অবশিষ্ট যা কিছু....
কক্ষান্তরে
সুদীপ দত্ত
তারপর যতই দিন চলে গিয়েছে, বাবার হাতের বাঁধন ততই শিথিল হয়ে এসেছে। অথচ, আমার হাত যখন মেঘহীন আকাশের মতো পরিষ্কার ছিল তখন, সেই হাত ধরে হেঁটে গিয়েছি কত পথ। কত দিন কত রাত্রি। কত মাস কত বছর।
দিন চলে গেলে সময় বদলে যায় । সময় তখন গিলে ফেলে অনেক কিছু। শাল গাছের মতো দৃঢ় বাবাকে যেমন আস্তে আস্তে নুইয়ে পড়তে দেখেছি মাটির খুব কাছাকাছি। যেন আর একটু হলেই মাটি ছুঁয়ে ফেলা যায়। যেন আর একটু হলেই খোলা আকাশের নীচে নিশ্চিন্তে বন্ধ করে ফেলা যায় দুটো চোখ। সেই চোখে কোনও স্বপ্ন অবশিষ্ট থাকে কীনা জানা হয়নি।
জানা হয়নি, ঘাম ভেজা ভাঙাচোরা বাবার মুখ কোন স্বপ্ন নিয়ে শুধু বেঁচে থাকে। জানা হয়নি, বলাও হয়নি। সময় থেকে সময় হারিয়ে গেলে পরিধি বদলে যায়। যে হাত ধরে আমি শৈশব শেষে কৈশোর কাটিয়ে ক্রমশ ছুঁয়ে গিয়েছি নিজের পৃথিবীর পরিধি সেখানে, তারুণ্য উদ্ধত অহংকারে ঝকঝক করে ওঠে। ঝকঝক করে ওঠে কোনও তরুণীর মুখ। সমস্ত কথারা কথা বলে শুধু নিজস্বীকে কেন্দ্র করে।
বাবার ক্ষয়ে আসা দিনের কোনও ছবি সেখানে ধরা থাকে না। আবহমানের সেই আমিও হারিয়ে যেতে থাকে পরিধির ওপারে অনন্ত দীর্ঘ একটা সিঁড়ির ধাপে ধাপে। আকাশ ছোঁয়ার এই সিঁড়ি শুধু ওপরে ওঠার, শুধু বড় হওয়ার।
ক্রমশ ওপরে উঠতে উঠতে, ক্রমশ আকাশ ছুঁতে ছুঁতে আমার দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ছায়ায় ক্রমশ আবছা হয়ে আসে বাবা।
কক্ষ থেকে কক্ষে ঘুরতে ঘুরতে বাবা হওয়ার পথে এগোতে এগোতে, কখন যেন বাবা শব্দটাই তার মানে হারিয়ে ফেলে।
No comments:
Post a Comment