Wednesday, July 2, 2025


 

বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ি সন্ধ্যায় ভ্রমণ

         কবিতা বণিক


বৃষ্টি! বৃষ্টি! বৃষ্টি! মেঘেরা জলের ধারা ঢালছে নানান ছন্দে। ঝিরঝির, ঝমঝম! নাচের তালের কত না শব্দ।

পথ, ঘাট সব ভেজা। যেদিকে তাকাই সবই রসময়। গাছেরাও হাওয়ায় দোল খেয়ে তাদের সমস্ত পাতার ফোঁটা ফোঁটা রসবিন্দু টুপটাপ ঝরিয়ে দেয়। সমতলের বৃষ্টিতে দেখি , মেঘ-হাওয়ার খেলা নানান ছন্দে হলেও মেঘেদের বড্ড অভিমান। তারা নীচে নামবে না কিছুতেই। আবার পাহাড়ে , মেঘেরা ওপরে-নীচে সর্বত্র আনন্দে ভেসে বেড়ায়। সেখানে চলমান মেঘেদের পাহাড়ের গায়ে গায়ে ভেসে বেড়ানোর যে স্বপ্নের পরীদের মত দেখায় তা দেখতেই গিয়েছিলাম এক বিকেলে পাহাড়ী পথের বাঁকে বাঁকে কার্সিয়াং, ডাউহিল, চিমনি ইত্যাদি নাম না জানা গ্রামের মধ্য দিয়ে। শুধুই বৃষ্টি উপভোগ করতে। এরই মধ্যে সন্ধ্যের আলোয় জঙ্গলের মধ্যে দুটো হরিণ দেখে মনে হল এই বৃষ্টিতে জঙ্গলের পশুরা নিজেদের কিভাবে রক্ষা করে? ঈশ্বর সবার জন্যই ব্যবস্হা করে রেখেছেন। পাহাড়ের গায়ে গায়ে গাছেরাও যেন ঘেঁসাঘেঁসি করে বেড়ে উঠতে চায়। ফার্ণ পাতাগুলোর লম্বা হাত যেন সবাইকে ছুঁতে চায়।এমন ঘন সবুজ বনের মধ্যে রাস্তাও নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আর মেঘেরা ঘন পাইনের বনে ঢুকে বৃষ্টি হয়ে ঝড়বার পথ খোঁজে।পাহাড়ীপথে এক এক বাঁকে এক এক সৌন্দর্য ধরা পড়ে। বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য , মেঘের মধ্যে দিয়ে হাঁটা যেখানে কিছুই দেখা যায় না এসব রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাহাড়ে না এলে বোঝা যায় না। নীচের পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে তো ওপরের পাহাড়ে বৃষ্টি নেই। নীচের পাহাড়ে মেঘ জমেছে , মনে হচ্ছে ইন্দ্রপুরীতে বিচরণ করছি। নারদ মুনির আশীর্বাদে ঝর্ণার ধারা , গানের দ্রুত লয়ের সুরের মুর্ছনায় যেন “ তরলিত চন্দ্রিকা চন্দন বর্ণা” রূপ ধারণ করেছে। সে যে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা প্রেমদাত্রী! ঝর্ণার প্রেম প্লাবণেই না নদীগুলো পুষ্ট হয়! ধরণী শষ্যশ্যামলা হয়! তখন মানুষের ক্ষুধা মেটাও তুমিই ‘তাপসী অপর্ণা!’ স্বর্গের সুধাকে মর্ত্যে এনে দাও তুমিই ঝর্ণা! বর্ষায় পাহাড় ভয়ঙ্কর হয় আমরা দেখি। স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখা অনায়াস লভ্য হয় না এটাও যেমন সত্য। তেমনি দেখার পরের সৌন্দর্যানুভূতি অব্যক্তভাবে মনের গভীরে বর্ণময় হয়ে ধরা থাকে। বৃষ্টি কমতে আবার সদ্যস্নাতার মত দেখতে লাগছিল পাহাড়কে।জল হারিয়ে মেঘেরাও তাদের বৈঠকী আড্ডায় মেতেছে নীল আকাশে। এই সুযোগে সূর্যদেব অস্তাচলে যাওয়ার আগে তার লালিমা ছড়িয়ে দিলে আরও মোহময় করে তুলল সেদিনের সেই মনোরম সন্ধ্যা। পাহাড় জুড়েই কত আঁকাবাঁকা রাস্তা,ঘরবড়ি, একটু একটু করে পাহাড় জুড়ে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। দীপাবলীর রাত্রি রোজ উপভোগ করতে হলে পাহাড়ের সন্ধ্যা রাণীর আগমনের প্রতীক্ষায় সময় দিতে হবে। একটু বেশি রাত না হতে, পাহাড়ের অনেক আলো নিভে যায়। সন্ধ্যারাণী বিদায় নিতেই দেখা গেল দূরে আলোকমালায় সজ্জিত যেন হীরের কুচি দিয়ে সাজানো শিলিগুড়ি শহর। এই সৌন্দর্য পাহাড় থেকেই দেখা যায়। নেমে আসলাম নীচে আমাদের ঠিকানায়।

No comments:

Post a Comment