`পথের টানে.....`
সেই প্রিয় পথ
মঞ্জুশ্রী সাহা
পথের সাথে পরিচয় সেই ছোট্টবেলা থেকে- যখন হাঁটতেও শিখিনি, বলতেও শিখিনি, বুঝতেও শিখিনি। বড়দের কোলে চড়ে পথের সাথে পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হয় পথ চলা। হোঁচট খেতে খেতে পথ চলা। দৌড়তে দৌড়তে পথে আছড়ে পড়া। তারপর সাইকেলে সাইকেলে পথ চলা। বাড়ির গলি পথ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথ হয়ে আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবের বাড়ির পথে মিশে যায় । ধীরে ধীরে প্রিয় হয়ে ওঠে সেই সব পথ। । জীবনের গতানুগতিকতাকে ভুলতে আশ্রয় নিতে হয় পথেই। সেই পথ কখনো মন্দির, মসজিদ বা কখনো গির্জায় গিয়ে মেশে।
আবার কারো পথ চলে যায় সূদূর লাটাগুড়ি চিলাপাতা বা গরুমারার জঙ্গলে। কখনো কখনো সেই পথ আবার পাহাড়ের পাকদন্ডি কেটে পৌঁছে যায় চিত্রে মেঘমা হয়ে সান্দাকফুর দিকে। পুরনো শহরের ঘিঞ্জি গলির অমসৃণ পথের মত নতুন শহরের ঝকঝকে তকতকে মসৃণ পথও চলতে চলতে কখন প্রিয় হয়ে ওঠে তার হিসাব রাখা যায় না। গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ আমাদের মনকে ভুলিয়ে দেয় রবি ঠাকুরের মতো। এভাবেই সারা জীবনে আমরা স্পর্শ করি কত পথ। কত কথা কত হাসি ছড়িয়ে পড়ে পথের দুপাশে। আলতো ছোঁয়া। কত মজা। পথের সাথেই কথা কওয়া। পথের টানেই বেরিয়ে পড়া ।পথের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। পথের জন্যই গান যে গাওয়া...............
পথ হারাবো বলেই এবার
পথে নেমেছি।
এই পথ চলে যায় ভূস্বর্গের চোখ জুড়ানো রূপ ছাড়িয়ে ভারতের বিস্ময় লে লাদাখের মরু প্রান্তরের বুক চিরে। সিয়াচেনে গিয়ে এই পথ ঢেকে যায় বরফের মোটা চাদরে। ধীরে ধীরে হিমালয়ের তুষারাবৃত শুভ্র শৃঙ্গের রূপে মোহিত হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে পথ। এই প্রিয় পথ কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় শেষ হয় কেউ জানে না। শুধু চলতে হয় পথের সাথে। পথের সৌন্দর্য অনুভূতি চোখের মুগ্ধতা মনেপ্রাণে সঞ্চিত হয়। পথ চলার আনন্দে হাসিতে প্রাণ ভরপুর হয়ে ওঠে। মনকে পিপাসু থেকে আরো পিপাসু করে তোলে। প্রাণে উচ্ছ্বাস আনে। আনে অনাবিল আনন্দের লহরা। চলতে চলতে প্রিয় হয়ে উঠে এসব পথ। চলার সাথীদের ভালোলাগার বন্ধনে বেঁধে ফেলে। তাইতো আবার গেয়ে উঠি.........
বারে বারে আমি পথের টানে
ঘরকে করেছি পথ
পথের মানুষ আপন হয়েছে
আপন হয়েছে পর ।
No comments:
Post a Comment