পাঠ প্রতিক্রিয়া
Poems of Dreams Language of Sunset- Santosh Sinha/ Translated by Biplab Sarkar
Evincepub Publishing
Price- Rs. 185/-
প্রথিতযশা অধ্যাপক প্রয়াত শ্রদ্ধেয় অশ্রুকুমার শিকদার বা কবি-আলোচক প্রখ্যাত গোপাল লাহিড়ীর মতো মানুষ যে কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় ভূয়সী প্রশংসা করেন, সেই কবিতার বই নিয়ে কিছু বলা বাতুলতা। তার ওপর উপরি পাওনার মতো রয়েছে আমেরিকার Transcendent Zero Press ও Harbinger Asylun-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক Dustin Pickering-এর মূল্যবান কথা। তবু কিছু বলতে হচ্ছে একটাই কারণে। কেননা কাব্যগ্রন্থটি একটি অনুবাদ কর্ম। অনুবাদ করেছেন তরুণ কবি বিপ্লব সরকার। মূল কবিতাগুলি বর্ষীয়ান কবি শ্রদ্ধেয় সন্তোষ সিনহার। কিন্তু কবি সন্তোষ সিনহার কবিতাকেই কেন বিপ্লব বেছে নিলেন?
প্রশ্নটির উত্তর বিপ্লবের ভাষায়- uniqueness of the way of expression in a subconscious state of mind. বিপ্লব এটাও বলেছেন যে, কবি সন্তোষ সিনহার কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে কখনও কখনও তাঁর মনে পড়েছে বিখ্যাত কবি John Donne-এর The Good Morrow বা The Anniversarie শীর্ষক বিখ্যাত কবিতাগুলির কথা। কেননা কবি সন্তোষ সিনহার কবিতা `so pervasive and centralised`। John Donne-এর কবিতার সঙ্গে যাঁদের সামান্য পরিচয় রয়েছে, তাঁরা বুঝতে পারবেন এই তুলনা করতে গেলে ঠিক কতটা সাহস লাগে। বিপ্লব সেটা করেছেন। এই বিষয়ে নিজের কাছে তিনি সৎ ও স্বচ্ছ। এখন কবি সন্তোষ সিনহার কবিতা (অবশ্যই সব নয়, কিছু কিছু) ও বিপ্লবের অনুবাদ সেই পর্যায়ভুক্ত কিনা তার বিচার করবে মহাকাল। আপাতত এটুকু বলা যায়, অনুবাদগুলি পড়লে কবি সন্তোষ সিনহার কবিতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলা ভাষার বাইরে যে অগুনতি পাঠক রয়েছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন, বাংলা কবিতা এই মুহূর্তে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেননা বর্তমান সময়ে যে কতিপয় কবি বাংলা কবিতার সত্যিকার (in the true sense of the term...আমার নিজের অনুবাদ ঠিক হল কিনা সেই বিষয়ে অনুবাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি) প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই কবি সন্তোষ সিনহা অন্যতম। তাই অনুবাদের কাজটি করে বিপ্লব সত্যিই বৈপ্লবিক একটি কাজ করলেন। অনুবাদের কাজ সেভাবে আর কোথায়?
বিপ্লব যে কবিতাগুলি অনুবাদ করেছেন সেগুলির রচনাকাল ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮। মোট ৬১টি কবিতা রয়েছে Poems of Dreams Language of Sunset শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে। কবিতাগুলি রচনার সময় কবি সন্তোষ সিনহার মানসিক স্থিতির একটি নিপুন বর্ণনা দিয়েছেন কবি-পত্নী শ্রীমতী বাসন্তী সিনহা। আসলে সকল কবির জীবনেই বোধহয় এমন একটি সময় আসে। একটি অদ্ভুত আবহে তাঁরা বন্দি করে ফেলেন নিজেকে। যাপন করেন ঘোরের মধ্যে। সেই অবস্থায় বোধহয় নিজেরাও বোঝেন না ঠিক কী বলছেন বা করছেন। আমাদের মতো সাধারণেরা সেই অবস্থাকে বুঝতে ঠিক পারি না, ব্যাখ্যাও করতে পারি না। হয়ত কবি পরবর্তীতে নিজেও সেটা পারবেন না। কিন্তু সেই অজানা ঘোর থেকেই তাঁরা লিখে ফেলেন এমন কিছু কথা যা নিমেষে আলাদা করে দেয় তাঁদের। ১৪ জানুয়ারি ১৯৯৪ তারিখের ভোরে কবি সন্তোষ সিনহার সেই মানসিক পরিস্থিতি থেকে যা লিখেছিলেন অনুবাদক বিপ্লব তাকে বর্ণনা করেছেন- There are some entrails around me/ The womb becomes pierced by an evil generation..../ What I see/ For that/ Don`t need much alphabet । এভাবেই এগিয়েছে বিপ্লবের অনুবাদ।
অনুবাদের ক্ষেত্রটি কিন্তু সবসময় একটু কঠিন কাজ। বিশেষ করে কবিতার অনুবাদ। কেননা বিভিন্ন মানুষের কাছে কবিতার interpretation আলাদা আলাদা হতে পারে। তাই অনুবাদক যেভাবে অনুবাদ করলেন সেটিই যে মূল কবিতাটির আত্মা, সে বিষয়ে জোর দিয়ে কিছু বলা যায় না। অনুবাদটি অন্যরকম হতেই পারে বা পারত যদি অনুবাদকের কাছে তার interpretation আলাদা হত। তবে সামগ্রিকভাবে একটি বক্তব্য থাকে সব কবিতার ক্ষেত্রেই। সেটিকে ধরে এগোনোই যায়। ব্যাপারটি অনেকটা যেন মূল দরজার ভেতর দিয়ে ঢুকে একটি ঘরের আনাচে কানাচে আরও দরজা বা জানালা আবিষ্কার করা। দ্বর্থহীন ভাবে বলব, বিপ্লব সেটি পেরেছেন। আর পেরেছেন বলে তাঁর অনুবাদে উঠে এসেছে The crazy wind blowings want to eat my lungs away/ Yet under these legendary trees of swayings/ I`m here with some bones only বা Those who are there spreading feathers I`d like to tell them secretly....be careful, Cover yourself up shaking all the nobilities and celebrated sunshine off জাতীয় লাইন।
কবি সন্তোষ সিনহা বা অনুবাদক বিপ্লব সরকার ঠিক কী বলতে চেয়েছেন কবিতাগুলিতে? পাঠকদের interpretation আলাদা হবে ঠিকই, তবু বলা যায় এক অসামান্য দর্শন যেন কবিতাগুলির ছত্রে ছত্রে। একক ব্যক্তি মানসের এক অন্তর্লীন যাত্রায় সেই দর্শনে ফুটে ওঠে এক অদ্ভুত কান্না। ভবিষ্যতদ্রষ্টা কবি দেখেন এক নষ্ট জীবন যেখানে মিলেমিশে যায় সব জীবন বোধ। সামগ্রিকতার বিচারে যূথবদ্ধ মানবের একক স্খলন যে অবক্ষয়ের সূচনা করে সেখানে সত্যিই দরকার রুদ্র তাণ্ডব থেকে শুরু করে তথাগতর আত্মস্থ জীবনীশক্তিকে। জীবনবোধ যখন প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়ায়, তখনই শুরু মানবমনের এই যাত্রা। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এতদিনের লালিত সংস্কার। যন্ত্রনাবিদ্ধ মানুষ শুধু চায় এমন কোনও আশ্রয় যা তাকে শীতল করবে। উপশম হবে সব কষ্টের। নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে পাবে সব প্রশ্নের উত্তর। এই যাত্রা আসলে মনের। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে সেই একক যাত্রার এক দর্শন ধরা হয়েছে। বড় প্রবল তার অভিঘাত।
শব্দ চয়নে ও কবিতার আত্মা স্পর্শে অনুবাদকের মুন্সিয়ানা নিঃসন্দেহে এই কাব্যগ্রন্থের বড় পাওনা। অনুবাদের কাজ হয়ত অনেকে করেন, কিন্তু সেটা কতটা অনুবাদ হয় সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে আমার। কিন্তু বিপ্লব তার নিরসন করেছেন। অন্তত এই কাব্যগ্রন্থের ক্ষেত্রে। মনে হয়, কবি সন্তোষ সিনহার মতো অনুবাদক বিব্লব সরকারেরও অনুবাদের সময় একটি ঘোর কাজ করছিল। যে subtelty, wit, imagery ইত্যাদি অনুবাদের কাজটিকে জীবন্ত করেছে তা অর্জন করা সহজ যায়। বিপ্লবের বয়স অল্প। আগামীতে অনুবাদকের ভূমিকায় তাঁকে আরও কাজ করতে দেখাব এরকম আশা করা যায়। কেননা Poems of Dreams সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে কিছু কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে বিপ্লব একটু তাড়াহুড়ো করেছেন বলে মনে হচ্ছে। উৎকর্ষতার দিক থেকে সেগুলি আরও যেন ভাল হতে পারত, যেমন ৩১ ও ৪৭ নম্বর কবিতা দুটি। এরকম আরও কয়েকটি রয়েছে। শব্দচয়নেই ক্ষেত্রেও দুই একটি জায়গায় মনে হয়েছে আরও catchy word ব্যবহার করলে ভাল হত। মনে রাখতে হবে, অনুবাদ মানে কিন্তু একটি ভাষার সৃষ্টিকে অন্য ভাষায় প্রতিষ্ঠার লড়াই।
সবশেষে, কবি সন্তোষ সিনহা ও অনুবাদক কবি বিপ্লব সরকারের জন্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল। বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে কিছু কাজ এমন থাকে যার মূল্য পরিমাপ করা যায় না। এই কাব্যগ্রন্থটিও সেই অমূল্য কাজের একটি হয়ে রইল।
আলোচক- শৌভিক রায়
No comments:
Post a Comment