শিক্ষক: সেকাল ও একাল
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ এই বিশেষ দিনটিতে হারিয়ে যাওয়া স্কুল জীবন, আর সেই সব শিক্ষকদের কথা মনে পড়ছে যারা শিখিয়েছিলেন, " আমি ভয় করব না , ভয় করব না, দু'বেলা মরার আগে মরব না , ভাই মরব না।" যাদের শিক্ষায় বড়ো হয়েছি। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তাদের শিক্ষা কে কাজে লাগিয়েছি। কেউ কেউ দ্রোণাচার্য হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, ফ্রেন্ড ফিলোসফার, গাইড হয়ে।
জন্মাবার পর "মা" ডাকটা বোধকরি কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না। একটু যখন বুঝতে শিখলাম, তখন মাকেই অনুকরণ করা শিখলাম। মায়ের শিক্ষায় এবং আদরে বড় হলাম।
জাতীয় শিক্ষা নীতি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন এর নির্দেশ মেনে নির্ধারিত হয়। কিন্তু মা যে ভাবে তার শিশু সন্তানকে বড়ো করে তোলেন, সেটা কোন কমিশন, নীতি ইত্যাদির ওপরে ভিত্তি করে হয় না।
ব্যাক্তিগত ভাবে চোখ রাঙানী বা কানমলা খেলেও মা এবং বাবার কাছে কখনো জোর বকাবকি বা মার খাইনি, অথচ তাদের গড়া মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই স্কুল বা কলেজ জীবন এর পাঠ নিয়েছি। আজকের এই পূন্য দিনটিতে তাদের আভূমি প্রণাম জানাই, তাঁদের স্মরণ করি।
স্কুল জীবনে নীলডাউন, বেঞ্চের ওপর কান ধরে দাঁড়ানো ও কান মলা, কখনো কখনো হাতের তালুতে কাঁচা কঞ্চি বা স্কেল এর চপেটাঘাত। এমনই কঠিন ও কঠোর শাসনের মধ্যে আমাদের বড় হয়ে ওঠা। যে শাসন থেকে বোধকরি স্বয়ং কবিগুরুও নিস্কৃতি পান নি । মাষ্টারমশাই এর একবার তাকানো বা না তাকানোর মধ্যে ফারাক ছিল বিস্তর। সব থেকে বড়ো বিষয় যে কথা না বললেই নয়, তা হ'ল মূল্যবোধ এর শিক্ষা। যৌথ পরিবার ভাঙবার সাথে সাথে ভাঙতে শুরু করল সমাজ ব্যবস্থা।
আমরা যে সকল পাড়ার দাদা, কাকা, দের ভয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকতাম না। সিনেমার হলে যেতাম না, অাজকের দিনে, আজকের প্রজন্ম ( সকলে অবশ্যই নয়) সেই পাড়ার দাদা বা কাকার কাছে গিয়ে, " মিস্টার সেন, বা মিস্টার বোস, ফায়ার প্লিজ। " বলে আগুন চাইতে, পিছুপা হচ্ছে না।
আজকের দিনে স্কুল শিক্ষা লাটে উঠেছে। অনলাইনে শিক্ষার সবচেয়ে বড় বিপদ, নেটদুনিয়ার গ্লোবাল ইনভেশান, ছাত্রকে তার জীবন গড়া এবং মানুষের মতো মানুষ হওয়ার পথে বড়ো প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
No comments:
Post a Comment