সম্পাদকের কথা
তপ্ত বৈশাখে যেভাবে সামান্য শীতল ছায়া খোঁজে দগ্ধ জীবন, তেমনি আমরাও হয়ত স্নিগ্ধতা খুঁজছি চারদিকের এই বিশৃঙ্খলা থেকে।
নতুন একটা বছর আমাদের সবরকম শৃঙ্খলমুক্ত করবে এটাই ছিল কাম্য। কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসবে যে ছবি, এই রাজ্যে, বারবার দেখতে পাচ্ছি তাতে একটা কথা বোধহয় সহজেই বলা যায় যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা ভালো কিছু দিতে পারলাম না। অভিপ্রেত ছিল না সংস্কৃতিহীনতার এই করুণ দৃশ্য। ভাবতে খারাপ লাগে যে, বাংলার শ্রেষ্ঠ যুগপুরুষের কোনো কথা আমরা মন থেকে মানতে পারি নি, কেবল তাঁর জন্মদিন পালনের হুজুগে মেতেছি!
বৈশাখ এমনই এক মাস যা বারবার মানুষের কথা বলেছে। মহান এই মাসের তুল্য দ্বিতীয় কোনো মাস আর নেই। এই মাস শেখায় বিরুদ্ধে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে মানুষের বেঁচে থাকবার সংগ্রামী ইতিহাস। এই মাসের অনলাইন মুজনাই তাই সাধারণ মানুষের জন্য, যারা সত্যকার ইতিহাস রচনা করে।
অনলাইনে মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা বৈশাখ সংখ্যা ১৪২৬
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
প্রকাশক- রীনা সাহা
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার
ফেসবুক - https://www.facebook.com/profile.php?id=100012201822878
এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা
তৈমুর খান, শ্যামলী সেনগুপ্ত, সুবীর সরকার, শশাঙ্কশেখর পাল, নরেশ রায়, জয় চক্রবর্তী,
অভিজিৎ মান্না, মিঠু অধিকারী, সাহানুর হক, রীনা মজুমদার, রাজলক্ষ্মী মন্ডল, গায়েত্রী
দেবনাথ, তানিয়া ব্যানার্জী, নবনীতা সরকার, তাপসী লাহা, দীপ্তিমান মোদক, রীতা মোদক,
আশীষ গুহ, লুবনা আখথার বানু, মানিক রায় পারমিতা ভট্টাচার্য, রানি মজুমদার,
রাঙাবেল চাঙমা, শৌভিক কার্য্যী, মাথুর দাস, ছবি ধর, সুকন্যা সামন্ত, চিত্তরঞ্জন সাহা
চিতু, সুব্রত কান্তি হোড়, সুস্মিতা পাল কুন্ডু, চিরকুমার, সব্যসাচী নজরুল, মাম্পি রায়, স্বপন
চট্টোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ ছবি- শৌভিক রায়
তাহাদের কথা
বিপুল বৈশাখ
তৈমুর খান
প্রতিটি বৈশাখ নতুন বৈশাখের দিকে হাঁটে
আমাদের বেঁচে থাকা জন্মান্তর পায়
নিজস্ব জানালা খুলি যুগের আকাশে
যদিও বিরামহীন ঝড় বিচ্ছিন্ন স্বভাবে বয়ে যায়
নতুন প্রেরণা এসে এখানে বাসা বাঁধে
হিয়ার নতুন গানে গুনগুন ওড়ে
গর্জনে আকাশ ছায়
তবু তো অনন্ত বৃষ্টি ঝরে
তোমার পরশ রাখি
গোপনে সজীব আলো বিছিয়ে দেয় রাগ
বৈরাগ্যে যাব না বলে
ধুলোর বসনে ঢাকি বিপুল বৈশাখ
আজ সব পংক্তি দোলে
শব্দের দোলনায় নৈঃশব্দ্য দোল খায়
কোন্ ইচ্ছার বাঁশি বেজে ওঠে বুকে
কান পেতে থাকি এই ভোরের নিরালায় ।
IOTA:2
Shyamali Sengupta
A dot is there
on a golden throne
The throne has occupied
the landscape,
that streches between
you and me .. ..
The landscape
the golden throne
and the only dot
created a runway
We are waiting
for the last flight-----
টু নু মু নু এ ক্কা
সু বী র স র কা র
১।
তো,এক বিকেলডোবার
ক্ষণে টুনুমুনু এক্কার সাথে দেওয়ান বর্মনের দেখা হয়ে গেল।দেওয়ানের কপালে ঘাম,ঘাড়ের
গামছায় মুখ মুছে সে যখন ধানহাটি থেকে বেরিয়ে আসছে তখনই দেখা পেল টুনুমুনু
এক্কার।কালো পেশল শরীরে ঢেউ তুলে তুলে ধামসা মাদলের তালে শরীর দুলিয়ে টুনুমুনু তখন
প্রবেশ করতে যাচ্ছে মোরগলড়াইপর্বে।হাড়িয়াহাট পর্বে।দেওয়ান বর্মণ কি টুনুমুনু
এক্কাকে গ্রহণ করবে?না কি তিন নদী পাঁচ ফরেষ্ট ঘেরা তার জোতজমির ভিতর,দিক ও দিগরের
ভিতর ছড়িয়ে দেবে!দেওয়ানের প্রবীণ চোখের কুঞ্চনে সাময়িক দ্বিধা তৈরী হতে থাকলেও
দেওয়ান কিন্তু টুনুমুনুর দিকে মুখভরতি হাসি নিয়ে পানের পিক নিয়ে হাজির হয়।টুনুমুনু
তখন দেওয়ানের দিকে হাততালি ছুড়ে দেয়।বর্ণাঢ্য উৎসবের দিকে টেনে আনতে থাকে দেওয়ানকে।চারপাশের নদীগুলি
ফরেষ্টগুলি হাতিমাহুতের গানগুলি মনকেমনের দিনগুলি থেকে প্রবল একাকীত্ব আর বিষাদ
যেন চুঁইয়ে নামতে থাকে।জোতজমির খালবিলের বাড়িটাড়ির গানবাজনার হাসিতামাসার এক
পরিপক্কতায় কেমনতর এক দিনদুনিয়াই বুঝি সংশয়তাড়িত করে ফেলতে থাকে সমগ্র
পরিপার্শটুকুন আর মহিষের গাড়ির সমবেতে ঘুমকাতুরে এক অসহায়তায় দ্বন্দদ্বিধা নিয়ে
দেওয়ান দাঁড়িয়ে থাকেন আর একসময় জাঁকজমকের সঙ্গে ফিরতে থাকেন আবহমানের জোতজমির দিকে।পূর্বস্মৃতির
তোয়াক্কা না করেই, যেভাবে মাদলধামসায় মেতে ওঠে টুনুমুনু এক্কা।
২।
নির্মাণ বিনির্মাণ
নিয়ে একা একা বসে থাকা।রাজার হাতির পিছে পিছে দেওয়ানের ঘোড়া যুক্ত হয় আর বিস্তৃত
কালখণ্ডে স্মৃতিকাতর হতে থাকা।দেওয়ান বর্মনের জোতজমি পত্তন করেছিল মেঘা বর্মণ।হাটের
ভিতর মাঠের ভিতর রাতদিন খেলে বেড়াতো বাঘ।বাঘের নখ বাঘের লেজ অতিসন্ত্রস্ত
জনপদগুলিতে কেবল হাওয়া ছড়িয়ে দিত।হাওয়ায় ভেসে আসা গান মাঘকুয়াশায় দলা দলা একাকীত্ব
নিয়ে বিষাদ নিয়ে পুর্নজন্মের কথকথার বৃত্তে সীমায়িত হতে গিয়েও হোঁচট খায় আর দশ
কুড়ি পঞ্চাশ গঞ্জগাঁ জুড়ে রবিশস্যের লকলকে সম্ভার।রাস্তায় রাস্তায় গান বাজে।বাজনায়
বাজনায় নৃত্যে নৃত্যে আশ্চর্যতম দুলুনির ভরকেন্দ্রে গিয়ে ঝাকড়া সব গাছপালায়
অতিজীবিত হতে থাকা অনুখণ্ডগুলি দিয়ে ধরাছোঁয়ার এক জীবন ক্রমে টেনে নিয়ে চলে আর তখন
দেওয়ান বল টুনুমুনু বল ধানহাটির ইঁদুর বল সব কিছুই যেন বৃত্তায়নে আটকে পড়া মজা ও
ম্যাজিক।ধামসামাদল না থামলেও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি নামে।উঠোনের নিকানো অংশে
কীর্তনসুর প্রতিষ্ঠিত হলেও কোথাও কোন স্বীকৃতি জোটে না।কেবল নদীর ওপর সাঁকো আর
ওপারের ছায়াছন্নতায় বুদ হয়ে যাওয়া বিষন্ন সব মানুষেরা হাড়হিম এক নির্জনতাই ফিরিয়ে
আনতে আনতে গান গাইতে গাইতে কিভাবে অন্যমনষ্ক ও আত্মগত হয়ে উঠতে থাকে!
৩।
হাজার হাতির মিছিল
তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।চিলাপাতা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা বাইসনের পাল ফের
জঙ্গলেই।নদী পেরিয়ে চলে যাওয়া ধাইধাই বিটে।এমত দোলাচলে বাঁধা না দিয়েও আদিঅন্ত
মেঘের ছায়ায় হাঁটতে হাঁটতে কিভাবে দূরাগত
গন্তব্য নির্ধারিত হতে থাকলে সোনাভাবী হাসির বান ডেকে আনে।কাঠের বাড়ির সিজিলমিছিল
দেখে বুক ভরা শ্বাসে নতুনভাবে বেঁচে থাকতে চাওয়া।বৃক্ষনদীআকাশপুকুররহালগেরস্থির ভরভরন্তির
ভেতর জীবনের পর জীবনের প্রবাহিত হতে থাকা।মহল্লায় মহল্লায় মাদলধামসা জেগে উঠলে
টুনুমুনু শনিচরী ফাগুলাল চুনিয়া মালতিরা গাথাকিংবদন্তির লহর তলে।করম পূজার মাঠ
জুরে অন্ধকার নামে।জোনাই জ্বলে।মোরগলড়াই শেষে ফিরতে থাকে চিলবানুস
ওরাও।চিল্বানুসের পীঠে চিতার থাবার দুরন্ত আচড়।অতি পুরাতন পৃথিবীর বাঘে-মানুষের
লড়াইয়ের গল্প স্বপ্নতাঁত বুনতে থাকলে চিলবানুস কখন কিভাবে যেন ‘বাঘুয়া’ হয়ে ওঠে।অতিকথার
পৃথিবীতে এইসব চলতেই থাকে।দেড়শো ঘোড়া তিরিশ হাতির দেওয়ান ধনী টুনুমুনু এক্কাকে
চিনতে পারবার প্রয়াসটুকুন জারি রাখেন আর সব পেরিয়ে জীবনযাপনের অর্ন্তগতে
অবধারিতভাবেই টুনুমুনু, তার বাড়িটাড়ি গানকিসসা হর্ষবিষাদ ও হাটগঞ্জ সমেত।
পাখিকে
শশাঙ্কশেখর পাল
তুই চুপচাপ এত খোলা মাঠ ধুধু রোদে
ছাতা কাকে দিয়েছিস
কেউ কী ভেঙেছে
অভিমানে রোদ মাখছিস
ছায়া থেকে কতোই বা দূর
একবার গুটি গুটি আয় দেখি
জল-বাতাসা নে
তালপাতার হওয়া
শরীর ঠান্ডা হলে দেখবি
অভিমান আর নেই
সব গলে জল
তোকে তো বলেছি কতবার
সব ঠাঁই মুছে গেলে আছি
নিরাভরণ ভালোবাসায়
রাজনৈতিক/আরাজনৈতিক
নরেশ রায়
লোকটি আর কী বা করতে পারতো
লাইনে জটলা ছিল
ভেবেছিল তাড়াতাড়ি কাজ সেরে
বাড়িতে ব্রেকফাস্ট সারবে
নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ গোবেচারা মানুষ আর
তার বহুদিনের সাধ ছিল
আর একটা বড় পরিবর্তন আনবে তাই
আজ তার লাইনে দাঁড়ানো
নইলে তার কী বা অমন দরকার ছিল
বড় দুঃসময় চলছে এখন
ও ঠিক জানতো মানুষ আর মানুষ নেই
গণতন্ত্রের পরীক্ষায় এসেছিল
ভেবেছিল এবার বুঝি হবে ভালোভাবে
সেইমতো সব ব্যবস্থাও ছিল
কিন্তু সেই যে কে সেই কোথা দিয়ে
কী জানি কী যে হ’য়ে গেল
নিরপেক্ষ নিরীহ গোবেচারা লোকটা
শেষে গণতন্ত্রের বলি হ’ল ।
ও জেনে যেতে পারলোনা অরাজনৈতিক হয়েও সে
মৃত্যুর পর প্রচন্ড রাজনৈতিক হয়ে গেল ।
সন্ন্যাসের ডাক
জয় চক্রবর্তী
লিপির পাঠোদ্ধার হয়নি তখনো
দৃশ্যগুলো সরে যায় দূরে দূরে
মালা গাঁথাও এখন কঠিন একটা কাজ।
আমি বিষ জমিয়ে রাখি শরীরের ভেতর
পচা হৃৎপিণ্ডের ঘ্রান বেরিয়ে আসে
আমি নাসিকাবিহীন হই অহমিকায়।
উষ্ণ প্রেম ঘুমিয়ে থাকে লোমকূপের তলায়
কখনো মাঝরাতে ঘাম হয়ে আসে
আবার লেপের ভেতর আশ্রয় খুঁজে নেয়।
আমার কিছু কণ্ঠ ধার চাই
আমি সাড়ম্বরে ফিরিয়ে দেব সন্ন্যাসের ডাক
ঘুমিয়ে যাবো স্বপ্নের খোঁজে।
খাদ
অভিজিৎ মান্না
একটু পূর্ণতা এনে দাও l
বিদ্বেষ উপদেশ ঘেঁটে
আবারও প্রশ্ন ঝোলাই l
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় l
দেখি, সিঁড়িটা খুলে নিয়ে গেছে মহাকাল l
অবশিষ্ট বাগান পিছনে হেঁটে চলে l
ভাঙা নর্দমা চেঁচিয়ে বলে
কাছে এসো আরও l
যেটুকু পেলাম নেড়েচেড়ে দেখি
অনেক লম্বা এ পথ l
আগ্নেয়গিরি
মিঠু অধিকারী
আকাশের নীল রঙে চোখ ডুবিয়ে বসেছিলাম
পাশের পুরোনো প্রাচীরে
নাচছিল সেই ফিঙেটা--
দূর থেকে ভেসে আসা রেলগাড়ীর একটানা শব্দে
যেন দুলে উঠেছিল ছোট্ট ঘাসফুল।
আস্তে আস্তে আমি হারিয়ে গেলাম
অজানা এক ভিড়ে -
অনু হয়ে মিশে গেলাম দূরন্ত এক ঢেউয়ে
পরিচিত শব্দগুলি তোমায় বলতে চেয়েছিলাম
আর হলো না বলা।
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো চাপা পড়ে আছে
গহন-গভীরে।
সেই না বলা কথাগুলি, অগ্নুৎপাতের আশায়।
পরিযায়ী
সাহানুর হক
একটা সুদীর্ঘ বিস্তৃত জঙ্গলের আড়ালে পরে আছে
ছোট্ট কাঠের বাড়ি - আমি ও সে ।
নির্জন, নিরিবিলি, নিস্তব্ধ
না পাওয়ার কিছু নেই ভোর-রাত ।
হাওয়ায় প্রেমের ম্যাগনেটের
সুগন্ধে মোমবাতিটির ক্লান্ত নিঃশ্বাস
অপেক্ষায় প্রহর গুনছে মধুক্ষণের
সে একটু বিশ্রাম চায় ।
পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে যাই
দরজায় নাড়া দেই, আওয়াজ আসে
- 'ভেতরে আসুন' ।
মুগ্ধ ! আমি ছেলেবেলার প্রেমীক হই
যত কাছে যাই, মরীচিকার মতো হারিয়ে ফেলি ।
উগ্রতায় দিবাস্বপ্ন ভেঙে যায় ।
কবিতা(প্রথম পর্যায় )
একটি বটবৃক্ষের বীজ
রীনা মজুমদার
পাখির আধখাওয়া একটি বীজ
রাখা ছিল জলভরা গেলাসে
যন্ত্রণায় নিকষ অন্ধকার থেকে
হঠাৎ জেগে ওঠে বটবৃক্ষের বীজ !
আমার নতুন গ্রামের পথের ধারে
মাটি, আলো, আর কিছুটা জল
ঈশ্বরসম ছোট্ট চারাটি যেন
মুক্তির স্বাদে বলে উঠে , " কী চাও ?"
মানুষ, তবুও নত হই !
লোভ বেঁধে রাখি সংযমে ...
ঐ দূরের সেই গ্রামে রয়েছে
শতবর্ষ প্রাচীন বটবৃক্ষ,.. তারই তলে
ফেলে আসা এক্কাদোক্কা, পুতুল খেলা
পাখির কলরব, নিবিড় ছায়া l
বৃক্ষ কী কখনো চেয়েছে প্রতিদান ?
ফেলে আসা আশ্রয়ের অনুভবে
সন্তানসম চারাগাছকে বলি ,
তোমাকেও সবুজ বাঁধনে রাখি
বুকের খুব ভিতরে আত্মীয়সম l
যদি হঠাৎ বৃষ্টি নামে
রাজলক্ষ্মী মন্ডল
মুষলধারায় বৃষ্টি নামল
আমার এ ব্যস্ত শহর তিলোত্তমার বুকে।
বৃষ্টির দাগ জানালার কাঁচে;
লাল গোলাপের শেষ কাঁটা বিঁধিয়ে
কার্নিশ বেয়ে রঙিন হয়ে ঝরে পড়ছে।
ঝাপসা এ মনের শহর
তোমাকে ছোঁয়ার মুহূর্ত দিশেহারা.....
ব্যস্ত জীবনের অবসানে
ভিজলাম আমি একা;
খবর রাখেনি এ শহর কলকাতা।
বৃষ্টি তুমি আমার নিঃসঙ্গতার অতিথি
ভাঙা তাসের ঘরে একটুকরো নীল চাঁদোয়া।
যদি তুমি হঠাৎ কখনো
আবার অঝোরে ঝরো;
আমি ঝাঁপ দেব তোমার মধ্যে
কোনো এক অ্যালকোহলিক সুখে।।
বৃষ্টির ফোঁটায়
গায়েত্রী দেবনাথ
বৃষ্টির ফোঁটায় দুব্বোঘাসের অঞ্জলি
কালবৈশাখির উতল ঢেউ
দুলতে থাকে আজন্মের তালগাছ
গতজন্মের স্বপ্ন নিয়ে রাজহাঁসের জলকেলি
ভেজা মাটির গন্ধে জড়িয়ে থাকে পুরনো স্মৃতিরা
বৃষ্টির গান কোকিলের কুহু সুরে
সোনালি ধানের চাদর
নিবিড় জ্যোৎস্না মাখে
পাখিদের ডানা লেখে ইতিহাস
শব্দে, নতুন কিছু অনুভূতিতে
অসুখ
তানিয়া ব্যানার্জী
আজকাল আমার ঘরের জিনিস গুলো
রোদে দিতে বড্ড ভয় হয়,
আমি যাই দিই, তুমি অন্যের ভেবে নিলাম করে নিঃস্ব হয়ে যাও।
এইতো সেদিন! নতুন ফ্ল্যাটে আসার পর!
আমার বাঁ দিকের, ঈশান কোনে যে আলমারিটা!
তার থেকে আমার তৈরি, তোমার জন্য -
রাজবেশ! সেটার গায়েও রোদ লাগাতে দিলাম,
তুমি বললে, এটাও আমার নয়,
আমার তো অসুখ ; আমি মৃত্যুশয্যায়.........।
তোমায় ভালোবাসি
নবনীতা সরকার
তোমায় ভালোবাসি।
তোমায় ভালোবাসি বলেই জানি,
আমি এখনো অনুভব করি-
মাতৃত্ব এক পুণ্যস্নান। ।
তোমায় ভালোবাসি বলেই জানি
প্রিয়তম এবং সন্তান-
একে অপরের অণুঘটক,
সম্পূরণের অভিধান । ।
দু হাত তুলে বৃক্ষ গড়ি
তাপসী লাহা
রৌদ্রকার্পণ্য লেগে যায়
মায়াভেজা শিশিরের ডানায়
যতিচিহ্ন শিখিনি তাই।
বাকস্তবেরা শরণ দেয় আর
আমিও বল্মীক অস্তিত্বের প্রচলিত তত্ত্বে মেতে উঠি।
তারাস্খলন মেপে গড়ে ওঠে দিনের আকার।
নাইবো বলে জলে নামছি আর
ভেসে আসা অস্পষ্ট সতর্কবার্তা---
সিনান ভেস্তে গেলে ফিরে আসি নিভৃত বনরাজিতলে।
সম্পর্কেরা এক্কা দোক্কা খেলায় মাতিয়ে রাখে অদুরের বাঁশবন।
খেলা পন্ডের নির্ঘন্টে ফেলে আসা কয়েকটা
বাঁশপাতা নিজের কোচরে ভরে
খনখনে,রোমহর্ষক বুড়িটা
অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে আমায় দীক্ষা দিয়ে যায় বৃক্ষত্বে।
শাবকের স্বপ্ন
দীপ্তিমান মোদক
অপেক্ষার রাতের শিকার
এক শাবক।
ডাস্টবিনের বুকে কুঁকড়ে পড়ে থাকে।
উষ্ণতায় রক্তিম শরীরটা
একটু নড়ে ওঠে।
স্পর্শ পেলেই হয়তো
নিজেকে মেলে ধরতো,
কিন্তু তা হয়ে ওঠে না।
আনন্দের রেখা ভাগ্যরেখাকে সহজেই
পরাজিত করে।
ভদ্রসমাজে গর্জন করে
সিংহের মতো।
শুধু শাবকের স্বপ্নগুলো ডুবে যায়
গোধূলির সূর্যের মতো।
গল্প
হ্যাপি হোলি
রীতা মোদক
সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলো অমিতা।শুধু মনে পড়ছে দু - বছর আগের দূর্স্বপ্নের কথা।সালটা ২০১৫ । দোল পূর্ণিমার দিন সকাল সকাল স্নান সেরে একটা আবির রঙা শাড়ী পরে অমিতা ঠাকুর ঘরে ঢুকে যায়। তার স্বামী অমিতকে বলতে গিয়েও থেমে যায়, অমিতের এসবের প্রতি এখন আর কোনো উৎসাহ নেই। তাই
তাড়াতাড়ি পুজো দিয়ে ঠাকুরকে আবির দিয়ে শ্বাশুড়ীকে ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মদনমোহন মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা করে। মদন মোহন এর চরণে আবির ছুয়ে একটু আবির নিয়ে আসে অমিতের জন্য। আসার সময় শিবরাত্রি মেলায় ঢুকে ছেলের জন্য একটা খেলনা বন্দুক ও একটু বেশি করে জিলিপি নিয়ে আসে।বাড়ি ফিরে দেখে অমিত খাওয়া সেরে বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে।এক চিমটে আবির কপালে ছোঁয়াতে গেলে অমিত চিৎকার করে বলে -- "রাখো তো এসব।আমি চান - টান কিছু করিনি , কালকে দিও আবির।" মুহূর্তে আমিতার মনটা খারাপ হয়ে গেলেও প্রকাশ করে না। আবিরের ব্যাগটা ঘরের একটা কোনে রেখে দেয়।রাতে ঘুমানোর সময় যখন ঠিক বারোটা বাজলো অমিতের কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে -- "হ্যাপি হোলি।কাল কিন্তু আমরা বাইকে করে ঘুরে ঘুরে রঙ খেলবো।"অমিত নিরুত্তর। অমিতা -- "কি ব্যাপার কিছু বলছো না যে?"
অমিত -- "কাল তোমরা রঙ খেলো, আমি খেলা দেখবো। "
অমিতা অবাক হয়, শুয়ে শুয়ে চিন্তা করে মানুষটার মনে কি কোনো রস কস নেই? অথচ এই মানুষটাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল? মনে পরে বিয়ের আগের কথা -- বিয়ের আগে এক সন্ধ্যায় অমিত অমিতার সিথিতে এক চিমটে আবির দিয়ে বলেছিল -- "হ্যাপি হোলি। " অমিতা লজ্জায় দৌড়ে পালিয়ে ছিল।কিন্তু আয়নার দিকে তাকাতে সে আবির কপাল জুড়ে সিদুরের মত জ্বলজ্বল করছিল। সে আবিরের ছোয়া অমিতার মনে ঢেউ তুলে দিয়ে ছিল।আজ সেই প্রেমিক অমিত কোথায় হারিয়ে গেলো?যাই হোক অমিতা ভাবে কাল সে রঙ মখাবেই।তার মুখমণ্ডলে ও সারা শরীরে গারো নীল আবির দিয়ে সাজাতে হবে। কপালে দিতে হবে গোলাপী আবিরের টিকা।কাল অমিতকে সে কৃষ্ণ সাজাবে আর নিজে রাধা। সকালে সবাই হাত মুখ ধুয়ে আসলে অমিতা সবার জন্য কফি নিয়ে আসে।
শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করে -- "বৌমা প্রতিদিন ত লাল চা খায়াও, আজ কফি কেন? " অমিতা উত্তর দেয় -- "আরে এটা আজকের স্পেশাল।" সবাইকে কফি দিয়ে অমিতা নিজের কাপটা এগিয়ে নেয় মুখের দিকে, তখন অমিতের বৌদি পালি আসে পাশের বাড়ি থেকে --" কিগো তোমরা কি করছো? " অমিতের মা বলে -- "বৌমা, পলিকে এক কাপ কফি দাও আর কালকের জিলিপি আছে না ?পলির হাতে দুটো দাওতো। " অমিতা অগত্যা নিজের কাপটা পলি বৌদির হাতে দিয়ে জিলিপি আনতে ঘরে যায়,ঠিক সে মুহর্তে অমিত ঠাকুর ঘরে গিয়ে আবির ও একটু খৈনি রঙ জলে গুলে পিছন দিক থেকে পলি বৌদির মুখে দিয়ে দেয়। পলি বৌদি চিৎকার করতে থাকে "আরে ছাড়ো ছাড়ো... " এ দৃশ্য দেখে অমিতা খুব কষ্ট পায়। তবু সে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসার চেষ্টা করে। খানিক বাদেই পলি বৌদি রঙ এনে অমিতের গালে লাগাতেই অমিতা আর থাকতে পারলো না। তার প্রিয়তম মানুষটিকে কৃষ্ণ সাজানোর স্বপ্ন ,নিজে অমিতের হাত থেকে প্রথম রঙ নিয়ে রাধা সাজার স্বপ্ন ভেঙ্গে মুহূর্তে খান খান হয়ে গেলো! অমিতা কতক্ষণ থ হয়ে থেকে ভাবলো এ জীবন রেখে আর কি লাভ? সে দেওয়ালে মাথা ঠুকতে ঠুকতে পরে গেলো মেঝেতে।সবাই কি হলো কি হলো দৌড়ে এলো। চোখে জলের ঝাপটা দিতেই আমিতার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই অমিতা শুনে , শ্বাশুড়ি বলছে -- "একটুখানি রঙ দিছে বলে কি দোষ হয়ে গেছে নাকি? একেবারে মাথা ফাটাইতে লাগবে? এই বউ নিয়ে আমি সংসার করতে পারবো না।আমাদের তো জেলের ভাত খাইতে হইব। এই অমিত এই বউ বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দিবি না কি করবি তুই কর।এই বউ এই বাড়িতে থাকলে আমি থাকবো না। হয় বউ থাকবে না হয় আমি থাকবো।" অমিত ও রাগে গজ গজ করতে করতে বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো। অমিতা র দিকে ফিরেও তাকাল না।এদিকে আমিতার মাথা কপাল চোখ ফুলে উঠেছে। ব্যথায় ছটফট করছে বিছানায়। হসপিটালে নেওয়ার নাম নেই কারো। অমিতা প্রতি বছর তার বর কে নিয়ে বাপের বাড়ি রঙ দিতে যায় তার বাবা - মাকে।
এবছর দেরি হচ্ছে বলে আমিতার মা বার বার ফোন করে ও কোনো উত্তর পায় না।পরে বাধ্য হয়ে নিজেই চলে আসে অমিতার বাড়ি। এসে অমিতার এই অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার মা।মাকে পেয়ে
কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে অমিতা মনে মনে মৃত্যুকে ডাকে। যেখানে ভালোবাসা নেই, দয়া মায়া নেই, সেখানে বেঁচে থেকে কি লাভ? এ কোন অমিত ,তাকে কি সে ভালোবেসেছিল?বিয়ের দুবছর আগে অমিতার পায়ে একবার একটা বিড়াল খামছে দিয়েছিল , সে খবর শোনা মাত্রই অমিত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে । অমিতা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।বিড়াল এর দিকে সেদিন অমিতের কি রাগ , মনে হয় বিড়ালটিকে মেরেই ফেলবে। কোথায় হারিয়ে গেলো তার সেই অমিত ?কিন্তু অমিতের মা পরম সোহাগে মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে চলে হসপিটালে।এসব দেখে অমিতের ভাসুর সুদীপ যায় পিছু পিছু।ডাক্তার ভালো করে দেখে সিটি স্কেন করতে বলেন। পরদিন সকালে অমিতার মা সুদিপকে সাথে নিয়ে কুচবিহার যায় সিটি সকেন করতে। অমিতা মনে মনে খুব কষ্ট পায় অমিতের জন্যে। যার সঙ্গে ১০ বছর প্রেম করছিল তার এমন পরিবর্তন যে সহ্য করা যায় না। কুচবিহার এ সিটি স্কেণ করে আমিতারি মা অমিতা কে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।কারণ ডাক্তার বলেছে কদিন রেস্টে থাকতে হবে। নিজের বাড়ি এসে মায়ের আদর যত্নে অমিতা সেরে উঠতে থাকে।কিন্তু গভীর রাত এলে অমিতা র চোখ জলে ভরে যায়। এত কিছু ঘটার পরেও অমিতকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পাষাণ অমিত একটা ফোন করেও খবর না।তাই অমিতা সিদ্ধান্ত নেয় সে আর শ্বশুর বাড়ি যাবে না।মাখন পরে অমিতা অফিস জয়েন করে।একদিন সকালে অমিতা আফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে,এ সময় অমিত এসে হাজির।বলছে --- বাড়ি চলো। অমিতা চুপচাপ। না শুনার গান করে তৈরি হচ্ছে।আবার অমিত রেগে গিয়ে -- তুমি এখুনি বাড়ি চলো, নইলে ছেলেকে দাও।অমিতা ভাবে , অমিত কি আজ তার জন্য এসেছে নাকি শুধুমাত্র ছেলের টানে? কিন্তু অমিত অমিতা ও ছেলেকে জোর করে নিয়ে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে অমিত অমিতা র কাছে ক্ষমা চায়। ভালোবাসা দেখায় আগের মত।অমিতা নাছোড়বান্দা,ক্ষমা করবে না কিছুতেই। কিন্তু গভীর রাতে যখন অমিতা র পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চায়,তখন অমিতা অমিতকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।অমিতের আদরে ভুলতে চেষ্টা করে সব ব্যাথা।
তার শ্বাশুড়ি ও এখন ভালো ব্যবহার করে। এভাবেই কেটে যায় আরো দুবছর। প্রতিবার হোলি আসলে দুজন দুজনকে আবির দেয়। কিন্তু সে আবিরে আগের মত আর ভালোবাসার উচ্ছ্বাস আসে না। আবার দোল পূর্ণিমা চলে এলো।মদন মোহন বাড়ি থেকে শুরু করে সারা মাথাভাঙ্গা শহর জুড়ে দোল উৎসব পালিত হবে। মেয়ে বউরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে দোল উৎসবের আনন্দে মেতে উঠবে। এবার অমিতা কে দোল উৎসবে যোগ দেবার জন্য মদন মোহন বাড়ি কমিটি থেকে অনুরোধ করেছে। অমিতা এখনো তার আগের অমিতকে খুঁজে চলে।সে বার বার অনুভব করে কিশোরী বয়সে প্রথম আবিরের ছোয়া। তখন থেকেই সে তার অমিতকে মনে মনে স্বামী বলে ধরে নিয়েছিল। আজ তাদের বিবাহিত জীবনের অনেক বছর পেরিয়ে গেছে।কিন্তু পুরনো ব্যথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ভাবতে ভাবতে কখন সে ভোর হয়ে গেছে অমিতা অমিতা বুঝতেই পারেনি। হুশ ফিরলো অমিতের ছোয়া পেয়ে। অমিত এক চিমটে আবির অমিতার কপালে, গালে মাখিয়ে দেয়।অমিতা অবাক হয়ে বলে -- আরে কি করছো? এখনো ঠাকুরকে আবির দেইনি। অমিত অমিতা চোখের জল মুছে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে ,-- আমি যে আমার রাধাকে আবির দিচ্ছি।তুমি তোমার কৃষ্ণকে সাজিয়ে দেবে না? অমিতা র মনে জেগে উঠে বসন্তের প্রেম। সে ও তার প্রিয়তমকে সাজায় সাত রঙা আবিরে।অমিত অমিতা কে জড়িয়ে ধরে বলে -- "হ্যাপি হোলি।"
তিন্নি
আশীষ গুহ
আমি বাড়ির কাছে একটি লাফিং ক্লাবের সদস্য।
প্রতিদিনের মতো আমি সেদিন ভোরবেলা বস্তির পাশ দিয়ে হেঁটে পার্কে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি একটি ছোট্ট মেয়ে আমার পিছু নিয়েছে। মেয়েটি পার্কের গেট পর্যন্ত গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের হাঁসি দেখে হেসে লুটোপুটি
তারপর বস্তিতে একাই ফিরে যায়।
পরের দিন আবার আমার পিছু নিয়েছে, আমি নাম জিজ্ঞাসা করতে বললো ওর নাম তিন্নি। বললাম আমাদের হাসি দেখতে যাবি? চল আজ তোকে দোলনা চড়াবো। ও রাজি নয়, ওর চোখের ভাষা বলছে ওরা বস্তিবাসী ওদের পার্কে ঢোকার অধিকার নেই। শৈশব থেকেই ওরা নেই রাজ্যের বাসিন্দা।
আমার প্রাতঃ ভ্রমনের সঙ্গী তিন্নি প্রকৃতির নিয়মে বড় হতে লাগলো, সংসারের উপার্জনের দায়িত্ব ওর কাঁধে চাপলো। মেয়েটি আজকাল রাস্তার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ফুল বিক্রি করে। রোজ অফিস যাওয়ার পথে আমি যখন গাড়ি নিয়ে সিগনালে অপেক্ষা করি, তিন্নি ছুটে আসে, এক নিষ্পাপ মিষ্টি হাসি সাথে এক গুচ্ছ ফুল দিয়ে আবার ছুটে অন্য গাড়ির কাছে ফুল বিক্রির আসায় চলে যায়। আমার থেকে কিছুতেই পয়সা নেয় না। তবে আমি ওকে পালা-পার্বণে কিছু টাকা দিই ওর জামাকাপড় কেনার জন্য। ওকে একদিন সিগনালে না দেখলেই আমার মন খারাপ হয়ে যেত।
বেশ কয়েকদিন ওর দেখা নেই। ওদের বস্তিতে খোঁজ নিলাম, কেউ কিছু বলতে পারলোনা।
কয়েক বছর পর রাতে বাড়ি ফেরার পথে আমি অপেক্ষা করছি সেই সিগনালে। হঠাৎ দেখি, শাড়ি পড়া এক কিশোরী সিগনালে দাঁড়ানো এক বিলাসবহুল গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বসলো এবং সিগনাল সবুজ হতেই গাড়ি চলে গেল। অনেক গাড়ির হর্ন এর শব্দে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। ভাবছি সেই তিন্নির আজ এই অবস্থা? ভারাক্রান্ত মনে বাড়ির দিকে চললাম।
তারপর অনেক দিন আমি ওই সিগনালে তিন্নি কে খুঁজেছি, যদি ওকে পাওয়া যায়, যদি আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু ওকে আর খুঁজে পাইনি।
কয়েক বছর পর, আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় সেই সিগনালে। হঠাৎ দেখি দুটি শীর্ণ হাত আর দুটি অনেক চেনা চোখ গাড়ির জানালা দিয়ে গাড়ির মধ্যে কাউকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেদিন সিগনাল সবুজ হলো, আমি গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলাম। মন ভীষণ ভারাক্রান্ত, রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি শুধু তিন্নির পরিণতির কথা ভেবেছি।
পরদিন সকালে সেই সিগনালে মেয়েটির খোঁজ নিতে গেলাম। ট্রাফিক পুলিশ জানালো গতরাতে এক মহিলা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে। মহিলার বিবরণ শুনে বুঝলাম সে তিন্নিই।
আজ জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে সেই ছোট্ট তিন্নির কথা মনে পড়ে, অজান্তে চোখে জল আসে দৃষ্টি ঝাপসা হয়, ভাবি এভাবেই যদি ওর স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যেত হয়তো
ভালো হতো; এই দুঃখ আর সহ্য হয়না।
শিল্পী
লুব্না আখতার বানু
শিল্পীর ছোট্ট গৃহে মাত্র ছয়জন লোকের বসবাস।ঠাকুমা,মা,বাবা ও ছোট ছোট আরো দুটি বোন।ঠাকুরদা জীবিত আছেন বলেই অনেকের ধারনা।তিনি শিল্পীর বাবা অর্থাৎ সৌমেনবাবুর জন্মের পরই রোজগারের উদ্দেশ্যে বিদেশে গিয়েছিলেন।আর তারপর চলে গেছে দীর্ঘ পঁচিশটি বছর।এই পঁচিশ বছরে সৌমেনবাবুর বাবা একটি বারের জন্যও স্ত্রী ও পুত্রের কোন খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।সৌমেনবাবুর মায়ের ধারনা তিনি বিদেশে আবার সংসার পেতেছেন।
সরলাদেবী অর্থাৎ সৌমেনবাবুর মা অনেক কষ্টে লোকের গৃহে কাজ করে তাঁর সংসার কোন রকমে চালাতে থাকেন।অতিকষ্টে এভাবেই কাটতে থাকে সরলাদেবীর দিনগুলি।ছেলেকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেও তাকে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে নি তাঁর পক্ষে।ছেলে একটু বড়ো হতেই একটি হোটেলে রান্নার কাজ করতে শুরু করলেন।আর বছর তিন যেতে না যেতেই মা ও ছেলে মিলে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান করলেন।চা ছাড়াও সেখানে পাওয়া যেত পান,বিস্কিট,চাল,ডাল ইত্যাদি টুকিটাকি।এতোদিনে সরলাদেবীর দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব হল।এখন তাঁকে আর লোকের গৃহে কাজ করতে যেতে হয় না।সারাদিন নিজের দোকানে বসেই তাঁর দিন কেটে যায়।
আরো মাস কয়েক যেতেই তিনি তাঁর ছেলের বিবাহ দিলেন।পুত্র বধূও পেলেন ঠিক তাঁর মনের মতোই।সুখেই কাটছিলো তাদের দিনগুলি।বছর কাটতে না কাটতেই সরলাদেবী পেলেন নাতনী শিল্পীকে।গোটা গৃহে যেন এলো এক আনন্দলহরী।এভাবে অভাব অনটনের মধ্যেও তাঁদের দিনগুলি যেনো স্বপ্নের মতোই কাটছিলো।সকলের ভীষণ আদরের শিল্পীও ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগলো।শিল্পীর বয়স চার হতেই তাকে শিক্ষা অর্জনের জন্য গৃহের নিকটেই একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হলো।
আর্থিক স্বচ্ছলতা বর্তমানে বদলে দিয়েছে সৌমেনবাবুকে।তিনি নিজেকে পালটে ফেলতে এতটুকু সময় নষ্ট করেন নি।বর্তমানে রোজরাতে নেশা করে গৃহে ফেরা তাঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে।সরলাদেবীর সুখের সংসার এভাবেই অন্ধকারে ছেয়ে যেতে লাগলো দিনের পর দিন আরো একবার।বহু কষ্টে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে সরলাদেবী তিলে তিলে যে সুন্দর ফুলের বাগান সাজিয়েছিলেন,তা যেন নিমেষেই নষ্ট হতে থাকে।স্ত্রী লক্ষ্মী সেই কুপথ থেকে স্বামীকে ফেরাতে চেষ্টা করলে তাঁর কপালে জুটতো বেত্রাঘাত ও লাথি।এভাবে দিন কাটানো ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠলো তাদের পক্ষে।এভাবে অতি যন্ত্রনার মধ্যেই লক্ষ্মী প্রসব করলেন আরো দুটি কন্যা সন্তান।
দিন কাটতে লাগলো আর সংসারের খরচও বাড়তে লাগলো।সৌমেনবাবু যা রোজগার করেন,তার সবটাই কুপথে ব্যবহৃত হয়।দোকান থেকে যতটা রোজগার হয় তাতে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়লো সরলাদেবীর পক্ষে।শিল্পীর শিক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের।বোন পূজা ও আরতিও ক্রমশই বড়ো হয়ে উঠতে লাগলো।সরলাদেবী হতাশ হয়ে পড়লেন।তবে কি আদরের শিল্পীকেও শিক্ষিত করে তোলা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না!এই সমস্ত চিন্তা ভাবনাই দিনের পর দিন বয়সের সাথে সাথে সরলাদেবীকে শয্যাশায়ী করে তোলে।ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।লক্ষ্মীদেবীও বড়োই অসহায় হয়ে পড়েন।এরই মধ্যে নেশা ধীরে ধীরে সৌমেনবাবুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।অত্যাধিক পরিমান নেশার কারনে কিছুদিনের মধ্যেই সৌমেনবাবুর মৃত্যু ঘটে।
সৌমেনবাবুর মৃত্যু,ঠাকুমার অসুস্থতা ও মায়ের অসহায়তা মাত্র দশম শ্রেনীর শিল্পীকে সংসারে যেন অনেক দায়িত্বশীল করে তোলে।ইচ্ছে না থাকলেও ছাড়তে হয় তাকে তার বিদ্যালয় জীবন।আর অংশ নিতে হয় সংসারে একজন পুরুষের ভূমিকায়।দোকান ও টিউশন করে তাকে এই কম বয়সেই ধরতে হয় সংসারের হাল।শিল্পী প্রতিজ্ঞা করে যেভাবেই হোক না কেন,তার ঠাকুমার অতি কষ্টে গড়ে তোলা সংসারে সে আবারো শান্তি ও স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে।যেভাবেই হোক না কেন তার ছোট্ট বোন দুটোকে সে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে।সে আরো প্রতিজ্ঞা করে যে সে তার অসহায় মায়ের পাশে শক্তি হয়ে দাঁড়াবেই।
এভাবেই শুরু হয় শিল্পীর জীবনের এক নতুন অধ্যায়।দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেই চলতে থাকে শিল্পীর জীবন।গোটা পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কোন কোন দিন নাওয়া-খাওয়ার সময় পর্যন্ত থাকে না শিল্পীর।যথাসময়ে দোকানে বসা,টিউশন করা ও বোনেদের বিদ্যালয়ে দিয়ে আসা ও নিয়ে আসাতেই কেটে যায় তার সবটা সময়।ছোট্ট বোন দুটোর মিষ্টি হাসি রাতে শিল্পীকে ভুলিয়ে দিতো তার সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমকে।আর তাকে পুনরায় প্রস্তুত করে তুলতো আগামী দিনের জীবন যুদ্ধের জন্য।এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর সময়।নিত্যদিনের অভ্যাসে সময়ও দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হতে থাকে একই নিয়মে।এভাবে কেটে যায় আরো ত্রিশটি বছর।
আজ আরো ত্রিশ বছর পর শিল্পীর ছোট্ট গৃহে মাত্র দুজন লোকের বসবাস।শুধুমাত্র শিল্পী ও তার মা আজ এই গৃহে থাকেন।এরই মধ্যে সরলাদেবীও আজ আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই।শিল্পীর ছোট্ট মিষ্টি বোন দুটিও আজ অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে।শিল্পী তাদের নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলতে পেরেছে।তারা আজ খুব ভালো মনের মানুষ, উচ্চশিক্ষিতা ও চাকুরীজীবিও বটে।তাদের বিয়েও হয়ে গেছে।শিল্পীর গৃহ থেকে বোনেদের শ্বশুরবাড়ীর দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়।বোনেরা আপদে-বিপদে মা ও দিদির খোঁজ নিতে আসে সর্বদাই।তারা আজও শ্রদ্ধা করে মা ও দিদিকে ঈশ্বররূপে।আমাদের সকলের প্রিয় শিল্পীর অবশ্য সব দায়িত্ব ও কর্তব্য সামলে নিজের সংসার আর গুছিয়ে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে নি।আর তাই আজও সে অবিবাহিতা।কিন্তু তবুও ভীষণ আনন্দিত আজ সে।আমাদের সেই ছোট্ট শিল্পী আজ সমাজের চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতে পেরেছে যে,চাইলে মেয়েরাও পারে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে নিজের আদরের পরিবারকে মাতৃস্নেহ ও পিতৃস্নেহে আগলে রাখতে।
কবিতা (দ্বিতীয় পর্যায়)
বিষাদের কবিতা
মানিক রায়
আজ আর কথার মধ্যে জড়তা রাখব না
সোজা-সাপটা ভাষায়
কবিতার গায়ে গায়ে মাখিয়ে দিব বিষাদের গন্ধ
হাসপাতালের কেবিনে আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছ
আনমনা তুমি, উদাসী তুমি
তোমার সমস্ত গা দিয়ে ঝরে পড়ছে রাগ-অভিমান
অন্ধকার গহ্বর থেকে উঠে আসছে বোবা কতগুলি শব্দ
সেগুলিকে প্রাণ দিচ্ছি আমি
আর তোমাকে আত্মস্হ করছি ক্রমশ।
ক্ষেপি
পারমিতা ভট্টাচার্য
আমি তো এমনই মেয়ে, ঢিলেঢালা যেমন দেখেছো!
আশা ছিল বুঝি চোখে! কাছে নিয়ে মিঠে খুনসুটি?
আহা রসভঙ্গ হলো,আমি তো কিছুই বুঝিনি গো
এক পা হাওয়ায় ছিল,অন্য পায়ে হাওয়াই চটি !
রকে বসা যুবকেরা দিনরাত ফুসলোনো শেষে
গালি ভুলে ,মাথা ঠুকে, পাগলাগারদ খুঁজে যেতো,
কানেই যায়নি কথা , মানে বোঝা সাধ্যের অতীত―
হাবাগোবা পথ হাঁটি , চটিতে পাথর করি থেঁতো।
ছিঁড়ে গেলে জুড়ে নিই,সেফটিপিন মুঠোয় আমার
প্রহরণ সাথে থাকলে দশভূজা নিজেকে বানাই
অসুর হয়ো না ভুলে, ―কুপ্রস্তাব মনেই সাজাও
জিভ নয় ,চোখ দিয়ে চেটে নাও শরীরখানাই....
হাসিমুখে জানতে চাইবো তোমার কুশল, এইভাবে―
"কিছু বললে বুঝি তুমি?আমি তো কিছুই শুনিনি গো"
নাছোড়
রানি মজুমদার
তারপরেও ভিজে বিছানায় কনে সেজে বসে থাকি।
সমস্ত রাত জুড়ে আকাশ আঁকি।
ফেলে যাওয়া কাগজের প্যাকেটে মন্ডপ বানাই।
কামড়ের দাগের ওপর নতুন করে পাউডারের যত্ন ।
ফুরুত করে চলে যাওয়ার মুহূর্তে আঁচলে যখন ঘেন্না মোছ...
তারপরেও আমি চুঁইয়ে পরা সোহাগটুকু পেট আগলে বসে থাকি।
মরুভূমি
রাঙাবেল চাঙমা(পিইউসি)
হাহাকার মরুভূমি
রৌদ্রে জ্বলমল,
রৌদ্রে ও বাদলা দিনে
শুধু থাকে অনড়।
বিভীষিকাময় মরুভূমিতে
বাচেঁ না কোনো জীব,
হৃদয়হীন নারীর মন
মরুভূমি সদৃশ।
মরুভূমির দাবানল
জ্বলে কিছুক্ষণ,
প্রেমের দাবানল জ্বলে
সারা জীবনভর।
বেকারত্ব
শৌভিক কার্য্যী
শহরের অলিগলি রাজপথ ধরে,
ধুলায় মলিন জামা গাড়ি চাপা পরে ।
কাজের সন্ধান দেয়, কেউ বা দেয় কাজ ছাড়ায়,
যতটুকু আয় সবটাই ব্যায় যাতায়াতে বাস ভাড়ায় ।
রাত বারে ছোট্ট মেয়ে খিদে পেতে রাত জাগে,
বাড়ি এলে জড়িয়ে কেঁদে খিদে মেটায় সবার আগে ।
রোজ রাতে ঘুম ভাঙ্গে বেকারত্বের করুণ জ্বালায়,
কতকাল জোগান চলে বন্ধক রেখে স্ত্রীর মালায় ?
উটি থেকে
মাথুর দাস
উটি থেকে ফিরে এসে গুটিকয় লোক
এই বলে করেছিল বিস্তর শোক --
''উটিতে তো 'উট'-ই নেই, ছুটিটাই মিছে,
ঠান্ডায় গুটিসুটি চলা আগে পিছে !
চা-বাগান-কারখানা আছে দুই-চারখানা
পিকনিক-স্পটে দ্যাখো কে খায় কার খানা --
বোট নেই, গাছ ফুল সাদা-নীল-লাল,
তবু সে বাগান নাকি ‘বোট্-আনি-কাল্’ !
কাল রাতে হিম ছিল শীতও ছিল বেশি
নানাবিধ খাওয়াদাওয়া দেশি ও বিদেশি --
মনে মনে সারারাত যা ভেবেছি ঠিক তাই,
চকিতে উধাও নাকি ‘ডোডাবেটা' পিকটাই'' !
অবশেষে
ছবি ধর
হৃদয় আকাশে ভেসে ওঠে ক্ষত ,
গর্জে ওঠে কালো মেঘে জমা অভিমান ,
জ্বলে ওঠে ঘৃণা l
ফুলের পাপড়ি ঝরে পরে
সন্ধানী দৃষ্টি খুঁজে ফেরে তোরে l
খোঁজে জনমানসের ভিড়ে ,
কি উদ্দেশে ধায় -- l
কোথায় তুই রে ?
কোন আড়ালে ? কোন গভীরে ?
অদৃশ্য সঙ সাজে এ কি অভিনয় ?
অবশেষে ---
দয়াদ্র বৃষ্টিতে ধুঁয়ে যায় সংজ্ঞাহারা অঙ্গ ,
অকৃতার্থতা , সব প্রত্যাশা ,
পায়ের কাছে থিকথিক করে কাদা l
প্রত্যাশা
সুকন্যা সামন্ত
দিন কাটে একলা ঘরে ,
আসন পেতে তোমার তরে ,
হৃদয়ের সাজি ভরেছি আজ -
ব্যথার হার দিয়ে ।
ভেবে ভেবেই প্রহর গুনি ,
কথামালায় সাজাবো তোমায় -
মনের আবেগ বয়ে যায় ,
অশ্রুধারা বেয়ে ।
আসবেনা জানি তবু ,
থাকি বসে পথ চেয়ে -
প্রদীপখানি জ্বেলে ,
শুকাবে মালা ,তবু মুকুলিত হোক -
অন্তরকানন ,
পথহারা পথিক তুমি ,
তবু রাখি খোলা দুয়ারখানি ,
গীতহীন নিশীথ রাতি ,
তবু পরান-বীণায় সুর বাঁধি ।
দুই বাংলার কবি
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
দুই বাংলার বাংলা কবি
একই ভাষাভাষি,
বাংলা ভাষায় লিখি পড়ি
বাংলা ভালোবাসি।
কাঁটাতারের বেড়া,
দুই বাংলা ভাগ করেছে
তাই রয়েছে ঘেরা।
এই ভাষাতেই কাঁন্না হাসি
এই ভাষাতেই গান,
এই ভা্ষাকে অানতে গিয়ে
ঝরলো তাজা প্রান।
মনের ভেতর স্বপ্ন গড়া
অামরা যাবো অাসবে ওরা
লেখায় লেখায় গড়বো সেতু
ঐক্য উঠুক গড়ে,
দুই বাংলায় কবির মেলায়
অানন্দ যাক ভরে।
এসো হে বৈশাখ
এসো এসো হে বৈশাখ
সুব্রত কান্তি হোড়
এসো এসো হে বৈশাখ,
এসো এসো।
দগ্ধ খরতাপে রুদ্রমশাল হাতে এসো,
পুড়িয়ে দাও সকল জীর্ণতা
নিঃশেষ হোক জীবনের জড়তা,
নব প্রত্যাশার আলোকে তুমি ফিরে এসো।
এসো এসো হে বৈশাখ,
এসো এসো।
নতুনের আবাহনে মঙ্গলশঙ্খ হাতে এসো,
অপ্রাপ্তি আর প্রবঞ্চনা ভুলিয়ে দিতে
সুর তোলো রবিঠাকুরের গানে,
বঞ্চিতর বঞ্চনা নিরসনে প্রলয়ের গানে তুমি এসো।
এসো এসো হে বৈশাখ,
এসো এসো।
ঈশান কোণে দানবের লাল চোখে এসো,
হিংসা, ভয় পিষ্ট কর তোমারই রুদ্ররোষে,
খরায় দগ্ধ মন শান্ত কর বিজলীর চমকে।
তপ্ত তনু শীতল হোক তোমারই আঁচলে,
নতুনের গানে এসো সবুজ পত্র-পল্লবে,
মানবতার সূর্যকেতন উড়িয়ে তুমি এসো,
এসো এসো হে বৈশাখ,
এসো এসো।
কালবৈশাখী
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
আমি উন্মক্ত ঝড়
কালবৈশাখী .
..
আয় রে তোরা , আয় রে
বাঁধতে পারিস ...বাঁধবি !
ইচ্ছে খুশীর ঢঙে
বইগো মাতাল হয়ে ,
উল্লাসে অট্ট হাসি ,
লণ্ডভন্ড করি... দীর্ণ শুষ্ক বাসি !
গাছের মগডালে তরতরিয়ে ধেয়ে
হাততালি দি জোরে ,
মেঘের দেশে গিয়ে
বৃষ্টি আসি নিয়ে ;
জীর্ণ মলিন বসন
জাদু কাঠি ছুঁয়ে
সবুজ করে তুলি ... মুকুলিত কলি
আল্পুত হই আমি ;
তবুও কিছু কষ্ট , অজান্তে দুঃখও
দিই গো কারো মনে , জগৎ কল্যাণে !
অধরা থাকি .... বাঁধতে পারলে বাঁধবি ;
আমি দুরন্ত ঝড় কালবৈখাখী আপন নেশায় বাঁচি ..৷৷
স্মৃতি
চিরকুমার
বৈশাখের তপ্ত দুপুরে
বসে একাকী ঘরে,
খোলা বাতায়নে চোখ ভেসে যায়
সুদুর অতীতের দ্বারে।
মনে পরে সেদিনের কথা
আমি আর আমার সই,
অলস দুপুরে না ঘুমিয়ে
তার অপেক্ষায় রই।
কখন তার ডাক আসবে
খোলা বাতায়ন দিয়ে,
একসাথে মোরা ছুটে যাবো
গ্রামের পথ বেয়ে।
তপ্ত দুপুরে ঘুরে বেড়াবো
ধান খেতের আল ধরে,
অলস খেয়ালে শ্রান্ত হলে
বসে যাবো পুকুর পাড়ে।
এরপর মোদের ঠাই হবে
আম্রকুঞ্জের ছায়ায়,
মিষ্টি ফলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে
সেখানে পাখিরা গান গায়।
বাড়ি ফিরবো সাঁঝের বেলায়
খোজ নেবে না কেউ,
আজও সেই দিনের কথা
ভেবে অবাক হই।
হারিয়ে যাওয়া সেদিনের স্মৃতি
মনাকাশে উদয় হয়,
হাসি কান্নার জীবন খেলায়
মনে আজও ব্যাথা দেয়।
আম মাখাটা খাবো
সব্যসাচী নজরুল
কাল যে আমার স্কুল ছুটি
মামা বাড়ি যাবো
লবন মরিচ কাসুন্দিতে
আম মাখাটা খাবো।
দা'য়ে কুচকুচিয়ে বড় বুজি
কাটেন কাচা আম
লেবুর কচি পাতা আনেন
দুলাভাই আসলাম।
দুলাভাই আর বুজি মিলে
আমগুলো সব মাখান
সবার সাথে দাওয়ায় বসে
মামা মামিও তা খান।
সবে দুপুর বেলা মজা করে
আম মাখাটা খাই
মামা বাড়ির আম যে মজা
তাই রে নাই রে নাই।
আম মাখাটা খাওয়া হলে
নাইতে নামি জলে
মামা ডাকে আয় খাবি চল
বেলা বয়ে চলে।
নতুন ভোরের আলো
মাম্পি রায়
নতুন ভোরে নতুন করে
লিখব ছড়া তালপাতায়,
উড়িয়ে দিয়ে দুখের পাতা
গড়ব জীবন হালখাতায়,
প্রাণ ভরে আজ খুশিরডালা
ভরব সবুজ রক-গলিচায়।
নলেন গুড়ের মিঠেল সড়া
দোল দিয়ে যায় এমন,
মৌরি ফুলের সুবাস ভাসে
মৌতাতের ঐ বাগ-বাগিচায়।
খোঁপায় বেলী, হাতে চুড়ি,
গলে মনিহার,
হলুদ পাখির নাচন লাগে
নতুন করে আবার।
কবিতা
স্বপন চট্টোপাধ্যায়
বরণ করে নেব বলে
প্রদীপ খানি জ্বালিয়ে নিয়ে
প্রতিক্ষয় আছি বসে।
হে রুদ্র বৈশাখ এবার
ধংস করি রুদ্র মূর্তি ছেড়ে
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নাচ
পল্লীবলার চন্দন টিপ পরে
হে যুবরাজ মধুর হাসি হাসো
অনলাইনে মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা বৈশাখ সংখ্যা ১৪২৬
No comments:
Post a Comment