বৃষ্টি ধুয়ে
অর্পিতা গুহ মজুমদার
সংসারের সমস্ত কাজ সেরে সবে দুপুরে খবরের কাগজটা হাতে নিয়েছে রিনি, এমন সময় বৃষ্টির আওয়াজ। " এই যা! ছাদের সব শুকনো কাপড়গুলো ভিজে যাবে যে..." স্বগোক্তি রিনির।আর বলেই দে ছুট ছাদের উদ্দেশ্যে। তড়িঘড়ি করে শুকনো কাপড়জামাগুলো তুলেই ঘরের দিকে ছুঁড়ে দিল রিনি। বৃষ্টি খুব তোড়ে এখনও নামেনি।আকাশের গায়ের রং ঘন কালো। আকাশের দিকে চোখ পড়তেই রিনি মনে মনে ভাবলো একেই যেন কাব্যে বলে, "আষাঢ়াস্য প্রথম দিবস..."। না, এখন আর নীচে নামবে না রিনি। ছাদে উঠে আসার রিনি দেখেছে স্বামী এবং কন্যা দুজনেই ভাতঘুমে মগ্ন।
আজ রিনি ভিজবে ইচ্ছেমত ভিজবে। ভাবতেই রিনি সরে এসে দাঁড়ালো ছাদে ওর প্রিয় নিভৃত কোণটাতে, যেখান থেকে দেখা যায় মাদার,বাবলা, গামারি আর বাঁশের ঝোপ ঘেরা পুকুরটাকে। অঝোরে শুরু হয়ে গেল আষাঢ়ের নববর্ষা। ভিজছে, প্রাণমন ভরে ভিজে চলেছে রিনি।গাছের পাতার ফাঁকে আশ্রয় নেওয়া রিনির বন্ধু পাখিগুলো কেবল যেন রিনির দিকে থেকে থেকে তাকাচ্ছে। পুকুরের বুকে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো দেখতে দেখতে রিনি মনে মনে আওড়াতে থাকে --"এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়.... "।
রবি ঠাকুরের উচ্চারিত কবিতার সাথে, দীর্ঘ সতেরো বছর অতিক্রান্ত হওয়া বিবাহিত জীবনের গোপন গহনে জমে থাকা অভিমানগুলো বুদবুদের
মতো ওঠানামা করতে থাকে রিনির মনে। মেঘের
ডাকের মৃদু আওয়াজের সাথে রিনির কানে ভেসে আসে বহুদিন আগে বলে যাওয়া বাবার কথাগুলো, " অভিমান পুষে রাখতে নেই রে,জীবন স্রোতে ভাসিয়ে দিতে হয় "। রিনি অভিমানগুলোকে যেন বৃষ্টির জল আর বাঁধ না মানা চোখের জলের সাথে
ধুয়ে ভাসিয়ে দিতে চেষ্টা করে। হঠাৎ কাঁধে শীতল হাতের স্পর্শে চমকে ওঠে রিনি।দেখে স্বামী নীলাদ্রি ছাতা মাথায় কখন যেন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাঁধভাঙা রিনি নীলাদ্রির কাঁধে মাথা রেখে গুনগুন করে গেয়ে ওঠে -----" আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়....."।
(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
No comments:
Post a Comment