Friday, October 3, 2025



টিপু সুলতান সামার প্যালেস, ব্যাঙ্গালোর 

চন্দ্রানী চৌধুরী 


হাই টেক সিটি ব্যাঙ্গালোর মূলতঃ আই টি হাবের জন্যই বিশেষ ভাবে পরিচিত। তবে ব্যাঙ্গালোরের আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য যেগুলোর অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য কৃতিত্ব মনকে মোহিত করে তোলে। 

আজ গিয়েছিলাম দুটো জায়গায়। নিজেরা জায়গা গুলো খুঁজে বের করে করে যাচ্ছি। তাই একটু সময় হয়তো বেশি লাগছে। কিন্তু খুব ভালো করে ঘুরতে পেরেছি। কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ ইচ্ছে আমরা ঘুরে বেড়িয়ে ধীরে সুস্থে ফিরেছি।






এখানকার স্থাপত্য গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেঙ্গালুরু মেডিকেল কলেজের কাছে কৃষ্ণ রাজেন্দ্র মার্কেট মেট্রো স্টেশনের একদম কাছেই অবস্থিত 'টিপু সুলতানের সামার প্যালেস' বা "গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ"। আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে টিপু সুলতান সামার প্যালেসের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। 

এটি ইন্দো ইসলামিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি গ্রীষ্মকালে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতানের জন্য শীতল আরামদায়ক বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হত। টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর এই প্রাসাদটিকে ইংরেজরা তাদের সচিবালয় হিসেবে ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।






প্রাসাদের ইতিহাস 

টিপু সুলতানের সামার প্যালেসের ইতিহাস খুবই উল্লেখযোগ্য। টিপু সুলতানের বাবা হায়দার আলি ওয়াদিয়ারদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করার জন্য বেঙ্গালুরু চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই ১৭৭৮  খ্রীষ্টাব্দে  তিনি বেঙ্গালুরু দুর্গের দেওয়ালের ভেতরে প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন।  কিন্তু প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পরবর্তী কালে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতান এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন এবং এখানে রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম হত। আবার অনেকের মতে টিপু সুলতান এটিকে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

প্রাসাদের নির্মাণ কাজ 

প্রাসাদের চারপাশে একটি মনোরম বাগান রয়েছে। সামনের বিশাল লন পেরিয়ে আমরা মূল প্রাসাদে পৌঁছালাম।  প্রাসাদের সামনের অংশটি কর্নাটক সরকারের উদ্যান পালন বিভাগ রক্ষনাবেক্ষণ করে। 

দোতলা আয়তাকার প্রাসাদটি সম্পূর্ণ সেগুন কাঠের তৈরি। এটি একটি নীচু পাথরের প্ল্যাটফর্মের ওপরে নির্মিত প্রাসাদ। এখানে সুন্দর খিলান, স্তম্ভ, বারান্দায় খোদাই করা নানা ছবি রয়েছে যা সে যুগের স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। প্রাসাদের ছাদে ও দেয়ালগুলিতে কাঠের খোদাই করা সুন্দর ফুলের নকশা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং যুদ্ধের ছবি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে।  তবে এখন সেগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপরের তলায়  পূর্ব ও পশ্চিম দিকে খোলা বারান্দা আছে যেখানে টিপু সুলতান দরবার পরিচালনা করতেন। নীচ তলায় চারটি ছোট ছোট ঘর সম্ভবতঃ সেগুলো মহিলাদের জন্য আর একটি বড় হলঘর রয়েছে। রয়েছে বিশাল সিঁড়ি যা মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের বিশেষ নিদর্শন। প্রাসাদে মোট ১৬০ টি কক্ষ রয়েছে। 





এখানে টিপু সুলতানের তৈরি একটি বিশাল সিংহাসনের ছবি রয়েছে। সোনার চাদর ও  মূল্যবান পান্নায় মোড়া এই সিংহাসন রাজা টিপু ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেই  ব্যবহার করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর, ইংরেজরা সিংহাসনটি ভেঙে ফেলে এবং এর অংশগুলি নিলামে বিক্রি করে। এই প্রাসাদটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে টিপু সুলতানের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। 

জাদুঘর 

সামার প্যালেসে নীচতলায় একটি জাদুঘর আছে যেখানে টিপু সুলতান হায়দার আলি এবং তার পরিবারের ব্যবহৃত পোশাক, মুদ্রা, অস্ত্র, রূপার পাত্র, মুকুট রয়েছে। এছাড়াও আছে দুশো বছরের পুরোনো তৈলচিত্র, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের 
চিত্র যা টিপু সুলতানের রাজকীয় জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। রাজাকে দেওয়া বিভিন্ন উপহার সামগ্রী ও সেখানে রাখা হয়েছে। এখানে রাখা ফ্রেস্কো গুলো ইংরেজদের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান এবং হায়দার আলির  যুদ্ধের বর্ননা দেয়। টিপু সুলতানের ডিজাইন করা একটি বাদ্যযন্ত্র আছে । এটাতে বাঘের নাম লেখা আছে যা একজন ব্রিটিশ সৈন্য কে হত্যা করে। এটাতে ফুঁ দিলে বাঘের গর্জন আর ইংরেজ সৈন্যর কাতর কন্ঠস্বর ভেসে আসে।  অবশ্য এখানে অরিজিনাল বাদ্যযন্ত্র টি নেই। অরিজিনাল বাদ্যযন্ত্র টি লন্ডনের জাদুঘরে রাখা আছে। 






কিভাবে যাবেন 

ভারতের যেকোনো জায়গা থেকে রেল সড়ক বা আকাশ পথে ব্যাঙ্গালোরে যাওয়া সম্ভব। সামার প্যালেসে যেতে অটো, বাস বা ক্যাব ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি  কৃষ্ণ রাজেন্দ্র মার্কেট মেট্রো স্টেশনের একদম কাছেই অবস্থিত।

সামার প্যালেস কখন খোলা থাকে

সামার প্যালেস সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে। সকাল ৮.৩০ থেকে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।

সামার প্যালেসের প্রবেশমূল্য 

সামার প্যালেসের ভেতরে যাবার জন্য টিকিটের দাম ২০ টাকা ( জনপ্রতি)। ওখানে পৌঁছে  অনলাইনে টিকিট কাটা যাবে জানতে পেরে আমরা অনলাইনে টিকিট কেটে নিয়েছিলাম।


(ছবি- লেখক)

No comments:

Post a Comment