Wednesday, March 14, 2018












সুনয়না স্বাতী -----
মহুয়া মুখোপাধ্যায়


চোখ নিয়ে যে এতো ভালো ভালো কথা বলা যায় তা অনুশ্রীদির কাছ থেকে শিখতে হয়। চোখ মানুষের অমূল্য সম্পদ। না থাকলে সারা বিশ্বই তার কাছে অন্ধকার। সূর্যের এতো আলো সবই অন্ধদের কাছে অন্ধকার নয়। শুধু আলোর তেজ অনুভব করে মাত্র। অনুশ্রীদির মুখেই সব শোনা।

       অনুশ্রীদি অবশ্য অন্ধ নন, হরিণচোখ-ই সুনয়নী, চঞ্চলা হরিণী সুন্দরী। বোঝাই যায়না মাঝবয়েসী, সৌন্দর্যের লালিত্যে।পড়নে রেশমী ঢাকাই শাড়ী, চওড়া লাল পাড়।কাঁধে ঝোলানো রঙীন শান্তিনিকতনী ব্যাগ। কপালে বড়ো লাল টিপ,সিঁথি ভর্তি রাঙা সিঁদুর। হাতে সোনাবাঁধানো  শাঁখা,পলা, সোনার বালা,পাঁচ আঙুলে পাঁচ পাঁচটি সোনার আংটি । গলায় সোনার চেনে ঝোলে ল্যামিনেশন করা পরিচয় পত্র। শরীরের প্রতিটি অঙ্গজুড়ে যেন ত্রিশ বছরের যুবতীর ছাপ।

          বিশেষ বিশেষ দিনে বর্দ্ধমান থেকে হাওড়া অবধি সুপার এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াত তার। ট্রেনের যাত্রীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন অন্ধত্বের যন্ত্রণা। সাহিত্যের ভাষায় বর্ণনা করে বুঝিয়ে দেন চোখ কতো অমূল্য সম্পদ।চোখা চোখা গানের কলিও গেয়ে শোনান সুরেলা কন্ঠে। সুপার ফার্স্ট ট্রেনের যাত্রীরাও মুগ্ধ হয় ওনার আন্তরিক ব্যবহারে। মহিলার বাচনভঙ্গি ও সুরেলা কণ্ঠ মনে নাড়া দেয়।সুযোগ বুঝে ঝোলা থেকে বের করেন বিখ্যাত মিশন মার্কা অন্ধস্কুলের রসিদ।মোটা টাকা সাহায্যের পরিমাণ লিখে ধরিয়ে দেন যাত্রীদের হাতে। সবাই যে যার সাধ্যমত সাহায্য তুলে দেন মহিলার হাতে। ময়ূরীদি দুহাত ভরে টাকা সংগ্রহ করেন।আকর্ষণ বাড়াতে নরম হাত দিয়ে করমর্দন করে ধন্যবাদ জানান।সুপার ফার্স্ট ট্রেনের ৫/৬ টি এ.সি. কামরায় অনুশ্রীদি চালান এই একই কারবার। ব্যবসার টাকা ঢোকে পেটে।

         বেশ কিছুদিন খেয়াল করার পরে চোখে পড়ে রুদ্রবাবুর। তাঁর মনে কৌতুহলের পাহাড়-"কে এই ভদ্রমহিলা?কি তার পরিচয়?কিই বা করেন? রুদ্রবাবুর কৌতুহল ক্রমশ বেড়েই চলেছে।মহিলার দৈহিক লালিত্যের টানে নয়।জানার আগ্রহ মাত্র।প্রায় প্রত্যেক রেল স্টেশনের রেলকর্মী,নিত্যযাত্রী, হকার সবাই চেনে অনুশ্রীদিকে।হাস্যলাস্যময়ী,সদালাপী, অপরূপ সুন্দরী মহিলা ভীষণ রসিকও  বটে।ফেরার ট্রেন দেরী করলে জমিয়ে আড্ডা মারেন।রসিয়ে আসর জমান।রসের খই ফোটান।হাসির জলসা বসান।সময় ভালোই কেটে যায়।

          রুদ্রবাবু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষকতা জীবনের অনেক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। অভিজ্ঞতার অনেক বিড়াল তাঁর ঝুলিতে। পরিচয় জমিয়ে ফেলেন ময়ূরীদির সাথে। ঘনিষ্ঠ হতে বেশী সময় লাগেনা। নজর পড়ে অনুশ্রীদির বুকের উপর। রুদ্রবাবু চমকে ওঠেন।অপলক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন বুকের দিকে।আরো কাছাকাছি হন।দৃষ্টি স্থির রাখেন।স্পষ্ট দেখেন আকর্ষণীয় বস্তুটি।বুকে ঝুলন্ত নকল পরিচয়পত্র। বড়ো বড়ো করে তাতে লেখা- স্বাতী মিত্র। বাংলার শিক্ষিকা "নজরুল বালিকা বিদ্যাপীঠ"। রুদ্রবাবুর লেন্সে ধরা পড়ে স্বাতীর আসলরূপ। ভীষণ রেগে ওঠেন রুদ্রবাবু।চীৎকার করে বলে ওঠেন, "শয়তানী, মিথ্যেবাদী, ধাপ্পাবাজ!লোক ঠকানো ব্যবসা চালাচ্ছে অন্ধদের নামে,,,,,,,, 

No comments:

Post a Comment