Tuesday, October 31, 2017



এই সংখ্যায় লিখেছেন যাঁরা-


মুক্তগদ্য- শুভদীপ ঘোষ, সুদীপ ব্যানার্জী, পিকি, অনিমেষ, প্রলয়কুমার বিশ্বাস
ভ্রমণ- কুমকুম ঘোষ
কবিতা- নরেশ রায়, মন্দিরা ঘোষ,শুভদীপ চক্রবর্তী,  জয় চক্রবর্তী, দেবার্ঘ সেন, কৌশিক চক্রবর্তী, উদয় সাহা, দেবপ্রিয়া সরকার, নিশীথবরণ চৌধুরী, জয়শ্রী চ্যাটার্জী, কৃষ্ণা সাহা, মজনু মিয়া, দেবব্রত সেন, দীপশিখা চক্রবর্তী, অমলেন্দু বিশ্বাস, Debabrata Tanti, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, তৃপ্তি মিত্র, সত্য মোদক, দেবযানী সিনহা, গৌরব রায়চৌধুরী, অভিজিৎ মান্না, মৌসুমী ভৌমিক, রবীন সাহানা, সুপ্রীতি বর্মন, চিত্তরঞ্জন সাহা, সুকন্যা সামন্ত, প্রতিভা দে, কৌশিক কুমার রায়, মাম্পি রায়, শৌভিক কার্য্যী, সুস্মিতা দত্ত
গল্প- মৌসুমী চৌধুরী, পিনাকী চক্রবর্তী, সম্পা দত্ত, পিয়াংকী মুখার্জী
অ্যালবাম: কোচবিহার রাসমেলা/ শৌভিক রায়


সম্পাদনা ও অলঙ্করণ- শৌভিক রায়

সম্পাদকের কথা

মেঠো পথে উদাস সুর। ধুলো উড়িয়ে ঘরে ফেরে রাখালেরা। টুপ ক'রে ডুবে যাওয়া সূর্যের আলো কিশোরীর সলাজ মুখে স্থায়ী হতে না হতেই দূরে ঝিকিমিকি ক'রে ওঠে জোনাকির দল। হিমের পরশ গায়ে মেখে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাক জানান দেয় আসছে... শীত আসছে। সকালের রোদে ঘাসের ডগায়  কাকভোরে ঝরে পড়া শিশিরের ঝলকানি। হঠাৎ দামাল হাওয়ায় এলোমেলো তরুণীর চুল, তারপরেই হেসে ওঠা সবার সাথে। ধানক্ষেতে হলুদের বান যেন। আসছে নবান্ন.....
হেমন্ত চিত্র এরকমই...আর সেই চিত্রের নানা রূপ আমাদের "মুজনাই"-এ, এবারে...





মুক্তগদ্য

শুভদীপ ঘোষ
   হেমন্ত

    

আলার্মে ভাঙা সকালের পর যে আলতো ঘুমটা বালিশের মধ্যে কয়েক মুহূর্ত লেগে থাকে, আলসে, পাতলা একটা নরম মায়ার মত ভালোবাসা,সেই রকমই একটা তুলতুলে তন্দ্রালু সকলের মত হেমন্ত কাল।


কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। রেখে যায় একটা পাতলা চাদরে জড়ানো ভালো লাগা। নরম ঘাসের উপর চিক্ চিক্ করা সোনা ঝরা শিশির বিন্দুর মত এক রাশ আনন্দ। সারা রাত পাতায় পাতায় আর টিনের চালে চুপ চুপ টুপ টুপ ভালোবাসার শিশির বিন্দু গড়িয়ে পড়ার শব্দ।
চা বাগান কিংবা সোনার মত টল মলে ধান ক্ষেতে   রোদ্দুর আর হিমের খুনসুটি। উবু হয়ে বসে আমার কোন নাম না জানা দিদি দূর্বা ঘাসের থেকে শিশির কুড়োয়। আমিও পাশে এক ভাবে হাটু মুড়ে বসে স্নেহ ভালোবাসার মাধুরী গায়ে মাখা মাখি করি সেই এক বিহান বেলায়।

আরো ছোট্ট বাছুরের মত দুরন্ত ফুটফুটে ছেলেটা কেমন দিনের সমস্ত দামালপনা ভুলে সন্ধ্যে নামলে মায়ের বুকে মুখ ঢাকে;তেমনি কামরাঙা গাছের ছায়ায় পাতায়; বকের ডানায় ভর করে গুটি গুটি সন্ধ্যে নামে।
অনন্ত চা বাগান আর ধু ধু ধান কাটা মাঠ পেরিয়ে কে বা কারা যেন আবছা কালো পাহাড়ের শরীরে দুটো একটা আলো জ্বালিয়ে দেয় মৌনতায়। জানান দেয় আমি আছি--ওই দূরে 'নুর মঞ্জিল'। ঝিম লাগে সময়--আবেশ ছড়িয়ে।

এই সবই আমার আলসে ধরা স্বপ্ন। খামখেয়ালী মাতাল মনের কল্পলোক। বালিশের আদর মাখানো আমার প্রেমিক-প্রেমিকা। অবচেতনার ফাঁক গলে আসা ভালোবাসা।

জামার উপর জামা গলিয়ে যে সকালটায় জেগে উঠি, বুড়ো কামিনী গাছের ডালে তখন চড়ুই পাখি নবান্নের খুটে খাওয়া ধানের  গান বিলিয়ে দেয়। 


মনের সাজানো চৌহদ্দী ছাড়িয়ে তখন চা বাগানের কোন দিন ভাঙা সাইরেনের শব্দের মতন যুদ্ধকালীন লাল বাতির নিভু নিভু সূর্যটা নেমে আসে।

মাঠে শুয়ে আছে কোন এক বুড়িয়ে যাওয়া চাষী। ধান কাটা নব্বানের আঘ্রাণে কুয়াশা জড়িয়ে।
সমস্ত বুক জুড়ে কিছু পরিযায়ী পাখির দল, বক আর চিল খুটে খুটে খায় পোকা আর কীট।

এক তারাটা বাউলিয়ানা বিচ্ছেদের গানের সুর তোলে। গোধূলি বেলায়, হালের গোরু গুলো মাথা নিচু করে এক ভাবে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে আর চাষীর না লিখতে পারা অব্যক্ত সুসাইড নোটের যন্ত্রনা গুলো জাবর কাটে।


আর আমি...নতুন সদ্য ফাটা ঠোঁটে নরমের প্রলেপ লাগাই।।





সুদীপ ব্যানার্জী

 শায়রনামা


                      সেই যে তুমি "ইরশাদ" বলে মুচকে হাসলে,চোখে ঝিলিক তুলে গালে টোল ফেলা অজিব করিশ্মায়,নাজুক আঙুলের নগ্নতা নিয়ে চেপে ধরলে নিখুঁত চিবুকের হুরী-পরী সম খাঁজ---ঝাড়বাতির সব রোশনাই লুঠে,সে গজ্লের সফেন স্রোতে মখমলি আমার রুমাল, আতরের গন্ধ শুঁকে "মারহাবা"রবে দিল্ এ চাপা সব সুরের  মাথা গুঁজে অচেনা আলফাজে ...

               চকিত্ চাউনিতে যে মরুঝড় বয়েছিল সে মেহ্ফিলে,এ দিলরূবা-- নীল ঝিল, ঝর্ণার আবেশে, চোখজুড়ে যে আবেগ মেঘ জড়ো করছে এ রেগিস্তানে---এ না চিজ্, বেওকুফ দহলিজ পেরিয়ে পানপাত্রের সব নেশা এক চুমুকে ঢালছি কলিজায়... শেষ ফোঁটাটাও ধরে রেখেছি পিপাসার পানি ক'রে।
             
                মলিকা-এ-কায়নাত..তুমি কি এখনও আছো তাকিয়ে?--খুবসুরৎ কিছু লব্জের আবদারে?এ নাদান...এ গুলবদন...গালিব তোমার ঠোঁটে... গালিব তোমার রূপের জ্যোৎস্নায়...

              অন্ধকার রাত... ঊটের কাফেলা শীতল প্রার্থণায়...প্রতিটি অক্ষর শরমে গোলাপি হয়ে তোমার গালে বিজলিবাতি জ্বালাবে...
         
            গালিবের কবর...সাদা ফুল কিছু দুলে ওঠে...সব শায়র দিল্লীর কোঠায় আশমানি তারা পেড়ে...গালিব হতে চায়...

                                       

   

  পিকি
 বামনহাট প্যাসেঞ্জার 
                                                                          

সাল ২০১১ একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকর করছি বছর দেড়েক হলো বারবার ট্রান্সফারে বিরক্ত হয়ে কাজটা যখন ছেড়ে দেবো ভাবছি তখন কোম্পানীর থেকে খবর পেলাম আমার নাকি প্রোমশন্ হচ্ছে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার থেকে জোনাল ম্যানেজার শুনে আনন্দ হলো মাইনেটা বেড়ে যাবে অনেকটা সেটা ভেবে, আবার ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে কোন জোন্ পাবো কে জানে? দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিলে কি করবো? কিছুদিনের মধ্যেই প্রমোশনাল লেটারটা হাতে পেলাম পড়েই দিলাম এক লাফ ! মন তিলাং তিলাং করে উঠলো কারণ তাতে লেখাছিল আমি হচ্ছি নর্থবেঙ্গল জোনের জোনাল ম্যানেজার উত্তরবঙ্গ যেতে হবে শুনেই মন চাঙ্গা হয়ে উঠলো কারণ বাবা দীর্ঘদিন ওদিকেই চাকরি করেছেন সেই সুত্রে আমি ছোটবেলায় কয়েকবার ওখানে গেছি আর জানিনা কোন্ অজানা কারণে পাহাড় আর জঙ্গলের কম্বিনেশন্ আমাকে অসম্ভব টানে

মা বাবাকে প্রণাম করে দুগ্গা মায়ের নাম নিয়ে কাটোয়া থেকে তিস্তাতোর্সা এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম আমাকে শিলিগুড়ি অফিসে বসে উত্তরবঙ্গের পাঁচটা ব্রাঞ্চ কন্ট্রোল করতে হবে শিলিগুড়ি পৌছে দেখি ব্যাবস্থা পুরো পাকা অফিসটা পানিট্যাঙ্কি মোড়ে একটা বহুতলের সেকেন্ড ফ্লোরে ওই ফ্লোরের অপর প্রান্তে আমার থাকার জন্য একটি রুম বরাদ্দ তাতে একটি বেডরুম একটি কিচেন অ্যাটাচ টয়লেট-বাথরুম আছে আমি রান্না করে খাওয়ায় অষ্টরম্ভা, তাই হোটেলেই খাওয়া স্থির করে নিয়েছি অফিসের প্রচন্ড চাপ, বিকেল চারটের সময় লাঞ্চ আর রাত দশটায় ডিনার করতাম বাধ্য হয়ে কারণ বিল্ডিংটায় সাড়েদশটায় তালা পড়ে যেত কিন্তু রাত্রি দুটো পর্যন্ত জেগে অন্য ব্রাঞ্চের কাজের রিপোর্টিং মিলিয়ে নিয়ে ঘুমোতে যেতাম দিনে প্রচুর লোকের সাথে কথা বলতে হত! কয়েকদিনেই সব আনন্দ মাটি হল কাজের চাপে ভেবেছিলাম শিলিগুড়িতে যখন থাকবো তখন রবিবার গুলো এদিক সেদিক চরে বেড়াবো কিন্তু কাজের এত চাপ যে রবিবার দিনেও অন্যান্য ব্রাঞ্চের হিসাব মেলানো নিজের জামা প্যান্ট কাচা ইত্যাদি করতে করতেই দিন শেষ হয়ে যেত ওখানে একজন ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমেছিল ভালোই তিনি এক রবিবার আমাকে সেবক ঘোরাতে নিয়ে গেছিলেন নার মটরসাইকেলে চাপিয়ে সেবক দেখে আর সেবকের হিমেল হাওয়া মেখে সব ক্লান্তি নিরানন্দ ঘুচেছিল এই সেবকের এফেক্ট এতটাই ছিল যে কাজের একটা নতুন গতি চলে এলো এর মাঝেই হেড অফিস থেকে জানতে চাওয়া হলো একটাও ব্রাঞ্চ ভিসিট করেছি কিনা? মিথ্যা চট্ করে বলতে পারিনা তাই সত্যিই বললাম কাজের এত প্রেসার যে এখন পর্যন্ত কোনো ব্রাঞ্চেই যেতে পারিনি, ওপার থেকে কড়া আওয়াজ একমাস হয়ে গেল এখন জাসনি কেন? তোকে একটা ব্রাঞ্চ ভিসিটিং সিডিউল মেইল করছি ওটা ফলো করে নেক্সট্ উইক থেকে সব জায়গায় যেতে থাক

যথারীতি মেইল এলো আর তাতে দেখলাম প্রথমেই আলিপুরদুয়ার এই অফিসের বেয়াড়ার কাছে জানলাম শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার দুভাবে যাওয়া যায় বাসে ট্রেনে তবে বাসরুট নাকি খুব খারাপ ছিল তখন এবং সময় লাগে অনেক আমি আঁতকে গেছি কারণ অত বাস জার্নি আমার পোষায় না, তাই জিজ্ঞ্যাস করে জানতে পারলাম অনেক এক্সপ্রেস ট্রেন আছে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কয়েকটি শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন থেকে আমি সিডিউল মেনে নির্দিষ্ট দিনে সক্কাল সক্কাল গিয়ে পৌছলাম শিলিগুড়ি জংশন্ স্টেশনে কিন্তু ওখানে গিয়ে শুনলাম ট্রেন আছে :৩৫ 'বামনহাট প্যাসেঞ্জার', তাও আবার প্যাসেঞ্জার ট্রেন এখন বাজছে ছয়টা পঁয়তাল্লিশ অগত্যা আলিপুরদুয়ারের টিকিট কেটে উঠে বসলাম ট্রেন ছেড়ে দিল ঠিক সময়ে ট্রেনের গতি স্বাভাবিক আমি ইঞ্জিন এর পরের কম্পার্টমেন্টে উঠেছি, খুব কম যাত্রী সকলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছেন আমি বামদিকের একটি জানালার ধার দেখে সিঙ্গেল সিটে বসেছি আলিপুরের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জানেনা আমি ভিসিটিঙে যাচ্ছি সেটা ওকে না জানিয়ে গেলেই বোঝা যাবে কাজ কতটা করে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, আমি নতুন জোনাল ম্যানেজার উত্তরবঙ্গের কোনো ব্রাঞ্চের কোনো স্টাফ আমাকে চেনেনা এটাই আমার অ্যাডভান্টেজ্ ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের উপর দাদাগিরি করবো ভেবেই নিজেকে বেশ হনু হনু মনে হচ্ছে প্রথম এই লাইনে যাচ্ছি কতক্ষন লাগবে কোনো আইডিয়াই নেই তবে ট্রেইন যেভাবে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ঠিকঠাক সময়েই পৌছে যাব কিছুক্ষণের মধ্যেই লক্ষ্য করলাম ট্রেনের গতি ক্রমশ ধীর হচ্ছে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হল সেবকের দিকে চলেছি, তার ফাঁকেই দেখলাম কয়েকটি খালি গায়ের কারোর গায়ে ধূলোমলিন জামা সকলের বয়স দশ থেকে বারো বছরের ছেলেরা লাফিয়ে লাফিয়ে ইঞ্জিনের বগিতে ড্রাইভার ওঠার দরজার পাশের হাতল ধরে হুশ হাশ করে উঠে পড়লো গাড়িতে এই দৃশ্য আমাদের কাটোয়া আমোদপুর লাইনের ছোটরেলে হামেশাই ঘটতে দেখেছি, শুনেছি দার্জিলিঙগামী টয়ট্রেনেও নাকি চলন্ত অবস্থায় ওখানকার বাচ্ছারা ওঠানামা করে এটাই ওদের খেলা একটুবাদেই ট্রেন চলে এলো সেবকে ট্রেন থেকে সেবকের ব্রীজ দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম নীচে হাল্কা নীল জল যেন বলতে লাগলো আমার বুকে একটু জলকেলি না করে এগোনো ঠিক হবেনা ওপারের পাহাড়ের গায়ে প্রথম সূর্যের আলো পড়ে গাঢ় সবুজকে কেমন যেন হলদে লাল মিশিয়ে এক নতুন রঙ দিয়েছে আমি তো তিড়িঙ বিড়িঙ করছি এসব দেখে আর ট্রেনের বাকি সহযাত্রীরা আমায় দেখে হাসছেন আমি সেটা খেয়াল করিনি তখন বাচ্চাগুলো দেখি ইঞ্জিনের পাশে একফালি বারান্দা মতন করা থাকে যেখানে গার্ডবাবু দাঁড়িয়ে সিগন্যাল দেখেন দেখান সেখানে বসে পড়েছে খেলছে দু-একজন আবার ওখানের রেলিং ধরে বাকিদের কসরৎ দেখাচ্ছে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ছেলেবেলায় পাড়ার পূজার প্যান্ডেলের বাঁশ খাটানো হলে আমরাও তাই করতাম, কিন্তু এরা যে চলন্ত ট্রেনে এগুলো করছে দেখে ভয় করতে লাগলো কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম প্রকৃতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে দূরের জঙ্গল ক্রমশ কাছে আসছে সেগুন, শিশু ছাড়া বাকি বড় বড় গাছগুলোকে চিনিনা কিন্তু খুব আপন মনে হচ্ছে আমার
           একজায়গায় অদ্ভূত এক আওয়াজ পেলাম ক্যাঁং ক্যাঁং আবার কিসের আওয়াজ আকাশবাণী হচ্ছে জানালা দিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই বাচ্ছা ছেলের মতন চিৎকার করে উঠলাম "ময়ূউউর ময়ূউউর" দেখি এক বিশালাকার ময়ূর তার বিরাট নীলাভ সবুজ রাশি রাশি পাখা নিয়ে বাম দিকের জঙ্গল হতে  ডান দিকে ঠিক আমার মাথার উপর দিয়েই যেন পিলে চমকানো ডাক্ ডেকে চলে গেল আমার ছেলেমানুষের মত আচরণে স্থানীয় সহযাত্রীরা তারস্বরে হেসে উঠলেন আমিও খুব লজ্জিত বোধ করলাম একবয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞ্যাস করলেন- "কলকাতা থেকে আসতেছেন নাকি? কোথায় যাইতেছেন?" আমি আমতা আমতা করে বললাম আমার বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়ায়, আমি শিলিগুড়িতে চাকরী করি এখন আলিপুরে যাচ্ছি আসলে কোনোদিন জঙ্গলের ময়ূর দেখিনি তো তাই.... মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অন্য এক ভদ্রলোক বললেন- "তাই একটু এক্সাইটেড্ ইয়া গেছিলেন তো বুঝছি বুঝছি" আমি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালাম এভাবে চাকরীর জন্য কাজে বেড়িয়ে যে এত্তসুন্দর এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হব ভাবতেও পারিনি অনাবিল আনন্দে গুনগুনিয়ে উঠছি আমি ট্রেন চলেছে ধীর গতিতে, মাঝে মাঝেই এক-একটা প্ল্যাকার্ড চোখে পড়ছে কোনোটায় লেখা "DRIVE SLOW ELEPHANT ZONE", কোনোটায় আবার "DRIVE SLOW BISON ZONE" একটু পরে বুঝলাম এটা জঙ্গলের ভিতরে আছি বনদপ্তরের পক্ষ থেকে এইগুলো লেখা হয়েছে মনে পড়লো মাঝে মাঝেই পেপারে পড়ি বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রাণ যায় এই ট্রেনে চাপা পড়ে! তাই এই ব্যাবস্থা করা হয়েছে একটা একটা স্টেশনের নাম পড়ে বড্ড অবাক হচ্ছি আর জায়গার নামের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে ছড়া কাটছি--
                    একটি স্টেশন 'ওদলাবাড়ি'
                    আমি চড়েছি আজব গাড়ি
                    ওই আসছে 'ডামডিমা'
                     মনে বাজে অচিন বীণা
                     জায়গার নাম শুনেছ 'মাল'?
                     উত্তরবঙ্গ সত্যিই কামাল।।
মনের ভিতরে কত্ত কৌতুহল তখন আমার, এইসব অদ্ভূত নামযুক্ত এলাকার মানুষেরা না জানি কেমন? এরা কি করে? কি খায়? কেমন মানুষ কে জানে? ভাবতে ভাবতেই আমি কখন পাতালে প্রবেশ করে ফেলেছি নিকষ কালো অন্ধকার আবার আলোতে ফেরার কয়েকমিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয়বার আবার পাতালে প্রবেশ করলো রেলগাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আর কোথাও এমন টানেলপথ নাই বোধহয় কিছুক্ষণ পরেই শুনলাম ইঞ্জিনে থাকা ছেলেগুলো হাতে লাঠি নিয়ে গাড়ির গায়ে জোরে জোরে শব্দ করছে আর প্রত্যেকেই হল্লা-চিল্লা জুড়ে দিয়েছে, ধীরে ধীরে ট্রেন দেখলাম থেমে গেল আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি বগির বামদিকের সব লোক দুড়দাড় ডানদিকে চলে গেল ভিড় জমে গেল আবার পরক্ষণেই সব্বাই বামদিকে চলে এলো আমার জানালাটায় পাঁচটা মাথা সেঁটে গেল আমি ব্রাত্য হয়ে গেলাম সকলকেই অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞ্যাস করলাম কি হয়েছে ? কি হয়েছে? কেউ কোনো কথা বলছেনা পকেট থেকে মোবাইল বের করে ক্যামেরা অন করছে আমি কিছু না বুঝেই ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে পড়ে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলাম যারা জানালা দিয়ে দেখতে না পেয়ে নেমে পড়েছেন কিছু একটা দেখার জন্য তাদের দলে নাম লেখালাম দেখি ইঞ্জিনের ওই প্রান্ত ফুঁড়ে একটা ধূলামাটি লাগা অফ্ হোয়াইট কালারের মোটাসোটা মূলা রেললাইন পার করছে ! ক্রমে বুঝলাম ওটা মূলা নয় তার সাথে প্রকান্ড একটি মাটি রঙের শুঁড় তারপর দেখছি একটি মাটি রঙের কূলো আর তার সাথেই দেখলাম এক হাতির মাথা ! আমি বিস্মিত হয়ে ইলাম, গদাই লস্করী চালে ঐরাবতটি রেললাইন পার করে নয়ানজুলিতে নামলো এতো লোকজন চিল্লাছে, কত ফ্লাশ জ্বলছে, কিন্তু তাঁর কারোর দিকেই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই শুধু একবার একটা ছোট্ট স্মাইল দিয়েই বড়সড় মাপের তারকাদের মতন নিজের দেমাকে চলে গেল বাঁ হাতের শাল সেগুন শিশুদের কোলে এই পুরো ঘটনাটি ঘটতে সময় লেগেছে মেরেকেটে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ট্রেন ছাড়লো আমি নিজের জায়গায় বসে ঘটনার আবহে ডুবে থাকলাম পাশ থেকে শুনছি লোকে বলাবলি করছে ওটা নাকি একটি দলছুট হাতি আমি অনেকক্ষণ ধরে বসে গাছগাছড়া দেখছিলাম আর আশা করছিলাম আর একটি হাতি আসুক কিন্তু নাঃ আর কোনো জন্তুই আসেনি

স্টেশন্ এলো হাসিমারা, হাসি হাসি মুখটা বেজার হয়ে গেল জায়গার নাম পড়ে, হাসিকে এখানে মেরে ফেলা হয়েছে ! খেয়াল হলো অনেকক্ষন ছেলেগুলোর কোনো আওয়াজ পাইনি ওরা কখন যে নেমে গেছে কে জানে বেলা অনেক হয়েছে এই ট্রেনে কোনো হকার ওঠেনি এও এক অবাক কান্ড এদিকে আমি সকাল থেকে কিছুই খাইনি ক্ষিদেও পেয়েছে হ্যামিল্টনগঞ্জ, কালচিনি, গারোপাড়া নামগুলোর কী অমোঘ আকর্ষন সব ছোট্ট ছোট্ট জনপদ হবে হয়তো! এরপর যে স্টেশন এলো তার নাম শুনে আমি আর ক্ষিদে চেপে রাখতে পারলাম না, জায়গার নাম "রাজা ভাত খাওয়া" হ্যা হ্যা ঠিক শুনছেন গো এটাই স্টেশনের নাম এক ঝালমুড়িওয়ালা চোখে পড়তেই তাকে বললাম দশটাকার ঝালমুড়ি দিতে ঝালমুড়িওয়ালাকে বললাম এইরকম নাম কেন গো এই জায়গার একমনে ঝালমুড়ি মাখতে মাখতে বলল- "এখানকার রাজার সাথে ভুটানের রাজার প্রায় যুদ্ধ হত, এখান থেকে ভুটান খুব কাছে, একবার দুই রাজাই স্থির করলেন যুদ্ধ নয় শান্তি চাই তারপর তারা এই জায়গায় সোনার থালায় একে অপরকে নানারকম সুস্বাদু ব্যাঞ্জন সহযোগে ভাত খাইয়ে দিয়েছিলেন তারপর থেকেই এখানকার নাম রাজাভাতখাওয়া" এছাড়াও নানান কিংবদন্তি শোনা যায় এই জায়গার নামকরণকে ঘিরে ইতিমধ্যে ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে একটি কুড়িটাকার নোট ওর হাতে দিতেই আমাকে একটি পাঁচ টাকার কয়েন আর পাঁচটাকার নোট ফেরৎ দিল আমি হাঁক পাড়লাম কাকা এইটা কি দিলা তুমি? হকার কাকা বলে কোনো অসুবিধা নাই এখানে সব চলে পাশ থেকে সেই আগের বয়স্ক লোকটি বলে উঠলেন এখানে আলিপুরদুয়ারে এই নোট চলে কোনো অসুবিধা নাই অগত্যা উল্টে পাল্টে দেখলাম এক ইয়াং রাজার ছবি লাগানো ভুটানের পাঁচ টাকার নোটটি মনে মনে ভাবলাম এই নোটের ভ্যালুয়েশন তো ইন্ডিয়ান নোটের বা কারেন্সীর থেকে কম এতে আমাদের অর্থনিতীর ক্ষতি হয়না? যদিও এখন আর আলিপুরদুয়ার তৎসংলগ্ন এলাকায় ভুটানী কারেন্সী চলেনা আমি আলিপুরদুয়ার কোর্ট স্টেশনে নামলাম সারাজীবন মনে থাকবে এই যাত্রাপথ এই কয়েকঘন্টার সফরে একটিই ট্রেনে যে এত বিচিত্র রুপ পেয়ে যাব স্বপ্নেও ভাবিনি কখন একের পর এক বিরল অভিজ্ঞতা দিয়ে রিদ্ধ করেছিল আমায় "বামনহাট প্যাসেঞ্জার" ভাবছেন কি? এবার বেড়িয়ে পড়ুন এই ট্রেনে চেপে যাত্রা করলেই ডুয়ার্সের অপরুপ মাধুরীর সন্ধান পেয়ে যাবেন তবে হ্যাঁ তখন আমার কাছে ক্যামেরা ছিলনা; আপনারা যেন ওই যন্তরটা নিয়েই যাবেন ট্রেনের নাম যেন মনে থাকে "বামনহাট প্যাসেঞ্জার"








 ভ্রমণ 

   কুমকুম ঘোষ
 কুর্গ--ভারতের স্কটল্যান্ড
    ( ছবি --দেবাশিস ঘোষ )


ব্যাঙ্গালোর থেকে সড়কপথে ২৫৪কিমি দূরের শৈলশহর কুর্গ। কর্ণাটকের কোদাগু জেলার হেডকোয়ার্টার। পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে সবুজ-স্বপ্নমায়ায় ঘেরা এক দুর্নিবার ট্যুরিস্ট স্পট। কাবেরী নদীর অনিবার্য স্পন্দন,অজস্র ঝর্ণা, একরের পর একর ভূমি জুড়ে কফিবাগান--আঁকাবাঁকা পথ সোজা চলে যায় অরণ্য চিরে। শব্দেরা যেন নতজানু হয়ে দিগন্তের পাহাড় ছুঁতে চায়।



 কুর্গ শহরের ইতিহাস খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে দু'হাজার বছরের ও আগে, যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ও তিনশ বছর পেছনে ;গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয়ের সময়কালে। কুর্গবাসীদের বিশ্বাস খ্রীঃপূঃ ৩২৭অব্দে গ্রীক সৈন্যসহ আলেকজান্ডার ভারত অভিযানের সময় কিছু গ্রীক সৈন্য এই অঞ্চলে চলে(পালিয়ে কি?) আসে ও স্থানীয় কন্যাদের বিয়ে করে এখানেই থেকে যায়।তাই দক্ষিণ ভারতীয় দ্রাবিড় বাসীদের সাথে এই অঞ্চলের মানুষজনের দেহসৌষ্ঠব পৃথক ও স্বতন্ত্র---এই বহমান বিশ্বাস ও ইউরোপীয় জিনের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য কুর্গবাসীদের  বিশেষ গর্বের বিষয় আজো। 
তবে ইতিহাসে কুর্গ অঞ্চলটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় অষ্টম শতকে প্রাপ্ত লিপি থেকে।দাক্ষিণাত্যের সমস্ত বৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির অধীনে থাকলেও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পর এখানে স্থানীয় নেতৃত্ব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৬০০-১৮৩৪ সাল পর্যন্ত পালেরি বা হালেরি(Haleri Dynasty) রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।  টিপু সুলতান কুর্গ আক্রমণ করে রাজাকে বন্দী করলেও স্থানীয় কুর্গ যোদ্ধারা তাকে মুক্ত করে।১৭৯৯  সালে টিপুর পতনের পর ও এখানে রাজার(পালেরি/হালেরি রাজবংশ) রাজত্বে নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছিল কুর্গবাসীরা কিন্তু ১৮৩৪ সালে বিখ্যাত "কুর্গ যুদ্ধ" (Coorg War)এ পরাজিত হয়ে এটি ব্রিটিশ অধীনে চলে যায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। স্বাধীনতা পর ও ১০ বছর কুর্গ স্টেট হিসেবে থেকে ১৯৫৬ সালে এটি মাইশোর বা বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। ব্যাঙ্গালোর থেকে মান্ডিয়া-মাইশোর হাইওয়েটা শ্রীরঙ্গাপত্তানমের পাশ দিয়ে সোজা ম্যাঙ্গালোরের দিকে চলে গেছে।টিপুর রাজধানী থেকে ডানদিকে বাঁক নিলেই সোজা কুর্গ শহরে পৌঁছানো যায়।এক্ষেত্রে রেলপথে মাইশোর দিয়েও আসা যায়।আমরা ব্যাঙ্গালোর থেকে সড়কপথই বাছলাম এবছর ই মে মাসের শেষ সপ্তাহে।কলকাতা যখন তাপে তিতিবিরক্ত তখন মনোরম আবহাওয়ায় ব্যাঙ্গালোর-কুর্গ যেন শীতল মরুদ্যান। আর বিশেষ করে দক্ষিণভারতের হাইওয়েগুলোর মেনটেনেন্স ও মসৃণতা দেখলে পশ্চিমবাংলার বাসিন্দা হিসেবে বেশ লজ্জা বোধ হয়।এক দেশে এক আইন অথচ প্রদেশভেদে পরিষেবায় এত পার্থক্য কেন সেই প্রশ্ন ট্যাক্সপেয়ী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মনে জাগে বৈকি! কুর্গের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলি হলো : তলাকাবেরী--কাবেরী নদীর উৎসস্থল।



রাজা সিট-- পাহাড়চূড়া থেকে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় এখান থেকে।
আ্যাবি ফলস্--মাদিকেরি শহর থেকে ১০কিমি দূরে উঁচুনীচু পথ ও সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছানো যায়।প্রায় ৭০ ফুটের ঝরণা প্রবলবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নীচে।
বাইলাকুপা মন্সট্রি---এখানে ৪০ ফুটের বুদ্ধমূর্তিটি প্রধান আকর্ষণ। ভাগমন্ডল--দক্ষিণী ধাঁচের এই মন্দিরটি মাদিকেরি থেকে ২০ কিমি দূরে কাবেরী ও তার দুই শাখানদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। কুর্গকে কেন ভারতের স্কটল্যান্ড বলা হয় সেটা সম্যক উপলব্ধি করলাম মাদিকেরি(কুর্গের তিনটি তালুক এর অন্যতম) গল্ফ ক্লাব রিসর্টটিতে পৌঁছনোর পর।সূর্য তখন ঢলে পড়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে... 


অপরদিকে মেঘের সমাগম দিগন্তে ঠিক যেন মোষের গায়ের রঙ ধরেছে । শুধু বিস্তৃত গল্ফ গ্রাউন্ডটার শেষ প্রান্তের জলাশয়ের ধারে কয়েকটা পাখি উড়াল দিচ্ছে । চারপাশে ব্রিটিশ ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের রেশ যে বজায় আছে সেটা বেশ টের পাওয়া যায়।কুর্গের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিও হলেন আমাদের প্রাক্তন ফিল্ড মার্শাল এম.কারিয়াপ্পা। কুর্গের খ্যাতি শুধু কফি প্ল্যানটেশনের জন্য নয়(coffe Capital of India) এখানে গোলমরিচ,এলাচ ,ভ্যানিলাও উৎপন্ন হয় প্রচুর। 


গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ব্যাঙ্গালোর থেকে কুর্গ পৌঁছতে ৪ঘন্টা ২৫মিনিট লাগার কথা ছিল কিন্তু আমাদের লাগলো ৬ঘন্টার ও বেশী ।পথে মান্ডিয়ার কাছে প্রাতরাশ সেরেছি ধোসা ও গরম কফি দিয়ে...কফির রাজ্যে পৌঁছনোর আগেই স্টিলের গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা পানীয়টি কুর্গের  প্রকৃতি ও পরিবেশের আগাম আস্বাদনের গৌরচন্দ্রিকা রচনা করছিল যেন।


অ্যালবাম: কোচবিহার রাসমেলা/ শৌভিক রায়

নভেম্বর মাসের তিন তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা। সেদিকেই দৃষ্টি রেখে একটি ছবির অ্যালবাম (যে ছবিগুলি অনেকদিন ধরে তোলা) মুজনাই সাহিত্য পত্রিকার পাঠকদের জন্য।



























কবিতা


 নরেশ রায়

সেই ছেলেটি বলেছিল


সৌন্দর্যের আর কয়েকটা তিল চাই
কবিতায় তিলোত্তমা গড়তে চাই
মনের মধ্যে মানিক্যের মাধুর্য মেশাতে চাই
মণিমালার মনে মাধুর্যের মহল দেখতে চাই
বড় বড় বিড়ালকে বনবাসে পাঠাতে চাই
কিছু জনহিতৈষি কুমীর হাঙর ধর্ষকের চেতনায়
 চৈতন‍্যের তূণ থেকে নেওয়া তীর চালাতে চাই ।

তীরটি তারই অস্থি নির্মিত ' মানুষ' কে উৎসর্গ করতে চায় ।



মন্দিরা ঘোষ
যক্ষধন
দখিণের জানলাটি খোলা রাখো
শোকবিলাসের আয়োজনে
নির্জন বাতাস খুলে দাও
তোমার শান্ত পালকের ঘর
বিষণ্ণতার পাতায় আমি
রেখে দেবো অন্নজল

কান্নার ছায়াগুলি দোরের
আলপনা সাজ হবে
দুঃখের ঝিনুকদল আরো
গভীর স্বচ্ছতায়
জলের রেখাগুলি এঁকো

মৃত্যুসাধ তুমি ছড়িয়ে দাও
শ্বাসবায়ু খয়েরবনের ঘাসে

ভোরের রক্তিম আলোয়
যত্নে রাখা যক্ষধন
ফিরিয়ে দেবো  আজ





শুভদীপ চক্রবর্তী

স্থবির


সে তো অনেক কাল আগের কথা,
যখন স্বপ্ন দেখতাম আমরা।
সময় পরে নিজের মতো বুঝিয়েছে-
আমরা-আমির ফারাকটা
চোখে আঙুল দিয়ে।
জরা পেয়ে বসেছে এখন,
যন্ত্রণা দায় নিয়েছে নীরবতা ভাঙার।
স্থবির প্রেমের বুকে দাড়িয়ে
শুধু স্বপ্নগুলো আরও বেশি সতেজ।







জয় চক্রবর্তী
শীতের শহর

শহরের প্রথম পাতাঝরা বিকেল আজ,
শীত নেমেছে চৌরাস্তায়।
শুকনো ডাল কুড়ানো অনুরাগ
আর অভাব আশ্রয় নিয়েছে একই কাঁথায়।
দোসর কুয়াশা,
আড়াল করেছে সেই আলিঙ্গন।
প্রেমিকার ভেজা ঠোঁটে সকাল
আর দুপুরের এক চিলতে রোদ-
ছন্দ জুগিয়েছে কবিতার
আর বাকিটা পল্লীবলার নাভীতে
ক্ষুধা হয়ে জ্বলছে নিরালায়।
ভাটা পড়েছে শহরের যৌবনে-
শীতবস্ত্রের মোড়কে।
চেলাকাঠের আগুন উষ্ণতা আনে তার শরীরে-
সহজ মানুষ চোখের পাতা বোজে,
শহর ঘুমায়,
রাতে ঘুম হওয়াটা ভীষণ দরকার।


দেবার্ঘ সেন
শর্ত ও অন্যান্য 

আধলা ইঁটে কিছুটা রক্ত লেগে আছে,
পালিয়ে যাচ্ছে প্রতারক বন্দর থেকে
শেষ জাহাজ ধরে।

নোঙরটা এক ঝটকায় বিশ্বাস ভেঙে দিলে,
মস্তিষ্কের সমস্ত পায়রা
প্রকোষ্ঠ শূন্য করে
আশ্রয় নেয় অন্ধকার ঘরের
খাটের তলায়।

তারপর তুমিও যাদেরকে কথা দিয়েছিলে,
তাদের থেকে আড়াল করতে চেয়েছো নিজেকে।
গুপ্ত টিকিট কাটতে চেয়েছো দূর দেশের..

অনলাইন আর রাজকীয় দালাল ব্যর্থ হওয়ার পরে;
আত্মসম্মান বেঁচে থাকার টাইমার সেট করে
দিয়ে হয়ে গেছে পলাতক।

সমাজ তবুও বোঝে নি,
সমাজ তবুও বোঝে না-

আত্মহনন কেবল একক দোষ নয় ।।




কৌশিক চক্রবর্ত্তী

চৌকাঠ


শ্মশানের অনিচ্ছার কথা ভেবে আজ বেঁচে থাকার অঙ্গীকার নিয়েছি...
সেখানেও একটা দক্ষিণ দিক আছে
কেউ আগাম চিঠির বদলে সেখানেও ঝুলিয়েছে মৃত্যুর মিথ্যে সংবাদ...

নদীর মৃত্যু নেই, সময়ের মৃত্যু নেই, দিগন্তেরও মৃত্যু নেই,
শুধু এসবের মধ্যে আছে সূর্যাস্তের মতো আত্মঘাতী হবার প্রবণতা!

বিষয়ের আর্তিটুকু অপরাধের চৌকাঠ ফেলে এগোলেই দেখতে পায় অনন্ত শ্মশান
আর খুঁজে পায় গোপনীয়তায় রুজু হওয়া কিছু অ্যাসিডহানার নালিশ...

সেসব মিথ্যে হবে ভাবিনি কখনো -

একদিন ছুটে এলো আঠারো বছরের এক অনিচ্ছাকৃত সতী হবার লাশ
সঙ্গে তার সহস্র মহিমা
আর আড়চোখে ব্রতী হওয়া সদ্যযৌবনা রক্তবর্ণ চাঁদ!

না না... এ সতী নয়...
এ তো এই শহরের রাতপেয়াদা, বাবুয়ানার ঢল -
সেইদিনই হয়ত সে আলতো টর্চের আলোয় কোনরকমে চাঁদকে মনে করেছিল দাপুটে শাসনযন্ত্র -
তাই একটা মিথ্যে জন্মে গেলো আবার...

আমি এই শ্মশানের আতিথ্য নিয়েছি টেনে
লিখেছি নতুন কথা...
মেঘে ঢাকা সূর্যের তাপে চিরকাল বিভোর থাকে চিরবহিষ্কৃত চোখ
আলোচুরির ইতিহাসে তাকেও কখনো শাস্ত্র মনে হয়!

আমি শ্মশান দেখেছি শুধু পাড়ভাঙা আঁচলের ভিতে
আকাশের নিঃশ্বাসে আজও আসে জ্যোৎস্নার বন্দিনী থাকার খবর
ধীরে ধীরে লঘু হয় সংখ্যাতত্ত্ব
মিথ্যের শহরে গুনতে পারি না সতী হওয়া লাশের সংখ্যা -

শুধু গুনে যাই শ্মশানের মিথ্যেগুলো
এক.... দুই.... তিন....
ক্রমেই মিথ্যে বলে পৃথিবী পেরিয়ে শহরে ঢোকার দুর্গম চৌকাঠটা...




উদয় সাহা

ব্যাধি

--টিউশনি?
--না (সমবেত কন্ঠে)
--খুচরো  উপার্জন?
--না (সমবেত কন্ঠে আবার)
--চল,তবে ডাকাতি...
--না...না 
--অবরোধ।
পথে বাবু হয়ে বসে থাকে পাথর-চাঙড়


হাওয়ায় ভেসে যেতে থাকে
স্নেহময় পিতৃহৃদয়ের আর্তনাদ




দেবপ্রিয়া সরকার
মনের উপত্যকায়


শুষ্ক মনের উপত্যকায়
                            জমছে শুধু  অন্ধকার
দুই পাড়েতে উঠছে বেড়ে
                                 স্তুপীকৃত স্মৃতির পাহাড়

শুষ্ক মনের উপত্যকার
                         তখন ছিল নীলচে রঙ্
ক্ষীণকায়া প্রাণের ধারা
                               বইতো সেথায় অনর্গল

কালের কোপে খেই হারালো,
                             প্রাণ খোয়ালো মুক্ত মন
রইলো পড়ে উপত্যকা
                                      নির্জনতায় চিরন্তন।।




নিশীথ বরণ চৌধুরী

 শান্তির দূত 
            

 সমগ্র পৃথিবী পরিণত এক বারুদের স্তুপে
 একটা ছোটো স্ফুলিঙ্গ,অকারণ অসহিষ্ণুতায় যদি ঝলসে উঠে।
 যদি লেলিহান সাম্রাজ্যবাদের জিগীষা
  প্রশমিত নাহয় এখনি,
 গর্বের সভ্যতা চিতাভস্ম রেখে যাবে পৃথিবীর বুকে।
  আমরা ভুলি নি হিরোসিমা নাগাসাকির জলন্ত ইতিহাস,
  অভিশপ্ত সভ্যতার বুকে বিজ্ঞানের অপব্যবহার,
  সাম্রাজ্য বিলাসীর রক্ত চক্ষু আর নির্দয় হৃদয়।
 দুর্বিনীত রাষ্ট্রের জিঘাংসায়--
 যুদ্ধের ঘাত প্রতিঘাত রেখে যায় 
 আকাশে বাতাসে সভ্যতার করুণ ক্রন্দন।
 মাতৃ জঠরে বিষাক্ত বাষ্প
  ভূমিষ্ঠ করে আজ ও চির অসুস্থ সন্তান,
  চির কর্কট রোগে শূন্য গৃহ, শস্য হীন বসুন্ধরার বুকে পারমানবিক শক্তির ফেলে আসা যোদ্ধার তরবারি।
 বন্ধ হোক আগ্রাসন, রাষ্ট্র কর্তৃক রাষ্ট্রের শোষণ,
 যুদ্ধ নয় চির শান্তির পথে আমরা হবো মুশাফির দেশ হতে দেশান্তরে,
 জিঘাংসা প্রশমিত করার অনুরোধ নিয়ে সহিষ্ণুতার বার্তাবহ এক শান্তির দূত, এক সৈনিক।



জয়শ্রী চ্যাটার্জী
মাতৃত্ব

তোমায় উপলব্ধি করেছি সেদিন
যেদিন তুমি ভূমিষ্ঠ হয়েছো
নাইবা হ'লে রক্ত-মাংসে গড়া
তবুওতো আমার আত্মজ
তোমায় দিয়েছি মাতৃস্নেহ
পেয়েছি সৃষ্টি-সুখ
তুমি আমার কবিতা।



কৃষ্ণা সাহা 

জীবনবোধ



বেলাশেষে জীবনবোধের সামিয়ানা
টানায় ধূসর ক‍্যানভাস।  জীবন পাড়ি দিতে থাকে মহাশূন্যে------
আমরা জীবনের প্রতিটি
সূর্যদয়কে 
সজ্ঞানে অভিবাদন করি,
প্রতিটি সূর্যাস্তকে বন্ধুর মতো বিদায় জানাই।
এভাবেই একদিন একদিন করে
 জীবন এগিয়ে চলে
মৃত্যুর কাছে----
তবুও ছলনা, কপটতা, মিথ‍্যাচার চলতে থাকে অবিরত। 
পরিপক্ক ফল বৃন্তচ‍্যুত হয়ে
 একদিন সম্পূর্ণতা লাভ করে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। জীবনে চাওয়া-পাওয়ার সখ্যতা হয় না,
যেন আবাহনের মধ্যই দিয়েই বিসর্জন। 
পড়ে রয় টুকরো টুকরো হা-হুতাশ........
সৃজনশীলতায় আঁকড়ে ধরি জীবনবোধ। 
হঠাৎ তারা-ঝরা রাতে
প্রশ্ন জাগে, "কে আমি?" 
আমি এখানে যেন বড়ই বেমানান.....





মজনু মিয়া

চলতে পথে

আমি আছি আমার চিন্তায়
কেমনে বাড়ি যাই,
ভিড়ের মধ্যে ঠেলে ঠুলে
যদিও উঠতে পাই;
উঠে দেখি পকেট মধ্যে
মানি ব্যাগটা নাই!
ভালো ভাবেই বসি সিটে
সিটের পাশে যে,
এমন আচার করে দেখেন
কি বা করে সে;
সব কিছু নেয় যায় চলে যায়
নিঃশ্ব করে সে!
নেশার কিছু দেয় খায়ইয়ে
তার পর লুটে সব,
জ্ঞ্যাণ ফিরে চেয়ে দেখি
মানুষের কল্ রব;
কোথায় গেলো আমার কেনা
সাধের সওদা সব!
সাবধান হয়ে চলেন সবে
ক্ষুদ্র জ্ঞ্যাণে কয়,
আনন্দ যেন্ মাটি হয় না
হয় যেন্ মধুময়;
এই কামনা করি সবার
খোদা সহায় হয়!





দেবব্রত সেন

রাজশ্রী তোমাকে 

পৃথিবী অমলিনতায় ভুগে চলছে
রাজশ্রী,
          আমি এই মাত্র দিশেহারা
হৃদযন্ত্র কম্পমান, শরীর দেহমন বেসামাল, অধোগতি
অনেকটা পতনের মুখে
যদিও বসুধা মা উন্নত থেকে উন্নততরের পথে
তবুও ধরিত্রী কাঁদে, কাঁদছে প্রকৃতি দিবস রজনী
চোখেও জল আকাশ বাতাসে
ভূধর ভবিষ্যৎ কাদামাটি ছাই মৃতদেহের ভস্মে
রাত্রির নিশিথে জোনাকিরাও বোঝে অন্ধকারের অতল পতনে
ছোটা হয়ে আসে বিচ্ছুরন গ্বহনে
পৃথিবী প্রকৃতির তনে
একদিকে অস্ত্রের কারবার, অন্যদিকে জঙ্গিপনা  সন্ত্রাসের মদত
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা , হিংসা প্রতিহিংসা
রঙ্গ মঞ্চের রাজধর্ম পালনে ছলের কৌশল
বলছেন বাবুরা, আমরা ওদের বিরোধী, চাই তো নির্মূলি
মুখে রাম নাম, মুখেই সাধুবাদ
প্রযুক্তির জালভাষে, ব্যাস্ত ওরা আখেরের গোছাতে
মাঝে মাঝে সামরিক মহরা
বিষাদে কেঁদে ওঠে মন
মনে হয়, এই বুঝি কাঁপনের ভূবন।।
ক্ষমতা লিন্সা, ক্ষমতার অপব্যবহার
স্বার্থপরতা, পালা বদলানোর কৌশল
মিথ্যাচার প্রতিশ্রুতি
সমাজ মানুষ আজও বিভক্ত শ্রেণীতে
বিভেদের রাজন্যতায়
প্রাকৃতিক অকাল গ্রাস এই তো দুনিয়াতে
দাবানলের যন্ত্রে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে
শিখাহীন সাম্রাজ্যে ভাই ভাইয়ের মধ্যে
বসন্তরাও বদলে গেছে, আগের থেকে
জানোই তো খুন  ধর্ষনের ম র্গে।।
রাজশ্রী,,
          আমি সিড়ি দিয়ে চলেছি হেটে
ধাপে ধাপে প্রকৃতির  বদান্যতায়
ছেড়া তবে, ঝা চকচকে পোশাকে পথিকের বেশে
নব বিশ্ব বিপ্লবের স্মরণে
নতুন যুগান্তরের পথে
বহু বছর অনাদিকাল থেকে
তুমি জানো, আমার ইতিহাস, বাধা টপকানো সৎভাবের।।
রাজশ্রী,
          হয়তো বোধ হয় বছরের মাত্র একটি বারে বারো প্রহরের জন্যে
দেখা হয় তোমার সাথে মন্ডপে  মন্ডপে
তাও আবার মহাআরাধনার পরে
মহামায়া আদ্যাশক্তি উমা বা দূর্গা নামে দূর্গতিনাশিনী রুপে
পৃথিবী থেকে অমলিনতা,হিংসা প্রতিহিংসা
অশুভ অসুর মহিষাসুর নিধনে, অন্ধকারের গ্লানি মুছে দিতে
সম্প্রীতি অহিংসা প্রেমত্ম্য জাগাতে ।।
রাজশ্রী,
          আমিও তোমার প্রেমে মত্যার
আহ্বান করি সময়ের নিয়তে
প্রতিকূলতায়, পরিস্থিতির মোকাবিলায়
সব সময়ের জন্যে।
পুলকিত আমার মন, তোমার চোখ মুখে
দেখি যেন চোখের পলক পরা হৃদয় অন্তরেও
এসো কিন্তু,, বারবার শতবার বছরে
আমি চেয়ে রইলাম, "রাজশ্রী ", তোমার তরে।।।






দীপশিখা চক্রবর্তী
কাল্পনিক তুমি


নির্ঘুম রাত নীলচে আমার নিকোটিনের বিষে,
জানালার কাঁচ আবছা হয়ে উষ্ণতায় মেশে।
মনের ভেতর আবর্ত এক অজানা সুরের বাঁধন,
হৃদস্পন্দনের ছন্দে শুনি তোর নামেরই সাধন।
সুখতারা হয়ে আসবে তুমি,রাতের আঁধার ঘিরে,
শঙ্খচিল হয়ে নামব আমি সুখের নদীর তীরে।
নক্ষত্রের বুকজুড়ে আজ অযাচিত আলপনা,
একাকী রাতে তুমি যেন শুধু আমারই কল্পনা।
প্রেমহীন সব স্বপ্নগুলো কবিতায় ভাষা খোঁজে,
চোখের জলে লিখি তোর নাম,সাদা কাগজের ভাঁজে।







 অমলেন্দু  বিশ্বাস


  অন্ধকার   

          
ভারী হয়ে আসছে গলা!

ঝোপ থেকে ছুটে আসছে বাংলার গন্ধ
তাসের ঠেক্ থেকে উঠে আসছে কাঁচা খিস্তি,

এরা তো  মাটির প্রেম ভুলেছে;
ভোরের রক্তিম আভাকে কবে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে,  মনে নেই
ভাতদুপুর গুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে
কি নির্মম ভাবে।

আজ আততায়ীর গুলি কিম্বা  শত্রু পক্ষের বুলেট  বিষ্ফোরণ নয়,  
গভীর অরণ্যে রোদ্দুরের কথা ভেবে -
আমার বুক কাঁপে ওঠে

কপাল থেকে টুপ্ টাপ্ ঝরে পড়ে ঘাম।





Debabrata Tanti

Welcome to the hatred of world:


Further that's truth: world is precious stone
smelless Flowers, testless fruits .
All are going into wrong time
can not change feather brained.
known but reflection distribution does not occur
when the neonate came .. I told her
" welcome to the hatred of world".



গল্প




 মৌসুমী চৌধুরী


"ওগো প্রিয় মোর, খোলো বাহুডোর"....
              


আজ নিয়ে ছ'দিন এলো মেয়েটি
তার চেম্বারে। প্রায় সেরেই গেছে
দেখলো আজ। প্রয়োজনীয় ঔষধ লিখে দিয়ে, প্রায়ই ওর সাথে একটু করে গল্প করে কল্লোল। মানুষের ভেতরে ঢোকার এই শিক্ষাটা তাকে ছোট থেকেই দিয়েছিলেন তার বাবা। কল্লোল বসু, ত্বক চিকিৎসক। বয়স বছর চল্লিশ,অকৃতদার। পসার ভালোই তার। সকালের দিকে ভীড় একেবারে উপচে পড়ে। তিনজন অ্যাসিস্টেন্টও তখন ভীড় সামলাতে হিমসিম খায়।বিকেলটা তুলণমূলক হালকা রাখে সে। বিকেলের দিকে ইউ-টিউবে গান শোনে, চেম্বারে মিউজিক সিস্টেম রাখা আছে, তাতেও গান শোনে...... গান শোনা কল্লোলের তীব্র প্যাশান। সুর-মূর্ছ্রনায় বুঁদ হয়ে
থাকে সে। আজ বিকেলে লেখানো নাম একটু কম ছিলো।
তাই বেশ হালকা লাগছিলো। মিউজিক সিস্টেমে বাজছিলো, "একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ..... "। হঠাৎ ঝড়ের গতিতে
ঢুকেছিলো মেয়েটি। শ্যামশ্রী হাজরা, বয়স ত্রিশোর্ধ। রংটা বেজায় কালো,অনেকটা আফ্রিকান মেয়েদের মতো। কিন্তু নাক-চোখ খারাপ নয়। মেয়েটার প্রতি প্রথম দিন থেকেই একটা মৃদু আকর্ষণ অনুভব করে কল্লোল। নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শ্যামশ্রী, চার বোনের সবচেয়ে ছোট। ফলে যা হয়, বড়ই হেলায় ফেলায় মানুষ সে। তার দিদিরা নাকি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, তাই অল্প কিছু দিয়ে থুয়ে পার করা গেছে ওদের। কিন্তু শ্যামশ্রীকে আর পার করা যাচ্ছে না। বাবা মায়ের বড়ই বোঝা সে। তাই ত্বকের ওই বিশেষ রোগটির সাথে সাথে কঠিন এক হীনমন্যতার স্বীকার  হয়ে তার কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলো  শ্যামশ্রী। দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকার সুবাদে কল্লোল খুব ভালো করে জানে ত্বক নিয়ে শ্যামশ্রীদের মানসিক অবসাদের পেছনে রয়েছে "সোশ্যাল ট্যাবু"। বিয়ের জন্য ফর্সা ত্বকের পাত্রীর বিজ্ঞাপন কিংবা সুন্দরের সংজ্ঞার সঙ্গে ফর্সা ত্বককে জড়িয়ে দেওয়ার জন্য কত যে শ্যামশ্রীরা এমন মানসিক অবসাদে ভোগে তা জানে কল্লোল। যাইহোক, পঁচিশতম পাত্রপক্ষের দ্বারা রিজেক্টেড্  হয়ে ফর্সা হবার মরিয়া চেষ্টায় ত্বকের ওই রোগটি বাঁধিয়েছিলো শ্যামশ্রী। ফর্সা হওয়ার ক্রিমে ব্যবহৃত অ্যাকটিভ কার্বণ কিংবা মাইক্রো
কার্বণের মধ্যে "ন্যানো কার্বণ" থাকে। এই ন্যানো কার্বণ আলো-
হাওয়ার সংস্পর্শে "অ্যাকটিভ অক্সিজেন"এ রূপান্তরিত হয়, যা
চামড়ার পক্ষে ক্ষতিকর, কারণ
এই রাসায়নিক উপাদান কোষ মেরে ফেলে। অ্যাকটিভ অক্সিজেনের প্রতিক্রিয়ায় শ্যামশ্রীর মুখের চামড়ায় ক্যান্সার দেখা দিয়েছিলো, সদ্যই শুরু হয়েছিলো। একদম প্রথমেই দেখাতে আসায় কল্লোল তার মুখের চামড়াটা বাঁচাতে পেরেছিলো। কিন্তু মনের চামড়ায় ধরেছিলো গভীর ক্যান্সার। ফলে
ত্বকের চিকিৎসার সাথে সাথে
সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং
-ও করতে হয়েছিলো শ্যামশ্রীর।
........শ্যামশ্রী যখন হন্তদন্ত ঢোকে সুরে সুরে ভরেছিলো চেম্বারটা, চোখ বুজে ছিলো কল্লোল। "আমাকে একটা কাজ জোগাড় করে দেবেন, ডাক্তারবাবু? আপনার
ডাক্তার বন্ধুদের তো কত চেম্বার, কত পলি-ক্লিনিক। আমাকে যদি
কেউ অ্যাসিস্টেন্ট রাখেন", বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছে শ্যামশ্রীকে। উত্তরে কল্লোল বলে," আরে আগে বসুন তো। আবার কি হোলো? নতুন কিছু ঘটেছে নাকি আবার?" ভীষণ উত্তেজিত স্বরে
শ্যামশ্রী যা যা বললো তা হলো এই....... কোনো এক পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করেছে....বুকের বাঁ দিকটায় একটু ধাক্কা খায় কল্লোল.... পাত্র একটু বয়স্ক, কাপড়ের ব্যবসা। অবস্হা
মন্দ নয়। সমস্যাটা হচ্ছে  যে, সে রীতিমত দরাদরি করে নগদ চার লক্ষ টাকায় শ্যামশ্রীকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। শ্যামশ্রীর
বাবা এই পাত্র হাতছাড়া করতে
রাজি নন, তাই বসত বাড়ি বিক্রি করেও মেয়েকে  পার করবার 
পরিকল্পনা নিচ্ছেন। বাবা মাকে ছাদহীন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায় না কালো মেয়ে শ্যামশ্রী। তাই সে গত্যন্তর না দেখে ডাক্তারবাবুর কাছেই ছুটে এসেছে....... 
        তারপরের দু-তিন বছর  বছর কল্লোল হয়ে উঠলো 'খিদ্দা' আর শ্যামশ্রী হয়ে উঠলো 'কোণি'। কল্লোলেরও কেমন যেন একটা জেদ চেপে গেলো অদৃশ্য "সোশ্যাল ট্যাবু"টাকে ভেঙ্গে ফেলতে। কল্লোলের এক বন্ধুর পলি-ক্লিনিকে কাজ জুটে গেলো শ্যামশ্রীর। কল্লোলের পরামর্শেই সে "ওয়েষ্ট বেঙ্গল হেলথ্ ইউনিভার্সিটি" র অ্যফিলিয়েটেড্ "সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং" কোর্সে ভর্তি হলো। কোর্স শেষে শ্যামশ্রী চাকরি পেলো নামকরা বেসরকারি হসপিটালে.....প্রাণ ঢেলে কাজ করতে লাগলো। স্কুল ছাত্রছাত্রী থেকে বয়স্ক লোক, অপরাধপ্রবণ যুবক-যুবতী থেকে নেশাড়ু সবারই কাউন্সেলিং সে খুব দক্ষতার সাথে করতে লাগলো। মানুষের সংকটে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে শ্যামশ্রী পার্থিব তুচ্ছতার বাইরে বাঁচার ভিন্নতর এক মানে খুঁজে
পেলো। বাড়ির পরিবেশও গেলো পাল্টে । কেউ তাকে আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না। শুধু বিয়ের কথায় তীব্রভাবে আপত্তি জানায় সে। ওদিকে ডঃ কল্লোল বসুর মনটা একটু যেন উদাস উদাস..... কিসের যেন একটা অভাবে বুকটা খালি খালি.......। শ্যামশ্রী নিয়ম করে প্রতি রোববার তার সাথে দেখা করতে আসে। কল্লোল আর শ্যামশ্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে ভিন্নতর এক মানবিক সম্পর্ক......প্রেমের যেসব ছক বাঁধা আছে তার বাইরের সূ্ক্ষ্মতর এক মানবিক বোধ....যেন হঠাৎ পাওয়া এক সবুজ দ্বীপ। তেমনই এক বোরবারের পড়ন্ত বিকেলে শ্যামশ্রীর চোখে চোখ রেখে কল্লোল বলে, "তোমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে চাই, চিরদিনের জন্য। তোমাকে বিয়ে করতে চাই। যদি তুমি রাজি থাকো।" তৎক্ষণাত  আগুন জ্বলে ওঠে শ্যামশ্রীর চোখের তারায়,"আমাকে বিয়ে? কেন? কি কারণে? ও, কালো মেয়েকে করুণা?" আহত স্বরে কল্লোল বলে, " যদি বলি ভালোবাসা
........।"এক মু্হূর্ত দাঁড়ায় না শ্যামশ্রী,কোন জবাব না দিয়ে চলে যায়.......অপলক তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখে কল্লোল।
       তা-র-প-র, এক মাস বাদে একদিন শ্যামশ্রীর কর্মস্হলে
গিয়ে কল্লোল জানতে পারে "ওড়িশা ইউথ ডেভেলপমেন্ট"
নামে একটি এন.জি.ও তে চাকরি নিয়ে ওড়িশার পার্বত্য জেলা কোরাপুটে চলে গেছে শ্যামশ্রী, দুর্গম  পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের নিয়ে কাজ করতে। আর কল্লোলের জন্য রেখে গেছে একটি খাম। তড়িঘড়ি সেটা খুলে কল্লোল দেখে, তাতে একটি চিরকুটে লেখা দুটি লাইন,
"ওগো প্রিয় মোর, খোলো বাহুডোর /পৃথিবী আমারে যে চায়।"






পিনাকি চক্রবর্তী

 একটি  সুন্দর বিকেলের অপমৃত্যু

                                     
-আপনি অমন করে কাঁদছেন কেন ?              
-আপনি !
-আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম   নদীর তীরে দেখলাম , আপনাকে এমন ভাবে কাঁদছেন , মনে হচ্ছে নিকট আত্মীয়ের শোক বুঝি ! আমার মন দুমরে উঠল আমি খুব দুঃখ বোধ করছি আপনার কান্না - আকাশ , সমান্তরাল বনভূমি , নদীর জলকে যতটাই প্রভাবিত করেছে ,ঠিক  তেমনই আমার মনকেও  এই দুঃখের স্রোত ক্লান্ত করেছে  দিয়েছে     আমি দুদিন ধরে দেখছি এই সময় , যখন আকাশের মাঝখানে সূর্য স্থির হয়ে যায় , দিনের মধ্যভাগ ছাড়িয়ে  দুপুরের দিকে এগিয়ে চলে , তখনই আপনি নদীর পাড়ে এই কদম গাছের তলায় বসে –বসে চোখের জল ফেলেন ! আপনার কান্না দেখে আমার মনে খুব কষ্ট হচ্ছে  । আমি আগন্তুক , তাই এই দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করবার অধিকার নেই ।  আপনার বলতে অসুবিধা হলে , আমি জোর করব না। আমি এতটুকু বলতে পারি , আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই । আপনি বিশ্বাস করতে পারেন ।
বছর কুড়ির যুবতি  নদীর পাড়ে বসে আছে  , কান্না থামিয়ে , রঙিন  চুড়িতে ঢাকা  হাতের তালু দিয়ে চোখের জল মুছল । চুড়ির শব্দ কানে আসছিল , আগন্তুক   পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ।  
-আমি আর্যভূমির দক্ষিণ দিক থেকে আসছি । দাক্ষিণাত্যের নাম শুনেছেন ?
মেয়েটি , অপরিচিত যুবকের দিকে তাকিয়ে বলল  
-আপনার পোশাক দেখে আর স্বর্ণ অলংকারের প্রাচুর্য দেখে মনে হচ্ছে , আপনি রাজ পুরুষ হবেন । পিতার মুখে অবশ্য দাক্ষিণাত্যের নাম শুনেছি । বাবা দু’বার ব্যবসার জন্যই  গিয়েছিলেন। শুনেছি , সেই সব স্থানে এখনো রাক্ষস জাতির আধিপত্য !তারা নাকি ভীষণ রাগি আর অনাচারে লিপ্ত ?
-আপনি রাক্ষসকে ভয় পান ? 
-কে না পায় ? আমাদের সকলের জীবনেই রাক্ষস থাকে ।
-দেখুন আমাকে ভালো করে ...
যুবতি  দেখল  । এতক্ষণ খেয়াল করেনি । এইবার ভালো করে  লক্ষ্য করল । যে যুবকটি দাঁড়িয়ে আছে , তার বয়স খুব বেশি হবে না। চকচকে কালো রঙের কাপড় নিম্মাঙ্গে পড়েছে । কোমরের উপরিভাগে  কালো রঙের পোশাক । মাথায় সোনার মুকুট । যুবকটির গায়ের রঙ  মোষের মতন  কালো , ঠোঁট ঢেকে দিয়েছে মোটা গোঁফে ; চোখ দুটো লাল হয়ে আছে । ঘাড় ছাড়িয়ে কালো চুলের স্রোত নেমেছে ।
এই নদীর পাড়ে , দুপুরে সে একা বসে কাঁদছিল । মেয়েটি  মনে –মনে ভাবল – এক বিপদের হাত থেকে বাঁচতে , আরেক বিপদ ডাকলাম ! সে ঠাকুমার মুখে রাক্ষসের যে গল্প শুনেছে , তার সাথে এই চেহারার মিল আছে । মানে এই লোকটি নির্ঘাত দৈত্য !  তার মানে এক্ষুনি মুখ হাঁ করে খেয়ে ফেলবে !  মনে – মনে বলল - আমাকে ব্যাটা বেশ খেয়াল করেছে , দু’ দিন ধরেআজ একা পেয়ে খেয়ে নেবে !
-কিছু ভাবছ ! আমি  তোমায় কিছুক্ষণ বাদেই গিলে খাব !
এই কথা বলে যুবকটি হাসতে শুরু করল । তার হাসি না অট্টহাসি , মেয়েটি বুঝতে পাচ্ছে না। সে কান্না শুরু করলকান্না ভাঙা গলায় বলল  
- তারমানে  আপনি রাক্ষস ?  এখন আমাকে গিলে খাবেন ! একদিক থেকে ভালোই এমনিতেই আমার জীবন এই মুহূর্তে  লাঞ্ছনায় ভরে উঠেছে । নিজের পরিবারের   মুখে চুনকালি দিয়েছি । আমি এই নদীর জলেই ডুবে মরতাম । আজ না হয়  আপনি হত্যা করবেন বেঁচে থেকে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার থেকে মারা যাওয়া ভালোই । আমি মরলে আমার পরিবার অন্তত প্রতিদিনের অপমানের হাত থেকে বাঁচবে ...

যুবকটি এই কথা শুনে হাসি  থামিয়ে দিল । যুবতিটির  মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-কেন বোন ? ছিঃ এই সব কথা বলতে নেই । আমি রাক্ষস জাতিভুক্ত  এই কথা ঠিক । তাই বলে  সব রাক্ষসই   নরমাংস খায় , এমন কথা তোমাদের এইদিকে প্রচার থাকলেও , সত্যতা নেই ।
যুবতির জলে ভরে থাকা চোখে , বিস্ময়ের ছায়া ! বলল
-আপনি আমায় বোন বলে ডাকলেন !                                                      
-হুম ! আমায় বিশ্বাস করতে পারেন ।
মেয়েটি মনে –মনে বলল – সত্যিই এত মিষ্টি কথা বলছে ! মানে লোকটার কোন মতলব আছে।

যুবকটি হাসতে –হাসতে বলল – আরে বাবাঃ এত ভয়ের কিছু নেই । আমি একজন ব্যবসাদার । আমার পিতার দাক্ষিণাত্যে গৃহপালিত পশুর ব্যবসা আছে । সেই কারণেই এই এতদূর এসেছি । দেখুন বনের ওই পারে আমার তাঁবু আছে । ওইখানে সৈন্য সামন্ত নিয়ে আমি আছি ।  সাথে আমার দাস-দাসী  আছে । আমার এক প্রিয় দাসী  প্রথমে আপনাকে দেখেছিল । তারপর , সে  খবর দেয় আর তার  খবর পেয়েই  আমি   আপনার এই দুঃখের কারণ খুঁজে , তার সমাধান করবার জন্য এসেছি । 
মেয়েটি হতভম্ব হয়ে গিয়েছে । 
-আপনার নাম ?
-যম । আমি দাক্ষিণাত্যের এক সামন্ত পরিবারের ছেলে । আপনি ?
-এই যে নদীটা দেখছেন , এই জলাধারের মালিক আমার বাবা । আমি যমুনা ।
-নমস্কার ।
দু’হাত  জড়ো করে দু’জনেই শুভেচ্ছা বিনিময় করল ।  
যুবতির গায়ের  রঙ ফর্সা , নাক টিকালো । দীর্ঘাঙ্গি  বলা যায় । দেখে  অবস্থাপন্ন  পরিবারের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে । যম বলল
-বোন , আপনি রাক্ষস জাতির সম্বন্ধে কেমন ধারণা মনে পোষণ করেন ? আমাকে খুলে বলতে পারেন । আমাদের প্রতি আপনাদের ভাবনা , আমাকে জানতে হবে ।
-আমি ...
-বলুন লজ্জা পাবেন না ।
-আমি শুনেছি আপনারা খুব যুদ্ধ প্রিয় ।  অর্থের লোভে অন্যের  ঘরের মহিলাদের অপহরণ করে নিয়ে যান । হত্যা করেনঅন্যের সম্পত্তি হরণ করেন ... আর ছলনা করেন ।নর  মাংস ভক্ষণকারী  আর সুরায় মত্ত থাকেন ।
-এই সব দোষ যার মধ্যে থাকবে যে অসুর ? রাক্ষস ? তাইতো ?
-হ্যাঁ । শুধু তাই নয় , রাক্ষসের মধ্যে নারীদের প্রতি সম্মান দেওয়ার মানসিকতা থাকেনা ।
আ  সব কিছু শুনছে । নিজের জাতির প্রতি এত বিদ্বেষমূলক কথা শুনেও , তার মুখ থেকে হাসির রেখা মুছে গেল না । সে বলল
-যমুনা , আপনি যা বলেছেন , তা হয়ত  আংশিক ঠিক । তাই বলে আপনার কথা পুরোপুরি সমর্থন করছিনা । কেননা এমনটা কোন জাতির পরিচয় হতে পারে না।
-আমি এমনটাই শুনেছি যে...
-দেখুন । এতক্ষণ আমরা কথা বললাম । নিজেদের পরিচয় পরস্পরের কাছে জানলাম । মানে আমার প্রতি আপনার যে ভয় ছিল , আশা করছি কেটে গিয়েছে । আমরা এখন আর আগন্তুক নই  ।
-সে ঠিক ।
-আমি কিছুটা হলেও পরিচিত আপনার ।
-হ্যাঁ ।
-আমি কিন্তু প্রথমেই আপনাকে বোন বলে ডেকেছি । সম্পর্কে আমি  তাহলে আপনার দাদা ।
-হ্যাঁ ।
-ভগিনীর কাছে বড় দাদা আর বাবার মধ্যে কোন ভেদ থাকা উচিত নয় । আমিও চাইব আপনি মনে আমার প্রতি বিন্দু মাত্র  সংকোচ রাখবেন না।
যমুনা হাসল । এতক্ষণ বাদে তার   শুকনো ঠোঁটে হাসি দেখে , যম কিছুটা আশ্বস্ত হল । মাথার  উপরে রোদের রঙ পাল্টে গিয়েছে । দুপুর বিকেলের আলোয় মিশে যাচ্ছে । নদীর পার  , ফাঁকা  প্রান্তর , দু’পাশে লম্বা গভীর বন । এই সব  কিছু এই সময় অদ্ভুত সুন্দর হয়ে উঠেছে ! যম দাঁড়িয়ে দেখছিল । উল্টোদিকের বনের মধ্যে , তাঁবু পেতেছে ।  গৃহপালিত পশুদের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে ।
-আপনি , বলতে পারেন আপনার যন্ত্রণার  কথা । দেখা যাক না , আজ এক আর্য বোনের চোখের জল , রাক্ষস দাদা মুছিয়ে দিতে পারে নাকি । আপনার মুখে হাসি মানায় । তাই আমি জানতে চাইছি দুঃখের কারণ ।
যম  হাত দিয়ে , যমুনার চোখের জল মুছিয়ে দিল ।
যমুনা কাপড় ঠিক করল । যম , নিজের গায়ে জড়ানো কালো কাপড়টি , যমুনাকে দিয়ে দিল । জড়িয়ে  নিয়ে , যমুনা বলল
-দাদা , আপনি যে বস্ত্রহীন হলেন !
-দাদার বস্ত্র তার ভগিনীর সম্মান । আমি এতটুকু বুঝতে পেরেছি , নারীর সম্মানহানীই তাকে এমন ভাবে ভেঙে ফেলতে পারে । আপনার এই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি চেষ্টা করব।
যমুনা হাসল । 
                                                                              
                                                         ২
সে এক উৎসবের দিন । এই যে বয়ে চলেছে নদী , সেই নদীর তীরেই বসেছিল উৎসব । আমরা বলতাম  যমুনাতটের এই উৎসব , আমাদের একবছরের সব দুঃখ শুষে নেয় । এই বছর আগের থেকে আরও প্রাচুর্য   নিয়ে  উৎসবের আয়োজন করা হল । আমার  বাবাই করতেন । তিনি এই জলাধারের মালিক । এই নদী তার নিজের মেয়ের মতন । আমার নাম এই নদীর নামেই । যমুনা উৎসবের প্রধান কারণ ছিল , পরিবেশে নদীর গুরুত্ব সম্পর্কে আশপাশের জনপদ গুলোকে সজাগ করা । দ্বারকায়  যাদবরা ক্ষমতায় । তারা সমস্ত অঞ্চল দখলে আনতে পারলেও , বাবার কাছ থেকে কখনই যমুনা নদীর মালিকানা আদায় করতে পারেনি । এর আগেও বহুবার সৈন্য দিয়ে চেষ্টা করেছিল । বাবা আর এখানকার জনপদ গুলোর সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে , যাদবরা ফিরে যায় । এই নদীমাতৃক দেশে , নদী যার দখলে ক্ষমতা তার হাতে । কেননা নদীর জল যেমন জনপদ গুলোকে শস্যশ্যামলা  করত । আবার নদীর জলপথ  বানিজ্যে ব্যবহার করা হত । যাদবরা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে চেয়েছিল । এখান থেকেই শুরু হল  লড়াই । তীব্র আক্রোশ । ছোট জনপদ গুলোকে পিষে মারবার চক্রান্ত । কখনো এই যমুনা নদীর জল চক্রান্ত করে দূষিত করা হল ।  এর চারপাশের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করবার জন্য বনভূমি দখল করা হল । তাতেও আমার বাবার মনোবল ভাঙা গেল না। এতদিন যেই সব জনপদ গুলো যাদবদের ভয়ে চুপ করেছিল । তারাও মুখ খুলতে শুরু করল । প্রতিবাদ তৈরি হচ্ছিল ।
একমাস আগে , সকালে  বাবার কাছে যাদবদের তরফ থেকে দূত এসেছিল । যাদবরা তাদের পুত্রবধূ  করতে চাইছে । যাদবদের বড় ছেলে বলরামের জন্য । আমি ওকে আগে একবার দেখেছিলাম । উজ্জ্বল বর্ণের , চওড়া বুক , পেশীবহুল দেহ । নাম করা কুস্তিবীর  । আমি সেই দিন থেকেই তার প্রেমে পড়েছিলাম । বাবা বিয়েতে রাজি ছিলেন না ।  কেননা , বলরামের প্রজাদের তুলনায় সুরার প্রতি  টান ছিল বেশি ।  প্রায় সারাদিন নেশায় ডুবে থাকতেন । এত কিছুর থেকেও লজ্জার ব্যাপার আমার বিয়ের জন্য পণ বাবদ যমুনা নদীর মালিকানা হস্তান্তরের শর্ত  রাখা হয়েছিল ! বাবা এমনটা করতে পারল না , কেননা আমার অপমান আর যমুনার জল পেয়ে যেই সব জনপদ গুলো আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল ছিল , তাদের পেটে ভাত জুটত । যমুনার মালিকানা যাদবদের হাতে চলে গেলে , তারা অতিরিক্ত শুল্ক চাইত । ফলত জনপদ গুলো ধ্বংস হয়ে যেত ।
বাবা দূতকে ফিরিয়ে দিল । আমি কেঁদেছিলাম । বলরামের  জন্য সেই দিন সারারাত ছটফট করেছিলাম । ওর শক্ত বুকে  নিজের মাথা ঘষতে চেয়েছিলাম । এক মুহূর্তে  সব কিছু শেষ হয়ে গেল !
দু’দিন আগে যমুনা উৎসবে বাবা পুরানো সব ঝামেলা ভুলে ,  সকলের স্বার্থে সব  জনপদকে আমন্ত্রণ করেছিল  । যাদবরাও এসেছিল । বলরাম নিজে তার সঙ্গী সাথীদের সাথে যাদবদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিল ।
সব কিছুই ঠিক ছিল । আচমকাই উৎসবের মধ্যে বলরাম সুরায় এতটাই মত্ত হয়েছিল যে , আমায় বলপূর্বক  হাত ধরে টানল । ঘামে ভেজা দেহে আমাকে জড়িয়ে , আমার কাছে সঙ্গম প্রার্থনা করল । আমি  একে কুমারী , তার উপর নারী  । সকলের সামনে বলরামের সাথে সহবাস  করতে রাজি হলাম না ।    সে তখন মাতাল হাতিআমাকে পিষবেই । আমার নারীত্ব হরণ  করলেই তার পুরুষত্ব  তৃপ্তি পাবে । এমনটাই হল । সকলের সামনে , আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ধর্ষণ করল !
যমুনা হাউমাউ করে কাঁদছে । পাশে যম বসে আছে । ওদের এক পাশে গভীর বাকহীন নদী , সেও যে অসহায় মেয়ে । আরেকপাশে গভীর অরণ্য । রাতের অন্ধকারের সে আরও চুপ হয়ে গিয়েছে । মনে হয় এক কালো রেখা বহুদূর চলে গিয়েছে ! পৃথিবীর শেষ প্রান্তে সে গিয়ে মিশবে , যেখানে  ক্ষমতায়ণের  অজুহাতে নারীকে অপমান  করা হয়না ।  নিষ্ঠুরতা ,  হিংস্রতা  আর  কাপুরুষতার পাপকে বীরত্বের  মিথ্যা   স্তুতি রচনা করে ঢেকে রাখা  হয়না , যুগ –যুগ ধরে ।

-দাদা , বাড়িতে বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা । বাবা ভেবেছেন যাদবদের বিয়ের প্রস্তাব দেবেন , সাথে এই নদীর মালিকানার শর্ত  দিয়ে দেবে । আমি জানি তাতেও আমাকে গ্রহণ নাও করতে পারে । আমি খুব অসহায় বোধ করি । দুপুরে , এই নদীর কাছে এসে কাঁদছি । ছোটবেলায় মা মারা যায় । মায়ের জন্য যখন খুব কষ্ট হত , এই নদীর কাছেই চলে আসতাম । এর নাম যমুনাআমাকে এই নদীর নামেই লোকে চেনে । আমি  নদী যমুনার মেয়ে  যমুনা । আজ ভেবেছি রাতে , নিজেকে এই নদীতে ভাসিয়ে দেব । তাহলে  বাবা অসম্মানের হাত থেকে বাঁচবেন আর নদীটাও যাদবদের দিয়ে দিতে হবে না ।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেল , যমুনা । 
মাথায় গোল সাদা চাঁদ উঠেছে । চাঁদের আলোয় ভেসে গিয়েছে , যমুনার চরাচর । কদম গাছের গোঁড়ায় মাথা রেখে , কাঁদছে যমুনা পাশে যম  বসে আছে । বলল
-যমুনা , আপনি জানেন আজকের  দিনটির পরিচয়  ? 
-না ।
-আকাশে তাকান । শুক্লাপক্ষ দ্বিতীয়া তিথি ।
-আমি এত কিছু খেয়াল করিনি
-কার্তিক মাস । হেমন্তের হাওয়া , এখন পৃথিবীতে বইবে । মানুষের ঘরে –ঘরে যাবে ।           ফিস –ফিস  করে শোনাবে , শীত  আসবার সময় হয়ে এসেছে ।  আপনি আমার বোন , প্রিয় বোন । আমি দাদা । এই যমুনার পারের  পলি আমার কপালের টিকা করে   দিন । আজ থেকে  এই মুহূর্ত   ভ্রাতৃদ্বিতীয়া । আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি , আপনার স্মমান আমি ফিরিয়ে দেব ।
-আপনি আমার দাদা । এই আমার কাছে অনেক বড় ।  
-  আমি জানি । আমি রাক্ষস জাতি আমাদের কাছে , আমাদের মহিলাদের সম্মান সবার আগে । এখন থেকে যমুনা হচ্ছে যমের বোন । তাই তার সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষার দায় এই যমের , আমি তা রক্ষা করবই । আমি দ্বারকায় যাচ্ছিলাম এই   গৃহপলিত পশু গুলোর জন্য । দ্বারকাপতি আমাদের  ব্যবসায়িক স্বার্থে ডেকেছেন । এই  উন্নত মানের গবাদি পশু আপনাদের এখানে নেই । বুঝতেই পাচ্ছেন , যাদবরা নিজেদের স্বার্থে  আমার কথা শুনবে ।
-কী বলবেন  ?
-যমুনা আমার বোন । তাকে বিবাহ করতেই হবে । এই বিবাহে যাদবদের সম্মান বাড়বে । রাজনৈতিক আর ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষিত হবে
-তারা এক নাম গোত্রহীন কন্যাকে গ্রহণ করবেন কেন ?
-করবেন । কারণ দ্বারকায় শ্রী  কৃষ্ণ আছেন । উনি রাজনীতিটা ভালোই বোঝেন  । উনি জানেন ক্ষমতা ধরে রাখবার জন্য সহিষ্ণুতাও দরকার ।
-আর বলরাম ?
-তাকে রাজি করাবো ।
-কেমন করে ?
-আমার জীবনের এক সত্য ঘটনা বলে । যার জন্য আপনার কাছে আসা ।
-মানে ?
-আপনি আর আমি এক দুর্ভাগ্যজনিত   পরিস্থিতির স্বীকার । আমরা দু’জনেই যে পূর্ব পরিচিত । এক ভয়াবহ স্মৃতি আমাদের পূর্ব জন্ম থেকে তাড়া করে চলেছে । আপনার মনে নেই ।আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি ।  মন দিয়ে শুনবেন ...  

                                                               ৩
সত্যযুগের আগে আরেকটা যুগ ছিল এই সময়কে  সংহিতা  যুগ বলা হত সেই যুগে নারী ছিল স্বাধীন সে পুরুষের দাসত্ব তখনো গ্রহণ করেনি যৌন স্বাধীনতা উপভোগ করত সমাজে তখনো নিয়ম তৈরি হচ্ছে এই সব নিয়ম গুলো কখনো ভাঙছে , আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে চাপিয়ে দেওয়া নীতি আমরা রাক্ষস জাতিরা কখনই মেনে  নিতে পারিনি কেননা  আমাদের ভাষা , সামাজিক রীতিনীতির  প্রতি আমরা দায়বদ্ধ আমাদের সভ্যতা সেই যুগেও ছিল মাতৃতান্ত্রিক  এই সংস্কার আমাদের  কাছে  গর্ভধারিণী , তাই কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা একে  ছাড়তে পারব না   চিরকাল এক দর্শনের বিপরীতে সম্পূর্ণ বিরোধী দর্শনের উত্থান দেখা গিয়েছে এই উত্থান ঘিরে সেই সংহিতার যুগেও শুরু হল লড়াই তখন  দেবতাপন্থী দর্শন ক্রমশই   আমাদের বিরোধী হয়ে উঠতে লাগল ইন্দ্র গোষ্ঠীর দেবতারা অহেতুক আমাদের রাক্ষস জাতির শান্তি ভঙ্গ করতে শুরু করল আমাদের  উপাসনার জায়গা , খনিজ সম্পদ , জল সীমা , প্রাকৃতিক সম্পদ , লোকালয় আর হ্যাঁ আমাদের মহিলাদের প্রতি তাদের নজর গেল ! তাদের কাছে রাক্ষস জাতির মহিলারা খুবই মূল্যবান সম্পত্তি হয়ে উঠল ।আমরা নারীদের আমাদের সভ্যতার প্রান স্বরূপ মনে করি , ইন্দ্রপন্থী দেবতাদের কাছে তারা ছিল বিশেষ ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভবান পণ্য বিশেষ । এখান থেকেই আমাদের আর ওদের দর্শনগত  সংঘাত শুরু হয়ে ছিল ।
এমনই পরিস্থিতি  চলছিল তখন । রাক্ষস জাতির হয়ে যিনি  নেতৃত্ব দিলেন , তিনি যম । যমের পরিচয় দিচ্ছি । ইন্দ্র গোষ্ঠীর বিপক্ষ শিবিরের মধ্যে সূর্য  শিবির ছিল । তাদের প্রধান গোষ্ঠী পতির নাম সূর্য ছিল । এই গোষ্ঠীর কাজ পৃথিবীতে আলো আর অন্ধকারের উৎস আকাশের সূর্যের গতিবিধি , উপযোগিতা আর সেই সংক্রান্ত যাবতীয় জ্ঞানের চর্চা করা । ইন্দ্রের উগ্রতা আর একনায়কতন্ত্র এতটাই বাড়তে শুরু করল যে , সূর্য গোষ্ঠীর কাছে  আর মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তারা ইন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামতেও পারছিল না। সূর্য  গোষ্ঠীর প্রধানকেও সূর্য বলা হত ।  তার একজন কন্যা সন্তান জন্মায় । দেব নারীর গর্ভেই সেই কন্যার নাম হয় যমী । এদিকে সূর্যের  বহু দাসীর মধ্যে  একজন খুব প্রিয় ছিলেন । তিনিই যমকে জন্ম দিয়েছিলেন । পাছে এই রাক্ষস জাতির সন্তান দেবতাদের সিংহাসনে বসবে , এই নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে কোন ঝামেলা না হয় , তাই যমের জন্মের সাথে –সাথে প্রচার করা হয়েছিল যম আর যমী যমজ   ভাই –বোন । সূর্য অবশ্য চাইছিল যমকে ইন্দ্রের বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করাতে । কেননা এতে রাক্ষস জাতির সাহায্য পাবে । একা কোন ভাবেই ইন্দ্রকে যুদ্ধে পরাজিত করা সম্ভব নয় । ধীরে –ধীরে যম , যমীর সাথেই সূর্য মহলে  থাকতে শুরু করল । যমকেও এক দেবতার মতনই  সেবা করা হত । সমস্ত অস্ত্রের প্রয়োগ শেখানো হল ।  সাথে , দেবতাদের একান্ত শিক্ষা , সংস্কার দেওয়া হল এত কিছুর শেষেও  যমের ভিতর থেকে রাক্ষস জাতির সত্ত্বা মুছে গেল না । বরং  ক্রমশই তার জনপ্রিয়তা , অতি অল্প বয়সেই ইন্দ্রকে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দিল ! এখন সূর্যের স্বপ্ন সফল হবে । কেননা ইন্দ্রের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে যম । রাক্ষস জাতির প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করলসূর্য ঠিক করে ফেলল , পরবর্তী গোষ্ঠীপতি যমকেই করা হবে ।
যম তখন যুবক । যমীও যুবতি  হয়ে  উঠেছে ওরা দু’জনেই নির্জন দ্বীপে ঘুরতে গিয়েছিল ।  সেই দিনও আকাশে হাল্কা মেঘের খেলা চলেছে । পাখিদের গলার আওয়াজে , গাছের শাখা গুলো ভরে থাকত । দ্বীপের সীমা বরাবর সমুদ্রের এগিয়ে আসা আর পিছিয়ে যাওয়ার খেলা চলছিল । সমুদ্রের জলের উচ্ছ্বাস যেন গিলে নেবে ! আবার মুহূর্তেই  তা ফিরে যাচ্ছে ! সূর্যের অনুপস্থিতিতে  যম আর যমী নিজেদের মতনই একান্তে এই দ্বীপে সময় কাটাবে । এই ইচ্ছা  অবশ্য  যমীরই । তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হয়েছিল যমের । কেননা যতই সে ছোট বেলা থেকে অনেক আদর আর বিলাসিতায় মানুষ হইয়েছিল , পরিণত বুদ্ধি হওয়ার সাথে –সাথে টের পাচ্ছিল—তার সাথে সূর্যের  পরিবারের সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই মালিক আর প্রভুর । শুধু এমনই নয় , যমীর ব্যক্তিগত কাজের দায়িত্ব পর্যন্ত যমকে দেওয়া হত ।
এক হেমন্তমুখরিত ভোরে , যম আর যমী একান্তেই সূর্যমহল ত্যাগ করে দ্বীপের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল । তারা একটি দ্বীপে এসেছিল । যমী শক্ত বৃক্ষের  ছাল   নিজের দেহের নীচের অংশে   পড়েছিল । কোমর থেকে বুক পর্যন্ত ঢাকা   ছিল চামড়ার পোশাকেখোঁপায় সাদা- সাদা রঙিন ফুল । যমের পোশাকটি  শুধুই কালো ষাঁড়ের চামড়ায়  তৈরি  । এটাই তার খুব প্রিয় পোশাক ছিল ।  
যমী বলল – তুমি কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবে ?
যম বলল – এই সমুদ্র গর্ভে কাঁকড়া প্রচুর পরিমানে আছে । চাইলে সমুদ্র মাছের ব্যবস্থাও করতে পারি
যমী আর যম মুখোমুখি বসে ছিল । সমুদ্রের গর্জন তাদের কান গুলোকে মাতিয়ে রেখেছে । দু’জনেই  হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে ;  নরম  বালির উপর গর্ত হয়েগিয়েছে ।
-আমার চোখের দিকে তাকাও
-খুব সুন্দর !
-তাই ?
-হ্যাঁ , সমুদ্রের জলের মতনই আকর্ষণ করছে ।
যমী হাসল ।
-তোমার হাসি যেন , সমুদ্রের বুকে জমতে থাকা শুভ্র ফেনা !
-তাই যম !
-সত্যিই । আমি মিথ্যা বলিনা ।
-যম তুমি আমার ঠোঁট  ,  মাথা , চোখ দেখেছো । কখনো আমার  বুক দেখেছো ? আমার থাই? আমার যোনি ?
এই সব শব্দ গুলো এই প্রথম শুনল ! যম বুক শব্দটা শুনেছে । বাকী কিছুই শোনেনি । এতটুকু বুঝতে পাচ্ছে , এই সব গুলোই নিষিদ্ধ । সবার সামনে সূর্য মহলে যমী বলতেই পারত । এমন কিছু না করে , এই  এত দূরে নির্জন দ্বীপে নিয়ে আসবার পিছনে  রহস্য আছে ।
যমী হাসছে । 
-যম তুমি তোমার সব পোশাক খুলে ফেল ।
-কেন ?
যম ঘাবড়ে গেল । তার মুখে ঘাম জমে উঠছে ।
যমীর মুখে এতটুকু পরিবর্তন  নেই । 
-তুমি পুরুষ । তোমার যৌনতায় এত অনীহা   কেন ? আমি নারী হয়ে যদি আত্মসমর্পণ করতে রাজি থাকি  , কেনইবা তোমার এই ভীরুতা ।
-আমার মনে হচ্ছে , আমাদের মহলে ফিরবার জন্য প্রস্তুত হতে হবে । আমি কিছু খাবারের সন্ধান করছি  ।
যমী  আচমকাই বুকের  পোশাকটি খুলে ফেলল ! যম দেখছে , দিনের আলোয় যমীর নগ্ন বুকের ভাস্কর্য ! দুটো নরম তুলতুলে  বিভক্ত মাংস পিণ্ড । গোঁড়ায় গোলাপি আভায় মুড়ে থাকা ক্ষুদ্র –ক্ষুদ্র  ফুটকি ।
-যম , এই দুটো হচ্ছে স্তন । এই হচ্ছে স্তনবৃন্ততুমি ঘামছ কেন ?
-এই সব আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে । ফেটে যাচ্ছে ভিতরটা । যমী তুমি কেন এমন করছ /
-তোমাকে আমার চাই । তুমি চাওনা ?
-জানিনা ।
-এসো এই খোল আকাশের তলায় আমরা , একে অন্যের শরীরে প্রবেশ করি ।
-না।
কিছুক্ষণের জন্য যমীর কান যেনও , সমুদ্রের বিস্ফোরণ শুনল !
-মূর্খ । তুমি আমার দাস । মি যা চাইব , তা করতে বাধ্য ।
-আমি জানি , আমি  পিতার পালক  সন্তান । আমরা দু’জনেই যমজ ভাই বোন । পিতা তেমন ভাবেই লালিত করে এসেছেন ।
-তাই বলছি । মনিবের ঋণ শোধ করো । আমিও তোমার মনিব , আমাকে সেবা দাও । আমাকে ঠাণ্ডা কর ।
-এমনটা আমি করতে পারব না। আমরা সম্পর্কে ভাই বোন । ভাই আর বোন কখনই স্বামী –স্ত্রীর মতন সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে না। এই অবস্থা তাদের কাছে পাপ । অনৈতিক ।
-কাদের কাছে ?
-সমাজের কাছে ।
-কোন সমাজ ?
-যেখানে মানুষ বসবাস করবে ।
-যম   ,দেবতারাই শেষ কথা বলবে । তুমি আমার দাস ।আর দেবতারা দাসদের সম্পত্তির মতন ব্যবহার করবে । এটাই তোদের ভাগ্য...
যমীর ভাষার এই অদ্ভুত পরিবর্তনে  যম ভীত হয়ে উঠল ।
-এমন ভাবে রেগে গেলে কেন ? আমি ভুলটা কী বলেছি ?
-নিজের মালিকের কথা না শোনাটাই , তোর অপরাধ । 
যম মাথা নামিয়েছে ।
-আমরা ভাই আর বোন । আমরা কেমন ভাবে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারি ! এটা সম্ভব নয়
-কেন ? আমরা পরস্পরের কাছে পরিচিত । আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি , পরস্পরকে এই আনন্দটুকু দিতেই পারি । আমাদের জন্মদাতা পৃথক নন । আমাদের দু’জনেরই জন্ম মায়ের গর্ভেমানে আমরা  দু ‘জনেই মানুষ । এতে আপত্তি কেন ? আমার এটাই আদেশ ।
যমী দু ‘হাত , যমের কাঁধের উপর দিয়ে নিয়ে মাথাটা ধরল । যমের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলল
-এই নারী শরীররে স্বাদ এখনো পাওনি , মূর্খ । আমি তোকে এই এখনই ভোগ করব আমি এক দেবতার মেয়ে । তোর চেয়ে উচ্চ বংশ আমার । আমাকে ভোগ করতে , দেবতারা প্রস্তুত । আমি  সেই  সুযোগ তোকে দিলাম । আমার নরম আর কাঁচা মাটিতে প্রথম তুই হাল টানবি । তোকে সেই সুযোগ দিচ্ছি ।
-আমি এমনটা করতে পারিনা । রাক্ষস জাতির অসম্মান  হবে ।
-আমরা আমাদের রমণ , সুখ , খাদ্য আর সাম্রাজ্যের বিস্তার নিয়ে ভাবি । রাক্ষস জাতির কিছু ভালো থাকতেই পারেনা । আয়...
যমী হাত ধরে যমের ঠোঁট , নিজের ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে নিল । মাথার উপরে আকাশ , সেখানে  সেই সময় দুপুরের  রাগি  রোদ হারিয়ে গিয়ে , বিকেলেরব নরম  আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে ! সেই আলোয় যমের কালো পাথরের মতন দেহটায় , আটকে আছে  অপরূপ সুন্দরী যমী । দু’জনের দেহে কোন কাপড় নেই । যমী জীবনে প্রথম কোন পুরুষের  শরীর ভোগ করছে ।

 সূর্য ডুবে যাওয়ার যে সময় , তার কিছুটা আগে হবে । যমী আর যম পাশাপাশি শুয়ে রয়েছে । যমী মুখের উপর হাত রাখল । যমের বুক উঠছে আর নামছে ;  সাথে ঠাণ্ডা  স্রোত মেরুদণ্ড থেকে বয়ে চলেছে । এক রাক্ষস জাতির পুরুষ হয়ে সে দেবতার মেয়ের সাথে সঙ্গম করল ! এই খবর যদি ইন্দ্রের কানে যায় – সে আরও অত্যাচার শুরু করবে অসহায় রাক্ষস জাতির উপর। সূর্যের মেয়ের সাথে এই জঘন্য ব্যবহাররে  জন্য , সেও সাহায্য করবেনা ।  ভাই হয়ে বোনের সাথে পাপাচারে লিপ্ত হল ! এই অবনতির জন্য যম নিজেই , নিজের কাছে ছোট হয়ে গেল ।
যমের দু’চোখ বেয়ে জলের রেখা নামছে ।
যমী হাত দিয়ে , যমের গালে বেয়ে নামা জল মুছে বলল – আমি জানি , তোমার সাথে যেই ব্যবহার করেছি , তা উচিত হয়নি । আমি তোমায় ভালোবাসি  । হতে পারে আমরা যমজ      ভাই –বোন , তাই বলে ভালবাসতে বাধা কোথায় ! জীবনে যৌনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । হলামই বা যমজ আমরা , নিজেদের ইচ্ছা দমিয়ে রেখে কিছু লাভ নেই । আমাদের গোষ্ঠীগত জীবন ধারায়  স্ব-গোষ্ঠীর  মধ্যে যৌনাচারে লিপ্ত হওয়া পাপ নয় ।
-আমার কাছে পাপ । আমি পাপী । আমার এই সময়েই মারা যেতে ইচ্ছা করছে ,
যমী বল – তুমি বসো , আমি তোমার জন্য জলের ব্যবস্থা করছি ।


যমী দু’ হাতের তালুতে জল নিয়ে আসল । দেখল সামনে যম লম্বালম্বি ভাবে শুয়ে আছে । যমী বলল – যম নাও , জল খাও  সুস্থ হও ।
যমের  মুখে কোন পরিবর্তন নেই ।  লক্ষ্য করল নিঃশ্বাস নামছে –উঠছে না ! মাত্র কয়েক মুহূর্তে  যেন পাল্টে গিয়েছে ! যম  এখন মৃতদেহ !!

যমুনা অবাক হয়ে , তাকিয়ে আছে !
-যম মৃত্যুকে ডেকে নিল ।

রাত নেমেছে । চাঁদের আলোয় নদীর শান্ত জলধারা  নিজের মতন বয়ে চলেছে । তারই পাশে বসে আছে দু’জন মানুষ । নর আর নারী । যম আর যমুনা । যমুনা লাঞ্ছিত যাদবপতি বলরাম , তাকে জনসমক্ষে ধর্ষণ করেছে । যম তার পূর্বজন্মের ঘটনা বলছিল । যমুনাকে বলল
-বোন , তুমি  আর আমি সূর্যের সন্তান । আমাদের মা পৃথক হলেও , পিতা একজনই । আমরা যমজ ভাই আর বোন । সেই  সময় আমি তোমার সাথে এক অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হই । দেবতারা অভিশাপ দেয় । আমার বিনাশ হয়েছিলআমার আত্মা ন্রকে ঘুরছিল । দেবতারা আমাকে সুযোগ দিল । তারা জানাল , যেহেতু আমি পাপী আর  নিজেই নিজেকে শাস্তি দিলাম , তা দেখে তারা খুশি হয়েছে ।  আমি যদি পরের জন্মে এক কঠিন তপস্যায় মগ্ন থেকে  মৃত্যুবরণ  করি ,  তখনইআমার মোক্ষ লাভ  হবে এমন ভাবেই আমি তপস্বী হয়ে উঠলাম । এখন জন্মে আমি মৃত্যুর দেবতা হয়েছি 
-আমি বিশ্বাস করতে পারছি না!  
-সত্যিই । দেখছ না , আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারলাম । এমনটা শুধু মাত্র দেবতারা  করতে পারে । আমি  রাক্ষস জাতির দেবতা । আমার  এই দৈব ক্ষমতার কথাই বলরামকে জানাবোসাথে বলব , আমার পূর্বজন্মের অপমৃত্যুর ইতিহাস । যে পুরুষ বল পূর্বক কোন  নারীকে অপমান করে , তার সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয় , সে মহাপাপী  আমি হলাম মৃত্যুর দেবতা । আমি তাকে নরকে প্রবেশ করাই । আমার কোপে তার সাম্রাজ্য , জীবন  ধ্বংস হয়ে যাবে । আমি কখনও ধর্মচ্যুত  হইনি আর হবনা । বলরাম এই পাপে আগে থেকেই যুক্ত হয়েছে । শাস্তি তাকে পেতেই হবে । তুমি আমার বোন , যমের বোন যমুনা । আমরা ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার    বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি । এমন অবস্থায় , সে যদি তোমাকে  রাণীর  মর্যাদা দেয় , তবেই এই পাপ থেকে মুক্তি পাবে ।

যমুনা চেয়ে আছে , এই রাক্ষস জাতির দেবতা সত্যিই তার জীবনে শিবের বর হয়ে এসেছে ! সে রাক্ষসদের সম্বন্ধে এতদিন যত কিছু শুনে ছিল , সবটাই মনে হচ্ছে ভুল ! এত উদার আর ভদ্র , দয়ালু  দেবতা সে দেখেনি । এই প্রথমদার নিজেকে রাক্ষস জাতির কন্যা বলে ভাবতে ইচ্ছা হল । বলল
-আমি রাক্ষস কন্যা । এই পরিচয় আমার কাছে যথেষ্ট ।
যম হাসছে
-প্রিয় যমুনা , কোন জাতিকেই তার  খাদ্যাভ্যাস  , বর্ণ , ভাষা  , পোশাক দিয়ে বিচার করা যায়না। কেননা জন গোষ্ঠী তার নিজের মতন করে নিজেদের তৈরি করে । পৃথিবীতে কোন সম্পূর্ণ নর গোষ্ঠী নেই , যারা বলতে পারবে তারাই শ্রেষ্ঠএই সেরার দাবি  আসলে হাস্যকর । তুমি বলেছিলে রাক্ষসরা বলপূর্বক নারীদের অপহরণ করে , ক্ষমতা দেখায় , যুদ্ধ করে , সম্পত্তির জন্য যে কোন কিছু করতে পারে । ছলনা করতেও তাদের বুক কেঁপে ওঠে না ! বলরাম তোমার সাথে যে ব্যবহার করেছে , তাতে বলা যাবে দেবতারাও কোন অংশে কম যায়না । আমরা তবু নারীদের সম্মান  করি , দেবতারা নারীদের ভোগ্য বস্তু মনে করে । এই অসভ্য লোকটাকেই তোমাদের অনেকেই দেবতা মনে করো ! তার হয়ে স্তুতি বন্দনা করো ! আমি এখানে এসে কৃষ্ণ আর তাঁর দাদা বলরামের ক্ষমতার কথা , দেবতা হয়ে ওঠার কাহিনী শুনেছি ।   তোমার মুখে বলরামের  চরিত্রের    কথা শুনলাম ।

যমুনা বলল – দাদা , যদি বলরাম তোমার কথা বিশ্বাস না করেন ।
যম আবার জোরে হেসে উঠল ।
-আমি মৃত্যুর দেবতা । আমি যম । আমাকে অস্বীকার করবে এমন কেউ এই পৃথিবীতে নেই । তুমি বিশ্বাস করেছো ?
-হ্যাঁ ।
-যাদবরাও বিশ্বাস করবে । দেখো  চারদিকে  ভোরের চিহ্ন দেখা দিচ্ছে । আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাত মুছে , সরল আলোয় ভেসে যাবে চরাচর , সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে । আমি তাঁবুতে যাচ্ছি । দাসীদের  পাঠিয়ে দিচ্ছি । মুখ ধুয়ে , নতুন কাপড় পড়ে , যমের বোন রাক্ষস কন্যা যমুনা হয়ে আমার তাঁবুতে আসবে । মনে রেখো ,যে জীবন তুমি কাটিয়েছ তা গত রাতের সাথেই অতীত । এই মুহূর্ত  থেকে , তুমি রাজকন্যা । মৃত্যুর  দেবতা যমের বোন যমুনা । ...

যম নিজে জানে , এই আর্যভূমিতে যাদবদের সাথে ব্যবসায়িক কারণ ছাড়াও অন্য আরেক গোপন উদ্দেশ্য আছে । সেই উদ্দ্যেশ্যের জন্যই তাকে একটা কাহিনীর বাস্তব রুপ দিতে হয়েছে। লোকে ভাবে যম হয়ত আগের জন্মের তপস্যার ফলে রাক্ষস থেকে দেবতা হয়েছে । যমের পূর্বপুরুষ কোন সময় সূর্যের পালিত সন্তান ছিলেন । সে কয়েক প্রজন্ম আগের কথা । তার  আচমকাই নির্জন  দ্বীপে  মৃত্যু হয়েছিল । সে নিজের বোনের সাথে সঙ্গমে রাজি ছিলনা , তাই  নাকি নিজেই আত্মহননের রাস্তায় যায় ।
এটা কি যথার্থ কারণ ? অনেক প্রশ্নই থেকে যায় । নির্জন দ্বীপে যম আর যমীর মধ্যে শারীরিক  সম্পর্ক হয়েছিল । এই ব্যাবহার গোষ্ঠীবদ্ধ । সংহিতা যুগে খুব সাধারণ । আচ্ছা যদি সঙ্গম হয়েই থাকে , তবে তারা নিজেদের থেকে দূরে চলে গিয়ে , এই গোপন ঘটনাকে ঢাকা দিতে পারত । তা না করে , আত্মহত্যা কেন ? আর যদি সঙ্গম না হয়ে থাকে তাহলেই বা কেন আত্মহত্যা করবে ? সমাজের কোন দিক আর নীতি  এই সম্মিলিত খুনের পিছনে আছে ? এক রাক্ষস জাতি , যে ক্ষুদ্র মানুষ থেকে কোন মহিমায় দেবতা হয়ে গেল ? ষড়যন্ত্র ... যমের মনে হল , তার এই বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত ‘মৃত্যু দেবতা’ র স্থান, আসলে এক দেবতার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ । এর পিছনের খলনায়ককে খুঁজতেই হবে ।
যম দু’হাত কোমরে  রাখল , আর হাসল । মনে –মনে বলল , আগের দিন দুপুরে এসেছে আর গোটা রাত গিয়েছে কেটে ! সে তার  অমাত্যদের  বলে এসেছিল , কেউ যেন বিঘ্ন না ঘটায় । যমুনা নদীর  মাথায়  সুন্দর বিকেলের আলোয় , যে অদ্ভুত সৌন্দর্য ছড়ায় , কথায় –কথায় তাও দেখা হয়নি । সেই সময় যমুনা তার গল্প শোনাচ্ছিল । এক বিকেলের অপমৃত্যুর  মুহূর্ত  , মনে হচ্ছিল তারা উদযাপন করছিল !





সম্পা দত্ত

নিঃশব্দ কফিনে লেগেথাকা রক্তের দাগ
সূর্যনীল চলে যাবার পর থেকে ঈন্দ্রাক্ষী বাপের বাড়িতেই রয়ে গেছে টানা একবছর হতে চলল। আজকাল মনটা বিষাদ গ্রস্থ হয়ে থাকে। বারবার  সূর্যের কথাই মনে আসে।  কলেজে যাবার পর থেকে কিছু টা মন ভাল হলেও, দেবাংশু তাকে বিরক্ত করে চলছে।
ফোন নং চাই, যদিও অনিচ্ছা সত্বেও দেয়া,, সে মেসেজে জ্বালাতন করে রোজ। এভাবে চলেনা কারো জীবন । নুতন করে আবার ভাব কিছু। আমি তোর পাশে আছি। কত কিছু।
আবার নুতন করে জীবন টা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। সকাল সকাল কলেজ যাবার তাড়া, টিউশন পড়া শত ব্যস্ততায় নিজেকে জড়িয়ে রাখে---পুরোনো কথা যেনো না মনে পড়ে। বাড়ির কেউই চায়না আগের কথা মনে করে ঈন্দু মনে কষ্ট পাক। সবাই সেদিকে খেয়াল রাখে।
কিন্তুু আজ যে ওর অন্যরকম লাগছে। দিনটি যত কাছে আসছে ততই ওর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে হু হু করে ওঠে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতেও পারেনি। সকালে ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ আটকে যেতেই কেঁদে উঠল। আবার কেউ যেনো বুঝতে না পারে নিজই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।
ঈন্দ্রাক্ষী ভীষন সুন্দরী। স্মার্ট দেখতে। এখন আবার কলেজে ইংরেজী অনার্সে ভর্তি হয়েছে। ক্লাস টুয়েলভে থাকতেই সূর্যর সাথে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিল। মন্দিরে মালাবদল। বাবা মা মানতে পারেন নি। দুজনকে নিয়ে এসে বাড়িতে আবার বিয়ে দিয়েছেন।
ওদের কত খুনসুটি। দুজনের মজা ও কম ছিল না। ঝগড়া হলেই চিরকূট আদান প্রদান করেই কথা বলত।
সূর্যের বাইশ ঈন্দ্রাক্ষির আঠারো।জম্পেশ প্রেম ছিল ওদের। বেশ মজাতেই চলছিল ওরা।
গতরাতে ঘুম ভাল না হওয়াতে সকাল থেকেই একটু আনমনা ছিল। ঘুম ভেঙে ডিভানের সামনে ক্যালেন্ডারে চোখ পড়ল। তারিখটা দেখে অস্থির হয়ে গেল। ডিভানের পাশে সূর্যের ছবিটা বুকে আগলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। এ ব্যপারটাতে একটা সময়ের  গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে । এ ক্ষত কোনো অষুধেই তা সারবে না।
মন না চাইলেও কলেজে ক্লাসগুলো করে সোজা বাড়ি চলে এল। চুপ করে বসে থাকতে দেখে মা বললেন--- আজ তাড়াতাড়ি চলে এলি।
ভাত খাবি আয়।
অাজ ওর খেতে ও ইচ্ছে করছে না । স্কুল থেকে ফেরার পথে রজনীগন্ধার মালা, মিষ্টি এনে সূর্যের ছবির সামনে দিয়েছে। এখনো স্পষ্ট চোখের সামনে দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে --- কফিনে সাদা চাদড়ে  মোড়া ক্ষত-বিক্ষত সূর্যের চেহেরা টা,, ও চিনতেই পাচ্ছিল না।রক্তগুলো শুকিয়ে কাঠ,,,, চাপ চাপ রক্ত লেগে, উফ্ সেকি যন্ত্রণা ------
সেদিন ----বাড়ি থেকে বের হল গাড়ি নিয়ে তাড়া নিয়ে। কদিন আগেই গাড়ির হিটল্যাম্প, অল্টারনেটর সব চেক করে শোরুম থেকে গাড়ি সার্ভিসিং করে এনেছিল।
যাবার সময় বলে গেছিলো ঈন্দু তুমি স্ন্যাকস  ভালবাস তোমার জন্যে আজ স্ন্যাকস আর  ম্যাটফিনিশ ল্যক্ মে  লিপস্টিক নিয়ে আসব। সন্ধ্যে বেলা জমিয়ে আমরা কফি খেয়ে আড্ডা দেব। কাকিমনি কে ফোন করে দিও, চলে আসে যেনো।
কাজটা সেরেই চলে আসব। কথাগুলো কানে বাজছে আজও। সন্ধ্যে বেলায় সবাই মিলে টিভি দেখছিল সেদিন। এরই মধ্যে ফোন এল, কে একজন ফোনে কি বলল, শ্বাশুড়ি মা জ্ঞান হারালেন।  থমথমে পরিবেশ তৈরী হল ঘরের।একটি মাত্র ছেলে তাঁর। ঈন্দুর বয়সী আর এক মেয়ে আছে তাঁর। ননদ-- ভাই বউ --তে মিলমিশ ভালই আছে ঈন্দ্রাক্ষীর। বোন তিয়াসা  দিশেহারা দাদা দাদা বলে,,, পূজোর কদিন আগেই এই ঘটনা----কালীপূজো ভাইফোঁটা,,, কাকে দেবে ফোঁটা। অস্থিরভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ছে তিয়াসা। লোকজন জমায়েত শ্বান্তনা কে কাকে দেবে।
কফিনবন্দী সাদাকাপড়ে মোড়া, সূর্যের দেহ নৈঃশব্দ চিরকূটের পাতাই রয়ে রইল।
বিকেলে হাই রোড দিয়ে গাড়ি নিজেই চালিয়ে আসছিল সূর্য। অন্ধকারে দেখতে পায়নি রাস্তার পাশে বালি-বজরির বিশাল স্তুুপ। ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সব শেষ।মুখের বাঁ দিক ভীষণভাবে হাড় ভেঙে গেছে। মাত্র তিনমাস খুব কাছ থেকে দুজন দুজনকে জেনেছিল চিনেছিল। এরই মধ্যে সবশেষ।
শ্বাশুড়ি মা  ঈন্দুকে ওর বাবার কাছে দিয়ে গেছেন, বলেছেন আমার ঘরে ও একজন আছে,যা দিনকাল কখন কি হয় সমাজ সংসার লোভ লালসার শিকার। তা ছাড়া ঈন্দু সুন্দরী ,, ভয় হয় ওকে রাখি  কি করে, ওকে আপনারাই রাখুন। ভালো থাকবে আপনাদের কাছে। মন টা ও একটু চেঞ্জ দরকার। পড়াশুনাটা আবার শুরু করুক। আমি নিজের অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকি। লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাড়াক স্বাবলম্বী হোক।
এসব অকারন ভাবতে ভাবতে ভাবনার  অতলে চলে যায়--মায়ের  ডাকে বাস্তবে ফেরে।
---কিরে  তাড়াতাড়ি খেতে আয়!!
--আসছি মা।
সূর্যর ছবিটাতে মালা ঠিক করতে করতে বলে তুমি খুব ভাল আছো তাই না গো। আমাকে একা ফেলে কি দোষ করছিলাম আমি, আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
চোখ জলে ভরে ওঠে ---- কান্না ঢাকতে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়----এই সময় দেবাংশুর ফোন আসে---
---কিরে এখন ও মন খারাপ করে বসে আছিস।
সন্ধ্যেবেলা রেডি হয়ে থাকবি আমার মা বাবা তোর সাথে কথা বলতে আসবেন,, কি রে কি হল চুপ ক'রে আছিস যে--
ঈন্দ্রাক্ষীর বুকের ভিতরটাঢ় ----নিঃশব্দ কফিনের রক্তের দাগের মত চরচর ক'রে ফেটে উঠতে লাগল।
রান্নঘরে গিয়ে দেখে মা ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছেন-----

(সত্যি ঘটনা অবলম্বনে---নাম পরিবর্তিত।।)






পিয়াংকী মুখার্জী 

ওয়ালপেপারে পরকীয়া


"মান্তাসা, আমার হাত দুটো ধরে থেকো , যে কোন পরিস্থিতি আসুক না কেনো ,আমায় ছেড়ে যেও না , তোমায় আর্থিক সুখে কতটা ভরাতে পারব জানি না তবে মানসিকে  সুখী করবো....কথা দিচ্ছি... সন্ধ্যার পড়ন্ত গোধূলিকে সাক্ষী করে "বলল লাজুক সৌম্য ॥

"মা, আঁকার ক্লাস এবার শুরু হয়ে যাবে , স্যার ঘরভর্তি বন্ধুদের সামনে আমায় বকা দেবেন...তাড়াতাড়ি চলো মা , তুমি কী করছিলে এতক্ষণ জানালার ধারে বসে...এখন শাড়ি পড়বে....সাজবে...কত্ত দেরী...উফফ কী যে ভাবো সারাদিন ?"....রিয়াসের ডাকে সম্বিত ফিরল মান্তাসার । রিয়াস এখন সবে এগারো , এখন ই সে মা কে কত্ত গাইড করে !! আরো একবার ছেলের বড় হতে থাকাটা অনুভব করল ও । বহু পুরোনো স্মৃতি প্রায় চোদ্দ বছর আগের , আজ ও বর্ষার জলে ভেজা সবুজ ঝকঝকে পাতার মতো তন্বী । ওগুলোই ভাবছিলো বসে মান্তাসা,,,, সুখী স্মৃতি , ভাবতেও যেন ভাললাগে ওর । কিছুটা সময় অন্তত দুর্ভাগ্যকে ভুলে থাকার একটা রাস্তা ওটা । 

সৌম্য কত্ত ভালবাসত ওকে ! কিছুতেই কাছছাড়া করতে চাইত না , সন্ধ্যে নেমে আসত , শঙ্খের শব্দে গঙ্গার পারে বারবার ইকো হোত আর ততবার সৌম্য বলতো চিত্কার করে..."মান্তাসা , তোমায় আমি বড্ড বেশী ভালবাসি "....আজ শরতের এই নীলচে বিকেলে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে ওকে , নিজের মনে অজান্তেই বলে উঠল মান্তাসা!

বিয়েতে রাজি ছিলো না ওর বাবা , পাত্র সরকারি চাকুরীজীবী নয় তাই । তাই বাধ্য হয়েই সৌম্যর হাতদুটো ছেড়েছিল ও । বাবার দেখাশুনা করা কাস্টমস এর গেজেটেড অফিসারের অচেনা হাতে রাখতে হয়েছিল সৌম্যর জন্য রাখা হাতদুটো !

বিয়ের প্রথম রাতেই মান্তাসাকে চরম অপমানের সন্মুখীন হতে হলো , শুনতে হলো শাঁখা পলা সিঁদুর আর টাকা পয়সা...এছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না ওর সামাজিক স্বামী ঋজু ॥
বৈবাহিক জীবনের বিলাসিতা বৈভব আর অর্থহীন অর্থ...এ সবকিছুই দিলো উজাড় করে মান্তাসাকে ওর ভাগ্য কিন্তু কেড়ে নিল স্বামীপ্রেম আদর সোহাগ ভালবাসা , সব ॥

ঋজু তো বহু-মহিলা-সিক্তা!

স্ত্রীর প্রতি তার ঔদাসীন্য মন্তাসাকে ঠেলে দিলো ভরা সমুদ্রের অথৈ জলে , পুরোনো প্রেমকে পরকীয়ায় পরিণত করতে । আজ মন্তাসা শাঁখা সিঁদুর পড়ে বটে কিন্তু কার জন্য পড়ে জানতে চাইলে ও গলা ফাটিয়ে নির্ভয়ে বলবে যার নাম সে সৌম্য !

তেত্রিশ বছর বয়সী ভরা যৌবনা অতি সুন্দরী একটা মেয়ে বিপথগামী না হবার পেছনে তার প্রথম প্রেম সৌম্য ! ও আজ এতগুলো বছর বেঁচে আছে শুধুমাত্র সৌম্যর ছবির সাথে পরকীয়া করে ! ওর মোবাইলের ওয়ালপেপারে সৌম্যর প্রেমমাখা মুখটা আজ ও ওকে দিয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার অনুদান !

শারীরিক বা দৈহিক সম্পর্ক বীণা ও ভালবাসা যায় , প্রেম করা যায় , একসাথে বিছানা শেয়ার করা যায়...এটা বোধহয় মান্তাসার থেকে বেশী কেও জানে না । প্রকৃত প্রেম ভোগ-ভাগ কিছু চায় না , চায় শুধু বিপরীতের মানুষটার হাসিজড়ানো উচ্ছল দুটো চোখ !

এভাবেই মান্তাসা বেঁচে থাকুক বছর বছর ,যান্ত্রিক রহস্যে মোড়া  ,সৌম্যকে ভালবেসে ॥




কবিতা



শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী
       
মাদারীর খেলা
     
   


অবাক পৃথিবীর কিছু বিকারগ্রস্থ মানুষের বিভ্রান্তমূলক মানসিকতায়,,,
বিশ্বস্ত চেনা চাহনিরা বদলে যাওয়ার নেশায় বুদ্ হয়ে আছে,
বাক্-রুদ্ধ সময়ের হাতছানিতে বিহ্বল ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি _____
বাক্সবন্দি ধ্যানধারণাকে সযত্নে পোষণ করা কিছু কামুকমন !!
মুখের আদলে মুখোশধারীরা মেতেছে____
কানামাছি ভো-ভো খেলায়,
বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙে চলেছে
অচলায়তনের ধারাবাহিকতা ।

সব দেখেশুনে অতৃপ্ত অশরীরীদের 
আত্মরাম খাঁচাছাড়া,,,, 
বোবাসরণির নির্জনতায় একাকী নিঃসঙ্গ রাতপ্রহরী বলে ওঠে
জাগতে রাহো........জাগতে রাহো...........
নির্বাকরাতে পিপাসু হায়নার দল
পেতে চায় শরীরের উগ্র গন্ধ,,,,
দিনের আলোয় অস্পৃশ্য যারা_____
অন্ধকারে ঢেকে যায় তাদের ছুতমার্গ ।
স্নিগ্ধ সকালের স্নানের পবিত্রতায়
অচ্ছুত শরীরগুলো হয় অযান্ত্রিক,,,
আর হায়নার দল ? রাতের কালিমা 
ধুঁয়েমুছে সাফ্-সুতরো এক অন্যমুখ,
যান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে ভোলবদলের চিত্র,,,
যেমন --মাদারীর খেলায় ভেল্কি-নাচন !!!



 তৃপ্তি মিত্র 

নীল - আশা 


আকাশচুম্বী পর্বতশৃঙ্গের উপর থেকে
আকাশ কে যতটা কাছের মনে হয়
আসলে আকাশ ততোটা কাছের নয় ।

আপন আপন যারে ভাবো
সে তো আর কেউ নয়
সে হল স্বপ্ননীলাভ
পেজা পেজা এক পথ ।

যে পথে ছড়ানো ছেটানো
মেঘময় আকাঙ্ক্ষার সীমাহীন
নীল নীল "নীল- আশা।"  ।

যা হল আশা ,আকাঙ্ক্ষা ,
বাসনা ,প্রার্থনা ,পাওয়ার ���������
পরম ইচ্ছা  ।।





সত্য মোদক

আঁকা
           

মন চাইলে—দেখছি
ভেবেছি তখন—
দেখিনি কতকাল
সূর্য কি —ঢললো—
পশ্চিম আকাশে৷

বেলা কি তবে—
শেষের টানে—?
হয়েছে—সময়—
হারিয়েছি—অপেক্ষা৷

বেলা শেষে —
মন আবেশে
বিভোর থাকি—
পূবের—টানে৷






 দেবযানী সিন্হা

কবিতা

হেমন্ত আমায় বলছে  কানেকানে,
পাতাঝরা আজ বিষন্ন মনে।

শিরশির মিষ্টি বাতাসে,
হেমন্ত খিলখিল হাসে।

আমি এসেছি সোনালি ধানে,
গাঁয়ের বধু ব্যস্ত নবান্নে।

আমায় দেখে শুকনো খালে,
কলমি ফুল আঁখি মেলে।

শিশিরসিক্ত স্নিগ্ধ ভোরে,
মল্লিকা, শিউলি সুগন্ধ বাহারে।

টক মিষ্টি জিভেজল,
খুকুর হাতে চালতা, আর কামরাঙা ফল।

উষ্ণনীল দুপুর বেলায়,
বাউলসুর মন ভোলায়।

দিনের আলো নিভে এলে,
তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বলে।

ক্ষণিকের স্বপ্ন কুয়াশামাখা,
রঙ বদলানো মেঘের যবনিকা।

অতিথ পাখি খবর এনেছে,
হিমের পরশে শীত আসছে ভেসে।




গৌরব রায় চৌধুরী/২টি কবিতা

হেমন্তকাল-১

তোমার থুতনিতে ফুটে ওঠা ভোরের শিশির
একটা ছোট দোয়েল পাখি হয়ে আমার
               লেখার টেবিলে এসে বসে,
তিরতির করে কাঁপতে থাকা ধানগাছের শীর্ষে
রাখা আছে প্রথম চুম্বনের স্মৃতি,
এইমাত্র নদীবক্ষের হাওয়া বয়ে গেল
অদূরে দিগন্তরেখা ছুঁয়ে,
সন্ধে নেমে আসার আগেই
দুটি চাঁদ আমি
উঠতে দেখি-
          তোমার ‘রূপসী বাংলার’ মত দু’চোখে।




 হেমন্তকাল-২

বাইরে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে
বুকের ভেতরে আগুন
অতএব এখন হেমন্তকাল।
হেমন্তকাল মনখারাপের বলত যে বান্ধবী-
সে আজ সংসার পেতেছে সুদূর রাশিয়ায়
শুনেছি সেখানে শুধু শীতকাল।হেমন্ত নেই।
জীবনানন্দ ভালবাসত আমার আরেক বান্ধবী।
রোজ রাতে ‘রূপসী বাংলা’ বইটি পড়ে সে কাঁদত।
আমি তাকে প্রথমবার যখন ছুঁই- তাঁর শরীর
থেকে পেয়েছিলাম শিশিরভেজা মাটিগন্ধ।
মেয়েটি আজ হারিয়ে গিয়েছে কাশ্মীরের রক্তভেজা প্রান্তরে।
এখন আমার জীবনে শুধু হেমন্তকাল আর আমি থাকি।
আমরা কেউই কাউকে পছন্দ করিনা তবু
একসাথেই সিগারেট ধরাই প্রতিটি সাদাকালো শোকে।


  
অভিজিৎ মান্না 
মাত্রা স্তর 

বট গাছটার ছায়াতলে দাঁড়ালে
একটা সুখানুভব ভেসে আসে ।
অদ্ভুত শীতলতা বার্তা দেয়
সমগ্র শরীর জুড়ে ।
নিঃশব্দ টানে বাঁধব নিঃস্বার্থ দানকে ।
একাকী ফিরব প্রাপ্তির প্রিয় জল মেখে ।
গুঁড়িতে লেপে দেব
ঋণী থাকার মাত্রা স্তর ।


মৌসুমী ভৌমিক 

 ঝরে 


ঝরে দিন ঝরে ক্ষণ ঝরে যায় সময় 
আগলাতে হয় নিবিড়তা, নয়ত জীবন বিষময়। 

ঝরে প্রেম ঝরে আদর ঝরে অভিমান
বুকের সিন্দুকে থরে থরে জমা জীবনের গান। 

ঝরে বৃষ্টি ঝরে জল ঝরে যায়  বিবর্ণ পাতা
ভবিষ্যতের পালকে লেখে নাম  বর্তমানের খাতা। 

ঝরে উষ্মা ঝরে প্রলাপ ঝরে প্রতিবাদের গান 
দ্রোহের আগুনে ঝলসে যায়  বিদ্রোহীর সম্মান। 

ঝরে আশা ঝরে নিরাশা, সম্মুখে একাকীত্ব
 বিষম সময় বিষম মনন, চতুর্দিকে দূরত্ব। 

ঝরা পাতার ঝরা আগুনেও উষ্ণতা বলীয়ান
মুঠো করে রাখো আপনারে, হও নিঃশব্দে আগুয়ান। 





 রবীন সাহানা 
 আমি একা
                                        

জানিনা কেমনে পশিল এমনে দুঃখভরা অশ্রুজল।
আজকে প্রানের চিত্র হতে গোলাপি প্রেম রংবিরল।
হৃদয় মাঝারে পিরিতি পাঁচিরে কেমনে লাগিল দষ্যু ঝড় ?
করিলা মোরে ক্ষতবিক্ষত, আঁকি দিলা মনে থাবার আঁচড়।
প্রিয়া বিরহী যক্ষ হয়ে, সাঁতরে চলেছি নয়ন্ নীরে -
বার্তা কী মোর নিয়ে ধ্বয়ীর কাগজের পবনদূত?
কালিদাসের কালির ভাষায় বর্ষা প্রেমের বিরহশূল।
তবে কেন মোর হৃদয় হল  হেমন্ত প্রথমে প্রিয়াব্যাকুল ?
দুঃখ ভরা হৃদয়েতে, এসব ভাবছি বসে ব্যালকনিতে।
হয়তো, তখন তুমি গুনছ্ প্রহর , আঁধার রাতে চাঁদের সাথে।
চাঁদকে ডেকে বলি আমি, শুনছ্ ওহে অন্তর্যামী,
মনের কথা প্রিয়ার কাছে দাওনা বলে নভঃস্বামী।
অশ্রুঝরা আমার দু-চোখ শুধুই চলে তোমার খোঁজে -
হয়তো কখনো ঠাঁই সে পাবে তোমার ওই হৃদয় মাঝে।
বাস্তবেরই জীবন পথে, সত‍্যি তোমায় হারাতে দেখে,
চিৎকার করে বলি, হাঁটবো আমি তোমার সাথে।



সুপ্রীতি বর্মন

ভালোবাসি ভালোবাসি


দীর্ঘায়িত ছায়ার প্রচ্ছদে, ঔদাসীন্য সময় প্রদাহে।
ভাসমান এলায়িত বক্ষ।
স্পন্দনহীন নিষ্প্রান নিথর পর্নমোচী, 
উদভ্রান্ত পথিক ছন্নছাড়া, গাঁটছোলা বন্ধন সীমাহীন।
একরাশ গোলাপের প্রতীক্ষা।
 মিশ্রিত আদুরে কায়া ভালোবাসি, ভালোবাসি।।


এলায়িত বিবস্ত্র কেশরাশি ভূলুন্ঠিত, 
পরিপাটি প্রসাধন অতীতের ছায়া, দর্পনে দেখতে আর চাই না মুখ।
পেছন থেকে আগমনী প্রত্যাশা।
আমাকে মনের মতন সাজাবে তুমি, 
দেখবে লোক করবে আহামরি।
বাড়বে গৌরবে আমার বুক।
আমার প্রশ্ন কেমন লাগছে আমায়? নির্লিপ্ত চাহনি স্মিত হাস্যে, 
ভ্রমরের আগামী এঁটো স্বভাব, 
বুঝে গেছি আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি।



একরাশ জনসমাগম মেলাপ্রাঙ্গন, 
বিক্রীত পসরা হকারের গলাফাটা চীৎকার।
আকর্ষনে ঝকমারি যদি ক্রেতা সদয় হয়।
কানাকড়ির নেই অভাব, তবুও চাতকের বুকফাটা চীৎকার।পিপাসা, পিপাসা।
তুই যদি থাকতিস কিনে দিতিস নিজের হাতে করে।
মেঘফাটা একরাশ জলসমুদ্রের চুম্বনে, 
তৃষ্ণার্ত ধরিত্রী হতো তৃপ্ত, 
সম্মোহিত।অলিগলি আঁকাবাঁকা পথ চলে গেছে বহুদূর, 
সান্নিধ্য গন্তব্যহীন অচল ধোঁয়াশা।
তবুও আকুন্ঠ বিগলিত চিত্তে, বলতে থাকি ভালোবাসি, ভালোবাসি।



আয়োজনের নেই ভ্রুক্ষেপ, 
হাতের কাছেই রোগীর পথ্য, সেরে উঠার ব্যধি।
দিল কেউ যেন নজর।
ছাড়ে না রোগ হায় হায়, ভালোবাসি, ভালোবাসি।।



নজরে নেই তুমি,
 রয়েছো হৃদয়ের আলোকে, সুখশয্যায় সহবাস।
কল্পলোক বাসর, অশরীরী একরাশ সিঁথি ভরা সিঁদুর, 
চলনে ভ্রাম্যমান পথিক, নিত্য আসা যাওয়া।
স্থিতিশীল ছলনা, 
তবুও বিনিদ্র রজনী অশ্রুমালা।
 করবো আলিঙ্গন ভালোবাসি, ভালোবাসি।।



রয়েছি ডাক প্রতীক্ষায়,
 কোন সদুত্তর ভারবাহী পিয়ন, অপ্রত্যাশিত চাহিদা।
চোখের তলায় কালি, অবসাদের চাপ।
উৎকন্ঠিত হৃদয়, উৎসারিত সেই চেনা পরিচিত ডাকনাম।কলমের কালি শুকিয়ে নিষ্প্রান ভাষার উচ্চবাচ্য।
হতে লেগেছে পর্নমোচী প্রতীক্ষায় আগামী প্রচ্ছদে বসন্ত।কোকিল পোড়ামুখী, মুখ করেছে কালি।
তবুও প্রানভরে বলতে চাই ভালোবাসি, ভালোবাসি।।




চিত্তরঞ্জন সাহা
লজ্জা কেমনে ঢাকি
   

তোমার দেশে তুমি হলে খুন
লজ্জা কোথায় রাখি,
বুকের ভেতরে সেই ক্ষতটা
কেমনে বলো ঢাকি।

যাদের করতে বিশ্বাস তুমি
বিশ্বাসঘাতক তারা,
তাদের হাতে ভায়াল রাতে
তুমি গেলে শেষে মারা।

ভাবতে গেলে গায়ে কাঁটা দেয়
চোখ জুড়ে জল নামে,
অাকাশের কোনে ঘন কালো মেঘ
দেথলে শক্তি থামে।

বাঙালির নামে ওরাতো জানি
কুলাংগারের জাত,
তোমাকে মারতে ওদের সেদিন
একটু কাঁপেনি হাত।

তোমার বুকে সেদিন ওরা
চালিয়ে ছিল গুলি,
তোমাকে হারানোর সেই ব্যথাটুকু
অামরা কখনো ভুলি ?

তুমি নেই তবু হৃদয়ে শক্তি
অামরা ফিরে পাই,
কোটি বাঙালির বুকের মাঝে
তুমিতো নিয়েছো ঠাই।




মুক্তগদ্য



অনিমেষ 
রাতের আকাশ  

নিশ্চুপ রাতের তারা, বইতে থাকা হিমেল হাওয়া, চোখ ধাধানো আলেয়া, নিঃসঙ্গতার মিশ্রনে , অভিব্যক্ত করে যায় অনেককিছু৷ বহুদিনের পরিচিত সেই স্বর, যুগ বদলানোর কন্ঠে, ভেসে আসা শান্তশব্দের , শিৎকার৷ ধুলোপথে বেওয়ারিস ক্লান্তি, রজনীর আকাশ রেঙ্গেছে গোলাপী , সেই আভায় নিশির গগন , মেতেছে প্রেম পাগল ৷৷ হাতের নৈপুন্যে কে যেন , একে দিয়ে যায়, ক্লান্ত পথের পরিশান্ত






প্রলয়কুমার বিশ্বাস
দুগ্গাপুজোরসেকাল-একাল

বর্ষার শেষ গরম ও আর তেমন নাই,মানে ঋতু রানী শরৎএসেছে দোরগোড়ায়চারিদিকে একটা খুশির আমেজ আর প্রকৃতি ও যেন রসপুষ্ট হয়ে সবুজাভ চাদরে নব রূপে সজ্জিত আর এদিকে লক্ষীর ভাঁড়ে জমানো টাকায় কেনাকাটার দিন গোনা শুরুপুকুরপাড়ে আর দূরে ক্ষেতের আল ছাপানো কাঁশফুলের হালকা শিশিরস্নাত শুভ্রতা ঝলমলে দিনের প্রথম আলোকে হৃদয়কে অনাবিল আনন্দ দেয়ঋতুরানীর প্রসাদী শিউলি ফুলের সুবাসে মোহিত শরতের আকাশ-বাতাস। চঞ্চলতায় পূর্ণ হয় মন-প্রাণ


পিতৃপক্ষের অবসান হয় মহালয়ার তর্পণে, সুচনা হয় দেবীপক্ষের পুজো পুজো সাজ তখন গ্রামাঞ্চলে টি.ভি, কম্পিউটারের প্রভাব আবিস্কার হয়নিমহালয়ার দিন সাতসকালে রেডিও চ্যানেলের শোঁশোঁ আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙে উঠে বাইরে বের হতেই দেখতাম-বাবা দাওয়ায় বসে আকাশ-বাণীকে ধরার চেষ্টা করছে, আর পাশে জনাতিরিশেক বাড়ির আরপ্রতিবেশী ছোটো বড়ো জমায়েতহয়েছে সকলে একসাথে আনন্দ করার আমেজটাই আলাদা

শুরু হতো চণ্ডীপাঠ বড়োদের থেকে কেউ কেউ বীরেন্দ্রকৃষ্ণভদ্রের চণ্ডীপাঠের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেউ কেউ বলতো সুরের নাকি এবারে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটেছে সত্যি কথা বলতে চণ্ডীপাঠের বিশেষ কিছু আমরা ছোটোরা বুঝতাম না, বাকিরা বুঝতো কিনা জানিনা, তবে আমি যেবুঝতাম না এটা নিশ্চিতভাবে বলতেপারিতবে কেউ বোঝে কিনা সে ব্যাপারে কাউকে কখনও জিজ্ঞেসও করিনি। ক্রমে মহালয়ায় দুগ্গাদেবীর কাহিনী বর্ণিত হতে লাগলোসকলেই নিশ্চুপ যেন ধর্মীয় কোনো রীতি মৌনতার সঙ্গে সকলে পালন করছেআমি মাঝে মাঝে সকলের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু চিত্তে তাকাতাম- মনে হত এইদিন সাতসকালে এটা শ্রবণে পাপমোচন হয়, এমনটা আন্দাজ করেছি

ক্রমে পুজোর দিন ঘনিয়ে আসতবাড়িটা বাজার সংলগ্ন হওয়ায় দেখতে পেতাম সেই পুজোর আগের কয়েকটা দিন বাজারে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি লোকের আনাগোনা চলতমহিলা বা ছোটরা বাজারে সেইসময় তেমন একটা না আসলেও এই কয়েক দিন দল বেঁধে কেনাকাটায় আসাটা অস্বাভাবিক বলে মনে হতো নাসব সুন্দর গুছানো মালপত্রে টাইটম্বুর দোকানগুলো ব্যস্ততার চরমে থাকতোআর বাজারটা যেন দিনরাত একটা গমগম আওয়াজে পূর্ণ থাকতো। ক্রমে ষষ্ঠীর দিন উপনীত হলে ঘটবরণের পরে পাড়ার ছেলেরা সকলে ধুমধাম করে প্রতিমাআনত। তখন এতবে শি জায়গায় পুজো হতো না এখনকার মতোএকটা বা দুটো মন্দিরকে ঘিরে চলতো পুরো আনন্দের দূর্গোৎসবসকলের নতুন পোশাক ছোটোদের হাতে থাকতো খেলনা বন্দুক আর রঙিন কত সব বেলুন। সারাদিন পুজো অঞ্জলি আর ঘোরাঘুরি, রাতে মন্দিরে ঢাকের তালে ধুনুচিনাচআরতি প্রতিযোগিতা হিন্দুমুসলিম সকল জাতি সকল বর্ণের মানুষের মেলবন্ধন ঘটত এই পুজোকে উপলক্ষ করেপ্রতিযোগিতা য়থা কতো উলুধ্বনিশঙ্খধ্বনি, শাড়ীভাঁজ, মোমবাতি প্রজ্বলন প্রভৃতি আর শেষে ঢাকিদের লড়াইমন্দিরে ধ্বনিত হতো মিঠেল সুরে রবীন্দ্রসংগীত কিংবা নজরুলগীতি 



কবিতা


সুকন্যা সামন্ত
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

আজ ভ্রাতৃদ্বিতীয়া
আজ ভাইকে ফোঁটা দেবার দিন ,
ভাইয়ের প্রতি বোনের
ভালোবাসা জানাবার দিন
ভাইয়ের সেই চিরাচরিত
বোনকে স্মরণে রেখে ,
তাকে উপহার দেবার দিন
প্রতিবছর মা তুমি সবকিছু ভুলে ,
সবকিছু ফেলে দিয়ে চলে যেতে
তোমার ভাইকে ফোঁটা দিতে
তোমার সেই ভালোবাসার কাছে ,
সেই টানের কাছে ,
পৃথিবীর সব সম্পর্ক যেন ,
তুচ্ছ হয়ে যেত
আজ সেই ভাতৃদ্বিতীয়া
তোমার মুখে ছোট থেকেই ,
শুনেছিলাম তোমাদের
ভাই-বোনের ভালোবাসার কথা ,
কীভাবে ইস্কুল থেকে ফেরার পথে ,
তোমরা খেলতে যেতে ,
আর সেই যে সকলের নজর এড়িয়ে ,
কেমন তোমরা যেতে আম কুড়াতে
পিঠে যে এক আধবার
বড়োদের মার পড়তো না ,
এমন নয়
বড়োদের স্নেহে ,শাসনে
বড়ো হয়ে উঠেছিলে তোমরা
তোমার ভাই বলতো
আমাদের ধমনীতে ,
একই রক্ত বইছে ,
আমরা পরিারের ,
একই ভালোবাসা পেয়ে ,
বড়ো হয়ে উঠেছি ,
তাই আমরা এক
ভাইকে অত্যন্ত স্নেহ করতে বলে ,
তার শাসনকে তুমি
মনে করতে আশীর্বাদ
তার ভালোবাসার
কাঙাল ছিলে তুমি
সবকিছুকে তুচ্ছ করে দিতে ,
তার একটু ভালোবাসা
পাবার জন্য
যেদিন তুমি বিয়ে করে ,
শ্বশুরবাড়ি গেলে
সেদিন তোমার ভাইকে ধরে ,
তোমার সেই কান্নার কথাও ,
শুনেছিলাম দিদার মুখে
দিদা বলতেন
পৃথিবীর কোন শক্তিই
ওদের আলাদা করতে পারবে না
দাদু-দিদা মারা যাবার পর ,
সেই ভালোবাসায় একটা প্রশ্ন দেখা দিল ,
যদিও তুমি সেইদিকে কোনোদিনও ,
ভ্রূক্ষেপও করতে না
এতটাই বিশ্বাস ছিল তোমার মনে ,
তোমার ভাইয়ের প্রতি
ভাই যে কোনোদিনও ঠকাবে না
সে বিশ্বাস তোমার ছিল ,
তাই কোনোদিনও দাদাকে তুমি
মুখফুটে সম্পত্তির ভাগ চাইতে না
মাঝেমধ্যেই আমাদের জামা ,
কিনবার জন্য টাকা থেকে বাঁচিয়ে ,
তুমি তোমার ভাইয়ের পরিবারের জন্য
নিয়ে যেতে উপহার
সে শুধু উপহার ছিলো না
ছিল তোমার ভালোবাসার ,
ছোঁয়ায় ভরা স্মৃতি
তোমার দাদাবৌদি কতটা ,
মর্যাদা দিত তোমার স্নেহ ভালোবাসার
তা বুঝতে পারতাম না
তবে খুব খুশি হয়ে ,
তা গ্রহণ করতো
ধীরে ধীরে আমরা বড়ো হয়ে উঠলাম ,
তোমার সংসারেও অভাব দেখা দিল
অর্থের প্রয়োজন দেখা দিলো তোমারও
তখন মনে পড়লো তোমার অধিকারের কথা ,
মনে পড়লো তোমার সম্পত্তি ভাগের কথা ,
অসুস্থ ছিলে তখন তুমি ,
তা সত্ত্বেও তুমি
ভাইফোঁটা দিতে যেতে ভুলতে না
ফোঁটা দিয়ে তুমি দাদাকে চাইতে
দাদা আমার জমির টাকা দিয়ে ,
তুমি আমায় সাহায্য করো
দাদা কোনদনই তা দেবার কথা
অস্বীকার করতো না
প্রতিবারই তমি বড়ো আশা নিয়ে যেতে সেখনে ,
প্রতিবারই দাদা তোমাকে আশ্বাস দিতো ,
তুমি তাই বিশ্বাস করে চুপ করে থাকতে ,
ফিরে আসতে শূন্য হাতে ,
কিন্তু ফোঁটা দিতে যেতে ,
শুনতে না আমাদের বারণ
আজ সেই ভাতৃদ্বিতীয়া
মা , আজ তুমি আর নেই ,
আমাদের মাঝে ,
তোমার ভাইকে আর ফোঁটা ,
দিতে যাবার মতো কেউ নেই
নেই কেউ তার কাছে
নিজের প্রাপ্য চাইবার মতো
তোমার ভাই যে তোমার কথা ,
ভাবেনি একবারও তা নয় ,
এসেছিলো সে
আমাদের বাড়িতে ,
শেষবারের মতো ,
টাকা দিতে নয় ,
তোমাকে শেষ বিদায় জানাতে
তোমার শ্মশান-যাত্রী হিসাবে ।।




 প্রতিভা দে 

ঢেংঢেডাং

ঢেং ঢেডাং ঢেং ঢেং
আমরা নাচব তুলে ঠেং
আমরা করব নাকো ভয়
যে যত আমাদের শাসন করে কয়়
ওরে তোরা ঠিক হলে চল
করিস না এমন কিছু
যাতে মানুষের দুঃ হয়
করবিনা বিয়ে নিয়েপন.
চলবি নিজের ক্ষমতায়
প্রান আছে যতক্ষন
মানুষের মেয়েরে বিয়ে করে এনে
করবি না জ্বালাতন./
লাফিয়ে তারা বলে মানবনা আমরা
আমরা যা করার তা করব
আমার বোনটা মরে মরুক
আমরা উরুক্ক হয়ে চলব
দশ দিক প্রলয় করব/













কৌশিক কুমার রায় 
আমার রাত্রি



রাত তখন বারোটা আট,
পালঙ্কে শুয়ে মুঠোফোনে  নিবিষ্টতা l
হঠাৎ রিমঝিম বৃষ্টির নিনাদ,
মনে সোনালী ক্ষণের স্মৃতিকথা ......l

রাত যখন দুটো পাঁচ,
খিন্ন চোঁখে প্রতীক্ষা বার্তার l
বুজ্তেই অপারগ উষ্মান্বিত আঁচ,
তোমার আমার মাঝে কাঁটাতার .....l

এখন সবে ভোর পাঁচটা সাত,
মেঘের গর্জনে দিল সাড়া পাখির দল l
কলোসিটে খোলা  চোঁখে একান্তের রাত,
অনেক হয়েছে,এবার ঘুমাবি চল .....l




মাম্পি রায়

চেনা পথের অচেনা মন

            
          
        কল্প যত শত শত,
          সুপ্ত নিজ মনে, 
          করিয়াছি দান,
           পরার্থে পরাণ ; 
          মুক্তকচ্ছ রণে।।
        
         পিপাসিত প্রাণ ;
           অধরা স্বপন,
         অভুগ্ন কায়াহীন;
           নবীনা হৃদয়,
           নব উল্লাসে;
        সবুজ মরুদ্যান।।




শৌভিক কার্য্যী

চাওয়া-পাওয়া 


কত কথা শুনে হয়েছি বড়ো 
ছোট্টো থেকে মেয়েবেলায় । 
মেয়ে হয়েছে বলে মাকে 
কাটাতে হত চরম অবহেলায় । 
কোনদিনও করেনি প্রতিবাদ 
মুখ বুজে সব সয়ে যেত । 
রোজ রাতে দেখেছি বাবার হাতে
কত লাঠির আঘাত খেত । 
তবু রাতে স্বপ্ন বুনেছি 
চোখের জলে ভেসে । 
মায়ের মতো লক্ষ্মী হবো 
স্বামীর দ্বারে এসে । 
তবে পারিনি হতে আর 
বাসর রাতে স্বামী দিয়েছে বেচে । 
অন্ধকার জগতের কুখ্যাত 
নতুন এক দেশে । 
যেখানে কখনো আসেনা আলো 
নেই কোন পালানোর পথ । 
অন্ধকুঠুরিকেই আকড়ে না জানি 
কত মেয়ে নিয়েছে বাচার স্বপথ । 
লতা , ঝুমা , সোমা আজও 
সবাই রয়েছে সাক্ষী । 
আমাদের মতো বাজারে বেচিত 
কত কলঙ্কিনী লক্ষ্মী ।




সুস্মিতা দত্ত

 স্মৃতির সন্ধান


তোমার সাথেই বেঁধেছিলাম আমি, আমার প্রাণ l
জীবনসাগর পাড়ি দিতেই  আঁধার হলো ম্লান l
প্রথম দেখায় তোমার সেই মিষ্টি মুখের ছোঁয়ায় ,
সাতপাকের সেই সাতটি কথা মিশে আছে মায়ায় l
জীবন একাই দিচ্ছে পাড়ি তোমার স্মৃতি বয়ে ,
স্বপ্ন ;  মনে বাজছে বড়ও, আজও তোমায় নিয়ে l
তুমি তো জানও ;  সেই অজানা সাধনে ,
পেয়েছিলাম তোমায় আমি অক্লান্ত কাননে l
স্মৃতির বীণা বাজছে তবু , এ হৃদয়ের গোপনে ,
ছন্দমাতাল মন তা রেখেছে খুব যতনে l
তোমার অরূপ মূর্তিখানি আঁধার ও আলোতে ,
সে সাধনায় বাজাই বাঁশি ললিত বসন্তে l
সোনালী আভায় কাপে দিগন্ত ,অজানা উন্মাদনে ,
গানেরও তানে অচেনা ছোঁয়ায় ,তোমায় বেঁধেছি বাঁধনে l
তবু মন বলছে শুধু, নতুন সাজে সাজো ,
স্মৃতির বাঁশি নয়তো মনে বাজে বাজুক আজও l
সব হারিয়ে ফকির হয়ে কেনো পরশ খোঁজো ?
স্বপ্নমহল আশায় ভরা ! এবার চোঁখ মোছো l
মনকে না হয় বাউল করে একতারাতেই বাজো ,
স্মৃতির বাঁশি নয়তো মনে বাজে বাজুক আজও l