Wednesday, August 30, 2017
Friday, August 25, 2017
মধ্যরাতের খন্ড কবিতা- পর্ব- ১৬
লক্ষ্মী নন্দী
তুই এলে তোর নিকষ
অন্ধকারে কোজাগরী
হয়ে ওঠে অামার
উদাসী মন।
প্রতি রাত সকলের
অলক্ষ্যে তোর
রোমান্টিক শরীরের
সুরম্য ছন্দে নিঃশ্বাস
জুড়াই। অামার ১৪"×"১৪
স্কয়ার ফিটের
খাঁচাটাও তোর বিন্যাসে
সেজে ওঠে।
দু-জনেই হয়ে উঠি
সেখানে মধ্যরাতের
স্থাপত্যের বুনিয়াদ।
তোর কাছেই তো
অামি পাই পরম প্রশান্তির
অাপন-গোপন-যাপন।
তোর সাথে রোজ
নৈঃশব্দ বজায় রেখে
শায়িত হই অামার
বিছানার অাঙিনায়।
চিৎ চোখে মিশে যাই
তোর ক্লান্তিহীন
অতনু শরীরে
কখনও বিহ্বল
এপাশ ওপাশ।
তোর একনিষ্ট বিশুদ্ধ
গাম্ভীর্যের চরমতা
মাঝে মাঝে অামাকে
করে তোলে শান্ত উথাল।
কতবার - তুই তোর
বিকীর্ণ চর্চা দিয়ে
বু ঝি য়ে ছি স ------
অালোরা সব অালেয়া।
অামি বিশ্বাস করেছি।
তাই তোর ধুম অন্ধকার
অামার বিপুল রাতের
অারাত্রিক জীবন ধ্যান।
ইলিশ উৎসব
সুপ্রীতি বর্মন
সিনেমাটোগ্রাফির পেছনে চলতে থাকা গুটি গুটি পায়ে কল্প ছায়াচিত্র। নিছক নষ্ট নীড় অতীতের বাবুই পাখির উল্টো কুঁজো বাসা।ঝুলন্ত সংসার কন্টকময় খেজুর গাছের ডালে। ফেলে আসা রাজপথ প্রথম অভিসার বাঁশি নিষ্প্রান হারানো সুর। সপ্তগামী চরনের উচ্ছাসে বাঁশে উঠে, তিষ্ঠানো দায় তবুও পেছন থেকে শক্ত আলিঙ্গন, তোমাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। চেনা জানা পরিধি দূরে রঙ্গমঞ্চ অদৃশ্য ছায়াপথ।চোখে স্পষ্ট প্রতীয়মান আগামী স্বপ্ন কুলো হাতে শুভবিবাহের প্রচ্ছদে খই পোড়ানো। উড়ছে বলাকা সাগরের বুকের কাছ দিয়ে, ধরা ছোঁয়া দূর বহুদূর।খপ খপাৎ ঝোপ বুঝে কোপ বর্ষার অকুল নদীস্রোতে। ছিপে লোভী উন্মুখ দৃষ্টিপাতে স্বর্নালী রূপসী ইলিশের সমর্পন।লকলকে জিহ্বার অন্তিম আস্বাদনের ভোগ তোমার শরীর নিষ্প্রান। জেলেদের দীর্ঘ প্রতীক্ষায় দীর্ঘশ্বাসে এলায়িত নদীবক্ষ, সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। নেই কোন নিস্তার।আমার শরীরের অংশ পন্যমূল্যের নিরীখে বাজারে বিক্রীত দ্রব্য। সকল হাতের অগ্রসর ভোগ লালসার চোখে প্রতিবন্ধক, খাবি খায় মুক্তির দীর্ঘশ্বাস।তবুও একটু করুনার আর্তি, চোখ কান বুজে তিলে তিলে মরা।সবার হিসেবের সুখ মাথার মধ্যে গিজগিজ আসল সোনা, বাংলাদেশের হৃদকোমল আমি। আমার রূপে রৌশনচৌকি উৎসবের ঝলকানি।সুন্দর বঙ্গললনার দৈহিক লালিমায় বাঙালী বর্ষাগমনে করতলগত মহার্ঘ্য বিনিময়ে।দরিদ্রের চোখে আমি কাঁচা সোনা জীয়ন আমার অন্তর্স্বত্তা।আমাকে নাগাল তাদের দুষ্প্রাপ্য। অন্ধকার তমনিশায় সমুদ্র সৈকত নীরবে বিরহ অগ্নির উচ্ছাসে গর্জনে অশ্রু দুগ্ধফেনিল সমুদ্র।কিছুদিন আগেও ছিলাম তোমার ঐকান্তিক মোহ তোমার সম্পদ রূপালী চাঁদ। আজ জ্যোৎস্না পড়ে ঠিকরে উঠে বিদ্যুৎ ঝলকানি তোমার হৃদয় চিরে শেষবার আমার শ্রেষ্ঠতম রূপ। নিথর নিষ্প্রান মৃত শরীর চকচক লালিত্য নিষ্প্রয়োজন। শুকিয়ে কাষ্ঠ দেহ তোমার ছোঁয়া অতীত। কষ্টার্জিত তোমার প্রয়াস মানতে না চেয়ে আমি হীন তুমি মুখ থুবড়ে বারংবার পড়ছো সৈকতে।
আমাকে কাছে টানার অপ্রত্যাশিত চাহিদা। তোমার প্রেমের সমুদ্র লুটায় চোরাবালির মুখে। কাল সকালের অশনি সংকেত পাড়ভেঙে তুমি উথাল পাতাল।আমাকে মুখবন্ধ বাক্স উপঢৌকনে চরা দামে বেঁচে দেবে বাজারে। নিয়ে যাবে নতুন কোন হাত গুছিয়ে দিতে অপরের সংসার। রক্তস্রোতে ভাসবো আমি তারপর ভাজা তেলে গনগন আঁচে।ফুরাবে সকল স্বাধীনতা শুধু যন্ত্রনার ফাঁসি মৃত্যু। ক্ষিধে জোগাতে হবে আমার পরমান্ন ডাকে। শুধু থেকে যাবে মৃত্যু প্রচ্ছদে স্মৃতি ।তোমার বিশাল বক্ষে আমার উথাল পাতাল চুম্বনে তোমার দ্যুতি।বারবার আলিঙ্গনে স্বপ্ন স্বাধীনতার আশকারা প্রশয়। রুপালী চিকচিক আমার অঙ্গ আচ্ছাদন আঁশ তোমার স্পর্শে হবে সিক্ত আদিগন্ত রূপসী।তোমার প্রেমে হবো সোহাগী শ্রেষ্ঠ বঙ্গ তিলোত্তমা।ফেলে এসেছি আমার শৈশব তোমার গর্ভমূলে আমার আগামী প্রজন্ম।যত্ন আপামর সোহাগে দীপ্ত হোক প্রান। তুমি দিও পরশ মাতৃস্নহ তাদের বুকে। নীল সাগর আমি আবার আসবো করবো জলকেলি পুরানো সোহাগে।।
Monday, August 21, 2017
আমি কে ? ?
সব্যসাচী ঘোষ
প্রতিদিন কত স্বপ্ন জাগে মনে
কত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় প্রতিদিন;
জীবন যা দেয় নিতে পারিনা...
তবুও হা করে চেয়ে থাকি প্রতিদিন
কিছু পাবার কিছু নেবার আশায়।
যা দেখি প্রতিদিন;যা শিখি প্রতিক্ষ্ন
পরক্ষনেই হয় যে তা মিথ্যা;
জীবন যা চায় দিতে পারিনা..
তবুও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে ছাড়ি না;
আমি বাস করি সত্য হয়ে মিথ্যের কারাগারে।
মৃত্যু যখন কেড়ে নেয় নাম--
ভেঙে দেয় আমার মনের আশিয়ানা ,
তখনও আমিত্ত্ব ছেড়ে আমাদের হতে পারিনা ;
তবুও 'আমি কে' বলতে গেলে নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারিনা।
আজ থেকে অনেক বড় কাল ,
কাল থেকে অনেক বড় ' আমি';
তবুও 'আমি কে' বলতে গেলে নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারিনা।
'আমি 'এক বিরাট শূন্যতা জীবনের।।
আমি যেতে চেয়েছিলাম
সৌরভ সরকার
আমি যেতে চেয়েছিলাম ভেসে ভেসে
মেঘ হয়ে--উত্তর আকাশ হতে দক্ষিণে,
খরা-প্রবণ গাঁয়ের উপর বৃষ্টি হয়ে।
আমি যেতে চেয়েছিলাম উড়ে উড়ে
ডানা মেলে-- ডুয়ার্স পেরিয়ে কুঞ্জ বনে,
যেথা সবুজে আগুন লেগেছে অরণ্য-প্রান্তয়ে।
আমি যেতে চেয়েছিলাম পাড়ি দিতে
সপ্তসিন্ধু--মেঘলা দিনের খেয়ালি গানে,
বানে ভেসে যাওয়া অসহায় মানুষকে নিয়ে।
যাদের একটু বাঁচাতে এক পশলার দরকার ছিল,
কিন্তু এখন তাঁরা নদীগর্ভের বানে ভেসে যাচ্ছে।
Sunday, August 20, 2017
ঝুলন পূর্নিমা
সুপ্রীতি বর্মন
খেলতে লেগেছে লুকোচুরি,
মালঞ্চ বনে কাঞ্চন কামিনীর,
দোলনায় তুমি আমি।
গা ঠেঁসাঠিসি, প্রচ্ছদে ভ্রম,
কৃষ্ণ রাধিকা সঙ্গপনে রাসলীলা।।
অঝোরে পুষ্পবৃষ্টি উপঢৌকন গান্ধর্ব বিবাহে।।
পুষ্প চয়নে গাঁথতে লেগেছি মালা,
প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার মালাবদল।।
যৌতুক তোমাকে সময় আবদ্ধ ঘড়ি ।।
শোভা বর্ধনে তোমার কব্জির,
মালঞ্চ বনে উচাটন প্রেমিকা।।
সর্বস্বান্ত হতে লেগেছে,
তোমাকে রাখতে সুখে।।
যেন তেন প্রকারেন,
বানভাসি সময় বয়ে যায় ধরতে অক্ষম,
তোমার মুষ্টি।।
তোমার চোখে চোখ দিয়ে দেখেছি,
সালংকারা রূপসী।।
দীর্ঘশ্বাস সংকোচনশীল গহ্বর,
এই বুঝি সময় ফসকে যায়।।
তোমার আনমনা সুর রন্ধ্রে তোলে,
সোহাগের ঝড় ।।
আনমনা পাতার খসখস,
জড়িয়ে জাপটে আলিঙ্গনে,
কামিনী কাঞ্চনের ডালে বিষাক্ত সর্পের ফোঁসফোঁস।।
ঘন ঘন নিঃশ্বাসের আনাগোনায় মুখভার মুখচন্দ্রিমার,
একরাশ কেশরাশি মেঘের আচ্ছাদনে।।
শুধু আজ লুকাতে চায়,
প্রশয় শুধু তোমাকে ছোঁয়া।।
তোমার খোলা সমুদ্রের বৈতরনীর গর্ভগৃহে,
আশ্রয় আমার।।
যেন স্নেহধন্যা মৃন্ময়ীর অপরূপ সৃষ্টি।।
দুচোখ ভরে দেখতে চায় কুমারটুলি।।
মালঞ্চ আজ প্রস্ফুটিত ডালে ডালে,
অপরূপ শোভা বসন্ত তিলোত্তমা,
প্রনয়াষ্পদে ভব্য খোলা আটচালা।
ঝরে পরা পুষ্প তোমার পত্রে,
গা ঘষে কেটে গেছে যে বসন্তপ্রলাপ,
কখন মুখ শুকনো করে হয়ে যেও না,
জীবনস্মৃতি ডায়েরীর পাতায় মুখ গুঁজে,
প্রাক্তন চোখের জলে।।
শুধু এইটুকু দাও কথা।
না হলে তোমার ছায়ায়,
ফেলেছি যে অপরূপ কায়া,
অভিশপ্ত খাঁ খাঁ নরকের,
অগ্নিতে হবে দগ্ধ অমাবস্যা।।
ঝুলন পূর্নিমা সুদুরপরাহত,
ধোঁয়াশা মধুচন্দ্রিমা।।
Thursday, August 17, 2017
নীরবতার খোঁজে
শুভদীপ
নীরবতাকে খুঁজছি-
সে অনেক কাল ধরে।
পরক্ষণেই সে জানান দেয়,
যাকে খুঁজে চলেছি একযুগ ধরে,
ও সে নয়।
ভয়ের নীরবতা ভেতরে-
প্রচুর কথা বলে।
বিস্ময়ের নীরবতা করে চলে-
প্রশ্ন অবিরত।
প্রেমের নীরবতা গান শোনায়-
চুপিসারে।
প্রত্যাখ্যানের নীরবতা আবার-
চিৎকার করে কাঁদে।
যে নীরবতা আমি খুঁজি,
যাকে চাইছি নিরন্তর,
সে বোধহয় কারণহীন।
আগুন পাখি
মন্দিরা ঘোষ
পাখি তোর ডানার নীচে আগুন রাখা
ভরা শীত তোর বুকে যে মুখ লুকাবো
মেলে দে উদার পাখা মাথার ওপর
আমি যে পাথরপাহাড় হাজার বছর
জড়তা পায়ের তলায় চাবুক চাবুক
আমিহীন জীবন জারক চলছে ভারি
পাথরের পাহাড় জুড়ে শীতের আসর
বাতাসে আগুনপাখির পালক খুঁজি।
বুকে তোর আগুন আগুন হিসেব জানি
ঠোঁটে তোর জীয়নকাঠি লুকিয়ে রাখা
আমি তো পাথরভাঙ্গার স্বপ্ন সাজাই
ভিতরে আগুন পোকা জ্বালিয়ে বাঁচা।
ছুঁয়ে দে জীয়নকাঠি কমলা ঠোঁটের
খুলে যাক জ্বালামুখ জীবন আকাশ
আগুনে ডানার তলায় স্বাধীন সকাল
আমি যে পাথরপাহাড় হাজার বছর!
মন্দিরা ঘোষ
পাখি তোর ডানার নীচে আগুন রাখা
ভরা শীত তোর বুকে যে মুখ লুকাবো
মেলে দে উদার পাখা মাথার ওপর
আমি যে পাথরপাহাড় হাজার বছর
জড়তা পায়ের তলায় চাবুক চাবুক
আমিহীন জীবন জারক চলছে ভারি
পাথরের পাহাড় জুড়ে শীতের আসর
বাতাসে আগুনপাখির পালক খুঁজি।
বুকে তোর আগুন আগুন হিসেব জানি
ঠোঁটে তোর জীয়নকাঠি লুকিয়ে রাখা
আমি তো পাথরভাঙ্গার স্বপ্ন সাজাই
ভিতরে আগুন পোকা জ্বালিয়ে বাঁচা।
ছুঁয়ে দে জীয়নকাঠি কমলা ঠোঁটের
খুলে যাক জ্বালামুখ জীবন আকাশ
আগুনে ডানার তলায় স্বাধীন সকাল
আমি যে পাথরপাহাড় হাজার বছর!
Wednesday, August 16, 2017
রুপকঃ
দেবব্রত তাঁতী
অন্যকে নিজের বশে বা অধীনে রেখে দিয়ে নিজেই স্বাধীন বা
মুক্ত হতে চাওয়াটা পাপ, মহাপাপ । অথচ দেখ একটা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে রয়েছি সবাই ।
একজন অপরজন কে সে নিজেই আবার অন্যের অধীন । এই দেখুন না একটা মেয়ে পড়াশোনা করে
নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে । তার জন্য কম সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়নি । সব বাধা বিপত্তি
অতিক্রম করেই সে এই জায়গায় পৌঁছেছে । অথচ তার বাড়িতে গিয়ে দেখ সকালে ঘুম থেকে উঠে
বারান্দায় এসে খাঁচার পাখিটা কে শুভসকাল জানায় ।তাকে নিয়ম মাফিক খেতে দেয় । তার সব
চাহিদা পূরণ করে । কিন্তু সেই পাখি টা খাঁচার শিক গুলোকে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে
ভাঙ্গার চেষ্টা করে । পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে । উড়ে যেতে ইচ্ছে করে । সেই মেয়েটা কি
জানে না । নাকি না জানার ভনিতা করে । পাখিটির মনের কথা বুঝতে চাইনা । অথচ কিছুকাল
পূর্বে মেয়েটির মনের কথা কেউ নাকি বুঝত না বলে কি না কি কাণ্ড ঘটিয়েছিল ।
পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রেখে দিয়ে ঘরবন্দি করার চেষ্টা বিফল ।
একটা সময় এলেই সেই সব কিছুই টপকে পালিয়ে যেতে ভয় পায় না । বরং সাহস ভেতরে ভেতরে
তৈরি হয়ে থাকে বন্দী দশায় । তুমি টের পাও না তা । এই যে কাঁটা তার দিয়ে ভাগ করে
দিয়েছ মাটি । তাতে কি কিছুই হল আদতে ? পাখি আকাশ বাতাস এইগুলোকে তো ভাগ করতে
পারলে না কেন ? পাখি তো বেশ ডানা মেলে উড়ে এদিক থেকে ওদিকে যায় আর ওদিক থেকে এদিকে
আসে । যেন মনে হয় যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব এর ফলে এক মায়ের পেটের দুই ভাই বেরা দিয়ে
ঘর বাড়ি আলাদা করে নিলো । কথা বলা বন্ধ । হটাত করেই যখন ঘূর্ণি ঝর এল কিংবা তুফান
তখন আবার সবাই মিলে গেলো । বড্ড হাসি হাসতে ইচ্ছে করে । এসব কিছু জেনেও মানুষ
মানুষ কে দূরে সরিয়ে দেয় সে যতয় আপন হোক ।
১৫ ই আগস্ট নাকি
স্বাধীনতা দিবস ! কিন্তু শুধু কি এই দিনটি স্বাধীন থাকতে পারবো ! নাকি এটাও একটা
মিথ্যে কিছু । যদি শহিদ দের শ্রদ্ধা জানাতেই হয় তাহলে ফুলের মালা দিয়েই একদিন
স্মরণ করেই লাভ কি ? তাদের জীবনের আদর্শ যদি আমাদের জীবনে প্রতিফলিত না হল তাহলে
লোক দেখানো শ্রদ্ধা বা সন্মান দেখিয়ে কোন লাভ নেই । যেদিন প্রথম ভারত স্বাধীন বলে
ঘোষণা হল রেডিও তে সেদিন তো একজন চিৎকার করে বলেছিল –“এ সব ঝুট হ্যা” । এ
স্বাধীনতা নয় ! ওরা ভিক্ষা দিয়েছে । কিন্তু সেই পাগলের কথা আমরা কেউ শুনিনি ।
পতাকা হাতে ঢাক ঢোল কাঁসি শঙ্খ বাজিয়ে গোটা দেশ মিছিলে দাঁড়িয়ে আনন্দে হাসতে হাসতে
কেঁদে ফেলেছিল । কেউ মনে রাখেনি । এই দেখুন না । মানুসের জন্মদিন একদিন হয় ।সশরীরে
হয় মায়ের গর্ভ থেকে । কিন্তু গরিবের জন্মদিন পালন বলে কিছুই হয়না । কারন গরিবের
খবর গরিবেরা জানে । অন্য কেউ নয় । জাতীয় সঙ্গীত গায়তে গায়তে গায়ে কাঁটা দেয় ।
শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে । “বন্দেমাতরম” বলতে বলতে ভিজে ভিজে ছেলে মেয়ের দল নিজস্ব
এলাকায় ঘুরে বেড়ায় । আর বলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম এই দিনে । কিন্তু এই মেয়ে
ছেলেরা জানে না আসল কিছু ইতিহাস । ভারতের আগুনের ইতিহাস । বিপ্লবের ইতিহাস ।
স্বাধীন মানেই কি শুধু মাত্র দেশ স্বাধীন । মানুষের স্বাধীনতা কোথায় ?
পাখির গান
আনিসুর রহমান খান
ঝিঙে মাচায় দোয়েল নাচে
কাক নাচে তার সাথে
হুতুমপেঁচার হুতুম হুম
চোখ জ্বলে তার রাতে।
ময়না পাখি গয়না পড়ে
যাচ্ছে শশুর বাড়ি
টিয়ে পাখি ঠোঁট রাঙিয়ে
পড়ছে নতুন শাড়ি।
চড়ুই নাচে ঘরের কোনে
বড়ই গাছে টুনটুনি
গহীন বনে ডাকছে ঘুঘু
সেতার বাজায় মুনমুনি।
উঠছে ভরে নানান সুরে
শ্যম শহরের প্রাণে
হৃদয়পুরে লাগলো দোলা
হরেক পাখির গানে।
Monday, August 14, 2017
বুনো রামনাথ
দিলীপকুমার মোহান্ত
আঠারো শতকের শেষপাদ। রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত নবদ্বীপের নগর প্রান্তে বনের মধ্যে টোল খুললেন। তিনি কৃষ্ণনগরের রাজার কাছ থেকে সে যুগেও টোল খোলার জন্য কোনো অর্থ সাহায্য নিলেন না। বরং রাজা স্বয়ং তাঁকে অর্থ সাহায্য করতে চাইলে রামনাথ তা সবিনয়ে ফিরিয়ে দিলেন। টোলের ছাত্ররা একদিন রামনাথ পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসা করল, “ পণ্ডিত মশায় ! আপনি বনজঙ্গলের মধ্যে পর্ণকুঠীর নির্মাণ করে অতীব দারিদ্রের মধ্যে আছেন, অথচ কৃষ্ণনগরের রাজা শিবচন্দ্রের পণ্ডিতসম্মাননার দান নিলেন না কেন?” এর উত্তরে রামনাথ পণ্ডিত বললেন, -- তবে শোন! রাজন্য অনুগ্রহের বড় হ্যাপা। রাজার অনুগ্রহ একবার নিলে দুঃখ আর ছাড়ে না। ক্ষমতার স্বভাবই এমন! রাজনৈতিক শক্তিই সেরা শক্তিও বটে। এই শক্তির আশ্রয় পেলে বাইরে থেকে আপনার চাকচিক্য দেখে লোকজন মোহিত হবে। কিন্তু আপনি নিজে জানবেন কত শক্তিহীন আপনি! সেই শক্তিহীনতা তিলে তিলে আপনাকে দুর্বল করবে। যেকোন সময় বিনা কারণে আপনার শক্তি কেড়ে নেওয়া হতে পারে । এজন্যই রাজা শিবচন্দ্রের বৃত্তি গ্রহণ করতে পারি নি বাবা! রাজন্য আশ্রয়ের ফলে স্বাধীন চিন্তায় ছেদ পড়তে বাধ্য।সকল সময়ই কেবল মনে হতে থাকবে, ‘এই বুঝি রাজা রুষ্ঠ হলেন’! ‘এই বুঝি রাজা রুষ্ঠ হলেন’! রাজারা তো আর যুক্তি-ন্যায়-অন্যায় -- এসবের ধারও ধারেন না। রাজন্যের মর্জিই ন্যায়। অর্থ দিয়েই রাজন্য সকলকে দাস করে রাখে। মনে নেই মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় সভাঘরে ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতি তাবড় তাবড় নীতিবাগীশ রাজপুরুষেরা কেমন নীরব দর্শক হয়ে ছিলেন! এরা সকলেই রাজন্য অনুগ্রহের দাস, অর্থের দাস। ‘অর্থ’ কারো দাস নয়।
আরো শোন বাপু—‘রাজন্য আশ্রয়ের ফলে না ঘুমিয়েও অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থায়ও দুঃস্বপ্নদর্শন হতে পারে। গাছে বা পাহাড়ে না চড়েও সব সময় মারাত্মক পতনের ভয় হতে পারে। বার্ধক্যহীন অবস্থায়ও কম্প হতে পারে শরীরে—জরা ধরল না, যুবকমানুষ, গায়ে শক্তি আছে, তবু হাত পা কাঁপছে—এসবই রাজন্য অনুগ্রহের ফল। অন্ধকার নেই, তবু ভয়ে গা ছম্ ছম্ করতে পারে । অস্ত্রের কোন আঘাত নেই, তবু আঘাত জনিত দুঃখ হতে পারে । কোন শেকল নেই, অথচ সব সময় বন্ধনজনিত ভয় হতে পারে। বেঁচে থেকেও মৃত ব্যক্তির মত নিজেকে মনে হতে পারে।’ কবি রুজ্যক আমাকে সাবধান করে দিয়েছেন সেই কবে প্রথম জীবনে ।
এবার বুঝলে তো বাপু! কেন রাজন্য অনুগ্রহের গলগ্রহকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি।"