Wednesday, July 12, 2017

























সুপ্রীতি বর্মনের গুচ্ছ কবিতা



প্রথম প্রেম


যেদিন প্রথম মুক্ত বিহঙ্গের নীড়ের উষ্ণতা
          পেয়েছি তোমার কোলে শুয়ে।
          নিভৃত কুঞ্জউপবনে বৃক্ষের ছায়ায়
           এঁটো মৌখিক প্রনয়ালাপে নায়ক-নায়িকা
          সিনেমাটোগ্রাফি অঁচ্ছুত অস্তিত্ব পার্কের বেঞ্চে ঘেঁষাঘেষি বসে।

যেদিন প্রথম সানগ্লাসের ক্লাসিক লুকে সাদা কালো ধোঁয়াশা
           দীর্ঘশ্বাস জমে থাকা মনের কোণে গুমোট অস্বস্তি মেঘ
            ঘ্যানর-ঘ্যানর অভিযোগের শক্ত প্যাঁচালো সাপ বেকার তুই
             বলে দমবন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।
তখন হঠাৎ আমার জগত ক্যানভেরার রঙীন ক্যানভাস।
খসে পড়া পর্নমোচী হৃদয়ে বসন্তের নবাঙ্কুর পদচারনা নতুন যৌবন।

যেদিন প্রশস্তি সূচক অকথ্য অনুরননে বেজেছিল সানাই আগমনী
             কোন অচেনা আগন্তুক তার ছোঁয়ায় নতুন স্বর্গ।
               পাতালে লুকিয়ে থাকা ভ্যাপসা কটূক্তি কটকট শাসানি
                পরিত্যক্ত অবগাহন অমাবস্যা চন্দ্রমার ভালোবাসার স্পর্শহীন।
সেদিন শক্ত হাত দিয়ে টেনে বাহুডোরের আলিঙ্গনে করেছিলে আবদ্ধ।
পেয়েছিলাম স্বর্গীয় সুখ, এক নিশ্চিত আশ্রয়।

যেদিন সিনেমা হলে বুকিং পেছনের দেওয়াল ঘেঁষে পাশাপাশি সিটে
                  একে অপরে স্বত্তায় নিমগ্ন উষ্ণ অধরে নৈশিল মাদকতা।
                    সিনেমার চরিত্র হয়ে উঠা বিনা রিহার্সালে।
                    চমকের মূর্চ্ছনা আনা নিজের উচাটন মনে
                    সন্দিহান মন দর্শক ছাড়া চায় নিরিবিলি প্রেক্ষাপট।
                   চায় না কোন প্রশংসা বা হাততালি।
 শুধু চায় একে অপরের সান্নিধ্য মধুচন্দ্রিমা।
কারন সব চরিত্র এখানে কাল্পনিক।

যেদিন প্রথম হাতে হাত রেখে ঝিল বা কোন নির্জন লেকের ধারে
               কাঁধে মাথা রেখে সকল ভার অবসাদ দিলাম ঢেলে।
                শক্ত করে হাত ধরে করলাম প্রতিশ্রুতি।
               কোনদিন যেন এই হাত না ছেড়ে যায় হয় চোখের জলে প্রাক্তন।
আর দিগন্তে গোধূলির লাল সিঁদুর ধেবড়ে অস্তগামী রবি।
নিশ্চুপে ডুব দিল সমুদ্রের হৃদয় পাথারে।
তখন আমাদের এঁটো মৌখিক প্রনয়ালাপ তবুও দুরত্ব একরাশ সমুদ্র।

যখন কারোর পরোয়া শিকেয় তুলে সাহসী চির উন্নত শির যৌবন
                সাইকেলের সামনে সিটে বুকে মাথা পেতে শুয়ে।
                 ছুটে যাওয়া অনাবিল আনন্দ স্রোতে একসময়ের গুটিয়ে
                 থাকা শুঁয়োপোকা ঘরের কোনে দমবন্ধ শ্বাস ধামাচাপা আগুন।
আজ হয়েছে প্রজাপতি সাতটি রামধনুর রঙে এদিক ওদিক চ্ছন্নছাড়া।
জানে না সে ঘর কাকে বলে কারন তার এখন উদ্দেশ্যহীন যাত্রা।

যখন তুমি হাঁটু গেড়ে বসে সম্মুখ দ্বারে হাতে হৃদয় রাঙানো গোলাপ
                 গলায় উত্তরীয় নায়কের style এ করেছিলে propose.
                 যেন ভাবতে লেগেছিলাম আমি হলাম princess.
                  আর তুমি হলে স্বপ্নে দেখা রাজকুমার।
    আমার শৈশবের ফেলে আসা পর্নমোচী fairy tale
     আজ পেয়েছে তার মৌনতায় মুখর উদ্ভাবনী বসন্ত।

যেদিন প্রথম পেয়েছিলাম রৌদ্রদগ্ধ উষ্ণ কোমল ওষ্ঠের
               শীতঘুম কেড়ে উচ্ছাস উন্মীলিত শীতল তরঙ্গোচ্ছাস বসন্ত।
            .  অনবরত একগুঁয়ে সবটুকু শুষে নিতে চাও সুখের বিভ্রমে অসুখ।
               তবুও মৃগতৃষ্ণা অদৃশ্য দিগন্ত আপামর বালির বুকে।
                সন্দিহান অন্বেষণে আমার সহবাসের অশরীরী উন্মুক্ত ছায়ার
               সুযোগের অছিলায় অন্য শরীরে নিরলস অনতিক্রম্য প্রবেশ।
ভয়ে কুঁকড়ে থাকা যৌবনা কুমারীর অজন্তা ইলোরার স্থাপত্য কর্ম
           নগ্ন মৃত্তিকার অঙ্গে তিলোত্তমার খাঁজে খাঁজে কোন নিপুনা শিল্পী
           প্রানপ্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন দিবারাত্র কঠোর পরিশ্রমের গলদঘর্ম।
আদরে চাদর ভিজে মধুচন্দ্রিমা রাতের চুম্বন ধরিত্রীকে মৈথুনে ক্লান্ত
           সকল অবসাদ ঢেলে দিতে লেগেছো পরম সুখে চোরা গহ্বরে অন্তমিল।
ওদিকে সর্বস্বান্ত আমি দিতে থেকে ভয়ে ঢেঁকির পাড় ভাঙে প্রমাদ গোনে।
যদি আসে নিঃশব্দে আগামী নবাঙ্কুর এই গর্ভে অসাবধানী দ্বিচারিতা।
ধিক্কার হঠকারিতা হয়ে যাবে নষ্টা কলঙ্কভাগী একরাশ ভস্ম ছাই
আমার আশ্রয় শৈশব লালনের মুখে চুনকালি ছি ছি লোকমুখে।
গুজবে কোনঠাসা বহিষ্কার জুটে আছে বলে একরাশ ধিক্কার।
এসব অশনি সংকেতের আগাম ঝড় ছাইচাপা ধিকি ধিকি আগুন
অব্যক্ত চাপ বুকে আগলে আছে একান্ত প্রিয় সোহাগের আলিঙ্গনে অসহায়।


যেদিন প্রথম উন্মুখ নয়নে উন্মীলিত হৃদয় প্রাঙ্গনে আত্মসুধা অন্বেষণে
           হয়েছিলো শুভদৃষ্টি নয়নে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস একাকীত্ব অন্ধকার।
         প্রথম উজ্জ্বল আলোর প্রকাশ কিন্তু ঘরভর্তি জনসমাগমে নয়,
        পৌরহিত্যের পাগল একরাশ মন্ত্রউচ্চারনের শব্দের মিছিলে
        অন্ধ অস্তিত্বের মন প্রশান্তি লোক ভোলানো আনুষ্ঠানিক বাগাড়ম্বর নয়।
চৌরাস্তার মোড়ে কিংবা পার্কে গাছের ছায়ায় ঝড়া ফুলদলে অতিথি বাসর।
কিংবা সিনেমা দেখা স্থগিত নতুন কোন আগন্তুক কে পেয়ে একান্ত সান্নিধ্যে।
একে অপরের চোখে নির্লিপ্ত মগ্ন নিঃশ্চুপে ডুব অখিল সমুদ্রে মনকাড়া জোছনা।
পানকৌড়ি এলোপাথারি ঐকান্তিক প্রেয়সী ডুব দিয়ে মাথা গুঁজে গুঁজে
খুঁজতে থাকে তার প্রিয়র বুকে ছোট সংসার।
নির্লিপ্ত অপলক স্থির চাহনি শুভদৃষ্টি নিঃশব্দে একে অপরের যুগ্ম সন্ধিক্ষন।
সেই আমার প্রথম প্রেম।

যখন কৃষ্ণকায় জ্যাকেটে বাইকের দুর্দান্ত অশ্বগতি পেছনে সঙ্গী প্রনয়াসক্ত।
অজানা উদ্দেশ্যহীন যাত্রা মনে শুধু একটাই আশ্বাস এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?
নিত্য আসা যাওয়া সংসারী পথযাত্রীর মুখভার অস্বস্তির বিড় বিড়
দেখো কত অশ্লীল চালচলন চুম্বনের আঁশটে গন্ধ সাইকেলে বুকে মাথা পেতে লজ্জাও লাগে না বাবা বেহায়া।
তখন বুঝেছি পড়েছি প্রথম প্রেমে।

যখন আগন্তুকের গায়ে পড়ে ন্যাওটা স্বভাব ছেড়ে ছাড়ে না।
ওই ওই বলে ডাক চেনা জানা নেই তোমার নাম।
কিন্তু তুমি অবশ্যম্ভাবী দিনেরাতে অস্থির উন্মাদনা খচখচানি
করোটিতে একচেটিয়া মনের অধিকার শুধু চাই তোমায়।
পাগলের প্রলাপ কবে হবে তুমি শুধু আমার জেগে থাকা আঁখি স্বপ্ন তোমার।
উড়ে বসনাঞ্চলপ্রান্ত ছন্নছাড়া বেবাগ রথের দুর্বার গতি অক্লান্ত।
শুধু হন্যে হয়ে খুঁজে বেরায় পাগল ভিখারী একটু দেখবো একটু ছোঁয়া চাই তোমার শুধু ঐকান্তিক উন্মাদনার ব্যাধি।
তখন অফস্ক্রীনে missed call মুরলী মনোহর শ্যামের বাঁশি।
সজনী সজনী রাধিকা লো দেখ আবহু চাহিয়া তব গিরিধর শ্যাম।
উদগ্রীব বাহুডোরে আলিঙ্গনে গাঁটছোলায় এক উন্মুক্ত সংসার বিনা কোন দায় কোন পিছুটান।
শুধু আত্মলীন তোমার নিঃশ্বাস গোগ্রাসে গলাধঃকরন।
Missed call এ তোমার নিত্য আসা যাত্রী।
শুধু আমার ট্রেনের প্রতিক্ষায়।
অনাবিল বর্ষনে কথ্য ভাষার হেঁয়ালি প্রলাপ ঘন্টার পর ঘন্টা
আমার সকল জগত একদা তুমি হয়ে যাও
তাতেও পরে শকুনের শ্যেণ দৃষ্টি,
হে শকুন ভাগাড়ে যাও খাও না যেন আমার আঁখি।
দেখবো প্রিয়াকে দুচোখ ভরে বসে আছি দীর্ঘদিন প্রতীক্ষায়।
সকলের দৃষ্টিশূল বলতে লেগেছে লোকে
কিসের অতো কথা দুজনে
শেষ হয়েও থাকে অতৃপ্তির রেশ।
অবান্তর আলাপচারিতা।
সেই হল আমার প্রথম প্রেম।
আমার জেগে থাকা আঁখির স্বপ্ন।
শৈশবের বইয়ের পাতায় রূপকথা।



দ্ব্যর্থক


আমার পাড়ায় আজ চ্ছন্নছাড়া আকস্মিক,

কালবৈশাখীর তান্ডব লীলা        আদিগন্তে নীল সমুদ্রে।।

উড়িয়ে দিয়ে সবকিছু              ছিঁড়ে খুঁড়ে পেয়ে যেতে চায়,

তার সহাস্য বদনা                   বৃষ্টি নারী অপ্সরা।
           
           চুম্বনে ধরিত্রী হল শিহরিত কম্পিত কায়া।।


নতুন প্রতুষ্যের             আগমনী বর্ষার অভ্যুদয়ে

আর ঝিরিঝিরি তার             হৃদয়াঙ্গম প্রেমালাপ।

আঁখি সঞ্চালনে                     প্রতিক্ষীত উষ্ণতার,

ভ্যাপসা অস্বস্তির                     যাঁতাকলে ছটফটে

           এই বুঝি জীবন যায় যায়।।

সেখানে তব আগমনে               ভিজে গেল সকল অন্ধকার কোন,

                  অন্ধকারে নিমজ্জিত সহস্র বছর।

প্রতীক্ষার উষ্ণ আলিঙ্গনে             মরতে থেকে,

একরত্তি তোমাকে আরো কাছে পাবার বিষে,

দগ্ধ ম্রিয়মান ভগ্ন কুঞ্চিত হৃদয়,

তুমি এলে বৃষ্টি পায়ে পায়ে,

সোহাগের আলতার চুম্বনে             ভিজে যাওয়া কোমল দুটি চরন,

ক্ষনিকের তরে স্বস্তি                   বক্ষে সেই চরনের ঠাঁই,
         
          তোমার রঙে রাঙিয়ে দাও মোরে।।

হাওয়ার সাথে দোদুল্যমান                 আমার অখিল সমুদ্রে,

উথলিয়ে উঠে যেন প্রেম                বৃষ্টির পরতে ছলকে,

             না হয় আজ মনকাড়া জোছনায়।।

গঙ্গাপ্রাপ্তি হোক             নিমগ্ন দুটি হৃদয়,

আনন্দের ঈষৎ ক্রন্দনধ্বনি      খাট ভাঙ্গুক আজ তিমিরে,

নিঃশব্দ বাঁধভাঙা উচ্ছাসের           প্রেমের কলোরব,

তুমি আমাতে            আদরে চাদরে ভিজতে চাও,

মাখামাখি ওষ্ঠের              সিক্ত শিশিরকনা,

না না সেটা না বোধহয়          একটু আধটু ঘাম ঝরছে,

তোমার তপ্ত গাল বেয়ে              একেবারে তোমার হৃদয়ের সোপান,

           তোমার ওষ্ঠ কোমল পদ্মে,

যেই না তার গড়িয়ে পরা টুপ করে,

নিঃশব্দ চয়নে সকলের অলক্ষ্যে।

আর আমিও নিলাম তার সবটুকু রস নিগড়ে।।



নিষ্পাপ হাসি


ওই যে যখন আতঙ্কিত হৃদয় শঙ্কার প্রমাদ গুনতে থেকে,
চিল উড়তো শশ্মানের নির্জন প্রান্তরে।
আঁখির স্বপ্নের সুখ বিভ্রমে সমুদ্রের খুব কাছ দিয়ে,
দাউ দাউ অগ্নিতে বাস্পীভূত প্রত্যাশার সকল ছাই।
ঠিক তখনি হাত কাঁপতো থর-থর করে,
তুই সাইকেলে শক্ত করে ধরতিস মুষ্ঠি,
বলতিস লক্ষ্য রাখবি,  এই হাত কোনদিন ছেড়ে না যাস।
তখন মুখপানে চেয়ে তোর নিষ্পাপ হাসি আমার সন্তানসম।।


যখন ক্লান্ত অবশ শরীর ঘুমভাঙা বিনিদ্র রজনী,
অপ্সরা লাবন্য তনু আর আমার বক্ষায়িত সর্পিল কল্পতরু,
সোহাগের আটচালায় তোর পরম শান্তির ঘুম বুকে মাথা রেখে,
তখন তোকে দেখে ঠোঁটের কোনে ঈষৎ হাস্য।
ঠিক যেন কোন আগামী নবাঙ্কুরের নিঃশব্দ পদচারনা,
আমার বক্ষের অখিল সমুদ্রে।
ঠিক যেন আমার সন্তানসম।।


যখন একটু দাও তোমার তুমিকে,
সর্বস্ব বিলিয়ে উজাগরে শশধরা তিলোত্তমা পরম সোহাগের,
ওষ্ঠাগত চুম্বনে নিঃশেষ ভালোবাসার লালিমায়,
গোধূলির কুঁচবরন লাল শাড়ি পরে কন্যা,
তোর চোখের অব্যক্ত আদর মনকে নেয় কেড়ে।
বলে যেন এই তোমায় লাগছে বেশ ভালো।
কি নিষ্পাপ সেই প্রশংসার আর কাছে চাওয়ার আবদারের হাসি।
আমার আমিকে পাই যেন আরেকটিবার নতুন করে খুঁজে।
তৃষ্ণার্ত দীর্ঘ পিপাসিত বক্ষ করে যায় আর্দ্র।
ঠিক যেন আমার সন্তানসম।।




No comments:

Post a Comment