Tuesday, June 7, 2022


 

সম্পাদকের কথা 

প্রবল দাবদাহ শেষে বাতাসে এখন বৃষ্টির গন্ধ। অবশ্য রাজ্যের সর্বত্রই যে এরকম তা বলা যাচ্ছে না। এখনও দগ্ধ্ হচ্ছে  অনেক অঞ্চল। তবে উত্তর বরাবরের মতো স্নিগ্ধ ও সবুজ। তবে আপাত স্নিগ্ধতার আড়ালে আবার গাঢ় হচ্ছে সমস্যার মেঘ। উঠছে নানা আওয়াজ যার সঙ্গে হয়ত অনেকে সহমত, অনেকে নন। যেটাই হোক না কেন, আমরা কখনই চাই না সুস্থিত বাতাবরণ নষ্ট হোক। এই গ্রীষ্মে তাই কামনা, বিচ্ছিন্নতার-হিংসার-অশান্তির আগুন নিভে যাক, ভালবাসার বৃষ্টি ঝরে পড়ুক।    



মুজনাই অনলাইন জ্যৈষ্ঠ  সংখ্যা ১৪২৮

মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)

প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়  

মুজনাই অনলাইন জ্যৈষ্ঠ    সংখ্যা ১৪২৮


সূচি 

আবদুস সালাম, চিত্রা পাল,  মাথুর দাস, অলকানন্দা দে, দেবাশিস ভট্টাচার্য,  শ্রাবণী সেনগুপ্ত, বটু কৃষ্ণ হালদার, কবিতা বণিক, রীনা মজুমদার, সারণ ভাদুড়ী, 

মনোমিতা চক্রবর্তী, প্রনব রুদ্র কুণ্ডু, পক্ষিরাজ,   আকাশলীনা ঢোল, সৈকত দাম, কাকলি ব্যানার্জি মোদক, মজনু মিয়া  


জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯



বিষয়: মুজনাই 


দুটি ছড়া 

দেবাশিস ভট্টাচার্য 



অবাক মুজনাই 


নদীই মাঝি নদীই বৈঠা 
নৌকা নদীর বসে 
মুজনাই হয় উথাল পাথাল 
ভাটিয়ালীর রসে 

ভাওয়াইয়া গায় সুনীল মাঝি 
ওই সে নদীর পাড়ে 
সুজন বন্ধু যায় রে চইলা 
মন তো মানে নারে...

বেড়ার ওপার ভাটির দেশে 
স্বজন থাকেন যাঁরা 
তাঁদের কাছে খবর পাঠায় 
মুজনাই জল ধারা 

মুজনাই এক অবাক নদী 
উজান ভাটির দেশে 
বৈঠা চালায় ঢেউয়ের তালে
নিত্য মাঝির বেশে 




মুজনাই গান 


মুজনাই গান গায় আয় সহচরী 
ছুটে আসে নদীয়ালী যত জলপরী 

ভাটিয়ালি, বাইচ গান উজানের নায় 
 প্রাণের গীতিকা হয়ে সূদুরে মিলায় 

মুজনাই মিসে থাকে জীবনের ছন্দে 
উজান ভাটির স্রোতে ভাল আর মন্দে 

মুজনাই মন কাড়ে মনের অজান্তে 
সীমানা ছাড়িয়ে সেই নদীদেশ প্রান্তের

গানভাসি মুজনাই সুদূরের পাথারে 
চলে যায় গান হয়ে এক ডুব সাঁতারে



বিষয়: নিবন্ধ 

“সত্যজিতের ছবি”
 অলকানন্দা দে


পথের পাঁচালীর সাথে বিদগ্ধ সত্যজিতের সম্পর্ক আবেগে টগবগ করে! লেবু পাতার গন্ধের মত কি যেন এক অলৌকিক মায়া-জড়িত পরস্পর! বুকের পাশে জায়গা দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের ব্যাকুলতাকে! ছায়াছবির পর্দায় প্রতিটি চরিত্রকে এঁকেছিলেন হুবহু। পড়তে গেলে চরিত্রগুলির উপর এই চেহারাগুলিই যেন জলছবির মতো ভেসে ওঠে। দু-চোখ চেটেপুটে নেয় যাবতীয় সুষমা, বারবার! পথের পাঁচালীকে চিনতে শিখেছি অনেকাংশে তাঁর ছবির হাত ধরে। আষাঢ় ভাদ্র বসন্তবাহারে এই গল্পের হৃদয়কাঁপা পটভূমিতে ঘোরাফেরা ক’রে ভালোবাসি তাদেরই কথা বলতে তাই! ইন্দির পিসি হরিহর সর্বজয়া দুর্গা অপুর জীবনের স্তরে স্তরে রূপান্তর মনের খুব চেনা! চরিত্রগুলির হাসিমুখে সয়ে যাওয়া দুঃখ জোয়ার এবং সে সত্ত্বেও রাঙা আশার মুখ চেয়ে জীবনকে পূর্ণিমা অভিমুখী করার একাগ্রতাকে এক শিক্ষা বলেই মনে করি। তাই ব্যথার রোয়াকে বসে সুখের তপস্যারত সর্বজয়া আমাকে কাঁদায়, ভাবায় শেখায় কাঁকর পথে নিরালা পায়চারি কিভাবে করা যায়! প্রচণ্ড সন্তাপেও একফালি নীলকে সে খোদাই করে নিয়েছিল মনে চিরতরে! ভাগ্য একদিন উদার প্রসাদ বিলোবেই জীবন বাঁকে এই ছিল প্রত্যয়! আগামীর সুখ-মর্মর সে যেন তখনও শুনতে পেত যখন রান্নাশালে তার তপ্ত কড়াই কলমিশাকের মুখ ছাড়া দেখত না আর কিছুই! দুঃখ তাপ কেটে যাবে অনুকূল সুযোগের বাতাসে, মৃদুস্বরে বলে যায় তার মন! এ কথাই যেন সে কানে কানে শোনে আর গুনে যায় দিন! সেই সাধের উপত্যকায় পৌঁছতে আজ সে চড়াইয়ের ভার নিতে প্রস্তুত। সর্বজয়া নামটি সব দুঃখকে মাৎ দিয়ে সার্থক হয়ে উঠতে চেয়েছে চিরকাল। ভাগ্যের তুলোধনা কম তো সইতে হয় নি তাকে! প্রাণোচ্ছল মেয়ের নিথর দেহের ভার সে তুলেছে একলা, কালবৈশাখী রাত্তিরের ঝড়ের খেলায়। সয়েছে বাজের ডাক ঘন রাত্রির প্রাঙ্গণে। ভেঙে পড়া সংসার অস্বাস্থ্যের কোলাহল কন্যাহীন কোল অনাহারের অবসাদ ছেঁড়া বস্ত্রের মলিনতা এই এত শত প্রতিকূলতা টলাতে পারে নি তাকে আশার অভ্যাস থেকে। এরকমই হতে হয় হয়তো জীবনযাত্রা-নীতি। হাহাকারে নয়, সম্ভাবনাতেই আছে যত জীবনধর্ম শেখায় সর্বজয়া! ছবিতে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সর্বজয়া করে তুলেছেন সত্যজিৎ চিরকালের মতো! তাঁর প্রখর অনুভবের কথা পৌঁছে দিয়েছেন কি নিপুণভাবে আরেকটি মানুষের স্নায়ুতে যেখানে সে প্রস্তুত সম্পূর্ণ ফুটে ওঠার জন্যে! একেই হয়তো বলে প্রতিভার মুষলধার!

পথের-পাঁচালীর শত ব্যথার দৃশ্যের মধ্যেও আছে জীবন-পাগল মুহূর্তরা! তাদেরকে একত্র করলে যে তোড়া হয় তাতে সূর্য জাগে মুখর সোনায়! আছে প্রকৃতিকে চিনে নেওয়ার গায়ত্রী-মন্ত্র! এবং এত সব অনুভূতিকে চোখের সামনে হাজির করেছেন যে মানুষটি তিনি আমাদের উদ্বেল আবেগের জায়গা! তিনি বাঙালির, তিনি বিশ্বের! পার্থিব মানবের মন জয় করার যাদুকরের নাম সত্যজিৎ রায়! ‘সাত রাজার ধন এক মানিক’ আমাদের! আমরা প্রকৃতই ধনী! চলচ্চিত্র জগতে তাবড়দের প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের পায়াভারি অবশ্যই! নববিশ্বের সাধ্য হবে না এই বনেদী মানুষটির অমরকান্ডকে এড়িয়ে যাওয়ার। তাঁর শিল্পের তীক্ষ্ন জেল্লায় জড়িয়ে ত্রিকাল সর্বদা! তিনি অমৃতপুত্র সংস্কৃতির প্রশস্ত সংসারে! আমাদের অভিমানের আপনারজন!


মেছেনী নাচ

শ্রাবণী সেনগুপ্ত


ভারতীয় নৃত্যের ক্রমবিকাশের মধ্যে দিয়েই  লোকনৃত্যর উদ্ভব,ও নানা শাখায় বিস্তৃতি। অন্যান্য প্রচলিত নৃত্যের সঙ্গে লোকনৃত্য ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ভারতীয় নৃত্যের রূপরেখায় জাতি ও প্রজাতিতে মূলত তিনটি সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। যেমন-১)আদিবাসী নৃত্যে-আদিবাসী ও উপজাতীয় সমাজ, ২)লোকনৃত্য-গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক গণসমাজ, ৩)উচ্চাঙ্গ নৃত্যে-নগরকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী সমাজের চিন্তা-চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। এই প্রতিফলনের ফলে এই নৃত্যধারাগুলির শ্রেণীবিন্যাস ,সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণগুলি নিয়ে নৃত্য বিচারের জন্য কতগুলি সূত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই অনুসন্ধানে জানা গেছে,ভারতীয় নৃত্যের জগতে লোকনৃত্যের স্থান কত গুরুত্বপূর্ন এবং এর পরিধি কত ব্যাপক। মানুষ যখন ক্রমবিকাশের পথে শিকারজীবী থেকে পশুপালক এবং সেখান থেকে কৃষিজীবীতে রূপান্তরিত হল,সেই সমাজের মধ্যেই জন্ম হল লোকনৃত্যের। অরণ্য ছেড়ে মানুষ যখন চাষ আবাদ করে স্থায়ী আস্তানা করে বসবাস শুরু করল,তখন থেকেই সে 'লোক' পর্যায়ভুক্ত হল। তাই বলা যায়,গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজ দ্বারা চর্চিত নৃত্যই হল ',লোকনৃত্য'। লোকনৃত্য মাঝখানে থেকে একদিকে আদিবাসী নৃত্য ও অন্যদিকে নব্য-উচ্চাঙ্গ নৃত্যের দিকে তার দুটি হাত প্রসারিত করে রেখেছে। তাই লোকনৃত্যকে অতীত ও বর্তমানের যোগসূত্র বলা যায়।

এই  মেছেনী নৃত্যটি  উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে প্রচলিত। এটি একটি বিশেষ লোকাচারকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হলেও ধর্মীয় বিশ্বাসও এর সঙ্গে জড়িত। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দেয় উত্তরবঙ্গের জনজীবনে। প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি নদীগুলো জনপদ বিধ্বস্ত করে দেয় প্রায়শই।আবার কখনো কখনো দেখা দেয় খরা। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার কাছে অসহায় সাধারণ কৃষিজীবি মানুষ তখন তুষ্ট করতে চায় প্রকৃতিকে। এই লোকবিশ্বাস চলে আসছে আদিমকাল থেকে,যা আজও এই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান।

                  উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী তিস্তা একদিকে যেমন মাতৃরূপে, অন্যদিকে ত্রাসরূপে বিরাজমান।তাকে সন্তুষ্ট করতে এখানে প্রচলিত তিস্তা বুড়ির পূজা। লোকবিশ্বাসে জাগ্রত তিস্তা বুড়িকে তুষ্ট করতে পারলেই তারা পরিত্রাণ পাবে খরা,বন্যার হাত থেকে,পরিবেশ হবে অনুকূল। তাই বছরের শুরুতে সারা বছরের শুভকামনায় গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত তিস্তা বুড়ির পুজো। এই পুজোয় অনুষ্ঠিত নৃত্যগীত মেছেনী খেল বা মেছেনী নাচ। মেয়েরা সেজেগুজে দলবদ্ধ হয়ে বছরের প্রথম দিন থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সব বাড়িতে বাড়িতে নাচ গান করে সবাইকে আহ্বান জানায় তিস্তাবুড়ির পুজো দেবার জন্য। এইসময় তাদের সঙ্গে থাকে একটি ছাতা যেটি সাজান থাকে শোলার অলঙ্কারে। হয়তো বর্ষার আগমনের প্রতীক হিসেবে এর ব্যবহার।এই উৎসবটির সঙ্গে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের মহিলারা কোনো না কোনোভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। একমাস পরে মূল অনুষ্ঠানের দিন কলার  খোলা দিয়ে ভেলা তৈরি করে তাকে নানারকম ফুল দিয়ে সাজানো হয় ও লৌকিক পদ্ধতিতে নানা আকারে ও রূপে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়। ধূপ, দীপ, কলা,ঘি বা তেলে ভেজানো কিছু তুলো বা কাপড়ের সলতে(ভোগা),আতপ চাল ইত্যাদি।তারপর ভেলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে।মেয়েরা সাবাইমিলে গান ধরেন-

               আজি কেনে ভুরার বাইজ মোর উঠেরে।
                না জানি তিস্তা বুড়ি কোন ঘাটে সাজেরে।
                আজি কেনে ধূপের বাইজ মোর উঠেরে।
                 না জানি তিস্তা বুড়ি কোন ঘাটে সাজেরে।
                আজি কেনে কলার বাইজ মোর উঠেরে।
                 না জানি তিস্তা বুড়ি কোন ঘাটে সাজেরে।

প্রাচীনকাল থেকেই লোকসমাজে প্রাকৃতিক দেবতারা পূজা পেয়ে আসছেন। আধুনিক সময়ে অনেকক্ষেত্রে লৌকিক আঙ্গিকের বিলুপ্তি ঘটলেও কৃষি দেবতা,বরুণ দেবতা এখনো গ্রামীণ কৃষিজীবি মানুষের লোকবিশ্বাসের আশ্রয়ে বেঁচে আছেন।তিস্তাবুড়ির পূজায় সবাই সমানভাবে অংশ নিয়ে থাকেন, যদিও মহিলাদেরই এই অনুষ্ঠান।



বিষয়: কবি প্রণাম 


রবি করোজ্জ্বল দিনে মংপুতে
                কবিতা বণিক

আজ সকাল থেকেই মনে হচ্ছে রবির হাসির বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো। নীল আকাশ আর আলোছায়া মাখা সবুজ পাহাড়ি অরণ্য সত্যিই লাগছে বড় ভালো। অরণ্যঘেরা  পাহাড়ি রাস্তায়  গাড়ি চলেছে এঁকেবেঁকে  মংপুর পথে।  এই বাঁকগুলো নেওয়ার সময় গাড়ির যাত্রীরা সবাই একটু ঝুঁকে পড়ে।  এমনই বাঁক  নেওয়ার সময় আমি হঠাৎই বলে উঠলাম I beg your pardon madam!  সহযাত্রীরা বললে  'একি কথা?' একটু হেসে বলি -আমি যে রবি ঠাকুরে তন্ময়  হয়ে গিয়েছিলাম! মংপুতে এইরকম বাঁক নেওয়ার সময় রসিক রবি ঠাকুর বলেছিলেন I beg your pardon madam!  এই সেই রাস্তা যে পথে রবি ঠাকুর , মৈত্রেয়ীদেবী গেছেন এসেছেন বারবার। রবিঠাকুর কখনো ডুলিতে কখনো পালকিতে  পৌঁছতেন  মৈত্রেয়ী দেবীর মংপুর বাংলোতে। মংপুতে থাকাকালীন রবি ঠাকুরের কিছু ঘটনা একে একে চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। এ পথেই পাহাড়ের পাদদেশে রিয়াং স্টেশনে বিশ্বকবি টয়ট্রেনের উঠতেন  বা নামবার সময়  রিয়াং রেলস্টেশন থেকে গাড়িতে উঠতেন।  এখন যদিও  এই রাস্তাটা খুব সুন্দর হয়েছে গাড়ি নিয়ে সোজা মংপু যাওয়া  যায়। এছাড়া পাহাড় জঙ্গল সব একই আছে। 
রিয়াং স্টেশনে রবি ঠাকুর এসে বসতেন গাড়ির অপেক্ষায়। তাঁকে দেখতে ভিড় করতো স্টেশনের কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা ও আশেপাশের দু, এক ঘর বাঙালিরা । মৈত্রেয়ী দেবী  লিখছেন -এক প্রান্তে এই নগন্য জনবিরল গ্রামের অতিক্ষুদ্র স্টেশনের প্লাটফর্মের উপর জরাজীর্ণ চৌকিতে  বিশ্ব আদৃত মনীষী বসে আছেন । এ একটা দেখবার মতো ঘটনা।
সেই রিয়াং স্টেশন, গেলিখোলা  স্টেশন  সব আজ নিশ্চিহ্ন। 1950 সালের 15 আগস্ট তিস্তার বিধ্বংসী বন্যায় রেল স্টেশন, রাস্তা,  লাইন সব ধ্বংস হয়ে যায়।  ফলে এই রুটে টয়ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ চিরদিনের মতো পুরোপুরি হারিয়ে যায়।
মোটর পথে চলার সময় মনে শিহরণ জাগে, মনে হয় ওই তো ! পালকিতে চলেছেন আমাদের বিশ্বকবি । সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে এই পাহাড়ি অরণ্য ঘেরা পথ। সবই আগের মতন আছে।  মংপুর কাছাকাছি  পৌঁছে মনে হল মাথায় কালো টুপি ও গায়ে চাদর দিয়ে মৈত্রী দেবীর সঙ্গে হেঁটে চলেছেন ঐতো বিশ্ব বরেণ্য কবি! কিন্তু কি আশ্চর্য দুজনের কেউই আজ ইহজগতে নেই । দুজনেই নামিদামি ব্যক্তিত্ব। মৈত্রেয়ী দেবী কে রবীন্দ্রনাথ খুব স্নেহ করতেন । কত না নামে তাকে ডাকতেন। কমলিনী ,সীমন্তিনী,  মাংপবী, মিত্রা, সুমিত্রা , আরো কত কি। বাংলোয় পৌঁছে দেখলাম প্রথমেই গেটের পাশে রবীন্দ্রনাথের একটা আবক্ষ মূর্তি আছে। বাংলোর চারপাশে যেদিকে তাকাই সবই যেনো রবি ময় হয়ে আছে।  এখানেই মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে বসে মংপুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি বলেছিলেন, সামনের ঢালু পাহাড় টার দিকে তাকিয়ে 'আকাশের কোল থেকে সবুজ বন্যা নেমে এসেছে' । এমন পাহাড় দেখলেই মনে পড়ে যায় সত্যিই সবুজের বন্যা নেমে এসেছে । সবুজের বন্যা শব্দ দুটি খুব আকৃষ্ট করে ।  সবুজের বন্যা সর্বত্রই চাই।




সামনের এক ফালি মাঠটিও  কবির খুব পছন্দের ।আর খুব পছন্দের ছিল কাঁচের ঘরটি। তিনি রোজ সকালে রৌদ্র স্নানের আনন্দটা এই ঘরে বসেই খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করতেন। এই বাড়ির সামনে একটা প্রকাণ্ড সেগো পাম গাছ ঝুড়ি নামিয়ে দিয়েছে। তাকে দেখে কবি লিখলেন- 
 ওই গাছ চিরদিন যেন শিশু মস্ত।
সূর্য উদয় দেখে দেখে তার অস্ত।
মৈত্রেয়ী দেবীর বাগানের হলুদ ফুলের সারি দেখে খুব আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন । মৈত্রেয়ী  দেবী বলেছিলেন মার্চ, এপ্রিলে ফুল ফোটে এখন তেমন কিছু নেই।  কবি বলেছিলেন 'এ কিন্তু ফুলের রাজ্য ,ফুলের দেশ ।'এখন তো মংপুতে কবির কথা রাখতেই বোধকরি নানারকম অর্কিড ফুলের বাগান বা খামারবাড়ি দর্শনীয় স্থান হয়েছে । এছাড়াও চারিদিকে ফুলের বাহার তো আছেই। আগে মংপু মানেই ছিল সিঙ্কোনা চাষের ক্ষেত্র। এখন মংপু মানে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত মৈত্রেয়ী দেবীর এই  বাড়ি। বাড়ির ভিতরে সেই টেবিল খাট কবির বসার চেয়ার ওষুধপত্র রং-এর প্যালেট আরও কিছু জিনিস। তিনি ছবি আঁকতেন এই টেবিলে বসেই। এখানে বসে কত কবিতা লিখেছেন, কত গল্প শুনিয়েছেন সবাইকে। এখানে কবি লিখেছিলেন জন্মদিন, নবজাতক,  আকাশ প্রদীপ, ক্যামেলিয়া এমনি আরও কিছু কিছু কবিতা। কবির বসার চেয়ার টা কে দেখলে আজও শূন্য মনে হয়না।  মনে হয় ধ্যানগম্ভীর হয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে স্থির বসে আছেন কবি। তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা এইভাবে স্থির বসে থাকতেন। নড়বার কোন চিহ্নই থাকত না। একরাশ বিস্ময় নিয়ে স্পর্শ করি বিশ্ববরেণ্য মহান মনীষীর ব্যবহৃত জিনিস। এই খানেই তিনি ছিলেন। মনে হয় আজও আছেন। এখনো আছেন। 



                  

এইবাড়ির স্নান ঘরটা কবির খুব পছন্দ হয়েছিল।  এই বাড়ির কেয়ারটেকার শিশির রাউত এর মুখে রবীন্দ্র সংগীত শুনে মনে হয় তিনি সত্যিই গুরুদেবের আশীর্বাদ ধন্য এক সন্তান। বাংলাভাষী না হলেও বাংলায় রবীন্দ্র সংগীত শুনে মুগ্ধ হয়েছি। কত যত্ন করে আগলে রাখেন কবির ব্যাবহৃত স্পর্শ ধন্য সব জিনিস।  এ ভালোবাসা তো ঐশ্বরিক ভালোবাসা, যা শুধু বাড়তে থাকে। এই বাড়িটায় এলে তারি স্পর্শ পাই। শুধু বাড়িতে নয় মংপুর বাতাসে, ঘাসে, গাছে  সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে রবি ঠাকুরের সুগন্ধিত স্পর্শ। আমরা মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ। মৈত্রেয়ী দেবীর আমন্ত্রণ রবি ঠাকুর ফেলতে পারেননি দেখে চারবার এসেছিলেন  এই বাংলোয়।তাই আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। ধন্য আমরা এমন বিশ্ববরেণ্য মহান মানুষকে কাছে পেয়ে। বাংলোর পাশে ওই যে সপ্তপর্ণী গাছ ! সেও যেন রবি ঠাকুরের কিছু কথা বলতে চায়। এখানে অবস্থানকালে রবি ঠাকুরের এক জন্মদিনে অতি সাধারন তিব্বতী, পাহাড়ী মানুষদের নিয়ে যে অনুষ্ঠান তা মনে রাখার মতো বেশ। বিশ্ববরেণ্য নামিদামি কবির জন্মদিন পালন  হচ্ছে অতি সাধারণ পাহাড়ি গ্রামের মানুষদের নিয়ে। তাদের মধ্যে নিজেদের এমন বিশ্ববরেণ্য কবির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব মৈত্রেয়ী দেবী ও তার স্বামী ডঃ মনোমোহন সেনের। কবি সেদিন দশটার সময় স্নান করে কালো জামা কালো রঙের জুতো পড়ে বাইরে এসে বসলেন কাঠের বুদ্ধ মূর্তির সামনে বসে একজন বৌদ্ধ স্তোত্র পাঠ করল কবি ঈশোপনিষদ থেকে অনেকটা পড়লেন।  বিকেলবেলা পাহাড়ি দরিদ্র প্রতিবেশীরা সানাই বাজাতে লাগলো। গেরুয়া রঙের জামার উপর মাল্যো- চন্দন ভূষিত আশ্চর্য স্বর্গীয়  সেই রূপ সৌন্দর্য সবাই স্তব্ধ হয়ে দেখতে লাগলো।  দলে দলে পাহাড়িরা ফুল দিয়ে প্রণাম করছিল। ছোট বড় সবাই ফুল এনে পায়ে দিয়েছিল তাঁর। তিব্বতীরা পরালো 'খরদা' গাছের সুতোয় বোনা স্কার্ফ। যা ওরা লামাদের পরায়। ফুলে  ফুলে সেদিন আবৃত হয়ে গিয়েছিলেন কবি। শঙ্খ ধ্বনির মধ্যে ' শিলাতলে 'এসে বসলেন। তিব্বতীরা শুরু করলে তাদের জংলি তান্ডব নাচ।  তারপর হয়েছিল খাওয়া-দাওয়া।  
সেদিন দুপুরবেলায় দুটো কবিতা লিখেছিলেন কবি। একটা কবিতার কিছু অংশ-

"কাল প্রাতে মোর জন্মদিনে
এ শৈল আতিথ্যবাসে
বুদ্ধের নেপালি ভক্ত এসেছিল মোর বার্তা শুনে।
ভূতলে আসন পাতি
বুদ্ধের বন্দনা মন্ত্র শুনাইলো আমার কল্যাণে
গ্রহণ করিনু সেই বাণী।..."
মংপুতে অনুষ্ঠিত জন্মদিনের স্মৃতি রয়ে গেল কবিতার মধ্যে। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত মংপু চিরস্থায়ী হোক।



এবং নজরুল 
সারণ ভাদুড়ী

"যেদিন আমি হারিয়ে যাব বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে,
 বুঝবে সেদিন বুঝবে।"



বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আবির্ভাব বাংলার স্যাঁতস্যাঁতে মাটি , জলো বাতাস, ছায়াঘন নিকুঞ্জে দোয়েল শ্যামার কলতানের মধ্যে দৃপ্ত সিংহের ন্যায় গর্জন ও মদগর্বিত গজেন্দ্রর মতো বিচরণ ,অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর। রবীন্দ্র যুগের শক্তিমান কবির সংখ্যা কম নয় ,প্রকৃত প্রতিভার কবিও রয়েছেন অনেকে, কিন্তু নজরুল তাদের জাতেরই কবি নন। শীতলতার চেয়ে গ্রীষ্মের প্রখরতার দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি।
 নজরুল জীবন চিন্তার মূলেই আছে মানবপ্রীতি , মানুষের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। সকল মানবপ্রীতি সমস্ত বিশ্বকে কেন্দ্র করে । তিনি যেমন অজস্র প্রথম শ্রেণীর কবিতা লিখেছেন, তেমনি রচনাগত ত্রুটির পরিচয়ও রেখেছেন অনেক কবিতায়। আসলে এক অসংযত আবেগ জীবনের প্রথম থেকেই তাঁর শিল্পকে পরিচালিত করেছে। এই আবেগের দ্বারা চালিত হয়ে সাহিত্য রচনার ফলে তিনি অনেক লিখেছেন, কিন্তু কবিতা গুলি সর্বক্ষেত্রেই সংযত মাত্রার রচনা হয়নি।
 আবেগের অতিরেক নজরুলের কবিতায় প্রায়শই উচ্চাঙ্গের শিল্পসৃষ্টির স্বপক্ষে বাধাস্বরূপ হয়েছে। এ নিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন -
"বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে,
দেখিয়া শুনিয়া খেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।"

তাই তাঁর সম্পর্কে বলা যেতে পারে তার প্রতিভা ধনী, কিন্তু গৃহিণী নয়।

 প্রত্যেক কবি তাঁর যুগের প্রভাবাধীন আবার কিছু কবি তাঁর যুগকেও অনেক সময় অতিক্রম করে যান। কোনো কবির মধ্যে যুগের প্রভাব স্পষ্ট, আবার কারুর মধ্যে সংমিশ্রিত । দীর্ঘকাল পর্যন্ত আমাদের এই কাব্যাংশে প্রচলিত আছে যে কাব্য সংসারে কবিরাই প্রজাপতি ,অর্থাৎ জগত স্রষ্টা।

তবে স্রষ্টা নজরুল কাব্যকে শুধু সুন্দরের দ্বারা প্রকাশ করতে চাননি, বরং সুন্দর এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা বেদনার করুন সুর কেও তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাঁর কথায় -
" তবু বলছি ,আমি সুন্দরের হাতে বীণা পায়ে পদ্মফুলই দেখিনি তার চোখে চোখ ভরা জলও দেখেছি।।"

 বিদ্রোহী বলে নজরুলকে জানলেও তাঁর কিছু কিছু কবিতাতে প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে ।তাঁর কবিতায় আমরা সুন্দর ও ভৈরবের সহাবস্থান লক্ষ্য করি ।রোমান্টিসিজমের মধ্যেও আছে এক জাতীয় বিদ্রোহ, এই বিদ্রোহ চারপাশে সমস্ত গতানুগতিক তার বিরুদ্ধচারণ করে । প্রকৃতপক্ষে "বিদ্রোহী" কবিতাটির মধ্যেই নজরুলের এই মানসিকতার সমস্ত স্বরূপ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে-
" মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য।"
এই পংক্তির মধ্যে নজরুলের রোমান্টিক স্বরূপ প্রকৃতপক্ষে বিধ্বংসী রূপককেই আত্মপ্রকাশ করেছে।
নজরুল মনের ধর্মের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিদ্রোহী হওয়া সত্ত্বেও ,শিল্পকলার অহেতুক আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি অনেক পরিমাণে ছিলেন রোমান্টিক ।অসত্য ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু যেখানে তিনি সৌন্দর্য মুগ্ধ কবি ,জীবন অথবা প্রেমের সৌন্দর্যে অভিভূত সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের দ্বারা প্রভাবিত ।তিনি নিজেই বলেছেন -
"নতুন করে গড়তে চাই বলেই তো ভাঙ্গি-শুধু ভাঙ্গার জন্যই ভাঙার গান আমার নয়।"
কিন্তু পরোক্ষভাবে তাঁর সব বিদ্রোহী ভঙ্গির মধ্যে তারুন্যের বর্ণনা রয়েছে ,তাই তার সমস্ত কবিতায় তরুণদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন-
"ওরে ও ভোরের পাখি!
 আমি চলিলাম তোদের কন্ঠে আমার কন্ঠ রাখি।।"

 সত্যিই জন্মের ১২৩ বছর পরও এপার বাংলা, ওপার বাংলা দুই বাঙালির কাছেই নজরুল সমানভাবে সমাদৃত ।। তাই তো - 
"ভুল হয়ে গেছে বিলকুল,
 আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে 
ভাগ হয়নিকো নজরুল।।"



বিষয়: ফিচার 


থমাস কাপ জিতে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল বিশ্ব চালকের আসনে
বটু কৃষ্ণ হালদার

চারিদিকে রক্ত,চিৎকার আর হাহাকার,তার মাঝে ও সমগ্র বিশ্ব তথা ভারতবর্ষের মানুষ থমাস কাপ  জ্বরে ভুগছে।থমাস কাপ পুরুষ ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় বিশ্বকাপের সমতুল্য আর মোস্ট প্রেস্টিজিয়াস ট্রফি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তী ব্যডমিন্টন প্লেয়ার স্যার জর্জ এলান থমাস ফুটবল বিশ্বকাপ আর টেনিসের ডেভিস কাপের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন ৪০ হাজার ডলারের প্রাইজ মূল্যের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ চ্যালেঞ্জ।যা পরবর্তীতে পরিচিত হয় থমাস কাপ নামে। 
কিন্তু মজার কথা হলো ইউরোপে শুরু হলেও এই খেলাটা যেনো ক্রমশ এশিয়ান দেশ গুলো যেমন চীন, জাপান, কোরিয়া,  মালেশিয়া, ইন্দোনেশীয়া প্রভৃতি দেশগুলোর একাধিপত্যে পরিনত হয়। ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মতনই জনপ্রিয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইন্দোনেশী আর মালেশিয়ার (অতীতের মলয়) ব্যডমিন্টন ম্যাচগুলো। সাদা চামড়ার দেশগুলোর মধ্যে থেকে একমাত্র ডেনমার্ক ছাড়া বাকি দেশ গুলো ক্রমশ হারিয়ে গেছে। আমেরিকাতেও ব্যাডমিন্টন ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। আর ১৯৮২ তে চীনের ব্যডমিন্টন ফেডারেশনে যোগদানের পর এটা পরিনত হয় চীনের একাধিপত্যে। তারপর থেকে প্রতি দুবছর ছাড়া হওয়া টুর্নামেন্টের ১০ টাই জিতে নিয়েছে চীন। আর ইন্দোনেশিয়া - চ্যাম্পিয়ন ১৪ বার। রানার আপ ৭ বার।

অতি মারি করোনা মোকাবিলা থেকে শুরু করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের ভাবমূর্তি বেশ উজ্জ্বল। যেখানে শ্রীলংকার মত দেশ জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে সেই মুহূর্তে বিশ্বের বহু দেশ ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব জানে ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে, বহু দেশের জনগণের মুখে খাবার তুলে দিতে সক্ষম হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নিভৃতে মাইলস্টোন ছুঁলেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকারা। তিয়াত্তর বছরে এইপ্রথম থমাস কাপ  ব্যাডমিন্টন  আসরে স্বর্ণ পদক  নিশ্চিত করলেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত, এইচ এস প্রণয়রা। থমাস কাপ জিতে অবশ্যই ভারতবর্ষ এই মুহূর্তে বিশ্ব চালকের আসনে। ভারতের স্বর্ণ মুকুটে আরও একটা নতুন পালক সংযোজন হলো।যা সমগ্র ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সাক্ষী হয়ে রইলো সমগ্র বিশ্ববাসী।এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকলো।

ভারতবর্ষ তখন ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে সবেমাত্র স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় ফুটবল দল লন্ডন অলিম্পিকে খেলার অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই খেলায় খেলোয়াড়দের খালিপায়ে খেলতে হয়েছিল। সেই খেলায় ভারত বর্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খেললে ও শেষ পর্যন্ত হেরে যায়। স্টেডিয়ামের সমগ্র দর্শক উঠে দাড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে ছিলেন। এর পর পুনরায় সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে। ভারতবর্ষের বিশ্বকাপ খেলায় কোয়ালিফাই করেছিল। কিন্তু ভারত সরকার কি খেলায় অংশগ্রহণ করেনি। সরকারের তরফ থেকে জনগণকে বলা হয়েছিল ফিফা এই বিশ্বকাপে খালি পায়ের খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজ থেকে বলা হয়েছিল ভারতবর্ষ গরিব দেশ তাই তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ভারতবর্ষের মত এত দক্ষ টিমকে খেলাতে অংশগ্রহণ করার জন্য ফিফা থাকা-খাওয়া যাতায়াত খরচ বহন করা সত্ত্বেও ভারত সরকার তাদের পাঠায়নি এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে। একশ তিরিশ কোটির দেশে বিশ্বকাপে দরজা ভারতবর্ষের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এমন এক স্বর্গরথের সুযোগ পেয়েও,ভারত বর্ষ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারল না, অথচ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রোজকার পোশাক প্যারিস থেকে ড্রাই ক্লিন হয়ে আসতো। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী প্রেমিকাকে লেখা চিঠি এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে করা যেত।তবে ১৯৪৯ সালে শুরু হওয়া একটি বিশ্ব ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ৭৩ বছরে প্রথমবারে সেমিফাইনালে উঠে রুপালি রঙের ট্রফি জিতে নিল। আর তাতে খোদাই করা ২০২২ সালে থমাস কাপ জয়ী দল ভারতের নাম। গলায় পদক, উত্তরীয়,হাতে স্মারক, আর ঠোঁটে জাতীয় সঙ্গীত, গায়ে জড়ানো ছিল তেরঙ্গা পতাকা, চোখে ছিল বৃষ্টি ভেজা অশ্রু, মুহূর্তটা ছিল অত্যন্ত আবেগ ও বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের।ব্রিটিশদের কবল থেকে প্রায় দুইশ বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তির স্বাদ যেমন ছিল, এই মুহুর্তটা তার থেকে কিছু কম ছিল না। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার মতো ছোট্ট একটা জাতীয়তাবাদী দেশ বরাবর এই খেলায় আধিপত্য বজায় রেখে ১৪ বার এই কাপ জিতেছে সেখানে ভারতবর্ষের মত একটা ১৩০ কোটির দেশ থমাস কাপ জয়  করতে লম্বা পথ অতিক্রম করতে হয়েছে,তাতে কি এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া আর কিছুই নয়। ৭৩ বছর পর হলেও ভারতবাসী হিসেবে অত্যন্ত গৌরবের।

আজকে আমার দেশ ব্যাডমিন্টনে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তার জন্য সবচেয়ে বেশী কৃতিত্ব প্রাপক এই একজনই তিনি হলেন পুলেল্লা গোপিচাঁদ। আর অবশ্যই আরেকজন আছেন, তিনি হলেন এনার মা। নব্বইয়ের দশকে ভদ্রমহিলা নিজে ফোন করে করে নিউজ পেপার হাউসে ছেলের খেলার ফলাফল জানাতেন যদি নিউস পেপারের খেলার পাতায় এক কলম লেখা হয়। অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও খুব একটা ব্যতিক্রম হয় নি। খেলোয়াড় পরবর্তী জীবনে একাডেমি গড়ে তোলাতেও সমান ভাবে ছিলেন ছেলের পাশে। আর হায়দ্রাবাদের সেই একাডেমিই আজ অনেক নিউস আর্টিকেলের মতে বার্সেলোনার ফুটবলার তৈরীর আঁতুড়ঘর "লা মাসিয়ার" সমতুল্য।  

একের পর এক উঠে এসেছেন এখান থেকে সাইনা নেওহাল, সিন্ধু, প্রনয়, শ্রীকান্ত, কাশ্যপেরা। নিঃশব্দে পালটে দিয়েছে ব্যাডমিন্টন আন্তর্জাতিক মানচিত্র। ব্যাডমিন্টনের ৭৩ বছরের মঙ্গলয়েড দাপট অতিক্রম করে আজ ভারতীয় পদধ্বনির মূল কারিগর কিন্তু ওই একজনই। নিরলস সাধক - দ্রোনাচার্য পুল্লেলা গোপীচাঁদ। এই মুহূর্তে দেশ দুর্নীতিতে জেরবার,কোটি কোটি টাকা অপচয়,নেতা মন্ত্রীরা উন্নয়নের কথা শুনিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প অর্থগুলো নিজেদের একাউন্টে টাকার পাহাড় তৈরি করছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অন্যান্য খাতে টাকা যেমন ব্যয় করছে,ঠিক তেমনি ক্রীড়া বিভাগের পরিকাঠামো যাতে উন্নত থেকে উন্নত তর হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিলে দেশে এমন অনেক বিশ্ব শ্রেষ্ট পুরস্কার আসবে।আর তাতে দেশের ভাবমূর্তি অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে বিশ্বের দরবারে।





বিষয়: রম্য রচনা 

গাছে কাঁঠাল

  চিত্রা পাল

                 

কাঁঠাল বললেই প্রথমে মনে পড়ে গাছে কাঁঠাল কথাটা। আসলে এটা একেবারে চলতি প্রবচন ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ এর অংশ। পাকা কাঁঠালের যা চট্‌চটে আঠা, তা যদি গোঁফে লেগে যায়  তাহলে আর দেখতে হবে না, ওই গোঁফটাকেই তাহলে বিসর্জন দিতে হবে, তাই সহজ সাবধানতা পাকা কাঁঠাল খাবার আগেই গোঁফে তেল  দিয়ে রাখা যাতে খেতে গেলে আঠা লাগবে না। কেননা কাঁঠালের আঠার নিন্দেও তো  কিছু কম নয়। ও আঠা যে এমনই লাগলে পরে ছাড়ে না।সেটা আবার সবাই সেই সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে,যেখানেই লেগে থাকার ব্যাপার থাকে। লেগে আছে দেখো, যেন কাঁঠালের আঠা।   

 এতো গেলো আঠার কথা। আরে কাঁঠালটাই বা কম কি। কতো দোষ তার। ছেলেপুলে অল্প বয়সে যদি একটু দুষ্টুমি করে বড়দের মতকিছু করে যা তাদের করার নয়, তাহলেই গার্জেন শ্রেণীর কাছ থেকে শুনতে হয়, সব হয়েছে এঁচোড়ে পাকার দল।। অর্থাত্‌ কচি কাঁঠালেরও ছাড় নেই। অথচ এঁচোড় কম সুস্বাদু নয়। এঁচোড় কে বলা হয় গাছপাঁঠা। তেমন করে রান্না করা হলে পাঁঠার মাংসকেও টেক্কা দেয়।ওদিকে রাগ প্রকাশের  ক্ষেত্রেও কম যায় না। সে রকম সে রকম সময়ে বেশ জোরদার সাহসের সঙ্গে বলতে শোনা যায় আসুক না, একেবারে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে দেবো। কিল দিয়ে কাঁঠাল পাকানো যায় কিনা জানি না, তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারট যে কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।

 তবে কাঁঠাল ফল থেকে শুরু করে গাছ অবধি সবটাই আমরা যে কতভাবে ব্যবহার করি তা একটু খেয়াল করলেই দেখাযায়। প্রথমে গাছ দিয়েই শুরু করি।আগেকার দিনের বাড়িতে ছড়ানো ছিটোনো চৌহদ্দিতে গৃহস্থ একখানা কাঁঠাল গাছ লাগিয়ে দিতো। সে গাছ কালক্রমে বৃহৎ্‌ মহীরুহে পরিণত হতো। সে গাছ গরমে ছায়া দিতো, ফল দিতো। আবার সে গাছের যত বয়স হতো তত তার দাম হতো, কারণ তার কাঠ খুবই পোক্ত মজবুত। তখনকার দিনে বহু বাড়িতেই ব্যবহার হতো কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি, তক্তপোষ। পাকা কাঁঠালও কম সুস্বাদু নয়। ফল হিসেবেও খুব উপকারী। এতগুণ থাকা সত্ত্বেও ওই যে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না, এই কথাটাই সবাই যেন বেশি বলে। তবে যে যাই বলুক, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল কথাটা কিন্তু বেশ আশাবাদী। যতই আশায় মরে চাষা লোকে বলুক না, আবার আশা নিয়েইযে আমরা বাঁচি তাই না।    



বিষয়: গল্প     

   

 আনন্দধারা

মনোমিতা চক্রবর্তী 


মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আনন্দবাবু,ধারাদেবী। দুজনের চোখেই জল। 
ধারাদেবী -"বাবার সম্মান রক্ষার্থে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কোনদিনই ধনবান স্বামীর থেকে সামান্য সম্মানটুকু পাইনি ।স্বামী গত হতেই সন্তানদের কাছেও গলার কাঁটাহয়েছি। তাইতো আমার ঠাঁই হয়েছে তোমার আনন্দধারা বৃদ্ধাশ্রমে।"
আনন্দবাবু -"তুমি কথা দিয়েছিলে হস্টেলথেকে বাড়িগিয়ে চিঠি লিখবে। সেই চিঠির অপেক্ষায় কাটিয়েছি চল্লিশটি বছর।স্বপ্ন দেখেছিলাম প্রতিষ্ঠিতহয়ে তোমার সাথে ঘর বাঁধবো; মনেআছে তোমার ? যার নাম ঠিক করেছিলাম আমরা আনন্দধারা।
দেখো আজ আমরা সেই আনন্দধারাতেই!আমরা কি পারিনা বাকি জীবনটা একসাথে আমাদের স্বপ্নের আনন্দধারাতে কাটাতে?"



বিষয়: কবিতা ও ছড়া 


দুটি কবিতা 
আবদুস সালাম 


শূন্যতার গা ঘেঁষে


বিশ্বাসের দরজায় বিড়ম্বনা তুলছে মাথা
আটপৌরে জীবন
নেমে আসে দ্বিধা দ্বন্দের নিত্যসমাস
শূন্যতার ভিতর লেপ্টে  যায় নিষ্ঠুরতার সন্যাসী অভিযান

প্রাত্যহিক জীবনে দল বেঁধে অভাবেদের  যাওয়া আসা মন্দ লাগে না
মৃত্যু এখন সহজ লভ্য অহংকার
ঘরে ঘরে জ্বলে  দুঃখের উনুন
বিবর্তনের গা ঘেঁষে  পুড়ে যায় চিতা ভর্তি শ্বাসকষ্ট
অগ্নিস্রাব হয় বিশ্বাসী রমণীদের
অপরিণত বোকা কাহিনীর মতো প্রেম  গর্ভবতী হয়
আটপৌরে সংসারে নাড়ীর যোগ বলে কিছু হয়না

শূন্যতার আগমনে আক্রান্ত হয় ভালোবাসা
ধূলোর আস্তরণ জুড়ে  বিচ্ছেদের বিস্তীর্ণ মাঠ
অসফল ধূসর স্বপ্নেরা  চৈত্রের ঝড়ে ঠুংরী গায়
এভাবেই বিশ্বাসের দরজায় হানা দেয় অপরিচয়
আমরা আধুনিক হই
প্রেমের রাস্তায় খেলা করে  খোলাম কুচির নিষ্ঠুর আহ্বান


নষ্ট

নষ্ট পাড়ায় ঘর বাঁধতে মানা নেই

এখানে অন্ততঃ  কেউ খুঁত ধরতে বিলাপ করে না
নষ্ট মানুষের দলে দিব্যি বিন্দাস দিনযাপনের  সাজায় ঘরবাড়ি
পাঁকের ভিতর পাঁকাল মাছের সংসার 

প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যায়
আনন্দ বাগানে ঝুলে আছে মাকাল ফল
পূর্ব পুরুষেরা ইতিহাসের মলিন  পৃষ্ঠায় এঁকে রেখেছে রক্তের জলছবি
মরণের যন্ত্রণারা  এখানে রোজ এসে চুমু  খায়

ছেঁড়া নদীর পাশ দিয়ে  হেঁটে  চলেছে  অবিশ্বাস
বিশ্বাস লুন্ঠিত হয় রোজ
ইতিহাসের দলিল গুলো ভেসে গেছে সময়ের নদীতে
নষ্ট পাড়ায়  বিষাদ মেখে দহনেরা বেঁচে থাকার রেওয়াজ করে

রঙিন মানুষেরা শোনায় অধর্মের গান
ধর্ম ব্যাবসায়ীরা   ধর্মের সাথে  অফার করে  বিদ্বেষ
আমরা মেতে উঠি
নষ্ট পাড়ায় নষ্ট প্রজাপতিরা আসে
নষ্ট ফুলে মেখে নেয় নষ্ট প্রেমের মুদ্রিত কলরব



বুড়ো আঙুলে

মাথুর দাস


বুড়ো আঙুলে কলা দেখানো,

বুড়ো আঙুলে রাগ,

বুড়ো আঙুলে টিপসই চাই,

নইলে 'যা তুই ভাগ্' !


বুড়ো আঙুলে কলা,

যায় কি এখন বলা ?

বুড়ো আঙুলেই হই সহমত,

বিপরীতে বীতরাগ ।




   রবি

    রীনা মজুমদার

 আছেই তো দুই রবি!

 রবির কিরণ রেখেছে বাঁচিয়ে
   শীতল পৃথিবীকে
  উত্তাপ ও আলো দিয়ে,
রবির অক্ষর কিরণ রেখেছে
  সুখে দুঃখে আনন্দে শোকে
 শান্তি ও আশ্রয় দিয়ে।

 দেখা হয়নি জানা হয়নি সৃষ্টি কে
  ইতিহাস হয়ে আছে ইতিহাস
 এগিয়ে চলি নিরন্তর গর্বের সঙ্গে
 তাঁর আলো ছায়ায় নিবিড় পরশে,
 আঁধার শেষে মরসুমী রঙিন স্বপ্নে
নিত্য আলোকিত হয় পূব আকাশে।

 আছে শুধু রবি ও রবি কবি 
  বেঁচে থাকার অহংকার..


ব্যাকরণ

প্রনব রুদ্র কুন্ডু

খাতাতে কলম রাখতেই মাংসের পোড়া গন্ধ
কলমের নিব থেকে থোপ থোপ রক্ত
লেখার টেবিলে ধোঁয়া
চেয়ারে লকলকে আগুন 
কী লিখবো?
লোভ উগ্রতায় মানুষই কাটে মনুষ্যত্ব!
শুধু দ্বন্দ্ব অহং দস্যুতা! 

সুকতলায় মেরুদণ্ড
ব্যাকরণ জানে না লিপ্সার চাটু
রামপুরহাট তুমি জেনো- চারদিকে প্রসারিত গদিবাদ!

নিঃসঙ্গতার এ বসন্তে
কোনো প্রশ্ন রেখো না ব্যালটের কাছে
ঈমান বিষণ্ণ ঘাসফুলে আত্মহত্যার কৌশল শিখছে

এবার আঘাতের পাঠশালায় জ্বলে
ভালোবাসা ছিঁড়ে দিন
পাঠক সুধীজন;
প্রিয়জনের মৃত্যু হলে তবে আপনি বুঝবেন-
ঘা-রক্ত-পুঁজে মুখ বুঁজে বাঁচাকে নপুংসক বলে!
উঠুন, পিঠও যে পুড়ে গ্যাছে;
আর কবে ঘুরতে শিখবেন, দাঁড়ানো শিখবেন?
বিবেক শুধু জানে আসল বিবর্তন!
আপনি মানুষ তো?



বৃষ্টি তখনও পড়ছিল
পক্ষিরাজ 

বৃষ্টি এখনও  পড়ছে,
মনের মধ্যে জমে থাকা সব মেঘ,
এবার কেটে যাবে।
মনটা খুব হালকা হয়ে যাবে।।
হয়তো এই মন আবার কাব্যিকও  হয়ে উঠবে,
কাব্যিক মন আবার জন্ম দিতে পারে,
নতুন কাব্যেরও।
হয়তো  সন্ধ্যার সেই রামধনু
আর থাকবে না,
হয়তো পাখিরাও আর গান গাইবে না,
বৃষ্টি তখনও পড়ছিল,
কিন্তু সেই জল ছিল চোখের,
মেঘের নয়........ 



 উত্তাপ

 আকাশলীনা ঢোল


দিন এখন দুপুর পেরিয়ে

বিকেলের পথের যাত্রী,

এগিয়ে চলেছে রাতের দিকে

তাপ বিকিরণ করে।

জড়তা মেশানো ভোর আর

ক্লান্তি মেশানো দগ্ধ

দুপুরের শ্রান্তি নিয়ে সে এখন

নিস্তব্ধ হতে চায়।

দেহের উত্তাপ হঠাৎ বাড়লে

যেমন অসাড় হয় অস্থি-পেশী-ধমনী,

তেমনই অসাড় এই জ্যৈষ্ঠের

দীর্ঘ একটি দগ্ধ দিন।

অমৃতে তার অরুচি, কণ্ঠ তার

বিষাক্ত রকমের তিক্ততায় ভরপুর-

সম্বল বলতে তার আছে কেবল

ঝাঁঝালো রোদ, গলে যাওয়া পিচ,

শুষ্ক লু বাতাস আর

মাপনযন্ত্রের উত্তাপ-

যে উত্তাপ খুঁজে ফেরে আর্দ্রতা,

বাষ্প হয়ে উবে যেতে চায়

কোন মহাশূন্যের ডাকে। 



অসুখ 
সৈকত দাম

যারা চাইতো আমায় ,
তারা ঠুকরে চলে গেছে কাঠের পাঁজর .....
আর আজ আমি এক অসুখ ....
যারা বলেছিলো আমায় রাজা ,
তারা বাড়ি ফিরে গেছে ,
দুর্বৃত্তের মতো আমার বৃত্ত ঘুরে .....
আর আজ .....

না, এবারে মিলবে না ভাবনারা কবিতার সাথে ,
কিছু কিছু দ্বিপদীরাও হোঁচট খেয়েছে ,
একনায়কের মতো বাঁচতে গিয়ে ......

চকচকে গাড়ি, প্রাইভেট সেক্টর ,
মোটা মাইনের চেক ....
তারা ভালো আছে ,
শুধু profile এর মুহুর্ত গুলো fake ......

সুঁচের ডগায় তবু লেগে থাকে অনুশোচনার মাটি ,
রাত্রি বাজছে ২ টো ৪ 
আমার কলমে অন্তরীক্ষ .....
আর অন্তরীক্ষে ব্যাভিচার ......

আমার খামচে ধরা জামায় আজ বড় অসময় ....
যদিও তারা ভালো আছে ,
তবু নোনা জলে ভেসে যায় তাদেরও বেড রুম .....
যারা চাইতো আমায় ,
তাদেরও পর্দার অন্তরালে বাথরুম .....
এখানেও বৃষ্টি বৃষ্টি মরসুম .....

আর আমি তাকিয়ে দেখি ,

কোনো এক সৃষ্টি রত চিত্র পরিচালকের মতো .....



গিরগিটি মুখ ও মুখোশ

কাকলি ব্যানার্জি মোদক 

মুখ ঢেকেছে মুখোশেতে
                         মানুষ সবাই ধন্দে,
বিশ্বভুবন মুখোশধারী
                     মারছে ছুরি অন্তরালে।
অনেক দিনের কষ্ট,বেদন,
                       অনেক দিনের যন্ত্রণা,
ভাসিয়ে দিলে যার কাছেতে
                      বন্ধু ভেবে মনের কথা।
হয়তো তুমি ভাবছো মনে
                        স্বস্তি পেলে কিছুটা ,
ভুল করেছো মারবে ছুরি,
                       মুখোশধারী মানুষটা ।

কোথায় গেলেন হরিশচন্দ্র,
                   দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর,
দেশের মাতা টেরেসা ,
            রামমোহন আর বিবেকানন্দ ।
গোটাকয়েক মুখোশধারী
                    আগেও ছিল বিশ্বতে ,
শকুনি মামা,মন্থরা আর
                          সূর্পনখা লঙ্কাতে।

পাপ ঢুকেছে মনের ঘরে
                          সর্বগ্রাসী মনটাতে ,
আমি হবো বিশ্বসেরা
                 দাসদাসী সব আমার যে ।
বিশ্বভুবন যার হাতেতে
                      তাকেও করো বঞ্চনা ,
মুখোশধারী লুটছে টাকা,
                       প্রসাদী ওই অর্থটা ।।


ফলগুলো

মজনু মিয়া 

ফলগুলো ঐ ঝুলে আছে
গাছের শাখে শাখে,
আধা পাকা পাকা পাকা
ফলগুলো খায় কাকে।

লিচু খাচ্ছে বাদুড় রাতে
বিচি পড়ে আছে,
গাছগুলো সব লাগছে ফাঁকা 
তাড়াও কেউ কি আছে!

কাঁঠাল গাছে মিষ্টি ঘ্রাণে
কাঠবিড়ালি ঘুরে,
খোঁজে খোঁজে পেলে তাতে
খায় যে খুঁড়ে খুঁড়ে। 

পাখপাখালি খাবে ঠিকই 
কিন্তু যাবে রেখে, 
গাছের মালিক যাতে কিছু 
দেখতে পারে চেখে।

শিশু কিশোর যুবা বৃদ্ধ 
সবার কাছে প্রিয়, 
ফল মিলে এই জৈষ্ঠ্যমাসে

মধুমাস জানিও। 

.

 

No comments:

Post a Comment