Saturday, August 14, 2021


 

মু না ই 

বিশেষ সংখ্যা  

১৫ আগস্ট ২০২১


মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)


প্রচ্ছদ- অভ্রদীপ ঘোষ 

প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা, প্রচ্ছদ,  অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 


স্বাধীনতার অন্য গল্প 


লোকাল ট্রেন

রীনা সাহা


কবি কাম হকার অবিনাশ লোকাল ট্রেন বন্ধের দুঃখে দূরপাল্লার এক ট্রেনে চেপে বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই । ঘুম ভাঙতেই দেখে যন্তরমন্তরের সামনে দাঁড়িয়ে । ওকে দেখে এলিয়েন ভাবা দিল্লি পুলিশের জেরায় দুহাত তুলে সটান আকাশে ,

---এই নিন সারেন্ডার । জেলে নিয়ে যান । খাওয়া-পড়া ছাড়া কিচ্ছুটি দিতে হবে না । আর হ্যাঁ আমার এই লিটল ম্যাগাজিনের ঝোলাটা সঙ্গে রাখতে দেবেন । এতে আমি ছাড়াও অনেক উঠতি কবির কবিতা আছে । জেলের  সবাইকে পড়ে শোনাবো । 
জাতীয় ভাষার পুলিশ কি আর বাংলা বোঝে  ! কবির ঘাড়ে দে দনাদন । পিকে সিনেমার আমির খানের মতো আলু আলু চোখে দু'চারখানা রদ্দা হজম করে বেমালুম ছাড়া পেয়ে যায় অবিনাশ । ছাড়া পেয়েই ভাবে "হুকুম মেরি আকা" না বলতেই যখন দিল্লি এসে গ্যাছে তখন লালকিলার ওই তিরঙা না দেখে কিছুতেই ঘরে ফিরবে না । পঁচাত্তরের বুড়ি কাপড়টা কড়কড়ে না ন্যাতিয়ে ত্যানা , অশোক চাকার নাট-বোল্ট গুলো শক্ত না লটরপটর , দেখতে হবে না ! হাজার হলেও পেঁদিয়ে , খেদিয়ে পাওয়া "আ মরি" হিন্দুস্তান ! আচ্ছা দিনের দূষণ ফ্রী সাচ্চা বাতাস আর সিংহবাহিনী টাইট থাকলে অশোকের চাকা ঘোরা CEAT টায়ারের ফোর্টিন জেনারেশনেরও ক্ষ্যামতা নাই আটকায় । এসব খেলা খেলা কথা ভাবতে ভাবতে রেডরোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে সিধা কেল্লার মাথায় । সেখান থেকে দন্ডের মুন্ডে উঠতে গিয়ে বারে বারে পিছলে , রামভকত্ হনু নাচ নেচে ,  পতাকা ছোঁওয়া মাথায় তুলে হাঁটা পথে এক্কেরে কুতুব মিনারের পায়ের নীচে । খানিক জিরিয়ে অবিনাশের ইচ্ছে হ'ল যে করেই হোক আইফেল টাওয়ারে চড়ার অপূর্ণ সাধ আজই মিটিয়ে নেবে । স্পাইডারম্যানের চেয়েও কতটা স্বাধীন এবং পারঙ্গম একবার পরখ করে দেখবে না ! ভাবাও শেষ আর অমনি অলিম্পিকের হাইজাম্প ইভেন্টের যোগ্যতা অর্জন পর্বের সুখস্বপ্নে বিভোর অবিনাশ জম্পেশ একখানা জাম্প মেরে কুতুবের মগডালে । আহ্ কি ভীষণ কুতুবুদ্দিন আইবক আইবক লাগছে ! এখানে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে স্বাধীন দেশের মডেল প্রজেক্ট সেন্ট্রাল ভিস্তার বিল্ডিং বানানো দেখবে । কারিগররা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে কি না , হাজার পনেরো মাস মাইনের ইঞ্জিনিয়াররা নকশায় ভুল করছে কি না  , কন্ট্রাক্টারের প্রোমোটাররা এক্সপায়ার্ড মাল-মেটেরিয়াল ঠুসে দিচ্ছে কি না , খুল্ যা সিমসিমের খাজানা লুঠ হচ্ছে কি না ----- সব হিসেব নিকেশ নিয়ে তবেই নামবে ।  হাজার হলেও ওই প্রাসাদ তো তারও । ভিস্তার ভেতরে না হোক , কোনো একদিন দিল্লির হোটেলে ঘর না পেয়ে পদ্মলোচন অট্টালিকার মার্বেল মোড়া সিঁড়ির কোণায় নেড়ি কুত্তার সঙ্গে বেড শেয়ার করে বিনে পয়সায় দিল্লি কা এক রাত কাটাতে তো পারবে !  কুত্তা - শেয়াল - পিঁপড়ে জাতীয় মনুষ্যেতর প্রাণীকূলের সৌভাগ্যের কথা ভেবে জ্বলে খাক হয় অবিনাশ । মনের কষ্টে সুর ভাঁজে ---- " মেরে দেশ কি ধরতী সোনা উগলে , উগলে হিরে মোতি .... "   

গান থামিয়ে বিড়বিড় করে ,
       আচ্ছা ওই প্লেট প্লেট সাজানো ধরতী ভেদ করে হিরে - মোতি তো আর এমনি এমনি উগলায় না ! যারা উগলায় , সেই লোকগুলো কি করছে এখন ? খবরের কাগজে পড়েছে ওরা সব লাঙ্গল গুঁতানি ছেড়ে আশেপাশেই কোথায় যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে । কাল একবার স্কাইওয়াক করে ওদের সঙ্গেও দেখা করে আসবে ।

         ছোট্ট মগজে এত সব ভেবে হাই উঠছে অবিনাশের । সারাদিন ছোটাছুটি করে ঘুম পাচ্ছে । মিনারের মাথায় ঝোলা পেতে শুতে গিয়ে নীচে তাকাতেই  দেখে পিলপিল লোক হাত-পা নেড়ে  নামতে বলছে ওকে । ছোট , বড় , মাঝারি কিশোরী সিং -য়ের মতো পুলিশ , গন্ধ শোঁকা কুকুর , জলকামান , কান্নাগ্যাস এতসব নিয়ে হঠাৎ কখন হাজির হয়েছে ওরা টের পায়নি তো ! আরে ! ওদের ভিড়ে ওই তো আমাদের ঢাল-তরোয়াল ভারভারাকেও দেখা যাচ্ছে । চোখ কচলে ফের তাকায় । কই হাতে-পায়ে শিকল দেখছে না তো ! শহীদ মিনার থেকে পড়ে তার মতো ছাগলের তিন নম্বর বিপ্লবী বাচ্চা শহীদ হ'লে স্বাধীনতার আমেজে চোনা পড়বে বলেই কি ওনাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে ওকে নীচে নামাতে পাঠিয়েছে ? কোনমতেই  নামবে না সে । মিনারের নীচ থেকে ওপর অবধি তুমুল ভাইব্রেশন শুরু হলেও নামবে না । জীবনে প্রথমবার মওকা পেয়েছে তার আইডল কবিকে কবিতা শোনানোর । নিজেকে বেশ শোলে সিনেমার বীরু বীরু লাগছে । হেলেদুলে ডায়লগবাজি করে কবিতা পড়বে । পটাপট ঝোলা থেকে বেরিয়ে বিক্রি হয়ে যাবে কবিতার বেড়ালছানারা । ভাবতেই ভারতরত্ন ভারতরত্ন অনুভব হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার পাওয়ার ছবিস্বপ্নে ,  ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ক্লিক ক্লিক অবিনাশ চিৎকার করে নিজের লেখা কবিতা পড়তে শুরু করে ,

           বার্লিন প্রাচীরের মতো
           ভাঙবার কিছু নেই ব'লে
             ভাঙতে শিখিনি আমরা।

             আমাদের চোখের রঙ সাদা ব'লে
               মানুষের অধিকারের প্রতিটি মৃত্যু দিনে
                সাদা ফুলে রঙিন হই আমরা।

             ভারভারারা না চাইলেও
          ডান হাতের বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীর বিনিময়ে
                  হাতের শেকল , পায়ের বেড়ি
                    খুলিয়ে নিই আমরা ।

     দু'লাইন কবিতা পড়া বাকী থাকতেই ডান হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনী কাটা ঝোলা বাহক অবিনাশ পতাকার কার্টুনের সঙ্গে হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আনলোড হয় ।  সাদা দাড়ি-চুল বেতালের মতো পতাকার পালে চেপে "আজ ম্যায় উপর , আসমা নীচে..." গানের ভেলায় দিল্লি-হিল্লি দুলতে থাকা অজর অবিনাশ নীচে তাকিয়ে দেখে ---- লোকাল ট্রেন তখনও বন্ধ ।  
                                        


ভাবনায় স্বাধীনতা 

সহিষ্ণুতার পতাকার সামনে দাঁড়ানোর সময় এসেছে

গৌতম চক্রবর্তী

দেখতে দেখতে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা দিলাম আমরা। সাত দশক পার করেও সবই কী রকম ভোরের কুয়াশার মতোই আবছা আর অনিশ্চিত হয়ে রয়ে গেল আমাদের দেশে। দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদেশ নীতি, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের হরেকরকম লোভনীয় ছাড়ের জাঁকজমকের আড়ালে সেই একই জং ধরা গড়িয়ে গড়িয়ে চলা নিরাপত্তাহীনতা। অপুষ্ট, অশিক্ষিত, নির্যাতনের শিকার দরিদ্র দেশবাসীর সেই অন্তহীন লড়াই। কর্মসংস্থানের বিবিধ সরণি উন্মুক্ত হলেও স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়েই পড়ে থাকলেন দেশের অজস্র মানুষ কর্মহীন, খাদ্যবস্ত্রহীন, নিরাপত্তাহীন অবস্থাতে। নারী নিরাপত্তা, দুর্নীতি রোধ ইত্যাদি প্রশ্নে লড়াই ফুরোল না সাধারণ মানুষের। শুধু শাসকের রং বদলায়, নীতি বদলায়, কিন্তু দিন বদলায় না। জাতীয় দিবস পালনের গুরুত্ব জানতে পারিনি দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষকে প্রশ্ন করে। তাদের বরং আতঙ্কিত প্রশ্ন ‘কতবার ভিটে হারাব আর? আবার কি দেশ ভাগ হয়ে যেতে পারে? কোথায় যাব?’ ভারত মানে যদি অখণ্ড এক চেতনায় বাঁধা কোটি কোটি নাগরিকের একাত্মতাই হয়, তবে খুব জরুরি জাতীয় দিবসের ঠিকঠাক পর্যালোচনা, খুব জরুরি এর গুরুত্ব সাধারণ মানুষকে বোঝানো। যে সহিষ্ণুতার কথা সংবিধান ঘোষণা করেছে তা থেকে যেন কোনও মূল্যেই আমরা বিচ্যুত না হই। ঠিক কতটুকু সহিষ্ণুতা আর কতটুকু স্বাধীনতার সীমা টপকে গেলে আচরণ উগ্রতায় রূপান্তরিত হতে পারে এই সূক্ষ্ম ভেদাভেদটুকু জানাও খুবই জরুরি। না হলে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ থেকে যায় যে কোনও ভুল পাঠের মতোই।

 ওরা স্কুলে আসত প্রতি বছর। সরকারি প্রকল্পের স্কুলপোশাকে ১৫ ই আগস্টের বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ায় অথবা ঝলমলে দিনে হাল্কা শীত রোদের উষ্ণতায় মণীষীদের সম্মানজ্ঞাপক কোন অনুষ্ঠানে অথবা প্রজাতন্ত্র দিবসে হি-হি করে কাঁপতে কাঁপতে কুয়াশা জড়িয়ে। ছোটরা হাতের মুঠোয় ভরে আনত টগর, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, ডালিয়া আরও কত-কত নানা মরসুমি ফুল আর পাতা। গেরুয়া-সাদা-সবুজ রঞ্জিত ত্রিবর্ণ পতাকার সামনে উত্তেজনা-মাখা এক ঝাঁক নবীন এসে ভিড় করত দুটো বছর আগেও। ড্রিল, মার্চ পাস্ট, দেশাত্মবোধক গান, নাচ আবৃত্তি, একদিবসীয় ফুটবল- সারাদিনব্যাপী কত অনুষ্ঠান। সেদিন ওদের মিড-ডে মিল থাকত না। গোটা বা আধখানা ডিমের জন্য আসেনি সেদিন ওরা। স্কুলে যে লাড্ডু, লজেন্স বা বিস্কুট দেওয়া হবে তার জন্যও না। ওরা শুধু জানত সেদিন একটা বিশেষ দিন। ছুটি, কিন্তু ছুটি নয়। স্কুলে দিনটা পালন করা হয়। এখনও জানে। কিন্তু আসার অনুমতি নেই। অভিভাবকেরা এবং সেই সঙ্গে সমাজপতিদেরও বিধান বাইরে বেরোনো যাবে না। ভয়ঙ্কর করোনা আবহ সবকিছুকেই ওলোট পালট করে দিয়েছে।

 ওরা জানে স্বাধীনতা দিবস মানে জাতীয় পতাকাকে অভিবাদনের দিন। আবেগতাড়িত বাচ্চাগুলোর ধর্ম-বর্ণ-জাতি-শ্রেণি যেমন এই স্কুল পোশাকের কাছে তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয়, ঠিক তেমনই ‘ভারতবাসী’ পরিচয়ের কাছেও তুচ্ছ মনে হয় যাবতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এই আবেগটার নামই স্বাধীনতা, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র, সাধারণতন্ত্র। এখানে প্রজার বিপরীতে কোনও ‘রাজা’ নেই। আছে শুধু এক জাতীয় চেতনা। ওরা ইতিহাস বইয়ে পড়েছে অনেক লড়াইয়ের পর স্বাধীনতা এসেছিল এই দেশে। ওরা দেখেছে, ইতিহাস পড়াতে গিয়ে স্কুলে শিক্ষকেরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন আজও। তাঁরা বলেন ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক সার্বভৌম এক ধারণার কথা। শুধু স্বাধীন হলেই তো সবটুকু পাওয়া হয় না, স্বাধীনতা উপভোগ আর উদযাপনের আবশ্যিক শর্ত হল নিজের মৌলিক অধিকার ও দায়িত্ব বিষয়ে একই সঙ্গে সচেতন এবং উদ্যোগী হওয়া। পতাকাকে অভিবাদন করা আর জাতীয় সঙ্গীতের উচ্চারণ আমাদের যে মানসিক তৃপ্তি দেয়, জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের মর্যাদার প্রতি উন্মুখ করে, ছাত্রছাত্রীদের সেই স্পর্শটুকুই দিতে চাই আমরা।

 যখন প্রশ্ন তোলে কোনও কৌতূহলী মুখ স্বাধীনতা বা প্রজাতন্ত্র কথাগুলোর মানে আসলে ঠিক কী? তখন বোঝাতে হয় এ আসলে  সাধারণের জন্য সাধারণের তৈরি শাসনব্যবস্থা। ‘আমরা সবাই রাজা/আমাদের এই রাজার রাজত্বে’। সংবিধান নাগরিকদের সেই অধিকার দিয়েছে। তাঁরা দাবি করতে পারেন রাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। প্রতিটি নাগরিকের সংশয়ের সবকিছু নিরসন করা আদর্শ হলেও হয়তো সব সময় তা সম্ভব নয়। কিন্তু গণতন্ত্রের মূল ভাবনা তো এটাই যে সংখ্যাগুরুর সুর-স্বরের আড়ালে যেন সংখ্যালঘুর সুর-স্বর ঢেকে না যায়। তা না হলে যে জাতীয় সঙ্গীতের প্রাথমিক শর্তটিই বিঘ্নিত হয়। এ শর্ত বজায় রাখার ঐতিহ্য ভারতের চিরকালীন আর তাকে মান্যতা দিতেই স্বাধীনতা বা প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন। সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমাদেরই পূর্বপ্রজন্ম স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিয়ে চূড়ান্ত নির্যাতন সহ্য করে প্রাণের মূল্যে এই স্বাধীনতা এনেছে। তাই এই স্বাধীনতা, এই সাধারণতন্ত্র আমাদের প্রত্যেকের। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মূল সুর ছুঁয়ে থাকুক আমাদের। আরও বেঁধে বেঁধে থাকা, আরও নম্রতা, আরও সহমর্মিতা আশা করে, দাবি করে জাতীয় পতাকা। সহিষ্ণুতার অভিজ্ঞান সেই পতাকার সামনেই দাঁড়িয়ে আমরা, আমাদের বাচ্চাগুলো।

ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অঙ্গীকারের কথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উল্লেখ করে থাকলেও সুযোগ পেলেই যারা অন্য দেশে চলে গিয়ে উপার্জন করা বা জীবন কাটানোর কথা ভাবেন না, তাদের বোঝান দরকার যে সংবিধানের প্রতিটি শব্দ তাঁদের জীবনমন্ত্র হতে পারে। দেশকে দশের করে তোলার ব্রত ওই কাঁচা মুখগুলোই একদিন নিতে পারে, নেবেও। যারা অন্যদিকে বসে সামান্য হলেও অর্জন করেছি অথবা সুযোগ পেয়েছি স্বাধীনতার দিবসের অর্থ উপলদ্ধির তারা যেন শুধু নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখি এই দিনটিকে বা শুধু ক্যালেন্ডারের একটি পালনীয় ছুটি বলে রঙ্গে না মেতে উঠি। এর প্রবাহ বজায় থাকুক সারা বছরের সচেতনতায়। দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, সম্প্রীতি যদি নতুন করে প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হয় তা হলে যেন তা নিয়ে রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার স্বাধীনতা ও সংশয় প্রকাশের অবকাশ থাকে। রাষ্ট্রেরও বাধ্যবাধকতা আছে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি। গণতন্ত্রে শাসক কখনওই রাজা নন, আর তাই প্রশ্নাতীতও নন। প্রজাদের ক্ষমতাতেই শাসকের ক্ষমতা নির্মিত হয়। নাগরিকেরও তেমন অধিকারের সীমা বুঝে নেওয়ার মতোই আছে কর্তব্য এবং দায়িত্ব। ক্ষমতা আর দায়িত্ব হাত ধরাধরি করে চলে বলেই অধিকারের সীমা জেনে নেওয়া জরুরি। নিরঙ্কুশ, নিঃসংশয় প্রশ্ন করার স্বাধীনতা চেয়েই তো একদিন পথে নেমেছিলেন পরাধীন ভারতের মানুষ। সংবিধান সেই পবিত্রতম গ্রন্থ, যা আমাদের নিজস্ব মত প্রকাশের আর অন্যের মতের প্রতি সহিষ্ণুতার কথা একই সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছে।

তাই পঁচাত্তরের স্বাধীনতার শপথ হোক আবার শুরু হোক উপযুক্ত নিরাপত্তা নিয়ে পঠন পাঠন সহ দৈনন্দিন কাজকর্ম। সকাল সাতটা থেকে ন'টা পড়া মুখস্থ করুক বাচ্চাটা অথবা যন্ত্রের মতো তৈরি হয়ে স্কুল বাস ধরুক শিশুটা। ইস্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে আসার পথে আবার ঠোঁট দিয়ে আইসক্রিমের কমলা রং গড়িয়ে পড়ুক নীল-সাদা স্কুল ইউনিফর্মে। লেফট রাইট লেফট শোনা যাক স্কুলের প্যারাড গ্রাউন্ডে। শিশুরা আবার পাক ‘বসে আঁকো’ য় পেনসিল বক্স পুরস্কার। আবার গলিতে আসুক অচেনা মানুষ, ডেকে উঠুক পাড়ার কুকুরটা। ছোট ভাই চেনা দাদার থেকে কিনে নিক পাঁচ টাকায় দশটা ঝাল লজেন্স। আবার এয়ারপোর্টে ছেলেকে ওয়েলকাম করতে অথবা ছলোছলো চোখে বিদায় জানাতে যান বাবা মা। রাস্তার কুকুরকে আদর করে হাত ধুতে ভুলে যাক মেয়েটা। কিশোরী আবার হাতের চেটোয় পরীক্ষা করে নিক লিপস্টিকের শেড। ছাদে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আবার শুনে নিই ট্রেনের শব্দ। আবার ফুচকার ঝাল কম-বেশি নিয়ে ঝগড়া হোক দুই বন্ধুর। আবার মিছিলে পা মেলাক ছাত্রদের নিয়ে কলেজ ইউনিয়নের লিডার। আবার রিহার্সাল হোক স্টেজ কাঁপিয়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে। আবার জন্মদিনে নিভুক মোমবাতি। আবার অষ্টমী পুজোয় ধুতি পাঞ্জাবী পড়া ছেলেটার সঙ্গে চারচোখের মিলন হোক গরদের শাড়ি পড়া মেয়েটার। সন্ধে হলে ক্লাবঘরে জমিয়ে মাখা হোক মুড়ি চানাচুর আর চলুক তাস, দাবা, ক্যারাম। চলো আবার আমরা জড়িয়ে ধরি পরস্পরকে। আবার মাথা রাখি কাঁধে। আবার মেলাই হাতে হাত। দুঃস্বপ্নের কালবৈশাখী মেঘ সরে যাবে। পৃথিবীর বুক থেকে উঠবে আরামের দীর্ঘ নিশ্বাস।

 

 স্বাধীনতার সাতকাহন 

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


প্রায় দু'শো বছরের পরাধীনতার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হলেও তার চিহ্ন সর্বত্র বিরাজমান ছিল। আর আঘাতের চিহ্ন এতটাই প্রকট ছিল যে, তার জন্য দরকার ছিল দীর্ঘমেয়াদি সুচিকিৎসা এবং মোক্ষম দাওয়াই। দেশভাগ ও জাতিদাঙ্গার আঘাত তো ছিলই; সেইসঙ্গে জুড়ে যেতে থাকে রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও নিজের ফায়দালাভের ঘৃণ্য চক্রান্ত। তাই তো আজো ৭৫ বছর পরেও আমাদের দেশে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বলি হয় প্রচুর মানুষ। শাসকের রঙ বদলায়, জামার রঙ বদলায়; কিন্তু সাধারণ মানুষের দিন বদলায় না। আজো কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন। মাথা পিছু গড় আয় তলানিতে। ন্যুনতম জীবনধারণের সামগ্রী ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবচাইতে অবহেলিত দুটি দিক- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। একের পর এক শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো স্কুলছুট বা ড্রপআউট বন্ধ করা যায়নি। মধ্যাহ্নকালীন ভোজনের মতো কিছু ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি পুরোপুরি আয়ত্তে আনা যায় নি। অধিকাংশ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোন সুফল আজো পৌছাতে পারে নি। সম্প্রতি প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে অনুযায়ী স্বাস্থ্য সূচকে দেশের অবস্থান ক্রমশঃ নিম্নমুখী। স্বাস্থ্য কাঠামোর অপ্রতুলতা ও স্বাস্থ্যবীমার আওতার বাইরে থাকা  বিপুল দেশবাসীর সব সঞ্চয় চিকিৎসাখাতে নিমেষে নিঃশেষ হয়ে যায়। সামান্যতম চিকিৎসার অভাবে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারান। আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের কোন সুফল নিচুতলার মানুষের কাছে পৌছনো সম্ভব হয় না। শিল্প পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হলেও আজো বহুপথ যাওয়া বাকী। এত বিপুল মানবসম্পদ অবহেলিত, অব্যবহৃত। স্বাধীনতার সুফল কেবল কিছু মানুষের কুক্ষিগত হয়ে রয়ে গেল। গত দেড় বছরের অতিমারির মধ্যেও দেখা যাচ্ছে, যে ১৫% মানুষের কাছে দেশের ৮৫% সম্পদ রয়েছে; তাদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ পথেঘাটে, স্টেশনে অনাহারে,  অর্ধাহারে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারান। দরকার এক অর্থনৈতিক স্বাধীনতার। সংবিধান মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলেও প্রায়শই তার বিপ্রতীপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মাঝেমধ্যে সমাজকে আড়াআড়ি ভাগ করে দিতে উদ্যত হয়। অথচ " ধর্ম যার যার " হওয়ারই কথা!

স্বাধীনতা শুধু বিদেশী শত্রুর হাত থেকে নয়, দরকার সব ধরণের সংকীর্ণতা, অসহিষ্ণুতা, স্বার্থের রাজনীতির হাত থেকে। সব স্তরের মানুষের হাতে জীবনধারণের ন্যুনতম সংস্থান যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের পৌছানো সুনিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার দলমতনির্বিশেষে। নাহলে প্রকৃত স্বাধীনতা অধরাই থেকে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত গোটা বিশ্বে এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক চিপ, সেমিকন্ডাক্টর, কম্পিউটার সামগ্রী ইত্যাদির জন্য  এখনো আমদানির উপরেই নির্ভর করে থাকতে হয়। বাজেটের খুব সামান্য অংশই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন করা আশু প্রয়োজন। আইনকক্ষগুলোকে আরো বেশি দায়িত্ববোধের পরিচয় রাখতে হবে। রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দূরদর্শিতা যেন সবস্তরের মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনে, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে।
আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও সাবালক হয়ে উঠতে পারিনি। সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আজ দরকার  এক নতুন সংগ্রাম। সম্পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে।



স্বপ্নের স্বাধীনতা

শ্রাবনী সেনগুপ্ত


আজ ১৫ই অগাস্ট ২০২১,ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৪তম বর্ষ পূর্তি, ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস। অতিমারীর নানা আশঙ্কা এবং বিধি-নিষেধের মধ্যেই দেশবাসী এই বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছেন।  বহু শহীদের  আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে, শোণিতবাহিত পথে স্বাধীনতা এসেছে। আমরা ভারতবাসী স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচিত করছি। ভারতবাসীর অনেক প্রত্যাশা আর স্বপ্নকে সাথী করে আজ থেকে ৭৪ বছর আগে স্বাধীনতা এসেছিলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও বরাবরই ভারতবাসী স্বাধীনতার ধারণাটিকে মালায়, পতাকায়, সংগীতে এমন ভাবে আবৃত করে রাখে যে পুষ্পশোভিত মানচিত্রের মধ্যে কোথাও যে দেশের মানুষ থেকে গিয়েছে , তা প্রায়শই দৃষ্টিগোচর  হয় না। স্বাধীনতা সার্থক হয়ে ওঠে দেশবাসীর জীবন-জীবিকা-ভাষা-সংস্কৃতি ও মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, মৌলনা আবুল কালাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন প্রমুখ মনীষী এবং দেশনায়কদের কণ্ঠে বারবার ধ্বনিত হয়েছে দেশের  মানুষের জয়গান; বিভিন্ন মত ও পথের স্বীকৃতি। তাই আজ তাঁদের স্বপ্নের স্বাধীনতা উদযাপিত হোক অতি বিচিত্র অতি সমৃদ্ধ ভারতীয় গণদেবতার আরাধনায়।

নিঃসন্দেহে গত ৭৪ বছরে আমার দেশ অগ্রসরমান। আমরা সাফল্য পেয়েছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে, কিছুটা এগিয়েছি প্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক শিক্ষার বিকাশে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় আমরা এগিয়েছি,ভারত পৌছে গিয়েছে  পরমাণু শক্তিধরদের এলিট ক্লাবে। কিন্তু বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শিখর ছুঁয়েও কাটেনি নিরক্ষরতার অভিশাপ।উচ্চশিক্ষার নানা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা গর্ব করলেও তার প্রায় কোনওটিই আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করার যোগ্য নয়।ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের দরবারে পরিচিত হয়েছি ঠিকই ,কিন্তু সাফল্য সর্বব্যাপী ক্রীড়া পরিসরে  নয়। আবার শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় ভারতীয় ধারার পাশাপাশি, আমরা প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছি। আমাদের সাহিত্যচর্চা আজ বিশ্বের দরবারে সমাদৃত।  স্বাধীনতার পর উন্নতি-প্রগতির পথে অনেকদূর এগিয়েছে দেশ। বেড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। কিন্তু, সমৃদ্ধির পথে সবাইকে সামিল করতে পারিনি আমরা।  স্বাধীনতার পর খাদ্যশস্য উতপাদনে অর্জিত হয়েছে স্বনির্ভরতা। সবুজ বিপ্লবের কল্যাণে রুক্ষ-কঠোর মাটিতে ফলেছে সোনার ফসল। দুধ উৎপাদনেও  এখন আমরা স্বনির্ভর। অপারেশন ফ্লাডের দৌলতে বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উতপাদনকারী দেশটির নাম ভারত। কিন্তু, এরপরেও তো পেটে খিদে নিয়ে রোজ ঘুমোতে যান এ দেশের লাখো মানুষ। বিদেশিদের ক্যামেরাবন্দি হয়ে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট করে দেয় কালাহাণ্ডি-বুন্দেলখণ্ডের বুভুক্ষা। অপুষ্টিতে মৃত্যু হয় অমৃতের পুত্রকন্যার।

জিডিপির নিরিখে বিশ্বে দশম স্থান। ১৩০ কোটি জনসংখ্যা। ক্রয়ক্ষমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ। বৈদেশিক বাণিজ্যের হিসাবে প্রথম কুড়িটি দেশের মধ্যে জায়গা বাঁধা। মিশ্র অর্থনীতির বুনিয়াদে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ। আর্থিক মন্দায় আমরা ভেঙে পড়ি না। বিশ্বের কোনও শক্তির ক্ষমতা নেই আমাদের অবহেলা করে। কিন্তু, এই সত্য যে শেষ সত্য নয়। প্রদীপের নিচে লুকিয়ে আছে গাঢ় অন্ধকার। স্বাধীনতার প্রায় সাত দশক পরও যেখানে পড়েনি কোনও আলো। দারিদ্র্যসীমার নীচে দিন কাটাতে বাধ্য হন সহ-নাগরিকেরা। শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক ব্যর্থতায় অদক্ষ শ্রমিকের রূপান্তর ঘটে না দক্ষ মানবসম্পদে।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার হিসাব বলছে দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটির উপর।  বিশেষত করোনা কালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই সঙ্গে রয়েছে বিপুল বৈষম্য। আয়-লিঙ্গ-শ্রেণী, সবদিক দিয়েই  দ্বিখণ্ডিত জীবনযাপন।প্রান্তিক মানুষ রোজ হারাচ্ছেন জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার। উন্নয়নের জোয়ারে ভিটে-মাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছেন স্বাধীন দেশের নাগরিকেরা।

দেশ পোলিও মুক্ত হয়েছে,একথা সত্য। কিন্তু শিশুমৃত্যুর হার এখনো নিম্নগামী হয়নি।সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হচ্ছে। দেশে যত মোবাইল আছে তত শৌচালয় নেই। সরকারি ইঁদারা থেকে খাবার জল আনতে যে মহিলাকে রোজ পেরিয়ে আসতে হয় কয়েক ক্রোশ পথ, তাঁর কাছে কোন অর্থ বহন করে আনে এই স্বাধীনতা?

রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারত ১৩১-এ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে রাষ্ট্রনেতাদের মুখে ইনক্লুসিভ গ্রোথ বা সকলকে নিয়ে উন্নয়নের কথা কত বড় প্রহসন। এক দেশের মধ্যে কী ভাবে লুকিয়ে থাকে আর একটা দেশ।৭৪ বছর অতিক্রম করেও আমরা পারিনি জাতিভেদের মতো সামাজিক বৈষম্যকে রুখতে। সাম্প্রদায়িকতার ভ্রূকুটি আমাদের তাড়া করে ফেরে।  ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনা সংবিধানের মলাট পেরিয়ে ভারতীয় সমাজে সর্বগ্রাহী হয়ে উঠতে পারেনি।

তাই লক্ষ্যভেদ করার জন্য গন্তব্যের সন্ধানে আমাদের যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতার সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কতদিন? কত দিন লাগবে আর, সোনার ভারত গড়তে ?



স্বাধীনতা ও বাপুজি 


পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় 

১৯৪৭   সালের  ১৫ ই আগষ্টের  স্বাধীনতা  দিবস  যদি  প্রজ্জ্বলিত  প্রদীপ   শিখা  হয়, তাহলে সেই  প্রদীপের  সলতে  পাকানোর  কাজটি  করেছিলেন  মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী । ১৯৪২  সালের  ভারত ছাড় আন্দোলনের মধ্যে  দিয়ে। ১৯৪২  এর  ৮  ই  আগষ্ট বোম্বাইতে অনুষ্ঠিত  ভারতীয়৷ জাতীয়৷ কংগ্রেসের অধিবেশনের৷  পর,  তিনি   গোয়ালিয়র  ট্যাংক ময়দানে  ( আমরা  যাকে আগষ্ট ক্রান্তি ময়দান নামে জানি)  বৃটিশ  শাসকের  অত্যাচারে জর্জরিত  ভারতীয়দের  পরাধীনতার  শৃংখল মোচনের  জন্য  ভারত ছাড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।  তাঁর  আহবানে  সাড়া দিয়ে দেশনায়ক সুভাষ চন্দ্র বসু, বাল  গঙ্গাধর তিলক, বিনয়, বাদল, দিনেশ  সহ  শত  শত  শহীদ এই আন্দোলনে  ঝাঁপিয়ে  পড়েন।  তারা নিজেদের প্রাণ  বলিদান  দিতেও  পিছপা  হন নি। ক্ষমতা লোভী  বৃটিশ  সরকার  বুঝতে পেরেছিল যে এই আন্দোলন  তাদের  ভারত ছাড়তে বাধ্য করবে। 

বাপুজি  উচ্চ  শিক্ষায়  শিক্ষিত  হয়ে, ব্যারিস্টার হয়েও  নিজের  বেশভূষা, পোশাক  পরিচ্ছদের আড়ম্বর  বিসর্জন  দিয়ে,  সাধারণ  মানুষের একজন  হয়ে  উঠেছিলেন।  

তাঁর  নেতৃত্বে  ডান্ডি অভিযান ও এক ঐতিহাসিক  মিছিল।  যে জনজোয়ারের রেকর্ড আজও  অবধি  কোন  দেশনেতা  বা দেশনেত্রী ভাঙতে  পারেন নি।  ডান্ডি  অভিযানের  মতই  লবন  অাইন  ভঙ্গ  এবং  করেঙ্গে  ইয়ে  মরেঙ্গে ( Do or Die)  ভারতীয়  দের  মনে  প্রাণবায়ু  জুগিয়েছিল।  তার  প্রেরণায়  মানুষ  সৎ ভাবে জীবন  যাপন  করত।  মানুষের মূল্যবোধ এতটাই   সুদৃড়  হয়েছিল  যে  বৃটিশ শাসকদের মনে  ভীতির  সঞ্চার  ঘটিয়েছিল। 

দেশবন্ধু  চিত্তরঞ্জন  দাস  এবং  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী  কে  ঈশ্বরের আসনে  বসিয়েছিলেন।  নেতাজি  সুভাষ চন্দ্র বসুর  চরমপন্থা  এবং  মহাত্মা গান্ধীর নরমপন্থা একযোগে  ভারতবর্ষের  স্বাধীনতা কে তরান্বিত করেছিল। 

১৯৪৭  সালের  ১৫ ই  আগষ্ট  যখন  দিল্লিতে লালকেল্লায়  স্বাধীনতা  দিবসের  উৎসব হচ্ছে,  গান্ধীজী  তখন  কোলকাতায়  জাতি  দাঙ্গার আগুন নেভানোর  কাজে  ব্যস্ত ছিলেন।  

তিনি  দেশ  ভাগের  বিরুদ্ধে৷ ছিলেন।  দেশ ভাগের  বিষয়ে  তিনি  বলেছিলেন,  " You can cut me into two,  but don't divide India. 

আজ  গান্ধীজীর  মৃত্যুর  ১৭৬  বছর  পরেও   তিনি   সমান  ভাবে  প্রাসঙ্গিক।  তার সেবার আদর্শ  মানুষ  কোনদিন  ভুলতে  পারবে না। আজও  আামাদের   স্বচ্ছ  ভারত অভিযানে তার চশমা  কেই  লোগো  করতে  হয়।  আজ  মহান পবিত্র  দিনে  আপনাকে  স্মরণ  করি,  প্রণাম জানাই।




মুক্ত ধারায় এসো  
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী 

আকাশের শুভ্রতার সঙ্গে দিগন্তের শ্যামলীমা ও সূর্যোদয়ের কোমল গেরুয়া আভাস মিলেমিশে জানান দিল এক নতুন ভোরের। ভারতের স্বাধীনতার ভোর, স্বপ্নপূরণের ভোর,আনন্দের ভোর। স্বাধীনতা তুমি.... তোমার জন্য,তোমাকে ভালোবেসে, তোমার সম্মাননায় কত আয়োজন। তুমি যে দেশবাসীর পরম আকাঙ্খার, যত্নের, নতুন প্রত্যয়ের, নতুন শপথ গ্রহণের দিন। জাতীয় পতাকার উত্তোলনে, কুচকাওয়াজের ছন্দবদ্ধতায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাড়ম্বরে সেজে ওঠো তুমি।
 
      তোমার এই আসবার পথ একদিনে প্রশস্ত হয়নি। ভারত মাতার বহু বীর সন্তান তোমাকে পরিপূর্ণ করে পাওয়ার আকাঙ্খায় দেশপ্রেমের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতির নেশায় মেতে উঠেছিলেন। ক্ষুদিরাম বোস থেকে শুরু করে বিনয়- বাদল - দীনেশ,  সূর্যসেন তথা ভগৎ সিং ও পরবর্তীতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সমেত আরও বহু দেশপ্রেমিক ইংরেজদের শোষণ ও অত্যাচারের নাগপাশ থেকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করে পরম আন্তরিকতায় তোমাকে নিয়ে আসবার গভীর বুনোট ধাপে ধাপে তৈরি করেছেন। অবশেষে নানান ঘটনা পরম্পরায় তুমি এলে। তবে বিভাজনও এল। ভারতবর্ষ ভাগ হলো ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি দেশে। ইংরেজরা যে বিভেদের বীজ বপন করেছিল, তা শাখাপ্রশাখা বিস্তার করলো সংঘাত, ধর্ম বৈষম্য, হিংসা ও হানাহানি রূপে। দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে যে হাজার হাজার বীর সন্তানেরা জীবনের তোয়াক্কা করেননি তাঁদের মূল্যবোধ ও কর্মযজ্ঞ এই অসহায়তার, বিপন্নতার, অবসাদের টালমাটাল সময়ে শুধুমাত্র স্মৃতি হয়েই রয়ে গেল। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিঃস্বার্থ দেশসেবার ব্রত এখন শুধুই স্বপ্ন। 

রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব,রেষারেষি, বিদ্বেষ ও ঘৃণ্য চক্রান্তে গোটা জনজীবন আজ স্তব্ধ। তোমাকে জয় করার এত বছর পরেও মানুষ তাঁর স্বাভাবিক গনতান্ত্রিক অধিকারগুলি প্রয়োগ ও উপভোগ করতে অনেকাংশেই দ্বিধাগ্রস্ত ও বিফল হয়ে পড়ছে। ধর্মে, ভাষায়, জাতিতে,  পরিধানে, মতাদর্শের বৈচিত্র্যে কত সুন্দর দেশ আমাদের। এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের আদর্শ, ভাবনা,  ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলিকে যদি শ্রদ্ধার চোখে দেখে ও সম্পূর্ণ স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সেগুলো পালনের অধিকার যদি সকলের থাকে, তবেই স্বাধীনতা তোমার সার্থকতা।
 
                                  অযুতকাল থেকে মেয়েদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে পদে পদে। নারী উন্নয়নের এ যুগেও, সমস্ত স্বাধীনতা অর্জন করেও নারীরা শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে কোনো জায়গাতেই পুরোপুরি নিরাপদ নন এখনও। বয়সের কোনো ভেদাভেদ নেই সেখানে। প্রভাবশালী মানুষদের হাতে পুতুল নাচের সুতো। সেই সুতোর নানান কারসাজিতে নেচে চলেছে সমাজের একেকটি অংশের কিছু কিছু স্বার্থলোভী মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যায়কারীর শাস্তি নেই সেখানে। স্বাধীনতা তুমি আরও সোচ্চার হও, আরও অবাধ, আরও স্বচ্ছন্দ। যাতে জীবনের অবরুদ্ধ গোপন লজ্জা, অপমান ও যন্ত্রণার আগল নিজেদের হাতেই সমাজের সর্বস্তরের নারীরা অকপটে খুলে দিয়ে অন্যায়কারীকে সামনে আনতে সক্ষম হয়। যে নারীর সঙ্গে অন্যায় হলো, তাঁর উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়,  প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ভয় যেন অন্যায়কারীর সাহস বাড়িয়ে দিয়ে তাকে ক্রমশ অদম্য না করে তোলে। প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস ও সঠিক শিক্ষা নিয়ে প্রতি পদক্ষেপে নারীদের সাথ দিও ,স্বাধীনতা তুমি।
 
                         ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করতে সমস্ত বিভেদ ভুলে, জীবনের জয়গান গেয়ে,ভালোবাসার পশরা সাজিয়ে তুমি নতুন দিনের নতুন আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখাও। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দিনের আবেগ না হয়ে প্রতিদিনের যাপনে, মননে মিলেমিশে আশার বাণী শোনাও তুমি। খেটে খাওয়া মানুষের হাসিমুখে, নিরন্নের ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালায়, লেখকের সোচ্চার কলমে, শিল্পীর প্রতিবাদী ক্যানভাসে,  চলচ্চিত্রকারের সাহসী উপস্থাপনায় বলিষ্ঠ হও; স্বাধীনতা তুমি। আমাদের দেশমাতৃকা তাঁর হৃত গৌরবকে ফিরে পাক তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতিকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর সন্তানেরা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে আসুক শক্ত হাতে হাল ধরতে। 

'মার অভিষেকে এস এস ত্বরা, মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা
সবার- পরশে - পবিত্র করা তীর্থ নীরে -
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।। '



 গল্পে স্বাধীনতা 

বন্দেমাতরম...

সুদীপা দেব

নার্সিংহোম থেকে আজ বাড়ি যাব। সঙ্গে আমার বারো দিনের বাচ্চা। খুব ভালো লাগছে।  

ভোরবেলা থেকে দূরে কোথাও মাইকে বাজছে এ আর রহমানের "মা তুঝে সালাম....."। দেশাত্মবোধক গান। সিস্টারস ডেস্কের সামনে বড় দেয়াল ঘড়িতে এখন পৌঁনে আটটা। একটু পরেই পতাকা উত্তোলন হবে। আজ পনেরই আগস্ট। স্বাধীনতা দিবস। দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কি দৃঢ় প্রত্যয় দেখিয়েছিলেন সে সময়কার ভারতবাসী। এসব ভাবতে ভাবতে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আজ আমরা স্বাধীন। আমাদের দেশের নিজস্ব সংবিধান আছে। 'স্বাধীনতা' শব্দটার কি বিশাল ব্যপ্তি! 

সিস্টার এসে বাচ্চাদের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেল। সকালবেলায় খবরের কাগজে দেখেছি গতকাল অলিম্পিক গেমসে ওয়েট লিফটিংয়ে সোনা জিতেছে দেশের মেয়ে মৌমিতা পালধি। রাষ্ট্রপতি শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন। টিভিতে সারা পৃথিবী দেখছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স করে সম্মানবার্তা পাঠিয়েছেন। দেশের মানুষ মেয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। চারদিকের বাতাসে এক খুশি খুশি অনুরণন।

ডিউটি সেরে যাওয়ার আগে ওয়ার্ড বয় এবং সিস্টাররা মিলে আমাদের কেবিন তিন-রঙা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। পাশের বেডে সাতদিনের বাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছে জুঁই। ফুলের নাম। কি সুন্দর নাম! দেখতে ও খুব সাধারণ তবে মুখে খুব সুন্দর একটা মিষ্টি কোমল  ভাব আছে। গত তিন চার দিন ধরে জুঁইয়ের সাথে বেশ গল্প করছি। বয়সে ছোট বলে ওকে নাম ধরেই ডাকছি। ও ওই দিক ফিরে শুয়ে আছে। বললাম
–এই তুই শুয়ে আছিস কেন? উঠে বস। দেখ কি ভালো লাগছে বাইরে! জানলার কাছে আয়।
তবু শুয়ে আছে। এবার বললাম
–আজ আমার ছুটি রে। এইযে ফোন নম্বর দিলাম। বাড়ি গিয়ে আমাকে ফোন করবি। জুঁই ফুলের কুঁড়ি কেমন থাকে জানাবি অবশ্যই।
ওর চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে।
–কি হয়েছে রে?
– এবারও মেয়ে হয়েছে শুনে শাশুড়ি বাড়িতে আসতে বারণ করেছে। ওদের বংশ, ব্যবসার জন্য ছেলে চাই।
–তোর বর? সে কি বলে?
–ভালো করে বুঝতে পারি না দিদি। মনে হয় আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আজ ফোন করে বলেছে প্রথম কয়েক দিন বাপের বাড়িতে থাকতে। পরে ওর বাবা মাকে বুঝিয়ে আমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। বুকের ভেতরটা কাঁপছে। খুব ভয় করছে গো!

বাইরে নার্সিংহোমের মালিক পতাকা উত্তোলন করছেন। সমবেত করতালি। তারপর
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে
ভারত ভাগ্যবিধাতা.....



 কবিতায় স্বাধীনতা 

স্বাধীনতা

শ্রাবণী সেন

সেই ছোটবেলায় মা ঘুম থেকে তুলে বলতেন তাড়াতাড়ি উঠে পড় সোনা, 
আজ বড় আনন্দের দিন...
ফুল তুলতে হবে, মালা গাঁথতে হবে, 
এসো সাজিয়ে দিই প্রভাতফেরীতে
যেতে হবে যে....
লালপেড়ে সাদা শাড়িতে সেজে ফুলেরমালা চুলে দিয়ে প্রভাতফেরীতে যেতাম.... 
ভারতমাতা সেজে কল্যাণী শুকতারার মত জ্বলজ্বল করত মধুরিমা দিদির মুখ...
আমরা ভারতবাসী, নানা পরিধানে সেজে, বিবিধের মধ্যে মিলন মহান রূপকল্প হয়ে অর্চনা করতাম ভারতমাতার... 
" ওঠো গো ভারতলক্ষ্মী, ওঠো আদি জগতজন পূজ্যা"
"এতো স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড়.. "
পতাকা উত্তোলনের পর মিষ্টিমুখ করে ঘরে ফেরা।
আজ পনেরোই আগষ্ট। 
আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
কি সেই স্বাধীনতা মা?
উত্তোলিত পতাকার তিনরঙ, পতাকায় বাঁধা ফুলের পাপড়ির ছড়িয়ে পড়ার স্বাধীনতা!
ক্ষুদিরামের গল্প শুনে অবিরল চোখে জল আসার স্বাধীনতা! 
"হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী "
কোন হাসিতে ফাঁসি পরা যায়?  
বিনয় - বাদল - দীনেশের বারান্দা যুদ্ধের
শেষে পরিণতির স্বাধীনতা! 
বাঘা যতীন, সূর্য সেন, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনীর ত্যাগে আনা স্বাধীনতা!
আমাদের হৃদয়ের সুভাষের উদাত্তস্বরে  
যুদ্ধ আহ্বানের পথে স্বাধীনতা - " তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"....
আলোচনা ক্লান্ত রক্তস্নাত স্বাধীনতা।
অনেক পথ চলে আজ বিজয়িনী আমাদের স্বাধীনতা... 
ফসলের ক্ষেতে, কৃষকের হাসিতে,
কলে- কারখানায় শ্রমিকরমণীর আঁচলের খুঁটে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের অর্থে বাঁধা আছে স্বাধীনতা। ছেলের উচ্চ শিক্ষায়, 
মেয়ের উপার্জনের স্বাধীনতায়,
বৃদ্ধ বাবার  নিরাপত্তায়, 
অশক্ত মায়ের চিকিৎসায় বাঁধা পড়েছে স্বাধীনতা!
স্বাধীনতা এগিয়ে চলে চিন্তায়, মননে, যাপনে, শিক্ষায়,  পরিযায়ী শ্রমিকের পথচলায়, ঘুর্ণিঝড়ে, অতিমারীতে, প্রতিষেধকে!
আমাদের স্বাধীন চিন্তায়...
 আজ বোধহয় বুঝি, স্বাধীনতার অর্থ... 
আজ পনেরোই আগষ্ট। 
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলে আমাদের স্বাধীনতা...
এগিয়ে যায় অগণিত বছরের দিকে,  
অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রান্ত  
তবু এখনো অনেক চলা বাকি!



স্বাধীনতা দিবসের ভাবনা
নির্মাল্য ঘোষ

স্বাধীনতা দিবসে খাঁচা বন্দী পাখি ভাবে -
'আমিও তো স্বাধীন রয়েছি খাঁচার ভেতরে '
স্বাধীনতা দিবসে রজ্জুবদ্ধ পতাকা ভাবে -
'রজ্জুবদ্ধ হলেও আমিই তো স্বাধীনতার
ধারক ও বাহক'
স্বাধীনতা দিবসে ঋণগ্রস্থ কৃষক ভাবে-
' আরে, আমিও তো স্বাধীন এই খোলা মাঠে '
ঠিক তক্ষুনি-
খোলা মাঠের ওপর দিয়ে, স্বাধীনতার ধারক উড্ডীয়মান পতাকার ওপর দিয়ে, সীমানার
কাঁটা তারের ওপর দিয়ে - উড়ে
চলে যায় একঝাঁক পাখি...
দূরে কোথায় যেন ভেসে আসে..
' জন গন মন.... '



স্বাধীনতা 
উমা শঙ্কর রায় 

বয়সের ভারে তুমি এখন জড়সড় 
কোনো ফসল তুমি গোলায় তুললে না --
                                    সব গোল্লায়! 
যে ৠজু পথ তুমি দেখিয়ে ছিলে --
যে ‌শপথ তুমি দিয়েছিলে বিপথের তিরস্কারে -
সে সব আজ শ্রাবণের মেঘ হয়ে ঝরে! 

এবার তোমার ছানি অপারেশন করাবো! 
চতুর্দিকে দেখবে কেমন ডাহুক দৌড়
তবু তোমার জন্মদিনে ভুলি না 
                                সাদা পায়রা ওড়াতে ----!




স্বাধীনতা দিবস

মাথুর দাস


স্বাধীনতা যে কী সুখ আনে জানতে হলে

জানতে হবেই  তার ইতিহাস  কৌতূহলে ।

জন-জীবনের বিভীষিকা  সে পরাধীন দিনগুলি

লাগামছাড়া অত্যাচারে স্বাধীনতায় লাগায় ঠুলি ।


বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ,  অগ্নিঝরা আন্দোলন,

মহান নেতার অভয়বাণী,  গর্জে ওঠা জনগণ,

সব মিলিয়ে অবশেষে রক্ত-রাঙা পুব আকাশ

আনলো নতুন সূর্যোদয় নবকেতনের সুপ্রকাশ ।


মুক্তির স্বাদ স্বাধীনতার  যুক্তিহীনে বুঝবে কী !

শুক্তি মাঝে  মুক্তোটুকু  মুক্ত মনে খুঁজবে কি ?

যে দিবসটি  দূর করে সব  মনঃকষ্ট স্বাদ-হীনতা,

সে দিবস পনেরো আগস্ট, বহু সাধের স্বাধীনতা ।



স্বাধীনতা এলে
বিপ্লব গোস্বামী

            

স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
নীলাভ দিনের কথা ।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
দাসত্বের সেই প্রথা।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
মা বোনের কান্না।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
রক্ত নদীর বন‍্যা।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
অপমান আর গ্লানি।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
বীর নেতাজির বাণি।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
শহীদের বলিদান।
স্বাধীনতা এলে মনে পড়ে যায়
জাতির পিতার আহ্বান ।


স্বাধীনতা 

দীপ মুখার্জি  

মুক্তির বাণী আজ ধ্বনিত

দিকদিগন্তে..

আকাশ বাতাস আজ মুখরিত

             নব আনন্দে...
নবসৃষ্টির প্রভাতী কিরণে সুর উঠেছে
           জাগরণী গানের
শ্রাবনধারায় নবসজ্জিতা প্রকৃতিতে
           যেন রঙের খেলা..
     আজ যে স্বাধীনতার দিন!!


     মুক্ত আকাশে উড়ে চলা সেই
            শুভ্র হংস বলাকা..
    স্নিগ্ধ বাতাসে উড়তে থাকা সেই
           গর্বের জাতীয় পতাকা
শান্ত সকালের সেই প্রভাত ফেরীর
             বন্দেমাতরম গান..
আর ওই যে ছোট ছেলেটা দৌড়ে আসছে
             হাতে লাড্ডু নিয়ে..
                সত্যি তো!!
        আজ যে স্বাধীনতার দিন।।


 স্মরণ করবো তোমাদেরই আজ
          দিয়েছ প্রাণ ঢেলে..
  লাঞ্ছিতা মায়ের সন্মান ফেরাতে
            দিয়েছ রক্তবিন্দু
নবযৌবন প্রাতে নবচেতনার বরণডালা
            সাজিয়ে রেখেছি
নুতুনের মাঝে আজ তোমাদের ভাব
               বর্ষিত হোক
        আসুক নুতুন সূর্যোদয়।।



স্বাধীনতা মানে 

 চন্দ্রানী চৌধুরী 


স্বাধীনতা মানেই দেশপ্রেমবুকে ভেতর দোলাচল

বীর শহীদের রক্তে রাঙা আসমুদ্রহিমাচল।


স্বাধীনতা মানেই বলিদানশূন্য হয়েছে মায়ের কোল 

ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করেছে  দামাল ছেলের দল 


স্বাধীনতা মানেই সংগ্রামস্বপ্ আঁকে চোখের জল 

তিনরঙা পতাকা হাতে এগিয়ে চলে ছেলের দল 


স্বাধীনতা মানেই বন্দেমাতরম , বাতাস জুড়ে জয়গান

ঐক্য আর সম্প্রীতিতে উজ্জ্বল হো দেশের নাম। 


স্বাধীনতা মানেই প্রত্যাশা,বিভে মুছবে রাম  রহিম

মানুষ সত্য বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনতা হোক সীমাহীন 




আমার স্বাধীনতা
বিজয় বর্মন

হে আমার মাতৃভূমি, আমার ভারতবর্ষ,
দেখি এক লহমায়,
চোখ বুজলেই আমার সাম্রাজ্য,
বুকের উপর বিষন্ন পায়ের ছাপ।

আমার উনুনে, দারিদ্র্যের আগুন,
যেন দাবানল,
সোনার ফসল, ধুঁকছে তৃষ্ণায়,
প্রকৃতির কাছে এ কোন পরাজয়।

হাতের মুঠোয় এ কোন স্বাধীনতা,
সব ভুলে যাই,
লাগামছাড়া ভাষা, খিস্তিখেউড়ে,
শব্দ ভান্ডারে কেন যে শিকল পরা।

এ কেমন আমার যাপনকাল,
বুক দুরু দুরু,
হিরিকের ভেলায় লক্ষ্য মানুষের ভিড়,
বিপদের মুখে আমি যে একলা।

পথ কুকুরের সাথে মানুষের লড়াই,
ভাগের টানাটানি,
আলোয় ঝলসানো রাজপথ জুড়ে,
ফুটপাতে বিছানা সারি সারি।

ধর্মের সুরসুরি, হুজুগে বানভাসি,
বিভেদের দাগ স্পষ্ট,
জ্বলন্ত কুন্ডে ঘৃতাহুতি, মিথ্যা শান্তির,
জিগির তুলে, কুণ্ডলী পাকায় ধোঁয়া।

হে, স্বাধীনতা , আবারও শপথের দিন,
জাগ্রত চেতনার,
উড়িছে নিশান, তিন রঙের বিধান,
মুছে যাক গ্লানি,একতার বানী হোক উজাগর।



স্বাধীনতা, তুমি
           ‎    সুনন্দ মন্ডল

তুমি কোথায়?
স্বাধীনতা!

প্রাণপণ লড়াইয়ের ময়দানে
তুমি বর্শা, কাস্তে, ছুরি, পিস্তল,
দেখেছো জীবনের একটা অংশ।

তোমার সাথে ছিল 
ভগৎ, মাষ্টারদা, বিনয়, বাদল, দিনেশ
বিজয় তুর্য নেতাজি।

আজ কেউ নেই সাথে
একা, উত্তরসূরী
স্বাধীন ভারতের পতাকাধারী।

হে বীর সৈনিকেরা
বাংলা মায়ের সন্তানবৎ
আরেকটিবার রক্ত ঝরাও, স্বাধীন করো আমাদের।

চুয়াত্তরেও পরাধীন মানবিকতায়
এখনো মানসিকতায় কত বিভেদের প্রাচীর।



স্বাধীনতা 
  বুলবুল দে


পরাধীনতার গ্লানি বইতে বইতে, শৃঙ্খলের জ্বালা সইতে সইতে,
কোটি কোটি সন্তানের লাঞ্ছনা বঞ্চনা দেখতে দেখতে,
দুঃখের দহনে যখন দাউ দাউ করে জ্বলছে তোমার বুক।
প্রতিকারের পথ হাতরে বেড়াচ্ছ হন্যে হয়ে,
ঠিক তখনই হে ভারতমাতা,তুমি অনুধাবন করলে
নারীর একান্ত আপন শক্তিকে লাগাতে হবে কাজে।
এক নতুন আশার আলোয় উদ্ভাসিত হল তোমার মুখ।
সর্বতভাবে ভাবে নারীর নিজস্ব, প্রবল প্রগাঢ় মাতৃত্ব উঠল ফুটে তোমার শরীরে।
রত্নগর্ভা হয়ে উঠলে তুমি,তোমার গর্ভখনি থেকে একে একে হল নির্গত,
মহামূল্যবান, আপন তেজে উজ্জ্বল সব মানব রত্ন। দেশমাতৃকার অশ্রু মোচনে হল তারা দৃঢ় অঙ্গীকার বদ্ধ!
একে একে ,ধাপে ধাপে ,তারা গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন খাদের থেকে তুলল টেনে ,
সংকীর্ণ ,ধর্মান্ধ ,মেরুদন্ডহীন, ভীত, শোষিত ভারতীয় ভাই বোনদের
তমসা ঘন, ক্ষয়িষ্ণু ,ধর্ম -সমাজ সংস্কার করে,  লেখনী শক্তি দিয়ে উদ্দীপিতকরে,
তাদের এগিয়ে দিল ব্যক্তিত্বের ,চেতনার উন্মেষের পথে।
সমগ্র ভারতবাসীর মনে জাগ্রত হল স্বাধীনতার স্বপ্ন।
দিকে দিকে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল বিপ্লবের তীব্র মশাল।
কেউ হানল অহিংস চাবুকের তীব্র কষাঘাত, কেউ প্রবল সহিংস বজ্রাঘাত!
আঘাতের পর আঘাতে শাসকের সিংহাসন হল টালমাটাল।
শত শত শহীদের রক্ত গঙ্গায় প্লাবিত হল ভারতভূমী।
সেই শনিত সাগরের নোনা জলে আর ঝাঁঝাল গন্ধে,
শ্বাস রুদ্ধ ওষ্ঠাগতপ্রাণ ব্রিটিশ বাধ্য হলে বশ্যতা স্বীকার করতে তুমি!
অবশেষে এল সেই বহু আকাঙ্খিত স্বপ্নপূরণের দিন।
সাতচল্লিশের পনেরই আগষ্ট, ভারতমাতা হল শৃঙ্খল মুক্ত,ভারতবাসী হল স্বাধীন!


শপথ
রীতা মোদক

কন্যা বলে মাগো তুমি
ছুঁড়ে ফেললে আমারে!
ভয় করে যে থাকতে আমার
নোংরা স্তূপের পাহাড়ে।

শেয়াল কুকুরের চিৎকারে মা
কাঁপছি ভয়ে ধুক ধুক
নাও না আমায় ফিরিয়ে মাগো
পাবে তুমি মাতৃ সুখ।

প্লাস্টিকেতে বন্দী আমি
প্রাণ যে কাঁদে বাঁচার তরে
সাহস করে তুলো আমায়
দেব তোমায় আলো করে।

ভয়কে আমি করবো জয়
গ্রহণ করবো শপথ,
আমার হাতে তৈরী হবে
ক্ষমতায়নের নতুন পথ।

জীবনের পথে এগিয়ে যাবো
দূর করবো সব যন্ত্রনা...
আমার মধ্যে লুকিয়ে আছে
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

ভিতুর মত থাকবো না আর 
পড়াশুনা করবো ,
পণ প্রথায় আর হবো না বলি
নিজের পায়ে দাঁড়াবো।


স্বাধীনতা দিবস
 অদিতি মুখার্জি সেনগুপ্ত 

স্বাধীনতা দিবসে হয় মনটা খুশিতে বিগলিত, 
আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিনে সকলেই যে উচ্ছ্বসিত। 
ইংরেজ পরাধীনতার থেকে মুক্তি পেয়েছিল সকল ভারতীয়, 
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগ সত্যিই অবিস্মরণীয়। 

আজ খুশিতে বিহ্বল হয়ে ওড়াই জাতীয় পতাকা, 
স্বাধীন দেশের নাগরিক বোধে মনে খুশির রেখা। 
দৃপ্ত কণ্ঠে আজ আমরা জয় হিন্দ বলে ফেলি, 
কত শহীদের রক্তে রাঙ্গানো দেশের মুক্তি কি করে ভুলি। 

খুশি যদিও স্বতন্ত্রতায় নই খুশি অনেক কাজে, 
ভারতবর্ষ এগিয়ে চলুক নতুন এক সাজে। 
সচেতনতায় আধুনিকতায় জ্ঞানে আর প্রযুক্তিতে, 
হোক ভারতবর্ষ সেরার সেরা এই বিশ্বতে।



অন্য ভাবনার স্বাধীনতা  

পরাধীনতার উৎসব 
সুশান্ত পাল 

একটা রাষ্ট্র কোনোদিন স্বাধীন হতে পারে?? যতদিন না অনেকগুলো সমাজ স্বাধীনচেতা হচ্ছে,, পরাধীনতা শব্দটার জন্ম স্বাধীনতা শব্দের বহু আগে তাই পরাধীনতা ঘুচবে এটা হতেই পারে না,, জিনগত ভাবে আমরা ভীষণ প্রাচীন যেমন শিম্পাঞ্জির সঙ্গে আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি সাদৃশ্য, তাই আমরা সেভাবে আধুনিক হতে চাইলেও সেটা আদতে সিকিমাত্রই,, আমরা অনেকটা খাদ্য খাদকের সারণীর মতো পরাধীনতার  সারণী জাতীয় কিছু একটা আবিষ্কার করতেই পারি,, ধরুন উচ্চবিত্ত -সাধারণ উচ্চ্যবিত্ত -মধ্যবিত্ত -নিম্নমধ্যবিত্ত -নিম্নবিত্ত -অন্তদ্বয় এটা নিশ্চই রাষ্টের কেউ তৈরী করেছিলেন,, আর এখানেই বোঝা যায় রাষ্ট্র ব্যাপারটাই ভাওতা ব্যাক্তিই ক্ষমতার অধিকারী আর জিনগত গুনে সে নিচু তলাকে শোষণ করবে এটাই চিরন্তন,, সেটা গ্রহের সকল প্রান্তে সমান ভাবে কার্য্যকর,,, তাহলে স্বাধীনতা ব্যাপারটা আসলে আমরা কিভাবে ধারণ করি ... স্বাধীনতাটা আসলে কতগুলো ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত যেগুলো ব্যাক্তি নিজেই তৈরী করে তার পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে,, আর আমরা পরাধীনতায় জর্জরিত মানুষ সেটাকেই স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেই,, বাস্তবে কিন্তু আমরা সর্বক্ষণ নিপিড়িত, বঞ্চিত,, রাষ্টের স্বাধীনতা আমাদের শুধু একটা বিশেষ তারিখ মনে করিয়ে দেয়,, এর থেকে বেশি কিছু কী??? 



হাতের কাজে স্বাধীনতা 

শিল্পী- দেবাঞ্জনা রুদ্র 
(চাল, ডাল ও পাতা দ্বারা নির্মিত)









ছবিতে স্বাধীনতা 

শিল্পী- অদ্রিজা বোস 







শিল্পী- তানভি দাম 





শিল্পী- অনুষ্কা প্রামাণিক 




শিল্পী- প্রীতম কর 


শিল্পী- পরেশ সাগ্নিক বেরা 





শিল্পী- প্রিয়দর্শিনী দাস






শিল্পী- সৃজা রায়








শিল্পী- ষোড়শী গুহ





শিল্পী- উৎসব সাহা



শিল্পী- শৌভিক  কার্য্যী



No comments:

Post a Comment