সম্পাদকের কথা
শরতের আকাশে বারুদের গন্ধ। শিউলির সাদায় রক্তের দাগ। নদীর জলে ভাসছে কান্না। বাতাসে অনুরণিত চাপা আর্তনাদ।
তবু মা আসেন। কোল খালি হলেও মা আসেন। তাকে আসতে হয়।
জ্বলবে আলো, সংগীত মুখরিত হবে চারদিক, উল্লাসে-কোলাহলে মেতে উঠবে সারা বাংলা।
মা হাসবেন আমাদের সাথে।
মা কাঁদবেন একাকী।
মায়েরাই কাঁদেন। মায়েরাই প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
আমরা পাশ কাটাই। কেবল পাশ কাটিয়ে চলে যায় ব্যক্তিগত অন্ধকারের নিজস্ব ঘরে আলোর উৎসবেও।
প্রকাশিকার কলমে
ভোর হলেই পায়রাগুলো উড়িও না বেণীমাধব
পায়রার খোপ দেখতে তোমার বাড়ি যাবো
দাড়িভিটের মায়েরাও যাবে-
উৎসবের মরশুমে
দু-ফোঁটা নোনতা গল্প শুনতে
আপত্তি করবে না তো বেণীমাধব?
(লেখা ও ছবি - রীনা সাহা, প্রকাশক, মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা )
লিখেছেন ও এঁকেছেন যাঁরা
যাজ্ঞসেনী, শুভঙ্কর চক্রবর্তী, তৈমুর খান, কুমকুম ঘোষ, সুমিত্রা পাল, ইমরান হাসান, ফিরোজ আখতার, রীনা মজুমদার, বহ্নিশিখা ঘোষ, দীপ্তিমান মোদক, মৌসুমী চৌধুরী, সোমা বোস, সুব্রত নন্দী, দেবযানী সিনহা, মহন্ত বিশ্বাস মোহন, অনিমেষ সরকার, ফিরোজ হক, সায়ন তরফদার, সুনন্দ মন্ডল, সোমা দত্ত, শৌভিক কার্য্যী, শ্যামল কুমার রায়, বিপ্লব তালুকদার, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, সনাতন মাজী, শৈলেন রায়, সঞ্জিত মন্ডল, দেবীপ্রসাদ পাঁজা, সঙ্কর্ষণ, প্রসেনজিত রায়, পিয়াংকী মুখার্জী, দীপশিখা চক্রবর্তী, কালিদাস দাস, শ্রাবণী ঘোষ, আদিত্য সাহা, সংস্কৃতি ব্যানার্জী, মাম্পি রায়, এস কবির, গৌতম ভৌমিক, আশীষ দেব শর্মা, মজনু মিয়া, মাসুদ বড়া, তুহিন মন্ডল, সোনাই, সুজল সূত্রধর, জয়িতা দেবনাথ, শুভম রায়
ব্যবহৃত ছবি- ঋতভাষ রায় ও শৌভিক রায়
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন আশ্বিন সংখ্যা
প্ৰকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
যোগাযোগ- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন আশ্বিন সংখ্যা
শারদীয়া
পুজোর পাঁচকথা
যাজ্ঞসেনী
পুজো-১/শাড়ি
কলেজে পড়ার সময় থেকে দেখতাম, মা সাদা শাড়ি পরে। তাঁতের। চাকরি পাবার
পরে, পুজোতে মায়ের জন্যে সাদা তাঁতের শাড়ি কিনতাম। জমিটা একেবারে সাদা, চওড়া
লালপাড়। পাড়ে জরি থাকলেও মা আপত্তি করত। প্রতিবার শাড়ি হাতে নিয়ে মা বলত,
আবার পয়সা নষ্ট করলি! আমি কি কোথাও যাই?
বয়সের ভারে মা তখন আর বাড়ির বাইরে যেত না। আমি বলতাম, পুজোতে পরবে।
সেই শাড়িগুলো মা যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখত।
যেদিন সকালে মায়ের চোখের পাতাদুটো স্থির হয়ে গেল, সেদিন মা আমার দেওয়া
শাড়িই পরে ছিল।
কদিন পরেই পুজো। এখন আর আমাকে লালপাড় সাদা শাড়ি কিনতে হয়না।
আলমারিতে এখনও রাখা আছে ভাঁজ না ভাঙা কত লালপাড় সাদা তাঁতের শাড়ি। কারোর
প্রতীক্ষায় আজও তারা যেন দিন গোণে।
পুজো/২
বই
স্কুলের শেষ শ্রেণি থেকে পুজোসংখ্যা পড়তাম। বাবা কিনে দিত। নতুন বই পড়ার,আগে যত্ন করে তার মলাট দিতাম। কেউ বইয়ের পাতা ভাঁজ করলে মন খারাপ হয়ে যেত। 'আনন্দমেলা' আর একটু বড় হয়ে 'দেশ' পড়তাম। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা পড়লে একটা দেশ ভ্রমণ ও হয়ে যায়। আমারও তাই হত। তারপর আস্তে আস্তে যেমন হয়। বই পড়ার সময় গিলে খেয়ে নেয় সংসার। তবে, এখনও ' দেশ' কিনি। সবটা হয়ত পড়া হয়না। তাও কিনি। শুধু মলাট দেবার পর্বটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
পুজো/৩
ছুটি
পুজোর ছুটির একটা আলাদা মজা ছিল। বেশ কিছুদিন পড়াশোনার পাট নেই। নির্ভেজাল আনন্দ আর ঠাকুর দেখা। সঙ্গে থাকত আনকোরা নতুন পুজোসংখ্যা পত্রিকাগুলো। দুপুরে অঙ্ক করার বদলে বইগুলো দিব্যি পড়ে ফেলা যেত। পঞ্চমী ষষ্ঠী সপ্তমী। অষ্টমীর দিন মনে হত, আরেকটা দিন তো বাকি আছে। নবমীতে সেই ভরসা মিলিয়ে যেত। দশমীর বিসর্জন শেষে কি খাঁ খাঁ শূণত্যা মন্ডপজুড়ে। অথচ, একদিন আগেই এখানে কত কি ছিল! দশমীর সেই শূণ্যতা আজও আসে। তবে আমাকে সে আর ছুঁতে পারেনা। নিজেকে প্রশ্ন করি, তুই বড় হয়ে গেলি যাজ্ঞ?
পুজো/ ৪
জামা
ছোটবেলায় পুজোর জামার একটা গন্ধ ছিল। খুব সাধারন মোটা কাপড়ের হলেও। দুটো বা তিনটে বড়জোর। তাতেই কত আনন্দ। সপ্তমীতে পরা নতুন জামা আবার হয়ত নবমীতে পরেছি। এখন ইচ্ছেমত কিনতে পারি। কিন্তু, ইচ্ছে করেনা। তবুও কিনতে হয়। এখন আমার শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকে দামী ব্র্যান্ড বা চোখ ঝলসানো শাড়ি। কিন্তু, নিখাদ আনন্দের ব্র্যান্ডটা কি, সেটা কখনও আমার জানা হয়নি।
পুজো/৫
দশমী
বিসর্জনের দিন, মন খারাপের দিন। ছোটবেলায় লুকিয়ে কাঁদতাম। কি হু হু শূণ্যতা আকাশ থেকে বাতাসে। যেন আমার সবকিছু নিয়ে গেছে কেউ। আনন্দ উৎসবের পরে হঠাৎ কেমন ঘন বিষাদে ছাওয়া চারদিক। মনে হত, আর কয়েকটা দিন ঠাকুর থাকতে পারত না? কদিন পরেই আবার সেই দশমী আসবে।কিন্তু, শূণ্যতাও কত বদলে যায়! নাকি, আমিই বদলে গেছি? খুব মনখারাপের সময়ে, কে যেন ফিসফিস করে বলে, তুই কি সত্যিই বদলে গেছিস যাজ্ঞ?
"বাউল"
ছবি এঁকেছেন- শুভঙ্কর চক্রবর্তী
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
বিশেষ কবিতা
বিরহপুর
তৈমুর খান
সমস্ত জীবন ধরে আমারই প্রেমের কাহিনি
এতদিন যা বলেছি অথবা বলিনি
কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন , কিছুটা ঝলমল
আলো আঁধারিতে মাখামাখি
কিছুটা শিশির বিন্দু, কিছুটা অশ্রু টলমল
সন্ধ্যার চাঁদ থেকে ভোরের চাঁদ
মাঝখানে নিস্তব্ধতা, হয়তো জাগরণ রাখা
হয়তো নতুন স্বপ্নকথা
স্বপ্নকথায় ঘুমিয়ে পড়া রাত
হেমন্তের শীত , বসন্তের ধুলো
চিঠি লিখে গেছে বারোমাস
সেসব বাংলার ৠতুগুলো —
কল্পনার পাখি চলে গেছে উড়ে
সন্ধ্যা নেমেছে মহাশূন্য ঘিরে
সে আসেনি, তার শুধু ঘ্রাণের নূপুর
উথাল পাথাল করে গেছে
আমার আবহমান বিরহপুর...
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
শারদীয়া প্রবন্ধ
বারোয়ারী পূজার সূচনা ও প্রথম সর্বজনীন দুর্গোৎসব
কুমকুম ঘোষ
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল মধ্যযুগে,পূর্বতন বঙ্গের রাজশাহী জেলার
তাহেরপুরে। ধনাঢ্য জমিদার কংসনারায়ণ রায়ের ইচ্ছে হলো তিনি আপন ঐশ্বর্য্য মহিমা প্রচার
উপলক্ষ্যে অশ্বমেধ বা রাজসূয় যজ্ঞ করবেন। সে সময়ের ব্রাহ্মণ পন্ডিত সহ সমগ্র পুরোহিত
কূল রাজাকে বললেন কলিকালে এধরনের যজ্ঞ অপ্রাসঙ্গিক বরং মার্কন্ডেয় পুরাণে যে "শ্রীশ্রী
চন্ডী" র বর্ণনা আছে সেইমত এক দেবীপূজার আয়োজন করা হলে তা শাস্ত্রীয় মত ও রাজা
কংসনারায়ণের সম্মান ও প্রতিষ্ঠার পক্ষে সহায়ক হবে। এইভাবে বঙ্গে দুর্গাপূজা শুরু হলো।
এখানে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো "বেদ" এ দুর্গাপূজার কোনো উল্লেখ নেই এবং
দেবীসূক্তে যে হৈমবতী উমার উল্লেখ আছে তার সঙ্গেও দেবী দুর্গার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু
মাত্র বৈদিক পূজার ছাপ দেওয়ার জন্য দেবীসূক্তটি ব্যবহার করা হয়। বরং উল্লেখ করা যেতে
পারে ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতার "মাতৃপূজা" র ধারাটি।সিন্ধু সভ্যতায় আবার দেখা যায়
"পশুপতি শিবের" পূজা। এবং সেখানে দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে দেবী মাতা রূপে পূজা
পেতেন।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজা র উল্লেখ আছে। মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির লিখিত
"দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী" তে দুর্গাবন্দনা পাওয়া যায়।
অর্থাৎ অনুমান করা যেতে পারে তৎকালীন বঙ্গদেশে দুর্গা পূজার প্রচলন ছিল। ইতিহাস
বলছে যে ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজা করেন। তবে অনুমান
করা হয় যে রাজা কংসনারায়ণ রায়(আকবরের আমল) অথবা নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র
রায়ের আমল থেকে(অষ্টাদশ শতক) এই পূজার প্রচলন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কলকাতা শহরে প্রথম দুর্গাপূজা হয় বড়িশা(বেহালা)র সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ীতে ১৬১০
সালে।এই সাবর্ণ রায়চৌধুরী দের হাত থেকেই জব চার্ণক কলকাতা-গোবিন্দপুর ও সুতানুটি
গ্রাম তিনটে নিয়ে বর্তমান কলকাতা শহরের পত্তন করে। তবে পলাশী যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়
ও লর্ড ক্লাইভ কে সম্বর্ধনা দেওয়া উপলক্ষে রাজা নবকৃষ্ণ দেব ১৭৫৭ সালে যে বিপুল
জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজা করেছিলেন সেটি কলকাতা শহরে তৎকালীন সময়ে এক বিশেষ
উল্লেখযোগ্য উৎসব(স্মরণীয়: হুতোম প্যাঁচার নকশা)।
কিন্তু এসব ই জমিদার ও রাজা-রাজরার অন্দরমহলে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাধারণ মানুষের
প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত ছিল। অদৃশ্য এক লক্ষণরেখার বাইরে সাধারণ মানুষ এবং
ওপারে দেবী আরাধনার বিপুল জাঁক।
মহামায়ার আরাধনা কি শুধুমাত্র জমিদার ও ধনীরাই করতে পারে? সাধারণ মানুষ করতে
পারেনা দুর্গাপূজা? একক ভাবে না হোক কয়েকজন মিলে এই পূজা কি করা সম্ভব নয়?এই
ভাবনাটি ভাবতে শুরু করলেন কলকাতা থেকে অনেক দূরে হুগলি জেলার বলাগড় অঞ্চলের
"গুপ্তিপাড়া"(গুপ্তবৃন্দাবন) গ্রামের বারো জন ইয়ার(বন্ধু)। ভাবনা টিকে কাজে পরিণত
করলেন বারো জন ব্রাহ্মণ বন্ধু, ১৭৯০ সাল নাগাদ। এবং বাংলাদেশের প্রথম "বারোয়ারী"
পূজা সেই শুরু হলো।চাঁদা তুলে গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে দুর্গা পূজার সূচনা হলো এই বারো জন ইয়ার
- দোস্ত এর মাধ্যমে। উর্দু ভাষায় ইয়ার শব্দের অর্থ বন্ধু। অর্থাৎ বারো জন ইয়ার একত্রিত
হয়ে যে পূজার প্রচলন করলেন সেটিই হয়ে উঠলো "বারো ইয়ারী" বা "বারোয়ারী" পূজা।
পরমাপ্রকৃতি মহামায়া জমিদারের অন্দরমহল থেকে জনগণের দরবারে আবির্ভূতা হলেন বারো
জন বন্ধুর ব্যতিক্রমী ভাবনার ফলস্বরূপ।এরপর ই শুরু হলো বারোয়ারী পূজার প্রচলন।বিংশ
শতকের শুরুতেই কলকাতার প্রথম বারোয়ারী পূজা টি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১০ সালে।
"ভবানীপুর বিদ্যোৎসাহিনী সভা" র পরিচালনায়। পূজাটি এখনও অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে
একশ বছর পার করেও।এই বছরেই কলকাতার রামধন মিত্র লেন ও সিকদার বাগানেও
বারোয়ারী পূজার সূত্রপাত ঘটে।
কিন্তু এই বারোয়ারী পূজাও সেই একটি নির্দিষ্ট বন্ধুগোষ্ঠী বা সংঘের মধ্যে আবদ্ধ থেকে গেলো।
এই পূজায় অন্ত্যজ মানুষের অঞ্জলি দেবার অধিকার ছিল না। শারদীয়া পূজাকে কেন্দ্র করে আপামর জনসাধারণের মধ্যে যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রকাশ দেখা যায় তা যেন এই বারোয়ারী পূজার মধ্যে দিয়ে যথাযথ ভাবে প্রতিফলিত হচ্ছিল না, কোথায় যেন একটা দূরত্ব রয়েই যাচ্ছিল।
এই দূরত্ব ঘোচানোর কথাটি প্রথম ভাবলেন মধ্য কলকাতার প্রাচীন ও সমৃদ্ধ অঞ্চল সিমলা পল্লীর স্বনামধন্য বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতা অতীন্দ্রনাথ বসু।স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য এই অঞ্চলের উৎসাহী যুবকদের একত্রিত করে ১৯২৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন "সিমলা ব্যায়াম সমিতি"। তিনিই সর্বপ্রথম "বারোয়ারী পূজা" শব্দের পরিবর্তে ব্যবহার করলেন "সর্বজনীন" শব্দটি এবং সিমলা ব্যায়াম সমিতির পক্ষে পালিত হলো "সর্বজনীন দুর্গোৎসব"। কিন্তু কেন তাঁর মনে উদয় হলো সর্বজনীন পুজোর ভাবনা? উত্তরটি পাওয়া যায় তাঁর চতুর্থ পুত্র বীরেন্দ্র নাথ বসু র লেখা--"বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসু স্মরণে" নামক স্মৃতি -গ্রন্হ থেকে। পিতার অত্যুজ্জ্বল ভাবনার মূল কারণটি তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এইভাবে--"তাঁর নিজের বাড়ীতে দুর্গোৎসব হত ও পল্লীর বর্ধিষ্ণু ঘরে পারিবারিক দুর্গাপূজার আয়োজন হত।তিনি তাঁর ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছিলেন এই সব দুর্গাপূজাতে কেউ তার বাড়ীতে গিয়ে দুর্গাপূজা দেখতে যেত না যদি না নিমন্ত্রিত হত। নিমন্ত্রিত না হয়ে দুর্গাপূজায় অপরের বাড়ীতে গেলে সামাজিক মর্যাদা লাঘব হয় বলে মনে করত। যৌবনে যখন তিনি এই বিষয়ে চিন্তা করতেন,মনে বড় আঘাত পেতেন।সকলের পক্ষে সকলকে নিমন্ত্রণ করাও সম্ভব হয় না।এই সামাজিক মনোবৃত্তিটাকেই কি করে পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতেন।" একদিকে পরাধীন দেশের যুবসমাজকে সংগঠিত করা অন্যদিকে স্বাভিমানী পল্লীবাসীর মনোভাবকে সংহত রূপদান করার জন্য তিনি "পূজা"কে উৎসবে রূপান্তরিত করার প্রয়াস নিলেন।তিনি চেয়েছিলেন --"এমনভাবে দুর্গাপূজার আয়োজন করা উচিৎ যেখানে সকলেই মা দুর্গার আরাধনা করবে নিজের সংকোচ ভুলে গিয়ে, নিজেদের মনে করে সকলে মিলে দুর্গাপূজার আয়োজন করবে সমান অধিকারে--তবেই দুর্গোৎসবের যথার্থ সার্থকতা আসবে।"
১৯২৬ সালে "সিমলা ব্যায়াম সমিতি" র পরিচালনায় শুরু হলো কলকাতার প্রথম সর্বজনীন (সার্বজনীন ও বলা হয়) দুর্গোৎসব।এই পূজার প্রথম পুরোহিত ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক চপলাকান্ত ভট্টাচার্য।স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যম ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় ও এই পূজার সাথে যুক্ত ছিলেন।১৯৩৪ সালে স্বয়ং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এই পূজার সভাপতি হন।তার আগের কয়েক বছর অবশ্য ব্রিটিশ পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ার জন্য পূজা বন্ধ ছিল।
এই পূজার প্রধান লক্ষ্য ছিল সমস্ত জাতি ধর্মের গোঁড়ামি, অস্পৃশ্যতা দূর করে হিন্দু - অহিন্দু , ধনী - নির্ধন ---সকল শ্রেণীর মানুষকে এক পূজা মন্ডপে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। পরাধীন দেশে এইরকম ভাবে ভেদভাব ভুলে একত্রিত হবার মন্ত্র নিয়েই সর্বাঙ্গীন ভাবে এই পূজা হয়ে উঠল "সর্বজনীন দুর্গোৎসব"। বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর স্বপ্ন ও ভাবনা সার্থক হলো এবং তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহাষ্টমীর সকালে সিমলা অঞ্চলের ধনী দরিদ্র ব্রাহ্মণ চন্ডাল শিক্ষিত অশিক্ষিত সর্বশ্রেণীর মানুষ একই মন্ডপে একই জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিলেন(কলকাতার কড়চা : আনন্দবাজার পত্রিকা)।
জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশভক্তির সাথে দেবীকে বরণ করে নেওয়া এবং আপামর জনসাধারণ কে শারদীয়া দুর্গোৎসব আয়োজনের অংশীদারিত্ব দেওয়ার জন্যই সেসময়ের মানুষ এই পূজা কে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর স্বপ্ন ও সার্থক হয়ে সেই পূজা এবছর ৯৩ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।
এখনও সিমলা ব্যায়াম সমিতির মাঠেই দেবী প্রতিমা নির্মাণ করেন শিল্পী প্রথম বারের মূর্তির ছবি দেখে। স্বদেশী আন্দোলনের ধারায় দেবী প্রতিমা কে খদ্দরের শাড়ী পরানো হত স্বাধীনতার আগের সময়। তাই অনেকে এঁকে "স্বদেশী ঠাকুর" ও বলতেন। সেসময় স্বদেশ-প্রেরণামূলক প্রদর্শনী র আয়োজন করা হত মাঠের একপাশে।
কালের নিয়মে আজ কলকাতা শহরে অজস্র সর্বজনীন দুর্গোৎসব আয়োজিত হয় "থিম পূজা"র জাঁকজমকপূর্ণ পদ্ধতিতে । তার মাঝে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম আয়োজিত সর্বজনীন দুর্গোৎসবটি তার ঐতিহ্য ও সাবেকীয়ানা নিয়ে আজো আয়োজিত হয়ে চলেছে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে যখন আলোকমঞ্জীর বেজে ওঠে তখন চিন্ময়ী মা'কে মৃন্ময়ী রূপে আবাহনের আয়োজনে সবাকার মধুর আমন্ত্রণ জানায় "সিমলা ব্যায়াম সমিতি"।
(সঙ্গের ছবি দুটি:
১.সিমলা ব্যায়াম সমিতির ১৯২৬ সালের মন্ডপ ও প্রদর্শনী
২.সিমলার চিরাচরিত মাতৃমূর্তি)
(ছবি- লেখিকা )
উৎসব ঘিরে
সুমিত্রা পাল
ভারতীয় জীবন উৎসবমুখর। উৎসবকে ঘিরে
নাগরিক জীবনে নেমে আসে এক স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের ধারা। সে উৎসব ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয়
ঐতিহ্যকে ঘিরেই হোক অথবা ফসল কাটা বা বোনাকে ঘিরেই হোক কিংবা মহাপুরুষদের প্রেরণাদায়ক জীবনকে
ঘিরেই হোক, যে
মুহূর্তে জনমানসে জাগে এক নতুনত্ব আস্বাদনের চেতনা, প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত
হয়ে মন হয়ে ওঠে বাধাবন্ধহারা... ঠিক সেই মুহূর্তেই হয়উৎসবের সূচনা।
আর বারো মাসে তেরো পার্বণের মাঝে বাঙালিদের শারদোৎসবের আমেজ ও আবেদন
যেন অনেকখানি ভিন্ন। এই উৎসবের প্রস্তুতিপর্ব সবচেয়ে প্রথমে স্বয়ং প্রকৃতিতেই যেন
শুরু হয়। মুখ গোমড়া বর্ষার বাদলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে পেঁজা তূলার মত সাদা মেঘেদের
নিয়ে ঝকঝক করে ওঠে নীলাকাশ। সবুজ পত্রপল্লবে ঝিলমিল করে ওঠে সোনালি রোদ। কাশফুলের
দোলায় দুলে ওঠে সমস্ত মাঠ-ঘাট। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই-
"শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এল টগর ফুটিল মেলা
মালতী
লতায় খোঁজ নিয়ে যায় মৌমাছি দুইবেলা।"
উৎসবকে ঘিরে ব্যপার জগত থেকে আরম্ভ করে শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য জগতে তো বটেই-পারিবারিক-সামাজিকজীবনেও ওঠে এক আলোড়ন, এক সাজো সাজো রব।বাড়িঘরে রঙের প্রলেপ, দোকানে দোকানে লোভাতুরা বিপণনদ্রব্যের
সমাহার, বিজ্ঞাপনের
আহামরি জৌলুষ, কেনাকাটার
ভিড়। সারাবছরের দূরত্ব ভুলে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মেলবন্ধন। উৎসবকে ঘিরেই যেন জেগে ওঠে আমাদের ষোলআনা
বাঙ্গালিয়ানা- বিলাসব্যসন, ভূরিভোজন, দেদার আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো...উৎসবকে ঘিরেই তো লেখক-লেখিকাদের ঘুম কেড়ে নেওয়া সারস্বতসাধনা, যার ফসলে ভরপুর হয়ে ওঠে অসংখ্য
বাণিজ্যিক ও ছোট পত্রিকার ঢাউস পূজাসংখ্যা। নতুন এলবাম, সিডি আর ক্যানভাসে স্ফূরিত হয়ে ওঠে
শিল্পীদের শিল্পসত্ত্বা।এছাড়াও
আকাশবাণী থেকে প্রচারিত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত চণ্ডীপাঠউৎসবকে নিয়ে আসে
একেবারে আমাদের বুকের কাছে।
আমরা বলেউঠি-
"বর্ষে বর্ষে এসো যাও এ বাংলা ধামে
কে
তুমি ষোড়শী কন্যা, মৃগেন্দ্রবাহিনী
চিনিয়াছি
তোরে দুর্গে তুমি নাকি ভব দুর্গে
দুর্গতির
একমাত্র সংহারকারিণী।"(বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
উৎসবকে ঘিরেআমাদের স্বতঃস্ফূর্ত
জীবনযাত্রা উদ্দামবেগে উধাও। শেষ যেন হয়না এর ধারাবিবরণী।
এভাবে প্রতিবছর উৎসব আসে, উৎসব চলেও যায়। কিন্তু উৎসবকে ঘিরে
মানুষের এই প্রস্তুতিপর্ব, এই অধীর প্রতীক্ষাপর্ব, তার রেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থেকে যায়। সেই রেশই মানুষকে তার প্রাত্যহিক
জীবনের কর্মক্লান্তি, হতাশা, একঘেয়েমি থেকে দূরে সরিয়ে তরতাজা ও প্রফুল্ল করে তোলে। সেইসঙ্গে
মানুষকে এক শুভবোধে অনুপ্রাণিত করে যায়। আর উৎসবের সার্থকতা ঠিক এখানেই।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
শারদীয়া বিশেষ রচনা
মহিষাসুর মর্দিনী
ইমরান হাসান
রুক্ষ এনাতোলিয়ার স্টেপ , আর্য দের বাসস্থল ,আর্য, ইউরাল এর অসংখ্য যাযাবর শ্রেণী দের মধ্যে একটা
গোত্রপুঞ্জ , কত রক্ত , কত যুদ্ধ কত ত্যাগ এর পরে আজ আর্য রা এই অবস্থাতে পৌঁছেছে
, কখনও নিজের জাত এর মাঝে আর কখনও অন্য গোত্র , আর্য দের বাঁকানো বজ্র (অস্ত্র)
কখনই নিজেকে স্থির রাখেনি , সদা সর্বদা সে এক গোত্র হতে আরেক গোত্র এর মাঝে নিজের
মহিমা বর্ণনা করে গেছে ,
আর্য দের প্রধান রাজার নাম ইন্দ্র , ইন্দ্র সোমপায়ি
অমিতাচারী । তবে আর্য দের প্রধান
দেবতার নাম ব্রহ্মা ।
ইন্দ্রের পিতা ছিলেন মুনি কশ্যপ , বিভিন্ন রাজারা মৃত্যু এর
পরে বিভিন্ন নামে নামিত হয়েছেন আর্য দের মাঝে , আর বিভিন্ন বড় বড় বীর যারা সহস্র
গো-ধন এনে দিয়েছেন আর্য দের মাঝে তারাও আজকে দেবতার আসন অলংকৃত করছেন তাদের
গোত্রের প্রতীক অনুযায়ী ।
তবে তাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে পূর্বে আরও একটি গোত্র আছে ,
যারা এমন ধরণ এর , বহু গোত্রের সমন্বয় , আর্য দের প্রতীক সিংহ , আর তাদের প্রতীক
মহিষ তাদের নাম টাউরন গোত্র ,তবে আর্য রা তাদের জানে একটাই নামে মহিষা ।
তাদের গোত্র এর মাঝে সদস্য সংখ্যা অনেক বেশী , তাদের
অস্ত্রের মাঝে এক ধরণ কালো রঙ্গ এর ধাতু আর পাথর এর ব্যবহার করা হয় , সেগুলো আর্য
রা জানে না ।
সেই ধাতু পাথর ভেঙ্গে ফেলতে পারে , আর্য দের পাথর আর তামার
হাতিয়ার তাদের সামনে টিকতেই পারে না ।
আর্য রা এই কারণেই কশ্যপ সাগর এর তীর এর কাছে চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ,
দেবেন্দ্র এর মাঝেও আজকাল সোম পান এর চাহিদা অপেক্ষা
অস্ত্রের চাহিদা মুখ্য আকার ধারণ করছে , তাদের অস্ত্র চাই , তাদের বাঁচার উপকরণ
চাই , নাতো আর্য দের হাতে ধ্বংস হওয়া আরও শত শত গোত্র দের মধ্যে একদিন আর্য রা
নিজেরাও চলে যাবে ।
তাদের বেদ রয়েছে , বেদ শ্রুতি , বেদব্যয়ী ঋষিরা , বেদ কে
নিজের মাঝে ধারণ করে রাখেন , সাম , ঋগ , যজু এই সমস্ত ঋষি দের মাঝে বেদ বর্ণিত
অবস্থাতে আছে ,
ইনারা অস্ত্র চালনা শিক্ষা দেন , ঋষি অঙ্গিরা , ঋষি বজ্র
এদের হাতে ইন্দ্র স্বয়ং শিখেছে অস্ত্র চালনা করা , প্রায় লক্ষ এর কাছাকাছি সদস্য
থাকার পরেও তাদের থেকে অর্ধেক জনসংখ্যার একটি দলের কাছে তাদের বার বার পরাজিত হওয়া
পীড়া দেয় তাদের কে ।
শিকার এর ক্ষেত্র নিয়ে সর্বপ্রথম তাদের মাঝে শুরু হয় ঝগড়া ,
ইউরাল এর কোলে , যে সকল চারনক্ষেত্র ছিল তাদের মাঝে চরে বেড়াত আর্য দের বিশাল
পশুপাল , আর আর্য দের এই পশুপাল এর উপর নজর দেয় মহিষা গোত্র ।
তাদের বীর নসোস তার বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে তাদের পশুপাল কিন্ত আর্য ক্ষেত্রপাল
রাও তাকে বাধা দেবার অনেক চেষ্টা করে ।
আর্য রক্তে রঞ্জিত হয় ভূমি ,
তবে ইন্দ্র এর পরে হাজার এর উপর আর্য দের কে প্রেরণ করেন ,
তাদের বিপক্ষে , কিন্ত তাদের বিশালাকার তীর ধনুক আর এর সাথে সাথে সেই অজানা ধাতু
এর অস্ত্রের কারণে তাদের কে পরাজিত হতে হয় ।
আর আজও সেটি বদলায়নি , বার বার প্রায় ৭ টি যুদ্ধে তারা
পরাস্ত হয়ে আজকে কশ্যপ সাগর এর এক তীরে স্থান পেয়েছে আর্য রা ।
সেই তীর এর পশ্চিম পাশে , চামড়ার তৈরি আর ঘাসের তৈরি শত শত
তাবু , এর সাথে সাথে মাটির তৈরি ঘর।
একটি তাবু বেশ নজর
কাড়ে আকারে বড় হবার কারণে , এটি আর্যরাজ ইন্দ্র এর তাবু ।
আজকেও ইন্দ্র বসে আছেন তার সিংহাসনে , তার স্ত্রী
ঊষা-মৈত্রায়নী তার পাশে বসে আছেন , যদিও বাইরে তিনি পরিচিত ইন্দ্রাণী হিসেবেই ।
“এভাবেই যদি চলতে থাকে , তাহলে আমাদের কে এক সময় শেষ হয়ে
যেতে হবে “ ইন্দ্র বললেন ,
স্বামী , আপনি চিন্তা করবেন না , আমরা অবশ্যই জিতব ।
‘কি করে জিতব? আর আমার পরে মাতা অদিতি আর পিতা কশ্যপ এর
ধারা কে সামাল দিবে সেটা আমার অজানা, আমার তো পুত্র নেই ‘
মৈত্রায়নি চুপ করলেন , তার স্বর্ণাভ চুল আর গণ্ড যেন একটু
হলেও মলিন হয়ে গেছে ,
ইন্দ্রের কোন পুত্র নেই আছে শুধু এক কন্যা , তার নাম গৌরি,
স্বর্ণাভ গায়ের রঙ বলেই তার এই নাম , তার চুল স্বর্ণাভ নয় বরঞ্চ কশ্যপের জলের
ন্যায় বা ভ্রমর এর ন্যায় কৃষ্ণ ।
এই কারণেই যেন তার রঙ হীরের মত চমকাতে থাকে , তার
কৃষ্ণকেশের বন্যার নিচে ।
গৌরি , মৈত্রায়নীর ন্যায় কোমল মতি নয় , সে অতি ঋজু আর
প্রচণ্ড সাহসী নারী । তার পেলব বাহুযুগলে সিংহের ন্যায় শক্তি রাখে । এটা এমনিতে দেখলে বোঝা যায় না কেননা গৃহকর্মে সে সমান নিপুণা , সে ইন্দ্রাণী হলে অন্য অনেক ইন্দ্র অপেক্ষা
অনেক ভালোই পরিচালনা করতে পারবে গোত্র । কেননা তার মাঝে সোম এর উন্মত্ততা নেই , সোম সে
পান করে তবে অতি পরিমিত আর শুধু উৎসব এর দিনে । তার এই উপায় নেই যে সে রাজ্যভার গ্রহণ করবে , কেননা তার
জন্ম হয়েছে স্ত্রী কুলে , স্ত্রীরা নেতা হন না আর্য দের মাঝে আর গৌরির সমতুল্য যোদ্ধা বেশী না থাকার দরুন তার বর খুঁজার ব্যাপারেও ইন্দ্র
বেশ শঙ্কিত ।
এই মুহূর্তে একটি অশ্ব বা ঘোড়ার গলা জড়িয়ে ধরে সে ছুটে
চলেছে , তেপান্তর এর মাঠ দিয়ে , তার সামনে অস্তগামী সুর্য দেব ।
তার পিঠে একটি ধনুক আর তার সাথে এক তূণীর তীর ।
অতি দক্ষতার সাথে প্র্যতঞ্চা চড়াল সে ধনুকের , আর তার সাথে
বেঁধে নিল একটি তীর , দূরে একটি মৃগ দৃশ্যমান হয়েছে , এমনিতে গোত্রের মাঝে কেউ
তাকে এই দ্বন্দ্বে পরাজিত করতে পারে না , সে তীর নিক্ষেপে অজেয় , মাত্র এক চিলতে নড়াচড়া , এরপরে তার এক তীরেই ধরাশায়ী হয়ে শয্যা নিল
হরিণ , অত দূর থেকেও লক্ষ্যভেদে ভুল হয়নি , ইন্দ্র দ্রক্ষ কন্যার ।
হরিণটিকে বেঁধে নিল সে , তার ঘোড়া হয়দেব এ সমস্ত ছোট খাটো
রক্তের গন্ধে ভয় পায় না , সে ছোট থাকাতে একবার বাঘের হাতে যখম হয়েছিল , তখন হয়দেব
তাকে নিয়ে এসেছিল সমস্ত রাস্তা তার পিঠে করে , সেই সময় থেকেই তারা দুইজন সাথী । আজকেও এই হরিণ সেই নিয়ে যেতে পারবে যেমন প্রতিদিন নিয়ে যায় ।
রাত এর আঁধার ও তার গতি রোধ করতে পারল না , পারবেও না এই বন তার পরিচিত এই পথে কোন পশু তাকে আক্রমণ করবে না আর কোন গোত্রের যোদ্ধার সাহস নেই তার গায়ে একটা টোকা দেবার , বাসাতে পৌছাতে পৌছাতে পরদিন সকাল হয়ে গেল ।
যখন বাসাতে ফিরল সে , রক্তে মাখামাখি । আসতে আসতে পথের মাঝেই হরিণ এর চামড়া টা ছিলে নিয়েছে সে । তার মা তাকে দেখে হা-হুতাশ করে উঠলেন ,
“যে মেয়েকে দুইদিন পরে বিবাহ যজ্ঞে সমর্পণ করতে হবে সেই
মেয়ে আজকে এই বেশে “ ।
“বাদ দাও তো মা, এই দেখ কেমন হরিণ নিয়ে আসলাম “
তার পিতা এসে দেখলেন , যদিও ভিতর ভিতর তার মাঝে গর্ব হল,
কিন্ত বাইরে কাঠিন্য ধরে রাখলেন , “কন্যাদের
এসব শোভা পায় না “ ,
“বাবা তোমার এই সব মায়ার
রাগ আমার কাছে ভালো লাগে না, খুব ভালো করেই জানি কত খুশি হয়েছ আমার উপরে “
এক মুহূর্তের জন্য বিস্তৃত হলেন ইন্দ্র , মনে হল যদি তার এই
কন্যা এই গোত্রের ভার নিত , তিনি কি এই রীতি কে ভেঙ্গে ফেলবেন ?
যেমনটি তার পিতার চতুর্থ পূর্ব পুরুষ মৃদঙ্গ ভেঙেছিলেন , তিনি প্রথম ছিলেন যিনি আর্য
দের মাঝের গোত্রের অভিমান কে ভেঙ্গে তাদের কে এক করে দিয়েছিলেন । এই কারণে আজ তারা আরও অধিক শক্তি এর অধিকারী । সত্য যে তার কন্যার সমান যোদ্ধা এই গোত্রে বিরল , কিন্ত এটাও সত্য যে আর্য
দের মাঝে নারীরা নেতৃত্ব দেন না ।
তবে তার চিন্তাতে ছেদ পড়ে গেছে , কেননা তার সেনাপতি বরুণদেব
তার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছেন ,
“দেবেন্দ্র , পূর্বের দিকে মহিষা গোত্র আক্রমণ করেছে । আমাদের মাঝে সেনানায়ক এর অতি অভাব এই মুহূর্তে , আপনি যদি তাদের কে নেতৃত্ব
দান এর মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যান তাহলে আমাদের হতোদ্যম সৈন্যরা আবারও বল ফিরে পাবে “
ইন্দ্র রণবেশ ধারণ করে বেরিয়ে গেলেন তাদের সাথে ,
ভয়ঙ্কর অবস্থা , প্রায় , পাঁচশো অশ্ব এবং সমান সংখ্যক
মহিষারোহী যোদ্ধা এসে উপস্থিত হয়েছে , তাদের রথ এর চাকার আঘাতে চারিদিকে ধুলো উড়ছে
।
বিশাল দেহ তাদের , তামাটে রঙের যোদ্ধা , আর্য দের ন্যায় না
এরা ।
ইন্দ্র সবাইকে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন , তার অধীনে প্রায় তিনশ রথ আর পাঁচশো পদাতিক আছে , এই কারণেই প্রথম থেকেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করলেন তারা ।
প্রবল যুদ্ধ শুরু হল , কিন্ত এরই মাঝে , কোন এক ঘোড় সওয়ার ছিল যে , অন্যদের থেকে অনেক দ্রুত গতির
ছিল , সহসা বরুণ দেব কে পাশ কাটিয়ে তার হাতে বিশাল এক ধনুক দৃশ্যমান করল সে ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই ইন্দ্রের বুকে তীর বিদ্ধ হল , পড়ে গেল তার নিথর দেহ
সমস্ত সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবার মত অবস্থা হল , যে যেদিকে
পারছে পালাচ্ছে , বরুণ দেব স্ত্রস্ত হাতে তার দেহটি তুলে নিলেন ।
ইন্দ্রের মৃতদেহ
নিয়ে দশজন এর ন্যায় যোদ্ধা এসে উপস্থিত হলেন সেখানে , সেনাপতি বরুণদেব তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন , আলু থালু বেশে ছুটে এসে মৈত্রায়নী তীক্ষ্ণ বিলাপ করে উঠলেন তা দেখে ,
আছড়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করলেন ইন্দ্রের শবের পাশে , “ইন্দ্রাণী এখন কান্নার সময় নেই , পালাতে হবে , কেননা মহিষা দের সেনার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করে
তারা এদিকেই আসছে “ ।
তবে গৌরি এর ভাষা অন্যরকম , তার চোখেও পানি , কিন্ত এর সাথে
সাথে তার পিতার প্রতি নমন ও আছে , তার পিতার পাশে পড়ে থাকা বজ্র টা তুলে নিল সে ।
“সেনাপতি রথ তৈরি করুন “
“কি বলছেন আপনি “
যা বলছি তাই করুন , এই ভাবে পালিয়ে আর কতদিন , আর আমার রথ এর প্রয়োজন নেই , আপনাকে রথ এর
দায়িত্ব নিতে বলেছি আপনার নিজের জন্য ,
আমি এবার যুদ্ধে যাচ্ছি , আমার নিজের বাহিনী আমার নিজের ঘোড়
সওয়ার দের কে সাথে নিয়ে , যাদের কে নিজের হাতে গড়েছি আমি ।
বাইরে গিয়ে শঙ্খ নাদ করল গৌরি , আর সাথে সাথে আশে পাশে থেকে
, যেসমস্ত যুবক আর যুবতি রা ছিল , যারা এখনও অষ্টাদশী হয়নি , তারা সবাই এসে দাঁড়াল
, মাঝে মাঝে গৌরি এদের কে নিয়ে চলে যেত দূরের তৃণভুমিতে , এরা সকলেই ঘোড়ার উপরে সরাসরি চড়তে পারে , রথ এর দরকার হয় না , এসব কে এতদিন খেলা ভাবলেও , আজকে সেটা পরিষ্কার হল ।
“আমাদের পিতারা বলে থাকেন , আমরা নাকি এখনও যুদ্ধে যাবার
উপযুক্ত নই , কিন্ত আজকে সেটি ভেঙ্গে দেবার সময় এসে গেছে,চল সবাই আমার সাথে “
এই বলেই নিজের ধনুক আর তীর নিয়ে হয়দেব এর পিঠে চড়ে বসল সে ,
অন্যরাও দৌড়াতে শুরু করেছে , মাঠে চড়া বুনোঘোড়া দের কে নিজের নিজের দেওয়া নাম ধরে
ডাকতে লাগলো তারা , যে ঘোড় সওয়ারি কে সবাই এতদিন তক মনে করেছিল খেলা , কখন কখন তার
মাঝেই তারা শিখে গেছে যুদ্ধ করা , গৌরি এর নেতৃত্বে , নারী পুরুষ সকলেই।
এরপরে তারা পৃথিবী কে কাপিয়ে রওনা দিল নিজেদের বর্শা আর তীর
ধনুক নিয়ে ।
টাউরন রা ভেবেছিল , এখন আর কোন বাধা নেই , কিন্ত এক নারীর
নেতৃত্বে তারা এতজন কে দেখে অবাক হল , তাদের মাঝে নারীর নেতৃত্ব ও আছে , এই কারণে
তারা নারী কে খাটো করে না , কিন্ত আর্য নারীদের মাঝে এত শৌর্য এর আগে তারা দেখেনি ।
আর আরও আশ্চর্যের বিষয় এরা কেউ রথে না , সরাসরি ঘোড়ার পিঠে বসে
আছে ।
গৌরি নির্দেশ করল , তাদের কে , তার অশ্রু ভেজা চোখ নিয়েই ,
তারা সবাই সজ্জিত হয়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল ,
এরপরে শুরু হল আক্রমণ ।
তারা লক্ষ্য করল , তাদের আক্রমণ এর ধার বেশী হলেও , ধাতুর
অস্ত্র শুধু মাত্র তামার হবার কারণে তারা মার খেয়ে যাচ্ছে , এরা সম্ভবত আকরিক লোহা
এর অস্ত্র ব্যবহার করে ।
তাদের ঘোড়সওয়ার রা একটা বৃত্ত এর মত রচনা করে বৃষ্টির মত
তীর নিক্ষেপ করে যাচ্ছে , তবে তাদের সাথে হাতাহাতি লড়াইতে পারছে না এর পরেও তাদের
আটশ এর বিপরীতে ,তারা মাত্র দুইশত জন , তবে এরই মাঝে তারা এত
সময় লড়তে পারবে যাতে সব গোত্রবাসী রা পালাতে পারবে ।
তাদের মাঝে একজন তীরন্দাজ কে দেখল সে যার অশ্বের গতি
অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী , এই সেই যে তার পিতা কে বিদ্ধ করেছে , তবে এই তীরন্দাজ
ও জানে না , হয়দেব এর গতি সম্পর্কে ।
সেও তার সাথে সাথে পাল্লা দিল । হামলাকারি এর রথ খুব হালকা কিন্ত শুধু ঘোড়ার গতি এর সামনে তার টিকার মত
সম্ভাবনা ছিল না , ক্রমাগত তীর নিক্ষেপ করে যাচ্ছিল সে গৌরি এর দিকে , কিন্ত গৌরি
ছিল অচল অটল , পর্বত এর ন্যায় ।
প্রথমেই এগিয়ে গেল গৌরি তাকে ছারিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত
, এরপরে অর্ধগোলক এর মত করে একপাক ঘুরেই তার সম্মুখিন হল , আর তার ধনুকে তীর যোজনা করে ফেলল সে , তার
কানের পাশ দিয়ে চলে গেল তীর , কিন্ত গৌরি এর নিশানা ভুল হল না , তার এক তীর এর
আঘাতেই সেই যোদ্ধার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিল সে ।
এটা ছিল তাদের সেনাপতি
মুড়া , তাকে হত্যার সাথে সাথে সামনের বাহিনী ও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল , প্রায়
অর্ধেক এর মত রথ কে ভেঙ্গে তারা পালিয়ে গেল পিছন এর দিকে , আর গৌরি এর বাহিনীর
মধ্যে বিশজন এর মত নিহত আর এর কিছু বেশী জখম হয়েছে ।
যুদ্ধ যখন শেষ হল তখন বিকেল নেমে গেছে , আর্য রা রাতে লড়ে
না , তবে টাউরন রা লড়ে , এই জন্য তারা অসুর নামে পরিচিত আর্য দের মাঝে ।
এই বিজয় অনেক বড় হত যদি ইন্দ্র , দ্রক্ষ না গত হতেন ।
এই মুহূর্তে তাদের এই প্রধান গোত্রে গৌরি এর দুইশ সৈনিক বাদে আর আছে মাত্র আগের
সেনা এর আড়াইশ , এ ছাড়া
তেমন কেউ নেই যে রক্ষা করতে পারবে তাদের কে , আর হাজার চারেক মানুষ এর জন্য
মাত্র সাড়ে চারশ অনেক ছোট সংখ্যা ।
তাদের কে সরে যেতে হবে ,
এই কারণেই , সে আর না থেমে , তদের সেনা কে নিয়ে রওনা দিল ,
তার পিতার দেহ কে গাছ গাছড়া দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে , সৎকার
করল সে সেটা , মুখাগ্নি দান করল পিতাকে , তখন বিলাপ করে কাঁদল সে । যেন আহত সিংহী গর্জন করে চলেছে তাকে দেখে মনে হল সেটা ।
দুই দিন টানা চলার পরে , আরেকটি সবুজ বনভূমি এর দেখা পেল ,
এ দিকে আগে আসত না তারা , একটা পাথর এর দেওয়াল আলাদা করে রাখত তাদের কে , কিন্ত
কোন কারণে ধসে গেছে সেটা এখন তার মাঝেই আছে এটা , এর আগের চাইতে হাজার গুণে এই
জায়গাটি সুন্দর , হরিণ , ময়ুর, বুনো গরু , আর ঘোড়া এর ডাকে চারিদিক মত্ত হয়ে আছে ,
এরই মাঝে বসত তৈরি করতে শুরু করল তারা , আর গৌরি নিজেকে ধৌত করতে গেল ঝরনা এর
ধারে , নিজেকে যখন পানিতে সঁপে দিয়েছে সে তখন
একটা জিনিস লক্ষ্য করল সে , এই সমস্ত পাথর এর মাঝে , কোন একটা সাদা কিছু
বার বার ঝক ঝক করছে , পাথর টা তুলে নিল সে
উঠে এসে পোশাক পরল,
“কি এটা “ , সেই পাথর টা নিয়ে উঠে এসেছিল সেটার দিকে চেয়ে বলল
তাদের কামার শালার প্রধান কামার এর কাছে দিল সে এটা , “এর
মাঝে কি আছে তা জানতে চাই “
দুই দিন পরে তাকে ডেকে পাঠাল সে , এই মুহূর্তে দলের কোন
নেতা নেই , ঋষি দের মাঝে আলোচনা চলছে কে নেতা হতে পারে , এর মাঝে বেশ কয়েকজন এর
নাম আছে , এমনকি প্রথম বার এর মত কোন নারী হিসেবে গৌরি এর নামও আছে এর মাঝে ।
“ইন্দ্রপুত্রী , এই পাথর এর মাঝে রাং নামের এক জাত এর ধাতু
আছে , এটা সুমেরে ব্যবহার করা হয় , এর সাথে যদি তামা মিশান তাহলে ব্রোঞ্জ নামের এক
জাতের অতি শক্তিশালী ধাতু এর জন্ম হয় “ এর
বলেই তো সুমেরীয় রা নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে ।
“এই ধাতু আরও আছে ? “
জি , আমরা এর খোঁজ আরও পেয়েছি ,
“তাহলে তাড়াতাড়ি তৈরি করেন , আর কাঠুরিয়া দের কে বলুন
আমাদের আরও কাঠ দরকার , রথ এর জন্য , খোলা ঘোড়ার পিঠে হয়ত এক আধ দিন যুদ্ধ করা যায়
কিন্ত সত্যিকার এর যুদ্ধের জন্য রথ দরকার “
“আমার পিতার হন্তারক ওই মোষবাহী দের কে রৌরব দর্শন করাবো
আমি “
নিজে হাত লাগালো সে কামার দের কাজে , আর কাঠ ফাড়াতে ,
যেখানে অন্য বয়স্ক পুরুষেরা হতোদ্যম হয়ে গেছে , সেখানে এই নারী আর তার অধীনের কিশোর-কিশোরীরা দেখিয়ে দিল যে তারা কাজ করতে পারে । তার জন্য আলাদা করে অস্ত্র তৈরি করল একটি , কামার প্রধান , সেটি নসোস বা ক্রিট দ্বীপ এর দেবতা পোসাইডন এর অস্ত্রের মত দেখতে অনেকটা , তিনটি ফলা , আর পিছন এর দিক বর্শা এর ন্যায় , সেটার নাম দিল সে ত্রিশুল । গৌরি অনেকক্ষণ চেয়ে ছিল সেই অস্ত্রের দিকে যখন সেটি তাকে দেওয়া হয় ।
সেদিন এর সেই সাড়ে চারশ থেকে আজকে অন্যান্য আর্য গোত্র থেকে
প্রায় আটশো এর মত যোদ্ধা এসে উপস্থিত
হয়েছে , কেউ কেউ যে এতে ঈর্ষান্বিত না তা
নয় , কিন্ত গৌরি এর যুদ্ধকৌশল এর কারণে তাকে দ্বন্দ্বে আহ্বান করার মত শক্তি তাদের
কারো নেই ।
কেননা ঈর্ষাকারীরা যোদ্ধা নয় , বা টাউরন গোত্রের শক্তি এর সহায়তা
চাইবে এই সাহস ও তাদের নেই ।
নির্দিষ্ট দিনে , গৌরি এর অধীনে , প্রায় বারশো যোদ্ধা চলল
তাদের সেই আগের ভুমির দিকে , সেটিকে আবারও পুনরুদ্ধার করতে হবে ।
তাদের সামনের রথে গৌরি , আর হয়দেব টানছে সেই রথ কে ,তার হাতে সেই ত্রিশূল ।
তারা আগে থেকেই জেনে গেছিল তাদের আগমন এর কথা , এই কারণে
তারাও তৈরি হয়ে ছিল ।
প্রচণ্ড ঝঞ্ঝার মত তারা ঝাপিয়ে পড়ল , তাদের উপরে কিন্ত আর্য
দের কাছে যে নতুন করে ব্রোঞ্জ এর হাতিয়ার চলে এসেছে এটা ছিল , টাউরন দের অজানা ,
তাদের উপরে আর্য দের মুহুর্মুহু আক্রমণে বিপর্যস্ত টাউরন রা লক্ষ্য করল , আজকে
ব্রোঞ্জ এর হাতিয়ারে তারা অনেক বেশী শক্তি শালী হয়ে গেছে , আর তাদের মাঝে সেই
শক্তির উৎস এক নারী , গৌরি তার ত্রিশূল এর আঘাতে যে তাদের প্রধান সেনাপতি কে আবারও সমাপ্ত করল ।
তারা পালাতে বাধ্য হল । এসে উপস্থিত হল তাদের রাজধানী তে , তারা আর্য দের তুলনায় নগর সভ্যতার দিক
থেকে অনেক সভ্য
তাদের রাজা শম্বর ,
যাকে সবাই চেনে মহিষাসুর হিসেবে , হঠাৎ গৌরি এর অমিত
বিক্রম আর রূপ লাবণ্য এর কথা শুনে মোহিত
হয়ে গেল যেন “এই কন্যা আমার মহিষী হবার উপযুক্ত “ ।
এই কন্যাকে তার চাই ।
সে প্রায় দুই হাজার এর বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হল সেইদিনই ।
এক সপ্তাহ কেটে গেল , পরিশ্রম আর অনুশীলনে
গৌরি এর বাহিনী , বেশ পরিশ্রান্ত , এক রাতে আগুন এর সামনে গোল হয়ে ছিল তারা ।
“এরপরে যদি কেউ ইন্দ্র হয় , তবে তা হবে আমাদের গৌরি , সে
হবে ইন্দ্রাণী আমাদের , সবাই বলে উঠল । “
“কিন্ত একটা ছেলে বাঁধ সাধল , ইন্দ্রাণী অর্থ তো ইন্দ্রের
স্ত্রী , গৌরি এর নিজের একটি উপাধি থাকা উচিত , আমাদের মাঝের অভেদ্য দুর্গের ন্যায়
সে , তার কারণেই আমরা বিজয়ী হচ্ছি, সেই জন্যই তার উপাধি সেরূপ হওয়া উচিত । । “
গৌরি কিছুই বলল না ।
এরই মাঝে দূত এসে সংবাদ দিল , মহিষাসুর এর বাহিনী আসছে
সামনে , তিনদিন এর মাঝে চলে আসবে গৌরি উঠে দাঁড়াল , তাহলে শম্বর নিজে আসছে !
আচ্ছা! তাহলে তার সাথেই তার গোত্র কে দাস বানানো হবে ।
সমগ্র গোত্র দের মাঝে সংবাদ দাও , শম্বর এর বাহিনী অনেক
বেশী হবে সংখ্যাতে , তার বাহিনী কে রোধ করতে আমাদেরও বাহিনী বড় হতে হবে , আর সমস্ত
ব্রোঞ্জ র হাতিয়ার গুলো জড় কর ।
শম্বর বিশালদেহী , একটি বিশাল যুদ্ধ-মহিষ এর পিঠে বসে আছে
সে , এই কারণেই তার নাম মহিষা, যাকে আর্য রা বলে মহিষাসুর । তার বাহিনী এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার এ ।
সেই আগেই বলে রেখেছে , গৌরি কে অক্ষত , জীবিত অবস্থাতে ধরতে
হবে ।
গৌরি সর্বমোট আড়াই হাজার সৈন্য কে জোগাড় করেছে , তবে এদের
মাঝে বারশ জন ছাড়া কারো কাছে ব্রোঞ্জ এর
হাতিয়ার নেই ।
ব্যুহ ,রচনা করা শেষ দুইদলের একদিকে আছে সাড়ে তিন হাজার আর
অপর দিকে দুই হাজার এর মত , মাঝখানে
আলোচনার জন্য ডাকা হল তাদের কে , শম্বর এর হাতে খড়গ আর গৌরি এর হাতে বিশাল ত্রিশূল ।
শম্বর এর মুখে তেলতেলে হাসি , তার বিশাল গোঁফ নেড়ে সে গৌরি
কে বলল “হে ত্রিভুবন সুন্দরী , তোমার হাতে অস্ত্র মানায় না , মানায় তোমার মাথাতে
রাণীর মুকুট , তুমি আমার মহিষী আর প্রধান সেনাপতি এর পথ অলংকৃত কর , তোমার মাঝে
আমি আমার রাজ্যের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি ,
তোমার সাথে আমার বিবাহে তোমার গোত্র ও
আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে আর পাবে চিরস্থায়ী শান্তিচুক্তি “
উঠে দাঁড়াল গৌরি
ত্রিশূল টা তার সামনেই মাটিতে পুতে দিয়ে বলল গাঢ় স্বরে “যে কোন নারী কোন পুরুষ কে পছন্দ করবে, যে বীর? নাকি
যে অত্যাচারী ? , আমার পিতাকে যদি ফেরত দিতে পার, তবে আমি
তোমার প্রস্তাব মেনে নিব , পারবে ফেরত দিতে ? আর তোমার গোত্রের ভবিষ্যৎ সেটা আমিই
বলে দিচ্ছি , আমাদের আর্য দের দাস হিসেবে কাটবে তোমাদের ভবিষ্যৎ! “
জ্বলে উঠল মহিষাসুর এর চোখ
, “তবে তোমাকে বল দ্বারাই আমি অধিকার করব “
‘ দেখা যাবে তা ‘।
গৌরি বলল
ব্যুহ রচনা শেষে প্রথমে তীরন্দাজ রা নিজেদের কৌশল এর পরিচয়
দিল , এর পরে দুইটি দল এর পদাতিক আর রথ বাহী রা নিজেদের কে রণ নৈপুন্য আর কৌশল
দেখাতে শুরু করল ।
চারদিকে শুধু , বর্শার ঝনঝনানি আর রথ এর চাকার শব্দ ।
এরই মাঝে শম্বর এর রথ দৃশ্যমান হল , সে গৌরি এর রথের চাকা
লক্ষ্য করে তীর ছুড়ল , অগ্নিবাণ ।
তার চাকাতে আগুন ধরে গেল , তবে গৌরি মুহূর্তে হয়দেব এর
বাঁধন কে মুক্ত করে , তার উপরে চড়ে বসল , হয়দেব কে মনে হচ্ছে , যেন ঘোড়া নয় , কোন
সিংহ সে, তার উপরে ত্রিশূল হাতে সে ।
আর এরই সাথে শঙ্খনাদ করল সে নিজের হাতের শঙ্খ নিয়ে ।
মুহূর্তে পাশের ঝোপ ঝাড় ভেঙ্গে আরও পাঁচশ ঘোড়ার খুর এর
ধ্বনি শোনা গেল , দুই পাশ থেকে খোলা ঘোড়ার পিঠে চড়ে প্রথমদিন এর মতই প্রায় চারশ
ঘোড় সওয়ার এসে উপস্থিত ।
এবার দুই দিক থেকেই তারা আক্রমণ চালাল , শম্বর এর বাহিনীর
দিকে , এই রকম কৌশল এর আগে কখনও দেখেনি তারা ,
পড়িমরি করে ছুটতে শুরু করল তারা , আর অপরদিকে জমে উঠেছে
গৌরি বনাম শম্বর এর লড়াই , গৌরি শম্বর এর প্রতিটি খড়গ এর আঘাত তার ত্রিশূল কেটে দিচ্ছে নিজের সুনিপুণ শক্তিতে , তবে এরই
মাঝে সে দেখতে পেল সূর্য পাটে বসার উপক্রম , “ এই দুর্বৃত্ত বেঁচে যাবে , তা হতে
পারে না “ নিজের হাতে একটি বাণ নিয়ে সে প্রার্থনা করল ,
“যদি আমি আমার পিতার সন্তান হয়ে থাকি , যদি ধর্ম মেনে থাকি
, তবে যেন এই বাণ ব্যর্থ না হয় “
বলেই সে চালালো সেই বাণ কে ।
একেবারে সরাসরি তার গলার কাছে গিয়ে ঢুকে গেল সেটা , আগেই তো
অর্ধেক ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছিল , এই অবস্থা দেখে বাকিরাও পালাতে শুরু করল , শম্বর তখনও ভূলুণ্ঠিত অবস্থাতে বেঁচে ছিল , “আমি বলেছিলাম না তোর ভাগ্য এই ত্রিশূল , এটা বলেই তার পিছনের বর্শা টা সে বিদ্ধ করল তার বুকে “ মহিষাসুর নিজে সমাপ্ত হল তার বাহিনীর সাথে সাথে ।
দিনের শেষে হাজার এর মত বন্দি হয়ে গেল আর্য দের হাতে ,
তাদের নতুন রাজধানী অমরাবতী এর দিকে নিয়ে চলল তারা তাদের কে ,
ঋষি সাম , সমগ্র ইন্দ্রদের নির্বাচন করেন , গৌরি এর অসাধারণ
বীরত্ব এর পরে আর কারো সন্দেহ থাকল না যে আগামী রাজা অথবা রাণী কে হতে চলেছে ।
গৌরি এর জন্য এক রাজ্যাভিষেক যজ্ঞ এর অনুষ্ঠান করলেন তারা ,
দুগ্ধস্নান করানো হল তাকে , এরপরে যখন সে সিংহাসন কে অলংকৃত করতে যাবে , তখন তার
নামে ইন্দ্রাণী গৌরিঢ় জয় হোক , ইন্দ্রাণী গৌরির জয় হোক এর স্লোগান দিতে শুরু করল সবাই , তবে সে থামিয়ে
দিল তাদের কে ,
“আমি কোন ইন্দ্রের স্ত্রী নই যে আমাকে ইন্দ্রাণী এর নামে
নামকরণ করাতে হবে , আমি গৌরি , আমি আমার নিজের বলে সিংহাসনে বসেছি , এই কারণে আমার
নিজের পদ এর নাম আমি নিজে রাখব “
“কি হবে তা মা “ বললেন তার পিতৃতুল্য ঋষি সাম ।
“আমাকে সবাই বলছিল আমি নাকি ছিলাম এক অভেদ দুর্গের ন্যায়
আপানাদের নিকট , তবে তাই হোক আমার নাম , আমার রাজপদ এর নাম , আজ থেকে আমার পদ এর
নাম দুর্গা! “
“আমি দুর্গা! “
মহিষাসুর মর্দিনী দুর্গা !
জয় হোক মা দুর্গার ! স্লোগান উঠল চারিদিকে আর তার মাঝেই সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রইল গৌরি ।
সেই সময়কাল থেকেই , দুইটি সিংহ এর মাঝে , এক নতুন দেবী
হিসেবে স্বীকৃতি পান দুর্গা , যাকে নসোস আর আনাতলিয়ার মাঝের গুহাচিত্রে দেখা গেছে । আর আর্য দের প্রতীক সিংহ হবার দরুন তার দুইপাশে থাকত দুই সিংহ, সেই অসভ্য মহিষ কুলকে
পরাস্ত করার ঘটনাকেই মহিষাসুর বধ এর কাহিনী হিসেবে জানতে থাকে সমগ্র বিশ্ব । পরে সেটিকেই পুরাণে লিপিবদ্ধ করা হয় আর
আমরা জানি সিংহবাহিনী মহিষাসুর মর্দিনী দুর্গা শক্তি দেবীর কথা ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
কবিতা
সে দায় আমার নেই
ফিরোজ আখতার
সে দায় আমার নেই-
সে দায় আমার নেই-
যখন তোমার গভীর নাভি'তে ঘন বর্ষা'র অভিমান ভিড় করে
আমার শিরদাঁড়া'য় পানকৌরি'রা অর্বাচিনের মতো ডানা নেড়ে ফিরে যায়
আমি মূক থেকে ভাসতে থাকি স্রোতের অনুকূলে ৷
সেখানে গতি'র সাথে লড়াই করা'র প্রশ্ন নেই
স্রোতের বিপরীতে ডানা ঝাপটানো'র প্রয়োজন নেই
সেখানে নতুনকে আহ্বান করা'র নিরাপত্তাহীন'তা নেই ৷
বরং, নতুন'কে লাঞ্ছনা করে কিছুটা মজা নেই চলো
দিগভ্রান্ত হয়ে সে যখন ঘন ঘন শ্বাস নেবে, তার দিকে
এগিয়ে দেব উচ্ছিষ্ট তাচ্ছিল্য ৷ অবলীলা'য় লীলাখেলা'য় ৷
যা বলছিলাম
...
সে দায় আমার নেই ।
সে দায় আমার নেই ।
মাঝে শুধু কাঁটাতার
রীনা মজুমদার
দিনের প্রথম আলো সীমান্তবিদীর্ণ
করে কাঁটাতারের এপার ওপার,
মায়াময় আলোর নেই যে তফাৎ
আকাশে নেই যে কাঁটাতার l
ওপারে, শিশির ভেজা পাতার আড়ালে
একটি শিউলি মেঘবালিকার হাতে
বলে যায় শরতের আগমন
মাঝে শুধু কাঁটাতার ..
এপারে, আমি বেলাশেষে স্মৃতি ভরা আঁখিতে l
ওপারে, শারদ প্রাতে একটি রেডিও ঘিরে
উঠোন ভরা লোকের ভিড়ে
আগমনীর সুর আকাশে বাতাসে
মাঝে শুধু কাঁটাতার..
এপারে, আমি বেলাশেষে জল ভরা আঁখিতে l
ওপারে, কাশে ঘেরা পুকুরে সদ্যফোঁটা
কচি হাতে মুঠো ভরা শতদলে,
মাঝে শুধু কাঁটাতার..
এপারে, বেলাশেষে ঝাঁপসা চোখে
জীর্ণ হাতে মুঠো ভরা স্মৃতির শতদলে
অষ্টমীর পুষ্পাজ্ঞলি l
জাগো দশভূজা...
উপড়ে ফেলি ! মুছে যাক কাঁটাতার
ভেঙে যাক সীমানার বেড়াজাল
তুলে আনি স্মৃতির মুঠোভরা ছেলেবেলা !
জাগো শক্তি , জাগো দুর্গা
আগুন মেয়ে
বহ্নিশিখা ঘোষ
আগুন রঙা মেয়ে,
সিঁথিপথে কপাল বেয়ে সূর্য্য চুঁইয়ে পড়ে
জন্মে জন্মে সূর্য্য শিখা ছুঁয়ে যায় তার মন।
সবুজ সবুজ ধানের শীষে লতিয়ে থাকে গা
আশ্বিনেরই উঠোনজুড়ে কাশফুল ঝরা ভাত
আগলে রাখে আগুন আগুন চোখে।
আগুনরঙা মেয়ে
বন্দী শরৎ মুক্ত খবর পেলে, হাতের মাঝে
জ্বালায় আগুনদীপ।দমকা হাওয়ায় আঁধার
নেমে এলে,এলোমেলো বাস্তুভিটের পথ !
হাজার হাজার মশাল আলো দ্যাখে
আলবেয়ে ওই আসছে আগুন মেয়ে,
সারা গায়ে কাদামাটির দাগ,
কাস্তেতে তার সূর্য্যরঙা ভোর
মাটির মেয়ে আগুনপাখি হয়ে
যুগে যুগে আগুনে দেয় ঝাঁপ।
আমাদের মা
দীপ্তিমান মোদক
শ্রাবণের রাত্রি ভোর হয়ে আসে।
নীল আকাশ
মেঘের হাসি
নরম সবুজ ঘাস
শিউলির চাদর জড়িয়ে রাখে।
প্রকৃতি এক সুরপ্রপাত সৃষ্টি করে।
ঘুমন্ত পথ জেগে ওঠে,
মা আসছে।
নানা রঙের বাহারে সাজাই
সাজি।
আমাদের চারপাশে উৎসব
চারপাশে ভালোবাসা।
আনন্দ আর শুধুই আনন্দ
আমাদের মায়ের হয় না বিসর্জন।
নীল আকাশ
মেঘের হাসি
নরম সবুজ ঘাস
শিউলির চাদর জড়িয়ে রাখে।
প্রকৃতি এক সুরপ্রপাত সৃষ্টি করে।
ঘুমন্ত পথ জেগে ওঠে,
মা আসছে।
নানা রঙের বাহারে সাজাই
সাজি।
আমাদের চারপাশে উৎসব
চারপাশে ভালোবাসা।
আনন্দ আর শুধুই আনন্দ
আমাদের মায়ের হয় না বিসর্জন।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
শারদীয়া গল্প
শাড়ি
মৌসুমী চৌধুরী
শাড়িটিতে একদিকে যেমন সে খুঁজে পেতো পরম নির্ভরতা, অন্যদিকে তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দীর্ঘস্হায়ী বন্ধুত্বের প্রতীক ছিলো শাড়িটি। শাড়িটি আর তার শরীরেররসায়নে তার ব্যক্তিত্বের পরতে পরতে ঠিকরে পড়তো উজ্জ্বল আলো। প্রাচীন বুনন পদ্ধতির বালুচরী। সুতোর টানা-
পোড়েনে ফুটে উঠেছিল ডিজাইনের গল্প,রঙের বর্ণময় বিন্যাস। শাড়িটি জুড়ে ফুটে উঠেছিলো মহাভারতের সভাপর্ব। দৌপদীর বস্ত্র-হরণ-দৃশ্য। সভাস্হ রথী মহারথীদের সামনে দৌপদীর চরম লাঞ্ছনার সময়ে তার আব্রু রক্ষা করছেন
তাঁর প্রিয় সখা শ্রীকৃষ্ণ। মুখে মৃদু হাসি দ্রৌপদী-সখা, দীনবন্ধুর.......
তাই শাড়িটি গায়ে জড়াতেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলো মল্লিকা। মল্লিকা দত্তগুপ্ত --- "রূপসী গারমেন্টস্ অ্যান্ড বুটিক"- এর কর্ণধার। গত বছর বিষ্ণুপুরে নিজস্ব তাঁতীর ঘর থেকে মাল আনতে গিয়ে চোখে লেগে গিয়েছিলো বাসন্তী রঙের ওপর পান্না সবুজ সূতো দিয়ে কাজ করা শাড়িটি। তাঁর নিজেরই ডিজাইন করা শাড়ি...আহা! কল্পনায় নিজেকে ওই শাড়িটি পরিহিত ভাবতে লেগেছিলো তখনই, সাথে গয়নার প্ল্যানও করে সেরেছিলো। সেদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ প্রাণ ভরে সেজেছিল সে। ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প দপ্তরের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নিমন্ত্রণ ছিলো । সেদিন ছিলো "রূপসী গারমেন্টস অ্যান্ড বুটিক"- এর দু'শো কর্মীর খুব আনন্দের দিন। ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দপ্তরের বার্ষিক প্রথম পুরস্কারটি জিতেছিলো তারা....
বাবা মারা যাবার পর শরীকী বিবাদে ব্যবসা ভাগ হয়ে গিয়েছিলো । ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম তখন। তাই কলেজ শেষ করার আগেই মা আর বোনের দায়িত্ব নিতে ইংরাজী সাহিত্যের ছাত্রী মল্লিকাকে ধরতে হয়েছিল ব্যবসার হাল। ছেলে নেই বলে মা চেয়েছিলেন ব্যবসার পাট চুকিয়ে দিতে। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছিলো মল্লিকা। তা-র-প-র অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজকের এই রূপসী গার্মেন্টস। ব্যবসায় এখনও পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার, সেখানে মেয়েদের তারা সহজে জায়গা ছেড়ে দেয় না। ফলে স্বভাবতই তৈরি হয়েছে বহু শত্রুও...
হল ভর্তি প্রায় দু'হাজার মান্যগন্য অতিথি-অভ্যাগতদের সামনে পুরস্কার নেবার সময় বুক ভরে উঠেছিল মল্লিকার। সজল চোখে খুব মনে পড়ছিল বাবার কথা। রাতে ডিনারের ব্যবস্হাও ছিলো, ফিরতে ফিরতে তাই রাত প্রায় এগারোটা হয়েছিলো। ড্রাইভার রঘুবীর শর্টকাট রাস্তা ধরার জন্য ঢুকেছিলো এক নির্জন গলিতে। চোখ বুজে সুরে সুরে বুঁদ হয়ে ছিলো মল্লিকা। মিউজিক সিস্টেমের হালকা আওয়াজে শুনছিলো পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর "কা ক্যরু সজনী আয়ে না বালম..."। এই একান্ত সময়গুলোতে এ তার প্রিয় যাপন। তন্দ্রা মতো এসে গিয়েছিলো । হঠাৎ সম্বিৎ ফিরতেই দেখে, গাড়ি এক নির্জন গলিতে থেমেছে। রক্তাক্ত রঘুবীর মাটিতে লুটোচ্ছে আর তার পঁয়ত্রিশ বছরের অনাঘ্রাতা শরীরটি কিছু কামুক পুরুষের বিষাক্ত কবলে। ছিঁড়ে খুঁড়ে দিচ্ছে তাকে ...আবছা আলোয় তাদের মুখ চিনতে পারে নি মল্লিকা। শুধু শুনতে পায়...." শালী, কার সাথে শুয়ে ফার্স্ট প্রাইজটি জিতে নিলি রে? এবার আমাদেরও একটু খুশি করে দে তো মামনী...." সংজ্ঞাহীন হবার আগে মল্লিকা দেখে, দূরে লুটোচ্ছে তার প্রিয় শাড়ি... দ্রৌপদী-সখার মুখে তখনও মৃদু হাসি। না না, বাস্তবের মাটিতে পা রাখেন না তিনি। আব্রু রক্ষায় আসেন না এগিয়ে...
তারপর তো লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা-মোমবাতি মিছিল-শোকসভা...
ওদিকে, শাড়ির কুচিতেই রয়ে গেলেন তিনি---- মল্লিকার আজীবনের কল্পনার পুরুষটি-----সখা-সাথী...
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
শারদীয়া রম্যরচনা
মহাষ্টমীর অঞ্জলি
সোমা বোস
-
রাজীব, তোদের এই দুগগাপুজোটা
না একদম পুরো মাখন...।
-
বলছিস?
-
বলছি মানে? শুনছিস না? এই ভেঙ্কটেশ সিনহা
বলছে আর তার ফেরেন্ড রাজীব রায় শুনছে না! তাজ্জব কি বাত!
-
আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনছি তো! কি মুশকিল! কিন্তু কী ব্যাপার
বলোতো গুরু? তুমি হঠাৎ এই দুগগাপুজোর ফ্যান হয়ে পড়লে?
-
আমি
তো প্রত্যেক দুগগাপুজোতে এই মহাষ্টমীর অঞ্জলির দিন মা দুগগার ফ্যান হয়ে যাই বস। তুমি তো আজ আমায় নতুন
দেখছো না!
তাছাড়া
এই দুগগাপুজো কি শুদ্ধু হিন্দুদের পুজো নাকি অ্যাঁ! এ হল আমার মতো ক্রিশ্চান বা অন্যদেরও… আরে ওই কি যেন বলে না... হ্যাঁ মনে পড়েছে, মনে পড়েছে… সাব্বজনীন... সাব্বজনীন পুজো, মানে সক্কলের পুজো। বুয়েচিস?
-
আরে নাহ্… কি বলছো গুরু!
-
ওরে
সাধে কি আর এমনি বলছি রে!
কতো জ্যান্ত
দুগগা যে এদিন চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে! চোখ সামলাতে পারি না মাইরি। তাই আমিও তাদের পেছনে
শুধু ফ্যান হয়ে ঘুরঘুর করবো,
হা হা হা...। ওই দ্যাখ, শালা আমাদের তৌফিক সাহেবও
এসে পড়েছে।
এসো বাবা
তৌফিক,
এসো এসো… এদিকে আমার কাছে এসো...।
-
জ্যান্ত
দুগগা!
ওহ্হো, বুঝেছি বুঝেছি...। খিক খিক খিক...। তৌফিক এসো এসো...।
-
এই
যে এসে গেছি…
এসে গেছি
রাজীবদা,
ভেঙ্কটেশদা। দাও তো রাজীবদা, তোমার হাতেরটা দাও তো, একটা সুখটান মারি। তো কী বলছিলে… কানে এলো যেন! কিসব জ্যান্ত দুগগা-টুগগা যেন…!
-
না
রে, সত্যিই বলছি একদম সত্যি। সুন্দর সুন্দর শাড়ী পরে
সব সরেস মালগুলো আজ জ্যান্ত দুগগা সেজে অঞ্জলি দিতে আসে! সে কি রূপের ছটা মাইরি! দেখে বুক আর চক্ষু… দুইই জ্বলে যায়। মাইরি বলছি, বিশ্বাস কর তোরা...।
-
এই
চুপ চুপ চুপ।
কেউ শুনে
ফেললে এক্কেবারে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে মাইরি।
-
তা
যা বলেছিস,
কিচ্ছুটি
বলবি না।
শুধু খাসা
মালগুলোকে আজ চেয়ে চেয়ে দেখবি আর চাটবি, বুল্লি?
-
মাঝেমাঝে
মাইরি কী মনে হয় জানিস?
মনে হয়
জ্যান্ত শিব হয়ে কোনো জ্যান্ত দুগগার কোমর ধরে এট্টু নাচি। খিক খিক খিক...।
-
এই
রাজীব,
এই… তা যা বলেছিস। হা হা হা...। দুগগাদের রূপ দেখে আর
কোমর দেখে সেরকমই ইচ্ছে করে মাইরি।
একেকটা
মাল দেখে নিজেকে ঠিক রাখাই দায়...। খিক খিক খিক...।
-
বেড়ে
বলেছিস ভেঙ্কটেশ…
“নিজেকে
ঠিক রাখাই দায়”...
অ্যাঁ… দারুণ বললি...। হা
হা হা…
চ’ গাঁজায় আরেট্টু দম দিয়ে
নিই।
এট্টু পরেই
সুন্দরীরা আসতে শুরু করবে।
কতো দুগগা
যে দেখবো আর চোখের সুখ করবো,
আহাহা...। জ-অ-অ-অ-য় দুগগা মাঈকিইইই…
-
জ-অ-অ-অ-য়...। বোলো দুগগা মাঈকিইইই…
-
জ-অ-অ-অ-য়...। দম মারো দম...।
-
ব্যোম
ভোলে...। জ-অ-অ-অ-য় শিবশম্ভু। জ-অ-অ-অ-য় ত্তারা...।
(মাইকে
ঘোষণা)
একটি বিশেষ
ঘোষণার প্রতি সকলে লক্ষ্য রাখবেন।
আর একটু
পরেই মানে সকাল ন’টা উনিশ মিনিটে আমাদের
পুজা প্যান্ডেলে মহাষ্টমীর প্রথম দফার অঞ্জলি অনুষ্ঠান শুরু হবে। যারা যারা মায়ের কাছে
অঞ্জলি নিবেদন করতে চান তারা অতি অবশ্যই ওই সময়ের মধ্যে আমাদের পুজা প্যান্ডেলে চলে
আসবেন।
-
হ্যালো পিয়ালী? এই কিরে? রেডি হয়েছিস? মাইকে বললো শুনেছিস
তো?
-
হ্যাঁ
হ্যাঁ শুনেছি।
আমি রেডি। অনুষ্কা, তুই শাড়ী পড়েছিস তো?
-
অবশ্যই। অষ্টমীর অঞ্জলিতে শাড়ী
পড়বো না!
বলিস কি? আগেই তো বলেছিলাম যে
পড়বো।
-
তুইও যে আমাদের পুজোয় আমাদের সাথে শাড়ী পরে অঞ্জলি
দিবি এতে খুব আনন্দ হচ্ছে রে!
-
কেন? দুর্গাপূজা কি শুধু তোদের
বাঙালীদের একার নাকি?
হুঃ…! আমাদের সবার… মানে আমার মতো মারওয়াড়ির
সাথে সাথে সারা ভারতের সবার।
বুঝলি? তাই শাড়ীও পড়বো আর অঞ্জলিও
দেবো।
-
হিহি, আমিও পড়েছি। কতো সময় লাগলো জানিস? তাও তো মা পড়িয়ে দিলো, তাইতেই যা পড়তে পারলাম। নইলে তো ঠিক করে কুচিই
দিতে পারছিলাম না…
হিহি...।
-
আরে
এতো হাসিস না তো!
ওদিকে সুস্মিতার
কী খবর,
খোঁজ নে। ও যদি রেডি হয়ে থাকে
তবে চল একসাথেই প্যান্ডেলে গিয়ে অঞ্জলি দিই। এখুনি শুরু হয়ে যাবে তো! নে, তাড়াতাড়ি কর।
-
ঠিক
আছে, সুস্মিতাকে ফোন করি দাঁড়া।
---------------------------------------------------------------------------------
-
(কিছুক্ষণ পরে মাইকে) সবাই ফুল-বেলপাতা পেয়েছেন
তো?
-
(সমস্বরে) হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ...
-
(ফিসফিসিয়ে) সুস্মিতা, শাড়ীতে তোকে আজ
যা লাগছে না! পিনাকীদার না আবার হার্টফেল হয়ে যায়!
-
ধ্যাত, যত্তসব আজেবাজে কথা!
-
আজেবাজে কথা? এদিকে তো তুই লজ্জায়
লাল হয়ে গেছিস, সে খেয়াল আছে?
-
তুই
চুপ করবি পিয়ালী?
তোকে আর
অনুষ্কাকেও ফাটাফাটি লাগছে কিন্তু।
তোদের দেখেও
কারা কারা হার্টফেল করবে নামগুলো বলি এবার?
-
এই
চুপ চুপ।
-
(মাইকে ঠাকুরমশাইয়ের গলা…) নিন, সবাই বলুন… নমঃ বিষ্ণুঃ নমঃ
বিষ্ণু নমঃ বিষ্ণু
এবার হাতজোড় করে বলুন - নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতো হপি বা | যঃ স্মরেত্ পুন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ||
এবার হাতজোড় করে বলুন - নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতো হপি বা | যঃ স্মরেত্ পুন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ||
নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যং বরেণ্যং
বরদং শুভম্
| নারায়ণং
নমস্কৃত্য সর্বকর্ম্মাণি কারয়েত্
||
এবার জোড়হাত করে বলুন - নমঃ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবী ত্বং বিষ্ণুণা ধৃতা | ত্বঞ্চ ধালয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্ ||
সম্মুখে পূজিতদেবতা শ্রী দুর্গায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ নারায়ণায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রীগুরবে নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ গণেশায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ দুর্গায়ৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শিবায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ সরস্বতৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ কার্ত্তিকায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃসর্বদেবদবীভ্যোনম
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রী গুরবে নমঃ।।।
এবার জোড়হাত করে বলুন - নমঃ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবী ত্বং বিষ্ণুণা ধৃতা | ত্বঞ্চ ধালয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্ ||
সম্মুখে পূজিতদেবতা শ্রী দুর্গায়ৈ নমঃ
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ নারায়ণায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রীগুরবে নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ গণেশায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ দুর্গায়ৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শিবায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ সরস্বতৈ নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ কার্ত্তিকায় নমঃ ,
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃসর্বদেবদবীভ্যোনম
এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রী গুরবে নমঃ।।।
এবারে নিজ নিজ গুরু মন্ত্র জপ করুন 10/28 বার।
এবারে জপসমর্পণ :- হাতে এক গন্ডুষ জল নিয়ে বলুন - নমঃ গুহ্যাতিগুহ্যগোপত্রী
ত্বং গৃহণাস্মত্ কৃতং জপম্
| সির্দ্ধিভবতু
মে দেবী তত্প্রসাদাত্ সুরেশ্বরী।
এবার গুরুপ্রনাম :- অখন্ডমন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্ | তত্পদং দর্শিতং
যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ||
এবারে অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি :-
(1) নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি | আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে ||
(2) নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি | গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
(3) নমঃ শরণাগতদীর্নাত পরিত্রাণপরায়ণে | সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
এবারে অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি :-
(1) নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি | আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে ||
(2) নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি | গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
(3) নমঃ শরণাগতদীর্নাত পরিত্রাণপরায়ণে | সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
এবারে প্রণাম মন্ত্র :- জয়ন্তী মঙ্গলা
কালী ভদ্রকালী কপালিনী | দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তু তে ||
-
এই অনুষ্কা, কেমন অঞ্জলি দিলি?
-
দারুণ!
-
মন্ত্র সব বুঝে বলতে পেরেছিলি?
-
হুঁ, বলেছি সবই, তবে সব বুঝিনি। মাঝেমাঝে বুঝেছি, যেমন প্রণামের জায়গাটুকু
বুঝেছি।
তোরা বুঝেছিস?
-
এই
যে আমার বউ দুগগা…
আমি তোমার
শিব।
চিনতে পারছো?
-
এবাবা! এ কে রে? এমা, আরে পথ আগলে দাঁড়াচ্ছেন
কেন?
কে
আপনি? আশ্চর্য তো!
-
ওই
যে বললাম তোমার শিব।
তোমার বন্ধুদের
জন্যেও শিব আছে তো।
ওই যে দ্যাখো
দ্যাখো।
-
হ্যাঁ
আমরা আছি।
একদম তিনে
তিন।
তিন দুগগা, আর তিন শিব। চলো সব্বাই মিলে সোওওওজা
কৈলাসে যাই চলো।
সেখানে
গিয়ে আমরা সুখে সংসার করবো কেমন?
-
আচ্ছা
চলো।
কিন্তু
তার আগে একটা শর্ত আছে কেমন?
-
কী বলছিস কি সুস্মিতা? তোর কি মাথা খারাপ
হয়ে গেলো নাকি? “চলো” মানে!?
-
দাঁড়া
না।
তুই সরে
দাঁড়া...
(ঠেলে অনুষ্কাকে
একটু তফাতে সরিয়ে)
আমায় কথা
বলতে দে...
এই যে শিবেরা, দুগগাদের নিয়ে যাওয়া
অতো সোজা নাকি?
আগে ষাঁড়ের
পিঠে চেপে আসুন।
বাঘছালের
পোষাক পড়ুন।
মাথায় জটা
কোথায় বাপু?
আর গলায়
সাপ? হাতে ত্রিশূলও নেই? তারপর আমাদের সামনে গলায়
একটু বিষ ঢেলে গলার রঙ নীল করে নীলকন্ঠ হয়ে দেখান। তারপর তো মানবো যে আপনারা
সত্যিই শিব!
কই, প্রমাণ করুন। নাহলে কিন্তু পুজোকমিটির
সব্বাইকে এখুনি ডেকে যা হালত করবো,
ভাবতেই
পারছেন না…!
-
এই
কি হয়েছে রে অনুষ্কা?
আমি তো
তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি যে সুস্মিতা এতো চ্যাঁচাচ্ছে কেন? এদিকে আয় তো। কিসব “শিব” “শিব” শুনছি? শিব নিয়ে ছেলেখেলা নয়
বোন।
উনি যেমন
অল্পে তুষ্ট হন,
সেরকম আবার
অল্পে রুষ্টও হন।
-
(ফিসফিসিয়ে) দ্যাখো না পিনাকীদা, এই তিনজন নিজেদেরকে “শিব” বলে দাবী করছে আবার বলছে
নাকি আমাদের তিন দুগগাকে সোজা কৈলাসে নিয়ে যাবে এখুনি। তাতে আবার সুস্মিতা “চলো” বলে নানা শর্ত চাপাচ্ছে।
-
(ফিকফিকিয়ে হেসে) বলিস কি রে? তবে তো এদের দেখতে হচ্ছে।
-
(ফিসফিসিয়ে) না, তুমি আগেই কিছু বোলো
না।
দ্যাখোই
না আগে সুস্মিতা আর কী বলে।
তারপর না
হয়...।
-
ওক্কে...।
-
কই, কী হল? আগে আপনারা প্রমাণ করুন
যে আপনারা শিব।
তাহলে তো
আপনাদের সাথে আমরা কৈলাসে যাব বললাম।
নইলে কিন্তু
মা রণচন্ডীর রূপ নেবো,
সামলাতে
পারবেন তো?
-
আব্বে
রাজীব,
আয় তো একে
একটু চমকাই।
তারপর দেখাচ্ছি
শিবের প্রমাণ।
-
ভেঙ্কটেশ, ঠিকই বলেছিস মাইরি। আমাদের তড়পাচ্ছে, শালীর সাহস তো কম নয়! এই তৌফিক চল, একে আগে সমঝাই আমরা কে। আহ্ আহ্ আঃ...।
(ধপাস)
আকস্মিক এই আওয়াজে বিস্মিত পিনাকী বিস্ফারিত নয়নে
বরাবরের লাজুক,
হাস্যোচ্ছল
সুস্মিতার এক অন্য রূপ প্রত্যক্ষ করে! এক রক্তাক্ত থানইঁট হাতে কোমরে আঁচল গোঁজা সুস্মিতার
চোখেমুখে মায় সারা শরীরে যেন এক রক্তবর্ণের লালচে আভা! চোখ অগ্নিবর্ণ! গলা দিয়ে হিসহিসিয়ে গরম
লাভা বেরোচ্ছে…
“আজ মহাষ্টমীর
সকালে এক অসুরকে তোমার পায়ে অঞ্জলি দিলাম মা, তুমি গ্রহণ করো”। পাশে রক্তাক্ত মাথা চেপে
ধরে মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে রাজীব রায়। তার দুই শাগরেদ তৌফিক আর ভেঙ্কটেশ
ময়দান ছেড়ে পগার পার।
ততক্ষণে
সুস্মিতাকে ঘিরে পুজা কমিটির সদস্যবৃন্দ মায় অঞ্জলি দিতে আসা সুধীজন। তাদের প্রত্যেকের চোখেমুখে
সুস্মিতার প্রতি এক অপরূপ মুগ্ধতার আবেশ লক্ষ্য করে পিনাকী! সে অবাক হয়ে ভাবে এই কি তার চিরচেনা
সেই লাজুক প্রিয়া সুস্মিতা?
প্রয়োজনে
সে এমন সাহসিনী হয়ে উঠতে পারে?
তার যে
ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে এখন!
তার সাথে
চোখাচোখি হতেই যেন সুস্মিতার সম্বিত ফিরলো। সঙ্গেসঙ্গে লাজুক চোখ নামিয়ে
তাড়াতাড়ি হাতের থানইঁট ফেলে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো সে। মুগ্ধ পিনাকী তার পাশে
গিয়ে দাঁড়ালো
“তোমার
অঞ্জলি মা গ্রহণ করেছেন বলেই শিরদাঁড়ায় ভর করে ওরা আর কেউ দাঁড়াতে পারেনি তোমার সামনে”।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
কবিতা
শারদীয়া উৎসব
সুব্রত নন্দী
শরতের আকাশেতে পেঁজাতুলোর মেঘমালা,
কাশফুলে ছেয়ে আছে ধরিত্রীর আঁচলতলা।
স্নিগ্ধ পরিবেশে আচ্ছন্ন সেরা উৎসবের ঝাঁজ,
মায়ের মর্ত্যে আগমনে আবার নতুনের সাজ।।
শারদীয়া উৎসব আপামর বাঙালির প্রাণ,
অনুভবে লুকিয়ে আছে আনন্দের ঘ্রাণ।
ঝলমলে রঙিন পোশাকের ছড়াছড়ি কতো,
মাতোয়ারা উৎসবে সবাই মিলছে যতো।।
উমার পিত্রালয় আগমনে সাজোসাজো রব,
আনন্দ উৎসবে মাতোয়ারা জাতিভেদে সব।
উৎসবে নেই কোনো হিঃসা-দ্বেষ খুনোখুনি,
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে একতাই মানি।।
পুজোর মন্ডপে জাকজমক মানুষের কোলাহল,
প্রতিমা দর্শনে চলেছে নানা জাতি ধর্মের দল।
রঙিন আলোর মোড়কে সুসজ্জিত মন্ডপ,
একটুখানি সহ্য করো প্রতিমা দর্শনের তান্ডব।।
জমকালো প্যান্ডেলে মনহরা আনন্দের পরিবেশ,
শারদীয়ার ছুটিতে কাটাই সুখের আবেশ।
কাজ নেই তাঁড়া নেই চিন্তাভাবনা সব বন্ধ,
বছরের এই চারটিদিন কাটে না যে মন্দ।।
এত আনন্দেও নিরানন্দ আছে বহু ঘরেঘরে,
অভুক্ত মানবী উমারা ক্ষুদায় গুমরে মরে।
উমার মর্ত্যে আগমনে ভরেনি হতভাগীর জঠর,
হা হুতাশ জেগে থাকে অভাগী উমার প্রান্তর।।
বছর ঘুরে বছর আসে নব উমার আগমন,
ফেরেনা অভাগীর কপাল,ফেরেনা মানিক ধন।
ভেবে দেখো প্রকৃত আনন্দ পাবে কোথায়?
মানবী উমাদের পাশে একটিবার কী থাকা যায়।।
শরৎ সাদা
দেবযানী সিনহা
তীক্ষ্ণ শরীরের মখমলি শুভ্রতা
হাওয়াদের আসাযাওয়ায় মাথা নেড়ে সায় দেয়
ও যে কাশবুড়ি
অসুরদলনীর আহ্বানে নদীতীরে করছে ঘোরাঘুরি।
হাওয়াদের আসাযাওয়ায় মাথা নেড়ে সায় দেয়
ও যে কাশবুড়ি
অসুরদলনীর আহ্বানে নদীতীরে করছে ঘোরাঘুরি।
দূরে ওই নীলে নীলে পক্ককেশ মেঘ মাঝি
অনবরত তার ছুটোছুটি ,
আর গুরুগম্ভীর গলায় বলছে ঘুড়িদের পারফরমেন্স আনাড়ি।
অনবরত তার ছুটোছুটি ,
আর গুরুগম্ভীর গলায় বলছে ঘুড়িদের পারফরমেন্স আনাড়ি।
মিশমিশে কালো অন্ধকারে
রাতেররানী আর শিউলি মেয়ে সাদা কমলা শাড়িতে
রাত আলো করে খিলখিল হাসিতে মাতোয়ারা মন
সুগন্ধ ও সৌন্দর্যে ভরপুর শরৎরাতের ক্যাটওয়াকে।
রাতেররানী আর শিউলি মেয়ে সাদা কমলা শাড়িতে
রাত আলো করে খিলখিল হাসিতে মাতোয়ারা মন
সুগন্ধ ও সৌন্দর্যে ভরপুর শরৎরাতের ক্যাটওয়াকে।
ধানের শীষের শিশিরকণা রোদ্দুরমাখা চকচকে টলমলে
আদ্যাশক্তি মহামায়ার আগমনে কোটিসূর্য উজ্জ্বল পদ্মফুলে
জগৎমাতা দেবীদূর্গা ত্রিশূলধারিনী কাত্যায়নী গৌরী ব্রক্ষ্মচারিনীতোমার ত্রিনয়নের বিদ্যুতে সব অশুভশক্তির বিনাশ করো হে অসুরদলনী।
আদ্যাশক্তি মহামায়ার আগমনে কোটিসূর্য উজ্জ্বল পদ্মফুলে
জগৎমাতা দেবীদূর্গা ত্রিশূলধারিনী কাত্যায়নী গৌরী ব্রক্ষ্মচারিনীতোমার ত্রিনয়নের বিদ্যুতে সব অশুভশক্তির বিনাশ করো হে অসুরদলনী।
বড় হওয়া
মহন্ত বিশ্বাস মোহন
প্রথম প্রথম প্রতি পুজোয় সে ফিরতো,
তারপর দুই তিন চার বা পাঁচ বছর পর
একবার
শেষে সে নয়, পরিবর্তে চিঠি আসতো ,
অন্য সব কিছুর চেয়ে, তার না আসার ফিরিস্তিতেই ভরা থাকতো সে চিঠি ।
একদিন চিঠি আসাও বন্ধ
এখন বুড়োবুড়ি অভ্যাসেই বাঁচি ।
তবু পুজো এলে, যখন চারদিকে
মানুষের ঢল দেখি, দেখি রোশনাই
দেখি হাসিমুখ
মনে হয় তক্ষুণি কাটা গাছটার মত
আছড়ে পড়ি মাটির বুকে,
এতটাই ভারী লাগে জীবন!
বড় মুখ করে বলেছিলাম -বড় হও-
পাঠিয়েছিলাম বিদেশ
ও যে এত্তো বড় হয়ে ভুলে যাবে সব
বিশ্বাস কর . . . ভাবিনি এক নিমেষ!
প্রবেশের পথ
অনিমেষ সরকার
শুনশান রাস্তার আলোর ওপারে
শারদীয়ার রঙ গাঢ়
ঝলসে ওঠা চাঁদের পাহাড়ে
নিঝুম অন্তরায়
এক হাত শাড়ি
টিকিটিকির ঝর্ণাশ্রমের হায়ায়
মা শরীর বিকোচ্ছে দুধের পাউচ হাতে৷
এ যে কেবল
শরৎ হাসছে
মা আসছে...
কথা
ফিরোজ হক
কথার পৃষ্ঠে কথা বাড়ে
আগুন,দাবানল,তীরের ফলা
কোনোটা বা কাঁটা ঘায়ের লবণ
মিষ্ট কথায় অসুখ বাড়ে
তেতো কথা সুস্বাস্থের লক্ষণ।
কথার পৃষ্ঠে কথা পড়ে
হারিয়ে যায় হ-য-ব-র-ল।
ভিন্ন দুই জগৎ
সায়ন তরফদার
ঢাকের ওপর পড়লে কাঠি
সাজতে দেখি শহরটাকে
দুটো জগৎ ভাগ হয়ে যায়
অনাহারে ও জাঁকজমকে।
মা, তুমি তো সার্বজনীন
তবে কেন এই অনাহার?
কেন এত ভাগাভাগি
চোখ মেলে তাকাও শুধু----এটুকুই আবদার।
লক্ষীর অভাব চারিদিকে
গণেশের হচ্ছে না সিদ্ধিলাভ
আসল দুর্গা অনাহারেই মরে
একেই বলে বাস্তববাদ।
আমি যদি হতাম
সুনন্দ মন্ডল
আমি যদি হতাম কুয়াশা ভেজা শরৎ
আকাশের মাঠে পেঁজা তুলো ছড়াতাম।
যদি কাশফুল হতে পারতাম একটিবার
দিগন্তে মাথা নেড়ে নেড়ে প্রতিবাদ জানাতাম।
কালিমার পারদ বাড়ছে কেবলই শূন্য বাষ্পে
এ শরত ভরে গেছে সব অহমিকাতে।
মিথ্যের প্রতিশ্রুতি ভেঙে একবুক কামনা যদি হতাম
সত্যের চাকায় ক্ষুর লাগাতাম ঘোড়া ছোটাতে।
বিশল্যকরণী হয়ে মা দুর্গার কান্না মোছাতাম
মাটির পৃথিবীতে জ্যান্ত দুর্গার লাঞ্ছনা সয়ে।
রাতদিন বিবর্ণ চাদরে স্বপ্ন গেঁথে কাকভোরে
শিল্পী হতাম যদি চোখদানে অঙ্গীকার থাকত ছুঁয়ে।
মা আসছেন
সোমা দত্ত
সোমা দত্ত
মা আসছেন তাই বলছি তাকে
শিউলি ফুলের মালা
কাশ ফুলের দোলা
আসছেন মা পাল্কি চড়ে
হুন হুনা রে হুন হুনা।
নীল আকাশে মেঘের ভেলা
শালিক গুলো করছে খেলা
উঠোন কোনে জমা জলে
দিচ্ছে ডুব ঝাড়ছে ডানা।
বাজার গরম তাঁত, হ্যাডলুম
ঢাকাই জামদানি, সিল্ক খানদানী
বাসন মাজে মালতি মাসি
মনজানালায় তার ও খুশি
আসবে নতুন ডুরে শাড়ি
বলা আছে বাবুর বাড়ি।
খাটবে সে কোমর বেঁধে
ঘর সাফাই পুজোর আগে।
বাড়তি কামায় করতে হবে
এই শীতে ছানি কাটাবে।
ঢাকির ছেলে ছোট্ট রাজু
ছুটছে মাঠে সঙ্গে সাজু
মায়ের কাছে বায়না আজ
ফুল প্যান্ট চাই এইবার।
সবাই কেমন সেজেগুজে
ঠাকুর দেখে প্যান্ডেলেতে
তুমি কেন মা মনটি মেরে
চুপ করে রয় ঘরের কোনে?
বাবা গেছে শহর দেশে
ঝলমলে তাতে দূর্গা আছে!
সোনার চোখ সোনার কাঁকন
গায়ে বেনারসি রক্তবরণ
সেই চোখে মা দেখ একবার
আমার মার নেই আভূষণ।
মন্ডা মিঠাই থরে থরে
ভোগ হয় তোমার দরবারে
রাস্তার মেয়ে কাগজ কুড়োনি
খালি পেটে ঘুমোয়, হোক না
সপ্তমী,অষ্টমী নবমী।
সোনার চোখের কি দাম আছে?
থাকো কি মা তন্নঘোরে!
অনাচার
শৌভিক কার্য্যী
মা আসবে বলে চতুর্দিকে
যখন তার ফেরার আগমন ।
ছেলের ঘরে ঠাঁই হয়নি বলে
মা ফুটপাতেই শুয়ে আমরণ ।
কোথাও মা বিগ বাজেটে
সোনার সাজে বঙ্গ নারী ।
আধপেটা রাস্তার ধারে কোথাও
রক্তে ভাসে মায়ের শাড়ি ।
যে মূর্তিতে মাটির প্রলেপ
ফিরিয়ে আনে মায়ের প্রাণ ।
সেই মাটিতেই হাজার রকম
মা মুখ বুঝে সইছে অপমান ।
বিসর্জনে ঢাকের তালে সবাই
যখন আনন্দেতে মাতোয়ারা ।
বৃদ্ধাশ্রমে এককোনেতে আঁচল
ভিজিয়ে চোখের জল লুকান তারা ।
"ভালো থাকা"
শ্যামল কুমার রায়
"রোজ রোজ ভালো থাক,
সুখের পরশ মেখে থাক,
শান্তি সুধা বর্ষিত হোক অবিরাম ,
তোর সুখেতে সুখী হোক তোর প্রিয়তমা,
হাসি, খুশিতে মেতে উঠুক তোর আঙিনা । "
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
..স্মৃতির পুজো , পুজোর স্মৃতি..
দূর্গাপূজা ...সেকাল একাল
বিপ্লব তালুকদার
বিপ্লব তালুকদার
রাতে ফোঁটা শিউলির সকালে ঝরে পড়া, বাতাসে তাঁর মিষ্টি গন্ধ। দুরের জমিতে কাশফুলের বন। নীলাকাশ সঙ্গে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা মনে করিয়ে দিচ্ছে এটা শরৎকাল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে এটা আমাদের প্রিয় উৎসব দুর্গোৎসবের সময়। মা আসছেন এই পৃথিবীতে আনন্দ নিয়ে। গরীব ধনী সবার কাছে এক অপার আনন্দ নিয়ে।
উৎসব ছিলো সেকালে। আমরা যখন ছোট, তখন দেখেছি একরকম দূর্গাপূজা আর এখন দেখি অন্য রকম। তখন পুজায় ছিলো আন্তরিকতার ছোঁয়া। জাঁকজমক হীন মন্ডপে মা আসতেন। প্রতিমা হতো একচালার। সাথে ছিলো অপূর্ব ডাকের সাজ। কি অপরূপ দেখতে। পুজো আসছে এই আনন্দে কাটতো শেষ পনেরো দিন। মহালয়ার রাতে সবাই মিলে পিকনিক খাওয়া, তারপর মহালয়া শুনে ভোরবেলা দলবেঁধে হাঁটতে যাওয়া সে এক আনন্দ ছিলো। স্কুল ছুটি হতো পঞ্চমির দিন। ছুটির পর চলে যেতাম পাল মশাইর কারখানায়। ঠাকুর দেখতে। বলা যেতে পারে শেষ টান দেখতে। তারপর ষষ্ঠীর দিন মাকে আনা এবং পুজো শুরু। তারপর চারদিন শুধু আনন্দ। অষ্টমী সকালে স্নান করে নতুন পোশাক পরে সবার সাথে যেতাম মন্ডপে। ওখানে অঞ্জলি দিয়ে শুরু হতো গল্প। সেখানে তখন আনন্দের হাট। আমরা যারা ছোটো তাঁদের আলোচ্য ছিলো কটা বন্দুক কেনা হলো। ক্যাপ গুলো ফিতাওলা না গুটি। আজ কটা ঠাকুর দেখবো, কোথায় যাবো। বড়দের ছিলো এবার পুজোয় কি সিনেমা এলো, কেমন তার কাহিনী। তারপর এবার পুজায় কার গান সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে কিংবা কে কোন পুজা সংখ্যা বই কিনেছে। সেগুলোর লেখকরা কেমন লিখেছে ইত্যাদি। এখন তো মন্ডপে গিয়ে আড্ডা কোথায়, খালি মোবাইলে মাথা গুঁজে থাকা। এরপর ছিলো ভোগের খিচুড়ি খাওয়া। আজকাল এসব ভাবাই যায় না। তবে একেবারেই হয় না সেটা বলাও ভুল। বিকেল হতেই গ্রামের মানুষ, চা বাগানের লোকজন চলে আসতো ঠাকুর দেখতে। আমরা বেড়োতাম রাতে। তখন তো আর এখনকার মতো লাইটিং, থিম পুজো বা বিরাটাকার প্যান্ডেল হতোনা। পুজো হতো কালিবাড়ি এবং কিছু ক্লাবে। বাঁশের খুটিতে টিউবলাইট রঙিন কাগজে মোড়া। আর মাইকে বাজতো মনমাতানো বাংলা গান। কোথা দিয়ে চলে যেতো চারদিন টেরই পেতাম না। এরপর আসতো দশমী। বিজয়া। বড়দের প্রনাম। দুরের আত্মীয়দের চিঠি লেখা। বিজয়াতে ছিলো নাড়ু মোয়া মুড়কি খাওয়া। এখন এসব প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। এখন প্রনাম বা শুভেচ্ছা জানানো সবই চলে মোবাইল ফোনে। সবই হয় কিন্তু কেমন যেন কৃত্রিমতায় মোড়া।
এখন পুজো হয়, উৎসব হয় কিন্তু আন্তরিকতা কম। তবুও মা আসেন। আমরা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে এ কটা আনন্দে মেতে উঠি।
উৎসব ছিলো সেকালে। আমরা যখন ছোট, তখন দেখেছি একরকম দূর্গাপূজা আর এখন দেখি অন্য রকম। তখন পুজায় ছিলো আন্তরিকতার ছোঁয়া। জাঁকজমক হীন মন্ডপে মা আসতেন। প্রতিমা হতো একচালার। সাথে ছিলো অপূর্ব ডাকের সাজ। কি অপরূপ দেখতে। পুজো আসছে এই আনন্দে কাটতো শেষ পনেরো দিন। মহালয়ার রাতে সবাই মিলে পিকনিক খাওয়া, তারপর মহালয়া শুনে ভোরবেলা দলবেঁধে হাঁটতে যাওয়া সে এক আনন্দ ছিলো। স্কুল ছুটি হতো পঞ্চমির দিন। ছুটির পর চলে যেতাম পাল মশাইর কারখানায়। ঠাকুর দেখতে। বলা যেতে পারে শেষ টান দেখতে। তারপর ষষ্ঠীর দিন মাকে আনা এবং পুজো শুরু। তারপর চারদিন শুধু আনন্দ। অষ্টমী সকালে স্নান করে নতুন পোশাক পরে সবার সাথে যেতাম মন্ডপে। ওখানে অঞ্জলি দিয়ে শুরু হতো গল্প। সেখানে তখন আনন্দের হাট। আমরা যারা ছোটো তাঁদের আলোচ্য ছিলো কটা বন্দুক কেনা হলো। ক্যাপ গুলো ফিতাওলা না গুটি। আজ কটা ঠাকুর দেখবো, কোথায় যাবো। বড়দের ছিলো এবার পুজোয় কি সিনেমা এলো, কেমন তার কাহিনী। তারপর এবার পুজায় কার গান সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে কিংবা কে কোন পুজা সংখ্যা বই কিনেছে। সেগুলোর লেখকরা কেমন লিখেছে ইত্যাদি। এখন তো মন্ডপে গিয়ে আড্ডা কোথায়, খালি মোবাইলে মাথা গুঁজে থাকা। এরপর ছিলো ভোগের খিচুড়ি খাওয়া। আজকাল এসব ভাবাই যায় না। তবে একেবারেই হয় না সেটা বলাও ভুল। বিকেল হতেই গ্রামের মানুষ, চা বাগানের লোকজন চলে আসতো ঠাকুর দেখতে। আমরা বেড়োতাম রাতে। তখন তো আর এখনকার মতো লাইটিং, থিম পুজো বা বিরাটাকার প্যান্ডেল হতোনা। পুজো হতো কালিবাড়ি এবং কিছু ক্লাবে। বাঁশের খুটিতে টিউবলাইট রঙিন কাগজে মোড়া। আর মাইকে বাজতো মনমাতানো বাংলা গান। কোথা দিয়ে চলে যেতো চারদিন টেরই পেতাম না। এরপর আসতো দশমী। বিজয়া। বড়দের প্রনাম। দুরের আত্মীয়দের চিঠি লেখা। বিজয়াতে ছিলো নাড়ু মোয়া মুড়কি খাওয়া। এখন এসব প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। এখন প্রনাম বা শুভেচ্ছা জানানো সবই চলে মোবাইল ফোনে। সবই হয় কিন্তু কেমন যেন কৃত্রিমতায় মোড়া।
এখন পুজো হয়, উৎসব হয় কিন্তু আন্তরিকতা কম। তবুও মা আসেন। আমরা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে এ কটা আনন্দে মেতে উঠি।
উৎসবের একাল-সেকাল
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী
বর্ষাশেষে শরতের আবির্ভাবে নীলাকাশে দলছুট মেঘেদের বিরামহীন আনাগোনা আর বাতাসে শিউলির গন্ধ জানান দেয় পূজা এসে গেল ।পূজার কথা আসলেই ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে ,"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম "----কথায় আছে বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ ।ভাদ্রের শেষদিনে বিশ্বকর্মার আরাধনা দিয়ে শুরু হয় উৎসবের সূচনা ।ছোটোবেলায় এই পূজোর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল ঘুড়ি ওড়ানো পর্ব ।আমার জন্মস্থান কলকাতার বাড়িতে জ্যাঠতুতো দাদা আর ওদের বন্ধুরা ঐ দিন ছাদে উঠে ঘুড়ির লড়াই চালাতো,লড়াই -ই বটে ।ক'দিন আগে থেকে শুরু হয় তোড়জোড় ।টিউবলাইট বা কাঁচের টুকরো শিলপাটায় বা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করে ছেঁকে এরারুটের সাথে জাল দিয়ে তৈরি হত ঘুড়ির সুতোর মাঞ্জা ।আমরা বড়জোড় লাটাই ধরা বা কখনো সখনো ঘুড়িটা আকাশে উড়িয়ে দেবার সুযোগ পেতাম,তাতেই কত আনন্দ ।একটা ঘুড়ির সুতো অন্য ঘুড়ির সুতো কেটে দিতে পারলেই হত ভোকাট্টা ।কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরা সে আর এক লড়াই ।নানান নামের ঘুড়ি উড়তো আকাশে ।যেমন-মোমবাত্তি ,পেটকাট্টি,চাঁদনি,মুখপোড়া, বলমার্কা,বগ্গা আরও কত কি ।বিবাহসূত্রে কোচবিহারে থাকায়ঘুড়ির সেই রমরমা ব্যাপারটা খুব মিস করি ।আকাশটা রঙিন ঘুড়ির অভাবে বড্ড বেরঙিন লাগে ।
বিশ্বকর্মা পূজার কিছুদিন বাদেই আসে মহালয়ার শুভক্ষণ ।মহালয়ার আগের রাতে পাড়ায় পাড়ায় পিকনিকের চল ছিল যা কিছু ক্ষেত্রে এখনও আছে ।পাশাপাশি বাড়ির কয়েকজন বন্ধু (ছোটো -বড়ো )রা মিলে বাজার করে হাতে হাত মিলিয়ে রান্না করতাম ।কখনো খিচুড়ি-ডিমভাজা,কখনো ডিমের কারি,চিকেনের ঝোল ভাত ।প্রায় মাঝরাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুরু হত গান-বাজনার আসর ।বাজনা বলতে থালা,বাটি হাতা,গ্লাস,চামচ এসবই ।তারপর ভোর ৪টে তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার পাঠ ।এখনও রেডিও তে মহালয়া শোনার অভ্যাসটা পয়ে গেছে ।একটু বড়ো হবার পর পিকনিক না করলেও বাবা নিয়ম করে প্রতিবছর ভোরবেলায় রেডিও চালিয়ে ডেকে দিতেন ।আমরা বোনেরা আধা ঘুমে আধা জাগরণে শুনতাম চন্ডীপাঠ ।বাবা,জ্যাঠামশাই আর দাদু মিলে মোট তিনটে নতুন পোষাক হত । পূজোর জামাগুলো রোজ একবার করে দেখতাম ।কখনো নতুন জামা- জুতো পড়ে আয়নার সামনে ট্রায়াল দিতাম ।
দ্বিতীয় পর্ব
পূজোর দিনগুলো পায়ে হেঁটে বন্ধুদের সাথে প্যান্ডেল ঘুরে ঠাকুর দেখার মজাই আলাদা ছিল ।যদিও নতুন জুতো পড়ে পায়ে ফোঁসকা পড়তো তবুও ।বাবা- মায়ের সাথে একদিন বেরিয়ে দুরের কিছু ঠাকুর দেখতাম ।রাত জেগে ঠাকুর দেখার অনুমতি বাবা দিতেন না ।সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা,পাড়ার বৌ-মেয়েদের শাঁখ বাজানোর খেলা ছিল পূজোর আনন্দের বাড়তি পাওনা ।এভাবেই হাসি - মজায় পূজোর চারটে দিন কিভাবে কেটে যেত।ষষ্ঠীর বোধন থেকে অষ্টমীর অঞ্জলি,ভোগ খাওয়া অবশেষে দুর্গা মায়ের সপরিবারে বিদায়ের দিন আসন্ন ।মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে যেত ।আমার বাবা বেশ কড়া ধাঁচের মানুষ ছিলেন ।তাই বিসর্জনের সময় পাড়ার সবাই যখন মাকে ভাসান দিতে যাবে আমাদের বোনেদের যাওয়ার অনুমতি ছিল না । আমার জেঠিমা,পাড়াতুতো কাকিমা-জেঠিমাদের অনুরোধে মাত্র দু'বার গিয়েছিলাম মায়ের সাথে দুগ্গামায়ের বিসর্জনে ।সার্বজনীন দুর্গাপূজায় খুব একটা জাঁকজমক না হলেও নিয়ম-নিষ্ঠার সাথে মায়ের বন্দনা করা হত ।
তবে বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়ির একেবারে কাছেই দুর্গোৎসব পালিত হওয়ায় খুবই মজায় কাটে পূজোর দিনগুলো ।সেসময় অত ধুমধাম করে পূজা না হলেও নিষ্ঠার অভাব ছিল না ।তবে গত কয়েকবছর ধরে আমাদের পাড়ার পূজো বেশ জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয় ।বাইরে থেকে শিল্পী এনে প্যান্ডেল ও প্রতিমা নির্মান করা হয় ।চন্দননগরের আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে পূজামন্ডপ ও পার্শবর্তী এলাকা ।সারাবছর পাড়ার কারো সাথে সেভাবে দেখা-সাক্ষাত না হলেও পূজোর কটা'দিন হৈ-হৈ করে কেটে যায় সবাই মিলে প্যান্ডেল চত্তরে । পাড়ার বৌ-মেয়ে-বাচ্চারা মিলে একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।নাচ,গান,কবিতা পাঠ,নাটক এসবই অনুষ্ঠিত হয় ।
অষ্টমীর দিন ভোগ-প্রসাদ বিতরণ এবং পূজার শেষে পাড়ার সবাই মিলে মহাভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার আনন্দ ।অবশেষে বিসর্জনের বাজনা বেজে ওঠে ।মাকে বিদায় জানাতে পাড়ার কচি-কাঁচাদের সাথে আমরা বড়োরাও পা মেলাই । এরপর পূর্ণিমা তিথিতে করা হয় কোজাগরি লক্ষীপূজা ।প্রায় সব বাড়িতেই এদিন দেবী লক্ষীর আরাধনা করা হয়,পরিবারের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির কারণে ।লক্ষী পূর্ণিমার পরের অমাবস্যায় হয় মাকালীর আরাধনা । দুর্গাপূজা বাঙালীর প্রধান উৎসব হলেও হিন্দুদের দ্বিতীয় বৃহত্তম পূজা হল কালীপূজা যা শ্যামাপূজা বা দীপাবলি নামেও পরিচিত । কার্তিক মাসে এই পূজা করা হয় ।
তৃত্বীয় পর্ব
ছোটোবেলায় কালীপূজো মানেই হল বাজি পোড়ানো বা ফাটানোর উৎসব ।পূজোর আগের দিন ভূত-চতুর্দশীর সন্ধ্যাবেলায় পূর্বপুরুষের নামে চোদ্দোবাতি জ্বালাতেন মা ।পূজোর সন্ধ্যায় মায়ের সাথে মিলে আমরা তিন বোন বাড়ির ছাদে বারান্দায় মোমবাতি,প্রদীপ জ্বালাতাম ।পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী মা সদর দরজায় কাঠের জলচৌকির ওপর পাঁচজোড়া প্রদীপ জ্বালতেন ,এখনও জ্বালান ।বাবা আর জ্যাঠামশাই বাড়িতে প্রচুর বাজি কিনে আনতেন ।বাড়ির বড়ো থেকে বাচ্চা এমনকি প্রতিবেশীদের সাথে ভাগ করে সেই বাজি পোড়ানো হত ।ছোটোবেলায় ফুলঝুরি,রংমশাল,সাপবাজি ,রঙিন দেশলাই,দড়িবাজি,তারাবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বড়ো হতেই চকোলেট বোম,দোদোমা,কালিপটকা,রকেট এই বাজিগুলো হাতে পেতাম ।
এ বাড়িতে প্রথম দিকে বাজি পোড়ানো মানে ঐ দড়িবাজি,তারাবাজি,চকোলেট বোম ।আমার মেয়েরা বড়ো হওয়ার সাথে-সাথে বাজির প্রাচুর্য বেড়েছে ।কালীপূজার আগের সন্ধ্যায় চোদ্দোবাতি জ্বালানো হয় ।প্রদীপ আর মোমবাতির সাথে টুনি লাইট দিয়ে বাড়ি সাজানো হয় ।চারদিকে আলোর রোশনাই,আতসবাজির বিচ্ছুরণে আকাশের ক্যানভাস ছেয়ে যায় । শেষ হইয়া ও হইলো না শেষ ।এভাবেই পূজো আসে যায় আবারও আসে ।শুধু প্রতীক্ষা আগামীর শারদোৎসবের ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
কবিতা
প্রবাহিনী
সনাতন মাজী ( ময়না )
আসি বলে হাত নাড়া খরস্রোতা নদী সরস্বতী প্রবাহিনী ,
যদুনাথ হাটি মহাশ্মশানে
মজে গেছে এসে !
কোন্ অভিশাপে সৌভাগ্য হলনা প্রসব ,
স্বমহিমায় উজ্জ্বল নদীরূপা কুলবধূর হলনা পুনরাগমন ,
অচ্ছুৎ অপমানিত নালার মতন পড়ে আছে পাশে !
যত্রতত্র ছড়ানো ছিদ্রানো নালীঘাস পা ধোয় ,
পেঁচিমাতাল , রাখালেরা পঁদ ছোঁচাতে দেখি ,
কলকারখানার নগরীর নোংরা , ময়লা , মড়া ভাসে জলে ।
সাঁকরাইলে তাকে দূর্গন্ধ নর্দমা নরক ভেবে --
নানা প্রজাতির পশুপাখিরাও
মলমূত্র ত্যাগ করে আনন্দে উড়ে যায় !
পবিত্র নদীর জলে আবর্জনা ময়লা দূষণ দেখে
সবার উপরে যিনি
নিদারুণ দু:খ পান ভগবান !
স্বচ্ছতা দেখিনা আর ,
সেখানেই বীরুবাবু সিরিয়াস , আন্দোলনে--
ঝাঁকে ঝাঁকে কবিদের ডাকে ।
এত আলো অন্ধকারে পচে যাচ্ছে নদী সভ্যতা ,
বলো কবি , কি এর যথার্থ বিধান ?
শাসকের ভয়ে কারো সরেনা উত্তর
মরানদীর সোতা তাই হাফু-কাঁদে --
সুপ্রাচীন বেহুলার ভেলাও অদৃশ্য উধাও এখানে !
ঝাঁকবাঁধা কবি দেখে--
অসহায় জীবন নদীর ঘূর্ণিপাকে
কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সরস্বতী নদী প্রবাহিনী !
ভোরের আজান , ঘন্টা ধ্বনির শব্দে --
আমিও অকাট্য স্বপ্ন দেখি ,
সত্যিকার নদীমৃত্যু প্রতিবাদ অসংখ্য পায়ে পায়ে দাঁড়ায় ,
কবিতার জীবন্ত ছায়া পড়ে জলে !
এসেছে শরৎ
শৈলেন রায়
গাহি শরতের গান ------
যে ঋতুতে আজ গ্ৰীষ্ম শরতের রইল না ব্যবধান,
সেথায় মিলিত গ্ৰীষ্ম বর্ষার যৌথ আক্রমণ।
গাহি শরতের গান!
কে তুমি?--- শিউলি? কাশফুল?তোমারা ফুটতে পারো!
কুয়াশা চাদর? শিশির কণা তোমরা দূরে সরো।
হীমেল হাওয়া যাও,
ঘেমে নেয়ে ওঠো এই তাপপ্রবাহে ঘরের মাঝে রও,
দেখবে দূর্বাঘাসের ডগায় শিশির !এতটা সখ---
উষ্ণায়নের প্রভাব এটা, এটা নয় বক বক---
কিন্তু বৃথাই আমার শ্রম সবটাই যে ভুল?
কেন তোমাদের এত রেষারেষি?ভুলের পরে ভুল!
তোমরা জেনে বুঝে সব অন্যায় কর তোমরা বুদ্ধিমান,
বৃক্ষ নিধনে ভারসাম্য নষ্ট,তাই সকলের যাবে প্রাণ।
তোমরা নেতারা হয়েছে আজ ক্ষমতার আঁধার
সাধারণর বাঁচার তাই নেই কোনো অধিকার।
কেন বৃথা খোঁজ,সবটা কি জানে না সকলে?
তোমরা হাসছ আরও বিত্তবান হবে বলে।
লাগে সাড়ে তিনটা ফুট
আসলে তোমরা মানুষ হও নি যত পড় স্যুট বুট।
তোমাদের তরে ধ্বংস হল বনের পরে বন,
শরৎ কালে আগুন ঝরে নরম হল না রবি কিরণ
সমতা নেই মৈত্রী নেই,এই জন্যই ভয়
মানুষের তাই এত দুর্দশা,এত প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
বাল্যে আমরা দেখেছি ছয় ঋতুর নৃত্য হেথা
কাঠের অভাবে ইলেকট্রিক চুল্লি জ্বলে না এখন চিতা।
বড় ভুল তো হয়েই আছে আমরা সকলে জানি
তাই আজ শুধু সময়ের অপেক্ষা ধ্বংসের ডাক গুনি।
তাই অন্তরে আগমনী গান শরতের আহ্বান !
এই শারদীয়ায় কত কাব্য রচনা নুতন নুতন গান!
সব ঠিকই আছে ভাই
এই সার্বজনীন উৎসবে মাতো কোনো চিন্তা নাই
মহারাণী
সঞ্জিত মণ্ডল
রাণী সে যে মহারাণী লিখেছিতো আমি
পঞ্চমীতেই রাণী বেশে দেখা দিলেন তিনি।
ষষ্টি হল মাতৃ পূজা বোধন করি মায়
সপ্তমীতে আবাহন দেবী বিশ্বময়।
অষ্টমীতে মহাপূজা আনন্দ লহরী
নবমীতে সুপ্রসন্না দেবী গড় করি।
দশমীতে করবো না মা দেবী নিরঞ্জন
বছরভর করো মাগো অসুর নিধন।
আসছে বছর কেন মাগো বছরভর থাকো
তোমার আশিসে মাগো দুধে-ভাতে রবো।
বিদায় বলো না
দেবীপ্রসাদ পাঁজা
অস্তমিত সূর্যের কোমল কিরনে
আগাম নিশি আজ আনমনা,
হারাব যখন কল্পনার দেশে
তখনও বিদায় বলো না...।
আগাম নিশি আজ আনমনা,
হারাব যখন কল্পনার দেশে
তখনও বিদায় বলো না...।
কৌমুদী স্নাত একলা পথে
সামনে নেই কোন ঠিকানা,
হাজার পথ চলব সাথেই
তখনও বিদায় বলো না...।
সামনে নেই কোন ঠিকানা,
হাজার পথ চলব সাথেই
তখনও বিদায় বলো না...।
যখন কোন মিষ্টি সরস অভিমানে
রেখে যাও অনেক ভাবনা,
আমায় ফেলে চলে যাও তুমি
তখনও বিদায় বলো না...।
রেখে যাও অনেক ভাবনা,
আমায় ফেলে চলে যাও তুমি
তখনও বিদায় বলো না...।
হাজার স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে তুমি
দিয়ে গেলে শত যাতনা,
যদি ভাবনার মাঝে কখনও আসো
তখনও বিদায় বলো না...।
দিয়ে গেলে শত যাতনা,
যদি ভাবনার মাঝে কখনও আসো
তখনও বিদায় বলো না...।
অলস শীতের কোন উষ্ণ দুপুরে
পরিযায়ী পাখি হয়ে মেলবে ডানা,
একলা ছাদে বসে চোখ জুড়াব
তখনও বিদায় বলো না...।
পরিযায়ী পাখি হয়ে মেলবে ডানা,
একলা ছাদে বসে চোখ জুড়াব
তখনও বিদায় বলো না...।
সৌদামিনীর ঝলকে গহীন আঁধারে
আসবে তুমি করবো নাকো মানা,
পারবো না তোমায় রাখতে কাছে
তখনও বিদায় বলো না...।
আসবে তুমি করবো নাকো মানা,
পারবো না তোমায় রাখতে কাছে
তখনও বিদায় বলো না...।
যখন শেষের পথের যাত্রী হব
মুক্ত করে সব যন্ত্রনা,
থাকবে পড়ে নিথর দেহ
তখনও কেউ বিদায় বলো না...।
মুক্ত করে সব যন্ত্রনা,
থাকবে পড়ে নিথর দেহ
তখনও কেউ বিদায় বলো না...।
অসুরোৎসব
সঙ্কর্ষণ
বিষাক্ত... ভারী বাতাস।
শরতের আকাশে দেখা নেই পেঁজা তুলোর।
মেডিকেটেড তুলোর ভাঁজে
টিপটিপ করে ঝরে অ্যান্টিসেপ্টিক,
বহু দূরে মরীচিকা হয়ে চোখে নামে বৃষ্টি...
নোংরা, কালচে, দুর্গন্ধ... ফোঁটা ফোঁটা।
রক্তের গন্ধে দরজাতে কড়া নাড়ে তীব্র বিবমিষা
ঢাকে গমগম করে ওঠে অশুভের আবাহনী,
আকাশের রঙে লাগে আরো নীল...
ঠিক যেন রুদ্রের বিষপান।
শহর থেকে দূরে কোথাও তীব্র দীর্ঘশ্বাসে
আরেক আগমনী বেজে ওঠে।
এখানে ত্রিশুলের ডগায় কুঁকড়ে থাকা মাতৃত্বকে
ক্ষতবিক্ষত করে চলে যায় মহিষাসুর...
আহত পশুরাজের গর্জন ঢাকা পড়ে যায়
নতুন জামা জুতোর ভীড়ে।
কাঠামোর পেছনে চলে হিংস্রতার মহোৎসব।
দশমীতে, চোখের জলে বিদায় নেন এক মা
রেখে যান অসংখ্য ছোটো বড়ো দুর্গাকে।
কবিতার নামে প্যারোডি লেখা হয় রোজ,
বিচারের নামে ঘটে চলা প্রহসন
প্রতিমূহুর্তে মিথ্যে করে চলে ঐ চারটে দিন...
আট থেকে আশিতে।
দিবাস্বপ্ন লেগে থাকে চোখের তারায়।
শব্দ ওঠে,
"দোলপূর্ণিমা নিশি নির্মল আকাশ মৃদুমন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস।"
মা আসছে
প্রসেনজিত রায়
মা আসছে দুর্গার কল্পনায়
রঙীন স্বপ্নের ভেলা নিয়ে,
কিন্তু মাটিতে পা রাখতেই এ কী!---
কাঁচা রক্তের দাগ শুভ্র কাশবনে!
জন্মের পর বাপ টেনে নাড়ি ছিঁড়েছিল,
দগদগে লাল রক্ত ঝরেছিল,
লাল সূর্য রশ্মি দেখার আগেই
লাল প্লস্টিকের চাঁদর মুড়ে
কালো নর্দমার জলে ভেসেছিল,
অপরাধ--- কাঙ্ক্ষিত লিঙ্গের তফাত!
তারপর থেকে দুর্গার দিন কেটেছে
অসভ্যদের ভিড়ে লাল রক্ত জলে,
খোলা আকাশের নীচে রাতের তারা গুনতে গুনতে,
ধুলোমাখা দেহে মাতৃ স্নেহের লোভে।
একদিন সভ্যতার বড়ো মায়া হল
তার প্রানবন্ত যৌবন দেখে,
সেদিন ভোর রাতে শুভ আগমনীর কাঁসর ঘন্টা বাজছিল,
পুরোহিত মহালয়ার মন্ত্র পাঠ করছিল,
বাবুরা এসে তাকে জোড় করে তুলে নিয়ে গেল,
তারপর ভোরের শিউলি ফুলের মতো
ঝরে গেল দেহের শেষ আবরণ,
কুয়াশার স্নিগ্ধতায় ঘর্মাক্ত শরীর
সাজল রক্ত আলপনায় তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে।
সেদিন নির্জন নদী তীরে
নির্মল কাশবনের প্রতিটা কোণায় কোণায়
মা পূজ্জিত হয়েছিল রক্তাঞ্জলিতে!
সে পথ ধরেই মা আসছে !
জ্যান্ত লাশ ঘিরে সবার কুন্ঠিত আওয়াজ ---
কেন এসেছ পৃথিবীতে ?
তাজা রক্তের খোরাক!
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
। মুক্তগদ্য ।
ঈশ্বরী
পিয়াংকী মুখার্জী
জন্মগত সৃষ্টিছাড়া স্বভাবের একটা মেয়ে ,
এই তো সেদিন জন্মাল তোমার আমার চোখের সামনে সন্ধ্যার বুক চিরে , যেদিন অঝোর
ধারায় সারাদিন ঝমঝম টুপটাপ টিপটিপ ঝিরঝির নানান মুদ্রায় ঝরছিলো আদুরে ঋতুরাই ,
মা বলতো , " ওকে উত্তরে চলতে বললে দক্ষিণে হাঁটে "
ঠাম্মা অনর্গল বলেই চলতো , " ওরে পাগলী , তুই কি সৃষ্টির মাথা খেয়ে অন্ধকারে হাঁটবি বলে
জন্মেছিস ? "
মেয়েটা উত্তর দেয়নি কোনদিন , নির্বাক ছিলো ।
মানসিক আর শারীরিক বিকাশ পূর্ন হবার পথেই সে বুঝলো যা কিছুতে সব্বার আপত্তি-অনীহা, বেড়াজাল ভেঙ্গে তার মনন ওটাতেই আকৃষ্ট হয় ,
মেয়েটির জীবনে জীবনানন্দ মাথা চারা দিয়ে উঠতেন মাঝেমধ্যেই ,
বাউল মহুয়া আর তাড়ির মাতাল-গন্ধ মেখে তার লুটিয়ে থাকতে ইচ্ছে করতো কেঁদুলির
মেলায়।
সর্বাঙ্গে বৃষ্টি মেখে জন্মানো মেয়েটা গোটা জীবন বৃষ্টির সাথে কাটাতে কাটাতে হাঁপিয়ে
উঠতো যখনই , তখনই এক দৌড়ে ছুটে যেতো শরতের নিকানো উঠোনে , রোদেলা
দাওয়ায়।
ওর থোকা-থোকা ঝুপসি-ঝুপসি চুলগুলো হাওয়ায় উড়ত বাঁধনহীন হবার দুর্বার নেশায় ,
টানা টানা কালো চোখের দিকে তাকালেই সূর্য ডুবতো পিছনের আদিবাসী পাড়ার মাঝদীঘির
মিশমিশে কালো জলে ,
মেয়েটার পুরু দুটো ঠোঁটে চোখ অবনমিত হলে দৃষ্টি স্থির হতো সমকোণে ,
ছন্দহীন একটা কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পেতো অক্ষর-মাত্রা-বৃত্ত ॥
মেয়েটার দুহাতে বন্ধনী সাজিয়েছিল লোহার চুড়ি , কানে আটআনা-আধুলি মাপের দুল আর
নাকে বড় একটা নথ প্রতিদিন আঁকত ওকে রুপোর বাহারি নিরহংকারে ।
পায়ের মল বিছার মতো পেঁচিয়ে রাখতো দিনভর , জলের শব্দে ঘুঙুর বাজিয়ে মেয়েটা
আনমনেই হাঁটত পবিত্র নীল মেঘের রঙ শুষে নিতে নিতে
এহেন সোমত্ত মেয়ে যার তামাটে লালচে শরীরীবর্ণ তামার পুস্পপত্রের মতো ঝলমল করতো
একটু রোদের আদর পাবে বলে ,
অথচ তার জীবন-ঋতুচক্রে দুর্ভাগ্যের বর্ষা বৃন্তহীন ফুলের মতো আলগোছে আস্তানা গেড়েছিলো
হস্তরেখার জন্মকুষ্টিতে ।
আশ্বিনের এক সকালে , ভোরাই যখন আধবোজা আলোর আশকারা মাপছিলো , যখন দূরে ওই
মুসলিম পাড়া থেকে ভেসে আসছিলো ওস্তাদের রাগাশ্রয়ী ভৈরবের নিখুঁত বিলম্বিত মীর্ ...
ঠিক সেই ক্ষণেই পুষ্ট-দেহ-ঋদ্ধ-মন সমৃদ্ধ মেয়েটা সাদা কাশের বনে চাহিদার আসন বিছিয়ে
ধ্যান মগ্ন হয়েছিলো উপোসী সন্ন্যাসীনির মতো ।
জাগতিক সমস্ত বাধাবিঘ্ন জরাব্যাধি সমাজনিয়ম উপেক্ষা করে পুরুষ প্রকৃতির কাছে নিজেকে
সমর্পণ করার আকাঙ্ক্ষায় স্তন-বৃত্ত ঘষেমেজে মুছে সে বৃহত্তর আকাশের হলুদকাব্য সাজিয়েছিল
নগ্ন বুক জুড়ে ।
সেই মহেন্দ্রক্ষণে ঈশ্বরও আত্মসমর্পণ করেছিলেন দৈহিক নগ্নতার কাছে ।
সৃষ্টিছাড়া যে মেয়ের কাহিনি এতোক্ষণ শোনালাম , যাকে আমি আদৃতা বলে ডাকি , বলি
চিরযৌবনা জন্ম-প্রেমিকা ...
তাকেই তোমরা পুজো করো শরত-তিথিতে শারদীয়া মাদুর্গা রূপে ॥
শরৎ তুমি
দীপশিখা চক্রবর্তী
বর্ষার ঘোর এখনো কাটেনি। প্রকৃতির আঁচলে রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা।তবে বর্ষার
বিষন্নতা আর নেই।শরৎ আসে এক অপূর্ব শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপে।চারিদিকের মায়াবী রঙ
যেন কল্পনার তুলিতে আঁকা।হঠাৎ করে মন গেয়ে ওঠে রবি ঠাকুরের গান-"শরৎ তোমার
অরুণ আলোর অঞ্জলি "।
সকাল হতেই জানালার কাঁচ ঠিকরে ঢুকে পড়ে স্বচ্ছ রোদ,চোখ ঝলসানো রোদ।প্রকৃতির নরম
গা শুকনো ধুলোয় শক্ত হলে আরো নীল হয় আকাশ।নীলের মাঠে সাদা মেঘখণ্ড নেচে বেড়ায়
নিবিড় ছন্দে।ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উড়ে যায় এক আকাশ পেড়িয়ে অন্য আকাশ,যাযাবরের মতো।
নদীর ছলাৎছলাৎ সুরে জলে খেলা করে চোখ ধাঁধানো কাশফুলের সাদা রঙ।বাতাসে কাশের
নরম সুর।মা আসছেন।
শরৎ আসে,আবার ফিরেও যায়।একরাশ নীলচে তরল তুলে চিঠি লেখে নীল আকাশের
ক্যানভাসে।নীলচে স্বপ্নেরা ভাসে আমার উঠোনে,ব্যস্ত উঠোনে আর খোলা জানালায়।
ঘামভেজানো কথারা মাতে শব্দঘেঁষা আতর উৎসবে।কাঁপা হাতে লিখি সাদা মেঘের বুকে-
শরৎ চিঠি!!
বিপ্লব অথবা সমঝোতা
কালিদাস দাস
অবশ্য দেশলাইকাঠিতে লেপ্টে থাকা বারুদ জানে নিজেকে পোড়াতে ঠিক কতটা অাত্মত্যাগ লাগে!কেমন লাগে নিজের কংকালতন্ত্রের মধ্যেই পরোপকারিতার বীজ বুনে দিতে!
এদিকে প্রজাপতির ডানায় যত রাতপরিরা মাতে অাড্ডায়,জমাটি অন্ধকারে জমাট বাঁধা অাড্ডায় কোনোকিছুই বাধা মানে না তখন.....ভাকরা নাঙ্গাল বা ভায়াগ্রা-------সবই তখন দস্তাবেজহীন কিসসা!
অার পিচগলা রাস্তায় ছুটে চলা সভ্যতার(অসভ্যতারও) হাতে দোদুল্যমান লালচে থলের নীল রঙা খামে লুকোনো অাছে অামাদের বিপ্লব বা সমঝোতার গদগদ রেসিপি....
অথচ অামরাই
পৃথিবীর সমস্ত পুকুর বুজিয়েই
বৃষ্টির গান গাই
উদাত্ত কন্ঠে...সমস্বরে....
"কী করে করবে বলো তো?"
শ্রাবণী ঘোষ
সেদিন হঠাৎই বারান্দায় বসে তোমার নীল পত্রবাহকের সাথে দেখা! কাজের চাপে আছি
ঠিকই কিন্তু ignore করতে পারলাম না!
বালিকণার মতো একগাল হাসি এলো........
আগেও যে তোমার আগমন অনুভব করিনি তা নয়.........
Urban life তো উচ্ছাস কম! বুঝতেই পারো!
তোমাকে নিয়েও তো experiment কম নয়!
তোমার কুঞ্জ সাজানো প্রায় শুরু হয়েছে! তুমি আসবে তোমার ঘরে......
ভাদ্রের শেষেই ক্যালেন্ডারে উঁকির কথা ভুলিনি!
বিশ্বাস করতে পারবে না আজও যে উঁকি দেইনা তা নয়!
কিন্তু সেই আমেজ আর নেই!
ভার লাগে মনে! কি এক সমাজের নাগরিক যে আমরা!
জানিনা অদ্ভুত লাগে মাঝে মাঝে "মেয়ে আসবে বাবার ঘরে এতে কী প্রতিযোগিতা???
মেয়ে তো আমাদেরই.... শাক- ভাতেই বা কী আপত্তি?
আগে জানো আমরা বন্ধুদের মধ্যে কথার লড়াই করতাম কে কতবার ঠাকুর দেখব, কী
চাইব?? তোমার মুখ উন্মোচনের সময় আত্মা কেঁপে উঠত "কি মুখ হেরি এ????"
তোমার gesture দেখে ভয় পেতাম! কিন্তু কপালের টিপ যেন মনে করিয়ে দিত "আমার
মা তো "!
অনেক গল্প, বাংলার প্রবাদ, শিব দুর্গার উপাখ্যান, মহালয়া, অঞ্জলি, খিচুড়ি, চুপি চুপি একটু
প্রেম, প্রনাম, ব্যাপক কেলানি আর আড্ডা তো ছিলো..!
ঐতিহ্য , সাবেকী, ডাকের সাজ, ধুনোর গন্ধ শিউলির পবিত্রতা, উফ! আর কি বলব
just স্বপ্নের দিন ছিল!
জানো তুমি যে আসো বাবার বাড়ি আমার ভয় লাগে!
পুজো তো তোমাকেই করে, কিন্তু সারা বছর শরীর শোষন করে তোমার রুপে যে মেয়েরা
ঘরে ঘরে রোজ দশভুজা রুপে ঘরের কান্ডারী!
তুমি কি কিছু বলতে পারো না??? পারো না সেই ত্রিশুলের তীখন আঘাতে তাদের
প্রতিষ্ঠিত দম্ভকে উপড়ে দিতে!
বলো! বলো তুমি পারো না!
কি পূজো করবে বলো তো এরা তোমার????
গল্প হলেও বাস্তব
আদিত্য সাহা
অষ্টমীর দিন সকালে খেয়ে দেয়ে রেডি হবো হবো করছি । হঠাৎ ফোন আসলো অঞ্জলি দিতে যাবে ? আমি তড়াক করে উঠে বললাম হ্যাঁ কেন যাবো না আলবাত যাবো । তার প্রিয় নীল পাঞ্জাবি টা পড়েছি , আজ তো একদম couple goals দেখিয়ে দেব । মা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো বাবু আজকে আমার সাথে একটু অঞ্জলি দিতে যাবি , অনেকদিন পর বাড়ি এলি তাই ভাবলাম তোর সাথে অঞ্জলি দিয়ে আসি । আমি বললাম আজকে হবে না গো পরের বছর যাবো । মাএকটু দুঃখ পেল আর বললো ঠিক আছে সাবধানে যাস ।
বাইক নিয়ে বেড়িয়েছি , মণ্ডপের দিকে তো বাইক রাখার জায়গা ই নেই ,কষ্ট করে একটা জায়গা পেলাম অবশ্য । মণ্ডপের দিকে যাচ্ছি হঠাৎ খেয়াল হলো পুজো দেবার জিনিস এ তো নেই নি । দেখি হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা আমাকে ডাকলো , পরণে একটা ময়লা লালপার শাড়ি , হাতে কিছু মোম, ধুপকাঠি এবং কিছ প্রদীপ । আমি রুক্ষ ভাবে বললাম কি চাই আমি ভিক্ষা দেই না , সেই মহিলা তখন বললেন বাবা আমার জিনিস গুলো কিনবে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি কিচ্ছু বিক্রি হচ্ছে না । আমি বললাম তোমার থেকে কেন নেব , দোকান থাকতে তখন উনি খুব দুঃখ করে অন্যদিকে চলে গেলেন। তারপর পাশের এ এক দোকানে গিয়ে মোম আলতা পুজোর যা কিছু দরকার তা কিনলাম।যাবার সময় দোকান দার কে বললাম এই ভদ্রমহিলা কে তো আগে দেখিনি ইনি কে ?তখন দোকান দার বললো ইনি অনেকদূর থেকে আসেন, এনার স্বামী পঙ্গু কাজ করতে পারেন না । ছেলে চাকরি করে অথচ বাবামা কে ছেড়ে বউ এর সাথে বাইরে থাকে, বাবা মা এত বছরে একবারও দেখতে এসে নি । তাই তিনি নিজের আর স্বামীর পেট চালানোর জন্য এসব বিক্রি করেন । তখন হঠাৎ কি মাথায় আসলো দৌড়ে গিয়ে সেই মহিলার থেকে সব কিছু কিনে নিলাম। তারপর বাইকের কাছে গিয়ে বাইক নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। দেখি মা বাবা পুজোর দেবার জন্য বের হচ্ছে, আমাকে দেখতে বলে কিরে বাবু চলে এলি , আমি বললাম চলো মা আজকের প্লান ক্যান্সেল তোমার সাথেই যাবো ।মা খুশি হয়ে বললো চল। ওই মহিলার জিনিস কিনে হয়তো তাকে খুশি করতে পারলাম । দুর্গা পুজোয় সবার খুশি হবার অধিকার আছে ।
মা বাবার গুরুত্ব সব থেকে বেশি ।
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
কবিতা
আলোর বেণু
সংস্কৃতি ব্যানার্জী
চোখে তাদের শরৎ নেমে আসে
ঠোঁটেও ফোটে তুলোর মত কাশ,
ভালোবাসা ত্রিনয়ন পেলে
বুকজমিনে ছুটতো নীল আকাশ।
ঠোঁটেও ফোটে তুলোর মত কাশ,
ভালোবাসা ত্রিনয়ন পেলে
বুকজমিনে ছুটতো নীল আকাশ।
পেটের আগুন আগলে রাখে বাঁশি
হাতের আড়াল শিউলি ফুলের গন্ধ,
আলোর হদিস পায়নি কানাগলি
নূপূর তাই মেলাতে পারেনি ছন্দ।
হাতের আড়াল শিউলি ফুলের গন্ধ,
আলোর হদিস পায়নি কানাগলি
নূপূর তাই মেলাতে পারেনি ছন্দ।
রঙিন যখন শহর ঘষাকাঁচে
পোশাক ওদের মিশছে আর্বজনায়,
হাসির উঠোন ছলকে গেলে জলে
হৃদয়বাড়ির কান্না কে মোছায়?
পোশাক ওদের মিশছে আর্বজনায়,
হাসির উঠোন ছলকে গেলে জলে
হৃদয়বাড়ির কান্না কে মোছায়?
তোমার পূজো সবার পূজো হলেই
ঝলমলিয়ে আতসবাজীর সাজ
বদলে দেবে বেঁচে থাকার সুর
শারদীয়া শুভ হবে আজ।
ঝলমলিয়ে আতসবাজীর সাজ
বদলে দেবে বেঁচে থাকার সুর
শারদীয়া শুভ হবে আজ।
দুর্গাপূজো
মাম্পি রায়
ঋতু যায়, ঋতু আসে,
মরশুমি মেলা বসে
পার্বণ রং লাগে
প্রকৃতির উল্লাসে।
কাশবন দোল খায়
শীতের সকাল জুড়ে
শিশিরের কণা ঝরে
মেঘেদের ভেলা ভরে।
ঐতিহ্যের সুর ভাসে
উমা মায়ের আবাহনে
পূজার প্রেমের কথা
ঘরে ঘরে সব খানে।
আমার দুর্গা
এস. কবীর
আমার দুর্গার দুটি হাত
পরনে জিন্স আর টি-শার্ট।
দুপুর বেলায় চাওমিন খায়
বাদ দিয়েছে ভাত।
আমার দুর্গার কানে হেডফোন
খাবার প্লেট হাতে।
আমার দুর্গার পিঠে ব্যাগ
ফাস্টফুড খায় ফুটপাথে।
আমার দুর্গা অফিস করে
খোল চুলে ঘুরে।
আমার দুর্গা বোরখা পরে
দুষ্টুর গালে সপাটে চড় মারে।
আমার দুর্গা ভীষণ ব্যস্ত
নাইট শিফটে যায় আইটি সেল।
আমার দুর্গা প্রতিবাদ করে
দরকারে ভেঙ্গে দেয় জেল।
আমার দুর্গা সমাজসেবী
পরের জন্য খায় মার।
আমার দুর্গা ডানপিটে ভীষণ
ময়দান করে তোলপাড়।
আমার দুর্গা শেষ পাতে খায়
পরে থাকে যা।
আমার দুর্গা সহজ সরল
মমতাময়ী মা।
পরনে জিন্স আর টি-শার্ট।
দুপুর বেলায় চাওমিন খায়
বাদ দিয়েছে ভাত।
আমার দুর্গার কানে হেডফোন
খাবার প্লেট হাতে।
আমার দুর্গার পিঠে ব্যাগ
ফাস্টফুড খায় ফুটপাথে।
আমার দুর্গা অফিস করে
খোল চুলে ঘুরে।
আমার দুর্গা বোরখা পরে
দুষ্টুর গালে সপাটে চড় মারে।
আমার দুর্গা ভীষণ ব্যস্ত
নাইট শিফটে যায় আইটি সেল।
আমার দুর্গা প্রতিবাদ করে
দরকারে ভেঙ্গে দেয় জেল।
আমার দুর্গা সমাজসেবী
পরের জন্য খায় মার।
আমার দুর্গা ডানপিটে ভীষণ
ময়দান করে তোলপাড়।
আমার দুর্গা শেষ পাতে খায়
পরে থাকে যা।
আমার দুর্গা সহজ সরল
মমতাময়ী মা।
নবঘ্রাণ
গৌতম ভৌমিক
দেখবে চলো যাই সবে
ঐ কিছুটা দূরে l
শরৎ-এর নীলাভ
পাখি জাগা ভোরে l
চারিদিকে মৃদু শরৎবায়ু
বয়াইছে আনন্দভেলা l
কাশফুলেরা নেচে-নেচে
দিচ্ছে খবর দোলা l
নীল-শুভ্র নদী জল
ঐ ডাক ছেড়েছে কুল l
প্রস্ফুটিত সুবাস ঘ্রাণে
শত-সহস্র শিউলিফুল I
কোমল ঘাসের ডগাতে
আজ নূতন কুয়াশাকণা l
এসেছে যে কিছু নবরূপে
হয়েছে সবার তা জানা l
দিগ-দিগন্ত যে ঝা চকচক
সব নূতনরূপে জেগে l
চাষী থেকে মাঝিরা ঐ
ছুটছে আপনই বেগে l
অপত্য হতে বৃদ্ধ সবে
বাঁচে আগমনের আশায় l
বছরভরের এ অপেক্ষাই তো
পুলকিত রোশনাইয়ে ভাসায় l
ডিঙাড় মেলা
আশীষ দেব শর্মা
ছোটো বেলায় পূজো পূজো কতো করতাম খেলা
মনের টানে ছুট বাড়ির পাশের ঐ চাঁদ সদাগরের মেলা।
এপার ওপারের সকলেই পূজোয় দেয় মন,
দূর দূরান্ত থেকে আসে কতো না ভক্তগন !
প্রতি বছর নিয়ম মেনে মা ভগবতীর পূজা কিন্তু হয়,
তবু কেনো জানি, দিঙার মেলার মতো নয় !
সেটা কি নেহাতী ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত দর্শন,
মনস্কামোনার সাক্ষী,ছাগ কবিতর উৎস্বর্গের বর্ষণ !
জাতী ধর্ম নির্বিশেষে ভক্তগণ পথ মেলায় সারিসারি ,
শুনে ভীষণ অবাগ লাগে,জায়গাটার নাম কিন্তু চ্যাংমারি!
মার পূজো করতে স্বয়ং মন্ত্রী,পুলিশ,সীমান্ত রক্ষী থাকে হাজির,
ওনার ক্ষমতা যে অপার, এগুলি নয় কি নজির!!
মাটির ব্যাংক
মজনু মিয়া
পাঁচ টাকার এক কয়েন দিয়ে
মাটির ব্যাংক কিনি,
ছোট বড় কয়েন যত
রাখি প্রতি দিনি।
এক দিন দু দিন এমনি করে
মাস হলো পার,
মাটির ব্যাংকটা ওজন করি
লাগে খুব ভার।
চেয়ে দেখি ফাঁকা আছে
মাটির ব্যাংকের ভিতর,
চিন্তা করি বছর আমি
পূর্ণ করব ইটর।(এটার)
পূর্ণ হলো বছর আমার
ব্যাংক ভরলো কয়েন,
ভেঙ্গে দেখি কয়েন কয়েন
গুনতে হলাম জয়েন।
শারদ ইতিবৃত্ত
মাসুদ বড়া
শিশির রোদে ঘাসের আরাম
কাশফুলে যেই লাগলো জল,
দিগন্তে ওই শাঁখের আওয়াজ
মন কেমনের হাওয়া বদল।
একটা করে লালচে আঁচড়
দিনের শেষে ক্যালেন্ডারে,
জমতে থাকা পুঁজির চোখে
সহ্য হারায়, আবেগ বাড়ে।
এদিক ওদিক রঙের খেলা
মায়ের নেশায় মাতোয়ারা,
বিষণ্নতা আঁতকে ওঠে
বিদায় সুরে ঘরে ফেরা।
হিসেব ছাড়া অঙ্ক কষা
স্বভাবে রোজ দিচ্ছে কামড়
খামখেয়ালি উদ্দীপনায়
চেয়ে থাকি আরেক বছর।
দশমী
তুহিন মন্ডল
কাশের বনে লেগেছে হওয়া
খুশিতে ঢাক বাজে।
মা এসেছে বাপের বাড়ি
আজকে নতুন সাজে।।
চতুর্দিকে আলোর মেলা
খুশিতে নাচে মর্ত্য ।
মার জন্য আনতে যাবো
একশো আট পদ্ম।।
ষষ্ঠী থেকে নবমী ,কাটলো
মায়ের কোলে।
দশমী আজ মন যে খারাপ।
মা যাবে ফের চলে।।
বিকেল থেকে চলছে বরণ
সঙ্গে সিঁদুর খেলা।
মা আজ রবে না কাছে
ভাঙবে খুশির মেলা।।
আগমনী
সোনাই
আগমনীর বার্তা নিয়ে শরৎরানী এলো দ্বারে
আসছে ঊমা, সন্তোষ মনে, ঊমার আবাহনে,
শিউলি বনে বান এসেছে,কাশের বনে ও তাই
পেঁজা পেঁজা মেঘের রাশি নাঁচছে প্রফুল্লতায় l
খুশি থৈথৈ কচিকাঁচা প্রাণ, আবার সিক্তও দুঃখীর নয়ন
দুশ্চিন্তার কাল ছায়া মুখে হবে কিকরে খুশির অর্থের যোগান ?
এক কড়,দুই কড় দিন বয়ে যায় পঞ্জিকার দাগে দাগে,
উপেক্ষিত হয়ে সব কিছু রথের দিনে কাঠামোয় ঊমার প্রলেপ পড়ে ll
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
ছোটরা যেখানে
ছবি এঁকেছে- সুজল সূত্রধর, প্রথম শ্রেণী
ছবি এঁকেছে- জয়িতা দেবনাথ,চতুর্থ শ্রেণী
ছবি এঁকেছে- শুভম রায়, ষষ্ঠ শ্রেণি
অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা আশ্বিন সংখ্যা
No comments:
Post a Comment