সম্পাদকের কথা
একটা অস্থির পরিস্থিতি চারদিকেই। যে কোন বিষয়েই অতিরিক্ত কিছু ভালো না। ভুলে গেছি আমরা সেটাই। অদ্ভুত বাতাবরণ তাই। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আত্ম-সমালোচনার। দরকার এক জাগ্রত বিবেকের। বন্ধ হোক বিভেদ। বন্ধ হোক কু-বাক্য। ফিরুক বিশ্বাস। ফিরুক সম্প্রীতি। উত্তরণ হোক মনের, বোধের, মননের.....
গদ্য
একটাই পথ
মীরা সরকার
তখন নকশাল বাড়ি লালে লাল।প্রতিদিন প্রতিরাতে মৃত বন্ধু ,সহপাঠী অথবা দাদাদের
শরীর এখানে ওখানে পড়ে থাকে।রোজ ভাবি কাল আবার কাকে পড়ে থাকতে দেখব।সবাইকে দেখতে যাবার সাহস ছিল না ।কী এক অজানা ভয়,গুরগুরে ভয় বুকের ভেতর থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ।কোন কোন মৃতদেহের উপর দুফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারলে শান্তি পেতাম ।তাঁদের আত্মাও নিশ্চয়ই শান্তি পেত। ওদের ভালোবাসতাম যে। কেউ সুন্দর আবৃত্তি করতেন।কেউবা কবিতা লিখতেন ছবি আঁকতেন কেউ ।দেওয়াল পত্রিকা গুলো ভরে উঠত তাদের চিন্তার ফসলে।
আমি সামান্য বুদ্ধির নেহাত কলেজে পড়তে আসা একটি মেয়ে । কোন রাজনীতি দূরে থাক উচ্চাকাঙ্খার সিড়িঁ ও সামনে ছিল না।এই মৃত্যু গুলো আমাকে কাঁপিয়ে দিতো । এরকমও হত এইতো গতকাল গান গেয়েছিল সৌমেন। আজ নেই।নেই মানে নেই-ই।
সেদিন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের একটি গোপন মিটিং ছিল একটি ভাঙ্গাচোরা প্রাথমিক স্কুলে সন্ধ্যার পর। আমার এক বন্ধু খুব উৎসাহী ছিল । হঠাৎই বলল-যাবি আমার সঙ্গে? বেশি ক্ষণ লাগবে না।একসঙ্গে ফিরব।নইলে রাত হয়ে যাবে ।বাড়িতে বকবে ।তুই থাকলে কিছু বলবে না।
-আমার যে দেরি হয়ে যাবে । প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস কখন শেষ হয়ে গেছে ।মা খুব চিন্তা করবে।
-আমার সঙ্গে থাকলে কিছু বলবে না ।চল না আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
-কিন্তু ওরা যদি আমাকে দেখে রেগে যায়।ঢুকতে না দেয়।
-দুর বোকা। আমাদের লড়াই তো দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় লোকটির জন্যে ।তুই তো আমার সঙ্গে যাচ্ছিস । তোকে কিছু বলবে না ।বরং খুশি হবে।
হলও তাই।স্কুলের ভাঙা বেড়া টপকে ভেতরে ঢুকে দেখি একটি টিমটিমে মোমবাতি জ্বলছে আর অসংখ্য শব্দহীন মানুষের মাথা। একজন অনুচ্চ স্বরে একটা কিছু সিরিয়াস কথা বলছেন ।আমরা গিয়ে পিছনে বসলাম । আমার বন্ধু খুব সপ্রতিভ ভাবে এগিয়ে গিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি সবার পিছনে।অন্ধকার ঘরের ছমছমে আলোয় চাপা স্বরে কী যে সব কঠিন কঠিন আলোচনা ।বুঝতে পারছি না আবার বন্ধুর জন্য যেতেও পারছি না।ভাবছি বেরিয়ে গিয়ে দাঁড়াই।তক্ষুণি কানে এলো আমাদের ক্লাসের সিদ্ধার্থের নাম।কান পেতে শুনতে শুনতেই শরীর গরম হয়ে গেল ।দরদর করে ঘামতে লাগলাম ,পা কাঁপতে শুরু করল। সিদ্ধার্থ তো অন্য রাজনীতি শিবিরের।ও এত ভালো।তারুণ্যে ভরপূর উজ্জ্বল ওকে সবাই ভালবাসে।ভাল না বেসে পারে না ।
কখন যেন বাড়ি চলে এসেছি জানি না।কাউকে কিছু বলতে পারলাম না ।রাতে কিছু খেতে মন চাইল না।বুকের মধ্যে নদীর পাড় ভাঙ্গার শব্দ হচ্ছিল ।কাল-কাল কী হবে? কীশুনব কাল?
পরদিন ভয়ে ভয়ে কলেজে গেলাম । নাঃ কোন কিছু তো--তাহলে কি আমারই ভুল?ভুল শুনেছি ।সিদ্ধার্থ র সাথে দেখা হল। ও ওর স্বভাব অনুযায়ী আমার মাথায় খাতা দিয়ে একটা 'ধপাস'করে বাড়ি মেরে বলল ' -কীরে মুখটা বাংলা র পাঁচ করে রেখেছিস কেন?'
আমি ওর দিকে চেয়েই রইলাম, যাক্ ও তাহলে বেঁচে আছে।কিন্তু আমার বন্ধুটিকে যে দেখছি না। সে কোথায়?
বন্ধুকে আর পাওয়া গেল না কোথাও ।এদিকে সিদ্ধার্থ নাকি কলকাতায় চলে গেছে।ওখানেই পড়াশোনা করবে। আমার বন্ধুর মা বাবা
পুলিশ অনেক খুঁজেও পায় নি।আমাকে ও খুব জিজ্ঞেস করেছে আমি জানি কী না কিছু।আজও আশ্চর্য লাগে কোথায় কীভাবে হারিয়ে গেল ও?
অনেকদিন পরে শুনেছিলাম আমার বন্ধু সেই গোপন মৃত্যুর পরওয়ানার কথা বিপক্ষ দলে সদস্য সিদ্ধার্থকে জানিয়ে দিয়েছিল । সিদ্ধার্থ সঙ্গে সঙ্গে পালিয়েছিল।ওকে বাঁচিয়ে ও নাকি বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি মাথায় তুলে নিয়েছিল ।
পরবর্তী কালে সিদ্ধার্থ সরকারি উচ্চ পদে চাকরি পেয়েছে।ওর সাথে আর দেখা হয়নি ।যদি দেখা হত ওকে জিজ্ঞেস করতাম ওর কি মনে আছে আমার তুমুল বিপ্লবী বন্ধুর কথা; যে নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ওর জীবন বাঁচিয়েছে। জানি না এই উদারতাকে কী বলে বিশ্বাসঘাতকতা না সম্প্রীতি । কোন বিপ্লবের ইতিহাসে ওর নাম নেই।
আলোর জন্মকথা:-
কুমকুম ঘোষ
সকাল ৬টা: সিমলা স্ট্রিট লাগোয়া সরু গলি।রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়ে ব্যায়াম সমিতির মাঠের দিকে গেছে,..কর্পোরেশনের জলের কলটা সেখানেই।দিনে চারবার জল আসে তবু সকাল থেকে লম্বা লাইন পড়ে রোজ।মগ,বালতি,ইঁট,রঙের টিন দিয়ে সেই ভোর থেকে লাইন রেখে গেছে ওরা। গোলমালের আওয়াজটা আসছে ওখান থেকেই।কে নাকি তার মগ সরিয়ে বালতি রেখেছে দুনম্বরে--রাজুর মা মীনাবিবি দস্তুরমতো মারমুখী হয়ে মুখ চালাচ্ছে।সামনে জিতুর মা।তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সে তার মগ সরায় নি।তাতে কি?আশেপাশে মেয়েরা সবাই মজা দেখছে বেশ।এতো লেগেই থাকে!
এমন সময় ব্যায়াম সমিতির মাঠের ওদিক থেকে রাজু ছুটতে ছুটতে এসে মগটা মায়ের হাতে দিল।
ব্যাপার পরিষ্কার। এবার সুযোগ বুঝে নিরীহ জিতুর মা ও একটু গলা চড়ালো।ততক্ষণে কলে জল এসে গেছে।সবাই লাইন দিয়ে হাঁড়ি কলসি ড্রাম বালতি ভরে জল তুলে দ্রুত পায়ে ডেরার দিকে দৌড়োলো।
কাজে বেরোতে হবে যে এবার?
সকাল ৮টা: ওরা পাঁচজন:রাজু ,আকাশ,জিতু,সোমনাথ,মঙ্গল...মুখ নীচু করে বসে আছে গোল হয় কদমগাছটার গোড়ায়।সিমলা ব্যায়াম সমিতির এই মাঠটাই ওদের ঘরবাড়ি; শুধু স্কুলে থাকার সময়টুকু ছাড়া।ফুটবল খেলা তো আছেই,উপরন্তু মাঠের দেখভাল করা,পরিষ্কার করা,ক্লাবঘর ঝাঁট দেওয়া---সব দায়িত্ব ওদের।কলে জল আসতে দেরী হচ্ছে দেখে রাজুই জলের লাইন থেকে ওর চেনা মগটা নিয়ে এসেছিল,..ক্লাবের চৌবাচ্ছা থেকে জল নিয়ে ওরই লাগানো কৃষ্ণচূড়ার গোড়ায় জল দেবে বলে। জিতু ওর প্রাণের বনধু,কিন্তু এই ঘটনার পর ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না ও,..নিজেকে অপরাধী ভাবছে।
সকাল ১১টা:..ক্লাস সেভেনের ঘরে ঢুকে অরুনা চমকে গেলো।আজ মাঝের দুটো বেঞ্চ ফাঁকা! পঞ্চপান্ডব আ্যাবসেন্ট!...এমন তো হয় না...রোলকল করতে করতে ভাবলো অরুনা।
--অরুনা শুনছিল না........দেখছিল
মীনাবিবির রক্তাক্ত ছেলেকে জিতুর মা কোলে তুলে নিচ্ছে...আকাশ সোমনাথ জিতু মঙ্গল--চারটি কিশোর ভ্যানওয়ালাকে ডেকে আনছে ..বৈশাখী রোদ ওদের দগ্ধ করছে...ওরা ছুটছে ..আর একটা দেওয়াল ভেঙ্গে যাচ্ছে...তার প্রতিটা ইঁট টুকরো হয়ে যাচ্ছে...জন্ম নিচ্ছে একরাশ আলো...সে আলোর নাম--ভালোবাসা-মানবতা--সম্প্রী তি......।
--তোরা কাল স্কুলে আসিস নি কেন?..বিরক্তি ঝরে পড়লো অরুনার গলায়।
--কি কোরে আসবো দিদি..আমরাই তো ওকে হাসপাতাল নিয়ে গেলাম।
--তাই নাকি?কখন?
--ওই তো দিদি..ইস্কুলে আসার টাইমে।ঘুড়িটা মল্লিকবাড়ীর ছাদে আটকে ছিল।বারণ করলাম।শুনলো না।পাঁচিল থেকে সোজা নীচে পড়লো।কি রক্ত দিদি।ভাগ্যিস তখন জিতুর মা কাজের বাড়ী থেকে আসছিল।দেখতে পেয়ে ছুটে এলো। সবাই ধরাধরি করে তুললাম।ভ্যানে করে মেডিকেলে নিয়ে গেলাম।ফিরতে তো বিকেল হলো দিদি।
এক নিশ্বাসে আকাশ ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিল..
--কিন্তু দিদি জানেন?...কাল সকালে রাজুর মা বিনা কারণে জিতুর মা'র সাথে কি ঝগড়া করছিল..কত খারাপ খারাপ কথা বলছিল....জানেন দিদি..জানেন..?
.............................. ...........................
১মাস ১৫দিন পর সকাল ১০.৪৫ মিনিট: ওরা পাঁচজন: জিতু হালদার--রাজু শেখ--আকাশ গুজরাটী--সোমনাথ হালদার--মঙ্গল দাস প্রার্থনা সঙ্গীতে গলা মেলাচ্ছে
"আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।।
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগন মাঝে......
অরুনা দেখছে.....অরুনা শুনছে ।
ভালোবাসা : একটি মানবিক ধারক
মৌসুমী চৌধুরী
তখনও আলো ফোটে নি। আধো অন্ধকারেই কনভেন্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লো অ্যাঞ্জেলা। সজল চোখে শেষবার পেছন ফিরে দেখে নিলো নেমপ্লেটটা "সেন্ট যোসেফ কনভেন্ট। ৬৪/এ, হিল রোড। বান্দ্রা (ওয়েষ্ট)। মুম্বাই -- ৫০। " বুকটা আবার ভারী হয়ে গেলো। এক লহমা থেমে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এগোতে শুরু করলো সে । দাদর স্টেশানে সুগত যে অপেক্ষা করছে......
সেই কবে সুদূর মাদুরাইয়ের একটি গ্রাম থেকে মাত্র আঠেরো বছর বয়সে এই কনভেন্টে পা রেখেছিলো অ্যাঞ্জেলা, সিস্টার বিদ্যার হাত ধরে। তার আগে কনভেন্ট লাইফ সম্পর্কে কোন রকম ধারণাই তার ছিলো না । তার ধর্মপ্রাণ বাবা- মা তাঁদের বাচ্চা মেয়েটিকে ইশ্বরের পায়ে অর্পণ করেছিলেন। তারপর এখানে "ডটার্স অফ দ্য ক্রস"সোসাইটির আন্ডারেই শুরু হয় তার নান হয়ে ওঠার ট্রেনিং ---ধর্মীয় জীবন। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হোতো। মুম্বাইয়ের নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা আর কনভেন্ট লাইফের কঠোর অনুশাসণ তাকে মাঝে মাঝে অক্টোপাসের মতো চেপে ধরতো। আর ঠিক তখনই বুকে ধেয়ে আসতো মেয়েবেলা। বাড়ির কথা খুব মনে পড়তো তখন। বাড়ির পেছন দিকে বয়ে যাওয়া নদীটির কথা, তার ধারে সারি দেওয়া নারকেল গাছগুলোর কথা, সখীদের কলরব, তাদের পাড়ার গীর্জার ঘন্টা, মায়ের হাতের ইডলী, ধোসা.... সবই খুব মনে পড়তো। গাল বেয়ে জল নেমে আসতো। তারপর, আস্তে আস্তে গা সওয়া হয়ে গেলো।কনভেন্টের সিনিয়র সিস্টাররা অবশ্য তাকে বেশ স্নেহ করতেন। সিস্টারস' সুপিরিয়র 'সিস্টার ফ্লাভিয়া' তাকে ইজেল এনে দিয়েছিলেন আর অনেক রঙ তুলি। প্রাণ ভরে ছবি আঁকতো সে...... সমুদ্রের ছবি আঁকতো, নির্জন সী-বিচের ছবি, গাছপালা প্রাকৃতিক দৃশ্যও আঁকতো, আর হ্যাঁ অভিমান ভরে মা-বাবা ভাইয়ের ছবিও আঁকতো কখনও। কনভেন্ট লাইফে এটুকুই ছিলো তার খোলা বারান্দা, যা দিয়ে সে সুনীল আকাশ দেখতো।
নান হয়ে ওঠার ট্রেনিংএর পাশাপাশি মুম্বাইতেই অ্যাঞ্জেলার শুরু হয়েছিলো কলেজ জীবন। কো-এড কলেজ। সোসাইটির ইচ্ছে ছিলো না সে কো-এড কলেজে যায়, কিন্তু মেয়েদের কলেজে সে সুযোগ পায় নি। কলেজের প্রথম দিনেই দোতলার করিডরে সুগতর মুখোমুখি...... আহ্,.......তরুণ যীশুর মতো মুখ......গভীর চাহনি! নান বলে ক্লাসমেটরা তার সাথে বিশেষ একটা মিশতো না। যেন সে অন্য কোনো গ্রহের জীব। আর সেও নিজেকে ওদের থেকে গুটিয়ে রাখতো। ব্যতিক্রম শুধু ওই একজন...... সুগত সেনগুপ্ত,ম্যাথ অনার্স। বাঙালী ছেলে , কথায় কথায় বেঙ্গলী পোয়েমস্ আওড়াতো। আবার তার ইংরাজী ট্রানশ্লেসান্ করে বোঝাতো অ্যাঞ্জেলাকে। রবীন্দ্রনাথ টেগোর, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ, শক্তি, সুনীল........আরও কত কে! তামিলভাষী হলেও টেগোরের নাম সে শুনেছিলো। সেই ফেমাস বইটা "গীতাঞ্জলি",তার ইংরাজী অনুবাদ সে পড়েছিলো। টেগোরস্ সঙও সে শুনেছিলো...... মানে না বুঝলেও, তার অপূর্ব সুর মূর্ছ্রনা আবিষ্ট করতো তাকে।.......... "ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে/ওহে 'হারাই হারাই' সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।" সুরটা বড়ই মায়াময় লাগতো সুগতর গলায়। আর একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ছিলো সুগত আর অ্যাঞ্জেলার ----দারুণ ছবি আঁকতো সুগত। বুঁদ হয়ে অ্যাঞ্জেলা ওর কাছে শুনতো ছবি, কবিতা,গান আর জীবনের নানা কথা। কনভেন্ট লাইফের বাইরের জীবনের গল্প। সুগতর বাড়িতেও গিয়েছিলো সে। ওর বাবা খুব মিষ্টিভাষী। তবে ওর মা যে অ্যঞ্জেলাকে পছন্দ করতে পারেননি, তা সে বুঝেছিলো তার নারীসুলভ অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। এভাবেই কখন, কেথায়,কিভাবে যেন তার আর সুগতর মধ্যে জেগে উঠেছিলো মানবিক সম্পর্কের নতুন একটি দ্বীপ। কবে থেকে যে একটি শক্তিশালী ধারা তাদের মধ্যে বয়ে গিয়েছিলো, তা তারা বুঝতেও পারে নি। দিনরাত বুকের মাঝে একটা কষ্ট মিশ্রিত সুখ অনুভব করতো অ্যাঞ্জেলা। তার অন্তর্বাসিনী বলে উঠতো, "ছিঃছিঃ! তুই সন্ন্যাসিনী। তোর তো এমন ভাবাবেগ থাকতে নেই। সমাজের চোখে এ যে অশ্লীল, অনৈতিক,অনিয়ম। " ভোর ছ'টায় চ্যাপেলের প্রেয়ারে যীশু বন্ধুর দিকে তাকিয়ে তীব্র পাপবোধ তাকে কুরে কুরে খেতে লাগলো। মনে মনে ঠিক করলো, "নাঃ আর নয়। এ কাজ অন্যায়। সে তো ঈশ্বরের সেবিকা। কোনো বিশেষ মানুষকে নয়, সংসারের সকল মানুষকে ভালোবাসাই তার জীবনের ব্রত। " পরদিন কলেজে গিয়ে বুকের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট চেপে রেখে, সুগতকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। ক্লাসে তার আর কোনো বন্ধু ছিলো না। তাই সে লাইব্রেরীতে গিয়ে বসে রইলো। কিন্তু পড়ায় মন নেই, তীব্র একটা কষ্ট বুকের মধ্যে গলে গলে পড়তে লাগলো। হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে সুগত এসে হাজির। বললো, " চল ওঠ। কথা আছে। " উত্তরে সে বলেছিলো, " যা বলার এখানেই বল। আমি কেথাও যাবো না। " অধৈর্য্য সুগত বলে ওঠে, " চল এক্ষুণি, বলে দিচ্ছি। নইলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবো । " কলেজের পেছনে বকুল গাছটার তলায় বসে সুগত ওকে বলেছিলো, "অ্যাভয়েড করছিস আমাকে? আমি না তোর ভেতরে, তুই আমার ভেতরে। বুঝিস না?" ডুঁকরে কেঁদে উঠেছিলো অ্যাঞ্জেলা। সুগত বলেছিলো, "কাঁদিস না আঞ্জু। জীবন তো একটাই রে। প্রাণ ভরে বেঁচে নে। পাপ-পূণ্য আপেক্ষিক ব্যাপার রে। তুই কি জীবন কাটাবি, গৃহীর না সন্ন্যাসিনীর, তা কেন তোর বাবা -মা, সমাজ, সংসার ঠিক করে দেবে রে? প্লিজ একটু ভাব.......।" তারপর.... সেইভাবেই বয়ে গিয়েছিলো তিনটি বছর। কলেজ শেষ করে, কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিয়ে সুগত চাকরি পেলো 'ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া'য়। আর অ্যাঞ্জেলা বি.এড করে 'ডটার্স অফ দ্য ক্রস' সোসাইটির "সেন্ট যোসেফ হাই স্কুল" এ পড়াতে শুরু করলো। সুগত পোষ্টিং নিয়ে চলে গেলো পুণেতে। আর এদিকে অ্যাঞ্জেলার চলতে লাগলো নান হয়ে ওঠার কঠোর ট্রেনিং......... চললো সিষ্টার হওয়ার 'ফাইন্যাল ভাউস' অর্থাৎ' রিং সেরিমনি'র আয়োজন....
প্রতি শনি -রবিবার একটা বস্তিতে গিয়ে থাকতে হোতো অ্যাঞ্জেলাকে। ওখানকার লোকেদের ড্রাগের নেশা, জুয়ার নেশা ইত্যাদি ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য কাউন্সিলিং করতে হোতো। এটাই ছিলো তার জন্য সোসাইটির দেওয়া টাস্ক। গত সপ্তাহে বস্তিতে ঢোকার ঠিক মুখে হঠাৎ সামনাসামনি সুগত..... প্রায় দু' বছর পর। সুগত জানিয়ে দিলো, বিয়ে সে অ্যঞ্জেলাকেই করবে, নতুবা কাউকে নয়। বাড়িতেও সে কথা বাবা মাকে জানিয়ে দিয়েছে সে। চোখের কোল ভিজে উঠলো অ্যঞ্জেলার। সুগতর গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে খেই হারিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো। সুগত বলে চলে, "আমরা দুজনে একসঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি না, আঞ্জু? আমাদের হৃদয় তো বিশ্ব দেউল, তাই না রে ? " আর পরলো না আঞ্জু। বুকের ভেতর টের পেলো উথাল-পাথাল ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস! এক বুক ভালোবাসার কাছে নতজানু হলো তার সমর্পণী মন... "হে যীশু বন্ধু, ক্ষমা করো প্রভু, এই পাপীষ্ঠার তোমার চাইতেও তাকেই বেশি মনে পড়ে....!" সুগতর গমগমে গলার সেই কবিতাটা তার বুকে এসে ঝাপটা মারতে লাগলো,
" তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখো নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম সকল যুগাবতার,
তোমার হৃদয় বিশ্ব দেউল সকলের দেবতার।
কেন খুঁজে ফের দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে ।
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে বসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী,মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ,জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়.......... "
"ডটার্স অফ দ্য ক্রস " এর প্রভিনসিয়াল সুপার সিষ্টার অ্যান হেনরিয়েটা তাঁর টেবিলে একট চিঠি পেলেন," Sr. Angela Roddrick has left the congregation ". ওদিকে আধো অন্ধকার বান্দ্রা স্টেশান থেকে লোকাল ট্রেনটা খুব দ্রুত অ্যাঞ্জেলাকে পৌঁছে দিলো দাদর স্টেশনে, যেখানে অপেক্ষা করছে সুগত ----- তার ভালোবাসা। জাত নয়, ধর্ম নয় ভালোবাসাই ধারণ করলো দুটি মানুষ-মানুষীকে।
না বলা কথা .....
কৌশিক কুমার রায়
"কিরে তাড়াতাড়ি কর,স্কুলের বাস চলে এসছে "বলে রত্না দেবী মেয়ের ব্যাগ গোছাতে লাগলো l মিমি তাড়াহুড়ো করে দুধের গ্লাস শেষ করে বললো "মা আজ আর কিছু খাবো না l তুমি টিফিনে ম্যাগীর সাথে পওরুটি টা দিয়ে দাও l" তোর রোজ একই বাহানা " বলে রত্না দেবী রান্না ঘরে চলে গেলো l সাবধানে যাস,টিফিন টা পুরো শেষ করবি "রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো l "ঠিক আছে মা,আমি আসছি" বলে মিমি বেড়িয়ে গেলো l রীতিমতো বাস দাড়িয়ে আছে একই জায়গায় l রতন কাকু বাসে হেলান দিয়ে বিড়ির সুখটান দিচ্ছিলো l মিমিকে দেখেই বিড়ি ফেলে দিয়ে হাতের তর্জনি মিমির দিকে তাক করে বললো" আজকেই কিন্তু লাস্ট,এরকম দেরি করলে তোর জন্য বাস আর দাঁড়াবে না.....বলে দিলাম "l মিমি মুচকি হেসে বাসে উঠে পড়লো l বাসে উঠেই মিমি যেন অবাক হয়ে গেলো l এতক্ষণ ধরে বাসের মধ্যে হৈচৈ হট্টগোল হচ্ছিলো মিমিকে দেখেই সব চুপ l যেমন টি ক্লাসে কোনো টিচার এলে হয় l মিমি কিছুই বুঝতে পারছিলো না l যাইহোক মিমি গিয়ে টিনার পাশে বসতেই টিনা উঠে গিয়ে অন্য সিটে বসে পড়লো l "কিরে টিনা কি হলো ? আয়..........."অনেক বার ডাকাডাকির পরেও যখন টিনা কোনো কর্ণপাত করল না তখন মিমির প্রচন্ড রাগ হলো l কিন্তু মিমি বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারে না l
"কিরে তাড়াতাড়ি কর,স্কুলের বাস চলে এসছে "বলে রত্না দেবী মেয়ের ব্যাগ গোছাতে লাগলো l মিমি তাড়াহুড়ো করে দুধের গ্লাস শেষ করে বললো "মা আজ আর কিছু খাবো না l তুমি টিফিনে ম্যাগীর সাথে পওরুটি টা দিয়ে দাও l" তোর রোজ একই বাহানা " বলে রত্না দেবী রান্না ঘরে চলে গেলো l সাবধানে যাস,টিফিন টা পুরো শেষ করবি "রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো l "ঠিক আছে মা,আমি আসছি" বলে মিমি বেড়িয়ে গেলো l রীতিমতো বাস দাড়িয়ে আছে একই জায়গায় l রতন কাকু বাসে হেলান দিয়ে বিড়ির সুখটান দিচ্ছিলো l মিমিকে দেখেই বিড়ি ফেলে দিয়ে হাতের তর্জনি মিমির দিকে তাক করে বললো" আজকেই কিন্তু লাস্ট,এরকম দেরি করলে তোর জন্য বাস আর দাঁড়াবে না.....বলে দিলাম "l মিমি মুচকি হেসে বাসে উঠে পড়লো l বাসে উঠেই মিমি যেন অবাক হয়ে গেলো l এতক্ষণ ধরে বাসের মধ্যে হৈচৈ হট্টগোল হচ্ছিলো মিমিকে দেখেই সব চুপ l যেমন টি ক্লাসে কোনো টিচার এলে হয় l মিমি কিছুই বুঝতে পারছিলো না l যাইহোক মিমি গিয়ে টিনার পাশে বসতেই টিনা উঠে গিয়ে অন্য সিটে বসে পড়লো l "কিরে টিনা কি হলো ? আয়..........."অনেক বার ডাকাডাকির পরেও যখন টিনা কোনো কর্ণপাত করল না তখন মিমির প্রচন্ড রাগ হলো l কিন্তু মিমি বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারে না l
ক্লাসেও একই পরিস্থিতি lকেউ মিমির সাথে কথাও বলছে না,পাশেও বসতে চাইছে না lমিমির নিজেকে খুবএকা মনে হচ্ছিলো lযেন মরুভূমির মাঝে দাড়িয়ে থাকা ক্যাকটাস lযথাসময়ে টিফিন পিরিয়ডের ঘন্টা বাজল l সবাই যখন টিফিন খেয়ে মাঠে খেলছিলো মিমি তখন মাঠের এককোনে অভিভাবকদের বসারঘরের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছিলlএক অভিভাবকের নজরে আসতেই তিনি এগিয়ে এলেন lকাছে এসে মিমিকে জিগ্গেস করলেন "কি হয়েছে ?কাঁদছ কেন ?"মিমি তখনও সমানে কেঁদেই যাচ্ছিলোl তিনি মিমিকে বসার ঘরে নিয়ে এলেন lসেখানে অন্যান্ন অভিভাবকরাও ছিলেন lতাদের মধ্যে একজন মিমি কে চিনতে পেরে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলতে লাগলো "তোমরা মেয়ে টিকে চিনতে পারো নি ?এরই কথা বলছিলাম lএ....ই .....তো ....রত্না দেবীর মেয়ে l"পাশের এক ভদ্রমহিলা মুখ ভাঙিয়ে বললো-হ্যাঁ.......মীরাবেগমই তো এখন রত্নাদেবী হয়েছেন lছিঃ ছিঃ ছিঃ l এরকম মায়ের মেয়ের সাথে পড়াশুনো করলে ছেলেমেয়েরা খারাপ হয়ে যাবে l " সবাই কেমন যেন অবজ্ঞার চোঁখে মিমি কে দেখতে লাগলো lমিমির চোখ তখনও ছলছল করছিলোlতখন কেউই আর মিমির মনের অবস্থা জানার চেষ্টা করল না lবাড়ি ফিরেই মিমি রত্নাদেবীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলোlরত্নাদেবীও কিছু বুজতে পড়ল না lঅনেকবার জিজ্ঞ্যেস করাতে মিমি তাঁর মায়ের দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় -"মা, মীরাবেগম কে ?"নাম টা শুনেই রত্না দেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো lবুকটাও দুরদুর কাঁপছে lমনে নানা ভাবনা উঁকি দিচ্ছিলো রত্নার l "জানাজানি হয়ে গেলো নাতো ? সেই যন্ত্রণার ইতিহাস, শ্যামনগর, ৭নং কোঠা, নিষিদ্ধ পল্লী l "
এক ঝড়ের রাতে,অন্ধকারে সেখান থেকে পালিয়ে আসা l সুবীরবাবুই সেদিন রত্নাকে আশ্রয় দিয়েছিলো l তারপর বিল্ডার্স এন্ড সন্স কম্পানির মালিকের বড় ছেলে রমেশের সাথে পরিচয়,....প্রেম,....শেষে বিয়ে lসুবীরবাবুই কন্যাদান করেছিলেন রত্নার l তারপর বারোটা বছর সুখেই কেটেছে l কিন্তু আজ সে সুখের ভার নিতে রত্না অক্ষম l সংসার টা বুঝি তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে l ভেবে কোনো কূল খুজে পাচ্ছিলো না রত্না l কত গুলো প্রশ্ন তার মনকে তিরের মতো বিদ্ধ করছিলো l "তাদের দুজনকে পরিবার,সমাজ মেনে নেবে তো ? না একঘরে করে রাখবে ?এখানে মিমির তো কোনো দোষ নেই৷ তারও দোষ বা কোথায় ?সেও তো নতুন করে বাঁচতে চাইছিলো lনতুন স্বপ্নের জাল বুনেছিলো আপন মনে l সেটাই কি অপরাধ?" ঘরের মধ্যে একটা থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ l রত্নাদেবী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ...... "সব ঠিক হয়ে যাবে,কাঁদে না লক্ষীটি l"নিজে চুপ থাকলেও চোখের জল সব সুখের বাঁধ ভেঙে বইতে লাগলো আপন মনেl
হঠাৎ্ কলিংবেল টা বেজে উঠতেই .......চোখের জল মুছে রত্নাদেবী দরজা খুলতেই দেখল -গম্ভীর মুখে রমেশ দাঁড়িয়ে l কোনো কথা না বলে রমেশ সোজা শোবার ঘরে গিয়ে মিমিকে দেখলো l
মিমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছে l "মেয়েটা কিছু খেয়েছে কি ? "রমেশ রত্না কে জিগ্গেস করতেই ----আমতা আমতা করে রত্না বললো " ইয়ে ......মানে ......ইয়ে ........"রত্না কে থামিয়ে রমেশ বললো "থাক আর বলতে হবে না l একটা মেয়ে কে তুমি সামলাতে পারো না l কি যে সারদিন ধরে করো !ভগবানেই জানে lএনিওয়ে, আজ দিল্লী যাচ্ছি,বিজনেস মিটিং আছে l সপ্তাহখানেক পড়ে ফিরবো l" বলে রমেশ আবার বেরিয়ে গেলো l ধপাস করে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো l দরজার দিকে তাকিয়ে রত্না মনে মনে বলতে লাগলো "আমি তো তোমাকে সবকিছুই বলতে চাই lযন্ত্রণার অতীত ভাগ করে নিতে চাই l সে কথা শোনার অবকাশ টুকুও তোমার নেই৷ " রত্নার চোখ আবার ভরে উঠলো l সঙ্গে বুকফাটা শব্দহীন আর্তনাদ l কিন্তু সেই আর্তনাদ অনুভব করার কোনো ব্যক্তি আর পাশে নেই৷ ......
জাত বিচার
রীনা মজুমদার
ভারী লোহার দরজাটা
খুলে গেল-বাইশটা বছর পর,চল্লিশের রহমত নিজের গ্রামের পুকুরপারে দাড়িয়ে বুকের
পাথরটা সরিয়ে অবাক চোখে দেখতে লাগলো, ঐ তো সেই দুচালা টিনের ঘর,কেমন আছে আম্মা,বোন
আমিনা!পুকুরটাও অযত্নে কচুরিপানায় ভরে আছে৷নেই মাছেদের ছলাৎছলাৎশব্দ,কেমন আছে
উচ্ছ্বল ষোড়ষী সেই নীরা!
বাইশ বছর আগে,আঠেরোর
রহমত এই গ্রামেই দাপিয়ে বেড়াত৷ঢিল ছুড়ে আম কখনবা কাঁঠালের গন্ধে গাছে বসেই কাঁঠাল
খাওয়া আর ছিল নিত্য সঙ্গী এই পুকুরেই দুবিনুনীর নীরার মুখের ছায়া পড়তো জলে, তাকে ধরার
জন্য জলে বারবার ঝাপিয়ে পরা৷সেদিন ছিল
কোজাগরী পূণির্মার রাত-নীরা পাহারা দিবি? তোর বাবা হাড় কিপ্টা,একটা মাছ ধরতে দেয়
না৷তোদের এই পুকুর থেকেই মাছ চুরি করব,তুই তোর বাবাকে পাহারা দিবি চল- মাত্র কটা
মাছ হাতে, এ কি?নীরার পিছনে কে?
ভটচায মশাই ছিলেন গ্রামের পয়সাওয়ালা গন্য মান্য মানুষ তাকে সবাই মানে,এক কথায়
হাতে হাতকড়া দিয়ে নিয়ে চলে গেল,চলল বিচার জায়গা হল জেলখানা৷গ্রামের ছোট বড় সবাই
দেখতে এল তাদের প্রিয় রহমতকে৷ নির্বাক রহমত শুনে গেল- ‘ও রহমত দাদা,তুমি কি নীরারে
ভালোবাসতা?তুমি না মুছলমান!ওরা তো বামুন,তাই তো জ্যাঠা তোমারে জেলখানায় ভরচে৷’
সেদিন রহমত বুকের পাথরচাপা লালজল চোখ দিয়ে বের করতে পারেনি.....
আজ রহমত এক চাপা কান্নায় উ্রর্দ্ধশ্বাসে ছুটে যায় নীরার বাড়ির দিকে,কঠিন
চিৎকারে....
ও ভট্চাযমশাই-পারবে না ফিরিয়ে দিতে বাইশটা বছর জানি কিন্ত দুহাতে ভিক্ষে চাইছি
নীরাকে দাও৷দেখে দুয়ারে এক শয্যাশায়ী বুড়ো৷ এক করুন আকুতিতে,’এসেছিস রহমত,আয়
আয়.......যেন রহমতের অপেক্ষাতেই ছিল৷নীরু নীরু দেখ কে এসছে,বহু যত্নে রেখেছি
বাবা,বহু সম্বন্ধ এসেছিল ,নীরু করল না৷বাবা রহমত তুমি পারবেনা এই জাত বিচারের
প্রতিবাদ করতে?তুমিই পারবে একটি মোমবাতিতে শুধু নিজের মুখটাই আলো না করে মনের অন্ধকারে,আগেপিছের
অন্ধকারে আলো জ্বালাতে৷তুই আামায় ক্ষমা কর রহমত,নিয়ে যা নীরুকে,আমি শান্তিতে মরি৷’
ক্ষমা!ভট্চাযমশাই যে জ্বলন্ত মোম হাতে দিলেন, রহমত তা বাঁচিয়ে রাখবে৷সমাজের
প্রতি ঘরে ঘরে মনের অন্ধকারে সে আলো জ্বালবে৷
পদ্য
দুটি কবিতা
শ্যামলী সেনগুপ্ত
১
বিপথগামী
---------------
উল্লাস যাপনের বিনিময়ে
শিখেনিয়েছি আগুনের ব্যবহার------
অস্ত্র হাতে রাজকীয় পরিধানে
ভুলেগেছি ভাই-বোন-পড়শি
ভুলেযাচ্ছি গলির ফুটবল
আর তোর সঙ্গে নেওয়া ক্যাপুচিনোর ঘ্রাণ
ভুলেগেছি কবেই
ক্লাসের খাতায় বুক ক্রিকেট- - - - - -
---------------
উল্লাস যাপনের বিনিময়ে
শিখেনিয়েছি আগুনের ব্যবহার------
অস্ত্র হাতে রাজকীয় পরিধানে
ভুলেগেছি ভাই-বোন-পড়শি
ভুলেযাচ্ছি গলির ফুটবল
আর তোর সঙ্গে নেওয়া ক্যাপুচিনোর ঘ্রাণ
ভুলেগেছি কবেই
ক্লাসের খাতায় বুক ক্রিকেট- - - - - -
আসলে মাঠে যখন
জিতে নিয়েছি ট্রফি
হর্ষোল্লাসের গোপন থেকে
কেউ গুরুমন্ত্র ঢেলেদিলো
কানের কুহরে----
কুরুক্ষেত্রের মাঠে যেমন,
তেমনই হিসহিসে গলায় বলছে
মারো---মারো
জিতে নিয়েছি ট্রফি
হর্ষোল্লাসের গোপন থেকে
কেউ গুরুমন্ত্র ঢেলেদিলো
কানের কুহরে----
কুরুক্ষেত্রের মাঠে যেমন,
তেমনই হিসহিসে গলায় বলছে
মারো---মারো
আমারও শরীরে বেপথু
আমারও রোমকূপ জুড়ে
স্বেদবিন্দু- - -
মাথার পেছনে ঠেকানো আছে
নির্দেশের নল
আমি তেমনই করছি
যেমন কৌরব-সেনার সামনে অর্জুন------
প্রবল বিক্রমে ছুটেযাচ্ছে
আমার দ্রোহ
ফরাজের মতো হাত বাড়াতে পারিনি,
আর পারবও না কোনদিন
আমারও রোমকূপ জুড়ে
স্বেদবিন্দু- - -
মাথার পেছনে ঠেকানো আছে
নির্দেশের নল
আমি তেমনই করছি
যেমন কৌরব-সেনার সামনে অর্জুন------
প্রবল বিক্রমে ছুটেযাচ্ছে
আমার দ্রোহ
ফরাজের মতো হাত বাড়াতে পারিনি,
আর পারবও না কোনদিন
মৃত্যুর শব্দ শুনতে শুনতে
আমি একা হয়েযাচ্ছি
একা-------!
আমি একা হয়েযাচ্ছি
একা-------!
২
এসেই পড়েছো যখন
এসেই পড়েছো যখন
দু'দন্ড বসো----
পিঁড়ে পাতি,
ক'গরাস ভাত নুন জলের গেলাস
তারপর জমেথাকা কথার উদ্গার
দু'দন্ড বসো----
পিঁড়ে পাতি,
ক'গরাস ভাত নুন জলের গেলাস
তারপর জমেথাকা কথার উদ্গার
তোমার আমার প্রাণে একই হাওয়া বয়
এক মাটি একই জল
তবুও দু'জোড়া চোখে অপার বিস্ময়!
আমাদের চোখে চোখ
চাহনী সরীসৃপ শীতল
রাজনীতি মারপ্যাঁচে
মধ্যহৃদি হয়েছে বিকল।
তবুও এসেছো ,যদি
দু'দন্ড আমার দাওয়ায়
ছায়াদেবো জল -ভাত
পূর্বকথা সিঁদুরে-নোয়ায়
আড়াল-----আড়ালে থাক
আপন উঠোনে যাও ফিরে
রাজনীতি কূটচাল
ঘুঁটির মরণজাল
তবুও কেটেছি এই কিরে-----
এক মাটি একই জল
তবুও দু'জোড়া চোখে অপার বিস্ময়!
আমাদের চোখে চোখ
চাহনী সরীসৃপ শীতল
রাজনীতি মারপ্যাঁচে
মধ্যহৃদি হয়েছে বিকল।
তবুও এসেছো ,যদি
দু'দন্ড আমার দাওয়ায়
ছায়াদেবো জল -ভাত
পূর্বকথা সিঁদুরে-নোয়ায়
আড়াল-----আড়ালে থাক
আপন উঠোনে যাও ফিরে
রাজনীতি কূটচাল
ঘুঁটির মরণজাল
তবুও কেটেছি এই কিরে-----
আমাকে শেষজল দেবে তোমারই সন্তান
শবাসনে মুখেদেবে জ্বলন্ত নুটি
আমিও ভরসা রাখি---
শবাসনে মুখেদেবে জ্বলন্ত নুটি
আমিও ভরসা রাখি---
তোমার কবর পাবে
আমাদের সন্তানের একমুঠো মাটি
আমাদের সন্তানের একমুঠো মাটি
ফসফেটিক চশমাগুড়ো ঝরছে
রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়
৪
নিঃশব্দে গড়ে তুলছি তাজমহল
মাকড়সা ও টিকটিকি সেখানেও
ধূনোতেও অপরাধ।চম্পাকলি ধূপ জ্বলে
অগরু ছিটিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাই
হোক পৃথিবীর সর্বোচ্চ যৌন বাউল
নিঃশব্দে গড়ে তুলছি তাজমহল
মাকড়সা ও টিকটিকি সেখানেও
ধূনোতেও অপরাধ।চম্পাকলি ধূপ জ্বলে
অগরু ছিটিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাই
হোক পৃথিবীর সর্বোচ্চ যৌন বাউল
কাঠ পোড়ে।ঘি পোড়া শব
লাশেরও গন্ধ পাই মাংসল চাহিদাও
লাশেরও গন্ধ পাই মাংসল চাহিদাও
আমৃত্যু পরশপাথর কখন যেন তোমার পেটে
জানলে জাহাজডুবির কথা
দাবার কোর্ট
মৃণালিনী ঘোষ
১
কালো পীচে রক্তের পিচকারী
নিথর দেহের হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠা
সঞ্জীবনী হাওয়া ফুসফুসে ভরে নিতে
মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠে শরীর।
জনতার বুক চিরে
নরম পলি মাখানো কয়েকটি হাত
হাতে হাতে হাসপাতাল
ভর্তির খাতায় ফুটে উঠে একটি নামের 'তারা''-যোসেফ
সুশান্ত আর ফিরদোস অপেক্ষারত
অপারেশন রুমের বাইরে।
২
রোজের খাতায় কাজ কাজে উঠে আসে ওরা
দুধ, ফুল ফল সব্জি ঔষুধ প্রতিদিনের ব্যবহৃত সাবান
দিনে দিনে গলে
সম্পর্কের অবশিষ্টটুকু অর্ধক্ষেপ
জমে ওঠে গল্পের ভাষা
জন্মের উৎস প্রকৃতি খোঁজে আপন সত্তা
অদৃশ্য দেয়ালে।
বারুদের আগুন জাতগোত্রহীন
বুলেটে বিদ্ধ শরীর
গল্প শোনায় অস্ফুট স্বরে জন্মের ইতিবৃত্ত
দেয়াল ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর।
৩
ভোরের ফুটে ওঠা সূর্য
কমলা খোসায় পাপড়ি হাসি শিশুর ঠোঁটে
বিষ্ণুর চক্র ঘূর্ণমান
সামান্তরালে চোখ ধাঁধানো জ্যোতিতে অন্ধকার।
চিকন কোমরের বাঁকে আগামী উপলব্ধ
হাওয়ার উষ্ণ শরীরে কমলা আলোর শাণিত তলোয়ার
টুকরো টুকরো সময়ের সমীকরণ
জ্যোতি বিন্দু অনির্দেশ্যর আগুন হয়ে উঠে।
বক্তৃতার সারাংশে রক্তের অর্ঘ
বিচ্ছিন্নতার তকমা এঁটে
এক বা দুই বর্গের বাগান চেয়ে
মালী কৃষক হতে চায়।
বীজ বোপণ করে নিজ-সাম্প্রদায়িকতার
ঈশ্বর আর প্রতিপালকের ব্যবধান স্পষ্ট।
তবুও
সভ্যতার উন্নতির ধ্যানে মগ্ন
বুড়ো-জোয়ান শেয়ালের পাল।
৪
অনিবার্য কারণে গজিয়ে উঠেছিল স্বার্থ বৃক্ষ
ফলের রসে ভরপুর আফিমের নেশা
স্বার্থান্বেষাতুর মুখোশ ধর্মের বর্ম পড়ে
গলাকাটা রক্তের খিদে
মাত্রা পার করে পারদের উচ্চতর স্কেলে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঝলসানো মূর্তিগুলো
ভোরের কমলা সূর্য দেখে-
দেখে দুপুরের জলন্ত অগ্নিপিন্ড
চোখাচোখি হাই-ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক শক্
সংস্কারী শিরায় শিরায় জ্বলে ওঠে পূর্ণ শ্লোক।
মানবিকতার গো-ধূলি লগ্নে
দুটো ডিমের অমলেট
আকাশ প্লেটে বিছিয়ে রাখা,
জলে ভেজা জিহ্বায় মৈত্রীর সুর
কাঁধের কাঁটা চামচে বিদ্ধ হচ্ছে
সম্প্রতির খোসায় মুখোশের নৃত্য।
৫
শতাব্দী পার করেও বৃত্তাকার গোলোকে
সভ্যতার আগ্রাসী চাঁদ
সাদা পোশাকের তর্জনী তোলে
বিপরীত বলয়ে।
অলৌকিক কল্পদুধের সাগরে ডুব মরিয়া
হিংস্র পশুর দল,
দাঁতালো নখের থাবা বসায়
কচি পেটে
রক্তের সাগর পার করে
দুধের সাগর ভাসমান শিলায় নামের অক্ষয়।
জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যায় পুরানের নব নব সংস্করণে
সম্প্রীতি গলা বুক রক্তজলে।
মরা কাঠের চেয়ারের নীচে লুপ্ত হয়
বিপরীত নামের অসংখ্য কাঙ্কাল।
সোনালী ভোরের সূর্যদিন
আমার আটপৌরে সম্প্রীতি
মন্দিরা ঘোষ
১
একটি করে সকাল বিকেল পার হয়
সংসারের দৈনন্দিন ক্ষুদ্রতায়
সম্ভোগের তুষ্টিতে ভরে থাকে
১
একটি করে সকাল বিকেল পার হয়
সংসারের দৈনন্দিন ক্ষুদ্রতায়
সম্ভোগের তুষ্টিতে ভরে থাকে
ঘর বাড়ির বাতাস।
সংসারঘুমে আচ্ছন্ন মানবিক মন।
আসক্তির মৌতাতে হাত সেঁকে
সামাজিক চৈতন্যবিলাস।
২
রাত নামার আগে এসো
একটু স্পন্দন রাখি ঘাসের ডগায়,
ছুঁয়ে থাকি স্পর্ধিতার স্পর্ধা
ভালবাসার অধিকারে।
যদি সব কালো মুছে দিতে
সব হাত ছুঁতে পারি গভীর মণীষায়;
সেদিন অনায়াস আলিঙ্গন এক
সোনালি ভোরের সূর্যদিন।
আসক্তির মৌতাতে হাত সেঁকে
সামাজিক চৈতন্যবিলাস।
২
রাত নামার আগে এসো
একটু স্পন্দন রাখি ঘাসের ডগায়,
ছুঁয়ে থাকি স্পর্ধিতার স্পর্ধা
ভালবাসার অধিকারে।
যদি সব কালো মুছে দিতে
সব হাত ছুঁতে পারি গভীর মণীষায়;
সেদিন অনায়াস আলিঙ্গন এক
সোনালি ভোরের সূর্যদিন।
সম্প্রীতি
শিবু
১।।
একটা সফল বৃষ্টিপাতের দিকে তাকিয়ে আছে
শুকিয়ে যেতে থাকা গাছটি
নীচে পড়ে থাকা মৃত পাতাগুলি
মাটি তাদের সারের স্বপ্ন দেখায়।
২।।
আতরদানে গরল ঢেলে রাখা এক ষড়যন্ত্রও
কখনো কখনো শিকার হয়ে যায়
আমাদের প্রয়োজনীয়তার কাছে।
তবে সম্প্রীতিবোধ সেই আবশ্যকতারও অধিক- আত্মিক,
আধ্যাত্মিক !
৩।।
পাহাড়ের শরীরের উষ্ণতা আর তার গলা
জড়িয়ে থাকা শুভ্র হিমের মুক্তধারা-
এ যেন চিরন্তন এক পথ।
এপথে অমরের বোঝা পিঠে বয়ে চলে আকবর
শিবের গলায় রহিমের পরিচয়পত্র ঝোলে।
এক ধর্মের পায়রা অন্য ধর্মের পায়রার দোকান থেকে
প্রসাদ কিনে অমরগুহা দর্শন করে। দুজনেই অমরত্ব
পায়!
বাগান
নরেশ রায়
এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য
একটি মনোরম বাগান চাই
নির্বিরোধি কিছু ক্লান্ত ভাল মানুষ
তাদের জন্য এমন স্বর্গীয় বাগান চাই
যেখানে অকপট সরল শান্তিকামী মানুষ
একটু ভ্রাতৃত্বের জন্য ভালবাসার জন্য সহমর্মিতার জন্য
যেখানে পাখিরা সকল করবে কূজন নাচবে ময়ূর
পর্যটক বাতাসের সাথে আসবে উড়ে পরিযায়ী পাখি ।
এই বাগানে আমাদের স্বপ্ন করবে খেলা সারাক্ষণ
সহজ মনে সহজিয়া মালী সাজাবে বাগান নানা বর্ণে
বাগানের মর্মস্থলে হৃদয়ের নাটমহলে বসবে আসর
একসাথে ভজন কীর্তন মুর্শেদি উপাসনার গান
উড়বে নানা রঙের নানা ধর্মের পতাকা টানটান
উদ্যত খড়্গ জঙ্গী পতঙ্গরা যেন নষ্ট না করে সাধের বাগান
নানা সম্পর্কের নানা বর্ণের ফুলে যেন শোভে সম্প্রীতির বাগান
ডালে যেন বাসা না বাঁধে ফুলে যেন সংক্রমিত না হয় মৌলবাদের বীজ ।
SCREAM
UDAY SAHA
You'll say,it's rubbish
An essay
A painting
A beautiful poem...
How far will the effect run along?
After that... what?
It is again,my dear,OURS and THEIRS
I say, no, NEVER
You'll ask who dares to dream?
It's tough,still I dream
When my words do scream----
An essay
A painting
A beautiful poem...
How far will the effect run along?
After that... what?
It is again,my dear,OURS and THEIRS
I say, no, NEVER
You'll ask who dares to dream?
It's tough,still I dream
When my words do scream----
A world without fences
You and I share the earth
Where the prickly poppy dances
And a glance gives a poem's birth
You and I share the earth
Where the prickly poppy dances
And a glance gives a poem's birth
A world without greed
No hatred, no jealousy or pain
Wordsmiths feel free to bleed
And hearts won't be driven by gain
No hatred, no jealousy or pain
Wordsmiths feel free to bleed
And hearts won't be driven by gain
A world full of mercy and no grudge
No one steps up to mock and judge
Cages won't be sold
Doves will go brave and bold
No one steps up to mock and judge
Cages won't be sold
Doves will go brave and bold
A world where laughter fills the soul
Elders, the young minds will mould
You'll ask, who dares to dream!
It's not tough....I do..my pen does scream.
Elders, the young minds will mould
You'll ask, who dares to dream!
It's not tough....I do..my pen does scream.
আমার আটপৌরে সম্প্রীতি
সুদীপ ব্যানার্জী
বাহানা হোক বা আদেখলাপনা...
ইতিহাসে আমি সম্প্রীতি ঘেঁটেছি...
রোজ ভাইচারার গাছে সূর্য ঢেলেছি,
চোখের জলে আঁজলা ভরে অক্সিজেন...
অথবা, বুকের থেকে খামচে কিছুটা মাটি...
তবু কেন ডালে ডালে বসে না পাখি?
পারভেজের সাথে আমার শৈশবের ছোটাছুটি...
দূরের গির্জায় প্রার্থণা শেষে কিশোরীর হাঁটাহাঁটি।
অথবা, আসিফের বলে মারা একমাত্র ছক্কা...
এসবই বুকেতে রাখা, ধুলোমাখা বাস্তব।
নারকেল নাড়ু,সেমাই আর কেক্...
কোন বিভেদ চাখিনি।
কোন বিভেদ চাখিনি।
ফতেমা বেঁধেছিল যে রাখি,
অথবা যে প্যাগোডায় আমি মুক্তি শিখেছি...
এ সব টুকরো জুড়েই আমার কোলাজ...
এ ভাবেই সমাজ বেঁচে আছে, অম্লান...
গুরুবাণি অথবা আজান...
সামগান আর মা মেরির গান...
বা,শাক্যমুনির সৌম্য ধ্যাণ...
অথবা, বড়দিনে পার্ক-স্ট্রীটে স্ট্রবেরি...
এ সব থেকেই রোদ ওঠে,জল আসে,
বিশুদ্ধ ছায়ায় পথিক শীতল হয়...
হাত ধরে ফিরে আসে সব পাখি...
আটপৌরে হোক্, হোক্ না নেহাত পাতি...
প্রতিটি ফুলের গন্ধে আমি সম্প্রীতি শুঁকেছি...
'প্রত্যয়'
জীতেন্দ্র দেওঘরিয়া
যদি হঠাৎ করে রামধনুটা রংধনুতে বদলে যায়
সাতটা রং কি একটুও ফিকে হবে না ?
.
কক্ষনো না
যদি রোদ-বৃষ্টির সমীকরণটা ঠিক থাকে।
.
.
যদি জোর করে
রাম-রহিমের মেলামেশা সাতদিনই বন্ধ করে দিই?
.
তবু রোববার তারা একসঙ্গে আমবাগানে ছুটবে।
শিশুরা কখনো বুড়ো হয়না।
.
.
যদি আজান ও ভজনে চট্ করে তর্ক লাগে
চেনা সাতসুর কি তেমনই বাজবে?
.
নিশ্চয়।
বিশ্বাস না হয়, দুটো গান গেয়েই দেখ না।
সম্প্রীতি
তৃপ্তি মিত্র
খুঁজছি ............
স্নেহ -শ্রদ্ধা মায়া-মমতা
এটাই তো মহানুভবতা ।
কৃতজ্ঞতা সমবেদনা
যার স্পর্শে পায় অনুপ্রেরনা ।
কিন্তু কোথায় ?
সমবেদনা বিবেকবোধ
যা জীবনের মুল্যবোধ ।
একটু মহৎ একটু সৎ
যা জীবনের সঠিক পথ ।
তবুও খুঁজছি .......
একটু আশা একটু ভালোবাসা
যা জীবনের চলার ভাষা ।
সুখ -দুঃখ হাসি-কান্না
যা জীবনের হীরা পান্না ।
ছড়িয়ে দিলাম .......
প্রফুল্ল মন আর ভালোবাসা
যা আছে সব দরদ ঠাসা ।
দয়া-মায়া একটু ক্ষমা
ছিল যা সব মনে জমা ।
বিনিময়ে যা পেলাম ......
প্রেম -প্রীতি আবেগ অনুভূতি
যার আভিধানীক অর্থ সম্প্রীতি ।
সম্প্রীতির সন্ধ্যা
দেবপ্রিয়া সরকার
সময়টা এখন ভীষন কঠিন
যুগটাও ঘোর অনিশ্চয়তার
উপরে উপরে সবাই খুব আধুনিক
ভেতরে চোরাস্রোত অসহিষ্ণুতার l
বিধর্মী পাড়াপড়শী যারা,
একদা থাকতো পরম আত্মীয়তায়
সুখ-দুঃখে ছিল না বিভেদ,
এখন কেমন সন্দেহভরে তাকায় l
ভোটভিক্ষুক আর স্বার্থান্বেষী মৌলবাদ
লালন করেছে দেশে দেশে গ্রাম-শহরের অলিতে গলিতে
রঙিন মেরুকরন আর উগ্র জাতীয়তাবাদ l
সবাই আজ ব্যস্ত খুবই করতে পৃথক, কারা আমার
দেব-দেবী
কে তোমার গায়ক, কে আমার কবি!
কিন্তু এমনটাও কি কাম্য ছিল এই
ঐক্যের ভূমে?
হাজার হাজার ভ্রাতৃত্বের কাহিণী
রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়
জমে l
আর কি কোনো মঞ্চ পাব
যেখানে সেজে উঠবে সম্প্রীতির শুভ্র
রজনীগন্ধা,
দূরত্ব ভুলে গৈরিক-সবুজের আলিঙ্গনে
পালিত হবে রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা?
ছায়াসাথী
জয়ন্ত চ্যাটার্জ্জী
জয়ন্ত চ্যাটার্জ্জী
রাতের দুঃস্বপ্ন কে ভাসিয়ে এলাম কাগজের নৌকোতে
তোমার সিঁথির মতো'ই তেজস্বী প্রবাহিণীর বুকে।
খেয়াবিহীন এই জীবনতরী রাতের গভীরে যেমন,
তোমার কাছে সন্ধানী প্রশ্রয় খোঁজে,
দিনের আলোতেও যে,শুধু তোমাকেই চায়।
বালুচরের উপর দাঁড়িয়ে অনুভূত হলো -
বৃথা আমাদের এই মান-অভিমানের পালা।
মনে পরে,সে রাতে হঠাৎ আগুন্তুকের ছায়ায় আমার উপস্থিতি!
তুমি কবিতার আড়ালে নিজেকে প্রকাশ করো,
আমি তোমার আড়ালে আমাকে ।
ছবি- সমীহা চক্রবর্তী
সম্পাদনা ও অলংকরণ : শৌভিক রায়