বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
শেখ একেএম জাকারিয়া
জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ক্ষণগণনার মাধ্যমে গত ১০ জানুয়ারি সমগ্র বাংলাদেশে পালিত হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বাস্তুকলাবিদ, পাকিস্তান কারাগৃহের জনশূন্য কক্ষ থেকে খালাস পেয়ে তাঁর সুখস্বপ্নের বাসগৃহ সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাগমন করেন। বঙ্গদেশের বাংলাভাষী অধিবাসী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দখলকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ন'মাস বহু লোকের প্রাণহানি বা রক্তপাত ঘটে এমন যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করে। এ যুদ্ধের সর্বাধিকারী, সর্বকালের শীর্ষস্থানীয় বাঙালি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগৃহ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সে বিজয় সম্পূর্ণতা লাভ করে। এ বিজয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির জীবনে পুবদিকে ওঠা নতুন সূর্যের মতো চির ভাস্বর, মহান নেতা, ইতিহাসের মহানায়ক। যিনি স্বদেশের মাটিতে পা রেখেই শিশুর মত আনন্দে ব্যাকুল হোন। আনন্দ-বেদনার বারিধারা নামে তাঁর দর্শনেন্দ্ৰিয় বেয়ে। সেদিন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পেয়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলাদেশের আকাশ ও বাতাস। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক গভীর অর্থ ও ধ্বনিবিশিষ্ট ভাষণে বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না, সে বাংলায় আমি যেতে পারব কী-না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ ১৯৭২ সালে যুদ্ধে বিপর্যস্ত ও ধ্বংস হওয়া স্বাধীন ভূখণ্ডতে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের অধিবাসী, বাংলাভাষীদের কাছে ছিল অনেক বড় প্রেরণা। দীর্ঘ ন'মাস লড়াই, অসংখ্য মা-বোন, বউঝিদের সম্ভ্রমহানি, লাখো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আন্দোলন ও প্রাণ উৎসর্গের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পুরো দেশোবাসী যে সময়ে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখবর্তী সে সময়ে পাকিস্তানের কারাগৃহ থেকে মুক্তিলাভ করে স্বদেশে প্রত্যাগমন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতা প্রত্যাশী বাঙালি জাতির ওপর হঠাৎ অসতর্ক অবস্থায় আক্রমণ শুরু করে এবং ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় অর্থাৎ ২৯০ দিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগৃহে বন্দী ছিলেন। সেখানে তিনি প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন। পরিশেষে সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে মুক্তিলাভ করেন এবং সুস্থ অবস্থায় লন্ডন-নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। সে থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে কৃতজ্ঞ বাংলাভাষী বাঙালি জাতি পালন করে আসছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। এছাড়া স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সকল সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করে।
No comments:
Post a Comment