মুজনাই সাপ্তাহিক
নদী সংখ্যা
আমার প্রিয় নদী
অদিতি মুখার্জী (সেনগুপ্ত)
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের দেশ, অন্যতম একটি অংশ এ দেশের নদ-নদী। নদীবিহীন সবুজ ভারতবর্ষ কল্পনাতীত। ভারতবর্ষকে অপরূপ সৌন্দর্যে সৌন্দর্য-মন্ডিত করার পিছনে নদ-নদীর ভূমিকাই প্রধান। ভারতবর্ষের প্রকৃতিকে বৈচিত্র্য, প্রাচুর্য এবং সাথে সাথে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে এই নদীগূলি।
ভারতবর্ষের উল্লেখনীয় নদীর মধ্যে গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, কাবেরী, নর্মদা, গোদাবরী, মহানদী ইত্যাদির প্রাধান্য বেশি। তবে প্রিয় নদীর কথা বলতে গেলে, আমার প্রিয় নদীটি ওড়িষা রাজ্যে প্রবাহিত ব্রাহ্মণী নদী।
ব্রাহ্মণী, পূর্ব ভারতের ওড়িষা রাজ্যের একটি প্রধান মরসুমি নদী। এই নদীটি শঙ্ক ও দক্ষিণ কোয়েল নদীর সঙ্গমে গঠিত হয়েছে এবং সুন্দরগড়,দেওদর,আঙ্গূল,ধেঙ্কা নল,কটক,জাজাপুর ও কেন্দাপাড়ার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীটি বৈতরনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ধামরার কাছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়ার আগে একটি বৃহত্তর বদ্বীপ গঠন করে।
বাবার কর্মস্থল ওড়িষার সুন্দরগড় জেলার অন্তর্গত রাউরকেল্লায় ছিল, সেই সুত্রেই আমার শৈশব ও কৈশোর রাউরকেল্লাতেই কেটেছে। আর প্রায় প্রত্যেক শীতেই ব্রাহ্মণী নদীর ধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পিকনিক স্পটগুলোতে বনভোজনে যেতাম। সারাটা দিন খুব আনন্দে কেটে যেতো। কিছু উল্লেখনীয় পিকনিক স্পটগুলো হল- ঝিরপানী, ব্লুস্টোন, লেগুন পার্ক, ভালুলতা, কুয়ারমুন্ডা, দার্জিং ইত্যাদি। নদীর ওপর পিতমবল বাঁধ আর মন্দিরা বাঁধ দুটি খুবই আকর্ষণীয় এবং তাই পর্যটক বহুল স্থান।
ব্রাহ্মণী নদীর তীরে অবস্থিত আরো একটি রমনীয় স্থান যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ,তা হল বেদব্যাস মন্দির। এই মন্দিরটির নামকরণ মহাকাব্য মহাভারতের রচয়িতা বেদব্যাস মুণির নামেই হয়েছে।
যখনই কোন প্রবাহমান নদীকুলে যাই, স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ, কুল-কূল শব্দে প্রবাহিত ব্রাহ্মণী নদীরকথথা মনে পড়ে যায়। অনেক গভীর ভাবে এই নদীটি যেন আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটির প্রবাহমান ধারার সাথে আমি নিজের গতিশীল জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পাই। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার এক অমর গাঁথা বুকে নিয়েই যেন এই নদীটি নিরন্তর ছুটে চলেছে উৎস থেকে মোহনা অবধি।
ছবি ধার - ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment