিতায়-
শরীরের প্রতিটি শেকড়ে মনুষ্যত্বের
 কথা লিখি বারবার
খুলে দিই মননের অব্যক্ত দুয়ার

তবুও তো বছরভর বইতেই হয়
রক্তপাত, বেওয়ারিশ লাশ, বিষাক্ত গ্যাস
 চোখের নোনাস্বাদ, ক্ষত অন্তর!

তুমি তো বলতেই পার,
"তবে কী ভালো কিছুই দেইনি আমি?"
দিয়েছ সুনীল আকাশ, মুক্ত বাতাস
উজাড় করা প্রকৃতি, মানুষে মানুষে 
প্রেম, বন্ধন, মহার্ঘ্য হাসি...

গাছেরাও শীতের কষাঘাতে
শাশ্বত ছন্দে ধূসর পাতা ঝরায়
কিশলয়ই তো বাঁচার নির্মল স্বপ্ন জাগায়!

বর্ষশেষে পশ্চিম আকাশে
ঘিরে আছে নীল বলয়
তবে কী সব বিদ্বেষ বিষ ঢেলে
সূর্য গেল আজ অস্তাচলে!
নতুন ভোরে হাতে হাত, মানবতার বন্ধনে
 সে সেজে উঠবে রাঙা হয়ে?

 লিখে রাখি, আমাদের সেরা প্রাপ্তি
         মননের উর্বরতায়
  'নুতন সূর্য আলো দাও..আলো দাও।'


নব আশা
মহাজিস মণ্ডল

নতুন বর্ষে নতুন জীবন
ভরুক আলোর গানে,
বিশ্ব ভুবন হাসুক অপার 
অবাধ খুশির বানে।
পাতায় পাতায় স্বপ্ন সাজুক
সাজুক নব আশা,
হৃদয় মাঝে শপথ বাজুক
বাজুক যুগের ভাষা।


অঙ্গীকার
অলকানন্দা দে

বাঁধো বাঁধো মন সরল সুখে
লক্ষ্মীমন্ত বেলা,
আশা ভরসার প্রদক্ষিণে 
পুবাকাশ জুড়ে খেলা!

অভিজ্ঞ সেই সূর্য ওঠে
নতুনে সাজে দিন,
স্বতন্ত্র হবে প্রতিটি প্রহর
দুঃখরা হবে ক্ষীণ।

পারিপার্শ্বিকে সুখের শস্য
ছড়ানোছেটানো হাসি,
লুটানো আলোয় উদ্যম নিয়ে
বাঁচতে ভালোবাসি!

সংকল্পের উঁচু ঢিবিতে 
বোধের চারাগাছ,
পৃথিবীকে দেব সবুজ শান্তি
অনিবার্য কাজ।

মহানিমগাছ, নিরিবিলি ছায়া
অরণ্যকে ডেকে,
বলব আমি ভক্ত তোমার
তোমারই আদর মেখে!

বিশ্বকে দেব নতুন বিশ্ব
সহজিয়া ভাষা শিখে,
হরিৎ সাজাতে ব্যস্ত বেলা
মঙ্গল দিকে দিকে!

এমনই হোক না নতুন জীবন
সৃজনমত্ত প্রাণ,
যোজনদীর্ঘ দূরান্ত পথে
বিছানো অভিমান!

রেনেসাঁ আসুক দৃপ্ত লয়ে
সবুজ মাঝারে ঘর,
অলোকসামান্য মহাপৃথিবীর
ছোঁয়া যেন ঈশ্বর!


জীবন ভোরে
রূপক রায়

সময় বাঁচে নিজের মতো
              ঘুরে চলি অবিরত
ঘড়ির কাঁটাকে আটকে দিয়ে
পৃথিবীর সব নিয়ম রচনা করি
নতুন করে, বাঁচতে শিখি আবার
আকাশ পাখি উড়ে চলে 
                 জীবনের গান গেয়ে
সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকি
    আদি হতে অন্ত্য দিক-দিগন্তে
কত প্রহেলিকা কত অবিশ্বাস
কত অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে নিরন্তর
জীবনের গান শুধু গেয়ে যায় ওরা বারংবার।


নতুনের আহ্বান  
  বুলবুল দে

নতুন বছর নতুন সাজে চাই গো তোমায় পেতে,
নতুন সুরে নতুন গানে উঠুক সবাই মেতে।
দুঃখ বিষাদ যা আছে সব যাক চলে যাক দুরে,
সুখের হাওয়া প্রেমের গাথা আসুক ঘুরে ফিরে।
মান অভিমান ভুলে যাওয়ার শক্তি যেন পাই, 
নতুন হাসি নতুন খুশি রাশি রাশি চাই। 
নাই বা হল নতুন জামা দুঃখ তাতে নাই, 
ক্ষুধার জ্বালা ঘুচুক সবার কামনা করি সবাই। 
শত্রু যেন কেউ না থাকে মিত্র সবাই হয়,
নতুন করে কাছে টেনে মনের কথা কয়।
প্রবীণ প্রাণে পায়না আঘাত হয়না ব্যাথার ক্ষত,
ওরাও যেন বাঁচতে পারে ওদের নিজের মত।
নবীন প্রাণে আছে আঁকা যত স্বপ্ন আশা,
নতুন আলোয় সার্থক হোক পাক সে পরিভাষা। 
ছোট্ট কুঁড়ি প্রাণগুলো সব খিলখিলিয়ে হেসে,
ফুলের মত উঠুক ফুটে নতুন হাওয়ায় ভেসে।
ভয়ানক ঐ কালো মেঘ যা ছাইছে নীল আকাশ, 
নতুন কোনও যাদু মন্ত্রে হয় যেন তা নিকাশ। 
যা কিছু সব অশুভ আছে মুখ থুবড়ে পড়ুক ,
নতুন বছর নতুন করে শুভময় হয়ে উঠুক।
নতুন আকাশ নতুন বাতাস বুক ভরা প্রশ্বাস, 
নতুন করে নির্মল হোক এই টুকুই যে আশ


বিবর্তন
বিজয় বর্মন

রং বদলের খেলায় আমিও সামিল,
দূরে দাঁড়িয়ে তুমি,
বোবা মিছিলে হাঁটো,
আমিতো জলরং চেয়েছিলাম,
জোছনা রঙে ডুবে যেতে যেতে,
তোমাকে চাঁদ ভেবে নিতাম।

সব রং শেষ,
শুধু সাদা কালো, আগুন রং দেখে,
একদিন তোমার আঁচলে সূর্য হবে আঁকা,
যেখানে সংলাপ থেমে যাবে,
সবুজ নীলের আলিঙ্গনে,
বদলে হবে নতুন সমীকরণ।

আয়না তুমি মুখ রেখে দিও দর্পণে,
ভেঙে যাচ্ছে সময় নিজের মতো,
চলো আপন আপনে দেখি,
তুমিও হাঁটো আমিও হাঁটি,
পাতায় পাতায় লেখা হয়ে যাক,
সময়ের সাথে, বিবর্তনের গান।


পারিনি
সুদীপ দাস

আমি পারিনি,
মেঘ হয়ে ভেসে গিয়েছি এপার হতে ওপার
কিন্তু, আমি আকাশ হতে পারিনি।
আমি ছড়িয়েছি আমার অহংকার
লুকায়েছি হাজারো কলংক,
কিন্তু, আমি পূর্নিমার চাঁদ হতে পারিনি।
আমি সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়েছি
জন্জাল পাঁকে  আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে
কিন্তু, আমি খরস্রোতা নদী হতে পারিনি,
আমি আনন্দে মেতে উঠেছি বার বার
আমি শুনতে পাইনি কারও বিকার,
যে জন, আমারে খুঁজেছিল আমাতে,
তার লাগি আমি, আমার মতো হতে পারিনি।
আমি ধূলিকণা ভেবে তারে, উড়ায়েছি ফুৎকারে
কিন্তু, আমি মরুভূমির খোঁজ রাখিনি।
আমি ভেঙেছি হৃদয়, গড়ে মিথ্যার অট্টালিকা
কিন্তু, ভালবাসায় গড়া ছোট্ট কুটির হতে পারিনি।
আমি বিবেকেরে করেছি ধ্বংস কত,
আত্মমর্যাদারে দিয়ে বলিদান, করেছি মস্তক নত,
কিন্তু, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় হতে পারিনি।
আমি আকন্ঠ বিষ পান করেছি, জীবন পারাবারে
কিন্তু জীবন দরিয়া খেয়া ঘাটের তরণী হতে পারিনি।
আমি পারিনি।


শুভ নববর্ষ
রীতা মোদক

তুষার শৃঙ্গে সূর্য্যেরশ্মির প্রথম  স্পর্শ
ধূসর জীবনে রঙিন  স্বপ্ন দেখায় ...

একটা আমন্ত্রিত   বইমেলার বিকেল
নবীন প্রবীনের মিলনে
কবিতার অক্ষরগুলি ছন্দ খুঁজে পায় ।

অন্ধ বাগানে  প্রজাপতির পাখা ভাঙা ব্যর্থ  জীবন
হাড়ি বাঁধে খেঁজুর রসের আশায় ...

এক সময়   হিমেল সকাল আসে
প্রাচীণ  স্মৃতি  ডুবে যায় খেঁজুর  রসের হাঁড়িতে

পুরনো ব্যাথা ভুলিয়ে দিয়ে
নতুন করে বাঁচাতে শেখায়   জীবন
হিমেল বাতাসে এসে  কানে কানে বলে ----
"শুভ নববর্ষ ,
ইংরেজী বাংলায় মিলে মিশে
ভালো থেকো সবাই । "


নতুন বর্ষের নব আশায়
সৌমেন দেবনাথ 

নতুন বছর নতুন আশায়
ভাসবো স্বপ্ন ভেলায়,
ভুলে যাবো হানাহানি
মাতবো রঙের মেলায়।

নতুন বছর বাঁচার মানে
খুঁজবো নতুন করে,
নতুন সাজে নতুন ভাবে
বাঁচবো চরাচরে।

হৃদয় থেকে হিংসা উড়ুক
জাগুক প্রাণে জোয়ার,
ভরুক হৃদয় ভালোবাসায়
খুলুক বদ্ধ দুয়ার।

নবরূপে সাজুক জগৎ
থাকবে না কেউ মন্দে,
বেদনার রং মুছে যাবে
বাঁচবো নব ছন্দে।

স্বপ্নিল সৃষ্টি ঘটুক ভবে
কাটুক নিকষ কালো,
নতুন সূর্য নতুন ভোরে
ঢালুক নতুন আলো।


নাম না জানা পাখি
       সারণ ভাদুড়ী

দেখে আসা সেই পাখি,
 নাম জানিনি আজও,
 রং টা কালো ,চোখটা লাল 
আসা-যাওয়ার নেই কোন কাল।
 বসে এসে গাছের ডালে 
গান করে সে আপন তালে,
 ধরতে গেলেই দেয় সে উড়ান ,
মনটা হয়ে যায় বিষাদ।
 এখন শুধু মনের খাতায় তার ই ছবি আঁকি,
 অনেক খুঁজেও আর পাইনি নাম না জানা পাখি।।


ইতি
দেবর্ষি সরকার

পুরানো সব স্মৃতি করে ফেলো ইতি।
পুরানো সব কষ্ট করে ফেলো নষ্ট,
পুরানো সব বেদনা আর মনে রেখো না।
পুরানোর হয়েছে মরন,
নতুন করে করো বরণ।
সবকিছু মুছে ফেলো মন থেকে,
তাকাও ওই নবসূর্যের দিকে।
সূর্যটা হাসে,
তোমায় ভালোবাসে।
তাই তোমাকে আমি জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা।



ছবি 

অদ্রিজা বোস 




তানভি দাম


মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৮