Sunday, May 24, 2020






আন্তর্জাতিক কবিতায় বাঁকবদল এবং বাংলা কবিতায় তার প্রভাব ও সমকালীন সময়ে রবীন্দ্রকাব্য 
রাহুল গাঙ্গুলি 


ঝেড়েকেশে গৌরচন্দ্রিকা (পর্ব - ১)
:
:
ঠিক দিনদুয়েক আগে, এই বিষয়ক ১টি লাইভ অনুষ্ঠান করি ফেসবুকে।সেখানে বেশ কিছু তরুণ প্রজন্মের সন্ধানী শিক্ষার্থি বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আগ্রহ বোধ করে এবং তা ব্যক্তিগত স্তরে, আমাকে জানায়, যার ভিতরে আমিও ১জন।যেহেতু ১টি লাইভ অডিও-ভিস্যুয়াল অনুষ্ঠানে সময়টি বড়ো নির্দিষ্ট থাকে, বেশি কিছু ব্যাখ্যা করা যায় না।সুতরাং, সেসব অনেককিছুই চিন্তা করে এই লেখাটির সিদ্ধান্ত।তবে, আরো ১টি উদ্দেশ্য আছে, যা এবং সমান্তরাল আরো কিছু জায়গা, এই শুরুর কথাপর্বেই স্পষ্ট করে দেওয়া উচিৎ।তা হলো, বিগত ২দশক ধরে বাংলা কবিতাকে নানান্ ভাবে দেখা এবং অনুভবের চেষ্টা করতে করতে, যখন বাংলা কবিতার চারপাশে তাকাচ্ছি ~ যেটা ব্যক্তিগতভাবে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে প্রতিনিয়ত রেকর্ড হচ্ছে, তা হলো কোথাও না কোথাও বা আরো স্পষ্ট করলে কোনো না কোনো দশক পর্যন্ত গিয়ে আটকে যাচ্ছে।যদিও, এইরকম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ভার পাঠকের কাঁধে এখনই চাপিয় দিতে চাইছি না।যদি তাই হতো, তাহলে চর্চার কোনো গুরুত্ব থাকে না।আর, চর্চার প্রকৃত অভ্যাস প্রশ্ন করতে শেখায়।তাই চর্চার প্রয়োজনীয়তা চেয়ে চাইছি লেখাটিকে সর্বসম্মতভাবে স্বীকার না করে, অনেক অনেক প্রশ্ন উঠুক।এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে এবং কোথা থেকে বিষয়টি শুরু করা যাবে? এবং রবীন্দ্রনাথের নামকরণটিই বা এখানে এলো কেনো?শুধু তাইই নয়, বাংলা কবিতাকে আন্তর্জাতিক স্তরের তুলনায় দেখতে গেলে, কেনোই বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বারবার আসছেন? এখানে "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" নামকরণটির আগে, কোনো 'বিশ্বকবি' বা কবিদের গুরুদেব 'কবিগুরু' জাতীয় কোনো বিশেষণ দিচ্ছি না ইচ্ছাকৃত ভাবেই।আর সেটা একারনেই যে ~ এইরূপ বিশেষণ দিতে গেলে, আমাদের যে প্রশ্নগুলোর সন্ধান করতে হবে, আশা করাই যায় সেখানে বহু রহস্য উন্মোচন করা যাবে।অতএব কোনো ঈশ্বরীয় ব্যখাসম্মতো ভাবে নয়, বরং রক্তমাংসের মানুষ বিশ্বের বাদবাকি শিল্পীদের আমরা যেভাবে দেখি, এখানেও দেখবো সেভাবেই।আরো ১টা বক্তব্য পরিষ্কার করা ভালো, একটু আগে যে 'প্রকৃত চর্চা' প্রসঙ্গটি টেনেছিলাম, সে বস্তটি ঠিক কি রকম? কারন হিসেবে একথাই বলা যায়, যে আশা করেছিলাম আন্তর্জাতিক কবিতায় রবীন্দ্রকাব্য প্রসঙ্গটি নিয়ে সুআলোচনা, শুধুমাত্র ৪দেওয়াল বা ইউনিভারসিটি ক্যান্টিনে নয় ~ কেউ না কেউ ছড়িয়ে দেবে বাংলার সর্বত্র এবং তা কবি থেকে অ্যাকাডেমিশিয়ান যেকেউ হতে পারেন।কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি।অ্যাকাডেমিশিয়ান বা বেশিরভাগ মূল ধারার কবিই মেনে নিয়েছেন ঈশ্বর-রবীন্দ্রনাথ বা বাঙালীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত শেষ আইকনিক ব্র্যান্ড (অবশ্য, এই ২য় অংশের মধ্যে যে বেশ কিছুটা ব্যবসায়ীক্ স্বার্থ আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না)।আর যারা রবীন্দ্রচর্চার শৈল্পিক তাৎপর্য নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবেন, তাদের কাছে ঈশ্বর যৌক্তিকতা ঠিক বাজারী পণ্যের মতো নয়।কিন্তু এই সংখ্যাটি নিতান্তই ভীষণ নগন্য।আর এই তাৎপর্যকে দাঁড়িপাল্লায় রেখে তুল্যমূল্য বিশ্লেষণ 
যারা করার চেষ্টা করেন ~ গড় বাঙালীর কাছে : বিদ্রোহী ও স্রোত বিরুদ্ধ।অর্থাৎ, এই একবগ্গা ও  একনায়কতন্ত্রের বাজারে, অচলায়তনের বিরোধীতা নিয়ে, কোথায় কোনো প্রশ্ন ওঠাতে নেই।ওঠানো যাবে না।তাই, ইচ্ছে না থাকলেও ~ অন্ততপক্ষে বাংলা কবিতাকে ও ভাষাকে ভালোবেসে লেখাটির অবতারণা।লেখাটি যদিও ধারাবাহিকভাবে চলবে, তবুও মোট কটি পর্বে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে উপস্থাপিত করতে পারবো, তা এখনই আমি বুঝতে পারছি না।এসবকিছু ছাড়াও, যা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ ~ তা হলো, লেখাটি লেখবার সময় হাতের সামনে থাকা বই ও পত্রপত্রিকা ছাড়াও, যেটির ওপর সাংঘাতিক ভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে, তা ইন্টারনেট।বর্তমান সময়পর্বে হাজারো তথ্যের ভীড়ে, প্রয়োজনীয় এবং সঠিক তথ্য বেছে নেওয়াটা যে অতিরিক্ত গুরু দায়িত্ব, তা নিশ্চিতভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না।তাহলে, আসুন গৌরচন্দ্রিকার অবসান ঘটিয়ে, প্রবেশ করা যাক মূল প্রবেশদ্বারে।

(ক্রমশ)




Saturday, May 9, 2020

।। লকডাউন আর আমি- ৮ ।।

কথোপকথন- ৩
শৌভিক রায়

- স্যার...ও স্যার... আছেন নাকি?
- কে?
- আমি ভার্চু স্যার। বলছি আসব?
- এসেই তো পড়েছিস। আবার পারমিশান চাইছিস কেন?
- হে হে...জাতীয় অভ্যেস স্যার। সবটাই করে ফেলি কিন্তু তবু লোক দেখানো অনুমতি চাই!
- এটা জাতীয় অভ্যেস?
- আলবৎ স্যার। বিশেষ করে বাঙালির...
- বাব্বা...একেবারে জাতে চলে গেলি! তাও নিজে যে জাত বিলঙ করিস তাতে!
- আসলে স্যার বাঙালির মতো ধ্যাষ্টামো তো কমই করে অন্যেরা...তাই বাঙালির কথাই বলি।
- থুতু ওপরে ছিটোলে নিজের গায়েই পড়ে কিন্তু ভার্চু!
- জানি স্যার। তাও বলছি। তা বাবামশাই...
- বাবামশাই? সেটা আবার কি রে?
- আপনাকে বলছি স্যার।
- আমাকে বাবামশাই বলছিস কেন?
- আহা...আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ...মাতব্বর মানুষ। আমার বাপের বয়সী। তাই...
- তাই বলে আমাকে বাবাঠাকুর বলবি?
- রাগ করেন কেন? পক্ষকাল চলছে তো...এখন এরকমই বলতে হয়।
- পক্ষকাল? মানে?
- রবিপক্ষকাল। বুঝলেন না?
- ওহহহ...তা তার সঙ্গে বাবামশাইয়ের সম্পর্কটা কোথায়?
- দেখুন স্যার...সময়কালে সময়েরটা করতে হয়। তাই বাবামশাই...
- বুঝিয়ে বল।
- যেমন দেখুন স্যার...আজকাল বসন্তে হোলি মানে ছেলেদের হলুদ পাঞ্জাবি, মেয়েদের ওরকমই শাড়ি। প্রথমদিন নেচে নেচে রবি ঠাকুরের গানের সঙ্গে এট্টু আবির আমার এই গালে আর আপনার ওই গালে! পরদিন সকাল থেকে ঋষি চার্বাকের দর্শন মেনে যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেতের পাল্লায় সক্কাল থেকেই আউট! তারপর ধরুন স্যার পুজোর সময়...অষ্টমীতে পাজামা-পাঞ্জাবি, নবমীতে প্যান্ট-শার্ট, দশমীতে মহিলাদের কম্পালসারি সিঁদুর খেলা...এটাই ট্রেন্ড এখন।
- বাব্বা! কত কী জানিস!
- শেষ হয় নি স্যার। একটু নাচতে জানলে ওই ধুনুচি নিয়ে ড্যা ড্যাং ড্যাং...ভিডিও করা বা ছবি তোলা। আর তারপরেই তেড়েমেরে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া। পছন্দ, আনন্দ, বিস্ময়, রাগ, বেদনা...এখন তো আবার যত্নও হাজির!
- এসব কী?
- ইমোজি স্যার। 
- ইমোজি?
- হ্যাঁ স্যার। এই ধরুন সমাজমাধ্যমে...
- থাম থাম। সমাজমাধ্যম ব্যাপারটা কী?
- সোশাল মিডিয়া স্যার। এই ধরুন টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক...
- ওহ। তো সেটা বল। খামোকা সমাজমাধ্যম সমাজমাধ্যম করছিস কেন?
- স্যার কবিপক্ষ। দেবীপক্ষের মতো বাঙালির অন্যতম সেরা পক্ষ। আর কয়েক বছর পর আঠারো বৈশাখ 'জাগো কবি তুমি জাগো' বলে কবিলয়া শুরু হল ব'লে!!
- কবিলয়া?
- হ্যাঁ স্যার মহালয়ার মতো।
- ইনটারেস্টিং তো। তা আঠারো কেন?
- দুটো কারণে। একটা হল পঁচিশের সাতদিন আগে। আর একটা হল কবিস্পর্শ। কবিরা তো এক একজন বাঘ। তা বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা...ওরকমই আর কি!
- উফফ তোকে নিয়ে পারি না।
- তা যা বলেছেন বাবামশাই।
- আবার বাবামশাই?
- ওই যে কবিপক্ষ!
- তার সঙ্গে বাবামশাইয়ের সম্পর্কটা কোথায়?
- ওই যে স্যার এই কয়েকদিন যা হবে সব কবির মতো হবে।
- তো?
- কবির বাড়িতে বাবাকে নাকি বাবামশাই ডাকবার রেওয়াজ ছিল স্যার। তাই এই কয়েকদিন আমরাও স্যার এই ডাক চালু রাখব।
- বটে! আর কী কী প্ল্যান শুনি!
- না স্যার বেশি কিছু নেই আর। সকাল সন্ধ্যে ওই ছবির সামনে ধূপধুনো দেব। পাজামা-পাঞ্জাবী বা শাড়ি পড়ে পা মুড়ে বসে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি করব বা গান গাইব। ছাদে উঠে কবির ছবির সামনে নাচব। মানে স্যার আমি কতটা কবিকে ভালবাসি সেটা বোঝাতে জানপ্রাণ এক করে দেব অনেকটা জানেমন স্টাইলে...
- বাপরে! বলিস কি!!
- শেষ হয়নি স্যার। 
- আরও আছে?
- আসলটাই তো বলিনি স্যার। পাবলিকের ভাল লাগল কি লাগল না সেসব কেয়ার না করে এইসবের ভিডিওগ্রাফি করে পটাপট সোশাল...থুড়ি সমাজ মাধ্যমে ইয়ে মানে পোস্ট করব! 
- এতেই হবে?
- না স্যার। অনুসঙ্গ হিসেবে বাবামশাই ডাক, দুপুরে বিশুদ্ধ নিরামিষ ও রাতে জল সহযোগে মাংস ভক্ষণ, কালবৈশাখি রাতেও 'আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে' বলে ভেউভেউ ক্রন্দন আর সবশেষে বমিটমি করে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে লাট্টুর মতো মাথা নিয়ে শয়ন...এটা স্যার মহাজন্মদিনের পর্ব। বাকি পক্ষকাল এরকমটাই চলবে তবে কম বেশি এদিক ওদিক করা যেতে পারে। শেষের দিকের প্রোগ্রামটা একটু পাল্টাবে।
- কীরকম ও কেন?
- প্রথমদিকে একটু আলুথালু ভাব থাকবে। মানে এই 'আমার এই দেহখানি তুলে ধরো' টাইপ। পরের দিকে একটু রাগী রাগী 'ভগবান বুকে এঁকে দেব পদচিহ্ন' ধরণের। মানে আঁকব না কেননা সে সাহস নেই। তবে ভাবটা ওরকম থাকবে আর কি বাবামশাই...
- নিকুচি করেছে তোর বাবামশাইয়ের। একদম পিটুনি খাবি।
- এই তো...এই তো স্যার! আমি দুর্বল বলে আমার ওপর যত কিছু স্যার। সামান্য ডাকেই খেপে গেলেন। আর ওদিকে যে ওতগুলো লোক ওভাবে কাটা পড়ল তাও চুপ করে রইলেন!
- কাদের কথা বলছিস?
- আপনি জানেন না বাবামশাই? আয়নায় মুখ দেখতে পারছেন! নিজের দেশেই লোকগুলোকে পরিযায়ী তকমা দিলেন! কাউকে আনার জন্য দিলেন উড়োজাহাজ আর কাউকে দিলেন বাসি রুটি আর একটু আচার...যা শালারা হেঁটে হেঁটে যা...মরবি তো মর। লাখ দশেক ধরিয়ে দেব। তুই তো মরা, চুপ করেই গেছিস। তোর বাড়ির টিকটিক করা লোকেরাও চুপ! আর পাবলিক? আপনি বাঁচলে বাপের নামের পাবলিকরা কবে আর কতদিন হল্লাবোল পাকিয়েছে! 
- তাই বলে অন্য কিছু হবে না? মর্মান্তিক ঘটনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু এদিকটাও তো দেখতে হবে...এরকম একটা দিন!
- দেখবেন স্যার। অবশ্যই দেখবেন। তবে স্যার, যাঁর জন্য এই উদযাপন, তিনি বেঁচে থাকলে এই অবস্থায় কী করতেন সেটাও ভাববেন স্যার। লোকটা তো আমাদের ভাবতে শিখিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছিলেন ওটাই...ভাবনাটাই স্যার বন্ধ করে দিলেন!!

(মাথা নিচু করে ভার্চু চলে গেল। ও চলে যেতেই ঝুপ করে লোডশেডিং হ'ল। 
লকডাউনের অন্ধকার আরও কালো হল বোধহয়।)


Friday, May 8, 2020




সম্পাদকের কথা 

একেবারেই এক অন্য ২৫শে বৈশাখ। কেউ ভাবে নি কোনোদিন যে, এমনটিও হতে পারে তাঁর জন্মদিন পালন! কিন্তু এটাই বোধহয় জীবনের নিয়ম। আমরা ভাবি এক, হয় আর এক। 
গত শতকের আশির দশক থেকে প্রকাশিত হয়ে চলা মুজনাইয়ের মুদ্রিত সংখ্যার পাশাপাশি, অনলাইনে প্রকাশের সময়কালটিও নেহাত কম নয়। কিন্তু এই প্রথম মুজনাই ২৫শে বৈশাখ বিশেষ অনলাইন সংখ্যা প্রকাশ করছে। সেদিক থেকে অতিমারীর এই সময় মুজনাইয়ের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। 
মুজনাই মনে করে যে, একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, ভাবনা ও সৃষ্টি চতুর্দিকে হতাশার এই মুহূর্তে আমাদের সেই মানসিক শক্তি দিতে পারে, যা আমাদের মনেপ্রাণে সাহায্য করবে এক অজানা অচেনা লড়াই করতে।
রবীন্দ্রনাথ তো শুধু কবি বা লেখক নন, তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁকে বুঝতে, চিনতে ও আত্মস্থ করতে একটি জীবন যথেষ্ট নয়। গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো ক`রে মুজনাই তাই স্মরণ করছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ মননকে।    



  মুজনাই অনলাইন বিশেষ সংখ্যা, ২৫শে বৈশাখ, ১৪২৭  


মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা 
মুজনাই সাহিত্য সংস্থার একটি প্রয়াস 
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১, প ব 
ইমেল ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা 
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 
প্রচ্ছদ- শ্রীহরি দত্ত 

মুজনাই অনলাইন বিশেষ সংখ্যা, ২৫ শে বৈশাখ, ১৪২৭







(শিল্পী- রিন্টু কার্জি)



রীনা সাহার কলমে 



তাঁর ভাবনায় লেখা "স্বর্গ হইতে বিদায়"।
আমার ভাবনায় তিনি...প্রণাম বিশ্বকবি।



  "NIGHTMARES OF A LOCKDOWN DAWN"

******************************************

WE, BOTH WERE IN OUR NOCTURNAL BALLADS

WE, BOTH WERE IN DARK OCTOPUS GRIP

THE DARK, BORN OUT OF IMPENETRABLE DARK,

NOT NIGHT; CONSUMED US

CONSUMED OUR GALAXY OF POEMS

CONSUMED OUR LYRICAL BALLADS

CONSUMED OUR VIRTUE TO DO THE VICE.






IF SINNED EYES COULD CAPTURE REAL SUN

EDEN LOST OPTICAL LENSES COULD EASILY ZOOM

AND CAPTURE THE BLAZE

BLAZE TO BURN

BURN OUR EYES EVER

THOSE EYES THAT BEHOLD THE "APPLES"

HEAVENLY APPLES, VIRGIN, UNTRODDEN "FORBIDDEN FRUITS".







(শিল্পী- পিয়াস গোস্বামী)




বিশেষ রচনা 


প্রথম শুভক্ষণ

কুমকুম ঘোষ


সাধারণতঃ বাংলা পরীক্ষার খাতায় "প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ"  রচনার প্রথম বাক্যটি অমোঘ ভাবেই হয় এইরকম--"বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ, ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ই মে (মৃত্যু ৭ই আগষ্ট,১৯৪১: মনে রাখার কি সুবিধা!) কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি তে জন্ম নিলেন মহান মানবতাবাদী , প্রাজ্ঞ দার্শনিক  ও স্রষ্টা  কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর"।     যুগে যুগে ছাত্র ছাত্রী নির্বিশেষে এইভাবেই  কবিগুরুর জীবনবন্দনায় কাঙ্খিত নম্বর উদ্ধারে প্রাণপাত করে চলেছে প্রতিবছর। 

কিন্তু কবি নিজে তাঁর জন্মতারিখ সম্বন্ধে কি বলেছেন? পাঠক আশ্চর্য হবেন সেই চিঠির কিছুটা পাঠ করলে। শ্রীমতি রানু অধিকারী (পরবর্তী কালের লেডি রানু মুখার্জি) কে তিনি শান্তিনিকেতন থেকে ১৯১৯ সালের ,৭ ই মে একটি  চিঠিতে লিখেছেন.....   

      "কল্যানীয়াসু
                       রানু ইংরেজি মতে আজ আমার জন্মদিনের পরের দিন , বাংলা মতে আগের দিন।আমার আসল জন্মদিনে ইংরেজি তারিখ ছিল ৬ই মে , বাংলা তারিখ ছিল ২৫শে বৈশাখ। তখনকার পঞ্জিকায় দুটিতে বেশ ভাবসাব করে একত্রেই থাকত। কিন্তু আজকাল দেখি সেই ইংরেজি তারিখে বাংলা তারিখে ঝগড়া বেধে গেছে , তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ।এটা কি ভাল হচ্চে? যাই হোক তোমার রুমালটি বৃদ্ধিপূর্বক সেই দুটো দিনের মাঝখানে এসে সেই ঝগড়াটে তারিখ দুটোকে সখ্যবন্ধনে বাঁধবার চেষ্টা করেচে।"( কবির বানান অপরিবর্তিত)।

.......এবছর (২০২০ সালে) ২৫শে বৈশাখ যেমন পড়েছে ৮ ই মে' তেমনি গতবছর (২০১৯ সালে) দিনটি ছিল ৯ই মে'। এই দিনতারিখের পালাবদলের পর্বটি স্বয়ং কবিকেও বোধকরি ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল।১৩৪৬ সালের  জৈষ্ঠ্য সংখ্যার প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল  যেটি ২৬শে বৈশাখ,১৩৪৫ সালে(কবির মৃত্যুর তিনবছর পূর্বে) লেখা হয়েছিল।
সেখানে রবীন্দ্রনাথের জন্মের ইংরেজি জন্ম তারিখ নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় কবি কালিম্পং থেকে কিশোরীমোহন সাঁতরার প্রশ্নের উত্তরে  একটি পত্র লেখেন......
      "রোসো,আগে তোমার সঙ্গে জন্ম তারিখ নিয়ে হিসেব নিকেশ করা যাক। তুমি হলে হিসেবী মানুষ। যে- বছরের ২৫শে বৈশাখ আমার জন্ম সে - বছরে ইংরেজি পাঁজি মেলাতে গেলে চোখে ঠেকবে ৬ই মে। কিন্তু ইংরেজের অদ্ভূত রীতি অনুসারে রাত দুপুরের পরে ওদের তারিখ বদল হয়, অতএব সেই গণণায় আমার জন্ম ৭ই।---কথাটা মনে রেখো।".........

শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনের অভিলেখ্যাগারে রক্ষিত ও বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা সংকলিত রাশিচক্রের বিবরণ- সংবলিত খাতায় আরও কিছু তথ্য পাওয়া যায় :
             '.. কৃষ্ণপক্ষ ত্রয়োদশী সোমবার রেবতী মীন শুক্রের দশা ভোগ্য ১৪ ।৩।১১।৩৯
৭ই মে ( ইংরাজী মতে) প্রভাতে ২ - ৩৮ -৩৭ সেকেন্ড গতে জন্ম' ( রবিজীবনী--প্রশান্তকুমার পাল)

অর্থাৎ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (১৭৮৩ শকাব্দ) ২৫শে বৈশাখ সোমবার ,ইংরেজি মতে 7 May 1861 মঙ্গলবার  জোড়াসাঁকোর ভদ্রাসন বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয় এক শুভক্ষণে।

২৩শে বৈশাখ ১৩৪৮ সালে ( কবির মহাপ্রয়াণের ৩ মাস পূর্বে) অসুস্থ কবি যে গানটি রচনা করেন ও যেটি তাঁর জন্মদিন (অন্তিম) উপলক্ষে গাওয়া হয় সেটিতে সুর দিলেন তিনি নিজেই  এবং উদয়ন গৃহের প্রশস্ত বারান্দায় তাঁর সম্মানে আশ্রমিকরা সমবেত কণ্ঠে গাইলো সেই গান.......
           হে নূতন
   দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।।
তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন
           সূর্যের মতন।
 রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।
         ব্যক্ত হোক জীবনের জয়
ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়।
উদয়দিগন্তে শঙ্খ বাজে    মোর চিত্তমাঝে
          চিরনূতনেরে দিল ডাক


          পঁচিশে বৈশাখ।।


(শিল্পী- রাজা বিশ্বাস)





তুমি আর একবার যদি -?
          মীরা সরকার 




'বিনোদ বৌঠান' !!
কে যেন ডাকলে আমায়,রবিবাবু।
বেনারসের বোটের সংসারে আমি
সর্বাঙ্গে প্রেয়সী মোহনীয়া। বাবু মহেন্দ্র চেয়েছে আমায়। আগ্রাসে , আশ্লেষে ,উন্মত্ত অতৃপ্ত প্রেম।দেখ পূন্যসলিলা গঙ্গায় আমি তাই এই মধ্যযামে। হীরক খচিত নদীজল উছলে ওঠে। না এই অভিসারে নেই তার নাম। পায়ে ঠেলেছে সে বিনোদিনীর অহংকার। রত্ন চেনেনি সেতো। কি চায় তোমার বিহারী? আমি কি কিছুই নই এই আকাশের নীচে? বিধবা ? শুধু কি বিধবা "বিনোদ বৌঠান"? 
যৌবনের স্বত্ব তার প্রাপ্য কেন নয়? চোখ তুলে কে দেখে তার রূপ? তার যাপনের সুখ, জীবনের তৃষা , কোথায় লিখেছ রবি বাবু? দুহাতে মহেন্দ্র যদি চায়? আমাকে কেন চায়? দুই প্রবল তৃষ্ণা মিলে যায় । জীবনের স্বাদ পায়।



ঐখানে ভুল লিখেছিলে তুমি। বিহারীকে কেন টেনে আনা ? আশাময় জীবন যে তার। হা হা তোমার মহেন্দ্র ,তোমার আশা দলিত কতবার আমার বিভঙ্গে ।পারি আমি পারি কতশত গল্প উপন্যাসে। মহান বা ঘৃণ্য কিবা যায় আসে? তুমি আর একবার যদি কলম ধরতে রবিবাবু!! 

(ছবি- লেখক)



প্রবন্ধ 


আজি বিজন ঘরে 
লক্ষ্মী নন্দী

রাত পোহালেই ১৪২৭ শের ২৫ বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মদিন। এই মহাপুরুষের জন্মদিনে আমরা প্রতিবছর যেমন পূজা  প্রার্থনা উৎসব আদি করে থাকি সেটা এ-বছর পৃথিবীর এই ভীষণ দুর্দিনে  বাঙালি জাতিকে হাজার উৎসবের বেগ দিলেও সম্ভব নয়। সম্ভব নয়  আসন্ন সর্বনাশের প্রত্যক্ষ ঘনঘটাকে উপেক্ষা করা। কারণ আমরা স্মরণ কালে এরকম আর কোনও দিন পৃথিবীকে দেখিনি। পৃথিবীর সমস্ত  মানুষ আমরা আজ একই সমস্যায় আক্রান্ত। একই আতঙ্কে বিপর্যস্ত। একই অনিশ্চয়তায় বিষন্ন। সবাই স্বনির্বাসনে রয়েছি। হাতের উপর হাত রাখা নিষিদ্ধ । সুতরাং আমরা বাঙালিরা যতই আমদী প্রবণ হই না কেন। আজ আর কোনো উৎসব আমাদের সাজবে না। সম্ভব নয় কবিপক্ষে সেই নাচ গান, গলা কাঁপিয়ে আবৃত্তি  আর অসম্ভব ভাষণের বিনোদনের উচ্ছ্বাস। দক্ষিণপন্থী বা বামপন্থী - কারা রবীন্দ্রনাথকে বেশি চান, সেই নিয়েও চলবে না মাতামাতি প্রদর্শনী। যাইহোক এবার সেই ভাবে নাই বা হলো বাহ্যিক আড়ম্বর অনুষ্ঠান। তবে সত্যিকারের রবীন্দ্রসেবাইত বা রবীন্দ্র পূজারী যারা অন্তরের ভক্তিতে তাঁকে স্মরণ ও বরণে, যে -যার মতোন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও যে মন কিছুক্ষণের জন্য  মালিন্যমুক্ত হয়ে আনন্দ পাবে এটা নিশ্চিত। তাই এবার মননের পুজায়  তাঁর মহান আত্মার সঙ্গে যোগ স্থাপন করার চেষ্টা করব আমরা। এই ঘোর অন্ধকারেও আমরা  যেন একটু  আলো দেখতে পাই। তাঁর আত্মাকে দর্শন আর বাণীকে সাধনায় সফল করতে এবং কর্মকে পথ নির্দেশ করতে যদিও উৎসবের খুব প্রয়োজন হয়তো থাকেও না। কিন্তু আমরা যে উৎসবপিয়াসী। উৎসব আর স্মরণ এর পার্থক্য ঠিক কি, সেটা গুলিয়ে ফেলি। আমারা রবীন্দ্র স্মরণকে প্রতিবছর উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করি। উৎসবে বিনোদনের প্রাপ্তি ঘটে ঠিকই কিন্তু বিনোদন আর স্মরণ যে  এক নয় সেটা আমরা বুঝেও বুঝিনা। বিনোদন মানুষকে ফাঁপা করে তোলে, পলকা করে তোলে। ইন্দ্রিয়ানুভূতি দেয় । আর স্মরণ - স্বাতন্ত্রকে লোপ করে দিয়ে ইন্দ্রিয়ানুভূতির জগৎ পার করে সচেতনতায় নিয়ে যায় । উৎসবের বিনোদন বিচ্ছিন্নতায় অনেক সময় অনেক জায়গায় হিংসাও লালিত হয়। স্মরণে হিংসার স্থান থাকেনা। স্মরণে শুধু বোধের আনন্দ আর আনন্দের মিলন থাকে। যেখানে শুধু মনোযোগ,  মনোযোগে  চিন্তা - চর্চা, স্মৃতিরোমন্থনে অনেক উপলব্ধিই মুকুলিত হয়। অর্থাৎ  আমার মনে হয় মনোযোগই রবীন্দ্র পূজার সবচেয়ে বড় পূজা উপচার। রবীন্দ্রনাথের সত্তর বৎসরের জন্মদিনে দেশ জুড়ে যে উৎসব হয়েছিল, যে উৎসবের আয়োজক ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশ বসু, কথাসাহিত্যিক শরৎ চট্টোপাধ্যায়, সেই আলোড়নের পরেও তিনি উত্তেজনাপূর্ণ ও বিনোদনপূর্ণ এই বিপুল আয়োজনে জন্মদিন পালনের চেয়ে একাকী ব্যক্তির নিভৃত উপলব্ধিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন। বিনোদনে ভেসে যাওয়ার লঘুতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থে স্মরণ ব্যাপারে তাঁর খোলাখুলি পরামর্শ রেখে গেছেন।
" কখনো স্মরিতে যদি হয় মন,
ডেকো না ডেকো না সভা - এসো এ ছায়ায়
যেথা এই চৈত্রের শালবন। "
যাই হোক রবীন্দ্রনাথ আমাদের সবার গুরুদেব। যদিও গুরুদেব তো অনেক রকম হয় দীক্ষা গুরু, শিক্ষাগুরু, সঙ্গীতগুরু  কুলোগুরু, তপস্যাগুরু, আরো অনেক। যাঁরা একেক জনের একেক জন আলাদা আলাদা কিন্তু কবিগুরু এক জনই। তিনি চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দের মতো ধর্মবিপ্লবী ছিলেন না। ছিলেন আসলে তথাকথিত ধর্মাশ্রয়ের বাইরেই। তবুও তিনি আধ্যাত্মিক, উপনিষদ পরিশ্রুত, নির্মোহ, নির্বিন্ন রবীন্দ্রনাথ। এবার আসি আসল কথায় । এবারের ২৫ শে বৈশাখে আমি যে রবীন্দ্রপূজার কথা ভেবেছি -তার নামাকরণ করেছি রবিতীর্থ। মানে মন্ত্রে আর কথায় রবীন্দ্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০১৮ সালে আমি এমনই একটা  স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। এবং সেটা বেশ কয়েকজন মিলে নাচে গানে বন্দনা করেছিলাম। এবারও ভেবেছি সেখান থেকে কিছু কিছু  কথা অার কবিতা নিয়ে শান্ত শমিত ভাবে  রবীন্দ্র পূজা করব । কিন্তু যখন ২০১৮ সালের ঐ লেখা  ডায়েরিটা  বের করে নিলাম - তখন আশ্চর্য হলাম দেখলাম সেই "রবিতীর্থর" তৈরি করা যে স্ক্রিপ্ট বা আলেখ্য তার ভেতর থেকে দুটো পৃষ্টা নেই,  কেউ কি ছিড়ে নিয়েছে? জানিনা। যদিও আমার বা আমার মেয়েদের অসাবধানতার জন্যই এটা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সকাল থেকে মনটা এত খারাপ হয়ে গেছিল কোথাও পান্ডুলিপি টাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যখন খুব অস্থির লাগছিল  ঠিক তখন অবশ্য পেয়ে  গেলাম। মনে হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথকেই নালিশ করি । ইতিমধ্যে দেখলাম মুজনাইয়ের সম্পাদক সেই সকালে একটা রবীন্দ্র বিষয়ক লেখা চেয়ে ম্যাসেস করেছেন। তবে আমি দেখলাম সন্ধ্যার পর। তাই আর দেরি না করে,  তার সাথেই  আমার মনখারাপ শেয়ার করতে রবীন্দ্রস্ক্রীপ্টের হারানো জায়গাটাই লিখতে বসলাম কারণ এটা অপ্রকাশিত। আমার বাড়িতেই আমরা করেছি এবং ভিডিও করিনি। সেই দিক থেকেই বললাম অপ্রকাশিত। যতখানি খোয়া গেছে সেটাই লিখছি।  #যিনি বাংলাকে বিশ্বমানে উন্নিত করে বাঙালি জাতি সত্তাকে করেছিলেন মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত তিনিই আমাদের প্রাণের ঠাকুর। যিনি তাঁর চিন্তা জগৎ আধুনিকতার সাথে নিয়ে গিয়ে ছিলেন নীরব বৈচিত্রময় ভঙ্গিতে তুলনাহীন অসম্ভবের দিকে - আজ তাঁর জন্ম দিন। অাজ এক ধরণীর প্রিয় পুত্রের জন্মদিন। আজ এক বিশ্ব মহামানবের জন্মদিন। আজ ঋষি কবির জন্মদিন। আজ এক বিশাল প্রত্যয়ের শুভ জন্মদিন। আজ এমন একজন পুরুষের জন্মদিন যিনি, প্রাণ প্রাচুর্যে বিমূর্ত  হয়ে আছেন আমাদের শেকড়ের অস্তিত্বে।  যাঁর ভাব গভীরতা,গীতি ধর্মিতা, চিত্ররূপময়তা, আধ্যাত্ম চেতনা,ঐতিহ্য প্রীতি, প্রকৃতি প্রেম, মানব প্রেম, স্বদেশ প্রেম, বিশ্ব প্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্য চেতনা, বাস্তব চেতনা এবং আমাদের প্রগতি চেতনার ঐশ্বর্য ভাণ্ডার কে দারুণ ভাবে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন। আজ সেই গুরুদেবের জন্মদিন। এই শুভ দিনের শুভ মুহূর্তে গুরুদেবের সম্মুখে তাঁরই ভাষায় তাঁকে প্রার্থনা - "নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে "। সত্যি রবীন্দ্রনাথ চিরদিনের। চির নতুন তিনি। তিনিই নব নব রূপে আসেন আমাদের মাঝে বারবার। তাঁর প্রতিভার সাক্ষর সেই কথাই বলে। ৫৬ টি কাব্য গ্রন্থ, ১১৯ টি ছোট গল্প, ১২ টি উপন্যাস, ২৯ টি নাটক, ৯ টি ভ্রমণ কাহিনী, ২২৩২ টি গান চারটি পৃথক গ্রন্থে ১৯ খণ্ডের চিঠি পত্র এবং দেশ বিদেশের দেওয়া নানান বক্তৃতার মাধ্যমে যা বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত। যাঁর যাবতীয় নির্মাণ অার বিনির্মাণের উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে অাছে ৩২ টি খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে। এই চূড়ান্ত প্রতিভার অভিজ্ঞানে আছে সুখে সংযত আর দুঃখে পরিশ্রুত হওয়ার মন্ত্র। শুধু কি তাই, তিনি আমাদের আশাভরষার জীবন সঞ্জীবনী। আজ এই ১৫৯ বছরের আরেক নতুন সকালে প্রার্থনারত আনন্দময় আমরা যেন খুঁজে পাচ্ছি তাঁর প্রত্যাহিকতার বৈভব থেকে বর্ণময় ইঙ্গিতের অমৃত পুষ্প গন্ধের সু -বাতাস। যিনি জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আমাদের মাঝে দ্যুতিময় হয়ে রয়েছেন, তাকে আমরা প্রেমের অতিথি বলেও জানি। কারণ - তিনি যে অনেকবার প্রেমজনিত প্রফুল্লতায় বিপদজনক খাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে হয়েছেন বিচ্ছেদ ও বেদনা সিদ্ধ। আজ যা বাংলা আধুনিক সাহিত্যের অন্তরবার্তা। এই বাংলা ভাষার আধুনিক ঈশ্বর তাঁর তৃতীয় নয়নের দূরদৃষ্টিতে জীবনের মাঝে দাঁড়িয়েও দেখে ছিলেন - মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা। কবি কখনও মৃত্যুকে উষ্ণ বন্ধুতায় বরণ করেছেন ব্রহ্ম্র পূণ্যবোধের থেকে  - যেমন "মরণরে তুহুঁ মম শ্যামও সমান " কখনও পদ্যের ছন্দে জীবনের কাছে করেছেন আকুল প্রার্থনা, " মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে। সত্যি তাঁর এই স্বপ্ন পূর্ণতা পেয়েছে  আজ আর তিনি মর পৃথিবীর কেউ নন। ঠিক ঈশ্বর যেমনের মত। তিনি প্রজ্ঞা, পূজা, প্রার্থনা আর প্রেম। রবীন্দ্রনাথ আছেন সর্বব্যাপী। যাঁর প্রতিটি আসূক্ষ্ম অনুভতিকে আমাদের আবেগ স্পর্শ করে। যতই সময় বদলাক, সময় যাত্রা করুক আধুনিকতা থেকে উত্তর আধুনিকতায়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা বদলায় নি। তিনি আজও আমাদের কর্মে, মননে জীবনের সকল ভাবনায়, দেখার দৃষ্টিকে প্রাণময় আবর্তিত করে চলেছেন। তিনি আমাদের আলোর দিশারী। 




(শিল্পী- ঐতিহ্য সাহারায়)




গীতাঞ্জলি ও রবীন্দ্রনাথ  ---
ছবি ধর

গীতাঞ্জলি হল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ  l  গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ  মূলত  ব্রাহ্ম ভাবধারার ভক্তিমূলক রচনা l  এই বইয়ে মোট ১৫৭টি গীতিকবিতা সংকলিত হয়েছে।  ১৯১৩ সালে দশই  নভেম্বর তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন  l
গীতাঞ্জলি/দ্য সং অফারিংস-এ ১০৩টি কবিতা/গান স্থান পেয়েছে। বাংলা গীতাঞ্জলি কাব্যের ১৭৫টি কবিতা/গান থেকে ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে ৫৩টি কবিতা/গানকে স্থান দিয়েছেন। অবশিষ্ট ৫০টি কবিতা/গান নিয়েছেন ৯টি কাব্যগ্রন্থ থেকে, যেমন----
গীতিমাল্য থেকে ১৬টি, নৈবেদ্য থেকে ১৫টি, খেয়া থেকে ১১টি, শিশু থেকে ৩টি, কল্পনা থেকে ১টি, চৈতালি থেকে ১টি, উৎসর্গ থেকে ১টি, স্মরণ থেকে ১টি এবং অচলায়তন নাটক থেকে ১টি। 
সঙ্গ অফরিংস-এর ভূমিকা লিখেছিলেন স্বয়ং কবি ইয়েটস্‌। এ ভূমিকাটি ছিল একই সঙ্গে আন্তরিক ও যথেষ্ট প্রশস্তিতমূলক। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ইংরেজ লেখক এবং রয়্যাল সোসাইটির সদস্য স্টার্জ মুর নোবেল পুরস্কারের জন্য রবীন্দ্রনাথকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের ৭০ জন সদস্যদের  একজন ছিলেন তিনি l

সেবছর পূজোর ছুটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে গিয়েছিলেন।   শিলাইদহে  তিনি লালনের  বাউল সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন  ও  নিজে  রবীন্দ্র বাউল  সঙ্গীত রচনা করেছেন l  ছুটির পর ফিরে শান্তিনিকেতনে একটানা পাঁচ মাস ছিলেন। এই সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত শান্তিনিকেতন প্রবন্ধ গ্রন্থটি রচনা করেন। পরের বছর বর্ষা ও শরৎকালে তিনি কিছুদিন শিলাইদহে গিয়েছিলেন। ফিরে কিছুদিন কলকাতায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কাটান। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও গানগুলো  শিলাইদহ, শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায় রচিত হয়। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ এই সময় কঠোর নিরামিষাশী ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশ্রম পরিচালনার আদেশগুলি এই সময় তিনি কঠোরভাবে মেনে চলতেন। এমনকি অসুস্থতার সময় ডাক্তার আমিষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেও, তিনি তা শোনেননি।  কঠোর  সাধনায় এসময়গুলো অতিবাহিত করেছিলেন l 
সুইডিশ একাডেমির  কর্তৃক  প্রাপ্ত  নোবেল পুরস্কার রবীন্দ্রনাথের কাছে নয় ভারতের কাছেও অত্যন্ত  গর্বের l
  
গীতিমাল্য কাব্যটি কবির পরিণত জীবনে সঙ্গীতের পবিত্র মাল্য। কাব্যটিতে কবি ঈশ্বরের কাছে নানাভাবে নানামূর্তিতে নিবেদন প্রকাশ করেছেন; 
নৈবেদ্য কাব্যের ‘চিত্ত যেথা ভয়-শূন্য’ কবিতায় কবি চিত্তের ঔদার্য, নির্ভিকতা এবং জ্ঞানের ও যুক্তির কথা বলেছেন; 
অচলায়তন নাটকের বক্তব্য-অচলায়তনের রুদ্ধগৃহে যে জ্ঞান সংগৃহীত হয় সে নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ বলেই প্রাণহীন এবং নিঃস্ব। কিন্তু চতুর্দিকের দেয়াল যখন ভেঙে যায় এবং বাইরের আনন্দ চিত্তে প্রবেশ করে, জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা তখনই সার্থক হয়। পঞ্চক হচ্ছে নিয়ম ও স্বাধীনতার প্রতীক আর মহাপঞ্চক বিধিবদ্ধ নিয়মের প্রতীক। অচলায়তন নাটকের 
"আলো আমার আলো ওগো আলো  ভুবন ভরা --" এই 
গানের মাধ্যমে রবি কিরণের সঙ্গে প্রকৃতির আশীর্বাদকে জাগ্রত করেছেন জীবন-যৌবন-ভূবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সেখানে অন্ধকারের বিপরীত স্রোতে হূদয়ের স্পন্দন বীণার ঝংকারের মাধ্যমে কবি তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর  বহু কবিতাতে  সুরের  অলংকারে সাজিয়ে   গান রচনা করেছেন l
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর  নৈবেদ্য, উৎসর্গ, খেয়া ও গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে বলেছেন-   "আমি ভালোবেসেছি এই জগৎকে, আমি প্রণাম করেছি মহৎকে, আমি কামনা করেছি মুক্তিকে যে মুক্তি পরম পুরুষের কাছে আত্মনিবেদন, আমি বিশ্বাস করেছি মানুষের সেই মহামানবের মধ্যে যিনি সদা জনানাং হূদয়ের সন্নিবিষ্টঃ  আজীবন  সাহিত্য সাধনার গন্ডিকে অতিক্রম করে একদা সেই মহামানবের উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য আমার কর্মের অর্থাৎ আমার ত্যাগের নৈবেদ্য আহরণ করেছি-তাতে বাইরে থেকে যদি বাধা পেয়ে থাকি অন্তরের থেকে পেয়েছি প্রসাদ।"

কথা ছিল এক তরীতে কেবল তুমি আমি

যাব অকারণে ভেসে কেবল ভেসে

ত্রিভুবনে জানবে না কেউ আমার তীর্থগামী

কোথায় যেতেছি কোন্ দেশে সে কোন্্ দেশে?

                             (গীতাঞ্জলি)

‘কখন তুমি আসবে ঘাটের পরে

বাঁধনটুকু কেটে দেবার তরে।

অস্তরবির শেষ আলোটির মতো।

তরী নিশীথ-মাঝে যাবে নিরুদ্দেশে।’      (গীতাঞ্জলি)

এ গানে মানবিক প্রেমের বেদনা যেমন আছে, তেমনই গানের বাণীতে তার ভগবান প্রেমের আকুতিও ধরা পড়ে। রবীন্দ্রনাথ তার অনিশ্চয়তার গহ্বর থেকে বের হতে পারছেন না; অজানা, অসীমের প্রতি এই বিষাদ গন্ধমাখা আকর্ষণই রবীন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন দেশে তিনি যাবেন তিনি তা জানেন না; এও তিনি জানেন তার এ যাত্রা নিরুদ্দেশের পথে। রবীন্দ্রনাথ যখন গীতাঞ্জলির গানগুলো রচনা করেন, তখন ‘ইংরেজ  দের  বিরুদ্ধে  আন্দোলন চলছিল কিন্তু গীতাঞ্জলির গানগুলোর মধ্যে নিরাশক্ত অসীমের বন্দনার গানগুলোর পাশাপাশি স্বদেশীকতার বিষয় যে গানগুলো লিখেছেন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এসব গান গীতাঞ্জলি মূল বাণীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়; কিন্তু এগুলোতে রবীন্দ্রনাথের সমাজ ও রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠছে  l সাহিত্যই  সময়ের  ধারক ও  বাহক একথা স্বীকার্য l 

আলোকিত হওয়া, আলোকিত করা বা এনলাইটেনমেণ্ট কি একটা শব্দ, নাকি এর অন্তর্নিহিত কোন  তাৎপর্য  আছে? এই প্রশ্নের উত্তর শব্দের ভিতরে খোঁজার থেকে  সৃষ্টির অভ্যন্তরে খোঁজা সহজ  হবে তাই নয় কি ?
  রবীন্দ্রনাথ তাই  লিখেছেন  " আলোকের পথে প্রভু দাও দ্বার খুলে আলোক পিয়াসী যারা  আছে আঁখি তুলে "l
                          কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনাচার, তথা চিন্তা- কথা- কাজ ও পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে অন্য-আলোর স্বরূপ ধরা পড়তে পারে আমাদের অন্তঃদৃষ্টিতে।
  
রবীন্দ্রনাথ দেখলেন, বিষাদ বেদনায় আমরা অসীমের মাঝে নিজেকে হারিয়ে মুক্তি পাই- এই অসীম, অনিশ্চিত, শূন্যতায় তার আনন্দলোক।
 তাই তিনি   লিখেছেন  ---
   "আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে --" l




(শিল্পী- পিয়াস গোস্বামী)




জানা অজানায় প্রাণের কবি, বিশ্ব কবি রবি ঠাকুর
বটু কৃষ্ণ হালদার

বৈশাখ মাসের সঙ্গে বাঙ্গালীদের নাড়ির সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে। পয়লা বৈশাখ যেমন বাঙ্গালীদের কাছে এক অতি প্রিয় লোক উৎসব, তেমনি ২৫ বৈশাখ হলো বাঙালির কাছে অত্যন্ত আনন্দের।১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ মঙ্গলবার কলকাতার জোড়াসাঁকোতে বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সারদা দেবীর কোল আলো করে জন্ম নিলেন রবি ঠাকুর। পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভোরের আকাশে পূব দিকে সূর্য যেমন ওঠে হেসে হেসে, ঠিক তেমনই আমাদের হৃদয়ের আকাশে ছেয়ে আছে তোমার স্মৃতি পট।বর্তমানে করোনা আতঙ্কে আমরা সবাই অনিচ্ছাকৃত গৃহবন্দি। কিন্তু ছোট্ট রবির শৈশবকাল ছিল গৃহবন্দী। ঠাকুর পরিবার তৎকালীন জমিদার বংশধর হওয়াতে ছোট্ট রবির শৈশব কেটেছে প্রাচুর্য, বিলাস বৈভবের মধ্যে দিয়ে। ঘর বন্দী ছোট্ট রবির শৈশব জীবনকাল খুব অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। এই সময় তার সঙ্গী ছিল বইপত্র ও ঘরের চাকর বাকর। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সে পড়াশোনা করতে ভালোবাসতো না, কিন্তু উপায় ছিল না। গৃহবন্দী সবার প্রিয় সেই ছোট্ট রবি শ্রেষ্ঠ উপাধির শিরোপায় হয়েছেন বিশ্বকবি। সমাজের বাস্তব আঙিনায় এমন কোন স্থান নেই যে তার কলম আঁচড় কাটেনি। তাইতো ভারতবর্ষের তিনি লক্ষণরেখা সীমান্ত অতিক্রম করে সমগ্র বিশ্বে তার নামের জয়গান গাওয়া হয়। তিনি ছিলেন বিনি সুতোর গাঁথা মন্ত্র মালা। তিনি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির সেতু তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। আজও মায়েদের ঘুমপাড়ানি গানে তাঁর গানের সুরের ছোঁয়া পাই আমরা। বাঙ্গালীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা বা অন্যান্য পূজার পরশেও দূর থেকে বহু দূর হতে ভেসে আসে গীতবিতানের সুর। তাই ২৫ শে বৈশাখ আমাদের হৃদয়ের বাণী ভারতের এক শিল্পকলা। বিশ্বকবি নিজেই ছিলেন একক অস্তিত্ব। তাইতো এক রবি আলো দিয়ে সমস্ত অন্ধকার ঘুচা য়, অন্যদিকে রবি বিশ্বমাঝে তার জ্ঞানের আলো জ্বেলে ঘুচায় মনের অন্ধকার। তাই ২৫ শে বৈশাখের শুভ ক্ষণে লক্ষ্য লক্ষ্য শঙ্খ বাজে, গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস।
ছোট্ট রবির বাড়ির পরিবেশ ছিল সাহিত্যের আঙ্গিনায় প রি মন্ডিত। তার বোন স্বর্ণকুমারী তিনিও খুব ভালো কবিতা পাঠ করতে পারতেন, তিনি সাহিত্য কে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর ঠাকুর দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের সুসম্পর্ক ছিল।নামকরা কবি সাহিত্যিকরা ঠাকুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন আবার কখনো-সখনো ঠাকুরবাড়িতে সাহিত্যের সভা আসর বসতো। ছোট্ট রবি লুকিয়ে লুকিয়ে সাহিত্য রস আস্বাদন করতেন। রবির সেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর জীবনের মূল কান্ডারী। রবির পরিবার চাইতেন সে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা শিখুক। কিন্তু তার সেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে মাতৃভাষা র প্রতি ভালোবাসা শেখালেন। কবির যখন মাত্র আট বছর বয়স তখন তার বাংলার মাস্টারমশাই তাকে চার লাইন কবিতা লিখে দিয়েছিলেন,"_মিন গণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে /এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে"। ছোট্ট রবি পরের চার লাইনে লিখেছিলেন_"আমসত্ত্ব দুধে ফেলি/তাহাতে কদলি দলি/সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে/হাপুস হুপুস শব্দ/চারদিক নিস্তব্ধ/পিঁপিঁড়া কান্দিয়া যায় পাতে"। এভাবেই কবিতা লেখা শুরু হয় ছোট্ট রবির। রবি ঠাকুরের প্রথম ছড়া কবিতা "জল পড়ে পাতা নড়ে"আজও হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান এর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহজ পাঠ লিখেছিলেন। সহজ সরল উপায়ের মধ্যে দিয়ে শিশুদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা তিনি করে যান।তবে সেই সময়ে যদি ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয় এর প্রচলন ছিল সেকথাও কিন্তু ভোলার নয়।বঙ্গসন্তান ভারত সন্তান সর্বোপরি বিশ্ব জননী সন্তান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে যুগের পর যুগ গবেষণা চলছে। আগামী দিনেও চলবে। তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।১৩১৭ সালের ৩১ শ্রাবণ "গীতাঞ্জলি" ছাপা হয়েছিল।এই গীতাঞ্জলি ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার পর বিশ্বের লেখক কবিদের মধ্যে সাহিত্যে নবজাগরণের সূচনা করেছিল। এই "গীতাঞ্জলি" এনে দিয়েছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান নোবেল পুরস্কার। সর্বপ্রথম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ভারতের গৌরব বাঙালি কবি রবি ঠাকুর। বিশ্বের দরবারে বাঙালি সত্তাকে তিনি প্রথম উন্মোচন করেছিলেন। সেই থেকে বাঙ্গালীদের আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো ২০০৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরি ঘটনাটা হল এদেশের সর্বশেষ্ঠ কলঙ্ক। তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত যাঁর অবদান, নোবেল চুরি করে সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তিনি আমাদের হৃদয়ের যুগে যুগে বিরাজমান। রাজনীতি প্রসঙ্গ বিশ্বকবির অবদান কম নয়। তিনি বরাবরই স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন লেখনীর মাধ্যমে।যেমন"আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসির হুকুম হইয়া গেলে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত দুই হাতে লোহার বেরি বাজাইতে বাজাইতে রবীন্দ্রনাথের গান ধরেন। তিনি গেয়ে ওঠেন_"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে/সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে"।একদিন ভূপেন্দ্র কুমার বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত কে জিজ্ঞাসা করেন_"আচ্ছা দিনেশ তুমি তো ভীষণ চঞ্চল ছেলে, তুমি কি পড়ার সময় শান্ত হয়ে যাও? বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত বলে কবিতা। ভূপেন্দ্র কুমার জিজ্ঞেস করেন কার কবিতা? বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত উত্তর দেন রবীন্দ্রনাথের। ১৯১৯ সালে কুখ্যাত জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের কথা আজও কারো ভুলে যাবার কথা নয়। সেই নৃশংস ও জঘন্য হত্যাকান্ডের বিরোধিতা করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া "নাইট" উপাধি প্রত্যাখান করেন। এসবের মধ্যে দিয়ে তিনি দেশপ্রেমের নমুনা দিয়ে গেছে ন। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার প্রচন্ড আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল।১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ ভারতবর্ষের বুকে নেমে আসে মহা বিপর্যয়। বঙ্গ জননী চিরতরে হারিয়ে ফেলেন তার কোলের অমূল্য রতন কে। ওই দিনে মহাপুরুষ রবীন্দ্রনাথ চিরতরে বিদায় নিলেন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এক মহাসন্ধিক্ষণের অবসান ঘটে গেল। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম আকাশবাণীর ভাষ্যকার হিসেবে বলেছিলেন" অস্তমিত রবি, নেই রবি",আজও আমরা শিঁউরে উঠি সেদিনের কথা কানে বাজলে। এমন মহান পুরুষের জন্মদিনে শতকোটি নতমস্তকে প্রণাম জানাই।



(শিল্পী- ধবলেশ্বর সাই)



অনুভূতি



পঁচিশে বৈশাখ
বিপ্লব তালুকদার

রাত পোহালেই ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী, অথচ কোনো হৈ হৈ ব্যাপার নেই চারদিকে কেমন নিস্তব্ধতা। আসলে এ বছর শুরুই হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।এক ভয়াল আতংকে আমরা গৃহবন্দী হয়ে জীবন কাটাচ্ছি। তবুও চারদিক থেকে আয়োজনের খামতি নেই,যেভাবেই হোক পালিত হবে গুরুদেবের জন্মজয়ন্তী। যার গান আবৃত্তি নাটক গল্প নিয়ে জীবন কাটে আমাদের সেই কোন যুগ থেকে আজও। অনেককে বলতে শুনি সত্যি কি আজ আমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক? অবাক হই না,আসলে কিছু মানুষ আছেন যাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ নজরুল সুকান্ত শুধু একটি নাম তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু ওই সামান্য সংখ্যক বাদ দিলে আপামর বাংলা ,দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে আজও রবীন্দ্রনাথ একই ভাবে প্রাসঙ্গিক। আজও বাংলাদেশে ভোর হয় রবীন্দ্রনাথ এর গান দিয়ে ,আজও বাঙালী ঘরে টাঙিয়ে রাখে পরম যত্নে ছবি। হ্যাঁ কিছু ব্যতিক্রম হয় ,তাঁর গান নিয়ে খিল্লি হয়,সুর ছন্দ ফেলে দিয়ে কিম্ভুত রিমিক্স হয়।   অবশ্য এটা নতুন নয় ,সেইকবে জালিওয়ানবাগ হত্যা কাণ্ডের প্রতিবাদে যখন গুরুদেব পাঞ্জাব যেতে চেয়েছিলেন, আটকে ছিলেন গান্ধীজি।সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ত্যাগ করেছিলেন নাইথহুড উপাধি। মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা,যখন স্কুলে পাড়ায় অনুষ্ঠিত হতো পঁচিশে বৈশাখ। মহড়া প্রস্তুতি সব নিয়ে হৈ হৈ ব্যাপার,অবশেষে বিশেষ দিন।আবৃত্তি, গান, নাটক ছোটরা বড়রা সবাই মিলে সেই অনুষ্ঠান করতো , হ্যাঁ তখন হয়তো আড়ম্বর জমক ছিলোনা ছিল আন্তরিকতা।
সারা বছরের মলিনতা ধুসরতা সরিয়ে এবারও মেতে উঠবো জন্মজয়ন্তী নিয়ে।
প্রনাম গুরুদেব।




(শিল্পী- মালা নার্জিনারি)






তিনি ও আমি
সংহিতা ভৌমিক


আমার সাথে কবিগুরুর পরিচয় সেই ছোট বেলা থেকে,তখন থেকে জেনেছিলাম তিনি বিশ্ব কবি। "আমাদের ছোট নদী", "ছুটি", "হাট","তালগাছ" র ও অনেক অনেক কবিতার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বান্ধবীদের সাথে "অমল ও দইওয়ালা"নাটক করেছিলাম, তা হঠাৎ স্কুল জীবনের অনেক অনেক স্মৃতি  মনে করিয়ে দেয়। গান শিখতে গিয়ে পরিচয় হল রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে, তারপর যখন বাংলা অনার্সের ছাত্রী তখন আমার জীবন রবীন্দ্রময়। আমার কবিতা লেখায় অনুপ্রেরণা দেন তিনি। প্রেমের অনুভূতি, ভালোবেসে বেঁচে থাকা সবকিছুর জন্য আমি ধন্য। এখন হয়তো আড়ম্বরের সাথে ভালোবাসতে পারি না, তবুও হৃদয় কোণে এখনও শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(শিল্পী- লেখক)



আমার রবীন্দ্রনাথ 
পৌলোমী সরকার 


তীব্র বোশেখে রোদের দিনে সারাটা দুপুর ছোটাছুটি করেছে প্রতিবেশী ছেলে মেয়ে গুলো । কেন ? কেউ জানে না,  শুধু জানে স্কুলের বইয়ের পাতায় সাদা দাঁড়ি মানুষ, আজ ওনার জন্মদিন ।তাই, কার বাড়িতে ফুল, কার বাড়িতে পাতাবাহার, এইসব সংগ্রহ করে  সন্ধ্যা হলে হাত পা ধুয়ে ওনার ছবিতে মালা ,সামনের ফুলদানিতে ফুলের তোড়া, তারপর একজনের মুখে ---" ছোট্ট আমার মেয়ে " আরেকজনের কন্ঠে---"  কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি " বলতে বলতে মেঘ করে আসবে ।বৃষ্টি হবে খুব । আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি,পাশের কোনো এক বাড়ি থেকে ভেসে আসবে---" আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার পরাণ সখা বন্ধু হে আমার " হ্যাঁ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । রবী ঠাকুর । আমার পরাণ সখা । আমাদের পরাণ সখা ।আমাদের বন্ধু । আমাদের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার একমাত্র পরম আত্মীয় ।যিনি শুধু মাত্র পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণে আমাদের কাছে আসেন না ।আসেন একলা কাঁদার সময় । হঠাত্ হঠাত্ চোখের জল মোছার সময় ।আবার কখনো নোনা জল মোছার সময় --"মমো চিত্তে ..........,সখী জানতে চায় -----" সখী ভালোবাসা কারে কয়? " সখী দুই হাত খুলে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে বলে----" ভালবাসি ভালোবাসি এই সুরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি " লাল মাটির ছোঁয়া পায়ে পায়ে ছড়িয়ে যায় অমলতাস ,সোনাঝুরি ,কোপাইনদী, ছাতিমতলা,আম্রমুকুলের গন্ধে একাকার হয়ে ।নিজেকে খুঁজে পাই কখনো নন্দিনীতে, কখনো লাবণ্যে, আবার কখনো চিত্রাঙ্গদায়, সব আলোর দিক ঐ একটি মুখেই থাকে । 

"আজি পূজায় তারি 

আপনারে দিতে চাই বলি" 


(শিল্পী- পার্থিব রায়)






কবিতা 


জানালা থেকে 
শ্যামলী সেনগুপ্ত 


   অনেক দিন ব্যবহার হয়নি 
   পাল্লা দুটোয় কুমোরপোকার ঢিবি
   কবজাগুলোয় মরচে
    তবু খুলতে হলো..
     কেমন যেন কান্নার আওয়াজ তুলে
               খুলে গেল ঘর
                খুলে পড়লো অহং-মুখোশ
     বাইরেটাকে ভালোবাসতে গিয়ে
      দূরপাল্লার টিকিট কেটে পাহাড় থেকে
                              সাগর টইটই
     ঘরের পাল্লা খুলতেই নরম রোদ ঢুকে পড়লো
      আকাশের সবটুকু নীল
       বিছিয়ে দিল জাজিম
সামনের চালতা গাছের গায়ে ঠোঁট ঠুকেঠুকে ক্লান্ত পাখি উড়ে গেল কৃষ্ণচূড়ার ডালে,
সাময়িক বিশ্রামে
    কৃষ্ণচূড়ার রঙে বৈশাখী মাতন..এবার 
 বৈতালিক নয়, প্রভাতফেরীতে মাস্ক গ্লাভস দূরত্ব.. হাতে হাত যদি নাইই রাখি
    সে কেমন পুণ্যাহ !
    ....খুলে দিলাম ঝরোখার আগল
        'বাতায়নিকের পত্র'খানি মেলে ধরতেই
       শুরু হলো আনন্দগান
        মরণভয় নস্যাত্‌ করে
        বরণ করি তোমাকে আলোরমালায় 

        তুমি দূরদ্রষ্টা...
        শুধু নতুন করে শিখছি আমি




বৈশাখ, ২৫ 
যাজ্ঞসেনী 

২৫ বৈশাখ রবি উঠিল যেই
পাখির কূজনে চারিদিক ভরিল ওই
সহসা বাজিল  শঙ্খ আগমনী যথা 
নবজাতক- জোড়াসাঁকো আগামীর কথা 
তাহারপর প্রতি ২৫ জন্মতিথি তাঁর 
একজীবন উন্মোচিত মননের দ্বার 
আজও সেই ২৫, পুণ্যদিন যথা 
হৃদয়ের গভীর জুড়ে  তাঁহারই কথা 





আধুনিকতার জন্মদিন
জয় চক্রবর্তী


আমি এক্সপেরিমেন্টাল নই
তবু মেটালিকে ওই গান ভালো লাগে,
জানি তুমি ব্যাখ্যা করবে খুব
যুক্তি তোমার নিশ্চই আছে, কিন্তু আজ নয়
আজ আধুনিকতার জন্মদিন।

তুমি বরং ছবি আঁকো অথবা
কাল রজনীগন্ধা বাসি হওয়ার আগে
একখানি কবিতা শোনাও
এই আকাশ আর শত বছরের
যন্ত্রণার ভাগীদার হওয়ার গল্প বলো।

তুমি পাঞ্জাবি পড়ে এস
আমি টি- শার্টের বা দিকটায়
একটা ছবি এঁকে নেব
সারাদিনের প্রতিযোগিতায় আমায় ডেকো না
আমার উল্লাসের কোনো ব্র্যান্ড নেই।

সিলেবাস শেষ হবার পর
যেদিন তিনি কাছে এসে দাঁড়ান
সেই দিন নিভৃতে উদযাপন করি
আমি খুব কৃপণ, তাই
আমার দিনযাপন আলাদা কিছু নয়।

দাদাঠাকুর, কি দিয়ে বরণ করি বলতো!
অমল যে প্রশ্ন করে না
যাদের চিৎকার করার কথা ছিল
তারা মুখ গুঁজে বসে আছে
ভয়, ঠাকুর মহাপঞ্চকের ভয়।

শেষ চিঠি লিখবো না ঠিক করেছি
আমিও প্রেমিক, কেও বুঝলই না
প্রেম থাকবেই, যতদিন কচিকাঁচার ভিড়
যতদিন তরুণ শিল্পীর হাতে কলম
যতদিন আঁধার রাস্তায় পাগলের গান।

তুমি আছো তোমার মত করে
সময় প্রতিনিয়ত টুকরো টুকরো হবে
তুমি আবছা হবে, আবার
একরাশ রক্তকরবীর মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে
মনের ভিতর শান্ত পায়ে পায়চারি করবে।

জ্ঞানের দরজা খুলে অবাধ প্রবেশ দিয়েছো,


ঠাকুর আজ জন্মদিনে প্রণাম নিও।



(শিল্পী- নারায়ণ ভৌমিক) 




"তুমি স্মরণে তোমার শরণার্থী"

মৃণালিনী


'ঘরে বাইরে' মধ্যবর্তী বিষণ্নতায় বেজে ওঠে তোমার গানের সুর

পাহাড়ের ধার ঘেঁষে সূর্যাস্তের নিস্তব্ধতায় নড়ে ওঠে ঘরের দেওয়াল

ক্ষুধিত পাষাণে প্রতিধ্বনিত হয় মৃত্যুর সংকেত!
শহরের জঙ্গলে জীর্ণ শীর্ণ কুকুরের ডাকে

কেঁপে ওঠে রহস্যময়ী দেবদারু

পৃথিবীর দুঃসময়ে তুমি লিখছ সবুজ পত্রে

পরিযায়ী শ্রমিকের পদযাত্রার কাহিনি।

গীতাঞ্জলির ভিখারি কীভাবে কিনু গোয়ালায় সরুগলি
পেরোতে পেরোতে ভুলে যাচ্ছে জীবনের গীতবিতান!

মদের দোকানে উপচে পড়া ভিড়ের ভেতর উঁকি দিচ্ছে

'অশনিসংকেত' ! নাকি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের ভুতুড়ে গল্প ভুলতে

কেউ কেউ বেছে নিয়েছে মহুয়া?

ঘরবন্দী অবস্থায় মানুষ ভুলে গিয়েছে মাথার ওপর

খোলা আকাশ ছোট্ট উঠোন কার্নিসে বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা!
ঘরবন্দী মানুষকে একবার ফিরিয়ে দাও 'জীবন স্মৃতি-'

'অনাদর একটি মস্ত স্বাধীনতা'

সেই অনাদরে জেগে উঠুক স্বাধীন কল্পনা দৃঢ় প্রত্যয়

ঝর ঝর ঝর্ণার ঝরে পড়ুক বিষণ্নতার দীর্ঘশ্বাস।

প্রাচীর পৃথিবীর শরীর থেকে ধুয়েমুছে যাক বিভেদের ধুলোময়লা
নতুন সূর্যোদয়ের আলোয় বলাকার পাখায়
তুমিও একাত্ম হও বিষণ্ণ আত্মায়
তোমার চরণে সমর্পণ করি তুচ্ছ মৃত্যুর ভয়- বিসর্জনের যন্ত্রণা।







প্রতি ১৫মিঃ পর || ৭/০৫/২০২০
শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী

১৫-২৯
ক্লকওয়াচ।হল্ট।time starts now
ঠিক এই মুহূর্তের জেটিঘাট
দুপুর <<>> বিকেল।ভিতরে ঘামের সেতু
বাইরে ঘনো পতাকা।ঢেউ বাড়লে
আলপিনে জলছাদ।অপেক্ষায় কৃষ্ণ আপেল


১৫-৪৪
ক্লিক ফাংশন।সরে যাচ্ছে আঙুলের গতিবেগ
সমস্ত ঘাসেরা মিলে দাবি জানায়
রোদ ও রাত : দুজনেরই বহুচারি বৈশাখ 
আমরাও দুচারবার ওরকম
শুধু আয়নায় উল্টে রাখা পারদ দেখতে পায়


১৫-৫৯
----------------------------------------------------
উড়ে যাচ্ছে বেলুন।বেলুনের পাপড়ি
নিতীগত ভাসান সামলাচ্ছে নাবিকের অন্য মানে
এসো হাত মেলাই।স্পর্শ হোক সম্পর্কিত
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি : সোঁদা গন্ধের মাটি
চুম্বক বলছে : দেওয়াল ভাঙার কথা


১৬-১৪
----------------------------------------------------------------
এইমাত্র কথা হলো।সাইলেন্সারে দরজা খুলে যায়
যতোটুকু চরম তাপ ও তাপনৈতিক
থার্মোমিটারে আগামী বিকেল মাপছি
গুড়োবালি।তাজমহল।স্পষ্ট (অথচ) জলীয়
কয়েক ফোটা বিকেল গড়াচ্ছে


১৬-২৯
--------------------------------------------------------------
ভীড়যাতো মুখোশ_____অতিভুজের খেয়ালীপনা
নিদারুণ নাব্যসুত্রে : এতোটুকুই অন্ততঃ
ক্লান্ত ছায়া সত্যি হচ্ছে।সত্যিই অদরকারি
কলমেও রাত্রি নামবে।আলোর অতিভুজ


১৬-৪৪
-----------------------------------------------------------
বুনে দিচ্ছি ফরিং অসুখ
পুরোটাই প্রস্তাবিত : আকাশমুখীন নক্সিকাথায়
নিষিদ্ধ তারাদের হ্যালোজেন : সফল কবিতায় পাঠ
চূড়ান্ত জোয়ার ও ভাটা।ভিতরে ডুবুরির পোষাক


১৬-৫৯
--------------------------------------------------------------
সূচিপত্রে রাখা হোক মসৃণ জামা
ছেড়া বোতাম।কয়েকটা শব্দ আর ঈশশশ্
আমরা সকলেই যেমন চাঁদ ঘুরতে ভালোবাসি
পরস্পর মুখোমুখি : ভুলের কিনারা নামমাত্র
আলপনার গল্প বললে নদী ও তার ২হাত







(শিল্পী-  ভাস্কর পাল)




তুমি
রুদ্র সান্যাল

এখনও জানলা দিয়ে ভোরের আলো আসে।
এখনও গান গায় কোকিলের দলবল।

এখনও মেঘে ঢাকা তারারা চুপিচুপি হাসে।
এখনও তুমিই আমার সম্বল।

সব ঝুট হ্যায়.. সব ঝুট হ্যায়..তফাৎ যাও!
মনের ভিতর শুধুই ক্ষুধিত পাষাণ।

তবুও তোমার গানেই আচ্ছন্ন আমি।
ঘরবন্দী তোমার সাথে আজও সহবাস।






প্রেরণা—রবীন্দ্রনাথ
অভিজিৎ দাশ

শোকসভাগুলিও থমকে দাঁড়িয়ে
বিপণ্ণ অস্তিত্বের সদর্ভ ঘোষণা।
চলভাষের পর্দায় কলিং ভয় , ‘আমি আসছি’।
তখনই সমস্ত শব্দতরঙ্গের মাঝে কানে আসে
‘‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে। ”







(শিল্পী- ঐশ্বর্য্য সাহারায়)




শিরোনাম 
বেলা দে 

বন্ধ ঘরের আলো আঁধারি নীরবতায়
কখন যেন ডাকঘরের অমল এসে 
বুক জুড়ে আশ্রয়  নেয় , 
একটামাত্র বাক্যযাদুতে
মাথায় মেরে দেয় নিঃশব্দ বোম
Stay  at  home
তফাৎ  একজায়গায় কোবরেজ আর
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, 
কাঠফাটা  রোদ্দুরে সেই হাঁক
দইয়ের বদলে সবজির ডাক, 
বুঝতে বাকি রইলো না
রুজির টানে যাত্রীর জায়গায় আজ সব। 
টোটোর কাছে দাঁড়াতেই যুবকের কাষ্ঠ হাসিমুখ 
বিষাদ ঢেকে মনে মনে আউড়ে গেলাম

তোমার সূর্য আবার  জেগে উঠুক।  




কোয়ারেন্টাইন সুর 
 মৌসুমী চৌধুরী

সময়ের তুলি টানে রক্ত আঁচড়
ধূসর বাতাসে ওড়ে মুখোশের মুখ।
ছাই হয়ে মিশে যায় অযুত অহং
শব্দের জাগলারি,  ক্লান্ত ক্যানভাস
ফুঁড়ে ওঠে থালা হাতে ক্ষয়াটে মানুষ।
ঘুঘুডাকা স্তব্ধ দুপুর ভাসে ইথার তরঙ্গে,
পাঁজর ফাটিয়ে ফোটে কৃষ্ণচূড়া দিন 
---" ওই মহা মানব আসে..."

আমি অসহায় , হে কবি!
মৃত্যময় পৃথিবী পেরিয়ে যেতে তোমাতেই বাঁধি
স্কয়্যার ফিট-কোয়ারেন্টাইন সুর -----

"সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,/শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।/
ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন মনে,/
ততক্ষণ রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ।।"



গভীরে দাঁড়িয়ে এক আশ্রয় ছায়া !





শুধু একটাই হাত  
অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়

এই ভীষণ ভয়ের দিনে কোথায় পাব অভয়মন্ত্র 
কোথায় পাব 
কোথায় পাব

এই ভীষণ পরাজয়ের দিনে কোথায় লুকিয়ে দুর্নিবার শক্তি 
কোথায় সে 

আমাদের কারও  জানা নেই 
কিছুই  জানা নেই আজ  ...

তন্ত্রমন্ত্র কিচ্ছু নেই কিংবা গুপ্তধন কিছু  ...



আমাদের মাথায় মাথায় শুধু একটাই ভরসার হাত ---  রবীন্দ্রনাথ ।




(শিল্পী- কৌশিক বিশ্বাস)






রবি কবি
মাথুর দাস

রবি কবি কবি শুধু ? ভুল তা ।
কী নেই তার সব  লেখাতে ?
কে-ই  আছে তার সমতুল বা,
জীবনের দিশাটুকু দেখাতে !

ছড়া গান নাটক আর নভেলে
নাম কত, হাতে আঁকা ছবি তার ;
শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি বিশ্বের নোবেলে
রেখে গেছে কবি তার কবিতার ।

বাঙালীর মন আর মননে
বুঝি তার  সুর তান জড়ানো,
সুখ আর  দুঃখের স্বননে
ছোঁয়াটুকু আছে তার ছড়ানো  ।

বৃদ্ধের ছবি দেখি বারো মাস,
বৃদ্ধ কি ? ছোটদেরও কচি সে ।
স্মরণে বরণ করি  আজ তার
জন্মের দিনটি, বৈশাখ পঁচিশে ।




 লহ প্রণাম
         রীনা মজুমদার

 কী তুমি রেখেছো বাকি ! 
   অভাজন আমি
 কীভাবে দেব তোমায় ..!
শুধুই শ্রদ্ধার্ঘ , লহ প্রণাম ।

তোমার স্বরলিপির খাঁজে খাঁজে
    পরম ক্ষমায় ধুয়ে যায় 
 আমার জীবনের সকল গ্লানি ।

 "তুমি রবে , নীরবে হৃদয়ে মম "
এ অমৃত সুধা- শৈশব মা-বাবাকে
 যৌবন প্রেমকে, বার্ধক্য ঈশ্বরকে 
তোমার একই সৃষ্টি ভিন্ন রূপে ভরা,
 আর তুমি বিশ্বের হৃদয়ে ভরে আছো ।
হাজার তারার প্রজ্ঞার প্রদীপ জ্বেলে
   একমাত্র ধ্রুবতারা তুমি 

              লহ প্রণাম ।








                                                                     (শিল্পী- ঈপ্সিতা হালদার)

                


গল্প 


ইমন যেখানে নামে
           অনিন্দ্য সাঁতরা 

লাবণ্যর মন ভালো নেই।শেষ দুপুরে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে কতক্ষণ হয়ে গেল তা খেয়াল নেই। শ্বাশুড়ির ঘরের জানলা এটা। উনি দিবা নিদ্রায় অচেতন। পর্দা সরিয়ে অল্প অল্প হাওয়া আসছে। পাঁচিলের ওপারে গুলমোহরের লাল ফুল ঝরে পড়ছে একটা আধটা। দীর্ঘ সময় ধরে চলছে এই পতন। পতন বুঝি অংশ হয়ে উঠেছে তার জীবনেরও। রবীন্দ্রভারতীর পড়া থামাতে হল মাঝপথেই, তড়িঘড়ি বিয়ে। একরকম অনিচ্ছাতেই। কোলকাতা ছেড়ে শিলিগুড়িতে। আপাত উত্থান। কিন্তু আসলে তো পতনই। মনের কথা আর রইল কই? সেই তো গৃহবধূ। আজকের দিনটায় তো তাঁর পুজোর দিন। বাবা বলতেন ঈশ্বর মানে ঈশ্বরচন্দ্র আর ঠাকুর মানে রবি ঠাকুর| বাবা গেলেন তার মাধ্যমিকের পর| মামাদের দয়ায় মায়ের ছায়ায় সেই ভগবানের আরাধনা আর কতদিনই বা সম্ভব! দেওয়াল থেকে সাদা কালো ছবিটা নামিয়ে চন্দন দিয়ে সাজিয়ে শুরু হত দিন....মনের মধ্যে গুনগুন করত, 'হে নূতন দেখা দিক আরবার....'
         বড় ব্যবসায়ী পরিবারে বউ হয়ে যখন অনেকদিনের জন্য চলে আসতে হল অষ্ট- মঙ্গলার পর তখন এনেছিল সে হারমো- নিয়ামের বাক্সটা| সঙ্গে গীতবিতান| ইচ্ছা করছে একবার বের করতে| পঁচিশে বৈশাখে একবার ছুঁয়ে দেখতে, শিহরিত হতে...| কিন্তু বাবার প্রতি, জীবনের প্রতি একরাশ অভিমান তাকে গত ছয়মাসে একবারও যেতে দেয়নি ওই বাক্সটার কাছে।
        এখনও জানলার বাইরে চোখ| বিকেল নামছে সন্ধ্যাতারাকে স্বাক্ষী করে| অমিত আজ দুপুরে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে| ওর কাছে যেতেও ইচ্ছা করছে না| চোখ ভিজবে এক্ষুনি| .... হঠাৎ পাশের ঘর থেকে ভেসে এল হারমোনিয়ামের শব্দ... সা  সা  সা নি  ধা পা .... মা  পা  গা সা  রে .... জানলার বাইরে থেকে চোখ চলে এল ... ইমন বাজছে| শ্বাশুড়ি পাশ ফিরলেন, ঘুম জড়ানো গলায় বললেন,  অমিত গান ধরেছে|
       লাবণ্য ছুটল নিজের ঘরে| অমিত খাটের ওপর বসে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে.... দরাজ গলা| অনভ্যাসের হলেও কল্যাণ ঝরছে বিস্ময় বৈশাখে|

       লাবণ্যর চোখে জলের ধারা| অমিত গাইছে,

"এই করেছো ভালো নিঠুরও হে.... এই করেছো ভালো..."







কবির প্রতি-খোলা চিঠি
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী

শ্রীচরণেষু কবি,

মনটা একদম ভাল নেই কবিগুরু ।
একটা অস্থির সময়ের নাগপাশে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি মনুষ্যসমাজ । পৃথিবী আজ রোগগ্রস্ত ।
বিশ্বের উন্নত থেকে উন্নতশীল দেশগুলি কোভিড-ভাইরাসের মরণ কামড়ে দিশেহাড়া ।

 হে বিশ্বকবি এবার আমরা বাঙালার নতুন বছরকে সাদরে স্বাগত জানাতে পারিনি ।ঠিক যেমন পারব না
তোমার জন্মদিনের বিশেষ দিনটাকে সঠিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে । তবুও আমরা থেমে থাকছি না ।অনলাইনের হাত ধরে আমরা যে যার মত করে স্মরণ করব তোমায় ।

ভাগ্যিস অনলাইনে ভাইরাসটা নেই !!তাই অনলাইনে ভাইরাল হবে তোমার প্রতি আম- জনতার শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
তোমায় তুমি করেই সম্মোধন করলাম । তোমার মত মনে-প্রাণে,চিন্তায়-কর্মে,সুখে-দুঃখে,জীবনে-মরণে সমদৃষ্টিমান কবি মানুষের ইতিহাসে দুর্লভ । শরৎচন্দ্রের লেখায়, "কবিগুরু তোমাদের প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই " ।

তুমি একাধারে কবি,প্রাবন্ধিক,নাট্যকার,ঔপন্যাসিক,
ছোটগল্পকার,সংগীতজ্ঞ । তোমার কবিপ্রতিভা জীবনের এক একটি পর্যায়ে স্তরে-স্তরে বিচিত্র ভাবরসের ভিতর দিয়ে পরিপূ্র্ণভাবে বিকশিত হয়েছে মানব হৃদয়ে ।হে কবি তোমার লেখা প্রবন্ধগুলি তথ্য ও তত্ত্বে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্ক্ষল ---যা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে ।শুধু নাটক রচনাই নয়,নাট্যমঞ্চ,নাট্য প্রযোজনা,নাট্যাভিনয় সম্পর্কে তোমার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অতুলনীয় ।তোমার মধ্যে ছিল এক সংগীত-পিপাসু হৃদয় --- যা দিয়ে তুমি সৃষ্টি করেছ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগীত ।

জগৎকে তুমি দেখেছ ঋষিসুলভ অখন্ড দৃষ্টিতে । তোমার কবিপ্রকৃতি সীমার সঙ্গে অসীমের,খন্ডের সঙ্গে পূর্ণের,ব্যক্তিজীবনের সাথে বিশ্বজীবনের এক চিরন্তন প্রবাহ ।প্রিয়জনদের অকাল বিয়োগে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জীবনে বহু ঘাত:প্রতিঘাত সহ্য করেছ তুমি । আজ এই বিপন্ন বৈশাখে হাঁস-ফাঁস করা সময় বয়ে চলেছে নদীর গতির বীপরিতে ।

রোগাক্রান্ত পৃথিবীর মানুষেরা স্বজন-প্রিয়জনকে হরিয়ে রোরুদ্যমান ।মানবসভ্যতা যেভাবে ধীরে -ধীরে পৃথিবীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে একি তারই পরিণতি ।ঈশ্বরের রোষানল যে কি সাংঘাতিক হতে পারে তা আমরা টের পাচ্ছি হাঁড়ে-মজ্জায় ।তবে মানবসভ্যতা থমকে যাওয়ায় (লকডাউনের কারণে ) পৃথিবীর আকাশ -বাতাস আজ অনেকটা দূষণমূক্ত ।প্রকৃতি আজ প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারছে ।এভাবেই নতুন এক পৃথিবীর রূপান্তর ঘটবে।

বসন্তে কোকিলের কুহুতান ক্রন্দনসম লাগে,তোমার কথায় ---" রোদন ভরা এ বসন্ত " ।

যা শাশ্বত তা থেকে যাবে আমৃত্যু ।হে কবি তুমি হিংসা -বিদ্বেষের মধ্যে প্রেমকে উপলব্ধি করেছ, অন্ধকারের উৎসে আলোর সন্ধান পেয়েছ ।তুমি আমাদের প্রাণের কবি ---- তোমার মধ্যে অখণ্ড ভারত আত্মার সন্ধান পেয়েছি ।তোমার শুভ জন্মদিনের প্রাক্কালে এই প্রার্থনা করি পৃথিবী আবার আগের ছন্দে ফিরে আসুক । সমস্ত ক্ষয় -ক্ষতি সামলে আমরা যেন সুস্থ জীবনযাপনে ফিরতে পারি ।আর আগামী ২৫শে বৈশাখে তোমার জন্মদিনে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারি ।

তুমি পাশে থেকো কবি ,প্রতিটা বাঙালির -ভারতবাসীর অন্তরে থেকো ------

   "জীবন-মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
    বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে " ।
                                                     
                                                      প্রণামান্তে
                                                         শর্মি






রবীন্দ্র ভাবনায় ছবি 



'....বাঁশিতে আমায় কে ডেকেছে`

শিল্পী- নিপা বিশ্বাস 






"গ্রামছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ

আমার মন ভুলায় রে"

শিল্পী- তনুশ্রী বিশ্বাস




'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি 
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি`

শিল্পী- অনুপ রায়





কবিতা 



আমার রবি ঠাকুর
ঐশ্বর্য‍্য দাশ

তোমায় দেখতে বড়ো সাধ হয় রবিঠাকুর,
আমার প্রানের ঠাকুর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ।
প্রতিটি ২৫শে বৈশাখ একটি করে রবীন্দ্র সন্ধ্যা,
রঙ তুলিতে মাখিয়ে আর ও কাছাকাছি আসি।
কবিতার জন্ম যদি তুমিই হবে,তবে গান-
গল্পের জন্ম ও তো তোমার হাত ছুঁয়ে।
ছোট থেকেই"সহজ পাঠে"সহজ করে চেনা,
সুখে ও দুঃখে গানের কলি গুনগুন করে গাওয়া
ভালো থেকো রবীন্দ্রনাথ, আমার রবিঠাকুর।






(শিল্পী- লেখক)




সুগন্ধি ফুল
শেখ একেএম জাকারিয়া

বাংলাভাষার রবীন্দ্রনাথ 
সবার প্রিয় কবি,
জগতজুড়ে সকল মানুষ
আঁকে তাঁর-ই ছবি।

জোড়াসাঁকো জন্ম কবির
সব হৃদয়ে তিনি,
তাঁর কবিতা-গল্প-গানে
বিশ্ববাসী ঋণী।

মুখে আছে শুভ্র দাড়ি
মাথায় লম্বা চুল, 
সকল সময় খুশবু ছড়ায় 
সুগন্ধি এক ফুল।






  কবি প্রণাম
 শুভাশিষ রায়চৌধুরী


কবিগুরু তোমাকে প্রণাম
সময়ের নিরন্তর যন্ত্রণায়
আজ মোরা লীন,দীন
কাল জীবানুর গ্রাসে অসহায়
খুঁজে ফিরি শুধু বেঁচে থাকার সহায় ।
তোমার লেখনি অবলম্বন করে
ফিরে পেতে চাই আঁধারে আলোর দিশা
হে প্রভু ---তোমার গান ,তোমার মূল্যবোধ
আনুক আনন্দ,আনুক সুখ
ঘুঁচে যাক সব গ্লানি,কষ্ট,শোক


পৃথিবী আলোকিত হোক নতুন আলোকে ।




(শিল্পী- মৌরুসি দত্ত)





"মননে রবির কিরণ"
পারমিতা রাহা হালদার


পঁচিশে বৈশাখ তোমার জন্মতিথি, 
এসে ছিলে তুমি আলোক রথ চাপি!
পালিত হলে সারদা মায়ের আদর যত্নে,
তোমায় পেয়েছি আমরা বাংলা মায়ের কোলে ।

বঙ্গবাসীর হাতেখড়ি তোমার  সহজপাঠে ;
জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছ সাহিত্য প্রবন্ধে!
আপন মনে লিখে গেছ কতো গানের ছন্দ,
মনকাড়া সব কবিতা আর কতো রঙের গল্প ।

কতো ছবি এঁকেছো তুমি বঙ্গমাতার কোলে ;
সব ছবি আজ স্থান পেয়েছে বিশ্ব ভুবনে!
জয় জয় রব আজ ত্রিভুবনে হে বিশ্বকবি ,
কবিগুরু নাম মননে রয়েছে দেশবাসীর।

দিয়েছ আমাদের, তোমার অমর সৃষ্টি বিশ্বভারতী ,
গীতাঞ্জলি মহান গ্রন্থ,গৌরবান্বিত আজও বাঙালী ! ভালবাসা প্রেম প্রীতি,তোমারই জয়গান করি ;
মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে তোমাকে সকল দেশবাসী ।

"হে নতুন দেখা দিক আর- বার",
শঙ্খ বাজুক চিত্তমাঝে পূজিতে গৌরব-যশ।
পথভোলা ওগো পথিক তুমি !
নিয়েছো স্থান; প্রাণকবি আজ, তোমারে নমি।









(শিল্পী- সোনালি কবিরাজ)   






স্মৃতিতে আছো তুমি
সুস্মিতা চৌধুরী



এই খানেতে বসে আছি
       একা, ছাতিম তলের নিচে;
যেখানেতে মন প্রাণ 
       দিলাম উজাড় করে।

চারিদিকে গাছ শুধু 
        আর তপোবনের ছায়া;
পঞ্চবটি বৃক্ষ দিয়ে 
          যেনো এখান ঘেরা।

গাছ গাছালি, পাখ পাখালি
         নতুন রঙের মেলা;
মন জানে মনের কথা
          এ যেনো সব বিশ্ব কবির দেওয়া।

বছর ঘুরে এলো আবার
           সেই যে শুভ দিন;
কবিগুরুর জন্মদিনে 
            শান্তিনিকেতন ভ্রমণ আমার অমলিন।




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নবনীতা সরকার

বিশ্ব সাহিত্যের তুমি বিস্ময় কবি,
সবার প্রণম্য তুমি আমাদের রবি ৷
নামেতে শুধু রবি নও , রবি সৃষ্টি কর্মে
তুমি রবি জগতের,তুমি রবি মর্মে ৷
বাঙালির অহংকার তুমি বাঙালির গর্ব,
নাইট ফিরিয়ে ইংরেজ দম্ভ,করেছিলে খর্ব ৷
দেখেছিলে দেশ বিদেশ ,নানা ধর্ম জাতি 
অমর সাহিত্য রচনা করে পেয়েছিলে খ্যাতি ‌৷
শান্তিনিকেতন,জোড়াসাঁকো,রবীন্দ্র সেতু-ভবনে 
শুধু তুমি নেই যে ঠাকুর,আছো বাঙালির মননে ৷
সুখের মাঝে,দুখের মাঝে সকল সময়ই তুমি..
তোমার দানে থাকবে ঋণী ,তোমার বাংলা ভূমি ৷
সবক্ষেত্রে অপার সৃষ্টি,শিল্প-সংস্কৃতি-ধর্ম
সাহিত্য-রাজনীতি-নৃত্য-গীতি এ যে মহান কর্ম !
তোমার তুলনা শুধুই তুমি,আর সাধ্য কার !
নোবেল জয়ী কবিগুরু, তোমায় নমস্কার ৷৷


(শিল্পী- বনশ্রী কুন্ড)



ক্ষমা
এম এ ওহাব

ক্ষমা করে দিও প্রকৃতি।
এবারের মতো যদি বেঁচে যাই
এরকমভাবেই ক্ষমা চেয়ে নেব নদীর কাছেও।
আমরা তো নদীর জলের কাছে দায়ী
আমরা তো বৃক্ষদের কাছেও প্রতারক
তাদের কাছেও জানিয়ে দেব অনুশোচনা আর শোক।
আমাদের হাঁটাচলা,চোখখোলার যতটা সাহস
তার চেয়ে বেশি উড়েছি আকাশে আকাশে...
আর অনিবার্য মৃত্যু পড়ে রয় কুয়াশার ঘাসে ---
আনাদরে!
মৃত্যুগুলো মড়কে মড়কে
দূর দূরে সরে যায় লোকে!
অথচ মৃতেরও আদর হয়,
ঢাকা থাকে মায়ার চাদরে।
এই দৃশ্যাবলীর কাছে নত হয়ে থাকা,
পরাজিত হয়ে নোয়ানো পতাকা!
আমাদের গর্ব খোয়া যায়।
প্রতিবার হেরে গিয়ে মৃত্যু সাজাই!
ক্ষমা করে দিও প্রকৃতি,
নত হওয়া; এটুকুই দায়।









(শিল্পী- সৃজা রায়)



কবি প্রণাম
রীতা মোদক


রবিঠাকুর কোথায় তুমি
কাদছে তোমার তানপুরা,
তবলাতে আর লহরী উঠে না
মানুষগুলো ছন্নছাড়া।

রবিঠাকুর ফিরে এসো
আজ যে তোমার জন্মদিন
   প্রভাত ফেরীতে গাইবে সবাই
নাচবে খুকি তা- ধিন - ধিন।

রবি ঠাকুর তোমার সুরে
ভরলো সারা ভুবন,
কবিতা গানে পূর্ণ বিশ্ব
নাটকের ধারায় ডুবলো মন।

সোনার তরী শূন্য আজ
রবি ঠাকুর ফিরে এসো
জলরাশি ডাকছে ছলাৎ
প্রাণের ঠাকুর তরীতে বস।

মাধবীলতা জড়াবে চরণ
কোথায় তুমি রবি?
আকাশে বাতাসে ভেসে উঠে
শুধু তোমার ছবি।

জন্মদিনে প্রণাম জানাই
উৎফুল্ল  মন,
শ্রদ্ধার্ঘ দেবো তোমায়
বারাও দুটি চরণ।

তুমি আছো তুমি থাকবে
থাকবে সারা ভুবনে ,
তোমার রস্মি ছড়িয়ে আছে
সকল কবির মনে


(শিল্পী- অর্নব অধিকারী)






"আমাদের রবীন্দ্রনাথ"
                     রাণা চ্যাটার্জী

"আ"জ ও আগামী সম্পৃক্ত তোমারই ছায়াতে ,
"মা"ধুর্যতায়  আসন পাকা ,রূপ রস মায়াতে । 
"দে" বতারা তো অমর হয়,তুমিও অমর  কবি,
"র" য়ে গেছে স্মৃতি সুধায় জীবনের জলছবি।

"র" বি ঠাকুর এক রবি কিরণ,শ্রেষ্ঠ কবিয়াল
"বী"না,সেতার,সুর ঝংকার রাখে সে খেয়াল।
"ন"ত মস্তকে আজও সব গাই রবি কবির সুর
"দ্র'বীভূত লবণ যেন মনের রন্ধ্রে খুশি ভরপুর।

"না"ম,যশ উপছে পড়ে, তোমার মহিমা সব-ই।
"থ"মকে যাই উজ্জ্বলতায়,আলোয় ফোটে"রবি"

শহর-গ্রাম দেশ বা বিদেশ আনাচে-কানাচে মনে  
রবি মূর্ছনা রবি দ্যোতনা ,খুঁজে পাই প্রতি ক্ষনে।
বাঙালির রবি,স্থায়ী জলছবি, নিরালায় ভাসে সুর
রাবীন্দ্রিক সৃজনী স্পর্শে জাদু,এ জীবন ভরপুর।

মেঘমুক্ত আকাশে বিশ্ব রবি,কবি শ্রেষ্ঠ রবি রাজ,
তপ্ত বোশেখ পঁচিশ জুড়ে,দেখি কত স্মরণ আজ।
তেত্রিশ কোটি দেবদেবী শুনি,সঙ্গে শত ঋষি মুনি
চিরভাস্বর হোক আসনখানি ,কবিশ্রেষ্ঠ,মহারাজ।

রবির পরশে,চিত্ত হরষে বিশ্বকবির দৃপ্ত জয়গান ,
রবির আলোয় আঁধার ঘোচে উজ্জলতায় সব ম্লান।
সকাল সাঁঝে, ব্যস্ত কাজে ঘূর্ণাবর্তেই সময় পার ,
চেতনায় ঘোরে রবির সুর উৎফুল্লতার ঝংকার।




জোছনা রাতের গান
 সবুজ সরকার

একবুক ঝড় নিয়ে আসা নজরুল
শান্ত হয়েছিল সে বিকেলে।
যেমনটা হয়েছিল রূপনারায়ণ,
খোয়াইয়ের লাল রং আজও
মানচিত্র এঁকে দেয় পৌষমেলার মাঠ জুড়ে
বেলকুঁড়ির মালা সুগন্ধ ছড়ায়
পঁচিশে বৈশাখ।
কালিম্পঙের কবি বাড়ির স্মৃতি আগলে
বসে থাকে নেপালি ড্রাইভার; হৃদয়–খামে
সুগন্ধি ভরে তিস্তা ছুঁয়ে বাড়ি ফেরে
এক দল বাঙালি।
সব শোক একাকার হলে জোছনা রাতে বুলবুল গান ধরে। 




(শিল্পী- পিয়াস গোস্বামী)

শ্রদ্ধাঞ্জলী 
সুস্মিতা পাল কুন্ডু

তোমার কথা .....তোমার গানের সুর 
ভরিয়ে রাখে সশঙ্কিত সময় ,
তোমার লেখা আশার বাণী হয়ে ঝরে
অসীম এক মায়ার অনাবিল সুরের লহরে .....
কলম তোমার লিখেছিল অজস্র অনুভব 
শত সহস্র মানুষের জীবনবোধে মিশে গিয়ে.....আজ অমর বৈভব ;
পথ দেখায় ভাঙ্গা গড়ার চড়াই-উৎরাই বাঁকে
আমার বাঁচা অবসরে , খুশির ঝলক তোমার পরশ মাখে ;
তোমার গানের কথার মানে খুঁজি
অসীম শান্তির বাতাবরণ , অশান্ত হৃদয় নতুন ভাবে জাগি ,
জীবনযুদ্ধে বিধ্বস্ত ....নিরাশায় ক্লান্ত যখন 
বিনম্র শ্রদ্ধায় , ছুঁয়ে নি তোমার চরণ ;
সকল কাজের মাঝে তোমার কথায় ভাসা
ঝড়-ঝঞ্ঝায় আঘাত সয়ে হাসা --
কি করে তোমার ঋণ শুধব ,তাই তো মনে ভাবি ,
২৫ শে বৈশাখ ...জন্মদিনে লহ হে প্রণাম বিশ্বকবি ....






কবিগুরু
রবিনা সরকার


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ,
বাংলা সাহিত্যে তুমি সদা সিংহাসনে বিরাজমান।
আধ্যাত্মচেতনা, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম,
স্বদেশ-বিশ্ব, ভাব-ভাষা-ছন্দ সবই তোমার কলমে।
তোমার কলম গর্জেছে অস্পৃশ্যতা,
সামাজিক ভেদাভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি,
ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও।
সাহিত্যে নোবেল সে কেবল তোমারই নয়,
আপামর সাহিত্যেপ্রমীর আবেগ।
গল্পগুচ্ছ হোক কিংবা গীতাঞ্জলি;
গীতবিতান কিংবা সঞ্চয়িতা,
প্রবীণ-নবীন, বাঙালি-অবাঙালি
সকল সাহিত্যপ্রেমী তোমাতে এসে মিশে যায়।
কবিগুরু, বিশ্বকবি, গুরূদেব,
নানান অভিধায় তুমি ভূষিত,
বাংলা ভাষা সাহিত্যে তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ।
কবিগুরু তুমি এক আবেগ,
যা কখনো হারিয়ে যাবে না সময়ের গতিতে।
তোমার অপরিসীম অবদান,
আজও লেখা স্বর্ণাক্ষরে বাংলা সাহিত্যের পাতাতে।




(শিল্পী- রাজেশ সামন্ত)





মুজনাই অনলাইন বিশেষ সংখ্যা, ২৫শে বৈশাখ, ১৪২৭