করোনার কালে মায়ের আগমন
রীতা মোদক
ছ'মাস
অতিক্রান্ত।সারা পৃথবীতে চলছে মারণ ভাইরাসের তান্ডব। দিনকে দিন আক্রান্ত
আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কমার কোনো লক্ষণই নেই। দেখতে দেখতে শরৎ
কাল এসে গেলো।কিন্তু আকাশ মেঘলা। দুই হাজার বিশ বুঝি সারা দেশে বিষ ছড়িয়ে
দিল। আম্ফান এর ভয়ানক তাণ্ডবের পর সেই যে বর্ষা এলো যাওয়ার কোনো
হেলদুল নেই।অনবরত বৃষ্টিতে মনে হয় পঁচিয়ে দিচ্ছে সকলকে। কুমোর পাড়ার
শিল্পীদের মনে এবার কোনো খুশির ছোয়া নেই। মনমরা হয়ে বসে আছে অনেকেই।এবার
যে সেরকম বায়না হয়নি। তবে কি দূর্গা ঠাকুর এবার মর্তে আসবে না? পাড়ার
বাচ্চারা নতুন জামকাপড় পড়বেনা?
--তা কখনো হয় নাকি! দুগ্গাকে তো মর্তে আসতেই হবে।কী ভাবছিস পোড়ামুখী?
ঠাকুমার কথা শুনে হুস ফেরে তনয়ার। তনয়া নিজেও করোনায় আক্রান্ত।আজ নয়দিন
হলো সেফ হোমে আছে। জ্বর- সর্দি -কাশি কমলেও শরীর ভীষণ দূর্বল।মুখে একটুও
স্বাদ নেই। দুর্বলতার মাঝে এসব খারাপ চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক। তার পাশের
বেডেই এক বয়স্কা ঠাকুমা তনয়ার বন্দি জীবনের সাথী। তিনি সুস্থ হয়ে
উঠেছেন।কাল তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তাই ঠাকুমার মনে খুব আনন্দ । কিন্তু
তনয়াকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায় ।তবু সাহস দিয়ে বলেন ---
--- মাকে ডাক রে পোড়ামুখী,মা কী না এসে থাকতে পারে? মন ভরে ডাক ---- মা আসবেই।
---
হ্যাঁ ঠাকুমা মাকে যে আসতেই হবে।তোমার সুস্থ হওয়া দেখে আমার মনে সাহস
এসেছে। রামচন্দ্র তো রাবন বধ করার জন্য মা দুর্গার আরাধনা করেছিলেন।এবার
আমরা যদি সবাই মিলে করোনা বধের জন্য মা দুর্গার আরাধনা করি , তাহলে মা আসবে
তো ঠাকুমা?
--- অবশ্যই আসবে , মা কি সন্তানের ডাক শুনে মুখ ফিরিয়ে
নিতে পারে? ঐ দেখ গাছে শিউলী ফুটছে, আকাশ পরিষ্কার হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি যে
।
ঠাকুমার কথায় তনয়ার মনে যেন শক্তি আসে। দূর্বলতা কেটে
যায় ধীরে ধীরে।বেড থেকে নেমে জানালার পাশে দাঁড়ায়।চোখ চলে যায় অনেক
দূরে .. দেখা যায় ... মাঠের শেষে কাশফুলগুলো যেন বাতাসের তালে তালে নেচে
উঠছে। তনয়া এবার মায়ের আসার ইঙ্গিত পাচ্ছে যেন। সে মনে মনে মা দুর্গাকে
ডাকে -----
জগত জননী মাগো --- তুমি এবার বিপত্তারিনী রূপে ফিরে এসো।করোনাসুর বিনাশ করে আমাদের রক্ষা করো মা। আমাদের রক্ষা করো...
No comments:
Post a Comment