দুটি কবিতা
এরশাদ
সালাতে ইশক
আজ আষাঢ়ের প্রথম নিশ্বাস,
আকাশে মেঘের অলিখিত আয়াত—
বিদ্যুতের আলোয় ভেসে ওঠে
প্রিয়তমার মুখ,
মেঘেরা যেন তাঁর পর্দা
যে মাঝে মাঝে সরে গিয়ে
দেখিয়ে দেয় অনুপম সেই মুখচ্ছবি,
আবার মিলিয়ে নেয়
অজানার গহীনে।
আমার হৃদয় আজ এক ধ্যানমগ্ন মসজিদ,
যেখানে তিস্তার জল—
সময় নয়, স্মৃতির ওযু-জল,
ভাসিয়ে নেয় বিস্মৃত ভালোবাসা
যেমন কোনো পুরোনো দোয়ারা
থেকে যায় বাতাসে ধ্বনি হয়ে।
ফজরের আজান
এই নিদ্রিত জগতের ডাকে নয়—
ভাঙে আমার আত্মার অভিমুখ,
আমি জেগে উঠি
ভাষাহীন এক উচ্চারণে,
যেখানে প্রতীক্ষা জমে ওঠে
তসবির প্রতিটি দানায়,
প্রতি ঘূর্ণিতে উচ্চারিত হয়
‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
তাঁর কণ্ঠস্বর আসে—
না-শোনা এক ধ্বনির অন্তরালে,
যা কান নয়, হৃদয়ের চোখে ধরা দেয়।
সে সুরে নেই কোনো ভাষার ভার—
তবু মনে হয়,
যেন সমস্ত নীরবতা রূপ নিয়েছে প্রার্থনায়,
যেমন মরমিয়া ফকিরেরা শুনে নেয়
আকাশের অভ্যন্তরের সঙ্গীত।
প্রেম এখানে জল নয়
জল হয়ে ওঠার তপস্যা,
এক অন্তহীন রূপান্তর—
যেখানে ক্লান্তি ধুয়ে যায়
আর অহং ডুবে যায়
আত্মসমর্পণের জলে।
আজ আষাঢ়ের ধারে দাঁড়িয়ে
আমি আর আমি নই—
হৃদয় আমার এক ছোট তস্তরী,
ভেসে আছি তোমারই করুণার স্রোতে।
তুমি যদি হও মেঘ,
তবে আমি হবো বৃষ্টি—
ঝরে পড়ব,
তোমারই স্নিগ্ধতায়,
এক অনন্ত ইবাদতের নামে।
ঈশ্বরের গোপন ব্যাকরণ
কে বলে—
পর্দার আড়ালে কেউ থাকে না?
আলো-আঁধারির সন্ধিক্ষণে
কিছু মুখ জেগে ওঠে হাত হয়ে—
কোনো শব্দ নয়,
একটি নিঃশব্দ স্পর্শ হয়ে তারা
ভাতশূন্য পাতে কান্নার পাশে বসে।
শহরের ঠান্ডা কাচে জমে থাকে
স্বার্থের ঘন শীত,
তুমি সেখানে হেঁটে যাও—
উষ্ণ এক রেখা রেখে যাও অদৃশ্য পায়ের ছাপে।
তুমি ছিলে না পোস্টারে,
ছিলে না মঞ্চের আলোয়,
তবু তোমার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে
একটি অনাথ হাসি,
একটি বিধবা প্রার্থনার মতো উচ্চারিত হয়।
No comments:
Post a Comment