`প্রথম অভিযান যে পথে.....`
তাল সুপুরির গলি
চিত্রা পাল
তাল সুপুরির গলি এ নামটা আমার দেওয়া। এ রকম নামের
গলি বা পথ ভূ ভারতের কোথাও নেই। কোথাও না থাকলেও আমার মনে আছে, আর মন ভালো না
থাকলেই সেই পথে যেতে চাই। সেই ছোটবেলার কথা। তখন সবে একা বই খাতা নিয়ে স্কুলে
যাচ্ছি।বাড়িতে আমার খেলার সাথী আমার ঠিক পরের ছোট বোন আর ইস্কুলে আমার বন্ধু মীরা।
বাড়ির কাছেই ইস্কুল,একটুখানি রাস্তা, সমাজবাড়ির ঘাট পেরোলেই ইস্কুল।তখন আমাদের
প্রাথমিক স্তরের ক্লাস হোতো সকালে। যাবার সময়ে বাবা দাঁড়াতো, আর আমি ছুট্টে চলে
যেতুম। ফেরার সময় হোত মজা। তখন আমি আর একটা রাস্তা দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি যেতুম।
একদিন মীরা বললে, এই ওই দিক দিয়ে যাবি? আমার ও উত্সাহ। বললুম চল যাই। সেদিন কি
কারণে যেন এক পিরিয়ড আগে ছুটি হয়ে গিয়েছিলো। আমি আর মীরা দুজনে চললুম ওই ঘুরপথে।
ওই পথে যেতে পড়ে একটা তেলকল, সেখানে সরষে পেষাই হয়ে তেল হয়। সেটা পার হয়ে পুতালী দিদির
বাড়ি। পুতালি দিদি এখানকার হাসপাতালের নার্সদিদি। ছোটবড় সবায়ের পুতালি দিদি। তারপরের কথাটা বড় ভয়ে ভয়ে মনে করতুম, ওটা নিধি
পাগলির বাড়ি। যেই তেলকল পার হয়েছি, দেখি, পুতালী দিদি নার্সের সাজ পরে ওদের বাড়ি
থেকে বেরোচ্ছে। তখনই বুঝে গেলুম আমি বোধ হয়, নিধি পাগলির গলিতে এসেছি। ভয়ে মুখ
শুকিয়ে গেলো। এমন সময় শুনতে পেলুম, একটা বিকট বাজখাঁই চীত্কার। আর কানের পাশ দিয়ে
বেরিয়ে গেলো সাঁই সাঁই করে একটা বেগুনি। আমি খাবনি। দেখি চীত্কার করছে আর শিক
দেওয়া তালাবন্ধ দরজার ভেতর থেকে ওর সব খাবার এলমুনিয়াম বাটি থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে
ফেলছে। আমি মার মুখে শুনেছিলুম, এখানে একটা ভয়ংকর পাগলি থাকে, তার নাম নিধি পাগলি।
তাহলে এই বোধ হয় সেই। দুজনে দুজনকে জাপটে ধরে কোনরকমে চোখ কান বুজে দুর্গা নাম
জপতে জপতে পেরিয়ে এলুম জায়গাটা। আমি মীরাকে বললুম, আমি আর যাব না, চল বাড়ী যাই, ও
বললো এমা তালসুপুরি খাবি না? এই তো এইটুকুনই পেরোলেই। কোনরকমে ওখানটা পেরিয়ে বড়
রাস্তা পেরিয়ে উঁচু ঢিপিটায় উঠেই দেখতে
পেলুম, চারদিকে বনজঙ্গল, ঠিক তার মাঝখানে একটা ছোট পুকুর। পুকুরের চারধার ঘিরে আম
জাম কাঁঠাল বেল এসব গাছ আর তার সঙ্গে রয়েছে তিন চারখানা তালসুপুরি গাছ। এমনই তাল
গাছের মতো দেখতে, কিন্তু ওর পাতার ডগা কেমন সবুজ শিকলি ঝোলার মতো ঝুলছে। ওই তাল
গাছের ফল ছোট ছোট সুপুরির মত পেকে খসে পড়ে গাছের তলায়, সেইগুলো কুড়িয়ে খায়। আমি ও
খেলুম। তেমন আহা মরি কিছু নয় ,একটু কষটা কষটা মিষ্টি মিষ্টি। ওই দুপুরেও জায়গাটা
কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা। এই আমার প্রথম
অভিযান, কিন্তু সব মনে আছে , মনে তো থাকবেই কেননা মনে করে রাখতেই চাই যে।
No comments:
Post a Comment