Saturday, March 18, 2023



 । পাঠ প্রতিক্রিয়া 


হলুদ প্রজাপতি: সুজাতা কর 


এই মুহূর্তে বাংলায় গদ্য, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ছোটগল্প, লিখছেন খুব কম সংখ্যক লেখক। তাই সুজাতা করের 'হলুদ প্রজাপতি' গ্রন্থটিকে আলাদা মূল্য দিতেই হচ্ছে। 

`দিবারাত্রির কাব্য` থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে মোট ২০টি গল্প স্থান পেয়েছে। প্রকাশনা সংস্থার পক্ষে প্রকাশক আফিক ফুয়াদ জানাচ্ছেন, `সুজাতা করের পৈতৃক আবাদ জলপাইগুড়ি শহর। এবং তাঁর জন্ম কলকাতায় হলেও শৈশব-কৈশোর ও স্কুল-কলেজ জীবন কেটেছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, ফালাকাটা ও কোচবিহারে। তারপর বিবাহের পর চোদ্দ বছর জামশেদপুর, পূর্ণিয়া ও পাটনা ও বিগত এক দশকেরও বেশি সময় কলকাতায়। বিচিত্র জীবন ও মানুষ দেখার অভিজ্ঞতা সুজাতার।' 

এই বিচিত্র জীবন ও মানুষ সুজাতার গল্পে বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর গল্পে অতি সাধারণ গৃহবধূ থেকে সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসী যেমন ঠাঁই পেয়েছে, তেমনি প্রেমে প্রত্যাখ্যাত কলেজ ছাত্রী তন্বী থেকে স্বামীর ভালবাসা না পাওয়া বয়স্কা মহিলাও রয়েছেন। রয়েছেন সেইসব প্রবল পুরুষ যাদের কাছে পুরুষত্বের সংজ্ঞা মানে প্রতাপ প্রদর্শন। রয়েছে অতি সংবেদনশীল মনের আধুনিক পুরুষও। চরিত্রগুলির বর্ণময়তা নিঃসন্দেহে সুজাতার গল্পগুলিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। তবে নারী মনের অন্তর্লীন বেদনা ও প্রকাশকে খুব ভালভাবে ধরেছেন গল্পকার। বহু চরিত্রের সঙ্গে পাঠক নিজের মিল খুঁজে পান বলে তাদের সঙ্গে একাত্মবোধ করেন। এখানেই গল্পকার হিসেবে সুজাতা সার্থক। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলিকে কখনই অচেনা মনে হয় না। আমাদের গতানুগতিক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই মানুষগুলি আমাদের সঙ্গেই থাকেন। একজন দক্ষ গল্পকার হিসেবে তাদেরকে উপস্থাপিত করা সুজাতার কৃতিত্ব। 

`হলুদ প্রজাপতি` ছোটগল্পগ্রন্থের গল্পগুলির বিষয় আপাতভাবে অনেক সময় সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু সাধারণ বিষয়কে উপস্থাপন করা আসলে কঠিন। এটা গল্পকার মাত্রেই জানেন। এক্ষেত্রেও সুজাতা সফল। আরোপিত চমক সৃষ্টির প্রয়াস তাঁর গল্পে নেই। বরং নৈর্ব্যক্তিক কথন গল্পগুলির ইউএসপি। তার সঙ্গে গল্পের পটভূমি হিসেবে যোগ হয়েছে ফালাকাটা কোচবিহার থেকে শুরু করে মহানগর বা প্রবাস। ফলে গল্পগুলি অন্য মাত্রা পেয়েছে। সুজাতার গল্পের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, গল্পগুলিতে ঠিক যতটা দরকার ততটাই বলা হয়েছে। অধিক কথা বলে গল্পের মাধুর্য্য নষ্ট করা হয়নি। ফলে পাঠের আনন্দ পাওয়া যায়। একঘেয়ে লাগে না। গ্রন্থের প্রথম গল্প  `সৌম্যবতীর উপখ্যান` থেকে পড়ার যে আগ্রহ তৈরি হয়, তা শেষ গল্প `সুমেধা` পর্যন্ত একইরকম থাকে। ছোট গল্পকারের কৃতিত্ব এটিই- পাঠককে টানা পড়তে বাধ্য করা। সুজাতা এখানেও সফল। আলাদা করে উল্লেখ করব `গোধূলি বেলায়`, `হলুদ প্রজাপতি`, `নীল ভ্রমর`, `খিদে` ইত্যাদি গল্পের। 

গ্রন্থের পাতা, মুদ্রণ ভাল। ফয়সল অরফিয়াসের প্রচ্ছদ মানানসই। একজন গল্পকারের কাছে মোটমুটি যা আশা করা যায় এই গ্রন্থে সেটি রয়েছে। প্রথম গল্পগ্রন্থ হিসেবে `হলুদ প্রজাপতি` প্রত্যাশার মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে সেটা নিশ্চিন্তে বলতে পারি। 

(মুজনাই সাহিত্য সংস্থার পক্ষে আলোচক: শৌভিক রায়) 
   

Saturday, March 11, 2023


 

পাশের বাড়ির পাঁচ কন্যার পাঁচ কাহন

 বিনয় বর্মন


১৯৭৫ সালের রাষ্ট্রসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের লিঙ্গ সাম্য ( gender equality) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়েই এর সূত্রপাত l ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে আজও যা অধরা l পুরুষতন্ত্রের অচলায়তন , রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নারী বিদ্বেষী মৌলবাদের উত্থান , গার্হস্থ্য হিংসা , বেকারত্ব  -- সব মিলিয়ে লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক বাধা l তবে এর মধ্যেও ভারতের মহিলাদের উত্থান চমকপ্রদ l সুযোগ পেলে ব্যবসা থেকে বিজ্ঞান সর্বত্র নিজেদের প্রমাণ করেছেন তারা। মহিলাদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু দিলেই gender equality আনা সম্ভব l


 এরকম প্রেক্ষাপটেও আমাদের আশেপাশেই অনেক নারী, ' নারী-পুরুষ বাইনারি ' ভেঙে ছুঁয়ে চলেছেন সাফল্যের শিখর প্রতিনিয়ত l সাফল্য বলতে যে যার ক্ষেত্রে , পড়াশোনা থেকে ব্যবসা,  নিজের স্থান করে নিয়েছেন l আজ International women's Day তে আমাদের girl next door  পাঁচজন নারীর ভাবনার শরিক হলাম l শুনলাম কি ভাবছেন তারা International women's day তে :


প্রশ্ন করেছিলাম : 

১/ সমাজে যে এখনও লিঙ্গ বৈষম্য (gender inequality) আছে বোধ করেন কি ?

২/  শুধু মেয়ে বলেই কি বিশেষ সুবিধা বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় ?

৩/  Behind every successful man there is a woman এর মত behind every successful woman there is a man ...  কি সত্যি বলে মনে করেন ?  আপনার ক্ষেত্রে এরকম কেউ আছেন কি ?

৪/ আপনার নিজের ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি কি ?

৫/  আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সমাজের প্রতি কি বার্তা দেবেন ?


একে একে শুনে নিই তারা কি ভাবছেন l 


প্রত্যুষা মহন্ত l ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে দশম স্থান পেয়েছে l আলিপুরদুয়ার ব্লক ২ এর  প্রত্যন্ত যশোডাঙ্গা গ্রামে থেকেও নিরব সাধনায় অর্জন করেছে সাফল্যের শিখর l তার ভাবনায় :






১) নারী পুরুষ বৈষম্যের কোনও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার নেই। কিন্ত মনে হয় না যে কোনও বৈষম্য নেই। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আচারে ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। তাছাড়া ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় ছেলে এবং মেয়েদের বার বার বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে তুমি ছেলে কিংবা তুমি মেয়ে। আরেকটা কথা মেয়েরা চাকরি করছে বা অন্য উপায়ে উপার্জনক্ষম হলেও পুরোপুরি স্বাধীন নয়। একটা মেয়ে তার নিজের চেয়ে উচ্চপদস্থ ছেলেকে বিয়ে করবে এটাই দস্তুর। পণপ্রথাও এখনও বহাল তবিয়তে আছে, তবে রূপ খানিকটা বদলেছে।

২) সুবিধা যেমন পাইনি তেমনি অসুবিধার সম্মুখীনও হই নি। কখনও কখনও শারীরিকভাবে অসুবিধা হলেও তার জন্য সমাজ বা পুরুষরা কখনও দায়ী নয়। তবে আমি মেয়ে হওয়ার জন্য খুব খুশি, ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ ।

৩) Particular ওই দুটো statement a বিশ্বাস করি না।

পুরুষ এবং নারী পরস্পরের পরিপূরক l

৪) পরিশ্রম বিশ্বাস আর consistency .

৫) শুধু একটাই কথা- নারী এবং পুরুষ ঈশ্বরের অনন্য সৃষ্টি। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। নারী পুরুষ সমান, প্রকৃতিতে দুজনের ভূমিকা নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র। নারী পুরুষ নয়,বরং রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে মানুষকে সম্মান করুন। আর "নারীরা পুরুষদের চেয়ে ছোট"- এই ধারণাটা ঝেড়ে ফেলুন। তাহলে মনে হয়না আলাদা করে নারী দিবস পালন করার প্রয়োজন থাকবে।


আরেক কন্যা আলিপুরদুয়ার ভোলারডাবরির নীলাঞ্জনা রায় l ২০১৭ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে, ভয়েস অফ ইন্ডিয়া গানের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সঙ্গীতপ্রেমীদের নজরে পড়েন l এরপর ২০২২ সালে জি টিভির সারেগামাপায় চ্যাম্পিয়ন হন l পাশাপাশি স্টার মার্কস নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এখন সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করছেন।


বিনয়ী আর লাজুক মেয়েটির সাফল্যে মাথা ঘুরে যায়নি l এখনো নিজেকে ছাত্রী ভাবতেই ভালোবাসে l নারী দিবসে তার ভাবনা এরকম :





১) আমি মনে করি লিঙ্গ বৈষম্যের একটা ব্যাপার থাকবেই l সমাজে দুটো লিঙ্গ আছে বলেই পৃথিবীতে নতুন প্রানের জন্ম হয় l তাই নারী-পুরুষ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ  তাদের মত করে l কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে , যেমন নেতৃত্ব সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ছেলেদের আগ্রহ বেশি l ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মেয়েরা ...

২) না l আমি দেখি প্রতিভা আর পরিশ্রম অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তি জীবনে গুরুত্বহীন বা গুরুত্বপূর্ণ হয়।

৩) দেখুন অবশ্যই প্রত্যেকের সাফল্যের পেছনে তার পরিবার তার প্রিয়জনদের ভূমিকা থাকে। সে তো পুরুষ বা নারী যে কেউ হতে পারে l আপনজনদের সমর্থন ছাড়া কেউ সফল হতে পারেনা l যেমন আমার সাথে সব সময় আমার বাবা-মা আছে l আমার জীবনে আমার বাবার অনেক ভূমিকা l যার জন্য আমি এখনো চেষ্টা করে যেতে পারছি l

৪) আমার গুরুজিরা সব সময় বলেন , নিরলস পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় , তার সঙ্গে ১০০ শতাংশ ফোকাস আর শুদ্ধতা l

৫) আমি মনে করি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কোন প্রয়োজনই নেই l কারণ বাস্তবিক পক্ষে আমরা নারীরা নিজের মহিমায় স্বতন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ভালো করে আন্তরিকভাবে ভাবলে সবাই বুঝতে পারবে l বুঝতে পারবে যে , এই সমাজে নারী-পুরুষ তাদের নিজস্ব মহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত l আমার মনে হয় এটা অনুভব করলে নারী দিবসের আর কোন দরকারই নেই।


পেশায় সরকারি আধিকারিক কনীনিকা চক্রবর্তী l আলিপুরদুয়ার নিউটাউনের মেয়ে l স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে কর্মজীবনের শুরু। ২০১০ সালে প্রথমবার WBCS  অফিসার হিসেবে যোগদান I ২০১১ সালে WBCS , 'A' গ্রুপে তালিকাভুক্ত l বর্তমানে বাণিজ্যকর দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার হিসেবে কোচবিহারে  কর্মরত l 

নারী দিবস নিয়ে তার বক্তব্য বেশ  স্পষ্ট :




১) সমাজ আগের থেকে অনেক এগোলেও কিংবা বৈষম্য অবশ্যই আছে l প্রচ্ছন্নভাবে বা প্রকট ভাবে চিন্তাধারার পরতে পরতে মিশে আছে। মুখে সাম্যের কথা বললেও মনে অনেকেই অন্য ধারণা পোষণ করেন l বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে যতই সাফল্যের পরিচয় দিক বাড়িতে মেয়েরা মাথা কিছুটা নিচু করেই রাখবে l এটাই কাম্য l না হলেই নারীবাদীর তকমা জোটে l সবাই এক নয় l তবে যৌথ পরিবার ভেঙে গেলও যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা মানুষেরা মেয়েদের দমিয়ে রাখার ঐতিহ্যকেই মনে মনে বহন করে নিয়ে চলে l এটা আমার মনে হয়।

২) মেয়ে বলে বিশেষ সুবিধা কোন দিন পাইনি l চাইওনি কোনদিন l কারণ কোন কিছুতে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এই কথাটাই আমার ঘোরতর আপত্তি আছে l নিজেকে সবার মধ্যেই বিচার করেছি l তবু এত পথ পেরিয়ে আসার পরেও যখন মেয়েরা মা হন , তাদের সন্তানের খেয়াল রাখতে হয় , সাংসারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারপরেও কখনও কর্মক্ষেত্রে  নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার পরেও সন্তানের অসুস্থতায় নিজের অর্জিত ছুটি চাইতে গিয়েও যখন অপমানিত হতে হয় , অসুবিধা হয় বৈকি l ছেলেরা যখন কর্মক্ষেত্রে যান সংসারের দায়িত্ব সামলানোর জন্য আরেকজন থাকেন l কিন্তু মেয়েরা যতই উঁচু পদে থাক , সন্তান অসুস্থতায় মাকেই বেশি চায় l

৩) দুদিকের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে করতেই মেয়েরা হাঁপিয়ে ওঠে l তবে সংসারে উপযুক্ত জুড়িদার থাকলে মেয়েদের পক্ষে সেটা কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে l

৪) আমার নিজের সাফল্যের পিছনে প্রথমেই বলব আমার মায়ের কথা l যিনি ছাড়া আমি কখনোই এই জায়গায় আসতে পারতাম না l মা বিভিন্ন অসুবিধের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন l আমার ছোট থেকেই মনে হতো , চাকরি আমি পেলেই ছাড়বো না l তারপর স্নাতকোত্তর পড়তে পড়তে বাবা মারা গেলেন l কিছুটা সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্যেও লড়াই l তারপর নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কিছুটা জেদ l লেগে থাকা l এসব তো আছেই l

৫) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এটাই বলতে চাই আমাদেরকে নারী নয় মানুষ হিসেবে ভাবুন l শুধু এটুকুইl দেবীও নয় দাসী ও নয় l শুধু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে দিন l পরিশেষে বলি এজন্য শিশু পুত্রের জননীর দায়িত্বও অপরিসীম l কারণ এই শিশুই ভবিষ্যতের নাগরিক l কোন একটি কন্যাকে সমানভাবে দেখার চোখ তৈরি করে দেওয়ার কিছুটা দায়িত্ব মায়েরই l যাতে সমাজের বৈষম্যের মধ্যেও তারা মেয়েদের উপযুক্ত সম্মান দিতে পারে l


আলিপুরদুয়ারের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অঙ্কনা মালাকার l প্রায় এক যুগ ধরে তার " কথানীড় আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রে " গড়ে তুলছেন বাচিক শিল্পীদের l নিয়মিত বাচিক শিল্প চর্চার পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের শিল্প-সংস্কৃতির আঙিনায় তার নিত্য  বিচরণ l

নারী দিবস উপলক্ষে তার  জানালেন সমাজ নিয়ে তার ভাবনার কথা :




১) আমাদের রাজ্যে অতটা না হলেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে হিন্দী বলয়ে আজও লিঙ্গ বৈষম্য প্রবলভাবে বিদ্যমান। গুজরাটের বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি এবং বিজয়মাল‍্যে বরণ করে নেওয়ার ঘটনা থেকেই এটা প্রমাণিত আমাদের দেশে লিঙ্গ বৈষম্য কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এছাড়াও শ্রমের বাজারে নারী-পুরুষ শ্রমিকের পারিশ্রমিকের বৈষম্য ও একটা নির্মম বাস্তব l

২) সমাজে যেসব পরিবারে নারীদের মধ্যে শিক্ষা , সংস্কৃতি , বৈজ্ঞানিক , মনন , ধর্মমোহমুক্ত চেতনার বিকাশ ঘটেছে , সেসব পরিবারের নারীরা অবশ্যই কিছু সুবিধা ভোগ করে থাকেন। প্রতিদিনের চলার পথে তাদের খুব বেশি বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয় না l যদিও প্রতি পদক্ষেপে ওদের সতর্ক থাকতে হয় l

অপরদিকে যেসব পরিবারে নারীরা এখনো ধর্মান্ধতা , অলৌকিকতা , অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদিতে , মনুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী , তাদের প্রতিপদে হোঁচট খেতে হয় , এবং অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।

৩) এই প্রশ্নের উত্তরে কাজী নজরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে বলবো বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর .... l

এর বাইরে আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না l

৪) নিজেকে এখনো সফল বলে মনে করি না l আমি মূলত একজন গৃহবধূ l কিছু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সঙ্গে অন্যতম শখ হিসেবে বেছে নিয়েছি আবৃত্তি শিল্পকে l আবৃত্তি আমার একটা প্যাশন। আমার নিজস্ব আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র রয়েছে l কথানীড় আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র l তবে নির্দ্বিধায় একটা কথা বলতে পারি l আমার পরিবার এবং আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আরও বৃহত্তর এক পরিবারের সঙ্গে আমার দিনগুলো খুব সুখে ও আনন্দে কেটে যাচ্ছে। সে দিক থেকে বিচার করলে আমি অবশ্যই একজন সফল নারী l এককথায় আমার সাফল্যের চাবিকাঠি আমার আবৃত্তি চর্চা।

৫) সব মেয়েরা যদি এরকম একটা দিনে নিজেরা একত্রিত হতে পারে তাহলে তাদের শক্তি বাড়ে মহিলারা পৃথিবীর অর্ধ জনশক্তি সমাজের অর্ধেকভাগ আজও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে মেরে ফেলা হচ্ছে ধর্ষণ করা হচ্ছে সু চতুর ভাবে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা হয়েছে এর প্রতিবিধানের জন্য ৮ ই মার্চ দিনটিকে আমাদের আত্মসমীক্ষার আত্ম সমালোচনার আত্ম শপথের এবং প্রতিবাদের দিন হিসাবে গ্রহণ করতে হবে কবি জীবনানন্দের ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে  " মানবকে নয় নারী শুধু তোমাকে ভালোবেসে / বুঝেছি নিখিল বিশ্ব কিরকম মধুর হতে পারে l "


হ্যামিলটনগঞ্জের মেয়ে দিয়া দত্ত l স্নাতক হওয়ার পরে চাকরির ভরসায় না থেকে নিজেই গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা। নিজস্ব বস্ত্র বিপণি 'পোশাকি ' যেখানে অনলাইন এবং অফলাইন দুভাবেই কেনাকাটা করা যায় l "পোশাকি"র দিয়া বলতে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাকে চেনেন l ফেসবুকে তার পেজ রয়েছে Posaki  নামে l নিজের স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি আরো প্রায় ১৫-১৬ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সে আজ একজন সফল entrepreneur . 

 কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী সে l নারী দিবসে তার উপলব্ধি :



১) হ্যাঁ নিশ্চয়ই l এই শিক্ষিত  সমাজ এখনও  নারী ও পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে থাকে।

২) হ্যাঁ বহু ক্ষেত্রে.

৩) এই বিষয়টা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়.....হ্যাঁ আমি খুব ভাগ্যবতী যে আমার সাথে আমার বাবা রয়েছে 

৪) ইচ্ছা+ পরিশ্রম+ধৈর্য=সাফল্য

৫) এখন সেই নারীদের সম্মান করার সময় এসে গেছে যারা সমাজের উন্নতির জন্য সংগ্রাম করছেন , সামাজিক বাধা নিষেধ ভেঙে দিয়েছেন, এবং সমাজের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন প্রতিটা সমস্যার মুখোমুখি মোকাবিলা করতে l


 

নারী দিবস কী ও কেন

চিত্রা  পাল   

নারী জাতিকে মানবসমাজের অর্ধেক বলা হয়। এই সমাজের অর্ধেক সৃজিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। এভাবেই বলা হয়। বলা হয় ওই পর্যন্তই, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ়ে  তার তেমন সাড়া ছিলোনা। ১৯০৯ সালে ক্লারা জেটকিনসের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক  নারী সম্মেলন হলো। এরপরে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে প্রতি বছর ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব রাখা হয়। এরপরে ১৯৭৫ সালে ৮ই মার্চকে বিশ্ব  নারী দিবস হিসেবে জাতি সংঘ স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়ে এই দিনটি পালিত হচ্ছে  বিশ্ব নারী দিবস রূপে।এই দিনটির পালনের পেছনে রয়েছে নারীর সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।আমাদের দেশেও পূর্ণ মর্যাদায় পালিত হয়েছে নারী দিবস। এক একদেশ এক এক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়। এবছর নারী দিবসের গুরুত্বের বিষয় লিঙ্গ সমতার উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার। যেকোন  সভ্যতা উন্নত হয় তখনই যখন একজন নারী নিজের ভেতরে এই উন্নতি লালন করে। একজন নারী যদি সমান সুযোগ পায় আর সে প্রমাণ করে যোগ্যতায় সে সমান তাহলে সমাজ যে আপনিই উন্নত হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।


 

আজকের নারী 

গৌতমেন্দু নন্দী


আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে যে কোনও  নারীর ক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক বিচরণের মানদণ্ড হল শিক্ষা এবং আর্থিক স্বনির্ভরতা। সেই শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার পরিপন্থী-- সামাজিক অনুশাসনের শৃঙ্খলে নারীদের বেঁধে রাখা হয়েছিল যুগ যুগ ধরে।

পুরুষতান্ত্রিক ও অবৈজ্ঞানিক নিয়মের নিগড়ে বেঁধে আত্মনির্ভরতার পাঠ থেকে দীর্ঘদিন নারী-- সমাজকে বঞ্চিত ক'রে অশিক্ষা ও পরাধীনতার অন্ধকারে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে  পুরুষের সঙ্গে সমান তালে পা মিলিয়ে আজ নারীরাও জলে,স্থলে ও অন্ত্যরীক্ষে সমান অধিকার নিয়ে নিজেদের মেলে ধরছে।

সৃষ্টির আদিতে "দশভূজা" রূপে নারী শক্তির আরাধনা করলেও সমাধিকারের ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের পেছনেই রাখা হয়েছে ভিত্তিহীন এই  পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যের ফলে  অবহেলিত নারীসমাজ সম অধিকার নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতেপারেনি বহুদিন।

পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতিতে আজকের নারীরা অনেক ক্ষেত্রে নিষেধের দেওয়াল ভেঙ্গে আত্মমর্যাদায় উপলব্ধ হয়ে স্বনির্ভরতার বোধে উন্নীত হয়ে আকাশ পথে বিমান যাত্রীদের দায়িত্ব  নিয়ে অনায়াসে "টেক অফ", " ল্যান্ডিং"এর পাঠ নিচ্ছে, সামিল হচ্ছে "দুর্গম গিরি কান্তার মরু" অভিযানে, পার হচ্ছে ইংলিশ চ্যানেল, আরোহন করছে বিশ্বব্যাংক, অর্থনীতির ক্ষমতার শিখরে। বিচরণ করছে লোকসভা, বিধানসভার করিডোর  অলিন্দে।

আজকের নারী পৌরহিত্যের  ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতার  অধিকার কেড়ে  নিয়েছে।  পুজো-আরাধনার সঙ্গে সংস্কৃতর  সহজবোধ্য বাংলা অনুবাদে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ ক'রে পাত্র পাত্রীর বিবাহ কার্যাদিও তাঁরা সম্পন্ন করছেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য "শুভমস্ত"র চারজন মহিলা সদস্যা যাঁরা মন্ত্রোচ্চারণ সংগীতের সমন্বয়ে, দুর্বোধ্য সংস্কৃত মন্ত্রের ট্র্যাডিশন ভেঙে বৈদিক মন্ত্রের সহজবোধ্য বাংলা অনুবাদ- উচ্চারণে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছেন।  ভেঙে দিয়েছেন "মেয়েরা সম্প্রদানের সম্পত্তি" এই প্রচলিত সংস্কার।

কাঠফাটা রোদে পুড়ে,ঝড়--জলে ভিজে বিল্ডিং বা সেতু নির্মাণ কাজেও দক্ষতার সাথে "ঠিকাদার"এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে আজকের  নারী।  তবুও পথে-ঘাটে আজও মেয়েরা "ভোগপন্য"  হয়ে পুরুষদের লালসার শিকার হচ্ছেন।  আত্মরক্ষার পাঠ নিলেও শারীরিক প্রতিকূলতার  জন্য অসহায় হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

অনেক সময় অধিকার আর স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে মাত্রাজ্ঞানের অভাবও "আজকের নারী"র বিপদ ডেকে আনছে।  আজকের নারীদের ক্ষমতা ও অধিকারের সামগ্রিক  চিত্র এখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর্থসামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা অনেক নারী আজও তাদের উপর পুরুষের নির্যাতনকে পুরুষের জন্মগত অধিকার বলেই মনে করে।


 

বিপন্ন অর্ধেক আকাশ 

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 


পৃথিবীর  বয়স  বাড়ার  সাথে  সাথে বিপন্ন হচ্ছে অর্ধেক   আকাশ।  নারী  ক্ষমতায়নের  শ্লোগানে মুখরিত  এই  দেশে  প্রতিদিনই  বাড়ছে   নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনা। অথচ বিজ্ঞানের পরিসংখ্যান বলছে পুরুষ অপেক্ষা নারী  অধিক মেধা সম্পন্ন। সূচীশিল্প, গৃহকর্ম থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে বিমান  চালানোর মতো কাজগুলোতেও   নারীরা   পুরুষ অপেক্ষা বেশি নিপুণতার  সাক্ষ্য  রেখেছে।  অন্যান্য    বিশদ পরিসংখ্যানে   না   গিয়েও   কেবলমাত্র  একটি তথ্যের  দ্বারা   বলা  যায়, বিশ্বের  প্রথম  চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির কর্ণধারই মহিলা বিষয়টি এতটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ যে উল্লেখ না করে আর কোনো উপায়ন্তর নেই। 

সারা পৃথিবীর চালচিত্র আজ আমাদের হাতের মুঠোর মুঠোফোনে বন্দী। মানুষ এখন মোবাইল ফোনের দাস।  এই স্যাটেলাইট ইনভেশনের যুগে মোবাইল ফোনের হাজারো সুফল আমরা উপভোগ করলেও মাত্র কয়েকটি  কারণে  আমাদের  সমাজে  "মূল্যবোধ " নামক শব্দটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। 

মন এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সব সময় না পাওয়া কে পেতে চায়। আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পেয়ে গেলে সে সাময়িক খুশি হলেও আরও একটি বস্তু প্রাপ্ত করার আশায় উঠে পড়ে লেগে যায়। সীমা হীন এই চাহিদাকে সামনে রেখে বলতে হয়,      "স্কাই ইজ দ্যা লিমিট "। সেই সীমাহীন  আকাশছোঁয়া চাহিদা নারী সমাজকে বিপথগামী করে তুলছে। 

আজকের ভোগবাদী সমাজের প্রথম এবং প্রধান শত্রু পশ্চিমী সভ্যতার অনুকরণ।  টেলিভিশন এর স্টাইলে জীবনযাপনে অভ্যস্ত আজকের নারীসমাজকে সামিল করেছে এক ভয়াবহ ইঁদুর দৌড়ের সামনে। যার ফলস্বরূপ সমাজের সামনে নেমে আসছে বিপন্ন দাম্পত্যের নানা ছবি। 

সংসদীয় গনতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সরকার গঠিত হয়। দূর্নীতি এবং অপশাসনের ফলে মানুষের মনে ভোট প্রদানের অনীহা জন্ম নিচ্ছে।  বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা যাকে  "ম্যান্ডেট" বলি সেটা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ৩৩ টি মানুষ অর্থের প্রলোভনে এবং মাসলপাওয়ারের ভয়ে এমন এক সরকার উপহার দিচ্ছে,  যাঁরা নারীর সুরক্ষা দিতে প্রতি পদে পদে  ব্যার্থ হচ্ছে। 

সাম্প্রতিক কালে এক মহিলা সাংবাদিক হত্যা,  এক মহিলা কবির কোমরের হাড়ের চিকিৎসার পরিবর্তে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর "হিপ রিপ্লেসমেন্ট" এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ার পার্সেন এর শ্লীলতাহানির ঘটনা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। 

ছাত্রী অবস্থায় বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে অশ্লীল পোশাক আসাকের দরুন বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা।  মুখ থুবড়ে পড়ছে নারী সমাজের একটা অংশ।  স্নেহে অন্ধ বাবা-মায়ের  নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পারিবারিক সমস্যা। ১৯৯৩ সালে কোলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে মহিলা শ্লীলতাহানির ঘটনার সংখ্যা ছিল একটি। এখন দিনে কতগুলি তা তথ্য ও পরিসংখ্যান ঘাটলে বোঝা যাবে।

সাম্প্রতিক কালে নারীর সমানাধিকার এবং ক্ষমতায়ন বেশ লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।  লোকসভা, বিধানসভা, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থায় আসন সংরক্ষণের মাধ্যমে  সেটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ব্যাবস্থা ও পৌরসভা গুলিতে স্বামীরা তাদের নির্বাচিত স্ত্রী দের কাজে সহায়তা করতে এসে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও স্বামী দের দূর্নীতির কারণে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যাকে শ্রীঘরবাস করতে হচ্ছে,  যা আজকের সমাজে লজ্জার।

কিছু সংখ্যক মেয়েরা মদ্যপান, অশ্লীলতায় ডুবে গিয়ে গোটা নারী জাতির সামনে সংকট সৃষ্টি করছে, যা বন্ধ না হলে আগামী দিনগুলোতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না।



আজকের নারী--

সম্রাজ্ঞী রায়

 

সৃষ্টির ভরকেন্দ্রে থাকেন নারী। জননী রূপে তিনি পরিচিতি পান  নবজাতকের মাধ্যমে। তাই নারীর প্রধান পরিচয় মাতৃত্বেই। নারীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সংসার; পরিবারের চালিকাশক্তিও হন তিনি। সন্তান তাঁর কাঋ থেকে প্রাথমিক শিক্ষাও পায়।

 বতর্মানে ভারতের শাসন ব‍্যবস্থার সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠান করছেন একজন নারীই। সমান্তরাল ভাবে  প্রশাসনিক ক্ষেত্র ছাড়াও  অন্যান্য দায়িত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বও সামলান বেশ কিছু ভারতীয় নারী। আধুনিক যুগের নারীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সারদা দেবী, ভগিনী  নিবেদিতা, মাদার টেরিজা প্রমুখ।

    তবে নবজাগরণের আগে পযর্ন্ত  নারী স্বাধীনতা ব‍্যপক ভাবে ছিল না। মধ‍্য যুগে নারীরা থাকতেন অন্তরালে; পর্দার আড়ালে। সতীদাহের মতো বর্বরতার বলি হয়েছেন বহু  অসহায় নারী। রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে নারীরা  বাঁচার অধিকার পান। পরবর্তীতে বিদ‍্যাসাগরের সংগ্রামের ফল হিসেবে বিধবা বিবাহের মতো প্রগতি সম্ভবপর  হয়েছিল। তিনিই প্রথম  নারী শিক্ষার প্রচলন করেন।

     বতর্মানে নারীদের কাছে পৌঁছেছে  শিক্ষার আলো; তাঁরা পেয়েছেন গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসাবে ভোটাধিকার ; আছে বাক্ স্বাধীনতা, এসেছে চাকরি আর ব‍্যবসার মাধ‍্যমে স্বনির্ভরতা ও আর্থিক স্বাধীনতাও।

    তবে ফুলে যেমন কীট থাকে তেমনই  স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু নারী স্বেচ্ছাচারি, উশৃঙ্খল ও কর্তব্য কর্ম বিমুখ হয়ে উঠেছেন। তবুও নারী প্রগতি অব‍্যহত থাকুক, সুস্থ সমাজের জন্যে এটিই বিশেষভাবে কাম‍্য।


 

আজকের নারী 

বেলা দে 

দেশজুড়ে নানাভাবে পালিত হচ্ছে নারীদিবস।এই আবহে আমিও আছি সমস্ত নারীর খুব কাছাকাছি  দায়িত্ববোধের গভীরতা থেকে নারীর অন্তরে জন্ম নেয় অপরীসীম শক্তি। প্রাচীন কাল থেকে কর্তব্যপরায়ণতার দৃষ্টান্ত বহনকারী বহু নারী ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, রাণী রাসমনি,অহল্যাবাঈ,ভগিনী নিবেদিতা, আরও অনেকে। পরিবারের পাঠশালার  মা হচ্ছেন প্রথমধাপ,পারিবারিক জীবনের মূল্যবোধের উপর স্থাপিত হয় নারীজীবনের অন্তরঙ্গতা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে  এই প্রজন্মের বয়:সন্ধীর কিশোর কিশোরী অবাধ স্বাধীনতা শালীনতার সীমা ছিঁড়ে উগ্র আধুনিকতার পিছনে ছুটে ডুবে যাচ্ছেন পুতিগন্ধময় নরকে। অন্যদিকে দেখলে আজকের চাকুরিজীবী নারী একইসাথে ঘরে বাইরে সামাল দিয়েও সন্তানের লেখাপড়ার দিকে সমান মনযোগী। তার একটা বড় কারণ নারী আজ অশিক্ষিত নেই বললেই চলে বরং পুরুষের চাইতে অনেক ক্ষেত্রে নারী  আজ  এগিয়ে, বিশেষত আই,টি সেক্টর এর মত জায়গায়  পুরুষের চাইতে নারীর সংখা অনেক বেশি।মোটকথা পুরুষের সাথে সমান দক্ষতার নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছে। আর একটা বড় কারণ নারী পুরুষ উভয়ই চাকুরী করলে সংসারে যাপনে একটু বেশি সচ্ছলতা আনে, প্রাআজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নানাভাবে আনুষ্ঠানিক নারী দিবস পালন, এই আবহে আমিও আছিসমস্ত নারীর খুব কাছাকাছি।

দায়িত্ব বোধের গভীরতা থেকে নারীর অন্তরে জন্ম নেয় অপরিসীম  শক্তি।প্রাচীনকাল থেকে কর্তব্যপরায়ণতার  দৃষ্টান্ত বহন করে আছে ঝাসীর রানী লক্ষীবাই,রানী রাসমনি,অহল্যাবাই ও ভগিনী নিবেদিতার মত তুলনাহীন সক্রিয় কর্মনিষ্ঠ নারী সত্বা। পারিবারিক  জীবনের মূল্যবোধ এর উপর স্থাপিত হয় নারীজীবনে অন্তরঙ্গতা। পরিবাররূপী পাঠশালায়  মা হচ্ছেন শিক্ষার প্রথম ধাপ।

মধ্যযুগীয় বর্বরতার পর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অবাধ স্বাধীনতায় এ প্রজন্মের নারীকে প্রতি পদে পদে সমুহ বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বয়:সন্ধির কিশোরী, এমনকী পূর্ণবয়স্কাও শালীনতার সীমা ছিঁড়ে উগ্র আধুনিকতার পিছনে ছুটে ডুবে যাচ্ছে পুতিগন্ধময় আস্তাকুড়ে।

এমন একটা দিনে আমার আলোচ্য বক্তব্য কারও মনে যদি কষ্টের সঞ্চার হয়ে থাকে যথেষ্ট সচেতন ও শিক্ষিতা নারীকে বুঝতে হবে অন্যায় ধরিয়ে দেওয়া   দোষের নয়।এক নারীর অপমান মানে সমষ্টির।সহজভাবে মেনে নিলে জীবন সুন্দর হয়ে উঠবেই। প্রাচীন হিন্দুত্ববাদের ব্যাখ্যায় পুরুষ নারীর ভাগ্যবিধাতা, এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি আলো দেখান দুই মানবিক সত্বা রামমোহন রায় এবং বিদ্যাসাগর।  

আজ তাই নারী পেয়েছে মস্ত এক আকাশ যা ছিল একদিন চিলেকোঠার পর্দায় ঢাকা।


 

বাংলার প্রথম রাজবন্দী ননীবালা দেবীর দুর্দশাময় জীবন ইতিহাসে স্থান পায়নি

বটু কৃষ্ণ হালদার


ইতিহাস হল মানব জীবনের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।এক কথায় বলতে গেলে ইতিহাস হল মানব সভ্যতার কাছে এক জীবন্ত দলিল। সময় দিনপঞ্জি, জীবন দর্শন ঘটনা প্রবাহমান অতীত গুলো ঐতিহাসিকরা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করে গেছে আমাদের সুবিধার্থে। সত্যের আলোকে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ ঘটনাগুলোকে পড়ে আমরা সমৃদ্ধ হই। ইতিহাস থেকে আমরা দেশ-বিদেশের জানা অজানা কাহিনী জানতে পারি। বিশ্বের বহুদেশের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাস,নানান যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন মনীষীদের জীবন দর্পণ গুলো সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ভারতীয় ইতিহাসে বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে রয়েছে দেশের মানুষদের রক্ত ঝরানো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।দেশের স্বাধীনতা আনতে গিয়ে বহু নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমী হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে ছিল জীবনের জয়গান, নয়তো অকথ্য অত্যাচারে তার প্রাণ দিয়েছিল।আবার বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বাধীনতার পরে যোগ্য সম্মান পাননি।সময় যত বয়ে চলেছে, ইতিহাসের তথ্য নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে।আমরা এযাবৎকাল যা পড়ে এসেছি তা সঠিক তো? কারণ ইতিহাসে পাতায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বহু সত্য ঘটনা। এই ইতিহাসের পাতায় স্থান হয়নি বহু নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীদের। বহু সত্য ঘটনা চাপা পড়ে গেছে কালের আধারে।স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বহু সংগ্রামী উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। কারণ সে সময় একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ঐতিহাসিকদের ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়েছিল।কিন্তু কেন?

১৬০০ খ্রিস্টাব্দে  লন্ডনের একদল বণিক রানী এলিজাবেথের কাছে এক আর্জি নিয়ে হাজির হন। তারা রাণীর কাছে পূর্ব এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসা করার জন্য সম্মতি ও রাজ সনদ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ভারতে এলে ও তারা প্রায় দুইশত বছর  ভারতবর্ষকে নির্মমভাবে শাসন-শোষণ করেছেন।দিনে দিনে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর অত্যাচারের সীমা বেড়ে চলেছিল।ফাঁসি দেওয়া দ্বীপান্তর,মলদ্বারে রুল ঢুকানো,কমোড থেকে মলমূত্র এনে মাথায় ঢেলে দেওয়া,চোখের মনিতে সুচ ফোটানো, গরম লোহা হাতের তালু ও পায়ের চেপে ধরা, কয়েক দিন উপোস করিয়ে পিছনে হাত কড়া অবস্থায় ঠা ঠা রোদে বন্দিকে দাঁড় করিয়ে রেখে লাথি ও রূলের মার, প্রকাশ্যে গুলি করা,হাতুড়ির ঘা মেরে দাঁত ভেঙে দেওয়া, নাক মুখ ফাটিয়ে দেওয়া, সাঁড়াশি দিয়ে হাত পায়ের নখ উপড়ে নেওয়া এসব ছিল ব্রিটিশদের কাছে জলভাত। এমনভাবে দেশের সন্তানদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে ব্রিটিশরা।নারীদের ক্ষেত্রে অত্যাচারের মাত্রা ছিল অন্যরকম। বহু বন্দী নারীকে দিয়ে জোর করে তাদের কাম চরিতার্থ করত। দিনের পর দিন লাগাতার ধর্ষণ করতো। চলত মানসিক অত্যাচার, এমনকি শরীরের বস্ত্র ঘুরে যৌনাঙ্গে দুই বাটি লঙ্কা বাটা ঢোকানো হয়েছিল। হ্যাঁ, এমনটাই সত্যি। এমন নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন বহু নারী ।কিন্তু সেই ইতিহাস রয়ে গেছে  আড়ালে। ইতিহাসের পাতায় তাদের ঠাঁই হয়নি। এমন বহু বীর সন্তানদের কথা আমরা জানিনা। এমনই এক নির্মম ও নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। জেনে রাখা দরকার কে এই ননীবালা দেবী?

ননীবালা দেবী ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী। তাঁর জন্ম ১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে। পিতার নাম সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়ের নাম গিরিবালা দেবী। তৎকালীন সময়ে আমাদের সমাজে মহিলাদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হতো। নারীদের জন্য  শিক্ষার কোন ব্যবস্থা তেমন ছিল না। নিয়মের গণ্ডি শিখরে ননীবালা দেবীর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হল না। ১৮৯৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের ৫ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। ননীবালা দেবীর বয়স মাত্র ষোল। স্বামীহারা নাবালিকা ননীবালা দেবীর জায়গা হল বাপের বাড়িতে। উনিশ শতকের সময়ে বিধবা মহিলা হওয়া সত্ত্বেও নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা শিখেছিলেন।সে সময় চারিদিকে চলছে অরাজকতা, ব্রিটিশদের চরম অত্যাচার। চোখের সামনে এমন নির্মম অত্যাচার দেখে গোপনে নাম লেখালেন বিপ্লবী দলে। বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা নিলেন। অমলেন্দু চ্যাটার্জি ছিলেন ননীবালা দেবীর সম্পর্কে ভাইয়ের ছেলে। বিপ্লবের দীক্ষা মন্ত্র মাথায় নিয়ে দেশকে ভালোবেসে বিপ্লবীদের হয়ে তিনি নানান ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিতে শুরু করে। শুধু তাই নয় দক্ষতার সাথে সেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তার আচার ব্যবহারে এতটুকুও বোঝার জো নেই যে তিনি একজন বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্যা। বিপ্লবীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তিনি ছিলেন ভায়া, বা মিডিয়া।বহু অস্ত্রশস্ত্র নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেন আবার গোপনে বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালে। বাঘাযতীন ও রাসবিহারী বসুর মতো বাঘা বিপ্লবীদের মিলিত চেষ্টায় দ্বিতীয় সিপাই বিদ্রোহের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।বিপ্লবী রাস বিহারী বসু ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। এদিকে ১০ সেপ্টম্বর ১৯১৫ সালে বালেশ্বরের যুদ্ধে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘাযতীন শহীদ হন।বাংলার মুক্তি সূর্য যেন অচিরেই অস্তমিত হতে লাগলো। তার মৃত্যুতে বাংলার বৈপ্লবিক কর্মসূচিতে অভাবনীয় ক্ষতি পূরণ হয়ে গেল। তবে তার সাথীরা শহীদ বাঘা যতীনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সেই গুরুদায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন।

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত জার্মান যোগাযোগ এবং তারপর পর বিভিন্ন ঘটনার খবর পেয়ে সেই সম্পর্কে পুলিশ কলকাতার শ্রমজীবী সমবায় নামে এক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি করতে যায়। তল্লাশির সময় এই প্রতিষ্ঠান এক সক্রিয় বিপ্লবী অমর চ্যাটার্জী পলাতক হন, কিন্তু সঙ্গী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতার হন। বৈপ্লবিক শিক্ষা গুরু অমর চ্যাটার্জী ও তার কয়েকজন সহকর্মীকে প্রায় দুই মাস হুগলির রিষড়াতে আশ্রয় দিয়ে রাখলেন ননীবালা দেবী। রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতারের সময় "মাউজার" পিস্তল কোথায় রেখে গেছেন সে কথা দলকে জানিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু সে সময় পিস্তলটা  খুব জরুরি ছিল। কিন্তু কিভাবে এর সন্ধান জানা যাবে, তা নিয়ে চলল বিপ্লবীদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সুস্থ সমাধানের পথ বেরিয়ে এলো। জেলে ঢুকিয়ে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে পিস্তলের কথা জানতে চললেন বাংলার দুঃসাহসী এক বিধবা ননীবালা দেবী। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার রক্তচক্ষু কে উপেক্ষা করার মত দুঃসাহস কোথায় ছিল নারীদের ছিল না। কিন্তু বিধবা ননীবালা দেবী সমাজের নিয়মের গণ্ডি শিকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাথায় সিঁদুর পরে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেলে দেখা করতে এলেন।১৯১৫_১৬ সাল নাগাদ এক বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে এমনভাবে সিঁদুর পরাটা ছিল মৃত্যুর সমান। তিনি জানতেন যদি ধরা পড়েন, সমাজ তাকে মেনে নেবে না। কারণ তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার সাথে বর্তমান সমাজের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক।সে ভয় কে তিনি আমল দেননি। বিধবা ননীবালা শতবার সাজে সিঁদুর পরে এক গলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জেলে। পুলিশের চোখ এড়িয়ে পিস্তলের সন্ধানে নিয়ে বেরিয়ে এলেন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে।এমন দুঃসাহসিক কাজ বর্তমান সময়ের নারীরা করতে পারবে? তিনি সেখানের বিধবা মহিলা হয়েও করেছিলেন শুধুমাত্র দেশের জনগণের স্বার্থে। তবে এ মিথ্যা বেশিদিন চেপে রইল না। সত্য সামনে এলো। পুলিশ অনেক পরে জানতে পারল যে ননীবালা দেবী রাম চন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী নন। কিন্তু এটা জানতে পারেননি যে তিনি রিষড়া তে আশ্রয় দিয়েছিলেন। পুলিশের নজর এড়াতে ১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দননগরে পুনরায় বাড়ি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। তবে এখানেও বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে মহিলা না থাকলে ভাড়া পাওয়া যেত না। অগত্যা আবার ডাক পড়লো ননীবালা দেবীর। শুধু তাই নয় বিপ্লবী ভোলানাথ চ্যাটার্জী সাথে করে এনেছিলেন তার বড় পিসি কে। এই বড় পিসি ও ননীবালা দেবী দুটো আলাদা আলাদা বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন পলাতক বিপ্লবীদের। গোপনে সেই বাড়ি দুটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন পলাতক বিপ্লবী নেতা যদু গোপাল মুখার্জি,অমর চ্যাটার্জী,অতুল ঘোষ,ভোলা চ্যাটার্জী,নলিনীকান্ত কর বিনয় ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তীরা।এঁদের প্রত্যেকের মাথার দাম হাজার টাকা করে ঘোষণা হয়েছিল। সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে থাকতেন, আর রাতে  নিশাচরের  মত বেরিয়ে পড়তেন। পুলিশ এসে পড়ল এই পলাতক বিপ্লবীরা নিমেষেই ভ্যানিশ হয়ে যেতেন। এইভাবে চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি ও বিপ্লবীদের নিমেষে পালাবার পর ননীবালা দেবীকে চন্দননগরে রাখা নিরাপদ হলো না। কারণ সেই মুহূর্তে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছিল ননীবালা দেবী কে গ্রেফতার করার জন্য। তার বাবার সূর্যকান্ত ব্যানার্জিকে পুলিশ বালি থানাতে নিয়ে গিয়ে ১০ টা থেকে ৫ টা অব্দি বসিয়ে রেখে জেরা কত। ননীবালা দেবী কোথায় আছেন সেই খবর জানতে। একবার এদিক তো আবার অন্যদিক, এইভাবে পালিয়ে পালিয়ে চলতে থাকলো ননীবালা দেবীর জীবন। কিন্তু এবার সুযোগ এলো একটু অন্যভাবে। তাঁর এক বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্র কাজের জন্য যাচ্ছিলেন পেশোয়ার। সেই বাল্য বন্ধু দাদাকে অনেক অনুনয় করে রাজি করালেন বিপ্লবী ননীবালাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।পলাতক ননীবালা দেবী প্রবোধ মিত্রর সঙ্গে পেশোয়া তে চলে গেলেন।এক বিধবার জীবনে এটা ছিল এক দুঃসাহসিক অভিযান। কারণ যে সময় নারীরা ঘোমটা টেনে শুধুমাত্র সংসারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো, সে সময় এক বাঙালি বিধবা অচেনা এক পুরুষের সাথে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে চলে গেলেন লুকিয়ে থাকতে।

তিনি বেশিদিন এভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারলেন না। প্রায় ১৬_১৭ দিন পরে পুলিশ সন্ধান পেয়ে যখন ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে গেছে  পেশোয়ার, তখন তিনি অসুস্থ।এভাবে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে কলেরাতে আক্রান্ত হন।দুই থেকে তিন দিন সে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশ প্রথমে তার বাড়ি ঘিরে রাখে,পরদিন পুলিশি হেফাজতে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়।কয়েকদিন পেশোয়ার হাজতে রাখার পর একটু সুস্থ অবস্থায় তাকে নিয়ে আসা হয় কাশির জেলে।এরপর ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে।

কাশিতে নিয়ে আসার কয়েক দিন পরে জেলগেটের অফিসে এনে কাশির ডেপুটি পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি তাঁকে জেরা করত। কিন্তু ননীবালা দেবী কিছুতেই মুখ খুললেন না। সব অস্বীকার করতেন, বলতেন তিনি কাউকে চেনেন না,কিছুই জানেন না। এরপর শুরু হতো জিতেন ব্যানার্জীর তুই_তু কারীর অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ।ননীবালা দেবী চুপচাপ, নিরব দর্শকের ভূমিকা অবতীর্ণ। এতদিনে পুলিশ সুপারেনটেনডেন্ট বুঝতে পেরে গেছে এই মহিলা অতি সহজেই দমবার পাত্রী নয়। একদিন দুইজন জমাদারনী ননীবালা দেবী কে একটা আলাদা সেলে নিয়ে গেল। দুজনে মিলে তাকে জোর করে ধরে মাটিতে ফেলে দিলো। তারপর শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে দু বাটি লঙ্কা বাটা যৌনাঙ্গে প্রবেশ করানো হয়েছিল।তিনি চিৎকার করতে লাগলেন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মারতে লাগলেন।এক পাষণ্ড,নির্মম,ভাষাহীন অত্যাচার করা হলো তার সঙ্গে। যা বর্ণনা করার ভাষা বোধহয় নেই বললেই চলে।এরপর আবার তাকে নিয়ে আসা হতো জেলগেটের অফিসে জিতেন ব্যানার্জির কাছে। শুরু হতো আবার জেরা করা। এমন অকথ্য অত্যাচার,শরীরের ভেতর লঙ্কার জ্বালা, তবুও তার মুখ থেকে একটা কথা জানতে পারলেন না।এরপর কাশির জেলে যেখানে মাটির নিচে একটা খুবই ছোট্ট পানিশমেন্ট সেল অর্থাৎ শাস্তি কুঠুরি ছিল। তাতে দরজা ছিল একটাই কিন্তু আলো-বাতাস প্রবেশ করার জন্য সামান্য ঘুলঘুলি ও ছিল না। সুপারিনটেনডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি নির্দেশে তিন দিন প্রায় আধঘন্টা সময় ধরে ননীবালা দেবী কে ওই আলো-বাতাসে অন্ধকার ছেড়ে তালা বন্ধ করে আটকে রাখত। যা ছিল জীবন্ত অবস্থায় কবরখানার যন্ত্রণা ভোগ করার সমান। তবুও তার মুখ খোলাতে পারল না। কিছুদিন পর ওই বন্ধ ঘরে আধ ঘন্টারও বেশি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তাকে বন্ধ করে রাখা হল। শুরু হলো নির্মম মানসিক অত্যাচার, স্নায়ু শক্তিকে চূর্ণ করে দেওয়ার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। তালা খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে আছেন মাটিতে 

অগত্যা হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিশ ননীবালা দেবী কে কাশি থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে এলেন।১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশ নের ধারা প্রয়োগ হলো তার বিরুদ্ধে। প্রথম মহিলা রাজবন্দী হিসেবে তিনি এলেন প্রেসিডেন্সি জেলে সেখানে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলেন জেল কর্তৃপক্ষ এমনকি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও তাকে অনুরোধ করে খাওয়াতে পারলেন না। ননীবালা দেবী বললেন বাইরে গেলে খাবেন তাই সেই মত প্রতিদিন সকাল ন'টায় তাকে নিয়ে যাওয়া হতো গোয়েন্দা অফিসে।সেখানে আই.বি পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট গোল্ডি তাকে জেরা করত।

জেরা ঠিক যেমনভাবে চলত_আপনাকে এখানেই থাকতে হবে তাই বলুন কি করলে খাবেন?

_যা চাইবো তাই করবেন?

_করব।

_আমাকে বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্ত্রী সারদা মায়ের কাছে রেখে দিন তাহলে খাবো।

গোল্ডি শয়তানি হাসি লুকিয়ে বলে আপনি দরখাস্ত লিখে দিন।

ননীবালা দেবী তৎক্ষণাৎ একটা দরখাস্ত লিখে দিলেন। আইবি পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট গোল্ডি কাগজের টুকরো ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে কাগজের টুকরিতে ফেলে দিল।সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ আহত পাখির মতো লাফিয়ে ওঠে ননীবালা দেবী ,সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির  মুখে। বললেন_ছিঁড়ে ফেলবে তো আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিলেন কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোন মান সম্মান থাকতে নেই? দ্বিতীয় চড় মারার আগেই অন্য সিআইডি-র তাকে ধরে ফেলে। ভাবতে অবাক লাগে প্রায় ১০০ বছর আগের  এক বাল্য বিধবা মহিলার দুঃসাহস দেখে। কারণ বর্তমানে সভ্য শিক্ষিত সমাজের অর্জুন আজ নির্বিকার,অবিচল। অন্যায় দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকে।

জেলে থাকাকালীন একদিন সিউড়ির দুকড়িবালা দেবীর  সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সকলের কাছে তিনি মাসিমা নামে পরিচিত ছিলেন। দুকড়িবালা দেবী ছিলেন ভারতে অস্ত্র আইনের সাজা প্রাপ্ত প্রথম মহিলা বন্দি। ননীবালা দেবী জানতে পারলেন সিউড়িতে দুকড়িবালা দেবী বাড়িতে সাতটা মাউজার  পিস্তল পাওয়ার অপরাধী দুকড়িবালা দেবী দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড সাজা ঘোষণা হয়েছে। রাখা হয়েছিল তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদিদের সঙ্গে যার অর্থ হলো চোর ডাকাতের সাথে একি সেলে। অথচ রাজবন্দী হলে আলাদা সেলে রাখা হয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়নি, অসম্ভব খাটানো হত। প্রতিদিন প্রায় আধ মণ ডাল ভাঙতে দেওয়া হতো। এভাবে যে কোন মত এই সমস্যার সমাধান হবে না সেটা বুঝতে পারলেন ননীবালা দেবী। তাই মতলব স্থির করে ফেললেন  অনশন করবেন। অনশনের ১৯_২০   দিন চলছে, আবার ম্যাজিস্ট্রেট অনুরোধ করতে

এলেন।

ম্যাজিস্ট্রেট বললেন_আপনাকে তো এখানেই থাকতে হবে। কি করলে খাবেন বলুন?

ননীবালা দেবী জবাব দেন_আমার ইচ্ছা মত হবে?

_হ্যাঁ হবে।

_তাহলে আমার রান্না করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণকন্যা চাই,দুজন ঝি চাই।

ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞাসা করলেন_ব্রাহ্মণ কন্যার কেউ আছেন এখানে?

ননীবালা দেবী বললেন_আছেন দুকড়িবালা দেবী।

_আচ্ছা তাই হবে।

এরপরের সমস্ত নতুন বাসন-হাঁড়িকুড়ি। ২১ দিনের পর ভাত খেলেন সেই অসামান্য দৃঢ়চেতা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। সেই সাথে দুকড়িবালা দেবী কে ও পরিশ্রম এর হাত থেকে মুক্তি দিলেন। এই ভাবে দুই বছর বন্দী জীবন কাটিয়ে দিলেন। ১৯১৯ সালে অবশেষে ননীবালা দেবীর মুক্তির আদেশ এল। জেল থেকে ফিরে এলেন তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। অথচ সেখানে ঠাঁই পেল না দেশের অন্যতম বিদ্রোহিনী নারী ননীবালা দেবী। প্রথমেই ছিল পুলিশের ভয়, দ্বিতীয় ছিল সামাজিক। তৎকালীন সমাজের এক বিধবা  হয়ে শাঁখা-সিঁদুর পরে পর স্ত্রীর সাজা, এরপর পর পুরুষের সাথে এক ঘরে থাকা বা পেশোয়া তে যাওয়া, এসব কারণেই সমাজ তাকে মেনে নেয় নি। শুধু সমাজ নয়, তাকে গ্রহন করেনি নিজের বাড়ির লোকজন আত্মীয় পরিজনরা।অন্যদিকে তার নিজস্ব বিপ্লবী সংগঠন বা চেনাচেনা সবই ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে শেষ হয়ে গেছে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমত অবস্থায় উত্তর কলকাতার এক বস্তিতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়। আবার কারও মতে কোন পূর্ব পরিচিত অনুগ্রহে একটি কুঁড়ে ভাড়া করেছিলেন হুগলিতে। সুতো কেটে রান্নার কাজ করে কোনমতে আধপেটা খেয়ে দিন কেটে ছিল এক নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমী র।সমাজ এবং নিজের আত্মীয় স্বজনদের উপরে রাগে দুঃখে অপমানে তিনি সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, নিজেকে একপ্রকার লুকিয়ে রাখলেন। পরবর্তীকালে কোন দেশ নেতাদের কাছে গেলেন না। যে মহিলা নিজের জীবনের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে দেশের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন, তিনি কোথায় গেলেন সে ব্যাপারে কেউ কোনো খোঁজখবর করল না।

সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার হল দেশ স্বাধীন হওয়ার কুড়ি বছর পরে ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান।যে দেশের জন্য তিনি এমন নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছিলেন,স্বাধীনতার ৭৪  বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তিনি বঞ্চিত রয়ে গেলেন। বেঁচে থাকাকালীন ও এমন দেশ প্রেমের খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজন টুকরো কেউ মনে করল না। ইতিহাস তো দূরের কথা, তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাকে মনে রাখেনি। একটা তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, কোন এক বিপ্লবী সাথীর চেষ্টায় অথবা পরাধীন জেলের খাতায় নাম থাকায় বেঁচে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের দশকে ৫০ টাকা পেনশন পেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে, যদিও তার নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে স্বদেশীদের নিয়ে তৈরি একটি বাংলা সিনেমায় (সিনেমার নাম  ৪২) তাকে নিয়ে কিছু দৃশ্য ছিল, পাওনা বলতে শুধু এই টুকুই। বিধবাদের সধবা সাজতে নেই, দেশের স্বার্থে সধবা সেজেছিলেন, ছোট্ট কুঠুরি পানিশমেন্ট ছেলে শ্বাস নিতে না পেরে বহুবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, দুই বাটি লঙ্কা বাটা তার শরীরের গোপন অঙ্গে প্রবেশ করানো হয়েছিল,কেমন নির্মম অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেও বাংলার কোথাও তিনি সম্মানের সাথে জায়গা পেলেন না। স্বাধীন ভারতের বুকে এক নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিকে অনাহারে কাটাতে হয়েছিল বহুদিন। যে দেশের মানুষ স্বাধীনতা প্রেমীদের সম্মান দিতে শিখেনি, স্বাধীনতা প্রেমীদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেনি, সে দেশের ভাগ্যে চরম দুর্দশা ছাড়আর কিছুই থাকতে পারেনা। যে দেশের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে এমন বহু নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীদের কে ইতিহাসের পাতা থেকে বঞ্চিত করেছে সে দেশের ইতিহাস শুধুমাত্র মিথ্যা ছাড়া আর কি বা শিক্ষা দিতে পারে। আমরা যদি ইতিহাসকে একটু উপলব্ধি করার চেষ্টা করি, তাহলে বুঝতে পারবো প্রকৃত ইতিহাস ইতিহাস থেকে এতদিন আমরা বঞ্চিত হয়েছি। আমরা এমন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীদের দেশপ্রেমের ইতিহাস জানার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ইতিহাসের পাতায়়় তাদের এতটুকুু সম্মান প্রদর্শন করার প্রয়োজনটুকুও বোধ করেননি কেউ।

এরই কারণে স্বাধীনতা লাভের ৭৪ বছর পরেও ভাবতে বাধ্য হই,সত্যিই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম তো?কারণ স্বাধীনতার এত বছর পরেও এ ভারতবর্ষের এক শ্রেণীর বর্বর মানুষ আজও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেনি,দেশপ্রেমীদের সম্মান করতে  শেখেনি,দেশের পতাকাকে অবমাননা করতে শিখেছি, নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।আজও ভারতবর্ষে উলঙ্গ জারোয়াদের দেখতে বাইরে থেকে লোকজন আসে।যে  ভারতবর্ষের বুকে মানুষ এখনও অসভ্য ও উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ায়, সেই ভারত কে কিভাবে বলবেন,সভ্য দেশ।

অথচ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রী জেল খাটে।শুধু তাই নয়,জেল খেটে আসা নেতা মন্ত্রীদের জন্য ফুলের মালা নিয়ে বহু মানুষ জেলের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। তাদের নামে স্লোগান দেওয়া হয়,জয়ধ্বনী দেওয়া হয়। মূর্খ ও অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতা মন্ত্রী হয়ে যায়।গুন্ডা মস্তানদের হাতে চলে যায় সমাজের লাগাম। বিবেকবান,বুদ্ধিজীবী,শিক্ষিত যুব সমাজ মূর্খের মিছিলে রাজনৈতিক পতাকা নিয়ে পা মেলায়। মৃত্যুর পরে ও সেই  সব অযোগ্য নেতা-মন্ত্রীদের মূর্তি স্থাপন করা হয়।এখন তো আবার পশ্চিমবাংলায় ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব করে, কিংবা পরকীয়ায় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে মৃত্যু হলে আঞ্চলিক দলগুলির কৃপায় তাদের কপালে ও শহীদ তকমা জুটে যায়। মোড়ের মাথায় বেশ ঘটা করে তাদের মূর্তি ও বানানো হয়।এসব নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনা।অথচ প্রকৃত দেশপ্রেমীদের মূর্তি বা একটা ফুলের মালা তো দূরের কথা, জীবিত অবস্থায় দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান কেউ করে দেয় না। এভাবেই অবহেলায়,নীরব অভিমানে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী পৃথিবী ছেড়ে ছিল। তবে সমাজব্যবস্থা চলবে কালের নিয়মে,স্বার্থবাদী মানুষ থাকবে,আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গকারি নেতা মন্ত্রী থাকবে, ধর্ষক বিধায়ক থাকবে,তবুও তাদের মধ্যে থেকে খুঁজে নিতে হবে,নেতাজি,বিবেকানন্দ,বিদ্যাসাগর, ভগৎ সিং,ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা,ননীবালা  দেবী'দের।যাঁরা সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শুধুমাত্র দেশের মাটিকে আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন দেখতে থাকবে।


 


আজকের নারী

সোমা দে


বিভেদটা সেযুগেও ছিল আজও আছে তবে তুলনামূলকভাবে কম হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। সমাজ যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সেখানে নারীদের খানিকটা লড়াই করেই যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে হবে সেটা স্বাভাবিক। শুধু ঘরের কোণে ভয়ে , লজ্জায় লুকিয়ে থাকার অন্তর্মুখী প্রবণতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে আজকের নারীরা বহির্মুখী হয়েছে। শারীরিক কিংবা মানসিক দিক থেকে পুরুষের তুলনায় দূর্বল বলে পিছিয়ে রাখা যায় না আজ আর কোনকিছুতেই। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে অর্থাৎ ঘরে বাইরে নারীরা সমান তালে সামলে নিচ্ছে সবটা। মহাকাশ থেকে মহাসাগরের গভীরে নারীরা নিজেদের বিচরণের পথ প্রশস্ত করে চলেছে ক্রমাগত।


সবচেয়ে বড়ো কথা লিখতে ও পড়তে শিখে গেলে জীবনই আমাদের অনেকটা সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি দেয় শিক্ষা। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন সরকারিভাবেও যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অক্ষর জ্ঞানের সাথে সাথে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কর্মশালার আয়োজন করে নারীদের নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা এখন রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নারীদের সুরক্ষা দিতে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে যাতে স্বাবলম্বী হবার পথে কোন বাঁধা না এসে দাঁড়াতে পারে , এই সাপোর্টটা কয়েক বছর আগেও নারীদের ছিল না।


ভারতবর্ষে প্রায় সকল পেশাতেই আজকাল নারীরা কর্ম কুশলতা প্রমাণের সুযোগ পান। রাজনৈতিক , প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন আজকের নারীরা।কিন্তু কিছু কিছু দেশে নারীদের ওপর অহেতুক ফতোয়া জারি করে তাদের প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে কূটনৈতিক চক্রান্ত করে।


তা সত্ত্বেও আজকের তারিখেও যে নারীদের ওপর অকথ্য স্বৈরাচারী আচরণ আমাদের সমাজে একদম হচ্ছে না তা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিদিনের খবরের কাগজে নারীদের ওপর ঘরোয়া হিংসার প্রতিবেদন চোখে পড়ে। আসলে নারীরাও পুরুষের ন্যায় মানুষ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা , ভালোবাসা ও সম্মানের বীজটা হয়তো পুরুষের মনে শিশু অবস্থাতেই পুঁতে দিতে হয় আর এই কাজ একমাত্র সম্ভব পিতা-মাতা ও পরিবারের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শৈশবে মা সহ পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যদের প্রতি অসম্মান দেখে বড়ো হতে থাকলে তারা ভবিষ্যতে অন্য নারীদেরও যথাযথ সম্মান করে উঠতে পারে না এবং তাদের হিংস্র ও আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ পায়। অতএব গোঁড়াতেই যদি সঠিক পরিমাণে জল দেয়া যায় তবেই সুস্থ সমাজ নামক মহীরুহের শাখা প্রশাখা বিস্তার করবে দিক দিগন্তে। যেখানে নারী পুরুষ উভয়ে সমানভাবে এগিয়ে যাবে। আরো একটি মূল কথা তারা যে উভয়েই একে অপরের পরিপূরক , একজন ছাড়া অন্যজনের সৃষ্টিই অসম্ভব। 


শুধুমাত্র নারী কিংবা পুরুষ তা হয়না কখনোই তাই নারীরা যাতে পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে না পরে সেদিকে লক্ষ্য রাখা সামাজিক জীব হিসেবে সকলেরই কর্তব্য। সম্মানের বহিঃপ্রকাশ শুধু নারী দিবস উদযাপনের মঞ্চে করলে হবে না এর শুরুটা হতে হবে আমার আপনার ঘর থেকেই।



আজকের নারী 

ছবি ধর


আজকের নারী যখন সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এভারেস্ট শীর্ষে পা রাখছে, নারী আজ দক্ষ স্পেস ক্র্যাফট চালক, শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, খেলাধুলা, সব রকমের পেশায় সাফল্যের পরিচয় দিয়ে নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ প্রমাণ করেছে, তখনও আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষিত রক্ষণশীল সম্প্রদায় নারীর বিকাশকে সর্বপ্রকারে আঁধারে ঠেলে দিতে তৎপর। সর্বক্ষেত্রে নারীর বিস্ময়কর অগ্রগতি সত্ত্বেও নারীকে হেয় করার প্রবণতা, নারীনির্যাতন, লাঞ্ছনা বেড়েই চলেছে। নারীকে পণ্য হিসেবে তাকে ব্যবহার করা হয়। এখনো নারীর পরিচয় নির্ধারিত হয় পুরুষের উপভোগ্যতা সাপেক্ষে। আজকের নারী বিশ্বায়নের বহু বিপ্লবী নেত্রী রূপে প্রতিষ্ঠিত হলেও, তাকে দেখা হয় পুরুষের পরিপ্রেক্ষিতে- কুমারী হলে পিতৃপরিচয়ে, বিবাহিত হলে স্বামীর পরিচয়ে।  প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধের সমাজে নারীর পরিচয়ে নারীর নিজস্ব পটভূমিকা অত্যন্ত জরুরি এবং আবশ্যক। পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার পরাকাষ্ঠা থেকে নারীকে নিজের ক্ষমতায় ও দক্ষতায় পারদর্শিতা অর্জন করতে সকল স্তরের নারীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে আরও ব্যাপক ভাবে। 
                উনিশ শতকের সূচনাকালে এদেশে মেয়েরা ছিল শিক্ষার আলোক থেকে বঞ্চিত,বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কশূন্য,মানবিক প্রায় সমস্ত অধিকার থেকেই বঞ্চিত। আদিম যুগ থেকেই পুরুষ  শিশু ও পশু পালনে নারীকে গৃহবন্দী করে তার মস্তিষ্ককে বিকশিত হওয়ার পথ বন্ধ করাই ছিলো একমাত্র উদ্দেশ্য।

                কন্যাসন্তানের জন্ম পূর্ব ভ্রূণ হত্যা বা জন্ম পরবর্তী সময়ে গলা টিপে হত্যা করার ঘটনাও লক্ষিত হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের ভার সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় আজও অনেক ক্ষেত্রেই। ভালোভাবে কিছু বোঝার আগেই বিয়ে হয়ে যেত মেয়েদের। সরকারি আইনের ক্ষেত্রে বিবাহের বয়স সীমা নির্ধারণ করা সত্ত্বেও আজও অপরিনত মেয়ের বিবাহ দেওয়া হয়।পিতা মাতার আরো অনেক বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্র ও সমাজ পতিদের দৃষ্টি এড়িয়ে উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মেয়েরা সংসারের কাজের অবসরে কলম ধরতে শুরু করলো। তৎকালীন 'রাম সুন্দরীর' লেখায় আমরা বহু তথ্য পাই।  

                সভ্যতার পীঠস্থান ইংলন্ডে অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে-নারী শুধুমাত্র কলমের শক্তিতে সমাজ ও বিশ্ব ময়  বহু চর্চিত লেখিকা ওয়াল স্টোন ক্রাফ্ট  "এ ভিনডিকেশন অব দ্য রাইটার অব উওম্যান" এই বইতে তিনি সমাজের অবহেলিত নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে ব্যক্ত করেছিলেন।বহু সংঘর্ষ হয় বইটি নিয়ে,আমাদের সকলেরই হয়তো জানা।

                  বেদ পরবর্তী যুগে নারীর অবস্থার অবনতির প্রভাব পড়েছিল সর্বত্র। মনু সাহিত্যে, কৌটিল্যের' অর্থ শাস্ত্র ', বাৎস্যায়নের 'কামসুত্র', কালিদাসের নাটকে, বানভটের কাদম্বিনী ও হর্সচরিত হর্ষবর্ধনের 'রত্নাবলী ' বিভিন্ন গ্রন্থে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান সুস্পষ্ট হয়েছে।

                  সে সময় নারীদের কোন স্বাধীনতা ছিল না। বেদপাঠ, খেলাধুলা ছিলো নিষিদ্ধ। সতীদাহ প্রথার প্রকোপে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল নারী। রাজ পরিবারের পুরুষ বহু বিবাহ করে নারীর প্রতি মার ধোর নিত্য দিন অত্যাচারও করতো , বংশ রক্ষার চাবিকাঠি হয়ে ভারতীয় নারীর আত্ম মর্যাদা বলি দিতে হতো সেসময় কার রানী দেরও। সবচেয়ে জঘন্য ছিলো কুল জাত ও ধর্মীয় কুসংস্কারের দোহাই দিয়ে নাবালিকা শিশু কন্যার সাথে আশি বছরের বৃদ্ধের সাথে বিবাহ। সহমরণ ছিলো চরম  আর এক অভিশাপ। রাজা রামমোহন রায় তৎকালীন সমাজের বিপক্ষে আপ্রাণ চেষ্টা করেন সতীদাহ রোধে তিনি সফল হন। এর পর  ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন নিজ পুত্রের সাথে বিধবা বিবাহ দিয়ে। এর পরই ব্রাহ্ম সমাজের নারীরা সেসময় লেখা পড়া শুরু করে। বাংলা সাহিত্য ও ইংরেজি ভাষার বই পাঠ, গান শেখা শুরু করে ।

     উত্তর ভারতের ঝাঁসি ও মারাঠার রানী লক্ষীবাই দক্ষতার সাথে সন্তান পালন ও ইংরেজ দের বিরুদ্ধে প্রথম তরবারী তুলে ধরেছিলেন। সভা সমিতিতে বিভিন্ন আন্দোলনে পথ সভায় নারী সর্বাগ্রে আসেন তাদের শেষ সম্বল গহনা টুকু দিয়েও পরাধীন ভারতকে স্বাধীনতার গ্লানি মুছে দেন। প্রণম্য মাতাঙ্গিনি হাজরা ছিলেন অন্যতম। 

    প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সফলতায় শীর্ষে , পিটি ঊষা, সুনীতা উইিয়ামস, কল্পনা চাওলা, সানিয়া মির্জা, ঝুলন গোস্বামী, মিতালী রাজ, হিমা দাস, সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত, মেহবুবা মুফতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়েত্রী দেবী, মেরি কম প্রমুখের মতো যোগ্য নারীরা আজ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অণুপ্রেরণা।

    ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পাইলট শিক্ষক হয়ে আজও কোন কোন নারী অধিকার থেকে বঞ্চিত  নিজের পরিবারের লোকের কাছেই। সারাদিন কাজের পর স্বামী, পিতা অথবা অন্য কেউ তার মাইনের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ঠেক বা আড্ডায় বসে নেশা করে  মধ্য রাতে এসে বাড়ীর মেয়ে বউকে আজও অত্যাচার করে। নারী অধিকার পূর্ণতা পেতে আজও দেরী আছে। এখনও প্রয়োজনে শহর হোক বা গ্রাম নারী একলা রাতে বাড়ি থেকে বেড় হবার সাহস করে না।

     দেশ হোক বা রাষ্ট্র তখনই উন্নত হবে সেই দেশের নারী ও শিশু যখন সম্পূর্ন সুরক্ষিত । ভয় ও কুসংস্কারকে জয় করে ভারত সহ প্রতিটি রাজ্য থেকে ধর্ষক নিশ্চিহ্ন করতে হবে আগামীর নারীকেই।শক্তি সাহস আর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই নিজের অধিকার আর ব্যক্তি স্বাধীনতা মিলবে নচেৎ নয়। শিক্ষা দীক্ষাই একমাত্র মুক্তির পথ । 
     

 


 


আমার চোখে আজকের নারী 

সীমা  সাহা

পুরুষ  শাসিত সমাজে  নারীদের  যুগের  পর যুগ অসহ‌‌ অত্যাচার  সহ্য  করেই চলছে ।রামায়ন‌‌  মহাভারতের  যুগেও নারীদের  উপর অবিচার  অত্যাচারের  বিষয় জানা যায়।সভ্যতার  শুরুতে  নারী ছিল অবহেলিত ।আজ যুগের  অনেক  উন্নতি  হয়েছে ।জাতিগত উন্নতির  জন্য নারীরা  অগ্রনী  ভুমিকা  পালন  করে থাকে।

মেয়েরা আর ছেলেরা বাস করেন একই সমাজের ঘনিষ্ট অংশ হয়ে ।পাশাপাশি  দাড়ালেই দুর্দশা  অনিশ্চয়তার  আর  বিপদের  লড়াইয়ের সাথী। মেয়েদের  নিজেদের  আন্দোলন থাকে সেগুলো  একেবারে মেয়েদের  নিজেদের  সমস্যার  বিরুদ্ধে ।কিন্তু  সেখানেও প্রায়ই দেখা  মেয়েদের  সমস্যা  বলে  চিহ্নিত ।অনেকগুলো  বিষয় আসলে ‌সমাজের বৃহত্তর  সমস্যা ।মেয়েদের প্রতি সহানুভূতি  শূন্য  দৃষ্টিভঙ্গি  অসহিষ্ণুতা  মেয়েদের  সম্পর্কে আগ্রাসী  মনোভাব ।এসব থেকেই  মেয়েরা পরিবারের  ভেতরে  ও বাইরে  নানাভাবে  লাঞ্ছিত  হয়।বহুদশক আগেও মেয়েদের  শশুরবাড়িতে অনেক  লাঞ্ছনা  গঞ্জনা সইতে হতো।বিভূতিভূষণের  গল্পে  "পুঁইমাচা"  রবীন্দ্রনাথের নিরুপমা চলে  গেছেন পিতার না মেটাতে পারা পণের দায় মাথায়  নিয়ে ।বর্তমান  সমাজেও মেয়েদের  পণের জন্য শশুরবাড়িতে প্রাণ  বলি দিতে  হয় ।

বিশ্বজুড়ে  মেয়েদের  মাথায়  উঠেছে অনেক  উজ্জ্বল  শিরোপা ।পুরুষের  সাথে  কাঁধ মিলিয়ে অনেক  দুঃসাহসিক ‌কাজ করে  থাকে মেয়েরা ।আবার ‌নির্ভয়া ,মনীষা বাল্মিকী, কামদুনির  মতো  নৃশংস  হত্যা  কান্ড ঘটেই চলেছে ।

প়ৃথিবীর  বিভিন্ন  জায়গায় নারীরা বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত‌ হচ্ছে । আমাদের দেশেও "মিটু" আন্দোলন  করতে দেখা গেছে ।মহিলা  শ্রমিকরা আজও বিভিন্ন  কলকারখানা গুলিতে পুরষের সমবেতনের জন্য  লড়াই করে  যেতে  হচ্ছে । যে লড়াইয়ের জন্য ১৮৫৭সালে নারীদের প্রাণ  দিতে  হয়েছে, সেটা তো‌ আমরা  সবাই  জানি।পিতৃতন্ত্র  সমাজে  পিতৃতন্ত্রের  হাতই‌ শক্ত  করে  মেয়েদের  আন্দোলনকে দুর্বল  করে  দেয়।


 

নারী

অঞ্জলি দেনন্দী


ওগো নারী!

তোমার বর্ণনা কি করতে পারি?

অনন্তা, অশেষা তুমি।

তুমি ছাড়া অচল এ সৃষ্টিভূমি।

জীবনের সৃষ্টি তোমা হতে।

ধরাকে জীবিতা রাখো জন্মস্রোতে।

তুমিই তো অনন্যা তোমার পথে।

তুমি যে অটলা নিজ সপথে।

নারী, সে নিজেই উপমা তারই।

মহাবিশ্বের সীমাহীনা বিস্ময় ভারী।

Saturday, March 4, 2023



আনন্দ বসন্ত সমাগমে---"আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে..."

গৌতমেন্দু নন্দী



          অনুভূতির কোন রং আছে কি?  হয়তো আছে। আমাদের অবচেতনে।  যা  আমাদের মন,প্রাণ জুড়ে অব্যক্ত ভালোলাগার অনুভূতিতে সঞ্চারিত হয়।

      সেই "অলক্ষ্য রং"কখন যেন আমাদের অকারণের সুখে মাখিয়ে  দিতে অনুভূতির রং কে রংএর অনুভূতিতে জারিত ক'রে ফাগুনের  ভালোলাগার বাতাসে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। তখনই আমরা উচ্চারণ করি--" বসন্ত এসে গেছে..."।

      এইভাবেই শীত-গ্রীষ্মের মাঝে অব্যক্ত ভালোলাগার "অলক্ষ্য রং"প্রকৃতির অমোঘ আকর্ষণে অবচেতনে অনুভূতির রং নিয়ে আমাদের মনন-চিন্তনকেও রাঙিয়ে দেয়।

        অক্ষর চর্চায় কাব্য সাহিত্যেও তার প্রতিফলন ঘটে। তাকে উপেক্ষা করার সাধ্য আমাদের নেই। প্রকৃতির মাঝে আমাদের যাপনেও সেই রংকেই খুঁজে পাই--

  পাহাড়, অরণ্যের কোলে শিমুল, পলাশের রংএ।

      সেই আনন্দ-আতিশয্যে গেয়ে উঠি---" ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে..."

    বাসন্তীকার এই আবেগ, আনন্দ 

নিয়েই তখন উচ্চারণ করি ----

 " নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল..."

       এইভাবেই যেন "বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির 'পরে কী আদরে..."

       বসন্তের সব রং যেন এসে মিশে যায়"দোল","হোলি"র উৎসব রংএ---সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সংহতি,

বন্ধুত্বের রংএর উদযাপনেও। 



মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


 

আনন্দ বসন্ত সমাগমে

সম্রাজ্ঞী রায়

     

ভোরের স্নিগ্ধ আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘাসের ডগা । শিরশিরে বাতাস খেলা করছে আম্রমুকুলের সঙ্গে।  যেন বলছে, আমি এসেছি, আমি এসেছি। । ছুটে গেলাম কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে। সেও আজ  ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে জানান দিচ্ছে, আমি এসেছি আমি এসেছি।

 কত যে পলাশ ছড়িয়ে  আছে মাটিতে! ওরাও  এসেছে আজ রঙের উৎসবে শামিল হতে।

    একমুঠো পলাশ  তুলে নিই  দুটি হাতে । সাজব আমিও পলাশপ্রিয়ার মতো।  শিমুল গাছের কাছে যেতেই  ফুল ঝরিয়ে সেও রাঙিয়ে দিল আমার খোলা চুল। কোকিল তার মধুর সুরে বলছে যে ,ঋতুরাজ এসেছে। সঙ্গে, চারিদিক  রঙিন হয়ে বলছে, বসন্ত এসেছে; দোলের রঙে নিয়ে। 

     রাঙা আবির নিয়ে অপেক্ষা করছি তোমার জন‍্য! যে অপেক্ষা ছিল রাধার, যে অপেক্ষা ছিল মীরার, সেই  অপেক্ষা আমারও যে! তুমি  আসবে বাতাসের বুকে বাঁশি বাজিয়ে; যমুনায় নয়, আমার গঙ্গার জলে ঢেউ হয়ে ; তোমার জন্য এই প্রতীক্ষা তাই বসন্তকে সঙ্গী করে।  সাত রঙে আমাকে রঙিন করবে তুমি। 

বসন্তের সঙ্গে  তাই যেন আজ দোলের ছোঁয়া লেগেছে সমস্ত  প্রকৃতি জুড়ে।


মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


 

বেরঙ্গিন

দেবর্ষি সরকার


মানভঙ্গ রোডের উপর দিয়ে কোথাও যেতে হলে বা কোথা থেকে আসবার সময় মানভঙ্গ রোড ধরে যদি আসতে হয় তবে দেখতে পাওয়া যায় সেই রোডের একেবারে পূর্বপ্রান্তে একটি শিমুল গাছ আছে। বছরের বাদবাকি সময় টা গাছটি প্রায় সমভূমিতে ঠিক বৈচিত্রের স্মারক রূপে থেকে যায়। গ্রীষ্ম চলে যায় আপন খেয়ালে, বর্ষাও চলে যায় তার বিদ্যুতের ঢালী উজাড় করে দিয়ে, শরৎ এসে চলে যায় তার পেজা তুলোর মত মেঘকে সঙ্গী করে, হেমন্ত আসে, তবে ঠিক কর্পূরের গন্ধের মতন তার স্বভাব। তার স্পর্শ প্রত্যেক মানব তথা মানবী অনুভব করে ওঠার আগেই সে এসে চলে যায়। শীত কিন্তু বেশ জমকালো ভাবেই আসে। তখন বাদবাকি গাছগুলোর সাথে ওই শিমুল গাছটিও তার সমস্ত শুকনো হয়ে যাওয়া পাতা ঝেড়ে ফেলে শুকনো ডাল গুলিকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকে। তখন দেখলে মনে হয় গাছটির অন্তর আত্মা যেন ওই শুকনো ডালগুলিতেই সীমাবদ্ধ আছে। কিন্তু বর্তমান যুগে হঠাৎ বিদ্যা থেকে প্রেমের দেবী হয়ে পড়া বা সরস্বতী যখন তার সাদা রাজহাঁসে চেপে মর্তে আসেন ঠিক সেই সময় থেকেই যেন এ ধরনির প্রত্যেক নর,প্রত্যেক নারী,প্রত্যেক শিশু,প্রত্যেক জীবানু,প্রত্যেক কীট,প্রত্যেক পতঙ্গের পাশাপাশি প্রত্যেক গাছপালাও তাদের সমস্ত পুরাতন জরাজীর্ণতা ও রুক্ষতাকে ঝেরে ফেলে নতুন করে সজীবতায় স্নাত হয়। এ কেবল জলের ধারায় গাত্রখান নয়। প্রেম, রস, মাধুর্য ,সরসতা প্রভৃতি দ্রবাদির ধারায় স্নান। ঠিক সেই সময় হতেই ওই শিমুলগাছটিও আবার কচি পাতার সাথে বিন্দু বিন্দু রক্তবর্ণ শিমুলের কুড়িকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমরণ বসন্ত পর্যন্ত।


সেই শিমুল গাছটির হেলে পরা ডালটি যেখানে প্রায় মাটিতে মিশবে মিশবে করেও এখনো অধীর আগ্রহে বসে আছে ঠিক সেইখানেই তিন তলা প্রাসাদসম এক গৃহস্থের বাড়ি।বাড়িটি যত বড়ই হোক না কেন তাকে ভোগ করে কেবল মাত্র দুটি প্রানী। আসলে হয়তো আজকালকার ওই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান নির্ভরতা, প্রযুক্তি নির্ভরতা ও সহজ কৌশল কে প্রেম এইসব কারণেই মানুষ অন্য মানুষের প্রতি কেমন যেন বিতৃষ্ণা পরায়ণ হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন মানুষ নিজেকে এতটাই স্বাধীন ও স্বাবলম্বী ভেবেছে যে তাদের জীবনে অন্য কোন ব্যক্তিকে তারা স্বীকার করার তো দূরের কথা আপন মানুষরূপে গণ্য করা তাদের কাছে এক মস্ত অপরাধের সমান হয়ে পড়ে।

ওই বাড়িটির বাসিন্দা রক্তিম আর সুচেতনার মধ্যেও এমনটাই হয়েছিল বলা চলে। রক্তিম এর বাবা মারা গেছে আজ তার মোট মাট তিন বছর পূর্তি হল। রক্তিমের মা রক্তিম এর জন্ম দিতে গিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাই জন্ম হতে কোনদিন ওই মাতৃসুখ মন দিয়ে প্রাণ দিয়ে উপভোগ করা রক্তিমের কপালে জোটেনি ।তার ভাই বা বোন একটিও ছিল না। সেই ছোট থেকে যে মানুষটিকে মা ও বাবা উভয় চরিত্রে সে সব থেকে বেশি পেয়েছে সেই মানুষটি আজ থেকে তিনটি বছর আগে এমন এক বসন্তের রাতে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় ।ঠিক তারপর থেকেই প্রায় একাই হয়ে ওঠে সে।সকালে উঠে মুখ ধুয়ে কোনদিন চা খেতো আবার কোনদিন চা না খেয়ে ছুটে অফিস চলে যেত। অফিস ছুটির সন্ধ্যা তে হয়ে গেলেও বিনা কারণে রাত পর্যন্ত কোনদিন সমস্ত শহরটা ঘুরে অথবা কোনদিন গঙ্গার ধারে আত্মমগ্ন হয়ে বসে থেকে শেষ রাতে বারোটা বা একটা নাগাদ বাড়িতে এসে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিত বিছানায়। সেই সময় তাকে একটু যত্ন করা ,তার একটু খাতির করা, তাকে খেতে দেওয়া, তার সাথে দু একটি কথা বলার মত কোন মানুষ ছিল না। এইভাবে প্রায় দু বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর গত এক বছর হলো রক্তিম তার সেই সময়ের সব থেকে কাছের বন্ধু অফিসের কলিক স্বর্ণের একমাত্র বোন সুশিক্ষিত ,রুপশ্রী, শান্ত, ধীর অথচ তীক্ষ্ণ বুদ্ধিজীবী সুচেতনাকে বিয়ে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। সুচেতনা আসবার পর রক্তিমের হারিয়ে যাওয়া জীবনের সুখ ও শান্তি যেন পুনরায় ফিরে এসেছে। রক্তিম আজকাল সকালে উঠে না খেয়ে অফিসে যায় না ।অফিস থেকে সোজা বাড়িতে আসে। দুই বেলা ঠিকঠাক ভাবে খাদ্য খাবার গ্ৰহন করে ।সুচেতনা রক্তিমের ভেঙে যাওয়া সংসারটিকে পুনরায় যেন জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে।


কাল বসন্ত উৎসব। সুচেতনা ফেসবুক থেকে খোঁজ পেয়েছে যে তাদের বাড়ির কাছেই নাকি ওই তেমাথার মোড়ে যে মাঠটি আছে সেখানে নাকি এবার পৌরসভা থেকে প্রথমবারের জন্য বসন্ত উৎসব করতে চলেছে। তাই সকালবেলা রক্তিম অফিসে যাওয়ার সময় যখন নিজের জুতোতে পা গলাতে ব্যস্ত ছিল সেই সময় রক্তিম কে দেখতে পেরে সুচেতনা তাকে বলে ওঠে, শুনছিলাম কাল বসন্ত উৎসব আছে। তাই বলছি কি আমরা যদি যাইই সেই উৎসবে তাহলে কোন অসুবিধা হতে পারে তোমার? না মানে, আমি তো যাইনি কোনদিন এই সব উৎসবে তাই যদি নিয়ে যাও তাহলে একটু ভালো লাগতো।

রক্তিম ভালো করেই জানে সুচেতনা প্রথম থেকেই একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে‌। তাই রক্তিম মোটেই বিরক্তি প্রকাশ করে না ।রক্তিম সবটা ভালোভাবে বুঝে তার নিজের ঠোঁটের কোণে এক চাপা হাসি সামলে বলেছিল, আর যদি না যাই তাহলে?

সুচেতনা তখন বিরক্তির সঙ্গে বলেছিল, কাল তো তোমার অফিসে দোলের ছুটি ।তাহলে কেন যেতে পারবে না! চলো না মজা হবে। একটু দেখে আসতাম না হয়।

রক্তিম এবার ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে উঠে বলেছিল, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আগে সময়টা আসুক তারপর নিয়ে যাব এই কথা দিলাম । তাহলে এখন অফিসে যাই! চললাম।

সুচেতনা হেসে বলেছিল, আচ্ছা যাও। পাগল একটা।

আর পাঁচটা সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেরকমটা খুনসুটি নির্ভর কথাবার্তা হয় তেমনি সহজবোধ্য কথা দিয়েই দিনটা শুরু হয়েছিল রক্তিমা আর সুচেতনার। কিন্তু তারা কেউ জানতো না যে তাদের জন্য কি বিপদ লুকিয়ে আছে তাদের জীবনটাকে একেবারে বদলে দেওয়ার জন্য।


প্রত্যেক বছর দোল পূর্ণিমার দিন সুচেতনা বাড়িতে মা লক্ষ্মীর পূজা করে তাই এ বছরেও সে পুজো করবে বলে স্থির করেছিল।প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবকিছুই কাল রাতে রক্তিমকে দিয়ে আনিয়ে রেখেছিল । সুচেতনা প্রথম থেকেই আলপনা দিতে যাকে বলে সিদ্ধ হস্ত। তাই এক হাতে আলপনা দিতে দিতে আর এক খাতে ফোনটা নিয়ে সুচেতনা অফিসে থাকা স্বামীকে ফোন লাগালো। ওপাশ থেকে হ্যালো শুনতেই এপাশ থেকে সুচেতনা বলে উঠলো, শোনো একটা কথা ছিল।

রক্তিম বললো, হুম,বলো।

সুচেতনা বললো, ভাবছিলাম তোমাকে একটা হলুদ শাড়ি আনতে বলবো।

রক্তিম অবাক হয়ে বলল, হঠাৎ এই অসময়ে হলুদ শাড়ি?

সুচেতনা একটু হেসে বললো, স্কুল ইউনিফর্ম এর মত বসন্ত উৎসবেরও ইউনিফর্ম আছে ।সেখানে হলুদ শাড়ি ,পাঞ্জাবি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।

রক্তিম বলল, তাই নাকি?

সুচেতনা বলল, হুম।

রক্তিম এবার বলল, আর যদি হলুদ শাড়ি না নিয়ে আসি চলবে!

সুচেতনা বলল,না চলবে না ,তোমাকে নিয়ে আসতেই হবে।

রক্তিম বলল, যদি ভুলে যাই তাহলে?

সুচেতনা বলল, বাড়িতে আসলে মনে করিয়ে আবার পাঠাবো কিনে আনবার জন্য।

রক্তিম বলল,আর যদি বাড়িতেই না আসি! কোনদিন আর না যাই!

সুচেতনা বললো, তাহলে আমি একাই যাবো বসন্ত উৎসবে হলুদ শাড়ি চাইনা আমার। রাখি। এই বলে সুচেতনা ফোনটা কেটে দিলো। তারপর এক মনে আলপনা করতে করতে গান করতে লাগলো "ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে...."


সেই ঘটনার পর আজ সম্পূর্ণ একটা দিন অর্থাৎ চব্বিশ ঘন্টা কেটে গেছে। সুচেতনার ছেলেবেলা থেকেই অতি কঠিন রোগ আছে। যে মানুষকে সব থেকে বেশি কাছের বলে সে মনে করে তার কাছ থেকে কিছু চাইলে সে যদি না দিতে চায় তাহলে জোর করে কিভাবে তার কাছ থেকে সেই জিনিস আদায় করে নিতে হয় সে প্রক্রিয়া সুচেতনা ভালোভাবেই জানে। তাই সুচেতনা ওভাবে বলবার পর রক্তিম অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় কাছের বাজারের শাড়ির দোকানে। সেখান থেকে নিজে পছন্দ করে একখানা হলুদ ও লাল রঙের জামদানি শাড়ি কিনে নিয়ে আসে সুচেতনার জন্য। তারপর তার বাড়ির কাছে যে উড়ালপুলটা আছে সেখানে আসতেই তার ক্যাবটি খারাপ হয়ে যায় ।তাই সেখানেই ক্যাবের মালিককে তার ভারা মিটিয়ে বাকি অল্প পথটুকু রক্তিম পায়ে হেঁটেই আসছিল।কিন্তু বাড়ির কাছে আসতেই ঘটে গেল মহাবিপদ। সুচেতনা সবে মাত্র পুজো সেরে উঠেছে। অমনি দুম করে একটি শব্দ সুচেতনার কানকে যেন ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল। সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে নিচে দাঁড়াতেই যা পরিস্থিতি তার চোখে দৃশ্যের মতো ফুটে উঠলো তা তার পক্ষে মেনে নেওয়া ছিল অতি অলিক ব্যাপার। যে মানুষটির সাথে একটু আগেই সে কথা বলল সেই মানুষটাই এখন চিত হয়ে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে রাস্তার মাঝে, সমস্ত রাস্তা ভেসে যাচ্ছে তার লাল রক্তে।তারপর সুচেতনার কিছু মনে নেই ।যখন তার জ্ঞান ফিরলো সে দেখতে পেলে সকলে সবেমাত্র রক্তিমের মৃতদেহটা কাঁধে নিয়ে শ্মশানের দিকে নিয়ে গেল। কি হতে কি হয়ে গেল তার জীবনে!

দলে দলে মানুষ হলুদ সাজে সেজে সেই রাস্তা দিয়ে বসন্ত উৎসবে যাচ্ছে যে রাস্তায় রক্তিমকে কাল বিকেলে পিকআপ ভ্যান পিষে দিয়ে চলে গিয়েছিল। সেই শিমুল গাছটার ধারে যে জানালাটি আছে সুচেতনার বাড়িতে ঠিক সেইখানেই এসে বসেছিল সে। হঠাৎ এক রক্তিম শিমুল ফুল গাছ থেকে ঝরে এসে পড়ল সুচেতনার পরনে থাকা সাদা থানটির উপর। বসন্ত সবাইকে রাঙিয়ে দিতে আগ্ৰহী। তার কাছে ভেদাভেদ নেই।


মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


পাড়ার কোকিল

অলকানন্দা দে


ভিতরে ভিতরে এই প্রবল বিশ্বাস

এখনো প্রকৃতি আছে, এখনো বসন্ত পার্কে ছাতে গাছে বারান্দায় জানালার সামনে সংসার পাতে!

কোকিলটা আশাবাদী! সব ভুলে বেঁচে থাকে প্রকৃতির টানে!

শুনি মন্দ ছাপিয়ে ভালোর ডাক অন্তরাল থেকে!

কিসের এত আশা ওর বুঝি না।

বুড়ো বটগাছ নেই দিগ্বিদিক ছোটা হাওয়া নেই

কেবল হাতুড়ির শব্দ বাজে, শূন্য করে দেয় মনটাকে!

তবু কোকিলটা ডাকে আকণ্ঠ প্রেম গিলে!

বলি, এই দালাল সাম্রাজ্যে যেখানে নির্মিতিমালার শিউরে ওঠা সভ্যতা রোদ্দুর মেরে শূন্যে একা সাঁতার কাটে, সেখানে সব খুইয়ে এত নির্ভুল সুর তুই কোথায় পাস্!

নাকি এ গতজন্মের ডাক। এসে পৌঁছল এই বেলা ক্যালেন্ডারের ফাল্গুনে।

কোকিলটা কোনো মন্তব্য করে না

ডেকে যায় একাগ্র চিত্তে।


সে কি পাখি, কেবলই পাখি?

শুধু ডেকে মরে দিন-দুপুরের অন্ধকারে!

হয়তো না, সে তোমার-আমার সুখের শব্দ! ভাবনাবিহীন চিত্তে ষোলআনা খাঁটি আদ্যন্ত সত্য সুর!

সাদা-কালো পাথুরে দেওয়াল, তবু মানুষের মনে ফুল ফোটে, কোকিল ডাকে!

অন্ধকার ঠেলে বেরোতে চায় স্বপ্নের চারা

অভ্রকুচি রোদ্দুরে সুন্দর একটা সকাল সমস্ত অসুখকে ছত্রখান করে ফোটে!

স্বপ্ন! স্বপ্নই তো শেষকথা দগ্ধ মনভূমির সূর্যদয়ে!



মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


 

রাঙিয়ে দিয়ে যাও!

দেবদত্তা বিশ্বাস


বামনহাট ইন্টারসিটি তখন হুহু করে ছুটছে তিস্তাব্রীজের উপর দিয়ে।সাঁঝবাতির রূপকথারা ঠিক গল্প হয়ে নেমে আসার আগের গোধূলি বেলায় আকাশ আজ পলাশ রঙে সেজেছে।রংয়ের আভায় আলোকিত ট্রেনের জানালার ধারে মুখোমুখি বসা দুই পিতার মুখ।সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে থলে ভরে আজ খুশি নিয়ে ফিরছে ওরা সন্তানদের জন্য।

  

 চাকুরিজীবী বাবার থলেতে লাল, হলুদ,সবুজ আবীরের ছড়াছড়ি।সাথে আছে রঙিন মিষ্টি।কাল যে হোলি।হকার বাবা থলি খুলে আরও একবার হিসেব মিলিয়ে নেয়।গাজর ,বরবটি, সীম,ফুলকপি, বাঁধাকপি।আজ থলে ভরা কত কি রঙিন মরশুমি সবজি!সাথে অল্প আঙুর আর আপেল।থলে দুটোর মুখ জোরে কষে বাঁধে দুই পিতা।পরস্পরের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসে।রং সবার জন্য।হ্যাঁ আজ বসন্ত!


মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


 

বসন্তের ছোঁয়া 

       সুব্রত দত্ত


    কলেজ জীবন বছর পেরিয়ে গেল পাপড়ির। তবুও আবীরকে দেখলে কেমন যেন হয়ে যায়। দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু তাকাতে লজ্জ্বা করে।  একসঙ্গে ছেলেমেয়েদের আড্ডা হয়। কিন্তু সেখানে আবীর থাকলে পাপড়ি সিঁটিয়ে থাকে। আবীর চলে গেলে পাপড়ির মুখে বুলি ফোটে। এই নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। মধুশ্রী একদিন বলে,

--- "আবীরকে তুই অ্যাভয়েড করিস কেন? খারাপ কিছু করেছে?" 

পাপড়ি জিভ কেটে বলে,

--- "না না, তা কেন? কিছু করে নি তো?"

দেবিকা হেসে বলে,

--- "ও কলেজের কত মেয়ের ক্রাশ জানিস? জিনিয়াস ছেলে একটা। আমি হ্যাংলার মত লেগে রয়েছি, তবুও পাত্তা দেয় না।" 

পাপড়ি দায়সারা ভাবে "হুঁ, চলি রে" বলে উঠে যায়।

রোজ আবীরকে দেখলেই পাপড়ির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, আর চোখ নামিয়ে নেয়। এভাবেই কেটে যায় কিছু দিন।


    পরের দিন দোলের জন্য কলেজ ছুটি। তাই আগের দিনেই হোলি উৎসব শুরু হয়ে যায় কলেজে। পাপড়ি কলেজের গেটের ভেতরে যেতেই সামনে এসে দাঁড়ায় আবীর। পাপড়ি কি করবে তা ভেবে উঠতে পারে না। শুধু বলে,

--- "কি হলো?"

    আবীর বলে,

--- "দেবো?"

    পাপড়ির অজানা আতঙ্কে তাকিয়ে বলে,

--- "কি"?

-- "শুধু কপালে একটা টিপ দিতে পারি?"

    চমকে ডাগর দু'টি চোখ নামিয়ে নেয় পাপড়ি। পড়ন্ত শীতেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে ওঠে। সে যেন অথৈ জলে পড়েছে! থার্মোমিটারে মাপলে নির্ঘাত জ্বর উঠবে 105 ডিগ্রি!

--- "কি হল, উত্তর নেই যে?" 

    আবিরের প্রশ্নে পাপড়ি মাথা নীচু করেই থাকে। তার ঠোঁট দু'টো কেঁপে ওঠে শুধু।

--- "ও, ইচ্ছে নেই তাহলে! ঠিক আছে, যাও। আমি জোর করবো না।" মনক্ষুণ্ণ হয়ে আবীর বলে। 

--- "না!" পাপড়ি আঁতকে উঠে বলে, "তা নয়! ঠি-ঠিক আছে। দা - দিন।" 

আবীর জোরে হেসে বলে,

--- "দিন আবার কি? দাও বলতে পারো না?

--- "না, মানে - হ্যাঁ" মাথা নেড়ে বলে পাপড়ি।

আবীর তার নতুন প্যাকেট খুলে লাল আবীরের টিপ পরিয়ে দেয় পাপড়ির কপালে। পাপড়ি চোখ বন্ধ করে এক অচেনা শিহরণ অনুভব করে। আচমকা বহুকাঙ্খিত এক মনের মানুষের স্পর্শ! আবেশ জড়ানো কন্ঠে বলে, "হয়েছে?"

--- "না, হয় নি।"

    পাপড়ি বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে,

--- "তার মানে? আবার কি?"

     আবীর তার মুখটা পাপড়ির মুখের সামনে নামিয়ে এনে বলে,

--- "তুমি দেবে না আমায়?"

--- "আ-আমি যে আনি নি!"

--- "কি আনো নি?"

--- "আবীর!" বলেই পাপড়ি জিভ কাটে। এবার মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কানে শোঁ শোঁ শব্দ শুধু শোনে সে।

--- "এই যে, আবীর!"

    পাপড়ি দেখে, তার দিকে এগিয়ে দেয়া আবীরের হাতে সদ্য খোলা আবীরের প্যাকেট। পাপড়ি মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই প্যাকেটের দিকে ধীরে ধীরে হাত বাড়ায়। কিছুটা আবীর নিয়ে মাখিয়ে দেয় আলতো করে আবীরের কপালে, গালে। পাপড়ি রীতিমত কাঁপছে। এই প্রথম কোনও পুরুষকে স্পর্শের অনুভূতি পেলো সে। পুলকে যেন এক পরম সুখের শিহরণ বয়ে যায় তার শরীরে। আর আবীর পাপড়ির  নরম হাতের ছোঁয়ায় বিবশ হয়ে বলে,

--- "এবার তো চোখ খোলো।" 

    আবীরের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে পাপড়ি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় সরাসরি আবীরের চোখে। কিছু একটা বলতে যেতেই, হাততালি আর কলরবে হতচকিত হয়ে ওরা দেখে, সব বন্ধু বান্ধবীরা ওদের ঘিরে রয়েছে। সারাটা দিন বেশ আনন্দেই কাটে। বসন্তোৎসবের প্রাক মুহূর্তে প্রথম স্পর্শে ওদের দু'জনের জীবনের প্রথম বসন্তের রঙে রঙিন প্রজাপতি ডানা মেলে।



মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`


 

দোল

চম্পা বিশ্বাস 

                        

 আজ দোল পূর্ণিমা। সত্তর পেরোনো রাজীব বাবু প্রতিদিনের মতো আজও সকালে পূজাপাঠ করে , চায়ের পর্ব শেষে বারান্দার ইজি চেয়ারে এসে বসেন। এখান থেকে বাইরের রাস্তা , মাঠ সব পরিষ্কার দেখা যায় । সকালের বেশ কিছুটা সময় তিনি এখানেই কাটান। খবরের কাগজ পড়া , বারান্দার টবে থাকা গাছগুলোর পরিচর্যা 

 করা , গান শোনা ও মাঝে মাঝে গলা মেলানো -- সবই চলে । স্ত্রী অমলার মৃত্যুর পর আজ প্রায় পাঁচ বছর হল এটাই তার রুটিন। 

               ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি । বেশ কিছু ছেলেমেয়ে সুসজ্জিত হয়ে রাস্তা দিয়ে চলেছে , হয়তো বসন্ত উৎসবে যোগদানের জন্য--- মনে মনে ভাবেন তিনি ।                স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে পুরোনো দিনের কথা । বিশ্ব ভারতীতে পড়বার সময় দোল উৎসবে অংশগ্রহণ করা ছিল তাদের কাছে খুবই আনন্দের। বসন্তের গানের ডালি নিয়ে সকলের দোল উৎসব উদযাপন-- সে এক অপূর্ব স্মৃতি । এর জন্য অনেক আগে থেকেই চলতো তাদের রিহার্সাল। বিশ্ব ভারতীর পাঠ শেষ করেও বেশ কয়েকবার তিনি শান্তিনিকেতনে গেছেন এই দোল উৎসবে। আজ সব অতীত। তিনি আপনমনে গেয়ে ওঠেন---- " ওরে গৃহবাসী , খোল্ দ্বার খোল্ । "  তার এই গানের সুরে ছেলে , বৌমা আর ছোট্ট নাতনি তিন্নি এসে গলা মেলায় । থালায় রঙবেরঙের আবীর নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে চারপাশে সকলে গোল হয়ে বসে চলে গানে গানে বসন্ত উৎসব উদযাপন। 


মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা 

'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`