মুজনাই সাপ্তাহিক
অন্তর্লীন
বৈশাখী চক্রবর্তী
প্রায় বছর পঁচিশেক বাদে এ শহরে শান্তনু সেন।চুলে রূপোলি রেখা,কিছুটা মেদের বাহুল্য,শান্ত,স্থিতধী... জীবন মানে তার কাছে শুধু কোন কিছুর মোহে ছুটে বেড়ানো নয়,বরং নির্মোহ এক প্রত্যাশায় জীবনকেই ছুটিয়ে বেড়ানো।সে হেঁটে যেতে চেয়েছিলো সুদূর দিগন্ত-রেখায়, যেখানে আকাশ-মাটির মিলনরেখা চুমে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা নামে।তারপর ফিরতে চেয়েছিলো কোনো শিশিরভেজা পথে হেঁটে।
এঁকেবেঁকে চলেছে পাহাড়ি রাস্তা--সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পাইন গাছ।হঠাৎ-ই অপার্থিব এক শিহরণ।আজ-ও পাইনের সারির শেষ বিন্দুতে রূপোর থালার মত বড়সড় চাঁদটা শব্দহীন ঝুলে আছে।কিছু অমূল্য স্মৃতি দৃপ্ত কণ্ঠে তাকে বলায়.."মাঝখানে আমি আছি,চৌদিকে আকাশ তাই দিতেছে নিঃশব্দ করতালি...." মাঝেমাঝে বড় হিংসে হয় রবি-ঠাকুরকে।
কোনো এক শীতের বিকেলে এই রাস্তায় পা ফেলে তার সঙ্গে এগিয়েছিলো এলো খোঁপা,কালো টিপ,লাল-সবুজ ডুরে শাড়ি...তারপর বাঁক ঘুরে হারিয়ে গেছিলো,যেমন আচমকা বুক খালি করে হারিয়ে যায় গোধূলি।আজ প্রতিটি বাঁক যেন অষ্টাদশী তরুণীর নির্লিপ্ত চাহনি..শুধু তাকিয়ে থাকতে,ডুবে যেতে মন চায়।
বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেছে...মনে হতেই জোরে পা চালায় শান্তনু। এই মুহূর্তে কি সে কিছুটা বিচলিত?উদভ্রান্ত?না,না....এটা তার মনের ভুল..ঠিক এমনি একটা নির্ভেজাল উন্মুক্ত বাঁধন-ছেঁড়া জীবন-ই তো তার কাম্য ছিল!
গেস্ট হাউসের কাছে এসে চোখে পড়লো কেয়ার-টেকার বাহাদুর দু হাতে মস্ত বড় দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসছে। অত্যন্ত সাদামাটা,অতিথিপরায়ণ,সদাহাস্যময় মানুষটি এই দুদিনেই বেশ আপন হয়ে উঠেছে নিজ গুণে।শান্তনু বলে উঠলো.."আপ আভি লওট রহে হ্যায়? ইতনা দের?"...."হাঁ সাব, ইঁহাকা সিচুয়েশন আভি ঠিক নেহি হ্যায়...রোজিলা,মেরা বিবি না জানে কিতনা চিন্তা কর রহি হোগি!"....বলতে বলতে ত্রস্ত পদে তার ঘরের দিকে এগিয়ে যায় বাহাদুর।
ধীর পায়ে রিসেপশন কাউন্টার-এর দিকে এগিয়ে যায় শান্তনু সেন....১২ নং রুমের চাবিটা নিয়ে কিছুক্ষন থমকে দাঁড়ান...মুখে এক চিলতে মৃদু হাসি...নির্দায় যে তিনি।
No comments:
Post a Comment