নাড়ির-টান
মাম্পি রায়
সিজারিয়ান অপারেশন করে মা কেউ সখে হয় না, বেবী কোনোভাবে তার মুভমেন্ট বদল করলে,বা বেবী কোনোভাবে নর্মাল নিলে যদি মায়ের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই সিজার অপারেশন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
যারা নর্মাল ডেলিভারি করে মা হয় তারাই নাকি খুব কষ্ট করে মা হয়,তারাই বুঝে নাড়ির টান,আর যাদের সিজারিয়ান বাচ্চা জন্মায় তাদের কি কোনো কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়না?
আমার যে সব বান্ধবী রা নর্মাল ডেলিভারিতে মা হয়েছে তারা গর্বের সাথে বলে "আমি যে কি কষ্ট করে মা হলাম,সে কি মুখের কথা!তুই কি বুঝবি তোর তো পেটে কেটেছে তাও অবশ করে তুই কি বুঝবি মা হতে গেলে কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়"..
আমার নিজের অভজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সিজারে বাচ্চা জন্ম মনে, বাচ্চা জন্মের পর থেকে একটা মায়ের মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত প্রতিবন্ধি হয়ে বেঁচে থাকা।
আরে যাদের নর্মালে বেবী হয় তাদের নাড়ি ছেড়া হয়, আর যাদের সিজার হয় তাদের হয়তো নাড়ি ছেড়া হয়না কিন্তু, নাড়ি কাটা হয়। কিন্তু, বাচ্চার প্রতি মায়ের টান, নাড়ির টান সমান ভাবেই থাকে।
নর্মালে যারা মা হয় তারা বলে, আরে, সিজারে কিসের কষ্ট শুধু পেট কাটে!!! আচ্ছা, তারা কি জানে আদৌ! সিজারের সময় পেটের নীচের ৭টা পর্দা কেটে বেবীটাকে পৃথিবীর আলো দেখানো হয়।তারা তো এটাও জানেনা সিজার করার আগে হবু মায়েদের এ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় যার জন্য বোঝা যায়না পেট কাটার যন্ত্রণা টা। সিজারের দিন ভোর রাত থেকে সিজার অপারেশন হওয়ার পর মোট ২ দিন না খাইয়ে রাখা হয় মা কে, বেবী ডেলিভারি হওয়ার পর ৩ দিনের মাথায় শুধু মাত্র মুসুর ডাল আর মুড়ি ছাড়া ৪ দিন কিছুই খেতে দেওয়া হয় না, এদিকে ৩ ঘন্টার ভিতর ৩টা করে স্ল্যালাইন টানানো হয়। হ্যাঁ, পেট কাটার যন্ত্রণা টা মাত্র আধ ঘন্টার জন্য টের পাওয়া যায় না,কিন্তু মোটা সিরিন্জের ইনজেকশন টা জখন পিঠ ভাঁজ করে মেরুদন্ডে দেওয়া হয় মনে হয় যেন ঝনঝন করে ওঠে সারা শরীর, পায়ের তলায় যেন বিদ্যুৎ এর শক লাগে, কিছু বোঝার আগেই কোমড়ের নীচ থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে গেল,চোখের সামনে ঝাপসা দেখা শুরু হল,বুঝতে পারছি কিন্তু বলতে পারছিনা ঠিক কি হতে চলেছে।এক হাতে চ্যানেল করা স্যালাইনের বোতল, আর এক হাতে বি,পি মেশিন,লাগানো।
মেরুদন্ডে সেই ইনজেকশন এর জন্য সারাজীবন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়,কখন পা অবস হয়ে থাকে, আবার কখনো বসা থেকে উঠা যায়না,,,,,কাপড় কাচা যায়না,,,,ভারী কিছু উঠানো যায়না তবুও আমরা সব কিছু করি এবং করার চেষ্টা করি। করতেও হবে কারণ আমরা মা ।
তারা হয়ত এটাও জানেনা, যখন অবসের সময়টা চলে যায় , ও,টির ওই ঠান্ডা ঘর থেকে মা কে নিয়ে আসা হয় সারা শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে, কি বিকট একটা কনকনে শীত লাগে, গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে থাকি,ক্যাবিনে নিয়ে আসা হয় সারা শরীর ঢেকে দেওয়া হয় ৪/৫ টা কম্বল দিয়ে,তাও কাপুনি যায়না,শেষে রুম হিটার লাগলো হয় ঠান্ডা কাটাতে।
আপনজন ছেড়ে পোস্ট অপারেটিভ রুমে থাকতে হয় ৫ দিন, ২৪ ঘন্টায় ২৪ টা স্যালাইন, নানান ইনজেকশন চলে ব্যাথা কমানোর, আর ইনজেকশন কাটা জায়গায় কী যে কষ্ট বলার মতো না,,,, তার সাথে খিচুনি, হাতে ক্যানোলাই স্যালাইন চলছে,,, ওদিকে ক্যাথেতার লাগানো নিথর শরীর থরথর কাঁপছে,,, মাথাটাও ভারী হয়ে আছে তবুও শত কষ্ট উপেক্ষা করে বাচ্চাকে বেস্ট ফিডিং করানো হয়।তারপর ও বাচ্চার প্রতি সিজারিয়ান মায়েদের টান নেই, বলা যায় কী ?
এর পরেও যদি শুনতে হয় পেট কেটে বাচ্চা হলে কীসের কষ্ট?
যদি শুনতে হয় সিজারিয়ান মায়েদের কোনো কষ্ট নেই সত্যি শুনতে খারাপ লাগে। মা তো মা ই হয়, সিজারিয়ান হোক বা নর্মাল। কষ্ট দুজনই ভোগ করে।
No comments:
Post a Comment