Wednesday, May 2, 2018




সম্পাদকের কথা

আবার একটা নতুন বছর। আবার কিছু স্বপ্ন। আবার কিছু স্বপ্নভঙ্গ। কিছু প্রত্যাশা। কিছু হতাশা।
কালচক্রের নিয়মেই বছর আসবে। বছর যাবে। 
যাওয়া-আসার এই গতিময়তায় আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে হয়তো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম। 
কিন্তু আমরা মানুষ। নিজেদের বুদ্ধিমান প্রাণী ভাবি। ভাবি এই পৃথিবীর প্রভু। 
আদৌ কি তাই আমরা? 
প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণে আজ উষ্ণায়ণের কবলে এই নীল গ্রহটিকে উপহার দিয়েছি। 
মনুষ্যত্বকে তুলে দিয়েছি অনৈতিকতার হাতে। 
বাড়ছে দূষণ- পরিবেশেও, মনেও। 
খরাক্লিষ্ট হচ্ছে পৃথিবী আর মনের খরা লুন্ঠন করছে সম্ভ্রম।
নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির সাথে মনের ভারসাম্যও।
তাই এই নতুন বছরটি ভীষণই তাৎপর্যপূর্ণ। 
নতুন বছরে যদি অঙ্গিকার না নিতে পারি সম্প্রীতির, প্রেমের, মঙ্গলের, পরিচ্ছন্নতার তবে আর একটি বছর এভাবেই যাবে।

সময়ে এগোব হয়তো। পিছোবো উত্তরণে।




বৈশাখের লেখক-লেখিকা-শিল্পীগণ- 

শ্যামলী সেনগুপ্ত, কুমকুম ঘোষ, আবদুস সালাম, ঝর্ণা মুখার্জী, শ্যামলেন্দ্র চক্রবর্তী, রৈবতী বন্দোপাধ্যায় ( চক্রবর্তী),
 গায়েত্রী দেবনাথ, শিউলি চক্রবর্তী, মন্দিরা ঘোষ, রবীন বসু, কণিকা দাস, মৌসুমী চৌধুরী, রাহুল, মৃণালিনী, শিবু মন্ডল, সংস্কৃতি ব্যানার্জী, সোমা বোস, দীপশিখা চক্রবর্তী, মমিদুল মিঞা, মজনু মিয়া, সপ্তক, রুবাইয়া জেসমিন জুঁই, রীনা মজুমদার, ফিরোজ আখতার, স্মৃতি রায়, স্বর্ণালী ঘোষ, যাজ্ঞসেনী, সুব্রত নন্দী, দেবশ্রী চক্রবর্তী, মহাজিস মন্ডল, সঞ্চিতা দাস, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, অনিমেষ সরকার, শুভদীপ পাপলু, সৈকত বণিক, পথিক সাহা, নিপা বিশ্বাস দাস, শর্মিষ্ঠা সরকার, বিবেক কবিরাজ, অতনু মৈত্র, নমিতা কুন্ডু, খুরশিদ আলম, সুপ্রীতি বর্মন, রুমা ঢ্যাং অধিকারী, মাম্পি রায়, রাহুল ঘোষ, জয়ন্তিকা মন্ডল, দেবব্রত সেন, শৌভিক কার্য্যী, সুপর্ণা চৌধুরী



প্রচ্ছদ ও ফটো- শৌভিক রায়




প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলঙ্করণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়





ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত







বৈশাখের শপথ
শপথের বৈশাখ

শিল্পী- পথিক সাহা








বৈশাখের শপথ
শপথের বৈশাখ

বিশেষ রচনা  -  শ্যামলী সেনগুপ্ত 


 ডেকেছি৷ সকল সুন্দর কে, সমূহ নির্মল কে, সমস্ত ভয়হীনতা কে ৷ অপেক্ষার প্রহর জুড়ে বসে আছে নির্ঘুম রাত ৷রাতের আকাশ দেখছে৷ কখনো আকাশে ডানা মেলেছে অমাবস্যার করাল কালো৷ কখনো কোটি কোটি জোনাকী৷ তারকা ভেবে ভুল করেছি যাদের৷তারকা---বিরাট বড়  বিরাট ব্যপ্তি তার! আমার চাওয়া তো একমুঠো৷ মুঠো মুঠো নয়৷একার জন্য নয়৷ একটি মুঠোয় যতটুকু ধরে  ততটুকুই  আমার যাচ্ঞা বিরাটের কাছে,সকলের হয়ে৷ ভেবেছিলাম --চাইছি তো নিঃস্বার্থ ভাবে৷ সেদিন ভুল ভাঙলো৷ একমুঠো খই নিয়ে ছাতে গেছিলাম--ছড়িয়ে দিতেই কয়েকটি কাক এলো৷ আহা! কৃষ্ণের জীব৷দিতে পারার আনন্দে খুশি খুশি বোধ হতেহতেই কালো কালো ডানার আড়ালে ছোট্ট ছাদটি  ঢেকে যেতে লাগলো৷এত কাক! এত চাওয়া৷ আমার একটি মুঠোর যাচ্ঞায় তো মিটবে না এদের আকাঙ্ক্ষা ৷ 
        অপেক্ষা বসে থাকে আকাশ জুড়ে৷খদ্যোত সম নক্ষত্ররাজি ৷ তাদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তিথি বদলে যায়--কালোয় ঢেকে যায় , যেন বিরাট এক বাদুড় ডানা মেলেদেয়৷ ভয়ে বুঁজে যায় চোখের পাতা৷বুঁজে যাওয়া চোখের পাতার নীচে জড়ো হয় সমস্ত আর সকল প্রকার ধর্ষণ , ধর্ষিত আর ধর্ষিতা ৷  আমি ধর্ষণ শব্দটির মূল অর্থ আর প্রচলিত অর্থ খুঁজতে থাকি৷খুঁজতে থাকি আর বুঝতে পারি একটি মুঠোর যাচনা নয়, সমূহের যাচ্ঞায় পূর্ণ হবে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ৷ ততক্ষণে আকাশে রঙ ধরেছে৷ রঙিন আকাশের নীচে অসংখ্য মুঠো , অজস্র মুঠো৷ সমূহ ৷ এটাই তো ভাবার ছিল , বোঝার ছিল৷ সমূহ না হলে ,সংগঠিত না হলে কী করে চাইবো সেই সুন্দর কে, সেই নির্মল কে--  নির্ভয়ে আর নিঃসক্ঙোচে ৷




বৈশাখের ধ্রুবতারা

"রবিমামা"র জন্মদিন ও গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ.....
কুমকুম ঘোষ



আপামর বাঙালীর জীবনে বৈশাখ মানেই নতুন বছরের সূচনা .. রুদ্র রবির তীব্র দহন এবং ২৫শে'র অনন্ত আহ্বান।  -"হে নূতন দেখা দিক আর বার--জন্মের প্রথম শুভক্ষণ"..
রবীন্দ্রজন্মোৎসব কে ঘিরে শুরু হয়ে যায় সংস্কৃতি ও সুচারু মননের একপক্ষ কাল ব্যাপী সুর ও ছন্দের বিপুল আয়োজন। "কবি পক্ষ" শব্দটি সম্ভবত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র উদ্ভাবন করেছিলেন , একথা ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার সূত্রে জানা যায়। আজ দেশে ও বিদেশে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্তরে যেখানে বাঙালীর বাস, সেখানেই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের সংবাদ সুধীজন মাত্রই জানেন। এই জন্মদিন পালনের ধারাটি সূচিত হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি র অন্দরমহল থেকেই যায় অবিরল ধারাটি আজো অব্যাহত। জ্ঞানদান্দিনী দেবী(মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী) বিলেত থেকে ফেরার পরই বিলিতি কায়দায় নিজের পুত্র ও কন্যার "জন্মদিন" পালন করা শুরু করেন ঠাকুরবাড়ি র অন্দরমহলে। এই অভাবনীয় ঘটনাটির সূত্রেই সেসময়ের তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন টি প্রথম পালিত হয় ১২৯৪ সালের ২৫শে বৈশাখ। যিনি এর প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুলেখিকা ন'দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলাদেবী চৌধুরাণী। তাঁর আত্মজীবনী "জীবনের ঝরাপাতা" য় সেটির উল্লেখ আছে ।
.........."আজ যে দেশব্যাপী রবীন্দ্র-জন্মদিন অনুষ্ঠান , তাও মেজমামীদের সঙ্গে রবি মামা ফেরার পরও সেকালে যোড়াসাঁকোয় কোনদিন হয়নি।সেটি ধরালুম আমি আমার ভক্তি প্রাবল্যে।"....সেবছর রবীন্দ্রনাথ ২৬ বছর পেরিয়ে ২৭ শে পদার্পণ করেছেন এবং ইতিমধ্যেই বাংলা কাব্যের আকাশে এক প্রতিষ্ঠিত তারকা হয়ে উঠেছেন। এর আগের বছর অর্থাৎ নিজের ২৫ বছর বয়সে তিনি স্বয়ং নিজের জন্মদিবসটি প্রথমবারের জন্য স্মরণ করে বন্ধুবর শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে এক পত্রে লিখেছেন---"আজ আমার জন্মদিন--পঁচিশে বৈশাখ--পঁচিশ বৎসর পূর্ব্বে এই পঁচিশে বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ হয়েছিলুম, --জীবনে এমন আরও অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে, এই আশীর্ব্বাদ করুন। জীবন অতি সুখের।" 





ফিরে যাই সরলাদেবী র আত্মকথন এর ৮নং পর্বের "জন্মদিন" শীর্ষক অধ্যায়ে, যেখানে তিনি আপন স্মৃতির সৌরভ ছড়িয়ে দিয়েছেন পাঠকদের জন্য-----"রবিমামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। তখন মেজমামা ও নতুনমামার সঙ্গে তিনি ৪৯ নং পার্ক স্ট্রিটে থাকেন। অতি ভোরে উল্টাডিঙির কাশিয়াবাগান বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রিটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনান বেলফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি-চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাঁকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলেন --পাশেই নতুনমামার ঘর। "রবির জন্মদিন"  বলে একটি সাড়া পড়ে গেল। সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হল ।" এখানে উৎসুক পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি প্রায় অজানা ও চিত্তাকর্ষক তথ্য উল্লেখ করা বাহুল্য হবে না বলেই মনে করি--রবীন্দ্রনাথের জন্মগৃহ বাঃ আঁতুড়ঘর টি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং জোড়াসাঁকো মিউজিয়ামের একটি অত্যন্ত দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে গণ্য সেটি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া হিসেবে সেটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ...যে সূতিকাগারে পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও মাতা সারদা দেবীর মহিমময় সন্তান জন্ম নিয়েছেন --কৃষ্ণা ত্রয়োদশী র মধ্যরাতে, রাত ২ টো ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড গতে:১২৬৮বঙ্গাব্দের ২৫ শেষ বৈশাখ ও বাংলাতে সোমবার।(ইংরাজী মতে ৭ই মে, ১৮৬১: মঙ্গলবার)
১৯০১ সালে  শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য আশ্রম প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে কবি সপরিবারে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন এবং কবিগুরু ও গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ নামক এক বিশাল মহীরুহ রূপে এক নতুন ভাবধারার মধ্যে আশ্রমটি কে পরিচালিত করতে থাকেন ঋজু উন্নত শিক্ষা ও আদর্শের প্রতিভূরূপে।




এরপর তাঁর জন্মোৎসব পালনের নানান সংবাদ পাওয়া যায় আশ্রমিকদের লেখায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান তথ্য থেকে। বীরভূমের এই অঞ্চল টি লালমাটির শুখাভূমিতে অবস্থিত। ফলস্বরূপ বৈশাখ মাসে নিদারুণ জলকষ্ট দেখা দিত।  আশ্রম ছুটি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকত না। এমতাবস্থায়।১৯৩৬সালে, গুরুদেবের তখন ৭৬ বছর বয়স, বিশ্বভারতী  কর্তৃপক্ষের স্বীদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা বৈশাখ এক ই সাথে আশ্রমের গরমের ছুটি , নববর্ষ উদযাপন ও গুরুদেবের জন্মোৎসব পালনের সূচনা হয়।
সাল-১৯৪১ , গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ তখন গুরুতর অসুস্থ ,তাঁকে কলকাতায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আনার তোরজোড় চলছে। সেই বছর তাঁর ৮০ তম জন্মদিন পালন করলেন বিশ্বভারতী র ছাত্র-অধ্যাপক-কর্মী-আশ্ররমিকরা। সন্ধ্যায় উদয়ন গৃহের সামনের বারান্দায় কবিকে আরামকেদারায় বসিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান।কবির অসুস্থতার কারণে তাঁর লেখা "সভ্যতার সংকট" প্রবন্ধটি পাঠ করলেন আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন। 
আশ্রমের সকলের মন ই ভারাক্রান্ত এক অজানা আশংকায়। গুরুদেবের
এই শেষতম জন্মদিন পালনের একটি আভাস পাওয়া যায় রানী চন্দ'র আশ্রমিক জীবন-কেন্দ্রিক আত্মকথা --"সব হতে আপন" গ্রন্থে।সেখানে তিনি এই বিশেষ দিনটির এক ব্যথাময় অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।--"গুরুদেবের শেষ জন্মদিন হল উদয়নের পুব দিকের বারান্দায়। অসুস্থ গুরুদেব , হুইল চেয়ারে করে আনা হল তাঁকে সেখানে। আমরা বসলাম বারান্দার সামনে কাঁকর বিছানো আঙিনার উপরে পাতা শতরঞ্চিতে।  শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতনের সবাই এসেছে। সবাই বলছে---আজ গুরুদেবের জন্মোৎসব । এক পাশে বসে গুরুদেবকে দেখছি আর বুকের ভিতর গভীর বেদনা জাগছে , না না এ হল না , এ হল না ঠিক।"......

"যেতে নাহি দিব"...আশ্রমিকদের অন্তর সেদিন হাহাকার করে উঠেছিল এক অনিবার্য অনির্দিষ্ট বেদনার ভারে।
সেই সময়েই আচার্যর উদাত্ত কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল গুরুদেব রচিত সেই নবজীবনের আশ্বাস বাণী..

"ওই মহামানব আসে ,
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক ,
এর মহাজন্মের লগ্ন ।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত 
ধূলিতে হয়ে গেল ভগ্ন ।
উদয়শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব  
নবজীবনের আশ্বাসে ।
' জয় জয় জয় রে মানব - অভ্যুদয় '
 উঠিল মহাকাশে । "....

(উদয়ন । শান্তিনিকেতন
        ১ বৈশাখ ১৩৪৮)








বৈশাখের কবিতা- প্রথম পর্ব

  সেলাই----
 আবদুস সালাম

মিটি মিটি আলোয় ভ্রান্ত কথা লুটোপুটি করে

অনিত্য খেলা করে চারপাশে
ক্লেদ সেলাই করি অনবরত
দূরে জেগে আছে নক্ষত্রের উপবন

বাসনারা স্বপ্নের বিছানায়  ধর্ষিতা হয়
নেমে আসে মহাকাল
মেঘেরা সূর্যের বারান্দায় কত্থক নাচে মগ্ন

ইজ্জতেরা বাতাসে ওড়ায় পোশাক
খুলে দেয় জন্মের দরজা
সভ্যতার সমুদ্রে ছিন্ন স্বত্তারা জাগরণ তোলে
লজ্জা আর ক্লেদ সেলাই করি প্রয়োজন মতো

নীরবতা মেলে ধরি মলিন আলোয়
----@@@-
  অবশ্যই ধার্মিক হবো  -আবদুস সালাম

ধর্মের শকুন ডানা মেলিয়াছে রাস্তায়
যতই নাকসিটকাও না কেন  পরোয়া নেই

ধর্মের শকুনতো  ---!
মুখ খোলা বারণ
 পাছে ধর্মদ্রোহীতার তকমা লাগে

বক তপস্বী ধর্মগুরু মিটিমিটি চায়
প্রেম নদীর তীরে বসে টপাটপ  ধরে মাছ
আহা কি প্রেম -( খাদ্য খাদকের )

মর্তের মানুষ ধর্মাফিমে আচ্ছন্ন
দুষ্টুবাবা লন্ড ভন্ড করে ধর্মের বাজার
অশ্রু বন্যায় ভাসে নিরীহ মানুষ

কবে আমরা বুঝিবো ধর্ম পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু
শান্তির পৃথিবীতে আমরা ধার্মিক হইবো
ধর্মের ষাঁড় হইবো না ----



''এসো হে  বৈশাখ ''
ঝর্ণা মুখার্জী

ভূমি জলে স্নান  শেষে  বৈশাখের
জবা কুসুম  প্রাক  ভোরে  জানান  দিলে
আজ  তোমার  দিন  ;
পয়লা বৈশাখ ; আজ  তোমার  জন্মদিন ।
তোমাকে  জানাই  সাদর  অভ্যর্থনা ।
তুমি পারবে ধুয়ে দিতে ,মানুষের নুন জ্বালা
শরীরের যত যন্ত্রণা ।
আজ , নতুন দিনের স্বপ্ন বুনে দাও
এই আনন্দমেলা র হাটে ,
প্রেমের  আলপনা  এঁকে দিয়ে  যাও ;
গৃহবাসী দের চৌকাঠে চৌকাঠে ।
রক্ত মুছিয়ে ;শ্মশান শোক ভুলিয়ে নতুন করে আর একবার নিহত প্রত্যাশা দের
জাগিয়ে তোল ,
মধ্যবিত্তে র চোখের বাসায়,
কৃষকের লাঙলের ডগায়,
শ্রমিকের ধূলি পায় ।
তোমার  পরশে কিছু যেন বৃথা না যায়;
''এসো  নির্মল , এসো  এসো  নির্ভয় ,
হে চির  নূতন  তোমাকে দিলাম  ডাক
এসো  হে  বৈশাখ  ''।



 শিল্পী-কবি-ঈশ্বর
শ্যামলেন্দ্র চক্রবর্ত্তী



দুধরঙ্গা থান বিছিয়ে রেখেছেন তিনি
জলরং মিশিয়ে কিছু তেলরং মিশিয়ে সেখানে
বড় পাথরের চাঁই তার আলোছায়া খেলা
বাদামী মৃত্তিকার আবহে উড়ন্ত ধূলিকণা
বাদল বাদল মেঘে জোছনার বেলেল্লাপনা
চিত্রকর দরদে দরদে ঢেলেছেন
তাঁর অন্তরের রসালো যত আভরণ
লম্বা ঘাসের উদ্ভিন্ন ডগায় ডগায়
চিত্রকরের শিল্পী হয়ে ওঠার চিহ্ন জড়ানো


বড় বড় পাথরের ফাঁকে আলো-আঁধারীতে
কিছু কীট কিছু পিপীলিকার সারিগান
রোদ্দুরে ভিজে হয়রান উড়ন্ত ফড়িং
ঘুমিয়ে থাকা শ্বাপদের ক্ষণিক বিশ্রাম
সূর্য ডুবছে ডুবছে একে একে দিনের শেষে
রঙ্গের খেলায় মেতেছে ত্রিভূবন
ভাটা জোছনায় ভিজে ভিজে নর এবং নারী
আজ একান্ত পথভোলা
শিল্পী কবি হয়ে উঠেছেন


ধান শিল্পীর হাতে আর দুধ-সাদা নেই
অনেক রং সেখানে অনেক ঘ্রাণ দিয়েও
সেখানে সকালের স্নেহ সূর্যাস্তের হাহাকার
দিতে পারেন নি কবি
পারেন নি
জোছনা-ভেজা নরনারীর দুঃখ ভোলাতে
ভাঁজে ভাঁজে লেগে থাকা প্রাণ
প্রেমের কোনো রং জলে তেলে
তিনি মেলাতে পারেন নি
বাকি রংয়ের কাজ ঈশ্বরের ঝুলিতে
তুলিতে স্বপ্নে আর মেধায় দেখার
বাসনায় জেগে থাকা এই জন্ম জন্মান্তর




আশায়
রৈবতী বন্দোপাধ্যায় ( চক্রবর্তী)

এক চৈতালী সন্ধ্যায় বসেছিলাম
মন্দিরের চাতালে,
বাতাসে ধূপের গন্ধ,ঢাকের শব্দ,
সিংহাসনে দেবী বাসন্তী,
এবার ঋতুরাজের বিদায়বেলা,
হৃদয় বেদনায় আপ্লুত,
মনের ক্যানভাসে পাতার ঝরে পড়া,
আকাশে উদাসী মেঘের আনাগোনা,
বুকে নতুন আশা,
নতুন দিনে জেগে ওঠা,
নতুন চেতনায়, নতুন অনুভবে,
নব আনন্দে ,
নতুন দিনের হাত ধরে
আবার চলব জীবনের পথে-
পৃথিবী জুড়ে উদ্ভাসিত
এক নতুন আলো,
চোখে নতুন স্বপ্নের ছবি।


বৈশাখী সমীরণে
গায়েত্রী দেবনাথ


 সান্ত স্নীগ্ধ নভোঃ
অস্পষ্ট খাম্বাজে,
বৃষ্টিহারা বৈশাখী সমীরণে
জ্বানালা বেয়ে নির্ভয় স্বপ্ন।
দূরে কুটুম্ব সমান নৃ
স্মৃতির ক্ষিতি
স্বপ্ন গড়ে মনুর নন্দন
স্বপ্ন জীবন মৃত্যুতে দুলে দুলে
নীল ছায়ায় ,
সিংহদার ভাঙে
দীপ্তি,জ্বয়ের ধ্বনি
বৈশাখের দুপুরে
আত্মজার হাতে
ট্র্যন্ডি চৈত্রের বদলে
সান্ত গম্ভীর সুরে
রেসম ,আল টপাকে
বসন্তদূত বিরাগে
নীস্তব্ধতা গুঞ্জে
কুঞ্জে কুঞ্জে
অস্পষ্ট খাম্বাজে
বৃষ্টিহারা বৈশাখী সমীরনে।



বিক্ষোভ  আর প্রক্ষোভ
শিউলি চক্রবর্তী

কোনো প্রত্যাশা নেই । 
কোনো ক্ষোভ নেই আমার।
অথচ বুকের ভেতরে ছাইচাপা আগুনে
ঝলসে যাচ্ছে অনবরত  হৃদয়।
রক্তাক্ত  হ'তে হ'তে
কালিমালিপ্ত। 
বিক্ষোভ  আর প্রক্ষোভের লুকোচুরিতে
দৃষ্টি আজ নিস্তেজ
ভাষাহীন দু' চোখ।
অবরুদ্ধ  আবেগ ভাষাহারা--
না, কোনো ক্ষোভ নেই আমার।
নেই কোনো প্রত্যাশাও।
একচিলতে রোদ 
গায়ে মাখতে হাঁটা হ' ল
অনেক তো পথ। 

ভালোবাসার গান গাইতে/
পেরিয়ে এলাম
কত নদী,পাহাড়,সাগর/
পরাবাস্তবতা আর আধুনিকতা/ 
হাত ধরে আজ মুখোমুখি/ আর তাই বুঝি/ রক্তস্নানে ঋদ্ধ হৃদয়।।



গাজনের মেলা

মন্দিরা ঘোষ


তখন জীবন মানে পরব মেলা মোচ্ছব
পড়শি গ্রাম থেকে ভেসে আসত
গাজনের সুর
মেলায় ছোট ছোট চালাঘরে
দোকান বসত সারি সারি
জিলিপি পাঁপড়  ভাজা হোত
কালো লোহার কড়াইয়ে
কোনদিন সে কড়াই মাজা হোত কিনা
জানা নেই, তাতেই কত স্বাদ!
সেদিন গুরুজনের কথা অমান্য করতাম
বাঁশের খেলা দেখতাম অবাক বিস্ময়ে
পেরেক গাঁথা কাঠের পাটাতনে ওদের শরীর থেকে ঝরা রক্তের দাগ কেমন অলৌকিক আলোয় ভরে যেত
মনে হত এরা বুঝি ঈশ্বর প্রেরিত
ভাবতাম ঈশ্বরের গায়ে এত নোংরা
  ছেঁড়া জামাকাপড় কেন
তখনের আনন্দ গুলো অন্যরকম ছিল
একবারে আলাদা
গায়ে মেখে নেওয়ার মত
বড় হওয়ার পর ও পরব থাকত
কোন জ্যোৎস্নাপরবে
শরীর কেমন করত বাতাসে গান ভাসত
বকুলফুল ঝরে পড়ার শব্দ আর
জোনাকির স্বরলিপিতে
সারা আকাশে জলসা হোত
পরব শেষে আরো একটি পরবের
অপেক্ষা
সেই গ্রাম্য ধূলোমাখা পরবের দিন
ফিরে ফিরে নিয়ে যেতে চায়
সেই চাতালের আলোয়



সভ্যতা ঘাড় বাঁকায় 
 রবীন বসু

একটা নির্ঘুম রাত আমি সন্ত্রাসের জন্য রাখলাম
একটা নির্ঘুম রাত আমি শিশু ধর্ষকদের দিলাম l
একটা  নির্ঘুম রাত নিল জোড়া ধর্ষক রাম রহিম
আর এক নিক নাবালিকা ধর্ষক বাপু আসারাম l

হে মহান ভারতবর্ষ, প্রতি রাতে গণতন্ত্র মরে দেখি
প্রতি রাতে চেনাছক দাঙ্গার আগুন জ্বালতে শিখি l
ধর্মের ত্রিশূলে দেখি বিভেদের বহুবর্ণ পতাকা ওড়ে
প্রভুর বিজয়রথ চলছে যেশত্রুর মুখে ছাই পড়ে l

হে মানুষভাগাড়ের মাংস তুমি তুলে দিচ্ছ আহারে
চৈতন্যে মড়ক তোমার, আছো শুধু পোশাক বাহারে l
মনুষ্যত্ব চলে গেছে, বিবেক হাঁটছে তাই উলটো পথে
বিনাশের অন্ধকার বয়ে আনছো নিজেরই সে রথে l

তোমাকে করুণা করে ঘৃণ্য যে শকুন, সে-ও তাকায়
নির্ঘুম এই পৃথিবীতে আজ সভ্যতা শুধু ঘাড় বাঁকায় l



 আশায় বেঁচে থাকা
   কণিকা দাস            

চৈতালী বাতাসের ঝরা পাতাটি
সযত্নে তুলে রেখেছিলাম...
মাঝে মাঝে বাক্স খুলে দেখি
স্বপ্নগুলো উড়ে এসে রোজ দুবেলা
আদর বুলিয়ে দেয় ওর গায়ে।
ঝরা পাতাও জানে জীবন যন্ত্রণা...
শুষ্ক চোখের দুফোটা বাষ্প বারি
মিলিয়ে যায় বাতাসের সীমানায়।
আজও কোন অজ্ঞাত কারণে
বন্দীদশা কাটিয়ে ফিরতে পারেনা
আপন ঠিকানায়...। স্বপ্নগুলো এখন
শুধুই দুঃস্বপ্ন হয়ে গায়ে মিশে আছে।
চৈতালী ঝড়ো হাওয়ার অপেক্ষায়
প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত।
এখন ছুটি চাই, অনন্ত কালের জন্য ছুটি
নিশ্চিহ্ন হতে চায় পৃথিবীর মানচিত্র থেকে
আমি ওকে বন্দী করে রেখেছি...
ঠিক বন্দী করে নয়, ভালোবাসায়
আগলে রেখেছি বুকের মধ্যে
একটা নতুন দিনের আশায়।


আশা
মৌসুমী চৌধুরী



চৈতালী ঝরা-পাতাকে মাড়িয়ে
আলতো পায়ে নিঃশব্দে
এক বুক আশায় বেঁধে বুক
এলাম দুয়ারে তোমার,
হে ১৪২৫!


আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপখানি হাতে
বদলে দাও আমাদের রঙচটা যাপনটা।
আলোকিত করো এ জীবন
প্রদীপের জিন মানুষের বুকে
বুনে দিক আশ্চর্য সেই ফুলের বাগান।
সুগন্ধি বাতাসে দুলুক ভাবীকাল,
হে ১৪২৫!


তোমার ফুলেল ছায়ায়
নির্ভয়ে নিঃশ্বাস নিক শৈশব।
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে
বাঁধন ছেঁড়া বেড়ে উঠুক শৈশব।
হাওয়ায় উড়িয়ে চুল
বালিকারা গোল্লা থেকে দিক
আলোকময় উত্তোরণের ছুট,
হে ১৪২৫!


"হোক জীবন ধন্য, এসো অনন্য
বাড়াও শান্ত চরণ হে"





ডেথ্ সার্কেল
শব্দরূপ : রাহুল



(১)

অসম্পূর্ণ হবার আগে
             সীমাবদ্ধতার প্রাথমিক শর্ত
    মসৃণ দেওয়ালের আবেদন।আড়াআড়ি ছায়া
                     ক্রমশঃ দীর্ঘ হয়ে উঠি


(২)

যে পরিমাণ ধূলো ~ ততোটুকুই জলীয় কোষ
                          মুহূর্তখানেক বিকেলবেলায়
                              ক্ষুদ্রতম ব্যাসিলাস ছায়া 
   ক্রমাগত [০-যাপন] ~ অনুবিয়োজক সময়



(৩)

কমলালেবু-র সাক্ষর ~ দিন বাড়লেই ঝরে পড়ে
আকৃতিগত পার্থক্যে : জানলার প্রান্তদেশ [.' যাপন]
০℉ ~ ফসল ও ফলিত → ফলন।%পালক ওড়ে
                   উদ্বায়ী অনু-জানলার ঋ'ঘটিত সম্পর্ক



(৪)

মাঝামাঝি সরলরেখা ~ ( ) ক্যালিপার্স সেতু-মন্থন
বিপরীত চৌকাঠ : যে কোনো প্রজাপতি নিষেক্
হয়তো সোঁদাচামড়া ~ ৩-মাত্রার রেখাচিত্র ক্যানভাস 
বিনা অনুমতিতে অনুঘটক প্রবেশ।জারিত দরজা
স্রোতের অভিযোজন [প্রত্যেকেই নিষ্ক্রিয় স্মৃতিহীন]



(৫)

সীমাবদ্ধ বনসাই ~ চোখের বদলে সানগ্লাস প্রস্থান
হয়তো ইতি লেখার পরেই : অপরিণত ওথেলো মার্গ
এখনো ভাবি ~ আগামীকাল ১টি আনারস-তারিখ
আগাম দাওয়াত : শরীরবন্ধক মৃত্যুকে স্পর্শক রেখে
কাতিল ইথারের তারাবাজি ~ ২ফোঁটা ব্লাড স্যাম্পল



(৬)

টিকটিকটিক্ ~ রেডিয়াম সময় দৈনিক ||ফুসফুস||
এই মুহূর্ত [ভরাট গাছের ভগ্নাংশ] > ভয় < পোষাক
নদীপথের ঢেউ উড়লে (১÷∝) ^ [ঘাতক-স্থিতিকাল]
চোরাপথের চোরাই দাবানল ~ অনির্দিষ্ট গোপন রাত
ভগ্নাবশেষ : [জন্ম = মৃত্যু] ∞ [শেকড় ≠ ভারীজল]
জলীয় কোষ ~ তেজস্ক্রিয়তার চূড়ান্ত অধঃক্ষেপ 


"একটি কবিতা"
    মৃণালিনী

একটি কবিতার জন্যে ম্যাসেজ করতে পারি সারাদিন
একটি কবিতার জন্যে জেগে থাকি টানা  তিন  রাত
একটি কবিতার জন্যে ভাবতে পারি কয়েক' শ বছর
একটি কবিতার জন্যে মাথা পেতে নিতে পারি বিরক্তি অপমান অপবাদ।

অথচ আমি কবিতাকে ভালোবাসি না
সে বলে, আমি তার শরীর নিয়ে আলোচনা করি রাস্তাঘাটে
চার লাইনের অনু বা বাইশ লাইনের হনু
সন্তানদের নামিয়ে এনেছি রকের মোড়ে
ভাব  বিষয় শব্দ ছন্দ অতি ভদ্র ছিল অভিধানে
তাদের টেনে এনেছি  কল্পনার বাড়ি থেকে  বাস্তবের পোড়া রোদে
খেলাচ্ছি অশ্লীলতার মাঠে
যেখানে রাতে খেলে অর্ন্তজগৎ, দিনে মুখোশের আড়ালে।

একটি কবিতার জন্যে সব অভিযোগ শুনে যাই দিনের পর দিন
অথচ আমি কবিতাকে ভালোবাসি না
আজ জিজ্ঞেস করলে বলব, চিনি না জানি না  বুঝিও না
রাস্তায় পরিচয় সে কথা অনেকদিনের হলদে ইতিহাস।

                                                                                       


এই বাগান মধুময় মধুময়
শিবু মণ্ডল

নতুনের বাগানে যত আমগাছ ভরে আছে ফুলে
বৃক্ষ বলে আম্রমুকুল তুমি ধরে থাকো বৃন্ত
কালবৈশাখী আসে আসুক তুমি ভীত হয়ো নাকো
শক্তি আর ক্ষমতা বলে বাতাস করুক ষড়যন্ত্র।

ভ্রমরেরা ডানা মেলে ভালোবেসে তোমায় ছোঁবে
একথা হবে না মনে বেঁচে আছো শুধু শুধু
ভালোবাসবে বলে পরাগ ফুলে ফুলে ছুটে যাবে।
সুগন্ধ পেতে চতুর বাতাসও বলবে মধু মধু।

তুমিও সবুজ পাবে, দু’হাত ভরে পাবে মান-সম্মান
জ্যৈষ্ঠ দেবে তেজস তোমার বহিঃরঙ্গে, শুভ্র হৃদয়
আষাঢ়ের মঞ্চে সেদিনও হাওয়া গাইবে বেসুরো গান।
একই বৃক্ষের তোমরা বোলো এই বাগান মধুময় মধুময় !




ছাই ভষ্মেরা
সংস্কৃতি ব্যানার্জী 

আলোর কাছাকাছি এলেই
মুখ থুবড়ে পড়ি
রংহীন উপোষী পাতার মত।
যতটা শুষে নিচ্ছে শোষণ
শুকিয়ে উঠছি শিরা -উপশিরায়,
নিটোল ছায়া পেরিয়ে
নিভে আসছে...
বেঁচে থাকার গান ।











বৈশাখের গল্প

চোখের আলোয়
সোমা বোস

-       ঠামুন, আজ বেঙ্গলি ইয়ারের লাস্ট ডে, তাই না?

-       হ্যাঁ রিকিসোনা, কিন্তু তাতে কী?

-       আসলে মম বলেছে কাল বাংলা নতুন বছর মানে পয়লা বৈশাখ, ভালো দিন ওই যে রাস্তার মোড়ে একটা বাড়িতে অনেকগুলো বাচ্চা থাকে না? জানো ঠামুন, মম বলেছে কাল সকালে সেখানে আমাকে নিয়ে যাবে মম কাল ওদের সবাইকে নতুন জামা দেবে বলেছে ফ্রিতে ওদের চেকআপও করে দেবে

-       সেখানে তোমাকে নিয়ে যাবে? কেন? ওটা তো একটা অনাথ আশ্রম আর ওখানে তো সব মেয়েরা থাকে মেয়েদের জামা দেওয়া, চেকআপ করার মাঝে তুমি একটা ছেলে গিয়ে কী করবে? এখন তুমি বড় হয়েছো... না না, ওসব মেয়েলি ব্যাপারে তোমাকে যেতে হবে না

-       ওই তো মম এসেছে মম, ঠামুন ওই মেয়েদের মাঝে যেতে বারণ করছে আমি যাব না?

-       কিন্তু রিকি... কাল তো তুমি মেয়েদের মাঝে যাবেনা, মানুষের মাঝে যাবে তাছাড়া কাল আমাদের সাথে ঠামুনও যাবে ওখানে ঠামুন আর তুমি নিজে হাতে ওদের প্রত্যেককে জামাকাপড় আর ওষুধপত্র দেবে এখন চলো চলো, ঠামুনকে আর বিরক্ত কোরো না
   
         “এসো হে বৈশাখ এসো এসো…” আজ পয়লা বৈশাখে সকাল থেকে এই সুরের প্রবাহ চারিদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে এদিকে সেই কোন কাকভোরে ঘুম ভেঙে গেছে আনন্দীর না, ঠিক ঘুম নয়... ঘুমের মতো কিছু আসলে ঘুম তো তার দুচোখে আসেইনি কাল রাতে নানা এলোমেলো চিন্তার মাঝেমাঝে সারারাত বোধকরি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল সে বিছানায় খামোখা আর শুয়ে থাকার কোনো মানে হয়না, অগত্যা বিছানা ছেড়ে সে উঠেই পড়লো কিন্তু কাল রাতের বিদিশার ঠাণ্ডা কথাগুলো সে ভুলবে কি করে! কতোবছরের কতো পুরনো পুরনো কথা কাল সারারাত মনে পড়েছে তার…….

-       মামণি, তুমি ব্রোকে কিন্তু একটু বকো...

-       কেন? সে আবার কী করলো?

-       ও এখনই ডিনার করবে, তাই ওর ডিনার এই স্টাডিরুমে এখুনি আমাকে নিয়ে আসতে হবে

-       তো নিয়ে আয়, সাথে তুইও ডিনার করে নে!

-       আমার এখনো ক্ষিদে পায়নি মামণি, তাছাড়া আমি পড়ছি ও নিজেই নিজেরটা নিয়ে আসুক না!

-       ওর সামনে টুয়েলভথের ফাইন্যাল এক্সাম, জানিসই তো! এসময় পড়া থেকে উঠলে সময় নষ্ট হবে না?

-       আমারও তো সামনে ওই একই এক্সাম মামণি! আমি উঠলে আমারও তো পড়ার ক্ষতি হবে!

-       ভাইয়ের জন্যে এটুকু কাজ করে দিলে এমন কিছু ক্ষতি হবে না তাছাড়া তুমি মেয়ে, একাজ তো তোমারই ও কেন এ কাজ করতে যাবে? যাও আমাকে আর বকিও না, ‘অ্যাম টু টায়ার্ড, অফিসে খুব চাপ গেছে... এখন আমি রেস্ট নেবো, আমাকে আর একদম ডিস্টার্ব করবে না তোমরা

নিজের ঘরে যেতে যেতে আনন্দীর কানে এলো

-       দেখলি তো সিস, মামণি আমাকে কিছুই বললো না মাঝখান থেকে তুইই বকা খেলি তুই মেয়েছেলে, তাই তোরই একাজ করা উচিত, হা হা... তুই আরো বেশী ঝামেলা করলে তখন মামণিকেই বলতাম এনে দিতে, কারণ মামণিও... মামণি সেটা জানে বলেই তোকে অতো বকলো! আমি জানি, হা হা হা হা

         আনন্দীর কি কোথাও একটু বাজলো জিষ্ণুর কথা শুনে? মামণিকে ছেলে জাস্ট একজনমেয়েছেলেবোঝাতে চাইলো কি? যাকগে, তার রেস্ট দরকার, রেস্ট ওদিকে রুশা বলে উঠলো...

-       মেয়েছেলেআবার কি ধরণের কথা রে? আমার ভাল্লাগেনা আমরা টুইনস, অথচ মামণি সবসময় আমাদের দুজনকে আলাদা আলাদাভাবে ট্রিট করে! বাপি বেঁচে থাকলে এমনটা হতে দিতো না, আমি জানি…(কান্না)

      ওদের বাবা জয়ন্ত একজন আদর্শবান ডাক্তার ছিলেন ডাক্তারি পেশাকে তিনি কোনোদিন ব্যবসায়ের পর্যায়ে নামিয়ে আনেননি তাঁর বড় ইচ্ছে ছিল  ছেলে-মেয়েও যেন ডাক্তার হয়ে তাঁর মতো করেই মানুষের সেবা করে মানুষের সেবাই নাকি ঈশ্বরের সেবা কিন্তু আনন্দীর ইচ্ছে ছিল জিষ্ণু ও রুশা দুজনেই ইঞ্জিনিয়ারীং লাইনে যাক স্বামী জয়ন্তর ডাক্তারী সেবার চক্করে পড়ে তার জীবনটা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেছে দিন নেই, রাত নেই, সবসময়েই পেশেন্টের জন্যে নিবেদিত প্রাণঘরে ফেরার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেইকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার উপায় নেইরবিবারে, সপ্তাহে অন্তত একটা দিন জমিয়ে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসার উপায় নেই... উফফ্ অসহ্য! ডাক্তারীর প্রতি মনেমনে তাই একটা বিরূপ ভাবনা পোষণ করতো সে তার ইচ্ছে ছিল জিষ্ণু একটু ব্যবসায়িক বা স্বার্থপর হোক

           কোনো কোনো দিন রাতে পাশের বাড়ির সুজাতা-মাসীমা আসতেন তাদের ঘরে ওঁনার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে স্বামী মৃন্ময়-মেসোমশাই দীর্ঘকাল ধরে রোগাক্রান্ত, শয্যাশায়ী স্বামীর চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে আসতেন জয়ন্তর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে নানা গল্প করতেন... “জয়ন্ত কত বড় ডাক্তার! অথচ মাঝেমাঝে মেয়েছেলেদের মতো ছাদে তোমার জামাকাপড় মেলে দিতে দেখেছি! জানালা দিয়ে অনেকসময় দেখেছি ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করছে মাইক্রোওয়েভে আমার উনি তো এসব ভাবতেই পারেন নি কোনোদিন! জয়ন্ত খুব ভালো ছেলে, সেই ছোট থেকে দেখছি তো ওকে বিনেপয়সায় কতো গরীব দুঃখীর চিকিৎসা করে দেয়! জয়ন্তর মতো ছেলে লাখে একটা মেলে

          জয়ন্ত যে এমনিতে ভালো মানুষ, তা তো জানেই আনন্দী কিন্তু তার অভাবটা ঠিকমতন করে বলে বোঝানো যাবেনা ভেবে সেসব কথার আর উত্তর দেওয়া হত না মাসীমাকে এহেন ভালোমানুষ জয়ন্তর অকালমৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছের মর্যাদা রাখার ব্যাপারটা মন থেকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেনি আনন্দী জিষ্ণুর ডাক্তারী পড়ায় প্রবল অনীহা আর ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে সে তার অপছন্দের ডাক্তারীতেই চান্স পেলো, ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে নয় ওদিকে বাপির আদুরে রুশা অবশ্য তার বাপির আদর্শকেই আঁকড়েধরে ছিল তার স্থান ডাক্তারীতে প্রথম সারিতেই হল যাক, ওদের বাপির ইচ্ছে পূরণ হল, এতেই শান্তি আনন্দীর এরপর রুশা এমডি করতে বাইরে গেলো আর জিষ্ণু সহপাঠিনী বিদিশাকে বিয়ে করে এখানেই নার্সিংহোম খুলে চিকিৎসা ব্যবসায়ে মন দিলো

-       জাস্ট শাট আপ! কি ভেবেছো, আমাকে ডমিনেট করবে! ভেবোনা আমার নার্সিংহোমে আমার সাথে ডক্টরী করছো বলে তুমি আমার মাথা কিনে নিয়েছো! মেয়েছেলেমেয়েছেলের মতো থাকবে

-       এসব কী বলছো তুমি! “মেয়েছেলে”! “ডমিনেট”! আজ বিকেলে রাউন্ডে বেরোনোর সময়ে এককোণে একটা গুঞ্জন কানে এলো তোমার নাম শুনে একটু থমকালাম... কানে এলো তুমি নাকি একজন লেডি পেশেন্টের সাথে কি অসভ্যতা করেছো আরেকজন বললো ডাক্তাররা ওরকম একটুআধটু করে এরপরে আমি আর সেখানে দাঁড়াইনি, চলে গিয়েছিলাম ওসব কথা বিশ্বাস করিনি, কিন্তু মাথায় ঘুরছিল তাই এখন সেই ইনফরমেশনটা জাস্ট দিলাম তোমাকে আর তো কিছু বলিনি!

-       তার মানেই তো তুমি আমার কাছে জবাবদিহি চাইছো তোমার সাহস হল কি করে?

-       জবাবদিহি কোথায় চাইলাম? শুধু ইনফরমেশন দিলাম!

-       তুমি কি আমাকে কন্ট্রোল করতে চাইছো?

-       কন্ট্রোল কোথায় করলাম? (কান্না)

-       কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি না! আমাকে আন্ডারএস্টিমেট করছো? তোমার আস্পর্ধা তো কম নয়!

         এরপরে বিদিশার আরো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই আনন্দী আর নিজের ঘরে চুপ করে বসে থাকতে পারলো না

-       আহ্ জিষ্ণু, তোরা এতো রাতে চিৎকার করছিস কেন? আমার ঘুম আসছে না রে...

-       মামণি... (বিদিশা আরো জোরে কেঁদে উঠলো)

-       তুমিই বা কথার পিঠে কথা বলে যাচ্ছ কেন? মেয়েদের অতো কথা বলতে নেই, চুপ করে থাকতে হয়

-       মামণি, ভালো করে বোঝাও তোমার ডটার-ইন-কে ওসব কেঁদেকেটে কোনো লাভ হবে না... যত সব মেয়েলি ন্যাকামো!

           কথায় দুম করে বিদিশার কান্নাটা থেমে গেলো চোখ মুছে আস্তে করে মাথা নামিয়ে সামনে থেকে সরে গেলো সে আনন্দীরও কানে বাজলো জিষ্ণুর কথাগুলো এমনিতে বিদিশা ঠাণ্ডা স্বভাবের, আরো যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেলো এরপর তার ব্যক্তিত্বের এই ঠাণ্ডা ভাব বেশ আঁচ করতে পারে আনন্দী

-       মামণি, তুমি রেডি হয়ে নাও সকাল সকালই বেরোবো আমরা

         বিদিশার কথায় সম্বিৎ ফিরলো আনন্দীর আর দেরী না করে চটপট রেডি হয়ে নিলো সে একসময়মঙ্গলাহোমে এসে হাজির হল তারা তিনজনে এটাসেটা বক্তব্যের পরে রিকি আর তার হাত দিয়ে অনাথ মেয়েগুলোর হাতে হাতে জামাকাপড় ও ওষুধপত্র বণ্টনও হয়ে গেলো সেগুলো হাতে পেয়ে খুশীতে ঝলমলে মেয়েদের মুখগুলো দেখে সত্যিই বেশ ভালো লাগলো কাউকে নিঃস্বার্থভাবে কিছু দিতে পারার মধ্যে যে এতো আনন্দ আছে, আগে তা কোনোদিন অনুভব করেনি আনন্দী ধন্যবাদান্তে হোমের প্রধানা বললেন বিদিশা যেভাবে ছেলে রিকিকে মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দরদী হতে শেখানোর জন্যে এরকম অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে, সেরকমই প্রতিটি মা যেন তার পুত্রসন্তানকে নারীদের মানুষ হিসেবে ভাবতে শেখায়... একমাত্র মায়ের শিক্ষাই পারে সমাজে ছেলেদেরকে সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, প্রকৃত মানুষ করে তুলতে বক্তব্য শুনতে শুনতে আনন্দীর দুচোখ জলে ভরে আসে সে নিজে শিক্ষিতা, কর্মরতা মা হয়েও কি তাঁর পুত্র জিষ্ণুকে সেভাবে ভাবতে শিখিয়েছিল! জয়ন্তর মতো স্বামী পেয়েও সে কেন তা পারেনি? শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার বা উচ্চশিক্ষিত হলেই কেউ মানুষ হয়ে যায় না, সেটা যেন সে আজ ভালোভাবে অনুভব করলো এতদিনে নববর্ষের পূণ্যলগ্নে যেন তার সত্যিকারের বোধোদয় হল রুশা তার বড় অভিমানী মেয়ে, মামণি ও ব্রোর ওপর অভিমান করে সে দূরে চলে গেছে পরের মেয়ে বিদিশা তার চোখে আলোকোজ্জ্বল দ্যুতির যে স্পর্শ এনে দিয়েছে, তা আর বিফলে যেতে দেবেনা সে রুশা মা, অনেক অন্যায় করেছি রে তোর ওপর তুই আমায় ক্ষমা করে দিস...




উপহার
দীপশিখা চক্রবর্তী


সকালে ঘুম ভাঙে গনগনে রোদের আঁচে।জানালার কাঁচের উত্তাপে অস্বস্তি।প্রতিদিনের মতোই নিস্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে দিনের শুরু করে শ্রাবন্তী।একঘেয়ে দিনগুলোতে তার স্নায়ুকোষে স্নিগ্ধ বাঁশির সুর জাগায় অভীকের পাঠানো সকালের প্রথম ম্যাসেজ।এত গরমেও যেন হঠাৎ করে ঝিরিঝিরি বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম। কিন্তু দুদিন ধরেই শ্রাবন্তীকে ছুঁতে পারেনি গরম,ছুঁতে পারেনি ক্লান্তি।আজ বৈশাখ হার মেনেছে যেন।দুদিন পরেই আজ তার অভীকের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিন।অনিয়ন্ত্রিত অনুভূতিগুলো অস্থির জলপ্রপাতের মতো ছটফট করতে থাকে।

সকাল থেকেই তোরজোড় শুরু করে শ্রাবন্তী।কি পরবে,কি বলবে,ভেবেই পায়না।এক অদ্ভুত ভাললাগায় মাখামাখি হয়ে থাকে মন।বিকেল হতেই অভিকের ফোন।আর এক ঘণ্টা।তড়িঘড়ি নিজেকে সাজিয়ে নেয় অভীকের পছন্দের হলুদ সালোয়ারে।একটু এগোতেই দেখে অপেক্ষারত অভীককে।শ্রাবন্তীর বুকের ভেতরে মাথা তোলে অচেনা ফল্গুস্রোত।না,আজ তাদের প্রথম দেখা হলেও মিডিয়ার দৌলতে তারা আগেও একে অপরকে দেখেছে।কিন্তু সামনে আসতেই যেন মনের ভেতরে ওঠে ঝড় -যেন সুদূর থেকে ধেয়ে আসা বৈশাখীর কালো ফণা।নীরব চোখদুটো দিয়ে অনেক কিছু বলতে চায় অভীক,বুঝতে পারে শ্রাবন্তী।ওই চোখ যে তাকে বড্ড টানে।শ্রাবন্তীর হাত ছুঁয়ে অভীক তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে।হঠাৎ এলোমেলো হাওয়া।অভীকের চোখ বারবার হাতের ঘড়ির দিকে।সত্যিই তো,বেশী সময় তো নেই আর।কিছুই তো হলো না বলা।অভীকের যে আজ রাতেই ফেরার পালা,আগেই জানিয়েছিল সে।তবুও অল্প বিরক্তির ছাপ ছিল শ্রাবন্তীর মুখে।এভাবে কেন আসলো অভীক?আর একটু সময় যদি পেতো?তবে হয়তো আর কিছুক্ষণ পড়তে পারতো দুচোখের কত না-বলা কথা।কিন্তু সে তো আর হওয়ার নয়।কোনমতে দুচোখের জল আটকে মিথ্যে হাসি বোনে মুখে।আকাশটা আবার নিস্তব্ধ লাগে শ্রাবন্তীর,গুমরে ওঠে হঠাৎ।

একটা ক্যাব নিয়ে ওঠে দুজনে,গন্তব্যস্থল স্টেশন। অনেক মানা করেছিল অভীক,শোনেনি শ্রাবন্তী।যতটুকু সময় পাওয়া যায়,থাকতে চেয়েছিল সে।পাশাপাশি হেঁটে যায় দুজন,একে অপরের হাত ছুঁয়ে।মাইকে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসার ঘোষণা।ট্রেন আসতেই অভীক এগিয়ে যায়,শ্রাবন্তীর পা দুটো ঠান্ডা,নড়তে পারে না সে।অভীকের চোখ পড়তেই নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা সে।ছুটে বাইরে বেড়িয়ে যায়।অন্ধকার ছেয়ে নামে তুমুল বৃষ্টি,ভিজতে থাকে শ্রাবন্তী।চোখের জল মিশে ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়।এত গরমে চারিদিকে স্বস্তির হাওয়া,স্বস্তি নেই শুধু মনে।গাড়িতে উঠে বাড়ির পথে এগোয় শ্রাবন্তী।বৈশাখ আজ তাকে সব দিয়েও আবার কেড়ে নিল।তাও মুচকি হাসে শ্রাবন্তী।কিছুক্ষণের জন্য হলেও বৈশাখ তাকে দিয়েছিল তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার-তার ভালবাসা-শুধু তার অভীক।



            
 নষ্টা মেয়ের গপ্প
     মমিদুল মিঞা

অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। রূপসা খাটিয়ার বসে প্রহর গুনছে কখন কে আসবে!
 ঘরের ভিতর থেকে কাঁতর স্বর বার বার তাকে চঞ্চল করে তুলছে। এমন সময় আওয়াজ এল- কিরে মা ! আজ এত বেলাতেও কি কেউ আসলো না? তবে কি ভাতের হাঁড়ি- ঔষধ এইসব কিছু—এই দেখ না, মেয়েটা যে কেঁদে কেটে মরেই যাচ্ছে দু’টো ভাতের জন্যে!
রূপসার চোখে জল। তাঁরই বা কি করার আছে সংসারের এমন দিনে।
 বৃষ্টি তো অনবরত বেড়েই চলেছে, থামার কোন নামই নেই। কে’বা চায় এই বাদলার দিনে বউয়ের আঁচল ছেড়ে অন্যের আঁচলের তলায় নিজেকে ধরা দিতে। ঘরেও তো  কিছুই নেই, তবে কি শেষে না খেয়ে মরবে খুকী? এমন সময় আবার চিৎকার- দেখ খুকী কেমন কেমন করছে! আয় তাড়াতাড়ি-
খদ্দেরের পথ চেয়ে না থেকে খাটিয়া ছেড়েই উঠল, ঘরে এসে দেখে খুকীর জ্বরটা আরো বেড়েছে, গাঁটা তো পুড়েই যাচ্ছে। পাশে বাবাকে থাকতে বলে, বাইরে বেরিয়ে আসতেই রূপসা দেখতে পেল কেউ একজন আসছে।
হ্যাঁ আসছে। তবে সে আর কেউ নয়, পাড়ারই বুড়ো মাতাল।
কিরে, মাগী! আজ যে বড্ড সাজগোজ? কোথাও যাচ্ছিস? মোটা পার্টি ধরেছিস বুঝি? আমাকে তুষ্ট না করেই যাচ্ছিস, আয় না- একটু আদর-সোহাগ দে’না, মাইরি বলছি আজ পুরো টাকাটাই দিব, মাইরি বলছি।
অভাব আর মাতালের কাছে পয়সা উসুলের ফায়দা-এই দোটানাতেও সে চলল মাতালকে নিয়ে তাঁর ‘নিত্য বাসর ঘরে’।
আজ রূপসার মনটা ভীষণ অস্থির। অশ্রান্ত সারাদেহ-মনে শুধুই আগুনের ফুলকি যেন আঁকিবুঁকি কাটছে। তবুও ভাবছে-আজ সমস্ত পাওনা মিটবে,তারপর ডাক্তার-ঔষধ-খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি...
এত চিন্তাধারায় মলিনতা আসলো একমুহুর্তেই মাতালের দু’শো টাকা ছুঁড়ে, গালি দিতে দিতে চলে যাওয়ায়। বিছানায় পড়ে রূপসা। নগ্ন শরীর- দু’টো নোট- চোখের পাতা ভরা জল- কি হবে এতে? বৃষ্টি অনবরত ভিজে দিয়েই চলেছে শুষ্ক দেহটাকে।ভেজা শরীরটাকে নিয়ে এসে দাঁড়াল ডাক্তারের বাসায়। লোকজন কেউই নেই। ডাকাডাকিতে ডাক্তার বেরিয়ে এসে এমনভাবে তাকিয়ে রইল যেন তাকে পশুর মত কাঁচা চিবিয়ে খাবে। লোভ সম্বরণ করে বলল- ভেতরে এসো। কি হয়েছে বলো? রূপসার কাছে সমস্তকিছু শোনার পর ডাক্তারেরও কামনা দ্বিগুন বেড়ে গেল। ডাক্তারের কথায় শেষ পর্যন্ত নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দিল কয়েকটা ঔষধের নাম-এর জন্যে। ওষুধ নিয়ে যখন সে বাড়ি ফিরল,তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শীতল দেহটাকে জড়িয়ে কাঁদছে অসহায় এক বাবা, যে এত বার চিৎকার শুনেও মেয়ের মুখে একটা অন্নও তুলে দিতে পারেনি। সামনে থেকেই যে দেখেছে সংসার চালাতে মেয়েকে অন্যের কাছে দেহ বিলিয়ে দিতেবাবা হিসেবে নিজেকেই সে বারংবার ভৎর্সনা করতে লাগলো। নিথরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্দরলোকটি চট করে কিছু নোট বের করে দিতেই রূপসা চলল তাঁর শৌখিন ঘরে। মুখে তাঁর ছিটেফোঁটা হাসি আর চোখে আলতো একটু জল। বাইরের চিৎকার থেমে গেছে ততক্ষনে; থেমেছে বৃষ্টিও।।

                           



 
  



 বৈশাখের ছড়া


বৈশাখী রঙ
      মজনু মিয়া

বৈশাখী রঙ শাড়ী এই মন
জয় করেছে,
হলুদ জমিন লাল পেড়েতে
চোখ ভরেছে।

আউলা চুলে বাওড়ি বাতাস
দোল খেলেছে,
মিষ্টি ঠোঁটের গাড়ো রঙ এ
প্রাণ কেড়েছে।

ফুলের মালা সখী তোমার
বুক জোড়েছে,
রেশমি চূড়ির বাহারী রঙ
চোখ পুড়েছে।

বৈশাখী রঙ সখী তোমার
হৃদ কোঠরে,
রাখছি আমি চোখের ভিতর
নিদ কোটরে।









বৈশাখের মুক্তগদ্য



তোমার আমার ক্যানভাস
সপ্তক

অনেক হতাশা, অবিশ্বাস আর যন্ত্রনায় গুমড়ে থাকা একটি ক্ষয়াটে বছর গড়িয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের গ্লানিময় পথের দিকে। আসছে আর একটা  বছর।  নতুন বছর ভালো কাটুক মা!! এই  প্রার্থনা তোমার আমার সকলের। কিন্তু তবু  একটা গোটা বছরের ক্যানভাসে ছোপ ফেলে দেয়া অবাঞ্ছিত ছবিগুলি পেছনে তাড়া করে ফেরে।  তোমার হাতেও রঙ, তুলি আছে। তা দিয়ে ক্যানভাসের সঠিক চেহারা ফিরে আসতে পারে অনেকটাই।  বছরের শুরুতে একবার একটু নিজের মুখোমুখি দাঁড়াও! নিজেকে প্রশ্ন কর।
          তুমি কে? কোটি কোটি মানুষের ভীড়ে একজন সাধারণ মানুষ? তোমার  চলার ছন্দে আদৌ  কিছু যায় আসে না পৃথিবীর? যায় আসে। তোমার পথরেখা ছুঁয়ে আছে তোমার চারপাশের সকলের যাত্রাপথকে।  এ পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি অন্যায় বাতাসে ভেসে রয়েছে কান্না হয়ে, হতাশার দীর্ঘশ্বাস হয়ে।  সে কোনো আদর্শের কতকথা শুনতে চায় না। চায়, তুমি  শুধু তোমার কাজটুকুই করে চলো সঠিক ছন্দে।
      তুমি কে? রাজনীতিবিদ? রাজনীতির অর্থ পড়ে দেখেছো? কাকে বিষোদ্গার করছ? আগে নিজেকে কর। তোমার দুপাশের মানুষকে, জল, মাটি, বাতাসকে আগে নিজের করে নাও। মনে রেখো তুমিই পারো বাতাসে বিষ ছড়িয়ে দিতে, আবার তুমিই পারো দুপাশের দাবানলকে শান্ত করে স্বস্তির চিন্হ টুকু এঁকে দিতে।
      তুমি কে? আইনজীবী? বিচারক? তবে সত্য অন্বেষণ করো। মিথ্যের কাছে নিজেকে বিক্রি করো না, তোমার বোনা মিথ্যের জাল ধংস করে দিতে পারে অনেক কিছু।
      তুমি কে? চিকিৎসক? মানুষের চোখ দিয়ে দেখো কত বিশ্বাসে, ভরসায় সকলে তোমার হাতে তুলে দিয়েছে তাদের প্রিয় মানুষটির প্রাণ! আর তুমি কত অবহেলায়, খামখেয়ালিপনায় নিভিয়ে দিচ্ছ  জীবনের আশা!! আজ যারা তোমার হাত ধরে হেসে উঠতে পারতো, তোমারই ভুলে তারা আজ লাশকাটা ঘরে। তবে তো তুমি খুনী!!! চিকিৎসক যদি হও তবে এবার থেকে চিকিৎসাটুকুই করো, তাহলে বর্তে যাবো আমরা সবাই।
      তুমি কে ?শিক্ষক? জাতির মেরুদন্ড রক্ষার ভার নিয়েছ? তবে নিজে আগে সোজা হয়ে দাঁড়াও! গৌরবের কারন না হও, লজ্জার কারন হয়ো না আর। তোমার ছাত্রদের শেখানোর আগে নিজে শেখ। ক্লাসের উজ্জ্বল ছাত্রটি তোমাকে ভরসা করে তোমার দেখানো পথেই হেঁটে চলেছে। তোমার অবহেলায় ও তিরস্কারে লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রটি যদি অন্ধকারে পা বাড়ায় তবে একবার তোমার হাতটা একটু বাড়িয়ে দাও। ছাত্র মূল্যায়নের আগে নিজের মূল্যায়ন কর। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ, সেই ভবিষ্যৎকে একটু যত্নে, ভালোবেসে কয়েক পা এগিয়ে দিতেই তো তুমি এসেছো!
      তুমি কে? আমলা? কেরানি? অনেকের অনেক স্বপ্ন তোমার টেবিলে ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে শুধু তোমার অপেক্ষায়। তোষামোদ চাইছ? এখনো যদি লজ্জা না পাও তবে আর কতদিন তোমাদের জন্য লজ্জিত হব আমরা? 
      তুমি কে?লেখক? কবি? শিল্পী? মনে রেখো তুমি আমাদের কাছে এক চলমান আদর্শ। তোমার ঐ লেখার খাতায় কিছু লেখার আগে, মঞ্চে গলা কাঁপানোর আগে একবার নিজের মুখোমুখি দাঁড়াও!  তোমার কবিতা, তোমার গান, তোমার তৈরি শব্দের মায়াজাল তোমায় বিদ্রূপ করছে না তো! নাকি শুধু শব্দের ভিটামিনে উজ্জীবিত রাখতে চাইছ তোমার সযত্নে নির্মিত 'তুমি'কে? জেনো, তোমার দুচোখ দিয়ে এখনো স্বপ্ন দেখে চলেছি আমরা। সেই স্বপ্নকে তোমার পণ্য করে তুলো না, তাহলে মুছে যাবে শেষ আশা টুকুও।
      তুমি কে? বাস্তুকার? ব্যবসায়ী? চায়ের ফেরিওয়ালা? তোমার বিকোনো জিনিস প্রাণ নিয়ে নিতে পারে অনেকের, তোমার তঞ্চকতায় হতে পারে অনেক কিছুই যা হবার কথা ছিল না।
তুমি কে? ছাত্র? তবে দৌড়োনোর আগে একবার সহপাঠীর হাতটা ধরো, তাকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ও। দেখবে বিধাতা হাসছেন, প্রশান্তির হাসি।
      এ পৃথিবী আমার, এ পৃথিবী তোমার। তুমি যেই হও, প্রতি মুহূর্তে আমার হাসি কান্না জড়িয়ে যাচ্ছে তোমার সঙ্গে, সেই দায়টুকু নিজের কাঁধে তুলে নাও! কিছু তো নয়! শুধু তোমার সরল কর্মনিষ্ঠাই হয়ে উঠতে পারে এ পৃথিবীতে আনন্দের বারিধারা।



 এসো নতুন
এসো বৈশাখ 
রুবাইয়া জেসমিন জুঁই 


বৈশাখ একটা আগমনীর নাম নাকি একটা প্রবাহের নাম ? একটা শুরুর নাম নাকি স্রোতের মাঝে কোন একটা বিন্দুর নাম ?

     শুরুটা তো অন্য কোন বিন্দু থেকেও হতে পারত।  তবে বৈশাখকে কি বলব ? বছরকে একটা বৃত্ত ধরলে  এটা তো যে কোন বিন্দু l শুরুটা না হয় এখান থেকেই হলো ! আর নাহলে ধরে নিতে কি আপত্তি ? একটা আরম্ভ তো চায়।  একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই সাইকেলটা শেষ হয় l তবে শুরু তো হতে হবে ! না হয় শুরুটা আমরা নিজের ইচ্ছে মতো করলাম ! 

     বৈশাখ একটা প্রবাহের নাম।যে প্রবাহ আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে চলে স্বপ্নিল পৃথিবীর পথে কি ভীষণ উদ্দামতার সাথে।মুহুর্তেই যেন সব ক্লান্তি শেষ হয়ে বৈশাখের বাতাস এসে জুড়িয়ে দিয়ে যায় বিদায়ী বছরের সমস্ত বিষণ্ণতাকে মুছে দিয়ে । আরও একটি নতুন পঞ্জিকাবর্ষ যোগ হয় বাঙালির জীবনে।আসলে শুরু করাটা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়ে কখনো কখনো l

     শুরু কথাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেকগুলো স্বপ্ন দিয়ে গড়া নববধূ l একটা কৃষক ভেবেছে নতুন বছরে ও কিছু সঞ্চয় শুরু করবে l ছেলেটি ভাবছে বৈশাখ থেকে আরও বেশি উদ্দম নিয়ে পড়বে l বাবা যে বলেছিল ওই মাসে মোবাইল কিনে দেবে ! না জানি কতগুলো প্রথমবাণী লুকিয়ে আছে এই একটা শব্দের মধ্যে l  এখন এটাকে শব্দ বলব নাকি কোন মায়াজাল ? সে যাই হোক , একটা অস্তিত্বকে তো বাঁচিয়ে রেখেছে l হোক না চাকার মধ্যে যে কোন বিন্দু l অন্তত আলোটা তো বেঁচে আছে !

     অবশ্য শুরুর জন্য একটা শেষ এর ভীষণ দরকার।বৈশাখের আগমনীতে যেমন আনন্দ আছে আবার পরমুহুর্তেই বিদায়ী বছরের স্মৃতি এসে চোখ ঝাপসা করে দেওয়া বেদনাও আছে।


     সাম্প্রতিককালে একটা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে চলছি আমরা।তাই আশা রাখি এই বৈশাখ হোক মানুষের সাথে মানুষের মেলবন্ধনের বৈশাখ, অরাজকতা অবসানের বৈশাখ।এই বৈশাখ পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলুক,এক সুস্থ মানবতার নগর হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।








বৈশাখের কবিতা-দ্বিতীয় পর্ব

ভেঁপু 
রীনা মজুমদার

আমি যখন ভাত ঘুমের পর
                  আয়েস করে
আমের আঁঠির ভেঁপু বাজাই!
          তাতে না থাকে সুর
                    না থাকে তাল,
সেই সুরেতেই আবালবৃদ্ধ উল্লাসে ভাসে
হাজার হাজার মানুষ
    বলে, .. আহা!  বাঃ , বাঃ l

আমি যখন নিশীথ রাতে 
        মিষ্টি সুরে ভেঁপু বাজাই! পাতার ছাওয়ায়, চটের দাওয়ায়,  পথের ধূলায় 
লক্ষ মানুষ গভীর ঘুমেও জেগে ওঠে
           বুক চাপা কান্নায় l

আমি যখন উষার আলোয় 
       দক্ষ সুরের ভেঁপু ধরি!
শত শত কুড়ানি তখন রাস্তায়
  বলে,.. এসো আমাদের সাথে সব সব আবর্জনা নির্মূল করি l
      আমার দক্ষ ভেঁপু ঘরে ঘরে
         বাজুক মানবতার সুরে সুরে ....



জং ধরা নবীন
ফিরোজ আখতার



আমরা সবাই গাই নবীনের নব জয়গান
বাহুমাঝে আঁকড়াই, সুখের পরশের সম্ভোগে-
হিসাবের খাতা'টি অাগলাই সুখভোগের রোগে !
পুরোন'কে কতো অনায়াসে দে'ই ডাস্টবিনে স্থান ৷

গত রাতের শিশির ঝরে পড়ে সকালের রোদে,
পাখিরাও জেগে ওঠে, ভাঙে জীর্ণ রাতের বাঁধন-
মেখে নিয়ে রোদকণা, রামধনু'তে অবগাহন
রাতের স্বপ্নরা ফুঁপিয়ে কাঁদে বিগতের জঠরে ৷

নতুন বৈশাখ যেন হাসে নতুন কনের সাজে
বিগত চৈত্রের মলিন পোষাক ছাড়ে লহমায়-
পুরোনরা তবু প্রাণপণে নতুনকে পেতে চায় ।
নতুনের উচ্ছ্বলে'তে দুনিয়া ভাসে রঙীন লাজে !

তবু কতো মেয়ে ধর্ষিত হয় নতুন বছরেতে
মানবতা রাঙা হয় জং-ধরা পুরুষ-দন্ডতে |



অথচ বৈশাখ
স্মৃতি রায়

নতুন যে প্রথম নয় । তবুও
ডেকে ফেলেছি ভোর ,কিশোরী
পাতা তামার পুষ্প পত্রে
হাত বুলিয়া যাওয়া দুর্বা বন। চৈত্র,
কাঠের গন্ধে শিব পার্বতীর ঘরকন‍্যা।
অপেক্ষা সরে যায় ।
চারিদিকের গোমরায় ভাসছে নৌকা।
আকাশের বেহালায় জমা পরেছে
ধুলোর শিষ।
একটা মাঠ কে আমি কচি ফুটবল হতে দেখি।
অনুপ্রাস থেকে ছুটে আসছে শিমুল
চাইছে , ভেজাতে আম ফুল কে।
বালিসের বুক পকেট, গোছানো
শষ‍্যের সংসার ।
কাঁচা ঝর্না এসে দাঁড়ায় স্নান শেষে
আয়না হাতে, বন বেড়াল
সুগন্ধে ফিরে আসে। আবার।



কালবৈশাখী
স্বর্ণালী ঘোষ

চৈতালি হাওয়ার ক্ষীণরেশ..
হঠাৎ তোমার উন্মেষ!
দুর্বার গতি তিব্র প্রকাশ
প্রস্তত হবার নেই অবকাশ।
রুদ্র মূর্তি ধরেছ যখনই
শিহরিত ধরাতল,
সবুজ আলয়ে তোমার প্রলয়
অসহায় বিহগদল!
তবু জানি,সৃষ্টির ইতিহাসে
রয়েছে তোমার দান---
ধ্বংসের মাঝেই গেয়েছ তুমি
নতুনের জয়গান।
যত স্থবিরতা, যত আবর্জনা
জমেছিল ধরাতলে,
তোমার উদ্দাম শাসনে
উৎখাত করেছ সমূলে।
তাই তো সৃষ্টির আবহে
তোমারে করি আহ্বান!
হে বীর..হে রুদ্র
তোমার নির্ভীক প্রেরণায় 
জাগাও নতুন প্রাণ।


বৃষ্টিরা
যাজ্ঞসেনী

এখানে  মনখারাপের দেশে
বৃষ্টি আসে গুঁড়ো অভিমানের মত
এখানে বিষন্ন গোধূলি 
বৃষ্টি মাখে আগ্রাসী আলিঙ্গনে
এখানে গাভীর দীঘল চোখে
মুকুরবিহীন প্রতিবিম্ব 
এখানে অবিরাম নুপুরধ্বনির ছন্দে
নালিঘাসের রন্ধ্রে শিহরন 
এখানে মুঠোভরা বৃষ্টিরা ছিল
এখানে মুঠোভরা বৃষ্টিরা থাকে
শুধু,  বৃষ্টির শরীর বদলে যায় 



নব বৈশাখ

সুব্রত নন্দী


নব প্রেরণায় বাতায়ন খোল,
শুদ্ধ সমীরণ আবার ফিরুক।
চিত্তশুদ্ধির আজ আশু প্রয়োজন!
দহনে জ্বলছে উর্বর মাটি।

নববৈশাখে হোক শপথনামা,
দাবানল রুখতে হবে ঘরেবাইরে।
লাল মাটির ঘ্রাণ নির্ভেজাল,
এখনো মরেনি শুষ্কতম শিকড়।  

চৈত্রের দাবদাহ কালবৈশাখীর কবলে,
ঝড়ঝাপটায় লণ্ডভণ্ড,বিস্তৃত প্রকৃতি!
এসো আবার প্রার্থনা করি স্নিগ্ধ বৈশাখের,
ভরিয়ে দিক প্রাণভরা আশীর্বাদের ডালি।

অন্ধকারময় জগৎ আবার আলোকিত,
আম্রকাননে ফিরুক সাদা পায়রা।
জীবনের স্পন্দন মুক্তির অপেক্ষায়,
আবার মানুষ বাঁচুক মান আর হুশ রূপে।


হোক তব জয়
দেবশ্রী চক্রবর্তী

উদ্দাম মন
হাতে হাত রেখে
ছুটলেই রোদ্দুর,
ভয় পেয়ে কোনে
বসে ভেবোনা,
হিমালয় কত দূর?
দূর কর ভয়
আসলে প্রলয়,
হবেই তোমার জয়।
কি গেছে , আর
কি আছে,
তার হিসেব নিকেশ বৃথা।
দুর্গম পথ
লড়তেই হ'বে
থামাতে না পারে ব্যথা।
কখনও বরফ,
সাদা তুষার..
কখনও গরম লাভা
পথ চলে যাও
সাথে র'বে কেউ
এ যে বৃথা ভাবা।
তাকিয়ে দেখ,
দূর নেই আর
একটুখানি সবে,
একদিন তুমি জিতবেই
তোমারই জয় হ'বে।


 আকাশকুসুম
মহাজিস মণ্ডল

জলপাই রঙের বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে আমায়
নিশুতি জলের বাঁকে বাঁকে শুয়ে আছে
খয়েরি রঙের মস্ত এক চাঁদ
কাকে যেন ভালবেসে কুয়াশার রাত
হেমন্তের মাঠে মাঠে ফেলে রেখে গেছে তার সমস্ত রূপ
তবুও অভিমানী তুমি বসে থাকো দক্ষিণের বারান্দায়
জলসিঁড়ি ভেঙে ভেঙে ঝরে পড়ে পালক
আকাশের আকাশকুসুম স্বপ্নের মতো
তোমার দুচোখে অবিশ্রান্ত-অবাদ....



মিলন
সঞ্চিতা দাস

শুভ্র বসনে এসেছ যে তুমি
ভাঙেনি তো মোর দ্বার,
ফল সম্ভারে পূজা উপাচারে
এনেছ যে উপহার
রেখেছি যে আমি পাতিয়া আসন
এসো এসো তুমি তপ্ত তপন
দহন আলোকে নির্মল হোক
বিশ্বের যত কালো-
তোমার দীপ্ত প্রভায় দেখাও
শুভ্র সফেদ আলো

নব আনন্দে নির্মল চিতে
নির্ভয় মনে জয় করে নিতে
মাস পয়লার পুণ্য প্রভাতে
আহ্বান করি সবে,
তোমার আশিসে নির্ভয় চিতে
মিলনের জয় হবে


নতুন আলোকবর্ষ
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী

বৈশাখ মানে আমার কাছে পয়লা বৈশাখ
এক নতুন আলোকবর্ষের সূচনা ।
পুরাতনের বদায়ী লগ্নে নতুনের
আহ্বানে মুখরিত প্রকৃতি -পরিবেশ ।

বৈশাখ মানে নববর্ষে নতুন পোষাকে
সাজিয়ে রঙিন হওয়ার উদযাপন,
সন্ধ্যেবেলায় দোকানে ঘুরে হালখাতা
ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ ।

বৈশাখ মানে সাদা-চুল আর দাড়িওয়ালা আমাদের প্রাণের প্রিয়
রবীঠাকুরের জন্মলগ্ন,তাঁর লেখা কবিতা,গান,গল্প,নাটকে সমৃদ্ধ 
আপামর বাঙালী ।

বৈশাখি দিনে কালবৈশাখির ঝড়ে প্রকৃতির অশান্ত রূপ,আকাশ জুড়ে সাদা-কালো মেঘেদের আনাগোনা ।
বৈশাখ মানে নির্জন রোদেলা দুপুরে
মেঠোপথে উদাসী বাউলের গান......

বৈশাখের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হোক তরুদল,পুরোনো দঃখ-গ্লানি-হানাহানির হোক অবসান ।
বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ গেয়ে উঠুক সভ্যতার জয়গান,
হিংসায় অন্ধ যারা তাদের বিবেক-বোধের হোক নবোদয় ।


বৈশাখ দিনে এসো নির্মল,এসো নির্ভয়
ভেদাভেদ ভুলে শুভ-বুদ্ধির হোক জয় ।



আত্মসমর্পন
অনিমেষ সরকার 


বৈশাখ -
অবশেষে একটা আবেদন নিয়ে পৌঁছোলাম এসে, তোমার মরশুমের দাবদাহে,
একটু অন্যরকম ভেজা রাস্তা ধরে শুকনো খসখসে
মেজাজ;
কাপড় বদলে ইতিহাসের কথা চেষ্টা বুননে...

মানানসই রঙচটা পেঁয়াজকলির দেওয়াল  লিখন,
স্পর্শটা খুঁজতে যেতেই উঠতে হয় আতকে!
ভাঙা ডালপালা,এপ্রিলের গরম
ঠান্ডা জেব্রা ক্রসিং!
নিমিত্ত মাত্র...

শূন্য কবিতার বৈতরণী করতে পার;
দুই একবার প্রায় বাউল মন চলে গেয়ে ঝর্ণা খোঁজার সুরে...

তার দেখা  পাওয়া কি অত সহজ!
এসে দেখো তুমিও-
যদি পারো পেতে;
বৈশাখের সমন্বয়ে তোমার কল্পনার সুদূরপ্রসারী আঁধারময় লিখন..

কিছুটা পিছিয়ে আসার পর
যায় বোঝা;
কতটা আত্মসমর্পিত সংগ্রামে বৈশাখ তোমার চুলে জটা দেবে ছুঁয়ে!
তবু আর একবার;
আর একবার;
লেখার স্ট্যাটিক্স বদলে
বৈশাখের গেম স্ট্রাটেজির সামনে দাঁড়িয়ে বিষণ্ণতা ঝেড়ে উঠি আর্তনাদে!

এসেছি আমিও তোমার বুকে বৈশাখ;
নাও করে গ্রহণ তোমার বুকে!
উঠি হয়ে আগুন তীব্র দাবানলে;
অভয়ে করি সংগ্রাম!
হে আগুন ! হে আগুন !
নিয়ে নাও আমায়৷


নদীর নাম অরণ্য
শুভদীপ পাপলু


লিখিত পান্ডুলিপি'তে স্নানাসিক্ত 
সাদা গির্জার দেয়ালে পূর্বাভাস দেখেছি...
চেরি কালারের যিশু হতে ঠিকরে পড়া
নোনতা নোটবুকে কয়েকটা মাতাল 
সরীসৃপ পেয়েছি...
গ্রিল ছুঁয়ে বেঁকে যাওয়া বীভৎস মানিপ্ল্যান্ট জুড়ে
রবিবারের মতো অবাক থেকেছি,
এন.আর.আই শালি-র হাওউই জুতোয়
শুধু খুঁজেছি দুঃশাসনের লাম্পট্য;

চাইলে পেতাম-
ওই অনিষিক্ত ক্যালাইডেস্কোপ,
যা অতিথি'র মতো এসেছে ভৌতবিজ্ঞান প্রশ্নপত্রে!
ধূমপান শুরুর লোভে জাপটে ধরা লজেন্সেও পেতাম,
কিন্তু শকুন্তলা যে সেবার অংকে লেটার পেয়েছে।

কোনওদিন হাতে নিয়ে ফুঁ দিই'নি সাবানফেনায়-
কলেজ মোড়,কলেজ মোড় এসে গেছে
উঠে আসুন...
চিল-শকুনে ঠোকরাচ্ছে শিশিরের মতো শরীরটা-
অপারগ,পায়ের কাছে কেউ রেখে যায়নি
তৈরি থাকার পরিকাঠামো;

শান্ত হতে হতে নাইট ক্লাবের পথে 
প্রচুর ক্যাকটাস,অফুরন্ত স্নেহপদার্থ,অজস্র জোঁক-
এককথায় যার ডাকনাম শিক্ষা।
শুনেছি তারাপীঠ-এ মানসিক করা বরপুত্র 'আমি',
স্কুল-এ ভর্তির সময় 
একবছর বাড়ানোর ফলে
নাম'টা সমাজ হয়ে গ্যাছে...!



নিরুদ্দেশের শেষে 
সৈকত বণিক 


একটা দেশলাই কাঠি জ্বালালাম
হঠাৎ যেন আঁধার নেমে এলো 
চলে গেলাম সিন্ধু সভ্যতার ৩৪ ফুট গভীর স্নানাগারটায়... 
আড়াল থেকে দেখলাম নগ্নতার বেশে তোর অর্ধসিক্ত তনুরাশি। 
কিন্তু সেই দেহটায় আজকের মতো কালো দাগ খুঁজে পাইনি তো... 
বুঝলাম পাঁচ মাথার ভিড়
আর পার্ক স্ট্রিটের ধোঁয়া- তোকে বড্ড বেশি আপন করেছে... 
আজও কিন্তু আমি তোর চোখে 
একটা নকশী কাঁথা আর একটা সাজুকে খুঁজে বেড়াই... 
কিন্তু তোর পছন্দ তো গুচ্চিও গুচ্চির ডিজাইনার 
আর ইসাবেলা মার্চেন্ট। 
সত্যি ঐন্দ্রিলা, আমার ভালো লাগে না
ভালো লাগে না, যখন সবাই তোর বুকের খয়েরি তিলটা দেখে
নিজের বুকে হাত ঘষে। 
তুই তো জানিস, দক্ষিণেশ্বরের ঘন্টা 
আর সোনামা'র মুড়ি মাখা আমার কতটা প্রিয়! 
তবু বারবার কেন শরীর দোলাতে নিয়ে যাস
ডিজে-লাউঞ্জের ডান্স ফ্লোরে??
কেন রোজই বার্মিস ককটেলের পেগে চুমুক দেওয়াস???
না ঐন্দ্রিলা, আমি পারবো না 
স্টারডাস্টর কভার পেজে তোর নাভির পাশে সূর্য দেখতে... 
তুই বরং ছুটির দিনে আমায়
মুগের বড়া আর মোচার ঘন্ট খাওয়াস, 
পারলে শোনাস দক্ষিণেশ্বরের ঘন্টা।
স্বপ্নে বরং নিয়ে যাস হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োয়...



বৈশাখের ছবি



শিল্পী: নিপা বিশ্বাস দাস







শিল্পী: শর্মিষ্ঠা সরকার













 বৈশাখের রম্যরচনা


 সাইকেলের প্রেম
         বিবেক কবিরাজ

(এই ঘটনাটি একেবারেই কাল্পনিক, এখানে ভারতের দুই বিখ্যাত বাইসাইকেল নির্মাণকারী সংস্থার সর্বাধিক বিক্রীত সাইকেলের নামেই এই রচনার চরিত্রদের নামকরণ করা হয়েছে)

আমার বাইসাইকেলটার খুব বিয়ের সখ জাগে! কতদিনই বা একা একা কাটানো যায়? কিন্তু সাইকেলের বিয়ে তো আর মামুলি কথা নয়! সাইকেল দুনিয়া পুরোপুরি পুরুষ তান্ত্রিক। আর এখন লেডিস সাইকেলের সং্খ্যা খুবই নগন্য। তাছাড়া হালের আধুনিকা লেডিস্ সাইকেলরা চকোলেট হিরো মার্কা সোজা হ্যান্ডেলের আধুনিক সব M.T.B(Mountain terrein  bike) দের বয়ফ্রেন্ড করতেই বেশী আগ্রহী। আমার জেটপ্লাস সাইকেলটা চেহারায় সাবেকী হলেও ইয়ং সুপুরুষ পেছনের চাকায় চৌষট্টিটা স্পোক আছে আর অন্যান্য সাইকেলের তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী। সেদিন  L.I.C  অফিসের সাইকেল স্ট্যান্ডে আমার সাইকেলটা পার্ক করে ছিলাম। একজন ভদ্রমহিলা তার আধুনিকা লেডিস্ সাইকেলটা ঠিক আমার সাইকেলের পাশেই পার্ক করলেন। হঠাৎ খুব সুন্দরী লেডিবার্ড নামের লেডিস্ সাইকেলটা ভাগ্যক্রমে তার পাশে এসে দঁাড়াতে দেখে আমার সাইকেলের মনে একটা শিহরণ জাগানো অনুভূতি লাগে! কিছুক্ষন ইতস্ততঃ করে আমার জেটপ্লাস বলে, 
--এক্সকিউজ মি,  আপনার নামটা জানতে পারি কী?
লেডিস সাইকেলটা গম্ভীরভাবে রাগত কন্ঠে বলে, 
-- নামটা তো আমার গায়েই লেখা আছে পড়তে পারছেন না, ননসেন্স্! মেয়েদের সাথে আলাপ করার এটাই বুঝি আপনার কৌশল? আমার জেটপ্লাসের বিনয়ী জবাব,
--- মেয়েদের সাথে কথা বলা কী অন্যায়? 
লেডিবার্ড বলে,-- অপরিচিত মেয়েদের এভাবে নাম জিজ্ঞাসা করাটা অসভ্যতামি তা কি আপনি জানেন না?
জেটপ্লাস বলে,-- প্রথমে প্রতেকেই তো অপরিচিত থাকে, আলাপের মাধ্যমেই পরিচিতি হয়।
-- আচ্ছা আপনার মতলবটা কী বলুন তো? লেডিবার্ড রেগে গিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরও চার পঁাচটা সাইকেল  কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে  ওদের দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের আড্ডায় মশগুল হয়। জেটপ্লাস সেসব ভ্রুক্ষেপ না করে লেডিবার্ডকে বলে,
-- আপনি একজন সুন্দরী, স্মার্ট, আধুনিকা তাই আপনার সাথে আলাপ করার ইচ্ছে হোলো আর তাছাড়া প্রথম দেখাতেই আপনার প্রতি আমার একটু ইয়ে হয়ে গেছে।
-- মানে!!! কী বলতে চাইছেন আপনি? প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলে ওঠে লেডিবার্ড।
-- আরে! আরে! চটছেন কেন? একজন নারী কে দেখে একজন পুরুষের মনে প্রেম জন্মানো স্বাভাবিক নয় কি?
-- আচ্ছা আপনি কি রাস্তাঘাটে যেকোনো মেয়ে-সাইকেলকে দেখলেই কী প্রেম নিবেদন করেন? এটাই কী আপনার ধর্ম? লেডিবার্ড উত্তেজিত হয়ে বলে।
-- না,না, সবাইকে বলতে যাবো কেন? এখন তো সব মেয়ে সাইকেলের একজন করে বয়ফ্রেন্ড রয়েছে, তাই সাহসে কুলোয় না। আর আমি ব্যাচেলর একটা ছেলে, মনের মতো সঙ্গিনী পাই নি এখনো, তাছাড়া লেডিস্ সাইকেলের সংখ্যাও কম! সেই কারনে অনেক পুরুষ সাইকেলকে সারাজীবন ব্রহ্মচারী হয়ে থাকতে হয়। জেট প্লাস দৃঢ়তার সাথে কথা গুলো বলে যায়।
লেডিবার্ড কিছুটা শান্ত হয়ে উদাস গলায় বলে, 
-- তা ঠিক বলেছেন, এর জন্য কিন্তু মানুষই দায়ী। কন্যা ভ্রুণ হত্যা, বধূ হত্যা, শারীরিক ভাবে নির্যাতন হয়ে নারীর সংখ্যা যে ভাবে কমছে! তাছাড়া এখনকার মেয়ে মানুষেরা সাইকেল ছেড়ে স্কুটি আর গাড়ির দিকে যেভাবে ঝুঁকছে, মেয়ে সাইকেলের সংখ্যা তো কমবেই। তারপর আবার রাগতঃ কন্ঠে বলে,
-- আপনার কী মনে হয়, আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই?
জেটপ্লাস একটু ঢোক গিলে বলে,
-- না....,  আসলে একটু বোঝার চেষ্টা করছিলাম, আপনার যদি ব্যাক্তিগত ভাবে না থেকে থাকে তাহলে......
লেডিবার্ড সলজ্জ ভঙ্গীতে বলে,
-- না, না, আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই, আমি সদ্য কেনা তো.....! আর আপনি না খুব হ্যান্ডসাম! 
সে কথা শুনে আমার জেটপ্লাস সাইকেলের মনে লাড্ডু ফুটতে থাকে। হটাৎ করে বলে ওঠে
-- তোমার ঠিকানা যদি বলে দাও তাহলে...
-- অবশ্যই দেবো, বলে যখন বলার প্রস্তুতি নেয় তখনি লেডিবার্ডের মালকিন এসে ওকে নিয়ে চলে যায়,
আমার জেটপ্লাস সব হারানোর বেদনায় অসহায় দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার পথে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

বি. দ্র :- আমার সেই জেট প্লাস সাইকেল আমার কাছে নেই একদিন রাত্রে মনের দুঃখে বিবাগী হয়ে আমায় ছেড়ে চলে গেছে।( চুরি হয়ে গেছে)





সুস্থ থেকে প্রভাবী হয়ে উঠুন
(একটি মনস্তাত্বিক বিষয়)
অতনু মৈত্র

কিছুদিন আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, নাম ছিল pk। বলিউডের একজন নামকরা অভিনেতা সেই ছবিটির মূখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সেখানে দেখিয়েছিল pk নামক একটি জীব, যাঁকে পুরো মানবের মতো দেখতে, অন্য একটি ভিনগ্রহ থেকে আমাদের পৃথিবীতে এসেছিল। সেই গ্রহের জীবরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য কথা বলে না। এরা যোগাযোগ করে মস্তিষ্কের মাধ্যমে। যাকে আমরা telepathy বলে থাকি। যদি আমাদের গ্রহের মানুষ এইভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারতো তাহলে এক ঝটকায় কত সমস্যার এক নিমিষেই সমাধান হয়ে যেত।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের মনের সাথে মুখের কথার কোন সাদৃশ্য থাকে না। যেই কথাকে আমরা মিথ্যে কথা বলে থাকি। যার মন যত বেশি জটিল হবে, তিনি ততো সুচারুভাবে মিথ্যে কথা বলতে পারেন। এই মিথ্যে কথা ধরার জন্য কত রকমের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি বেড়িয়ে গেছে। তাও আমাদের মধ্যে মিথ্যে কথা বলার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আমরা অনেকসময় অকারণেও মিথ্যে কথা বলে থাকি। আর এরথেকেই সূত্রপাত হয় ভুলবোঝাবুঝির।
নিজের কাছের মানুষটির সাথে সম্পর্ক রক্ষার ত্যাগিদে, অকারণে মিথ্যে কথা বলা এড়িয়ে চলুন। এতে পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
আমরা সাধারণত তিনটি কারণে মিথ্যে কথা বলে থাকি সেগুলি হলো-
(i) অনেক সময় আমরা নিজেকে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকি। অবশেষে শ্রোতা যখন আসল সত্যটা জানতে পারেন, তখন আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা তার কাছে ক্ষুন্ন হয়। পরোক্ষ ভাবে মিথ্যা বলে আমরা নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে আনি। তাই অপ্রসঙ্গিক মিথ্যে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
(ii) অনেকসময় নিজের দ্বায়িত্ব কর্তব্য ঠিকমতো পালন না করতে পারলে আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকি। আর এরফলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং এরথেকে চরম কিছু দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে। সাংসারিক জীবনে এরূপ কার্যের খুব বড়ো প্রভাব পরে। তাই এক্ষেত্রে নিজের দ্বায়িত্ব পালনে অপারগ হলে তার প্রকৃত কারণটি সবার সামনে তুলে ধরা উচিত। না হলে নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়া উচিত। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝির একটা চরম সম্ভাবনা থেকেই যায়।
(iii) যে মিথ্যে কথা বললে কারো উপকার হয়, সেটা বারবার বলা উচিত। একধরনের মিথ্যে হাজারটা সত্যির থেকেও বেশি গুরুত্ব রাখে। আমরা অনেক সময়ই নিজেদের কাছের কাউকে তাৎক্ষণিক আঘাতের থেকে রক্ষা করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা কথা বলে থাকি। যেটি সুচারুভাবে বলতে পারলে কৃতিত্বের দাবী রাখে। তবে দেখতে হবে যাঁকে বলছেন, তিনি যেন আপনার মনের অবস্থা বুঝতে না পারেন।
যেই মানুষের মধ্যে সততা আছে তার মধ্যে অবশ্যই সত্য কথা বলার সাহসও আছে। আর সত্যের পথেই আসে মানসিক শান্তি। আর প্রতিটি মানুষের মানসিক শান্তি তার শারীরিক সুস্থতার সাথে জড়িয়ে আছে। যখন একজন সৎ মানুষ সত্যের পথে চলেন, তখন সেটাই তাঁর সবথেকে বড়ো পরিচয় হয়। আর হয়তো তিনিই মানবসমাজকে প্রকৃত দিকনির্দেশ দিতে পারেন।
পাঠকগনের কোন মতামত থাকলে অবশ্যই জানাবেন।








বৈশাখের কবিতা-তৃতীয় পর্ব

চিরনূতন
নমিতা কুণ্ডু

হে নববর্ষের প্রথম সূর্য
তোমাকে জানাই প্রণিপাত।
তোমার জন্মের সেই
আদিমতম সময় থেকেই
এসেছে নতুন ভোর
এসেছে নতুন আলো
আলোকিত করেছ জগৎ
বিভোর করেছ প্রাণমন
আপন ছন্দে বয়ে নিয়ে গেছ
প্রত্যেকটি জীবন---
জীবনের এই পথ হাঁটা
যে প্রাণের আলোয় 
জানি সে আলো হয় একদিন
জীর্ণ বিষণ্ণ
তবু জীবনের দীর্ঘ পথ হাঁটার শেষে
আবার আসে
সেই আদিমতম
নতুন সূর্যের নতুন আলো
নতুন মায়াবী ভোর।




নদী 
খুরশিদ আল

বহু শতাব্দীর পর -------
আজও নদীর বুকে জলতরঙ্গ বাজে।
মেঘ মল্লার মাঝির কোলাহল,
জীবন্ত লাশ ভেসে আসে।
বাউল ফকির আজও গান গায় তার একতারাতে-
প্রশান্তি খুঁজি নিরবতার,
নিরবধি জলস্রোতে খড় কুটোর মত-
সময় যাপনের চিত্র।
বেলাভূমির তীর "কবির" পান্ডুলিপির শব্দ,
শৈশবের স্নাত জীবন স্মৃতির ক্যানভাসে।
নদীর পাড় ভেঙে আছড়ে পড়ে-
মৃত্যুপ্লাবনে শকুনের বিজয়ল্লোস।
পলির বুকে স্বাস্থ্যবতী ফসল,
চাষার মুখে হাসি ফুটিয়ে।
কিছু অসমাপ্ত কাব্য কবির কল্পনায় ,
নদী আজও শান্তিপ্রিয়।
খেয়া পারপার পরাণ মাঝি আজও বেঁচে রয়,
নোঙর টেনে দূর্বিষহ জীবন বাউলের গানে।



নিষ্পাপ শয্যা
সুপ্রীতি বর্মন


নিষ্পাপ বুকে মাথা পেতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পাশে আঁচল ফেলে, 
মুখেতেই দিয়েছি তুলে তোমার ক্ষুধার গ্রাস।
হরদম তুমি ভালো থাকতে চেয়েছো, 
বাঁচতে চেয়েছো শোনা বা না শোনার অজুহাতে।
ধরতে গিয়েও ধরোনি হাত অভিমানে নাক তুলে লাল করে, 
সরে সরে হেঁটেছো সাইকেল ধরে একক্রোশ দূরে।
সকল অবসাদ ঢালতে লেগেছো আড়ালে আবডালে অন্ধকারে এই ফুটবে ফুটবে করছে, 
শতাধিক সূর্য।
তোমার নিঃশ্বাসে বিলীন আমার শারিরিক ক্লান্তি, 
আজ তো পরিশ্রমী হতে চায় ভ্রমর, তাই ক্ষণে ক্ষণে মধুপানে উদ্যত।
পায়ের তলায় মাখামাখি রেনু হঠকারিতা আষ্টেপৃষ্ঠে দেবে লেপে গর্ভাশ্রয়ে, 
তখনি যেন জানান না দেয় সঙ্গমের ফলশ্রুতি, 
নিতে চাইনা আর পলাতক প্রেমিকের ভার,
পায়ের উপর আশ্রয়ে স্থিত আরেক শরীর।
জিহ্বার লেহনে রসের উচ্ছ্বসিত সমুদ্রে অবৈধ স্নান বারেবারে।
তোমার কি পরিচয় আমার শরীরে যে রেখে যাচ্ছো স্মৃতির চালচিত্র।
হবে না তো কোনদিন চোখের জল, ধীরে ধীরে পলি জমে হারাতে থাকি স্বাধীন বৈঠা, 
তোমার হাওয়ায় মেলেছি ডানা, 
চাইনা আর হারাতে নাব্যতা।
সমর্পনে নেই কোন বিরাম, তবুও শেষ হয়েও হয়না শেষ, 
কিছু যেন থেকে যায় বাকি।
তোমার হাত ধরে আরো কিছুটা পথ চলা।
দিনলিপির অর্ধাংশে অবাক চোখে চায়, 
বলে কাকে তুই ফেলে এসেছিস।
নিতে চাস না আর সঙ্গে ধরে রাখতে আবার।


মাটির নাগালের বাইরে মার্বেলের পাষানপ্রস্তর অবরুদ্ধ নিঃশ্বাস, 
ঘন ঘন উর্ধ্বগতি উষ্ণ প্রশ্বাসে অনুরনন চাইনা শুনতে।
তুমি নেবে না আমাকে আর কোনদিন।
বক্ষের লোমকূপে জমানো চুম্বনসিক্ত সঞ্চয় আমার ঘ্রান, 
তোমার ঘামের অসুখে আমার নিশ্চিত আশ্রয় আকাচা রুমাল।
এই পকেট থেকে বের করছো তপ্ত নখের শিষের আঁচড়, 
ক্ষতবিক্ষত বুকের বাঁদিকটা আমৃত্যু ধকধক করো তুমি, 
বলে যাও একনাগাড়ে আমি আছি, আমি আছি।
পরিশ্রান্ত দিনের ব্যস্ততায় মুখ গুঁজে ব্যাগ কাঁধে ফিরছো যখন ধরে, 
তখন কি পেছু ফিরে এখনো বারবার চাও, 
আমার চুপটি করে রাজপথের কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা।
একদৃষ্টিতে থ হয়ে তাকিয়ে থাকা, 
তোমার ফেলে যাওয়া পথ, 
তোমার মুখের সেই নিষ্পাপ হাসি।
সত্যি বলছি জানো তো আজো আমায় পিছু ডাকে।
সম্পর্কের টানাপোড়েনে হৃদয়ের গাঁটছোলা বন্ধনী কবেই গেছে ছিঁড়ে।
তুমি তো জ্ঞানপাপী জেনেও জানোনা।
করে যাও অবান্তর আলাপচারিতা।
আমার দুরারোগ্য ব্যধি তোমার স্পর্শ।
কেশের ঝোপে তোমার মাথার শূন্যভার, 
ধুকপুকানি বেড়ে যায় বুকে।
তোমাকে বহন করে চলেছি প্রতিক্ষণে, 
এও ঐ নিকোটিনের গন্ধ মুখের প্রশয়ে, 
আড়ালে একান্তে পরম টানার ভোগ্যসুখ।
টানতে গিয়ে অস্তিত্বের যুগসন্ধিক্ষন।



কালবেলা
রুমা ঢ্যাং অধিকারী 


মৃত্যুনিনাদ ভাসে সমীরে,
ক্ষণিক ধূলিঝড় ঢেকে নিয়েছে তার মাঝের পথ

মধ্যাহ্ন দুপুর ধূসর মন পোড়ালে
নির্জন ঝাউতলে 
বালিয়াড়ি মাথা চাগাড় দিয়ে ওঠে

নদীতটের একাকিত্বে ঘাসফুল নুয়ে পড়ে,
আর একলা বাউল একতারায় টান দেয় 
বেজে ওঠে 
একক সুর।

আকাশ চুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে কালবৈশাখী মেঘ-
এখনি বোধ হয় অন্তরস্থ কোন ঝড়জল রক্তে ভেজাবে শরীর

একটু নির্জন কোন হাহাকার জানিয়ে যায়
একটা ডাহুকী পুকুরপাড়ে মাটির নিচের তল খোঁজে

শ্রাবণধারা নামতে দিও গ্রীষ্মকালীন শরীর বেয়ে
একটু না হয় ভিজি মনখারাপের বৃষ্টিতে
আজ কালবেলা লালিত হোক 
শুধু আমার মননে।





এক খন্ড বৈশাখ
মাম্পি রায়

অগ্নি দিনের তপ্ত আভাস,
      উষ্ণ দুপুরবেলা, 
বছরিয়ার দামাল হাওয়ায়,
      এল বৈশাখ ভেলা,
মঞ্জুরিত শাখায়,শাখায়,
নব মুকুল, নব ধানে
নব সুরে নব প্রাণে
ডাক ছেড়েছে কুহুতান।

কালবোশেখির উন্মাদনা,
এবার বুঝি করছে তাড়া,
ঘুর্ণিঝড়ের লাগাম ধরে,
এল বৈশাখ সবার ঘরে।
গণেশপূজোর ডামাডোল,
হালখাতা আর খুশির রোল।

নতুন জামা,নতুন স্বপ্ন,
নতুন আশা নতুন ভোর।
নবীন হোক সংকল্প সব,
যাক ঘুচে যাক নিশি পুরাতন।



গ্রহন
রাহুল ঘোষ 

অমাবস্যা পূর্ণিমা তে গ্রহন হত এতকাল, 
অধুনা সভ্যতা গ্রহন সম্পূর্ণ পীঠস্থান ।
কর্ষন অভিশাপে জর্জরিত ভাবনা ;
লজ্জিত অধুনা -মস্তিষ্কের অর্থোডস্ক সমীচীন ।
গ্রহনাকাশ এখন মাটিতে পর্যবসিত-
তারিখ পেন্টিং উওেজনায়, সময় লোলুপ দৃষ্টিতে। 

গ্রহন শুরু হল -
ভেজা মাটিতে ফুলের ঘ্রাণ;
কতিপয় পোকারা বাসা বাঁধে ,
রাতের অন্ধকারে সুপ্ত চেতনা জাগে,
বাতাসের কাধে বন্দুক রেখে কামনার ছক কষে ।

গ্রহনের মধ্য-
নির্জনতার ছায়ায় পোকারা গ্রাসের থাবা বসায়,
নিঙরে নেয় রস মাটির বক্ষচিরে;
চিৎকার কানে পৌঁছায় না -বাধা পায় গাছে,
যন্ত্রণা হয় সম্পূর্ণ অবয়বে।
গ্রহন সমাপ্তি(মোক্ষ)
একে একে পোকারা তৃপ্তি মেটায়- বিনা কন্ডোমে, 
যতটুকু নিঃশ্বাস ছিল অবলা মাটির,
রাসায়নিক বিষ ভরে দেয় তার মুখে
হত্যা শেষে -পালিয়ে যায় পোকারা নিজ দেশে। 
  
দৃশ্যমানতা-
 সমাজের  বিষাক্ত চোখে অদৃশ্য গ্রহন,
গ্রহনের স্থিতি কিংবা গ্রাসামান আজ বর্তমান, 
পাক পাএ পরিত্যাগের বিধিনিষেধ নেই;
স্নান করলেই পোকা তুমি পবিএ।


অবিশ্বাস
  জয়ন্তিকা মণ্ডল 

অবিশ্বাসের ঝড় উঠেছে..
প্রেমের গিট আলগা হয়েছে
ঘুমহীন নিশীথ পার হয়
একা রাত জাগি।
কখনোই জোর করে-
করিনি চেষ্টা ধরার,করিনি তো ছোঁয়ারও।
সুগন্ধি মাখতে গিয়ে পেয়েছি পোড়ার গন্ধ।

শীতের রাতের মুখের ধোঁয়া
উষ্ণতা খোঁজে,নিশ্বাসে জ্বালা ধরায়।
স্নেহের পরশ পেতে গিয়ে দিয়ে ফেলেছি
নিজের অজান্তেই 
অসহ্য যন্ত্রণা,কষ্ট...
-যা ক্রমশ প্রকট করেছো তুমি।
ইচ্ছাকৃত ভুলগুলো কখনও ঠিক হয় না
চেষ্টা করোনি শুধরানোর
কারণ বিশ্বাসের গোড়ায় আঁচড়...

          

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
দেবব্রত সেন

১,
তুমি কিছু মনে করো?
ভালোবাসার জন্য আরও কিছু!
না! আমি একদম চাইনি,
শুধু হৃদয় পৃথিবীটা
নীল আকাশের মতো
মেঘের ভেসে যাওয়া
আসমুদ্র হিমাচলের মতো।
চাইনে তোমার শরীর দেহ
পৃথিবীর আবহমান কালের জন্য।
২,
প্রজাতির
কি সুন্দর রুপ  লাবণ্য
সবুজের মগজে
ধুসর পৃথিবীর ছেড়া পান্ডুলিপিময়
জানার ইচ্ছে হয়....
মধুমালা প্রেমের পাখনায়
সুনীল ভালো লাগার
ভালোবাসার গানে গানে।।


আগামীর পথে 
শৌভিক কার্য্যী 

কেহ দেখিল না হায় ! 
শিশু কোলে পথে পড়ে আছে 
মাতাসম অসহায় ।
আমরা বড়ো নির্দয় ! 

অন্ধ বধির কানাইরে পথে
দেখে ফিরে ফিরে চাহি ।
চলতে পথে ব্যস্ত সবাই 
সময় কারো নাহি ।
আমরা বড়ো নির্দয় ! 

আমরা দিব্বি আছি নিত্যনতুন দিনে
মানবতা বেঁচে কিনে ।
চলার পথে স্বার্থ খুঁজি নিজের আনন্দে ।
আমরা পারিনা আবার দাঁড়াতে উঠে
নতুন নতুন স্বপ্ন রচে , নতুন বিশ্ব গড়ার পথে ।
আমরা কভু করি না ভয় , দীপ্ত উদয় 
করোনা মনে সংশয় ।
এসো নির্মল, এসো এসো নির্ভয় 
তোমারই হোক জয় ।


হে জীবন
সুপর্না চৌধুরী


হে জীবন!
তুমি নির্মল,তুমি নির্ভয়,তুমি সুন্দর;
তোমাকে পাই ফুলের স্পর্শ সৌরভে,
তোমাকে পাই ঝড়ের বেগে,
তোমাকে পাই বজ্রের কষাঘাতে।
তুমি নির্মল, নির্ভয়, অকপট!

হে জীবন!
তুমি এসো পরিপূর্ণ সাজে
দেখাও তোমার ভয়ংকর রূপ।
নির্ভয় আবেশে
"জ্বালাও পেটে অগ্নিকনা, নাইকো তাহে প্রতারণা"
হে নির্মল, নির্ভয়, অকপট!


রূপকথার কন্যা সাগর জলের   তলা থেকে
তোমার অস্বচ্ছ অসত্য রূপ দেখে
ভয়ার্ত হয়ে ওঠে।
তোমার নির্মল আলোক নোনাজল ভেদ করে
দেখাক তোমার নির্ভয় রূপ।
সিন্দবাদের কঠোর সংগ্রামে
সে যেন চিনে নেয় তোমার মুখ।


হে জীবন!
নব নব রূপে এসো,
এসো নির্মল, নির্ভয় হয়ে
তার বাহু ডোরে।








অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা
বৈশাখ সংখ্যা


No comments:

Post a Comment