সম্পাদকের কথা
দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচিত একটি সরকার আগামী পাঁচ বছরের জন্য পুনরায় দেশের দায়ভার নিয়েছে।
বিপুল জনাদেশে নির্বাচিত সরকারের কাছে আমাদের সাধারণের প্রত্যাশাটিও বিরাট। আশা রাখি যে, সেই প্রত্যাশা পূরণে সরকার সফল হবে।
নির্বাচন প্রচার চলাকালীন এক কুনাট্যে ভ`রে গিয়েছিল আমাদের রাজ্য। ভাবতে বিস্মিত হই যে, এই রাজ্য ও এই রাজ্যের মহান পুরুষেরা একসময় সমগ্র ভারতকে আলো দেখিয়েছিলেন। পিছিয়ে ছিলেন না মহিলারাও। সকলের হাত ধরে যেন কাঙ্খিত মুক্তি এসেছিল আমাদের মননে, চিন্তায়, ভাবনায় ও সংস্কৃতিতে। বড় বিষন্ন হতে হয় তাই এই অধঃপাত দেখে। নির্বাচনের দিনগুলিতে যে হিংসা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম তা ভীষণ বেদনাদায়ক। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় সবকিছু মিলে।
তবু আশা রাখি যে, আগামীদিনে সব অন্ধকার দূর হয়ে একটি আলোকজ্জ্বল সকাল আমাদের ঋদ্ধ করবে। আসবে এমন একটি সকাল যেখানে সমস্ত কলুষতা মুছে গিয়ে সবাই মানুষের জয়গান গাইবে। কেননা সবার ওপর মানুষ সত্য একথা ভুলে গেলে নিজের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন জৈষ্ঠ্য সংখ্যা ১৪২৬
দ্বিতীয় পর্ব
এই পর্বে আছেন যাঁরা
ধারাবহিক উপন্যাস- দেবব্রত সেন
কবিতা- সুস্মিতা পাল কুন্ডু, রীনা মজুমদার, সুব্রত নন্দী, তাপস দাস, অনিমেষ সরকার,
সুস্মিতা সাহা, ফিরোজ হক, তাপসী লাহা, ফজলুল কবির, সঞ্চিতা দাস, পারমিতা দাস,
চিঠি- যূথিকা সাহা
জীবন যে রকম- ইন্দ্রাণী সমাদ্দার
গল্প- মেহেবুব আলম, বেদশ্রুতি মুখার্জী, অনুপ কুমার সরকার, শাবলু শাহাবউদ্দিন
ছড়া/কবিতা- মজনু মিয়া, গৌতমী ভট্টাচার্য, রীতা মোদক, পুণ্যশ্লোক দাস, মাম্পি রায়, প্রতিভা পাল সেন,
রোমানুর রোমান, আশীষ দেব শর্মা, লুবনা আখতার বানু, সব্যসাচী নজরুল, রাঙাবেল
চাঙমা, শ্যামল কুমার রায়
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা ১৪২৬
প্রকাশক - রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস - শৌভিক রায়
যোগাযোগ- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১
ইমেল-
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা ১৪২৬
ধারাবাহিক উপন্যাস
অপরাজিতা
দেবব্রত সেন
প্রথম পর্ব ১
কতই বা বয়স বাপ মরা মেয়েটার, সবে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার গোলাপের হাবুডুবু, রঙ্গিলা বাতাসের গুন গুন সূর। ভালোবাসার পরশপাথর ছুঁয়েছে, হৃদয়পূর্ণ কোকিল কোকিলা মন। মধু চন্দ্রিমার রাতে শশীবাবু যেমন একলা বসে থাকা রুপসীর ঘরে জানলা দিয়ে উকি মারে কিংবা কোনো এক দুপুরে ছায়া ঘেঁষা শ্রাবণী মেঘের বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে শালিক জোড়াযুগলের অপরুপ রোমান্টিক দৃশ্যের মতো। তার পর আর কি! বিয়ে -সংসার জীবন। মেয়ে মানুষের নাকি স্বামী ব্রত প্রধান ধর্ম।
১//সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে
সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে, ঘরটা শূন্য মানবহীন! শোনার কেউ নেই একলা বসে শুনছে ঘরটা। থাকলেও থাকতে পারে, তবে হয়তো যে যার কাজে ব্যাস্ত আছে ক্ষন, তাই বোধ হয় এরকম হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর, দশ সাড়ে দশটা নাগাদ হবে, একজন যুবকের বাইক এসে দাঁড়াল পূজাদের বাড়ির সামনে। এসেই দেখল কলিংবেল আছে! সে কলিংবেল টিপল। সঙ্গে সঙ্গে পূজার মা পূজাকে বলল, এই পূজা, পূজা কই গেলি মা! দ্যাখ না কে এল। পুজা তখন স্নান করছে, সে কলেজে যাবে! পূজা স্নান ঘর থেকে বলল, মা আমি স্নানে। তুমি যাও। আমি পারব না মা।
ঠিক এই সময়ে আবার কে এল বাবা আর পারছি না, ঠাকুর ঘর ফেলে আসতে হচ্ছে এই বলতে বলতে পূজার মা বাড়ির উঠান পেরিয়ে সদর দরজার কাছে এল এবং দরজা খুলে দেখল বছর পচিঁশ ছাব্বিশের একজন যুবক, কাধে একটা ব্যাগ ঝোলানো, চোখে চশমা, গায়ের রং ফরসা আর লম্বা। সে দাড়িয়ে আছে কখন দরজা খুলবে তার অপেক্ষায়।
দরজা খোলার সাথে পুজার মা একটু হতভম্ব হল কারন এই ছেলেটা হঠাৎ করে, তাছাড়া ওনার ছেলের বন্ধু বান্ধব হলে না হয় হত কিন্তু ছেলের বয়স চৌদ্দ পনের হবে, আর এই ছেলেটা এসে দাড়িয়ে আছে সে তো বয়সে অনেক বড়! পূজার মা গড় হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারল না, সে শুধু অবাক দৃষ্টিতে ভাবতেই লাগল। আত্মীয় স্বজন হলেও হতো কিন্তু সেই ছেলেটা অচেনা, কি আর বলবে?
এরম করতে করতে পূজার মা আমতো আমতো করে ছেলেটাকে বলল, আপনি কে বাপু? আপনাকে তো এর আগে দেখিনি?
------আপনি পুজার মা তো?
---- আজ্ঞে হুম, বলুন।
-----নমস্কার নেবেন মাসিমা, আমি শচীন বর্মন, বাড়ি শিলিগুড়ি শিব মন্দির এলাকায়।
-----সে কি মাসিমা পুজা আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেনি?
পুজার মা একটু ঘাবরে গেলেন আর ভাবলেন বাইরের একটা অচেনা ছেলে আমাকে কিসব বলছে, বিষয়টা ভালো ঠেকছে না।
হুম মনে পড়েছে, কলেজে প্রথম প্রথম যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুজা একটি ছেলের কথা বলেছিল কিন্তু সে তো সাংবাদিকতার চাকরি করত! আলাপ হয়েছে পূজার কলেজে, কিন্তু সে আবার প্রেম করছে না তো? আমাদের মতো গরিবের কপালে প্রেমট্রেম হজম হয় না বাবা, সে না হলেই ভালো হয়। এই ভাবে ভাবতে বলল, ও হ্যাঁ মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই শচীন? আমি ভাবছি কোন, কোন শচীন! এসো বাড়ির ভেতর এসো।
শচীন পূজাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেই দাড়িয়ে পড়ল, কারনটা কি! পুজা তাকে বলেছিল ওদের বাড়ির উঠানের উত্তর দিকে একটা নারকেল গাছ আর সেখানে বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠে বাবুই পাখির দল বাসা বানিয়েছে, দেখতে লাগছে খুবই সুন্দর যেন সবুজ সবুজ কলসী ঝুলছে। অন্য দিকে উঠানে প্রবেশ করার মুহূর্তে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ, গাছে লালে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে দেখলে চোখ জুড়োয়। আর পায়রা গুলো বাকুম বাকুম করে ডাকছে, এ টিনের চাল থেকে ও চাল উড়ে যাচ্ছে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পুজার মা বলল, কি দেখছো বাবা? বারান্দায় চেয়ার টেনে বসো যাও।
হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে। আর ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।
পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন!
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম! এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে, মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল, সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল, তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা
----হুম।
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা, আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।
আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না। সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।
পুজার মা বলল, বলছিলেম বাবা কোন পত্রিকায় কাজ করো?
---- দৈনিক জনজাগরন পত্রিকায়!
----আচ্ছা তুমি থাক, আমি একটু ততক্ষণে লেবু সরবত করে আনি।
-----না না মাসিমা এসবের আবার কি প্রয়োজন?
----ধুর! চুপ কর! বসো দেখি
পূজার মা মালতি রায়! পুজা আর শিবু যখন তিন ও দেড় বছর বয়স, তখন তার স্বামী মারা গেছে। পূজার বাবারা ছিল তিন ভাই।কিন্তু তাড়া এখন কোলকাতাতে থাকে হঠাৎ যদি খবর নেয় নেয়, আর না হলে যোগাযোগ বন্ধ, আসলে কি পুজার মা বিধবা আর ভরন পোষনের ব্যাপার তো রয়েইছে, হয়তো এলে বুঝি টাকা করি কিংবা অর্থ করি দিয়ে সাহায্য করতে হবে এই ভয়ে। আর বেচারা পুজার মা শহরের বাবুদের বাড়িতে কাজ করে আসছে ছেলেমেয়ে দুটোকে তো মানুষ করতে হবে!সংসারটার ভরন পোষন করতে হবে, ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে! আর অর্থ সাহায্য লাগলে বাবুদের কাছেই নেয়, একটু গায়ে গতরে খেটে দেয়। এখন ওরা অসহায় ঠিকই এককালে জমিদার ছিল পরিবারটা। জমিদার বাড়ি মানুষ আজকে বাবুদের বাড়িতে খাটছে ....আসলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ---আজকে রাজা কালকে ফকির। ঠিক সেরকম।
পূজা স্নান ছেড়ে বেরিয়ে এল, স্নান করতে করতে সে সব শুনেছে, যে শচীন তাদের বাড়িতে এসছে ও গল্প করছে! তবুও সে শচীনকে বলল, আরে শচীনদা কখন এলে? আসতে অসুবিধে হয়নি তো?
----আরে না রে পাগলি! তো কেমন আছিস? কলেজ যাবি বুঝি?
----- আরে বাপরে বাপ কোন ছেড়ে কোনটা বলি। আচ্ছা শচীনদা তুমিই বলো যে কখন এলে।
----- শচীন বা হাতের ঘড়িটার দিকে একবার তাকাল, দেখল দশটা চল্লিশ বাজে তখন। বলল, কুড়ি মিনিট হল রে।
------ আমি ভালো আছি দাদা। এখন কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।
-------বেশ ভালো তো!
তোমার জানি কিসে অনার্স?
বাংলায়।
এইসময় মালতি, কাচের গ্লাসে লেবু সরবত নিয়ে এল! বলল, এই নাও ধরো বাবা একটু সরবত। খেতে খেতে না হয় গল্প হবে।
যেহেতু খাটুনি করে বানিয়েছেন মাসিমা তবে কিন্তু না খেলেই নয়, এক চুমু দিতেই বলে উঠল, আহ মাসিমা দারুণ হয়েছে, মনে হচ্ছে এখন একটু তৃপ্তি পেলাম,
লেবু ও পুদিনা পাতার সরবত। দারুণ লাগছে।। আমরা বাইরে যা খাই মাসিমা। বাড়িতে তো লোক নেই! আর বাপ ভাই ছাড়া কেউ নেই। মা ছিল, দুবছর আগে আমাদের ছেলে চলে গেছে। এখন ভাই আমি আর বাবা।
গল্প করতে করতে বেলা গড়াতে চলল, গল্পেই যেন সবাই মজে গেছে। প্রায় ১টাই বাজে, ১২:৪৭ মিনিট। মালতি বলল, তোরা গল্প কর দেখি, আমি একটু রান্না ঘর থেকে আসি।
এদিকে রান্না হয়েছে পূজাদের বাড়ির কত আগেই । এখন শুধু খাওয়ার পালা। আর খাওয়া সেরে যে যার কাজে যাব রোজকার মতো। তার মধ্যে বাড়িতে কেউ এলে তাকে তো অতিথি বলাই যায়।
বারান্দার টেবিলে চলে এলো পূজার মা মালতির হাত বেয়ে সাজানো থালা ভরা ভাত আর বাটি ভরা সবজি। সঙ্গে চুনোপুটি মাছের দুটো পদও! রসুনপেয়াজ দিয়ে চটচটি আর মাছের টক আম দিয়ে। সে দিন শিবুই গেছে পাড়ার বন্ধুদের সাথে জাল নিয়ে! ভাগাভাগি করে আড়াই /তিনশ গ্রাম মাছ সে ভাগে পেয়েছে।
হয়তো খেতে চাইছিল না শচীনবাবু, ভাবছে চুনোপুটি মাছ, আর মাছের টক!! সে অনেক দিন হল খায়নি! মা বেচে থাকতে সেই কবে খেয়ে ছিল। এখন দোকানের ভাত তরকারি ছাড়া উদ্ধার হয় না, পেট কামরায়। সব থেকে বড় কথা হল আজকে মায়ের মতো হাতের রান্না পেয়েছে সে, খেতে রাজি হল। এদিকে অতিথি যে তাই না খেয়ে ওঠা, এটা একরকম খারাপ ছাড়া কিছুই নয়।
সময় গড়াল অনেকটা, তাই আর কারও কোথাও যাওয়া হল না, এতক্ষনে হয়তো পুজা কলেজে যেত, আর তার মা শহরেবাবুদের বাড়িতে থালাবাসন মাজা কিংবা রান্নার কাজে লেগে যেত, আর শিবুটা স্কুলে।
২//জলপাইগুড়ি বন্যার কিছু স্মৃতি বিজরিত শব্দ
খেতে খেতে গল্প, পূজার মায়ের সেই ভয়াবহ জলপাইগুড়ি বন্যার কথা, সে স্মৃতি শব্দ গুলো বিরবর করছে! আজও বাস্তবে বেঁচে আছে সেই দিনগুলি , মনে হচ্ছে চোখের সামনে সব ভেসে যাচ্ছে তার । সালটা সেই ১৯৬৮ সাল অক্টোবর মাস, সবে দুর্গা পূজা শেষ হয়েছে, বিজয়া দশমীর পর থেকে লক্ষীপূজার সেই ভরখরপূর্ণিমার জ্যোৎস্না কালো গভীর অন্ধকারের তলায় আচ্ছন্ন, চারদিকে জলস্রোতের বহমানতা।
জলশহর তো বটেই পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিও সেই জল স্রোতে হাবুডুবু খেতে মগ্ন। ওপারের ময়নাগুড়ির মৌলানি দোহমনি, বাসিসুবা, বার্নিস, উল্লাডাবরি, ভান্ডানি গ্রাম গুলি জলের তলায়। আর জলপাইগুড়ি শহর তখন জলমগ্ন। করলার জল তখন এ পাড়া ওপাড়া করে হেলে দুলে চলছে। এদিকের মন্ডলঘাট, কাশিয়াবাড়ি, রংধামালি, টাকিমারি চর বিস্তৃর্ণ প্লাবনভূমি।
পূজার মা মাথা হাতরে নিল, চিন্তিত অবস্থায় বলল, জানো শচীন সে বছর সদ্য বিয়ে হয়েছিল আমাদের। শাওন মাসে! তখন অবশ্য বন্যা হল না, সেময় তিস্তা স্বাভাবিকই ছিল। নদী তার নিজস্ব মত্তায় জল নিয়ে চলেছিল, বরষায় ঠিক যেরকম থাকে, একেবারে সেরকম।
আর যেই না দূর্গা পূজা শেষ হল, পূজাও শেষ শুরু হল বৃষ্টি! এমন বৃষ্টি কুলোয় কুলোয় পড়ছে, তিস্তার জল উথলে পড়ছে! বার্ণিশ গ্রামের চড়েপাড়ে এখনও বাধ ভাঙার ছাপ আছে গেলেই তুমি দেখতে পাবে বাবা!একদম রাস্তা লাগোয়া। চার দিকে জলময় জল যেন মৃত্যুর উপত্যকায় থৈথৈ করছে।
তোর কাকু মারা গেছে ঠিকই বাবু, আজকে আমাদের হয়তো ভরন পোষণ কাপড় চোপরের কোনো অসুবিধাই হত না, ।
আসার সময় দেখলে না বাঁধের পাড়ে বট - পাকুড়ে গাছ, সেটা কিন্তু আমাদের বিয়ের সময়ই আমার শ্বশুর মশাই চারা পুতে ঢাকঢোল পুরোহিতের মন্ত্রপাঠে বিয়ে দিয়েছিলেন। চারপাশের তিস্তায় আজ হয়তো তলিয়ে গেছে আমার শ্বশুরের দেওয়া আমাদের সেই বত্রিশ বিঘা জমি, সেদিনের সেই ভয়াবহ বন্যায়! এ কথায় বলতে গেলে ওই সময় থেকে দূর্ভোগ নেমে আসে এই পরিবারটায় !শ্বশুরমশাইদের ৭ হালের জমিদার,!
শচীন মুখে ভাত থাকা অবস্থায় বলল, হাল কি মাসিমা?
একটু হাই তুলল মালতি! বলল, হাল বুঝিসনে বাবা! ওটা একটা হিসেব, এখন অবশ্য জমি কই যে সে হিসেব থাকবে। হাল হল পনের বিঘা জমি এক হাল। জমিদারদের থাকতা। আর আমার শ্বশুর মশাই ছিলেন জমিদার, আমারে খুব ভালোবাসত মানুষটা, বড় কঠিন অসুখে মারা গেল সেদিন! আবার হাই তুলল, বলল - আহ.........
যাই কপালে ছিল, তাই হয়েছে ! এই আর কি, সবই বিধির বিধান বাবু। অসুখ বলে কয়ে আসে না। সময় আর পরিস্থিতিও রং বদলায়, গিরগিটির মতো।
তারপর ......
বলেই থেমে গেল মালতি! শচীন বলল, তারপর কি মাসিমা? চুপ করলেন যে?
------তারপর আর কি বাবা! স্বামী গেল, শ্বাশুড়ি গেল একে একে! আর দুজন দেওয়র দেওরা নিজ নিজ চাকরি নিয়ে, চলে গেল আমাদের একা রেখে। আমাদের সংগে যোগাযোগও রাখছে না! ভেসে যাওয়া সংসারটা এখন আমার কাধে, বয়ে বেড়াচ্ছি তার জ্বালা! সংসার কারে কয়?
নিঝুম আকারে সবাই যেন শোকার্ত, সারাশব্দ নেই! সবাই চুপচাপ।
একটু পর......
একটু হাসি এল মালতি মুখে!কি কারণ অজানা সকলেই! গান ধরল মালতি......
" ও আমার এ কূলও গেল ও কূলও গেল
শূন্যে রইলো মন
জমিজমা ভরা বুকে , কাইরা নিলিরে নদী যান
এখন শুধু পড়ে রইলো জমিনআসমান ",
গানটা অবশ্যই সেই দুঃখেরই গান! মালতি হাসল, বলল, খাওয়া থামইলি কেন রে বাবা। আমি পাগলি মানুষ কখন কি কইয়া বসে! এইটা তো একটা গান বানাইছি।
আমার শ্বশুরমশাই, গাইয়ে মাসটার ছিলেন, সন্ধ্যা হইলে এই বারান্দায় বসত ভাওয়াইয়া, বাউলের আসর। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে খোল তাল সারেঙ্গি, দোতারা আরও নানান যন্ত্র। ওই জানলার দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকাও গানের কত যন্তর।। সব দেখলে মন জুরায়, আর মানুষটার কথা মনে পরে।
শচীন বলল, আপনার শ্বশুর বুঝি রসিক মানুষ ছিলেন?
----- মালতি বলল, হুম! তাই বাবা। আজকে মানুষটা থাকলে হয়তো নাতি নাতনীদের নিয়ে বসত পড়ার টোল নিয়ে, গান শেখাত, বাজনা শেখাত! না জানি কতই না করত।
চোখে জল ভাসছে মালতির কিন্তু কাঁদছে না, হয়তো বা অন্তরটা ভিতরে ভিতরে ঘুমরে কাঁদছে।
বলা শুরু করল মালতি, যাইহোক সে কথা সব যাকগে, এবার সেই বন্যার কথায় আসি! খাওয়া দাওয়া নেই ঘর বাড়ি জলের তলায়, চারদিকে অন্ধকার মশাল জ্বালানোরও কিছু নেই তখন অবশ্য কারেন্ট শুধু জলশহরেই ছিল গ্রাম গুলিতে ছিল না, তবে বন্যার কারনে সব বিপর্যস্ত , গাছপালা হাস মুরগী গরুছাগল, ভেসে যাচ্ছে। বন্যায় হলে যা হয়। ধানের গোলাও জলের তলায়! আমাদের ধানের গোলা ছিল প্লাস্টিকে মোরানো তবুও অর্ধেকের বেশি ধান ভিজে নষ্ট হয়েছে।
ভাগ্য বসত আমাদের একটা লোহার সিন্ধুক ছিল, তার উপরে ওই আতপধান ভেনেছিল আমার শ্বাশুড়ি মা, আবার সেই সিন্ধুকের ওপরে রান্না করেছিল, ভেজাখরি দিয়ে, আধ সেদ্ধ ভাত খেতে হয়েছিল! আমি শ্বশুর মশাই আর দেওরেরা টিনের চোৌয়াড়ি চালার ওপরে থাকতাম,।পরে তো ত্রাণ শিবিরে থাকতাম বাঁধের পাড়ে। ত্রিপল টাঙানো অস্থায়ী ঘরে। সরকারি খাওয়া হেলিকপ্টারে ফেলে দিয়েছিল অবশ্যই, গুড় আর চিড়ে মুড়ি, প্যাকেটিং জল ইত্যাদি, মাইকিং করে বলে দেওয়া হল যে যা পাবে তা যেন ধরে নেয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছিল। টহল ছিল সরকারি কর্মকর্তারাও। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এসেছিল ত্রান ও উদ্ধার কাজে এছাড়া এনডিআরএফের দলও। সব থেকে চমৎকার কাজ করেছিল ভারতসেবাশ্রমসংঘ ও রামকৃষ্ণ মিশন। এই আাধপেটা করে জীবন কেটে ছিল, কোনো দিন আবার না খেয়ে! তিনদিন চাররাত ধরে বৃষ্টি। , পরে বৃষ্টি কমলে অবশ্যই ঈন্দিরা গান্ধী নিজেই এসেছিলেন জলশহরে। এই সেবারই আতি স্বচক্ষে ইন্দিরা গান্ধীকে দেখেছিলাম খুব কাছ থেকে।এছাড়া অন্যান্য নেতা মন্ত্রীরাও এসেছিল। ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছেন নিজেরাই। স্কুল আর বাঁধের পাড়ে বসে ত্রান শিবির।
জল কিছুটা নিচে নেমে এলে দেখা গেল....
রাস্তা ঘাট পলিময় পলি, বাড়ি ঘর রাস্তা গাছপালা সব যেন সাদা সাদা পলির আস্তরণে।আর জল ক্রমশ্য নদীতে গেলে তখন পলি শহরে রাস্তা ঘাটের পলি সরানো কাজ করছে বরাদে পাওয়া ঠিকেদাররা জোর কদমে। চারদিকে তখন ডিডিটি আর ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদিও ছড়িয়ে ছিল। যাতে মশামাছির বৃদ্ধি না হয়।
কিছু বলছ না যে শচীন বাবু? মালতি বলল।
খাওয়া ছেড়ে তখন গালে হাত শচীনের! সে বহাবহতার কথা শুনতে শুনতে বধিরতা হয়ে পড়ল যেন। আবারও মালতি বলল, কি রে শচীন বাবু?
পরে শচীন বলল, সেটাই বুঝি জলপাইগুড়ি ও তার সংলগ্ন অঞ্চলকে পঙ্গু করে দিয়েছিল!
.......মালতি বলল, পঙ্গু কি বলছিস রে বাবা! বল দুঃসময় ও খারাপ পরিস্থিতি! আর প্রকৃতি ও আবহাওয়া এরা ভাঙ্গে গড়ে! নতুনকে ডাকে নদীও সেরকম।
আবার গান, একূল নিলি, ওকূল নিলি
দিলি নারে মাথা গোজার ঠাই
ওরে ওরে নদী তুই যে ভাই।
সবাই অবশ্য চুপচাপই খেতে খেতে মালতির স্মৃতি বিজরিত কথা গুলি শুনেই যাচ্ছিল পুজা, শিবুও। এই সময় পুজা একটা ঠেকা দিল শচীনকে, এবার টেপা মুরগীর মতন ঝেড়ে উঠে বলল, কি করছিস পুজা এসব? পুজা কিছু বলল না! তার মা মালতি বলল, খেয়ে নাও বাবা তাড়াতাড়ি! আমি মনে হয় তোকে বিরক্ত করলাম, এই বলে চলে গেলেন ঘরের ভিতরে।
জীবন ভালোবেসে ... তবুও
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
জানি কষ্টের পথ শেষ হবে একদিন
জীবনের দগ্ধতা ...শেষে ,
দূর অজানায়
কোথায় কতদূরে জানা নেই .... তবুও হয়তো ঠিকানা ঠিক খুঁজে পাবে ;
ঝাপসা দু'চোখের দৃষ্টি
কেউ তো কথা রাখে না , আশা নিরাশায় দুলে অকারণ ,
মন যে বড়ো অভিমানী .....
ভালো থেকো তুমি ;
যদি মনে পড়ে কোনোদিন
যদি একবুক হাহাকারে জেগে থাকো রাত
কিছু কথা ,কিছু আকুলতা অশ্রুতে ঝরে অবশেষে ,
অনুভবটুকু বুঝে নিও শুধু
ভালোবাসা ...এমনি ,পুড়ে পুড়ে নীরবে বাঁচিয়ে রাখে ...
জন্মের পর নতুন জীবন
রীনা মজুমদার
সন্ধ্যার এক গভীর স্রোতে
ভেসে আসা একটি প্রাণ
হয়তো বা ,গঙ্গায় চিরন্তন দান !
ছোট্ট হৃদয়ে গেঁথে যেত
মহাশক্তির মন্ত্র বারবার
God bless ! God bless !
ক্ষমা, মানব প্রেম , উচ্চারিত অমৃতবাণী _
নিস্তব্ধ চারদেওয়ালে আলোর দীপ্ত পাঠে
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ঈশ্বরচন্দ্র, মধুসূদন
সমৃদ্ধ অক্ষর মালায়,
ঋদ্ধ বালক দিনে দিনে গড়ে l
একদিন ঝরে যাওয়া ফুল সন্ধ্যায়
কুড়িয়ে নিয়েছিল যে কোল,
তাঁর থেকে জেনে গেল, শিখল যেন
জীবনের অন্য নতুন জীবন !
বালক তখন বছর দশ ..
এক
ঐশ্বরিক স্পর্শে সে বলে উঠল,
'ফাদার !! God bless you ' ...
গোপন রক্ষাকবচ
সুব্রত নন্দী
প্রতিটি শব্দের প্রতিধ্বনিতে লুকিয়ে আছে শূন্যতা,
প্রতিটি মানবিক ধ্বনিতে অস্তিত্বের জড়তা,
কেন আজ গোপন রক্ষাকবচের আস্তরণে আবৃত?
পূবালী অনুরাগের স্মৃতি রোমন্থনেও কেন আজ ভীত?
ছিল তবে এতদিন নকল অভিসারের ছেলেখেলা,
কেন বাড়িয়েছিলে হরেক হাতছানির ছলাকলা!
রিক্ত ধূসর ভগ্নহৃদয় আজ অস্তিত্বের সংকটে,
পতিত হৃদয় হোঁচট খাচ্ছে জিজীবিষার ঘাটে।
ঝরা বসন্তের পাদদেশে আজ শুধুই নষ্ট নীড়,
হয়তো আবার খুঁজে পাবো স্বচ্ছতার তীর।
ভারাক্রান্ত মনে বাজছে বিদায়ের অনুরাগ,
হয়তো ওপারে বাজবে না মূকাভিনয়ের বেহাগ।
আহত সৈনিকের গল্প
তাপস দাস
দুই ভুরুর মাঝে মুক্তির চুমু আঁকি
যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে আসা
ভোর দেখা
নির্ঘুম সারারাত
প্রতিটা অঙ্গের কারখানায় ধারালো ছুঁড়ির নাচ...
যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে আসা
ভোর দেখা
নির্ঘুম সারারাত
প্রতিটা অঙ্গের কারখানায় ধারালো ছুঁড়ির নাচ...
ভূগোলের জন্য যুদ্ধে বিজ্ঞান চিৎকার করেছে
ব্যাকরণ বলেছে বাঁদিক বাঁদিক
জ্যামিতি ছেদ করতে বলেছে বিন্দুতে
অঙ্ক বলেছে এক - দুই - তিন
ইতিহাস হয়েছে সবকটা উচ্চারণ...
ব্যাকরণ বলেছে বাঁদিক বাঁদিক
জ্যামিতি ছেদ করতে বলেছে বিন্দুতে
অঙ্ক বলেছে এক - দুই - তিন
ইতিহাস হয়েছে সবকটা উচ্চারণ...
একটা পা নিয়ে দুটো হাত নিয়ে তোমার কাছে ফিরেছি
হে আমার প্রাকৃতিক ভূগোল, হে প্রেম
ভোরের আলোয় আগে কখনো উলঙ্গ দেখিনি
শরীরে শত্রুপক্ষ - মিত্রপক্ষের কেনাবেচার হাট ভাঙছে
ভেবে ফুরনোর আগে একটা চুম্বন করি কপালে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু তোমার আমার...
হে আমার প্রাকৃতিক ভূগোল, হে প্রেম
ভোরের আলোয় আগে কখনো উলঙ্গ দেখিনি
শরীরে শত্রুপক্ষ - মিত্রপক্ষের কেনাবেচার হাট ভাঙছে
ভেবে ফুরনোর আগে একটা চুম্বন করি কপালে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু তোমার আমার...
হতাশ হওয়া কবিতারা
অনিমেষ সরকার
(১)
একটা ভীষণ শহরের দিকে এই চলে যাওয়া
একটা ভীষণ শহরের দিকে এই চলে যাওয়া
ঘুম কাড়াকাড়ি
পথটুকু চেনা।
পথটুকু চেনা।
ভুলে যাওয়া ক্লাবের গলি
আর গাছ জড়িয়ে থাকা মোড়ক।
আর গাছ জড়িয়ে থাকা মোড়ক।
এখানে প্লাস্টিকের ফার্ম থেকে কবি চলে যাচ্ছে বীর্য কি জানতে।
(২)
এই
পাঠক জানে ! ঈশ্বর অবতারনে গলার মতো লম্বা চাঁদ
ক্ষেতে এসে পড়া একটা অলীক কল্পনার মতোই
হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অধঃপতনের যবনিকা ।
এই
পাঠক জানে ! ঈশ্বর অবতারনে গলার মতো লম্বা চাঁদ
ক্ষেতে এসে পড়া একটা অলীক কল্পনার মতোই
হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অধঃপতনের যবনিকা ।
কবি তোমার কাছে উত্তর আছে কি
এই মৃত্যুর মতোই দেখতে পঙ্গু আবহাওয়া
কতটা পা ছড়িয়ে মাংস খুবলে আনতে পারে!...
কতটা পা ছড়িয়ে মাংস খুবলে আনতে পারে!...
উদ্ধৃতি
সুস্মিতা সাহা
হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই
বৃষ্টিকণার মতো দ্রুত ঝরে যাচ্ছি।
আমার কিছুটা মাটি শুষে নিচ্ছে
বাকিটা মাটি বেয়ে দূরন্ত স্রোতের গতিতে
জমে যাচ্ছে নালায়
বদ্ধ জলায় জমছি
আর ক্রমাগত দূষণ ছড়াচ্ছি
শোষিত সমাজের প্রতিনিধিরাই জানে
কিভাবে শোষক হতে হয়!
ঈশ্বর ও ডিগ্রি(২)
ফিরোজ হক্
ডিগ্রিধারী ঈশ্বরের ডিগ্রি বলতে
টাকা চেনার কেরামতি
এছাড়া টাকা গোণার...
হাত পাততে গিয়েই
তাদের ডিগ্রি ধরা পরে যায়...
আমরা মানুষেরা
সেইসব ঈশ্বরদের অবহেলা করি
ধুলো উড়িয়ে কিংবা গর্জন করে
তাদের ডিগ্রি বুঝিয়ে দেই...
কবিতার ছিটেফোঁটা
তাপসী লাহা
জল গড়িয়ে পড়ছে মাথায়
আকাশ কলের থেকে।
২)বিদ্রোহী আজ মন
চাতক চাতক ডাকছে যাকে
উড়ে গেছে বহুক্ষণ।
৩)আলোর মত মৃত্যু নিয়ে এসো
শ্বাস ছুঁয়ে যাক
জন্মমতের ভুল।
৪)আমি একলা থেকে যাই
ঝরণা, পাহাড় , নাব্যনদী
নাম দিই মুজনাই।
কালবৈশাখী
ফজলুল কবির
কালবৈশাখী তুমি ভেঙে ফেলো
হিংসার বিষ বাষ্প,
বজ্র মেঘ ডেকে বিভেদের কালিমা সব করো পুষ্প।
উচ্ছল ঝড়ে উড়ুক , দূর হয়ে যাক সব অমানিশা,
তারপর আসবে নিশ্চয় উজ্জ্বল এক আলোর দিশা।
সুন্দর একটা পৃথিবী হবে , থাকবে শুধুই ভালবাসা ,
সবাই সুখ শান্তিতে থাকবে, করবে সুন্দরের প্রত্যাশা।
নতুন নতুন সব সম্ভাবনা নিয়ে আসবে কালবৈশাখী,
আমি নতুন সম্ভাবনার সেই ঝড়ের অপেক্ষায় থাকি।
বজ্র মেঘ ডেকে বিভেদের কালিমা সব করো পুষ্প।
উচ্ছল ঝড়ে উড়ুক , দূর হয়ে যাক সব অমানিশা,
তারপর আসবে নিশ্চয় উজ্জ্বল এক আলোর দিশা।
সুন্দর একটা পৃথিবী হবে , থাকবে শুধুই ভালবাসা ,
সবাই সুখ শান্তিতে থাকবে, করবে সুন্দরের প্রত্যাশা।
নতুন নতুন সব সম্ভাবনা নিয়ে আসবে কালবৈশাখী,
আমি নতুন সম্ভাবনার সেই ঝড়ের অপেক্ষায় থাকি।
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল
সঞ্চিতা
দাস
রবি শশী হয়ে বিরাজ করেছ
ভরিয়ে দিয়েছ প্রাণ,
গানে কবিতায় ছন্দে বর্ণে-
তোমাদের
জয়গান।
রবি শশী থাকে আকাশের মাঝে
রবি নজরুল মর্ত্যে,
লেখনীর
সব ধারাল বাণী
প্রতিটি
ছত্রে ছত্রে।
আমরা পেয়েছি কত কথকতা
পেয়েছি
অমৃতধারা-
শিক্ষা
কিছুই হত না পূর্ণ
তোমাদের
লেখা ছাড়া।
তপ্ত গ্রীষ্মে জন্ম নিয়েছ
হয়েছি আমরা ধন্য,
কালের নিরীখে বিরাজ করে
তোমরাই
অগ্রগণ্য।
শ্রদ্ধার
সাথে হই অবনত
রবি শশী একই আকাশে
আর যেখানে যা আছে তাহা
হয়ে গেছে সব ফ্যাকাশে।
ভালো থেকো..
পারমিতা দাস
কতবার বলেছো আবেশ,
ভালোবাসোনি কখনো...
তবে আজ কিসের এত,
তোলপাড় মন জুড়ে?
ভালোবাসোনি কখনো...
তবে আজ কিসের এত,
তোলপাড় মন জুড়ে?
কতবার বলেছো দেখতে চাওনি আমায়
তবে আজ কেন এলে,
বিদায়ের শেষ বেলায়?
তবে আজ কেন এলে,
বিদায়ের শেষ বেলায়?
ভালো থেকো আবেশ...
ভালো থেকো.
ভালো থেকো.
অভিমান বুকে জড়িয়ে আর কেউ
অপেক্ষায় থাকবেনা তোমার.
টেলিফোনের ওপার থেকে আশ্রয় নেবে না,
আর কোনো অপরিচিত স্বর.
ভালো থেকো আবেশ...
ভালো থেকো.
অপেক্ষায় থাকবেনা তোমার.
টেলিফোনের ওপার থেকে আশ্রয় নেবে না,
আর কোনো অপরিচিত স্বর.
ভালো থেকো আবেশ...
ভালো থেকো.
সময় নিত্যান্তই কম..
সময় নেই আজ আর,
তোমার ডাকে সাড়া দেওয়ার.
আমার সূর্য ডুব দেবে আজ
সন্ধ্যা নামার আগে....
তোমার আকাশ কেন আবির লাল?
সময় নেই আজ আর,
তোমার ডাকে সাড়া দেওয়ার.
আমার সূর্য ডুব দেবে আজ
সন্ধ্যা নামার আগে....
তোমার আকাশ কেন আবির লাল?
চিঠি
খোলা চিঠি
অনেকদিন চিঠি লিখিনি আজ লিখছি ,কিন্ত চিঠির মতো হচ্ছে না যে ,কথা গুলো কলমে কবিতা হয়ে যাচ্ছে ..এটাই আমার চিঠি ,একটু অন্যরকম স্বাদে /মনটা যে আকুল হয়ে কাঁদে/চিঠিটা তাই আজ অন্য সাজে /সেই বকুল তলার কথা আজও যে বুকে বাজে/...
আমি সেই মেয়েটা বলছি..
কি লিখি তোমায়
আমি সেই মেয়েটা বলছি..
কি লিখি তোমায়
আজ বুঝি তোমার মন খারাপের মন !
কথা কইছে না ,হচ্ছে না আপন !
আজ বুঝি সে ও অবুঝ হয়েছে ,
তার পাগলামীটা সীমা পেড়িয়েছে ..
আজ তাই আকাশের কোনে মেঘ জমুক ,বৃষ্টি নামুক ঝমঝমিয়ে ,ভিজুক আমার এই অশান্ত আর মন খারাপের মন .. ঠান্ডা হবে প্রান ,দুচোখে র পাতায় নেমে আসবে ঘুম ..
তখন পাড়ি দেবো স্বপ্নের দেশে, যেখানে দেখতে পাবো একটা ভালোবাসা র মন 'আজো আমারই অপেক্ষায় " তার মন্দটাও ভালো হয়ে যাবে ---মিশবো যখন দুজনের মনের মোহনায় ..
ধরেই নাও না আমিই তোমার -সেই পাগলপারা মন
কথা কইছে না ,হচ্ছে না আপন !
আজ বুঝি সে ও অবুঝ হয়েছে ,
তার পাগলামীটা সীমা পেড়িয়েছে ..
আজ তাই আকাশের কোনে মেঘ জমুক ,বৃষ্টি নামুক ঝমঝমিয়ে ,ভিজুক আমার এই অশান্ত আর মন খারাপের মন .. ঠান্ডা হবে প্রান ,দুচোখে র পাতায় নেমে আসবে ঘুম ..
তখন পাড়ি দেবো স্বপ্নের দেশে, যেখানে দেখতে পাবো একটা ভালোবাসা র মন 'আজো আমারই অপেক্ষায় " তার মন্দটাও ভালো হয়ে যাবে ---মিশবো যখন দুজনের মনের মোহনায় ..
ধরেই নাও না আমিই তোমার -সেই পাগলপারা মন
** উত্তরের অপেক্ষায়
যুথিকা সাহা
জীবন যে রকম
এক সাধারণ মেয়ের জীবন সংগ্রাম
ইন্দ্রাণী সমাদ্দার
দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজে জবার ঘুম ভাঙ্গে। আজও সে কাজে যেতে পারেনি। হাতে খুব ব্যথা। খাট থেকে নামতে নামতে এখনো চোখে লেগে আছে সদ্য দেখা স্বপ্ন। বাস থেকে জবা আর তার দুই ছেলেদের কে যেন নামিয়ে দিচ্ছে– হাতে ছোট্ট পুটুলি। দরজা খুলতে খুলতে ভাবে এটা স্বপ্ন নাকি তার জীবনের কথা। দরজা খুলে দেখে ছোট ছেলে কাজ থেকে ফিরলো। হাতে খাবার প্যাকেট, মিষ্টি আরো কত কিছু। জবা ঝাঁজিয়ে বলে ওঠে ‘আবার তুই পয়সা নষ্ট করছিস। বিপদে কেউ সঙ্গে থাকবেনা তখন এই টাকা কাজে আসে। কবে বুঝবি তুই! আমি মরলে’। জবার দুই ছেলে – টুকাই আর বুবাই। বুবাই ছুটে এসে বলে ‘মা আবার তুমি বাজে কথা বলা শুরু করলে। তোমার শরীর খারাপ বলে আমি খাবার কিনে আনলাম। দাদা নার্সিং হোম থেকে ফিরল বলে । এখন খাবার জন্য তিনটে এগরোল আর রাতের জন্য রুটি তরকা নিয়ে এলাম’। চোখের জল মুছে জবা ভাবে জীবনে কষ্ট সে কিছু কম করেনি। দুই ছেলেই তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ের দুঃখ- কষ্ট বোঝে । এই তার জীবনে পরম পাওয়া। ছোট ছেলে মায়ের বেশী ন্যাওটা।
আজকাল জবার বড্ড ক্লান্ত লাগে। সে আবার শুয়ে পরে। আজকের মত রান্নার চিন্তা নেই। বুবাই রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। জবার মনটা জানলা দিয়ে অনেক দূরে চলে যায়। মামার বাড়ি থেকে বিয়ে হয়ে নতুন সংসার, কত রঙ্গিন স্বপ্ন। জবা ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে অবহেলায় মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। সেখানে মামাতো ভাই বিয়ের সম্বন্ধ আনে। ছেলে বাস চালায়। হাতে প্রচুর কাঁচা টাকা। জবার স্বপ্ন ছিল গুছিয়ে সংসার করবে। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। জবার বরের অনিয়মিত বাড়ি ফেরা। কখনো সংসারে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া আবার কখনো একদম টাকা না দেওয়া। এই সব কিছু সত্ত্বেও জবা খেলনাবাটি নিয়ে সংসার সংসার খেলা খেলতে লাগলো। কয়েক বছর কেটে যায় । জবার দুই ছেলে পিঠোপিঠি। কদিন ধরে জবা ভাবছে দুপুরে সে কয়েক বাড়ি রান্নার কাজ নেবে। না হলে ছেলেদের মুখে অন্ন জোগাতে পারবেনা। এর কিছুদিনের মধ্যে। মাঝরাতে জবার বর মদ খেয়ে জবাও তার ছেলেদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। জানায় সে কয়েক মাস হল নতুন বিয়ে করেছে। নতুন বউকে এবার বাড়ি নিয়ে আসবে। তাই জবা ও তার ছেলেদের আর এই বাড়িতে ঠাঁই হবেনা।
দুই ছেলে নিয়ে মাঝরাতে জবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবে সে এখন কোথায় যাবে! মামা -মামি বিয়ের সময় জানিয়ে দিয়েছিল সংসারে মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে। তার বোঝা তাঁদের পক্ষে আর বহন করা সম্ভব নয়। আকাশ কালো চাদরে ঢেকে আছে। আকাশের এদিক -ওদিক একটা দুটো তারা উঁকি -ঝুঁকি মারছে। মাথার ভিতর একটা গুবরে পোকা যেন কিলবিল করছে। একটাই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে- কোথায় যাবে সে?- দুই ছেলেকে নিয়ে! হঠাৎ দেখে এত বছরের প্রতিবেশী কাকিমা পাশে দাঁড়িয়ে। উনি বলেন আজ রাতের মত তাঁর বাড়ি থাকতে। আরো জানান সারা জীবনের মত তাঁদের বহন করার ক্ষমতা তাঁর নেই। সংসারে কাকিমা একা। কাকু মারা যাবার পর কোনও রকমে দিন চলে। কাকিমা ছেলে দুটোকে ছাতু মেখে দেন । জবাকেও খেতে বলেন। জবা জানায় সে খেতে পারবে না। মাথার উপর অনিশ্চয়তার ছাদ । দুটো ছেলেকে নিয়ে যে সে কোথায় যায়? কাকিমা বলেন জবার রাঙ্গা পিসির কথা। পিসি ছোটছেলে হবার পর নাতিদের দেখতে এসেছিলেন। একবেলা ছিলেন। তখন আলাপ হয়েছিল কাকিমার সঙ্গে। পিসির বিয়ে হয়নি। কিন্তু বাপ মরার পর আর ভাইয়ের সংসারে না থেকে নিজের মত থাকতেন। বাবা বেঁচে থাকতে মেয়ের থাকার জন্য ঘর মেয়ের নামে করে গেছিলেন। পিসি দুপুরবেলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গিন্নিদের মালিশ করে যে টাকা আয় করতেন তাঁতে তাঁর খরচা চলে যেত। এত চিন্তা সত্তেও জবার ঘুম এসে যায়। হঠাৎ মনে হয় কেউ ডাকছে। চোখ খুলে দেখে কাকিমা সামনে দাঁড়িয়ে হাতে একটা কাগজ। সেবার পিসি কাকিমাকে যাবার সময় নিজের ঠিকানা দিয়ে বলেছিলেন যেতে। কাগজ হাতে নিয়ে ঠিকানা দেখে কাকিমাকে জানায় কাল সক্কাল সক্কাল জবারা যাবে পিসির বাড়ি বারুইপুর। সে আরো জানায় ঠিকানা পেয়ে বড্ড উপকার হল । না হলে যেতে পারতো না পিসির বাড়ি। সেবার পিসি তাকেও ঠিকানা দিয়ে গেছিল কিন্তু সে ঠিকানা তাঁর সঙ্গে নেই।
ভোরবেলায় জবা দুই ছেলে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পরে পিসির বাড়ির উদ্দেশ্যে । দরজা খুলে পিসি হতবাক। সব শুনে বলেন, থাকার জন্য এই একটা ঘরে চারজন মানুষ কোনো রকমে হয়ে যাবে। মালিশ করা বড্ড পরিশ্রমের কাজ জবাকে শিখিয়ে দিতে পারেন কিন্তু জবা এত পরিশ্রম করতে পারবে? জবা জানায় ছেলেদের মুখ চেয়ে তাকে পারতেই হবে। দেখতে দেখতে কয়েক মাসের মধ্যে জবা পিসির কাছে শিখে তেল মালিশের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। এই কাজের মস্ত সুবিধা কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে হাতে টাকা পাওয়া যায়। এখন বিভিন্ন গজিয়ে ওঠা ফ্ল্যাটে বডিমেসাজের বড্ড চাহিদা। পিসি জবাকে মোবাইল কিনে দেন। বৌদিরা ফোন করে ঠিকানা বলে দেন। জবা সেই সব বাড়িতে হাজির হয়। জবা পিসির বাড়ি আশ্রয় পেয়েছে । পিসিকে সে আর কাজে যেতে দেয়না বরং রোজগারের টাকা এসে পিসির হাতে দেয়। জবা ভোরবেলায় রান্না করে , বাড়ির সব কাজ সেরে কাজে বেরোয়। পিসিও খুব খুশি শেষ বয়সে মেয়েও দুই নাতি পেয়ে। এই ভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। টুকাই যে বছর মাধ্যমিক দেয় সেই বছর পিসি মারা যান। পিসির ভাইয়েরা এসে জবাও তাঁর ছেলেদের ঘরছাড়া করে।
জবা পিসির বাড়ির কাছে ভাড়া বাড়িতে ওঠে। পিসি বেঁচে থাকতেই পিসির জমানো টাকাও পিসির গয়না দিয়ে জবার নামে জমি কেনেন। পিসি বলতেন পিসির ঘরে পিসির অবর্তমানে তাঁর ভাইয়েরা জবাকে টিকতে দেবেনা। মাথার ছাদ নিশ্চিত করা দরকার। দেখতে দেখতে কয়েক বছরের মধ্যে জবার ছেলেরা হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট পড়ে চাকরিতে যোগ দেয়। জবার দুকামড়ার বাড়ি ততদিনে হয়ে গেছে। সম্বিত ফেরে ছোট ছেলের ডাকে ‘ও মা রোল ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খাবে না’ চোখ মুছে জবা ছেলের হাত থেকে রোল নেয়।
গল্প
মায়া
মেহেবুব আলম
খাবার টেবিলে ভাত নিয়ে গালে হাত দিয়ে রহিমের অপেক্ষায় কখন যে সারবানুর চোখ দুটো লেগেছে তা সে জানেনা। হঠাৎ এক বিকট চিৎকারে সে চমকে উঠল।বুঝতে পারল যে, রহিম এসেছে। তাই সে গিয়ে দরজা খুলে দিল। রহিম ঘরের ভেতরে ঢুকেই সারবানুকে এক ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলল-
--দরজা খুলতে তোর এতক্ষণ লাগে ক্যা ?
সারবানু শরীরে হয়তো আঘাত তেমন পায়নি, কিন্তু মনে যে আঘাত পেয়েছে তা সে কি করে দেখাবে। তার অন্তরের এই ব্যথা বোঝার মতো মন রহিমের নেই। সারবানু উঠে মায়া ভরা চোখে রহিমের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার চোখ থেকেঅশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগল। রহিম ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। সারবানু চুপ করে শুধুই ভাবতে লাগল, এতবড় ভুল সে কি করে করল ! এই মানুষটিকে সে না চিনেই কি করে বিয়ে করল। এইদিন দেখার জন্যেই কি সে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেগিয়ে রহিমকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।
রহিম ও সারবানু দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর অনেকদিন পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ঠিকঠাক ছিল। রহিম প্রেম করে বিয়ে করেছে জন্য, তার শ্বশুর বাড়ি থেকে সে যৌতুক হিসেবে সামান্য কিছু আসবাব ছাড়া টাকা-পয়সা কিছুই পায়নি। তাই সারবানু যতই পুরোনো হতে লাগল, রহিম ততই তার ওপর অত্যাচার চালাতে লাগল। সারবানুর গায়ে হাত তুলতেও রহিম এখন কোনও দ্বিধা করেনা। বিয়ের দু’বছরের মধ্যেই রশ্মি হয়েছে। সারবানু ভেবেছে, রশ্মি-ই তাদের দু’জনের মধ্যে পূর্বের হারিয়ে যাওয়া প্রেম ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু রহিমের চরিত্রে পরিবর্তনের কোনো চিহ্ন নেই। রহিম এখন সর্বদাই সারবানুকে যেন তার শত্রু বলে মনে করে। বিয়ের আগের ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও যেন আর তাদের মধ্যে বাকী নেই। রহিম আবার বলল-
--অমন করি আইরি ধরি কী দেখিস ! তোর চোখ এবার গুতি কানা করিম।
সারবানু দেখছে যে, দিন কে দিন মানুষটি কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। এই ঝামেলা তাদের নিত্য দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। রহিমের চিৎকারে রশ্মি ঘুম থেকে উঠে বাবা-মায়ের এই দৃশ্য বসে বসে দেখছে। সে এই দৈনিকের রুটিন দেখে দেখে অভ্যস্ত। প্রথম প্রথম ঝগড়া দেখলে সে খুব কান্না করত। কিন্তু এখন সে আর আগের মতো কাঁদে না। রহিম টলতে টলতে এগিয়ে গিয়ে সারবানুর চুলের মুঠ ধরে বলে-
--মোর ভাত কোটে ? মোক ভাত দিবু, নাকি এমন করিয়াই দাঁড়ে থাকবু !
রহিম জানে তার জন্য সারবানু প্রতিদিন কোথায় ভাত ঢেকে রাখে। তারপরেও সারবানুর সাথে রাতে ঝগড়া না করলে যেন তার শান্তি হয় না। আজকাল প্রায় সবসময়ই তার মাথা গরম থাকে। আর মাথা ঠাণ্ডা হবার পরেও কোনোদিন সে স্ত্রীর কাছে তার কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চায় না।
স্বামী এলে দু’জনে মিলে এক সাথে খাবে ভেবে সারবানুও না খেয়েই আছে।কিন্তু স্বামীর এমন দুর্ব্যবহারে কোনো স্ত্রীর-ই গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না। তাদের বিয়ের চার বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সারবানুর প্রতি রহিমের অত্যাচারের মাত্রা, দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সারবানু শুধু রহিমকে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল-
--মোক তোমরা মুক্তি দেও ! প্রতিদিন এত অশান্তি মোর আর ভালো লাগে না। –রহিমকে এ কথা বলে সারবানু না খেয়েই শুয়ে পড়ল।
রহিম খাবার টেবিলে বসে, অনেক দিনের অভুক্তের মতো ভাত গিলতে লাগল। একবারও জানতে চায়নি যে, সারবানু খেয়েছে কি না ! যেন নিজে বাঁচলে বাপের নাম। খাওয়া শেষ করে রহিমও শুয়ে পড়ল। শোবার সাথে সাথেই সে ঘুমের সমুদ্রে ডুবে গেল। যেন সারা পৃথিবীর সমস্ত ঘুম এখন তার চোখে। ঘুমোলে রহিম অর্ধমৃত। এখন যদি সারবানু তার প্রতি অত্যাচারের বদলা নিতে চায়, তবে সে নিতে পারবে। রহিম একটা প্রতিবাদও করবে না।
বিয়ের পরে পরে উভয়ের মধ্যে কত প্রেম ছিল, ছিল অনেক ভালোবাসা।কেউ কাউকে ছেড়ে কোনোদিন ভাত খায়নি। দিনে না হলেও, রাতে একই সঙ্গে খেয়েছে। কিন্তু আজ উভয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক বিস্তর দূরত্ব।
রহিমের হাত সারবানুর হাতের ওপর পড়তেই, একটা চটচটে কী যেন রহিমের হাতে লাগল। রহিম আলো জ্বালিয়ে দেখল তার হাতে রক্ত। কাঁচা রক্ত দিয়ে বিছানার অর্ধেক ভিজে গেছে। ঘুমের ঘোরে প্রথমে ব্যাপারটি রহিম বুঝতে না পারলেও, তার বুঝতে আর বাকী থাকল না যে, সারবানু তার হাতের শিরা কেটে সুইসাইড করেছে। ব্লেডটি পাশেই পড়ে আছে। রহিম কি করবে বুঝতে না পেরে চিৎকার করে বলতে লাগল-
--সারবানু...!!! তুই এটা কী করলু রে…? মোক ছাড়ি তুই চলি গেইলু। মোর ভুলের জন্যে তুই তোক এমন করি শাস্তি দিলু। তুই ফিরি আয়, ফিরি আয়। মুই আর কোনোদিন তোর সথে খারাপ ব্যবহার না করিম। এত বড় শাস্তি তুই মোক না দিস। নইলে আল্লাও মোক ক্ষমা করবে না। সারবানু...
এমন সময় হঠাৎ রহিমের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে তারাতারি উঠে আলো জ্বালিয়ে সারবানুর নাকে হাত দিয়ে অনুভব করল যে, শ্বাস এখনও চলছে। তার মানে সারবানু মরেনি, বেঁচে আছে। কিন্তু সে যা দেখল, তা যদি সত্যি হয়...! রহিম দুহাত দিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সারবানুকে ঘুম থেকে তুলে তার বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। রহিমের কান্নায় সারবানুরও ঘুম ভেঙে গেল। রহিম যে কেন হঠাৎ মাঝ রাতে, ঘুম থেকে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, তার কোনো আগামাথা সারবানু বুঝতে না পেরে, শুধু ফ্যালফ্যাল করে রহিমের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
পুলওয়ামার পর
বেদশ্রুতি মুখার্জী
পুলওয়ামার টেররিস্ট অ্যাটাকের নিউজটা স্প্রেড হবার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ, নিকোটিন স্মার্টফোন অ্যাডিকশনের মতোই প্যাট্রিওটিজম অ্যাডিকশনেও, সবাই একছিলিম করে সিপ মেরে দেশের জন্য পোস্ট করে যাচ্ছেন, সঙ্গে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে আইটি সেক্টর পর্যন্ত বিশেষ এক শ্রেণিকে গদ্দার বলে তুলোধোনা। যেকোনো টেররিস্ট অ্যাটাকের পর জাতিবিদ্বেষের এই পোস্ট টেররিজম টেরর টাকে আমি বরাবরই খুব ভয় পাই, এজাতীয় আলোচনায় ভীষণ অস্বস্তি বোধ করি, ঘামতে থাকি আর মনে মনে আওড়াই-"একই বৃন্তে দুটি কুসুম"...
এরই মধ্যে সেদিন মুখোমুখি হলাম এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার, ব্যাঙ্কে গেছি মাইনে তুলতে, কাউন্টারে ঢুকে পড়ল জনাচারেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী, বুঝলাম ব্যাঙ্ক ডাকাতির সম্মুখীন আমরা, যেকোনো সময় যে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি। আমার সামনে দাঁড়ানো স্বাস্থ্যবান ছেলেটা যে কিনা এতক্ষণ আর্মি জয়েন করার কথা বলছিল বন্ধুদের সঙ্গে, আরো বলছিল ঐ দেশদ্রোহীগুলোকে এদেশ থেকে বের করে নাকি দেওয়া উচিত, শুনেই আবার ঘামছিলাম এত এসিতেও, ঐ মানে কারা, আমরা ওরা ভাগ হয় নাকি, দেশ তো সবার, যাগ্গে... সেই ছেলেটাকেও দেখলাম ভয়ে কাঁদছে, অবশ্য ও একা নয়, অনেকেই। আমিও যে খুব একটা নির্ভীক, সে আস্ফালন নাইবা করলাম, ভয়ে উদ্ধারের আশায় মনে মনে হনুমান চালিশার মাধ্যমে হনুমানজিকে এই অসময়েও বিরক্ত করছি। হঠাৎই দেখলাম সামনের দুষ্কৃতীর মুখে একটা লাথ এসে পড়ল তীরের বেগে, কোথা থেকে হাজির এক অপূর্ব সুন্দর আর্মিম্যান, বয়স খুব একটা বেশি হবেনা, বড়জোর ছাব্বিশ সাতাশ, আমার ভায়েরই বয়সী, দীর্ঘদেহী, পরিস্কার গায়ের রং, গালে হাল ফ্যাশানের দাড়ি, অনেকটা ঐ এখনকার বলিউড হিরো কী যেন নাম- রানা ডাগ্গুবাটির মতো দেখতে। কী স্ট্রোক, কী স্কিল, সত্যিই অবাক হতে হয়, ওরা আর্মিরা সত্যিই আমাদের চেয়ে অনেক আলাদা হয়, আমরা যখন বিপদের সম্মুখীন হয়ে গুহা খুঁজি, ওরা আমাদের ছাদ হয়। মুহূর্তেই আরো একজনকে ধরাশায়ী করল ছেলেটা, একের পর এক ওভার বাউন্ডারি মেরে আমাদের সেফ করেই যাচ্ছিল, হঠাৎ সেইমুহূর্তেই একটা গুলি এসে লাগলো ওর বুকের ডানদিকে, রক্তে ভেজা শরীরটা লুটিয়ে পড়ার আগেও সামনের জঙ্গিটার হাত থেকে শাটারটা কেড়ে একে একে সবকটার হাতে পায়ে গুলি করল যাতে কেউ পালাতে না পারে। ততক্ষণে কন্ট্রোল রুমে হয়ত কেউ খবরটা দিতে পেরেছিল লুকিয়ে ফোন করে, পুলিশের গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ ভেসে এলো, ছুটে গিয়ে দেখি আমাদের সকলকে বাঁচিয়ে যাওয়া ছেলেটা নিথর, বুকের ভেতর স্বজন হারানোর ব্যথা অনুভূত হলো যেন, কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে উঠলাম- হেল্প হেল্প, অসংখ্য লোক জড়ো হয়েছে ওকে ঘিরে, কী সুন্দর মিষ্টি একটা ছেলে, ওও হয়তোবা মাইনে তুলতে এসেছিল বা অন্য কোনো কাজে, ওরও তো বাড়িতে সবাই আছে, কী জবাব দেব, কী জবাব দিতে হয় এক্ষেত্রে, ওরা কী আমাদের মত সাধারণ হয়না, ওদের মায়েরা তৈরিই থাকেন, কেমন করে সাধারণ গর্ভ থেকে জন্ম নেয় এমন সব দুর্লভ রত্ন, আমার হাতটা ওর বুকে ছিল, ডাক্তার হবার সুবাদে চেষ্টা করছিলাম বুকটায় যদি সাড়া আনতে পারি, কোনো মিরাকেল ঘটাতে পারি, হঠাৎই হাতে কিছু ঠেকল যেন... চোখ নামিয়ে দেখি ওর নেমপ্লেট-
ক্যাপ্টেন রেহান খান......
এরই মধ্যে সেদিন মুখোমুখি হলাম এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার, ব্যাঙ্কে গেছি মাইনে তুলতে, কাউন্টারে ঢুকে পড়ল জনাচারেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী, বুঝলাম ব্যাঙ্ক ডাকাতির সম্মুখীন আমরা, যেকোনো সময় যে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি। আমার সামনে দাঁড়ানো স্বাস্থ্যবান ছেলেটা যে কিনা এতক্ষণ আর্মি জয়েন করার কথা বলছিল বন্ধুদের সঙ্গে, আরো বলছিল ঐ দেশদ্রোহীগুলোকে এদেশ থেকে বের করে নাকি দেওয়া উচিত, শুনেই আবার ঘামছিলাম এত এসিতেও, ঐ মানে কারা, আমরা ওরা ভাগ হয় নাকি, দেশ তো সবার, যাগ্গে... সেই ছেলেটাকেও দেখলাম ভয়ে কাঁদছে, অবশ্য ও একা নয়, অনেকেই। আমিও যে খুব একটা নির্ভীক, সে আস্ফালন নাইবা করলাম, ভয়ে উদ্ধারের আশায় মনে মনে হনুমান চালিশার মাধ্যমে হনুমানজিকে এই অসময়েও বিরক্ত করছি। হঠাৎই দেখলাম সামনের দুষ্কৃতীর মুখে একটা লাথ এসে পড়ল তীরের বেগে, কোথা থেকে হাজির এক অপূর্ব সুন্দর আর্মিম্যান, বয়স খুব একটা বেশি হবেনা, বড়জোর ছাব্বিশ সাতাশ, আমার ভায়েরই বয়সী, দীর্ঘদেহী, পরিস্কার গায়ের রং, গালে হাল ফ্যাশানের দাড়ি, অনেকটা ঐ এখনকার বলিউড হিরো কী যেন নাম- রানা ডাগ্গুবাটির মতো দেখতে। কী স্ট্রোক, কী স্কিল, সত্যিই অবাক হতে হয়, ওরা আর্মিরা সত্যিই আমাদের চেয়ে অনেক আলাদা হয়, আমরা যখন বিপদের সম্মুখীন হয়ে গুহা খুঁজি, ওরা আমাদের ছাদ হয়। মুহূর্তেই আরো একজনকে ধরাশায়ী করল ছেলেটা, একের পর এক ওভার বাউন্ডারি মেরে আমাদের সেফ করেই যাচ্ছিল, হঠাৎ সেইমুহূর্তেই একটা গুলি এসে লাগলো ওর বুকের ডানদিকে, রক্তে ভেজা শরীরটা লুটিয়ে পড়ার আগেও সামনের জঙ্গিটার হাত থেকে শাটারটা কেড়ে একে একে সবকটার হাতে পায়ে গুলি করল যাতে কেউ পালাতে না পারে। ততক্ষণে কন্ট্রোল রুমে হয়ত কেউ খবরটা দিতে পেরেছিল লুকিয়ে ফোন করে, পুলিশের গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ ভেসে এলো, ছুটে গিয়ে দেখি আমাদের সকলকে বাঁচিয়ে যাওয়া ছেলেটা নিথর, বুকের ভেতর স্বজন হারানোর ব্যথা অনুভূত হলো যেন, কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে উঠলাম- হেল্প হেল্প, অসংখ্য লোক জড়ো হয়েছে ওকে ঘিরে, কী সুন্দর মিষ্টি একটা ছেলে, ওও হয়তোবা মাইনে তুলতে এসেছিল বা অন্য কোনো কাজে, ওরও তো বাড়িতে সবাই আছে, কী জবাব দেব, কী জবাব দিতে হয় এক্ষেত্রে, ওরা কী আমাদের মত সাধারণ হয়না, ওদের মায়েরা তৈরিই থাকেন, কেমন করে সাধারণ গর্ভ থেকে জন্ম নেয় এমন সব দুর্লভ রত্ন, আমার হাতটা ওর বুকে ছিল, ডাক্তার হবার সুবাদে চেষ্টা করছিলাম বুকটায় যদি সাড়া আনতে পারি, কোনো মিরাকেল ঘটাতে পারি, হঠাৎই হাতে কিছু ঠেকল যেন... চোখ নামিয়ে দেখি ওর নেমপ্লেট-
ক্যাপ্টেন রেহান খান......
অভিশপ্ত বেকারত্ব
অনুপ কুমার সরকার
মাসের পঁচিশ তারিখ আসলেই মনে হয়, মাসটা কবে শেষ হবে অর্থ্যাৎ বেতন কবে পাবো । সপ্তাহে তিনদিন পড়ালেও আরো তিনদিন পড়াতে হবে তবে যদি বেতনটা হাতে পাওয়ার আশা করা যায় । বেতন পাওয়ার আগেই স্থির হয়ে যায় কী কী করবো । অনেকটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলের মতো হয়ে গেল ব্যাপারটা ।দুপুরে খাওয়ার সময় বাবা জিজ্ঞেস করলেন, এত পরীক্ষা দিচ্ছিস দুই একটায় পাস-টাস করিস তো নাকি? বাবা কিছুই ভুল বলছেন না জানি, তবু ভাত যতটুকু মুখে দিয়েছিলাম সেটুকু আরো দলা পাকিয়ে গলা আটকে গেছে । কোনোমতে তড়িঘড়ি করে সবার আগে আধপেট খেয়ে উঠে গেলাম ।
একদিন বসন্তকালীন বিকালে ঘুম থেকে উঠে চোখমুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছি, দেখলাম বাবা জমি থেকে সবে এসে দাওয়ায় হেলান দিয়ে বসে মাকে জিজ্ঞেস করলেন সারাদিন তোমার বড়ো ছেলে কী করে বাড়িতে । মাঝে মধ্যে জমিতে পাঠানো যায় না ? গরমে ঘেমে জামা ভিজে গেছে জন্য খুলে জিরিয়ে শরীর ঠান্ডা করছে । সাদা গেঞ্জির সিংহভাগই ছেড়া থাকায় শরীরের বেশীরভাগ অংশই দেখা যাচ্ছে ।তা দেখে আমার আমিত্বকে লুকিয়ে রাখতে না পেরে সময়ের আধাঘন্টা আগেই বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে টিউশনি করতে ।
সেদিন ছিল সাতাশ তারিখ, সময় সন্ধ্যা ছয়টা ।গিয়েই দেখি ছাত্রী বসে আছে আমার অপেক্ষায় । মনে মনে ভেবেই গেছি, কাকিমা যখন চা দিতে আসবেন তখন বলবো যে,
এ মাসের বেতনটা যদি ......... । মাস হয়নি তবুও বলছি । এটাও জানি যে বললেই তো আর সঙ্গে সঙ্গে পাবো না । হয়তো কাকিমা বলবেন তোমার কাকাকে রাতে জানাবো । এসব ভাবতে ভাবতে কাকিমা এসে হাজির । তবে আজকে চা নয় শুধু চায়ের সাথে টাও আছে । একটা প্লেটে কিছু নিমকি, দুটো জিলিপি আর একটা কাচের বাটিতে পায়েস । এসব দেখে বেতন চাওয়ার সাহস হয়ে উঠল না ।
রাত্রি আটটার দিকে যখন বাড়ি ফিরছি তখন চারিদিকে নিস্তব্ধ । শীত না থাকলেও খুব গরম নাই । ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু পড়েছে । বিদুৎ না থাকার জন্য ইলেকট্রিক খুঁটি গুলোতে আলো জ্বলছে না তাই রাস্তায় লোকজন নাই বললেই চলে । বৃষ্টির জন্য বেচাকেনা নাই বলে দোকানদারাও দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন ।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরার সময়ে ভাবছি পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নাই পকেটে তবুও আমার ঐ চেনা দোকানে (প্রীতম কাকু ) বাকী চাইবো ।কোনোদিন তো বাকী নেয়নি, আশা করছি দিয়ে দিবে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই গর্তের মধ্যে সাইকেলের সামনের চাকা যায়, সাইকেল নিয়ে আমিও পড়ে গেলাম । কাদা জলে ভিজে একাকার হয়ে গেলাম ।
আটটা পঁচিশ নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি সবাই শুয়ে পড়েছে ।ভুলে গেছি দুপুরে কী দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম । অন্ধকারে গামছা খুঁজে না পেয়ে মায়ের শাড়ি দিয়েই মাথাটা মুছে নিলাম । ভেজা জামা প্যান্ট পরিবর্তন করে করে মশারী টাঙিয়ে শুয়ে পড়লাম । মোবাইলে জল ঢুকে গেছে জন্য ব্যাটারি খুলে টেবিলের উপর রেখে শুয়ে পড়া ছাড়া দ্বিতীয় কিছু ভাবতে করতে পারছি না । যেহেতু পড়াতে গিয়ে যা খেয়েছি, না খেলেও রাত্রি পেরিয়ে যাবে । ঘুমাইলেই তো রাত্রি শেষ ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যানভাসে
শাবলু
শাহাবউদ্দিন
এখানে আমি খুব একটা অসহায় প্রাণী
।জগতে সবাই থাকতেও আমি বড় একা। দিন গুলো যেন ফুরাইতে
চাহে না । এভাবে কি আর চলিতে পারে ? প্রায় ছয় মাস পার করিলাম, কত দল আসিল, কত দল চলিয়া গেল, কত মানুষের দেখা মিলিলো ।কেবল আপন কেহউ আসিল না।
আঘাতের পর আঘাত লাগিলে প্রথম
প্রথম অসহ্য যন্ত্রণা হয় কিন্তু কোন এক সময় হৃদয় তাহা মানিয়ে লয়। তবুও বড় ভাইদের মন ভরে না , দিনের শেষ হয় কিন্তু র্যাগিং
শেষ হয় না।
হঠাৎ কেমন করিয়া যেন সময়ের কাটা
টি উল্টো দিকে ঘুরিয়া গেলো, ডলি নামটা আপন আপন লাগিতে
লাগিলো । অবশেষে ভাল একটা বন্ধু হল , যদিও নাম ছিল ডলি তবুও ঐ
নামে আমি তাহার ডাকিতাম না।
কে জানিত,এমন এক দিন আমার জীবনে
আসিবে । কাদামাটির মানুষ, তাই হয় তো এতটুকু কখনওই ভাবিতে পারি নাই । গ্রামটা সরু পথের ধারে,দুপাশে
মাঠ, মাঠে হাজারো মানুষ, কৃষক যাদের নাম, মুখে
যাই বলুক,অন্তত্ব অন্তর এত কালো না । সেখানেই আমার জন্ম । যাহা বুঝি তাহা খুব সহজেই বুঝি, সর্পের মত আঁকাবাঁকা পথে চলতে আমরা
অভ্যাস্ত নয় । তাই বুঝি এত বিপদ আসিয়া গনিয়া ধরে মোদের দুয়ারে ।
জীবনটা শুরু হয়েছিল, অ আ, ক খ ( স্বরর্বণ ব্যঞ্জনবর্ণের) দু'চারটি লাইন দিয়ে ।এমন কেহ্ ছিল না যে,
ABCD ইত্যাদি হাতে ধরিয়া শিক্ষাইবে। সারাদিন এদার ওদার কিংবা মাঠে থাকিতে হইত বাপজানের সাথে । রাতে ফিরিয়া মনের মধ্যে নাঙ্গল ফেলিয়া চাষ করিতে হইত বইয়ের পাতা , তাহাতে
যা সাধনা হইতো , তাহার ফসল সরুপ কিছু একটা
পেয়ে থাকিব ভবিষ্যতে । সাধনা করিলে ,ঈশ্বর না দিয়ে
পারে না । তিনি তো আর হারামজাদা নয়, ঈশ্বর সে তো দয়ার সাগর। সাগর বলিয়া তাঁহার বুকে পুঁটি মাছ থেকে শুরু করে
তিমি মাছ সহ হাজারও প্রাণীর ঠাঁই । সে যদি একটু নিষ্টুর হত । কত না ভাল হত। রাক্ষসীরূপী মাছ গুলো আর হয় এত অন্যায় করিতে
পারিত না ।
যাহা বলিতে ছিলাম, ঐ
দু'চার লাইনের সাধনা চলিতে লাগিল দির্ঘসময়।
সাধনা নামক নদী থেকে বেড়িয়ে
আসিতে লাগিল অমৃত রস । সেই রসের ভরে আমিও ফুলিয়া ফাপিয়া উঠিতে লাগিলাম ।প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণী করিয়া আমার বিদ্যার শ্রেণী কক্ষ বেড়ুতে থাকিল। কখন যে উঠিয়া গিয়েছিলাম দ্বাদশ শ্রেণীতে, তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারছিলাম না । H S
C নামক পরীক্ষায় কলম ভাঙ্গিয়া উত্তীর্ণ হইতে পেরে আনন্দের মহাসমুদ্রে
ভাসিতে লাগিলাম । সকল বন্ধু ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হইবে বলিয়া, ঘরের
কপাট আর খুলিলো না । অন্ধকার মহলে লুকিয়ে গেল সবাই, প্রায় তিন মাস আমিও তাহাই করিলাম, পড়া
শেষ । সবাই উইপোকা মত বেড়িয়ে এল গর্ত থেকে ।
জীবনের প্রথম নিজ গ্রাম, নিজ
জেলা শহর ছাড়িয়া বাইরে আইলাম, এর আগে শুধু এক বার জেলা শহরে আসিয়া ছিলাম । কিন্তু আজ প্রয়োজনের তাগিদে বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তরে ছুটে
চলিতেছি ।
অবশেষে পাইলাম ভর্তি হইতে নিজের ইচ্ছে
বাইরে, বাড়ি থেকে চার শত কিলোমিটার দূরে একটা
ইউনিভার্সিটিতে। নিজের বলতে তেমন কেহউ রহিল না, যাহাই আছে দু'একজন জেলা শহরের খুব ব্যস্ত প্রাণী, দেখা মেলে সুন্দরবনের বাঘের মত।
যদিও আমার ঠিকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কোন হলেও হইয়া উঠিল না ,কিন্তু ডলির ঠিকই হইয়াছিল, বাবুই পাখির বাসার মত।
ডলির সাথে বন্ধুত্ব হই বার পরে
অনেক কাহিনী ঘটিয়া যায় । ম্যাচে থাকিতে আমি আর পারছিলাম না
। ডলি তাহার এক বড় আপাকে (মুলিকা) বলিয়া আমার জন্য হলে সিটের ব্যবস্থা করিয়া দিল। হলে আসিতে আমার মনে হইল ,কুয়ার ব্যাঙ সাগরে
আসিয়া পড়িয়াছে।
এমন এক অবস্থা হইয়া উঠিল আমার
যেন, আমি আমার জন্য রাজ-মুকুট হাতে পাইয়া
বসিলাম । কত বড় ভাই বড় আপু , কি আনন্দ!
ডলিই আনিয়া দিল এই জীবনে নতুন
সূর্যের প্রতাপ । সে শুধু আমার বন্ধু না, সে আমার কাছে হিরার চেয়ে দামি হইয়া উঠল। বন্ধু কি বস্তু তাহা
হইত আমার জানা বাকি থাকিয়া যাইতো ,যদি ডলি এই ভুবনে না আসিত।
যদিও দুই জনই ছিলাম
দূরপ্রাচ্যের বাসিন্দা, তবুও একে অন্যকে খুব বুঝিতাম ।
আর্থিক নামক বস্তু যে কি তাহা
আমাদের পোশাক দেখিলেই বুঝা যাই তো, একই পোশাকে প্রতিদিন ক্লাস
করিতাম যাহা বিশ্ববিদ্যালয় বলিয়া কাহারও চোখে পরে নাই । আমি ভাবিতাম লাল পোশাক
টা ওর হইতো খুব প্রিয়, তাই প্রতিদিন পড়ে আসে। কিন্তু বস্তুত আর্থিক সমস্যা ।
হঠাৎ একদিন ডলি আর আমার সাথে
কথা বলে না, এমন কি চেয়েও দেখে না। তৃষ্ণার্ত কাকের মতো চেয়ে
থাকি তার প্রাণে , সে ফিরেও দেখে না ।আমি যেন অসহায় এক কুত্তা।
ছেড়ে দিলাম সব । মনে সুখ নেই , কোথাও জায়গা
নাই, দিশেহারা হইয়া উঠলাম । অবশেষে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিলাম
। ক্ষমতাসীন দল । অরাজকতা চলাফেরা । এখানে আর যাই হক , পেটে ভাত থাক বা না থাক, বুক ভরে গরমের সাথে চলা যায় । আর কিছু পাই বা না পাই ,দুবেলা
ঠিক মতই গাঁজা পাইতাম, যা সেবনে ডলির প্রতি ঘৃণা করিতে
মন এক ফোঁটাও ক্লান্ত হইত না।
যত দিন যায় তত স্বার্থপরের মত
শুধু সুবিধা নিতে থাকিলাম। রাজনীতি যে কি বস্তু তাহা দূরে
থাকিলে বুঝা যায় না ,শুধু গন্ধ পাওয়া যায় । প্রথমে মিটিং তারপর
ফিটিং , চিটিং এবং সর্বশেষে ছাটিং । রাজনীতি মানে হল দুনিয়ার যত নোংরা কাজ আছে তাহা করা ,প্রয়োজনে নিজের পিতাকে হত্যা করা।
আমাকেও ঠিক এমনই রুল মেনেই চলিতে হইত। প্রথম প্রথম নেতার চারিদিকে দাঁড়িয়া থাকিয়া নেতার সিগারেটের টান গুলো ভাল
ভাবে আয়েত্ব আনিতে হইত । তারপর নেতার বিশ্বস্ত হলে, নেতার
সাথে নেঙা কুত্তার মতো পিছু পিছু এদিক সেদিন
ঘুরিয়া বেড়ান । নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ধুমকান । মারপিট । দলের জনগণ বৃদ্ধি করা । মিথ্যা বলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের
মনে আশা জাগিয়ে দলে ভীর করা। হল দখল ইত্যাদি ।
যত দিন যায় তত হৃদয়ে কালি পরিতে থাকে ।ঠিক লোহার মরিচা পড়ার মত।
আমার আকাশের নিচ আজ আর কেউ নেই। তাই নিদ্বির্ধায় যে কোন অন্যায় করিতে পারি । বাঁধা দেওয়া আর কেউ
নেই । আজ আর কোন ডলি নেই যে বাঁধা দিবে । পাপের বুঝা এত পরিমাণ বেড়ে গেল যে মাপার কোন যন্ত্রেই পরিমাণ করা সম্ভব না ।সাধারণ সম্পাদক শান্তাহার ভাইয়ের আদেশে শিক্ষক থেকে শুরু করিয়া অসংখ্য
ছাত্রকে পিঠাইছি। সাধারণ সম্পাদকে আদেশ বলে কথা , জীবন দিয়া হইলেও
পালন করিতে হইবে।
এইতো কিছু দিন আগে সেক্রেটারি
গ্রুপ এবং সাধারণ সম্পাদকে গ্রুপের গুলাগুলিতে হলের সভাপতি মামুন ভাই মারা গেলে ।
তার কিছু দিন পরে দপ্তর সম্পাদক
কামিল ভাই ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরলো । শান্তাহার ভাইয়ের প্যানেলেই
কাজ করিতো । অবস্থা বেগতির দেখিয়া , শান্তাহার ভাই এখন কামিল
ভাইকে আর চেনে না।
কামিল ভাইয়ের কাজ এখন আমাকে করিতে
হয়। বিনিময়ে এমন কোন সুবিধা নাই যা আমি পাই না । মেয়ে থেকে শুরু করে নেশা পর্যন্ত , সব সুবিধাই আমার হাতের নাগালে । এ যেন আলাদিনের প্রদীপ আমার
হাতে।
আমি যত পরিবর্তন হই , ততই পরিবর্তন দেখি ডলির মাঝে । ডলি আজ কাল কি ভাবে এত আর্থিক স্বচ্ছতা আসিল। আমি যেন রাজনীতি করি ,দুহাতে টাকা কামায়, দুহাতে টাকা উড়াই । কিন্তু ডলি কি ভাবে এত অর্থ পায়। যার একদিন বাদাম খাওয়ানর মত পয়সা ছিল না , সে যেন আজ রানী ভিক্টোরিয়া ।
আজ বৃহস্পতিবার । খবর এলো বিকাল পাঁচ টায় আহমেদপুর ঘাটে মাল আসিবে , প্রায় লক্ষ খানিক পিচ বড়ি। পৌঁছায়ে দিতে হবে মাজাহারপুর
থানার সাধারণ সম্পাদকে কাছে। তারপরে এসে জেলা শহরে থাকতে হবে
একটি হোটেলে।
যাই হক ঘাটে থেকে মাল নিয়ে রওনা দিলাম , পথে দেখি পুলিশ নামক ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে গাড়ি
তল্লাশি করছে । এস আই সাজিদ কে কাছে ডেকে বললাম "শান্তাহার ভাই"।এক হাজার টাকা দু খানা নোট দিতেই গালাগালি পেরে ছেড়ে দিল । মাজাহারপুর পৌঁছাইতে রাত নয় টা
বেজে গেল । মাল দিয়া সোজা হোটেলে চলিয়া আসিলাম ।
হাত মুখ ধুয়ে, খাবার-দাবার সেরে কেবলি বিছানায়
শরীর রাখিতে না রাখিতেই । দরজায় করা নড়ে উঠল। আল্লাহ্ জানে, আবার কে । দরজার
ছিদ্র দিয়ে দেখলাম , একটা মেয়ে মানুষের পা । মনটা বিরক্তে ভরে উঠিল। কেন যে ভাই, এসকল ব্যবস্থা করে । হোটেলের ম্যানেজারকে একশত বার
বলিয়াছি, আর না, আমার আর মেয়ে মানুষ ভাল লাগে না । শালা বদজাত ম্যানেজার
বলে কি, মেয়েরা নাকি হরিণের মত, হরিণ যেমন বাঘের
স্বাস্থ্য জন্য উপকারী, মেয়েরা তেমন পুরুষের
স্বাস্থ্য জন্য দরকারি ।
যায় হক, দরজা খুলে মুখ খানা ঘুরাতেই,
পিছু থেকে ভেসে আসিল একটা কথা।
"সরি ভাই, একটা
Client ছিল , তাই একটু দেরি হয়ে গেল"।
কথা গুলো যেন , আমার হৃদয়ে মৃত
আগ্নেয়গিরি থেকে জ্বলন্ত লাভা টেনে বের করিতে লাগিল । মরুভূমির বুকে ধাধা করে আগুন জ্বলে উঠিল।
এ আমি কি শুনিলাম, কার
কথা আমার কানে ভেসে আসিল । যাকে ভালবেসে পেলাম না, সে আজ
মনের অজান্তে এখানে এসে তার সব সম্পদ বিলিয়ে দিতে চায় ।
সাহস হচ্ছিল না ডলির মুখ পানে
চাইতে , তবুও তাকাইলাম; সাদা-লাল মুখ গানা , দু চোখ যেন আজ তার খর স্রোতা পদ্মা নদী । নুনা জলে ভাসিয়া যাইতে লাগিল তাহার বুক । দেখিয়া সইতে পারছিলাম
না । বুকে টানিয়া লইলাম।
কান্না আহাজারিতে রুম ভরিয়া
উঠিল । কোন কথা নাই কারও মুখে । কান্না আর কান্না । বার টা বার মিনিটে প্রথম মুখ খোলিলাম
আমি:-
-----
এখানে কেন ?
----
যানি না ।
----
তার মানে?
----
আমি কিছু জানি না, শফিউল ।
-----
ডলি..........
----
হুম বলো।
-----
তুমি এ পথে কেমনে আসলা?
----বলতে পারব না ।
----
কেন বলতে পারবা না? তোমাকে বলতেই হবে ডলি।
----
না, শফিউল আমি পারব না । please, শুনতে চেয়েও না । সইতে পারবা না ।
----
তুমি যদি না বল তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।
----
শফিউল এ কি বলছো?
----
হুম । তোমাকে বলতেই হবে।
-----
শুনতে চাও
----
হুম বল ।
-----
তোমাকে বাঁচাতে, শফিউল
।
---
মানে?
----
শান্তাহার ভাই বলে ছিল যে, তার সাথে চাঁদপুর যেতে
হবে এবং এক রুমে থাকতে হবে । আমি যদি রাজি না হয় তাহলে , তোমাকে
ওরা মেরে ফেলবে। তাই আর নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পেলাম না । তার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তারপরে মুলিকা আপু এই পথে নিয়ে আসে। হোটেলেই আমার আয়ের উৎস শফিউল ..............।
-----
আমাকে বেড়ুতে হবে ডলি, সময় আর বেশি নাই। তুমি ঘরে ফিরে যাও। আজ আমার কিংবা শান্তাহারের
জীবনের শেষ দিন।
এই বলে বিছানার নিচ থেকে শান্তাহারের
দেওয়া চকচকে টিপ চাকু আর কিছু সিগারেট নিয়ে বেড়িয়ে গেলো শফিউল ।
ডলি বাঁধা দিতে চেষ্টা করলো । কিন্তু সমুদ্রে বুকে ভেসে আসা সাইক্লোনের মুখে এই ছোট মেয়ে মানুষ ডলি
কোথায় যে ছিটকে পড়িল তাহা ডলি বুঝেও উঠতে পাড়িল না ।
ডলি কানে শুধু ভেসে আসলো দরজা
লাগার মৃদু শব্দ টা। ডলির রক্ত বর্ণ মুখ খানা থেকে শুধু উচ্চারিত হতে লাগল, " ভেঙে ফেল শফিউল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানভাসের ঐ কাল বাগান গুলো ভেঙে ফেল, ছিরে
ফেল কাল ফুল গুলো ছিরে ফেল, মুক্ত হক
বিশ্ববিদ্যালয়, ফুটুক স্বপ্নের ফল। রাজনীতির কাল জালে না
পড়ুক বাঁধা এই অবলা নারীর দল। ভেঙে ফেল শফিউল ভেঙে ফেল" ।
ছড়া/কবিতা
কবি প্রিয় নজরুল
মজনু মিয়া
তুমি কবি প্রিয় নজরুল প্রিয় তোমার বুলবুল
তুমি বিদ্রোহী কামুকরুল হও গোলবাগিচার ফুল।
তুমি হিন্দুর সিন্ধু তরী মুসলিমের জয় ভেরী
গজল নজরুলীয় করি গেছো তুমি গড়ি।
তুমি প্রেমের মহাসাগর মরুর তপ্ত পাথর
তুমি নজরুল নও তো কাতর গ্রহণ করছো সাদর।
তুমি কাড়ার লোহ কপাট ভেঙ্গে করছো লুপাট
অগ্নি বীণা ব্যথার তমাট সুজন বাইদার ঐ ঘাট।
থামেনি তোমার কলম হায় নিপিরিতের ভাষায়
বন্ধি শালায় আগুন জ্বালায় তীক্ষ্ণ লেখা কথায়।
নজরুল তুমি মুক্তির বুলবুল ফুটিয়েছো সে ফুল
গান কবিতা বাগিচার গোল নুরজাহানে মশগুল।
মেঘের সাথে দিলাম পাড়ি
গৌতমী ভট্টাচার্ঘ
মেঘের সাথে দিলাম পাড়ি
দূর আকাশের গায়
মেঘ বলল, "চল্ উড়ে যাই
চাঁদের আঙিনায়।"
আকাশ বলে উঠল হেসে
"চাঁদ খুঁজবি সে কোন্ দেশে?
তোর আঁচলে মুখ ঢেকে সে
সুদূর সীমানায়।"
মেঘ বলল, "কী আর করি
বৃষ্টির আজ ছুটি
আমারও আজ ফুরফুরে মন
নেই তাতে কাজ দু'টি।
যাই ভেসে আজ পাহাড় বেয়ে
নীল সাগরও আমায় পেয়ে
হেসেই লুটোপুটি।
আমার দু'চোখ মেঘের আকাশ
স্বপ্ন আঁকে ঠান্ডা বাতাস
চুপটি করে মেঘের কোলে
নীল সাগরের ঢেউয়ের দোলে
কোথায় নিয়ে যাস?
ওরে মেঘ---
কোন্ দেশে তুই যাস?
কোথায় আছে এমন সে দেশ
দুঃখ-আঘাত যেইখানে শেষ
সেইখানে এক সুখের ঘরে
করব আমি বাস।
আমায় নিয়ে যাস।"
কবি প্রণাম
রীতা মোদক
রীতা মোদক
রবিঠাকুর কোথায় তুমি
কাদছে তোমার তানপুরা,
তবলাতে আর লহরী উঠে না
মানুষগুলো ছন্নছাড়া।
রবিঠাকুর ফিরে এসো
আজ যে তোমার জন্মদিন
প্রভাত ফেরীতে গাইবে সবাই
নাচবে খুকি তা- ধিন - ধিন।
রবি ঠাকুর তোমার সুরে
ভরলো সারা ভুবন,
কবিতা গানে পূর্ণ বিশ্ব
নাটকের ধারায় ডুবলো মন।
সোনার তরী শূন্য আজ
রবি ঠাকুর ফিরে এসো
জলরাশি ডাকছে ছলাৎ
প্রাণের ঠাকুর তরীতে বস।
মাধবীলতা জড়াবে চরণ
কোথায় তুমি রবি?
আকাশে বাতাসে ভেসে উঠে
শুধু তোমার ছবি।
জন্মদিনে প্রণাম জানাই
ভারাকান্ত মন,
শ্রদ্ধার্ঘ দেবো তোমায়
বারাও দুটি চরণ।
তুমি আছো তুমি থাকবে
থাকবে সারা ভুবনে ,
তোমার রস্মি ছড়িয়ে আছে
সকল কবির মনে
কাদছে তোমার তানপুরা,
তবলাতে আর লহরী উঠে না
মানুষগুলো ছন্নছাড়া।
রবিঠাকুর ফিরে এসো
আজ যে তোমার জন্মদিন
প্রভাত ফেরীতে গাইবে সবাই
নাচবে খুকি তা- ধিন - ধিন।
রবি ঠাকুর তোমার সুরে
ভরলো সারা ভুবন,
কবিতা গানে পূর্ণ বিশ্ব
নাটকের ধারায় ডুবলো মন।
সোনার তরী শূন্য আজ
রবি ঠাকুর ফিরে এসো
জলরাশি ডাকছে ছলাৎ
প্রাণের ঠাকুর তরীতে বস।
মাধবীলতা জড়াবে চরণ
কোথায় তুমি রবি?
আকাশে বাতাসে ভেসে উঠে
শুধু তোমার ছবি।
জন্মদিনে প্রণাম জানাই
ভারাকান্ত মন,
শ্রদ্ধার্ঘ দেবো তোমায়
বারাও দুটি চরণ।
তুমি আছো তুমি থাকবে
থাকবে সারা ভুবনে ,
তোমার রস্মি ছড়িয়ে আছে
সকল কবির মনে
পুন্যশ্লোক দাস
ঈশ্বর, ওরা পাথর ভেঙ্গেছে,
তোমায় পারেনি ভাঙ্গতে।
এমনটা যে হওয়ারই ছিল,
সে কথা তুমিও জানতে।
জীবদ্দশায় স্বয়ং লড়েছ
চারিপাশ প্রতিকূল,
আদর্শটাই এখনো লড়ছে
ওটাই চক্ষুশূল।
যুক্তিবাদীতা প্রগতিশীলতা
জ্ঞানের মন্ত্র তুমি,
তোমার স্বপ্ন গায়ে মেখে আছে
আমার জন্মভূমি।
মধু-মাস
মাম্পি রায়
জ্যৈষ্ঠের ক্ষরতাপ ;
ধু ধু লয় ছাড়ে..!
রৌদ্রেরঝাঁজ ঘায়,
তরুশাখা ঝরে,
জ্যৈষ্ঠের কাল ঝড়ে
বটের ডাল দোলে,
ক্লান্ত দুপুর হাফ খায়
ঝড়োহাও পেলে।
নদীর চড়ে চাষী ভাই,
তরমুজ চাষে,
তৃষ্ণার মারণসম ;
মেলে রসে রসে,
'আমভাঙা' দিন শুরু
মধুমাস বলে..!
জ্যৈষ্ঠের গুমোট ফুলকি,
অগ্নি দেয় ঢেলে..:
মধুমাসে মধুর স্বাদ,
ছড়ায় শাঁখে শাঁখে
আম,জাম,কাঁঠাল,লিচুর
সুবাস ভেসে আসে;
হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত,
লক্ষ্যা,গোপালভোগ,
ল্যাংড়া, ফজলি,আম্রপালি
স্বাদে ভরা রসে।
"বৈচিত্র্য"
প্রতিভা পাল সেন
গ্রীষ্মের দাবদাহ,
চাতক চোখে তাকিয়ে থাকে বর্ষার পথ চেয়ে;
শ্রাবণ বারিধারায় ক্লান্ত ভূতল,
শান্তনা পায় ক্ষণিকের তৃপ্তি পেয়ে;
আদ্রর্তার মুগ্ধতা শেষে উৎসবের আকাঙ্ক্ষায়-
কাশবন সেজে ওঠে শরতে বিভোর হয়ে;
হৈমন্তী বাতাস,সাজিয়ে চারপাশ
প্রবাহিত হয় তখন, শীতের বার্তা নিয়ে।
শীত আসে,চলে যায় রুক্ষ রূপে,
আগামীর স্বার্থক বৈপরীত্যের স্বাদ দিয়ে।
বাসন্তী রঙে জীবন ভরিয়ে,
ভালোবাসা ছোঁয়ায় মন রাঙিয়ে-
ফেরে আবার উত্তপ্ত স্পর্শ সময়ের বৃত্ত ছুঁয়ে।
বৈচিত্র্যের পসরায়, জীবন-রঙ অনেক নিয়ে,
প্রতি মুহূর্তে, প্রতিনিয়ত,
আগামীর আশায় রয়ে অবিরত,
সময়ের ওপারে সময়, এভাবেই চলে বয়ে;
সময়ের কাঁটা ঘোরে ঋতু-বৈচিত্র্য নিয়ে।।
ধান-চাল ভাবনা
রোমানুর রোমান
ধান থেকে খই হয়
চাল থেকে মুড়ি,
শর্করা বেশি খেলে- বেড়ে যায় ভুড়ি।
চাল থেকে মুড়ি,
শর্করা বেশি খেলে- বেড়ে যায় ভুড়ি।
মন্ত্রী বুঝেনি
বুঝেছে পরে,
ভুড়ি যখন বেড়েছে- চিন্তাতে মরে।
বুঝেছে পরে,
ভুড়ি যখন বেড়েছে- চিন্তাতে মরে।
করি কী ধান চাল
প্রলেপের মোমে,
পেট ফুলে যাক সবারই-দাম দিলো কোমে।
প্রলেপের মোমে,
পেট ফুলে যাক সবারই-দাম দিলো কোমে।
গরীবরা খই খাক
মুড়ি খাক ধণী,
রোজা গেলে ধান চালের- দাম বাড়াবোনি।
মুড়ি খাক ধণী,
রোজা গেলে ধান চালের- দাম বাড়াবোনি।
ফণী
আশীষ দেব শর্মা
আসব বলে কত-না হৈচৈ,
কি করব অবাক চোখে রই ।
আত্মসম্মান নিয়ে কে বলে ধনী,
নাম যে মোর দিল ফণী !
ভেঙে চুরে করব যে ছারখার,
দেশটা নিয়ে কেন চলছে হাহাকার !
মনুষত্ব তুচ্ছ, চাই শুধু রাজদরবার ,
বিপর্যয় মোকাবিলার ত্রাণ,পুজিবাদীর দরকার।
যদিও প্রকৃতি করে সমগ্র গ্রাস,
দীনহীনের প্রাপ্য লুটে হবে সর্বনাশ ।।
ইন্ডিয়া গেট
লুবনা আখতার বানু
আনন্দময় স্বাধীনতা দিবস-
সারাদিন বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর শেষে,
অন্তরিক্ষে আগমন ঘটে ঘন অন্ধকের।
তখনও আলোয় ঝকঝক করছে ইন্ডিয়া গেট-
অন্ধিকার অন্ধক তাকে ছুঁতে পারেনি আজও।
সেখানে তখনও প্রচুর লোকের আনাগোনা।
ক্লান্ত শরীর মাঠের নরম ঘাসের স্পর্শে আবারো
সতেজ!
ক্লান্ত আঁখি আলোকহীন অন্তরিক্ষে তখনও স্বস্তি
খোঁজে।
অন্তরিক্ষে উড়তে থাকে প্রদীপ জ্বালানো
বেলুনগুলো।
হয়ত প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই,
পৌঁছে যাবে তারা অন্তরিক্ষের অনেকটা গভীরে-
যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন,
যাদের নাম লেখা আছে ওই বেদীতে-
তাঁদের হাসিমুখগুলো হঠাৎই দেখতে পাই,
ওই দূর অন্তরিক্ষে ঋক্ষদের মাঝে।
শীতল গন্ধবহে তাঁদের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলোর
হাহাকার-
শুধুই মনে হতে থাকে,
তাঁরা কি যেন একটা বলতে চাইছেন!
টোকাই'র ঈদ
সব্যসাচী নজরুল
বছর ঘুরে ঈদ এলো ওই
আসলে না সুখ তুমি
তুমিহীনা এ জীবন আমার
হায় শূন্য মরুভূমি।
আসলে না সুখ তুমি
তুমিহীনা এ জীবন আমার
হায় শূন্য মরুভূমি।
নতুন জামা নতুন জুতো
আমার যে তা নাই
এ বছরও জোটবে না ভাই
দু'চোখ ভিজবে তাই।
আমার যে তা নাই
এ বছরও জোটবে না ভাই
দু'চোখ ভিজবে তাই।
নতুন তালির ছেঁড়া জামা'ই
পরবো নতুন সাজে
খালি পায়েই ঈদগাহেতে
আমি যাবো নামাজে।
পরবো নতুন সাজে
খালি পায়েই ঈদগাহেতে
আমি যাবো নামাজে।
সেমাই চিনি জোটে না ভাই
পান্তা পানি খাই
ঈদ আনন্দ সে কি আবার
আমি যে টোকাই।
পান্তা পানি খাই
ঈদ আনন্দ সে কি আবার
আমি যে টোকাই।
কে'বা আমার মাতা-পিতা
কে'বা আপনজন
টোকাই বলেই দুঃখে গড়া
আমার এ জীবন।
কে'বা আপনজন
টোকাই বলেই দুঃখে গড়া
আমার এ জীবন।
জীবন মানেই যাতনা
রাঙাবেল চাঙমা(পিইউসি)
হুতাশনের মাঝে যেমনি
দ্বীপ-শিখা জ্বলে,
তেমনি জীবনের মাঝে
যাতনা বয়ে চলে।
নদীর স্রোতসীনি যেমনি অপ্রতিরোধ্য
জীবনের মাঝে যাতনা তেমনি অসহ্য।
জীবন মানে যাতনা
জড়িয়ে থাকে শত বেদনা,
সহস্র বেদনায় কম্পিত হয়
অনেক পূণ্য সাধনা।
যাতনায় জীবন অনুর্বর হয়
আর সংকীর্ণতাময় জীবনে অভিশপ্ত হয়।
জীবন মানে যাতনা বয়ে চলে আরাধনা,
জীবন গড়ার সময়ে বিপাকে পতিত হয়
সুস্থ আরম্ভর ভাবনা।
আহ্বান
শ্যামল কুমার রায়
রাজন্যা, এক যুদ্ধের অবসান
চারপাশ বেশ শুনশান!
থমথমে মুখ
মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াতেই,
যেন অনেক সুখ!
রক্তক্ষয়ী কত সংগ্রাম শেষে
লাভ ক্ষতির হিসেব?
শূন্য অবশেষে।
সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা কত!
শীতলতার মাত্রা?
শূন্যের চেয়েও নীচে নামতে পারত!
আশেপাশে যেন সবাই সতী!
ভুল ত্রুটি থেকে ওদের চির মুক্তি
উপদেশ দেওয়া?
ওদের একচেটিয়া অধিকার।
এই যুদ্ধাবসানেই আবার যুদ্ধ শুরু
পুরনো জঞ্জাল,পুরনো গ্লানি-
সব ঝেড়ে ফেলে
আবার নতুন করে পথ চলা শুরু।
রাজন্যা, তুমি আহ্বানে দাও সাড়া
পরম নিশ্চিন্তে হাতে রেখে হাত
প্রাণ খুলে চলো বাঁচি আর একবার।
No comments:
Post a Comment