আন্তর্জাতিক কবিতায় বাঁকবদল & বাংলা কবিতায় তার প্রভাব ও সমকালীন সময়ে রবীন্দ্রকাব্য
------------------------------ ------------------------------ -------
ব্রহ্মান্ডের প্রতিটা ঘটনার নিজস্ব ভাষা থাকে।কবিতারও কি স্বতন্ত্র ভাষা সম্ভব? (পর্ব - ৩)
:
:
গতোপর্বে, আমরা দেখেছিলাম 'কম্পিউটার এইডেড্ পোয়েট্রি' বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে, কিভাবে আজকের কমলিকারা কবিতা লিখে ফেলতে পারে?সঙ্গতোভাবেই, প্রশ্ন উঠেছিলো : তাহলে কি ভবিষ্যৎে 'কবি' শব্দটির বিলুপ্তি ঘটতে চলেছে? আসলে, সৃজন বনাম প্রযুক্তির দ্বন্দ্বটা, শুরু থেকেই মূলতঃ যে কারনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মনে হয়, সৃজনের কাজে প্রযুক্তি ব্যবহারকে অস্বীকার করা।কিন্তু যদি ভেবে দেখি, প্রযুক্তির সৃষ্টি করা, তার উত্তরণ ঘটানো : এসবই তো বৃহত্তর সৃজনের অংশ।এবং আমরা তো, বিগতো পর্বেই দেখেছি : ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির আইডিয়া কিভাবে, শিল্পিত হয়েছে।যদিও, ভবিষ্যৎ পর্বগুলিতে এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা থাকবেই।এখোন, আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা প্রধানতো ফোকাস করবো এই 'কম্পিউটার এইডেড্ পোয়েট্রি' বিষয়টির ওপর।
এই computer aided poetry বা CADএর পিছনে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শিরোনামক্ প্রযুক্তিটি।যদিও বাংলা ভাষায় বিষয়টি নিয়ে যৎসামান্য কাজই হয়েছে, আর তা করেছে কিছু নিভৃতে থাকা লিটিল্ ম্যাগাজিনই।যাইহোক, CAD পর্বে ঢোকার আগে, দেখে নেওয়া দরকার : এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টি ঠিক কী।খুব গোদা বাংলায় বলা যায় : বিষয়টি অনেকটা এরকম, ''মানুষের চিন্তাশক্তির 'বিন্যাস'কে যদি বিভিন্ন 'শর্তাবলীর পরিবেশ এবং স্থানাঙ্ক বা গাণিতিক coordinate' সাপেক্ষে বিশ্লেষণ করে, যদি তার একটি প্রযুক্তি নির্ভর অনুকৃতি বা অনুলিপি এমনভাবে তৈরি করা যায়, যাতে সেই প্রযুক্তি চালনাকারী মেশিন, ঐ একই শর্তাবলীর পরিবেশ এবং স্থানাঙ্ক সাপেক্ষে, মানুষটির মতোন চিন্তাভাবনার উদ্ভাবন ঘটাতে পারে।" আরো সহজ করে বললে, এই প্রযুক্তি হলো ~ মস্তিষ্কের যে অংশগুলি চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটায়, তার একটি সমান্তরাল কার্বন / জেরক্স কপি।আরো সহজ করলে : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি।ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়া খুললে, যেটি পাওয়া যায় বিষয়টি নিয়ে, তা হলো : (কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, এ.আই. গবেষণার ক্ষেত্রটি "বুদ্ধিমান এজেন্ট" -এর অধ্যয়ন হিসাবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে: যে কোনও যন্ত্র যা তার পরিবেশকে অনুধাবন করতে পারে এবং এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় যা কিছু লক্ষ্য অর্জনে তার সাফল্যকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেয়। "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন যখন একটি মেশিন "জ্ঞানীয়" ফাংশনগুলিকে কার্যকর করে যা অন্যান্য মানুষের মনের সাথে মিল থাকে, যেমন "শিক্ষা গ্রহণ" এবং "সমস্যা সমাধানের" সাথে সংযুক্ত। আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন "এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা")। অতএব এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেকোনো ভাষাকে যেমন আমাদের ভাষায় এনক্রিপ্টেড্ (encrypted) করা যায়, তেমনই মানবসভ্যতায় ব্যবহৃত ভাষাকে অন্য যেকোনো ভাষায় রূপান্তরিত করে যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করাই যায়।প্রসেসটি অবশ্যই এনকোডিং & ডিকোডিং।এবার যদি একটু সাহিত্য মোড়কে রূপকথাশৈলি অনুযায়ী এভাবে বলা যায়, "রবীন্দ্রনাথের কাছে জানতে চাইলাম বিনির্মাণ তত্ত্বের বিন্যাস ব্যাখ্যা, তিনি যা বললেন, স্রেফ বিস্ময়" অথবা "কোয়ান্টাম ফিল্ডে আপেক্ষিকতার আপাতবস্থান সম্পর্কে আইনস্টাইন জানালেন, পুনর্মূল্যায়ন সম্পর্কিত তাঁর নতুন থিসিস" অথবা আরো কয়েকধাপ এগিয়ে, "মস্তিষ্ক পৌঁছে গেছে ৫০০০বছর পূর্বে বা ৫০০০বছর ভবিষ্যৎে।যদিও, অস্তিত্ব নিরাপদ।কারন, শরীরটা তো সেই অতিপরিচিত ঘরের ভিতর বিছানায়" ~ এগুলো কি এখনও মনে হচ্ছে অবাস্তব? অবশ্য ধীরেধীরে, বাস্তব / অবাস্তবের গোটা dictionটাই পাল্টে দিচ্ছে প্রযুক্তির এই সমস্ত নবোতমো উদ্ভাবনী সম্ভাব্যতা।ঠিক অনেকটাই কবিতার গূঢ় রহস্যের মতো।অনেকেই হয়তো বলবেন, এসব প্রযুক্তি প্রকৃতি বিরোধী, যা কেবল ধ্বংসকেই আহ্বান জানায়।তাঁদের এই মতামত, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে জানাই যে, এটি একটি কৃত্তিম বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করানোর, অত্যন্ত চতুর / মিশেল / দো-আঁশলা জাতীয় মতবাদ, যা কর্পোরেটবাদীদের দ্বারা নিপুণভাবে প্রোথিতো।যার পিছনে রয়েছে, দুটি অত্যন্ত চূড়ান্ত স্বীকৃতির অদৃশ্য মেনে নেওয়া।প্রথমটি হলো, প্রযুক্তির ব্যবহার একচেটিয়া কিছু স্বার্থান্বেষণের জন্য নিবেদিত এবং দ্বিতীয়টি হলো, প্রকৃতিকে একমুখী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতাবানের একচেটিয়া দখোলদারীর নির্ভরযোগ্য বিস্তার।আর, যারাই প্রযুক্তির বিরোধ আজ করছেন, তাঁরাই সবার আগে ওপরিক্তো দুটি স্বীকৃতি মেনে নিচ্ছেন নির্দিধায়।অবশ্য, একথাও সঠিক যে : প্রযুক্তি ব্যবহার জানার সৎ ও প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ~ তার য্যানো বিশেষ স্বার্থ-উন্মাদনায় প্রয়োগকরণ না ঘটে।অর্থাৎ, একথা উপলব্ধি করা উচিৎ : প্রযুক্তির ব্যাবহারের প্রকৃত কারন কী।আরো সহজকথায়, যারা ব্যবহার করছেন, তাদের জানা উচিৎ কেনো করছেন।অথচো, যাই বলি না কেনো : প্রকৃতি কখনোই বলে নি অমোঘ ক্ষয় বা তার ফলাফলবর্তী শূন্যতার কথা।তার কাছে, শূন্যতা হলো ~ এমন একটি আর্বিটারি জটিল অবস্থান, যা অনন্ত শূন্য অভিমুখী।এটা এমনই এক অবস্থান, যেখানে শূন্যতা অর্থে কিছু নেই নয়, বরং যা আছে অদৃশ্যমান।অর্থাৎ, আদর্শ empty space হলো অসীম অভিমুখী অনন্ত।যে কারনে বিজ্ঞান স্বাভাবিকভাবে কোনো শূন্যস্থানকে ধরে রাখতে পারে না।বাতাসে শূন্যস্থান সৃষ্টি হলে, সেখানে প্রবেশ করে আশেপাশের যাবতীয়।মহাশূন্যের অভ্যন্তরে থাকা যেকোনো বস্তু কৃষ্ণগহ্বরের দিকে আকর্ষিত হতে থাকে, ইত্যাদি।ঠিক যেরকম, বর্তমানে থাকা যাবতীয় যাকিছু, সবই অস্থির।যা আজ অনাবিষ্কৃত, তাই আগামীকাল আবিষ্কারের ইঙ্গিত।যাইহোক, এসব অনেক কথাই উত্তরপর্বে আসতে থাকবে।তবে, বেশী বিষয়ান্তরে না গিয়ে আসুন, আমরা আমাদের মূল জায়গায় ফিরে আসি।
:
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ নিয়ে কবিতায় প্রবেশের আগে, যে বিষয়টির উপস্থাপনা জরুরি, তা হলো : কৃত্তিমভাবে ভাষা গঠন করা যায় কি না এবং তার ব্যাকরণগতো শৈলী কৃত্তিমভাবে করা যায় কি না।এ বিষয়ে, শুঁয়োপোকা গদ্যটির লেখক পীযূষদাকে প্রশ্ন করায়, তিনি বলেছিলেন 'কেনো সম্ভব নয়।অবতার সিনেমাটির গল্পে একথা দেখো নি।যেকোনো ভাষার কিছু নির্দিষ্ট শৈলী / প্যাটার্ন / বিন্যাস আছে।এরকমই শর্ত / ফ্যাক্টরগুলির ওপর নির্ভর করে সংশ্লেষিত হয়েছে ব্যাকরণ, তৈরি হয়েছে ধ্বনিভিত্তির লিখিতো রূপ।সুতরাং, এই শৈলীগুলিকে যদি বিশ্লেষণ করে, কোনো এক ভিন্ন অনুলিপি তৈরি করা যায় কৃত্তিমভাবে, সেক্ষেত্রে কৃত্তিমভাষ্যের জিনগতো প্যাটার্ন অবশ্যই গড়ে তোলা সম্ভব।শুধু তাই নয়, মেশিন কতৃক (এখানে, কম্পিউটারকে 'মেশিন' গোত্রে ফেলা হলো) সেই কৃত্তিম ভাষার analogy দিয়ে, কবিতাও লিখে ফেলা সম্ভব।যার, একটি প্রাথমিক রূপায়ন হিসেবেই 'শুঁয়োপোকা' গদ্যটি।সম্প্রতি, পীযূষদা একটি ব্লগ খুলেছেন, নাম কমলিকা, ঠিকানা :https://komolikaa.blogspot.com ।সেখানে, এই গদ্যটির সম্পূর্ণ অংশটি রয়েছে।যাইহোক, ওভার দ্যি টেলিফোন, মেসেঞ্জার এবং সর্বোপরি এই বছরের শুরুর দিকে হওয়া কলকাতা বইমেলায়, পীযূষদার সাথে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে, অনেক কথাই হয়েছে।সেসব কথা ও নিজের আত্মীকৃত ভাবনাকে মিশিয়ে, বিষয়টি সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি
:
বেশ কিছুদিন আগে, ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম "EVERY AUTOMATIC SYSTEMS BASED ON CHOOSABLE STATE OF PROBABILITY" এবং এটির শিরোনাম ছিলো : পরবর্তী কবিতাংশের সন্ধান।কথাটির যদি বাংলায় ভাষান্তর করা যায়, তা অনেকটা এরকম হতে পারে "সম্ভাব্য দশাকে বেছে নেবার ওপরেই, প্রতিটি স্বয়ংক্রিয় তন্ত্র নির্ভর করে থাকে"।কথাটিকে, আরেকটু সহজলভ্য করে দেখলে, যেকোনো বিষয়ভিত্তিক কাজের গোটা প্রক্রিয়াটি, যদি সিস্টেম হয় : তাহলে, তার ক্রিয়া করা বা function করাটি নির্ভর করে ~ তার বেছে নেওয়া সম্ভাবতার (probability) দশাটির (state) ওপর।যদিও, বলে রাখি ইংরেজি ভাষাটি থেকে ভাষান্তর ব্যাপারটি সড়গড়তার অভাবে একটু দুর্বল লাগতে পারে।চাইবো, পাঠক আমাকে সাহায্য করুক।এবার, উপরের সিদ্ধান্তটির সাপেক্ষে একটু ছোট্ট উদাহরণ নেওয়া যাক।ধরা যাক "অন্ধকারে থাকলে ভয় পাই", এই সিদ্ধান্তটি।এখানে : 'অন্ধকার' হলো দশা, 'ভয় পাওয়া' এবং থাকা একটি function বা ক্রিয়া, শর্ত হিসেবে রাখতে পারি 'দেখতে না পাওয়া' এবং 'থাকা', system বা তন্ত্র হলো 'বিশ্বাস' বা 'belief', যার ভেতর ভয় পাওয়া functionটি কাজ করছে।অর্থাৎ, দেখতে পাচ্ছি না → অন্ধকার → ভয় পাচ্ছি : এটা যদি ফ্লো-চার্ট (flow chart) হয়, তাহলে ~ সিস্টেমের একটি বা একাধিক দশার কারনে একটি ফাংশন্ কাজ করে, যার কিছু শর্ত থাকতে হবে।অর্থাৎ, শর্ত → দশা → ফাংশন, ব্যাপারটি এরকম।এখোন, এই কাজ করার প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন হয়, সে সম্বন্ধিত উপ-বিষয়টি খানিক বুঝে নিলে ভালো।সহজভাবে একে বোঝানোর জন্য, একটি খুব সহজ গাণিতিক উদাহরণ নেওয়া যেতেই পারে।
ধরা যাক, চারটি সংখ্যা নেওয়া হলো : ০,১,২,৩।এখোন ফাংশন হলো, এই সংখ্যাগুলিকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে, ৩ ফল আনতে হবে।এখানে শর্ত হলো 'যোগ' বা (+), দশা হলো ধনাত্মক সংখ্যা বা (+০/+১/+২/+৩) এবং ফাংশন হলো '৩' বা f(৩) =∑(?+?....+?)।(∑) চিহ্নটি গণিতের ভাষায় 'মোট যোগফল'।এবার কী কী উপায়ে এটা করা যেতে পারে, দেখা যাক : ০+৩; ৩+০; ০+১+২; ০+২+১; ২+১+০; ১+২+০; ২+০+১; ১+০+২; ০+১+১+১; ১+১+১+০।উক্ত বিন্যাসগুলির মধ্যে প্রতিটি একক্ বিন্যাস, নির্দিষ্ট দশাটিতে অবস্থান করে, নির্দিষ্ট শর্তপূরন করে, ফাংশনাল ক্রিয়াটি সম্পন্ন করছে।একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, মোট বিন্যাস সংখ্যা ১০।সম্ভাব্যতা বা probabilityর সাধারন সূত্র অনুযায়ী : ৪টি সংখ্যা বা digitর জন্য মোট বিন্যাসের সম্ভাব্য রূপসংখ্যা হলো : ৪+৩+২+১+০ = ১০।গোটা প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত সিস্টেমটিকে বলা যেতে পারে mathematical logic system বা গাণিতিক-যুক্তিতন্ত্র।আবার, এটাও খেয়াল করার মতো : আপাতভাবে শর্ত বা দশা, যেকোনো একটির পরিবর্তন হলে ~ সমগ্র ফাংশনটির একেকরকম ফলাফল পাওয়া যাবে।যদিও, উদাহরণগুলি অনেকটাই সরলভাবে নেওয়া হলো।কারন,শর্ত বা দশার একাধিক অন্তর্ভুক্তির ফলে ফাংশনটি কিন্তু অত্যন্ত জটিলতর।এভাবেই বিভিন্ন সিস্টেমের অন্তর্গত বিভিন্ন ফাংশনগুলি, বিভিন্ন দশা এবং শর্তের সংঘবদ্ধতায় রূপায়িত হয়ে থাকে।আরো মজার কথা, সমাধানের ভিন্নভিন্ন ফল তখনই হয়, যখোন শর্ত বা দশার সামান্যতমো হেরফের ঘটে।ঘটে যায় 'কেওস' বা chaos।এবিষয়ে মজাদার স্পষ্ট থিয়োরিও আছে, যার নাম chaos theory (কেওস থিওরি)।উৎসাহী পাঠক, ইন্টারনেট সার্চ করে দেখে নিতে পারেন 'কেওস থিয়োরি ও বাটারফ্লাই এফেক্ট'।কারন, এটিকে এখানে ব্যাখ্যা করার অর্থ : নিশ্চিতভাবে বিষয়ান্তরে পৌঁছানো।যাইহোক, যেকোনো ভাষার ব্যাকরণ বিশ্লেষণ করলেও কিন্ত, এরকমই নির্দিষ্ট কিছু বিন্যাস আমরা পেয়ে যাবো।এভাবেই, মানুষের সৃষ্ট ভাষা / পাখিদের সৃষ্ট ভাষা / গাছেদের সৃষ্ট ভাষা / মাটির সৃষ্ট ভাষা / বিভিন্ন প্রাণীকূল সৃষ্ট ভাষা / যাবতীয় যা কিছু, আর এভাবেই মেশিন সৃষ্ট ভাষা।এবারে আমরা সহজভাবে দেখার চেষ্টা করি, মেশিন এবং মানুষের মধ্যে ক্রিয়ার তুলনামূলক জায়গাটি ঠিক কিরকম
:
খুব সাধারন যুক্তিবোধ থেকে, একথা বলা যেতে পারে : মেশিন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বারবার একইভাবে বা সমদক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারে, যেটা মানুষ পারবে না।স্বাভাবিকভাবেই, মেশিন কাজটি অনেক কম সময়ে করবে এবং তুলনামূলকভাবে মানুষের দেরি হবে।একটা উদাহরণ নেওয়া যাক : ধরা যাক, 'একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে, একটি নির্দিষ্ট মাপের দড়িকে, কয়েকটি নির্দিষ্ট মাপে কেটে ছোটো করতে হবে'।এখানে, শর্ত হোলো ছোটো দড়িগুলোর মাপের কোনো হেরফের নয়, অর্থাৎ নির্দিষ্ট মাপ।দশা হলো নির্দিষ্ট পরিবেশ।ফাংশনাল প্রক্রিয়াটি হলো কেটে ছোটোছোটো করা।এখোন, মানুষের তুলনায় মেশিনের কাজটি করা ওপরের শর্ত ও দশা'র সাপেক্ষে দ্রুত সহজ এই কারনেই যে : মানুষের অঙ্গ সঞ্চালনা অনির্দিষ্ট (এখানে, তার পেশীর শৈলী, সঞ্চালনার গতিবেগ, ইত্যাদি বহু শর্ত ও দশা।বলা ভালো, তার নিয়ত-জটিল গঠন আরো অনেক শর্ত ও দশার ওপর নির্ভরশীল)।এবারে যদি নির্ভুলতার জায়গাটি আসে, সেখানেও কিন্তু মেশিনটি মানুষের চেয়ে বেশি মাত্রায় নির্ভুল হবে।কারন, মানুষের সবার আগে দরকার আলোর প্রকাশ।সাধারন পরিবেশ, যাকে atmosphere বলে মানুষ জানে, সেখানে কিন্তু আলোর অন্তর্ভূক্তি নেই।বলা ভালো, আলো হোক বা অন্ধকার : মেশিন তার কাজটি করেই যাবে।এবার, দেখা গেলো : দড়িটির ক্ষেত্রফল, তার কোনো এক জায়গায় এতো বেশী যে, যা দিয়ে কাটা হচ্ছে তা কাটতে পারছে না।এখানে মেশিন তার কাজে বাধাপ্রাপ্ত হলেই, সে বলবে performing ERROR, কিন্তু মানুষ সেখানে দড়ি ও কাটারের ভেতর একটি ঘর্ষণবল প্রয়োগ করবে এবং দড়িটি কেটে ফেলবে।এখানে, ঘর্ষনবলের প্রয়োগ হলো সৃজনশীলতা এবং ঘর্ষনবল প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা হলো বুদ্ধিমত্তা, যার কারনে সে অনুভব করলো কিভাবে দড়িটিকে কাটা যেতে পারে এবং একটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিলো।এবার যদি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে হয়, মেশিনের দশাটির মধ্যে ঘর্ষনবল সংক্রান্ত যাবতীয় কিছুর অন্তর্ভূক্তি ঘটাতে হবে।আসলে, এই সমগ্র লজিক সিস্টেমের তফাত কার্যের গতি ও নির্ভুলতার মানোত্তরণ নির্দেশিত করে।যদিও, এই উদাহরণটিকে আরো বিশদ করা যেতো, ফলতঃ হয়তো আরো সহজবোধ্য করা যেতো, তবু মনে হয় এটুকু আলোচনাতেই সম্ভবতো বিষয়টি বোঝা যাবে (কেউ না বুঝলে, আলোচনা চাইতেই পারেন।দরজা সবসময় খোলা)।যাইহোক, একাধিক ফলাফল পেলে, তার ভিতর কোনটি প্রয়োগের সম্ভাবনা বেশী ~ এটি বাস্তবিক্ পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল।অতএব, এটুকু সিদ্ধান্ত নেওয়াই যায় : যে যে ফাংশনগুলি অতীতে সম্পন্ন হয়েছে, সেসবের বিশ্লেষণে প্রাপ্ত দশা ও শর্তগুলিকে নিয়েই মেশিন কার্যসাধন করতে পারে এবং যা হয়নি অর্থাৎ অপরিচিতো পরিবেশে তার কিন্তু এরর্ ঘটানোর সম্ভাবনা বেশী, যেহেতু তার সৃজনশীলতা অসম্পূর্ণ।এছাড়াও, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে : মেশিনের কার্যকাল একটি নির্দিষ্ট সময়-ফ্রেমের মধ্যে সক্রিয়। অর্থাৎ কোনো বাহ্যিক চালিকাশক্তির যোগান্ ছাড়া, সে সক্রিয়ভাবে ক্রিয়াশীল নয়।অর্থাৎ সে কখনো অনন্তভাবে একনাগাড়ে কোনো কাজ করতে পারে না, যা ব্রহ্মাণ্ডের ভিতর প্রকৃতি পারে।এখান থেকে আরো একটি বিষয় ভাবা যেতে পারে : মেশিনের কার্য-প্রসারতা স্থায়ী ও নির্দিষ্ট (এখানে, মানুষকেও আপাতভাবে মেশিন অন্তর্ভুক্ত করা হোলো), অপরদিকে প্রকৃতির কার্য-প্রসারতা অস্থায়ী ও অনির্দিষ্ট।অর্থাৎ, প্রকৃতিতে আজ কোনো বিষয় ঘটছে না বলে, কালও ঘটবে না : একথা চরম সত্যি নয়।
:
এবার অনেকে প্রশ্ন করতেই পারেন : সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায়, এতোসব প্রযুক্তির বিশদতা কেনো।উত্তরে একথা বলবো, বর্তমান সময় হলো তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, the era of information & technology, সুতরাং এই সময়ের সাপেক্ষে অতীতকে দেখতে গেলে, সেসময়ের চিন্তাভাবনার প্রযুক্তির দিকেও খেয়াল রাখা উচিৎ বই কী।এতোকাল, সিলেবাস আমাদের শিখিয়েছে : যে অতীতের কবিতা, বর্তমান সময়কে ভুলে সে অতীতে পৌঁছাতে।কিন্তু এখানে বলবো, বর্তমান সময়ের সাপেক্ষে অতীতকে দেখতে।কারন, সাপেক্ষে শব্দটি আনা মানেই তদপূরক সময়ের লক্ষনগুলির দিকেও তাকানো
:
আসলে, যাকিছুই ঘটছে ~ সেসবেরই 'টাইম অ্যান্ড স্পেস' আলাদা আলাদা। আমাদের লজিক্যাল্ সিস্টেম অনুযায়ী 'টাইম' বিষয়টি হলো সময় (মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামোর ভিতরে থাকা, এমন একটি বিশেষ অংশ ~ যেখানে সমস্ত ভৌত বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ঘটনাসমূহ, একটি নির্দিষ্ট ক্রমধারায় ঘটে) এবং 'স্পেস' হলো স্থান (মহাবিশ্বে অসীম অভিমুখীন দৈর্ঘ্য / প্রস্থ / উচ্চতা বিশিষ্ট ত্রিমাত্রিক বিস্তৃতি, যেখানে বস্তু ও ঘটনা একসাথে অবস্থান করে।অতএব, যার আপেক্ষিক অবস্থান এবং দিক আছে)।কিন্তু তার সাথে চেতনা / আলো / স্পন্দন ~ এসব কি পৃথক পৃথক মাত্রা হিসেবে গণ্য হতে পারে না? সমস্ত কিছু নিয়েই তো কবিতার ব্রহ্মাণ্ড।ভুল বললে, পাঠকের দায়িত্ব শুধরানোর।যাইহোক, আজ অনেক আলোচনা হলো।আসছে পর্বটির বিষয় থাকুক : মেশিন রচিত কবিতার সাপেক্ষে কবিতার শুরু, কবিতায় প্রযুক্তি
শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী
No comments:
Post a Comment