Sunday, April 25, 2021


 


সম্পাদকের কথা 

সাহিত্য শুধুমাত্র আত্মরতি নয়। সাহিত্য বলে মানুষের কথা, সমাজের কথা, জীবনের কথা। কিন্তু জীবন তখনই সুন্দর যখন তার চারপাশের সবকিছু সুন্দর। পুতিগন্ধময় জীবন আমাদের কখনই কাম্য নয়। জীবন সুন্দর হতে পারে প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্যে, নান্দনিকতায়। আর তার জন্য দরকার এক সুন্দর সুস্থ  দূষণহীন নীল গ্রহ, যেখানে বসতি আমাদের, মনুষ্যকুলের। 

সাহিত্য সংস্থার কাজ তাই শুধুমাত্র সাহিত্য নয়, বরং সাহিত্যের মাধ্যমে সেই বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া যা পাঠক-সহ সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে এই পৃথিবীকে কলুষমুক্ত রাখতে। এই ভাবনা থেকেই মুজনাই সাপ্তাহিকের এই বিশেষ সংখ্যা। WORLD EARTH DAY উপলক্ষে মুজনাইয়ের এই সংখ্যায় বড়দের সঙ্গে ছোটরাও এই নীলগ্রহকে নিয়ে তাদের ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছে। প্রত্যেকের সৃজন কেমন হয়েছে তার বিচার করবেন পাঠকেরা। মুজনাই নিজেকে সফল মনে করবে তখনই যখন লেখকদের ও শিল্পীদের বার্তায় তাঁরা সামান্য হলেও ভাববেন পৃথিবীকে নিয়ে, চেষ্টা করবেন নীল বসতিটিকে সুন্দর সুস্থ রাখতে।   


মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)

 

 প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 


মুজনাই সাপ্তাহিক WORLD EARTH DAY বিশেষ সংখ্যা 





WORLD EARTH DAY THEME 

ক্লে মডেল 

শিল্পী- রীনা সাহা 



নিবন্ধ 


অঙ্গীকারবদ্ধ
অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত

আমাদের যে পৃথিবীতে জন্ম, যে পৃথিবী আমাদের মায়ের মত আগলে রেখেছে যুগ-যুগান্তর ধরে, সেই পৃথিবীর প্রতি আমাদের কর্তব্যবোধ, ভালোবাসা ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ২২শে এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। ১৯৭০ সালে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ২২শে এপ্রিল ধরিত্রী দিবসের প্রচলন শুরু করেন। এরপর থেকেই পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রতি বছর এই দিবস পালন করা হয়।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন, "এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" আজও ওনার এই অঙ্গীকার বিশ্বজনীন।
১৯৭০ সালে প্রথমবার বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। সেই সময় ২০ মিলিয়ন মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলস্বরূপ জর্জরিত। এই প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। সারা বিশ্বে দিনটিকে "আর্থ ডে" বা "ধরিত্রী দিবস" বলা হয়।
তবে গত বছর থেকেই পুরো বিশ্ব অদেখা কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দরুন সেভাবে হয়ত ধরিত্রী দিবস পালিত হবে না। কোরোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে পৃথিবীর সকলেই বিপর্যস্ত। পৃথিবী যে অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তা স্পষ্টতই লক্ষণীয়।এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমরা পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে দিবসটিকে অন্যরূপে পালন করি। এসো সকলে বারবার হাত ধৌত করি, বাইরে যাওয়ার আগে মাস্ক ব্যবহার করি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। আসুন একটি বসবাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে নিজে সচেতন হই ও অপরকে সচেতন করি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ধরিত্রীর যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ করনীয়।
* সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে সকল মানুষকে পরিবেশ সচেতন করে তুলতে হবে।
* পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন গবেষনামুলক কাজে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
* কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন," স্বর্গের সাথে পৃথিবীর কথোপকথনের একমাত্র মাধ্যম গাছপালা।"
তাই পরিবেশকে সুন্দর রাখতে বৃক্ষরোপন ও খুউব প্রয়োজন।
আবারও বলব নিরাপদ পৃথিবী গড়তে আমাদের সকলকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে,তবেই আমরা এই মারামারির পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পেতে পারি।



নীলগ্রহ ও সুস্থায়ী উন্নয়ন
শ্রাবণী সেনগুপ্ত

সৌরপরিবারের মধ্যে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যাতে প্রাণ আছে।এই পৃথিবীর ৭১ .৪%জলভাগ।এই কারণেই মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে নীল দেখায়,তাই সে পরিচিত নীলগ্রহ নামে।
পৃথিবীর পরিবেশে আছে সজীব ও নির্জীব উপাদান।মানুষ এই পরিবেশেরই অংশ।মানুষের ক্রিয়াকলাপ এই পরিবেশের পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে-সে যখন আগুন জ্বালতে শিখল ক্রমে চাষবাস করতে শিখল তখন থেকেই।প্রখ্যাত ভূগোলবিদ
'ডেমোলিঁ 'এর মতে পরিবেশের দ্বারা পৃথিবীপৃষ্ঠে বসবাসকারী মানুষের সংগঠন ও বিকাশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আজ মানুষ বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে চরমভাবে ব্যবহার করে প্রকৃতির উপাদানকে নিজের প্র‌য়োজনীয় সম্পদে পরিণত করার নিরলষ প্রচেষ্টা করে চলেছে।তার ক্রিয়াকলাপে প্রকৃতির যে অবক্ষয় হচ্ছে তার থেকেও মানুষ বেশি মুনাফা অর্জনকে গুরুত্ব দিচ্ছে।এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।বনাঞ্চল ধ্বংস, শিল্পজাত দূষণ,বন্যপ্রাণী বিলোপ,সঞ্চিত খনিজ সম্পদের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়েছে।প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে,তেমনি পরিবেশ দূষণের হারও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।এক্ষেত্রে প্রয়োজন সুস্থায়ী উন্নয়নের।১৯৭২খ্রিস্টাব্দে স্টকহোম সম্মেলনে ১১৪টি দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও বৈজ্ঞানিকেরা মিলিত হয়ে সুস্থায়িকভাবে উন্নয়ন সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।তাঁদের মতে পৃথিবীর সীমিত সম্পদকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করলে তিনটি বিপবিপদের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে-১)পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে,
২)মানবসৃষ্ট দূষণের ফলে মানুষসহ সমগ্র জীবজগৎ নানাধরণের রোগে আক্রান্ত হ'বে।৩)প্রাকৃতিক সম্পদ দ্রুত নিঃশেষিত হ'বে,ফলে পরবর্তী প্রজন্ম সংকটের সম্মুখীন হ'বে।ব্রুটল্যান্ড কমিশনের (১৯৮৭)মতে সুস্থায়ী উন্নয়ন হ'লো এমন একটি ধারণা- যা ভবিষ্যত প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত না করে বর্তমান কালের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
সুস্থাযী উন্নয়নের প্রধান তিনটি লক্ষ্য হ'লো-পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের সুস্থায়ী ব্যবহার,সুস্থায়ী অর্থনীতি,সুস্থায়ী সমাজ।সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে সর্বপ্রথম পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় UN এর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে।এখানে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা,প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা,মানবাধিকার রক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলির উপর আলোচনা হয়।এরপর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরা সম্মেলন (Earth Summit )অনুষ্ঠিত হয়। সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে এই সম্মেলনে একুশ শতকের একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যা এজেন্ডা 21নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণ, সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার,এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কলুষমুক্ত পৃথিবী গড়ার কথা বলা হয়।কিন্তু উন্নত দেশের অতিরিক্ত দায়বদ্ধতার কথা আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয় এখানে।১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জাপানের কিয়োটো শহরে পৃথিবীর পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলন হয়।এই সম্মেলনে একটি চুক্তি প্রস্তাব গৃহীত হয়-গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমনের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করা।২০০২সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহনেসবার্গ শহরে যে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে এজেন্ডা 21এবং রিও ঘোষণাপত্রের প্রতি আরও একবার নিজেদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। ২৬শে আগস্ট থেকে ৪সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল সুস্থায়ী উন্নয়ন।২০১২ সালের ১৩থেকে ২২শে জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো -এর রিওসেন্ট্রো কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তম সম্মেলন। ৪০হাজারেরও বেশি মানুষ ৩৭ জন রাষ্ট্রপ্রধান,৩১জন প্রধানমন্ত্রী,১০হাজারের উপর NGO এবং অসংখ্য গণমাধ্যমে লোক সমবেত হয়েছিলেন এই মহাসম্মেলনে।এর পোষাকি নাম ছিলো ' United Nations Conference On Sustainable Development In Rio.এই সম্মেলন চলাকালীন UNEPএবং তার সহযোগী সংস্থাগুলি দু'টি প্রতিবেদন পেশ করে।প্রথমটি 'The Global Initiative For Resouce Efficient Cities' এবং দ্বিতীয়টি 'Sustainable Resource Efficient Cities InThe 21st Century:Making it Happen'.



নাটিকা


জল বাঁচাও
রীতা মোদক

::চরিত্র লিপি ::
অমিতা (প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা ),স্বপ্না (মেয়ে ), স্বপ্নার কাকিমা , এনজিও , বিডিও ।

স্বপ্না : মা , মা দেখো , কাল রাতে কাকু শ্যালো ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে । বন্ধ করেনি ।
মা : এ কি কান্ড ! ঠাকুরপোর আর আক্কেল হবে না । ইস ! সারা রাত ধরে কতো জল পরে নষ্ট হলো ! কোথায় ঠাকুরপো ?
স্বপ্না : মা , কাকু তো বাড়ি নেই , কাকু মনে হয় পিসির বাড়ি গেছে । কিত কিত কিত কিত ...
মা : শ্যালো ছেড়ে দিয়ে তিনি ঘুরতে চলে গেলেন ? ঠাকুরপোকে কতদিন বলেছি , অকারণে জল নষ্ট করতে নেই । কাকে দিয়েছি রজার পাঠ ? কদিন পর যখন মাটির নিচের জল ফুরিয়ে যাবে , যখন একটু জলের জন্য দেশে দেশে হাহাকার লেগে যাবে , তখন বুঝবে জলের মূল্য । যা তো মা , তোর কাকিমাকে বলে আয় শ্যালো বন্ধ করতে ।
স্বপ্না : হ্যা মা যাচ্ছি । ... কাকিমা , ও কাকিমা ..
কাকিমা : কি হয়েছে ? সকাল সকাল এতো চেঁচামেচি করছিস কেন ?
স্বপ্না : কাকু কাল রাতে শ্যালো ছেড়ে দিয়ে পিসির বাড়ি চলে গেছে , তুমি দেখনি ? সারা রাত ধরে জল পড়ছিল যে , মা বলল তাড়াতড়ি শ্যালো বন্ধ করতে ।
কাকিমা :শ্যালো বন্ধ করেনি তো কি হয়েছে ? কত মানুষই তো শ্যালো ছেড়ে ঘুমিয়ে পরে , সকালে গিয়ে বন্ধ করে । আমাদের বেলা তোর মার চোখে পড়েছে ? হেঃ হেঃ হেঃ । জলের জন্য দরদ একেবারে উথলে পরছে ।
স্বপ্না : নাগো কাকিমা , তুমি জাননা টিভিতে সবসময় বলছে জলের অপচয় বন্ধ করতে । অনেক জয়গায় তো পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না । জলের অভাবে কতো মানুষ মারা যাচ্ছে তুমি খবরে দেখনি ? স্কুলের দিদিমণিরা ও আমাদের অকারণে জল নষ্ট করতে মানা করেছেন ।
কাকিমা : ঠিক আছে , ঠিক আছে । বন্ধ করতে যাচ্ছি । যেমন মা তেমনী হয়েছে তার মেয়েটা । সকাল সকাল জ্ঞান দিয়ে চলে গেলো ।
তিন বছর পর ...
স্বপ্না : মা , খুব কষ্ট হছে , তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেলো । একটু জল দাও মা ।
মা : ঘরে যে একটুও জল নেই মা । কদিন থেকে টেপ কলে ও জল আসছে না , মোটর চালিয়ে ও জল উঠছে না যে , তোর , ঠাকুমার শেষ চিহ্ন সোনার বালাটাও আজ দিয়ে দিলাম তোর বাবাকে , একটু জল আনার জন্য । তোর বাবা যে এখনও আসলো না ।
স্বপ্না : মা ..., জল , জল খাব ...
মা : এই স্বপ্না , কি হয়েছে মা , চোখে খোল । মাগো কি হলো তোর ? চোখে খোল মা , একটু কষ্ট করে তাকা । তোর বাবা এখনই জল নিয়ে আসবে ।
তোমরা কে কোথায় আছো , আমার মেয়েটাকে বাঁচাও । চোখ খোল মা আমার ...
এনজিও : নমস্কার দিদি , আমরা জল বাঁচাও ক্লাব থেকে এসেছি । এই নিন জল । মেয়েকে দিন , এখনো প্রাণ আছে ।
মা : আপনদের অনেক ধন্যবাদ । স্বপ্না , এই স্বপ্না হা কর দেখি ..মা..
এনজিও : একটু চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দিন , তাহলেই জ্ঞান ফিরে আসবে । তারপর ধীরে ধীরে জল খাওয়ান ।
স্বপ্না : মা , জল ..
মা : এই নে মা , প্রাণ ভরে জল খা । আপনারা না এলে আমার স্বপ্নাকে যে আর পাওয়া যেত না । মাগো , তুই যে আমার নয়নের মনি ।
এনজিও : কান্না কাটি পরে করবেন । আগে চলুন বিডিও অফিসে যাই । দেখি এ ভয়ানক সমস্যার কোনো সমধান যদি পাই ...
ম্যাডাম আসব ?
বিডিও : আসুন , আসুন , বসুন । বলুন কি সমস্যা ?
এনজিও : ম্যাডাম , আমরা জল বাঁচাও ক্লাব থেকে এসেছি । আপনি তো জানেন , চারদিকে জলের এতো সমস্যা । জল কষ্টে কত মানুষের প্রাণ চলে গেলো ! আমরা আজ সময় মতো না পৌঁছুলে উনার মেয়েটা ও বাঁচত না । ম্যাডাম আমরা আসছিলাম এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে ..
বিডিও : এই সমস্যা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ গাছ লাগানো । প্রচুর পরিমাণে গাছ কাটার ফলে অক্সিজেন কমে গিয়ে বৃষ্টি পাত বন্ধ হয়ে গেছে । আষাঢ় শ্রাবন মাসকে চত্রি মাস মনে হয় । যার জন্য ঘরে ঘরে জলের অভাব । প্রচুর গাছ পালা থাকলে বৃষ্টি আসবেই । তাছাড়া বর্ষা কালের বৃষ্টির জল ধরেই রেখে সংরক্ষণ করতে হবে । যাদের বাড়িতে ছাদ আছে , সেখানে বৃষ্টি পড়লে জলটা পাইপ দিয়ে ট্যাংকি তে সঞ্চয় করে জল সংরক্ষণ করা যায় ।
এনজিও : ম্যাডাম , জল সংরক্ষণ ও গাছ লাগানোর ব্যপারে আপনি একদিন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দের ডেকে মিটিং করুণ । আমরা আপনার সঙ্গে আছি ।
বিডিও : আপনারা সবাই সঙ্গে থাকলে এই সমস্যার সমধান একদিন হবেই । আমি কালই মিটিং ডাকবো । আজাদ হিন্দ ক্লাব এবং লায়ন্স ক্লাব বলেছে , কিছু চারা দেবে । আমিও ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টকে কিছু চারা গাছ দিতে বলেছি । আপনারা যদি আমাকে কিছু চারাগাছের যোগান দিতে পারেন , তাহলে আমরাও একটা দিন ঠিক করে সবাইকে নিয়ে বৃক্ষ রোপণ উৎসবে সামিল হতে পারি ।
এনজিও : খুব ভলো প্রস্তাব স্যার , আমরা হাজার পাঁচেক চারাগাছ দিতে পারব । আমি ভাবছি অনেকটা এলাকা জুড়ে যদি কাঁঠাল গাছের চারা লাগানো যায় , তাহলে কেমন হয় ? এই মাটি কাঁঠাল গাছের জন্যে উপযুক্ত । ভবিষ্যতে ব্যাপক হারে কাঁঠাল উৎপন্ন হলে অর্থনৈতিক ভাবে এ গ্রাম অনেক উপকৃত হবে ।
বিডিও : ঠিক বলেছেন । এখন কাঁঠাল দিয়ে এচোর থেকে শুরু করে শুস্বাদু আচার ও তৈরী হচ্ছে ।এছাড়া একসাথে অনেক কাঁঠাল উৎপন্ন হলে বাণিজ্যক ভাবে এই ব্লকের নাম উঠে আসবে । আমাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কিছু মহিলা নার্সারির সাথে যুক্ত আছে । আমরা একটা ওই দিন বৃক্ষরোপন উৎসবের আয়োজন করতে পারি । চলুন আমরা বৃষ্টির জন্য একটু প্রার্থনা করি -----
এসো বৃষ্টি এসো বৃষ্টি ..
জনতা জানায় প্রার্থনা ---
গাছ পালা সব শুকিয়ে গেলো
তোমায় ছাড়া বাঁচব না ।
এসো বৃষ্টি এসো বৃষ্টি ...
রুক্ষ্ম ভূমি করো সিক্ত
সবুজ কোথায় উধাও হলো
জমির ফসল হলো রিক্ত
এসো বৃষ্টি এসো বৃষ্টি ...
তুমি মুসকিল আসান
জল তৃষ্ণায় মরছে প্রাণী
শুস্ক হৃদয়ে দাও প্রাণ ।
এসো বৃষ্টি , এসো বৃষ্টি ...
ভূগর্ভ আজ জলশূন্য ,
অঝোর ধারায় ঝরো তুমি
সবুজে সবুজে করো পূর্ণ ।
এসো বৃস্টি, এসো বৃষ্টি ..
আর করব না বৃক্ষ ছেদন
গাছ লাগব প্রাণ বাঁচব
সৃষ্টি হবে সবুজ বন ।



ভাবনা


অনুশাসনের শেষ: অবক্ষয়ের শুরু
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুপুরে খাবার সময় রেডিওতে বাংলা খবর হচ্ছিল, সবার অলক্ষ্যে তার নব উল্টো দিকে ঘোরাতেই খবর বন্ধ হয়ে গেল। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। আমি রেডিও খারাপ করলাম এই আশঙ্কায় লুকিয়ে পড়লাম উঠোনে ধানের গোলা র পিছনে। অনেক ক্ষণ সবাই খোঁজাখুঁজি করল। পরে কেউ রেডিও খুললে, মনে সাহস এল, না! তাহ'লে রেডিও খারাপ হয় নি, তখন বাড়ি ঢুকলাম। আমার দিদি সেকথা শুনে খুব মজা পেয়েছিল।
একদিন দিঘির পাড়ে হরিতকী গাছ থেকে হরিতকী পাড়তে গিয়ে, বাড়ি ফিরতে একপ্রহর সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। পাড়ার এক কাকা'র সে কি বকুনি।বড় দাদা ও দিদিরা পাড়ার বড়দের গুরুজনের চোখে দেখত।একান্নবর্তী পরিবারের অনুশাসনের মাঝে ভাই বোনেরা তঠস্থ হয়ে থাকত। কেউ সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকতে পারবে না।বাড়ির বড় দাদা, দিদিদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম ছিলো। হোটেলে ভাত খাওয়া, সিনেমা দেখা, হিন্দি গান গাওয়াও অপরাধের মধ্যে পড়ত।
বর্তমানে একান্নবর্তী পরিবার আর দেখা যায় না। পরিবার ভাঙার সাথে সাথে সমাজেও ভাঙন ধরেছে। বকুনি আর কানমলা কবে উধাও হয়েছে। পাড়ার কাকা, জ্যাঠা, দাদু, দিদা কে আর কেউই ভয় পায় না। স্কুলের শিক্ষক কে আসতে দেখলে আমরা সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। শিক্ষক দের হাতে কাঁচা কঞ্চি থাকত। তিনি মারুন বা না মারুন এই কঞ্চিপেটার ভয় সকলের ছিলো। এখন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা, ঘন্টার পর ঘন্টা ঘেরাও এবং গুরুজনদের অবজ্ঞা, অবহেলা করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
আমি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পক্ষে নই। কিন্তু চোর, ডাকাত, দাগি আসামিরা জানে। থানার লক আপে পুলিশ তাদের পেটাতে পারবে না। ফলে চুরি, রাহাজানি, খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। অপরাধী অপরাধ করে রাজনৈতিক ছাতার তলায় আশ্রয় নিচ্ছে। আশ্রয় না মিললে, দল বদল করছে। এ কথা আজ বলাই বাহুল্য।
উপরিউক্ত বিষয় গুলোর অবতারণা এই জন্য ই করা, যাতে অামরা নিজেদের পরিবার এবং সন্তান দের অনুশাসনের মধ্যে আনি এবং একটা সুস্থ সমাজ গড়তে সচেষ্ট হই।
মহাভারতের গল্পে আমরা পড়েছি শ্রীকৃষ্ণ, পাঁচ ভাই কে পাঁচ রাস্তায় পাঠিয়ে ছিলেন। এক ভাই দেখেছিলেন রাস্তায় একটা গরু, তার বাছুরকে আদর করে গাল চাটতে চাটতে, বাছুরটির মুখের চামড়া উঠে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, " আমরাও আমাদের সন্তানকে অতিরিক্ত আদর, ভালোবাসা দিতে দিতে সকলের অজান্তেই তার ক্ষতি করে চলেছি।
যে সমাজে অনুশাসন নেই, সেখানে অবক্ষয় নেমে আসবে। ক্রমান্বয়ে আমরা অবক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌছে যাব, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।


স্বপ্ন দেখে মন
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

চারিদিক সবুজে সবুজ। তার মাঝে মাঝে কোনো কোনো গাছ ফুলের শোভা সাথে নিয়ে বিরাজ করছে। এক সবুজেরই কতো বাহার..কতো রকমের শ্যামলীমা..চোখের আরাম..প্রাণের শান্তি। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ফুলেদের কি সুন্দর সব রং!! একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুটে আছে তারা সমস্ত প্রকৃতিকে আলো করে। কিছু বড়ো বড়ো গাছ তাদের ডালপালাকে নুইয়ে দিয়ে তার পুষ্প রাশিকে গালিচার মতো বিছিয়ে দিয়েছে গোটা বনভূমিতে। আগের রাতের বৃষ্টিস্নাত গাছপালা, ফুল, সমগ্র প্রকৃতি সূর্যালোকের উদ্ভাসে অপরূপ রূপে দেখা দিয়েছে। পাখির দল খুব সকাল সকাল বাসা ছেড়ে বেড়িয়ে গাছের ডালে ডালে আসন গ্রহণ করেছে। আরও গভীর বনে বন্য পশুরাও আজ হিংস্রতা ভুলে কিছুটা শান্ত। নিরীহ পশুরা পাখিদেরই সাথে তাল মিলিয়ে গাছের নীচে জোট বেঁধেছে দলবদ্ধ ভাবে। প্রজাপতি, ফড়িং রঙিন খুশি হয়ে ইতিউতি উড়ে বেড়াচ্ছে আনন্দ ছড়িয়ে। কাছের ছোট্ট নদীটা আনন্দে উচ্ছাসে বয়ে চলেছে কুলকুল করে। দূরের পাহাড় ওদের ডেকে বলছে, 'তোমাদের খুশিতে আমাকেও সামিল করবে?' ঝর্ণার জল হাসিতে মুখর হয়ে পাহাড়ের গা ছুঁয়ে বলছে 'এসো, বন্ধু হই'। সতেজ বাতাস দিকে দিকে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে খুশির। ঘোষণা করছে 'বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস'এর।
আজ যে ওদেরই দিন। গাছপালা, ফুল, পশু, পাখি, নদী, পাহাড়, বনভূমি তাই আজ উৎসবে বিভোর। ওদের জন্য নির্ধারিত এই বিশেষ দিনটিকে সাদরে বরণ করে তাই ওরা নিজেরাই মেতে উঠেছে এক অনাবিল আনন্দের খেলায়।
যদি সত্যিই এমন হোতো? বিশ্বপ্রকৃতি যদি সত্যিই মেতে উঠতো এমন খুশিতে? আসলে আমাদের কল্পনায়, মননে প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতির নব আনন্দে জেগে উঠবার এমনই ছবি স্বপ্নের মতো ভেসে ওঠে।
এই খুশির খেলায় সবচাইতে মন খুলে যাদের সামিল হওয়ার কথা, পৃথিবীর তথাকথিত উন্নত জীব মানুষেরা মন খুলে, প্রাণ খুলে হাতে হাত মিলিয়ে এই আনন্দ যজ্ঞে আর সামিল হতে পারছে কই? দুরারোগ্য এক মহামারীর আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করছে তাদের.. যেমন মানুষের আগ্রাসী লোভের শিকার হতে হয়েছে এই বিশ্বপ্রকৃতিকে বার বার.. মানুষ কি আশ্চর্যজনক ভাবে বিস্মৃত হয়েছে যে পৃথিবীর প্রায় এক লক্ষ কোটি প্রজাতির মধ্যে মানুষের পরিমাণ মাত্র 0.0১ শতাংশ। তবুও তারা বার বার আঘাত হেনেছে এই সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর সৃষ্টিগুলোকে।
এই প্রকৃতিকে আজ বেশ বহুদিন যাবৎ গ্রাস করেছে এক অজানা ভয়। মানুষের অমানবিকতা, লোভ, স্বার্থপরতা, পাশবিক প্রবৃত্তি বহুদিন ধরেই দুর্বিসহ করে তুলেছে প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্যকে। আজ এই বিশেষ দিন তাই হয়তো প্রকৃতির মানুষ নামক প্রজাতির বর্বরতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার দিন। হিংস্র মানবতার আশু বিনাশ কামনাই হয়তো নীরবে উচ্চারিত হচ্ছে নিরীহ অবলা প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের প্রাণে প্রাণে। একই পরিবেশের অঙ্গ হিসেবে তাদেরই পরিপূরক মনুষ্যজাতির থেকে একটু উষ্ণতা প্রার্থনা করে এই প্রকৃতি। একটু সহমর্মিতা, একটু সচেতনতা, একটু মানবিকতা আশা করে এই সবুজ পরিবেশ। সমগ্র পরিবেশ ও জীবকুলের অদেখা অশ্রু যেন অভিশাপ না বয়ে আনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে।
‌তাই শুধু আজ এই নির্দিষ্ট দিনটিতেই নয়, প্রতিটি দিন হোক মন থেকে পরিবেশকে ভালোবাসার দিন, আগলে রাখার দিন। উৎসবের সমারোহে, প্রচারের অহঙ্কারে বা গতানুগতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মানসিকতায় নয়, সঠিক পরিবেশ শিক্ষায় সকলকে শিক্ষিত করে, বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এর গুরুত্ব জাগিয়ে তুলে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে উপযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষন পদ্ধতিতে আরও বেশি করে বৃক্ষ রোপণ করে ও গাছকে সংরক্ষিত করে প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করতে হবে। প্রকৃতি ও জীবজন্তুর প্রতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা সুবিচার হয়তো পাবে এই অসহায় পরিবেশ ও তার সুন্দর দান হিসেবে পাওয়া বিচিত্র সব পশু পাখির দল। নাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের এই আক্রোশ খুব দ্রুত মানুষের দিকেই বিপরীতমুখী হয়ে ফিরে আসবে।
সুস্থ মানবিক বোধ জাগ্রত হোক প্রতিটি মানব হৃদয়ে তাদের চারিদিকের পরিচিত পরিবেশের জন্য। প্রকৃতি যেন মানুষের প্রতি তার হারানো বিশ্বাসকে আবার ফিরে পায়। বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস পালনের সার্থকতা তাহলেই পরিপূর্ণ রূপ পাবে।
'এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার'......
পরিবেশ ও ধরিত্রীর রক্ষার জন্য ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২২ শে এপ্রিল যে 'বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস' পালিত হয়ে আসছে, তার সার্থকতা তখনই থাকবে, মন থেকে আমরা যদি এই সুন্দর পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিকে ভালোবাসতে পারি। শুধু এই একটি নির্দিষ্ট দিনে নয়, প্রতিদিনই হোক এই দিবসের এই অঙ্গীকারের উদযাপন।




কবিতা


প্রকৃতি ও মানুষ
মাথুর দাস

প্রকৃতি এখনও দেয়, দেবে, দিতে পারে চিরকাল,
খাদ্য জল বায়ু তাপ আলো ও আস্তানা ;
উদার দরাজ আর অকৃপণ হাতখানা
এখনও দান করে প্রাণাশীষ বরাভয় রাত্রি সকাল ।
এখনও উদ্ভিদকুল পরিপার্শ্ব শোধনে ব্যস্ত দিনমান,
নিত্য জল টগবগ সাগরের জোয়ারে ভাঁটায় ;
বাষ্প ছোটে মেঘ হয়ে বৃষ্টি ঝরাতে আ-ঘাটায়,
বাতাস জেনেছে চাপ তাপ তারতম্য ভ্রাম্য গতিযান ।
বেওকুফ্ এঁটুলি মানুষ শুধু ধ্বংস করে নষ্ট করে
বিষাক্ত করে প্রকৃতির সমূহ সম্পদ ;
দ্বিপদ এ জীবকুল ভেবেছ কম বদ ?
আপন স্বার্থে কেবলই সুরম্য প্রকৃতিকে ভ্রষ্ট করে ।
আগাম সতর্কবার্তা দেয় সর্বংসহা ধরিত্রী বারংবার,
মারীতে ঝঞ্ঝায় ধ্বসে ভূকম্পে বন্যায় ;
কত বার কত আর সে সইবে অন্যায়,
মানুষ না বোঝে যদি, না যদি রোধে প্রকৃতি সংহার ?



অতিথি
মধুমিতা শীল

পৃথিবীর পথ হাঁটিতেছি,
সমকালীন বর্ণময় চিত্রখানি,
বেদনার্ত হৃদয়ের ভাষা।।
পৃথিবী অসুস্থ,
অস্থির কষ্টের প্রলেপে
ব্যর্থ বোধদয়।।
নিরাশার পাখি উড়ে যায়,
জলবিন্দুহীন,শুকনো খড়,
উষ্ণ বাতাসে,
রাত আসে দিন যায়,
ক্ষনিকের অতিথি সবাই।।





কল্পবিজ্ঞানের গল্প

গ্রহান্তরের বন্ধু
সুব্রত দত্ত

বিনোদ, শ্যামলী, রহমত, খুশবু এবং আরো অনেকে সকাল সকাল ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাম্যদ্বীপে ওদের বাস। কাজের ফাঁকে নিজেদের মধ্যে গ্রাম্য মস্করা চলছিল। রহমতের কোনো আওয়াজ না পেয়ে সবাই তাকায় তার দিকে।
দেখে, রহমত একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বিনোদ বলে, "তোর কি হইল রে? আকাস পানে তাইকে আছিস কেনে?" রহমত কথা না বলে শুধু আঙ্গুল তোলে আকাশের দিকে। সবাই দেখে আকাশে গোলমত চকচকে কি একটা জিনিস তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। কাজ ভুলে গিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চে ওদের দম বন্ধ হবার জোগাড়! অনেকটা কাছে এসে থেমে ভেসে থাকে বিরাট এক চাকতি। দরজা খুলে ছোট একটা যান বা পড নেমে আসে মাটিতে। বিনোদরা মন্ত্রমুগ্ধের মত হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পড থেকে দু'জন বেড়িয়ে ওদের দিকে এগোতে থাকে। মানুষের মত দু'পেয়ে, কিন্তু মাথা বড়, হাত-পা গলা সরু সরু। বিনোদরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে "পালা রে, সবাই পাইলে যা" - বলে দৌড়ে পালাতে শুরু করে। কিন্তু যান্ত্রিক শব্দে ঘুরে দাঁড়ায়। আগন্তুক দু'জন দু'হাত তুলে আশ্বস্ত করে। ওদের কথাগুলোই যান্ত্রিক আওয়াজের মত। বিনোদ, রহমতদের ভয় কাটে ধীরে ধীরে। মুখোমুখি দাঁড়ায়। আগন্তুকদের একজন বিনোদের কপালে তার তর্জনী ছুঁইয়ে বড় বড় চোখ বন্ধ করে কিছু অনুভব করতে চেষ্টা করে। তর্জনীর অগ্রভাগ টুকটুকে লাল হয়ে যায়। তারপর বাংলা ভাষায় কিন্তু যান্ত্রিক স্বরে বলে,
--- "তোমরা বাঙালি? ভয় পেয়ো না বন্ধু।"
দ্বীপের আবালবৃদ্ধবনিতা ততক্ষনে হাজির রহস্যের খোঁজে। রহমত বলে,
--- "হ্যাঁ, আমরা বাঙালী। তোমরা?"
--- "আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে জাতপাত, সম্প্রদায় বা ভাষার ভেদাভেদ নেই। তোমাদের সৌরজগতের বাইরের এক সৌরজগতের 'কমিউনো' গ্রহ থেকে এসেছি।"
তসলিম নামের এক ছাত্র বলে,
--- "হ্যাঁ, এরকম গ্রহ আছে বলে শুনেছি। কিন্তু সেখানে মানুষ ---"
কথাটা শেষ না হতেই আগন্তুক বলে ওঠে,
--- "তোমাদের বিজ্ঞানীরা একেবারেই বাচ্চা। কিসসু জানে না। আমাদের পূর্বপুরুষেরাই পৃথিবীতে কিছু মানুষকে রেখে গিয়েছিল, এই নীল গ্রহকে বাসযোগ্য করার জন্য।"
আর এক ছাত্রী বিশাখা বলে ওঠে,
--- "কিন্তু আমরা যে পড়েছি, সমুদ্রের জলে সৃষ্ট নিউক্লিওপ্রোটিন হলো পৃথিবীর প্রথম প্রাণ! সেখান থেকে প্রোটোজোয়া সহ বিভিন্ন ধাপ পেড়িয়ে সৃষ্টি হয়েছে গাছ, অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষের!"
--- "ভুল, ভুল জানো তোমরা।" আগন্তুক বলে ওঠে, "সেখান থেকে মানুষ জন্মায় নি। মানুষ আমরা পাঠিয়েছি। মানুষের জন্ম যদি পৃথিবীতেই হত, তাহলে অন্য প্রজাতির প্রাণীদের মত নিজেদের সব প্রয়োজন মেটাতে পারে না কেন? কি, পারে?
রহমত আমতা আমতা করে বলে,
--- "না, সিটা পারে না বটে।"
আগন্তুক আরো বলে,
--- "প্রায় সব প্রাণী দিনের পর দিন রৌদ্রস্নান করতে পারে, মানুষ পারে না কেন? সূর্যের আলোয় শুধু মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যায় কেন? মানুষই কেন এত ক্রনিক রোগে ভোগে? অন্য প্রাণীদের মত মানুষের কেন বাচ্চা প্রসব হয় না? কেন শুধু মানুষের দেহেই ২২৩ টি অতিরিক্ত জিন থাকে? কেন, কেন, কেন? কি, আরো বলবো?"
দ্বীপবাসীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। কোনো শব্দ বেড়োয় না মুখ থেকে। আগন্তুক আবার কথা শুরু করে,
--- "শোনো, প্রথম যখন মানুষকে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল, মানুষ তখন এরকম লোভী, শয়তান, খুনী, দুর্নীতিগ্রস্ত, ধর্ষক, পাপী ছিল না। সবকিছুতেই সবার সমান অধিকার ছিল। কিন্তু দিনে দিনে প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি হতেই, কিছু মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্বলদের নিপীড়ন করে সম্পদের অধিকার লুঠ করে নেয়। শুরু হয় সমাজের শ্রেণী বিভাগ। আমরা এসেছি বিশ্বমানবতার ধর্মে সকলের সমান অধিকার অর্জনে তোমাদের সাহায্য করতে। পৃথিবীতে কোনো কাঁটাতারের বেড়া থাকবে না। একটাই পরিচয় থাকবে। আর সেটা 'বিশ্বমানব'। তবেই আবার আমরা বন্ধু হবো। আমাদের বন্ধু ভাবতে পারবে তো?"
তসলিম এগিয়ে এসে বলে,
--- "হ্যাঁ গো, আমরা আছি তোমাদের সাথে। পথ দেখাবে আমাদের। আমরা মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচবো।"
--- "তাই হবে বন্ধু।"
আগন্তুকের এবার বিদায় নেবার পালা। বলে,
--- "বিদায় বন্ধু। আরো অনেক জায়গায় যেতে হবে। আবার শীঘ্রই দেখা হবে।"
কমিউনো গ্রহের মানুষের মহাকাশযান দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়। সাম্যদ্বীপের মানুষের উল্লাসময় চিৎকারে চারদিক মুখরিত হয়।


গল্প


দান
মৌসুমী চৌধুরী
দীপনের জন্মদিন আজ। সকাল থেকে উঠে আজ ভারী তোড়জোড় করে রান্নাবান্না সেরে নিয়েছে দিয়া। বিরিয়ানি বানিয়েছে, তার হাতের বিরিয়ানি খেতে বড্ড ভালোবাসে ছেলে -টা। পায়েশও বানাবে। ওর প্রতিটি জন্মদিনেই দিয়া পায়েশ বানায়। দুপুরে ধানদূর্বা, পায়েশ দিয়ে বাঙালিয়ানায় জন্মদিন পালন করা হয়। সন্ধেতে দীপনের স্কুলের বন্ধুরা আর ঘনিষ্ঠ কিছু অতিথিদের নিয়ে ছোটখাট একটা অনুষ্ঠান হয়। সে আর নিখিল প্রতি বছরই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। আজ ছয় পেরিয়ে সাত বছরে পরল দীপন।
পায়েসের দুধ জ্বাল দিতে দিতে দিয়ার মন ফিরে ফিরে যাচ্ছিল ছ'বছর আগের সেই ঘটনায়। ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল দিয়া আর নিখিল। বিয়ের পাঁচ বছর পর যখন সন্তান আসার খবর পেল, তখন আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তারা। আহা! কী প্রশান্তি! যেদিন ছাই হয়ে মিশে যাবে ক্ষিতি-অপ-তেজ- মরুৎ-ব্যোম এই পঞ্চভূতে সেদিন এই নীলগ্রহে থেকে যাবে তাদের দু'জনের শরীরের অংশও — তাদের সন্তান। প্রথমেই তারা ঠিক করেছিল তাদের নামের অংশও জুড়ে দেবে সন্তানের নামের সঙ্গে। তাই দিয়ার "দ" আর নিখিলের "ন" নিয়ে বাচ্চার নাম ভেবে রেখেছিল দীপন। অনাগত নতুন অতিথির জন্য উলের জামা, মোজা, টুপি বুনে রেখেছিল দিয়া। তৈরি করে রেখেছিল কাঁথা। তার পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় একটি একটি করে মূহুর্ত গুনছিল দিয়া আর নিখিল।
কিন্তু সিজারের পর হসপিটালে যখন জ্ঞান ফিরে এসেছিল তখনই জানতে পারে জটিল রোগ রয়েছে তার সদ্যজাত পুত্রের। নার্স যখন ছেলেকে কোলে তুলে দিয়েছিল বুকের দুধ খাওয়াতে তখন বাচ্চার ফুটফুটে মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল দিয়া। কাঁদতে কাঁদতে ডঃ শমিত সেনের হাত চেপে ধরেছিল লিখিল,
— " আমাদের ছেলেকে বাঁচান ডাক্তারবাবু। অনেক প্রতীক্ষার পর ও আমাদের কোল জুড়ে এসেছে।"
অসহায় গলায় ডক্তার সেন বলেছিলেন,
— " অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক তৈরি হচ্ছে না আপনার বেবীর শরীরে। বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।"
হাহাকার করে কেঁদে উঠেছিল দিয়া আর নিখিল। মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল। ডাক্তার - -দের সব রকম আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্বেও বাঁচান যায় নি তাদের ছেলেকে। শরীরে অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ায় হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে এবং ব্রেন ডেথ হয়ে জন্মের তিনদিনের মাথায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যু হয় তাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার। তাদের দীপন তিনদিন বয়সেই তাদের ছেড়ে চলে যায়।
তারপর ভেতরে ধ্বসতে থাকা মন মাটিকে সামলায় দিয়া আর দীপন দু'জনেই। বুকের চামড়ায় খামচে ধরা টনটনে ব্যথাটাকে সরিয়ে রেখে তারা চায় এই নীলগ্রহে তাদের সন্তানের কোন স্মারক চিহ্ন থাকুক। সদ্যমৃত সন্তানের চোখদান করবার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। তাদের ইচ্ছে অনুসারে স্থানীয় "ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি"-র কর্মীরা দুপুরে হসপিটালে এসে হাজির হয়। তাদের সন্তানের কর্ণিয়া সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তারা। সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের "রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি"-র কর্ণিয়া বিভাগে। তারপর ভাঙা মন আর বুক খালি করা গভীর শূন্যতা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে দিয়া আর নিখিল।
ঠিক তার পরের দিনই "ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি"র ফোনটা আসে,
— " আপনাদের সন্তানের কর্ণিয়া প্রতিস্হাপিত হয়ে গেছে এক সদ্যজাতের চোখে। সব শর্ত পূরণ হওয়ায় তার চোখে প্রতিস্থাপিত হয়েছে আপনাদের দান করা কর্ণিয়া। জটিল এক চোখের অসুখে ভুগছিল শিশুটি।"
এই "ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি"র কাছেই আসানসোলের অপরাজিতা আর কৃষ্ণেন্দুর ঠিকানাটা জেনেছিল তারা। ছুটে গিয়েছিল সেখানে। আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছিল তারা যেন বাচ্চার নাম " দীপন" রাখেন। তারও কথা রেখেছিলেন। সেই দীপনেরই আজ জন্মদিন।
এই নীলগ্রহে আজও থেকে গেছে দিয়া আর নিখিলের সন্তান। গ্যাসটা অফ করে পায়েসটা একটা টিফিনবক্সে ঢেলে রাখে দিয়া। অপরাজিতার পাশাপাশি দিয়াও যে দীপনের মা হয়ে উঠেছে। শুধু নানা শারিরীক জটিলতায় দ্বিতীয়বার আর মা হতে পারে নি দিয়া।





ছোটদের সৃজন


অভ্রদীপ ঘোষ



















রেবন্ত সেন

















দেবরাজ চক্রবর্তী

























নবজীত সাহা



















ঋষি সাহা

























রাশি সাহা




















অন্বেষা সরকার
























সৃজা রায়























মুজনাই সাপ্তাহিক WORLD EARTH DAY বিশেষ সংখ্যা

No comments:

Post a Comment