বাকিমের ভৌতিক ট্রেকারস্ হাট (একটি সত্য ঘটনার উপর রচিত)
অতনু মৈত্র
অতনু মৈত্র
সালটা
ছিল ২০১৪, অফিসের কয়েকজন মিলে স্থির করলাম ট্রেকিং করতে যাবো। আগে
ট্রেকিং করার কোন অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। অফিসের বিতানদার উৎসাহে রাজি হয়ে
গেলাম। ঠিক হলো সিকিমের জোঙড়ী হয়ে গোচালা পর্যন্ত ট্রেক করবো। হাই
অল্টিটিউড সিকনেস কি জিনিষ এর আগে তার কোন ধারণা আমার ছিল না। তাই শুরুতে
সবকিছু জলভাত মনে হয়েছিল।
যাইহোক সিকিমের ইয়োকসাম থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পুরো রাস্তাটাই কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্যে দিয়ে গেছে। পাহাড়ের উপরে উঠতে উঠতে দেখলাম প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। বিভিন্ন নতুন নতুন প্রজাতির অর্কিডে গোটা রাস্তাটা ছেয়ে আছে। পাহাড়ী এলাকায়, যেখানে গাড়ি ঘোড়ার উপদ্রব নেই, সেখানে প্রকৃতি মাতা তার অকৃত্রিম অপরূপ সৌন্দর্য উজাড় করে দেয়। নতুন নতুন প্রজাতির অর্কিডের সাথে উপরি পাওনা ফুল ফুটে থাকা পূর্ণ অবয়ব চেরি ব্লসোম ট্রি । রডোডেনড্রন ফুল ফোটার তখন সময় ছিল না। তাই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যাত্রাপথে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ছিল, যার নীচে দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একটি স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী।
যাইহোক, সকাল নয়টার সময় ইয়োকসাম থেকে রওনা হয়ে বেলা একটার সময় আমরা সাচেন পৌঁছলাম। সেখানে আমাদের গাইড সুব্বাজি লাঞ্চ এর ব্যাবস্থা করেছিলেন। লাঞ্চ সেড়ে আমরা আবার রওনা দিলাম। তখনও পর্যন্ত কোন শারীরিক অসুবিধা অনুভব করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রথমদিন শোকা পর্যন্ত যাওয়ার। কিন্তু তা আর হলো না, বাকিম পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাকিমে সাকুল্যে দুইটি ট্রেকারস্ হাট ছিল। একটি লোয়ার বাকিমে, আর একটি আপার বাকিমে। আপার বাকিমের ট্রেকার্স হাট এ আমাদের থাকা স্থির হলো। মনের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার ফিল হচ্ছিল। এইরকম একটা দূর্গম জায়গায় রাত্রি যাপনের অভিঞ্জতা আমার এই প্রথমবার ছিল।
যাইহোক, এবার আসল ঘটনায় আসা যাক। বাকিমের ট্রেকার্স হাটটি ছিল দোতলা। একতলাটি ছিল ইটের আর দোতলাটি ছিল কাঠের তৈরি। হাটটির চারটি কোনের মধ্যে একটি কোনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। হয়তো কোন একসময়ে ভূমিকম্পের ফলে এইরূপ অবস্থা হয়ে থাকবে। ট্রেকারস্ হাট টিতে ঢোকার পর থেকে এক অদ্ভুত ফিলিং হতে শুরু করলো। আমরা ছাড়া আরও একটি দল সেইরাতে সেখানে ছিল। সব মিলিয়ে ১৮ - ২০ জন হবে, কিন্তু মনে হতে লাগলো কমপক্ষে ৪০ - ৫০ জন মানুষ সেখানে অবস্থান করছে। আরও দুটি ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। যার উত্তর আজও পাইনি। সন্ধ্যার পরে অন্ধকারের মধ্যে দোতলা থেকে একতলাতে নামছিলাম, কাঠের সিঁড়ি ছিল। সিঁড়ির শেষ মাথায় দু তিনটে স্টেপ ভাঙা ছিল। তাই অন্ধকারে নামতে গিয়ে পা হরকে যায়। খুব জোড়ে মুখ থুবড়ে পড়ছিলাম। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যেই হঠাৎ কে যেনো আমাকে ধরে ফেললো। আমি থ্যাঙ্ক ইউ বলার আগেই হঠাৎই সে অন্ধকারে কোথায় মিলিয়ে গেলো। সবথেকে আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো রাত্রে শোবার পড়ে। আমরা নয়জন পাশাপাশি শুয়েছিলাম। সারাদিন একটানা হাঁটার ফলে শরীর খুব ক্লান্ত ছিল। শোয়া মাত্র তন্দ্রা এসে গেল। শোবার খানিকক্ষণ পরে সৈকতের মোবাইলে গেম খেলার শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা ভাবলাম সৈকত বোধহয় গেম খেলছে। বিতানদা একবার সৈকতকে বলল- এইভাবে মোবাইলের চার্জ নষ্ট করিস না, উপরে মোবাইল চার্জ দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সৈকত কোন সাড়াশব্দ দিল না। যত সময় যাচ্ছিল গেম খেলার শব্দ ততো বারছিল।
যাইহোক সিকিমের ইয়োকসাম থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পুরো রাস্তাটাই কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্যে দিয়ে গেছে। পাহাড়ের উপরে উঠতে উঠতে দেখলাম প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। বিভিন্ন নতুন নতুন প্রজাতির অর্কিডে গোটা রাস্তাটা ছেয়ে আছে। পাহাড়ী এলাকায়, যেখানে গাড়ি ঘোড়ার উপদ্রব নেই, সেখানে প্রকৃতি মাতা তার অকৃত্রিম অপরূপ সৌন্দর্য উজাড় করে দেয়। নতুন নতুন প্রজাতির অর্কিডের সাথে উপরি পাওনা ফুল ফুটে থাকা পূর্ণ অবয়ব চেরি ব্লসোম ট্রি । রডোডেনড্রন ফুল ফোটার তখন সময় ছিল না। তাই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যাত্রাপথে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ছিল, যার নীচে দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একটি স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী।
যাইহোক, সকাল নয়টার সময় ইয়োকসাম থেকে রওনা হয়ে বেলা একটার সময় আমরা সাচেন পৌঁছলাম। সেখানে আমাদের গাইড সুব্বাজি লাঞ্চ এর ব্যাবস্থা করেছিলেন। লাঞ্চ সেড়ে আমরা আবার রওনা দিলাম। তখনও পর্যন্ত কোন শারীরিক অসুবিধা অনুভব করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রথমদিন শোকা পর্যন্ত যাওয়ার। কিন্তু তা আর হলো না, বাকিম পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাকিমে সাকুল্যে দুইটি ট্রেকারস্ হাট ছিল। একটি লোয়ার বাকিমে, আর একটি আপার বাকিমে। আপার বাকিমের ট্রেকার্স হাট এ আমাদের থাকা স্থির হলো। মনের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার ফিল হচ্ছিল। এইরকম একটা দূর্গম জায়গায় রাত্রি যাপনের অভিঞ্জতা আমার এই প্রথমবার ছিল।
যাইহোক, এবার আসল ঘটনায় আসা যাক। বাকিমের ট্রেকার্স হাটটি ছিল দোতলা। একতলাটি ছিল ইটের আর দোতলাটি ছিল কাঠের তৈরি। হাটটির চারটি কোনের মধ্যে একটি কোনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। হয়তো কোন একসময়ে ভূমিকম্পের ফলে এইরূপ অবস্থা হয়ে থাকবে। ট্রেকারস্ হাট টিতে ঢোকার পর থেকে এক অদ্ভুত ফিলিং হতে শুরু করলো। আমরা ছাড়া আরও একটি দল সেইরাতে সেখানে ছিল। সব মিলিয়ে ১৮ - ২০ জন হবে, কিন্তু মনে হতে লাগলো কমপক্ষে ৪০ - ৫০ জন মানুষ সেখানে অবস্থান করছে। আরও দুটি ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। যার উত্তর আজও পাইনি। সন্ধ্যার পরে অন্ধকারের মধ্যে দোতলা থেকে একতলাতে নামছিলাম, কাঠের সিঁড়ি ছিল। সিঁড়ির শেষ মাথায় দু তিনটে স্টেপ ভাঙা ছিল। তাই অন্ধকারে নামতে গিয়ে পা হরকে যায়। খুব জোড়ে মুখ থুবড়ে পড়ছিলাম। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যেই হঠাৎ কে যেনো আমাকে ধরে ফেললো। আমি থ্যাঙ্ক ইউ বলার আগেই হঠাৎই সে অন্ধকারে কোথায় মিলিয়ে গেলো। সবথেকে আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো রাত্রে শোবার পড়ে। আমরা নয়জন পাশাপাশি শুয়েছিলাম। সারাদিন একটানা হাঁটার ফলে শরীর খুব ক্লান্ত ছিল। শোয়া মাত্র তন্দ্রা এসে গেল। শোবার খানিকক্ষণ পরে সৈকতের মোবাইলে গেম খেলার শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা ভাবলাম সৈকত বোধহয় গেম খেলছে। বিতানদা একবার সৈকতকে বলল- এইভাবে মোবাইলের চার্জ নষ্ট করিস না, উপরে মোবাইল চার্জ দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সৈকত কোন সাড়াশব্দ দিল না। যত সময় যাচ্ছিল গেম খেলার শব্দ ততো বারছিল।
আমার ঘুমের খুব অসুবিধা হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে থাকতে না পেরে বললাম- "সৈকত এবার ফোন বন্ধ কর, শুয়ে পড়"।
তাও শব্দ থামেনা। অবশেষে থাকতে না পেরে উঠে বসলাম। তখন যে দৃশ্য দেখেছিলাম তার সঠিক ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। দেখলাম সৈকত আমার দিকে পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে, আর সৈকতের পাশের টেবিলে ওর মোবাইলটা চলছে। মোবাইলের গেম থেকে অনবরত গুলির শব্দ আসছিল। কিন্তু মোবাইলের বাটন না টিপলে তো গুলির শব্দ আসবেনা। আর সেই গুলির শব্দ থেমে থেমে আসছিল। স্থির থাকতে না পেরে সৈকতকে ডেকে তুললাম। ঘুম চোখে সেই দৃশ্য দেখে সৈকতও অবাক হয়ে গেল। তারপর ও নিজের মোবাইলের ব্যাটারি খুলে মোবাইল সমেত ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। বাকি রাতটুকুতে আর কোনো উপদ্রব হয়নি। পরের দিন আমরা জোঙড়ী পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আর এগোতে পারিনি। জোঙড়ী থেকেই ফেরত এসেছিলাম। পরে শুনলাম বাকিমের ওই ট্রেকার্স হাটে অনেক পর্বতারোহী মারা গেছেন। আমরা যাওয়ার বছরখানেক পরে একজন বাঙালি টুরিস্ট সেই বাকিম থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন। খবরটা টিভিতে দেখেছিলাম এবং খবরের কাগজে পড়েছিলাম।
--
No comments:
Post a Comment