Thursday, July 20, 2017


সুপ্রীতি বর্মনের দু'টি কবিতা












অবৈধ প্রনয়




উষ্ণতার আলিঙ্গন চাদর তুমি সুখের প্রচ্ছদে অসুখের মলমল গালিচা।
অজস্র নবাব তাবেদারীর দৌরাত্ম্যে কখন দিয়েছে মেঝের নগ্নতায়,
কখন শৌখিন রাজবেশে আলোয়ান।
তুমি নির্বাক নির্লিপ্ত মৌনতার চুন জিহ্বাতে লেপে,
দই জমতে থেকে যখন ঘনীভূত রাতে,
 তখন তার আস্বাদন সহনের বাইরে।।
ঐ দূরে রাজকীয় লাম্পট্যে যখন ঝর্নার অথৈ জলে নগ্ন অর্ধখোলা বস্ত্রে,
নর নারী মিলে মিশে একত্রে ভোগ বিলাসিতায় মত্ত।
তখন চাপা গুমোট দীর্ঘশ্বাস অব্যক্ত হৃদয়ে চেপে,
ঘামের বাস্পীভবন তোমার অশ্রুজলের প্রতিচ্ছবি।
হায় নারী তুই এখনো পুরুষের ভোগ্য পন্যসামগ্রী হলি?

লেগেছে শীতের পরশ আমলকির ডালে ডালে।
পায়ের নুপুরের গুটিরন্ধ্রের মতন ঘুঙুরে,
উচ্ছাসে তোলপাড় পর্নমোচী পাতার আনমনা খসখস,
আর শীতের সূঁচ বিদ্ধ যন্ত্রনা থেকে স্বস্তি ঔষধ উষ্ণ আলিঙ্গন।
সেখানে গাঢ় অবগাহনে চাদরের আড়াল ক্ষুদ্র সুখে।
আত্মগোপন কপোত কপোতী চঞ্চু খুঁটে নিরিবিলি,
ঠিক ঐ পরিত্যক্ত বটবৃক্ষের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে।।
এদিকে কখন মনের অগোচরে বুকের যাঁতাকলে ধীরগতিতে,
গম যাচ্ছে পিষে আর পাকা গড়ন চন্দ্রমায় লাগছে একটু করে গ্রহন।
সবটুকু গোগ্রাসে গিলে খায় ঢেঁকুর বাকি এখনো।
ওদিকে তরতর করে টহলদারী ক্ষুধার্ত নেকড়ে,
কামাতুর দৃশ্যপট দেখবার ক্ষিধে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।
ওদিকে ভয় পেয়ে সন্তর্পনে সকলের আশ্রয়,
আমার চাদরের তলায়।।
সাবধানী স্বত্তা ভদ্র মুখোশের আড়ালে থেকে,
খাওয়ার লেশটুকু পরিষ্কার পাত,
পার্কের ঐ নীরব দর্শক গাছের তলায়।
প্রেমিকের হাজার প্রতিশ্রুতি প্রেয়সীর চুলের বেনী পাকিয়ে জট।
পর্নমোচী পাতার শেষ ঠাঁই সুখ নিতে চাইলে উড়ে কোন ঝোপঝাড়ে,
আর না হলে গাছকে ভালোবেসে গাছের গুঁড়ি আঁকড়ে ধরে।।
আমি শৌখিন চাদর আড়ালে ঢেকে রাখি গুপ্ত প্রনয় কথা,
স্বামী বোধে নারী প্রেমিকের ছদ্মনামে পুরুষের ভোগ্যবস্তু হলি আবার?

আমি চাদর আড়ালের ছায়াশরীর আমার নিত্য সঙ্গী।
তার নীচের পাতালে সকল পরজীবীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সহাবস্থান,
লার্ভারসের চোষক নলে উদরপুর্তি পরম আশ্বাসে।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আশকারায় রজনী মধুচন্দ্রিমা।
তবুও সকল দৃশ্যপট উপলব্ধি মনের গভীরে থেকে যায়।
সুখের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এখানে একান্ত চোরাগলিপথ।
অবৈধ প্রনয়।




খোলা হাওয়া।



কালবৈশাখীর ঝঞ্ঝা চুলের মুঠি আছড়ে ধরে,
     বিদ্যুতের অশনি সংকেত কামড়ে বক্ষপিঞ্জর,
          গ্রামছাড়া রাঙা মাটির পথ ধরে কল্পরূপ মন,
             স্বকীয়তা খুঁজে খুঁজে হায়রান দ্বিধা সুখ বিভ্রম,
                  বস্ত্র বেবাগী ভুলুন্ঠিত অধিকারের আঁচল,
                      সবটুকু মুষ্ঠিগত করতে স্বপ্ন অসহায়,
                           নির্লিপ্ত রাতজাগা পাখি।।
খোলা জানালা বোবামুখ তারজালি,
   কোটরে হাজারো উপাখ্যান কিন্তু শব্দহীন বাক্য,
       অন্তরে কোনঠাসা মনের অন্তরালে দমচাপা ভস্ম,
            বোধগম্যের অতীত হাত বাড়িয়ে অযাচিত ভিক্ষুক,
                   শোন ওগো গৃহবাসী একটু তাকাও এধারে,
   ওরা থাকে ওধারে গুছিয়ে পরিপাটি জগৎ,
         প্রদর্শনীর ভিড়ে দমচাপা কোনঠাসা বোবা অস্তিত্ব,
             মানানোর মতন যেন গড্ডালিকা প্রবাহ,
                    একরাশ চিৎকার মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ,
                          গুটি গুটি পায়ে আসে ঘেঁটে যাবার ভয়ে,
                                সময়ের অজুহাতে সাত তাড়াতাড়ি পালায়।
নেই কোন সময় শুধু ছুটে যায় আগামী প্রজন্মে,
        শোনো ওগো গৃহবাসী একটু তাকাও এধারে,
             নির্লিপ্ত চোখের চাহনি দ্বিধা সুখ বিভ্রম সঙ্গপানে,
অশরীরী স্বচ্ছন্দ্য কেবল মুষ্টিমেয় পাঁচ একরে,
     কচকচানি জটলা বস্তাপচা পরশ্রীকাতরে,
        চারদেওয়ালের ও কান আছে,
              তাই ফিসফিস কানাকানি অধীর আগ্রহে,
                   পরপরতা চর্চায় কোনঠাসা,
                         দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় খোলা জানলা।
দ্বিতীয় পর্ব:

এইভাবে গভীর অলসতার পরজীবি শ্যাওলা,
      জঠরে প্যেঁচিয়ে স্বপ্ন ভ্রুনের অকালমৃত্যু,
         খোলা জানালা অসহায় চুপচাপ,
             কোটরে হারায় হাজারো উপাখ্যান।।
হঠাৎ রাস্তার মোড়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে লাল রাস্তায়,
     ঝপাৎ করে তড়িঘড়ি ব্যাস্ততার পাল তুলে,
            ভাঙা সাইকেল থেকে নেমে এক ছুটে এসে,
                    জাপটে ধরে পরম সোহাগের আলিঙ্গনে,
                         তোমার সেই খোলা হাওয়া,
                              সাদা পালক গুচ্ছের সমাহার,
                                   মুক্তমনা বিহঙ্গ ঝপাৎ করে পুনরায় সম্বিত,
                                         আমার জঠরে বহু কষ্টে লালিত স্বপ্নভ্রুন।
একি পরম নিঃশ্বাস কি অবাধ মুক্তগতি,
    তোমার ভয় জড়ানো সন্দিহান অণ্বেষন,
       শ্বাসপ্রশ্বাসের দুস্তর উঠানামার তীব্র ভাবাবেগ,
           এই বুঝি খোলা জানালা বন্ধ হয়ে যায়,
               গৃহবাসীর নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপে,
অতো সোজা নাকি তোমাকে ছিনিয়ে নেবে,
   বক্ষপিঞ্জর করে দেবে খালি আর করবে দমবন্ধ,
         ও আমার খোলা পাখি খোলা জানলা,
               এসো উড়ে ঝপাৎ করে বুকে ফিরিয়ে দাও,
                    সেই সন্ধ্যামনির তমনিশা প্রেম,
                           আমার খোলা হাওয়া।।


No comments:

Post a Comment