নারী শিক্ষা প্রসারে প্রসারে বিদ্যাসাগর
জয়শ্রী চ্যাটার্জি
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন সহ যে সকল মনিষী নিরলস প্রয়াস চালিয়ে ছিলেন তাঁঁদের মধ্যে বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এদেশের নারী শিক্ষার তেমন কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। পোস্তার রাজপরিবার , জোড়াসাঁকোর পাথুরিয়াঘাটার রাজপরিবার সহ কোনো কোনো পরিবারের কিছু কিছু স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন ছিল। এসব পরিবারে মেয়েরাই লেখাপড়া শিখতেন আর বাইরে থেকে শিক্ষয়িত্রীরা পড়াতে আসতেন। এদেশে স্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার কাজে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন শ্বেতাঙ্গিনী মহিলারা।খ্রীস্টান মিশনারী ও কিছু উদার ইংরেজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারী শিক্ষার সূচনা হলেও বিদ্যসাগরই ছিলেন বাংলা তথা ভারতের নারী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ।
১৮১৯সালে কলকাতার গৌরীবাড়িতে "ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি " প্রথম অবৈতনিক বালিকা বিদ্যালয় স্হাপন করেন যার নাম হয় জুভেনাইল স্কুল।
স্ত্রী - শিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অসামান্য অনুরাগ ছিল। তিনি উপলব্ধি করে ছিলেন শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কার আচ্ছন্ন ভারতীয় নারীর মুক্তিলাভ সম্ভব। নারী মুক্তি, নারী উন্নতি ছাড়া এই সমাজ, এই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তাঁর মনে হয়েছিল বালিকা বিদ্যালয় স্হাপনে সরকারের সমর্থন আছে। তাই বালিকা বিদ্যালয় খোলার কাজে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করেন।১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের উদ্যোগে এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহযোগীতায় ভারতের প্রথম হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। যার বর্তমান নাম 'বেথুন স্কুল'।
নারীদের মধ্যে শিক্ষা সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নারী শিক্ষার সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন। সেইসাথে বর্ধমান, হুগলী, মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় গড়ে তোলেন স্ত্রী শিক্ষা সম্মিলনী। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছাত্রী সংগ্রহে নিরলস প্রচেষ্টা চালান।
১৮৫৪সালে উডের নির্দেশনামায় স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের ওপর গুরুত্ব আরোপ কর হয়। ফ্রেডরিক হ্যালিডে কতৃক বিদ্যাসাগর দক্ষিণ বঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক নিযুক্ত হন।
১৮৫৭ সালের ২৪শে নভেম্বর থেকে ১৮৫৮ সালের ১৫ই মের মধ্যে মাত্র সাত মাসে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্হাপন করেছিলেন। এর মধ্যে হুগলী জেলায় স্হাপন করেছিলেন ২০।টি বালিকা বিদ্যালয়। এগুলোতে ১৩০০ ছাত্রী পড়াশোনা করতো। প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি স্হাপন হয় পোটবাতে, ১৮৫৭ সালের ২৪ শে নভেম্বরে। স্ত্রী শিক্ষায় সরকারের আগ্রহ দেখে তিনি আশা করেছিলেন এই বালিকা বিদ্যালয় গুলির জন্য সরকরী সাহায্য পাওয়া যাবে। এই ৩৫ বালিকা বিদ্যালয়ের মাসিক খরচ।ছিল ৮৫৮ টাকা। তিনি সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করলে তদানীন্তন ভারত সরকার অর্থ বরাদ্দ করতে অস্বীকার করে। তিনি পরিদর্শক ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেন। বিদ্যাসাগর বারবার পত্র যুদ্ধের। মাধ্যমে অবশেষে ১৮৬২ সালের ১লা মে ৭টি বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য সরকারী সাহায্য মন্জুর হল। অবস্হার ক্রমশঃ উন্নতি দেখা দেয়।
মাতা ভগবতী দেবীর স্মৃতিতে ১৮৯০ সালে নিজ জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় স্হাপন করেন।
No comments:
Post a Comment