স্মৃতির বিদ্যালয়
শুভেন্দু নন্দী
"কোন্ পুরাতন প্রাণের টানে ছুটছে মন মাটির পানে" । শৈশবের যে শিকড় আমার প্রিয় জন্মভূমির মাটিতে প্রোথিত ছিল-সেই স্মৃতিধন্য
বালুরঘাটের কথাই অনুক্ষণ মনে পড়ে। আকাশ,বাতাস,জল,মাটি -সবাই যেন সবসময়ে অদৃশ্যভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকে ।সংস্কৃতির ছোঁয়া এর সর্বত্র। কত জ্ঞানী,গুনীজনের পদস্পর্শে ধন্য এই আমার আবাল্যের বালুরঘাট। নাচ,গান,নাটকের রীতিমতন চর্চার এই জন্মভূমি।
একাঙ্ক নাটকের স্রষ্টা শ্রদ্ধেয় মন্মথ রায় ছাড়াও অনেক সাহিত্য মনস্কের, সঙ্গীতজ্ঞ,যন্ত্র শিল্পী,কলাকুশলী,স্বাধীনতা সংগ্রামী,নাট্য ব্যক্তিত্ব, কবি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য শিক্ষক,শিক্ষিকা, অধ্যাপক,গবেষক, কৃতি খেলোয়াড়দের এই জন্ম ভূমি।
স্কুলের গণ্ডি পেরুনো বালুরঘাট হাইস্কুল আমার কাছে এক পবিত্র মন্দির। শিক্ষার জন্মলগ্ন অর্থাৎ প্রাইমারী স্কুল থেকে আমার অধ্যয়ন শুরু। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর কক্ষগুলো ছিল bamboo particlesএর বেড়ার দেওয়াল আর খড়ের চালের ছাউনী। প্রত্যেক কক্ষগুলোতে ছিল বিভক্তকারী
বেড়ার দেওয়াল। মাটির মেঝে। বেশ মনে পড়ে বর্ষার দিনগুলোতে ঘরগুলো জলে থইথই করতো। "আয়রে কাগজ-নৌকো ভাসাই,আয়রে মাতি সবে ভরে উঠুক আকাশ,বাতাস মোদের কলরবে" এইরকম একটা ছড়া যেন বেশ মনে পড়ে যায়। হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক মহাশয় ছিলেন
শৃঙ্খলা পরায়ণ এবং ছাত্রবৎসল। স্কুলে যদিও dress code ছিলো কিন্ত তা mandatory ছিলোনা। অভাবী ও গরীব ছাত্রদের কথা ভেবেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। তবে spare the rod, spoil the child-এই ব্যাপারটা তখনও ছিল। ছাত্রদের তিরস্কার করার পরেও শিক্ষকদের মধ্যে অনুশোচনাও ছিল। হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকার প্রকাশের সময় ছাত্রদের মধ্যে দারুন উদ্দীপনা ছিল। বলা বাহুল্য, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয় সে ব্যাপারে দারুন উৎসাহ দিতেন। সাংস্কৃতিক ও বার্ষিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের নিষ্ঠা সহকারে তালিম বা রিহার্সাল দিতেন তাঁরা। খেলাধূলোর প্রতিযোগিতাতেও অনুরূপ উৎসাহ নিয়ে তাঁরা তালিম দিতেন।
এই সময়ে এমন একটা ঘটনা ঘটে- যেটা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তখন আমি বোধ হয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার জনৈক সহপাঠীর
অসাবধানতার কারণে ডান হাত fractured হয়ে যায । মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো। বেশ ভালো ছাত্র ছিলো। এদিকে half-yearly পরীক্ষা আসন্ন।
কিন্ত সে ছিলো দারুন জেদী। আর পরীক্ষা দেবার ব্যাপারে অনমনীয় ভাব। ডান হাতে তার plaster.
দিনরাত বাঁ হাতে লেখার practice করতে লাগল।
পরীক্ষাতেও appear করলো। যথারীতি ভাল result করলো। এই ঘটনায় ধন্য ধন্য পড়ে গেলো স্কুলে। তার এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে লাগলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয়েরা। সে রাতারাতি রোল মডেল হয়ে গেলো,এরূপ একটা দৃষ্টান্ত স্থানীয় কাজের জন্য। পড়াশোনার প্রতি তার কি যে অনুরাগ আর আগ্রহ ছিলো- এ ঘটনাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
No comments:
Post a Comment