তিনি বৃদ্ধ হলেন....
বাবা আসলে বটবৃক্ষের ছায়া
সুবীর সরকার
১.
বাবা একটি আবহমান শব্দ।বাবা মানে অনেক ডালপালা ছড়ানো একটি মহাবৃক্ষ।বাবা আসলে
অদ্ভুত রকমের একটা ছায়া।হয়তো মায়া।আর সেই ছায়া আর মায়ার মাঝখানে একটা বলখেলার মাঠ।
২.
আমার বাবা জোতদারবাড়ির সন্তান।আমার বাবা ছিলেন সেই জোতদারবাড়ির একমাত্র শিক্ষিত।এম এ পাশ।শিক্ষকতা করতেন।
পাশাপাশি জোত ও জমি নিয়ে তার বিষয় আসক্তিও ছিল সাংঘাতিক।
৩.
বাল্য থেকেই আমি ছিলাম স্বাধীনচেতা।মুক্তমনা।ঘুরে বেড়াবার এক জীবন ছিল আমার।
সামন্তরক্ত শরীরে বহন করেও আমি ছিলাম সমস্ত কুসংস্কার,রীতিনীতির একেবারে বিপরীতে।
একটু বড় হয়ে আমি কোন পন নিয়ে বিয়ে করা বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যেতাম না।
আমি নিজেকে যুক্তিবাদের আলোয় চালিত করতে শিখে গিয়েছিলাম।
৪.
আমার বাবা আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন।কিন্তু সেটা বাইরে থেকে বোঝা যেত না।
যখন পরিণত হলাম,যখন সরাসরি আমার মতামত ব্যক্ত করতে শিখলাম তখন বাবার সঙ্গে অদ্ভুত একটা বিরোধ এবং মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেল আমার
কেননা আমি আমাদের সামন্ততান্ত্রিক পরিমণ্ডলের সকল ভন্ডামি,যুক্তিহীন কর্মকাণ্ড,কুসংস্কার আর স্বৈরাচার থেকে সচেতন দূরত্বে অবস্থান করছি।
৫.
বাবা এসব মেনে নিতে পারেন নি।
আমি আমার বিয়েতে কোন পণ নেই নাই।
আমার বিয়েতে কোন বিবাহ আচার ছিল না।
ছিল না সিঁদুরদান।আমার স্ত্রী কোন বিবাহ চিন্হ ধারণ করেন নি।
জাস্ট রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল।
আমার বাবা ও মা কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেন নি।
আমাদের বাড়ি ছেড়ে কিছুদিন ভাড়াবাড়িতে চলে যেতে হয়েছিল।
পরে অবশ্য বাবা ও মা এটাকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছিলেন।
৬.
বাবার সঙ্গে যতই দূরত্ব থাকুক,চিন্তাভাবনায় বৈপরীত্য থাকুক বাবা কিন্তু বাবাই!
এটা আমি তীব্ররকম আজ বুঝি।অনুভব করি।
আমি যখন রাতে ঘুমই বারবার বাবা এসে আমাকে দেখে যান।
স্কুল থেকে দেরিতে এলে পম্পার কাছে খোঁজ নেন।
কিন্ত বাবার সঙ্গে চিরজীবনের একটা দূরত্ব আমার থেকেই গেল।
হয়তো ব্যক্তিত্বের সংঘাত।
হয়তো কেউ কারো কাছে সংকোচজনিত কারণেই যেতে পারবো না!
এটা হয়তো সামন্তরক্তের বৈশিষ্ট্য!
৭.
আমার বাবার বয়স এখন ৮৪।
তিনি এখন দ্বিতীয় শৈশবে।
এত এত কথা বলবার পরে এটুকুই বলি,আমার বাবা আমার কাছে আদ্যন্ত এক বটবৃক্ষের ছায়া!
No comments:
Post a Comment