`শাখাপ্রশাখার মতো পথ সে যে....`
সেই প্রিয় পথ
শুভেন্দু নন্দী
"মন এখানে রাখাল রাজা বাঁশি বাজায় গোঠে,
তারি সুরে পুব আকাশে চন্দ্র সূর্য ওঠে"
..সোনালী সেসব দিন। আমাদের নিবাস স্থলের নিকটেই ছিল সে রাস্তা। শহরের এক্কেবারে প্রাণ কেন্দ্রে ।জমজমাট ছিলনা তেমন সে শহর। রাস্তাও ছিলনা পাকা। খোয়া ভাঙ্গা। আর এটাই ছিল প্রধান রাস্তা। যাতায়াতও তার ওপর দিয়েই। রাস্তার একধারে ছিল প্রশস্ত,অবারিত মাঠ। তাতে অনেক উঁচু উঁচু গাছ। বর্ষার সময় জলে জলে থইথই করতো। আর শোনা যেত ব্যাঙদের গানের ঐকতান। স্কুলে যাবার ওটাই ছিল পথ। তখন শৈশবকাল। তাই সংকীর্ন ছিল গন্ডী। বাবা-মায়ের ছত্রছায়ায় ছিলাম তখন।
পড়াশোনাটাই ছিল একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। স্কুলে যেতে যেতে চোখে পড়ত রাস্তার ধারে সারি সারি বাড়িঘর -কোনওটা একতালা দালান,কোনওটা খড়ের-টিনের ছাউনি, দুর্বল কাঠামো, আর দোকানপাট, চায়ের দোকান, পান-মশলার ঘুমটি ঘর,মুদিখানা, সাইকেল-জুতো সারাইয়ের দোকান,কামারশালা,সেলুন ইত্যাদি। দু-একটা দৃষ্টিনন্দন বাড়িরও দেখা মিলত। স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত। বাড়িতে ছিল না বিজলী বাতি। ছিলনা ইলেকট্রিক পাখা। রাতে চলত হ্যারিকেন জ্বালিয়েই পড়া অগত্যা। স্কুলের পড়া শেষ করে আবার কলেজে যাতায়াত একই পথ ধরে । তবে যানবাহনের স্রোত বা জনসংখ্যা বেশী ছিলনা। আস্তে আস্তে সে চিত্র গেল বদলে। রাস্তা হল পিচঢালা। বন্ধু সার্কেল বৃদ্ধি পেল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুবান্ধবদের সাথে learned hobnob. সংস্কতিমনস্ক বলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়া-আসা সবই ঐ একই রাস্তা অতিক্রম করে। ঐ রাস্তাই তো এঁকেবেঁকে শাখাপ্রশাখার মতো গলি, ছোট গলি,উপগলি, চোরাগলি ইত্যাদির আকার নিয়েছে।
কলেজ পড়া শেষ করে অফিস পাড়ায় শুরু হোলো নিয়মিত যাতায়াত কর্ম সংস্থানের জন্য ঐ চিরচেনা সাধের প্রধান পথ দিয়েই আবার। "থাকবনা আর বদ্ধ ঘরে,দেখব এবার জগৎটাকে।" তাছাড়া, a rolling stone gathers no moss. চাকরী ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে করতে আর একটা বড় শহরে settled হোতো হোলো। নিজস্ব পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে এখানকার একটা রাস্তা দারুনভাবে প্রিয় হয়ে উঠলো আমার। দৈনন্দিন বাজার ও অন্যান্য আরও সাংসারিক প্রয়োজনের টুকিটাকিতে নিয়মিত হোলো শুরু এই পথে যাওয়া-আসা - সেই সঙ্গে অন্যান্য সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণার্থে। এভাবেই আজও চলছে। কিন্তু সেই পুরনো আমলের শহরের চির চেনা ও প্রিয় সেই রাস্তা -যে রাস্তা পদার্পনের মধ্য দিয়ে আমার শৈশব, কিশোর ও যৌবনকালেরঅনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে- তা কিছুতেই ভুলতে পারিনি আজও ।
No comments:
Post a Comment