বড়িশার রথযাত্রা
শ্রাবণী সেন গুপ্ত
এক সময়ে দক্ষিণবঙ্গের স্বনামধন্য ভূস্বামী পরিবার ও তৎকালীন সময়ের অবিভক্ত বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ ভূমির রাজস্ব আদায়ের কর্তা সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সুসন্তান রায় কৃষ্ণদেব মজুমদার চৌধুরী বড় বাড়ির প্রতিষ্ঠাকল্পে ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রজাদের আনন্দবর্ধন করার জন্য বড়িশা গ্রামে বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব রথোৎসবের প্রচলন করেন। সেকালে জমিদার বাড়ির শালগ্রাম নারায়ণ শিলা শ্রীধরদেব কে নিয়ে এক সুবৃহৎ ত্রিতল রথযান জনপদের গ্রাম পরিক্রমা করতো। কবিগান, যাত্রাপালা, মহানাম সংকীর্তন, হোম যজ্ঞ ও অন্নসত্রে উৎসবের দিনগুলি মুখরিত হয়ে থাকতো। পরবর্তীকালে কৃষ্ণদেব পুত্র রায় নন্দলাল, তৎ পুত্র রাঘবেন্দ্র, তৎ পুত্র তারিণীচরণ ,তৎ পুত্রদ্বয় সূর্য কুমার ও তারা কুমারের সময়ে এই উৎসবের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। আরো পরে বড় বাড়ির জ্যেষ্ঠ শরিক বাবু লাল কুমার রায়চৌধুরী ১৯১১ সালে সখের বাজারে এক মন্দির নির্মাণ করে সেখানে মহাপ্রভু শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব, দেবী সুভদ্রা ও শ্রী বলভদ্র দেবের দারুবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। উড়িষ্যা প্রদেশের শ্রী পরমানন্দ পান্ডা দেব সেবার ভার গ্রহণ করেন। প্রাচীন শৈলী অনুযায়ী তৈরি হয় এক সুবৃহৎ ত্রিতল রথযান। প্রথমে সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের জ্ঞাতি ব্যানাকি বাড়িতে , পরে ১৯৩২ সাল থেকেঘোষপাড়ার স্বর্গীয় হীরালাল বসুর গৃহে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের গুন্ডিচা নিবাসের প্রথা আরম্ভ হয়। ১৯৭৫ সাল নাগাদ ডায়মন্ড হারবার রোডের সম্প্রসারণের প্রাক্কালে পুরনো রথযাত্রীর ঘর ভাঙ্গা পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮৪ সালে পূর্বতন উৎসব সমিতির অধ্যক্ষ শ্রী কিংশু কুমার রায়চৌধুরী , মহাসচিব প্রয়াত শ্রী গোরাচাঁদ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে এবং বড়িশার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের প্রচেষ্টায় সর্বজনীন উদ্যোগে পুরীধাম থেকে কারুকৃৎ এনে নতুন রথযান নির্মাণ করে বড়িশার প্রাচীন উৎসবকে আবার সগৌরবে ও স্বমহিমায় সু প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ২০১৮ সালে সাড়ম্বরে বড়িশা সার্বজনীন রথ উৎসব এর ত্রিশত বর্ষ মহামহোৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। বিভিন্ন সময়ে বড়িশা গ্রামের বিশিষ্ট অধিবাসীবৃন্দের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় এই ত্রি শতাব্দী প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব আজ কলকাতা শহরের প্রাচীনতম।।
বর্তমানে বিকেল চারটের সময় সখের বাজারের জগন্নাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে বড় বাড়িতে গিয়ে রথের স্থাপন করা হয়। তারপর বিকেল পাঁচটায় রথ টানা হয় চৌরাস্তা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে শীলপাড়া ভজনা আশ্রম পর্যন্ত। এই উৎসব উপলক্ষে জগন্নাথ মন্দির থেকে ভজনা আশ্রম পর্যন্ত বিভিন্ন রকম পসরা নিয়ে রথের মেলা বসে।
No comments:
Post a Comment