অসম্পূর্ণ পাতা থেকে
মৌসুমী নন্দী
বুকের
ভিতরে একটা নদী আছে ৷ একসময় নদীটা হৃদয়নগরীর পাঁজর ঘেঁষে বয়ে যেত ৷সময়ের
তোড়ে বিষন্নতার জলছবিতে বুকের ভিতর কেঁদে কেঁদে হারিয়ে যায় কোনো একসময়
৷ঢেউ ভেঙে চুরমার হতে থাকে ৷শেষে আকৃতি হীন চাঁদের মতো একেবারে মুছে যায় ৷
নদীর কান্না শুনেছি কত রাত!কত রাত নৈঃশব্দ্যকে খান খান করে
শুনেছি তাকে ৷ ভেতরে ভেতরে সেই কান্না বরফ জমায় ৷ তারপর সেই অপেক্ষা
উত্তাপের ৷ রাত্রে ঘুমের মধ্যে এক অদ্ভুত চামড়া পোড়ার গন্ধ পাই প্রতিনিয়ত
৷ নোনো ধরা শরীর নিয়ে বসে থাকি ৷ তীব্র খরা শরীর জুড়ে ৷ চারিদিকে
বিষন্নতার বাতাস ৷ সেই বাতাসে প্রেম নেই , বৃষ্টি নেই ৷ রাতের আকাশের
বোবা চাঁদটাও মাঝে মাঝে লুকিয়ে পড়ে ৷
জীবনের সম্পর্ক গুলো যখন আকাশের নক্ষত্র হয়ে যায় তখন তাদের হাতড়াতে খোলা
ছাদে যেতে হয় ৷ উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলোকে দেখতে দেখতে একসময় দেখি আকাশের
অনেক নীচ দিয়ে প্রেমেরা মেঘের সাজে পেরিয়ে যাচ্ছে ,কেউ একবারের জন্যও
বৃষ্টি হয়ে ঝরছে না ৷ প্রেম অন্ধকারকে ভয় পায় তাই আলোর খোঁজে রাতের আকাশ
ছেড়ে যায় ৷ অন্ধকার নির্জন ছাদে আমি দাঁড়িয়ে একাকী তখনো অমোঘ লবণাক্ত
মাধ্যাকর্ষণে ৷ কীভাবে যেন তবু বেঁচে আছি ৷ তবে রোজ কয়েকবার মৃত্যুর কামড়
বদলে গন্তব্যের দিকে ছুটি
৷ বিকারগ্রস্ত
নস্ট্যালজিয়ায় এদিক্-ওদিক্ উষ্ণতার খুঁজি৷ খুঁজতেই থাকি থাকি ৷ তারপরে
একসময় ভুলে যাই কি খুঁজছি ৷ গন্তব্যের পৌঁছানোর নেশায় পাই কিছু পরিচিত
গন্ধ ৷ ঐ গন্ধ হাতড়ে বেশ কিছু ভুল হাত ধরে হেঁটেছি পৌনঃপুনিক ৷ একটা ভুল
থেকে আর একটা ভুলে প্রবেশের মাঝে ঐ গন্ধই আমায় বাঁচিয়ে রাখে ৷ কিন্তু
প্রতিবার এক একটা মৃত্যু পেরিয়ে কবিতা লিখতে চেয়েছে নিউরোন ----- আজ কাল
বেশি ভেবে লিখলে সমালোচনা হয় , তারচেয়ে পাগলের প্রলাপ ভেবে আমার ডায়েরী
নিয়ে হাসাহাসি হোক ৷আমি অতীত থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত একটা বড়ো নামচা
লিখে যেতে চাই এলোমেলো পাখির বাসার মতো ৷ সুইসাইড নোট বা আমার বেঁচে
থাকার কৈফিয়ত ৷ কারো কাছে জবাবদিহি করার দায় থেকে নয় নিজের ঘরের আয়নাটার
প্রতি ভালোবাসায় ৷কেন জানি না একটু হাসতে ইচ্ছা করছে ৷ একা একাই হাসতে
থাকি পাগলের মতো ৷ তারপরে হঠাৎ কয়েক মুহূর্তের নৈঃশব্দ্য ৷ ভাবনাগুলো সব
বাক শূণ্য হয়ে যায় ৷ একটু চুপচাপ থাকি ৷ চুপের ভিতর ধীরে ধীরে চাপ
সৃষ্টি হয় ৷ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে খুব ৷ কিন্তু কান্নারাও মাঝে
মাঝে আত্ম অভিমানী হয় ৷ সারাজীবন বিষাদ বইতে বইতে এ যেন এক বিষাদের নদী
৷ তবুও তো স্রোত বয় তির তির করে ৷ চিনে চিনে একটা কিছু জেগে ওঠে বুকের
ভিতর ৷ ঘোলা জলে আবছা দেখি সব ৷দুরারোগ্য এক অসুখ বুকে ৷ যেমন স্কাইলাইনের
মত আকাশ মাটিকে ছোঁয় না কেবল উঁচু উঁচু বাড়ীর ছাদ ছোঁয় তেমনি আমি কাউকে
দেখাতে পারি না সেই ছবি ৷ রাত গুলো শুধু রতিজলের মতো সংরক্ষণ করে চলেছি
একাকি ৷
আমি শুধু একটা পাতা থেকে আরো এক পাতায় ......
No comments:
Post a Comment