সোসাল ডিসট্যানসিং
নবনীতা
দূরত্ব ?
সে তো তৈরি হয়েছে সেই কবে থেকেই ৷ বহুকাল হল সরে এসেছি , সরিয়ে দিয়েছি সেই সব কিছুকেই যা বিষাদে বিক্ষত করে তোলে যাপন ৷
এই সরে আসার ভালো - মন্দ জানা নেই ৷ এই সরে আসায় হারানো - প্রাপ্তির হিসেব করিনি কখনও ৷ এই সরে আসা শুধু আমার ভেতরকার এক নতুন আমি কে জন্ম দিয়েছে ৷ যে আমি সবার মধ্যে থেকেও আলাদা থাকতে পারে,নিজেকে গুটিয়ে রাখতে জানে ৷
তবে প্রসঙ্গ এখানে শুধু আমি নই ...একটা সমাজ ৷ যে সমাজ এক অণুজীবের দাপটে দীর্ঘকাল স্পর্শ বিমুখ ৷ একটা সমগ্র জাতি দাঁতে দাঁত চেপে হজম করছে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি ...দরজায় খিল এঁটে চার দেওয়ালের ভেতর বসে থাকা এই আস্ত সমাজের চিত্রটি বোধহয় ভাবনাতীত ছিল ৷
তবে বরাবরই কিছু খারাপের নীচে ফসিলের মতো চাপা পড়তে থাকে কিছু ভালো ৷ শুধু তার খোঁজ পাওয়া সকলের সাধ্য নয় ৷ সুতরাং অসমাপ্ত রয়ে যায় কিছু রঙিন ক্যানভাস ৷ আর সভ্য সমাজ ব্যস্ত হয়ে পড়ে খামতির দীর্ঘ তালিকা প্রস্তুতে ৷ হা-হুতাশ জমতে থাকে , না পাওয়ার বৃত্তটিকে ঘিরে ৷
তবে এরই মাঝে আমার মতো বেহিসেবী , ছন্নছাড়াদের মনের দেওয়াল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে আদিম রঙিন সব ইচ্ছেগুলো ৷ না না ... সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ ভাঙার কোনো তাড়না জাগে না জীবনের প্রান্তিকে দাঁড়িয়ে ৷ এখন শুধু শব্দেরা চুপি চুপি ডানা মেলে দেয় আর অভিমানেরা কোথাও মিশে থাকে তার আশেপাশে ৷ হাসিকান্নার বারোমাস্যায় চলতে থাকা এই খড়িকাটা জীবন আরো কিছুটা অক্সিজেন শুষে নিতে পারে ঐ শব্দগুচ্ছের থেকে ৷
অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো চেনা চেনা মুখগুলোকে মেপে চলে আমাদের অনভ্যস্ত চোখ ৷ সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলতে গিয়ে অজান্তেই নৈকট্য গড়ে ওঠে আপামর ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে ৷ কোথাও একটু স্বস্তি , কোথাও খানিক আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই হেমন্তের শেষ বিকেলগুলিতে ৷ মনের ক্ষুন্নিবৃত্তি চলতে থাকে এভাবেই বুঝি ৷ যে যেভাবে পারে ঠিক খুঁজে নেয় বেঁচে থাকার রসদটুকু ৷ সারি সারি চৌখুপিতে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মিশে যায় সাংসারিক চিৎকার ৷ আর সেই চৌখুপির ড্রইংরুমগুলোতে ইদানিংকালের সন্ধ্যেগুলো হয়ে ওঠে সিরিয়ালময় ৷
আকাশের নির্বিকার নক্ষত্রমালা আর নিকেল জ্যোৎস্না নিঃশব্দে হাসে .... দূর থেকে ৷ ঐ দূরত্ব মেটানোর অপেক্ষায় চলতে থাকে মানব সভ্যতার চিরকালীন এই যাপন ৷৷
No comments:
Post a Comment