Thursday, April 20, 2023

 

।পত্রিকা পরিচিতি 





লোকমানস


দেবাশিস ভট্টাচার্য সম্পাদিত `লোকমানস` নতুন সংস্করণ ৪র্থ সংখ্যা, মার্চ ২০২৩ পত্রিকাটি নিঃসন্দেহে সংগ্রহে রাখবার মতো। এই সংখ্যায় এগারোটি প্রবন্ধ সহ রয়েছে অনুবাদ গল্প, কবিতা, নিবন্ধ, অনুগল্প, ভ্রমণ, মুক্তগদ্য, নাটক, আঞ্চলিক ভাষার কবিতা, সাক্ষাৎকার, বই আলোচনা ইত্যাদি। দুশো-সাত পাতার পত্রিকাটির প্রচ্ছদ করেছেন  প্রশান্ত সরকার। বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল কবি কমলেশ রাহাকে নিয়ে একটি ছোট্ট স্মরণ।

শ্রদ্ধেয় অর্ণব সেন, প্রমোদ নাথ, ডঃ দীপক কুমার রায় প্রমুখ প্রখ্যাত প্রাবন্ধিকদের পাশাপাশি তপোধীর ভট্টাচার্য, বিজয় দে,  রানা সরকার, বেনু সরকার, দেবজ্যোতি রায় প্রমুখের কবিতা পত্রিকার বড় সম্পদ। অবশ্য প্রবন্ধ ও কবিতার সূচিতে আরও অনেকেই আছেন যাঁরা যথেষ্ট পরিচিত। অপূর্বকুমার চক্রবর্তী, শুভময় সরকার, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য প্রমুখেরা গল্প বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছেন। গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের ভ্রমণ, শ্যামলী সেনগুপ্তর অনুবাদ কবিতা, দীপায়ন ভট্টাচার্যের নাটক নিঃসন্দেহে উপরি পাওনা। কোনও কোনও লেখক-কবির একাধিক সৃজনও রয়েছে। সম্পাদকের নিজের নেওয়া ডঃ অজয় মণ্ডলের সাক্ষাৎকারটি অভিনব। আছেন বহু কবি-লেখক। সকলের নাম আলাদা করে উল্লেখ করলাম না।  কবিতার ক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মের কবিদের লেখা পেলেও, অন্যান্য বিভাগে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব তুলনায় কম। 

`কমপ্লিট ম্যাগাজিন` বলতে যা বোঝায় `লোকমানস` সেটিই। সম্পাদকের আন্তরিক প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। পত্রিকার মুদ্রণ ঝকঝকে। কাগজ যথেষ্ট ভাল। বাঁধাই চমৎকার। আগামীতে লোকমানসের হাত ধরে বহু লেখক উঠে আসবেন এই আশা রইল। 










 

দ্যুতি
 
আজিজুল হক সম্পাদিত `দ্যুতি' ইতিমধ্যেই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সাংস্কৃতিক চতুর্মাসিক এই পত্রিকার একাদশ বর্ষ প্রথম সংখ্যার বিষয়- ভাষা। শ্রদ্ধেয়  তপোধীর ভট্টাচার্য, সৌমেন নাগ, আনন্দগোপাল ঘোষ, রণজিৎ কুমার মিত্র, প্রমোদ নাথ প্রমুখ বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকদের লেখা সহ মোট ২৪টি প্রবন্ধ এই সংখ্যাকে সমৃদ্ধ করেছে। ভাষা শহীদ পট্টি শ্রীরামালু থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের ভারতবোধ ও মাতৃভাষা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব, আলিপুরদুয়ার জেলার লোকভাষা, ভাষার আধিপত্য ও বর্তমান সংকট ইত্যাদি নানা বিষয়ের প্রবন্ধগুলি পাঠকদের মুগ্ধ করে। 

ইমদাদুল হক মিলন, কৌশিক সরকার ও সঞ্জয় কুমার নাগের গল্প নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তাঁরা নিজেদের সুনাম বজায় রেখেছেন। আমিনুর রহমান, অম্বরীশ ঘোষ, শঙ্খনাদ আচার্য, বিপুল আচার্য, প্রাণজি বসাক, উত্তম চৌধুরী, কৃষ্ণা ব্রজবাসী, গীতাঞ্জলি দাসের কবিতাগুলিও ভাল লাগে। দিনহাটার বর্ষীয়ান ক্রীড়াবিদ চন্দন সেনগুপ্তের আত্মকথন এই সংখ্যার বিশেষ পাওনা। 

সম্পাদকীয় কলমে  `এদেশের কোন জাতীয় ভাষা নেই অথচ একটি বিষয়ে ভাষাকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে` বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছে তা অমূলক নয়। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে কমবেশি যুক্ত সকলে তো বটেই, এই ভয় কিন্তু আজ সচেতন সব মানুষকেই ঘিরে ধরেছে। সম্পাদক সঠিক বার্তা দিয়েছেন- `আমাদের মাতৃভাষার গৌরবকে যদি অম্লান রাখতে হয় তবে মাতৃভাষা বিষয়ক সচেতনতার প্রসার ঘটানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।`  

কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তর তাৎপর্যময় প্রচ্ছদে, সুন্দর মুদ্রণে `দ্যুতি` এই সংখ্যাতেও মননের ছাপ রেখেছে। 










খোলা চোখে 

নবপর্যায়ের দ্বিতীয় সংখ্যায় বিদ্যুৎ সরকার সম্পাদিত `খোলা চোখে' পত্রিকার থিম ছিল স্বাধীনতার ৭৫ বছর। সেই সূত্র ধরে বিকাশ চক্রবর্তী তুলে ধরেছেন `দেশভাগের উত্তরবঙ্গ ভাঙন জনিত সংকটের সাতকাহন`। ডঃ রাজর্ষি বিশ্বাস লিখেছে উত্তর স্বাধীনতা পর্বের জলপাইগুড়ি জেলার রাজনৈতিক আন্দোলনের চালচিত্র। শ্রদ্ধেয় আনন্দগোপাল ঘোষের পর্যবেক্ষণ হল স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরে উত্তরবঙ্গে জেলা-মানচিত্রের পরিবর্তন। আছেন অভিজিৎ দাশ, হরিপদ রায়, পামেলা সরকারের মতো বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকরা। বিদ্যুৎ সরকারের নিজের লেখাটিও মনোগ্রাহী।
 
সংস্কৃতি চর্চায় নাট্য ব্যক্তিত্ব দীপায়ন ভট্টাচার্যের `মালবাজারের নাট্যচর্চা` একটি দুরন্ত ডকুমেন্টেশন। অধ্যাপক জয়দীপ সরকারের সাময়িকী চিন্তার খোরাক যোগায়। দুর্নীতির ট্র্যাডিশন তাঁর কলমে বিদ্ধ হয়েছে। কালীকৃষ্ণ সূত্রধরের রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মাকে নিয়ে লেখাটিও অনন্য আলোকপাত।              

No comments:

Post a Comment