Wednesday, October 2, 2024




মুনা 

অনলাইন শারদ (আশ্বিন) সংখ্যা ১৪৩১



কবিতা 




দু'টি কবিতা
দেবাশিস তেওয়ারী


বৃক্ষবন্দনা 

মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, ঢাকের আওয়াজ, দ্বিপ্রহর—
এর মাঝে একটি প্রচ্ছায়া নগ্ন হয়

গাছের কোটর থেকে নেমে আসে মাটির ইশারা,

ব্রহ্মাণ্ডের সেই জমি আদিম গ্রহের কথা ভাবে
শ্বাসবায়ু টেনে টেনে পথিক এগোয়,
রাস্তার ধারে যে পান্থশালা সেখানে আশ্রয় নেবে তার এই বৃক্ষবোধ—
পথিক লুকালে ছায়া হেঁটে যাবে আরও কিছু দূরে,
রাঙামাটির এই দেশ ছেড়ে...
অন্য কোনও সনাতন ভোরে।

                                

নিসর্গের ক্ষুধা

সন্ধের পর পাড়াটা নিঝুম হয়ে রোজ মাঠে নেমে আসে
অক্ষর খুঁটে খুঁটে খায়
তারপর গোপন ডেরার চোখ বেঁধে রাখা আলোয়
নিজেকে পাঠ করে
নিজেকে আরেকবার ঢেলে সাজায়
এসময় পাড়াতুতো সকলেই কমবেশি আদিখ্যেতা কিশোরীর মতো
দেখতে চায় স্পেস থিয়েটার
অন্ধকার নামলে পাড়াটা আর পাড়া থাকে না
নিসর্গের ক্ষুধা তাকে গ্রাস করতে আসে
সময়ের তাড়িত অসুখে নাচতে নাচতে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই তার খাদ্য হয়ে যায়।



জীবনপঞ্জি
রুদ্র সান্যাল

জীবনের পঞ্জি চাই, যেমন চাও অনুক্ষণে সংকেত, ডেটা স্টোরেজের মতো হৃদয়ের ফাইল, অনলাইন অ্যালবামে সঞ্চিত স্মৃতি।

এটি হতে পারে একটি টাইমলাইন, যেখানে মুহূর্তের পর মুহূর্তে হাইপারলিংক, একটি কোড যা নির্দেশ করবে পথ, ব্যাকগ্রাউন্ডের সুরে সাজানো বাস্তবতা।

জীবন একটি প্রোগ্রাম, চলমান কোর, সার্ভারের মতো সংরক্ষিত স্মৃতি, একটি ক্লাউডে টিকিট বুকিংয়ের মতো, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত একটি আপডেট।



এবং বৃষ্টি
অভিজিৎ সেন 

বৃষ্টি, বৃত্ত ভাঙার লৌকিক মন্ত্র তোমার জানা 
গোধূলি লাল অনুরাগে বিহানে ফিরে এলে 
ফুটে ওঠে মনের শাখায় গোলাপ, রক্তকরবী
রেশমের মতন তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলে 
অন্ধকারে, নদী প্রেম হয়ে বয়ে যায় 
তুমি অলৌকিক নও, লৌকিক মানসী
শরীরী সোহাগে অনাবিল ভোর মিশিয়ে ফুটিয়ে তোল পদ্ম
তোমার চলার পথে শিশির নির্ঝরে বসন্ত নেমে এলে
শরীরের নির্মক ঝরে জ্বলে ওঠো প্রেমে 
মনের গভীরে নেমে হাত বাড়িয়ে দাও হাতে
ভালোবেসে প্রতিটি চুম্বনে এঁকে দাও নিজেকে 
তুমি বিমূর্ত আবেগ নও। মূর্ত সত্তা ।
বৃষ্টি, নদী হয়ে ভাসিয়ে চলেছ আমায় তোমার গহন আবেগ 
রহস্যে। তোমার প্রতিটি কটাক্ষের টানে আমার লেখনি 
মূর্তি গড়ে শব্দে বর্ণে চিত্রে কামে প্রেমে পৃথিবীর গন্ধে 
তোমার মেদুর খেয়ালি ইচ্ছাই আমার ঈশ্বরী
সমাপ্তিতে এবং রহস্য রহস্যই থাক.... বৃষ্টি ।




সেস্টিনাঃ আমি, ২০২৪, ভারতবর্ষ
লিপিকর

ভুলে যাই সবটুকু ছিরিছাঁদ, মন থেকে মুছি নদী-ফুল-চাঁদ
ভেঙে যা কিছু ফের গড়া শক্ত, ক্যানভাসে ঢালি তাজা লাল রক্ত
আমার তো নয় শোণিত ও, জানা সবারই পাটিগণিতও
তারপরেও না থামলে কোলাহল, ব্যবহৃত হবেই হলাহল
এমন সজীব আধার বিনা, কোথায় সেচন করি আর ঘৃণা?
প্রতিহিংসাতেই চরম শান্তি, বুঝেছি তো আমি, আর নেই ভ্রান্তি

হিংস্রচিন্তায় কভু হবে ক্ষান্তি, ভাবনাভুবনে এনো না এ ভ্রান্তি
মাথার উপরে উড়ে গেলে ছাদ, শির তুলে দেখো পদানত চাঁদ
প্রেমভাবেতে যে মূঢ় লীনা, হৃদিতে তারই রোপিব ঘৃণা
ততদূর সবারে করে উত্যক্ত, যুক্তির মাথায় ঢালব রক্ত
মন্থনশেষে সাগরেরই গরল, ভাইরাসসম হবে হলাহল
দখল করলে সকল যোনি তো, মিলে যাবে শেষ পাটিগণিতও

সম্ভব করছি সব আনহোনি তো, নিশ্ছিদ্র তাই পাটিগণিতও
ঢক্কানিনাদে হয় নি শ্রান্তি, সৃজেছি যে এক চকচকে ভ্রান্তি
যেখানে একীভূত শত্রু সবল, এগিয়ে দিয়েছি কূট হলাহল
কতবার তুমি এড়াবে এ ফাঁদ, বাঁচার উপায় আর নেই চাঁদ
অবগুণ্ঠন করে দিলে ব্যক্ত, আলাপচারিতায় আনব রক্ত
মুক্তমনস্ক কোনও আসুক নবীনা, চরিত্রে ছেটাবো ফোঁটা ফোঁটা ঘৃণা

পুস্তকহস্তে, রঞ্জিত বীণা, তোমারও কুচযুগে আবরিব ঘৃণা
বাজালে মূর্ছনা বিপদজনিত, যাবে আরো মিলে পাটিগণিতও
অনির্মলের শোধন শক্ত, মিশে যায় যদি তায় হিংসুটে রক্ত 
অনুশাসনের পরিসর অ-মিলন-অন্তি, যদি ঔরসেই ভরে দিই ভ্রান্তি
পেলে মানুষের মাংসের স্বাদ, শার্দূল কি আর খোঁজে বাঁকা চাঁদ?
নিরন্তর আমার জারি এ টহল, ফিকে যেন কভু না হয় হলাহল

মেশাও না যত খুশী, ভুষি বেনোজল, মারণশক্তি তবু শোষে হলাহল
অভুক্ত, অধম হয়েও যে অ-ঋণা, বিশ্বাসযোগ্যতায় তারও স্পর্শেছি ঘৃণা
প্রত্যেক গ্রাসে মুঠো হলে বিস্বাদ, কতদিন দেবে আশা সুদূরের চাঁদ
বিভেদই আমার লক্ষ্যের মণি তো, তবেই খাপে খাপ পাটিগণিতও
ফুঁসলাবো কেমন করে টানা অশান্তি, সে জ্ঞানে নেই মোর সংশয়-ভ্রান্তি
হৃদয়ের বর্মকে করো যত শক্ত, সবই পচে যাবে ঢেলে গেলে রক্ত

মাথাটাই চিন্তার, যুক্তির ভক্ত, হৃদয় তো কেনাই যায় বওয়ালেই রক্ত
রুধে দিয়ে রুধিরের সব চলাচল, বিরচিবে আমার সাম্রাজ্য হলাহল
জয়ধ্বজায় পতপত করা ঐ শান্তি, ইতিহাসও মেনে নেবে অতীতের ভ্রান্তি
অহং আমি দৃশ্যতঃ কভু করি না, তেমনি মুড়ে রাখি সুচীমুখ ঘৃণা
অঘটন এখনো কোনও ঘটে নি তো, মেলাতেই হবে সব পাটিগণিতও
যদ্যপি না পুরিছে বিশ্বমেধের সাধ, বারবার শুধাবো,’দেখলে বাঁকা চাঁদ?

আর রক্ত চেও না বেনোজলে ভাসা বুড়ি চাঁদ
হলাহল অনর্গল দেখে অশীতল ঐ পাটিগণিতও
ভ্রান্তির সময় পেরিয়ে একবার শুধু নিঃসঙ্গ হোক ঘৃণা।




বিবশ উৎসব

সুবীর


আগমনী আকাশে অশ্রুপাত
বাতাসে দমবন্ধ  হরিধ্বণি
অকালবোধনে অভয়া বিসর্জন দিয়েছে কারা
চুপিসারে, নষ্ট গভীর রাতের অন্ধকারে.... 

তিল তিল গড়ে তুলেছিল তিলোত্তমা নিজেকে
পরহিত ব্রতধারিণী, বহু আশা স্বপ্ম ,             ব্যর্থকাম  ভেঙে চুরমার 
মেয়েটা এখন শুয়ে আছে লাশকাটা টেবিলে
মৃত কোষ সহ ব্যবচ্ছেদের রহস্যতলে .....
কালরাত্রিতে অস্থিচর্মমাস খেয়ে গেছে
বিকট রসোল্লাসে শীৎকারে লোলুপরসনার
তীক্ষ্ণদাঁত হিংস্র গৃধ্র শকুনের দল
মাতৃ অঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে উৎসবের আঙিনায়
ভিজছে মাটি মা মানুষ.... 

কোলশূন্য, শূন্যঘর, দিকশূন্য 
নিষ্প্রদীপ ঘরে ধিকিধিকি জ্বলে ব্যথার আগুন
পাষাণের বুকে মাথা কুটে মেনকা মা
উমা চলে গেছে চিরতরে না ফেরার জগতে
বাজে না আনন্দবাঁশি  সজ্জাবিহীন ঘরে 
বিজয়ার শোকগীতি আকাশে বাতাসে..... 




কবিতার রং নেই
অশোক কুমার ঠাকুর



বুদ্ধিজীবীদের ঘিলুগুলো খুলে খুলে দেখে নাও
কতটুকু ঘাম  রক্ত  শ্রম  নাকি সবটাই উধাও।
কতটুকু আনুগত্য কতটুকু রাজন্যে প্রতিপালন 
ঘিলু গুলো খুলে খুলে করো জারন বিজারন।

সেলিব্রিটির সাথে আর সেল্ফি নয় তফাত থাকো
পাশের ছবিটিকে এখুনি  কালো কালিতে ঢাকো।





রক্তের দাগ 
অমিতাভ চক্রবর্ত্তী 

শরতের আকাশে সারারাত জ্বলছে নিয়নের খর আলো,
শিউলিরা সব ফোটার আগেই হারিয়ে গেল। 

বাতাসে ভরে গেছে  প্রতিবাদের ক্ষত;
শহরে তাই রং মশাল,
মশাল হাতে প্রতিবাদী মানুষ,
ওরা সব রাত জাগা পাখি....

তবুও পাড়ার পুজো গলির মুখেই,
বিগ বাজেটের  থিম;

কিন্তু মায়ের মুখে একি রক্তের দাগ!!





কিছু সত্যির প্রকাশ
কেতকী বসু 

ক্ষুধার্ত শিয়ালের দল লালায়িত মাংসের খোঁজে
দিনরাত্রির সুযোগে অহরহ প্রচেষ্টায়,
কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত সব কিছুই 
নিঃসৃত লালা রসের ক্ষুধার্ত তৃষ্ণায়,
চর্বণ চর্চিত গদ্য রচিত হয় সমাজে
দীর্ঘ স্থায়ী অচল অবস্থার এক প্রগাঢ় উদাহরনে।

সুস্থ থাকার অসুখ ঘিরে ধরছে উলঙ্গ সমাজে
সেলোটেপ লাগানো ধর্ষিত সমাজের কলুষতা নিংড়ে আনছে বিবেক বুদ্ধি,
বর্বরতার  প্রকৃষ্ট উদাহরণ শুধু পাতার পর পাতায়,
ঠিক তখনই শুরু আর এক উৎসবের
জেগে ওঠা ঘুম ভাঙ্গা পথিকের ,
সচল অনড় প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনায়
চিরন্তন বহমান স্রোতের ধারায় সদর্থক উক্তিতে
এড়িয়ে যাওয়ার রাস্তায় মশালের আলোয় সূচনা হোক নব প্রভাতের।





এমনি করেই?

মনোরঞ্জন ঘোষাল

 

তোরা এমনি করেই ঘুমিয়ে কাটাবি চিরটাকাল

তোদের চোখের সামনে পুড়ছে মানুষ

ছড়িয়ে রেখেছে ধোঁয়ার জাল

ওরা এমনি করেই বুকে ছুরি হানবে

দেখবে সবাই সমস্তটাই জানবে

একে একে হবি সবাই শেষ

অরাজকতার নতুন এক উন্মেষ



উৎসব 

মৃড়নাথ চক্রবর্তী 


হাঁচি দেবার পরে অথবা 
ভিড় বাসে, ফুটপাথে 
কারো পা মাড়িয়ে দিলে ভুল করে 
দোষ হোক না হোক— 
নীতি বলে 
ঠিক ঠিক চেয়ে নিতে হয় ক্ষমা। 

এদিকে একলা কলকাতা 
কাজের ঘরে মাঝরাতে 
শরীর মাড়িয়ে খুবলে খেলে পরে 
উৎসব আয়োজিত হোক— 
রাণী বলে। 
কী মধুর! কী মধুর! আহা, অনুপমা!


ভালো নেই
তন্ময় কবিরাজ

শিশির ঝরেছে চোখে
স্রোত প্রবাহমান আমি নীরব
উড়ে চলা মেঘে শুধু তোমার 
অভিমান আগলে রেখেছি শরতে -

আটচালার মূর্তির পাশেই
নিথর তিলোত্তমার প্রতিবাদ
কোলাহলে মিশে গেছে মানুষের দাবি-

শেষ শব্দের অস্থির চিৎকার
বিবেক দুলছে কাশফুলে
ভাসছে শহর আশ্বিনের হাওয়ায় -

ভাল থাকুক, অপু দুর্গার সুখ।



অভয়া'র হবে জয়
বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বৈরাচারী হীন, পড়বে যেদিন, পাপের ঘড়ায় টান,
সত্য চিরন্তন, কালের লিখন, হবে তার অবসান।
এক কালরাতে, নিয়তির ঘাতে, খসে পড়ে শতভিষা,
কোথা হা ঈশ্বর, কেন মৃতুযর, চক্রান্ত সর্বনাশা।
লালসা বিকৃত, করাল আকৃত, সজোরে হানিল প্রহার,
জরায়ু’র নিচে, সপাটে ছিঁড়েছে, শত জনমের দ্বার।

নীরব শর্বরী, উঠেছে শিহরি, বিষাদ নিনাদ বুকে,
নয়নে শোণিত, আবরু লুন্ঠিত, মেদিনী ধ্বস্ত শোকে।
নিষ্পাপ শরীর, অবশেষে স্থির, বৃথা নয় বলিদান,
নয়নে রুধির, প্রতিবাদী শির, পাপী হবে ধ্বংসান।
অসহ্য যন্ত্রনা, জাগৃত চেতনা, হাতে নিয়ে হুতাশন,
রোধে রাজপথ, অটুট শপথ, দিশাহারা প্রশাসন।

 তীব্র জনরব, ব্যাপ্ত কলরব, দিনে ক্রমবর্ধমান,
ঋজু মেরুদন্ড, অদম্য পাষণ্ড, গায় প্রতিবাদী গান।
বিক্ষোভ অপার, শেষ নাই যার, বিচারের দাবি তোলে,
নিঠুর প্রহরী, পথে শত অরি, প্রতিবাদী দিয়া জ্বলে।
সর্বত্র আঁধি, কোথা অপরাধী, প্রমান করেছে লোপাট,
চলে রাজনীতি, রক্তচক্ষু ভীতি, শাসানির রাজপাট।

ভেঙেচুরে দাও, পরদা ওঠাও, আসুক নবীন আলো,
অশুভ আতাঁত, হোক না নিপাত, যাক কুরীতির কালো।
জনরোষ বাড়ে, জোরালো চিৎকারে, ন্যায্য বিচার চাই,
মোরা অপ্রতিরোধ্য, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এ দাবিতে ছাড় নাই।
হাত রেখে হাতে, ঐক্যতার সাথে, গড়েছি মানব বলয়,
এ বিশ্ব নিখিল, চলেছে মিছিল, অভয়া'র হবে জয়।



ঘর খুঁজে খুঁজে পুড়ে
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

কথাগুলো ভুল হয়ে যায় অথবা কথাগুলো ভুল বলা হয়
এভাবেই সময়ের গায়ে ফুল ফোটে আশারা ডানা মেলে
হ্যাঁ ও না - এর মাঝে ত্রিভঙ্গমুরারি সুখে কাকতাড়ুয়া নড়ে
সুখ ও দুঃখের গুলোনো হিসেব আম- মানুষের জন্য নয়--
কতবার শুনি তবু ডালছাঁটা আশার কুহক নতুন পাতায় জাগে
বিষপুকুরে কতবার রাক্ষুসে কাতলার লাফ দেখানোর লোভ
নাবালক করে রাখলো দণ্ডধর হাত, ছাতা ধরলো হাত ভুলোমন
আলোর স্বপ্নদেখা যত পাখি ঝড়ের অন্ধকারে স্রেফ ' না ' হয়ে গেল
দিন গুনতে গুনতে কতবার রাতের নিকষকালো চাদরে ডুবেছি
আলোর সন্ধান চেয়ে মৌন জোনাকি ঘর খুঁজে খুঁজে পুড়ে যাই।



একটা মেয়ের গল্প  
উৎপলেন্দু পাল  

মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছিলো একটা নীল চাদরে 
নীল! হ্যাঁ, যে নীল সব মৃত্যুর রং 
তারপর ক্রমশ রাত যতো বাড়তে থাকলো 
জেগে উঠতে থাকলো একটা একটা করে মেয়ে 
একটা, দুটো, তিনটে, শত, সহস্র, লাখ লাখ  
রাতের পর রাত জেগে থাকলো চোখে নীল রং মেখে 

মেয়েটার চোখ থেকে ঝরে পড়েছিল যে লাল রং 
লাল! হ্যাঁ, যে লাল জ্বালামুখীর রং 
ছড়িয়ে পড়লো সে রং চোখ থেকে চোখে দ্রুততর   
প্রতিটা চোখে জ্বলে উঠলো আগ্রাসী লাল রং আগুন  
গ্রাম, শহর, নগর, রাজ্য, দেশ থেকে দেশান্তরে 
জ্বালিয়ে দিলো সহস্র বছরের জমাট পাথুরে অন্ধকার।  



বিপন্ন সমাজ
প্রাণেশ পাল 

বে-আব্রু ভারতবর্ষ,নগ্ন পৃথিবী,উন্মত্ত মনুষ্যত্ব, 
বিবেকের বলাৎকারেও আমরা নিশ্চুপ, 
প্রতিনিয়ত ধর্ষিত আমাদের উলঙ্গ চেতনা,
আমাদের জড় মস্তিষ্ক বোধ,বুদ্ধি,চেতনা,প্রতিবাদ- হীন।

সালিশি সভায় আজও বিবস্ত্র সমাজ, 
চারিদিকে দুংশাসনের পৈশাচিক উল্লাস, 
সমাজের রক্ষক অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র, 
পিতামহ ভীষ্ম,বিদুর,দ্রোণাচার্য,কৃপাচার্য, 
আজ দৃষ্টিহীন,বধির,নির্বাক দর্শক। 

শরতের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে ভাসে
তোমার অব্যক্ত যন্ত্রণার বিস্মৃত চিত্রকল্প, 
তোর্ষা,মানসাই,মুজনাই পাড়ে কাশফুলে শুনি
তোমার শারদ প্রাতেঃ অনন্ত আগমনী।

শরতের বিষাদ-গ্রস্থ ঝরা শিউলিতে দেখি
দুর্নীতি,ধর্ষন,নারী নিগ্রহ, শোষণ, বঞ্চনা,
অন্যায় অত্যাচারের বিস্তৃত আলপনা।

লাশকাটা ঘরে স্তিমিত ঢাকের বোল,
আবাহনের বিদগ্ধ,বিষন্ন সুরের মাঝে
সুর ভাসে ভাসানের মিছিলে,শত সহস্র 
তিলোত্তমার হৃদয় ভাঙ্গার অনন্ত বেদনার !!





আজ গর্জে ওঠার দিন 

দয়াময় পোদ্দার 


চারিদিকে শীতল রঙের সাপ 
             কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে ছিল,
চোরাস্রোতে জেগে উঠেছে, ফোঁস করছে।
যদি তুমি বিষদাঁত ভেঙে দিতে পারো, তবে 
চাঁদ-সূর্য এই হাওয়ায় নদী থেকে মিষ্টি জল, আর 
পাখিদের ঠোঁটে ফুলের উপমা পাবে।
যারা আজ অভয়ার ধর্ষকদের আড়াল করছে 
খুনিদের আড়াল করছে, কাল তারা 
তোমার ঘরে ঢুকেও ছোবল মারবে নিশ্চিত!
এখনই সময়- কাল নাগেদের বিষদাঁত 
                                গুঁড়িয়ে দেবার ;
সত্য-মিথ্যা দ্বন্দ্বে যদি শেষ পর্যন্ত সত্যের 
                                 জয়কে বিশ্বাস কর
যদি তুমি তোমার সভ্যতায় বিশ্বাস কর 
যদি তুমি তোমার সময়ের চলমানতকে বিশ্বাস কর,
সেই বিশ্বাসকে প্রমান করার দায়ও তোমার...

পিশাচিনী আঁধারে ঢেকেছে 
                 বাংলার সুজলা-সুফলা মাটি  
বিষ-নিশ্বাসে পোড়ানোই তার কাজ-
                মায়ের স্বপ্ন, বাবার স্নেহ হত্যায়,
দেরি নয় আর, আজ গর্জে ওঠার দিন-
পিশাচিনী দূর হটো, দূর হটো!



তিলোত্তমা 
নারায়ণ দত্ত 

তিলোত্তমা তো তোমার‌ই নাম কোলকাতা...
তবু কেন এত কলঙ্ক তোমার বুকে?
এত অন্যায়,এত অবিচার,এত অমানুষী কারবার !!!
"তিলোত্তমা"--তুমি...তোমাকে কি দেব জবাব?
ভাষা নেই যে,কীই যন্ত্রণায় কেঁদে কেঁদে মরে গেলে...
আর "ওরা"?
ওরা নাটক করছে,
ওরা আজ তোমার হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর 
তোমার একটু বিশ্রামের জন্যে 
তোমার‌ই মৃত্যুঘর ভেঙেছে নিরাপদ বিশ্রাম ঘর 
নির্মাণের সুনিপুণ  সাজানো গল্প ফেঁদে।
ওরা চটি চাটে,ওরা নিরুপায়,ওরা কিসের যেন দাস।
আবার ওরাই কখনো কদম কদম বাড়িয়ে পা 
সত্যি টাকে মিথ্যে বানায়, মিথ্যেটাকে সত্যি...
কিন্তু ওদের দোষ কীই বল, ওদের হাতেও হাতকড়া!!!

"তিলোত্তমা "...মরেও তুমি মরনি, বরং তুমি বাংলা জুড়ে 
জ্বালিয়ে গেছো আগুন  ,তুলেছো এক প্রতিধ্বনি...
"We want justice"...
সারাবাংলা তুলবে আওয়াজ "রাত পুরুষের একার নয়"...
আগামি কাল রাতটা হবে তোমার জন্যে, তোমার জন্যে 
আমার জন্যে, আমার জন্যে...সবার জন্যে ,সবার জন্যে 
নির্ভয় আর নিরাপদ।
এ কোন সময় দেখতে হচ্ছে হিং টিং ছট্
ইচ্ছে করে মারি মশা পটাপট... পটাপট... পটাপট...
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা...এই কি মোদের স্বাধীনতা 
"তিলোত্তমা" .. .
ঢের হয়েছে আর নয় এই গোলামী...
একথাটি ভাবতে শেখোএখনও যারা জন্মাওনি ।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে 
এবার সবাই গর্জে ওঠো 
রঙ বেরঙের ধার ধারিনে 
শক্ত করো হাতের মুঠো।

অং বং চং আরও অনেক ছিল কথা বলার 
বলছি না তাই, বলছি শুধু 
যুদ্ধে নামো এবার, যুদ্ধে নামো এবার।।




উড়ল মেয়ে
শ্রাবনী সেনগুপ্ত 

নতুন কিশোরীকে ছুঁয়েছিল কেউ
সে জানত, জানতনা আর কেউ
বলা বারণ ছিল,ঘরে শাসন ছিল
লোকলজ্জার ভয় ছিল।
চৌকাঠের বাইরে রাস্তাঘাটে ট্রামে বাসে
ভীরু শরীর,স্বপ্নটাকে পুষছিল।
তুষের আগুন লকলকে
সত্বা জুড়ে শানাচ্ছিল।
ফাগুন দিল সর্বনাশের বীজ বুনে
বলল সবাই,"অন্যায়টা নে মেনে।"
নিভন্ত আঁচ জ্বলল বুকে গনগনে 
স্বপ্নগুলি মেলল ডানা শনশনে ।
লজ্জা ঘৃণা লোকদেখানো ভয় ফেলে
উড়ল মেয়ে এক আকাশ বাহু মেলে।
শিরদাঁড়াটা শক্ত ভীষণ,নুইল না
সমাজ শোধন সমাজপতির রইল না।




দুঃসময় 
অর্পিতা রায় আসোয়ার 

অপেক্ষাতেই ছিলাম 
কবে শুষ্ক ধরাতল হবে সিক্ত 
কবে আবার ভিজবে 
মন-প্রাণ।

চাতক হয়ে চেয়েছিলাম 
আকাশপানে, 
সিক্ত হতে -

আমার সাথে ভিজবে বলে 
তুমিও কি অপেক্ষাতেই ছিলে?
নাকি নিছক খেলাই শুধু 
খেললে।

চলো এবার সাঙ্গ করে খেলা 
সিক্ত হই দুজনা 
জুড়োই জ্বালা, 
এ দুঃসময়ের.........



প্রতিবাদ- ই চাই
রাজেশ প্রামানিক

সবুজের পথটা হারিয়ে গেছে বিপদের আশঙ্কায় 
অশ্রুধারা ঝর্ণা হয়ে পড়ছে তাই আজ 
আকাশ মাঝে উঠবে সূর্য তারই অপেক্ষায় 
শক্ত  করো মেরুদন্ড প্রতিবাদ- ই চাই।





অভয়া

প্রতিভা পাল 


এই বিপন্ন সময় অন্যায় আপোষ করে

মিথ্যার অজুহাতে

ক্ষমতার লোভ রক্তস্রোতে প্রবাহিত হলে

মানবিকতা অবদমিত হয় অচিরে। 

চিরাচরিত ধারণারা জর্জরিত হয়

ঘাত-প্রতিঘাত, আঘাতে। 

অপরাধ আর ইচ্ছে সমান্তরাল পথে

হেঁটে যায় বন্ধ চোখের পলকে বারেবারে।


এই বিপন্ন সময় অসহায় মনে

অন্যায় সহ্য করে অনায়াসে। 

সত্য বিস্মৃত হলে শক্তিহীন হয় চেতনা,

অভ্যাসবশত শত শত স্পর্ধা 

ধূমায়িত হয় ধুলো ধূসর আগামীর পথ জুড়ে। 


‘অভয়া’- এক সাহস, এক শক্তি

যার প্রকাশ আপোষহীন মানবতার ঊর্ধ্বে। 


‘অভয়া’- এক জাগ্রত অবয়ব

যে মৃত্যুহীন, মৃত্যুর পরে।


'অভয়া'- এক অনুপ্রেরণার উৎস,

সহস্র প্রাণের অধিকারে……




এবার শান্তি 
 কুশল সাহা 


আকাশ ছোঁয়া মেয়ের আজ শান্ত হওয়ার দিন, 
আধুনিক দেশে আমরা এভাবেই মেটাই ঋণ। 

এই যন্ত্রণা আজ প্রতি ঘরে সবার হওয়া উচিত, 
যারা একদিনও ওর সেবা যত্ন পেয়েছে, 
তাদের মনে জমা আছে যে জীবন যন্ত্রনা, যেনো শুনি 
সেইসব একসাথে দোষীদের ধংসের গান গেয়েছে। 

সোনার মেয়ে রাত জাগে, সে আজ বছর দশ, 
শেষে সাফল্যের ঠিকানাই নামিয়ে আনলো জীবন ধস। 

কতো বিনিদ্র রাতের মাথার ঘাম পায়ে পড়েছে, 
তার সাক্ষী ওই জীববিদ্যার বইয়ের পাতা, 
জমাট রক্ত আর আঘাত চিহ্নের শরীরটাতে
ওই রাতে কেউ ধরতে আসেনি সুরক্ষার ছাতা। 

প্রশ্ন আজ তাই ওই ক্ষুধার্ত জন্তুদের, 
বিবস্ত্র নারীও তোদের দিলো না শান্তি ? 
ওই যোনিপথে শেষের ঠিকানা লিখে,
অর্ধনগ্ন শরীরে রেখে, এবার হয়েছে শান্তি? 

দিন দুই ধরে নির্ঘুম, অক্লান্ত পরিশ্রম, 
তারপরে যেই খুঁজেছে একটু আড়াল, 
অমনি ঝাঁপিয়ে পড়লো পশুর দল, 
চিরনিদ্রায় পাঠিয়ে শান্তি দিয়েছে কাল। 

জানিনা, কিভাবে দেশ আমাদের শ্রেষ্ঠ আসন পাবে, 
আজ বক্ষখাঁজে মুক্তি খোঁজে মুখোশধারী শিক্ষিত, 
বিলের চোখে দেখা তরুণ এরা হতে পারে না, 
এরা সবাই হায়নার ছিঁড়ে খাওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত।

আমরা এখন প্রাণ বাঁচানোর যোদ্ধার প্রাণ কাড়ি, 
শেষে মোমবাতি হাতে, নিষ্ফল হুঙ্কার ছাড়ি। 

আসলে ওরা তো বেঁচে যাবেই আবারও, 
শিশু থেকে কিশোরী-যুবতীদের খুবলে খাবে, 
উপরমহলের স্বজনপোষণের বাড়বে ছত্রছায়া, 
আছেই তো কতো শাসকদল, ওদের ঠিক বাঁচাবে। 

তবু চাই, বিচার হোক, দুরাত্মা হোক না শিহরিত, 

জীবন্ত জ্বলুক ওরাও, কেউ করুক একাজে পৌরহিত্য। 




ভাবনা ও কিছু চেতনা 
   রীনা মজুমদার 

শিউলি, কাশ যেন থমকে আছে!

বড় উন্মুক্ত হয় শরতের 
নীল আকাশটা, মা আসছেন 
আসন শুদ্ধ হবে কোন গঙ্গাজলে?
গঙ্গায় যে আন্দোলনের চিতা জ্বলছে!
পড়ুক দানব রক্তের হিংস্র বীজানু 
জলে বিবেক কি ভেসে যাচ্ছে ?
   এগিয়ে এসো,
আসনকে শুদ্ধ করি, সাজিয়ে তুলি 
নয় নানা রঙে, চোখের জল থেকে 
তুলে আনি বিবেক, হৃদয় থেকে 
তুলে আনি ন্যায়ের অধিকার ও সত্ত্বা 
    মানবতার গাঢ় প্রচ্ছায়ায় 

তবেই তো বলতে পারি 
  মা আসছে মা বসবে পদ্মাসনে
জয়ের শঙ্খ বাজবে ঘরে ঘরে... 





তিলোত্তমা
মনোমিতা চক্রবর্তী

দেশ আজ বড় অস্থির
অস্থির বড় এ সময়,
মিছিল স্লোগানে মানুষ পথে পথে ছুটছে
শুধুমাত্র সুবিচারের আশায়।

তিলোত্তমার জীবন কেড়ে নিয়ে 
অপরাধীরা যদিও আছে  বহাল তবিয়তে,
জেনে রেখো অপরাধী ,আমাদের বিবেক কিন্তু যায়নি হারিয়ে 
তাই নিশ্চিত আমরা,একদিন  তোমাদের ঠাঁই হবে গারদে।

ঘটনার পর ঘটনা শুধু 
সয়েছি অনেক যাতনা,
অনেক হয়েছে প্রতিবাদ চাই
তাইতো আজ জেগেছে সবার শুভ চেতনা।

জনগন আজ বড়ই সচেতন
চাইছে তিলোত্তমার খুনির বিচার,
নিশ্চিত খুনি পড়বে ধরা 
পাবে তিলোত্তমা সুবিচার।




তলব
অমৃত দেবনাথ 

আর কাকে কাকে তলব করবে তুমি?
সমনের আওতায় আনবে আর কতজন?
ঘোর কেটেছে। সবাই নেমেছে পথে
একা অভয়াই মিলিয়েছে বহুজন।

রাজা ভুলে যায় রাজা হবার দায়
ধমকের সুরে ভেঙে দেয় নীরবতা 
রাতের মিছিলে পা মেলায় তিন যুগ
স্লোগান হীনার মুখেও আজ মুখরতা।

জাগছে নারীরা.. হাঁটছে মিছিল পথে
রাজায় ফনায় প্রতিশোধের বিষ 
আঁধারে যাদের স্বপ্নগুলো আজ 
আওয়াজ তুলছে জাস্টিস জাস্টিস। 




পথ
প্রতিভা বর্মন 


আঁধারে আগুন জ্বেলে হেঁটেছে দহন 
আলোকবর্ষ জুড়ে শোক, মৃত্যু চরাচর। সন্তাপে নক্ষত্রপতন।
দুদিকে দুটি পথ
বলো তবে কোন পথে হাঁটবে এখন ?

মূর্ছিত কাশফুলে বিষাদ স্বরলিপি
শরতের ভাষ্য জুড়ে দ্রোহের সঙ্গীত 
সুর ওঠে তাল ওঠে ভেঙে ভেঙে মন
দুদিকে দুটি পথ
বলো তবে কোন পথে হাঁটবে এখন?

বিষণ্ণ প্রদীপের শিখা ছুঁয়ে বয়ে গেছে ঝর
অবসন্ন আলোয় শবের পাশে পদ্ম ফুটে আছে
অতঃপর অকালবোধন 
দুদিকে দুটি পথ 
বলো তবে কোন পথে হাঁটবে এখন ?

শোকাতুর অন্ধগলিপথ 
কোমল চোখে রক্ত ঝরাল যে কারা 
কারা যেন করে গেল বিচারের পন
দুদিকে দুটি পথ
বলো তবে কোন পথে হাঁটবে এখন?




বিপন্ন সময় 
তপন মাইতি

আমার নাক অবধি নোনা জল 
মাথার ওপর চিল শকুন উড়ছে 
পায়ের তলায় নোনা মাটির কাদা 

সামনে বচসা খদ্দেরের সাথে
হচ্ছে দরকষাকষি 
ঠাণ্ডা মাথায় সাজানো হচ্ছে ঘটনাটি
অস্বাভাবিক মৃত্যু!

এসব বরদাস্ত না করলে
এসব দেখতে হত না আজকের 

আমার নাক অবধি দূষণ 
মাথার ওপর রোদ্রের কটাক্ষ 
পায়ের তলায় বিপন্ন সময়ের মাটি 

অনেক হয়েছে আর বরদাস্ত নয়...
এবার অকাল বোধন হবে। 




আগুন বিষ
মনীষিতা নন্দী

রাত বাড়ছে, গ্রাস করছে কষ্টকথা, 
হাঙরের উপাখ্যান।
মানুষ মানুষের মাংস খাবে বলে
খুন করছে জিজীবিষা
ভেতরটা হা - ঘর, হাড় হাভাতে,
সবুজ খুনীর দল রাস্তায় রাস্তায় বমি ক'রে রাখে
রাজপথের ঠিক মাঝে ঢেলে দেয় পেটের তরল
ঘোর বর্ষায় যেমন গাভীর দল
নলগুলো টেনে ছিঁড়ে কুকুরের মুখে তুলে দিলেও 
স্বস্তি হ'ত খানিক,
কানামামাদের ছেড়ে এগোচ্ছে জন আদালত
দোষী - নির্দোষ ছাপিয়ে বাজে, কলির দামামা
গাছপালা কেটে ছেঁটে ভরিয়ে দাও মন্দির মসজিদ 
জায়গায় জায়গায় সুতীব্র কর্কশে
আওয়াজ তোলো গির্জার ঘন্টায়, প্রহর প্রহর;
মাঠ ঘাট নদী নালা পেরিয়ে যাক 
মৌল - ভক্তির ঢক্কানিনাদ,
হাহাকার যজ্ঞে ভয়ের নিমন্ত্রণ 
শিরদাঁড়া বেচে কেনা মুঠোফোনগুলো
চলন্ত - ছবি তুলবে এবার
টাকার গাঙে ডুব মারো, কালের অলফ্যাক্টরি, অপটিক....
শব্দ - জোরের প্রাবল্য বিষয়ে এতটাই সচেতন থেকো
যেন মধ্যদিনের বুক - জানালা থেকে
নিমেষে ঢাকা পড়ে নগ্ন সূর্যোদয় চোখে
আর্তচিৎকারের প্রতি ষোল মিনিট।।




এ তল্লাটে
চন্দ্রানী চৌধুরী 

এ তল্লাটে হারিয়ে গেছে মানবতা
নরপিশাচেরা ভিড় করে দিনে রাতে 
তোমাকে হারিয়ে জেনে গেছি আমরা 
আঁধার ঘনিয়ে এসেছে এই দেশটাতে 

অলি গলি জুড়ে প্রতিবাদ জনসভা
তবু আজও আছি সেই অন্ধকারেই 
তোমাকে ভেবে অস্থির রাত কাটে
শিউরে উঠি সেদিনের কথা মনে করে 

চোখ বুজলেই তোমার দুচোখ দেখি 
যে চোখে ঝরেছে জল নয়, শুধু রক্ত
মানুষ জন্মে কি লাভ হল বলো ত
মনুষ্যত্ব যদি না হয় জীবনের শর্ত 

একটি মৃত্যু পাল্টে দিয়েছে জীবনের মানে 
আর মন জুড়ে থাকা বিশ্বাস ও দোলাচল 
ও মেয়ে এ দেশে ফিরো না তুমি আর
বিকিয়েছে এখানে শিরদাঁড়া, শুধু মিথ্যে দাঁড়িয়ে অবিচল....




অভিমান 
মুনমুন সরকার


অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে শিরদাঁড়া থাক সোজা
 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে
ভালো মানুষ খোঁজা  ||


শিক্ষা বিনয় প্রদান করে সবসময় নম্র ভাবে চলতে 
শিক্ষা বিনয় প্রদান করে সবসময় সঠিক কথা বলতে ||

আসুন আমরা সবাই চিরকাল পাশাপাশি থাকি 
আসুন আমরা মিলেমিশে জীবন কাটাই বাকি ||

একত্রিত হয়ে অভয়ার সঠিক বিচার চাইব
একত্রিত হয়ে অভয়ার সঠিক ভাষায় গান গাইব ||

তবে হয়তো মৃত্যু আসবে, আসবে গাঢ় অন্ধকার  
তবে হয়তো মৃত্যু আসবে, বসবাস হবে কারাগার  ||


বৃষ্টি নামবে দু'চোখ জুড়ে তবুও বলব বিচার চাই 
বৃষ্টি নামবে দু'চোখ জুড়ে তবুও
যতই দুঃখ পাই  ||


শব্দ খুঁজি সত্য ভাষার অথচ চোখেরা জানে....

শব্দ খুঁজি সত্য ভাষার অথচ
হৃদয়ে জমা কী ভীষণ অভিমানে  ||



 জাগরণ  
বুলবুল দে

বিচার চাই বিচার চাই, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, 
এই মহামন্ত্রে ঐ মুখরিত আজ চারিদিক। 
জনরোষের দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে,
অপরাধের নির্মমতায় ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গছে।
এক সে মেয়ে ন্যায় চেয়ে যে সইলো নরক যন্ত্রণা,
লালসা লোভী লোমশ হাত একটুও কি কাঁপলোনা?
যুগে যুগে হায় এইতো হয় শিষ্ট দমন দুষ্ট পালন,
মাত্রা ছাড়ালে হতেই হবে ঘৃণ্য তিক্ত পাপের স্খলন।
চির নিদ্রায় ডুবে সে মেয়ে জাগিয়ে দিল জনমান,
জ্বালালো হাতে হাতে মশাল কণ্ঠে দিল ঐক্যতান।
প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে জনসমুদ্র উথালপাথাল 
নোংরা পাঁকে আঘাত হেনে দেখাক করে আজ   কামাল। 
বিচার সে কি সুবিচার পাবে,পাবে জয়ের আসন?
নাকি আদালতের রঙ্গমঞ্চে হবে শুধুই প্রহসন।
নারী হবে নর-র সমান কিছু জন যে তা চায়না,
আর নর-র উপর তুললে মাথা ছেটেই দেবে তার ডানা।
নারীখাদক লুকিয়ে আছে হাজার লোকের ভিড়ে,
সুযোগ পেলেই ঘাড় মটকে খাবে তোমায় ছিঁড়ে। 
মেয়ে, তোমরা মহিষ মর্দিনী হয়ে ওঠো অচিরেই, 
অসুর বধের নিদান টুকু সঙ্গে রেখো গোপনেই।
দেবীর বোধন পর্বেই যেন হয় অসুর নিধন ,
পাপ মুক্ত হোক পৃথিবী হোক এবার শোধন।




অসহায় দুর্গা
তপন বসাক

এক দুর্গা ধর্ষণের স্বীকার,
রাজপথ থেকে গ্রামে।
বাঁচার তাগিদে কাতর চিৎকার,
আতঙ্ক ভরা প্রাণে।
আরেক দুর্গা খিদের জ্বালায়,
ঘুরে বেড়ায় ফুটপাতে।
কোলেতে অপুষ্টি দুধের শিশু,
ভিক্ষার পাত্র হাতে।
রাজপ্রাসাদেও দুর্গা নিয়োজিত,
সে মালিকের হুকুমে খাটে।
কত দুর্গার বাস খোলা আকাশে,
কত দুর্গা ব্যস্ত মাঠে।
শরীর বেঁচে সংসার চালায় যে দুর্গা,
নিষিদ্ধপল্লীতে তার বাস।
সেই ভিটে মাটি দিয়ে গড়ে মূর্তি,
হায় রে ভাগ্যের পরিহাস !
কিছু দুর্গা খালি পায়ে জীর্ণ পোশাকে,
স্কুলের পথে যায়।
অলংকার সজ্জিত মাটির দুর্গাই,
সমাজে কদর পায়।
বাতাসে ভাসে আগমনীর সুর,
মাটির দুর্গা পূজিত মন্দিরে।
জীবন্ত দুর্গা বিষাদময় বুকে,
হতাশায় ভরা আঁধারে।।


ভাতের রঙ লাল
  মিষ্টু সরকার 

চাট্টি ভাত 
সুগন্ধী কামিনীর নেশার মতো একথালা ভাত ;
একটা খিদের স্বপ্ন জড়ানো 
জীবন চর্যার ছাপ মাখা, ধোঁয়া ওঠা একথালা ভাত !
প্রতিটি  তোফাজ্জলের জীবনে ;  প্রতিটি দানার হিসেব থাকা 
চাট্টি ভাত 
জীবনের স্বর বোনা, খিদের সার চাট্টি ভাত  !! 
সেই  ভাত দিয়ে যায় কেনা !!
শুধু চাট্টি ভাত দিয়ে কেড়ে নেওয়া যায় একটি জীবন ?
ভাতের খিদে মানুষকে বিপর্যস্ত করে জানি;
কিন্তু জুঁই ফুলের মতো সাদা ভাত 
যখন  বলির ; থুরি,  মানুষের প্রাণবায়ু নাশের অধিকার অর্জন করে 
তখন তাকে ভাত বলি কি করে !!
লজ্জার কাঁটাতার হয়ে সে ; জড়িয়ে যায় আষ্টেপৃষ্ঠে ।

বশ্যতা কখনও বমনের অধিকার দেয়না !
গ্রাহ্য করে না পরহিত ব্রতের বিধান  !

সুদীর্ঘ কর্মের  হিসাব মেলাতে বসি;
পশুত্ববলি দিয়ে যা সঞ্চয় করেছে মানুষ ।
ধরিত্রী তা ফিরিয়ে দিচ্ছে কি ??
পূজো নয় ;  ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে উঠি !
ধীরে ধীরে জট ছাড়ে ।
কর্মফলের দোরগোড়ায় এসে গেছে কি মানুষ ?
বিদ্রোহ করেছে কি ওরা ? 
যাদের এই আকাশ মাটিতে যাদের সমান ভাগ !
মনুষ্যত্বের বদলে....... 
হালালের মাংসে হারামের নেশায় তিলে তিলে হারাম পাচিত হয়েছে 
এখন শুধু উদগীরণের পর উদগীরণ 
দেখা বাকি 
রাস্তা শেষে সময় থমকে গেছে 
হাঁটু ভাঙ্গা 'দ'  এর মতো 
প্রবল শৈত্য প্রবাহে পৃথিবী আজ নিথর মেরুপ্রদেশ !
এই বিজ্ঞাপনের যুগে, বাইনাকুলারের যুগে 
খোঁজ চলছে অহরহ ,
প্রত্যহ খোঁজ চলছে দধীচির মুখের ;
এরপর কার পালা ?? এরপর কার ......



ভয়
সৈকত দাম

মুখে সন্দেশ মাখে লজ্জাজনক সময় .....
পানের বদলে টাকা ,
উমার গালে ছোঁয়ায় ......
উমার বাবাটা আজ এক মাস হলো কোমায় .....
আদালতে চলে বিচার .....
নষ্ট মেয়ে উমা ?
নাকি ছিঁড়েছে কেউ উমার শাড়ির পাড় ?
উমা কথা বলে একা একা, 
বাবার কানের কাছে .....
কেউ কি দিচ্ছে সাঁড়া ?!
মৌন মিছিলে সামিল হয়েছে পাড়া ?!
উত্তাপ আসে আকাশ থেকে ,
উত্তর আসে না ......
পাড়ার বাবান, ছোটন ফিরিয়েছে মুখ ,
মেটাতো যারা উমা কে দেখে ,
তীব্র চোখের সুখ .........
দাওয়ায় বসে দেখছে উমা ,
উমার গায়ে ছেঁড়া জামা .......
সংকল্পের রাত নেই কোনো ,
সব সংঘর্ষের রাত .........
কেউ করেনা প্রাণ প্রতিষ্ঠা ,
সবার কালো হাত .......
হাত ধুয়ে এসে খেতে বসে আঙ্গিনায় .....
রক্ত বিকেল ছড়িয়ে দিচ্ছে ভাতের থালায় ,
একলা হবার ভয় .........



বিচার   চাই
পাঞ্চালী  দে  চক্রবর্তী

বড়ো  হওয়া  অনেক  সহজ,মানুষ  হওয়া  কঠিন
কারণ  মানুষ  যে  আজ  হয়ে  গেছে  মনুষ্যত্ববিহীন। 
অন্যায়  করতে  ভয়  লাগে  না,কেউ  অন্যায়  জেনে  গেলে  রাগ
মেয়ে  হলে  তো  নির্বিচারে  লাগিয়ে  দেবে  দাগ।  
মেরুদন্ড  সোজা  রেখে  এক  লেডি  ডাক্তার  করেছিল  অন্যায়ের  প্রতিবাদ
নৃশংসভাবে   তাকে  হত্যা  করেছিল  কিছু  অমানুষ  উন্মাদ ।  
শাসকের  স্তাবক  কিছু  ডাক্তর  দদাগিরি  করেছিল
মেরুদন্ডধারী  কিছু  ডাক্তার  এদের  দুর্নীতি  ধরিয়ে  দিল। 
রাজ্য  জুরে  ঘোর  প্রতিবাদ ,পুলিশ  মহলে  বদল
রাস্তা  জুরে  প্রতিকার  চেয়ে  নেমেছি  মোরা  সদল। 
হোক  প্রতিবাদ,আওয়াজ   তোলো,গর্জে  ওঠো  সবাই
নির্যাতিতার  হত্যাকারী   মৃত্যুদন্ডে  হোক  জবাই। 
অর্থলোভী  নরপিশাচেরা  লাশকে  দেয়  না ছাড়
ডাক্তার   বলে  এদের  প্রতি  সম্মান   জন্মাবে  বলো  কার?
অমানুষদের  জানাই  মোরা  ধিক ধিক   ধিক্কার  
উৎসবে  মোরা  মাতব  সেদিন,যেদিন  পাব  বিচার।  



দুর্গতিনাশিনী মা
বর্ণক বসু

দুর্গতিনাশিনী মা তুমি বিরাজ করো সব জনে; 
তাই তো মাগো তোমার নাম স্মরি একমনে।
মাগো তুমি তো দেখছো বিশ্ব জুরে চলছে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব....
সেই দ্বন্দ্বে মিলেছে আজ মৌলবাদ রাষ্ট্রনায়কদের স্কন্ধ।
চলছে হিংসা হানাহানি আর উগ্র জাতীয়তাবাদ।
তাই তো হারিয়ে যাচ্ছে আজ সুস্থ মানবতাবাদ।
মনে হয় যেন রণধ্বনি বাজবে এক্ষুনি....
তাই তো মনে হয় সভ্যতার ইতিহাস শেষ হবে এইভাবে;এমনি
চলছে পরমাণু সহ বিভিন্ন মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা।
হিংসাপূর্ণ দেশগুলি করছে তাতে অশেষ সহযোগিতা।
নারীর সম্মান আজ ভূলন্ঠিত,
বিচার মেলেনা তাই হই বিচলিত।
চলছে জাতপাত,হিংসাদ্বেষ আর অমানবিকতা....
লুপ্ত হয়েছে মানুষের মিল পবিত্রতা আর মানবিকতা।
তাই তো মাগো এমন সময় তুমি ফিরে এসো।
দুষ্টের দমনে তুমি এবার রনমূর্তি বেশে বিরাজো,
জেগে ওঠো স্বমূর্তিতে ফ্যাসিবাদি অসুর বিনাশ করতে।
বন্ধ করো মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা ধরাধামকে শান্ত রাখতে।
দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা শক্তি দাও বিশ্বমানবতা জয় করবার,
আলোর বেনু বাজিয়ে মাগো নতুন পৃথিবী কোরো নতুন ফুল ফোটাবার।



বিপন্ন সময়, বিষণ্ণ সময় 
আকাশলীনা ঢোল 

কীভাবে বুঝলে তুমি সময়টা যে বিপন্ন?
নগরের পথে পথে দেখেছো 
বুঝি, ভূলুণ্ঠিতা আদ্যাশক্তি - মহামায়া?
দেখেছো বুঝি? তাঁর ধমনী থেকে নির্গত 
হতে উষ্ণ রক্তস্রোত?
দেখেছো বুঝি, পরমেশ্বরীর অবমাননার 
প্রতিশোধ নিতে শহরের পথে 
অকালে দীপাবলী?
যদি দেখে থাকো, যদি থেকেই থাকো,
তবে জেনো, সময়টা সত্যিই বিপন্ন।

কীভাবে বুঝবে তুমি, বিপন্ন সময়ের বিষণ্ণতা?
যদি দেখো বিপন্ন সময়ে তোমার 
মনকে ঘিরেছে, প্রতিবাদ নয়, অবসাদ -
যদি দেখো তোমার রক্ত শীতল হয়ে 
আসছে, যদি মনে হয় তোমার স্নায়ু 
অবশ আর হৃদয় ক্ষতয় পরিপূর্ণ,
তাহলে প্রতিবাদের আসরে না নেমেও 
তুমি বুঝবে, সময়টা কেবল বিপন্ন নয়,
বিষণ্ণও বটে।
তবেই তুমি, হৃদয় মেলাতে পারবে 
সন্তানহারা মাতৃ হৃদয়ের সঙ্গে।
এই বিষণ্ণতা, যদি তোমাকে স্পর্শ করে যায় -
তবেই তুমি হতে পারবে 
যুগান্তরের পথিক,
যে পথিক পথ কেটে যায়, এক নিরাপদ জীবনের।




ন্যায় বিচার
দুলিকা খারিয়া 

স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা দেশে 
স্বাধীনতা খুঁজে বেড়ায় 
শত শত তরতাজা প্রাণ...। 

ছিল ব্রিটিশের শোষণ শাসন 
ভারতের নির্যাতন...। 
কিন্তু আজ ব্রিটিশ মুক্ত ভারতমাতা।
তথাপি নরখাদক পিশাচ কালকূটে ভরা 
নারী সমাজের বুকে। 

তন্ন তন্ন খুঁজে বেড়ায় সুরক্ষা কবজ 
রাস্তাঘাটে কাজে-কর্মে প্রতি মুহূর্তে। 
যে মেয়েটা ধর্ষিত ছিন্নভিন্ন লাশ  
হতে পারে আগামীকাল তোমারও রাজকন্যার। 
নিঃস্ব মায়ের করুণ বেদনার হাহাকার 
বিফল যেন না হয় মহামান্য শীর্ষ আদালত 
অন্তত ন্যায় বিচার পাক। 


যখন রাত নামে
রেজাউল করিম রোমেল

যখন রাত নামে,-
প্রকৃতিতে নেমে আসে নীরবতা।
চারিদিকে শুনশান পরিবেশ,
চাঁদের আলোয় 
আলোকিত হয় প্রকৃতি।
প্রকৃতিকে এনে দেয় অপূর্ব সৌদর্য্য,
আকাশের তারাগুলো মিটি মিটি
করে জ্বলছে।
রাস্তার ল্যামপোস্ট গুলো
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আলো দিয়ে যাচ্ছে।
পথচারীর দেখা নেই।
মাঝে মাঝে দূর-দূরান্তের কিছু
যানবাহন দ্রুত গতিতে 
ছুটে চলে তাদের গন্তব্যে।
রাত গভীর হলে ঘুমিয়ে যায় প্রকৃতির
মানুষগুলো, প্রাণীকূল, গাছপালা।
শুধু জেগে থাকি আমি-
আর জেগে থাকে হুতুম পেঁচা।
আমি জেগে থাকি,-
একটি ভোরের অপেক্ষায়,
একটি দিনের অপেক্ষায়,
কখন ভোর হবে!
আলোকিত হবে প্রকৃতি...




পূজা এলে 
মজনু মিয়া 

বছর শেষে পূজা আসে
পূজায় কত মজা
কত কিছুই মিলে তাতে
জিলাপি রস গজা।

রঙবেরঙের সাজের জিনিস 
খেলনা পুতুল আয়না
কত কিছুই মিলে তাতে 
যা যা আছে বায়না।

দেখার মতো চরকা ঘোরে 
দোকান সারি সারি 
আমোদ প্রমোদ ঘরে ঘরে 
উৎসব বাড়ি বাড়ি।

বাজে পূজার বাদ্যযন্ত্র 
কাসা বাঁশি ঢাকঢোল
নাচে গানে মাতোয়ারা 
শুনি সুর উলু বোল।



সকরিকলি ঘাট
তুহিন কুমার চন্দ

এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সকরিকলি ঘাট
বালুচরে হেঁটে গিয়ে ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন
হার্ডিজ ব্রিজ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট,
তখন হারায়নি গ্রামগঞ্জ খালবিল
ভাটিয়ালি গানে সোনালী বালুরাশি বিছানো চাদর।
এখন ঢালাই ব্রিজ, ব্রিজের রেলিং ছুঁয়ে কত লুকোচুরি খেলে যায় হাওয়ার সাথে 

বিকেলের রোদ আর খেলনা ভালোবাসা।

বলাইয়ের ভাঙ্গা নাউ এখনো বাঁধা আছে ঘাটে,
কেউ আর ভুল করে তাকায় না ওদিকে
এই ঘাট রুটি দিতো, পরনে কাপড়,
সারাদিন বসে থাকা অভিশপ্ত ঘাটে
ঘাটের দুঃখ ঘাটই জানে শুধু
বুকের ভেতর দুখের পাহাড় নিয়ে রাত জাগে সকরিকলি ঘাট।

প্যাঁচানো রোদের মায়ায় নিত্যদিনই ঘাটে যায়
বলাইয়েরা এখনো ওখানে,
কেউ যদি ভুল করে হয় পারাপার
আকাশের মাঝখানে রোদ যেন চিত্রার্পিতের মতো দাঁড়িয়ে সটান,
বলাইয়ের কচি বৌ ঘাটে গিয়ে ইষ্ট দেবতাকে অভিশাপ দিয়ে আসে প্রতিদিন।

এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সকরিকলি ঘাট
এখন জলে শুধু ভেসে থাকে শিমূলের নাও
ভাটিয়ালি হারিয়েছে ভরা নদী জলে
শুধু ফিসফিস কথা বলে স্মৃতি নিয়ে
একটানা কেঁদে যায় সকরিকলি ঘাট।



শিক্ষক  
আশীষ  কুমার  বিশ্বাস


শিক্ষা আমায় দিলো আলো
দীপ্তময় এ জীবন
শিক্ষকেরই দেওয়া শিক্ষা
ভুলি না যেন , আজীবন ।

শিক্ষা মোদের আলোর উৎস
জীবন গড়ার পীঠস্থান
সারা বিশ্বে তাইতো গড়া
হাজার-লাখো প্রতিষ্ঠান ।

মাতা-পিতা , শিক্ষক , গুরু
ভিন্ন ধারায় জয়ের গান
সভ্য জগৎ গড়ছে তাঁরা
শিক্ষা দানের মহৎ দান ।

সঠিক শিক্ষায় বিশ্বব্যাপী
সুস্থ্য সমাজ , শিরদাঁড়া
তাঁদের দীক্ষায় দীক্ষালয়ে
শ্রেষ্ঠ হোক বুকভরা ।







মুনা 

অনলাইন শারদ (আশ্বিন) সংখ্যা ১৪৩১


অঙ্কন 


শিল্পী- বাবুল মল্লিক 





শিল্পী- রাকেশ বর্মন 








শিল্পী- সুকল্যাণ দে
 













শিল্পী- চিত্রাক্ষী রায়, চতুর্থ শ্রেণি 













শিল্পী- হৃদান সরকার, বয়স- সাড়ে পাঁচ 












শিল্পী- অলিপ্রভা পাটোয়ারী, শ্রেণি- এলকেজি 









মুনা 

অনলাইন শারদ (আশ্বিন) সংখ্যা ১৪৩১


No comments:

Post a Comment