দ্বিতীয় আমি
শুভ্র
ঘুমনোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। অবচেতন মন থেকে খুব স্ট্রং একটা সিগনাল আসছে। আজ দুপুরে ঘুমানো যাবে না। বড়সড় একটা ক্ষতি হতে পারে। কি ক্ষতি ক্যানো ক্ষতি জানি না। জানলা গলে রোদ আসছে। পায়ে রোদ্দুর। শীতের শেষ বিকেলে বেশ ভালো লাগছে উষ্ণতাটুকু। ঘুম আসছে। যেকোন মুহূর্তে গভীর ঘুমে ডুবে যেতে পারি যদিও আমি চিন্তিত। কিন্তু ক্যানো!
যখন ঘুম ভাঙলো ততোক্ষণে সন্ধে হয়ে গ্যাছে। ঘরে অন্ধকার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি দুপুরের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করছি। গত বুধবার নেত্রকোনা থেকে একটা কাজের মেয়ে নিয়ে আসেন বাড়িওয়ালা। আমার প্রতি ভদ্রলোকের অনেক প্রেম। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। তার দুটি কন্যাসন্তান আছে। আচ্ছা মেয়েটার কথায় আসা যাক। মেয়েটির নাম কী! মনে পড়ছে না। প্রয়োজনও নেই।
রান্নাঘরে ঢুকেই দেখি মেয়েটি কাঁদছে। কান্নার তোড়ে একেকবার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে। আমি ডাক দিলাম নেত্রবতী। মনে পড়লো নেত্রকোনা থেকে আসার কারণে ওর নাম রেখেছিলাম নেত্রবতী। তুমি কাঁদছো ক্যানো? মেয়েটি আমায় দেখে কোণার দিকটায় সেঁধিয়ে গ্যালো। অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলাম, খুব ব্যথা। আমি আর এগোলাম না। চলে এলাম।
সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। 'এক কাপ চা দাও' - চেঁচিয়ে বোললাম। মেয়েটির চিন্তা আবার মাথার মধ্যে আসলো। যদিও ডাক্তার বেশি চিন্তাভাবনা করতে নিষেধ কোরেছেন। তাদের মতে আমি নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছি। যদিও তারা তা বলেননি। বলেছেন ডুয়েল পার্সোনালিটি। আমার মধ্যে দ্বিতীয় আমি। যা হোক, মেয়েটির সাথে আমি কী করেছি! তার নাম কী!
'এই নেন চা', একটা সরু হাত বেশ কিছু দাগ। লালচে রক্ত জমে আছে। মেয়েটির দিক তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম। মুখ অসম্ভব ফুলে আছে। চোখের নিচে কালচে হয়ে আছে। মেয়েটি সহজভাবে বললো চাচা, আমি বাড়ি যাবো।
বেশ অনেকগুলোবছর পার হয়ে গ্যাছে। নেত্রবতী না কিজানি নাম মেয়েটির। ভুলে গ্যাছি। আজ আবার বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক একটা মেয়ে নিয়ে এসেছেন। যদিও খুবি কম বয়স। তবুও আমার খুব খুশী খুশী লাগছে। আজকাল আনন্দটা লুকিয়ে রাখতে পারি না।
বাড়িওয়াল হাত কচলে বললো মিয়াভাই, গতবারের টাকাটা দেওয়া হয় নাই। আমি হো হো করে হেসে উঠি। বয়স হয়ে গ্যাছে বুঝলেন।
আচ্ছা মেয়েটি কোথাকার?
নেত্রকোনা। মেয়েটি উত্তর দেয়। খুব চেনা গলা।
No comments:
Post a Comment